মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয়
মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ২০, অনুচ্ছেদঃ ২২-২৯=৮টি
অনুচ্ছেদ-২২ঃ মাদীনাহ্ থেকে ইয়াহুদীদের কিভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে
অনুচ্ছেদ–২৩ঃ বনূ নাযীরের ঘটনা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-২৪ঃ খায়বারের ভূমি সংক্রান্ত হুকুম
অনুচ্ছেদ-২৫ঃ মাক্কাহ [বিজয়] সম্পর্কিত তথ্য
অনুচ্ছেদ-২৬ঃ তায়িফ [বিজয়] সম্পর্কিত তথ্য
অনুচ্ছেদ-২৭ঃ ইয়ামানের ভূমি সম্পর্কিত হুকুম
অনুচ্ছেদ-২৮ঃ আরব উপদ্বীপ থেকে ইয়াহুদীদের উচ্ছেদের বর্ণনা
অনুচ্ছেদ-২৯ঃ সন্ধির মাধ্যমে এবং জবর দখলকৃত জমি সৈনিকদের মাঝে বণ্টন স্থগিত রাখা
অনুচ্ছেদ–২২ঃ মাদীনাহ্ থেকে ইয়াহুদীদের কিভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে
৩০০০. আবদুর রহমান ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি কাব ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
কাব ইবনি মালিক [রাদি.] ছিলেন ঐ তিনজনের অন্যতম যাদের তওবাহ কবুল হয়। কাব ইবনি আশরাফ নাবী [সাঃআঃ] এর বিরুদ্ধে কুরাইশ কাফিরদের উত্তেজিত করতো এবং উসকানি দিতো। নাবী [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর পরিবার যখন হিজরাত করে মদিনায় আসেন, তখন সেখানে সব ধরনের লোকেরা বসবাস করতো। তাহাদের মধ্যে কিছু ছিল মুসলিম, কিছু মূর্তিপূজারী মুশরিক এবং কিছু ইয়াহুদী সম্প্রদায়ভুক্ত। ইয়াহুদীরা নাবী [সাঃআঃ] ও তাহাঁর সাহাবীদের কষ্ট দিতো। মহান আল্লাহ্ তাহাঁর নাবী [সাঃআঃ] – কে ধৈর্য ধারণ ও উদারতা প্রদর্শনের নির্দেশ দেন। তাহাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ আয়াত অবতীর্ণ করেন ঃ “তোমরা আহলে কিতাব ও মুশরিকদের কাছে থেকে বহু কষ্টদায়ক কথা শুনতে পাবে” [সূরাহ আলে ইমরান ঃ ১৮৬]। কাব ইবনি আশরাফ নাবী [সাঃআঃ]-কে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে অস্বীকার করলে নাবী [সাঃআঃ] তাহাকে হত্যা করিতে সাদ ইবনি মুয়ায [রাদি.] কে একটি দল প্রেরণের নির্দেশ দেন। অতঃপর বর্ণনাকারী তার হত্যার ঘটনা বর্ণনা করেন ঃ কাব ইবনি আশরাফকে হত্যা করা হলে ইয়াহুদী ও মুশরিকরা ভীত হয়ে পড়লো। সকালবেলা তারা নাবী [সাঃআঃ] এর কাছে এসে বললো, রাতের বেলা কিছু লোক আমাদের সাথীর কাছে এসে তাহাকে হত্যা করেছে। কাব ইবনি আশরাফ যে নাবী [সাঃআঃ] এর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতো তিনি তাহাদেরকে তা জানান। তারপর ইয়াহুদী ও মুশরিকদেরকে তাহাদের বিরোধী আচরণ বর্জনের জন্য নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর মধ্যে ও তাহাদের মধ্যে একটি চুক্তি করিতে আহবান জানালেন। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] নিজের, তাহাদের ও সকল মুসলিমের পক্ষ হইতে একটি চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন।
সনদ সহিহ। মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩০০১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বদর যুদ্ধে কুরাইশদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়ে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করে বনূ কাইনুকা গোত্রের বাজারে ইয়াহুদীদের একত্র করে বলিলেনঃ হে ইয়াহুদীরা! কুরাইশদের অনুরূপ পরিণতির সম্মুখীন হওয়ার আগেই ইসলাম কবুল করো। তারা বললো, হে মুহাম্মাদ! আপনি নিজেই ধোঁকায় পড়বেন না। কারণ আপনি কুরাইশদের এমন এক দলের সাথে যুদ্ধ করেছেন যারা যুদ্ধ ও যুদ্ধকৌশল জানে না। আপনি আমাদের সাথে যুদ্ধ করলে টের পেতেন আমরা কেমন যুদ্ধবাজ! আপনি তো আমাদের মতো লোকের মোকাবিলা করেননি। তখন মহান আল্লাহ্ এই আয়াত অবতীর্ণ করেন ঃ “[হে মুহাম্মাদ]! যারা আপনার দাওয়াত কবুল করিতে অস্বীকার করেছে তাহাদেরকে বলে দিন, অচিরেই তোমরা পরাজিত হইবে এবং জাহান্নামে একত্রিত হইবে।” [সূরাহ আলে ইমরান ঃ ১২-১৩]।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০০২. মুহাইয়্যাসাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা কোন ইয়াহুদী পুরুষকে নাগালের মধ্যে পেলেই হত্যা করিবে। মুহাইয়্যাসাহ [রাদি.] ইয়াহুদী ব্যবসায়ী শুবাইবার উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাহাকে হত্যা করেন। এ সময় মুহাইয়্যাসাহ [রাদি.] ইয়াহুদীদের সাথে একই এলাকায় বসবাস করিতেন। তার বড় ভাই হুয়াইআসাহ তখনো মুসলিম হয়নি। তিনি শুবাইবাকে হত্যা করায় হুয়াইআসাহ তাহাকে প্রহার করিতেন আর বলিতেন, হে আল্লাহ্র দুশমন, আল্লাহ্র শপথ! তোর পেটের চর্বিতো আমার সম্পদে তৈরি হয়েছে।