বিয়ের যোগ্যতা ও সামর্থ্য। যার সামর্থ্য নেই, সে সওম পালন করিবে
বিয়ের যোগ্যতা ও সামর্থ্য। যার সামর্থ্য নেই, সে সওম পালন করিবে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬৭, বিয়ে শাদী, অধ্যায়ঃ (১-৮)=৯টি
৬৭/১. অধ্যায়ঃ বিয়ে করার অনুপ্রেরণা দান। শ্রবণ করিনি
৬৭/২. অধ্যায়ঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর বাণী, “তোমাদের মধ্যে যাদের বিয়ের সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে তার দৃষ্টিকে নিম্নমুখী রাখতে সাহায্য করিবে এবং তার লজ্জাস্থান রক্ষা করিবে এবং যার প্রয়োজন নেই সে বিয়ে করিবে কিনা?”
৬৭/৩. অধ্যায়ঃ বিয়ে করার যার সামর্থ্য নেই, সে সওম পালন করিবে।
৬৭/৪.অধ্যায়ঃ বহুবিবাহ
৬৭/৫. অধ্যায়ঃ যদি কেউ কোন নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হিজরাত করে কিংবা কোন নেক কাজ করে তবে সে তার নিয়্যত অনুসারে (কর্মফল) পাবে।
৬৭/৬. অধ্যায়ঃ এমন দরিদ্র লোকের সঙ্গে বিয়ে যিনি কুরআন ও ইসলাম সম্পর্কে অবহিত।
৬৭/৭. অধ্যায়ঃ কেউ যদি তার (মুসলিম) ভাইকে বলে, আমার স্ত্রীদের মধ্যে যাকে চাও, আমি তোমার জন্য তাকে ত্বলাক্ব দেব।
৬৭/৮. অধ্যায়ঃ বিয়ে না করা এবং খাসি হয়ে যাওয়া অপছন্দনীয়।
৬৭/১. অধ্যায়ঃ বিয়ে করার অনুপ্রেরণা দান। শ্রবণ করিনি
এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তোমরা নারীদের মধ্য হইতে নিজেদের পছন্দ মত বিয়ে কর। (আন-নিসা ৪:২)
৫০৬৩
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নাবী (সাঃআঃ) এর ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নাবী (সাঃআঃ) – এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করিল এবং বলিল, নাবী (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হইতে পারে না। কারণ, তাহাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য হইতে একজন বলিল, আমি সারা জীবন রাতভর সলাত আদায় করিতে থাকব। অপর একজন বলিল, আমি সবসময় সওম পালন করব এবং কক্ষনো বাদ দিব না। অপরজন বলিল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের নিকট এলেন এবং বলিলেন, “তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাহাঁর প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সলাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। [১] সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করিবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। [২] [মুসলিম ১৬/১, হাদীস ১৪০১, আহমাদ ১৩৫৩৪] (আঃপ্রঃ ৪৬৯০, ইঃফাঃ ৪৬৯৩)
[১] যে কোন ইবাদাতের ক্ষেত্রে ইবাদাতের সময়, পরিমাণ, স্থান, অবস্থা ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখতে হইবে। আবেগ তাড়িত হয়ে ফারযের মধ্যে যেমন কম বেশি করা যাবে না; তেমনি সুন্নাতের ক্ষেত্রেও রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নির্দেশ বা তার আমালের পরিবর্তন করা যাবে না। নফল ইবাদাতেও কারো সময় থাকলে বা নিজের খেয়াল খুশি মত করা ইসলাম সমর্থিত নয়। ইসলামে সলাত, সওমের পাশাপাশি ঘুমানো, বিয়ে করা, বাণিজ্য করা ইত্যাদিও ইবাদাতের মধ্যে গণ্য যদি তা সাওয়াবের আশায় এবং সঠিক নিয়মানুসারে পালন করা হয়।
কিন্তু যদি কেউ সার্বিক দিক থেকে সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও রসূলের সুন্নাতের প্রতি অনীহা ও অবিশ্বাসের কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে রাসুল (সাঃআঃ) – এর তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
[২] আল্লাহ তাআলা মানুষকে যে প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করিয়াছেন সেগুলোকে উপেক্ষা করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া তো দূরের কথা, মানুষ মানুষের স্তরেই থাকতে পারবে না। মানুষ অতিরিক্ত খাদ্য খেলে বা একেবারেই খাদ্য পরিত্যাগ করলে তার বেঁচে থাকা নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিবে। একাধারে সওম পালন করলেও একই অবস্থা দেখা দিবে। তাই আল্লাহর রাসুল আমাদেরকে এমন শিক্ষা দিয়েছেন যাতে আমরা মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক জীবন যাপন করেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করিতে পারি। জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক পন্থা অবলম্বন করলে দুর্ভোগ ও বিপর্যয় আসবে। খ্রীস্টান পাদ্রীদের অনুসৃত বৈরাগ্যবাদ ও দাম্পত্য জীবনের প্রতি লোক-দেখানো অনীহা তাদের অনেককেই যৌনাচারের ক্ষেত্রে পশুর স্তরে নামিয়ে দিয়েছে।
ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র বৈধ পন্থা হল বিবাহ। পরিবার গঠন, সংরক্ষণ ও বংশ-বিস্তারের জন্যই বিয়ে ছাড়া আর কোন বিধি সম্মত পথ নেই। এর মাধ্যমেই ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন পবিত্র ও কলুষমুক্ত হয়ে নৈতিকতার সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত হইতে পারে। এ জন্যই ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করলে আল্লাহর চিরাচরিত বিধান এবং নাবী – এর সুন্নাত হিসেবে বিয়ে করা ফরয আর এ অবস্থায় অর্থনৈতিক দিক থেকে সমর্থ না হলে সওম পালন করার বিধান দেয়া হয়েছে। আবার শারীরিক দিক থেকে সমর্থ হলে আর ব্যভিচারে লিপ্ত হবার আশঙ্কা না থাকলে বিয়ে করা মুসতাহাব। আর জৈবিক চাহিদা শূন্য হলে বিয়ে করা মুবাহ। আবার এ অবস্থায় যদি মহিলার পক্ষ থেকে তার বিয়ের উদ্দেশ্যই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে এরূপ স্বামীর শারীরিকভাবে সমর্থ নারীকে বিয়ে করা মাকরূহ।
কিন্তু যদি কেউ সার্বিক দিক থেকে সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও রসূলের সুন্নাতের প্রতি অনীহা ও অবিশ্বাসের কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে রাসুল (সাঃআঃ) – এর তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
৫০৬৪
যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উরওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে অবহিত করিয়াছেন যে, তিনি আয়িশা (রাদি.) – কে আল্লাহর এ বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ “যদি তোমরা আশংকা কর যে, ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করিতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হইতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিয়ে কর, কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তোমরা সুবিচার করিতে পারবে না, তাহলে একজনকে কিংবা তোমাদের অধীনস্থ দাসীকে; এটাই হইবে অবিচার না করার কাছাকাছি।” (সুরাহঃ আন-নিসাঃ ৩)
আয়িশা (রাদি.) বলেন, হে ভাগ্নে! এক ইয়াতীম বালিকা এমন একজন অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে ছিল, যে তার সম্পদ রূপের প্রতি আকৃষ্ট ছিল। সে তাকে যথোচিতের চেয়ে কম মাহর দিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছা করে। তখন লোকদেরকে নিষেধ করা হল ঐসব ইয়াতীমদের বিয়ে করার ব্যাপারে। তবে যদি তারা সুবিচার করে ও পূর্ণ মাহর আদায় করে (তাহলে বিয়ে করিতে পারবে)। (অন্যথায়) তাদের বাদ দিয়ে অন্য নারীদের বিয়ে করার আদেশ করা হল। (আঃপ্রঃ ৪৬৯১, ইঃফাঃ ৪৬৯৪)
৬৭/২. অধ্যায়ঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর বাণী, “তোমাদের মধ্যে যাদের বিয়ের সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে তার দৃষ্টিকে নিম্নমুখী রাখতে সাহায্য করিবে এবং তার লজ্জাস্থান রক্ষা করিবে এবং যার প্রয়োজন নেই সে বিয়ে করিবে কিনা?”
৫০৬৫
আলক্বামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন আমি আবদুল্লাহ (রাদি.) – এর সঙ্গে ছিলাম, উসমান (রাদি.) তাহাঁর সঙ্গে মিনাতে দেখা করে বলেন, হে আবদুর রহমান! আপনার সাথে আমার কিছু দরকার আছে। অতঃপর তারা দুজনে এক পাশে গেলেন। তারপর উসমান (রাদি.) বলিলেন, হে আবু আবদুর রহমান! আমি কি আপনার সঙ্গে এমন একটি কুমারী মেয়ের বিয়ে দিব, যে আপনাকে আপনার অতীত কালকে স্মরণ করিয়ে দিবে? আবদুল্লাহ যখন দেখলেন তার এ বিয়ের দরকার নেই তখন তিনি আমাকে হে আলক্বামাহ বলে ইঙ্গিত করিলেন। আমি তাহাঁর কাছে গিয়ে শুনলাম, আপনি আমাকে এ কথা বলছেন (এ ব্যাপারে) রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে বলেছেন, হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে এবং যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না, সে যেন সাওম পালন করে। কেননা, সাওম যৌন ক্ষমতাকে দমন করে।[১৯০৫; মুসলিম ১৬/১, হাদীস ১৪০০, আহমাদ ৪০৩৩] (আঃপ্রঃ ৪৬৯২, ইঃফাঃ ৪৬৯৫)
৬৭/৩. অধ্যায়ঃ বিয়ে করার যার সামর্থ্য নেই, সে সওম পালন করিবে।
৫০৬৬
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে আমরা কতক যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোন কিছু ছিল না। এই হালতে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন। হে যুবক সম্প্রদায় [৩]! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। কেননা, সাওম তার যৌনতাকে দমন করিবে।(আঃপ্রঃ ৪৬৯৩, ইঃফাঃ ৪৬৯৬)
[৩] হাদীসে যুব সম্প্রদায় কাদের বলা হয়েছে, এ সম্পর্কে ইমাম নাবাবী লিখেছেন-
আমাদের লোকদের মতে যুবক-যুবতী বলিতে তাদেরকে বোঝানো হয়েছে যারা বালেগ [পূর্ণ বয়স্ক] হয়েছে এবং ত্রিশ বছর বয়স পার হয়ে যায়নি।
আর এ যুবক-যুবতীদের বিয়ের জন্য রাসুল (সাঃআঃ) তাকীদ করিলেন কেন, তার কারণ সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী তার বিশ্ববিখ্যাত বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী” গ্রন্থে লিখেছেনঃ
“হাদীসে কেবলমাত্র যুবক-যুবতীদের বিয়ে করিতে বলার কারণ এই যে, বুড়োদের অপেক্ষা এ বয়সের লোকদের মধ্যেই বিয়ে করার প্রবণতা ও দাবী অনেক বেশী বর্তমান দেখা যায়। যুবক-যুবতীদের বিয়ে যৌন সম্ভোগের পক্ষে খুবই স্বাদপূর্ণ হয়। মুখের গন্ধ খুবই মিষ্টি হয়, দাম্পত্য জীবন যাপন খুবই সুখকর হয়, পারস্পরিক কথাবার্তা খুবই আনন্দদায়ক হয়, দেখিতে খুবই সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়, স্পর্শ খুব আরামদায়ক হয় এবং স্বামী বা স্ত্রী তার জুড়ির চরিত্রে এমন কতগুলো গুণ সৃষ্টি করিতে পারে যা খুবই পছন্দনীয় হয়, আর এ বয়সের দাম্পত্য ব্যাপার প্রায়ই গোপন রাখা ভাল লাগে। যুবক বয়স যেহেতু যৌন সম্ভোগের জন্য মানুষকে উন্মুখ করে দেয়। এ কারণে তার দৃষ্টি যে কোন মেয়ের দিকে আকৃষ্ট হইতে পারে এবং সে যৌন উচ্ছৃঙ্খলতায় পড়ে যেতে পারে। এজন্য রাসুল (সাঃআঃ) এ বয়সের ছেলেমেয়েকে বিয়ে করিতে তাকীদ করিয়াছেন এবং বলেছেনঃ বিয়ে করলে চোখ যৌন সুখের সন্ধানে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াবে না এবং বাহ্যত তার কোন ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। এ কারণে রাসুল (সাঃআঃ) যদিও কথা শুরু করিয়াছেন যুবক মাত্রকেই সম্বোধন করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়ের এ তাকীদকে নির্দিষ্ট করিয়াছেন কেবল এমন সব যুবক-যুবতীদের জন্য যাদের বিয়ের সামর্থ্য আছে। আর যারা বিয়ের ব্যয় বহনের সঙ্গতি রাখে না তারা সওম পালন করিবে। সওম পালন তাদের যৌন উত্তেজনা দমন করিবে। কারণ পানাহারের মাত্রা কম হলে যৌন চাহিদা প্রশমিত হয়।
৬৭/৪.অধ্যায়ঃ বহুবিবাহ
৫০৬৭
আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আমরা ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর সঙ্গে সারিফ নামক স্থানে মাইমূনাহ (রাদি.) – এর জানাযায় হাজির ছিলাম। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, ইনি রাসুল (সাঃআঃ) – এর সহধর্মিনী। কাজেই যখন তোমরা তাহাঁর জানাযাহ উঠাবে তখন ধাক্কা-ধাক্কি এবং তা জোরে নাড়া-চাড়া করো না; বরং ধীরে ধীরে নিয়ে চলবে। কেননা, নাবী (সাঃআঃ) এর নয়জন সহধর্মিনী ছিলেন। [৪] আট জনের সঙ্গে তিনি পালাক্রমে রাত্রি যাপন করিতেন। আর একজনের সঙ্গে রাত্রি যাপনের কোন পালা ছিল না। [৫][মুসলিম ১৭/১১৪, হাদীস ১৪৬৫] (আঃপ্রঃ ৪৬৯৪, ইঃফাঃ ৪৬৯৭)
[৫] যার সঙ্গে রাত্রি যাপনের পালা ছিল না তিনি হলেন সাউদা বিনতে যামআ (রাদি.), বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি নিজের পালায় ছাড় দিয়ে তা আয়িশা (রাদি.)-কে দান করেছিলেন।
৫০৬৮
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একই রাতে নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সকল স্ত্রীর নিকট যেতেন আর তাহাঁর নজন স্ত্রী। (আ. প্র. ৪৬৯৫) অন্য সনদে মুসাদ্দাদ এর জায়গায় খলীফা এর নাম আছে।(ইঃফাঃ ৪৬৯৮)
৫০৬৯
সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, ইবনু আব্বাস (রাদি.) আমাকে বলিলেন, তুমি কি বিয়ে করেছ? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, বিয়ে কর। কারণ, এই উম্মাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তির অধিক সংখ্যক স্ত্রী ছিল। (আঃপ্রঃ ৪৬৯৬, ইঃফাঃ ৪৬৯৯)
৬৭/৫. অধ্যায়ঃ যদি কেউ কোন নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হিজরাত করে কিংবা কোন নেক কাজ করে তবে সে তার নিয়্যত অনুসারে (কর্মফল) পাবে।
৫০৭০
উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, নিয়্যতের ওপরেই কাজের ফলাফল নির্ভর করে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিয়্যত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। কাজেই যার হিজরাত আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য, তার হিজরাত আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূলের জন্যই। আর যার হিজরাত পার্থিব লাভের জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার জন্য, তার হিজরাতের ফল সেটাই, যে উদ্দেশ্যে সে হিজরাত করেছে। (আঃপ্রঃ ৪৬৯৭, ইঃফাঃ ৪৭০০)
৬৭/৬. অধ্যায়ঃ এমন দরিদ্র লোকের সঙ্গে বিয়ে যিনি কুরআন ও ইসলাম সম্পর্কে অবহিত।
সাহল ইবনু সাদ নাবী (সাঃআঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
৫০৭১
ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে জিহাদে অংশ গ্রহণ করতাম। আমাদের সঙ্গে আমাদের বিবিগণ থাকত না। তাই আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি খাসি হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে তা করিতে নিষেধ করিলেন।(আঃপ্রঃ ৪৬৯৮, ইঃফাঃ ৪৭০১)
৬৭/৭. অধ্যায়ঃ কেউ যদি তার (মুসলিম) ভাইকে বলে, আমার স্ত্রীদের মধ্যে যাকে চাও, আমি তোমার জন্য তাকে ত্বলাক্ব দেব।
আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
৫০৭২
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) মদীনায় আসলে নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর এবং সাদ ইবনু রাবী আল আনসারী (রাদি.) – এর মধ্যে ভ্রাতৃ বন্ধন গড়ে দিলেন। এ আনসারীর দুজন স্ত্রী ছিল। সাদ (রাদি.) আবদুর রহমান (রাদি.) – কে নিবেদন করিলেন, আপনি আমার স্ত্রী এবং সম্পদের অর্ধেক নিন। তিনি উত্তরে বলিলেন, আল্লাহ আপনার স্ত্রী ও সম্পদে বারাকাত দিন। আপনি আমাকে বাজার দেখিয়ে দিন। এরপর তিনি বাজারে গিয়ে পনির ও মাখনের ব্যবসা করে লাভবান হলেন। কিছুদিন পরে রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর শরীরে হলুদ রং-এর দাগ দেখিতে পেলেন এবং জিজ্ঞেস করিলেন, হে আবদুর রহমান। তোমার কী হয়েছে? তিনি উত্তরে বলিলেন, আমি এক আনসারী মেয়েকে বিয়ে করেছি। নাবী (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কত মোহর দিয়েছ। তিনি উত্তরে বলিলেন, খেজুরের আঁটি পরিমাণ স্বর্ণ। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর, একটি বকরী দিয়ে হলেও। [৬] (আঃপ্রঃ ৪৬৯৯, ইঃফাঃ ৪৭০২)
৬৭/৮. অধ্যায়ঃ বিয়ে না করা এবং খাসি হয়ে যাওয়া অপছন্দনীয়।
৫০৭৩
সাদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) উসমান ইবনু মাজউনকে বিয়ে করা থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করিয়াছেন। নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে যদি অনুমতি দিতেন, তাহলে আমরাও খাসি হয়ে যেতাম।[৫০৭৪; মুসলিম ১৬/১, হাদীস ১৪০২, আহমাদ ১৫১৬] ] (আঃপ্রঃ ৪৭০০, ইঃফাঃ ৪৭০৩)
৫০৭৪
(ভিন্ন একটি সনদে) সাদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) উসমান ইবনু মাজউনকে বিয়ে করা থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলে, আমরাও খাসি হয়ে যেতাম। (আঃপ্রঃ ৪৭০১, ইঃফাঃ ৪৭০৪)
৫০৭৫
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুল (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে জিহাদে অংশ নিতাম; কিন্তু আমাদের কোন কিছু ছিল না। সুতরাং আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর কাছে বললাম, আমরা কি খাসি হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করিলেন এবং কোন মহিলার সঙ্গে একটি কাপড়ের বদলে হলেও বিয়ে করার অনুমতি দিলেন এবং আমাদেরকে এই আয়াত পাঠ করে শোনালেনঃ অর্থাৎ, “ওহে ঈমানদারগণ! পবিত্র বস্তুরাজি যা আল্লাহ তোমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন সেগুলোকে হারাম করে নিও না আর সীমালঙ্ঘন করো না, অবশ্যই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না।” (আল-মায়িদাহ ৫: ৮৭) (আঃপ্রঃ ৪৭০২, ইঃফাঃ ৪৭০৫ প্রথমাংশ)
৫০৭৬
আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি একজন যুবক। আমার ভয় হয় যে, আমার দ্বারা না জানি কোন গুনাহর কাজ সংঘটিত হয়ে যায়; অথচ আমার কাছে নারীদেরকে বিয়ে করার মত কিছু নেই। এ কথা শুনে নাবী (সাঃআঃ) চুপ থাকলেন। আমি আবারও কথা বললাম। তিনি চুপ থাকলেন। আমি আবারও কথা বললাম। তিনি চুপ থাকলেন। আবারও কথা বললে নাবী (সাঃআঃ) উত্তর দিলেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার ভাগ্যলিপি লেখা হয়ে গেছে আর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। তুমি খাসি হও বা না হও, তাতে কিছু আসে যায় না। (আঃপ্রঃ ৪৭০৩, ইঃফাঃ ৪৭০৫ শেষাংশ)
Leave a Reply