বিনিময় প্রথা – খাদ্যদ্রব্য, সোনা, রৌপ্য, কুকুর বিনিময় ব্যবসা
বিনিময় প্রথা – খাদ্যদ্রব্য, সোনা, রৌপ্য, কুকুর বিনিময় ব্যবসা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৩৪, ক্রয় ও বিক্রয়, অধ্যায়ঃ (৭৪-১১৩)=৪০টি
৩৪/৭৪. অধ্যায়ঃ খেজুরের পরিবর্তে খেজুর বিক্রয় করা
৩৪/৭৫. অধ্যায়ঃ শুকনো আঙ্গুরের পরিবর্তে শুকনো আঙ্গুর এবং খাদ্য দ্রব্যের পরিবর্তে খাদ্য দ্রব্য ক্রয় বিক্রয়।
৩৪/৭৬. অধ্যায়ঃ যবের বদলে যব (বার্লির বদলে বার্লি) বিক্রয় করা।
৩৪/৭৭. অধ্যায়ঃ সোনার পরিবর্তে সোনা বিক্রয় করা।
৩৪/৭৮. অধ্যায়ঃ রৌপ্যের বদলে রৌপ্য বিক্রয় করা।
৩৪/৭৯. অধ্যায়ঃ বাকিতে বা ধারে দীনারের পরিবর্তে দীনার ক্রয়-বিক্রয়।
৩৪/৮০. অধ্যায়ঃ বাকীতে সোনার পরিবর্তে রৌপ্যের ক্রয়-বিক্রয়।
৩৪/৮১. অধ্যায়ঃ রৌপ্যের পরিবর্তে নগদ নগদ সোনা বিক্রয় করার বর্ণনা।
৩৪/৮২. অধ্যায়ঃ মুযাবানা পদ্ধতিতে কেনা-বেচা। অর্থাৎ গাছের খেজুরের বদলে শুকনো খেজুর, রসালো আঙ্গুরের পরিবর্তে শুকনো আঙ্গুর এবং ধারে বিক্রয় করা।
৩৪/৮৩. অধ্যায়ঃ সোনা ও রূপার বদলে গাছের খেজুর ক্রয়-বিক্রয় করা।
৩৪/৮৪. অধ্যায়ঃ আরায়্যা এর ব্যাখ্যা
৩৪/৮৫. অধ্যায়ঃ ব্যবহার উপযোগী হওয়ার আগেই ফল বেচা-কেনার বিবরণ।
৩৪/৮৬. অধ্যায়ঃ খেজুর ব্যবহার উপযোগী হবার আগে তা বিক্রি করা।
৩৪/৮৭. অধ্যায়ঃ ব্যবহার উপযোগী হওয়ার আগে যদি কেউ ফল বিক্রয় করে এবং কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে বিক্রেতাকে সে ক্ষতির দায়িত্ব বহন করিতে হইবে।
৩৪/৮৮. অধ্যায়ঃ নির্দিষ্ট মেয়াদে ধারে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করা।
৩৪/৮৯. অধ্যায়ঃ উৎকৃষ্ট খেজুরের বিনিময়ে নষ্ট খেজুর বিক্রি করিতে চাইলে।
৩৪/৯০. অধ্যায়ঃ স্ত্রী খেজুরের কাদিতে নর খেজুরের রেণু প্রবৃষ্ট করানো হয়েছে এরূপ খেজুর গাছের বিক্রেতা অথবা ফসলসহ জমি বিক্রেতা বা ঠিকা হিসাবে প্রদানকারীর বিবরণ।
৩৪/৯১. অধ্যায়ঃ মাঠের ফসল (যা এখনও কাটা হয়নি) ওজনকৃত খাদ্যের বদলে ফসল বিক্রি করা।
৩৪/৯২. অধ্যায়ঃ মূল শিকড়সহ খেজুর গাছ বিক্রি করা।
৩৪/৯৩. অধ্যায়ঃ কাঁচা ফল ও শস্য বিক্রয় করা
৩৪/৯৪. অধ্যায়ঃ খেজুরের মাথি বিক্রি করা এবং তা খাওয়ার বিবরণ
৩৪/৯৫. অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা, মাপ ও ওজন ইত্যাদি প্রত্যেক শহরে প্রচলিত রসম ও নিয়ম গ্রহণযোগ্য। এ বিষয়ে তাদের নিয়্যত ও প্রসিদ্ধ পন্থাই অবলম্বন করা হইবে।
৩৪/৯৬. অধ্যায়ঃ এক অংশীদার কর্তৃক (তার অংশ) থেকে অপর অংশীদারের কাছে বিক্রি করা
৩৪/৯৭. অধ্যায়ঃ এজমালী জমি, বাড়ি ও অন্যান্য আসবাবপত্র বিক্রি করা
৩৪/৯৮. অধ্যায়ঃ কারো বিনা অনুমতিতে তার জন্য কোন জিনিস ক্রয় করা হলো এবং সে তাতে সমর্থন দান করলো।
৩৪/৯৯. অধ্যায়ঃ মুশরিক ও শত্রু রাষ্ট্রের অধিবাসীদের সাথে বেচা-কেনা
৩৪/১০০. অধ্যায়ঃ শত্রু রাষ্ট্রের নাগরিকের নিকট হইতে কৃতদাস ক্রয় করা, হেবা করা এবং মুক্ত করা
৩৪/১০১. অধ্যায়ঃ প্রক্রিয়াজাত করার পূর্বে মৃত জন্তুর চামড়ার ব্যবহার সম্পর্কে।
৩৪/১০২. অধ্যায়ঃ শূকর হত্যা করা
৩৪/১০৩. অধ্যায়ঃ মৃত জন্তুর চর্বি গলানো জায়েজ নয়। এরুপ চর্বিজাত তেল বিক্রি করাও যাবে না।
৩৪/১০৪. অধ্যায়ঃ প্রাণহীন জিনিসের ছবি বেচা-কেনা এবং এসব ছবির মধ্যে যেগুলো অপছন্দনীয় ও নিষিদ্ধ তার বর্ণনা।
৩৪/১০৫. অধ্যায়ঃ মদের ব্যবসা হারাম
৩৪/১০৬. অধ্যায়ঃ স্বাধীন মানুষ বিক্রয়কারীর গুনাহ
৩৪/১০৭. অধ্যায়ঃ মদীনা হইতে বহিষ্কার ও উচ্ছেদকালে নিজ মালিকানাধীন ভূমি বিক্রয় করে দেয়ার জন্য ইয়াহুদীদের প্রতি নাবী(সাঃআঃ)-এর আদেশ প্রদান।
৩৪/১০৮. অধ্যায়ঃ কৃতদাসীর পরিবর্তে কৃতদাসী এবং জানোয়ারের পরিবর্তে জানোয়ার বাকীতে বিক্রয়।
৩৪/১০৯. অধ্যায়ঃ কৃতদাসীদের বিক্রয় করার বিবরণ।
৩৪/১১০. অধ্যায়ঃ মুদাব্বির [১৭] (মনিবের মৃত্যুর পর যে কৃতদাস আযাদ হইবে) বিক্রির বর্ণনা।
৩৪/১১১. অধ্যায়ঃ ইসতিবরা অর্থাৎ জরায়ু গর্ভমুক্ত কি-না তা অবগত হওয়ার আগে দাসীকে নিয়ে ভ্রমণে বের হওয়া যায় কিনা।
৩৪/১১২. অধ্যায়ঃ মৃত জানোয়ার ও মূর্তি বিক্রি করা।
৩৪/১১৩. অধ্যায়ঃ কুকুরের বিনিময়।
৩৪/৭৪. অধ্যায়ঃ খেজুরের পরিবর্তে খেজুর বিক্রয় করা
২১৭০. উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, হাতে হাতে (নগদ নগদ) ছাড়া গমের বদলে গম বিক্রি করা সুদ, নগদ নগদ ছাড়া যবের বদলে যব বিক্রয় সুদ, নগদ নগদ ব্যতীত খেজুরের বিনিময়ে খেজুর বিক্রয় সুদ।
৩৪/৭৫. অধ্যায়ঃ শুকনো আঙ্গুরের পরিবর্তে শুকনো আঙ্গুর এবং খাদ্য দ্রব্যের পরিবর্তে খাদ্য দ্রব্য ক্রয় বিক্রয়।
২১৭১. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মুযাবানা নিষেধ করিয়াছেন। তিনি (ইবনু উমর) বলেন, মুযাবানা হলো তাজা খেজুর শুকনো খেজুরের বদলে ওজন করে বিক্রি করা এবং কিসমিস তাজা আঙ্গুরের বদলে ওজন করে বিক্রি করা।
২১৭২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) মুযাবানা নিষেধ করিয়াছেন। তিনি বলেন, মুযাবানা হলো- শুকনো খেজুর তাজা খেজুরের বিনিময়ে ওজন করে বিক্রি করা, বেশি হলে তা আমার প্রাপ্য, কম হলে তা পূরণ করা আমার দায়িত্ব।
২১৭৩. See previous Hadith. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাবী বলেন, আমাকে যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) বলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) অনুমান করে আরায়া এর অনুমতি দিয়েছেন।
৩৪/৭৬. অধ্যায়ঃ যবের বদলে যব (বার্লির বদলে বার্লি) বিক্রয় করা।
২১৭৪.মালিক ইবনু আওস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি একশ দীনারের বিনিময়ে সার্ফ এর জন্য লোক সন্ধান করছিলেন। তখন তালহা ইবনু উবাইদুল্লাহ (রাদি.) আমাকে ডাক দিলেন। আমরা বিনিময় দ্রব্যের পরিমাণ নিয়ে আলোচনা করিতে থাকলাম। অবশেষে তিনি আমার সঙ্গে সার্ফ [১২] করিতে রাজী হলেন এবং আমার হইতে স্বর্ণ নিয়ে তার হাতে নাড়া-চাড়া করিতে করিতে বলিলেন, আমার খাযাঞ্চী গাবা (নামক স্থান) হইতে আসা পর্যন্ত (আমার জিনিস পেতে) দেরী করিতে হইবে। ঐ সময়ে উমর (রাদি.) আমাদের কথা-বার্তা শুনছিলেন। তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম! তার জিনিস গ্রহণ না করা পর্যন্ত তুমি তার হইতে বিচ্ছিন্ন হইতে পারবে না।
কারণ, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, নগদ নগদ না হলে স্বর্ণের বদলে স্বর্ণের বিক্রয় (সুদ) হইবে। নগদ নগদ ছাড়া গমের বদলে গমের বিক্রয় সুদ হইবে। নগদ নগদ ছাড়া যবের বদলে যবের বিক্রয় রিবা হইবে। নগদ নগদ না হলে খেজুরের বদলে খেজুরের বিক্রয় সুদ হইবে।
[১২] স্বর্ণ-রৌপ্যের পারস্পরিক ক্রয়-বিক্রয়কে সার্ফ বলে।
৩৪/৭৭. অধ্যায়ঃ সোনার পরিবর্তে সোনা বিক্রয় করা।
২১৭৫.আবু বাক্র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, সমান সমান ছাড়া তোমরা সোনার বদলে সোনা বিক্রয় করিবে না। অনুরূপ রূপার বদলে রূপা সমান সমান ছাড়া (বিক্রি করিবে না)। রূপার বদলে সোনা এবং সোনার বদলে রূপা যেভাবে ইচ্ছে, কেনা বেচা করিতে পার।
৩৪/৭৮. অধ্যায়ঃ রৌপ্যের বদলে রৌপ্য বিক্রয় করা।
২১৭৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে (আবু বাকরার হাদীসের) অনুরূপ একটি হাদীস তাহাঁর কাছে বর্ণনা করেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) তাহাঁর (আবু সাঈদ (রাদি.) – এর) সঙ্গে দেখা করে বলিলেন, হে আবু সাঈদ! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে আপনি কী হাদীস বর্ণনা করে থাকেন? আবু সাঈদ (রাদি.) সার্ফ (মুদ্রার বিনিময়) সম্পর্কে বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি যে, সোনার বদলে সোনা বিক্রয় সমান পরিমাণ হইতে হইবে। রূপার বদলে রূপার বিক্রয় সমান হইতে হইবে।
২১৭৭. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, সমান পরিমাণ ছাড়া তোমারা সোনার বদলে সোনা বিক্রি করিবে না, একটি অপরটি হইতে কম-বেশী করিবে না। সমান ছাড়া তোমরা রূপার বদলে রূপা বিক্রি করিবে না ও একটি অপরটি হইতে কম-বেশী করিবে না। আর নগদ মুদ্রার বিনিময়ে বাকী মুদ্রা বিক্রি করিবে না।
৩৪/৭৯. অধ্যায়ঃ বাকিতে বা ধারে দীনারের পরিবর্তে দীনার ক্রয়-বিক্রয়।
২১৭৮. আবু সালিহ যায়য়্যাত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.)- বলিতে শুনলাম, দীনারের বদলে দীনার এবং দিরহামের বদলে দিরহাম (সমান সমান বিক্রি করিবে)। এতে আমি তাঁকে বললাম, ইবনু আব্বাস (রাদি.) তো তা বলেন না? উত্তরে আবু সাঈদ (রাদি.) বলেন, আমি তাঁকে (ইবনু আব্বাসকে) জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, আপনি তা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট হইতে শুনেছেন না আল্লাহর কিতাবে পেয়েছেন? তিনি বলিলেন, এর কোনটি বলি নি। আপনারাই তো আমার চেয়ে নাবী (সাঃআঃ) সম্পর্কে বেশী জানেন। আবশ্য আমাকে উসামা [ইবনু যায়দ (রাদি.)] জানিয়েছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, বাকী বিক্রয় ব্যতীত রিবা হয় না। আবু আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি সুলায়মান ইবনু হার্ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে বলিতে শুনিয়াছি, বাকী বিক্রয় ব্যতীত রিবা হয় না, এ কথার অর্থ আমাদের মতে এই যে, সোনা-রূপার বিনিময়ে, গম যবের বিনিময়ে কম-বেশী বেচা-কেনা করাতে দোষের কিছু নেই যদি নগদ হয়, কিন্তু বাকী বেচা-কেনাতে কোন কল্যাণ নেই।
২১৭৯. আবু সালিহ যায়য়্যাত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.)- বলিতে শুনলাম, দীনারের বদলে দীনার এবং দিরহামের বদলে দিরহাম (সমান সমান বিক্রি করিবে)। এতে আমি তাঁকে বললাম, ইবনু আব্বাস (রাদি.) তো তা বলেন না? উত্তরে আবু সাঈদ (রাদি.) বলেন, আমি তাঁকে (ইবনু আব্বাসকে) জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, আপনি তা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট হইতে শুনেছেন না আল্লাহর কিতাবে পেয়েছেন? তিনি বলিলেন, এর কোনটি বলি নি। আপনারাই তো আমার চেয়ে নাবী (সাঃআঃ) সম্পর্কে বেশী জানেন। আবশ্য আমাকে উসামা [ইবনু যায়দ (রাদি.)] জানিয়েছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, বাকী বিক্রয় ব্যতীত রিবা হয় না। আবু আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি সুলায়মান ইবনু হার্ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে বলিতে শুনিয়াছি, বাকী বিক্রয় ব্যতীত রিবা হয় না, এ কথার অর্থ আমাদের মতে এই যে, সোনা-রূপার বিনিময়ে, গম যবের বিনিময়ে কম-বেশী বেচা-কেনা করাতে দোষের কিছু নেই যদি নগদ হয়, কিন্তু বাকী বেচা-কেনাতে কোন কল্যাণ নেই।
৩৪/৮০. অধ্যায়ঃ বাকীতে সোনার পরিবর্তে রৌপ্যের ক্রয়-বিক্রয়।
২১৮০. আবু মিনহাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বারা ইবনু আযিব ও যায়দ ইবনু আরকাম (রাদি.)-কে সার্ফ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম। তাঁরা উভয়ে (একে অপরের সম্পর্কে) বলিলেন, ইনি আমার চেয়ে উত্তম। এরপর উভয়েই বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বাকীতে রূপার বিনিময়ে সোনা কেনা বেচা করিতে বারণ করিয়াছেন।
২১৮১. আবু মিনহাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বারা ইবনু আযিব ও যায়দ ইবনু আরকাম (রাদি.)-কে সার্ফ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম। তাঁরা উভয়ে (একে অপরের সম্পর্কে) বলিলেন, ইনি আমার চেয়ে উত্তম। এরপর উভয়েই বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বাকীতে রূপার বিনিময়ে সোনা কেনা বেচা করিতে বারণ করিয়াছেন।
৩৪/৮১. অধ্যায়ঃ রৌপ্যের পরিবর্তে নগদ নগদ সোনা বিক্রয় করার বর্ণনা।
২১৮২. আবু বাকরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী(রাদি.) সমান সমান ছাড়া রূপার বদলে রূপার ক্রয়-বিক্রয় এবং সোনার বদলে সোনার ক্রয়-বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন এবং তিনি রূপার বিনিময়ে সোনার বিক্রয়ে এবং সোনার বিনিময়ে রূপার বিক্রয়ে আমাদের ইচ্ছা অনু্যায়ী অনুমতি দিয়েছেন।
৩৪/৮২. অধ্যায়ঃ মুযাবানা পদ্ধতিতে কেনা-বেচা। অর্থাৎ গাছের খেজুরের বদলে শুকনো খেজুর, রসালো আঙ্গুরের পরিবর্তে শুকনো আঙ্গুর এবং ধারে বিক্রয় করা।
আনাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মুযাবানা ও মুহাকালা হইতে নিষেধ করিয়াছেন।
২১৮৩. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, উপযোগিতা প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত তোমরা ফল বিক্রি করিবে না এবং শুকনো খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর বিক্রি করিবে না।
২১৮৪. সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
রাবী সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবদুল্লাহ (রাদি.) যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) সূত্রে আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর পরে তাজা বা শুকনো খেজুরের বিনিময়ে আরিয়্যা বিক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন। আরিয়্যা ব্যতীত অন্য কিছুতে এরূপ বিক্রির অনুমতি প্রদান করেন নি।
২১৮৫. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মুযাবানা হইতে নিষেধ করিয়াছেন। মুযাবানার অর্থ হল মেপে শুকনো খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর এবং মেপে কিসমিসের বিনিময়ে আঙ্গুর ক্রয় করা।
২১৮৬. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মুযাবানা ও মুহাকালা বারণ করিয়াছেন। মুযাবানার অর্থ- শুকনো খেজুরের বিনিময়ে গাছের মাথায় অবস্থিত তাজা খেজুর ক্রয় করা।
