মজলিসে বসার আদব ও দোয়া – ঝগড়া, খুত্ববাহ, কানাঘুষা করা

মজলিসে বসার আদব ও দোয়া – ঝগড়া, খুত্ববাহ, কানাঘুষা করা

মজলিসে বসার আদব ও দোয়া – ঝগড়া, খুত্ববাহ, কানাঘুষা করা >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ৪৩, অনুচ্ছেদঃ ১৩-৩৩=২১টি

অনুচ্ছেদ-১৩ঃ রাস্তার পাশে বসা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৪ঃ মাজলিসের বসার জায়গা প্রশস্ত করা
অনুচ্ছেদ-১৫ঃ রোদ ও ছায়ার মাঝামাঝি বসা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৬ঃ গোল হয়ে বসা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৭ঃ বৃত্তের মাঝখানে বসা
অনুচ্ছেদ-১৮ঃ অন্যকে বসতে দেয়ার জন্য নিজের স্থান হইতে উঠে যাওয়া
অনুচ্ছেদ-১৯ঃ যার সংস্পর্শে বসা উচিত
অনুচ্ছেদ-২০ঃ ঝগড়া করা নিন্দনীয়
অনুচ্ছেদ-২১ঃ কথা বলার আদব-কায়দা
অনুচ্ছেদ-২২ঃ খুত্ববাহ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২৩ঃ লোকদের সাথে পদমর্যাদা অনুযায়ী আচরণ করা
অনুচ্ছেদ-২৪ঃ দুই ব্যক্তির মাঝে তাহাদের অনুমতি ছাড়া বসা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২৫ঃ কিভাবে বসা উচিৎ
অনুচ্ছেদ-২৬ঃ দৃষ্টিকটুভাবে বসা
অনুচ্ছেদ-২৭ঃ ইশার সলাতের পর আলোচনা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২৮ঃ যে ব্যক্তি চার হাঁটু হয়ে বসে
অনুচ্ছেদ-২৯ঃ কানাঘুষা করা
অনুচ্ছেদ-৩০ঃ কেউ স্বীয় বসার স্থান হইতে উঠে গিয়ে পুনরায় ফিরে এলে
অনুচ্ছেদ-৩১ঃ আল্লাহর যিকির না করেই কারো মাজলিস হইতে উঠে যাওয়ার অপছন্দনীয়
অনুচ্ছেদ-৩২ঃ মাজলিসের কাফফারাহ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৩৩ঃ মাজলিসে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ

অনুচ্ছেদ-১৩ঃ রাস্তার পাশে বসা সম্পর্কে

৪৮১৫. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা রাস্তার মাঝে বসা সম্পর্কে সতর্ক হও। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাতে না বসে আমাদের উপায় নেই। আমরা তথায় [বসে] আলোচনা করে থাকি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যদি তোমাদের একান্তেই বসতে হয় তাহলে তোমরা রাস্তার হক আদায় করিবে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কি? তিনি বলিলেন, দৃষ্টি সংযত রাখা, কষ্ট দেয়া হইতে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেয়া, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ নিষেধ করা।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮১৬.আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] এ প্রসঙ্গে বলিয়াছেন, এবং [রাস্তার হক হলো পথ হারাকে] পথ দেখানো।

এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৪৮১৭. জাবির ইবনি হাযেম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-কে নাবী [সাঃআঃ] হইতে উল্লেখিত হাদিস বর্ণনা প্রসঙ্গে আরো বলিতে শুনিয়াছি; বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করিবে এবং পথহারাকে পথ দেখাবে।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮১৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক মহিলা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার নিকট একটি প্রয়োজনে এসেছি। তিনি বলিলেন, হে অমুকের মা! তোমার সুবিধা মতো রাস্তার যে কোন গলিপথে বসো এবং আমি তোমার নিকট বসে তোমার দরকার পূরণ করবো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর মহিলাটি বসলো এবং নাবী [সাঃআঃ] ও বসে থাকলেন যাবত না তার প্রয়োজন পূরণ হলো।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮১৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক নারীর বুদ্ধিতে কিছুটা জড়তা ছিল। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদিসের অর্থানুরূপ বর্ণিত।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৪ঃ মাজলিসের বসার জায়গা প্রশস্ত করা

৪৮২০. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, বসার জন্য উত্তম হলো চওড়া স্থান।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৫ঃ রোদ ও ছায়ার মাঝামাঝি বসা সম্পর্কে

৪৮২১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আবুল ক্বাসিম [রাদি.] বলিয়াছেনঃ তোমাদের কেউ রোদে বসা অবস্থায় সেখানে ছায়া এলে তার দেহের কিছু অংশ রোদে এবং কিছু অংশ ছায়ায় পড়ে গেলে সে যেন সেখান হইতে উঠে যায়।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮২২. ক্বাইস [রাদি.] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর খুত্ববাহ দেয়া অবস্থায় রোদে এসে দাঁড়ালেন। তখন তিনি তাহাকে আদেশ দিলে তাহাকে ছায়ায় আনা হয়।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৬ঃ গোল হয়ে বসা সম্পর্কে

৪৮২৩. জাবির ইবনি সামুরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাহাবীগণ বিক্ষিপ্তভাবে এক এক স্থানে কয়েকজন করে মাসজিদের মধ্যে গোলাকার হয়ে বসা ছিলেন। এমন সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে প্রবেশ করে বলিলেন, আবার কি হলো, আমি যে তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দেখিতে পাচ্ছি!

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮২৪. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উপরোক্ত হাদিসের বর্ণনায় তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যেন তাঁদের ঐক্যবদ্ধভাবে বসাকে পছন্দ করেছেন।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮২৫.জাবির ইবনি সামুরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা যখন নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আসতাম, তখন আমাদের যে কোন ব্যক্তি সভার প্রান্তের খালি জায়গায় বসতো।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৭ঃ বৃত্তের মাঝখানে বসা

৪৮২৬. হুযাইফাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বৃত্তের মাঝখানে গিয়ে উপবেশনকারীকে অভিশাপ দিয়েছেন।৪৮২৪

দুর্বল। ৪৮২৪ তিরমিজি, আহমাদ, হাকিম। ঈমাম তিরমিজি বলেনঃ হাসান সহিহ। ঈমাম হাকিম ও যাহাবী বলেনঃ মুসলিমের শর্তে সহিহ। কিন্তু এটা তাহাদের ধারণা মাত্র। কেননা হাদিসের সানাদে বর্ণনাকারী বাদ পড়েছে। বর্ণনাকারীর মিজলায ও হুযাইফার মাঝে ইনকিতা হয়েছে। মিজলায হাদিসটি হুযাইফাহ হইতে শুনেননি।এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৮ঃ অন্যকে বসতে দেয়ার জন্য নিজের স্থান হইতে উঠে যাওয়া

৪৮২৭. সাঈদ ইবনি আবুল হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাক্ষী দেয়ার জন্য আবু বাকরাহ [রাদি.] আমাদের নিকট আসলেন। তখন তার জন্য জনৈক ব্যক্তি তার স্থান ছেড়ে দাঁড়ালো। কিন্তু তিনি সেখানে বসতে অস্বীকার করিলেন এবং বলিলেন, নাবী [সাঃআঃ] এরূপ করিতে নিষেধ করেছেন এবং নাবী [সাঃআঃ] নিষেধ করেছেন, কোন লোক যেন তার হাত এমন কাপড়ে না মোছে যা তাহাকে দেয়া হয়নি।৪৮২৫

দুর্বলঃ মিশকাত হা/৪৭০১। ৪৮২৫ আহমাদ। সানাদে আবু হুরাইরার মুক্তদাস আবু আবদুল্লাহ রয়েছে। হাফিয বলেনঃ তিনি মাজহুল [অজ্ঞাত]। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৮২৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এলে অন্য লোক তার জন্য তার স্থান হইতে উঠে দাঁড়ালো। সে সেখানে বসার জন্য যেতে থাকলে নাবী [সাঃআঃ] তাহাকে বারণ করিলেন।

এই মজলিসে বসার আদব এই হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৯ঃ যার সংস্পর্শে বসা উচিত