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০০৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা মাসজিদে উপস্থিত ছিলাম, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের কাছে বেরিয়ে এসে বলিলেনঃ ইয়াহুদীদের এলাকায় চলো। আমরা তাহাঁর সাথে বের হয়ে সেখানে গিয়ে পৌছলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে তাহাদেরকে ডেকে বলিলেনঃ হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম কবুল করো শান্তিতে থাকিবে। তারা বললো, হে আবুল ক্বাসিম! আপনি পৌছে দিয়েছেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে বলিলেনঃ এ দাওয়াত পৌছে দেয়াই আমার উদ্দেশ্য ছিল। তৃতীয় বারও তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করে বলিলেনঃ জেনে রাখো! এ ভূখণ্ডের মালিকানা আল্লাহ্ ও তার রাসূলের। আমি তোমাদের এ ভূখণ্ড হইতে বিতাড়িত করিতে চাই। সুতরাং তোমরা কোন জিনিস বিক্রি করিতে সক্ষম হলে বিক্রি করো। অন্যথায় জেনে রাখো! এ ভূখণ্ডের মালিক আল্লাহ্ ও তার রাসূল।
মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৩ঃ বনূ নাযীরের ঘটনা প্রসঙ্গে
৩০০৪. আবদুর রহমান ইবনি কাব ইবনি মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে নাবী [সাঃআঃ] এর জনৈক সাহাবীর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
কুরাইশ কাফিররা আবদুল্লাহ ইবনি উবাই এবং তার মূর্তিপূজক সহযোগী আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকদের প্রতি পত্র প্রেরণ করে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন মদিনায় ছিলেন। এটি বদর যুদ্ধের পূর্বের ঘটনা। [চিঠিতে লিখা ছিল] ঃ “আমাদের এক ব্যক্তিকে [নাবী] তোমরা আশ্রয় দিয়েছ। আমরা আল্লাহ্র শপথ করে বলছি, তোমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরো বা বহিষ্কার করো। অন্যথায় আমরা সম্মিলিতভাবে তোমাদেরকে আক্রমণ করবো, তোমাদের যুদ্ধবাজ লোকদের হত্যা করবো এবং তোমাদের নারীদেরকে বন্দী করবো।” চিঠিটি আবদুল্লাহ ইবনি উবাই ও তার মূর্তিপূজক সঙ্গীদের নিকট পৌছলে তারা রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ঐক্যবদ্ধ হলো। এ সংবাদ পেয়ে নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের সাথে সাক্ষাত করে বলিলেনঃ তোমাদের কাছে কুরাইশদের চরমপত্র এসেছে। আসলে তারা তোমাদের ততটা ক্ষতি করিতে পারবে না – যতটা ক্ষতি তোমরা নিজেরা নিজেদের জন্য ডেকে আনবে। কেননা তোমরা নিজেদের ভাই-বন্ধু ও সন্তানদের বিরুদ্ধে লড়াই করিতে চাইছো। তারা নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এ কথা শুনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো। এ কথা কুরাইশ কাফিরদের নিকট পৌছলে বদর যুদ্ধের পর কুরাইশ কাফিররা ইয়াহুদীদের প্রতি লিখলো ঃ তোমরা অস্ত্রে সুসজ্জিত ও দুর্গের অধিকারী ব্যক্তি। তোমরা আমাদের সাথীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, নতুবা আমরা এই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। তখন আমাদের ও তোমাদের নারীদের দাসী বানানোর মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকিবে না। ইয়াহুদীদেরকে লেখা এ পত্রের কথা নাবী [সাঃআঃ] অবহিত হলেন। বনূ নাযীর গোত্রের লোকেরা বিশ্বাসঘাতকতা করিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লোক পাঠিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-কে বললো, আপনি আপনার তিরিশজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে বের হন এবং আমরাও আমাদের তিরিশজন আলিম সাথে নিয়ে বের হই। আমরা উভয়ের মধ্যবর্তী স্থানে মিলিত হবো। তারা আপনার [ধর্মের] কথা শুনবে। তারা আপনার কথা শুনে আপনার প্রতি ঈমান আনলে আমরাও আপনার প্রতি ঈমান আনবো।
তিনি সাহাবীদেরকে তাহাদের এ প্রস্তাবের কথা জানালেন। পরের দিন সকালে নাবী [সাঃআঃ] একদল সৈন্যসহ তাহাদের নিকট গিয়ে তাহাদেরকে অবরোধ করে বলিলেনঃ আল্লাহ্র শপথ! তোমরা আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমি তোমাদের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হবো না। কিন্তু তারা চুক্তিবদ্ধ হইতে রাজি না হওয়ায় সেদিনই তিনি তাহাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেন। পরের দিন তিনি সৈন্যবাহিনী নিয়ে বনূ নাযীরকে ছেড়ে বনূ কুরাইয়াকে অবরোধ করে তাহাদেরকে সন্ধির জন্য আহবান করেন। তারা তাহাঁর সাথে চুক্তিবদ্ধ হলো। অতঃপর সেখান থেকে ফিরে পরের দিন তিনি সৈন্যবাহিনী নিয়ে বনূ নাযীরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলেন। তারা দেশত্যাগ করিতে সম্মত হয়ে দেশত্যাগ করে। তাহাদের উটের পিঠে ঘরের দরজা, চৌকাঠ ইত্যাদি যতটা মালামাল নেয়া সম্ভব নিলো।
বনূ নাযীরের বাগান রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] মালিকানায় এলো। আল্লাহ্ তাঁকে বিশেষভাবে এ বাগানটি দান করিলেন এবং শুধু তাহাঁর জন্যই নির্দিষ্ট করিলেন। মহান আল্লাহ্ তাআলা ঃ “আল্লাহ্ যে সম্পদ তাহাদের দখল থেকে বের করে তাহাঁর রাসূলকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, তার জন্য তোমরা ঘোড়া বা উট হাঁকাওনি” [সূরাহ আল-হাশর ঃ ৬]
এ সম্পদ বিনা যুদ্ধে অর্জিত হয়। নাবী [সাঃআঃ] এ সম্পদের অধিকাংশই মুহাজিরদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। দুজন অভাবী আনসারকেও তিনি এর অংশ দিলেন, তবে অন্য আনসারদের এর অংশ দেননি। সম্পত্তির বাকী অংশ রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] এর সদাক্বাহর খাতে অন্তর্ভুক্ত করেন। এ অংশ ফাত্বিমাহ্র [রাদি.] বংশধরদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
সনদ সহিহ। মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩০০৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
বনূ কুরাইযা ও বনূ নাযীর ইয়াহুদী গোত্রদ্বয় রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বনূ নাযীরকে উচ্ছেদ করিলেন এবং বনূ কুরাইযার প্রতি অনুগ্রহ করে তাহাদেরকে উচ্ছেদ করেননি। অতঃপর বনূ কুরাইযা সংঘর্ষে অবতীর্ণ হলে নাবী [সাঃআঃ] তাহাদেরকে হত্যা করিলেন এবং তাহাদের স্ত্রীলোক, সন্তানাদি ও সম্পদ মুসলিমদের মাঝে বন্টন করিলেন। কিন্তু তাহাদের কিছু লোক রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] সাথে মিলিত হলে তিনি তাহাদেরকে নিরাপত্তা দিলেন এবং তারা ইসলাম কবুল করে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মদিনায় বসবাসকারী সমস্ত ইয়াহুদী গোত্রকে উচ্ছেদ করিলেন। যেমন মদিনায় বসবাসকারী অন্যান্য ইয়াহুদীদেরকে তিনি মাদীনাহ্ থেকে বিতাড়িত করেন।
মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৪ঃ খায়বারের ভূমি সংক্রান্ত হুকুম
৩০০৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] খায়বার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাহাদের জমি ও খেজুর বাগান দখল করেন এবং তাহাদেরকে তাহাদের ঘরে অবরোধ করেন। তারা তাহাঁর সাথে এ শর্তে সন্ধি করলো যে, সোনা, রূপা ও যুদ্ধের সরঞ্জামাদি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পাবেন। অপরদিকে তাহাদের প্রত্যেকের উট যতটা সম্পদ বহনে সক্ষম তারা তা নিতে পারবে, কোন কিছু লুকাবে না এবং সরিয়ে রাখবে না। তারা এরূপ করলে তাহাদের জন্য কোন নিরাপত্তা থাকিবে না এবং কোন চুক্তিও কার্যকর হইবে না। তারা হুয়াই ইবনি আখতাবের স্বর্ণমুদ্রা বোঝাই করা চামড়ার থলে গোপন রাখলো। সে খায়বার যুদ্ধের আগে নিহত হয়েছিল। যখন বনূ নাযীরকে উচ্ছেদ করা হয় তখন সে এ থলেটিতে তাহাদের স্বর্ণমুদ্রা ভরে সাথে করে নিয়ে এসেছিল। বর্ণনাকারী বলেন, নাবী [সাঃআঃ] সাইআহকে জিজ্ঞেস করিলেন ঃ হুয়াই ইবনি আখতাবের স্বর্ণমুদ্রার থলেটা কোথায়? সে বললো, যুদ্ধের সময় তা নষ্ট হয়ে যায় এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে খরচ হয়ে যায়। সাহাবীগণ তা খোঁজ করে পেয়ে গেলেন। তিনি ইবনি আবুল হাকীককে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন এবং তাহাদের নারী ও সন্তানদের বন্দী করিলেন। তিনি তাহাদেরকে উচ্ছেদের ইচ্ছা করিলেন। তারা বললো, হে মুহাম্মাদ! আমাদেরকে ছেড়ে দিন, আমরা এখানকার জমি চাষাবাদ করবো। উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক আমাদের এবং অর্ধেক আপনাদের থাকিবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর স্ত্রীদের প্রত্যেককে আশি ওয়াসাক খেজুর এবং বিশ ওয়াসাক বার্লি দিতেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩০০৭. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা উমার [রাদি.] বলেন, হে লোক সকল! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খায়বারের ইয়াহুদীদের এ শর্তে সেখানকার কৃষি জমিতে নিয়োগ দেন যে, “আমার যখন ইচ্ছা হইবে তাহাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করবো।” সুতরাং সেখানের ইয়াহুদীদের যার কাছে যে সম্পদ আছে সে যেন তা হস্তগত করে। কারণ ইয়াহুদীদের বিতাড়িত করবো। অতঃপর তিনি তাহাদেরকে বিতাড়িত করিলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
