মরণ কে স্মরণ এবং কামনা-বাসনা কম করার গুরুত্ব – রিয়াদুস সা.

মরণ কে স্মরণ এবং কামনা-বাসনা কম করার গুরুত্ব – রিয়াদুস সা.

মরণ কে স্মরণ এবং কামনা-বাসনা কম করার গুরুত্ব – রিয়াদুস সা. >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

পরিচ্ছেদ – ৬৫: মরণ কে স্মরণ এবং কামনা-বাসনা কম করার গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ أُجُورَكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۖ فَمَن زُحۡزِحَ عَنِ ٱلنَّارِ وَأُدۡخِلَ ٱلۡجَنَّةَ فَقَدۡ فَازَۗ وَمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا مَتَٰعُ ٱلۡغُرُورِ ١٨٥ ﴾ [ال عمران: ١٨٥] 

অর্থাৎ “জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করিবে। আর কিয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় প্রদান করা হবে। যাকে আগুন [জাহান্নাম] থেকে দূরে রাখা হবে এবং [যে] বেহেশ্তে প্রবেশলাভ করিবে সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।” [সূরা আলে ইমরান ১৮৫ আয়াত]

তিনি আরো বলেন,

 ﴿ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ ﴾ [لقمان: ٣٤] 

অর্থাৎ “কেউ জানে না আগামী কাল সে কী অর্জন করিবে এবং কেউ জানে না কোন্ দেশে তার মৃত্যু ঘটবে।” [সূরা লুকমান ৩৪ আয়াত]

তিনি অন্যত্র বলেন,

 ﴿فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمۡ لَا يَسۡتَأۡخِرُونَ سَاعَةٗ وَلَا يَسۡتَقۡدِمُونَ﴾ [الاعراف: ٣٤] 

অর্থাৎ “অতঃপর যখন তাহাদের সময় আসে, তখন তারা মুহূর্তকালও বিলম্ব অথবা অগ্রগামী করিতে পারে না।” [সূরা  নাহ্‌ল ৬১ আয়াত]

তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُلۡهِكُمۡ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَلَآ أَوۡلَٰدُكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ ٩ وَأَنفِقُواْ مِن مَّا رَزَقۡنَٰكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوۡلَآ أَخَّرۡتَنِيٓ إِلَىٰٓ أَجَلٖ قَرِيبٖ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٠ وَلَن يُؤَخِّرَ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِذَا جَآءَ أَجَلُهَاۚ وَٱللَّهُ خَبِيرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ ١١ ﴾ [المنافقون: ٩،  ١١] 

অর্থাৎ “হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন না করে, যারা উদাসীন হবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় কর তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে [অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে,] ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছু কালের জন্য অবকাশ দিলে আমি সাদকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ কিন্তু নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কখনো কাউকেও অবকাশ দেবেন না। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।” [সূরা মুনাফিকূন ৯-১১ আয়াত]

তিনি আরো বলেন,

﴿ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَ أَحَدَهُمُ ٱلۡمَوۡتُ قَالَ رَبِّ ٱرۡجِعُونِ ٩٩ لَعَلِّيٓ أَعۡمَلُ صَٰلِحٗا فِيمَا تَرَكۡتُۚ كَلَّآۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَآئِلُهَاۖ وَمِن وَرَآئِهِم بَرۡزَخٌ إِلَىٰ يَوۡمِ يُبۡعَثُونَ ١٠٠ فَإِذَا نُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَلَآ أَنسَابَ بَيۡنَهُمۡ يَوۡمَئِذٖ وَلَا يَتَسَآءَلُونَ ١٠١ فَمَن ثَقُلَتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٢ وَمَنۡ خَفَّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ فِي جَهَنَّمَ خَٰلِدُونَ ١٠٣ تَلۡفَحُ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ وَهُمۡ فِيهَا كَٰلِحُونَ ١٠٤ أَلَمۡ تَكُنۡ ءَايَٰتِي تُتۡلَىٰ عَلَيۡكُمۡ فَكُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ ١٠٥ قَالُواْ رَبَّنَا غَلَبَتۡ عَلَيۡنَا شِقۡوَتُنَا وَكُنَّا قَوۡمٗا ضَآلِّينَ ١٠٦ رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا مِنۡهَا فَإِنۡ عُدۡنَا فَإِنَّا ظَٰلِمُونَ ١٠٧ قَالَ ٱخۡسَ‍ُٔواْ فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ ١٠٨ إِنَّهُۥ كَانَ فَرِيقٞ مِّنۡ عِبَادِي يَقُولُونَ رَبَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰحِمِينَ ١٠٩ فَٱتَّخَذۡتُمُوهُمۡ سِخۡرِيًّا حَتَّىٰٓ أَنسَوۡكُمۡ ذِكۡرِي وَكُنتُم مِّنۡهُمۡ تَضۡحَكُونَ ١١٠ إِنِّي جَزَيۡتُهُمُ ٱلۡيَوۡمَ بِمَا صَبَرُوٓاْ أَنَّهُمۡ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ١١١ قَٰلَ كَمۡ لَبِثۡتُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ عَدَدَ سِنِينَ ١١٢ قَالُواْ لَبِثۡنَا يَوۡمًا أَوۡ بَعۡضَ يَوۡمٖ فَسۡ‍َٔلِ ٱلۡعَآدِّينَ ١١٣ قَٰلَ إِن لَّبِثۡتُمۡ إِلَّا قَلِيلٗاۖ لَّوۡ أَنَّكُمۡ كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١١٤ أَفَحَسِبۡتُمۡ أَنَّمَا خَلَقۡنَٰكُمۡ عَبَثٗا وَأَنَّكُمۡ إِلَيۡنَا لَا تُرۡجَعُونَ ١١٥ ﴾ [المؤمنون: ٩٩،  ١١٥] 

অর্থাৎ “যখন তাহাদের [অবিশ্বাসী ও পাপীদের] কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সে বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে পুনরায় [দুনিয়ায়] প্রেরণ কর। যাতে আমি আমার ছেড়ে আসা জীবনে সৎকর্ম করিতে পারি।’ না এটা হবার নয়; এটা তো তার একটা উক্তি মাত্র; তাহাদের সামনে বারযাখ [যবনিকা] থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজ-খবর নিবে না। সুতরাং যাদের [নেকীর] পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম। আর যাদের [নেকীর] পাল্লা হাল্কা হবে, তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। আগুন তাহাদের মুখমন্ডলকে দগ্ধ করিবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়। তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হতো না? অথচ তোমরা সেগুলিকে মিথ্যা মনে করিতে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল এবং আমরা ছিলাম এক বিভ্রান্ত সম্প্রদায়। হে আমাদের প্রতিপালক! এই আগুন হতে আমাদেরকে উদ্ধার কর; অতঃপর আমরা যদি পুনরায় অবিশবাস করি তাহলে অবশ্যই আমরা সীমালংঘনকারী হব।’ আল্লাহ বলবেন, ‘‘তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না। আমার বান্দাদের মধ্যে একদল ছিল যারা বলত, ‘হে আমাদের  প্রতিপালক! আমরা বিশবাস করেছি; সুতরাং তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও ও আমাদের উপর দয়া কর, তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ কিন্তু তাহাদেরকে নিয়ে তোমরা এতো ঠাট্টা-বিদ্রূপ করিতে যে, তা তোমাদেরকে আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল; তোমরা তো তাহাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাই করিতে। আমি আজ তাহাদেরকে তাহাদের ধৈর্যের কারণে এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হল সফলকাম।’’ তিনি বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে কত বছর অবস্থান করেছিলে?’ তারা বলবে, ‘আমরা অবস্থান করেছিলাম এক দিন অথবা একদিনের কিছু অংশ, তুমি না হয় গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখ।’ তিনি বলবেন, ‘তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে; যদি তোমরা জানতে। তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না?” [সূরা মুমিনূন ৯৯-১১৫ আয়াত]

তিনি অন্যত্র বলেন,

﴿ ۞أَلَمۡ يَأۡنِ لِلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن تَخۡشَعَ قُلُوبُهُمۡ لِذِكۡرِ ٱللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ ٱلۡحَقِّ وَلَا يَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلُ فَطَالَ عَلَيۡهِمُ ٱلۡأَمَدُ فَقَسَتۡ قُلُوبُهُمۡۖ وَكَثِيرٞ مِّنۡهُمۡ فَٰسِقُونَ ١٦ ﴾ [الحديد: ١٦] 

অর্থাৎ “যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাহাদের সময় কি আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাহাদের হৃদয় ভক্তি-বিগলিত হবে? এবং পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাহাদের মত তারা হবে না? বহুকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে যাদের অন্তর কঠিন হয়ে পড়েছিল। আর তাহাদের অধিকাংশই সত্যত্যাগী।” [সূরা হাদীদ ১৬ আয়াত]

এ প্রসঙ্গে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। [হাদীস নিম্নরূপঃ-]

1/579 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: أَخَذَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بِمَنْكِبَيَّ، فَقَالَ: «كُنْ في الدُّنْيَا كَأنَّكَ غَرِيبٌ، أَو عَابِرُ سَبيلٍ» . وَكَانَ ابنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، يَقُولُ: إِذَا أمْسَيتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ المَسَاءَ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ . رواه البخاري

১/৫৭৯। ইবনি উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ [একদা] আমার দুই কাঁধ ধরে বলিলেন, ‘‘তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক।’’ আর ইবনি উমার রাঃআঃ বলিতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।’ [বুখারী, এটি ৪৭৫ নম্বরে গত হয়েছে।] মরণ কে স্মরণ করার হাদিস [1]

2/580 وَعَنهُ: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ، لَهُ شَيْءٌ يُوصِي فِيهِ، يَبيتُ لَيْلَتَيْنِ إِلاَّ وَوَصِيَّتُهُ مَكْتُوبَةٌ عِنْدَهُ ». متفقٌ عَلَيْهِ، هَذَا لفظ البخاري .

وفي روايةٍ لمسلمٍ: «يَبِيتُ ثَلاَثَ لَيَالٍ» قَالَ ابنُ عُمَرَ: مَا مَرَّتْ عَلَيَّ لَيْلَةٌ مُنْذُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ ذَلِكَ إِلاَّ وَعِنْدِي وَصِيَّتِي .

২/৫৮০। উক্ত সাহাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে মুসলিমের নিকট অসিয়ত করার মত কোন কিছু আছে, তার জন্য দু’ রাত কাটানো জায়েয নয় এমন অবস্থা ছাড়া যে, তার অসিয়ত-নামা তার নিকট লিখিত [প্রস্তুত] থাকা উচিত।’’ [বুখারী-মুসলিম, শব্দগুলি বুখারীর] মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় তিন রাত কাটানোর কথা রয়েছে। ইবনি উমার রাঃআঃ বলেন, ‘আমি যখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে এ কথা বলিতে শুনেছি, তখন থেকে আমার উপর এক রাতও পার হয়নি এমন অবস্থা ছাড়া যে আমার অসিয়ত-নামা আমার নিকট প্রস্তুত আছে।’ [2]

3/581 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: خَطَّ النَّبيُّ ﷺ خُطُوطاً، فَقَالَ: «هَذَا الإنْسَانُ، وَهَذَا أجَلُهُ، فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إذْ جَاءَ الخَطُّ الأَقْرَبُ ». رواه البخاري

৩/৫৮১। আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, একবার নবী সাঃআঃ কয়েকটি রেখা আঁকলেন এবং বলিলেন, ‘‘এটা হল মানুষ, [এটা তার আশা-আকাঙ্ক্ষা] আর এটা হল তার মৃত্যু, সে এ অবস্থার মধ্যেই থাকে; হঠাৎ নিকটবর্তী রেখা [অর্থাৎ মৃত্যু] এসে পড়ে।’’ [বুখারী] [3] মরণ কে স্মরণ করার হাদিস

4/582 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: خَطَّ النَّبيُّ ﷺ خَطّاً مُرَبَّعاً، وَخَطَّ خَطّاً في الوَسَطِ خَارِجَاً مِنْهُ، وَخَطَّ خُطَطاً صِغَاراً إِلَى هَذَا الَّذِي في الْوَسَطِ مِنْ جَانِبهِ الَّذِي في الوَسَط، فَقَالَ: « هَذَا الإنْسَانُ، وَهذَا أجَلُهُ مُحيطاً بِهِ ـ أَوْ قَدْ أحَاطَ بِهِ ـ وَهذَا الَّذِي هُوَ خَارِجٌ أمَلُهُ، وَهذِهِ الْخُطَطُ الصِّغَارُ الأَعْرَاضُ، فَإنْ أخْطَأَهُ هَذَا، نَهَشَهُ هَذَا، وَإنْ أخْطَأَهُ هَذَا، نَهَشَهُ هَذَا ». رواه البخاري

৪/৫৮২। ইবনি মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, একদিন নবী সাঃআঃ একটি চতুর্ভুজ আঁকলেন এবং এর মাঝখানে একটি রেখা টানলেন যেটি চতুর্ভুজের বাইরে চলে গেল। তারপর দু পাশ দিয়ে মাঝের রেখার সাথে ভিতরের দিকে কয়েকটা ছোট ছোট রেখা মেলালেন এবং বলিলেন, ‘‘এ মাঝামাঝি রেখাটা হল মানুষ। আর চতুর্ভুজটি হল তার মৃত্যু; যা তাকে ঘিরে রেখেছে। আর বাইরের দিকে বর্ধিত রেখাটি হল তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। আর ছোট ছোট রেখাগুলো নানা রকম বিপদাপদ। যদি সে এর একটাকে এড়িয়ে যায়, তবে অন্যটা তাকে আক্রমণ করে। আর অন্যটাকেও যদি এড়িয়ে যায়, তবে পরবর্তী অন্য একটি তাকে আক্রমণ করে।’’ [বুখারী] [4] মরণ কে স্মরণ করার হাদিস

* এর নক্সা নিম্নরূপঃ-

মানুষ
আশা-আকাঙ্ক্ষা

                  মৃত্যু  

                  আপদ-বিপদ

6/583 وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ: « بَادِرُوْا بِالأَعْمَالِ سَبْعاً، هَلْ تَنْتَظِرُوْنَ إلاَّ فَقْراً مُنْسِياً، أَوْ غِنَى مُطغِياً، أَوْ مَرَضاً مُفسِداً، أو هَرَماً مُفَنِّداً، أَو مَوْتاً مُجْهِزِاً، أَوْ الدَّجَّالَ، فَشَرُّ غَائِبٍ يُنْتَظَرُ،أَوِ السَّاعَةَ وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ ؟، » رواهُ الترمذي وقال: حديثٌ حسنٌ.

৫/৫৮৩। আবু হুরায়রা রাঃআঃ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এরশাদ করেছেনঃ সাতটি জিনিস প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই তোমরা ভাল কাজের দিকে অগ্রসর হওঃ [১] তোমরা কি এমন দারিদ্রতার জন্য অপেক্ষা করছো যা অমনোযোগী [অক্ষম] করে দেয়, [২] অথবা এ রকম প্রাচুর্যের যা ধর্মদ্রোহী বানিয়ে ফেলে, [৩] অথবা এমন রোগ-ব্যাধির যা [শারিরীক সামর্থ্যকে] ধ্বংস করে দেয়, [৪] অথবা এমন বৃদ্ধাবস্থার যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে বিনষ্ট করে দেয়, [৫] অথবা এমন মৃত্যুর যা হঠাৎই উপস্থিত হয়, [৬] কিংবা দাজ্জালের, যা অপেক্ষমান অনুপস্থিত বিষয়ের মধ্যে নিকৃষ্টতর, [৭] অথবা কিয়ামাতের যা অত্যন্ত বিভীষিকাময় ও তিক্তকর। [তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন][5]

5/584 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « أكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ» يَعْنِي: المَوْتَ . رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »

৬/৫৮৪। আবু হুরায়রা রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আনন্দনাশক বস্তু অর্থাৎ মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর।’’ [তিরমিযী, হাসান সূত্রে] [6] মরণ কে স্মরণ করার হাদিস

7/585 وَعَن أُبَيِّ بنِ كَعبٍ رضي الله عنه: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ قَامَ، فَقَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ، اذْكُرُوا اللهَ، جَاءتِ الرَّاجِفَةُ، تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ، جَاءَ المَوْتُ بِمَا فِيهِ، جَاءَ المَوْتُ بِمَا فِيهِ » قُلْتُ: يَا رَسُول اللهِ، إنِّي أُكْثِرُ الصَّلاَةَ عَلَيْكَ، فَكَمْ أجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلاَتِي ؟ فَقَالَ: «مَا شِئْتَ» قُلْتُ: الرُّبُع، قَالَ: «مَا شِئْتَ، فَإنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ » قُلْتُ: فَالنِّصْف ؟ قَالَ: «مَا شِئْتَ، فَإنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ » قُلْتُ: فالثُّلُثَيْنِ ؟ قَالَ: «مَا شِئْتَ، فَإنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ» قُلْتُ: أجعَلُ لَكَ صَلاَتِي كُلَّهَا ؟ قَالَ: «إذاً تُكْفَى هَمَّكَ، وَيُغْفَر لَكَ ذَنْبُكَ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن » ৭/৫৮৫। উবাই ইবনি কা‘ব রাঃআঃ হইতে বর্ণিত যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ পার হয়ে যেত, তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ উঠে দাঁড়াতেন এবং বলিতেন, ‘‘হে লোক সকল! আল্লাহকে স্মরণ কর। কম্পনকারী [প্রথম ফুৎকার] এবং তার সহগামী [দ্বিতীয় ফুৎকার] চলে এসেছে এবং মৃত্যুও তার ভয়াবহতা নিয়ে হাজির।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি [আমার দো‘আতে] আপনার উপর দরূদ বেশি পড়ি। অতএব আমি আপনার প্রতি দরূদ পড়ার জন্য [দো‘আর] কতটা সময় নির্দিষ্ট করব?’ তিনি বলিলেন, ‘‘তুমি যতটা ইচ্ছা কর।’’ আমি বললাম, ‘এক চতুর্থাংশ?’ তিনি সাঃআঃ বলিলেন, ‘‘যতটা চাও। যদি তুমি বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য উত্তম হবে।’’ আমি বললাম, ‘অর্ধেক [সময়]?’ তিনি বলিলেন, ‘‘তুমি যা চাও; যদি বেশি কর, তাহলে তা ভাল হবে।’’ আমি বললাম, ‘দুই তৃতীয়াংশ?’ তিনি বলিলেন, ‘‘তুমি যা চাও [তাই কর]। যদি বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য উত্তম।’’ আমি বললাম, ‘আমি আমার [দো‘আর] সম্পূর্ণ সময় দরূদের জন্য নির্দিষ্ট করব!’ তিনি বলিলেন, ‘‘তাহলে তো [এ কাজ] তোমার দুশ্চিন্তা [দূর করার] জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার পাপকে মোচন করা হবে।’’ [তিরমিযী, হাসান সূত্রে] [7]


[1] সহীহুল বুখারী ৬৪১৬, তিরমিযী ২৩৩৩, ইবনু মাজাহ ৪১১৪, আহমাদ ৪৭৫, ৪৯৮২, ৬১২১

[2] সহীহুল বুখারী ২৭৩৮, মুসলিম ১৬২৭, তিরমিযী ৯৭৪, ২১১৮, নাসায়ী ৩৬১৫, ৩৬১৬, ৩৬১৮, ৩৬১৯, আবূ দাউদ ২৮৬২, ইবনু মাজাহ ২৬৯৯, আহমাদ ৪৪৫৫, ৪৫৬৪, ৪৮৮৪, ৫০৯৮, ৫১৭৫, ৫৪৮৭, ৫৮৯৪, ৬০৫৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৯২

[3] সহীহুল বুখারী ৬৪১৮, তিরমিযী ২৩৩৪, ইবনু মাজাহ ৪২৩২, আহমাদ ১১৮২৯, ১১৯৭৯, ১২০৩৬, ১৩২৮৫, ১৩৩৮৪

[4] সহীহুল বুখারী ৬৪১৭, তিরমিযী ২৪৫৪, ইবনু মাজাহ ৪২৩১, আহমাদ ৩৬৪৪, ৪১৩১, ৪৪২৩, দারেমী ২৭২৯

[5] হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করে বলেছেনঃ হাদীসটি হাসান। কিন্তু হাদীসটি হাসান নয় বরং দুর্বল। আমি [আলবানী] বলছিঃ এর সনদে দুর্বলতা রয়েছে আর এ সম্পর্কে আমি ‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ গ্রন্থে [নং ১৬৬৬] ব্যাখ্যা প্রদান করেছি। আমি এর কোন শাহেদ পাচ্ছি না। তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত সনদে মুহরিয ইবনু হারূন নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। অন্য একটি সূত্রে এ মুহরিয না থাকলেও সেটির মধ্যে নাম উল্লেখ না করা এক অজ্ঞাত ব্যক্তি হতে মা‘মার বর্ণনা করিয়াছেন আর সে অজ্ঞাত ব্যক্তি মাকবূরী হতে বর্ণনা করিয়াছেন। ফলে অন্য সূত্রটিও এ মাজহূল বর্ণনাকারীর কারণে দুর্বল।

[6] তিরমিযী ২৩০৬, আহমাদ ৮১০৪, ৮২৪১, ৮৬৩২, ৯০২৫, ১০২৬২

[7] তিরমিযী ২৪৫৭, আহমাদ ২০৭৩৫

Comments

Leave a Reply