ভয়ের সালাত /খাওফের সালাত। আক্রমণ ও যুদ্ধাবস্থায় সালাত
ভয়ের সালাত /খাওফের সালাত। আক্রমণ ও যুদ্ধাবস্থায় সালাত >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ১২- খাওফ (ভয় ভীতির সালাত), অধ্যায়ঃ (১-৬)=৬টি
১২/১. অধ্যায়ঃ খাওফের সালাত (শত্রুভীতির অবস্থায় সালাত)।
১২/২. অধ্যায়ঃ পদাতিক বা আরোহী অবস্থায় ভয়ের সালাত।
১২/৩. অধ্যায়ঃ খাওফের সালাতে মুসল্লীগণের একাংশ অন্য অংশকে পাহারা দিবে।
১২/৪. অধ্যায়ঃ দূর্গ অবরোধ ও শত্রুর মুখোমুখী অবস্থায় সালাত।
১২/৫. অধ্যায়ঃ শত্রুর পশ্চাদ্ধাবণকারী ও শত্রুতাড়িত ব্যক্তির আরোহী অবস্থায় ও ইঙ্গিতে সালাত আদায় করা।
১২/৬. অধ্যায়ঃ তাকবীর বলা, ফজরের সালাত সময় হলেই আদায় করা এবং শত্রুর উপর অতর্কিত আক্রমণ ও যুদ্ধাবস্থায় সালাত।
১২/১. অধ্যায়ঃ খাওফের সালাত (শত্রুভীতির অবস্থায় সালাত)।
মহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আর যখন তোমরা পৃথিবীতে সফর করিবে, তখন তোমাদের কোন গুনাহ হইবে না যদি তোমরা সালাত সংক্ষিপ্ত কর, এ আশংকায় যে, কাফিররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করিবে। নিশ্চয় কাফিররা হল তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। আর আপনি যখন তাদের মধ্যে থাকেন এবং তাদের সালাত পড়াতে চান, তখন যেন তাদের একদল আপনার সাথে দাঁড়ায় এবং তারা যেন নিজেদের অস্ত্র সাথে রাখে। তারপর যখন তারা সিজদা সম্পন্ন করিবে তখন যেন তারা তোমাদের পেছনে অবস্থান নেয়, আর অন্য দল যারা সালাত আদায় করেনি তারা যেন আপনার সাথে সালাত আদায় করে নেয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে। কাফিররা চায় যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও যাতে তারা একযোগে তোমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। যদি তোমরা বৃষ্টির কারণে কষ্ট পাও অথবা যদি তোমরা অসুস্থ হও, এ অবস্থায় নিজেদের অস্ত্র পরিত্যাগ করলে তোমাদের কোন গুনাহ নেই। কিন্তু তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করিবে। আল্লাহ কাফিরদের জন্য অবশ্যই লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (সুরা আন-নিসা ৪/১০১-১০২)
৯৪২. শুআয়ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ) কি সালাত আদায় করিতেন অর্থাৎ খাওফের সালাত? তিনি বলিলেন, আমাকে সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জানিয়েছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) বলেছেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে নাজ্দ এলাকায় যুদ্ধ করেছিলাম। সেখানে আমরা শত্রুর মুখোমুখী কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালাম। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করিলেন। একদল তাহাঁর সঙ্গে সালাতে দাঁড়ালেন এবং অন্য একটি দল শত্রুর মুখোমুখী অবস্থান করিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর সংগে যাঁরা ছিলেন তাঁদের নিয়ে রুকূ ও দুটি সিজদা করিলেন। অতঃপর এ দলটি যারা সালাত আদায় করেনি, তাঁদের স্থানে চলে গেলেন এবং তাঁরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর পিছনে এগিয়ে এলেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁদের সঙ্গে এক রুকূ ও দু সিজদা করিলেন এবং পরে সালাম ফিরালেন। অতঃপর তাদের প্রত্যেকে উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজে নিজে একটি রুকূ ও দুটি সিজদা (সহ সালাত) শেষ করিলেন।
১২/২. অধ্যায়ঃ পদাতিক বা আরোহী অবস্থায় ভয়ের সালাত।
৯৪৩. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে ইবনু উমর (রাদি.) হইতে মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
সৈন্যরা যখন পরস্পর (শত্রুমিত্র) মিলিত হয়ে যায়, তখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিবে। ইবনু উমর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে আরো বলেছেন যে, যদি সৈন্যদের অবস্থা এর চেয়ে গুরুতর হয়ে যায়, তাহলে দাঁড়ানো অবস্থায় এবং আরোহী অবস্থায় সালাত আদায় করিবে।
১২/৩. অধ্যায়ঃ খাওফের সালাতে মুসল্লীগণের একাংশ অন্য অংশকে পাহারা দিবে।
৯৪৪. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সালাতে দাঁড়ালেন এবং সাহাবীগণ তাহাঁর পিছনে (ইক্তিদা করে) দাঁড়ালেন। তিনি তাক্বীর বলিলেন, তারাও তাক্বীর বলিলেন, তিনি রুকূ করিলেন, তারাও তাহাঁর সঙ্গে রুকূ করিলেন। অতঃপর তিনি সিজদা করিলেন এবং তারাও তাহাঁর সঙ্গে সিজদা করিলেন। অতঃপর তিনি দ্বিতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়ালেন, তখন যারা তাহাঁর সংগে সিজদা করছিলেন তারা উঠে দাঁড়ালেন এবং তাদের ভাইদের পাহারা দিতে লাগলেন। তখন অপর দলটি এসে তাহাঁর সঙ্গে রুকূ করিলেন। এভাবে সকলেই সালাতে অংশগ্রহণ করিলেন। অথচ একদল অপর দলকে পাহারাও দিলেন।
১২/৪. অধ্যায়ঃ দূর্গ অবরোধ ও শত্রুর মুখোমুখী অবস্থায় সালাত।
ইমাম আওযায়ী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি অবস্থা এমন হয় যে, বিজয় আসন্ন কিন্তু শত্রুদের ভয়ে সৈন্যদের (জামাআতে) সালাত আদায় করা সম্ভব নয়, তাহলে সবাই একাকী ইঙ্গিতে সালাত আদায় করিবে। আর যদি ইঙ্গিতে আদায় করিতে না পার তবে সালাত বিলম্বিত করিবে। যে পর্যন্ত না যুদ্ধ শেষ হয় বা তারা নিরাপদ হয়। অতঃপর দু রাকআত সালাত আদায় করিবে। যদি (দু রাকআত) আদায় করিতে সক্ষম না হয় তাহলে একটি রুকূ ও দুটি সিজদা (এক রাকআত) আদায় করিবে। তাও সম্ভব না হলে শুধু তাক্বীর বলে সালাত শেষ করা জায়িয হইবে না বরং নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত সালাত বিলম্ব করিবে। মাকহুল ও (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ মত পোষণ করিতেন। আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন, (একটি যুদ্ধে) ভোরবেলা ভুস্তার দুর্গের উপর আক্রমণ চলছিলো এবং যুদ্ধ প্রচন্ডরূপ ধারণ করে, ফলে সৈন্যদের সালাত আদায় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সূর্য উঠার বেশ পরে আমরা সালাত আদায় করেছিলাম। আর আমরা তখন আবু মূসা (রাদি.)-এর সাথে ছিলাম, পরে সে দূর্গ আমরা জয় করেছিলাম। আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) বলেন, সে সালাতের বিনিময়ে দুনিয়া ও তার সব কিছুতেও আমাকে খুশী করিতে পারবে না।
৯৪৫. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধের দিন উমর (রাদি.) কুরাইশ গোত্রের কাফিরদের মন্দ বলিতে বলিতে আসলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সূর্য প্রায় ডুবে যাচ্ছে, অথচ আসরের সালাত আদায় করিতে পারিনি। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমিও তা এখনও আদায় করিতে পারিনি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি মদীনার বুতহান উপত্যকায় নেমে উযূ করিলেন এবং সূর্যাস্তের পর আসর সালাত আদায় করিলেন, অতঃপর মাগরিবের সালাত আদায় করিলেন।
১২/৫. অধ্যায়ঃ শত্রুর পশ্চাদ্ধাবণকারী ও শত্রুতাড়িত ব্যক্তির আরোহী অবস্থায় ও ইঙ্গিতে সালাত আদায় করা।
ওয়ালীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আমি ইমাম আওযায়ী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নিকট শুরাহ্বীল ইব্ন সিমত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও তাহাঁর সঙ্গীগণের সওয়ার অবস্থায় তাঁদের সালাতের উল্লেখ করলাম। তখন তিনি বলিলেন, সালাত ফাওত হবার আশংকা থাকলে আমাদের নিকট এটাই প্রচলিত নিয়ম। এর দলীল হিসেবে ওয়ালীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নাবী (সাঃআঃ) -এর নির্দেশ পেশ করেনঃ “তোমাদের কেউ যেন বাণী কুরায়যায় (এলাকায়) পৌঁছার আগে আসর সালাত আদায় না করে”।
৯৪৬. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আহযাব যুদ্ধ হইতে ফিরার পথে আমাদেরকে বলিলেন, বনূ কুরাইযাহ এলাকায় পৌঁছার পূর্বে কেউ যেন আসর সালাত আদায় না করে। কিন্তু অনেকের রাস্তাতেই আসরের সময় হয়ে গেল, তখন তাদের কেউ কেউ বলিলেন, আমরা সেখানে না পৌঁছে সালাত আদায় করব না। আবার কেউ কেউ বলিলেন, আমরা সালাত আদায় করে নেব, আমাদের নিষেধ করার এ উদ্দেশ্য ছিল না (বরং উদ্দেশ্য ছিল তাড়াতাড়ি যাওয়া) নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট এ কথা উল্লেখ করা হলে, তিনি তাঁদের কারোর ব্যাপারে কড়াকড়ি করেননি।
১২/৬. অধ্যায়ঃ তাকবীর বলা, ফজরের সালাত সময় হলেই আদায় করা এবং শত্রুর উপর অতর্কিত আক্রমণ ও যুদ্ধাবস্থায় সালাত।
৯৪৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (একদিন) ফজরের সালাত অন্ধকার থাকতে আদায় করিলেন। অতঃপর সওয়ারীতে আরোহণ করিলেন এবং বললেনঃ আল্লাহ আক্বার, খায়বার ধ্বংস হোক! যখন আমরা কোন সম্প্রদায়ের এলাকায় অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃতদের প্রভাত হয় কতই না মন্দ! তখন তারা (ইয়াহূদীরা) বের হয়ে গলির মধ্যে দৌড়াতে লাগল এবং বলিতে লাগল, মুহাম্মাদ ও তাহাঁর খামীস এসে গেছে। বর্ণনাকারী বলেন, খামীস হচ্ছে সৈন্য-সামন্ত। পরে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের উপর জয়লাভ করেন। তিনি যোদ্ধাদের হত্যা করিলেন এবং নারী-শিশুদের বন্দী করিলেন। তখন সফিয়্যাহ প্রথম দিহইয়া কালবীর এবং পরে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর অংশে পড়ল। অতঃপর তিনি তাঁকে বিয়ে করেন এবং তাহাঁর মুক্তিদানকে মাহররূপে গণ্য করেন। আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাবিত (রাদি.)-এর নিকট জানতে চাইলেন, তাঁকে কি মোহর দেয়া হয়েছিল? তা কি আপনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে জিজ্ঞেস করেছিলেন? তিনি বলিলেন, তাহাঁর মুক্তিই তাহাঁর মোহর, আর মুচ্কি হাসলেন।
Leave a Reply