৪৮২৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে মুমিন কুরআন পড়ে তার উদাহরণ হলো কমলা-লেবু, যার ঘ্রাণ স্নিগ্ধ এবং স্বাদ উত্তম। আর যে মুমিন কুরআন পড়ে না তার উদাহরণ হলো খেজুর, যা সুস্বাদু কিন্তু ঘ্রাণহীন। আর যে গুনাহগার ব্যক্তি কুরআন পড়ে তার উদাহরণ লতাগুল্ম, যার ঘ্রাণ স্নিগ্ধ কিন্তু স্বাদ তিক্ত। পক্ষান্তরে, যে গুনাহগার ব্যক্তি কুরআন পড়ে না তার উদাহরণ হানযালা বৃক্ষের ফল, যার স্বাদ তিক্ত কিন্তু গন্ধ নেই। আর সৎলোকের সংসর্গ হলো কস্তুরী বিক্রেতার সদৃশ, তুমি কস্তুরী না পেলেও তার সুবাস পাবে এবং অসৎ লোকের সংসর্গ হলো কামারের সদৃশ। যদিও কালি ও ময়লা না লাগে, তবে ধোঁয়া হইতে রক্ষা পাবে না।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮৩০.আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ সৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হলো… অতঃপর পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮৩১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ সৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হলো… অতঃপর পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮৩২. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তুমি মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হইবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেযগার লোকে খায়।

এই মজলিসে বসার আদব এই হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪৮৩৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।

এই মজলিসে বসার আদব এই হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪৮৩৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, আত্মাসমূহ দলবদ্ধ ছিল। যার সঙ্গে পরিচয় ছিল তার সঙ্গে তার বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয় এবং যাদের মধ্যে পরিচয় ছিল না তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন থাকে।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২০ঃ ঝগড়া করা নিন্দনীয়

৪৮৩৫. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন তাহাঁর কোন সাহাবীকে কোন কাজে প্রেরণ করিতেন তখন তাহাকে নির্দেশ দিতেনঃ তোমরা লোকদেরকে সুসংবাদ দিবে, দূরে ঠেলে দিবে না, আর সহজ করিবে, কঠিন করিবে না।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮৩৬. আস-সায়িব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট আসলাম। তখন সাহাবীরা আমার প্রশংসা করিতে লাগলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]বলিলেনঃ আমি তার সম্বন্ধে তোমাদের চেয়ে বেশি জ্ঞাত। আমি বলিলাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনি সত্য বলিয়াছেন, আপনি আমার [সফর] সঙ্গী ছিলেন। আপনি কতো উত্তম সঙ্গী! আপনি না আমার বিরোধিতা করছেন; আর না আমার সঙ্গে ঝগড়া করেছেন।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২১ঃ কথা বলার আদব-কায়দা

৪৮৩৭. ইউসুফ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আলাপকালে প্রায়ই চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকাতেন। {৪৮৩৫}

দুর্বলঃ যঈফাহ হা/১৭৬৮। {৪৮৩৫} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। এর দোষ হলো সনদের মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৮৩৮. মিসআর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি একজন শাইখকে মাসজিদের মধ্যে বলিতে শুনিয়াছি, আমি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] কে বলিতে শুনিয়াছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর বক্তব্য ছিল স্পষ্ট ও ধীর গতিসম্পন্ন।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮৩৯. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর বক্তব্য ছিল সুস্পষ্ট, প্রত্যেক শ্রোতাই তাহাঁর বক্তব্য বুঝতে পারতো

এই মজলিসে বসার আদব এই হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪৮৪০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যেসব বক্তব্য আল্লাহর প্রশংসার সঙ্গে শুরু করা হয় না তা হয় পঙ্গু। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাদিসটি ইউনুস…যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে নাবী [সাঃআঃ] সূত্রে মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন।৪৮৩৮

দুর্বলঃ ইরওয়া হা/২। ৪৮৩৮ নাসায়ীর আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, আহমাদ, ইবনি হিব্বান। বর্ণনাটি মুরসাল। যেমন ঈমাম আবু দাউদ বলিয়াছেন। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-২২ঃ খুত্ববাহ সম্পর্কে

৪৮৪১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে বক্তৃতায় আল্লাহর একত্ব ও রিসালাতের সাক্ষ্য থাকে না তা পঙ্গু হাতের ন্যায়। {৪৮৩৯}

{৪৮৩৯} তিরমিযি, আহমাদ, বায়হাক্বী। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৩ঃ লোকদের সাথে পদমর্যাদা অনুযায়ী আচরণ করা

৪৮৪২. মাইমূন ইবনি আবু শাবীব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একদা এক ভিক্ষুক আয়িশাহর [রাদি.] নিকট এলে তিনি তাহাকে এক টুকরা রুটি দিলেন এবং পোষাক পরিহিত সুন্দর চেহারাবিশিষ্ট আরেক ব্যক্তি এলে তিনি তাহাকে বসালেন এবং খেতে দিলেন। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা মানুষের সঙ্গে তাহাদের মর্যাদা অনুযায়ী আচরণ করো। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মাইমূন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আয়িশাহ [রাদি.] এর সাক্ষাৎ পাননি।৪৮৪০

দুর্বলঃ যঈফাহ হা/১৮৯৪। ৪৮৪০ আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সনদের মাইমূন হাদিসটি আয়িশাহ হইতে শুনেননি। সুতরাং সনদ মুনকাতি। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৮৪৩.আবু মূসা আল-আশআরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ নিশ্চয়ই বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা, কুরআনের ধারক-বাহক ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান দেখানো মহান আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত।৪৮৪১

এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

অনুচ্ছেদ-২৪ঃ দুই ব্যক্তির মাঝে তাহাদের অনুমতি ছাড়া বসা সম্পর্কে

৪৮৪৪. আমর ইবনি শুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা এবং তার দাদার হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ উভয়ের অনুমতি ছাড়া কেউ দুব্যক্তির মাঝখানে বসবে না। {৪৮৪২}

{৪৮৪২} আত-তারগীব ওয়াত তারহীব। এই মজলিসে বসার আদব এই হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪৮৪৫. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ উভয়ের অনুমতি ছাড়া [একত্রে বসা] দুই ব্যক্তিকে পৃথক করা কারোর জন্য বৈধ নয়

এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

অনুচ্ছেদ-২৫ঃ কিভাবে বসা উচিৎ

৪৮৪৬. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর হাটুদ্বয় খাড়া করে তা স্বীয় হাত দ্বারা পেঁচিয়ে ধরে বসতেন। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি ইবরাহীম হাদিস শাস্ত্রে প্রত্যাখ্যাত

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮৪৭. ক্বাইলাহ বিনতু মাখরামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নাবী[সাঃআঃ]-কে তাহাঁর হাঁটুদ্বয় খাড়া করে তা দুই হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে বসতে দেখেছেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বিনীতভাবে বসা দেখে ভয়ে শিউরে উঠি

এই মজলিসে বসার আদব এই হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৬ঃ দৃষ্টিকটুভাবে বসা

৪৮৪৮. শারীদ ইবনি সুওয়াইদ [রাদি.] হইতে তার পিতা শারিদ ইবনি সুওয়াইদ [রাদি.] এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমি আমার বাম হাত পিঠে নিয়ে তার পাতার উপর বসেছিলাম। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি কি তাহাদের মতো বসছো, যারা অভিশপ্ত। {৪৮৪৬}

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৭ঃ ইশার সলাতের পর আলোচনা সম্পর্কে

৪৮৪৯. আবু বারযাহ[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]ইশার সলাতের পূর্বে ও সলাতের পর কথাবার্তা বলিতে বারণ করিতেন

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৮ঃ যে ব্যক্তি চার হাঁটু হয়ে বসে

৪৮৫০. জাবির ইবনি সামুরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]ফজরের সলাত শেষ করে চার জানু হয়ে স্বস্থানে বসে থাকতেন সূর্য সম্পূর্ণরূপে উদিত হওয়া পর্যন্ত

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৯ঃ কানাঘুষা করা

৪৮৫১.আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ দুই ব্যক্তি যেন তাহাদের অপর [তৃতীয়] সঙ্গীকে [একা] রেখে চুপি চুপি কথা না বলে। কারণ তা তাহাকে দুঃশ্চিন্তায় ফেলতে পারে

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮৫২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ ….উপরের হাদিসের অনূরূপ। আবু সালিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি ইবনি উমার [রাদি.] কে বলিলাম, চার ব্যক্তি হলে? তিনি বলিলেন, তবে তোমার কোন ক্ষতি নেই

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩০ঃ কেউ স্বীয় বসার স্থান হইতে উঠে গিয়ে পুনরায় ফিরে এলে

৪৮৫৩. সুহাইল ইবনি আবু সালিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার পিতার নিকট বসা ছিলাম, তখন তার নিকট একটি বালকও ছিল।অতঃপর সে সেখানে হইতে চলে গিয়ে আবার ফিরে এলো। আমার পিতা আবু হুরায়রা [রাদি.] সূত্রে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যদি কোন ব্যক্তি বৈঠক হইতে চলে যাওয়ার পর প্রত্যাবর্তন করে তাহলে সে পূর্বের স্থানে বসার অধিক হকদার

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮৫৪. কাবা আল-ইয়াদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমারা আবু দারদা [রাদি.] এর সাক্ষাতে যেতাম। আবু দারদা [রাদি.] বলেন, যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোথাও বসতেন এবং আমরাও তাহাঁর চারপাশে বসতাম। অতঃপর তিনি বৈঠক হইতে উঠে গেলে এবং পুনরায় প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছা থাকলে তাহাঁর জুতা জোড়া বা অন্য কিছু রেখে যেতেন। এর দ্বারা তাহাঁর সাহাবীগণ তাহাঁর ফিরে আসার ইচ্ছা জানতে পারতেন এবং বৈঠকে বসে অপেক্ষায় থাকতেন।৪৮৫২

দুর্বলঃ মিশকাত হা/৪৭০২। ৪৮৫২বায়হাক্বী। সানাদে মুবাশ্শির বিন ইসমাঈল রয়েছে। তাহাকে ইবনি মাঈন ও অন্যরা সিকাহ বলিয়াছেন। আর ঈমাম বুখারী ও অন্যরা তাহাকে দুর্বল বলিয়াছেন। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩১ঃ আল্লাহর যিকির না করেই কারো মাজলিস হইতে উঠে যাওয়ার অপছন্দনীয়

৪৮৫৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কোন কওমের লোকেরা কোন সমাবেশে একত্রিত হওয়ার পর চলে যাবার সময় তাতে আল্লাহকে স্মরণ না করেই চলে গেলে তা যেন গাধার শবদেহ। তা তাহাদের জন্য পরিতাপের কারণ হইবে।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস ৪৮৫৬ আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি কোন স্থানে বসলো অথচ আল্লাহকে স্মরণ করলো না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ হইতে লাঞ্ছনা। আর যে ব্যক্তি কোথাও শয়ন করার পর আল্লাহর নাম নিলো না তার জন্যও আল্লাহর পক্ষ হইতে লাঞ্ছনা। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩২ঃ মাজলিসের কাফফারাহ সম্পর্কে

৪৮৫৭. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কিছু বাক্য যা কোন ব্যক্তি মাজলিস হইতে উঠার সময় তিনবার উচ্চারণ করলে তা তার ঐ মাজলিসের কাফফারাহ হইবে। আর যদি উক্ত বাক্যগুলো কোন উত্তম মাজলিসে ও যিকিরের মাজলিসে পাঠ করে তাহলে পুস্তিকায় সীল মোহর করার মতই তা তার জন্য স্থায়িত্ব লাভ করে। বাক্যগুলো হলো

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ

সুবাহানকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা”। হে আল্লাহ! মহিমা আপনার, আমি আপনার প্রশংসা সহকারে শুরু করছি। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাই এবং অনুতপ্ত হয়ে আপনার নিকট ফিরে আসছি।৪৮৫৪

সহিহ। তবে “তিনবার” কথাটি বাদে।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮৫৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] সূত্রে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮৫৯. আবু বারযাহ আল-আসলামী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন কোন বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করিতেন তখন বলিতেন

 سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ 

সুবাহানকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা”। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এখন আপনি যে বাক্য পাঠ করিলেন তা তো ইতোপূর্বে আপনি পাঠ করেননি? তিনি বলিলেন, মাজলিসে যা কিছু [ভুলক্রটি] হয়ে থাকে একথাগুলো তার কাফফারাহ গণ্য হইবে।

এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

অনুচ্ছেদ-৩৩ঃ মাজলিসে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ

৪৮৬০. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমার সাহাবীগণের কেউ যেন অপর সাহাবী সম্পর্কে আমার নিকট কোন অভিযোগ না করে। কারণ আমি তোমাদের নিকট প্রশান্ত অন্তরে আসতে পছন্দ করি।

দুর্বল- মিশকাত হা/৪৮৫। তিরমিজি। সহিহ ও যয়ীফ সুনানে আবু দাউদ ৫ম খন্ড ৫০৯ পৃষ্টা, অনুচ্ছেদ-৩৩ ঃমাজলিসে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ। আল্লামা আলবানী একাডেমী প্রকাসীত। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply