কুরবানী দিনের ভাষণ, তাসরিকে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম

কুরবানী দিনের ভাষণ, তাসরিকে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম

কুরবানী দিনের ভাষণ, তাসরিকে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ১১, অধ্যায়ঃ ১০

  • অধ্যায়ঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

অধ্যায়ঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ

২৬৫৯.আবু বাকরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ কুরবানীর দিন [১০ যিলহাজ্জ] আমাদের উদ্দেশে এক বক্তৃতা দিলেন, তিনি [সাঃআঃ] বলেন, বছর ঘুরে এসেছে সে তারিখের পুনরাবৃত্তি অনুযায়ী, যে তারিখে আল্লাহ তাআলা আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন। বছর বারো মাসে, তন্মধ্যে চার মাস হারাম বা সম্মানিত মাস। তিন মাস পরপর এক সাথেই তথা যিলকদ, যিলহজ্জ ও মুহাররম। চতুর্থ মাস মুযার গোত্রের রজব মাস। যে মাস জমাদিউল উখরা ও শাবানের মাঝখানে। তারপর তিনি [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এটা কোন্ মাস? আমরা উত্তর দিলাম- আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলই এ ব্যাপারে বেশি ভালো জানেন। এরপর তিনি [সাঃআঃ] কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। আমরা ভাবলাম তিনি [সাঃআঃ] হয়ত এ মাসের অন্য কোন নাম বলবেন। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] বললেন, এ মাস কি যিলহজ্জ মাস নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ, এ মাস যিলহজ্জ মাস।

এবার তিনি [সাঃআঃ] বললেন, এটি কোন্ শহর? আমরা বললাম, আল্লাহর রসূলই ভালো জানেন। তিনি [সাঃআঃ] কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। এতে আমরা ভাবলাম, তিনি [সাঃআঃ] মনে হয় এ শহরের অন্য কোন নাম বলবেন। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, এটি কি [মক্কা] শহর নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ, এটি মক্কা শহর, হে আল্লাহর রসূল! এরপর তিনি [সাঃআঃ] বললেন, এটা কোন্ দিন? উত্তরে আমরা বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলই তা ভালো জানেন। তিনি [সাঃআঃ] কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। এতে আমরা ভাবলাম, তিনি [সাঃআঃ] মনে হয় এর অন্য কোন নাম বলবেন। তারপর তিনি [সাঃআঃ] বললেন, এটা কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ, কুরবানীর দিন।

তখন তিনি [সাঃআঃ] বললেন, তোমাদের জীবন, সম্পদ ও সম্মান তোমাদের জন্য পবিত্র; যেমন তোমাদের এ মাস, এ শহর, এ দিন পবিত্র। তোমরা খুব তাড়াতাড়ি আল্লাহর কাছে পৌঁছবে, আর তিনি তোমাদেরকে কর্মকান্ড সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিবেন। সাবধান! আমার পর তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে এক অন্যের প্রাণনাশ করো না। তোমরা বলো, আমি কি তোমাদের নিকট [আল্লাহর নির্দেশ] পৌঁছিয়ে দেইনি? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তিনি [সাঃআঃ] তখন বললেন, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থেকো। [এরপর বললেন] প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে এ কথা পৌঁছিয়ে দেয়। কেননা এমন অনেক ব্যক্তি আছে, যাকে পরে পৌঁছানো হয় কিন্তু সে আসল শ্রোতা হইতেও বেশি উপলব্ধিকারী ও সংরক্ষণকারী হইতে পারে

। [বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৪৪০৬, মুসলিম ১৬৭৯, আবু দাউদ ১৯৪৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৭৭৩, সহীহ ইবনি হিব্বান ৫৯৭৪। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৬০. ওয়াবারাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কোন্ দিন পাথর মারবো? তিনি বললেন, তোমার ঈমাম যেদিন মারবে তুমিও সেদিন পাথর মারবে। আবার আমি তাঁকে এ মাসআলাটি জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন, আমরা সময়ের অপেক্ষায় থাকতাম, যখন সূর্যাস্ত হলো তখন আমরা পাথর মারতাম

। [বোখারী]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৭৪৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৬৬৪, আবু দাউদ ১৯৭২। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৬১. সালিম [রাহিমাহুল্লাহ] [তাহাঁর পিতা] আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, তিনি {আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]] প্রথম জামারায় [নিকটবর্তী জামারায়] সাতটি পাথর মারতেন এবং প্রত্যেক পাথরের মারার সময় আল্লা-হু আকবার বলিতেন। তারপর তিনি কিছু দূর আগে বেড়ে নরম মাটিতে যেতেন এবং সেখানে কিবলার দিকে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় হাত তুলে দুআ করিতেন। তারপর জামারায়ে উস্ত্বায় [মধ্যম জামারায়] এসে আবার সাতটি পাথর মারতেন। প্রত্যেক [ছোট] পাথর মারার সাথে আল্লা-হু আকবার বলিতেন। তারপর বামদিকে কিছু দূর এগিয়ে নরম মাটিতে পৌঁছে কিবলার দিকে দাঁড়িয়ে দুআ করিতেন। এরপর জামারাতুল আক্বাবায় গিয়ে বাত্বনি ওয়াদী [খোলা নিচু জায়গা] হইতে সাতটি পাথর মারতেন। প্রত্যেক পাথর মারার সাথে আল্লা-হু আকবার বলিতেন। কিন্তু এখানে দাঁড়াতেন না, বরং [গন্তব্য পথে] চলে যেতেন এবং বলিতেন, আমি নবী সাঃআঃ-কে এভাবে পাথর [কঙ্কর] মারতে দেখেছি।

[বোখারী]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৭৫১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৬৬৩। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৬. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্ত্বালিব লোকদেরকে পানি পান করানোর জন্য মিনার রাতগুলো মাক্কায় থাকার জন্য রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে অনুমতি চাইলেন। তিনি [সাঃআঃ] তাঁকে অনুমতি দিলেন।

[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬৩৪, মুসলিম ১৩১৫, আবু দাউদ ১৯৫৯, আহমাদ ৪৭৩১, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২৯৫৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৬৯১, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৮৮৯, ইরওয়া ১০৭৯। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৬৩. আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ যেখানে পানি পান করানো হয় সেখানে এসে পানি চাইলেন। তখন [আমার পিতা] আব্বাস [আমার ভাইকে] বললেন, হে ফযল! তোমার মায়ের কাছে যাও। রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর জন্য তার কাছ থেকে খাবার পানি নিয়ে আসো। তখন তিনি [সাঃআঃ] বললেন, আমাকে এখান থেকে পানি পান করাও। আমার পিতা তখন বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এতে লোকেরা হাত দেয়। তখন তিনি [সাঃআঃ] বললেন, আমাকে এখান থেকেই পানি পান করাও। এরপর তিনি [সাঃআঃ] এখান থেকেই পানি পান করিলেন। তারপর তিনি [সাঃআঃ] যমযমের কূপের কাছে গেলেন। তখনও তারা পানি পান করছিলেন। [এ অবস্থা দেখে] তিনি [সাঃআঃ] বললেন, কাজ করিতে থাকো, কেননা তোমরা নেক কাজে ব্যস্ত আছ। তারপর তিনি [সাঃআঃ] বললেন, যদি লোকেরা তোমাদেরকে পরাভূত করিবে- এ আশংকা আমার না থাকতো তাহলে আমি সওয়ারী হইতে নেমে এতে রশি নিতাম। [রাবী বলেন] এটা বলে তিনি [সাঃআঃ] নিজের কাঁধের দিকেই ইশারা করিলেন।

বোখারী]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬৩৫, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২৯৪৬, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১৯৬৩, মুসতাদ্রাক লিল হাকিম ১৭৪৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৬৫৩। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৬৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ মুহাস্‌সাব নামক স্থানে যুহর, আসর, মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করে এখানেই কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলেন। অতঃপর সেখান থেকে বায়তুল্লাহর দিকে রওয়ানা হলেন এবং [বিদায়ী] তাওয়াফ সম্পন্ন করিলেন। [বোখারী]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ১৭৫৬, দারিমী ১৯১৫, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ৯৬২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৭৩৭, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৮৮৪। তবে দারিমীর সানাদটি দুর্বল। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৬৫. আবদুল আযীয ইবনি রুফাই [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি আনাস ইবনি মালিক-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যাপারে আপনি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ হইতে যা জেনেছেন তা আমাকে বলুন। [যেমন] তিনি [সাঃআঃ] তালবিয়ার দিন [যিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখে] যুহরের সালাত কোথায় আদায় করিয়াছেন? জবাবে আনাস বললেন, মিনায়। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, নাফরের দিন [যিলহজ্জ মাসের ১৩ তারিখে মাদীনায় রওনা হবার দিন] আসরের সালাত কোথায় আদায় করিয়াছেন? তিনি বললেন, আবত্বাহ-এ। অতঃপর আনাস বললেন, কিন্তু তোমরা তোমাদের আমীর বা নেতৃবৃন্দ যেভাবে করেন সেভাবে করিবে।

[বোখারী, মুসলিম]{১},{১} সহীহ : বোখারী ১৬৫৩, মুসলিম ১৩০৯, নাসায়ী ২৯৯৭, তিরমিজি ৯৬৪, আহমাদ ১১৯৭৫, দারিমী ১৯১৪, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২৭৯৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৪৩৯, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৮৪৬।বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৬৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবত্বাহ-এ নামা বা অবস্থান করা সুন্নাতসম্মত নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর জন্যে আবত্বাহ হইতে [মাদীনার দিকে] রওয়ানা হওয়াটা সহজ ছিল বিধায় এখানে নেমেছেন বা অবস্থান করিয়াছেন।

[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১৩১১, ইবনি মাজাহ ৩০৬৭, আহমাদ ২৪১৪৩। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৬৭. {আয়িশাহ্ [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি তান্ঈম হইতে উমরার ইহরাম বাঁধলাম এবং মাক্কায় পৌঁছে আমি আমার কাযা উমরা আদায় করলাম। রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ আবত্বাহ-এ এসে আমার জন্যে অপেক্ষা করিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত আমি অবসর না হলাম [উমরা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত]। তারপর তিনি [সাঃআঃ] লোকদেরকে [মাদীনার দিকে] রওয়ানা হইতে আদেশ করিলেন এবং নিজেও [মক্কার দিকে] রওয়ানা হলেন। আর বায়তুল্লাহ পৌঁছে ফজরের সলাতের আগেই [বিদায়ী] তাওয়াফ করিলেন। অতঃপর মাদীনার দিকে রওয়ানা হলেন। [মিশকাত গ্রন্থকার বলেন, ঈমাম বাগাবী এ হাদিসকে প্রথম অনুচ্ছেদে স্থান দিলেও আমি তা বোখারী, মুসলিমে পাইনি; তবে কিছু এর শেষে তারতম্যসহ আবু দাঊদে রয়েছে।]{১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ২০০৫। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৬৮. আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, [হজ্জ/হজ সম্পন্ন করে শেষ তাওয়াফ না করেই] লোকজন চারদিক হইতে দেশের দিকে ফিরতে শুরু করতো। তাই রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, তোমাদের কেউ যেন বায়তুল্লাহর সাথে [শেষ] সাক্ষাৎ না করে বাড়ীর দিকে রওয়ানা না হয়। তবে ঋতুমতী মহিলাদের [প্রতি শিথিলতা স্বরূপ] এর থেকে বিরত থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। [বোখারী, মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ১৭৫৫, মুসলিম ১৩২৭, ইবনি মাজাহ ৩০৭০, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১৩৫৯৭, আহমাদ ১৯৩৬, দারিমী ১৯৭৪, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ৩০০০, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৯৮৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৭৪৪ , বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৬৯. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মাদীনাহ্ হইতে রওয়ানা হবার রাতেই বিবি সফিয়্যাহ্ ঋতুমতী হয়ে পড়লেন। তিনি [সফিয়্যাহ্] বললেন, আমার মনে হয় আমি আপনাদেরকে আটকে দিলাম। [এ কথা শুনে] নবী সাঃআঃ বললেন, ধ্বংস হোক, নিপাত যাক। সে কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ [ইফাযাহ্] করেনি? বলা হলো, হ্যাঁ, করেছে। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, তবে রওয়ানা হও। [বোখারী, মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ১৭৭১, মুসলিম ১২১১। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৬৭০. আমর ইবনুল আহ্ওয়াস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বলিতে শুনিয়াছি, বিদায় হজে রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ হে লোকেরা! এটা কোন্ দিন? [সমস্বরে] লোকেরা বললো, এটা হজে আকবারের [বড় হজের] দিন। তখন তিনি [সাঃআঃ] বললেন, [মনে রাখবে] তোমাদের জীবন, সম্পদ, ইজ্জত পরস্পরের মধ্যে যেমন হারাম বা পবিত্র। তেমনি আজকের এ দিন এ শহরে হারাম বা পবিত্র। সাবধান! কোন অপরাধকারী যেন তার জীবনের ওপর যুলুম না করে। সাবধান! কোন অপরাধী যেন নিজের সন্তানের ওপর যুলুম না করে। কোন সন্তান যেন তার পিতার ওপর যুলুম না করে। সাবধান! শয়তান চিরদিনের জন্যে নিরাশ হয়ে গেছে এ শহরে তার কোন পূজা হবে [না এ প্রসঙ্গে]। কিন্তু তোমাদের যে সব কাজের মধ্য দিয়ে তার অনুসারী হবে, অথচ সেসব কাজ তোমরা তুচ্ছ মনে করিবে। আর এতেই সে খুশী হবে। [ইবনি মাজাহ, তিরমিজি; তিরমিজি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন]{১}

{১} সহীহ : তিরমিজি ২১৫৯, ইবনি মাজাহ ৩০৫৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫৮৯৯, সহীহ আল জামি ৭৮৮০। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৭১. রাফি ইবনি আমর আল মুযানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে একটি সাদা-কালো মিশ্রিত খচ্চরের উপর থেকে মিনায় ভাষণ দিতে দেখেছি, তখন সূর্য উপরে উঠেছিল। আলী [রাদি.] তাহাঁর বক্তব্যকে লোকদের কাছে পৌঁছাচ্ছিলেন [উচ্চস্বরে দিচ্ছিলেন]। আর তখন লোকজনের মধ্যে কেউ দাঁড়ানো, কেউ বসা ছিল।

[আবু দাউদ]{১},{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৯৫৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৬১৮। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৭২. আয়িশাহ্ ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাওয়াফে যিয়ারত কুরবানীর দিনে [১০ তারিখে] রাত পর্যন্ত দেরি করেছিলেন

। [তিরমিজি, আবু দাউদ ও ইবনি মাজাহ]{১}, {১} সহীহ : আবু দাউদ ২০০০, তিরমিজি ৯২০, ইবনি মাজাহ ৩০৫৯, আহমাদ ২৬১২। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৭৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ তাওয়াফে ইফাযার [তাওয়াফে যিয়ারতের] সাত চক্কর রমল করেননি [জোর পায়ে চলেননি]। [আবু দাউদ ও ইবনি মাজাহ]{১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ২০০১, তিরমিজি ৩০৬০, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২৯৪৩, মুসতাদ্রাক লিল হাকিম ১৭৪৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯২৮৪ , বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৭৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জামারাতুল আক্বাবায় [১০ তারিখে] পাথর মারার পর স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য সকল কাজ তার জন্যে হালাল হয়ে যাবে। {শারহুস্ সুন্নাহ; ঈমাম বাগাবী বলেছেন, এর সানাদ দুর্বল।{১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৯৭৮, দারাকুত্বনী ২৬৮৬, সহীহ আল জামি ৫৭৮, সহীহাহ্ ২৩৯। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৭৫. আহমাদ ও নাসায়ী ইবনি আব্বাস হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কেউ জামারাতুল আক্বাবায়ে পাথর মারা শেষ করিবে তার জন্য স্ত্রী সহবাস ছাড়া আর অন্য সব কাজ হালাল হয়ে যাবে।{১}

{১} সহীহ : নাসায়ী ৩০৮৪, আহমাদ ২০৯০, ইবনি মাজাহ ৩০৪১। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬৭৬. {আয়িশাহ্ [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ যুহরের সালাত আদায়ে পর দিনের শেষ বেলায় তাওয়াফে ইফাযাহ্ সম্পন্ন করেন। তারপর তিনি [সাঃআঃ] আবার মিনায় ফিরে এলেন এবং সেখানেই আইয়্যামে তাশরীক্বের দিনগুলো অবস্থান করিলেন। এ দিনগুলোতে তিনি [সাঃআঃ] সূর্যাস্তের পর জামারায় সাতটি করে পাথর মারতেন। প্রত্যেক পাথর মারার সাথে সাথে আল্লা-হু আকবার বলিতেন। আর প্রথম ও দ্বিতীয় জামারার নিকট দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করিতেন ও আল্লাহর কাছে [অনুনয়-বিনয় করে] প্রার্থনা করিতেন। কিন্তু তৃতীয় জামারায় [পূর্বের ন্যায় পাথর মারার পর] অপেক্ষা করিতেন না। [আবু দাউদ]{১}

{১} সহীহ : তবে [حين صلى الظهر] অংশটুকু ব্যতীত। আবু দাউদ ১৯৭৩, আহমাদ ২৪৯২, ইরওয়া ১০৮২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ অন্যান্য

২৬৭৭. আবুল বাদ্দাহ ইবনি আসিম ইবনি আদী হইতে বর্ণীতঃ

তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ উট চালকদেরকে মিনায় রাত যাপন না করার এবং কুরবানীর তারিখে [জামারাতুল আক্বাবায়] পাথর মারতে এবং তারপর কুরবানী দিনের পর দুই দিনের পাথর একদিনে মারতে অনুমতি দিয়েছিলেন। [মালিক, তিরমিজি, নাসায়ী; ঈমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি সহীহ]{১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৯৭৫, ৯৫৫, নাসায়ী ৩০৬৯, ইবনি মাজাহ ৩০৩৭, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৫৩৮, আহমাদ ২৩৭৭৫, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৪৫৩, মুসতাদ্রাক লিল হাকিম ১৭৫৯, ইরওয়া ১০৮০। বিদায়ী তাওয়াফের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply