সফরকারীকে বিদায় দেওয়ার দোআ পড়া ও আবেদন – রিয়াদুস সা.

সফরকারীকে বিদায় দেওয়ার দোআ পড়া ও আবেদন – রিয়াদুস সা.

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَوَصَّىٰ بِهَآ إِبۡرَٰهِ‍ۧمُ بَنِيهِ وَيَعۡقُوبُ يَٰبَنِيَّ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصۡطَفَىٰ لَكُمُ ٱلدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٣٢ أَمۡ كُنتُمۡ شُهَدَآءَ إِذۡ حَضَرَ يَعۡقُوبَ ٱلۡمَوۡتُ إِذۡ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعۡبُدُونَ مِنۢ بَعۡدِيۖ قَالُواْ نَعۡبُدُ إِلَٰهَكَ وَإِلَٰهَ ءَابَآئِكَ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗا وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ ١٣٣ ﴾ [البقرة: ١٣٢،  ١٣٣] 

অর্থাৎ “ইব্রাহীম ও ইয়াকূব এ সম্বন্ধে তাহাদের পুত্রগণকে নির্দেশ দিয়েছিল, হে পুত্রগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য দ্বীনকে [ইসলাম ধর্মকে] মনোনীত করিয়াছেন। সুতরাং আত্মসমর্পণকারী না হয়ে তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করো না। ইয়াকুবের নিকট যখন মৃত্যু এসেছিল তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে? সে যখন নিজ পুত্রগণকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমার [মৃত্যুর] পরে তোমরা কিসের উপাসনা করিবে। তারা তখন বলেছিল, আমরা আপনার উপাস্য ও আপনার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্য, সেই অদ্বিতীয় উপাস্যের উপাসনা করব। আর আমরা তাহাঁর কাছে আত্মসমর্পণকারী।” [সূরা বাক্বারাহ ১৩২-১৩৩ আয়াত]

এ বিষয়ে অনেক হাদীস আছে তন্মধ্যেঃ-

যায়েদ ইবনি আরক্বামের হাদীস যা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর পরিবার পরিজনের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার পরিচ্ছেদে অতীত হয়ে গেছে, তাতে যায়দ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ [একদা] আমাদের মাঝে উঠে ভাষণ দান করিলেন; তিনি আল্লাহর প্রশংসা করিলেন তাহাঁর গুণ বর্ণনা করিলেন এবং উপদেশ ও নসীহত করিলেন ও বলিলেন, ‘‘অতঃপর হে জনমন্ডলী! শোন! আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমার প্রতিপালকের দূত আমার নিকট পৌঁছে যাবে। আর আমি তাহাঁর ডাকে সাড়া দেব। এমতাবস্থায় আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি ভারী [সম্মানিত] বস্তু রেখে যাচ্ছি, প্রথমটি আল্লাহর কিতাব; যাতে হিদায়াত ও আলো নিহিত আছে। অতএব তোমরা আল্লাহর কিতাবকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করো।’’

অতঃপর তিনি আল্লাহর কিতাব [মান্য করার] ব্যাপারে উৎসাহিত করিলেন এবং তার প্রতি অনুপ্রাণিত করিলেন। তারপর তিনি বলিলেন, ‘‘দ্বিতীয় বস্তুটি হচ্ছে আমার পরিবার-পরিজন। আমি তোমাদেরকে আমার ‘আহলে বায়ত’ [পরিবার]এর ব্যাপারে আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। [যেন তাহাদের প্রতি কোন অন্যায় আচরণ করো না।]’’

[মুসলিম ২৪০৮, হাদীসটি পূর্ণরূপে পূর্বে গত হয়েছে।]

১. আবূ সুলায়মান মালেক ইবনি হুওয়াইরিস রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা প্রায় সমবয়স্ক কতিপয় নব যুবক রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট এসে বিশ দিন অবস্থান করলাম। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ অত্যন্ত দয়ালু ও স্নেহপরবশ ছিলেন। তাই তিনি ধারণা করিলেন যে, আমরা আমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাবার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছি। সেহেতু তিনি আমাদেরকে প্রশ্ন করিলেন যে, আমরা আমাদের পরিবারে কাকে ছেড়ে এসেছি? সুতরাং আমরা তাঁকে জানালে তিনি বলিলেন, ‘‘তোমরা তোমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাও এবং তাহাদের মাঝেই বসবাস কর। তাহাদেরকে শিক্ষা দান কর এবং তাহাদেরকে [ভাল কাজের] আদেশ দাও। অমুক নামায অমুক সময়ে পড়। অমুক নামায অমুক সময়ে পড়। সুতরাং যখন নামাযের সময় হবে, তখন তোমাদের মধ্যে কেউ একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করিবে।’’

[বুখারী ও মুসলিম] সহীহুল বুখারী ৬২৮, ৬৩০, ৬৩১, ৬৫৮, ৬৭৭, ৬৮৫, ৮০২, ৮১৯, ৮২৩, ৮২৪, ২৮৪৮, ৬০০৮, ৭২৪৬, মুসলিম ৬৭৪, তিরমিযী ২০৫, ২৮৭, নাসায়ী ৬৩৪, ৬৩৫, ৬৬৯, ৭৮১, ১০৮৫, ১১৫১, ১১৫২, ১১৫৩, আবূ দাউদ ৫৮৯, ৮৪২, ৮৪৩, ৮৪৪, ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ১৫১৭১, ২০০০৬, দারেমী ১২৫৩

বুখারীর বর্ণনায় এরূপ বাড়তিভাবে আছে যে, ‘‘আমাকে তোমরা যেভাবে নামায পড়তে দেখেছ, ঠিক সেইভাবেই নামায পড়।’’

২. উমার ইবনুল খাত্তাব রাঃআঃ হতে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর কাছে উমরাহ করার অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিয়ে বললেনঃ প্রিয় ভাই আমার, তোমার দো‘আর সময় আমাদেরকে যেন ভুলো না। এমন বাক্য তিনি উচ্চারণ করিলেন, যার বিনিময়ে সমস্ত পৃথিবীটা আমার হয়ে গেলেও তা আমার কাছে আনন্দদায়ক হিসাবে [গণ্য] নয়। অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ ভাইয়া! তুমি আমাদেরকেও তোমার দো‘আয় শরীক রেখো। [আবু দাউদ ও তিরমিযি] দুর্বল।

এটিকে আবূ দাঊদ [১৪৯৮] ও তিরমিযী [৩৫৬২] ও [ইবনু মাজাহ ২৮৯৪] বর্ণনা করিয়াছেন আর তিরমিযী বলেছেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ্। এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন ‘‘মিশকাত’’ নং [২২৪৮] ও ‘‘য‘ঈফ আবী দাঊদ’’ নং [২৬৪]। হাদীসটি দুর্বল হওয়ার কারণ এই যে, বর্ণনাকারী আসেম ইবনু ওবাইদুল্লাহ্ দুর্বল। তাকে ইবনু আদী, ইবনু হাজার আসকালানী প্রমুখ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।

৩. সালেম ইবন আব্দুল্লাহ ইবনি উমার হতে বর্ণিত, সফরকারীকে আব্দুল্লাহ ইবনি উমার রাঃআঃ বলিতেন, আমার নিকটবর্তী হও, তোমাকে ঠিক সেইভাবে বিদায় দেব, যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদেরকে বিদায় দিতেন। সুতরাং তিনি বলিতেন,

 أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكَ، وَأمَانَتَكَ، وَخَواتِيمَ عَمَلِكَ

‘আস্তাউদি‘উল্লা-হা দীনাকা অআমা-নাতাকা অখাওয়াতীমা ‘আমালিক।’ অর্থাৎ তোমার দ্বীন, তোমার সততা এবং তোমার কাজের পরিণাম আল্লাহকে সঁপে দিলাম। [তিরমিযী হাসান সহীহ]

তিরমিযী ৩৪৪৩, ৩৪৪২

৪. সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনি য়্যাযীদ খাত্বমী রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যখন কোন সেনাবাহিনীকে বিদায় জানাতেন, তখন এই দো‘আ বলিতেন, ‘আস্তাওদি‘উল্লাহা দ্বীনাকুম অআমানাতাকুম অখাওয়াতীমা আ‘মালিকুম। অর্থাৎ তোমাদের দ্বীন, তোমাদের সততা এবং তোমাদের কর্মসমূহের পরিণাম আল্লাহকে সঁপে দিলাম। [সহীহ হাদীস, আবূ দাঊদ ও অন্যান্য বিশুদ্ধ সূত্রে]

আবূ দাউদ ২৬০১

৫. আনাস রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি লোক নবী সাঃআঃ এর নিকট এসে নিবেদন জানাল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি সফরে যাব, সুতরাং আমাকে পাথেয় দিন।’ তিনি উত্তরে এই দো‘আ দিলেন, ‘যাউওয়াদাকাল্লা-হুত্ তাক্বওয়া।’ অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে সংযমশীলতার পাথেয় দান করুন। লোকটি পুনরায় বলিল, ‘আমাকে আরো পাথেয় দিন।’ তিনি দো‘আ দিয়ে বলিলেন, ‘অগাফারা যামবাকা।’ অর্থাৎ আল্লাহ তোমার অপরাধ ক্ষমা করুন। লোকটি আবার নিবেদন করল, ‘আমাকে আরো দিন।’ তিনি পুনরায় দো‘আ দিয়ে বলিলেন, ‘অয়্যাস্সারা লাকাল খাইরা হাইসুমা কুন্ত্।’ অর্থাৎ তুমি যেখানেই থাক, আল্লাহ যেন তোমার জন্য কল্যাণ সহজ করে দেন। [তিরমিযী হাসান]

তিরমিযী ৩৪৪৪, দারেমী ২৬৭১


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply