বিবাহ। কুমারী মেয়েকে পছন্দ করার স্বাধীনতা দেয়া
বিবাহ। কুমারী মেয়েকে পছন্দ করার স্বাধীনতা দেয়া >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ৯ঃ বিবাহ
পরিচ্ছেদ ০১. বিবাহে বংশের সমতা রক্ষা প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদ ০২. বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে বংশ কোন বিবেচ্য বিষয় নয়
পরিচ্ছেদ ০৩. বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে পেশা বিবেচ্য বিষয় নয়
পরিচ্ছেদ ০৪. দাসীকে আযাদ করার পর তার [দাস] স্বামীর সাথে বিয়ের সম্পর্ক স্থায়ী রাখা বা না রাখার অধিকার দেয়া
পরিচ্ছেদ ০৫. যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে এমতাবস্থায় তার কাছে আপন দু`বোন স্ত্রী হিসেবে রয়েছে –এর বিধান
পরিচ্ছেদ ০৬. চারের অধিক স্ত্রী থাকা অবস্থায় ইসলাম গ্রহণকারীর বিধান
পরিচ্ছেদ ০৭. স্বামী-স্ত্রীর কোন একজন অপরজনের পূর্বে ইসলাম গ্রহণকরার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৮. বিবাহের মধ্যে ত্রুটিসমুহ
পরিচ্ছেদ ০১. বিবাহ করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান
৯৬৭ – আবদুল্লাহ ইবনু মাস`উদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে বলেছেন, হে যুব সম্প্রদায়! যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা পালন করে। রোজা তার প্রবৃত্তিকে দমন করে। {১০৬০}
{১০৬০} বুখারি ১৯০৫, ৫০৬৫, মুসলিম ১৪০০, তিরমিজি ১০৮১, নাসায়ী ২২৪০, ২২৪১, ২২৪২, আবূ দাউদ ২০৪৬, ইবনু মাযাহ ১৮৪৫, আহমাদ ৩৫৮১, দারেমী ২১৬৫, ২১৬৬। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০২. বিবাহ করা নবী সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্নাত
৯৬৮ – আনাস বিন মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] [একদা] আল্লাহ্র জন্য স্তূতি বর্ণনা ও প্রশংসা করিলেন, আর বলিলেন- আমি তো সলাত আদায় করি, ঘুমাই, রোজা পালন করি, রোজা [নফল] রাখি কোন সময়ে ত্যাগও করি, মহিলাদের বিবাহ করি [এসবই আমার আদর্শভুক্ত]। ফলে যে ব্যক্তি আমার তরীকাহ [জীবনযাপন পদ্ধতি] হইতে বিমুখ হইবে সে আমার উম্মাতের মধ্যে নয়। {১০৬১}
{১০৬১} বুখারি ৫০৬৩, মুসলিম ১৪০১, নাসায়ী ৩২১৩, আহমাদ ১৩১২২, ১৩৩১৬। বুখারি এবং মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে- আনাস ইবনু মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নবী [সাঃআঃ] এর `ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী [সাঃআঃ] –এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা `ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করিল এবং বলিল, নবী [সাঃআঃ] –এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হইতে পারে না। কারণ, তাহাঁর আগের পরের সকল গুনাহ্ ক্ষমা ক`রে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাহাদের মধ্য থেকে একজন বলিল, আমি সারা জীবন রাতভর সলাত আদায় করিতে থাকব। অপরজন বলিল, আমি সব সময় রোজা পালন করব এবং কক্ষনো বাদ দিব না। অপরজন বলিল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাদের নিকট এলেন এবং বলিলেন, “তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহ্র কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাহাঁর প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি রোজা পালন করি………….. অতঃপর উপরোক্ত হাদিসটি বর্ণনা করিলেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৩. স্নেহপরায়ন, বেশী সন্তান প্রসবিনী নারীদেরকে বিবাহ করা
৯৬৯ – আনাস বিন মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে বিবাহের দায়িত্ব নিতে আদেশ করিতেন আর অবিবাহিত থাকাকে কঠোরভাবে নিষেধ করিতেন। তিনি আরো বলিতেন, তোমরা এমন সব মহিলাদেরকে বিবাহ কর যারা প্রেম প্রিয়া ও বেশী সন্তান প্রসবিনী হয়। কেননা তোমাদেরকে নিয়ে আমি কিয়ামাতের দিনে আমার উম্মাতের আধিক্যের গর্ব প্রকাশ করব। -ইবনু হিব্বান সহিহ বলেছেন। {১০৬২}
{১০৬২} ইবনু হিব্বান ১২২৮। আহমাদ ১২২০২, ১৩১৫৭। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৭০ – ইবনু হিব্বানে মা`কাল বিন ইয়সার হইতে বর্ণিতঃ
শাহিদ বা সমর্থক হাদিস রয়েছে। {১০৬৩}
{১০৬৩} আবূ দাউদ ২০৫০, নাসায়ী ৩২২৭।b হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৪. যে সমস্ত গুনাবলীর কারণে মেয়েদের বিবাহ করা হয়
৯৭১ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। {১০৬৪}
{১০৬৪} বুখারি ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাউদ ২০৪৭, ইবনু মাযাহ ২৮৫৮, আহমাদ ৯২৩৭, দারেমী ২১৭০। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৫. নব দম্পতির জন্য যে দুআ করিতে হয়
৯৭২ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] বিবাহ উপলক্ষে কাউকে মুবারকবাদ জানিয়ে বলিতেন :
بَارَكَ اللَّهُ لَكَ، وَبَارَكَ عَلَيْكَ، وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِي خَيْرٍ
“আল্লাহ্ তোমাদের বরকত দান করুন, তোমাদের উপর বরকত নাযিল করুন এবং কল্যণের সাথে তোমাদের একত্র করুন।”
–তিরমিজি, ইবনু খুযাইমাহ ও ইবনু হিব্বান এক সহিহ বলেছেন। {১০৬৫} {১০৬৫} আবূ দাউদ ২১৩০, ২১৩৩, তিরমিজি ১০৯১, ইবনু মাযাহ ১৯০৫, আহমাদ ৮৭৩৩, দারেমী ২১৭৪। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৬. বিবাহ সংঘটিত হওয়ার সময় খুতবা পাঠ করা
৯৭৩ – `আবদুল্লাহ ইবনু মাস`উদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের প্রয়োজনের সময় এ তাশাহ্হুদ পড়া শিক্ষা দিতেন-
إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ، نَحْمَدُهُ، وَنَسْتَعِينُهُ، وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا، مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য। আমরা তাহাঁর প্রশংসা করি, তাহাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি, তাহাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্ট ও আমাদের কাজের নিকৃষ্টতা থেকে আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ্ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করিতে পারে না এবং যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নাই। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক এবং তাহাঁর কোন শরীক নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর বান্দা ও রসূল” এর পরে তিনি তিনটি আয়াত পড়তেন।*
-তিরমিজি ও হাকিম একে হাসান বলেছেন। *আয়াত তিনটি হচ্ছে- সূরা আন-নিসার প্রথম আয়াত, সূরা আল্ `ইমরানের ১০২ আয়াত [মুসলেমুন] পর্যন্ত, সূরা আহযাবের [৭০-৭১ নং আয়াত] পর্যন্ত। {১০৬৬} {১০৬৬} আবূ দাউদ ২১১৮, তিরমিজি ১১০৫, নাসায়ী ১১০৪, ইবনু মাযাহ ১৮৯২, আহমাদ ৩৭১২, দারেমী ২২০২। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৭. বিয়ের প্রস্তাবকারীর প্রস্তাবিত পাত্রীকে দেখা শরীয়তসম্মত
৯৭৪ – জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ কোন মেয়েকে বিবাহের পয়গাম বা প্রস্তাব দিবে তখন দেখা সম্ভব হলে, যে বিষয় বিবাহের জন্য তাকে আহ্বান করে তা যেন দেখে নেয়। -এ হাদীসের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য। হাকিম একে সহিহ বলেছেন। {১০৬৭}
{১০৬৭} আবূ দাউদ ২০৮২, আহমাদ ১৪১৭৬, ১৪৪৫৫। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৯৭৫ – বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
হাদিসটির শাহিদ [সমর্থক] হাদিস তিরমিজি ও নাসায়ীতে মুগীরাহ্ [রাঃআঃ] থেকে রয়েছে। {১০৬৮}
{১০৬৮} তিরমিজি ১০৮৭, নাসায়ী ৩২৩৫, ইবনু মাযাহ ১৮৬৫, আহমাদ ১৭৬৭৮, ১৭৬৮৮, দারেমী ২১৭২। হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৯৭৬ – ইবনু হিব্বানে মুহাম্মদ বিন মাসলামাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
বর্ণিত হয়েছে। {১০৬৯}
{১০৬৯} ইবনু মাযাহ ১৮৬৪, আহমাদ ১৫৫৯৮। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৭৭ – আবু হুরাইরা” হইতে বর্ণিতঃ
একজন মহিলাকে বিবাহ করিতে যাচ্ছেন এমন একজন সহাবীকে নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি কি মেয়েটিকে দেখেছ? সাহাবী বলিলেন, না। তিনি বলিলেন, যাও, তাকে গিয়ে দেখ। {১০৭০}
{১০৭০} মুসলিম ১৪২৪, নাসায়ী ৩২৩৪. আহমাদ ৭৭৮৩, ৭৯১৯।b হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৮. মুসলমান ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তাবের উপর অন্য কারও প্রস্তাব দেওয়া নিষেধ
৯৭৮ – ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, এক মুসলিম ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তাবের ওপরে অন্য ভাইকে প্রস্তাব দিতে নিষেধ করিয়াছেন, যতক্ষণ না প্রথম প্রস্তাবকারী তার প্রস্তাব উঠিয়ে নেবে বা তাকে অনুমতি দেবে। -শব্দ বিন্যাস বুখারির। {১০৭১}
{১০৭১} বুখারি ২১৩৯, ২১৬৫, ৫১৪২, মুসলিম ১৪১২, নাসায়ী ৩২৪৩, ৪৫০৪, আবূ দাউদ ২০৮১, ইবনু মাযাহ ২১৭১, আহমাদ ৪৭০৮, মুওয়াত্তা মালেক ১১১২, ১৩৯০, দারেমী ২১৭৬, ২৫৬৭। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৯. কি দ্বারা বিবাহ সংঘটিত হয়?
৯৭৯ – সাহ্ল ইবনু সা`দ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক মহিলা রসূলুল্লাহু [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে সমর্পণ করিতে এসেছি। নবী [সাঃআঃ] তার দিকে তাকালেন এবং সতর্ক দৃষ্টিতে তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করিলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করিলেন। যখন মহিলাটি দেখল, নাৰী [সাঃআঃ] তার সম্পর্কে কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নবী [সাঃআঃ]-এর সহাবীদের মধ্যে একজন দাঁড়ালেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! যদি আপনার বিয়ের প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সঙ্গে এর বিয়ে দিয়ে দিন। রসূল [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কি? সে উত্তর করলো- না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রসূল! আমার কাছে কিছুই নেই। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে গিয়ে দেখ, কিছু পাও কিনা। এরপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলিল, আল্লাহর কসম! আমি কিছুই পাইনি। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আবার দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার ফিরে গেল। এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! তাও পেলাম না, কিন্তু এই আমার লুঙ্গি [শুধু এটাই আছে]। [রাবী] সাহ্ল [রাঃআঃ] বলেন, তার কাছে কোন চাদর ছিল না। লোকটি এর অর্ধেক তাকে দিতে চাইল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, সে তোমার লুঙ্গি দিয়ে কী করিবে? তুমি যদি পরিধান কর, তাহলে তার কোন কাজে আসবে না, আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোন কাজে আসবে না। তারপর বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর উঠে দাড়াল। সে যেতে উদ্যত হলে নবী [সাঃআঃ] তাকে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার কী পরিমাণ কুরআন মাজীদ মুখস্থ আছে? সে বলিল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে গণনা করিল। নবী [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, এগুলো কি তোমার মুখস্থ আছে। সে বলিল, হা। নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে তোমার কাছে এ মহিলাটিকে তোমার অধীনস্থ করে [বিয়ে] দিলাম। বুখারির অন্য একটি বর্ণনায় আছে, আমি তোমাকে তার উপরে অধিকার দিয়ে দিলাম— তোমার জানা কুরআন তাকে শিক্ষা দেয়ার বিনিময়ে। {১০৭২}
{১০৭২} বুখারি ২৩১১, ৫০২৯, ৫০৩০, ৫০৮৭, ৫১২১, ৫১২৬, মুসলিম ১৪২৫, তিরমিজি ১১১৪, নাসায়ী ৩২৮০, আবু দাউদ ২১১১, ইবনু মাযাহ ১৮৮৯, আহমাদ ২২২৯২, মুওয়াত্তা মালেক ১১১৮,দারেমী ২২০১। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৮০ – আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] লোকটিকে বলিলেন, তোমার কি [কুরআনের কিছু] মুখস্থ আছে? সে বললো, সূরা বাকারাহ ও তার পরের সূরা [আল ইমরান]। তিনি বলিলেন, ওঠ! তাকে বিশটি আয়াত [মোহরানার বিনিময়ে] শিখিয়ে দাও। {১০৭৩}
{১০৭৩} বুখারি ২৩১১, ৫০২৯, ৫০৩০, ৫০৮৭, ৫১২১. মুসলিম ১৪২৫, তিরমিয়ী ১১১৪. আবু দাউদ ২১১১, নাসায়ী ৩২০০, ৩৩৫৯, ইবনু মাযাহ ১৮৮৯, আহমাদ ২২২৯২, ২২৩৪৩, মুওয়াত্তা মালেক ১১১৮, দারেমী ২২০১। ইবনু উসাইমীন তাহাঁর শরূহে বুলুগুল মারাম ৪/৪৬৮ গ্রন্থে বলেন, [আরবী] বাক্যটি মাহফুয নয়। শাইখ আলবানী ইরওয়াউল গালীল ৬/৩৪৬ গ্রন্থে বলেন, এই অতিরিক্তটুকু মুনকার। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ১০. বিবাহের ঘোষণা দেওয়া আবশ্যক
৯৮১ -`আমির বিন আবদুল্লাহ বিন যুবাইর হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, বিবাহ সংবাদকে ছড়িয়ে দাও। -হাকিম একে সহিহ বলেছেন। {১০৭৪}
{১০৭৪} হাকিম ২৮৩. আহমাদ ১৫৬৯৭ শু`আইৰ আরনাউত হাদিসটিকে হাসান লিগাইরী বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১১. বিবাহে অভিভাবক থাকা শর্ত
৯৮২ – আবু বুরদাহ ইবনু আবু মূসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাহাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, বিবাহ আলী ব্যতীত সিদ্ধ হইবে না। -ইবনুল মাদীনী, তিরমিয়ী ও ইবনু হিব্বান সহিহ বলেছেন এবং মুরসাল হবার ক্রটি আরোপ করিয়াছেন। {১০৭৫}
{১০৭৫} আবু দাউদ ২০৮৫, তিরমিয়ী ১১০১, ইবনু মজাহ ১৮৮১, আহমাদ ১৯০২৪, ১৯২৪৭। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৮৩ – আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে নারীকে তার অভিভাবক বিবাহ দেয়নি তার বিবাহ বাতিল। স্বামী তার সাথে সহবাস করলে তাতে সে মাহরের অধিকারী হইবে। তাহাদের মধ্যে মতবিরোধ হলে সে ক্ষেত্রে যার অভিভাবক নাই, শাসক তার অভিভাবক। -আবু আওয়ানাহ, ইবনু হিব্বান ও হাকিম একে সহিহ বলেছেন। {১০৭৬}
{১০৭৬} আবু দাউদ ২০৮৩, তিরমিয়ী ১১০২. ইবনু মাযাহ ১৮৭৯, ১৮৮০. আহমাদ ২৩৬৮৫, ২৩৮৫১, দারেমী ২১৮৪। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ ১২. বিবাহের ক্ষেত্রে বিধবার কাছ থেকে সুস্পষ্ট ভাবে অনুমতি নেওয়া এবং কুমারীর [চুপ থাকা] অনুমতি নেওয়া আবশ্যক
৯৮৪ – আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল! কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হইবে। তিনি বলিলেন, তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার অনুমতি। {১০৭৭}
{১০৭৭} বুখারি ৫১৩৬, ৬৯৬৮ , ৬৯৭০, মুসলিম ১৪১৯, তিরমিজি ১১০৭, নাসায়ী ৩১৬৪, ৩২৬৭, আবু দাউদ ২০৯২, ২০৯৩, ইবনু মাযাহ ১৮৭১, আহমাদ ৭০৯১, ৭৩৫৬, দারেমী ২১৮৬। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৮৫ – ইবনু আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, বিধবা মেয়েরা নিজেদের ব্যাপারে ওয়ালীর থেকে অধিক হকদার আর কুমারী, [সাবলিকার] অনুমতি নিতে হইবে- তাহাদের নীরবতা অনুমতি বলে গণ্য হইবে।
অন্য শব্দ বিন্যাসে এরূপ আছে- বিধবা মেয়েদের সাথে ওয়ালীর কোন ব্যাপার নেই। আর ইয়াতীম মেয়েদের অনুমতি নিতে হইবে। {১০৭৮}
{১০৭৮} মুসলিম ১৪২১, তিরমিয়ী ১১০৮, নাসায়ী ৩২৬০, ৩২৬১, আবু দাউদ ২০৯৮, ২১০০ ইবনু মাযাহ ১৮৭০, আহমাদ ১৮৯১, মুওয়াত্তা মালেক ১১১৪, দারেমী ২১৮৮, ২১৮৯। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১৩. বিবাহের মধ্যে মহিলার অভিভাবকত্ব নেই
৯৮৬ – আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মহিলা অপর কোন মহিলাকে বিবাহ দিবে না এবং কোন মহিলা নিজেকেও বিবাহ দিবে না। -হাদিসটির সকল রাবী নির্ভরযোগ্য। {১০৭৯}
{১০৭৯} ইবনু মাযাহ ১৮৮২। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১৪. `শিগার` বিবাহ নিশিদ্ধ
৯৮৭ – ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, নাৰী [সাঃআঃ] আশ্শিগার নিষিদ্ধ করিয়াছেন। `আশ্-শিগার` হলোঃ কোন ব্যক্তি নিজের কন্যাকে অন্য এক ব্যক্তির পুত্রের সঙ্গে বিবাহ দিবে এবং তার কন্যা নিজের পুত্রের জন্য আনবে এবং দু কন্যাই মাহর পাবে না।
অন্য সূত্রে বুখারি ও মুসলিম একমত হয়ে বলেছেন শিগার নামক বিবাহের ব্যাখ্যাটি নাফি` [রাঃআঃ]– এর নিজের উক্তি। {১০৮০}
{১০৮০} বুখারি ৫১১২, ৬৯৬০, মুসলিম ১৪১৫, তিরমিয়ী ১১১৪, নাসায়ী ৩৩৩৪, ৩৩৩৭. আবু দাউদ ২০৭৪, ইবনু মাযাহ ১৮৮৩, আহমাদ ৪৫১২, ৪৬৭৮, ৪৮৯৯, মুওয়াত্তা মালেক ১১৩৪, দারেমী ২১৮০। বুখারিতে রহিয়াছে, বর্ণনাকারী বলেন, আমি নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে জিজ্ঞেস করলাম, শিগার কী? তিনি বলিলেন, কেউ এক ব্যক্তির মেয়ে বিয়ে করিবে এবং সে তার মেয়ে ঐ ব্যক্তির কাছে বিনা মহরে বিয়ে দেবে। কেউ কোন লোকের বোনকে বিয়ে করিবে এবং সে তার বোনকে ঐ লোকের কাছে বিনা মহরে বিয়ে দেবে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১৫. কুমারী মেয়েকে পছন্দ করার স্বাধীনতা দেয়া যখন তার অমতে বিবাহ দেয়া হয়
৯৮৮ – ইবনু আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
একটি কুমারী মেয়ে নবী [সাঃআঃ] -এর নিকট এসে তাকে জানায় যে, তার পিতা তার অমতে তাকে বিবাহ দিয়েছে। ফলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মেয়েটিকে ঐ বিবাহ বহাল রাখা বা বহাল না রাখার ব্যাপারে স্বাধীনতা দিলেন। -হাদিসটি মুরসালের দোষে দুষ্ট। {১০৮১}
{১০৮১} বুখারি ৫৯৬০, হাদিসটি হাসান, তাওযিহুল আহকাম ৫/২৭৬ পৃঃ/ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ ১৬. যে নারীর বিয়ে দুজন অভিভাবক দিবে – এর বিধান
৯৮৯ – সামূরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাৰী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, নাৰী [সাঃআঃ] বলেছেন, দু`জন অলী যে মহিলার বিবাহ দু`জনের কাছে দিয়ে দিবে-এরূপ অবস্থায় ঐ মহিলা প্রথম স্বামীর হইবে। —তিরমিজি একে হাসান বলেছেন। {১০৮২}
{১০৮২} আবু দাউদ ২০৮৮, তিরমিয়ী ১১১০, নাসায়ী ৪৬৮২. ইবনু মাজহ ২১৯০. আহমাদ ১৯৫৮১, ১৯৭৯, ১৯৬২৮, দারেমী ২১৯৩। শাইখ আলবানী জঈফ নাসায়ী ৪৬৯৬, জঈফ তিরমিজি ১১১০, জঈফ আবূ দাউদ ২০৮৮, জঈফ ইবনু মাযাহ ৪২৫ গ্রন্থে একে দুর্বল বলেছেন, যঈফুল জামে ২২২৪, ইরওয়াউল গালীল ১৮৫৩ গ্রন্থে দুর্বল বলেছেন। তাখরীজ মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮৯ গ্রন্থে বলেন, হাসান বাসরী আন আন করে বর্ণনা করিয়াছেন। সে মুদাল্লিস। ইমাম শওকানী নাইলুল আওতার ৫/২৫৩ গ্রন্থে বলেন, [আরবী] হাসানের সামুরা থেকে বর্ণনা করা ও শ্রবণ করা বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ ১৭. মনিবের অনুমতি ব্যতিরেকে দাসের বিবাহের বিধান
৯৯০ – জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে দাস তার মুনিবের বা আপনজনের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করিবে সে ব্যভিচার বা যিনাকারী বলে গণ্য হইবে। -তিরমিয়ী; তিনি একে সহিহও বলেছেন, ইবনু হিব্বানও তদ্রুপ। {১০৮৩}
{১০৮৩} তিরমিয়ী ১১১১, ১১১২, আবু দাউদ ২০৭৮. আহমদ ১৪৬১৩, ১৪৬৭৩, দারেমী ২৩৩৩/ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ ১৮. স্ত্রীর ফুফু অথবা খালাকে একত্রে বিবাহ করা নিষেধ
৯৯১ – আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, কেউ যেন ফুফু ও তার ভাতিজিকে এবং খালা এবং তার বোনঝিকে একত্রে বিয়ে না করে। {১০৮৪}
{১০৮৪} বুখারি ৫১০৯, ৫১১১, মুসলিম ১৪০৮, তিরমিয়ী ১১২৬, নাসায়ী ৩২৮৮, ৩২৮৯, আবু দাউদ ২০৬৫, ২০৬৬, ইবনু মাযাহ ১৯২৯, আহমাদ ৭০৯৩, ৭৪১৩, মুওয়াত্তামালেক ১১২৯, ১২৭৮, দারেমী ২১৭৮ ৷ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ১৯. ইহরামরত ব্যক্তির নিজের বিবাহ করা বা অপরকে বিবাহ দেওয়া নিষেধ
৯৯২ – `উসমান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, হজ্জের ইহরাম বেঁধে আছে এমন [মুহরিম] ব্যক্তি নিজে বিবাহ করিতে পারবে না এবং অন্যকে বিয়ে দিতেও পারবে না।
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে- সে বিবাহের প্রস্তাব দিতে পারবে না; ইবনু হিব্বানের অতিরিক্ত বর্ণনায় আছে- তাকেও বিবাহের প্রস্তাব দেয়া চলবে না। {১০৮৫}
{১০৮৫} মুসলিম ১৪০৯, তিরমিয়ী ৮৪০, নাসাঈ ২৮৪২-২৮৪৪, ৩২৭৫,৩২৭৬. আবু দাউদ ১৮৪১, ইবনু মাযাহ ১৯৬৬, আহমাদ ৪০৩, ৪৬৪, মালিক ৭৮০, দারিমী ১৮২৩, ২১৯৮ । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৯৩ – ইবনু আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] মাইমুনাকে [রাঃআঃ] মুহরিম্ অবস্থায় বিবাহ করেছিলেন। {১০৮৬}
{১০৮৬} বুখারি ৪২৫৯, ৫১১৪, মুসলিম ১৪১০, তিরমিয়ী ৮৪২, ৮৪৩, নাসায়ী ২৮৩৭, ২৮৩৮, ২৮৪০, আবু দাউদ ১৮৪৪, ইবনু মাযাহ ১৯৬৫, আহমাদ ১৯২২,দারেনী ১৮২২। হাদিসটি যেহেতু মুত্তাফাকুন আলাইহের হাদিস সুতরাং এর সনদসূত্র নিয়ে কারো কোন প্রকার সন্দেহ নেই। তবে মুহাদ্দিসগণ এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, ইবনু আব্বাস [রাঃআঃ] এটি ভুলবশতঃ বলেছেন। কেননা, যার সঙ্গে বিবাহ হয়েছে, তিনি নিজেই পরবর্তী হাদীসে হালাল অবস্থায় বিবাহের কথা বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৯৪ – মাইমূনাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাৰী [সাঃআঃ] তাকে হালাল [ইহরামহীন] অবস্থায় বিবাহ করেছিলেন। {১০৮৭}
{১০৮৭} মুসলিম ১৪১১, তিরমিয়ী ৮৪৫, আবু দাউদ ১৮৪৩ ইবনু মাযাহ ১৯৬৪. আহমাদ ২৬২৮৮, দারেম ১৮২৪। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ২০. বিবাহের শর্তাবলীর বিধান
৯৯৫ – উক্বাহ বিন `আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে শর্তের দ্বারা তোমরা মেয়েদের লজ্জাস্থানকে বৈধ করে নিয়েছ ঐ শর্তসমূহ পূরণের সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। {১০৮৮}
{১০৮৮} বুখারি ২৭২১, ৫১৫১, মুসলিম ১৪১৮, , তিরমিয়ী ১১২৭, নাসাঈ ৩২৮১, ৩২৮২. আবু দাউদ ২১৩৯, ইবনু মাজহ ২১৫৪, আহমাদ ১৬৮৫১, ১৬৯১১, দারেমী ২২০৩। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ২১. মুতআ বিবাহ নিষিদ্ধ
৯৯৬ – সালামাহ বিন আল-আক্ওয়া [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] `আওতাস` [১] অভিযানকালে তিন দিনের জন্য `মুত্আহ` বা সাময়িক বিবাহ-এর অনুমতি দিয়েছিলেন, তারপর তিনি তা নিষিদ্ধ করে দেন। {১০৮৯}
{১০৮৯} বুখারি ৫১১৯, মুসলিম ১৪০৫, আহমাদ ১৬০৬৯, ১৬০৯৯, বুখারি। আওতাস হচ্ছে তায়েফের একটি উপত্যকা। আর [আরবী] বলা হয় মক্কা বিজয়ের বছরকে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৯৭ – আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খায়বার যুদ্ধাভিযানের সময় `মুত্আহ` [সাময়িক বিবাহ] নিষিদ্ধ করেন।
আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মেয়েদের সাথে মুত্`আহ বিবাহ করা, গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া, খাইবার যুদ্ধে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। {১০৯০}
{১০৯০} বুখারি ৪২১৬, ৫১১৫, ৫৫২৩, ৫৯৬১, মুসলিম ১৪০৭, তিরমিয়ী ১১২১, ১৭৯৪, নাসায়ী ৩৩৬৪, ৩৩৬৫ ৩৩৬৬, ইবনু মাযাহ ১৯৬১. আহমাদ ৫৯৩, ৮১৪, মুওয়াত্তা মালেক ১০৮০, পারেমী ১৯৯০, ২১৯৭।mহাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৯৮ – রবী` বিন সাবুরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আমি তোমাদেরকে মেয়েদের সাথে `মুত্আ` বিবাহ [স্বল্পকালীন বিবাহ] করিতে অনুমতি দিয়েছিলাম। অবশ্য আল্লাহ তাআলা এখন কিয়ামাত পর্যন্ত তা হারাম করে দিয়েছেন। যদি ঐরুপ কোন মেয়ে কারো নিকটে এখনও থেকে থাকে তবে তার পথকে উন্মুক্ত করে দিবে অর্থাৎ তাকে বিদায় করে দিবে এবং তাকে তোমাদের দেয়া কিছু ফেরত নেবে না। মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনু মাযাহ, আহমাদ ও ইবনু হিব্বান। {১০৯১}
{১০৯১} মুসলিম ১৪০৬, আবু দাউদ ২০৭২, ইবনু মজাহ ১৯৬২, নাসাঈ ৩৩৬৮. আহমদ ১৪৯১৩, ১৪৯২১, দারিমী ২১৯৫, ২১৯৬। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ২২. “হিল্লা” বিবাহ করা হারাম
৯৯৮ – ইবনু মাসউদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [তিন তালাক প্রাপ্তা] স্ত্রীকে হালালাকারী ও যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ের উপর লানত করিয়াছেন। -তিরমিজি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন {১০১২}
{১০৯২} নাসায়ী ৩৪১৬, তিরমিজি ১১১৯, ১১২০, আবু দাউদ ২০৭৬, ইবনু মাযাহ ১৯৩৫, আহমাদ ৪২৭১, ৪২৯৬, দারেমী ২২৫৮। হিল্লা বিবাহ ইসলামে নিষিদ্ধ। তালাকদাতা স্বামীর নিকট পুনরায় স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য যৌন মিলনের পর তালাক দেয়ার শর্তে কোন ব্যক্তির নিকট সাময়িক বিবাহ দেয়াকে হিলা বিবাহ বলা হয়। আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ] এ বিবাহকারী ও প্রদানকারী উভয়কে অভিসম্পাত করিয়াছেন। অথচ আমাদের দেশের কিছু মৌলবী আল্লাহর রাসূলের এ অভিসম্পাতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে, ঢালাওভাবে এ অনৈতিক বিবাহের প্রচলন বহাল রেখেছে। আল্লাহর রাসূলের ভাষায় এদেরকে ভাড়টিয়া পাঠা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মূলতঃ সহিহ হাদিসকে অগ্রাহ করে এক তহুরে বা এক বৈঠকে তিন তালাককে এক তালাক গণ্য না করে তিন তালাক ধরে নেয়ার কারণে আমাদের দেশে এ অনৈতিক কর্মকাণ্ড অধিক পরিমাণে সংঘটিত হয়ে থাকে। হানাফী মাযহাবের আলিমদের হাদিস বিরোধী ফাতোয়াও অনেকট এর জন্য দায়ী। আল্লাহ আমাদের হাদিস অমান্য করা থেকে বাচিয়ে রাখুন। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ [রহ] বলেছেন- হালালা নামক অভিশপ্ত বিবাহ দ্বারা ঐ স্ত্রী, হালালাকারী ও পূর্বস্বামী কারো জন্য হালাল হইবে না। [মিশরীয় তীকা] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৯৯ – আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
এ অনুচ্ছেদে অনুরূপ হাদিসই বর্ণিত হয়েছে। {১০৯৩}
{১০৯৩} নাসায়ী ৩৪১৬। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ২৩. ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করা হারাম এবং তাকে ব্যভিচারীর সাথে বিবাহ দেওয়া
১০০০ – আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, দোর্রা লাগান [যিনার দায়ে শাস্তি প্রাপ্তা] মেয়েকে তার মত [দুশ্চরিত্র] পুরুষ ব্যতীত বিবাহ করিবে না। -এর সকল রাবী নির্ভরযোগ্য। {১০৯৪}
{১০৯৪} আবু দাউদ ২০৫২. আহমাদ ৮১০১। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ২৪. তিন তালাকপ্রাপ্তা মহিলা ওপর কাউকে বিবাহ না করা পর্যন্ত তার পূর্বের স্বামীর জন্য বৈধ নয়
১০০১ – `আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছিল; ঐ স্ত্রীলোকটিকে কোন ব্যক্তি বিবাহ করে, তারপর তাকে সহবাসের পূর্বেই তালাক দিয়ে দেয়। তারপর তার প্রথম স্বামী তাকে বিবাহ করিতে ইচ্ছা করে। এ সম্বন্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেনঃ না, যতক্ষণ না পরবর্তী স্বামী তার স্বাদ গ্রহণ [সঙ্গম] করিবে যেমন তার পূর্বস্বামী গ্রহণ করেছে। -শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। {১০৯৫}
{১০৯৫} বুখারি ২৬৩৯, ৫২৬০, ৫২৬১, ৫২৬৫, মুসলিম ১৪৩৩, তিরমিয়ী ১১১৮, নাসায়ী ৩২৮৩, ৩৪০৯, ইবনু মাযাহ ১৯৩২, আহমাদ ২৩৫৩৮, ২৩৫৭৮, দারিনী ২২৬৭, ২২৬৮ । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply