পরিবার-পরিজন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান ও দাসী ভরণ পোষনের বিঁধান
পরিবার-পরিজন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান ও দাসী ভরণ পোষনের বিঁধান >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬৯, ভরণ-পোষণ, অধ্যায়ঃ (১-১৬)=১৬টি
৬৯/১. অধ্যায়ঃ পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করার ফযীলত।
৬৯/২. অধ্যায়ঃ পরিবার-পরিজনের উপর ব্যয় করা ওয়াজিব।
৬৯/৩. অধ্যায়ঃ পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য সঞ্চয় করে রাখা এবং তাদের জন্য কেমনভাবে খরচ করিতে হইবে।
৬৯/৪. অধ্যায়ঃ স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্ত্রী ও সন্তানের খোরপোষ।
৬৯/৫. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৯/৬. অধ্যায়ঃ স্বামীর গৃহে স্ত্রীর কাজকর্ম করা।
৬৯/৭. অধ্যায়ঃ স্ত্রীর জন্য খাদিম।
৬৯/৮. অধ্যায়ঃ নিজ পরিবারে গৃহকর্তার কাজকর্ম।
৬৯/৯. অধ্যায়ঃ স্বামী যদি (যথাযথ) খরচ না করে, তাহলে তার অজ্ঞাতে স্ত্রী তার ও সন্তানের প্রয়োজন অনুসারে ন্যায়সঙ্গতভাবে খরচ করিতে পারে।
৬৯/১০. অধ্যায়ঃ স্বামীর সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও তার ব্যয় নির্বাহ করা।
৬৯/১১. অধ্যায়ঃ মহিলাদের যথাযোগ্য পরিচ্ছদ দান।
৬৯/১২. অধ্যায়ঃ সন্তান লালন-পালনের ব্যাপারে স্বামীকে সাহায্য করা।
৬৯/১৩. অধ্যায়ঃ নিজ পরিবারের জন্য অসচ্ছল ব্যক্তির ব্যয় করা।
৬৯/১৪. অধ্যায়ঃ ওয়ারিসের উপরেও অনুরূপ দায়িত্ব আছে।
৬৯/১৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তি (ঋণের) কোন বোঝা অথবা সন্তান-সন্ততি রেখে মারা যাবে, তার দায়-দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত।
৬৯/১৬. অধ্যায়ঃ দাসী ও অন্যান্য নারী কর্তৃক দুধ পান করানো।
৬৯/১. অধ্যায়ঃ পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করার ফযীলত।
মহান আল্লাহর বাণীঃ লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে তারা কী খরচ করিবে? বলঃ যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত। এভাবে আল্লাহ তাহাঁর বিধানসমূহ সুস্পষ্টভাবে তোমাদের নিকট বর্ণনা করেন, যেন তোমরা ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে চিন্তা কর। দুনিয়া ও পরকালে। (সুরা আল-বাকারা ২/২১৯-২২০)।
হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (আরবী) অর্থ অতিরিক্ত।
৫৩৫১
আবু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাবী বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলামঃ এটা কি নাবী (সাঃআঃ) থেকে? তিনি বলিলেন, (হ্যাঁ) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ সওয়াবের আশায় কোন মুসলিম যখন তার পরিবার-পরিজনের প্রতি ব্যয় করে, তা তার সদকা হিসাবে গণ্য হয়। [৩১] (মুসলিম ১২/১৪ হাদীস ১০০২, আহমাদ ১৭০৮১) (আ.প্র. ৪৯৫১, ই.ফা. ৪৮৪৭)
[৩১] ধনী দানশীল ব্যক্তি তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধন আল্লাহর রাস্তায় দান করে অনেক সওয়াব হাসিল করেন। কিন্তু একজন গরীব মুসলিম যিনি নিজের পরিবারের ভরণ পোষণে ব্যস্ত থাকেন তিনি কীভাবে দানের সওয়াব পাবেন? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এমন লোকের জন্য সুসংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা তাদের নিজেদের পরিবারের ভরণ পোষণের সময় যদি এ নিয়ত রাখে যে, তারা আল্লাহর দেয়া খাদ্য খাবে আর তাহাঁরই ইবাদাত করে তাহাঁরই বান্দা হয়ে জীবন যাপন করিবে আর তাদের এ খরচের জন্য আল্লাহর নিকট সওয়াব লাভের আশা করিবে, তাহলে তারা তাদের এ ব্যয়ের জন্য আল্লাহর নিকট হইতে দান-খয়রাত করার সওয়াব হাসিল করিবে।
৫৩৫২
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, তুমি ব্যয় কর, হে আদম সন্তান! আমিও তোমার প্রতি ব্যয় করব। (৩৬৮৪) (আ.প্র. ৪৯৫২, ই.ফা. ৪৮৪৮)
৫৩৫৩
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বিধবা ও মিসকীন-এর জন্য খাদ্য জোগাড় করিতে চেষ্টরত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মত অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান ও দিনে সিয়ামকারীর মত। (৬০০৬৯, ৬০০৭; মুসলিম ৫৩/২ হাদীস ২৯৮২, আহমাদ ৮৭৪০) (আ.প্র. ৪৯৫৩, ই.ফা. ৪৮৪৯)
৫৩৫৪
সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি মক্কায় রোগগ্রস্ত হলে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমার শশ্রূষার জন্য আসেন। আমি বললাম, আমার তো মাল আছে। সেগুলো আমি ওয়াসিয়্যাত করে যাই? তিনি বললেনঃ না। আমি বললামঃ তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেনঃ না। আমি বললামঃ তবে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বললেনঃ এক-তৃতীয়াংশ করিতে পার। আর এক-তৃতীয়াংশই তো বেশী। মানুষের কাছে হাত পেতে পেতে ফিরবে ওয়ারিশদের এরকম ফকীর অবস্থায় ছেড়ে যাওয়ার চেয়ে তাদেরকে বিত্তবান অবস্থায় রেখে যাওয়া উত্তম। আর যা-ই তুমি খরচ করিবে, তা-ই তোমার জন্য সদকা হইবে। এমনকি যে লোকমাটি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে, সেটাও। সম্ভবতঃ আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করবেন। তোমার দ্বারা অনেক লোক উপকৃত হইবে, আবার অন্যেরা (কাফির সম্প্রদায়) ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। (আ.প্র. ৪৯৫৪, ই.ফা. ৪৮৫০)
৬৯/২. অধ্যায়ঃ পরিবার-পরিজনের উপর ব্যয় করা ওয়াজিব।
৫৩৫৫
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ উত্তম সদকা হলো যা দান করার পরে মানুষ অমুখাপেক্ষী থাকে। উপরের হাত নীচের হাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে আছে তাদের আগে দাও। (কেননা) স্ত্রী বলবে, হয় আমাকে খাবার দাও, নইলে তালাক দাও। গোলাম বলবে, খাবার দাও এবং কাজ করাও। ছেলে বলবে, আমাকে খাবার দাও, আমাকে তুমি কার কাছে ছেড়ে যাচ্ছ? লোকেরা জিজ্ঞেস করলঃ হে আবু হুরাইরা! আপনি কি এ হাদীস রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে শুনেছেন? তিনি উত্তরে বলিলেন, এটি আবু হুরাইরার থলে থেকে (পাওয়া) নয় [বরং নাবী (সাঃআঃ) থেকে]।(আঃপ্রঃ- ৪৯৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫১)
৫৩৫৬
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ উত্তম দান তা-ই, যা দিয়ে মানুষ অভাবমুক্ত থাকে। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে তাদের থেকে শুরু কর।(আঃপ্রঃ- ৪৯৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫২)
৬৯/৩. অধ্যায়ঃ পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য সঞ্চয় করে রাখা এবং তাদের জন্য কেমনভাবে খরচ করিতে হইবে।
৫৩৫৭
মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাওরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কেউ তার পরিবারের জন্য বছরের বা বছরের কিছু অংশের খাদ্য জোগাড় করে রাখলে এ সম্পর্কে আপনি কোন হাদীস শুনেছেন কি? মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ তখন আমার কোন হাদীস স্মরণ হলো না। পরে একটি হাদীসের কথা আমার মনে হল, যা ইবনু শিহাব যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মালিক ইবনু আওসের সূত্রে উমর (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বনূ নাযীরের খেজুর বিক্রি করিতেন এবং পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য জোগাড় করে রাখতেন।(আঃপ্রঃ- ৪৯৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫৩)
৫৩৫৮
মালিক ইবনু আওস ইবনু হাদাসান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি উমর (রাদি.) এর কাছে উপস্থিত হলাম; এমন সময় তাহাঁর দারোয়ান ইয়ারফা এসে বলিল, উসমান, আবদুর রহমান, যুবায়র ও সাদ ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইছেন। আপনার অনুমতি আছে কি? তিনি তাঁদের অনুমতি দিলেন। মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ তারা প্রবেশ করিলেন এবং সালাম দিয়ে বসলেন। এর কিছুক্ষণ পর ইয়ারফা এসে বললঃ আলী ও আব্বাস অনুমতি চাইছেন; আপনার অনুমতি আছে কি? তিনি হ্যাঁ বলে এদের উভয়কেও অনুমতি দিলেন। তাঁরা প্রবেশ করে সালাম দিয়ে বসলেন। তারপর আব্বাস (রাদি.) বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! আমার ও আলীর মধ্যে ফয়সালা করে দিন। উপস্থিত উসমান ও তাহাঁর সঙ্গীরাও বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! এদের দুজনের মধ্যে মীমাংসা করে দিন এবং একজন থেকে অপরজনকে শান্তি দিন। উমর (রাদি.) বললেনঃ থাম! আমি তোমাদেরকে সেই আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, যার আদেশে আসমান ও যমীন ঠিক আছে। তোমরা কি জান যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমাদের কেউ ওয়ারিশ হয় না। আমরা যা রেখে যাই তা সদকা। এ কথা দ্বারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিজেকে (এবং অন্যান্য নাবীগণকে) বুঝাতে চেয়েছেন। সে দলের লোকেরা বললেনঃ নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তা বলেছেন। তারপর উমর (রাদি.) আলী ও আব্বাস (রাদি.)-কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, তোমরা দুজন কি জান যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ কথা বলেছেন। তাঁরা বললেনঃ অবশ্যই তা বলেছেন। উমর (রাদি.) বলিলেন, এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলোঃ এ মালে আল্লাহ তাহাঁর রাসুলকে একটি বিশেষ অধিকার দিয়েছেন, যা তিনি ব্যতীত আর কাউকে দেননি। আল্লাহ বলেছেনঃ “আল্লাহ তাহাঁর রাসুলকে ইয়াহূদীদের কাছ থেকে যে ফায় (বিনা যুদ্ধে লাভ করা সম্পদ) দিয়েছেন তার জন্য তোমরা ঘোড়াও দৌড়াওনি, আর উটেও চড়নি, বরং আল্লাহ তাহাঁর রাসুলগণকে যার উপর ইচ্ছে আধিপত্য দান করেন; আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান” পর্যন্ত- (সুরা হাশর ৫৯/৬)। এগুলো একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর জন্য নির্ধারিত ছিল। আল্লাহর কসম! তিনি তোমাদের বাদ দিয়ে একাকী ভোগ করেননি এবং কাউকে তোমাদের উপর প্রাধান্য দেননি। এ থেকে তিনি তোমাদের দিয়েছেন এবং কিছু তোমাদের মধ্যে বিতরণ করিয়াছেন। শেষ পর্যন্ত এ মালটুকু অবশিষ্ট থেকে যায়। এ মাল থেকেই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর পরিবারের সারা বছরের খরচ দিতেন। আর যা উদ্বৃত্ত থাকত, তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহার্য মালের সঙ্গে ব্যয় করিতেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) জীবনভর এরূপই করিয়াছেন। আল্লাহর কসম দিয়ে তোমাদের জিজ্ঞেস করছি, তোমরা কি এ বিষয় জান? তারা বললেনঃ হ্যাঁ। এরপর তিনি আলী ও আব্বাস (রাদি.)-কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আমি আল্লাহর কসম দিয়ে তোমাদের জিজ্ঞেস করছি, তোমরা কি এ বিষয় জান? তাঁরা উভয়ে বললেনঃ হ্যাঁ। এরপর আল্লাহ তাহাঁর নাবীকে ওফাত দিলেন। তখন আবু বকর (রাদি.) বললেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর স্থলাভিষিক্ত। আবু বক্র এ মাল নিজ কব্জায় রাখলেন এবং এ মাল খরচের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর অনুসৃত নীতিই অবলম্বন করিলেন। আলী ও আব্বাস (রাদি.)-এর দিকে ফিরে উমর (রাদি.) বললেনঃ তোমরা তখন মনে করিতে আবু বক্র এমন, এমন। অথচ আল্লাহ জানেন এ ব্যাপারে তিনি সত্যের কল্যাণকামী, সঠিক নীতির অনুসারী। আল্লাহ আবু বক্রকে ওফাত দিলেন। আমি বললামঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও আবু বকর (রাদি.)-এর স্থলাভিষিক্ত, এরপর আমি দুবছর এ মাল নিজ কব্জায় রাখি। আমি এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও আবু বাকরের অনুসৃত নীতির-ই অনুসরণ করিতে থাকি। তারপর তোমরা দুজন আসলে; তখন তোমরা উভয়ে, একমত ছিলে এবং তোমাদের বিষয়ে সমন্বয় ছিল। তুমি আসলে ভ্রাতুষ্পুত্রের সম্পত্তিতে তোমার অংশ চাইতে। আর এ আসলো শ্বশুরের সম্পিত্ততে স্ত্রীর অংশ চাইতে। আমি বলেছিলামঃ তোমরা যদি চাও, তবে আমি এ শর্তে তোমাদেরকে তা দিয়ে দিতে পারি, তোমরা আল্লাহর সাথে ওয়াদা ও অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে যে, এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ), আবু বক্র এবং এর কর্তৃত্ব হাতে পাওয়ার পর আমিও যে নীতির অনুসরণ করে এসেছি, সে নীতিরই তোমরা অনুসরণ করিবে। অন্যথায় এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে কোন কথা বলবে না। তখন তোমরা বলেছিলেঃ এ শর্ত সাপেক্ষেই আমাদের কাছে দিয়ে দিন। তাই আমি এ শর্তেই তোমাদের তা দিয়েছিলাম। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের সকলকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আমি কি এ শর্তে এটি তাদের কাছে দেইনি? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর তিনি আলী ও আব্বাস (রাদি.)-কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আল্লাহর কসম দিয়ে তোমাদের জিজ্ঞেস করছি, আমি কি এ শর্তেই এটি তোমাদের কাছে দেইনি? তারা বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তবে এখন কি তোমরা আমার কাছে এ ব্যতীত অন্য কোন ফয়সালা চাইছ? সেই সত্তার কসম! যাঁর আদেশে আসমান-যমীন টিকে আছে, আমি কেয়ামত পর্যন্ত এ ব্যতীত অন্য কোন ফয়সালা দিতে প্রস্তুত নই। তোমরা যদি উল্লেখিত শর্ত পালন করিতে অক্ষম হও, তাহলে তা আমার জিম্মায় ফিরিয়ে দাও তোমাদের পক্ষ থেকে আমিই এর পরিচালনা করব।(আঃপ্রঃ- ৪৯৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫৪)
৬৯/৪. অধ্যায়ঃ স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্ত্রী ও সন্তানের খোরপোষ।
৫৩৫৯
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হিনদা বিনত উতবা এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আবু সুফিয়ান শক্ত হৃদয়ের লোক। আমি যদি তার মাল থেকে আমাদের পরিবারের খাওয়াই তাহলে আমার গুনাহ হইবে কি? তিনি বলিলেন, না; তবে ন্যায় সঙ্গতভাবে ব্যয় করিবে।(আঃপ্রঃ- ৪৯৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫৫)
৫৩৬০
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যদি কোন মহিলা স্বামীর উপার্জন থেকে তার নির্দেশ ব্যতীত দান করে, তবে সে তার অর্ধেক সওয়াব পাবে। [২০৬৬; মুসলিম ১২/২৬, হাদীস ১০২৬, আহমাদ ৮১৯৫] আঃপ্রঃ- ৪৯৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫৬)
৬৯/৫. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
“মায়েরা যেন তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুবছর দুধ পান করায়, সেই পিতার জন্য যে পূর্ণ সময়কাল পর্যন্ত দুধ পান করাতে চায়;… তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন”। (সুরা আল-বাকারা ২৩৩)
তিনি আরো ইরশাদ করেনঃ “তাকে গর্ভে ধারণ ও দুধ ছাড়ানোর সময় ত্রিশ মাস”। (সুরা আল-আহক্ব-ফ ১৫)
তিনি আরও বলেনঃ “যদি তোমরা অসুবিধা বোধ কর, তাহলে অপর কোন মহিলা তাকে দুধ পান করার পারে। সচ্ছল ব্যক্তি স্বীয় সাধ্য অনুসারে খরচ করিবে… প্রাচুর্য দান করিলেন”। (সুরা আত-তালাক ৬-৭)
ইউনুস, যুহ্রী থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ নিষেধ করিয়াছেন কোন মাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা হইবে না। আর তা হলো এরূপ যে, মাতা এ কথা বলে বসল, আমি একে দুধ পান করাব না। অথচ মায়ের দুধ শিশুর জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য এবং অন্যান্য মহিলার তুলনায় মাতা সন্তানের জন্য অধিক স্নেহশীলা ও কোমল। কাজেই আল্লাহ পিতার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন পিতা তা পালনার্থে যথাসাধ্য নিজের পক্ষ থেকে কিছু দেয়ার পরও মাতার জন্য দুধ পান করাতে অস্বীকার করা উচিত হইবে না। এমনিভাবে সন্তানের পিতার জন্যও উচিত নয় সে সন্তানের কারণে তার মাতাকে কষ্ট দেয়া অর্থাৎ কষ্টে ফেলার উদ্দেশে শিশুর মাকে দুধ পান করাতে না দিয়ে অন্য মহিলাকে দুধ পান করাতে দেয়া। হ্যাঁ, মাতাপিতা খুশী হয়ে যদি কাউকে ধাত্রী নিযুক্ত করে, তবে তাতে কোন দোষ নেই। তেমনি যদি তারা উভয়ে দুধ ছাড়াতে চায়, তবে তাতেও তাদের কোন দোষ নেই, যদি তা পারস্পরিক সম্মতি ও পরামর্শের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। (আরবী) দুধ ছাড়ানো।
৬৯/৬. অধ্যায়ঃ স্বামীর গৃহে স্ত্রীর কাজকর্ম করা।
৫৩৬১
আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একদা ফাতিমা (রাদি.) যাঁতা ব্যবহারে তাহাঁর হাতে যে কষ্ট পেতেন তার অভিযোগ নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) এর কাছে আসলেন। তাহাঁর কাছে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট দাস আসার খবর পৌঁছে ছিল। কিন্তু তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে পেলেন না। তিনি তাহাঁর অভিযোগ আয়েশার কাছে বলিলেন। নাবী (সাঃআঃ) ঘরে আসলে আয়েশা (রাদি.) তাঁকে জানালেন। আলী (রাদি.) বলেনঃ রাতে আমরা যখন শুয়ে পড়েছিলাম, তখন তিনি আমাদের কাছে আসলেন। আমরা উঠতে চাইলাম, কিন্তু তিনি বললেনঃ তোমরা উভয়ে নিজ স্থানে থাক। তিনি এসে আমার ও ফাতিমার মাঝখানে বসলেন। এমনকি আমি আমার পেটে তাহাঁর দুপায়ের শীতলতা উপলব্ধি করলাম। তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা যা চেয়েছ তার চেয়ে কল্যাণকর বিষয় সম্পর্কে তোমাদের কি জানাবো না? তোমরা যখন তোমাদের শয্যাস্থানে যাবে, অথবা বললেনঃ তোমরা যখন তোমাদের বিছানায় যাবে, তখন তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশবার আল্ হামদুলিল্লাহ এবং চৌত্রিশবার আল্লাহু আকবার বলবে। এটা খাদিম অপেক্ষা তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর। [৩২](আঃপ্রঃ- ৪৯৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫৭)
[৩২] আল্লাহ তাআলা সকল শক্তি ও ক্ষমতার উৎস। তিনিই মানুষকে জ্ঞান, বুদ্ধি, শক্তি, ক্ষমতা, সাহস, ধৈর্য সব কিছু দান করেন। একজন মানুষ আল্লাহর কাছে কাজের শক্তি ও ক্ষমতা চাইলে তিনি তা দান করবেন। মানুষ আল্লাহর নিকট হইতে শক্তি ও ক্ষমতা প্রার্থনার মাধ্যমে চাকর বাকর রাখার প্রয়োজনীয়তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে।
৬৯/৭. অধ্যায়ঃ স্ত্রীর জন্য খাদিম।
৫৩৬২
আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ফাতিমা (রাদি.) একটি খাদিম চাইতে নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে আসলেন। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে এর চেয়ে অধিক কল্যাণদায়ক বিষয়ে খবর দিব না? তুমি শয়নকালে তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশবার আল্ হামদুলিল্লাহ এবং চৌত্রিশবার আল্লাহু আকবার বলবে। পরে সুফিয়ান বলেনঃ এর মধ্যে যে কোন একটি চৌত্রিশবার। আলী (রাদি.) বলেনঃ অতঃপর কখনোও আমি এগুলো ছাড়িনি। জিজ্ঞেস করা হলো সিফ্ফীনের রাতেও না? তিনি বললেনঃ সিফ্ফীনের রাতেও না।(আঃপ্রঃ- ৪৯৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫৮)
৬৯/৮. অধ্যায়ঃ নিজ পরিবারে গৃহকর্তার কাজকর্ম।
৫৩৬৩
আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ) গৃহে কি কাজ করিতেন? তিনি বললেনঃ তিনি ঘরের কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন, যখন আযান শুনতেন, তখন বেরিয়ে পড়তেন। [৩৩](আঃপ্রঃ- ৪৯৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫৯)
[৩৩] আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দুনিয়ার মানুষের জন্য চিরকালীন আদর্শ। অতি ছোট খাটো কাজও তিনি নিজ হাতে করিতেন অতি সাধারণ একজন মানুষের মত। মসজিদে নাবাবীর নির্মাণ, খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননসহ নানা ক্ষেত্রে কায়িক শ্রমের কাজেও মহানাবীর অংশগ্রহণের বহু প্রমাণ বিদ্যমান। তিনি বাড়ীর ছোট খাটো নানা কাজে অংশগ্রহণ করে স্বীয় পরিবারের সুখ শান্তি বৃদ্ধি করিতেন, তাদের হৃদয় জয় করিতেন। প্রিয় রসূলের (সাঃআঃ) এ সুন্নাত অনুসরণ করে আমরা আমাদের গৃহগুলোকে অপরিসীম আনন্দে ভরে দিতে পারি।
৬৯/৯. অধ্যায়ঃ স্বামী যদি (যথাযথ) খরচ না করে, তাহলে তার অজ্ঞাতে স্ত্রী তার ও সন্তানের প্রয়োজন অনুসারে ন্যায়সঙ্গতভাবে খরচ করিতে পারে।
৫৩৬৪
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
হিনদা বিনত উতবা বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আবু সুফিয়ান একজন কৃপণ লোক। আমাদের এত পরিমাণ খরচ দেন না, যা আমার ও আমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট হইতে পারে যতক্ষণ না আমি তার অজান্তে মাল থেকে কিছু নিই। তখন তিনি বললেনঃ তোমার ও তোমার সন্তানের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে যা যথেষ্ট হয় তা তুমি নিতে পার।(আঃপ্রঃ- ৪৯৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৬০)
৬৯/১০. অধ্যায়ঃ স্বামীর সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও তার ব্যয় নির্বাহ করা।
৫৩৬৫
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ উটে আরোহিনী নারীদের মধ্যে কুরাইশ গোত্রের নারীরা সর্বোত্তম। অপরজন বলেনঃ কুরাইশ গোত্রের নারীগণ সৎ, তারা সন্তানের প্রতি শৈশবে খুব স্নেহশীলা এবং স্বামীর প্রতি বড়ই অনুকম্পাশীলা তার সম্পদের ক্ষেত্রে। মুআবিয়া ও ইবনু আব্বাসের সূত্রেও উক্ত হাদীসটি বর্ণিত আছে।(আঃপ্রঃ- ৪৯৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৬১)
৬৯/১১. অধ্যায়ঃ মহিলাদের যথাযোগ্য পরিচ্ছদ দান।
৫৩৬৬
আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে রেশমী পোশাক আসলে আমি তা পরিধান করলাম। তাহাঁর চেহারায় গোস্বার চিহ্ন লক্ষ্য করলাম। তাই আমি এটাকে টুকরা করে আপন মহিলাদের মধ্যে বণ্টন করলাম।(আঃপ্রঃ- ৪৯৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৬২)
৬৯/১২. অধ্যায়ঃ সন্তান লালন-পালনের ব্যাপারে স্বামীকে সাহায্য করা।
৫৩৬৭
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাতটি বা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) নয়টি মেয়ে রেখে আমার পিতা ইনতিকাল করেন। তারপর আমি এক বিধবা মহিলাকে বিয়ে করি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ জাবির! তুমি বিয়ে করেছ? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি তারপর জিজ্ঞেস করলেনঃ কুমারী বিয়ে করেছ না বিধবা? আমি বললামঃ বিধবা! তিনি বললেনঃ কুমারী করলে না কেন? তুমি তার সাথে খেলতে, সেও তোমার সাথে খেলত। তুমিও তাকে হাসাতে, সেও তোমাকে হাসাতো। জাবির (রাদি.) বলেনঃ আমি তাঁকে বললাম, অনেকগুলো কন্যা সন্তান রেখে আবদুল্লাহ (আমার পিতা) মারা গেছেন, তাই আমি ওদের-ই মত কুমারী মেয়ে বিয়ে করা পছন্দ করিনি। আমি এমন মেয়েকে বিয়ে করলাম, যে তাদের দেখাশোনা করিতে পারে তাদের ভুলত্রুটি শুধরাতে পারে। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তোমাকে বরকত দিন অথবা বললেনঃ কল্যাণ দান করুন।(আঃপ্রঃ- ৪৯৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৬৩)
৬৯/১৩. অধ্যায়ঃ নিজ পরিবারের জন্য অসচ্ছল ব্যক্তির ব্যয় করা।
৫৩৬৮
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এক লোক এলো এবং বললো আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। তিনি বললেনঃ কেন? সে বললোঃ রমযান মাসে আমি (দিনে) স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ একটি দাস মুক্ত করে দাও। সে বললোঃ আমার কাছে কিছুই নেই। তিনি বললেনঃ তাহলে একাধারে দুমাস সওম পালন কর। সে বললোঃ সে ক্ষমতাও আমার নেই। তিনি বলেনঃ তবে ষাটজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াও। সে বললঃ সে সামর্থ্যও আমার নেই। এ সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এক বস্তা খেজুর এল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? লোকটি বললোঃ আমি এখানে। রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ এগুলো সদকা কর। সে বললোঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমার চেয়ে অভাবগ্রস্তকে দিব। সেই সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, মদীনার প্রস্তরময় দুপার্শ্বের মধ্যে আমাদের চেয়ে অভাবগ্রস্ত কোন পরিবার নেই। তখন নাবী (সাঃআঃ) হাসলেন এমন কি তাহাঁর চোয়ালের দাঁত পর্যন্ত দেখা গেল এবং বললেনঃ তবে তোমরাই তা নিয়ে যাও।(আঃপ্রঃ- ৪৯৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৬৪)
৬৯/১৪. অধ্যায়ঃ ওয়ারিসের উপরেও অনুরূপ দায়িত্ব আছে।
“ওয়ারিশের উপরেও অনুরূপ দায়িত্ব আছে”-(সুরা আল-বাকারা ২/২৩৩)। মহিলার উপরেও কি এমন কোন দায়িত্ব আছে? “আল্লাহ আরো দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন দুব্যক্তির তাদের একজন হল বোবা, কোন কিছুই করিতে সক্ষম নয়। তার মনিবের উপর সে একটা বোঝা, তাকে যেখানেই পাঠানো হোক না কেন, কোন কল্যাণই সে নিয়ে আসবে না। সে কি ঐ ব্যক্তির সমান যে ইনসাফের নির্দেশ দেয় আর সরল সুদৃঢ় পথে প্রতিষ্ঠিত?” (সুরা নাহল ১৬/৭৬)
৫৩৬৯
উম্মু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আবু সালামার সন্তানদের জন্য ব্যয় করলে তাতে আমার কোন সওয়াব হইবে কি? আমি তাদের এ (অভাবী) অবস্থায় ত্যাগ করিতে পারি না। তারা তো আমারই সন্তান। তিনি বললেনঃ হ্যা, তুমি তাদের জন্য যা খরচ করিবে তাতে তোমার সওয়াব আছে।আঃপ্রঃ- ৪৯৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৬৫)
৫৩৭০
আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হিনদা এসে বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আবু সুফিয়ান কৃপণ লোক। আমার ও সন্তানের জন্য যথেষ্ট হয় এমন কিছু যদি তার মাল থেকে গ্রহণ করি, তবে কি আমার গুনাহ হইবে? তিনি বললেনঃ ন্যায়সঙ্গতভাবে নিতে পার।আঃপ্রঃ- ৪৯৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৬৬)
৬৯/১৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তি (ঋণের) কোন বোঝা অথবা সন্তান-সন্ততি রেখে মারা যাবে, তার দায়-দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত।
৫৩৭১
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে ঋণগ্রস্ত কোন মৃত ব্যক্তিকে (জানাযার সালাত আদায়ের জন্য) আনা হলে, তিনি জিজ্ঞেস করিতেনঃ সে কি ঋণ পরিশোধ করার মত অতিরিক্ত কিছু রেখে গেছে? যদি বলা হত যে, সে ঋণ পরিশোধ করার মত সম্পদ রেখে গেছে, তাহলে তিনি তার জানাযা পড়তেন। অন্যথায় তিনি মুসলমানদের বলিতেনঃ তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযা পড়। তারপর আল্লাহ যখন তাঁকে অনেক বিজয় দান করিলেন, তখন তিনি বললেনঃ আমি মুমিনদের জন্য তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক ঘনিষ্টতর। কাজেই মুমিনদের কেউ ঋণ রেখে মারা গেলে, তা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার-ই। আর যে ব্যক্তি সম্পদ রেখে যাবে, তা তার ওয়ারিসরা পাবে। [৩৪]আঃপ্রঃ- ৪৯৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৬৭)
[৩৪] ঋণ হল বান্দার হক। এটা অবশ্যই পরিশোধ করিতে হইবে। এ ঋণ মাফ করিতে চাইলে ঋণদাতা মাফ করিতে পারে, আল্লাহ তা মাফ করবেন না। কাজেই ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে আমাদেরকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হইবে যাতে কিয়ামতে এজন্য পাকড়াও হইতে না হয়।
৬৯/১৬. অধ্যায়ঃ দাসী ও অন্যান্য নারী কর্তৃক দুধ পান করানো।
৫৩৭২
নাবী (সাঃআঃ)–এর স্ত্রী উম্মু হাবীবা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমার বোন আবু সুফিয়ানের মেয়েকে আপনি বিয়ে করুন। তিনি বললেনঃ তুমি কি তা পছন্দ কর? আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি তো আর আপনার অধীনে একা নই। যারা আমার সঙ্গে কল্যানের অংশীদার, আমার বোনও তাদের অন্তর্ভুক্ত হোক, তাই আমি অধিক পছন্দ করি। তিনি বললেনঃ কিন্তু সে তো আমার জন্য হালাল হইবে না। আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম! আমাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে, আপনি নাকি উম্মূ সালামার মেয়ে দুর্রাকে বিয়ে করার ইচ্ছা করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ উম্মু সালামার মেয়েকে? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! সে যদি আমার কোলে পালিত, পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত উম্মে সালামার গর্ভের সন্তান নাও-হতো, তবু সে আমার জন্য বৈধ ছিল না। সে তো আমার দুধ-ভাইয়ের কন্যা। সুওয়ায়বা আমাকে ও আবু সালামাকে দুধ পান করিয়েছেন। সুতরাং তোমাদের কন্যা ও বোনদের আমার সামনে পেশ করো না। [৩৫]
শুআইব যুহরী হইতে বর্ননা করিয়াছেন যে, উরওয়াহ বলেছেনঃ সুওয়ায়বাকে আবু লাহাব আযাদ করে দিয়েছিল।(আঃপ্রঃ- ৪৯৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৬৮)
[৩৫] রক্ত সম্পর্ক যাকে হারাম করে, দুধ সম্পর্কও তাকে হারাম করে। রক্ত সম্পর্কিত বোন, কন্যা, ভাইঝি, ভাগনী ইত্যাদিকে যেমন বিয়ে করা হারাম, তেমনি দুধ সম্পর্কিত বোন, কন্যা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে ইত্যাদিকেও বিয়ে করা হারাম। রেজায়াত বা দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হবার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে। তা হলঃ ১। সময়সীমাঃ দুধ পানকারীর বয়স দু বছরের কম হইতে হইবে। ২। একবার হলেও ক্ষুধা নিবারণ করে দুধ পান করা সাব্যস্ত হইতে হইবে যা হাদীসের ভাষায় দুয়ের অধিক পাঁচবার পর্যন্ত পান করার কথা বলা হয়েছে। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ সহ অনেকেই বর্ননা করিয়াছেন। ফিকহুস সুন্নাহ ২য় খণ্ড ১০৬-১০৭ পৃষ্ঠা।)
Leave a Reply