৩০০৮. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলনে, খায়বার এলাকা বিজিত হলে ইয়াহুদীরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আবেদন করে যে, তাহাদেরকে যেন সেখানে বসবাস করিতে দেয়া হয়। তারা জমিতে কাজ করে উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক তারা গ্রহণ করিবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, এ শর্তে আমি তোমাদেরকে যতদিন ইচ্ছা বসবাসের অনুমতি দিলাম। তারা এ শর্তে সেখানে বসবাস করলো। খায়বারে উৎপন্ন খেজুরের অর্ধেক কয়েক ভাগে ভাগ করতো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক-পঞ্চমাংশ নিতেন এবং স্বীয় স্ত্রীদের প্রত্যেককে এক-পঞ্চমাংশ থেকে একশ ওয়াসাক খেজুর এবং বিশ ওয়াসাক বার্লি দিতেন। অতঃপর উমার [রাদি.] তাহাঁর খিলাফতকালে ইয়াহুদীদের বহিষ্কারের ইচ্ছা করিলেন, তিনি নাবী [সাঃআঃ] এর স্ত্রীদের বলে পাঠালেনঃ “আপনাদের মধ্যে যিনি চাইবেন আমি অনুমানের ভিত্তিতে একশো ওয়াসাক খেজুর হওয়ার পরিমাণ গাছ তাহাকে ছেড়ে দিবো। এ অবস্থায় বাগানের ও গাছের তত্ত্বাবধান এবং পানি সেচের ব্যবস্থা তাহাকেই করিতে হইবে। অনুরূপভাবে কৃষি উৎপাদনের জমি ছেড়ে দিতে পারি। এ ক্ষেত্রেও জমির তত্ত্বাবধান ও সেচের ব্যবস্থা তাহাকেই করিতে হইবে। তাহাদের কেউ ইচ্ছা করলে, পূর্ব থেকে যেভাবে এক-পঞ্চমাংশ হইতে আমরা বণ্টন করে আসছি, সেভাবেও নিতে পারেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩০০৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খায়বার যুদ্ধ করিলেন। আমরা শক্তিবলে তা দখল করার পর বন্দীদের একত্র করা হয়।
মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩০১০. সাহল ইবনি আবু হাসমা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খায়বার এলাকা দুভাগ করিলেন। তিনি অর্ধেকটা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও নিজ প্রয়োজন পূরণে রাখলেন এবং বাকি অর্ধেক মুসলিমদের মধ্যে বণ্টন করিলেন। তিনি তাঁদের মধ্যে এটা আঠারোটি অংশে ভাগ করিলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
৩০১১. বাশীর ইবনি ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ তাহাঁর নাবী [সাঃআঃ]-কে খায়বার অঞ্চল ফাই হিসেবে প্রদান করলে তিনি তা ছত্রিশ ভাগে বিভক্ত করেন। এর প্রতিটি অংশ আবার একশো ভাগে বিভক্ত ছিল। এর অর্ধেকটা তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাখলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি আল-ওয়াতীহ্, আল-কুতাইবাহ এবং এতদুভয়ের সংলগ্ন এলাকাগুলো রেখে দেন। অবশিষ্ট অর্ধেক তিনি মুসলিম সৈন্যদের মাঝে বণ্টন করেন। এ ভাগে ছিল আশ-শাক্ক, আন-নাতাআহ এবং উভয়ের সংলগ্ন অঞ্চল। এ দুই অর্ধাংশের পার্শ্ববর্তী অংশ ছিল রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ]।
মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩০১২. বাশীর ইবনি ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ] এর একদল সাহাবীকে এ হাদিস বর্ণনা করিতে শুনেন। তিনি বলেন, মুসলিমদের এবং রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] জন্য ছিল [খায়বার সম্পত্তির] অর্ধাংশ। অবশিষ্ট অর্ধেক তিনি মুসলিমদের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণের জন্য পৃথক করে রাখেন।
মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩০১৩. আনসার সম্প্রদায়ের মুক্তদাস বাশীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ] এর কতিপয় সাহাবী হইতে বর্ণনা করেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খায়বার বিজয়ের পর সেখানে প্রাপ্ত সম্পদ ছত্রিশটি ভাগে বিভক্ত করেন। এর প্রত্যেক ভাগকে আবার একশো ভাগে বিভক্ত করেন। মোট সম্পদের অর্ধাংশ ছিল রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও মুসলিমদের জন্য। অবশিষ্ট অর্ধাংশ তিনি প্রতিনিধিদের আপ্যায়ন, বিভিন্ন কাজের ব্যবস্থাপনা ও জনসাধারণের প্রয়োজন পূরণের জন্য পৃথক করে রাখেন।
সহিহ ঃ পূর্বেরটি দ্বারা। মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩০১৪. বাশীর ইবনি ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আল্লাহ যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে খায়বার অঞ্চলের সম্পদ ফাই হিসেবে দান করিলেন, তিনি ঐ সম্পদকে ছত্রিশ অংশে ভাগ করিলেন। এর প্রতিটি ভাগ আবার একশো ভাগে বিভক্ত ছিল। সাহাবীদের সাথে তাঁদের প্রত্যেকের ভাগের সমান একটি ভাগ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও পান। অবশিষ্ট আঠারো ভাগ তিনি নিজের প্রয়োজন পূরণ ও মুসলিমদের বিপদ মোকাবিলার জন্য আলাদা করে রাখেন। এ অংশে ছিল আল-ওয়াতীহ্, আল-কুতাইবাহ, আস- সালালিম ও এসবের সংলগ্ন এলাকা। এ সম্পদ নাবী [সাঃআঃ] ও মুসলিমদের হস্তগত হওয়ার সময় তাঁদের এমন কোন কাজের লোক ছিলো না যারা এসব জমি চাষাবাদ করিতে সক্ষম। সুতরাং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] স্থানীয় ইয়াহুদীদের ডেকে এনে তাহাদেরকে [ভাগচাষে] জমির কাজে নিয়োগ দিলেন।
মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩০১৫. মুজাম্মি ইবনি জারিয়াহ আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি কুরআনের ক্বারীদের অন্যতম ছিলেন। তিনি বলেন, খায়বারে প্রাপ্ত গনীমাত হুদায়বিয়ার সন্ধিতে উপস্থিত মুসলিমদের মাঝে বণ্টন করা হয়। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রাপ্ত সম্পদের অর্ধাংশ আঠার অংশে বিভক্ত করেন। সৈন্যসংখ্যা ছিল পনেরশো, এর মধ্যে অশ্বারোহী তিনশো। তিনি অশ্বারোহীদের প্রত্যেককে দুই ভাগ এবং পদাতিকদের প্রত্যেককে এক ভাগ করে গনীমতের মাল প্রদান করেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩০১৬. আয-যুহরী, আবদুল্লাহ ইবনি আবু বাকর [রাদি.] ও মুহাম্মদ ইবনি মাসালামাহর কতিপয় সন্তান সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তারা বলেন, খায়বার বিজিত হলে কিছু লোক দুর্গে অবরুদ্ধ থাকে। তারা রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] কাছে নিরাপত্তা ও অন্যত্র চলে যাওয়ার অনুমতি চাইলো। তিনি তাঁদের আবেদন গ্রহণ করিলেন। ফাদাকের লোকেরা এটা জানতে পেরে তারাও অনুরূপ প্রস্তাব করলো। এ এলাকাটি বিশেষ করে রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] জন্য নির্দিষ্ট ছিল। কেননা এ এলাকা জয় করিতে ঘোড়া দৌড়াতে হয়নি এবং উটও হ্যাঁকাতে হয় নি।
সনদ দুর্বল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০১৭. সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খায়বারের কোন অঞ্চল যুদ্ধের মাধ্যমে আর কোনো এলাকা সন্ধির মাধ্যমে দখল করেন। আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আল-হারিস ইবনি মিসকীনের সামনে [কিছু] পাঠ করা হয়। তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ইবনি ওয়াহ্ব তোমাদেরকে অবহিত করেছেন যে, ইবনি শিহাব হইতে মালিক আমাকে বলিয়াছেন, খায়বারের কিছু এলাকা শক্তি প্রয়োগে এবং কিছু এলাকা সন্ধির মাধ্যমে দখল করা হয়। আমি [ইবনি ওয়াহব] মালিককে জিজ্ঞেস করি, আল-কুতাইবাহ বলিতে কি বুঝায়? তিনি বলিলেন, খায়বারের জমি। এখানে চল্লিশ হাজার খেজুর গাছ ছিল।
মক্কা-বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০১৮. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুদ্ধের পর শক্তি প্রয়োগে খায়বার অঞ্চল জয় করেন এবং যুদ্ধ শেষে সেখানকার অধিবাসীদের অবরুদ্ধ দুর্গ থেকে এ শর্তে বের হইতে দেয়া হয় যে, তারা এখান থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্যত্র চলে যাবে।
মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩০১৯. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খায়বারের ধন-সম্পদ থেকে এক-পঞ্চমাংশ পৃথক করেন। অতঃপর অবশিষ্ট মালামাল সেখানে উপস্থিত যোদ্ধাদের মাঝে এবং হুদায়বিয়ার ঐ সব লোকদের মধ্যে বণ্টন করিলেন যারা [খায়বারে] অনুপস্থিত ছিলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩০২০. উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি যদি পরবর্তীকালের মুসলিমদের বিষয় খেয়াল না করতাম তাহলে আমি যে কোন জনপদই জয় করতাম, আর তা ঐভাবে বণ্টন করতাম যেভাবে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খায়বার এলাকায় বণ্টন করেছেন।
মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৫ঃ মাক্কাহ [বিজয়] সম্পর্কিত তথ্য
৩০২১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মাক্কা বিজয়ের দিন আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব [রাদি.] আবু সুফিয়ান ইবনি হারবকে সাথে নিয়ে রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] নিকট আসেন। মাররুয-যাহরান নামক জায়গাতে পৌঁছে আবু সুফিয়ান ইসলাম কবুল করিলেন। আব্বাস [রাদি.] তাঁকে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আবু সুফিয়ান এমন ব্যক্তি, যে নেতৃত্বের গৌরব পছন্দ করে। যদি আপনি তাহাঁর জন্য কিছু করিতেন! তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আজকে আবু সুফিয়ানের বাড়িতে কেউ আশ্রয় নিলে সে নিরাপত্তা পাবে এবং যে ব্যক্তি নিজের ঘরের দরজা বন্ধ রাখবে সেও নিরাপদ থাকিবে।
হাসান ঃ মুসলিম – শেষের বাক্যটি। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩০২২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [মাক্কাহ বিজয়ের সময়] নাবী [সাঃআঃ] যখন মাররুয-যাহরান নামক স্থানে অবস্থান করেছিলেন তখন আব্বাস [রাদি.] মনে মনে বলিলেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি! তারা এসে আশ্রয় চাওয়ার আগেই যদি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জোরপূর্বক মক্কায় ঢুকেন তাহলে তা কুরাইশদের জন্য ধ্বংসের কারণ হইবে। আমি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] খচ্চরের পিঠে বসে মনে মনে বলিলাম, আমি যদি যাওয়ার মতো লোক পেতাম, আর ঐ লোক মক্কাবাসীদের নিকট গিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর অবস্থানস্থল সম্পর্কে অবহিত করতো এবং তাহাঁর কাছে এসে তারা নিরাপত্তা চাইতো। এ চিন্তা করিতে করিতে আমি সওয়ারী নিয়ে এগুচ্ছিলাম। হঠাৎ আমি আবু সুফিয়ান ও বুদাইল ইবনি ওয়ারাকার কথোপকথন শুনতে পাই। আমি বলিলাম, হে আবু হানযালাহ। সে আমার কণ্ঠস্বর চিনতে পেরে বললো, আবুল ফাদল নাকি? আমি বলিলাম, হ্যাঁ। সে বললো, আমার পিতামাতা তোমার জন্য কোরবান হোক। কি ব্যাপার? আমি বলিলাম, এই তো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর সাথের সৈন্যবাহিনী। সে বললো, বাঁচার জন্য কি কৌশল অবলম্বন করা যায়? আব্বাস [রাদি.] বলেন, আবু সুফিয়ান আমার পিছনে সওয়ার হলো এবং তার সাথী ফিরে গেলো। অতঃপর ভোর বেলায় উপস্থিত হলাম। সে ইসলাম কবুল করলো। আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আবু সুফিয়ান এমন লোক যে নেতৃত্বের গৌরব পছন্দ করে, তাহাঁর জন্য কিছু করুন। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। যে ব্যাক্তি আবু সুফিয়ানের ঘরে আশ্রয় নিবে সে নিরাপদ; যে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করিবে সেও নিরাপদ। বর্ণনাকারী বলেন, লোকজন নিজেদের ঘর ও মাসজিদুল হারামে আশ্রয় নিলো।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩০২৩. ওয়াহ্ব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি জাবির [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম, তারা মাক্কাহ বিজয়ের দিন কোন গণিমত লাভ করেছিলেন কি? তিনি বলিলেন, না।
মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩০২৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] যখন মাক্কাহয় প্রবেশ করিলেন, তিনি যুবাইর ইবনিল আওয়াম, আবু উবাইদাহ ইবনিল জাররাহ ও খালিদ ইবনিল ওয়ালীদকে ঘোড়ায় চড়ে [পরিস্থিতি লক্ষ্য রাখতে] প্রেরণ করেন। তিনি বলিলেনঃ হে আবু হুরায়রা! আনসারদের আমার নিকট ডেকে বলুন, এই এই পথ ধরে অগ্রসর হইতে। যেই তোমাদের সামনে পড়বে তাহাকে হত্যা করিবে। একজকন ঘোষক ঘোষণা করিলেন, আজকের পরে কুরাইশরা অবশিষ্ট থাকিবে না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, যে ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করিবে সে নিরাপদ। যে অস্ত্র সমর্পণ করিবে সেও নিরাপদ। কুরাইশ নেতারা [নিরাপত্তার জন্য] কাবা ঘরে ঢুকলো। এতে কাবা ঘর ভরে গেলো। নাবী [সাঃআঃ] কাবা ঘর তাওয়াফ করিলেন এবং মাকামে ইবরাহীমে সালাত আদায় করে দরজার চৌকাঠ ধরে দাঁড়ালেন। তারা বের হয়ে নাবী [সাঃআঃ] এর কাছে ইসলামের উপর বাইআত গ্রহণ করলো।
মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৬ঃ তায়িফ [বিজয়] সম্পর্কিত তথ্য
৩০২৫. ওয়াহ্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি জাবির [রাদি.] কে জিজ্ঞেস করি, বনূ সাক্বীফ যখন বাইআত গ্রহণ করলো, তখন তারা কি কি শর্ত আরোপ করেছিলো? তিনি বলিলেন, তারা নাবী [সাঃআঃ] এর এ শর্তের উপর নাবী [সাঃআঃ] এর কাছে বাইআত নিলো যে, তারা যাকাত দিবে না এবং জিহাদে যোগদান করিবে না। এরপর তিনি নাবী [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেনঃ তারা যখন ইসলাম গ্রহণ করিবে তখন যাকাত দিবে, জিহাদেও যোগদান করিবে।
সহিহ ঃ সহিহাহ [১৮৮৮]। মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩০২৬. উসমান ইবনি আবুল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] নিকট বনূ সাক্বীফের প্রতিনিধি দল এলে তিনি তাহাদেরকে মাসজিদে অবস্থান করালেন, যেন তাহাদের মন নরম হয়। তারা তাহাঁর প্রতি শর্ত আরোপ করলো যে, তাহাদেরকে যুদ্ধে যেতে বাধ্য করা যাবে না, তাহাদের কাছ থেকে উশর আদায় করা যাবে না এবং তাহাদেরকে সালাত আদায়ে বাধ্য করা যাবে না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃএ মুহূর্তে তোমাদের জন্য যুদ্ধে যোগদান ও উশর দেয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে যে দ্বীনের মধ্যে রুকূ [সালাত] নেই তাতে কল্যাণ নাই।
দুর্বল ঃ যইফাহ [৪৩১৯]। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৭ঃ ইয়ামানের ভূমি সম্পর্কিত হুকুম
৩০২৭. আমির ইবনি শাহর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রওয়ানা হলেন। তখন হামদান গোত্রের লোকেরা আমাকে বললো, তুমি এ ব্যক্তির [রাসূলের] কাছে আমাদের প্রতিনিধি হয়ে যাবে কি? তুমি তাহাঁর সাথে যেসব বিষয়ে সমঝোতায় আসবে আমরা তাতে রাজি হবো। আর তুমি যা অপছন্দ করিবে আমরাও তা অপছন্দ করবো। আমি বলিলাম, হ্যাঁ যাবো। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] কাছে উপস্থিত হয়ে তাহাঁর ফায়সালা মেনে নেই এবং আমার গোত্রের লোকেরা ইসলাম কবুল করলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উমাইর যি-মাররানের [রাদি.] নিকট একটি পত্র লিখালেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি মালিক ইবনি মুরারাহ আর-রাহাবীকে সমগ্র ইয়ামানবাসীর কাছে [দ্বীনের দাওয়াতের উদ্দেশ্যে] পাঠালেন। অতঃপর আককু যু-খাইওয়ান ইসলাম কবুল করে। বর্ণনাকারী বলেন, আক্কু-কে বলা হলো, তুমি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] নিকট গিয়ে তাহাঁর কাছ থেকে তোমার গ্রাম ও সম্পদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করো। সুতরাং সে রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] এর নিকট এলে তিনি তাহাঁর জন্য নিরাপত্তা লিখালেন। পত্রটি এরূপঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] এর পক্ষ হইতে আককু যি-খাইওয়ানের প্রতি। যদি সে [মুসলিম হওয়ার ব্যাপারে] সত্যবাদী হলে তার গ্রাম, সম্পদ ও তার দাস-দাসীর যিম্মাদারীর দায়িত্ব আল্লাহ ও মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর। খালিদ ইবনি সাঈদ ইবনিল আস [রাদি.] এ চিঠির ফরমান লিখেছিলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০২৮. আবইয়াদ ইবনি হাম্মাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি প্রতিনিধি দলের সাথে রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] নিকট এসে তাহাঁর সঙ্গে যাকাত সম্পর্কে আলাপ করেন। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ হে সাবার অধিবাসীগণ! যাকাত অবশ্যই দিতে হইবে। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তুলা আমাদের কৃষি উৎপাদন। আর সাবার অধিবাসীরা তো উজাড় হয়ে গেছে। তাহাদের কেউ অবশিষ্ট নেই, শুধু মারিব শহরে মুষ্টিমেয় লোক রয়েছে। নাবী [সাঃআঃ] সত্তর জোড়া মুআফিরী কাপড়ের মূল্যের বিনিময়ে তাহাদের সাথে সন্ধি করিলেন। যা বাজ্জিল মাআফিরের লোকেরা প্রতি বছর নিয়মিত আদায় করিবে। সাবায় অবশিষ্ট এ লোকেরা রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] মৃত্যু পর্যন্ত এ কর প্রদান করে আসছিল। রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] ইন্তেকালের পর কর্মচারীরা তাহাঁর সাথে আবইয়াদ ইবনি হাম্মালের সত্তর জোড়া কাপড় প্রদানের চুক্তি ভঙ্গ করে। আবু বাকর [রাদি.] এটা জানতে পেরে পূর্বের চুক্তিই পুনর্বহাল রাখার হুকুম দেন। বাকরের [রাদি.] মৃত্যুর পর শেষ পর্যন্ত সন্ধিচুক্তি বাতিল হয়ে যায় এবং তারা অপরাপর মুসলিমের মত সদাক্বাহ আদায় চালু রাখে।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ–২৮ঃ আরব উপদ্বীপ থেকে ইয়াহুদীদের উচ্ছেদের বর্ণনা
৩০২৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] তিনটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলিয়াছেনঃ আরব উপদ্বীপ থেকে মুশরিকদের বিতাড়িত করিবে। আমি যেভাবে রাষ্ট্রদূতদেরর সাথে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করেছি তোমরাও অনুরূপ করিবে। বর্ণনাকারী বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] তৃতীয় বিষয়টি সম্পর্কে নীরব থাকেন। অথবা তিনি বলিয়াছেন, আমি তা ভুলে গেছি।
সহীহঃ সহিহাহ [১১৩৩]। মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩০৩০. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ আমি অবশ্যই আরব উপদ্বীপ থেকে ইয়াহুদী-খৃস্টানদের বিতাড়িত করবো। এখানে মুসলিমদের ছাড়া আর কাউকে আমি থাকতে দিবো না।
সহীহঃ সহিহাহ [১৩৩৪]। মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩০৩১. উমার [রাদি.] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন … উপরের হাদিসের অনুরূপ। তবে পূর্বের হাদিসটি পূর্ণাঙ্গ।
আমি এটি সহিহ এবং যঈফেও পাইনি। হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৩০৩২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ একই রাষ্ট্রে দুটি ক্বিবলাহ থাকতে পারে না।
দুর্বলঃ তিরমীযি [৩৩৬]। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩০৩৩. উমার ইবনি আবদুল ওয়াহিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সাইদ ইবনি আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিয়াছেন, আরব উপদ্বীপের সীমা হচ্ছেঃ একদিকে ওয়াদিল কুরা হইতে ইয়ামানের সীমান্ত পর্যন্ত এবং অপরদিকে ইরাকের সীমান্ত হইতে আরব সাগরের তীর পর্যন্ত।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু
৩০৩৪. আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একদা হারিস ইবনি মিসকীনের সম্মুখে হাদিস পাঠ করা হয়। তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আশহাব ইবনি আবদুল আযীয বলেন, মালিক বলিয়াছেন, উমার [রাদি.] নাজরানবাসীদের বহিষ্কার করেছেন কিন্তু তাইমার অধিবাসীদের বহিষ্কার করেননি। কারণ এটি আরব উপদ্বীপের অংশ নয়। আমার জানা মতে, ওয়াদিল কুরার ইয়াহুদীদের নির্বাসন দেয়া হয়নি। কারণ তাহাদের এ এলাকাটিকে আরব উপদ্বীপের অংশ মনে করা হয়নি।
সহিহ মাক্বতু। মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উমার [রাদি.] নাজরান ও ফাদাক এলাকার ইয়াহুদীদের বিতাড়িত করেছিলেন। দুর্বল মাওকুফ। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
অনুচ্ছেদ–২৯ঃ সন্ধির মাধ্যমে এবং জবর দখলকৃত জমি সৈনিকদের মাঝে বণ্টন স্থগিত রাখা
৩০৩৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ [অচিরেই] ইরাকবাসীরা নিজেদের পরিমাপ পদ্ধতি ও দিরহাম ব্যবহার করা হইতে বিরত হইবে। সিরিয়ার অধিবাসীরাও তাহাদের পরিমাপ পদ্ধতি ও দীনার ব্যবহার করা হইতে বিরত হইবে। মিসরবাসীরাও তাহাদের পরিমাপ পদ্ধতি ও দীনার ব্যবহার করা হইতে বিরত হইবে। অতঃপর তোমরা যেখানে থেকে শুরু করেছো সেখানেই প্রত্যাবর্তন করিবে। অধস্তন বর্ণনাকারী যুহাইর এ কথা তিনবার উচ্চারণ করেন যে, এ হাদিসের উপর আবু হুরায়রার রক্ত-মাংস সাক্ষী।
মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩০৩৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা কোন জনবসতিতে উপস্থিত হয়ে সেখানে অবস্থান করলে তার অংশ তোমরা পাবে। কোন জনপদের লোকেরা আল্লাহ্ ও তাহাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করলে [তা তোমাদের দখলে এলে] সেখান থেকে আল্লাহ্ ও তাহাঁর রাসূলের জন্য এক-পঞ্চমাংশ পৃথক করার পর অবশিষ্ট সম্পদ তোমাদের থাকিবে।
মাদীনা, খায়বার, তায়িফ, ইয়ামান, আরব ও মক্কা বিজয় হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply