মদীনায় হিজরত এবং নাবী (সাঃ) এর সাহাবীবর্গের উপস্থিতি

মদীনায় হিজরত এবং নাবী (সাঃ) এর সাহাবীবর্গের উপস্থিতি

মদীনায় হিজরত এবং নাবী (সাঃ) এর সাহাবীবর্গের উপস্থিতি >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৩, আনসারগণের মর্যাদা, অধ্যায়ঃ (৪৫-৪৬)=২টি

৬৩/৪৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) এবং তাহাঁর সাহাবীদের মদীনায় হিজরত।
৬৩/৪৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) এর সাহাবীবর্গের মদীনা উপস্থিতি

৬৩/৪৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) এবং তাহাঁর সাহাবীদের মদীনায় হিজরত।

আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ও আবু হুরাইরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন, যদি হিজরতের ফাযীলাত না হত তবে আমি আনসারদেরই একজন হতাম। আবু মূসা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি মক্কা হইতে হিজরত করছি এমন জায়গায় যেখানে খেজুর বাগান আছে। আমি ভাবলাম, তা হইবে ইয়ামামাহ কিংবা হাজার। [১] পরে দেখলাম যে, তা মদীনা-ইয়াস্‌রিব।

[১] উক্ত স্থান সম্পর্কে সর্বোত্তম মত হচ্ছে এটি ইয়ামান এর একটি শহর এর নাম (ফাতহুল বারী)।

৩৮৯৭

উবূ ওয়াইল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উবূ ওয়াইল (রাদি.) বলেন, আমরা পীড়িত খাব্বাব (রাদি.) – কে দেখিতে গেলাম। তিনি আমাদেরকে বলিলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে হিজরত করেছিলাম – আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। আল্লাহর নিকট আমাদের সওয়াব রয়েছে। তবে আমাদের মথ্যে কেউ কেউ কোন প্রতিদানের কিছু না নিয়েই চলে গেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন মুসআব ইবনু উমার (রাদি.)। তিনি ওহুদের দিন শহীদ হন। তিনি একখানা চাদর রেখে যান। আমরা যখন এটি দিয়ে তাহাঁর মাথা ঢেকে দিতাম, তখন তাহাঁর পা বেরিয়ে পড়ত, আর যখন আমরা পা ঢেকে দিতাম, তখন তাহাঁর মাথা বেরিয়ে পড়ত। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের নির্দেশ করিলেন যে, আমরা যেন তাহাঁর মাথা ঢেকে দিই এবং তাহাঁর পায়ের উপর কিছু ইয্‌খির রেখে দিই। আর আমাদের মধ্যে এমন কেউ কেউ আছেন, যাদের ফল পরিপক্ক হয়েছে আর তারা তা পেড়ে খাচ্ছেন।

(আঃপ্রঃ ৩৬১০, ইঃফাঃ ৩৬১৫)

৩৮৯৮

উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উমার (রাদি.) বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) – কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমলের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যাতের [১] উপর। সুতরাং যার হিজরত [২] হয় দুনিয়া লাভের জন্য কিংবা কোন স্ত্রীলোককে বিবাহ করার উদ্দেশে, তাহলে তার হিজরত হইবে যে উদ্দেশে সে হিজরত করেছে। আর যার হিজরত হইবে আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের উদ্দেশ্য, তবে তার হিজরত হইবে আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলেরই জন্য। (১)

(আঃপ্রঃ ৩৬১১, ইঃফাঃ ৩৬১৬)

[১] নিয়্যাত শব্দের অর্থ অন্তরের দৃঢ় সংকল্প। শরঈয়াতের পরিভাষায় এর বিশেষ অর্থ নিম্নরূপঃ (১) কোন কাজকে কোন কাজ থেকে পৃথক করা বা নির্দিষ্ট করে নেয়া। যথা ফারয সলাতের নিয়্যাত করা মানে সুন্নাত তথা নাফল থেকে পৃথক বা নির্দিষ্ট করা। (২) কোন কাজ সম্পাদনের সংকল্প করা। যথা হাজ্জের নিয়্যাত করা মানে হাজ্জ সম্পাদনের সংকল্প করা। (৩) নিয়্যাত মানে কোন কাজের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য। উক্ত হাদীসে নিয়্যাত শব্দটি এ শেষোক্ত অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন কাজের ফরাফল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের উপরই নির্ভর করে।

এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, নিয়্যাত যেহেতু অন্তরের সংকল্পেরই নাম, সেহেতু কোন কাজের নিয়্যাতের সময় অন্তরে সংকল্প না করে শুধু মুখে উচ্চারণ করলে চলবে না। যেমন সলাত আদায়ের পূর্বে অনেক মুসল্লীকে সলাতের আরবীতে তথাকথিত গদবাধা নিয়্যাত করিতে দেখা যায় – যার প্রমাণ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর কোন হাদীসে পাওয়া যায় না। সুতরাং সলাতের নিয়্যতে নির্দিষ্টভাবে মনের দৃঢ় সংকল্পই যথেষ্ট; মুখে উচ্চারণ রাসুল (সাঃআঃ) এর সুন্নাহর পরিপন্থী যা নবাবিষ্কৃত হিসেবে গণ্য।

[২] হিজরত শব্দের অর্থ ত্যাগ করা, ছিন্ন করা। শরঈয়াতের পরিভাষায় এর দুধরনের অর্থ রয়েছ। (১) আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য এক স্থান ত্যাগ করে অন্য স্থানে যাওয়া, ঈমান ও ধর্ম রক্ষার জন্য নিরাপদ স্থানে গমন করা। যথা রাসুল (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাহাবীদের মক্কা হইতে মদীনায় গমনকে হিজরত বলা হয়। (২) শরঈয়াতের নিষিদ্ধ কাজগুলোকে পরিহার করা। তাই রাসুল হাদীসে বলেনঃ প্রকৃত মুহাজির ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে ত্যাগ করেছে।

৩৮৯৯

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) বলিতেন, (মক্কা) বিজয়ের পর হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই।

৩৯০০

আওয়াযী আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আওয়াযী আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ইবায়দ ইবনু উমায়র লাইসী (রাদি.) – এর সঙ্গে আয়েশা (রাদি.) এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তারপর তাঁকে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, এখন আর হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই। অতীতে মুমিনদের কেউ তার দ্বীনের জন্য তার প্রতি ফিতনার ভয়ে আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের দিকে হিজরত করিতেন আর আজ আল্লাহ ইসলামকে বিজয়ী করিয়াছেন। এখন কোন মুমিন তার রবের ইবাদত যেখানে ইচ্ছা করিতে পারে। তবে এখন আছে জিহাদ ও নিয়্যাত।

(আঃপ্রঃ ৩৬১২/৩৬১৩, ইঃফাঃ ৩৬১৭)

৩৯০১

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সাদ (রাদি.) দুআ করিলেন, হে আল্লাহ! আপনি তো জানেন, আমার নিকট আপনার রাহে এ কাওমের বিরুদ্ধে, যারা আপনার রাসুলকে অবিশ্বাস করেছে ও তাঁকে বিতাড়িত করেছে। জিহাদ করা এত প্রিয় যতটুকু অন্য কারো বিরুদ্ধে নয়। হে আল্লাহ! আমার ধারণা আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যকার লড়াই শেষ করে দিয়েছেন। আবন ইবনু ইয়াযীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)… আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, সে কাওম যারা তোমার নাবী (সাঃআঃ) – কে অবিশ্বাস করেছে এবং তাঁকে বের করে দিয়েছে, তারা কুরাইশ গোত্রই।

(আঃপ্রঃ ৩৬১৪, ইঃফাঃ ৩৬১৮)

৩৯০২

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ- কে নবুওয়াত দেয় হয় চল্লিশ বছর বয়সে, এরপর তিনি তের বছর মক্কায় কাটান। এ সময় তাহাঁর প্রতি ওহী নাযিল হচ্ছিল। তারপর হিজরতের নির্দেশ পান। এবং হিজরতের পর দশ বছর কাটান। আর তিনি তেষট্টি বছর বয়সে মারা যান।

(আঃপ্রঃ ৩৬১৫, ইঃফাঃ ৩৬১৯)

৩৯০৩

ইবনু আব্বাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মক্কায় তের বছর কাটান। তিনি তিষট্টি বছর বয়সে মারা যান।

(আঃপ্রঃ ৩৬১৬, ইঃফাঃ ৩৬২০)

৩৯০৪

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মিম্বরে বসলেন এবং বলিলেন, আল্লাহ তার এক বান্দাকে দুটি বিষয়ের একটি বেছে নেয়ার অধিকার দিয়েছেন। তার একটি হল দুনিয়ার ভোগ-বিলাস আর একটি হল আল্লাহর নিকট যা রক্ষিত রয়েছে। তখন সে বান্দা আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তাই পছন্দ করিলেন। একথা শুনে, আবু বকর (রাদি.) কেঁদে ফেললেন, এবং বলিলেন, আমাদের পিতা-মাতাকে আপনার জন্য কুরবানী করলাম। তাহাঁর অবস্থা দেখে আমরা বিস্মিত হলাম। লোকেরা বলিতে লাগল, এ বৃদ্ধের অবস্থা দেখ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এক বান্দা সম্বন্ধে খবর দিলেন যে, তাকে আল্লাহ ভোগ-সম্পদ দেওয়ার এবং তার কাছে যা রয়েছে, এ দুয়ের মধ্যে বেছে নিতে বলিলেন আর এই বৃদ্ধ বলছে, আপনার জন্য আমাদের মাতাপিতা উৎসর্গ করলাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- ই হলেন সেই ইখতিয়ার প্রাপ্ত বান্দা। আর আবু বকর (রাদি.) ই হলেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, যে ব্যক্তি তার সঙ্গ ও সম্পদ দিয়ে আমার প্রতি সবচেয়ে ইহসান করিয়াছেন তিনি হলেন আবু বকর (রাদি.)। যদি আমি আমার উম্মতের কোন ব্যক্তিকে অন্তরঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে আবু বক্‌রকেই করতাম। তবে তার সঙ্গে আমার ইসলামী ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক রয়েছে। মসজিদের দিকে আবু বকর (রাদি.) এর দরজা ছাড়া অন্য কারো দরজা খোলা থাকবে না।

(আঃপ্রঃ ৩৬১৭, ইঃফাঃ ৩৬২১)

৩৯০৫

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার মাতা পিতাকে কখনো ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন পালন করিতে দেখিনি এবং এমন কোন দিন কাটেনি যেদিন সকালে কিংবা সন্ধ্যায় রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদের বাড়িতে আসেননি। যখন মুসলমানগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়লেন, তখন আবু বাকর (রাদি.) হিজরাত করে আবিসিনিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশে বের হলেন। শেষে বারকুল গিমাদ পৌঁছলে ইবনু দাগিনার সাথে তাহাঁর সাক্ষাৎ হয়। সে ছিল তার গোত্রের নেতা। সে বলিল, হে আবু বাকর! কোথায় যাচ্ছেন? উত্তর আবু বাকর (রাদি.) বলিলেন, আমার স্ব-জাতি আমাকে বের করে দিয়েছে। তাই আমি মনে করছি, পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াব এবং আমার প্রতিপালকের ইবাদত করব। ইবনু দাগিনা বলিল, হে আবু বাকর (রাদি.)! আপনার মত ব্যক্তি বের হইতে পারে না এবং বের করাও হইতে পারে না। আপনি তো নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করে দেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানের মেহমানদারী করে থাকেন এবং সত্য পথের পথিকদের বিপদ আপদে সাহায্য করেন। সুতরাং আমি আপনাকে আশ্রয় দিচ্ছি, আপনাকে যাবতীয় সহযোগিতার ওয়াদা করছি। আপনি ফিরে যান এবং নিজ শহরে আপনার রবের ইবাদত করুন। আবু বাকর (রাদি.) ফিরে এলেন। তাহাঁর সঙ্গে ইবনু দাগিনাও এল। ইবনু দাগিনা বিকেল বেলা কুরাইশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে গেল এবং তাদেরকে বলিল, আবু বাকরের মত লোক দেশ হইতে বের হইতে পারে না এবং তাকে বের করে দেয়া যায় না। আপনারা কি এমন ব্যক্তিকে বের করবেন, যে নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে বিপদ এলে সাহায্য করেন। ইবনু দাগিনার আশ্রয়দান কুরাইশগণ মেনে নিল এবং তারা ইবনু দাগিনাকে বলিল, তুমি আবু বকরকে বলে দাও, তিনি যেন তাহাঁর রবের ইবাদত তাহাঁর ঘরে করেন। সালাত সেখানেই আদায় করেন, ইচ্ছা মাফিক কুরআন তিলাওয়াত করবেন। কিন্তু এর দ্বারা আমাদের যেন কষ্ট না দেন। আর এসব ব্যাপারে যেন প্রকাশ্যে না করেন। কেননা, আমরা আমাদের মেয়েদের ও ছেলেদের ফিত্নায় পড়ে যাওয়ার ভয় করি। ইবনু দাগিনা এসব কথা আবু বাকর (রাদি.)-কে বলে দিলেন। সে মতে কিছুকাল আবু বাকর (রাদি.) নিজের ঘরে তাহাঁর রবের ইবাদত করিতে লাগলেন। সালাত প্রকাশ্যে আদায় করিতেন না এবং ঘরেই কুরআন তিলওয়াত করিতেন। এরপর আবু বাকরের মনে খেয়াল জাগল। তাই তিনি তাহাঁর ঘরের পার্শ্বেই একটি মসজিদ তৈরি করে নিলেন। এতে তিনি সালাত আদায় করিতে ও কুরআন পড়তে লাগলেন। এতে তাহাঁর কাছে মুশরিকা মহিলা ও যুবকরা ভীড় জমাতে লাগল। তারা আবু বাকর (রাদি.)-এর একাজে বিস্ময়বোধ করত এবং তাহাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত। আবু বাকর (রাদি.) ছিলেন একজন ক্রন্দনকারী ব্যক্তি, তিনি যখন কুরআন পড়তেন তখন তাহাঁর অশ্রু সামলিয়ে রাখতে পারতেন না। এ ব্যাপারটি মুশরিকদের নেতৃস্থানীয় কুরাইশদের ভীত করে তুলল এবং তারা ইবনু দাগিনাকে ডেকে পাঠান। সে এল। তারা তাকে বলিল, তোমার আশ্রয় প্রদানের কারণে আমরাও আবু বাকরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এই শর্তে যে, তিনি তাহাঁর রবের ইবাদত তাহাঁর ঘরে করবেন কিন্তু সে শর্ত তিনি ভঙ্গ করিয়াছেন এবং নিজ গৃহের পাশে এটি মসজিদ তৈরি করে প্রকাশ্যে সালাত ও তিলওয়াত শুরু করিয়াছেন। আমাদের ভয় হচ্ছে, আমাদের মহিলা ও সন্তানরা ফিতনায় পড়ে যাবে। কাজেই তুমি তাঁকে নিষেধ করে দাও। তিনি তাহাঁর রবের ইবাদত তাহাঁর গৃহের ভিতর সীমাবদ্ধ রাখতে চাইলে, তিনি তা করিতে পারেন। আর যদি তিনি তা অমান্য করে প্রকাশ্যে তা করিতে চান তবে তাঁকে তোমার আশ্রয় প্রদান ও দায় দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে বল। আমরা তোমার আশ্রয় দানের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করা অত্যন্ত অপছন্দ করি, আবার আবু বাকরকেও এভাবে প্রকাশ্যে ইবাদাত করার জন্য ছেড়ে দিতে পারি না। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, ইবনু দাগিনা এসে আবু বাকর (রাদি.)-কে বলিল, আপনি অবশ্যই জানেন যে, কী শর্তে আমি আপনার জন্য ওয়াদাবদ্ধ হয়েছিলাম। আপনি হয়ত তাতে সীমিত থাকবেন অন্যথায় আমার জিম্মাদারী আমাকে ফিরত দিবেন। আমি এ কথা মোটেই পছন্দ করি না যে আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ এবং আমার আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি আমার বিশ্বাসঘাতকতার অপবাদ আরববাসীর নিকট প্রকাশিত হোক। আবু বাকর (রাদি.) তাকে বলিলেন, আমি তোমার আশ্রয় তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার আল্লাহর আশ্রয়ের উপর সন্তুষ্ট আছি। এ সময় নাবী সাঃআঃ মক্কা্য় ছিলেন। নাবী সাঃআঃ মুসলিমদের বলিলেন, আমাকে তোমাদের হিজরাতের স্থান (স্বপ্নে) দেখান হয়েছে। সে স্থানে খেজুর বাগান রয়েছে এবং তা দুইটি পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত। এরপর যাঁরা হিজরাত করিতে চাইলেন, তাঁরা মদিনার দিকে হিজরাত করিলেন। আর যাঁরা হিজরাত করে আবিসিনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন, তাঁদেরও অধিকাংশ সেখান হইতে ফিরে মদিনায় চলে আসলেন। আবু বাকর (রাদি.)ও মদিনায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁকে বলিলেন, তুমি অপেক্ষা কর। আশা করছি আমাকেও অনুমতি দেয়া হইবে। আবু বাকর (রাদি.) বলিলেন, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান১! আপনিও কি হিজরাতের আশা করছেন? তিনি বলিলেন, হাঁ। তখন আবু বাকর (রাদি.) রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সঙ্গ পাওয়ার জন্য নিজেকে হিজরাত হইতে বিরত রাখলেন এবং তাহাঁর নিকট যে দুটি উট ছিল এ দুটি চার মাস পর্যন্ত বাবলা গাছের পাতা খাওয়াতে থাকেন।

ইবনু শিহাব উরওয়াহ (রাদি.) সূত্রে আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, ইতিমধ্যে একদিন আমরা ঠিক দুপুর বেলায় আবু বাকর (রাদি.) এর ঘরে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে আবু বাকরকে খবর দিল যে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ মস্তক আবৃত অবস্থায় আসছেন। তা এমন সময় ছিল যে সময় তিনি পূর্বে কখনো আমাদের এখানে আসেনি। আবু বাকর (রাদি.) তাহাঁর আসার কথা শুনে বলিলেন, আমার মাতাপিতা তাহাঁর প্রতি কুরবান। আল্লাহর কসম, তিনি এ সময় নিশ্চয় কোন গুরুত্বপূর্ণ কারণেই আসছেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ পৌঁছে অনুমতি চাইলেন। তাঁকে অনুমতি দেয়া হল। প্রবেশ করে নাবী সাঃআঃ আবু বাকরকে বলিলেন, এখানে অন্য যারা আছে তাদের বের করে দাও। আবু বাকর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতামাতা আপনার প্রতি কুরবান! এখানে তো আপনারই পরিবার। তখন তিনি বলিলেন, আমাকেও হিজরাতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আবু বাকর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান! আমি আপনার সফর সঙ্গী হইতে ইচ্ছুক। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, ঠিক আছে। আবু বাকর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতামাতা কুরবান! আমার এ দুটি উট হইতে আপনি যে কোন একটি নিন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, তবে মূল্যের বিনিময়ে। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, আমরা তাঁদের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা অতি শীঘ্র সম্পন্ন করলাম এবং একটি থলের মধ্যে, তাঁদের খাদ্যসামগ্রী গুছিয়ে দিলাম। আমার বোন আসমা বিনতে আবু বাকর (রাদি.) তার কোমর বন্ধের কিছু অংশ কেটে সে থলের মুখ বেঁধে দিলেন। এ কারণেই তাঁকে জাতুন নেতাক (কোমর বন্ধ ওয়ালী) বলা হত। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও আবু বাকর (রাদি.) সাওর পর্বতের একটি গুহায় আশ্রয় নিলেন। তাঁরা সেখানে তিনটি রাত অবস্থান করিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু আবু বাকর (রাদি.) তাঁদের পাশেই রাত্রি যাপন করিতেন। তিনি ছিলেন একজন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন তরুণ। তিনি শেষ রাত্রে ওখান হইতে বেরিয়ে মক্কা্য় রাত্রি যাপনকারী কুরাইশদের সঙ্গে মিলিত হইতেন এবং তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হত তা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন, ও স্মরণ রাখতেন। যখন অাঁধার ঘনিয়ে আসত তখন তিনি সংবাদ নিয়ে তাঁদের উভয়ের কাছে যেতেন। আবু বাকর (রাদি.)-এর গোলাম আমির ইবনু যুহাইরাহ তাঁদের কাছেই দুধালো বকরীর পাল চরিয়ে বেড়াত। রাতের কিছু সময় চলে গেলে পর সে বকরীর পাল নিয়ে তাঁদের নিকটে যেত এবং তাঁরা দুজন দুধ পান করে আরামে রাত্রিযাপন করিতেন। তাঁরা বকরীর দুধ দোহন করে সাথে সাথেই পান করিতেন। তারপর শেষ রাতে আমির ইবনু ফুহাইরাহ বকরীগুলি হাঁকিয়ে নিয়ে যেত। এ তিন রাতের প্রতি রাতে সে এমনই করিল। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও আবু বাকর (রাদি.) বনী আবদ ইবনু আদি গোত্রের এক ব্যক্তিকে মজুরির বিনিময়ে খির্রীত (পথ প্রদর্শক) নিযুক্ত করেছিলেন। দক্ষ পথপ্রদর্শককে খির্রীত বলা হয়। আদী গোত্রের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল। সে ছিল কাফির কুরাইশের ধর্মাবলম্বী। তাঁরা উভয়ে তাকে বিশ্বস্ত মনে করে তাঁদের উট দুটি তার হাতে দিয়ে দিলেন এবং তৃতীয় রাত্রের পরে সকালে উট দুটি সাওর গুহার নিকট নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করিলেন। আর সে যথা সময়ে তা পৌঁছিয়ে দিল। আর আমির ইবনু ফুহাইরাহ ও পথপ্রদর্শক তাঁদের উভয়ের সঙ্গে চলল। প্রদর্শক তাঁদের নিয়ে উপকূলের পথ ধরে চলতে লাগল। (আঃপ্রঃ ৩৬১৮ প্রথমাংশ, ইঃফাঃ ৩৬২২ প্রথমাংশ)

আবদুর রহমান ইবনু মালিক মুদলেজী আমাকে বলেছেন, তিনি সুরাকাহ ইবনু মালিকের ভ্রাতুষ্পুত্র। তার পিতা তাকে বলেছেন, তিনি সুরাকাহ ইবনু জুশুমকে বলিতে শুনেছেন যে, আমাদের নিকট কুরাইশী কাফিরদের দূত আসল এবং রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও আবু বাকর (রাদি.) এ দুজনের যে কোন একজনকে যে হত্যা করিবে অথবা বন্দী করিতে পারবে তাকে পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিল। আমি আমার কওম বনী মুদলীজের এক মজলিসে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তাদের নিকট হইতে এক ব্যক্তি এসে আমাদের নিকটে দাঁড়াল। আমরা বসাই ছিলাম। সে বলিল, হে সুরাকাহ! আমি এই মাত্র উপকূলের পথে কয়েকজন মানুষকে যেতে দেখলাম। আমার ধারণা, এরা মুহাম্মাদ সাঃআঃ ও তাহাঁর সহযাত্রীরা হইবেন। সুরাকাহ বলেন, আমি বুঝতে পারলাম যে এঁরা তাঁরাই হইবেন। কিন্তু তাকে বললাম, এরা তাঁরা নয়, বরং তুমি অমুক অমুককে দেখছ। এরা এই মাত্র আমাদের সম্মুখ দিয়ে চলে গেল। তারপর আমি কিছুক্ষণ মজলিসে অবস্থান করে চলে এলাম এবং আমার দাসীকে আদেশ করলাম, তুমি আমার ঘোড়াটি বের করে নিয়ে যাও এবং অমুক টিলার আড়ালে ঘোড়াটি ধরে দাঁড়িয়ে থাক। আমি আমার বর্শা হাতে নিলাম এবং বাড়ির পিছন দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বর্শাটির এক প্রান্ত হাতে ধরে অপর প্রান্ত মাটি হেচড়ানো অবস্থায় আমি টেনে নিয়ে চলছিলাম ঐ অবস্থায় বর্শার মাটি হেচড়ানো অংশ দ্বারা মাটির উপর রেখাপাত করিতে করিতে আমার ঘোড়ার নিকট গিয়ে পৌঁছলাম এবং ঘোড়ায় আরোহণ করে তাকে খুব দ্রুত ছুটালাম। সে আমাকে নিয়ে ছুটে চলল। আমি প্রায় তাদের নিকট পৌঁছে গেলাম, এমন সময় আমার ঘোড়াটি হোঁচট খেয়ে আমাকে নিয়ে পড়ে গেল। আমিও তার পিঠ হইতে ছিটকে পড়লাম। তারপর আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং তুণের দিকেহাত বাড়ালাম এবং তা হইতে তীরগুলি বের করলাম ও তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা করে নিলাম যে আমি তাদের কোন ক্ষতি করিতে পারবো কি-না। তখন তীরগুলি দুর্ভাগ্যবশতঃ এমনভাবে বেরিয়ে এল যে, ভাগ্য নির্ধারণের বেলায় এমন হওয়া পছন্দ করি না। আমি আবার ভাগ্য পরীক্ষার ফলাফল অমান্য করে অশ্বারোহণ করে সম্মুখ পানে এগুতে লাগলাম। আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর এত নিকটবর্তী হয়ে গেলাম যে তাহাঁর তিলাওয়াতের আওয়ায শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি ফিরে তাকাচ্ছিলেন না কিন্তু আবু বাকর (রাদি.) বারবার তাকিয়ে দেখছিলেন। এমন সময় হঠাৎ আমার ঘোড়ার সামনের পা দুটি হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে গেল এবং আমি তার উপর হইতে পড়ে গেলাম। তখন ঘোড়াটিকে ধমক দিলাম, সে দাঁড়াতে ইচ্ছা করিল, কিন্তু পা দুটি বের করিতে পারছিল না। শেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, তখন হঠাৎ তার সামনের পা দুটি বের করিতে পারছিল না। অবশেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, তখন হঠাৎ তার সামনের পা দুটি যেখানে গেড়ে ছিল সেখান হইতে ধুঁয়ার মত ধূলি আকাশের দিকে উঠতে লাগল। তখন আমি তীর দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করলাম। এবারও যা আমার অপছন্দনীয় তা-ই প্রকাশ পেল। তখন উচ্চস্বরে তাঁদের নিরাপত্তা চাইলাম। এতে তাঁরা থেমে গেলেন এবং আমি আমার ঘোড়ায় আরোহণ করে এলাম। আমি যখন এমন অবস্থায় বার বার বাধাপ্রাপ্ত ও বিপদে পড়ছিলাম তখনই আমার অন্তরে এ বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছিল যে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর এ মিশনটি অচিরেই প্রভাব বিস্তার করিবে। তখন আমি তাঁকে বললাম আপনার কওম আপনাকে ধরে দিতে পারলে একশ উট পুরস্কার ঘোষণা করেছে। মক্কায় কাফিরগণ তাহাঁর সম্পর্কে যে ইচ্ছা করেছে তা তাঁকে জানালাম এবং আমি তাদের জন্য কিছু খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পেশ করলাম। তাঁরা তা হইতে কিছুই নিলেন না। আর আমার কাছে এ কথা ছাড়া কিছুই চাইলেন নাঃ আমাদের খবরটি গোপন রেখ। এরপর আমি আমাকে একটি নিরাপত্তা লিপি লিখে দেয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করলাম। তখন তিনি আমির ইবনু ফুহাইরাহকে আদেশ দিলেন। তিনি এক টুকরো চামড়ায় তা লিখে দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ রওয়ানা দিলেন।

ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) আমাকে বলেছেন, পথিমধ্যে যুবায়রের সাথে নাবী সাঃআঃ-এর সাক্ষাত হয়। তিনি মুসলমানদের একটি বণিক কাফেলার সাথে সিরিয়া হইতে ফিরছিলেন। তখন যুবায়র (রাদি.) রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও আবু বাকর (রাদি.)-কে সাদা রঙ্গের পোশাক দান করিলেন। এদিকে মদিনায় মুসলিমগণ শুনলেন যে নাবী সাঃআঃ মক্কা হইতে মদিনার পথে রওয়ানা হয়েছেন। তাই তাঁরা প্রতিদিন সকালে মদিনার হার্রা পর্যন্ত গিয়ে অপেক্ষা করিতেন থাকেন, দুপুরে রোদ প্রখর হলে তারা ঘরে ফিরে আসতেন। একদিন তারা পূর্বাপেক্ষা বেশি সময় প্রতীক্ষা করার পর নিজ নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। এমন সময় এক ইয়াহূদী একটি টিলায় আরোহণ করে এদিক ওদিক কি যেন দেখছিল। তখন সে নাবী সাঃআঃ ও তাহাঁর সাথীসঙ্গীদেরকে সাদা পোশাক পরা অবস্থায় মরীচিকাময় মরুভূমির উপর দিয়ে আগমন করিতে দেখিতে পেল। ইয়াহূদী তখন নিজেকে সংবরণ করিতে না পেরে উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার করে বলে উঠল, হে আরব সম্প্রদায়! এইতো সে ভাগ্যবান ব্যক্তি- যার জন্য তোমরা অপেক্ষা করছ। মুসলিমগণ তাড়াতাড়ি হাতিয়ার তুলে নিয়ে মদিনার হাররার উপকন্ঠে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ সঙ্গে মিলিত হলেন। তিনি সকলকে নিয়ে ডানদিকে মোড় নিয়ে বনু আমর ইবনু আউফ গোত্রে অবতরণ করিলেন। এদিনটি ছিল রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার। আবু বাকর (রাদি.) দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলিতে লাগলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ নীরব রইলেন। আনসারদের মধ্য হইতে যাঁরা এ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-কে দেখেননি তাঁরা আবু বাকর (রাদি.)-কে সালাম করিতে লাগলেন, তারপর যখন রৌদ্রের উত্তাপ নাবীজী সাঃআঃ-এর উপর পড়তে লাগল এবং আবু বাকর (রাদি.) অগ্রসর হয়ে তাহাঁর চাদর দিয়ে নাবী সাঃআঃ উপর ছায়া করে দিলেন তখন লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-কে চিনতে পারল। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বনু আমার ইবনু আউফ গোত্রে দশদিনের চেয়ে কিছু বেশি সময় কাটালেন এবং সে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন, যা তাক্ওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত! রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এতে সালাত আদায় করেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাহাঁর উঁনীতে আরোহণ করে রওয়ানা হলেন। লোকেরাও তাহাঁর সঙ্গে চলতে লাগলেন। মদিনায় মসজিদে নাবাবীর স্থানে পৌঁছে উটনীটি বসে পড়ল। সে সময় ঐ স্থানে কতিপয় মুসলিম সালাত আদায় করিতেন। এ জায়গাটি ছিল আসআদ ইবনু যুরারাহ এর আশ্রয়ে পালিত সাহল ও সুহায়েল নামক দুজন ইয়াতীম বালকের খেজুর শুকাবার স্থান। রাসূলূল্লাহ সাঃআঃ-কে নিয়ে উটনীটি যখন এ স্থানে বসে পড়ল, তখন তিনি বলিলেন, ইনশাআল্লাহ, এ স্থানটিই হইবে আবাসস্থল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ সেই বালক দুটিকে ডেকে পাঠালেন এবং মাসজিদ তৈরির জন্য তাদের কাছে জায়গাটি মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয়ের আলোচনা করিলেন। তারা বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! বরং এটি আমরা আপনার জন্য বিনামূল্যে দিচ্ছি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তাদের কাছ হইতে বিনামূল্যে গ্রহণে অসম্মতি জানালেন এবং অবশেষে স্থানটি তাদের হইতে খরীদ করে নিলেন। তারপর সেই স্থানে তিনি মাসজিদ তৈরি করিলেন। রাসূলূল্লাহ সাঃআঃ মাসজিদ নির্মাণকালে সহাবা কেরামের সঙ্গে ইট বহন করছিলেন এবং ইট বহনের সময় তিনি আবৃত্তি করছিলেনঃ

এ বোঝা খায়বারের বোঝা বহন নয়।

ইয়া রব, এর ভোঝা অত্যন্ত পুণ্যময় ও অতি পবিত্র।

তিনি আরো বলছিলেন,

হে আল্লাহ! পরকালের প্রতিদানই প্রকৃত প্রতিদান।

সুতরাং আনসার ও মুহাজিরদের প্রতি অনুগ্রহ করুন।

এক মুসলিম কবির কবিতা আবৃত্তি করেন, যার নাম আমাকে বলা হয়নি। ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এছাড়া অপর কোন পূর্ণ কবিতা পাঠ করছেন বলে, কোন কথা আমার কাছে পৌঁছেনি।

(আঃপ্রঃ ৩৬১৮ শেষাংশ, ইঃফাঃ ৩৬২২ শেষাংশ)

৩৯০৬

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) – এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার মাতা পিতাকে কখনো ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন পালন করিতে দেখিনি এবং এমন কোন দিন কাটেনি যেদিন সকালে কিংবা সন্ধ্যায় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের বাড়িতে আসেননি। যখন মুসলামানগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়লেন, তখন আবু বকর (রাদি.) হিজরত করে আবিসিনিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশে বের হলেন। শেষ বারকুল গিমাদ পৌঁছলে ইবনু দাগিনার সাথ তাহাঁর সাক্ষাৎ হয়। সে ছিল তার গোত্রের নেতা। সে বলিল, হে আবু বক্‌র! কোথায় যাচ্ছেন? উত্তর আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, আমার স্ব-জাতি আমাকে বের করে দিয়েছে তাই আমি মনে করছি, পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াব এবং আমার প্রতিপালকের ইবাদত করব। ইবনু দাগিনা বলিল, হে আবু বকর (রাদি.)! আপনার মত ব্যক্তি বের হইতে পারে না এবং বের করাও হইতে পারে না। আপনি তো নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করে দেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানের মেহমানদারী করে থাকেন এবং সত্য পথের পথিকদের বিপদ আপদে সাহায্য করেন। সুতরাং আমি আপনাকে আশ্রয় দিচ্ছি, আপনাকে যাবতীয় সহযোগিতার ওয়াদা করছি। আপনি ফিরে যান এবং নিজ শহরে আপনার রবের ইবাদত করুন। আবু বকর (রাদি.) ফিরে এলেন। তাহাঁর সঙ্গে ইবনু দাগিনাও এল। ইবনু দাগিনা বিকেল বেলা কুরাইশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে গেল এবং তাদেরকে বলিল, আবু বাক্‌রের মত লোক দেশ হইতে বের হইতে পারে না এবং তাকে বের করে দেয়া যায় না। আপনারার কি এমন ব্যাক্তিকে বের করবেন, যে নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে বিপদ এলে সাহায্য করেন। ইবনু দাগিনার আশ্রয়দান কুরাইশগণ মেনে নিল এবং তারা ইবনু দাগিনাকে বলিল, তুমি আবু বকরকে বলে দাও, তিনি যেন তাহাঁর রবের ইবাদত তাহাঁর ঘরে করেন। সলাত সেখানেই আদায় করেন, ইচ্ছা মাফিক কুরআন তিলাওয়াত করবেন। কিন্তু এর দ্বারা আমাদের যেন কষ্ট না দেন। আর এসব ব্যাপারে যেন প্রকাশ্যে না করেন। কেননা, আমরা আমাদের মেয়েদের ও ছেলেদের ফিতনায় পড়ে যাওয়ার ভয় করি। ইবনু দাগিনা এসব কথা আবু বকর (রাদি.) কে বলে দিলেন। সে মতে কিছুকাল আবু বকর (রাদি.) নিজের ঘরে তাহাঁর রবের ইবাদত করিতে লাগলেন। সলাত প্রকাশ্যে আদায় করিতেন না এবং ঘরেই কুরআন তিলওয়াত করিতেন। এরপর আবু বাকরের মনে খেয়াল জাগল। তাই তিনি তাহাঁর ঘরের পার্শ্বেই একটি মসজিদ তৈরি করে নিলেন। এতে তিনি সলাত আদায় করিতে ও কুরআন পড়তে লাগলেন। এতে তাহাঁর কাছে মুশরিকা মহিলা ও যুবকরা ভীড় জমাতে লাগল। তারা আবু বকর (রাদি.) – এর একাজে বিস্ময়বোধ করত এবং তাহাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত। আবু বকর (রাদি.) ছিলেন একজন ক্রন্দনকারী ব্যক্তি, তিনি যখন কুরআন পড়তেন তখন তাহাঁর অশ্রু সামলিয়ে রাখতে পারতেন না। এ ব্যাপারটি মুশরিকদের নেতৃস্থানীয় কুরাইশদের ভীত করে তুলল এবং তারা ইবনু দাগিনাকে ডেকে পাঠান। সে এল। তারা তাকে বলিল, তোমার আশ্রয় প্রদানের কারণে আমরাও আবু বক্‌রকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এই শর্তে যে, তিনি তাহাঁর রবের ইবাদত তাহাঁর ঘরে করবেন কিন্তু সে শর্ত তিনি ভঙ্গ করিয়াছেন এবং নিজ গৃহের পাশে একটি মসজিদ তৈরি করে প্রকাশ্যে সলাত ও তিলওয়াত শুরু করিয়াছেন। আমাদের ভয় হচ্ছে, আমাদের মহিলা ও সন্তানরা ফিতনায় পড়ে যাবে। কাজেই তুমি তাঁকে নিষেধ করে দাও। তিনি তাহাঁর রবের ইবাদত তাহাঁর গৃহের ভিতর সীমাবদ্ধ রাখতে চাইলে তিনি তা করিতে পারেন। আর যদি তিনি তা অমান্য করে প্রকাশ্যে তা করিতে চান তবে তাঁকে তোমার আশ্রয় প্রদান ও দায় দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে বল। আমরা তোমার আশ্রয় দানের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করা অত্যন্ত অপছন্দ করি, আবার আবু বক্‌রকেও এভাবে প্রকাশ্যে ইবাদাত করার জন্য ছেড়ে দিতে পারি না। আয়েশা (রাদি.) বলেন, ইবনু দাগিনা এসে আবু বকর (রাদি.) – কে বলিল, আপনি অবশ্যই জানেন যে, কী শর্তে আমি আপনার জন্য ওয়াদাবদ্ধ হয়েছিলাম। আপনি হয়ত তাতে সীমিত থাকবেন অন্যথায় আমার জিম্মাদারী আমাকে ফিরত দিবেন। আমি এ কথা মোটেই পছন্দ করি না যে আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ এবং আমার আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি আমার বিশ্বসঘাতকতার অপবাদ আরববাসীর নিকট প্রকাশিত হোক। আবু বক্‌র (রাদি.) তাকে বলিলেন, আমি তোমার আশ্রয় তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি আল্লাহর আশ্রয়ের উপর সন্তুষ্ট আছি। এ সময় নাবী (সাঃআঃ) মক্কায় ছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) মুসলিমদের বলিলেন, আমাকে তোমাদের হিজরতের স্থান (স্বপ্নে) দেখান হয়েছে। সে স্থানে খেজুর বাগান রয়েছে এবং তা দুইটি পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত। এরপর যাঁরা হিজরত করিতে চাইলেন, তাঁরা মদীনার দিকে হিজরত করিলেন। আর যাঁরা হিজরত করে আবিসিনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন, তাঁদেরও অধিকাংশ সেখান হইতে ফিরে মাদীনহয় চলে আসলেন। আবু বকর (রাদি.) ও মদীনায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাঁকে বলিলেন, তুমি অপেক্ষা কর। আশা করছি আমাকেও অনুমতি দেয়া হইবে। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান [১]! আপনিও কি হিজরতের আশা করছেন? তিনি বলিলেন, হাঁ। তখন আবু বকর (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর সঙ্গ পাওয়ার জন্য নিজেকে হিজরত হইতে বিরত রাখলেন এবং তাহাঁর নিকট যে দুটি উট ছিল এ দুটি চার মাস পর্যন্ত বাবলা গাছের পাতা খাওয়াতে থাকেন।

ইবনু শিহাব উরওয়াহ (রাদি.) সূত্রে আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, ইতিমধ্যে একদিন আমরা ঠিক দুপুর বেলায় আবু বকর (রাদি.) এর ঘরে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে আবু বক্‌রকে খবর দিল যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মস্তক আবৃত অবস্থায় আসছেন। তা এমন সময় ছিল যে সময় তিনি পূর্বে কথনো আমাদের এখানে আসেননি। আবু বকর (রাদি.) তাহাঁর আসার কথা শুনে বলিলেন, আমার মাতাপিতা তাহাঁর প্রতি কুরবান। আল্লাহর কসম, তিনি এ সময় নিশ্চয় কোন গুরুত্বপূর্ণ কারণেই আসছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) পৌঁছে অনুমতি চাইলেন। তাঁকে অনুমতি দেয়া হল। প্রবেশ করে নাবী (সাঃআঃ) আবু বক্‌রকে বলিলেন, এখানে অন্য যারা আছে তাদের বের করে দাও। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতামাতা আপনার প্রতি কুরবান! এখানে তো আপনারই পরিবার। তখন তিনি বলিলেন, আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেয়া হয়েছ। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান! আমি আপনার সফর সঙ্গী হইতে ইচ্ছুক। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, ঠিক আছে। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতামাতা কুরবান! আমার এ দুটি উট হইতে আপনি যে কোন একটি নিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তবে মূল্যের বিনিময়ে। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমরা তাঁদের জন্য যাবতয়ি ব্যবস্থা অতি শীঘ্র সম্পন্ন করলাম এবং একটি থলের মধ্যে, তাঁদের খাদ্রসামগ্রী গুছিয়ে দিলাম। আমার বোন আসমা বিনতে আবু বকর (রাদি.) তার কোমর বন্ধের কিছু অংশ কেটে সে থলের মুখ বেঁধে দিলেন। এ কারণেই তাঁকে জাতুন নেতাক (কোমর বন্ধ ওয়ালী) বলা হত। আয়েশা (রাদি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও আবু বকর (রাদি.) সাওর পর্বতের একটি গুহায় আশ্রয় নিলেন। তাঁরা সেখানে তিনটি রাত অবস্থান করিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু আবু বকর (রাদি.) তাঁদের পাশেই রাত্রি যাপন করিতেন। তিনি ছিলেন একজন তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন তরুণ। তিনি শেষ রাত্রে ওখান হইতে বেরিয়ে মক্কায় রাত্রি যাপনকারী কুরাইশদের সঙ্গে মিলিত হইতেন এবং তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হত তা মনোযোগ দিয়ে শুনতের, ও স্মরণ রাখতেন। যখন আঁধার ঘনিয়ে আসত তখন তিনি সংবাদ নিয়ে তাঁদের উভয়ের কাছে যেতেন। আবু বকর (রাদি.) – এর গোলাম আমির ইবনু যুহাইরাহ তাঁদের কাছেই দুধালো বকরীর পাল চরিয়ে বেড়াত। রাতের কিছু সময় চলে গেলে পরে সে বকরীর পাল নিয়ে তাদেঁর নিকটে যেত এবং তাঁরা দুজন দুধ পান করে আরামে রাত্রিযাপন করিতেন। তাঁরা বকরীর দুধ দোহন করে সাথে সাথেই পান করিতেন। তারপর শেষ রাতে আমির ইবনু ফুহাইরাহ বকরীগুলি হাঁকিয়ে নিয়ে যেত। এ তিন রাতের প্রতি রাতে সে এমনই করিল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও আবু বকর (রাদি.) বানী আবদ ইবনু আদি গোত্রের এক ব্যক্তিকে মজুরির বিনিময়ে খির্‌রীত (পথ প্রদর্শক) নিযুক্ত করেছিলেন। দক্ষ পথপ্রদর্শককে খির্‌রীত বলা হয়। আদী গোত্রের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল। সে ছিল কাফির কুরাইশের ধর্মাবলম্বী। তাঁরা উভয়ে তাকে বিশ্বস্ত মনে করে তাঁদের উট দুটি তার হাতে দিয়ে দিলেন এবং তৃতীয় রাত্রের পরে সকালে উট দুটি সাওর গুহার নিকট নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করিলেন। আর সে যথা সময়ে তা পৌঁছিয়ে দিল। আর আমির ইবনু ফুহাইরাহ ও পথপ্রদর্শক তাঁদের উভয়ের সঙ্গে চলল। প্রদর্শক তাদেঁর নিয়ে উপকূলের পথ ধরে চলতে লাগল।

আবদুর রহমান ইবনু মালিক মুদলেজী আমাকে বলেছেন, তিনি সুরাকাহ ইবনু মালিকের ভ্রাতুষ্পুত্র। তার পিতা তাকে বলেছেন, তিনি সুরাকাহ ইবনু জুশুমকে বলিতে শুনেছেন যে, আমাদের নিকট কুরাইশী কাফেরদের দূত আসল এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও আবু বকর (রাদি.) এর দুজনের যে কোন একজনকে যে হত্যা করিবে অথবা বন্দী করিতে পারবে তাকে পুরষ্কার দেয়ার ঘোষণা দিল। আমি আমার কওম বনী মুদলীজের এক মজলিসে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তাদের নিকট হইতে এক ব্যক্তি এসে আমাদের নিকটে দাঁড়াল। আমরা বসাই ছিলাম। সে বলিল, হে সুরাকাহ! আমি এই মাত্র উপকূলের পথে কয়েকজন মানুষকে যেতে দেখলাম। আমার ধারণা, এরা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সহযাত্রীরা হইবেন। সুরাকাহ বলেন, আমি বুঝতে পারলাম যে এঁরা তাঁরাই হইবেন। কিন্তু তাকে বললাম, এরা তাঁরা নয়, বরং তুমি অমুক অমুককে দেখছ। এরা এই মাত্র আমাদের সম্মুখ দিয়ে চলে গেল। তারপর আমি কিছুক্ষণ মজলিসে অবস্থান করে চলে এলাম এবং আমার দাসীকে আদেশ করলাম, তুমি আমার ঘোড়াটি বের করে নিয়ে যাও এবং অমুক টিলার আড়ালে ঘোড়াটি ধরে দাঁড়িয়ে থাক। আমি আমার বর্শা হাতে নিলাম এবং বাড়ির পিছন দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বর্শাটির এক প্রান্ত হাতে ধরে অপর প্রান্ত মাটি হেচড়ানো অবস্থায় আমি টেনে নিয়ে চলছিলাম ঐ অবস্থায় বর্শার মাটি হেচড়ানো অংশ দ্বারা মাটির উপর রেখাপাত করিতে করিতে আমার ঘোড়ার নিকট পৌঁছলাম এবং ঘোড়ায় আরোহণ করে তাকে খুব দ্রুত ছুটালাম। সে আমাকে নিয়ে ছুটে চলল। আমি প্রায় তাদের নিকট পৌঁছে গেলাম, এমন সময় আমার ঘোড়াটি হোঁচট খেয়ে আমাকে নিয়ে পড়ে গেল। আমিও তার পিঠ হইতে ছিটকে পড়লাম। তারপর আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং তূণের দিকে হাত বাড়ালাম এবং তা হইতে তীরগুলি বের করলাম ও তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা করে নিলাম যে আমি তাদের কোন ক্ষতি করিতে পারনো কি-না। তখন তীরগুলি দুর্ভাগ্যবশতঃ এমনভাবে বেরিয়ে এল যে, ভাগ্য নির্ধারণের বেলায় এমন হওয়া পছন্দ করি না। আমি আবার ভাগ্য পরীক্ষার ফলাফল অমান্য করে অশ্বারোহণ করে সম্মুখ পারে এগুতে লাগলাম। আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর এত নিকটবর্তী হয়ে গেলাম যে তাহাঁর তিলাওয়াতের আওয়ায শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি ফিরে তাকাচ্ছিলেন না কিন্তু আবু বকর (রাদি.) বারবার তাকিয়ে দেখছিলেন। এমন সময় হঠাৎ আমার ঘোড়ার সামনের পা দুটি হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে গেলে এবং আমি তার উপর হইতে পড়ে গেলাম। তখন ঘোড়াটিকে ধমক দিলাম, সে দাঁড়াতে ইচ্ছা করিল, কিন্তু পা দুটি বের করিতে পারছিল না। শেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, তখন হঠাৎ তার সামনের পা দুটি বের করিতে পারছিল না। অবশেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, তখন হঠাৎ তার সামনের পা দুটি যেখানে গেড়ে ছিল সেখান হইতে ধুঁয়ার মত ধূলি আকাশের দিকে উঠতে লাগল। তখন আমি তীর দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করলাম। এবারও যা আমার অপছন্দনীয় তা-ই প্রকাশ পেল। তখন উচ্চস্বরে তাঁদের নিরাপত্তা চাইলাম। এতে তাঁরা থেমে গেলেন এবং আমি আমার ঘোড়ায় আরোহণ করে এলাম। আমি যখন এমন অবস্থায় বার বার বাধাপ্রাপ্ত ও বিপদে পড়ছিলাম তখনই আমার অন্তরে এ বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছিল যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর এ মিশনটি অচিরেই প্রভাব বিস্তার করিবে। তখন আমি তাঁকে বললাম আপনার কওম আপনাকে ধরে দিতে পারলে একশ উট পুরষ্কার ঘোষণা করেছে। মক্কায় কাফিরগণ তাহাঁর সম্পর্কে যে ইচ্ছা করেছে তা তাঁকে জানালাম এবং আমি তাদের জন্য কিছু খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পেশ করলাম। তাঁরা তা হইতে কিছুই নিলেন না। আর আমার কাছে এ কথা ছাড়া কিছুই চাইলেন নাঃ “আমাদের খবরটি গোপন রেখ”। এরপর আমি আমাকে একটি নিরাপত্তা লিপি লিখে দেয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করলাম। তখন তিনি আমির ইবনু ফুহাইরাহকে আদেশ দিলেন। তিনি এক টুকরো চামড়ায় তা লিখে দিলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) রওয়ানা দিলেন।

ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) আমাকে বলেছেন, পথিমধ্যে যুবায়রের সাথে নাবী (সাঃআঃ) এর সাক্ষাত হয়। তিনি মুসলমানদের একটি বণিক কাফেলার সাথে সিরিয়া হইতে ফিরছিলেন। তখন যুবায়র (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও আবু বকর (রাদি.)- কে সাদা রঙ্গের পোশাক দান করিলেন। এদিকে মদীনায় মুসলিমগণ শুলেন যে নাবী (সাঃআঃ) মক্কা হইতে মদীনার পথে রওয়ানা হয়েছেন। তাই তাঁরা প্রতিদিন সকালে মদীনার হার্‌রা পর্যন্ত গিয়ে অপেক্ষা করিতে থাকেন, দুপুরে রোদ প্রখর হলে তারা ঘরে ফিরে আসতেন। একদিন তারা পূর্বাপেক্ষা বেশি সময় প্রতীক্ষা করার পর নিজ নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। এমন সময় এক ইয়াহূদী একটি টিলায় আরোহণ করে এদিক ওদিক কি যেন দেখছিল। তখন সে নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাথীসঙ্গীদেরকে সাদা পোশাক পর অবস্থায় মরীচিকাময় মরুভূমিরউপর দিয়ে আগমন করিতে দেখিতে পেল। ইয়াহূদী তখন নিজেকে সংবরণ করিতে না পেরে উচ্চ:স্বরে চীৎকার করে বলে উঠল, হে আরব সম্প্রদায়! এইতো সে ভাগ্যবান ব্যক্তি – যার জন্য তোমরা অপেক্ষা করছে। মুসলিমগণ তাড়াতাড়ি হাতিয়ার তুলে নিয়ে মদীনার হার্‌রার উপকণ্ঠে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে মিলিত হলেন। তিনি সকলকে নিয়ে ডানদিকে মোড় নিয়ে বনু আমর ইবনু আউফ গোত্রে অবতরণ করিলেন। এদিনটি ছিল রবিউল আ্উয়াল মাসের সোমবার। আবু বকর (রাদি.) দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলিতে লাগলেন। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নীরব রইলেন। আনসারদের মধ্য হইতে যাঁরা এ পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে দেখেননি তাঁরা আবু বকর (রাদি.) – কে সালাম করিতে লাগলেন, তারপর যখন রৌদ্রের উত্তাপ নাবীজী (সাঃআঃ) এর উপর পড়তে লাগল এবং আবু বকর (রাদি.) অগ্রসর হয়ে তাহাঁর চাদর দিয়ে নাবী (সাঃআঃ) উপর ছায়া করে দিলেন তখন লোকেরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে চিনতে পারল।

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বনু আমার ইবনু আউফ গোত্রে দশদিনের চেয়ে কিছু বেশি সময় কাটালেন এবং সে মসজিদের ভিত্তি স্থাপর করেন, যা তাক্‌ওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত! রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এতে সলাত আদায় করেন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর উঁটনীতে আরোহন করে রওয়ানা হলেন। লোকেরাও তাহাঁর সঙ্গে চলতে লাগলেন। মদীনায় মসজিদে নাবাবীর স্থানে পৌঁছে উটনীটি বসে পড়ল। সে সময় ঐ স্থানে কতিপয় মুসলিম সলাত আদায় করিতেন। এ জায়গাটি ছিল আসআদ ইবনু যুরারাহ এর আশ্রয়ে পালিত সাহল ও সুহায়েল নামক দুজন ইয়াতীম বালকের খেজুর শুকাবার স্থান। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে নিয়ে উটনীটি যখন এ স্থানে বসে পড়ল, তখন তিনি বললে, ইন শা আল্লাহ, এ স্থানটিই হইবে আবাসস্থল। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সেই বালক দুটিকে ডেকে পাঠালেন এবং মসজিদ তৈরির জন্য তাদের কাছে জায়গাটি মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয়ের আলোচনা করিলেন। তারা বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! বরং এটি আমরা আপনার জন্য বিনুমূল্যে দিচ্ছি। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের কাছ হইতে বিনামূল্যে গ্রহণে অসম্মতি জানালেন এবং অবশেষে স্থানটি তাদের হইতে খরীদ করে নিলেন। তারপর সেই স্থানে তিনি মসজিদ তৈরি করিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মসজিদে নির্মাণকালে সহাবা কেরামের সঙ্গে ইট বহন করছিলেন এবং ইট বহনের সময় তিনি আবৃত্তি করছিলেনঃ

এ বোঝা খায়বারের বোঝা বহন নয়।

ইয়া রব, এর বোঝা অত্যন্ত পূণ্যময় ও অতি পবিত্র।

তিনি আরো বলছিলেন,

হে আল্লাহ! পরকালের প্রতিদানই প্রকৃত প্রতিদান।

সুতরাং আনসার ও মুহাজিরদের প্রতি অনুগ্রহ করুন।

এক মুসলিম কবির কবিতা আবৃত্তি করেন, যার নাম আমাকে বলা হয়নি। ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এছাড়া অপর কোন পূর্ণ কবিতা পাঠ করছেন বলে, কোন কথা আমার কাছে পৌঁছেনি।

(আঃপ্রঃ ৩৬১৮ শেষাংশ, ইঃফাঃ ৩৬২২ শেষাংশ)

[১] এটি একটি আরবী ভাষার বাকরীতি; কেননা কুরবান বা উৎসর্গ একমাত্র আল্লাহরই জন্যই হইতে হইবে। অতএব এর অর্থঃ আপনার জন্য আমি আমার জন্মদাতা পিতাকেও পরিত্যাগ করিতে প্রস্তুত আছি।

৩৯০৭

আসমাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, নাবী (সাঃআঃ) এবং আবু বক্‌র (রাদি.) যখন মাদিনাহয় যাওয়ার ইচ্ছা করিলেন, তখন আমি তাঁদের জন্য সফরের খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করলাম। আর আমার পিতাকে বললাম, থলের মুখ বাঁধার জন্য আমার কোমরবন্দ ছাড়া অন্য কিছু পাচ্ছি না। তিনি বলিলেন, ওটা তুমি টুকরো করে নাও। আমি তাই করলাম। এ কারণে আমার নাম হয়ে গেল, যাতুন নিতাকাইন (কোমরবন্দ দুভাগে বিভক্তকারিনী)।

(আঃপ্রঃ ৩৬১৯, ইঃফাঃ ৩৬২৩)

৩৯০৮

বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন নাবী (সাঃআঃ) মাদিনাহর দিকে যাচ্ছিলেন তখন সুরাকাহ ইবনু মালিক ইবনু জশুম তাহাঁর পিছনে ধাওয়া করিল। নাবী (সাঃআঃ) তার জন্য বদদুআ করিলেন। ফলে তার ঘোড়াটি তাকে নিয়ে মাটিতে দেবে গেল। তখন সে বলিল, আপনি, আল্লাহর কাছে আমার জন্য দুআ করুন। আমি আপনার কোন ক্ষতি করব না। নাবী (সাঃআঃ) তার জন্য দুআ করিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এক সময় রসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তৃষ্ণার্ত হলেন। তখন তিনি এক রাখালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবু বক্‌র সিদ্দীক (রাদি.) বলেন, তখন আমি একটি বাটি নিয়ে এতে কিছু দুধ দোহন করে নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে নিয়ে এলাম, তিনি এমনভাবে তা পান করিলেন যে, আমি তাতে সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম।

(আঃপ্রঃ ৩৬২০, ইঃফাঃ ৩৬২৪)

৩৯০৯

আসমাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তখন তাহাঁর পেটে ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের, তিনি বলেন, আমি এমন সময় হিজরত করি যখন আমি আসন্ন প্রসবা। আমি মাদিনাহয় এসে কুবাতে অবতরণ করি। এ কুবাতেই আমি পুত্র সন্তানটি প্রসব করি। এরপর আমি তাকে নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে এসে তাহাঁর কোলে দিলাম। তিনি একটি খেজুর আনলেন এবং তা চিবিয়ে তার মুখে থুথু দিলেন। কাজেই সর্বপ্রথম যে বস্তুটি আব্দুলাহর পেটে গেল তা হল নাবী (সাঃআঃ) এর থুথু। নাবী (সাঃআঃ) সামান্য চিবান খেজুর নবজাতকের মুখের ভিতরের তালুর অংশে লাগিয়ে দিলেন। এরপর তার জন্য দুআ করিলেন এবং বরকত চাইলেন। তিনি হলেন প্রথম নবজাতক সন্তান যিনি হিজরতের পর মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেন। খালিদ ইবনু মাখলদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উক্ত রেওয়াত বর্ণনায় যাকারিয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। এতে রয়েছে যে, আসমা (রাদি.) গর্ভবতী অবস্থায় হিজরত করে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর নিকটে আসেন।

(আঃপ্রঃ ৩৬২১, ইঃফাঃ ৩৬২৫)

৩৯১০

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (হিজরতের পর) মুসলিম পরিবারে সর্বপ্রথম আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়েরই জন্মগ্রহন করেন। তাঁরা তাকে নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে এলেন। তিনি একটি খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিলেন। কাজেই প্রথম যে জিনিসটি তার পেটে গেল তা নাবী (সাঃআঃ)- এর থুথু।

(আঃপ্রঃ ৩৬২২, ইঃফাঃ ৩৬২৬)

৩৯১১

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ) যখন মদীনায় এলেন তখন উষ্ট্রে পৃষ্ঠে আবু বকর (রাদি.) তাহাঁর পশ্চাতে ছিলেন। আবু বকর (রাদি.) ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ [১] ও পরিচিত। আর নাবী (সাঃআঃ) ছিলেন জাওয়ান এবং অপরিচিত। তখন বর্ননাকারী বলেন, যখন আবু বকরের সঙ্গে কারো সাক্ষাৎ হত, সে জিজ্ঞেস করত হে আবু বকর (রাদি.)! তোমার সম্মুখে উপবিষ্ট ঐ ব্যক্তি কে? আবু বকর (রাদি.) বলিতেন, তিনি আমার পথ প্রদর্শক। রাবী বলেন, প্রশ্নকারী সাধারন পথ মনে করত এবং তিনি সত্যপথ উদ্দেশ্য করিতেন। তারপর একবার আবু বকর (রাদি.) পিছনে চেয়ে হঠাৎ দেখিতে পেলেন এক ঘোড় সওয়ার তাদের কাছেই এসে পড়েছে। তখন তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই যে একজন ঘোড় সওয়ার আমাদের পিছনে প্রায় কাছে পৌঁছে গেছে। তখন নাবী (সাঃআঃ) পিছনের দিকে তাকিয়ে দুআ করিলেন, হে আল্লাহ! আপনি ওকে পাকড়াও করুন। ততক্ষনাৎ ঘোড়াটি তাকে নীচে ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে হ্রেষা রব করিতে লাগল। তখন ঘোড় সওয়ার বলিল, হে আল্লাহর নাবী! আপনার যা ইচ্ছা আমাকে আদেশ করুন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি স্বস্থানেই থেমে যাও। কেউ আমাদের দিকে আসতে চাইলে তুমি তাকে বাধা দিবে। বর্ননাকারী বলেন, দিনের প্রথম অংশে ছিল সে নাবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী আর দিনের শেষাংশে হয়ে গেল তাহাঁর পক্ষ হইতে অস্ত্রধারী। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মদীনার হাররার [২] একপাশে অবতরন করিলেন। এরপর আনসারদের খবর দিলেন। তাঁরা নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে এলেন এবং উভয়কে সালাম করে বলিলেন, আপনারা নিরাপদ ও মান্য হিসেবে আরোহণ করুন। নাবী (সাঃআঃ) ও আবু বকর (রাদি.) উটে আরোহন করিলেন আর আনসারগন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁদেরকে ঘিরে চলতে লাগলেন। মদীনায় লোকেরা বলিতে লাগল, আল্লাহর নাবী এসেছেন, আল্লাহর নাবী এসেছেন, লোকজন উঁচু স্থানে উঠে তাঁদের দেখিতে লাগল। আর বলিতে লাগল, আল্লাহর নাবী এসেছেন, আল্লাহর নাবী এসেছেন। তিনি সম্মুখ পানে চলতে লাগলেন। শেষে আবু আইয়ুব (রাদি.) – এর বাড়ির পার্শ্বে গিয়ে অবতরণ করিলেন। আবু আইয়ুব (রাদি.) ঐ সময় তাহাঁর পরিবারের লোকদের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন। ইতোমধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম তাহাঁর আগমনের কথা শুনলেন তখন তিনি তাহাঁর নিজের বাগানে খেজুর সংগ্রহ করছিলেন। তখন তিনি শীঘ্র ফল সংগ্রহ করা হইতে বিরত হলেন এবং সংগৃহীত খেজুরসহ নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট হাজির হলেন এবং নাবী (সাঃআঃ) – এর কিছু কথাবার্তা শুনে নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমাদের লোকদের মধ্যে কার বাড়ী এখান হইতে সবচেয়ে নিকটে? আবু আইয়ুব (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ)! এই তো বাড়ী, এই যে তার দরজা। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তবে চল, আমাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা কর। তিনি বলিলেন, আপনারা দুজনেই চলুন। আল্লাহ বরকত দানকারী। যখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর বাড়ীতে এলেন তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) আসলেন এবং বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসুল; আপনি সত্য নিয়ে এসেছেন। হে আল্লাহর রাসুল! ইয়াহুদী সম্প্রদায় জানে যে আমি তাদের নেতা এবং আমি তাদের নেতার পুত্র। আমি তাদের মধ্যে বেশি জ্ঞানী এবং তাদের বড় জ্ঞানী সন্তান। আমি ইসলাম গ্রহন করেছি এ কথাটি জানাজানি হওয়ার পূর্বে আপনি তাদের ডাকুন এবং আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করুন, আমার সম্পর্কে তাদের ধারনা জ্ঞাত হন। কেননা তারা যদি জানতে পারে যে আমি ইসলাম গ্রহন করেছি, তবে আমার সম্মন্ধে তারা এমন সব অলীক কথা বলবে যা আমার মধ্যে নেই। নাবী (সাঃআঃ) (ইয়াহূদী সম্প্রদায়কে) ডেকে পাঠালেন। তারা এসে তার কাছে হাজির হল। রাসুল (সাঃআঃ) তাদের বলিলেন, হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়, তোমাদের উপর অভিশাপ! তোমরা সেই আল্লাহকে ভয় কর, তিনি ছাড়া মাবুদ নেই। তোমরা নিশ্চয় জান যে আমি সত্য রাসুল (সাঃআঃ) সত্য নিয়েই তোমাদের নিকট এসেছি। সুতরাং তোমরা ইসলাম গ্রহন কর। তারা উত্তর দিল, আমরা এসব জানিনা। তারা তিনবার একথা বলিল। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) কেমন লোক? তারা উত্তর দিল, তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার সন্তান। তিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ট আলিম এবং সর্বশ্রেষ্ট আলিমের পুত্র। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তিনি যদি ইসলাম গ্রহন করেন, তবে তোমাদের মতামত কি হইবে? তারা বলিল আল্লাহ হেফাজত করুন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন তা কিছুতেই হইতে পারে না। তিনি আবার বলিলেন, আচ্ছা বলতো, যদি তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে তোমরা কী মনে করিবে? তারা আবার বলিল, আল্লাহ হেফাজত করুন, কিছুতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করিতে পারের না। নাবী (সাঃআঃ) আবার বলিলেন, আচ্ছা বলতো, তিনি যদি মুসলমান হয়েই যান তবে তোমাদের মত কি? তারা বলিল, আল্লাহ হিফাযত করুন, তিনি মুসলমান হয়ে যাবেন তা কিছুতেই হইতে পারে না। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে ইবনু সালাম! তুমি এদের সামনে বেরিয়ে আস। তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বলিলেন, হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়। আল্লাহকে ভয় কর। ঐ আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তোমরা নিশ্চয় জান তিনি সত্য রাসুল, হক নিয়েই এসেছেন। তখন তারা বলে উঠল, তুমি মিথ্যা বলছ। তারপর নাবী (সাঃআঃ) তাদেরকে বের করে দিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৬২৩, ইঃফাঃ ৩৬২৭)

[১] প্রকৃতপক্ষে নাবী (সাঃআঃ) – এর বয়স আবু বাক্‌রের চেয়ে অধিক ছিল, কিন্তু আবু বক্‌র (রাদি.)-এর চুল-দাড়ি অধিক সাদা হয়ে গিয়েছিল বলে বাহ্যত নাবী (সাঃআঃ)- এর চেয়ে আবু বক্‌র (রাদি.)- কে বেশী বয়স্ক মনে হত।

[২] কঙ্করময় স্থানকে বলা হয়।

৩৯১২

উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, তিনি প্রাথমিক পর্যায়ের মুহাজিরদের জন্য চার কিস্তিতে বাৎসরিক চার হাজার দিরহাম ধার্য করিলেন এবং ইবনু উমারের জন্য নির্বাচন করিলেন তিন হাজার পাঁচশ। তাঁকে বলা হল, তিনিও তো মুহাজিরদের। তাহাঁর জন্য চার হাজার হইতে কম কেন করিলেন? তিনি বলিলেন, সে তো তার পিতা-মাতার সাথে হিজরত করেছে। কাজেই সে ঐ লোকের সমান হইতে পারে না যে লোক একাকী হিজরত করেছে।

(আঃপ্রঃ ৩৬২৪, ইঃফাঃ ৩৬২৮)

৩৯১৩

খাববাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সঙ্গে হিজরাত করেছি একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য। আমাদের পুরস্কার আল্লাহর নিকটই নির্ধারিত। আমাদের মধ্যে অনেকেই তাঁদের কুরবানীর ফল কিছুই দুনিয়ায় ভোগ না করে আখিরাতে চলে গিয়েছেন; তার মধ্যে মুসআব ইবনু উমায়ের (রাদি.) অন্যতম। তিনি ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হন। তাঁকে কাফন দেয়ার জন্য তার একটি চাদর ছাড়া আর অন্য কিছুই আমরা পেলাম না। আমরা এ চাদরটি দিয়ে যখন তাহাঁর মাথা ঢাকলাম তাহাঁর পা বের হয়ে গেল আর যখন তাহাঁর পা ঢাকতে গেলাম তখন মাথা বের হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদের নির্দেশ দিলেন, চাদরটি দিয়ে তাহাঁর মাথা ঢেকে দাও এবং পা দুটির উপর ইয্খির ঘাস রেখে দাও। আজ আমাদের মধ্যে এমন আছেন যাঁদের ফল পেকে গেছে এবং এখন তারা তা সংগ্রহ করছেন। (১২৭৬)

(আঃপ্রঃ ৩৬২৫, ইঃফাঃ ৩৬২৯)

৩৯১৪

খাববাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে হিজরত করেছি একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য। আমাদের পুরস্কার আল্লাহর নিকটই নির্ধারিত। আমাদের মধ্যে অনেকেই তাঁদের কুরবানীর ফল কিছুই দুনিয়ায় ভোগ না করে আখিরাতে চলে গিয়েছেন; তার মধ্যে মুসআব ইবনু উমায়ের (রাদি.) অন্যতম। তিনি ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হন। তাঁকে কাফন দেওয়ার জন্য তার একটি চাদর ছাড়া আর অন্য কিছুই আমরা পেলাম না। আমরা এ চাদরটি দিয়ে যখন তাহাঁর মাথা ঢাকলাম তাহাঁর পা বের হয়ে গেল আর যখন তাহাঁর পা ঢাকতে গেলাম তখন মাথা বের হয়ে গেল। তখন রসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের নির্দেশ দিলেন, চাদরটি দিয়ে তাহাঁর মাথা ঢেকে দাও এবং পা দুটির উপর ইয্‌খির ঘাস রেখে দাও। আজ আমাদের মধ্যে এমন আছেন যাঁদের ফল পেকে গেছে এবং এখন তারা তা সংগ্রহ করছেন।

(আঃপ্রঃ ৩৬২৫, ইঃফাঃ ৩৬২৯)

৩৯১৫

আবু বুরদাহ ইবনু আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) আমাকে বলিলেন, তুমি কি জান আমার পিতা তোমার পিতাকে কী বলেছিলেন? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, আমার পিতা তোমার পিতাকে বলেছিলেন, হে আবু মূসা, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট আছ যে, আমরা রসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর হাতে ইসলাম গ্রহন করেছি, তাহাঁর সঙ্গে হিজরত করেছি, তাহাঁর সঙ্গে জিহাদ করেছি এবং তাহাঁর জীবদ্দশায় করা আমাদের প্রতিটি আমল যা করেছি তা আমাদের জন্য সঞ্চিত থাকুক। তাহাঁর মৃত্যুর পর, আমরা যেসব আমল করেছি, তা আমাদের জন্য সমান সমান হোক। তখন তোমার পিতা আবু মূসা (রাদি.) বলিলেন, না কেননা, আল্লাহর কসম, আমরা রসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর পর জিহাদ করেছি, সলাত আদায় করেছি, সাওম পালন করেছি এবং বহু নেক আমল করেছি। আমাদের হাতে অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহন করেছে। আমরা এসব কাজের সাওয়াব-এর আশা রাখি। তখন আমার পিতা [উমার (রাদি.)] বলিলেন, কিন্তু আমি ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে উমারের প্রান, এতেই সন্তুষ্ট যে, (আগের আমাল) আমাদের জন্য সঞ্চিত থাকুক আর তাহাঁর মৃত্যুর পর আমরা যে সব আমল করেছি তা হইতে যেন আমরা রেহাই পাই সমান সমানভাবে। তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম নিশ্চয়ই তোমার পিতা আমার পিতা হইতে উত্তম।

(আঃপ্রঃ ৩৬২৬, ইঃফাঃ ৩৬৩০)

৩৯১৬

আবু উসমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবু উসমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি ইবনু উমার (রাদি.)- কে বলিতে শুনিয়াছি যে, তাঁকে একথা বলা হলে, “আপনি আপনার পিতার আগে হিজরত করিয়াছেন” তিনি রাগ করিতেন। ইবনু উমার (রাদি.) বলেন, আমি এবং উমার (রাদি.) রসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর নিকট হাযির হলাম। তখন তাঁকে কায়লুলাহ অবস্থায় পেলাম। কাজেই আমরা আমাদের আবাসস্থলে ফিরে এলাম। কিছুক্ষন পর উমার (রাদি.) আমাকে পাঠালেন এবং বলিলেন যাও; গিয়ে দেখ নাবী (সাঃআঃ) জেগেছেন কিনা? আমি এসে তাহাঁর কাছে হাযির হলাম এবং তাহাঁর কাছে বায়আত করলাম। তারপর উমার (রাদি.) এর নিকট এসে তাঁকে খবর দিলাম যে, তিনি জেগে আছেন। তখন আমরা তাহাঁর নিকট গেলাম দ্রুতবেগে। তিনি তাহাঁর কাছে প্রবেশ করে বায়আত করিলেন। তারপর আমিও নাবী (সাঃআঃ)- এর হাতে আবার বায়আত করলাম।

(আঃপ্রঃ ৩৬২৮, ইঃফাঃ ৩৬৩১

৩৯১৭

আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি বারা (রাদি.)- কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, আবু বকর (রাদি.) আমার পিতা আযিব (রাদি.)- এর নিকট হাওদা কিনলেন। আমি আবু বাক্‌রের সাথে কেনা হাওদাটি বয়ে নিয়ে চললাম। তখন আমার পিতা আযিব (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে তাহাঁর হিজাতের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। তখন আবু বক্‌র (রাদি.) বলিলেন, আমাদের খোঁজ করার জন্য মুশরিকরা লোক নিয়োগ করছিল। অবশেষে আমরা রাত্রিকালে বেরিয়ে পড়লাম এবং একরাত ও একদিন একটানা চলতে থাকলাম। যখন দুপুর হয়ে গেল, তখন একটি বিরাট পাথর নযরে পড়ল। আমরা সেটির কাছে এলাম, পাথরটির কিছু ছায়া পড়ছিল। আমি সেখানে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর জন্য আমার সঙ্গের চামড়াখানি বিছিয়ে দিলাম। নাবী (সাঃআঃ) ওটার উপর শুয়ে পড়লেন। আমি এদিক-ওদিক খোঁজ নেয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হঠাত এক বকরীর রাখালকে দেখিতে পেলাম। সে তার বকরীগুলো নিয়ে আসছে। সেও আমাদের মত পাথরের ছায়ায় আশ্রয় নিতে চায়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কার গোলাম? সে বলিল, আমি অমুকের। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার বকরীর পালে দুধ আছে কি? সে বলিল, হাঁ। আমি বললাম, তুমি কি কিছু দোহন করে দিবে? সে বলিল, হাঁ। সে তাহাঁর পাল হইতে একটি বকরী ধরে নিয়ে এল। আমি বললাম, বকরীর স্তন দুটি ঝেড়ে মুছে সাফ করে নাও। সে একপাত্র ভর্তি দুধ দোহন করিল। আমার সাথে একটি পানির পাত্র ছিল। আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর জন্য কাপড় দিয়ে তার মুখ বেঁধে রেখেছিলাম। আমি তা হইতে দুধের মধ্যে কিছু পানি ঢেলে দিলাম। ফলে পাত্রের তলা পর্যন্ত শীতল হয়ে গেল। আমি তা নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে এসে বললাম, পান করুন, ইয়া রসূলাল্লাহ! রসূলাল্লাহ (সাঃআঃ) এমনভাবে পান করিলেন যে, আমি সন্তুষ্ট হলাম। এরপর আমরা যাত্রা করলাম এবং অনুসন্ধানকারী আমাদের পিছনে ছিল।

(আঃপ্রঃ ৩৬২৯, ইঃফাঃ ৩৬৩২ প্রথমাংশ)

৩৯১৮

বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

বারা (রাদি.) বলেন, আমি আবু বক্‌রের সঙ্গে তাহাঁর ঘরে ঢুকলাম। [১] তখন দেখলাম তাহাঁর মেয়ে আয়েশা (রাদি.) বিছানায় শুয়ে আছেন। তাহাঁর জ্বর হয়েছে। তাহাঁর পিতা আবু বকর (রাদি.) – কে দেখলাম তিনি মেয়ের গালে চুমু [২] খেলেন এবং জিজ্ঞেস করিলেন, মা তুমি কেমন আছ?

(আঃপ্রঃ ৩৬২৯, ইঃফাঃ ৩৬৩২ শেষাংশ)

[১] আবু বক্‌র (রাদি.)- এর সাথে তার ঘরে বারা (রাদি.)- এর উক্ত প্রবেশটি ছিল পর্দার বিধান অবতীর্ন হবার পূর্বে এবং তখন তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্কা ছিলেন।

[২] আবু বাকর (রাদি.) কর্তৃক স্বীয় কন্যা আয়েশা (রাদি.)- এর চুমু খাওয়া ছিল স্নেহ ও সোহাগের; কেননা তিনি তখন ছোট্ট ছিলেন। (ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড ৩২৬ পৃষ্ঠা)

৩৯১৯

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) – এর খাদিম আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মদীনায় আগমন করিলেন। এই সময় তাহাঁর সাহাবীদের মধ্যে সাদা কাল চুলওয়ালা আবু বকর (রাদি.) ছাড়া অন্য কেউ ছিলেন না। তিনি তাহাঁর চুলে মেহদী ও কতম (এক প্রকার পাতা) একত্র করে কলপ লাগিয়েছিলেন।

৩৯২০

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মদীনায় এলেন, তখন তাহাঁর সাহাবীদের মধ্যে আবু বকর (রাদি.) ছিলেন সবচেয়ে বয়স্ক। তিনি মেহেদী ও কতম একত্র করে কলপ লাগিয়েছিলেন। এতে তাহাঁর সাদা চুল টুকটুকে লাল রং ধারন করেছিল।

(আঃপ্রঃ ৩৬৩০, ইঃফাঃ ৩৬৩৩)

৩৯২১

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু বকর (রাদি.) কালব গোত্রের উম্মে বক্‌র নাম্নী এক মহিলাকে বিয়ে করিলেন। যখন আবু বকর (রাদি.) হিজরত করেন, তখন তাকে তালাক দিয়ে যান। তারপর ঐ মহিলাকে তার চাচাত ভাই বিয়ে করে নিল। এই লোকটিই হল সেই কবি যে বদর যুদ্ধে নিহত কুরাইশ কাফিরদের শোকগাঁথা রচনা করেছিল।

বদর প্রান্তে কালীব নামক কূপে নিক্ষিপ্ত ওই সব কাফিরগন আজ কোথায় যাদের শিযা নামক কাঠের তৈরি খাদ্য-পাত্রে উটের কুঁজের গোশতে সুসজ্জিত থাকত।

বদরের কালীব কূপে নিক্ষিপ্ত ব্যক্তিগন আজ কোথায় যারা গায়িকা ও সম্মানিত মদ্যপানকারী নিয়ে নিমগ্ন ছিল।

উম্মু বকর শান্তির স্বাগত জানাচ্ছে। আর আমার কাওমের পর আমার জন্য শান্তি কোথায়?

রাসুল আমাদের বলেছেন যে, শীঘ্রই আমাদের জীবিত করা হইবে। কিন্তু চলে যাওয়া আত্মা ও মাথার খুলির জীবন ফিরবে আবার কিভাবে?”

(আঃপ্রঃ ৩৬৩১, ইঃফাঃ ৩৬৩৪)

৩৯২২

আবু বক্‌র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে গুহায় ছিলাম। আমি আমার মাথা উঠিয়ে উপরের দিকে তাকালাম এবং লোকের পা দেখিতে পেলাম। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর নাবী! তাদের কেউ নীচের দিকে তাকালেই আমাদের দেখে ফেলবে। তিনি বলিলেন, হে আবু বক্‌র! চুপ থাক। আমরা দুজন আল্লাহ হলেন যাদের তৃতীয়।

(আঃপ্রঃ ৩৬৩২, ইঃফাঃ ৩৬৩৫)

৩৯২৩

আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একজন বেদুঈন নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে এল এবং তাকে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিল। তিনি বলিলেন, ওহে! হিজরত বড় কঠিন কাজ। এরপর বলিলেন, তোমার কি উট আছে? সে বলিল, হাঁ। তিনি বলিলেন, তুমি কি উটের সাদকা আদায় কর? সে বলিল, হাঁ। তিনি বলিলেন, তুমি কি উটনীর দুধ অন্যকে পান করিতে দাও। সে বলিল, হাঁ। তিনি বলিলেন, যেদিন পানি পান করানোর উদ্দেশ্যে উটগুলি ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় সেদিন কি তুমি দুধ দোহন করে দান কর? সে বলিল, হাঁ। তিনি বলিলেন, তবে তুমি সমুদ্রের অপর প্রান্ত থেকেই নেক আমাল করিতে থাক। নিশ্চয় আল্লাহ তোমার আমালের কিছুই ঘাটতি করবেন না। [১]

(আঃপ্রঃ ৩৬৩৩, ইঃফাঃ ৩৬৩৬)

[১] ইসলামের প্রতিকূল অবস্থায় থেকেও যথাসাধ্য আল্লাহর বিধান পালন করিতে পারলে সে স্থান হইতে হিজরত ওয়াজিব নয়। উক্ত হাদীসে এরও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, হিজরত সম্পর্কে প্রশ্নকারীর জিজ্ঞাসাটি ছিল মক্কা বিজয়ের পর; কেননা তা বিজয়ের পূর্বে হিজরত প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির উপর ওয়াজিব ছিল। (ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড ৩৩০ পৃষ্ঠা)

৬৩/৪৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) এর সাহাবীবর্গের মদীনা উপস্থিতি

৩৯২৪

বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সর্বাগ্রে আমাদের মধ্যে মদীনায় আগমন করেন মুসআব ইবনু উমায়ের ও ইবনু উম্মু মাকতুম (রাদি.)। অতঃপর আমাদের কাছে আসেন আম্মার ইবনু ইয়াসির ও বিলাল (রাদি.)।

(আঃপ্রঃ ৩৬৩৪, ইঃফাঃ ৩৬৩৭)

৩৯২৫

বারা ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সর্বাগ্রে আমাদের মধ্যে মদীনায় আসলেন মুসআব ইবনু উমায়ের এবং ইবনু উম্মু মাকতুম। তারা লোকদের কুরআন পড়াতেন। তারপর আসলেন, বিলাল, সাদ ও আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাদি.) এরপর উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) – এর বিশজন সাহাবীসহ মদীনায় আসলেন। তারপর নাবী (সাঃআঃ) আগমন করিলেন। তাহাঁর আগমনে মদীনাবাসী যতখানি আনন্দিত হয়েছিল ততখানি আনন্দিত হইতে কখনো দেখিনি। এমনকি দাসীগনও বলছিল, নাবী (সাঃআঃ) শুভাগমন করিয়াছেন। বারা (রাদি.) বলেন, তাহাঁর আগমনের পূর্বেই মুফাস্‌সালের [২] কয়েকটি সুরাসহ আমি (আরবী) সুরা পর্যন্ত পড়ে ফেলেছিলাম।

(আঃপ্রঃ ৩৬৩৫, ইঃফাঃ ৩৬৩৮)

[২] কুরআন মাজীদের শেষ অংশের সুরা সমূহকে মুফাস্‌সাল বলা হয়, কেননা তাতে প্রতিটি সুরা এর মধ্যে ছোট ছোট ধারায় বিভিন্ন বিষয়ের বর্ননা করা হয়েছে। আর মুফাস্‌সালের শুরু হচ্ছেঃ সুরা আল হুজরাত। অতঃপর মুফাস্‌সালকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ (১) তিওয়ালু মুফাস্‌সালঃ আল হুজরাত হইতে আল বুরুজ পর্যন্ত। (২) ওয়াসাতু মুফাসসালঃ আল বুরুজ হইতে আল্‌ বাইয়্যিনাহ পর্যন্ত। (৩) ক্বিসারু মুফাসসালঃ আল বাইয়্যিনাহ হইতে আল ফুরকানের শেষ পর্যন্ত। (সূত্রঃ ইতহাফুল কিয়াম-তালীক-বুলিগুল মারাম ৮৫ পৃষ্ঠা)

৩৯২৬

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন মদীনায় আসলেন, তখন আবু বক্‌র ও বিলাল (রাদি.) ভীষন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আমি তাদেরকে দেখিতে গেলাম এবং বললাম, আব্বাজান, কেমন আছেন? হে বিলাল, আপনি কেমন আছেন? আয়েশা (রাদি.) বলেন, আবু বকর (রাদি.) জ্বরে পড়লেই এ পংক্তিগুলি আবৃতি করিতেন।

“প্রতিটি ব্যক্তিকে নিজ পরিবারে সুপ্রভাত বলা হয়

অথচ মৃত্যু তার জুতার ফিতার চাইতেও অতি নিকটে।”

আর বিলাল (রাদি.) – এর অবস্থা ছিল এই যখন তার জ্বর ছেড়ে যেত তখন কন্ঠস্বর উঁচু করে এ কবিতাটি আবৃতি করিতেনঃ

“হায়, আমি যদি জানতাম আমি এ মক্কা উপত্যকায় আবার রাত্রি কাটাতে পারব কিনা

যেখানে ইয্‌খির ও জলীল ঘাস আমার চারপাশের বিরাজমান থাকত।

হায়, আর কি আমার ভাগ্যে জুটবে যে, আমি মাজান্নাহ নামক কূপের পানি পান করিতে পারব! এবং শামাহ ও তাফিল পাহাড় কি আর আমার চোখে পড়বে!”

আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর নিকট গিয়ে এ সংবাদ জানালাম। তখন তিনি এ দুআ করিলেন, হে আল্লাহ! মদীনাকে আমাদের প্রিয় করে দাও যেমন প্রিয় ছিল আমাদের মক্কা বরং তার থেকেও অধিক প্রিয় করে দাও। আমাদের জন্য মদীনাকে স্বাস্থ্যকর করে দাও। মদীনার সা ও মুদ এর মধ্যে বরকত দান কর। আর এখানকার জ্বরকে সরিয়ে জুহফায় নিয়ে যাও।

(আঃপ্রঃ ৩৬৩৬, ইঃফাঃ ৩৬৩৯)

৩৯২৭

উবাইদুল্লাহ ইবনু আদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

উবাইদুল্লাহ ইবনু আদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি উসমান (রাদি.)- এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি আমার বক্তব্য শুনার পর তাশাহহুদ পাঠের পর বলিলেন, আম্মা বাদু। আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)- কে সত্যসহ প্রেরণ করিয়াছেন। যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)- এর আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)- কে যে সত্যসহ প্রেরণ করা হয়েছিল তৎপ্রতি ঈমান এনেছিলেন আমিও তাঁদের মধ্যে ছিলাম। উভয় হিজরতে [১] অংশ নিয়েছি। আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর জামাতা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আমি তাহাঁর হাতে বায়আত করেছি, আল্লাহর শপথ আমি কখনো তাহাঁর নাফরমানী করিনি তাহাঁর সাথে প্রতারণা করিনি। এই অবস্থায় তাহাঁর মৃত্যু হয়েছে। (৩৬৯৬)

ইসহাক কালবী শুয়ায়বের অনুসরণ করে যুহরী সূত্রে এ রকমই বর্ণনা করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ ৩৬৩৭, ইঃফাঃ ৩৬৪০)

[১] উভয় হিজরত বলিতে আবিসিনিয়া ও মদীনা দুস্থানের হিজরত।

৩৯২৮

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন, যে বছর উমার (রাদি.) শেষ হাজ্জ আদায় করেন সে বছর আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাদি.) মিনায় তাহাঁর পরিবারের কাছে ফিরে আসেন এবং সেখানে আমার সাথে তাহাঁর সাক্ষাৎ হয়। আবদুর রহমান (রাদি.) বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন, হাজ্জ মওসুমে বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিহীন সব রকমের মানুষ জড় হয়। তাই আমার বিবেচনায় আপনি ভাষণ দান করবেন না এবং মদীনা গিয়ে ভাষণ দান করুন। মদীনা হল দারুল হিজরত, (হিজরতের স্থান) রাসুল (সাঃআঃ)- এর সুন্নাতের পবিত্র ভূমি। সেখানে আপনি অনেক জ্ঞানী, গুণী ও বুদ্ধিদীপ্ত লোককে একত্রে পাবেন। উমার (রাদি.) বলিলেন, মদীনায় গিয়েই প্রথমেই অবশ্যই আমার ভাষণ দিব।

(আঃপ্রঃ ৩৬৩৮, ইঃফাঃ ৩৬৪১)

৩৯২৯

খারিজাহ ইবনু যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

খারিজাহ ইবনু যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) বলেন, উম্মুল আলা (রাদি.) নাম্নী এক আনসারী মহিলা নাবী (সাঃআঃ)- এর হাতে বায়আত করেন। তিনি বর্ণনা করেন, যখন মুহাজিরদের বাসস্থানের ব্যাপারে আনসারদের মধ্যে লটারী হয় তখন উসমান ইবনু মাযউনের বসবাস আমাদের অংশে পড়ল। উম্মুল আলা (রাদি.) বলেন, এরপর তিনি আমাদের এখানে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি তার সেবা শুশ্রূষা করলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাহাঁর মৃত্যু হয়ে গেল। আমরা কাফনের কাপড় পরিয়ে দিলাম। তারপর নাবী (সাঃআঃ) আমাদের এখানে আসলেন। ঐ সময় আমি উসমান (রাদি.)- কে লক্ষ্য করে বলছিলাম। হে আবু সায়িব! তোমার উপর আল্লাহর রহমত হোক। তোমার সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাকে সম্মানিত করিয়াছেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কেমন করে জানলে যে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করিয়াছেন? আমি বললাম, আমার মাতা-পিতা আপনার উপর কুরবান হোক। হে আল্লাহর রাসুল! আমি তো জানি না। তবে কাকে আল্লাহ সম্মানিত করবেন? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহর শপথ! উসমানের মৃত্যু হয়ে গেছে। আল্লাহর কসম! আমি তার সম্পর্কে কল্যাণের আশা পোষণ করছি। আল্লাহর কসম, আমি আল্লাহর রাসুল হওয়া সত্ত্বেও জানিনা আল্লাহ আমার সাথে কী ব্যবহার করবেন। উম্মুল আলা (রাদি.) বলেন, আল্লাহর শপথ, আমি এ কথা শুনার পর আর কাউকে পূত-পবিত্র বলব না। উম্মুল আলা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) – এর এ কথা আমাকে চিন্তিত করিল। এরপর আমি স্বপ্নে দেখিতে পেলাম যে, উসমান ইবনু মাযউন (রাদি.) – এর জন্য একটি নহর জারি রয়েছে। আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর নিকট গিয়ে আমার স্বপ্নটি বললে তিনি বলিলেন, এ হচ্ছে তার সৎ আমাল।

(আঃপ্রঃ ৩৬৩৯, ইঃফাঃ ৩৬৪২)

৩৯৩০

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বুআস যুদ্ধ এমন একটি যুদ্ধ ছিল যা আল্লাহ তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)- এর পক্ষে তাহাঁর হিজরতের পূর্বেই সংঘটিত করিয়েছিলেন, যা তাদের ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে সহায়ক হয়েছিল। রাসুল (সাঃআঃ) যখন মদীনায় আসলেন তখন তাদের গোত্রগুলো ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে নানা দলে ভাগ হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের অনেক নেতা নিহত হয়েছিল।

(আঃপ্রঃ ৩৬৪০, ইঃফাঃ ৩৬৪৩)

৩৯৩১

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, আবু বকর (রাদি.) ঈদুল ফিতর অথবা ঈদুল আযহার দিনে তাঁকে দেখিতে এলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) আয়েশা (রাদি.)- এর বাড়ীতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় দুজন অল্প বয়স্কা বালিকা এ কবিতাটি উচ্চঃস্বরে আবৃত্তি করছিল যা আনসারগণ বুআস যুদ্ধে আবৃত্তি করেছিল। তখন আবু বাকর (রাদি.) দুবার বলিলেন, এ হল শয়তানের ঢাল। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আবু বাকর, ওদেরকে ছাড়। প্রত্যেক সম্প্রদায়েরই ঈদ আছে আর আজ হল আমাদের ঈদের দিন।

(আঃপ্রঃ ৩৬৪১, ইঃফাঃ ৩৬৪৪)

৩৯৩২

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন মদীনায় আসলেন তখন মদীনার উঁচু এলাকার আমর ইবনু আউফ গোত্রে অবস্থান করিলেন। আনাস (রাদি.) বলেন, সেখানে তিনি চৌদ্দ দিন থাকলেন। এরপর তিনি বানু নাজ্জারের নেতৃস্থানীয় লোকদের কাছে খবর পাঠালেন। তারা সকলেই তরবারি ঝুলিয়ে হাযির হলেন। আনাস (রাদি.) বলেন, সেই দৃশ্য এখনো যেন আমি দেখিতে পাচ্ছি। রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর সওয়ারীর উপর এবং আবু বাকর (রাদি.) তাহাঁর পিছনে উপবিষ্ট রয়েছেন, আর বনু নাজ্জারের নেতাগণ রয়েছেন তাদের পার্শ্বে। অবশেষে আবু আইউব (রাদি.)- এর বাড়ির চত্বরে তিনি (সাঃআঃ) তাহাঁর মালপত্র নামালেন। রাবী বলেন, ঐ সময় রাসুল (সাঃআঃ) যেখানেই সলাতের সময় হত সেখানেই সলাত আদায় করে নিতেন। এবং তিনি কোন কোন সময় ছাগল-ভেড়ার খোঁয়াড়েও সলাত আদায় করিতেন। রাবী বলেন, তারপর তিনি মসজিদ তৈরির নির্দেশ দিলেন। তিনি বনী নাজ্জারের নেতাদের ডাকলেন এবং তারা এলে তিনি বলিলেন, তোমাদের এ বাগানটি আমার নিকট বিক্রি কর। তারা বলিল, আল্লাহর শপথ, আমরা বিক্রি করব না। আল্লাহ শপথ-এর বিনিময় আল্লাহর নিকটই চাই। রাবী বলেন, এখানে কি ছিল, আমি তোমাদের বলছি স্থানে তখন ছিল মুশরিকদের পুরাতন কবর, বাড়ী ঘরের কিছু ভগ্নাবশেষ কয়েকটি খেজুরের গাছ। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর নির্দেশে মুশরিকদের কবরগুলি মিশিয়ে দেয়া হল। ভগ্ন চিহ্ন সমতল করা হল, খেজুর গাছগুলি কেটে ফেলা হল। রাবী বলেন, কাটা খেজুর গাছের কান্ডগুলি মসজিদের কেবলার দিকে এর খুঁটি হিসেবে এক লাইনে স্থাপন করা হল এবং খুঁটির ফাঁকা স্থানে রাখা হল পাথর। তখন সাহাবাগণ পাথর বয়ে আনছিলেন এবং ছন্দ যুক্ত কবিতা আবৃত্তি করছিলেনঃ আর রাসুল (সাঃআঃ) তখন তাদের সঙ্গে ছিলেন এবং বলছিলেন,

হে আল্লাহ! আসল কল্যাণ কেবলমাত্র আখিরাতের কল্যাণ।

হে আল্লাহ! তুমি মুহাজির ও আনসারদের সাহায্য কর।

(আঃপ্রঃ ৩৬৪২, ইঃফাঃ ৩৬৪৫)

Comments

Leave a Reply