বিবাদ মিমাংসা – আপোস, সন্ধি বং ন্যায় বিচার করার ফযীলত
বিবাদ মিমাংসা – আপোস, সন্ধি বং ন্যায় বিচার করার ফযীলত >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৫৩, বিবাদ মিমাংসা, অধ্যায়ঃ (১-১৪)=১৪টি
৫৩/১. অধ্যায়ঃ মানুষের মধ্যে আপোস-মীমাংসা করে দেয়া।
৫৩/২. অধ্যায়ঃ মানুষের মধ্যে মীমাংসাকারী ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়।
৫৩/৩. অধ্যায়ঃ সঙ্গী-সাথীদের প্রতি ইমামের কথা “চলো যাই আমরা মীমাংসা করে দেই”।
৫৩/৪. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “উভয়ে আপোস নিস্পত্তি করিতে চাইলে আপোস নিস্পত্তিই শ্রেয়।” (আন-নিসা : ১২৮)
৫৩/৫. অধ্যায়ঃ অন্যায়ের উপর সন্ধিবদ্ধ হলে তা বাতিল।
৫৩/৬. অধ্যায়ঃ কিভাবে সন্ধিপত্র লেখা হইবে? অমুকের পুত্র অমুক এবং অমুকের পুত্র অমুক লিখাতে হইবে। গোত্র বা বংশের উল্লেখ না করলেও ক্ষতি নেই।
৫৩/৭ অধ্যায়ঃ মুশরিকদের সঙ্গে সন্ধি।
৫৩/৮. অধ্যায়ঃ ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে সন্ধি।
৫৩/৯. অধ্যায়ঃ হাসান ইবনু আলী (রাদি.) সম্পর্কে নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তি : আমার এ ছেলেটি একজন নেতা। সম্ভবত আল্লাহ এর মাধ্যমে দুটি বড় দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করাবেন।
৫৩/১০. অধ্যায়ঃ আপোস মীমাংসার ব্যাপারে ইমাম পরামর্শ দিবেন কি?
৫৩/১১. অধ্যায়ঃ মানুষের মধ্যে মীমাংসা এবং ন্যায় বিচার করার ফযীলত।
৫৩/১২. অধ্যায়ঃ ইমাম বিবাদ মীমাংসা করে নেয়ার নির্দেশ দেয়ার পরও তা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে যথার্থ হুকুম জারী করিতে হইবে।
৫৩/১৩. অধ্যায়ঃ পাওনাদারদের মধ্যে এবং ওয়ারিসদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়া এবং এ ব্যাপারে অনুমান করা।
৫৩/১৪. অধ্যায়ঃ ঋণ ও নগদ সম্পদের বিনিময়ে আপোস করা।
৫৩/১. অধ্যায়ঃ মানুষের মধ্যে আপোস-মীমাংসা করে দেয়া।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোন কল্যাণ নেই। তবে কল্যাণ আছে যে দান-খয়রাত, সৎকার্য ও মানুষের মধ্যে সমঝোতা স্থাপনের নির্দেশ দেয় তার পরামর্শে ……. শেষ পর্যন্ত- (সুরা আন-নিসা : ১১৪)। মানুষের মধ্যে আপোস করিয়ে দেয়ার উদ্দেশে সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে ইমামের (ঘটনা) স্থানে যাওয়া।
২৬৯০. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমর ইবনু আউফ গোত্রের কিছু লোকের মধ্যে সামান্য বিবাদ ছিল। তাই নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সাহাবীগণের একটি জামাআত নিয়ে তাদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করে দেয়ার জন্য সেখানে গেলেন। এদিকে সালাতের সময় হয়ে গেল। কিন্তু নাবী (সাঃআঃ) মসজিদে নাবাবীতে এসে পৌছেননি ৷ বিলাল (রাদি.) আবু বক্র (রাদি.)-এর নিকট এসে বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে সালাতেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি কি সালাতে লোকদের ইমামতি করবেন? তিনি বলিলেন, হ্যা, তুমি যদি ইচ্ছা কর।অতঃপর বিলাল (রাদি.) সালাতের ইকামত বলিলেন, আর আবু বকর (রাদি.) এগিয়ে গেলেন। পরে নাবী (সাঃআঃ) এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম করে প্রথম কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকেরা হাততালি দিতে শুরু করিল এবং তা অধিক মাত্রায় দিতে লাগল। আবু বকর (রাদি.) সালাত অবস্থায় কোন দিকে তাকাতেন না, কিন্তু (হাততালির কারণে) তিনি তাকিয়ে দেখিতে পেলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর পেছনে দাঁড়িয়েছেন। নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে হাতের ইশারায় আগের মত সালাত আদায় করে যেতে নির্দেশ দিলেন। আবু বক্র (রাদি.) তাহাঁর দুহাত উপরে তুলে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করিলেন। অতঃপর কিবলার দিকে মুখ রেখে পেছনে ফিরে এসে কাতারে সামিল হলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) আগে বেড়ে লোকদের ইমামতি করিলেন এবং সালাত সমাপ্ত করে লোকদের দিকে ফিরে বলিলেন হে লোক সকল! সালাত অবস্থায় তোমাদের কিছু ঘটলে তোমরা হাত তালি দিতে শুরু কর। অথচ হাততালি দেয়া মেয়েদের কাজ। সালাত অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন সুবহানআল্লাহ সুবহানআল্লাহ বলে। কেননা, এটা শুনলে কেউ তার দিকে দৃষ্টিপাত না করে পারতো না। হে আবু বক্র! তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন সালাত আদায় করাতে তোমার কিসের বাধা ছিল? তিনি বলেন, আবু কুহাফার পূত্রের জন্য শোভা পায় না নাবী (সাঃআঃ)-এর সামনে ইমামতি করা।
[১] ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ পঞ্চম খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ- জুন ১৯৯৯ সংস্করণের ক্রমিক নং অনুযায়ী।
২৬৯১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে বলা হলো, আপনি যদি আবদুল্লাহ ইবনু উবাইয়ের নিকট একটু যেতেন। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর নিকট গাধায় চড়ে গেলেন এবং মুসলিমরা তাহাঁর সঙ্গে হেঁটে চললো। সে পথ ছিল কংকরময়। নাবী (সাঃআঃ) তার নিকট পৌঁছলে সে বলিল সরো আমার কাছ থেকে। আল্লাহর কসম, তোমার গাধার দুর্গন্ধ আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। তাঁদের মধ্য হইতে একজন আনসারী বললোঃ আল্লাহর কসম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর গাধা সুগন্ধে তোমার চেয়ে উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনু উবাই-এর গোত্রের জনৈক ব্যক্তি রেগে গেল এবং দুজনে গালাগালি করিল। এভাবে উভয়ের পক্ষের সঙ্গীরা রেগে উঠল এবং দলের সঙ্গে লাঠালাঠি, হাতাহাতি ও জুতা মারামারি হল। আমাদের জানান হয়েছে যে, এই ব্যাপারে এ আয়াত নাযিল হলো :
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا
মুমিনদের দুদল বিবাদে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। (সুরা আল-হুজরাত : ৯) আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মুসাদ্দাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বসার এবং হাদীস বর্ণনার পূর্বে আমি তার নিকট হইতে এ হাদীস চয়ন করেছি।
৫৩/২. অধ্যায়ঃ মানুষের মধ্যে মীমাংসাকারী ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়।
২৬৯২. উম্মু কুলসুম বিনতে উকবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাচারী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে।
৫৩/৩. অধ্যায়ঃ সঙ্গী-সাথীদের প্রতি ইমামের কথা “চলো যাই আমরা মীমাংসা করে দেই”।
২৬৯৩.সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
কুবা-এর অধিবাসীদের মধ্যে লড়াই বেধে গেল। এমনকি তারা পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু করিল। এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে খবর দেয়া হলে তিনি বলিলেন, চলো যাই তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেই।
৫৩/৪. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “উভয়ে আপোস নিস্পত্তি করিতে চাইলে আপোস নিস্পত্তিই শ্রেয়।” (আন-নিসা : ১২৮)
২৬৯৪.আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর অবজ্ঞা ও উপেক্ষার আশংকা করে- (সুরা আন-নিসা : ১২৮)। এই আয়াতটি সম্পর্কে তিনি বলেন, আয়াতের লক্ষ্য হল, কেউ তার স্ত্রীর মধ্যে বার্ধক্য বা অপছন্দনীয় কিছু দেখিতে পেয়ে তাকে ত্যাগ করিতে মনস্থ করে আর স্ত্রী বলে যে, তুমি আমাকে তোমার নিকট রাখ এবং তোমার যেটুকু ইচ্ছা আমার অংশ নির্ধারণ কর। আয়িশা (রাদি.) বলেন, উভয় রাজী হলে এতে দোষ নেই।
৫৩/৫. অধ্যায়ঃ অন্যায়ের উপর সন্ধিবদ্ধ হলে তা বাতিল।
২৬৯৫. আবু হুরাইরা ও যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা উভয়ে বলেন যে, এক বেদুঈন এসে বলিল হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কিতাব মোতাবেক আমাদের মাঝে ফয়সালা করে দিন। তখন তার প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে বলিল, সে ঠিকই বলেছে, হ্যাঁ, আপনি আমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ মোতাবেক ফয়সালা করুন। পরে বেদুইন বলিল, আমার ছেলে এ লোকের বাড়িতে মজুর ছিল। অতঃপর তার স্ত্রীর সঙ্গে সে যিনা করে। লোকেরা আমাকে বললোঃ তোর ছেলের উপর রাজম (পাথরের আঘাতে হত্যা) ওয়াজিব হয়েছে। তখন আমার ছেলেকে একশ বকরী এবং একটি বাঁদীর বিনিময়ে এর নিকট মুক্ত করে এনেছি। পরে আমি আলিমদের নিকট জিজ্ঞেস করলে তারা বলিলেন, তোমার ছেলের উপর একশবেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসন ওয়াজিব হয়েছে। সব শুনে নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি তোমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ মোতাবেকই ফয়সালা করব। বাঁদী এবং বকরী পাল তোমাকে ফেরত দেয়া হইবে, আর তোমার ছেলেকে একশবেত্রাঘাত সহ এক বছরের নির্বাসন দেয়া হইবে। আর অপরজনের ব্যাপারে বলিলেন, হে উনাইস! তুমি আগামীকাল সকালে এ লোকের স্ত্রীর নিকট যাবে এবং তাকে রাজম করিবে। উনাইস তার নিকট গেলেন এবং তাকে রজম করিলেন।
২৬৯৬. আবু হুরাইরা ও যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা উভয়ে বলেন যে, এক বেদুঈন এসে বলিল হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কিতাব মোতাবেক আমাদের মাঝে ফয়সালা করে দিন। তখন তার প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে বলিল, সে ঠিকই বলেছে, হ্যাঁ, আপনি আমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ মোতাবেক ফয়সালা করুন। পরে বেদুইন বলিল, আমার ছেলে এ লোকের বাড়িতে মজুর ছিল। অতঃপর তার স্ত্রীর সঙ্গে সে যিনা করে। লোকেরা আমাকে বললোঃ তোর ছেলের উপর রাজম (পাথরের আঘাতে হত্যা) ওয়াজিব হয়েছে। তখন আমার ছেলেকে একশ বকরী এবং একটি বাঁদীর বিনিময়ে এর নিকট মুক্ত করে এনেছি। পরে আমি আলিমদের নিকট জিজ্ঞেস করলে তারা বলিলেন, তোমার ছেলের উপর একশবেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসন ওয়াজিব হয়েছে। সব শুনে নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি তোমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ মোতাবেকই ফয়সালা করব। বাঁদী এবং বকরী পাল তোমাকে ফেরত দেয়া হইবে, আর তোমার ছেলেকে একশবেত্রাঘাত সহ এক বছরের নির্বাসন দেয়া হইবে। আর অপরজনের ব্যাপারে বলিলেন, হে উনাইস! তুমি আগামীকাল সকালে এ লোকের স্ত্রীর নিকট যাবে এবং তাকে রাজম করিবে। উনাইস তার নিকট গেলেন এবং তাকে রজম করিলেন।
২৬৯৭.আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, কেউ আমাদের এ শরীআতে নাই এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা প্রত্যাখ্যাত [১]। আবদুল্লাহ ইবনু জাফর মাখরামী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও আবদুল ওয়াহিদ ইবনু আবু আউন, সাদ ইবনু ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে তা বর্ণনা করিয়াছেন।
[১] অত্র হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হল যে, শরীআর দৃষ্টিতে ওটাকে বিদআত বলা হয় যা দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিস্কার ৷ অতএব দুনিয়াবী আবিষ্কার যেমন বাস, ট্রেন, উড়োজাহাজ, পানি জাহাজ প্রভৃতিতে চড়া বিদআত নয়। কারণ এগুলোতে চড়ার মাধ্যমে কেউ সাওয়াবের আশা করে না। দুঃখের বিষয় হলেও অতি সত্যকথা যে, আমরা ইবাদাত করিতে এত ব্যস্ত যে, ঐ ইবাদাতটি নাবীর তরীকা মুতাবিক হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করারও সময় নেই ৷ এজন্যই অজান্তে দেদারসে এমন কিছু আমাল সাওয়াব পাওয়ার নিমিত্তে করে যাচ্ছি যেগুলি জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ। যেমনঃ মীলাদ, শবে বরাত, চল্লিশা, খতমে জালালী, খতমে ইউনুস, কুরআন খানি, ফাতিহা খানি, শবীনা খতম, দরুদে তাজ, দরুদে লাক্ষী, দুআয়ে গাঞ্জুল আরশ, কুম কুম ইয়া হাবীবা ওযীফা, উরস, কবরে চাদর দেয়া, কবর পাকা করা, কবরের উপর লেখা, তাতে ফ্যানের ব্যবস্থা রাখা, সেখানে আগর বাতি-মোমবাতি জ্বালানো, সেখানে নযরানা পেশ করা, মুখে নিয়্যাতের গদ উচ্চারণ করা (নাওয়াইতু আন উসল্লিয়া —– বলে), ফরজ সালাতান্তে, জানাযা সালাতান্তে সস্মিলিতভাবে হাত তুলে দুআ করা প্রভৃতি। এগুলো এমন আমাল যার মধ্যে নাবী (সাঃআঃ)-এর তরীকা বিদ্যমান না থাকায় নিঃসন্দেহে বিদআত- যার পরিণাম জাহান্নাম ছাড়া আর কিছু নয়। অনেকে বলে থাকেন, বুঝলাম এগুলো বিদআত কিন্তু বিদআত তো দুই প্রকার- (১) বিদআতে হাসানাহ (উত্তম বিদআত) (২) বিদআতে সায়্যিআহ (মন্দ বিদআত)। অতএব এগুলো বিদআত হলেও মন্দ বিদআত নয় বরং উত্তম বিদআত। তাই বলি : বিদআতকে উক্ত দুই ভাগে ভাগ করাও একটি বিদআত। কারণ নাবী (সাঃআঃ) হইতে বিদআতের এই বিভাজন আদৌ প্রমাণিত নেই। বরং তিনি সমস্ত বিদআতকে ভ্রষ্টতা বলেছেন- (নাসায়ী ৩/১৮৮-১৮৯, ইবনু খুযাইমাহ হাদীস ১৭৮৫)। ইবনু উমার (রাদি.) বলেন : সমস্ত বিদআতই ভ্রষ্টতা যদিও মানুষ তাকে উত্তম মনে করে- (সলাতুত তারাবীহ- আলবানী ৮১ পৃষ্ঠা)।
মনে রাখতে হইবে যে, দুনিয়াবী বিষয়ে সকল বিষয়ই বৈধ বা হালাল, শুধুমাত্র কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে যে সকল বস্তুকে হারাম করা হয়েছে সেগুলো ব্যতীত। আর ইব৷দাতের ক্ষেত্রে সকল প্রকার ইবাদাত হারাম বা অবৈধ শুধুমাত্র কুরআন ও সুন্নাহয় যেগুলোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেগুলো ব্যতীত। আমাল সহীহ ও সুন্নাতী পদ্ধতিতে হবার জন্য ছয়টি বিষয়ের উপর খেয়াল রাখতে হইবে। সেগুলো হলো (১) কারণ : (যেমন চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের কারণে সালাত আছে কিন্তু আল্লাহর রাসুল এর জন্ম বা মৃত্যূর কারণে কোন ইবাদাত নেই, তাই সেখানে ইবাদাত না করা)।
(২) প্রকার : (যত প্রকার মহিলাকে বিব৷হ করা হারাম তত প্রকার ব্যতীত অন্য সকল প্রকার নারীকে বিবাহ বৈধ, কিংবা যত প্রকারের জানোয়ার আল্লাহর রাসুল কুরবানী করিয়াছেন সেগুলোতেই সীমাবদ্ধ থাকা, যেমন আল্লাহর রাসুল ঘোড়া কুরবানী করেননি বা মোরগ মুরগী কুরবানী করেননি তাই তা না করা)।
(৩) পরিমাণ : (যতটুকু করিয়াছেন তারচেয়ে কম বা বেশী না করা, যেমন যুহরের চার রাকাআতে স্থলে ৩ বা ৫ করা যাবে না)।
(৪) সময় : (যে সময়ে করিয়াছেন সে সময়ে করা, যেমন সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা, যুহরের সালাতে আসরের সময় আর আসরের সালাত যুহরে আদায় না করা)।
(৫) স্থান : (যে স্থানে করিয়াছেন, যেমন হাজ্জের মীকাত, মীনায় অবস্থান, আরফায় অবস্থান, ফরজ সালাত মসজিদে আদায় ইত্যাদি)। (৬) পদ্ধতি : (যে ভাবে করিয়াছেন সেভাবেই করিতে হইবে, পদ্ধতি পরিবর্তন না করা)।
৫৩/৬. অধ্যায়ঃ কিভাবে সন্ধিপত্র লেখা হইবে? অমুকের পুত্র অমুক এবং অমুকের পুত্র অমুক লিখাতে হইবে। গোত্র বা বংশের উল্লেখ না করলেও ক্ষতি নেই।
২৬৯৮. বারা ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হুদায়বিয়াতে (মক্কাবাসীদের সঙ্গে) সন্ধি করার সময় আলী (রাদি.) উভয় পক্ষের মাঝে এক চুক্তিপত্র লিখলেন। তিনি লিখলেন, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)। মুশরিকরা বলিল, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ লিখবে না। আপনি রাসুল হলে আপনার সঙ্গে লড়াই করতাম না? তখন তিনি আলী (রাদি.)-কে বলিলেন, ওটা মুছে দাও। আলী (রাদি.) বলিলেন, আমি তা মুছব না। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নিজ হাতে তা মুছে দিলেন এবং এই শর্তে তাদের সঙ্গে সন্ধি করিলেন যে, তিনি এবং তাহাঁর সঙ্গী-সাথীরা তিন দিনের জন্য মক্কায় প্রবেশ করবেন এবং জুলুব্বান —- ব্যতীত অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করবেন না। তারা জিজ্ঞেস করিল, —- মানে কী? তিনি বলিলেন, জুলুব্বান মানে ভিতরে তরবারীসহ খাপ।
২৬৯৯. বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যিলকাদ মাসে নাবী (সাঃআঃ) উমরাহর উদ্দেশ্যে বের হলেন। কিন্তু মক্কাবাসীরা তাঁকে মক্কা প্রবেশের জন্য ছেড়ে দিতে অস্বীকার করিল। অবশেষে এই শর্তে তাদের সঙ্গে ফয়সালা করিলেন যে, তিনদিন সেখানে অবস্থান করবেন। সন্ধিপত্র লিখতে গিয়ে মুসলিমরা লিখলেন, এ সন্ধিপত্র সম্পাদন করিয়াছেন, আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)। তারা (মুশরিকরা) বলিল, আমরা তাহাঁর রিসালাত স্বীকার করি না। আমরা যদি জানতাম যে, আপনি আল্লাহর রাসুল তাহলে আপনাকে বাধা দিতাম না। তবে আপনি হলেন, আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ। তিনি বলিলেন, আমি আল্লাহর রাসুল এবং আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ। অতঃপর তিনি আলী (রাদি.)–কে বলিলেন, আল্লাহর রাসুল শব্দটি মুছে দাও। তিনি বলিলেন, না। আল্লাহর কসম, আমি আপনাকে কখনো মুছব না। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তখন চুক্তিপত্রটি নিলেন এবং লিখলেন, এ সন্ধিপত্র মুহাস্মদ ইবনু আবদুল্লাহ সম্পন্ন করেন- খাপবদ্ধ অস্ত্র ব্যতীত আর কিছু নিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কাবাসীদের কেউ তাহাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বের করে নিবেন না। আর তাহাঁর সঙ্গীদের কেউ মক্কায় থাকতে চাইলে তাঁকে বাধা দিবেন না। তিনি যখন মক্কায় প্রবেশ করিলেন এবং নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেল, তখন তারা এসে আলী (রাদি.)-কে বলিল, তোমার সঙ্গীকে আমাদের এখান হইতে বের হইতে বল। কেননা নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। নাবী (সাঃআঃ) রওয়ানা হলেন ৷ তখন হামযাহর কন্যা হে চাচা, হে চাচা, বলে তাদের পেছনে পেছনে চলল। আলী (রাদি.) তাকে হাত ধরে নিয়ে এলেন এবং ফাতিমাহকে বলিলেন, এই নাও, তোমার চাচার মেয়েকে। আমি ওকে তুলে এনেছি। আলী, যায়দ ও জাফর (রাদি.) তাকে নেয়ার ব্যাপারে বিতর্কে প্রবৃত্ত হলেন। আলী (রাদি.) বলিলেন, আমি তার অধিক হক্দার। কারণ সে আমার চাচার মেয়ে। জাফর (রাদি.) বলিলেন, সে আমার চাচার মেয়ে এবং তার খালা আমার স্ত্রী। যায়দ (রাদি.) বলিলেন, সে আমার ভাইয়ের মেয়ে। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) খালার পক্ষে ফয়সালা দিলেন এবং বলিলেন, খালা মায়ের স্থান অধিকারিণী। আর আলীকে বলিলেন, আমি তোমার এবং তুমি আমার। জাফরকে বলিলেন, তুমি আকৃতি ও প্রকৃতিতে আমার সদৃশ। আর যায়দকে বলিলেন, তুমি তো আমাদের ভাই ও আযাদকৃত গোলাম।
৫৩/৭ অধ্যায়ঃ মুশরিকদের সঙ্গে সন্ধি।
এ সম্পর্কে আবু সুফিয়ান (রাদি.) হইতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আওফ ইবনু মালিক (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। অতঃপর তোমাদের ও পীত বর্ণের লোকদের সঙ্গে সন্ধি হইবে। এ বিষয়ে সাহল ইবনু হুনায়ফ, আসমা ও মিসওয়ার (রাদি.) কর্তৃক নাবী (সাঃআঃ) হইতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
২৭০০. বারা ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) হুদায়বিয়ার দিন মুশরিকদের সঙ্গে তিনটি বিষয়ে সন্ধি করেছিলেন। তা হলো- মুশরিকরা কেউ (মুসলিম হয়ে) তাহাঁর নিকট এলে তিনি তাকে তাদের নিকট ফিরিয়ে দিবেন। মুসলিমদের কেউ (মুরতাদ হয়ে) তাদের নিকট গেলে তারা তাকে ফিরিয়ে দিবে না। আর তিনি আগামী বছর মক্কায় প্রবেশ করবেন এবং সেখানে তিন দিন অবস্থান করবেন। কোষবদ্ধ তরবারি, ধনুক ও এ রকম কিছু ব্যতীত অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করবেন না। ইতোমধ্যে আবু জান্দাল (রাদি.) শিকল পরা অবস্থায় লাফিয়ে লাফিয়ে তাহাঁর নিকট এল। তাকে তিনি তাদের নিকট ফিরিয়ে দিলেন। (১৭৮১)
আবু আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, মুআম্মাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত হাদীসে আবু জান্দালের কথা উল্লেখ করেননি। তিনি “কোষবদ্ধ তরবারি ছাড়া” এটুকু উল্লেখ করিয়াছেন।
২৭০১. ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উমরার উদ্দেশে বহির্গত হলেন। কিন্তু কুরাইশ কাফিররা তাহাঁর ও বাইতুল্লাহর মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াল। তখন তিনি হুদায়বিয়াতে তাহাঁর হাদী কুরবানী করিলেন, তাহাঁর মাথা মুড়ালেন এবং তাদের সঙ্গে সন্ধি করিলেন যে, আগামী বছর তিনি উমরাহ করবেন আর তরবারি ব্যতীত অন্য কোন অস্ত্র বহন করবেন না। আর তারা যতদিন চাইবে তার বেশি সেখানে থাকবেন না। পরের বছর তিনি উমরাহ করিলেন এবং তাদের সঙ্গে সন্ধি মোতাবেক প্রবেশ করিলেন। তিনি সেখানে তিন দিন অবস্থান করিলেন। তারা তাঁকে বেরিয়ে যেতে বললে, তিনি বেরিয়ে গেলেন।
২৭০২. সাহল ইবনু আবু হাসমা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, খায়বার সন্ধিবদ্ধ থাকাকালে আবদুল্লাহ ইবনু সাহল ও মুহাইয়াসা ইবনু মাসউদ ইবনু যায়দ (রাদি.) খায়বার গিয়েছিলেন।
৫৩/৮. অধ্যায়ঃ ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে সন্ধি।
২৭০৩. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রুবাইয়্যি বিনতে নাযর (রাদি.) এক কিশোরীর সামনের দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিল। তারা ক্ষতিপূরণ চাইল আর অপরপক্ষ ক্ষমা চাইল। তারা অস্বীকার করিল এবং নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এল। তিনি কিসাসের আদেশ দিলেন। আনাস ইবনু নাযর (রাদি.) তখন বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! রুবাইয়্যি-এর দাঁত ভাঙ্গা হইবে? না, যিনি আপনাকে সত্য সহ পাঠিয়েছেন তাহাঁর কসম তাহাঁর দাঁত ভাঙ্গা হইবে না। তিনি বলিলেন, হে আনাস, আল্লাহর বিধান হল কিসাস। অতঃপর বাদীপক্ষ রাজী হয় এবং ক্ষমা করে দেয়। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন বান্দাও রয়েছেন যে, আল্লাহর নামে কোন কসম করলে তা পূরণ করেন। ফাযারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হুমায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে আনাস (রাদি.) হইতে রিওয়ায়াত করিতে গিয়ে অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন যে, তখন লোকেরা রাজী হল এবং ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করিল।
৫৩/৯. অধ্যায়ঃ হাসান ইবনু আলী (রাদি.) সম্পর্কে নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তি : আমার এ ছেলেটি একজন নেতা। সম্ভবত আল্লাহ এর মাধ্যমে দুটি বড় দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করাবেন।
আর আল্লাহর তাআলার বাণীঃ তোমরা তাদের উভয় দলের মাঝে মীমাংসা করে দাও। (সুরা আল-হুজুরাত : ৯)
২৭০৪. হাসান (বাসরী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর কসম, হাসান ইবনু আলী (রাদি.) পর্বত প্রমাণ সেনাদল নিয়ে মুআবিয়াহ (রাদি.)-এর মুখোমুখী হলেন। আমর ইবনু আস (রাদি.) বলিলেন, আমি এমন সেনাদল দেখিতে পাচ্ছি যারা প্রতিপক্ষকে হত্যা না করে ফিরে যাবে না। মুআবিয়াহ (রাদি.) তখন বলিলেন, আল্লাহর কসম! আর (মুআবিয়াহ ও আমর ইবনুল আস) (রাদি.) উভয়ের মধ্যে মুআবিয়াহ (রাদি.) ছিলেন উত্তম ব্যক্তি– হে আমর! এরা ওদের এবং ওরা এদের হত্যা করলে, আমি কাকে দিয়ে লোকের সমস্যার সমাধান করব? তাদের নারীদের কে তত্ত্বাবধান করিবে? তাদের দুর্বল ও শিশুদের কে রক্ষণাবেক্ষণ করিবে? অতঃপর তিনি কুরায়শের বানূ আবদে শামস্ শাখার দুব্যক্তি আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ ও আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.)-কে হাসান (রাদি.)-এর নিকট পাঠালেন। তিনি তাদের বলিলেন, তোমরা উভয়ে এ ব্যক্তিটির নিকট যাও এবং তাহাঁর নিকট (সন্ধির) প্রস্তাব পেশ করো, তাহাঁর সঙ্গে আলোচনা কর ও তাহাঁর বক্তব্য জানতে চেষ্টা কর। তাঁরা তাহাঁর নিকট রয়ে গেলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে কথা বলিলেন, আলাপ-আলোচনা করিলেন এবং তাহাঁর বক্তব্য জানলেন। হাসান ইবনু আলী (রাদি.) তাদের বলিলেন , আমরা আবদুল মুত্তালিবের সন্তান, এই সম্পদ (বায়তুল মালের) আমরা পেয়েছি আর এরা রক্তপাতে লিপ্ত হয়েছে। তারা উভয়ে বলিলেন, [মুআবিয়াহ (রাদি.)] আপনার নিকট এরূপ বক্তব্য পেশ করিয়াছেন। আর আপনার বক্তব্যও জানতে চেয়েছেন ও সন্ধি কামনা করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, এ দায়িত্ব কে নিবে? তারা (তার জবাবে) বলিলেন, আমরা এ দায়িত্ব নিচ্ছি। অতঃপর তিনি তাহাঁর সঙ্গে সন্ধি করিলেন। হাসান (বসরী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আবু বাকরাহ (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি : রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে আমি মিম্বরের উপর দেখেছি, হাসান বিন আলী (রাদি.) তাহাঁর পাশে ছিলেন। তিনি একবার লোকদের দিকে আরেকবার তাহাঁর দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, আমার এ সন্তান একজন নেতা। সম্ভবত তার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের দুটি বড় দলের মধ্যে মীমাংসা করাবেন। আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আলী ইবনু আবদুল্লাহ আমাকে বলেছেন যে, এ হাদীসের মাধ্যমেই আবু বাকরাহ (রাদি.) হইতে হাসানের শোনা কথা আমাদের নিকট প্রমানিত হয়েছে।
৫৩/১০. অধ্যায়ঃ আপোস মীমাংসার ব্যাপারে ইমাম পরামর্শ দিবেন কি?
২৭০৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) একবার দরজায় ঝগড়ার আওয়াজ শুনতে পেলেন; দুজন তাদের আওয়াজ উচ্চ করেছিল। তাদের একজন আরেকজনের নিকট ঋণের কিছু মাফ করে দেয়ার এবং সহানুভূতি দেখানোর অনুরোধ করেছিল। আর অপর ব্যক্তি বলছিল, না, আল্লাহর কসম! আমি তা করব না। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের দুজনের কাছে এলেন এবং বলিলেন, সৎ কাজ করিবে না বলে যে আল্লাহর নামে কসম করেছে, সে ব্যক্তিটি কোথায়? সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি। সে যা পছন্দ করিবে তার জন্য তা-ই হইবে।
২৭০৬. কাব ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনু আবু হাদরাদ আল-আসলামীর কাছে তার কিছু মাল পাওনা ছিল। রাবী বলেন, একবার তার সাক্ষাৎও পেলেন এবং তাকে ধরলেন, এমনকি তাদের আওয়াজ চড়ে গেল। নাবী (সাঃআঃ) তাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বলিলেন, ওহে কাব, অতঃপর হাতের ইশারায় তিনি যেন জানালেন, অর্ধেক। তারপর তিনি তার পাওনা নিলেন আর অর্ধেক ছেড়ে দিলেন।
৫৩/১১. অধ্যায়ঃ মানুষের মধ্যে মীমাংসা এবং ন্যায় বিচার করার ফযীলত।
২৭০৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, মানুষের প্রতিটি হাতের জোড়ার জন্য তার উপর সদকা রয়েছে। সূর্য উঠে এমন প্রত্যেক দিন মানুষের মধ্যে সুবিচার করাও সদকা।
৫৩/১২. অধ্যায়ঃ ইমাম বিবাদ মীমাংসা করে নেয়ার নির্দেশ দেয়ার পরও তা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে যথার্থ হুকুম জারী করিতে হইবে।
২৭০৮. যুবাইর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি এক আনসারীর সঙ্গে বিবাদ করেছিলেন, যিনি বদরে শরীক ছিলেন। তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট গিয়ে প্রস্তরময় যমীনের একটি নালা সম্পর্কে অভিযোগ করিলেন। তারা উভয়ে সে নালা হইতে পানি সেচ করিতেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুবাইরকে বলিলেন, হে যুবাইর! তুমি প্রথমে পানি সেচবে। অতঃপর তোমার প্রতিবেশির দিকে পানি ছেড়ে দিবে। আনসারী তখন রেগে গেল এবং বললো, হে আল্লাহর রাসুল! সে আপনার ফুফুর ছেলে হওয়ার কারণে? এতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর চেহারার রঙ বদলে গেল। অতঃপর তিনি বলিলেন, তুমি সেচ কর, অতঃপর পানি আটকে রাখ, বাঁধ বরাবর পৌঁছা পর্যন্ত। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুবাইর (রাদি.)-কে তার পূর্ণ হক দিলেন। এর আগে যুবাইর (রাদি.)-কে তিনি এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন যা আনসারীর জন্য সুবিধাজনক ছিল। কিন্তু আনসারী আল্লাহর রাসুলকে রাগান্বিত করলে সুস্পষ্ট নির্দেশের মাধ্যমে যুবাইর (রাদি.)-কে তিনি তার পূর্ণ হক দান করিলেন। উরওয়াহ (রাদি.) বলেন, যুবাইর (রাদি.) বলেছেন, আল্লাহর কসম! আমার নিশ্চিত ধারণা যে (আল্লাহর বাণী) : কিন্তু না, আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হইবে না যতক্ষণ তারা তাদের নিজেদের বিবাদে আপনাকে বিচারক হিসাবে মান্য না করে- (সুরা আন-নিসাঃ ৬৫) আয়াতটি সে ব্যাপারেই নাযিল হয়েছিল।
৫৩/১৩. অধ্যায়ঃ পাওনাদারদের মধ্যে এবং ওয়ারিসদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়া এবং এ ব্যাপারে অনুমান করা।
ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, দুই অংশীদার যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে, একজন বাকী আর একজন নগদ নিবে, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর কারো সম্পদ নষ্ট হলে সে তার সাথীর নিকট দাবী করিতে পারবে না।
২৭০৯. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার পিতা মারা গেলেন, আর তার কিছু ঋণ ছিল। আমি তাহাঁর ঋণের বিনিময়ে পাওনাদারদের খেজুর নেয়ার কথা বললাম। তাতে ঋণ পরিশোধ হইবে না বলে তারা তা নিতে অস্বীকার করিল। আমি তখন নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে এ বিষয়ে তাহাঁর নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বলিলেন, খেজুর পেড়ে মাচায় রেখে আল্লাহর রাসুলকে খবর দিও। (অতঃপর) তিনি এলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে আবু বক্র ও উমার (রাদি.) -ও ছিলেন। তিনি তার উপর বসলেন এবং বরকতের দুআ করিলেন। পরে বলিলেন, তোমার পাওনাদারদের ডাক এবং তাদের প্রাপ্য পরিশোধ করে দাও। অতঃপর আমার পিতার পাওনাদারদের কেউ এমন ছিল না যার ঋণ পরিশোধ করিনি। অতঃপরও (আমার কাছে) তের ওয়াসক খেজুর উদ্বৃত্ত রয়ে গেল। সাত ওয়াসক আজওয়া খেজুর আর ছয় ওয়াসক নিম্নমানের খেজুর কিংবা ছয় ওয়াসক আজওয়া ও সাত ওয়াসক নিম্নমানের খেজুর। অতঃপর আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম এবং তাকেঁ ব্যাপারটা বললাম। তিনি হাসলেন এবং বলিলেন, আবু বক্র ও উমারের কাছে যাও এবং দুজনের কাছে খবরটা দাও। তাঁরা বলিলেন, আমরা আগেই জানতাম যে, যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যা করার তা যেহেতু করিয়াছেন, তখন অবশ্য এ রকমই হইবে। হিশাম (রাদি.) ওয়াহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে জাবির (রাদি.) হইতে (বর্ণনায়) আসরের সালাতের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। তবে তিনি আবু বকর (রাদি.)-এর কথা এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –এর হাসার কথা উল্লেখ করেননি। তিনি বর্ণনা করিয়াছেন, [জাবির (রাদি.) বলেছেন] আমার পিতা নিজের উপর ত্রিশ ওয়াসক ঋণ রেখে মারা গিয়েছেন। ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ওয়াহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যবে জাবির (রাদি.) হইতে যুহরের সালাতের কথা বলেছেন।
[১]. এক ওয়াসক প্রায় ছয় মন।
৫৩/১৪. অধ্যায়ঃ ঋণ ও নগদ সম্পদের বিনিময়ে আপোস করা।
২৭১০. কাব ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর যমানায় একবার তিনি ইবনু আবু হাদরাদের কাছে মসজিদে পাওনার তাগাদা করিলেন। এতে উভয়ের গলার আওয়াজ চড়ে গেল। এমনকি রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর ঘরে থেকেই আওয়াজ শুতে পেলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হুজরার পর্দা সরিয়ে তাদের নিকট বেরিয়ে এলেন আর কাব ইবনু মালিক (রাদি.)-কে ডাকলেন এবং বলিলেন, ওহে কাব! কাব (রাদি.) বলিলেন, আমি হাজির হে আল্লাহর রাসুল! রাবী বলেন, তিনি হাতে ইশারা করিলেন, অর্ধেক কমিয়ে দাও। কাব (রাদি.) বলিলেন, তাই করলাম। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (ইবনে আবু হাদরাদকে) বলিলেন, যাও, তার ঋণ পরিশোধ করে দাও।
Leave a Reply