বিদায় হজ্জ
বিদায় হজ্জ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ ৭৮
৬৪/৭৮. অধ্যায়ঃ বিদায় হজ্জ
৪৩৯৫
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে বিদায় হাজ্জে রওয়ানা হই। তখন আমরা উমরাহর (নিয়তে) ইহরাম বাঁধি। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঘোষণা দিলেন, যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু রয়েছে, তাঁরা যেন হজ্জ ও উমরাহ উভয়ের একসঙ্গে ইহরামের নিয়ত করে এবং হজ্জ ও উমরাহর উভয়টি সমাধা করার পূর্বে হালাল না হয়। এভাবে তাহাঁর সঙ্গে আমি মক্কায় পৌঁছে এবং ঋতুবতী হয়ে পড়ি। এ কারণে আমি বাইতুল্লাহর তওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ার সায়ী করিতে পারলাম না। এ দুঃখ আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- কে অবহিত করলাম। তখন তিনি বলিলেন, তুমি তোমার মাথার ছুল ছেড়ে দাও এবং মাথা (চিরুনী দ্বারা) আঁচড়াও আর কেবল হাজ্জের ইহরাম বাঁধ ও উমরাহ ছেরে দাও। আমি তাই করলাম। এরপর আমরা যখন হাজ্জের কাজসমূহ সম্পন্ন করলাম, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে আবু বাক্র সিদ্দীক (রাদি.)- এর পুত্র আবদুর রহমান (রাদি.)- এর সঙ্গে তানঈম-এ পাঠিয়ে দিলেন। (সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে) উমরাহ আদায় করলাম। তখন তিনি [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)] বলিলেন, এই উমরাহ তোমার পূর্বের কাযা উমরাহ পূর্ণ করিল। আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, যারা উমরাহর ইহরাম বেঁধেছিলেন তারা বাইতুল্লাহ তওয়াফ করে এবং সাফা ও মারওয়া সায়ী করার পর হালাল হয়ে যান এবং পরে মিনা থেকে প্রত্যাবর্তন করার পর আর এক তওয়াফ আদায় করেন। আর যাঁরা হজ্জ ও উমরাহর ইহরাম এক সঙ্গে বাঁধেন, তাঁরা কেবল এক তওয়াফ আদায় করেন। [২৯৪] (আ.প্র. ৪০৪৬, ই.ফা. ৪০৫০)
৪৩৯৬
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
মুহরিম ব্যক্তি যখন বাইতুল্লাহ তওয়াফ করিল তখন সে তাহাঁর ইহরাম থেকে হালাল হয়ে গেল। আমি (ইবনু জুরায়জ) জিজ্ঞেস করলাম যে, ইবনু আব্বাস (রাদি.) এ কথা কী করে বলিতে পারেন? রাবী আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উত্তরে বলেন, আল্লাহ তাআলার এই কালামের দলীল থেকে যে, এরপর তার হালাল হওয়ার স্থল হচ্ছে বাইতুল্লাহ এবং নাবী (সাঃআঃ) কর্তৃক তাহাঁর সহাবীদের বিদায় হাজ্জের (এ কাজের পর) হালাল হয়ে যাওয়ার হুকুম দেয়ার ঘটনা থেকে। আমি বললামঃ এ হুকুম তো আরাফাহ-এ উকূফ করার পর প্রযোজ্য। তখন আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.)- এর মতে উকূফে আরাফাহর পূর্বাপর উভয় অবস্থার জন্য এ হুকুম। [মুসলিম ১৫/৩২, হাদীস ১২৪৫] (আ.প্র. ৪০৪৭, ই.ফা. ৪০৫১)
৪৩৯৭
আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি (বিদায় হাজ্জে) মক্কার বাতহা নামক স্থানে নাবী(সাঃআঃ)- এর সঙ্গে মিলিত হলাম। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞস করিলেন, তুমি কি হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছ? আমি বললাম, হাঁ। তখন তিনি আমাকে (পুনরায়) জিজ্ঞেস করিলেন। কোন্ প্রকারে হাজ্জের ইহরামের নিয়ত করেছ? আমি বললাম, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর ইহরামের মতো ইহরামের নিয়ত করে তালবিয়াহ পড়েছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, বাইতুল্লাহ তওয়াফ কর এবং সফা ও মারওয়াহ সায়ী কর। এরপর (ইহরাম খুলে) হালাল হয়ে যাও। তখন আমি বাইতুল্লাহ তওয়াফ করলাম ও সফা এবং মারওয়াহ সায়ী করলাম। এরপর আমি ক্বায়স গোত্রের এক মহিলার কাছে গেলাম, সে আমার চুল আঁচড়ে দিল (তাতে আমি ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে গেলাম)। [১৫৫৯] (আ.প্র. ৪০৪৮, ই.ফা. ৪০৫২)
৪৩৯৮
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর সহধর্মিণী হাফসাহ (রাদি.) ইবনু উমার (রাদি.)- কে জানিয়েছেন যে, বিদায় হাজ্জের বছর নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর স্ত্রীদের হালাল হয়ে যেতে নির্দেশ দেন। তখন হাফসাহ (রাদি.) জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি কী কারণে হালাল হচ্ছেন না? তদুত্তরে তিনি বলিলেন, আমি আঠা জাতীয় বস্তু দ্বারা আমার মাথার চুল জমাট করে ফেলেছি এবং কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদাহ [৮৪] বেঁধে দিয়েছি। কাজেই, আমি আমার কুরবানীর পশু যবহ করার পূর্বে হালাল হইতে পারব না। [১৫৬৬] (আ.প্র. ৪০৪৯, ই.ফা. ৪০৫৩)
[৮৪] বিশেষ এক ধরনের মালা যা দেখে বুঝা যেতো যে, এটিকে হাজ্জে কুরবানী করা হইবে।
৪৩৯৯
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আশআম গোত্রের এ মহিলা বিদায় হাজ্জের সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর নিকট জিজ্ঞেস করে। এ সময় ফদল ইবনু আব্বাস(রাদি.) (সওয়ারীতে) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন। মহিলাটি আবেদন করিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাহাঁর বান্দাদের প্রতি হজ্জ ফরয করিয়াছেন। আমার পিতার উপর তা এমন অবস্থায় ফরয হল যে, তিনি অতীব বয়োবৃদ্ধ, যে কারণে সওয়ারীর উপর ঠিক হয়ে বসতেও সমর্থ নন। এমতাবস্থায় আমি তাহাঁর পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করলে তা আদায় হইবে কি? রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, হাঁ। [১৫১৩] (আ.প্র. ৪০৫০, ই.ফা. ৪০৫৪)
৪৪০০
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ফতেহ মক্কার বছর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এগিয়ে চললেন। তিনি (তাহাঁর) কসওয়া নামক উটনীর উপর উসামাহ (রাদি.)- কে পিছনে বসালেন। তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন বিলাল ও উসমান ইবনু ত্বলহা (রাদি.)। অবশেষে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) (তাহাঁর বাহনকে) বাইতুল্লাহর নিকট বসালেন। তারপর উসমান (ইবনু ত্বলহা) (রাদি.)- কে বলিলেন, আমার কাছে চাবি নিয়ে এসো। তিনি তাঁকে চাবি এনে দিলেন। এরপর কাবা শরীফের দরজা তাহাঁর জন্য খোলা হল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ), উসামাহ, বিলাল এবং উসমান (রাদি.) কাবা ঘরে প্রবেশ করিলেন। তারপর দরজা বন্ধ করে দেয়া হল। এরপর তিনি দিবা ভাগের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন এবং পরে বের হয়ে আসেন। তখন লোকেরা কাবার অভ্যন্তরে প্রবেশ করার জন্য তাড়াহুড়া করিতে থাকে। আর আমি তাদের অগ্রণী হই এবং বিলাল (রাদি.)- কে কাবার দরজার পিছনে দাঁড়ানো অবস্থায় পাই। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কোন্ স্থানে সলাত আদায় করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, ঐ সামনের দুস্তম্ভের মাঝখানে। এ সময় বাইতুল্লাহর দুই সারিতে ছয়টি স্তম্ভ ছিল। নাবী (সাঃআঃ) সামনের সারির দুখামের মাঝখানে সলাত আদায় করিয়াছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বাইতুল্লাহর দরজা তার পিছনে রেখেছিলেন এবং তাহাঁর চেহারা ছিল বাইতুল্লাহয় প্রবেশকালে সামনে যে দেয়াল পড়ে সেদিকে। ইবনু উমার (রাদি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কয় রাকআত সলাত আদায় করিয়াছেন তা জিজ্ঞেস করিতে আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আর যে স্থানে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সলাত আদায় করছিলেন সেখানে লাল বর্ণের মর্মর পাথর ছিল। [৩৯৭] (আ.প্র ৪০৫১, ই.ফা. ৪০৫৫)
৪৪০১
