শুরুতে বিস্মিল্লাহ ও শেষে আলহামদু লিল্লাহ বলা -রিয়াদুস সা.
শুরুতে বিস্মিল্লাহ ও শেষে আলহামদু লিল্লাহ বলা -রিয়াদুস সা. >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
পরিচ্ছেদ – ১০০: শুরুতে বিস্মিল্লাহ এবং শেষে আল-হামদু লিল্লাহ বলা
1/732 وَعَن عُمَرَ بنِ أبي سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ: « سَمِّ اللهَ، وَكُلْ بِيَمِينكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৭৩২। উমার ইবনি আবূ সালামাহ রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, [একদা খাবার সময়] রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাকে বলিলেন, ‘‘[শুরুতে] ‘বিসমিল্লাহ’ বল, ডান হাত দ্বারা আহার কর এবং তোমার নিকট [সামনে] থেকে খাও।’’ [বুখারী][1]
2/733 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إِذَا أكَلَ أحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللهِ تَعَالَى، فإنْ نَسِيَ أنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللهِ تَعَالَى فِي أوَّلِهِ، فَلْيَقُلْ: بِسمِ اللهِ أوَّلَهُ وَآخِرَهُ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال:« حديث حسن صحيح ».
২/৭৩৩। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন আহার করিবে, সে যেন শুরুতে আল্লাহ তা‘আলার নাম নেয়। যদি শুরুতে আল্লাহর নাম নিতে ভুলে যায়, তাহলে সে যেন বলে ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু অ আখেরাহ।’’ [আবূ দাঊদ, তিরমিযী-হাসান সহীহ][2]
3/734 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ، فَذَكَرَ اللهَ تَعَالَى عِنْدَ دُخُولِهِ، وَعِندَ طَعَامِهِ، قَالَ الشَّيْطَانُ لأَصْحَابِهِ: لاَ مَبِيتَ لَكُمْ وَلاَ عَشَاءَ، وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللهَ تَعَالَى عِنْدَ دُخُولِهِ، قَالَ الشَّيْطَانُ: أدْرَكْتُمُ المَبِيتَ ؛ وَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ تَعَالَى عِنْدَ طَعَامِهِ، قَالَ: أدْرَكْتُم المَبِيتَ وَالعَشَاءَ ». رواه مسلم
৩/৭৩৪। জাবের রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছি যে, ‘‘কোন ব্যক্তি যখন নিজ বাড়ি প্রবেশের সময় ও আহারের সময় আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে; অর্থাৎ [‘বিসমিল্লাহ’ বলে] তখন শয়তান তার অনুচরদেরকে বলে, ‘আজ না তোমরা এ ঘরে রাত্রি যাপন করিতে পারবে, আর না খাবার পাবে।’ অন্যথা যখন সে প্রবেশ কালে আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে না [অর্থাৎ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না], তখন শয়তান বলে, ‘তোমরা রাত্রি যাপন করার স্থান পেলে।’ আর যখন আহার কালেও আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে না [অর্থাৎ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না], তখন সে তার চেলাদেরকে বলে, ‘তোমরা রাত্রিযাপন স্থল ও নৈশভোজ উভয়ই পেয়ে গেলে।’’ [মুসলিম][3]
4/735 وَعَن حُذَيْفَةَ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا إِذَا حَضَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ طَعَاماً، لَمْ نَضَعْ أَيدِينَا حَتَّى يَبْدَأَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فَيَضَعَ يَدَهُ، وَإنَّا حَضَرْنَا مَعَهُ مَرَّةً طَعَاماً، فَجَاءَتْ جَارِيَةٌ كَأنَّهَا تُدْفَعُ، فَذَهَبَتْ لِتَضَعَ يَدَهَا في الطَّعَامِ، فَأَخَذَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بِيَدِهَا، ثُمَّ جَاءَ أَعْرَابِيّ كأنَّمَا يُدْفَعُ، فَأخَذَ بِيَدهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أنْ لاَ يُذْكَرَ اسْمُ اللهِ تَعَالَى عَلَيْهِ، وَإنَّهُ جَاءَ بِهَذِهِ الجَارِيَةِ لِيَسْتَحِلَّ بِهَا، فأَخَذْتُ بِيَدِهَا، فَجَاءَ بِهَذَا الأَعرَابيّ لِيَسْتَحِلَّ بِهِ، فَأخذْتُ بِيَدِهِ، والَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إنَّ يَدَهُ فِي يَدِي مَعَ يَدَيْهِمَا » ثُمَّ ذَكَرَ اسْمَ اللهِ تَعَالَى وَأكَلَ. رواه مسلم
৪/৭৩৫। হুযাইফাহ রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর সঙ্গে আহারে বসতাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ খাবারে হাত রেখে শুরু না করা পর্যন্ত আমরা তাতে হাত রাখতাম না [এবং আহার শুরু করতাম না]। একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর সঙ্গে খাবারে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ একটি বাচ্চা মেয়ে এমনভাবে এল, যেন তাকে [পিছন থেকে] ধাক্কা দেওয়া হচ্ছিল এবং সে নিজ হাত খাবারে দিতে উদ্যত হয়েছিল, এমন অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তার হাত ধরে নিলেন। তারপর এক বেদুঈনও [তদ্রূপ দ্রুত বেগে] এল, যেন তাকে ধাক্কা মারা হচ্ছিল [সেও খাবারে হাত রাখতে উদ্যত হলে] রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তার হাতও ধরে নিলেন এবং বলিলেন, ‘‘যে খাবারে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, শয়তান সে খাদ্যকে হালাল মনে করে। আর এ মেয়েটিকে শয়তানই নিয়ে এসেছে, যাতে ওর বদৌলতে নিজের জন্য খাদ্য হালাল করিতে পারে। কিন্তু আমি তার হাত ধরে ফেললাম। তারপর সে বেদুঈনকে নিয়ে এল, যাতে ওর দ্বারা খাদ্য হালাল করিতে পারে। কিন্তু আমি ওর হাতও ধরে নিলাম। সেই মহান সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ আছে, শয়তানের হাত ঐ দু’জনের হাতের সঙ্গে আমার হাতে [ধরা পড়েছিল]।’’ অতঃপর তিনি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আহার করিলেন। [মুসলিম][4]
5/736- وَعَنْ أُمَيَّةَ بْنِ مَخْشِيٍّ الصَّحَابِيِّ رضي الله عنه قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ جَالساً، ورَجُلٌ يأْكُلُ، فَلَمْ يُسَمِّ اللهَ حَتّىٰ لَمْ يَبْقَ مِنْ طَعَامِهِ لُقْمَةٌ، فَلَمَّا رَفَعَهَا إِلىٰ فِيْهِ، قَالَ: بِسْمِ اللهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، فَضَحِكَ النَّبِيُّ ﷺ، ثُمَّ قَالَ:«مَا زَالَ الشَّيْطَانُ يَأْكُلُ مَعَهُ، فَلمَّا ذَكَرَ اسْمَ اللهِ استْقَاءَ مَا فِيْ بَطْنِهِ». رواه أبو داود، والنسائي.
৫/৭৩৬। উমাইয়্যাহ্ ইবনু মাখ্শী সাহাবী রাঃআঃ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বসা ছিলেন এবং এক ব্যক্তি আল্লাহর নাম না নিয়েই খাবার খাচ্ছিলো। তার খাওয়া শেষ হতে আর কেবল এক লোকমা বাকি। এই শেষ লোকমাটি মুখে দেওয়ার সময় সে বললো, ‘‘বিস্মিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’’ [আমি আল্লাহর নাম নিচ্ছি খাওয়ার শুরু এবং শেষভাগে]। এতে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ হেসে দিলেন। তিনি বললেনঃ তার সাথে শাইতান বরাবর খাবার খেয়ে যাচ্ছিল। সে আল্লাহর নাম নেয়ার সাথে সাথেই শাইতানের পেটে যা কিছু ছিল, বমি করে সবকিছু ফেলে দিল। [আবু দাউদ, নাসায়ী][5]
6/737 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَأكُلُ طَعَاماً فِي سِتَّةٍ مِنْ أصْحَابِهِ، فَجَاءَ أعْرَابِيٌّ، فَأكَلَهُ بلُقْمَتَيْنِ . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « أَمَا إنَّهُ لَوْ سَمَّى لَكَفَاكُمْ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
৬/৭৩৭। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ছয়জন সাহাবীর সাথে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ খাদ্য আহার করছিলেন। এমন সময় এক বেদুঈন হাযির হল এবং সে দু’গ্রাসেই সমস্ত খাদ্য খেয়ে ফেলল। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ [এ সব দেখে] বলিলেন, ‘‘শোনো! যদি এ ব্যক্তি [শুরুতে] ‘বিসমিল্লাহ’ বলত, তাহলে এই খাবারই তোমাদের সবার জন্য যথেষ্ট হত।’’ [তিরমিযী হাসান সহীহ][6]
7/738 وَعَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه: أنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ إِذَا رَفَعَ مَائِدَتَهُ، قَالَ: « الْحَمْدُ للهِ حَمداً كَثِيراً طَيِّباً مُبَاركَاً فِيهِ، غَيْرَ مَكْفِيٍّ، وَلاَ مُوَدَّعٍ، وَلاَ مُسْتَغْنَىً عَنْهُ رَبَّنَا ». رواه البخاري
৭/৭৩৮। আবূ উমামাহ রাঃআঃ কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাঃআঃ যখন দস্তরখানা গুটাতেন, তখন এই দো‘আ পড়তেনঃ-
“আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান ত্বাইয়্যিবাম মুবা-রাকান ফীহি গায়রা মাকফিইয়্যিন অলা মুওয়াদ্দাইন অলা মুস্তাগনান আনহু রাববানা।” অর্থাৎ আল্লাহর জন্য অগণিত পবিত্র ও বরকতপূর্ণ প্রশংসা। অকুণ্ঠ, নিরবচ্ছিন্ন, প্রয়োজন-সাপেক্ষ প্রশংসা। হে আমাদের প্রভু! [বুখারী][7]
8/739 وَعَن مُعَاذِ بنِ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ أكَلَ طَعَامَاً، فَقَالَ: الحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أطْعَمَنِي هَذَا، وَرَزَقنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: «حديث حسن »
৮/৭৩৯। মু‘আয ইবনি আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আহার শেষে এই দো‘আ পড়বেঃ-
‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব্আমানী হা-যা অরাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী অলা ক্বুউওয়াহ।’ [অর্থাৎ সেই আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমাকে এ খাওয়ালেন এবং জীবিকা দান করিলেন, আমার কোন চেষ্টা ও সামর্থ্য ছাড়াই] সে ব্যক্তির পূর্বের সমস্ত [ছোট] পাপ মোচন করে দেওয়া হবে।’’ [আবূ দাঊদ, তিরমিযী হাসান][8]
[1] সহীহুল বুখারী ৫৩৭৬, ৫৩৭৭, ৫৩৭৮, মুসলিম ২০২২, আবূ দাউদ ৩৭৭৭, ইবনু মাজাহ ৩২৬৭, আহমাদ ১৫৮৯৫, ১৫৯০২, মুওয়াত্তা মালেক ১৩৩৮, দারেমী ২০১৯, ২০৪৫
[2] আবূ দাউদ ৩৭৬৭, তিরমিযী ১৮৫৮, ইবনু মাজাহ ৩২৬৪, আহমাদ ২৫২০৫, ২৫৫৫৮, ২৫৭৬০, দারেমী ২০২০
[3] মুসলিম ২০১৮, আবূ দাউদ ৩৭৬৫, ইবনু মাজাহ ৩৮৮৭, আহমাদ ১৪৩১৯, ১৪৬৮৮
[4] সহীহুল বুখারী ৩২৮০, মুসলিম ২০১৭, তিরমিযী ১৮১২, ২৮৫৭, আবূ দাউদ ৩৭৩১, ৩৭৩৩, ইবনু মাজাহ ৩৪১০, আহমাদ ১৩৮১৬, ১৩৮৭১, ১৪০২৫, ১৪৫৯৭, ১৪৭১৭, মুওয়াত্তা মালেক ১৭২৭
[5] আমি [আলবানী] বলছিঃ এ সনদটি দুর্বল, কারণ এর মধ্যে মুসান্না ইবনু আব্দুর রহমান খুযা‘ঈ নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন তিনি মাজহূল যেমনটি ইবনুল মাদীনী বলেছেন। উল্লেখ্য এ ভাষায় হাদীসটি দুর্বল হলেও সহীহ্ হাদীসের মধ্যে আয়েশা [রা] হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন খাবে তখন সে যেন আল্লাহর নাম নেই [বিসমিল্লাহ্ বলে]। যদি প্রথমে আল্লাহর নাম উল্লেখ করিতে ভুলে যায় তাহলে সে যেন বলেঃ বিসমিল্লাহি আওয়ালুহু অআখেরুহু। [‘‘সহীহ্ আবী দাঊদ’’ [৩৭৬৭], ‘‘সহীহ্ ইবনু মাজাহ্’’ [৩২৬৪] ও ‘‘ইরওয়াউল গালীল’’ [১৯৬৫]]।
[6] আবূ দাউদ ১৮৫৮, ৩৭৬৭, ইবনু মাজাহ ৩২৬৪, আহমাদ ২৪৫৮২, ২৫২০৫, ২৫৫৫৮, ২৫৭৬০, দারেমী ২০২০
[7] সহীহুল বুখারী ৫৪৫৮, ৫৪৫৯, তিরমিযী ৩৪৫৬, আবূ দাউদ ৩৮৪৯, ইবনু মাজাহ ৩২৮৪, আহমাদ ২১৬৬৪, ২১৬৯৬, ২১৭৫৩, ২১৭৯৮, দারেমী ২০২৩
[8] আবূ দাউদ ৪২০৩, দারেমী ২৬৯০
Leave a Reply