মক্কায় প্রবেশ কালে গোসল করা এবং আগে ও পরে করনীয়
মক্কায় প্রবেশ কালে গোসল করা এবং আগে ও পরে করনীয় >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
২৫/৩৮. অধ্যায়ঃ মক্কায় প্রবেশকালে গোসল করা।
২৫/৩৯. অধ্যায়ঃ দিবাভাগে ও রাত্রিকালে মক্কায় প্রবেশ করা।
২৫/৪০. অধ্যায়ঃ কোন্ দিক হইতে মক্কায় প্রবেশ করিবে।
২৫/৪১. অধ্যায়ঃ কোন্ দিক দিয়ে মক্কা হইতে বের হইবে।
২৫/৪২. অধ্যায়ঃ মক্কা ও তার ঘরবাড়ির ফযীলত
২৫/৪৩. অধ্যায়ঃ হারমের [৫৮] ফযীলত।
২৫/৪৪. অধ্যায়ঃ কাউকে মক্কায় অবস্থিত বাড়ির (ও জমির) ওয়ারিশ বানানো
২৫/৪৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর মক্কায় অবতরণ।
২৫/৪৬. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “স্মরণ কর, ইব্রাহীম বলেছিলেনঃ হে আমার প্রতিপালক! এ নগরীকে নিরাপত্তাময় করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তান-সন্ততিকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন। হে আমার রব! এসব মূর্তি অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে; তাই যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করিবে সে তো আমার দলভুক্ত, কিন্তু যে আমার কথা অমান্য করিবে, আপনি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। হে আমাদের রব! আমি আমার বংশধরদের মধ্য থেকে কতককে কৃষি অনুপযোগী অনুর্বর উপত্যকায় আপনার পবিত্র ঘরের কাছে আবাদ করেছি।
২৫/৪৭. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ মানুষের কল্যাণের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন মহা সম্মানিত ঘর কাবাকে, সম্মানিত মাসকে, কুরবানীর জন্য কাবায় প্রেরিত পশুকে এবং গলায় মালা পরিহিত পশুকে। এর কারণ এই যে, তোমরা যেন জানতে পার যে, অবশ্যই আল্লাহ জানেন যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে জমিনে, আর আল্লাহ তো সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (আল-মায়িদাহঃ ৯৭)
২৫/৩৮. অধ্যায়ঃ মক্কায় প্রবেশকালে গোসল করা।
১৫৭৩. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাদি.) হারামের নিকটবর্তী স্থানে পৌছলে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিতেন। অত:পর যী-তুয়া নামক স্থানে রাত যাপন করিতেন। এরপর সেখানে ফজরের সালাত আদায় করিতেন ও গোসল করিতেন। তিনি বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) এরূপ করিতেন।
(১৫৫৩, মুসলিম ১৫/৩৮, হাদীস ১২৫৯) (আঃপ্রঃ ১৪৬৯, ইঃফাঃ ১৪৭৫)
২৫/৩৯. অধ্যায়ঃ দিবাভাগে ও রাত্রিকালে মক্কায় প্রবেশ করা।
১৫৭৪. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ভোর পর্যন্ত যী-তুয়ায় রাত যাপন করেন, অতঃপর মক্কায় প্রবেশ করেন। (রাবী নাফি বলেন) ইবনু উমর (রাদি.) -ও এরূপ করিতেন। (১৫৫৩)
(আঃপ্রঃ ১৪৭০, ইঃফাঃ ১৪৭৬)
২৫/৪০. অধ্যায়ঃ কোন্ দিক হইতে মক্কায় প্রবেশ করিবে।
১৫৭৫. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সানিয়্যাতুল উলয়া (হারমের উত্তর-পূর্বদিকে কাদা নামক স্থান দিয়ে) মক্কায় প্রবেশ করিতেন এবং সানিয়্যা সুফলা (হারমের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে কুদা নামক স্থান) দিয়ে বের হইতেন। (১৫৭৬)
(আঃপ্রঃ ১৪৭১, ইঃফাঃ ১৪৭৭)
২৫/৪১. অধ্যায়ঃ কোন্ দিক দিয়ে মক্কা হইতে বের হইবে।
১৫৭৬. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বাতহায় অবস্থিত সানিয়্যা উলয়ার কাদা নামক স্থান দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন এবং সানিয়্যা সুফ্লার দিক দিয়ে বের হন। (১৫৭৫)
(আঃপ্রঃ ১৪৭২, ইঃফাঃ ১৪৭৮)
১৫৭৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) যখন মক্কায় আসেন তখন এর উচ্চ স্থান দিয়ে প্রবেশ করেন এবং নীচু স্থান দিয়ে ফেরার পথে বের হন।
(১৫৭৮,১৫৭৯,১৫৮০,১৫৮১, ৪২৯০,৪২৯১) (আঃপ্রঃ ১৪৭৩, ইঃফাঃ ১৪৭৯)
১৫৭৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) মক্কা বিজয়ের বছর কাদা-র পথে (মক্কায়) প্রবেশ করেন এবং বের হন কুদা-র পথে যা মক্কার উঁচু স্থানে অবস্থিত। (১৫৭৭)
(আঃপ্রঃ ১৪৭৪, ইঃফাঃ ১৪৮০)
১৫৭৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) মক্কা বিজয়ের বছর কাদা নামক স্থান দিয়ে মক্কার উঁচু ভূমির দিক হইতে মক্কায় প্রবেশ করেন। রাবী হিসাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (আমার পিতা) উরওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কাদা ও কুদা উভয় স্থান দিয়ে (মক্কায়) প্রবেশ করিতেন। তবে অধিকাংশ সময় কুদা দিয়ে প্রবশ করিতেন, কেননা তাহাঁর বাড়ি এ পথে অধিক নিকটবর্তী ছিল।
(১৫৭৭, মুসলিম ১৫/৩৭, হাদীস ১২৫৭, আহমাদ ৪৮৪৩) (আ,প্র. ১৪৭৫ সম্পূর্ণ নেই, ইঃফাঃ ১৪৮১)
১৫৮০. উরওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মক্কা বিজয়ের বছর মক্কার উঁচু ভূমি কাদা দিয়ে (মক্কায়) প্রবেশ করেন। [রাবী হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] উরওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) অধিকাংশ সময় কুদার পথে প্রবেশ করিতেন, কেননা তাহাঁর বাড়ি এ পথের অধিক নিকটবর্তী ছিল। (১৫৭৭)
(আঃপ্রঃ ১৪৭৬, ইঃফাঃ ১৪৮২)
১৫৮১. উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মক্কা বিজয়ের বছর কাদার পথে মক্কায় প্রবেশ করেন। [রাবী হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] উরওয়াহ উভয় পথেই প্রবেশ করিতেন, তবে কুদা-র পথে তাহাঁর বাড়ি নিকটবর্তী হওয়ার কারনে সে পথেই অধিকাংশ সময় প্রবেশ করিতেন। আবু আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, কাদা ও কুদা দুটি স্থানের নাম। (১৫৭৭)
(আঃপ্রঃ ১৪৭৭, ইঃফাঃ ১৪৮৩)
২৫/৪২. অধ্যায়ঃ মক্কা ও তার ঘরবাড়ির ফযীলত
এবং মহান আল্লাহর বানী : “এবং সেই সময়কে স্মরণ করুন যখন কাবাঘরকে মানব জাতির মিলন কেন্দ্র ও নিরাপত্তা স্থল করেছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থানকেই সলাতের স্থানরূপে গ্রহন কর এবং ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকূ ও সিজদাকারীদের জন্য আমার ঘরকে পবিত্র রাখতে আদেশ দিয়েছিলাম। স্মরণ করুন যখন ইব্রাহীম বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! একে নিরাপদ শহর করুন আর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদেরকে ফলমূল হইতে জীবিকা প্রদান করুন। তিনি বলিলেন, যে কেউ কুফরী করিবে তাকেও কিছুকালের জন্য জীবনোপভোগ করিতে দিব। অক:পর তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করিতে বাধ্য করব এবং তা কত নিকৃষ্ট পরিণাম! স্মরন করুন, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কাবা ঘরের প্রাচীর তুলছিলেন তখন তারা বলেছিলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ কাজ গ্রহণ করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আপনার একান্ত অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধর হইতে আপনার এক অনুগত উম্মাত করুন। আমাদেরকে ইবাদাতের নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হন, আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (আল-বাকারা : ১২৫-১২৮)
১৫৮২. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কাবা ঘর পুনর্নির্মাণের সময় নাবী (সাঃআঃ) ও আব্বাস (রাদি.) পাথর বহন করছিলেন। আব্বাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিলেন. তোমরা লুঙ্গিটি কাঁধের ওপর দিয়ে নাও। তিনি তা করলে মাটিতে পড়ে গেলেন এবং তাহাঁর উভয় চোখ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল। তখন তিনি বললেনঃ আমার লুঙ্গি দাও এবং তা বেঁধে নিলেন। (৩৬৪)
(আঃপ্রঃ ১৪৭৮, ইঃফাঃ ১৪৮৪)
১৫৮৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে বললেনঃ তুমি কি জান না! তোমার কওম যখন কাবা ঘরের পুনর্নির্মান করেছিল তখন ইব্রাহীম (আ:) কর্তৃক কাবা ঘরের মূল ভিত্তি হইতে তা সঙ্কুচিত করেছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি একে ইবরাহীমী ভিত্তির উপর পুন:স্থাপন করবেন না? তিনি বললেনঃ যদি তোমার সম্প্রদায়ের যুগ কুফরীর নিকটবর্তী না হত তা হলে অবশ্য আমি তা করতাম। আবদুল্লাহ (ইবনু উমর) (রা: ) বলেন, যদি আয়েশা (রাদি.) নিশ্চিতরূপে তা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে শুনে থাকেন, তাহলে আমার মনে হয় যে, বায়তুল্লাহ হাতীমের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ইবরাহিমী ভিত্তির উপর নির্মিত না হবার কারণেই আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (তাওয়াফের সময়) হাতীম সংলগ্ন দুটি কোণ স্পর্শ করিতেন না।
(১২৬, মুসলিম ১৫/৬৯, হাদীস ১৩৩৩, আহমাদ ২৫৪৯৫) (আঃপ্রঃ ১৪৭৯, ইঃফাঃ ১৪৮৫)
১৫৮৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, (হাতীমের) দেয়াল কি বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত, তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি বললাম, তাহলে তারা বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত করিল না কেন? তিনি বললেনঃ তোমার গোত্রের (অর্থাৎ কুরাইশের কাবা নির্মাণের) সময় অর্থ নি:শেষ হয়ে যায়। আমি বললাম, কাবার দরজা এত উঁচু হওয়ার কারন কি? তিনি বললেনঃ তোমার কওমতো এ জন্য করেছে যে, যাকে ইচ্ছা ঢুকতে দিবে এবং যাকে ইচ্ছা নিষেধ করিবে। যদি তোমার কওমের যুগ জাহিলিয়াতের নিকটবর্তী না হত এবং আশঙ্কা না হত যে, তারা একে ভালো মনে করিবে না, তাহলে আমি দেয়ালকে বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম এবং তার দরজা ভূমি বরাবর করে দিতাম।
(১২৬, মুসলিম ১৫/৭০, হাদীস ১৩৩৩, আহমাদ ২৪৭৬৩) (আঃপ্রঃ ১৪৮০, ইঃফাঃ ১৪৮৬)
১৫৮৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে বললেনঃ যদি তোমার গোত্রের যুগ কুফরীর নিকটবর্তী না হত তা হলে অবশ্যই কাবা ঘর ভেঙে ইব্রাহীম (আ:)-এর ভিত্তির উপর তা পুনর্নির্মান করতাম। কেননা কুরায়শগন এর ভিত্তি সংকুচিত করে দিয়েছে। আর আমি আরো একটি দরজা করে দিতাম। আবু মুআবিয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেনঃ অর্থ দরজা। (১২৬)
(আঃপ্রঃ ১৪৮১, ইঃফাঃ ১৪৮৭)
১৫৮৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে বলেনঃ হে আয়েশা! যদি তোমার কওমের যুগ জাহিলিয়াতের নিকটবর্তী না হত তাহলে আমি কাবা ঘর সম্পর্কে নির্দেশ দিতাম এবং তা ভেঙ্গে ফেলা হত। অত:পর বাদ দেয়া অংশটুকু আমি ঘরের অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম এবং তা ভূমি বরাবর করে দিতাম ও পূর্ব-পশ্চিমে এর দুটি দরজা করে দিতাম। এভাবে কাবাকে ইব্রাহীম (আঃ) নির্মিত ভিত্তিতে সম্পন্ন করতাম। (বর্ণনাকারী বলেন), আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর এ উক্ত কাবা ঘর ভাঙতে (আবদুল্লাহ) ইবনু যুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে অনুপ্রাণিত করেছে। (রাবী) ইয়াযীদ বলেন, আমি আমি ইবনু যুবাইর (রাদি.)-কে দেখেছি তিনি যখন কাবা ঘর ভেঙে তা পুনর্নির্মাণ করেন এবং বাদ দেয়া অংশটুকু (হাতীম) তার সাথে সংযোজিত করেন এবং ইব্রাহীম (আঃ)-এর নির্মিত ভিত্তির পাথরগুলো উটের কুঁজোর ন্যায় আমি দেখিতে পেয়েছি। (রাবী) জারীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি তাকে (ইয়াযীদকে) বললাম, কোথায় সেই ভিত্তি মূলের স্থান? তিনি বলিলেন, এখনই আমি তোমাকে দেখিয়ে দিব। আমি তাহাঁর সাথে বাদ দেয়া দেয়াল বেষ্টনীতে (হাতীমে) প্রবেশ করলাম। তখন তিনি একটি স্থানের দিকে ইঙ্গিত করে বলিলেন, এখানে। জরীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, দেয়াল বেষ্টিত স্থানটুকু পরিমাপ করে দেখলাম ছয় হাত বা তার কাছাকাছি। (১২৬)
(আ.প. ১৪৮২, ইঃফাঃ ১৪৮৮)
২৫/৪৩. অধ্যায়ঃ হারমের [৫৮] ফযীলত।
[৫৮] হারামের চতুঃসীমা : মক্কা থেকে মদীনার পথে তিন মাইল, ইরাকের পথে সাত মাইল, জেরানার পথে নয় মাইল এবং জেদ্দার পথে দশ মাইল।
ও মহান আল্লাহর বাণীঃ “আমি তো আদিষ্ট হয়েছি এ নগরীর প্রতিপালকের ইবাদত করিতে। যিনি একে করিয়াছেন সম্মানিত, সব কিছু তাহাঁরই। আমি আরও আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি আত্নসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হই-(আন-নামালঃ ৯১)। এবং তাহাঁর বাণীঃ আমি কি তাদের এক নিরাপদ হারামে প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে সব রকম ফলমূল আমদানি হয় আমার দেয়া রিজিক স্বরূপ? কিন্তু তাদের অধিকাংশ তা জানে না।” (আল-কাসাসঃ ৫৭)
১৫৮৭. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ এ (মক্কা) শহরকে আল্লাহ সম্মানিত করিয়াছেন, এর একটি কাঁটাও কর্তন করা যাবে না, এতে বিচরণকারী শিকারকে তাড়া করা যাবে না, এখানে প্রচারের উদ্দেশ্য ব্যতীত পড়ে থাকা কোন বস্তু কেউ তুলে নিবে না। (১৩৪৯)
(আঃপ্রঃ ১৪৮৩, ইঃফাঃ ১৪৮৯)
২৫/৪৪. অধ্যায়ঃ কাউকে মক্কায় অবস্থিত বাড়ির (ও জমির) ওয়ারিশ বানানো
তার কেনা-বেচা এবং বিশেষভাবে মাসজিদুল হারামে সকল মানুষের সমান অধিকার।
এ পর্যায়ে আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয়ই যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে ও মাসজিদুল হারাম থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করে, যে মাসজিদুল হারামকে স্থানীয় ও বহিরাগত সব মানুষের জন্য সমান করেছি, আর যে ব্যক্তি তথায় ইচ্ছাপূর্বক অন্যায়ভাবে কোন পাপ কাজ করিবে, আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাব। (আল-হাজ্জঃ ২৫)
الْبَادِي অর্থ হলো الطَّارِي (আগন্তুক) ও مَعْكُوفًا অর্থ হলো مَحْبُوسًا (আবদ্ধ)
১৫৮৮. উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি মক্কায় অবস্থিত আপনার বাড়ির কোন স্থানে অবস্থান করবেন? তিনি (সাঃআঃ) বললেনঃ আকীল কি কোন সম্পত্তি বা ঘর-বাড়ি অবশিষ্ট রেখে গেছে? আকীল ও তালিব আবু তালিবের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন, জাফর ও আলী (রাদি.) হননি। কেননা তাঁরা দুজন ছিলেন মুসলমান। আকীল ও তালিব ছিল কাফির। এজন্যই উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) বলিতেন, মুমিন কাফির-এর সম্পত্তির উত্তরাধিকার হয় না। ইবনু শিহাব (যুহরী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (পূর্ববর্তীগণ নিম্ন উদ্ধৃত আয়াতে উক্ত বিলায়াতকে উত্তরাধিকার বলে) এই তাফসীর করিতেন।
আল্লাহ বলেনঃ “নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, হিজরাত করেছে, নিজেদের ধন ও প্রাণ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দান করেছে ও সাহায্য করেছে তারা একে অপরের বন্ধু। আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু হিজরাত করেনি তাদের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব তোমাদের নেই যে পর্যন্ত না তারা হিজরাত করে। আর যদি তারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাহায্য চায় তবে তাদের সাহায্য করা তোমাদের অবশ্য কর্তব্য, কিন্তু তোমাদের সাথে যে ক্বাওমের চুক্তি রয়েছে তাদের মুকাবিলায় নয়। তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা সবই দেখেন।” (আল-আনফালঃ ৭২)
(৩০৫৮, ৪২৮২, ৬৭৬৪, মুসলিম ১৫/৮০, হাদীস ১৩৫১, আহমাদ ২১৮২৫)(আঃপ্রঃ ১৪৮৪, ইঃফাঃ ১৪৯০)
২৫/৪৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর মক্কায় অবতরণ।
১৫৮৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (মিনা হইতে ফিরে) যখন মক্কা প্রবেশের ইচ্ছা করিলেন তখন বললেনঃ আগামীকাল খায়ফ বনী কেনানায় (মুহাসসাবে) ইনশাআল্লাহ আমাদের অবস্থানস্থল হইবে যেখানে তারা (বনূ খায়ফ ও কুরাইশরা) কুফরীর উপর শপথ করেছিল।
(১৫৯০, ৩৮৮২, ৪২৮৩, ৪২৮৫, ৭৪৭৯, মুসলিম ১৫/৫৯, হাদীস ১৩১৪, আহমাদ ৭২৪৪) (আঃপ্রঃ ১৪৮৫, ইঃফাঃ ১৪৯১)
১৫৯০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কুরবানীর দিনে মিনায় অবস্থানকালে নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমরা আগামীকাল (ইনশাআল্লাহ) খায়ফ বনী কিনানায় অবতরণ করব, যেখানে তারা কুফরীর উপরে শপথ নিয়েছিল। (রাবী বলেন) খায়ফ বনী কিনানাই হলো মুহাসসাব। কুরায়শ ও কিনানা গোত্র বনূ হাশিম ও বনূ আবদুল মুত্তালিব-এর বিরুদ্ধে এই বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল, যে পর্যন্ত নাবী (সাঃআঃ)-কে তাদের হাতে সমর্পণ করিবে না সে পর্যন্ত তাদের সাথে বিয়ে-শাদী ও বেচা-কেনা বন্ধ থাকবে।
সালামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উকাইল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে এবং ইয়াহইয়া ইবনু যাহহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আওযায়ী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে ইবনু শিহাব যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত এবং তাঁরা উভয়ে [সালামাহ ও ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বনূ হাশিম ও ইবনুল মুত্তালিব বলে উল্লেখ করিয়াছেন। আবু আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, বনী মুত্তালিব হওয়াই অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।
(১৫৮৯, মুসলিম ১৫/৫৯, হাদীস ১৩১৪, আহমাদ ১০৯৬৯) (আঃপ্রঃ ১৪৮৬, ইঃফাঃ ১৪৯২)
২৫/৪৬. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “স্মরণ কর, ইব্রাহীম বলেছিলেনঃ হে আমার প্রতিপালক! এ নগরীকে নিরাপত্তাময় করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তান-সন্ততিকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন। হে আমার রব! এসব মূর্তি অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে; তাই যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করিবে সে তো আমার দলভুক্ত, কিন্তু যে আমার কথা অমান্য করিবে, আপনি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। হে আমাদের রব! আমি আমার বংশধরদের মধ্য থেকে কতককে কৃষি অনুপযোগী অনুর্বর উপত্যকায় আপনার পবিত্র ঘরের কাছে আবাদ করেছি।
হে আমাদের রব! যেন তারা সালাত কায়িম করে। সুতরাং আপনি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে দিন এবং ফলাদি দিয়ে তাদের রুজীর ব্যবস্থা করুন, যাতে তারা শোকর করে।” (ইবরাহীমঃ ৩৫-৩৭)
২৫/৪৭. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ মানুষের কল্যাণের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন মহা সম্মানিত ঘর কাবাকে, সম্মানিত মাসকে, কুরবানীর জন্য কাবায় প্রেরিত পশুকে এবং গলায় মালা পরিহিত পশুকে। এর কারণ এই যে, তোমরা যেন জানতে পার যে, অবশ্যই আল্লাহ জানেন যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে জমিনে, আর আল্লাহ তো সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (আল-মায়িদাহঃ ৯৭)
১৫৯১. আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, হাবাশার অধিবাসী পায়ের সরু নলা বিশিষ্ট লোকেরা কাবাগৃহ ধ্বংস করিবে।
(১৫৯৬, মুসলিম ৫২/১৮, হাদীস ২৯০৯) (আঃপ্রঃ ১৪৮৭, ইঃফাঃ ১৪৯৩)
১৫৯২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রমাযানের সওম ফর্য হওয়ার পূর্বে মুসলিমগণ আশূরার সওম পালন করিতেন। সে দিনই কাবা ঘর (গিলাফে) আবৃত করা হত। অতঃপর আল্লাহ যখন রমাযানের সওম ফর্য করিলেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আশূরার সওম যার ইচ্ছা সে পালন করিবে আর যার ইচ্ছা সে ছেড়ে দিবে।
(১৮৯৩, ২০০১, ২০০২, ৩৮৩১, ৪৫০২, ৪৫০৪) (আঃপ্রঃ ১৪৮৮, ইঃফাঃ ১৪৯৪)
১৫৯৩. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইয়াজূজ ও মাজূজ বের হওয়ার পরও বাইতুল্লাহর হজ্জ ও উমরাহ পালিত হইবে। আবান ও ইমরান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস বর্ণনায় হাজ্জাজ ইবনু হাজ্জাজের অনুসরণ করিয়াছেন। আবদুর রাহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করেন, “বাইতুল্লাহর হজ্জ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ক্বিয়ামাত সংঘটিত হইবে না।” প্রথম রিওয়ায়াতটি অধিক গ্রহণযোগ্য। আবু আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, কাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) রিওয়ায়াতটি আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে এবং আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে শুনেছেন।
(আঃপ্রঃ ১৪৮৯, ইঃফাঃ ১৪৯৫)
Leave a Reply