২১৮৭. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মুহাকালা ও মুযাবানা নিষেধ করিয়াছেন।
২১৮৮. যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আরিয়্যা এর মালিককে তা অনুমানে বিক্রি করার অনুমতি প্রদান করিয়াছেন।
৩৪/৮৩. অধ্যায়ঃ সোনা ও রূপার বদলে গাছের খেজুর ক্রয়-বিক্রয় করা।
২১৮৯. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) উপযোগী হওয়ার আগে ফল বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন। (এবং এ-ও বলেছেন যে,) এর কিছুই দীনার ও দিরহাম এর বিনিময় ব্যতীত বিক্রি করা যাবে না, তবে আরায়্যার হুকুম এর ব্যতিক্রম।
২১৯০. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওহহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আমি মালিকের কাছে শুনিয়াছি, উবায়দুল্লাহ ইবনু রাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, আবু সুফিয়ান (রাদি.) সূত্রে আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে দাঊদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এই হাদীস কি আপনার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) পাঁচ ওসাক অথবা পাঁচ ওসাকের কম পরিমাণে আরিয়্যা বিক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।
২১৯১. সাহল ইবনু আবু হাসমা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) শুকনো খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর বিক্রি করিতে বারণ করিয়াছেন এবং আরিয়্যা-এর ক্ষেত্রে অনুমতি প্রদান করিয়াছেন। তা হল তাজা ফল অনুমানে বিক্রি করা, যাতে (ক্রেতা) তাজা খেজুর খাওয়ার সুযোগ লাভ করিতে পারে। রাবী সুফইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আর একবার এভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, অবশ্য তিনি [আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)] আরিয়্যা এর ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়েছেন যে, ফলের মালিক অনুমানে তাজা খেজুর বিক্রয় করে, যাতে তারা (ক্রেতাগণ) তাজা খেজুর খেতে পারে। রাবী বলেন, এ কথা পূর্বের কথা একই এবং সুফইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি তরুণ বয়সে (আমার উস্তাদ) ইয়াহইয়া [ইবনু সাইদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)]-কে বললাম, মক্কাবাসীগণ তো বলে, নাবী (সাঃআঃ) আরায়্যা-এর ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন। তিনি বলিলেন, মক্কাবাসীদের তা কিসে অবহিত করিল? আমি বললাম, তারা জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণনা করে থাকেন। এতে তিনি নীরব হয়ে গেলেন। সুফইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার কথার মর্ম এই ছিল যে, জাবির (রাদি.) মাদীনাহবাসী। সুফইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করা হল, এ হাদীসে এ কথাটুকু নাই যে, উপযোগিতা প্রকাশের পূর্বে ফল বিক্রি নিষিদ্ধ করিয়াছেন। তিনি বলেন, না।
৩৪/৮৪. অধ্যায়ঃ আরায়্যা এর ব্যাখ্যা
(ইমাম) মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আরায়্যা এর অর্থ- কোন একজন কর্তৃক কাউকে খেজুর গাছ (তার ফল খাওয়ার জন্য) দান করা। পরে ঐ ব্যক্তির বাগানে প্রবেশের কারণে সে বিরক্তি বোধ করে, ফলে তাকে অনুমতি দেয়া হয় যে, সে শুকনো ফলের বিনিময়ে গাছগুলো (এর ফল) ঐ ব্যক্তির নিকট হইতে ক্রয় করে নিবে। মুহাম্মাদ ইবনু ইদরীস [ইমাম শাফিঈ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, শুকনো খেজুর এর বিক্রি নগদ নগদ এবং মাপের মাধ্যমে হইবে, অনুমান করে হইবে না। (ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইমাম শফিঈ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর মতের সমর্থন পাওয়া যায় সাহাল ইবনু হাসমা (রাদি.)-এর এ কথা থেকে “সুনির্দিষ্ট মাপের মাধ্যমে”। নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সূত্রে ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, মালিক কর্তৃক তার বাগান হইতে একটি বা দুটি খেজুর গাছ দান করাকে আরাইয়া বলা হয়। সুফিয়ান ইবনু হুসাইন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইয়াযীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করেন যে, আরাইয়া হলো কিছু সংখ্যক খেজুর গাছ গরীব মিসকীনদের দান করা হত, কিন্তু তারা খেজুর পাকা পর্যন্ত অপেক্ষা করিতে পারত না বিধায় তাদের অনুমতি দেয়া হত যে, তারা যে পরিমাণ খেজুরের ইচ্ছা, তা বিক্রি করে দিবে।
২১৯২. যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আরাইয়ার ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন যে, ওজনকৃত খেজুরের বিনিময়ে গাছের অনুমানকৃত খেজুর বিক্রি করা যেতে পারে। মূসা ইবনু উকবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আরাইয়া বলা হয়, বাগানে এসে কতগুলো নির্দিষ্ট গাছের খেজুর (শুকনা খেজুরের বদলে) ক্রয় করে নেয়া।
৩৪/৮৫. অধ্যায়ঃ ব্যবহার উপযোগী হওয়ার আগেই ফল বেচা-কেনার বিবরণ।
২১৯৩. লাইস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যাইদ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সময়ে লোকেরা (গাছের) ফলের বেচা-কেনা করত। আবার যখন লোকদের ফল পাড়ার এবং তাদের মূল্য দেয়ার সময় হত, তখন ক্রেতা ফলে পোকা ধরেছে, নষ্ট হয়ে গিয়েছে, শুকিয়ে গিয়েছে এসব অনিষ্টকারী আপদের কথা উল্লেখ করে ঝগড়া করত। তখন এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকটে অনেক অভিযোগ পেশ হইতে লাগল, তখন তিনি বলিলেন, তোমরা যদি এ ধরণের বেচা কেনা বাদ দিতে না চাও তবে ফলের উপযোগিতা প্রকাশ পাবার পর তার বেচা কেনা করিবে। অনেক অভিযোগ উত্থাপিত হবার কারণে তিনি এ কথাটি পরামর্শ স্বরূপ বলেছেন। রাবী বলেন, খারিজা ইবনু যায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে বলেছেন যে, যাইদ ইবনু সাবিত (রাদি.) সুরাইয়া তারকা উদিত হবার পর ফলের হলুদ ও লালচে রঙের পূর্ণ প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তাহাঁর বাগানের ফল বিক্রি করিতেন না। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আলী ইবনু বাহর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যায়দ (রাদি.) হইতে এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
২১৯৪. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ফলের উপযোগিতা প্রকাশ হওয়ার আগে তা বিক্রি করিতে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে নিষেধ করিয়াছেন।
২১৯৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) খেজুর ফল পোখতা হওয়ার আগে বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন। আবু আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, অর্থাৎ লালচে হওয়ার আগে।
২১৯৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ফলের রং পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন। রাবী বলেন, অর্থাৎ লালচে বর্ণের বা হলুদ বর্ণের না হওয়া পর্যন্ত এবং তা খাওয়ার যোগ্য না হওয়া পর্যন্ত।
৩৪/৮৬. অধ্যায়ঃ খেজুর ব্যবহার উপযোগী হবার আগে তা বিক্রি করা।
২১৯৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) ফলের উপযোগিতা প্রকাশ হওয়ার আগে তা বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন এবং খেজুরের রং ধরার আগে (বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন)। জিজ্ঞেস করা হল, রং ধরার অর্থ কী? তিনি বলেন, লাল বর্ণ বা হলুদ বর্ণ ধারণ করা। আবু আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, আমি মুআল্লা ইবনু মানসূর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস লিপিবদ্ধ করেছি। কিন্তু এ হাদীস তাহাঁর নিকট হইতে লিখি নি।
৩৪/৮৭. অধ্যায়ঃ ব্যবহার উপযোগী হওয়ার আগে যদি কেউ ফল বিক্রয় করে এবং কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে বিক্রেতাকে সে ক্ষতির দায়িত্ব বহন করিতে হইবে।
২১৯৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রং ধারণ করার আগে ফল বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন। জিজ্ঞেস করা হল, রং ধারণ করার অর্থ কী? তিনি বলিলেন, লাল বর্ণ ধারণ করা। পরে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, দেখ, যদি আল্লাহ তায়ালা ফল ধরা বন্ধ করে দেন, তবে তোমাদের কেউ (বিক্রেতা) কিসের বদলে তার ভাইয়ের মাল (ফলের মূল্য) নিবে?
২১৯৯. ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি যদি ফলের উপযুক্ততা প্রকাশের পূর্বে তা ক্রয় করে, পরে তাতে মড়ক দেখা দেয়, তবে যা নষ্ট হইবে তা মালিকের উপর বর্তাবে। [যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, আমার নিকট সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, উপযোগিতা প্রকাশ হওয়ার পূর্বে তোমরা ফল ক্রয় করিবে না এবং শুকনো খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর বিক্রি করিবে না।
৩৪/৮৮. অধ্যায়ঃ নির্দিষ্ট মেয়াদে ধারে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করা।
২২০০. আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছে বন্ধক রেখে বাকীতে ক্রয় করার ব্যাপারে আলোচনা করলাম। তিনি বলিলেন, এতে কোন দোষ নেই। এরপর তিনি আসওয়াদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) নির্দিষ্ট মেয়াদে (মূল্য বাকী রেখে) জনৈক ইয়াহূদীর নিকট হইতে খাদ্য ক্রয় করেন এবং তাহাঁর বর্ম বন্ধক রাখেন।
৩৪/৮৯. অধ্যায়ঃ উৎকৃষ্ট খেজুরের বিনিময়ে নষ্ট খেজুর বিক্রি করিতে চাইলে।
২২০১. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) ও আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে খায়বারে তহসীলদার নিযুক্ত করেন। সে জানীব নামক (উত্তম) খেজুর নিয়ে উপস্থিত হলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, খায়বারের সব খেজুর কি এ রকমের? সে বলিল, না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসুল! এরূপ নয়, বরং আমরা দু সা এর পরিবর্তে এ ধরণের এক সা খেজুর নিয়ে থাকি এবং তিন সা এর পরিবর্তে এক দু সা। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এরূপ করিবে না। বরং মিশ্রিত খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিরহাম দিয়ে জানীব খেজুর ক্রয় করিবে।
২২০২. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) ও আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে খায়বারে তহসীলদার নিযুক্ত করেন। সে জানীব নামক (উত্তম) খেজুর নিয়ে উপস্থিত হলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, খায়বারের সব খেজুর কি এ রকমের? সে বলিল, না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসুল! এরূপ নয়, বরং আমরা দু সা এর পরিবর্তে এ ধরণের এক সা খেজুর নিয়ে থাকি এবং তিন সা এর পরিবর্তে এক দু সা। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এরূপ করিবে না। বরং মিশ্রিত খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিরহাম দিয়ে জানীব খেজুর ক্রয় করিবে।
৩৪/৯০. অধ্যায়ঃ স্ত্রী খেজুরের কাদিতে নর খেজুরের রেণু প্রবৃষ্ট করানো হয়েছে এরূপ খেজুর গাছের বিক্রেতা অথবা ফসলসহ জমি বিক্রেতা বা ঠিকা হিসাবে প্রদানকারীর বিবরণ।
২২০৩. ইবনু উমর (রাদি.)-এর আযাদকৃত গোলাম নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তাবীরকৃত খেজুর গাছ ফলের উল্লেখ ব্যতীত বিক্রি করলে যে তাবীর [১৩] করেছে সে ফলের মালিক হইবে। তেমনি গোলাম ও জমির ফসলও মালিকেরই থাকবে। রাবী নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এই তিনটিরই উল্লেখ করছেন।
[১৩] অধিক ফলনের আশায় খেজুরের পুং খেজুর স্ত্রী খেজুর গাছের মধ্যে বিশেষ পদ্ধতিতে সংযোগ স্থাপন করাকে তাবীর বলা হয়।
২২০৪. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, কেউ তাবীর করার পরে খেজুর গাছ বিক্রি করলে সে ফলের মালিক থাকবে, অবশ্য ক্রেতা যদি (ফল লাভের) শর্ত করে, তবে সে পাবে।
৩৪/৯১. অধ্যায়ঃ মাঠের ফসল (যা এখনও কাটা হয়নি) ওজনকৃত খাদ্যের বদলে ফসল বিক্রি করা।
২২০৫. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মুযাবানা নিষেধ করিয়াছেন, আর তা হলো বাগানের ফল বিক্রয় করা। খেজুর হলে মেপে শুকনো খেজুরের বদলে, আঙ্গুর হলে মেপে কিসমিসের বদলে, আর ফসল হলে মেপে খাদ্যের বদলে বিক্রি করা। তিনি এসব বিক্রি নিষেধ করিয়াছেন।
৩৪/৯২. অধ্যায়ঃ মূল শিকড়সহ খেজুর গাছ বিক্রি করা।
২২০৬. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি খেজুর গাছে তাবীর করার পরে মূল গাছ বিক্রি করিল, সে গাছের ফল যে তাবীর করেছে তারই থাকবে, অবশ্য ক্রেতা যদি ফলের শর্ত করে (তবে সে পাবে)।
৩৪/৯৩. অধ্যায়ঃ কাঁচা ফল ও শস্য বিক্রয় করা
২২০৭. আনাস ইবন মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মুহাকালা [১৪], মুখাদারা [১৫], মুলামাসা, মুনাবাযা ও মুযাবানা নিষিদ্ধ করিয়াছেন।
[১৪] ওজন বা মাপকৃত ফসলের বদলে শীষে থাকাবস্থায় ফসল বিক্রি করা।
[১৫] কাঁচা ফল শস্য বিক্রি করা।
২২০৮. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) পাকার পূর্বে ফল বিক্রি নিষেধ করিয়াছেন। (রাবী বলেন) আমরা আনাস (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ফল পাকার অর্থ কি? তিনি বলিলেন, লালচে বা হলদে হওয়া। [আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন] বলত, আল্লাহ তাআলা যদি ফল নষ্ট করে দেন, তবে কিসের বদলে তোমার ভাইয়ের মাল গ্রহণ করিবে?
৩৪/৯৪. অধ্যায়ঃ খেজুরের মাথি বিক্রি করা এবং তা খাওয়ার বিবরণ
২২০৯. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে ছিলাম, তিনি সে সময়ে খেজুরের মাথি খাচ্ছিলেন। তখন তিনি বলিলেন, গাছের মধ্যে এমনও গাছ আছে, যা মুমিন ব্যক্তির সদৃশ। আমি বলিতে ইচ্ছা করলাম যে, তা হল খেজুর গাছ। কিন্তু আমি লক্ষ্য করলাম যে, আমি সকলের মাঝে বয়ঃকনিষ্ঠ (তাই লজ্জায় বলি নাই, কেউ উত্তর না দেয়ায়) তিনি বলিলেন, তা খেজুর গাছ।
৩৪/৯৫. অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা, মাপ ও ওজন ইত্যাদি প্রত্যেক শহরে প্রচলিত রসম ও নিয়ম গ্রহণযোগ্য। এ বিষয়ে তাদের নিয়্যত ও প্রসিদ্ধ পন্থাই অবলম্বন করা হইবে।
শুরাইহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁতী সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের মাঝে প্রচলিত নিয়ম-নীতি (তোমাদের কাজ-কারবারে) গ্রহণযোগ্য। আবদুল ওহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আইয়ূব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে মুহাম্মাদ [ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] হইতে বর্ণনা করেনঃ দশ টাকায় কৃত বস্তু এগার টাকায় বিক্রি করিতে কোন দোষ নেই; খরচের জন্য লাভ গ্রহণ করা যায়। নাবী (সাঃআঃ) [আবু সুফিয়ান (রাদি.)]-এর স্ত্রী হিন্দাকে বলেছিলেন, তোমার ও তোমার সন্তানাদির জন্য যা প্রয়োজন, তা বিধিসম্মতভাবে গ্রহণ করিতে পার। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ যে অভাবগ্রস্ত, সে যেন সঙ্গত পরিমাণে ভোগ করে”- (আন-নিসা ৬)। একবার হাসান বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবদুল্লাহ ইবন মিরদাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে গাধা ভাড়া করেন এবং জিজ্ঞেস করেন, ভাড়া কত? ইবন মিরদাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, দুই দানিক। এরপর তিনি এতে আরোহণ করেন। দ্বিতীয়বার এসে তিনি বলেন, গাধাটি আন গাধাটি আন। এরপর তিনি গাধায় আরোহণ করিলেন, কিন্তু কোন ভাড়া ঠিক করিলেন না। পরে অর্ধ দিরহাম (৩ দানিক) পাঠিয়ে দিলেন ( তিনি দয়া করে এক দানিক বেশী দিলেন)।
২২১০. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু তায়বা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে শিঙ্গা লাগালেন। তিনি এক সা খেজুর দিতে বলিলেন এবং তার উপর হইতে দৈনিক আয়কর কমানোর জন্য তার মালিককে আদেশ দিলেন।
২২১১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
মুআবিয়াহ (রাদি.)-এর মা হিন্দা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলেন, আবু সুফিয়ান (রাদি.) একজন কৃপণ ব্যক্তি। এমতাবস্থায় আমি যদি তার মাল হইতে গোপনে কিছু গ্রহণ করি, তাতে কি গুনাহ হইবে? তিনি বলিলেন, তুমি তোমার ও সন্তানদের প্রয়োজন অনুযায়ী ন্যায়ভাবে গ্রহণ করিতে পার।
২২১২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কুরআনের আয়াতঃ “যে অভাবমুক্ত সে যেন নিবৃত্ত থাকে এবং যে অভাবগ্রস্থ সে যেন সঙ্গত পরিমাণে ভোগ করে”- (আন-নিসা ৬)। ইয়াতীমের ঐ অভিভাবক সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়, যে তার তত্ত্বাবধান করে ও তার সম্পত্তির পরিচর্যা করে, সে যদি অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তা হইতে নিয়মমাফিক খেতে পারবে।
৩৪/৯৬. অধ্যায়ঃ এক অংশীদার কর্তৃক (তার অংশ) থেকে অপর অংশীদারের কাছে বিক্রি করা
২২১৩. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যে সম্পত্তির ভাগ বাঁটোয়ারা হয় নি, নাবী (সাঃআঃ) তাতে শুফআ [১৬] এর অধিকার প্রদান করিয়াছেন। যখন সীমানা নির্ধারিত হয়ে যায় এবং রাস্তা ভিন্ন করা হয়, তখন আর শুফআ এর অধিকার থাকবে না।
[১৬] যৌথ মালিকানা বা প্রতিবেশী হওয়ার কারণে জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তা লাভ করার অগ্রাধিকারকে শুফআ বলে।
৩৪/৯৭. অধ্যায়ঃ এজমালী জমি, বাড়ি ও অন্যান্য আসবাবপত্র বিক্রি করা
২২১৪. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যে সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা হয় নি, তার মধ্যে শুফআ লাভের ফায়সালা প্রদান করিয়াছেন। তারপর যখন সীমানা নির্ধারিত হয়ে যায় এবং স্বতন্ত্র করা হয় তখন আর শুফআ এর অধিকার থাকবে না। (ই.ফা. ২০৭২)
মুসাদ্দাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) …………আবদুল ওয়াহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে এটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং তিনি বলেছেন, যে সম্পদ ভাগ-বাঁটোয়ারা হয় নি (তাতে শুফআ)। হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মামর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস বর্ণনায় মুসাদ্দাদের অনুসরণ করিয়াছেন। আবদুর রায্যাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, যে সম্পদের ভাগ-বাঁটোয়ারা হয় নি, সে সব সম্পদেই (শুফআ রয়েছে)। হাদীসটি আবদুর রহমান ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।
(২২১৩) (আ.প্র. ২০৫৭, ই.ফা. ২০৭৩)
৩৪/৯৮. অধ্যায়ঃ কারো বিনা অনুমতিতে তার জন্য কোন জিনিস ক্রয় করা হলো এবং সে তাতে সমর্থন দান করলো।
২২১৫. ইবনু উমর (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা তিন ব্যক্তি হেঁটে চলছিল। এমন সময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে তারা এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করে। হঠাৎ একটি পাথর গড়িয়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ করে দেয়। তাদের একজন আরেকজনকে বলিল; তোমরা যে সব আমল করেছ, তার মধ্যে উত্তম আমলের ওয়াসীলা করে আল্লাহর কাছে দুআ কর। তাদের যে একজন বলিল আল্লাহ! আমার অতিবৃদ্ধ পিতামাতা ছিলেন, আমি (প্রত্যহ সকালে) মেষ চরাতে বের হতাম। তারপর ফিরে এসে দুধ দোহন করতাম এবং এ দুধ নিয়ে আমার পিতা-মাতার নিকট উপস্থিত হতাম ও তারা তা পান করিতেন। তারপরে আমি শিশুদের, পরিজনদের এবং স্ত্রীকে পান করিতে দিতাম। একরাত্রে আমি আটকা পরে যাই। তারপর আমি যখন এলাম তখন তারা দুজনে ঘুমিয়ে পড়েছেন। সে বলিল, আমি তাদের জাগানো পছন্দ করলাম না। আর তখন শিশুরা আমার পায়ের কাছে (ক্ষুধায়) চীৎকার করছিল। এ অবস্থায়ই আমার এবং পিতা-মাতার ফজর হয়ে গেল। ইয়া আল্লাহ! তুমি যদি জান তা আমি শুধুমাত্র তোমার সন্তুষ্ট লাভের আশায় করেছিলাম তা হলে তুমি আমাদের গুহার মুখ এতটুকু ফাঁক করে দাও, যাতে আমরা আকাশ দেখিতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন একটু ফাঁকা হয়ে গেল। আরেকজন বলিল, ইয়া আল্লাহ! তুমি জান যে, আমি আমার এক চাচাতো বোনকে এত ভালবাসতাম, যা একজন পুরুষ নারীকে ভালবেসে থাকে। সে বলিল, তুমি আমার হইতে সে মনস্কামনা সিদ্ধ করিতে পারবে না, যতক্ষণ আমাকে একশত দীনার না দেবে। আমি চেষ্টা করে তা সংগ্রহ করি। তারপর আমি যখন তার পদদ্বয়ের মাঝে উপবেশন করি, তখন সে বলে “আল্লাহকে ভয় কর”। বৈধ অধিকার ছাড়া মাহরকৃত বস্তুর সীল ভাঙবে না। এতে আমি তাকে ছেড়ে উঠে পড়ি। (হে আল্লাহ) তুমি যদি জান আমি তা তোমারই সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করেছি, তবে আমাদের হইতে আরো একটু ফাঁক করে দাও। তখন তাদের হইতে (গুহার মুখের) দুই-তৃতীয়াংশ ফাঁক হয়ে গেল। অপরজন বলিল, হে আল্লাহ! তুমি জান যে, এক ফারাক (পরিমাণ) শস্য দানার বিনিময়ে আমি একজন মজুর রেখেছিলাম। আমি তাকে তা দিতে গেলে সে তা গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিল। তারপর আমি সে এর ফারাক শস্য দানা দিয়ে চাষ করে ফসল উৎপন্ন করি এবং তা দিয়ে গরু ক্রয় করি এবং রাখাল নিযুক্ত করি। কিছুকাল পরে সে মজুর এসে বলিল, হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে আমার পাওনা দাও। আমি বললাম এই গরুগুলো ও রাখাল নিয়ে যাও। সে বলিল, তুমি কি আমার সাথে উপহাস করছ? আমি বললাম, আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না বরং এসব তোমার। হে আল্লাহ! তুমি যদি জান আমি তা তোমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করেছি, তবে আমাদের হইতে (গুহার মুখ) উন্মুক্ত করে দাও। তখন তাদের হইতে গুহার মুখ উন্মুক্ত হয়ে গেল।
৩৪/৯৯. অধ্যায়ঃ মুশরিক ও শত্রু রাষ্ট্রের অধিবাসীদের সাথে বেচা-কেনা
২২১৬. আবদুর রহমান ইবনু আবু বাক্র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে ছিলাম। সে সময় এলোমেলো লম্বা লম্বা চুল বিশিষ্ট এক মুশরিক ব্যক্তি তার বকরী হাঁকিয়ে উপস্থিত হলো। নাবী (সাঃআঃ) তাকে বলিলেন, এটা কি বিক্রির জন্য, না দান হিসেবে, অথবা তিনি বলিলেন, না হেবা হিসেবে? সে বলিল, বিক্রির জন্য। তখন তিনি তার নিকট হইতে একটি বকরী কিনে নিলেন।
৩৪/১০০. অধ্যায়ঃ শত্রু রাষ্ট্রের নাগরিকের নিকট হইতে কৃতদাস ক্রয় করা, হেবা করা এবং মুক্ত করা
নাবী (সাঃআঃ) সালমান [ফারসী (রাদি.)-কে বলেন, (তোমার মনিবের সঙ্গে) মুক্তির জন্য চুক্তি কর। সালমান (রাদি.) আসলে স্বাধীন ছিলেন, লোকেরা তাকে অন্যায়ভাবে দাস বানিয়ে বিক্রি করে দেয়। আম্মার, সুহাইব ও বিলাল (রাদি.)-কে বন্দী করে দাস বানানো হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হইতে এমন কিছু দেয় না, যাতে ওরা এ বিষয় তাদের সমান হয়ে যায়, তবে কি ওরা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে?”
(আন-নাহালঃ ৭১)
২২১৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) সারাকে সঙ্গে নিয়ে হিজরত করিলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করিলেন, যেখানে এক বাদশাহ ছিল, অথবা বলিলেন, এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হলো যে, ইবরাহীম (নামক এক ব্যক্তি) এক পরমা সুন্দরী নারীকে নিয়ে (আমাদের এখানে) প্রবেশ করেছে। সে তখন তার নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করিল, হে ইবরাহীম, তোমার সঙ্গে এ নারী কে? তিনি বলিলেন, আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট ফিরে এসে বলিলেন, তুমি আমার কথা মিথ্যা মনে করো না। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। আল্লাহর শপথ! দুনিয়াতে (এখন) তুমি আর আমি ব্যতীত আর কেউ মুমিন নেই। সুতরাং আমি আর তুমি দ্বীনী ভাই বোন। এরপর ইবরাহীম (আঃ) (বাদশাহর নির্দেশে) সারাকে বাদশাহর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ তাহাঁর দিকে অগ্রসর হল। সারা উযূ করে করে সালাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দুআ করিলেন, হে আল্লাহ ! আমিও তোমার উপর এবং তোমার রসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ব্যতীত সকল হইতে আমার লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করেছি। তুমি এই কাফিরকে আমার উপর ক্ষমতা দিও না। তখন বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করিতে লাগলো। তখন সারা বলিলেন, আয় আল্লাহ! এ যদি মারা যায় তবে লোকে বলবে, স্ত্রীলোকটি একে হত্যা করেছে। তখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেল। এভাবে দুবার বা তিনবারের পর বাদশাহ বলিল, আল্লাহর শপথ! তোমরা তো আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের নিকট ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য হাজেরাকে হাদিয়া স্বরূপ দান কর। সারাহ ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বলিলেন, আপনি জানেন কি, আল্লাহ তাআলা কাফিরকে লজ্জিত ও নিরাশ করিয়াছেন এবং সে এক বাঁদী হাদিয়া হিসেবে দিয়েছেন।
২২১৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস ও আবদ ইবনু যামআ উভয়ে এক বালকের ব্যাপারে বিতর্ক করেন। সাদ (রাদি.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এতো আমার ভাই উতবা উবনু আবী ওয়াক্কাসের পুত্র। সে তার পুত্র হিসেবে আমাকে ওয়াসিয়্যত করে গেছে। আপনি ওর সাদৃশ্যের প্রতি লক্ষ্য করুন। আবদ ইবনু যামআ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ আমার ভাই, আমার পিতার দাসীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করে। তখন রাসুল তার চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখিতে পেলেন যে, উতবার সাথে তার পরিষ্কার সাদৃশ্য রয়েছে। তিনি বলিলেন, এ ছেলেটি তুমি পাবে, হে আবদ ইবনু যামআ! বিছানা যার, সন্তান তার। ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে বঞ্চনা। হে সাওদাহ বিনতু যামআ! তুমি এর হইতে পর্দা কর। ফলে সাওদাহ (রাদি.) কখনও তাকে দেখেন নি।
২২১৯. আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি সুহাইব (রাদি.)-কে বলেন, আল্লাহকে ভয় কর। তুমি নিজ পিতা ছাড়া অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবী করো না। এর উত্তরে সুহাইব (রাদি.) বলেন, আমি এতে আনন্দবোধ করব না যে, এত এত সম্পদ হোক আর আমি আমার পিতৃত্বের দাবী অন্যের প্রতি আরোপ করি, বরং (আসল ব্যাপার) আমাকে শৈশবে চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
২২২০. হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বলুন আমি জাহিলিয়্যাত যুগে দান, খায়রাত, গোলাম আযাদ ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার ইত্যাদি যে সব নেকীর কাজ করেছি, এতে কি আমি সাওয়াব পাব? হাকীম (রাদি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, অতীতের সৎকর্মসহ তুমি ইসলাম গ্রহণ করেছ অর্থাৎ তুমি যে সব নেকি করেছ, তার সম্পূর্ণ পুণ্য অর্জন করিবে।
৩৪/১০১. অধ্যায়ঃ প্রক্রিয়াজাত করার পূর্বে মৃত জন্তুর চামড়ার ব্যবহার সম্পর্কে।
২২২১. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (একবার) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এক মৃত বকরীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বলিলেন, তোমরা এর চামড়া কাজে লাগাও না কেন? তারা বলিলেন, এতো মৃত। তিনি বলিলেন, শুধু তার গোশত খাওয়া হারাম করা হয়েছে।
৩৪/১০২. অধ্যায়ঃ শূকর হত্যা করা
জাবির (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) শূকর বিক্রয় হারাম করিয়াছেন।
২২২২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, শপথ সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ। অচিরেই তোমাদের মাঝে ন্যায় বিচারকরূপে মারইয়ামের পুত্র [ঈসা (আঃ)] অবতরণ করবেন। তারপর তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন, জিয্য়া রহিত করবেন এবং ধন-সম্পদের এরূপ প্রাচুর্য হইবে যে, কেউ তা গ্রহণ করিবে না।
৩৪/১০৩. অধ্যায়ঃ মৃত জন্তুর চর্বি গলানো জায়েজ নয়। এরুপ চর্বিজাত তেল বিক্রি করাও যাবে না।
জাবির (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।
২২২৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনু খাত্তাব (রাদি.)-এর নিকট সংবাদ পৌঁছাল যে, অমুক ব্যক্তি শরাব বিক্রি করেছে। তিনি বলিলেন আল্লাহ তাআলা অমুকের বিনাশ করুন। সে কি জানে না যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ইয়াহুদীদের সর্বনাশ করুন, তাদের জন্য চর্বি হারাম করা হয়েছিল; কিন্তু তারা তা গলিয়ে বিক্রি করে।
২২২৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ইয়াহূদীদের বিনাশ করুন। তাদের জন্য চর্বি হারাম করা হয়েছে। তারা তা (গলিয়ে) বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করে।
আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন ….. এর অর্থ আল্লাহ তাদের বিনাশ করুন …. অর্থ বিনাশ করা গেল ….. এর অর্থ মিথ্যাবাদী।
৩৪/১০৪. অধ্যায়ঃ প্রাণহীন জিনিসের ছবি বেচা-কেনা এবং এসব ছবির মধ্যে যেগুলো অপছন্দনীয় ও নিষিদ্ধ তার বর্ণনা।
২২২৫. সাঈদ ইবনু আবুল হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, এমন সময়ে তাহাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলিল, হে আবু আব্বাস! আমি এমন ব্যক্তি যে, আমার জীবিকা হস্তশিল্পে। আমি এসব ছবি তৈরি করি। ইবনু আব্বাস (রাদি.) তাঁকে বলেন, (এ বিষয়ে) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে আমি যা বলিতে শুনিয়াছি, তাই তোমাকে শোনাব। তাঁকে আমি বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি কোন ছবি তৈরী করে আল্লাহ তাআলা তাকে শাস্তি দিবেন, যতক্ষণ না সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করে। আর সে তাতে কখনো প্রাণ সঞ্চার করিতে পারবে না। (এ কথা শুনে) লোকটি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। এতে ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, আক্ষেপ তোমার জন্য, তুমি যদি এই কাজ না-ই ছাড়তে পার, তবে এ গাছপালা এবং যে সকল জিনিসের প্রাণ নেই, তা তৈরী করিতে পার। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সাঈদ (রাদি.) বলেছেন, আমি নযর ইবনু আনাস (রাদি.) হইতে শুনিয়াছি তিনি বলেছেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.) হাদীস বর্ণনা করার সময় আমি তার কাছে ছিলাম। ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আরো বলেন, সাঈদ ইবনু আবু আরুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) একমাত্র এ হাদীসটি নযর ইবনু আনাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে শুনেছেন।
৩৪/১০৫. অধ্যায়ঃ মদের ব্যবসা হারাম
জাবির (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মদ বিক্রয় করা হারাম করিয়াছেন।
২২২৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন সুরা আল-বাকারার শেষ আয়াতগুলো নাযিল হলো, তখন নাবী বের হয়ে বলিলেন, শরাবের ব্যবসা হারাম করা হয়েছে।
৩৪/১০৬. অধ্যায়ঃ স্বাধীন মানুষ বিক্রয়কারীর গুনাহ
২২২৭আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করিয়াছেন যে, কিয়ামতের দিবসে আমি নিজে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব। এক ব্যক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করিল। আরেক ব্যক্তি, যে কোন আযাদ মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করিল। আর এক ব্যক্তি, যে কোন মজুর নিয়োগ করে তার হইতে পুরো কাজ আদায় করে এবং তার পারিশ্রমিক দেয় না।
৩৪/১০৭. অধ্যায়ঃ মদীনা হইতে বহিষ্কার ও উচ্ছেদকালে নিজ মালিকানাধীন ভূমি বিক্রয় করে দেয়ার জন্য ইয়াহুদীদের প্রতি নাবী(সাঃআঃ)-এর আদেশ প্রদান।
আল মাকবূরী আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে এ সংক্রান্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
৩৪/১০৮. অধ্যায়ঃ কৃতদাসীর পরিবর্তে কৃতদাসী এবং জানোয়ারের পরিবর্তে জানোয়ার বাকীতে বিক্রয়।
ইবনু উমর (রাদি.) চারটি উটের বিনিময়ে প্রাপ্য একটি আরোহণযোগ্য উট এই শর্তে ক্রয় করেন যে, মালিক তা রাবাযা নামক স্থানে হস্তান্তর করিবে। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, অনেক সময় একটি উট দুটি উট অপেক্ষা উত্তম হয়। রাফি ইবনু খাদীজ (রাদি.) দুটি উটের বিনিময়ে একটি উট ক্রয় করে দুটি উটের একটি (তখনই) দিলেন আর বলিলেন, আর একটি উট ইনশা-আল্লাহ আগামীকাল যথারীতি দিয়ে দিব। ইবনু মুসাইয়্যিব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, জানোয়ারের মধ্যে কোন রিবা হয় না। দুউটের বিনিময়ে এক উট, দুবকরীর বিনিময়ে এক বকরী বাকীতে বিক্রয় করলে সুদ হয় না। ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)বলেন, দুউটের বিনিময়ে এক উট এবং এক দিরহামের বিনিময়ে এক দিরহাম বাকী বিক্রি করাতে কোন দোষ নেই।
২২২৮. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাফিয়্যাহ (রাদি.) বন্দীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তিনি দিহয়া কালবী (রাদি.)-এর ভাগে পড়েন, এর পরে তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর অধীনে এসে যান।
৩৪/১০৯. অধ্যায়ঃ কৃতদাসীদের বিক্রয় করার বিবরণ।
২২২৯. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একদা তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন, তখন তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা বন্দী দাসীর সাথে সঙ্গত হই। কিন্তু আমরা তাদের (বিক্রয় করে) মূল্য হাসিল করিতে চাই। এমতাবস্থায় আযল- (নিরুদ্ধ সঙ্গম করা) সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বলিলেন, আর তোমরা কি এরূপ করে থাক! তোমরা যদি তা (আযল) না কর তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কারণ আল্লাহ তাআলা যে সন্তান জন্ম হওয়ার ফায়সালা করে রেখেছেন, তা অবশ্যই জন্ম নিবে।
৩৪/১১০. অধ্যায়ঃ মুদাব্বির [১৭] (মনিবের মৃত্যুর পর যে কৃতদাস আযাদ হইবে) বিক্রির বর্ণনা।
[১৭] “আমার মৃত্যুর পরে তুমি আযাদ”, মালিক যদি দাস-দাসীকে এরূপ বলে তবে তাকে মুদাব্বির বলা হয়।
২২৩০.জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মুদাব্বার গোলাম বিক্রি করিয়াছেন।
২২৩১. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মুদাব্বার বিক্রি করিয়াছেন।
২২৩২. যায়দ ইবনু খালিদ ও আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে অবিবাহিত ব্যভিচারিণী দাসী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁকে বলিতে শুনেছেন যে, ব্যভিচারিণীকে বেত্রাঘাত কর। সে আবার ব্যভিচার করলে আবার বেত্রাঘাত কর। এরপর তাকে বিক্রি করে দাও তৃতীয় বা চতুর্থবারের পরে।
২২৩৩. যায়দ ইবনু খালিদ ও আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে অবিবাহিত ব্যভিচারিণী দাসী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁকে বলিতে শুনেছেন যে, ব্যভিচারিণীকে বেত্রাঘাত কর। সে আবার ব্যভিচার করলে আবার বেত্রাঘাত কর। এরপর তাকে বিক্রি করে দাও তৃতীয় বা চতুর্থবারের পরে।
২২৩৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি, তোমাদের কোন দাসী ব্যভিচার করলে এবং তার ব্যভিচার প্রমাণিত হলে তাকে হদ স্বরূপ বেত্রাঘাত করিবে এবং তাকে ভর্ৎসনা করিবে না। এরপর যদি সে আবার ব্যভিচার করে তাকে হদ হিসাবে বেত্রাঘাত করিবে কিন্তু তাকে ভর্ৎসনা করিবে না। তারপর যদি সে তৃতীয়বার ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার প্রমাণিত হয় তবে তাকে বিক্রি করে দেবে, যদিও তা চুলের রশির (তুচ্ছ মূল্যের) বিনিময়ে হয়।
৩৪/১১১. অধ্যায়ঃ ইসতিবরা অর্থাৎ জরায়ু গর্ভমুক্ত কি-না তা অবগত হওয়ার আগে দাসীকে নিয়ে ভ্রমণে বের হওয়া যায় কিনা।
হাসান (বাসরী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাকে চুম্বন করা বা তার সাথে মিলামিশা করায় কোন দোষ মনে করেন না। ইবনু উমর (রাদি.) বলেন, সহবাসকৃত দাসীকে দান বা বিক্রি বা আযাদ করলে এক হায়য পর্যন্ত তার জরায়ু মুক্ত কি-না দেখিতে হইবে। কুমারীর বেলায় ইসতিবরার প্রয়োজন নেই। আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (অপর কর্তৃক) গর্ভবতী নিজ দাসীকে যৌনাঙ্গ ব্যতীত ভোগ করিতে পারবে। আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
“নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত বাঁদী ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হইবে না….”।
(মুমিনূনঃ ৬)
২২৩৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) খায়বার গমন করেন। যখন আল্লাহ তাআলা তাহাঁর দুর্গের বিজয় দান করেন, তখন তাহাঁর সামনে সাফিয়্যাহ (রাদি.) বিনতে হুয়ায়্যি ইবনু আখতাব এর সৌন্দর্যের আলোচনা করা হয়। তাহাঁর স্বামী নিহত হয় এবং তিনি তখন ছিলেন নব-বিবাহিতা। অবশেষে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে নিজের জন্য গ্রহণ করে নেন। তিনি তাঁকে নিয়ে রওনা হন। যখন আমরা সাদ্দা রাওহা নামক স্থানে উপনীত হলাম, তখন সাফিয়্যাহ (রাদি.) পবিত্র হলেন! তখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সঙ্গে মিলিত হন। তারপর চামড়ার ছোট দস্তরখানে হায়েস (খেজুরের ছাতু ও ঘি মিশ্রিত খাদ্য) তৈরী করে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, তোমরা আশেপাশের লোকদের উপস্থিত হওয়ার খবর দিয়ে দাও। এই ছিল সাফিয়্যাহ (রাদি.)-এর বিবাহে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কর্তৃক ওয়ালিমাহ। এরপর আমরা মদীনার উদ্দেশে রওয়ানা হই। আনাস (রাদি.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে দেখিতে পেলাম যে, তাঁকে নিজের আবা দিয়ে ঘেরাও করে দিচ্ছেন। তারপর তিনি তাহাঁর উটের পাশে বসে হাঁটু সোজা করে রাখলেন, পরে সাফিয়্যাহ (রাদি.) তাহাঁর হাঁটুর উপর পা দিয়ে ভর করে আরোহণ করিলেন।
৩৪/১১২. অধ্যায়ঃ মৃত জানোয়ার ও মূর্তি বিক্রি করা।
২২৩৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে,মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় অবস্থানকালে বলিতে শুনেছেনঃ আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রাসুল শরাব, মৃত জন্তু, শূকর ও মূর্তি কেনা-বেচা হারাম করা দিয়েছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! মৃত জন্তুর চর্বি সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তা দিয়ে তো নৌকায় প্রলেপ দেয়া হয় এবং চামড়া তৈলাক্ত করা হয় আর লোকে তা দ্বারা চেরাগ জ্বালিয়ে থাকে। তিনি বলিলেন, না, তাও হারাম। তারপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা ইয়াহূদীদের বিনাশ করুন। আল্লাহ যখন তাদের জন্য মৃতের চর্বি হারাম করে দেন, তখন তারা তা গলিয়ে বিক্রি করে মূল্য ভোগ করে। আবু আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ……আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাবির (রাদি.)-কে (হাদীসটি) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি।
৩৪/১১৩. অধ্যায়ঃ কুকুরের বিনিময়।
২২৩৭. আবু মাসউদ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারের বিনিময় এবং গণকের পারিতোষিক (গ্রহণ করা) হইতে নিষেধ করিয়াছেন।
২২৩৮. আউন ইবনু আবু জুহায়ফাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে দেখেছি যে, তিনি একটি শিঙ্গা লাগানেওয়ালা গোলাম কিনলেন। তিনি তার শিঙ্গা লাগানোর যন্ত্র ভেঙ্গে ফেলতে নির্দেশ দিলে তা ভেঙ্গে ফেলা হল। আমি তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রক্তের মূল্য, কুকুরের মূল্য, দাসীর (ব্যভিচারের মাধ্যমে) উপার্জন করা হইতে বারণ করিয়াছেন। আর তিনি শরীরে উল্কি অঙ্কনকারী ও উল্কি গ্রহণকারী, সুদগ্রহীতা ও সুদদাতার উপর এবং (জীব জানোয়ারের) ছবি অঙ্কনকারীর উপর অভিসম্পাত করিয়াছেন।
Leave a Reply