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী হুয়াই-এর কন্যা সাফিয়া (রাদি.) বিদায় হাজ্জের সময় ঋতুবতী হয়ে পড়েন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, সে কি আমাদের (মাদীনাহ প্রত্যাবর্তনে) বাধা হয়ে দাঁড়াল? তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি তো তওয়াফে যিয়ারাহ করে নিয়েছেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তাহলে সেও রওয়ানা করুক। [২৯৪] (আ.প্র. ৪০৫২, ই.ফা. ৪০৫৬)
৪৪০২
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাদের মাঝে উপস্থিত থাকাবস্থায় আমরা বিদায় হজ্জ সম্পর্কে আলোচনা করতাম। আর আমরা বিদায় হজ্জ কাকে বলে তা জানতাম না। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করেন। তারপর তিনি মাসীহ দাজ্জাল সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেন এবং বলেন, আল্লাহ এমন কোন নাবী প্রেরণ করেননি যিনি তাহাঁর উম্মতকে (দাজ্জাল সম্পর্কে) সতর্ক করেননি। নূহ (আঃ) এবং তাহাঁর পরবর্তী নাবীগণও তাঁদের উম্মতগণকে এ সম্পর্কে সতর্ক করিয়াছেন। সে তোমাদের মধ্যে প্রকাশিত হইবে। তার অবস্থা তোমাদের নিকট অপ্রকাশিত থাকবে না। তোমাদের কাছে এও অস্পষ্ট নয় যে, তোমাদের রব কানা নন। আর দাজ্জালের ডান চোখ কানা হইবে। যেন তার চোখ একটি ফোলা আঙ্গুর। [৩০৫৭] (আ.প্র. ৪০৫৩, ই.ফা. ৪০৫৮)
৪৪০৩
বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
তোমরা সতর্ক থাক। আজকের এ দিনের মত, এ শহরের মত এবং এ মাসের মতো আল্লাহ তাআলা তোমাদের রক্তকে ও তোমাদের সম্পদকে তোমাদের উপর হারাম করিয়াছেন। বল তো, আমি কি আল্লাহর পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি। সমবেত সকলে বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। এ কথা তিনবার বলিলেন, (তারপর বলিলেন), তোমাদের জন্য পরিতাপ অথবা তিনি বলিলেন, তোমাদের জন্য আফসোস, সতর্ক থেকো, আমার পরে তোমরা কুফরের দিকে ফিরে যেয়ো না যে, একে অন্যের গর্দান মারবে। [১৭৪২] (আঃপ্রঃ ৪০৫৩, ইঃফাঃ ৪০৫৮)
৪৪০৪
যায়দ ইবনু আরকাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) ঊনিশটি যুদ্ধে স্বয়ং অংশগ্রহণ করেন। আর হিজরাতের পর তিনি হজ্জ আদায় করেন মাত্র একটি হাজ্জে। এরপর তিনি আর কোন হজ্জ আদায় করেননি এবং তা হল বিদায় হজ্জ। আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মক্কায় অবস্থানকালে তিনি আরেকটি হজ্জ করেছিলেন। [৩৯৪৯] (আ.প্র. ৪০৫৪, ই.ফা. ৪০৫৮)
৪৪০৫
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) জারীর (রাদি.)- কে বিদায় হাজ্জে বলিলেন, লোকজনকে চুপ থাকতে বল। তারপর বলিলেন, আমার ইন্তিকালের পর তোমরা কুফরীর দিকে ফিরে যেয়ো না যে, একে অন্যের গর্দান উড়াবে। [১২১] (আ.প্র. ৪০৫৫, ই.ফা. ৪০৫৯)
৪৪০৬
আবু বাক্রাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সময় ও কাল আবর্তিত হয় নিজ চক্রে। যেদিন থেকে আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করিয়াছেন। এক বছর হয় বার মাসে। এর মধ্যে চার মাস সন্মানিত। তিনমাস ক্রমান্বয়ে আসে-যেমন যিলকদ, যিলহজ্জ ও মুহার্রম এবং রজব মুদার বা জমাদিউল আখির ও শাবান মাসের মাঝে হয়ে থাকে। (এরপর তিনি প্রশ্ন করিলেন) এটি কোন্ মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-ই অধিক জানেন। এরপর তিনি চুপ থাকলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, হয়তো তিনি এ মাসের অন্য কোন নাম রাখবেন। (তারপর) তিনি বলিলেন, এ কি যিলহজ্জ মাস নয়? আমরা বললামঃ হ্যাঁ। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এটি কোন্ শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-ই অধিক জানেন। তারপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ধারণা করলাম যে, হয়তো তিনি এ শহরের অন্য কোন নাম রাখবেন। তারপর তিনি বলিলেন,এটি কি (মক্কাহ) শহর নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞেস করিলেন, এটি কোন্ দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল-ই ভাল জানেন। তারপর তিনি চুপ থাকলেন। এতে আমরা মনে করলাম যে, তিনি এ দিনটির অন্য কোন নামকরণ করবেন। তারপর তিনি বলিলেন, এটি কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। এরপর তিনি বলিলেন, তোমাদের রক্ত তোমাদের সম্পদ। রাবী মুহাম্মাদ বলেন, আমার ধারণা যে, তিনি আরও বলেছিলেন, তোমাদের মান-ইজ্জত- তোমাদের উপর পবিত্র, যেমন পবিত্র তোমাদের আজকের এই দিন, তোমাদের এই শহর ও তোমাদের এই মাস। তোমরা শীঘ্রই তোমাদের রবের সঙ্গে মিলিত হইবে। তখন তিনি তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। খবরদার! তোমরা আমার ইন্তিকালের পরে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ো না যে, একে অন্যের গর্দান উড়াবে। শোন, তোমাদের উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তিকে আমার পয়গাম পৌঁছে দেবে। অনেক সময় যে প্রত্যক্ষভাবে শ্রবণ করেছে তার থেকেও তার মাধ্যমে খবর-পাওয়া ব্যক্তি অধিকতর সংরক্ষণকারী হয়ে থাকে। রাবী মুহাম্মাদ [ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] যখনই এ হাদীস বর্ণনা করিতেন তখন তিনি বলিতেন-মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) সত্যই বলেছেন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা শোন, আমি কি (আল্লাহর পায়গাম) পৌঁছিয়ে দিয়েছি? এভাবে দুবার বলিলেন। [মুসলিম ২৮/৯, হাদীস ১৬৭৯, আহমাদ ২০৪০৮] (আ.প্র. ৪০৫৬, ই.ফা. ৪০৬০)
৪৪০৭
ত্বরিক ইবনু শিহাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একদল ইয়াহূদী বলিল, যদি এ আয়াত আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হত, তাহলে আমরা উক্ত অবতরণের দিনকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করতাম। তখন উমার (রাদি.) তাদের জিজ্ঞেস করিলেন, কোন্ আয়াত? তারা বলিল, এই আয়াতঃ فَقَالُوا الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمْ الإِسْلَامَ دِيْنًا আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন (জীবন-বিধান)-কে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামাত পরিপূর্ণ করলাম- (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৩)। তখন উমার (রাদি.) বলিলেন, কোন্ স্থানে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমি জানি। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আরাফাহ্য় দন্ডায়মান অবস্থায় ছিলেন। [৪৫, ৬৭] (আঃপ্রঃ ৪০৫৭, ইঃফাঃ ৪০৬১)
৪৪০৮
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন,আমরা (মাদীনাহ মুনাওয়ারা থেকে) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ উমরাহর ইহরাম বেঁধেছিলেন আর কেউ কেউ হাজ্জের ইহরাম, আবার কেউ কেউ হজ্জ ও উমরাহ উভয়ের ইহরাম বেঁধেছিলেন। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলেন। যাঁরা শুধু হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলেন অথবা হজ্জ ও উমরাহর ইহরাম একসঙ্গে বেঁধেছিলেন, তারা কুরবানীর দিনের পূর্বে হালাল হইতে পারেননি। (আ.প্র. ৪০৫৮, ই.ফা. ৪০৬২)
মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি উপরোক্ত হাদীসটিকে এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বিদায় হজ্জকালীন সময়ে। [২৯৪] (আ.প্র. ৪০৫৯, ই.ফা. ৪০৬৩)
ইসমাঈল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রেও মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে এভাবে বর্ণিত আছে। (আ.প্র. ৪০৬০, ই.ফা. ৪০৬৩)
৪৪০৯
সাদ (ইবনু আবু ওয়াক্কাস) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জের সময় আমি বেদনার কারনে মরণ রোগে আক্রান্ত হলে নাবী (সাঃআঃ) আমাকে দেখিতে এলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার রোগ যে মারাত্মক হয়ে গেছে তা আপনি দেখিতে পাচ্ছেন। আমি একজন সম্পদশালী লোক কিন্তু আমার একমাত্র কন্যা ব্যতীত অন্য কোন উত্তরাধিকারী নেই। কাজেই আমি কি আমার সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ সদাকাহ করে দেব? তিনি বলিলেন, না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তবে কি আমি সম্পদের অর্ধেক সদাকাহ করে দেব? তিনি বলিলেন, না। আমি বললাম, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ, তখন তিনি বলিলেন, এক-তৃতীয়াংশই ঢের। তুমি যদি তোমার উত্তরাধিকারীদের সচ্ছল অবস্থায় ছেড়ে যাও তবে তা তাদেরকে অভাবী অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম-যাতে তারা মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে। আর তুমি যা-ই আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্ত খরচ কর, তার বিনিময়ে তোমাকে প্রতিদান দেয়া হইবে। এমনকি যে লোকমা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে ধর তারও। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি আমার সাথীদের পিছনে পড়ে থাকব? তিনি বলিলেন, তোমাকে কক্ষণো পেছনে ছেড়ে যাওয়া হইবে না, আর (তুমি পিছনে পড়ে গেলেও) আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে আমাল করিবে তা দ্বারা তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে ও সমুন্নত হইবে। সম্ভবত তুমি আরো জীবিত থাকবে। ফলে তোমার দ্বারা এক সম্প্রদায় উপকৃত হইবে। অন্য সম্প্রদায় (মুসলিমরা) ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। হে আল্লাহ! আমার সহাবীদের হিজরাত আপনি জারী রাখুন এবং তাদের পিছনের দিকে ফিরিয়ে দিবেন না। কিন্তু আফসোস সাদ ইবনু খাওলা (রাদি.)-এর জন্য, (রাবী বলেন) মক্কায় তার মৃত্যু হওয়ায় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মনে কষ্ট পেয়েছিলেন। [৫৬](আ.প্র. ৪০৬১, ই.ফা. ৪০৬৪)
৪৪১০
নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু উমার (রাদি.) তাঁদেরকে অবহিত করিয়াছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বিদায় হাজ্জে তাহাঁর মাথা মুণ্ডন করেছিলেন। [১৭২৬](আ.প্র. ৪০৬২, ই.ফা. ৪০৬৫)
৪৪১১
নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু উমার (রাদি.) তাঁকে অবহিত করেন যে, বিদায় হাজ্জে নাবী (সাঃআঃ) এবং তাহাঁর সহাবীদের অনেকেই মাথা মুণ্ডন করেন আর তাঁদের কেউ কেউ মাথার চুল ছেটেঁ ফেলেন। [১৭২৬](আ.প্র. ৪০৬৩, ই.ফা. ৪০৬৬)
৪৪১২
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি গাধায় চড়ে রওয়ানা হন এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বিদায় হজ্জকালে মিনায় দাঁড়িয়ে লোকদের নিয়ে সলাত আদায় করছিলেন। তখন গাধাটি সলাতের একটি কাতারের সামনে এসে পড়ে। এরপর তিনি গাধার পিঠ থেকে নেমে পড়েন এবং তিনি লোকদের সঙ্গে সলাতের কাতারে সামিল হন। [৭৬] (আ.প্র. ৪০৬৪, ই.ফা. ৪০৬৭)
৪৪১৩
হিশামের পিতা [উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার উপস্থিতিতে উসামাহ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর বিদায় হাজ্জের সওয়ারী চালনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে বলিলেন, মধ্যম গতিতে চলেছেন আবার প্রশস্ত পথ পেলে দ্রুতগতিতে চলেছেন। [১৬৬৬] (আ.প্র. ৪০৬৫, ই.ফা. ৪০৬৮)
৪৪১৪
আবু আইয়ূব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বিদায় হাজ্জে (মুযদালিফায়) মাগরিব ও ঈশার সলাত এক সঙ্গে আদায় করিয়াছেন। [৮৫] [১৬৭৪] (আ.প্র. ৪০৬৬, ই.ফা. ৪০৬৯)
[৮৫] সফরের অবস্থায় দু ওয়াক্তের সলাত আদায় করলে কসর সহ করিতে হইবে। মুকীম অবস্থায় বৃষ্টি বাদল, যে কোন শংকা, কিংবা অসুবিধা সৃষ্টিকারী কারণে দু ওয়াক্তের সলাতকে জমা করে আদায় করলে সলাতের রাকআত সংখ্যা পূর্ণ আদায় করিতে হইবে।
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আট রাকআত একত্রে (যুহর ও আসরের) এবং সাত রাকআত একত্রে (মাগরিব-ইশার) সলাত আদায় করেছি। (বুখারী পর্ব ১৯: /৩০ হাদীস ১১৭৪, মুসলিম হাদীস, লুলু ওয়াল মারজান হাদীস নং ৪১১)
Leave a Reply