বিচার সম্পর্কে হাদিস অধ্যায়। মুয়াত্তা হাদীস গ্রন্থ
বিচার সম্পর্কে হাদিস অধ্যায়। মুয়াত্তা হাদীস গ্রন্থ, এই অধ্যায়ে হাদীস =৭০ টি ( ১৪১৫-১৪৮৪ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ৩৬ বিচার সম্পর্কিত
পরিচ্ছেদঃ ১ -ন্যায়বিচারে উৎসাহ প্রদান
পরিচ্ছেদঃ ২ -সাক্ষ্য প্রদান
পরিচ্ছেদঃ ৩ -অপবাদকারীর সাক্ষ্যের ফয়সালা করা
পরিচ্ছেদঃ ৪ -সাক্ষীসহ কসমের সাথে ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ৫ -ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি মারা গেলে এবং সেই ব্যক্তির নিকট কেউ ঋণ পাওনা থাকলে কিংবা অন্য ব্যক্তির উপর সেই মৃত লোকের ঋণ পাওনা থাকলে এবং উভয় অবস্থায় একজন সাক্ষী থাকলে
পরিচ্ছেদঃ ৬ -দাবির মীমাংসা
পরিচ্ছেদঃ ৭ -বালকদের সাক্ষ্যের উপর ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ৮ -রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর মিম্বরে মিথ্যা কসম করা
পরিচ্ছেদঃ ৯ -মিম্বরের উপরে কসম করা
পরিচ্ছেদঃ ১০ -রেহেনকে বাধা দেয়া নাজায়েয
পরিচ্ছেদঃ ১১ -ফল ও জন্তুর রেহেনের ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ১২ -জন্তু রেহেন রাখার ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ১৩ -দুই ব্যক্তির নিকট রেহেন রাখার ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ১৪ -রেহেনের বিবিধ প্রকার
পরিচ্ছেদঃ ১৫ -জন্তুর ভাড়া এবং তার উপর অত্যচার করার ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ১৬ -কোন স্ত্রীলোকের সাথে জবরদস্তি যিনা করলে তার ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ১৭ -জন্তু অথবা খাদ্য নষ্টের ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ১৮ -ইসলাম ত্যাগ করলে তার হুকুম
পরিচ্ছেদঃ ১৯ -কেউ যদি নিজ স্ত্রীর সাথে অপর পুরুষকে দেখে তবে তার ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ২০ -ফেলে দেয়া শিশুর ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ২১ -সন্তানকে তার পিতার সাথে সম্পৃক্ত করা
পরিচ্ছেদঃ ২২ -যে সন্তানকে পিতার সাথে মিলানো হয়েছে তার মীরাসের ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ২৪ -পতিত জমিকে আবাদ করার ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ২৫ -পানির ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ২৬ -উপকার সাধন-এর লক্ষ্যে ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ২৭ -সম্পদ বণ্টনের ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ২৮ -নিজে নিজে বিচরণকারী জন্তু ও রাখালের তত্ত্বাবধানে থাকা জন্তুর ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ২৯ -জন্তুকে নির্যাতনের ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ৩০ -কর্মচারীদেরকে মজুরী দানের ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ৩১ -হাওয়ালা ও জিম্মাদারী
পরিচ্ছেদঃ ৩২ -কাপড় খরিদের পরে দোষ দেখা গেলে
পরিচ্ছেদঃ ৩৩ -যে হেবা [দান] নাজায়েয
পরিচ্ছেদঃ ৩৪ -কেমন দান জায়েয নয়
পরিচ্ছেদঃ ৩৫ -হেবার ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ৩৬ -দান করে ফিরিয়ে নেয়া
পরিচ্ছেদঃ ৩৭ -মৃত্যু পর্যন্ত দানের ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ৩৮ -লুকতা অর্থাৎ কোথাও পাওয়া জিনিসের ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ৩৯ -গোলাম যদি কোন জিনিস পাওয়ার পর খরচ করে ফেলে তবে তার ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ৪০ -হারানো জন্তুর ফয়সালা
পরিচ্ছেদঃ ৪১ -মৃতের পক্ষে জীবিতের দান
পরিচ্ছেদঃ ১ -ন্যায়বিচারে উৎসাহ প্রদান
১৩৯৭ নবী করীম সাঃআঃ-এর সহধর্মিণী উম্মে সালমা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, আমি একজন মানুষ, তোমরা আমার নিকট ঝগড়া-বিবাদ নিয়ে আস। এমনও হইতে পারে যে, একে অপরের তুলনায় অধিক চালাকী ও চাতুরির আশ্রয় নিবে এবং নিজ দাবি প্রমাণিত করিবে এবং আমি তার বাহ্যিক প্রমাণের দিকে লক্ষ্য করে তার পক্ষে রায় দিয়ে দিব। সুতরাং এমতাবস্থায় যদি আমি অপরের হক কাউকেও দিয়ে দেই তবে তার জন্য উক্ত বস্তু গ্রহণ করা উচিত নয়। কেননা উহা তার জন্য আগুনের টুকরা।
[বুখারি ২৬৮০, মুসলিম ১৭১৩]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৩৯৮ সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
একদা উমার [রাদি.]-এর দরবারে এক ইহুদী ও এক মুসলমান কোন বিবাদ নিয়ে এল। উমার [রাদি.] বুঝতে পারলেন যে, ইহুদীর দাবি সত্য। তাই ইহুদীর সপক্ষে রায় দিয়ে দিলেন। ইহুদী সর্বশেষে বলল, আল্লাহর কসম, আপনি হক ফায়সালা করিয়াছেন। ইহা শুনে উমার [রাদি.] তাকে বেত্র দ্বারা আঘাত করে বলিলেন, কিভাবে জানতে পেরেছ যে, এই বিচার হক হয়েছে? ইহুদী বলল, আমি আমাদের আসমানী কিতাবে দেখেছি যে, যে বিচারক সত্য ফয়সালা করে তার ডান দিকের এবং বাম দিকের কাঁধে একজন করে ফেরেশতা থাকেন। তারা তাহাকে শক্তিশালী রাখে এবং সৎ পথ দেখাতে থাকে যতক্ষণ সে হকের উপর থাকে। আর যদি সে হককে ছেড়ে দেয় তবে ফেরেশতারাও তাকে ছেড়ে ঊর্ধ্বজগতে উঠে যায়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২ -সাক্ষ্য প্রদান
১৩৯৯ যায়দ ইব্নু খালিদ জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, আমি কি তোমাদেরকে সর্বোত্তম সাক্ষীর কথা বলব? তা হলো, যে জিজ্ঞেস করার পূর্বেই সাক্ষ্য প্রদান করে অথবা যার সাক্ষীর প্রয়োজন তাকে সংবাদ প্রদান করে তাকে জিজ্ঞেস করার পূর্বেই।
[সহীহ, মুসলিম ১৭১৯]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪০০ রাবিয়া ইব্নু আবি আবদির রহমান হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাদি.]-এর দরবারে ইরাক হইতে এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি এমন এক ব্যাপার নিয়ে এসেছি যার কোন আগ-পাছ কিছুই নেই। উমার [রাদি.] বলিলেন, “তা কি?” সে বলল, আমাদের দেশে মিথ্যা সাক্ষ্য ছড়িয়ে পড়েছে। উমার [রাদি.] বলিলেন, তুমি কি সত্যই বলছ? সে বলল, হ্যাঁ, তখন উমার [রাদি.] বলিলেন, ভবিষ্যতে নির্ভরযোগ্য ও ন্যায়পরায়ণ সাক্ষীর সাক্ষ্য ব্যতীত কোন মুসলমানকে কয়েদ করা যাবে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাদি.] বলেন উমার [রাদি.] বলেন যে, শত্র“ এবং দ্বীনের ব্যাপারে দোষারোপ করা হয়েছে এমন লোকদের সাক্ষ্য জায়েয হইবে না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৩ -অপবাদকারীর সাক্ষ্যের ফয়সালা করা
সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ]-সহ আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, যে ব্যক্তি অপবাদের দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে কি? তারা বলিলেন, হ্যাঁ, যখন সে তাওবা করেছে বলে জানা যাবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, ঈমাম জুহরী [রাহিমাহুল্লাহ]-কে ঐরূপ প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনিও সুলায়মান ইব্নু ইয়াসারের মতো উত্তর দিয়েছিলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন আমার মতও অনুরূপ, “কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেন যে, যে ব্যক্তি নেককার স্ত্রীলোকের উপর মিথ্যা অপবাদ দেয় এবং চারজন সাক্ষী হাযির করিতে না পারে তবে তাদেরকে আশি দোররা মার, অতঃপর কোন সময়ই তার সাক্ষ্য কবুল করো না, কেননা, এরাই পাপাচারী। হ্যাঁ, পরে যারা তাওবা করে নেয় এবং সংশোধন হয়ে যায় তবে আল্লাহ্ নিশ্চয়ই ক্ষমাকারী ও দয়াবান”। [সূরা নূর আয়াত ৪]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এই ব্যাপারে আমাদের নিকট কোন মতভেদ নেই যে, যার উপরে অপবাদের শাস্তি হয়েছে অতঃপর সংশোধন হয়েছে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা যায় এবং আমি যা এই ব্যাপারে জেনেছি, তার মধ্যে এটাই খুব পছন্দনীয় কথা।
পরিচ্ছেদঃ ৪ -সাক্ষীসহ কসমের সাথে ফয়সালা
১৪০১ জাফর সাদিক [রাহিমাহুল্লাহ] তার পিতা মুহাম্মাদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ সাক্ষী ও কসমের উপর ফয়সালা করিয়াছেন। [সহীহ, ঈমাম মুসলিম মুত্তাসিল সনদে ইবনি আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন ১৭১২, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪০২ আবু যিনাদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইব্নু আবদিল আযীয [রাহিমাহুল্লাহ] কুফার শাসনকর্তা আবদুল হামিদ ইব্নু আবদির রহমানকে লিখে পাঠালেন যে, [এক] সাক্ষীর সাথে কসম গ্রহণ করে ফয়সালা করে নিতে পার। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪০৩ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবু সালামাহ্ ও সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, সাক্ষী ও কসমের দ্বারা ফয়সালা করা যাবে কি? উত্তরে তাঁরা বলিলেন, হ্যাঁ। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, একজন সাক্ষীর সাথে বাঁদীর কসম গ্রহণের প্রথা পূর্ব হইতে প্রচলিত হয়ে আসছে। সে যদি কসম করে তবে তার দাবি প্রমাণিত হইবে। আর যদি সে কসম করিতে ভয় পায় অথবা অস্বীকার করে তবে বিবাদীকে কসম দেয়া হইবে। যদি বিবাদী কসম করে নেয় তবে ঐ হক [পাওনা] বিবাদীর উপর হইতে এড়িয়ে যাবে। আর যদি সেও কসম করিতে অস্বীকার করে তবে পুনরায় বাঁদীর দাবি তার উপর ন্যস্ত হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, কসমসহ সাক্ষ্য শুধু মালের বেলায় চলবে, হুদুদ [শরীয়তের শাস্তি], বিবাহ, তালাক, গোলাম আযাদ, চুরি ও অপবাদের মধ্যে চলবে না। অতঃপর যদি কেউ বলে যে, গোলাম আযাদ মালের মধ্যে শামিল, তবে সে ভুল করিবে। কারণ ব্যাপার অন্য রকম, যদি এমন হত যে, সে বলেছে তবে গোলাম একজন সাক্ষীসহ হাযির হলে কসম নিয়ে তাকে আযাদ করে দেয়া উচিত ছিল। আর যদি গোলাম একজন সাক্ষী আনে কোন মালের ব্যাপারে যে, সে মালিকের উপর দাবি করে তবে সেই ক্ষেত্রে একজন সাক্ষীসহ কসম নিতে হইবে এবং তার হক প্রমাণিত হইবে। যেমন আযাদ মানুষ হলফ করলে হয়।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন আমাদের নিকট গ্রহণযোগ্য নিয়ম এই যে, গোলাম যদি তার আযাদ হওয়ার সপক্ষে একজন সাক্ষী নিয়ে আসে তবে তার মনিবকে কসম দেয়া হইবে যে, তাহার গোলামকে আযাদ করেনি। তা হলেই গোলামের আযাদী প্রমাণিত হইবে না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, এই নিয়ম তালাকের ব্যাপারেও। যদি কোন স্ত্রী লোক তালাকের ব্যাপারে একজন সাক্ষী নিয়ে আসে তবে স্বামীকেও কসম করানো হইবে। যদি স্বামী তালাক না দেয়ার উপর কসম করে তবে তালাক প্রমাণিত হইবে না। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, এভাবেই তালাক ও আযাদ-এর সাক্ষ্যের মধ্যে এক সাক্ষী থাকলে স্বামী ও মনিবকে কসম করানো হইবে। কেননা আযাদ করা [ইতাক] একটি শরীয়তী সীমারেখার মধ্য হইতে একটি, তার মধ্যে স্ত্রীলোকদের সাক্ষ্য জায়েয নেই। কেননা গোলাম আযাদ হয়ে গেলেই তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং তার কারণে শাস্তি অন্যের উপর পতিত হয় এবং অন্যের কারণে শাস্তি তার উপর পতিত হয়। সে যদি যিনা করে এবং বিবাহিত হয় তবে তাকে রজম [প্রস্তর নিক্ষেপ] করা হইবে। আর যদি সে হত্যা করে তবে তার বদলায় তাকেও হত্যা করা হইবে এবং তার ওয়ারিসগণ মীরাস দাবি করিতে পারবে। কেউ যদি প্রশ্ন করে যে, যদি কোন মনিব তার গোলামকে আযাদ করে এবং কোন ব্যক্তি এসে গোলামের মনিবের নিকট নিজের কর্জ দাবি করে এবং তার সপক্ষে একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলাকে সাক্ষীরূপে পেশ করে তবে মনিবের উপর করয প্রমাণিত হয়ে যাবে। আর যদি মনিবের নিকট এই গোলাম ছাড়া আর কোন সম্পদ না থাকে তবে গোলামের আযাদী ভঙ্গ হয়ে যাবে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আযাদীর ব্যাপারে মেয়েদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। তার উত্তর এই যে, এখানে মেয়েদের সাক্ষ্য কর্জ প্রমাণের জন্য গ্রহণযোগ্য। গোলাম আযাদের ব্যাপারে নয়। তার উদাহরণ এইরূপ যে, যদি কোন লোক তার গোলামকে আযাদ করে দেয়, অতঃপর তার পাওনাদারগণ এক সাক্ষী ও কসমের দ্বারা নিজের দাবি প্রমাণিত করে এবং এর কারণে গোলামের আযাদী বাতিল করে দেয়া হইবে। অথবা কেউ গোলামের মনিবের উপর কর্জের দাবি করে এবং সাক্ষী না থাকে তবে মনিব হইতে কসম গ্রহণ করা হইবে। যদি কসম করিতে অস্বীকার করে তবে বাঁদীর নিকট হইতে কসম নেয়া হইবে এবং কর্জ মনিবের উপর প্রমাণিত হইবে এবং গোলামের আযাদী বাতিল হইবে। এমনিভাবে যদি কেউ কোন দাসীকে বিবাহ করে এবং দাসীর মনিব স্বামীকে বলে যে, তুমি এবং অমুক ব্যক্তি মিলে আমার অমুক দাসীকে এত টাকায় খরিদ করেছ। স্বামী সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করিল। এদিকে মনিব যদি একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রী লোক সাক্ষীরূপে পেশ করে তবে এই অবস্থাতে বিক্রয় প্রমাণিত হয়ে যাবে এবং সে হকদার হয়ে যাবে ও বিবাহ হারাম হয়ে যাবে এবং বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে। অথচ স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য তালাকের ব্যাপারে জায়েয নেই।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন এইরূপভাবে যদি কেউ কোন আযাদ লোকের প্রতি যিনার অপবাদ দেয় তবে তার উপর শরীয়তের হুদুদ [শাস্তি] আসবে। আর যদি একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোককে সাক্ষীরূপে আনে এবং তারা সাক্ষ্য দেয় যে, যার উপর অপবাদ দেয়া হচ্ছে সে গোলাম তবে অপবাদ কারীর উপর হইতে শাস্তি বাতিল হয়ে যাবে। অথচ স্ত্রীলোকদের সাক্ষ্য অপবাদের মধ্যে চলে না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, যার মধ্যে বিচার ভিন্নরূপ হয় তার উদাহরণ এইরূপ- যেমন দুইজন স্ত্রীলোক সাক্ষ্য দিল যে, এই বাচ্চা জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছে, তা হলে এই বাচ্চার জন্য মীরাস প্রমাণিত হইবে এবং এই সন্তানের উত্তরাধিকার যে সেই মীরাসের মালিক হইবে, যদি সন্তান মৃত্যুবরণ করে এইখানেও দুইজন স্ত্রীলোকের সাথে কোন পুরুষ নেই কিংবা কসমও নেই। কোন সময় মীরাসের মাল অনেক হয়ে থাকে, যেমন স্বর্ণ, রৌপ্য, জমি, বাগান, গোলাম, ইহা ছাড়া অন্যান্য সম্পদ আর যদি একটি দিরহাম অথবা তার চাইতেও কম বা অধিক মালের ব্যাপারে দুইজন স্ত্রীলোক সাক্ষ্য প্রদান করে তবে তাদের সাক্ষ্যের দ্বারা কোন পরিবর্তন হইবে না এবং কার্যকরীও হইবে না, যতক্ষণ তাদের সাথে একজন পুরুষ সাক্ষ্য না থাকিবে অথবা কসম না থাকিবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, কোন কোন লোক বলে যে, একজন সাক্ষীর সাথে কসম প্রয়োজন হয় না এবং দলীলস্বরূপ এই আয়াত পেশ করে, “আল্লাহর কথা সত্য যদি দুইজন পুরুষ না পাওয়া যায় তবে একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোককে, যারা তোমাদের মনঃপূত হয় সাক্ষী মনোনীত কর।” [সূরা বাক্বারাহ, আয়াত ২৮২]
তারা বলে যে, একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোক না হলে তাদের জন্য কিছুই নেই। একজন সাক্ষীর সঙ্গে কসমও গ্রহণ করা হয় না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] উত্তরে বলেন যারা এরূপ বলে, তাদের বলা হইবে যে, তুমি কি দেখ না যে যদি কেউ কারো নিকট অর্থ দাবি করে তবে বিবাদীর নিকট হইতে কি কসম নেয়া হয় না? যদি সে কসম করে তবে তার উপর দাবিকৃত হক বাতিল হয়ে যায়। আর যদি সে কসম করিতে অস্বীকার করে তবে দাবিদারকে কসম দেয়া হইবে যে, তার দাবি সত্য, তা হলে হক তার উপর অবধারিত হয়ে যাবে। এই মাসআলায় কোন মানুষের মতভেদ নেই, আর কোন দেশের লোকেরও এতে মতভেদ নেই। তবে তোমরা এই কথা কোথা হইতে এনেছ? এবং আল্লাহর কোন কিতাব হইতে সংগ্রহ করেছ? যদি তোমাদের নিকট এটা জায়েয থাকে তবে একজন সাক্ষীর সাথে কসমের কথাও স্বীকার যথেষ্ট, কিন্তু যদি সত্য কথা পাওয়া যায় তা মেনে নেয়া কর্তব্য এবং দলীলের বিষয়গুলো দেখা প্রয়োজন। আল্লাহ্র ইচ্ছায় কঠিন বিষয় সহজ হয়ে যাবে।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৫ -ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি মারা গেলে এবং সেই ব্যক্তির নিকট কেউ ঋণ পাওনা থাকলে কিংবা অন্য ব্যক্তির উপর সেই মৃত লোকের ঋণ পাওনা থাকলে এবং উভয় অবস্থায় একজন সাক্ষী থাকলে
যদি এমন ব্যক্তি মারা যায়, যে মানুষের কাছে পাওনা আছে এবং পাওনার উপরে একজন মাত্র সাক্ষী আছে। আর উক্ত মৃত ব্যক্তির উপরও অপরের দেনা আছে এবং তার উপর একজন সাক্ষী আছে। এই ব্যাপারে তার ওয়ারিসগণ তাদের হকের উপর যদি হলফ করিতে অস্বীকার করে তবে পাওনাদারগণ হলফ করে তাদের পাওনা নিয়ে যাবে। যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে তা ওয়ারিসগণ পাবে না। কারণ তারা হলফ করিতে অস্বীকার করে তাদের স্বীয় হক ছেড়ে দিয়েছে। হ্যাঁ, ঐ সময় পাবে যখন ওয়ারিসগণ বলে যে, আমরা জানতাম না, যে কর্জ হইতে কিছুটা বাঁচবে। আর বিচারক তাদের কথায় বুঝতে পারে যে, তাদের কথা সত্য তবে এখন হলফ নিয়ে ঐ দেনা পরিশোধের পর সম্পদ হইতে অবশিষ্ট যা থাকে তা ওয়ারিসগণ নিয়ে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ৬ -দাবির মীমাংসা
১৪০৪ বর্ণণাকারী হইতে বর্ণিতঃ
জামিল ইব্নু আবদির রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] উমার ইব্নু আবদুল আযীয [রাহিমাহুল্লাহ]-এর দরবারে হাযির হয়ে তাঁর বিচার কার্য দেখিতেন। কোন লোক যদি কারো প্রতি কোন দাবি করত তবে এর প্রতি খুব লক্ষ্য করে দেখিতেন। অতঃপর যদি বলিতেন যে, তাদের মধ্যে [বাদী-বিবাদী] কাজে-কারবারে সমতা ও সামঞ্জস্য আছে, তবে বিবাদীকে কসম করাতেন, না হয় কসম করাতেন না। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, আমাদের কাছেও এই প্রথা যে, যদি কেউ কারো প্রতি কিছু দাবি করে তবে দেখিতে হইবে যে, যদি বাদী ও বিবাদীর মধ্যে সম্পর্ক ভাল থাকে এবং তারা সমপর্যায়ের হয় তবে বিবাদীকে কসম করাতে হইবে। যদি সে কসম করে তবে বাদীর দাবি বিবাদী হইতে ছুটে যাবে। আর যদি বিবাদী কসম করিতে অস্বীকার করে তবে এই কসম বাদীর দিকে ফিরে আসবে। সুতরাং সেই অবস্থায় কসম করে তার দাবি প্রমাণিত করে আদায় করে নিবে।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৭ -বালকদের সাক্ষ্যের উপর ফয়সালা
১৪০৫ হিশাম ইব্নু উরওয়াহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্ ইব্নু যুবায়র [রাদি.] বালকদের সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে তাদের মারামারির বিচার করে দিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন আমাদের নিকট এই হুকুম যে, যদি বালকগণ একে অপরকে আহত করে দেয় তবে তাদের সাক্ষ্য বৈধ। এটা ছাড়া অন্য মামলায় তা বৈধ হইবে না। ইহা ঐ সময় হইবে যখন ঝগড়া করে সেখানেই থাকে, অন্যত্র না গিয়ে থাকে। যদি অন্যত্র চলে যায় তবে তাদের সাক্ষ্য জায়েয নয়। যতক্ষণ না কোন নির্ভরযোগ্য মানুষের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় এবং বালকগণও ঐখানেই থাকে।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৮ -রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর মিম্বরে মিথ্যা কসম করা
১৪০৬ জাবির ইব্নু আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, আমার মিম্বরে যে মিথ্যা কসম করে সে যেন তার স্থান দোযখে বানিয়ে নেয়।
[সহীহ, আবু দাঊদ ৩২৪৬, ইবনি মাজাহ ২৩২৫, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন {ইরওয়া} ২৬৯৭]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪০৭ আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম করে কোন মুসলমান ভাইয়ের সম্পদ আত্মসাৎ করে তার জন্য আল্লাহ্ তাআলা বেহেশত হারাম করে দিবেন এবং দোযখ ওয়াজিব করে দিবেন। সাহাবীগণ বলিলেন, যদি সামান্য জিনিসও হয় তবে। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, যদিও পিলু গাছের একটি ডাল হয়, যদিও পিলু গাছের একটি ডাল হয়, যদিও পিলু গাছের একটি ডাল হয়, তিনি এই বাক্যকে তিনবার বলেছেন।
[সহীহ, মুসলিম ১৩৭]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদঃ ৯ -মিম্বরের উপরে কসম করা
১৪০৮ আবু গাতফান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
যায়দ ইব্নু সাবিত [রাদি.] ও ইব্নু মুতী-এর মধ্যে একটি ঘরের ব্যাপারে ঝগড়া হয়ে যায়। অবশেষে তারা এর বিচার মারওয়ানের নিকট নিয়ে গেলেন। সেই সময় তিনি মদীনার শাসনকর্তা ছিলেন। মারওয়ান বলিলেন, যায়দ ইব্নু সাবিত মিম্বরের উপর উঠে কসম করে নিক। যায়দ [রাদি.] বলিলেন, আমি আমার স্থানে দাঁড়িয়ে কসম করে নেই। মারওয়ান বলিলেন, আল্লাহর কসম, এটা হইতে পারে না। অন্য লোকেরা যেখানে তাদের হকের মীমাংসা করে সেখানেই করিতে হইবে। অতঃপর যায়দ [রাদি.] নিজ স্থানে দাঁড়িয়ে বলিতে লাগলেন, আমি কসম করে বলছি যে, আমার দাবি সত্য, কিন্তু মিম্বরের উপর গিয়ে কসম করিতে অস্বীকার করিতে লাগলেন। মারওয়ান এতে বিস্মিত হয়ে গেলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, এক-চতুর্থাংশ দীনারের কম দাবি হলে মিম্বরের উপর কাউকে কসম করানো ঠিক নয়, এক চতুর্থাংশ দীনারের মূল্য হল তিন দিরহাম।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ১০ -রেহেনকে বাধা দেয়া নাজায়েয
১৪০৯ সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন “রেহেনকে [বন্ধক] বন্ধ করা উচিত নয়।” [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর ব্যাখ্যা আমাদের নিকট এই যে, [আল্লাহই ভাল জানেন] এক ব্যক্তি কিছু জিনিস অপর ব্যক্তির নিকট রেহেন রাখল কোন জিনিসের পরিবর্তে। আর রেহেন-এর বস্তুটি মূল্যবান যে জিনিসের পরিবর্তে রাখা হয়েছে তার চাইতে। অতঃপর রেহেন [গচ্ছিতকারী] মুরতাহেনকে [যার কাছে রাখা হয়েছে] বলল, আমি যদি নির্দিষ্ট তারিখে আপনার জিনিস নিয়ে আসি তবে আমার জিনিস আমাকে দিবেন আর যদি আমি এ সময় না আসতে পারি তবে গচ্ছিত মাল আপনার। এইরূপ করা জায়েয নাই এবং হালালও নয়। এটাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদি নির্দিষ্ট দিনের পরে ঐ ব্যক্তি আসে তবে রেহেনের বস্তু তারই হইবে। আর এই শর্ত বাতিল হইবে।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ১১ -ফল ও জন্তুর রেহেনের ফয়সালা
যদি কোন বাগান নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত রেহেন [বন্ধক] রাখে তবে এ বাগানের ফল যা রেহেন রাখার পূর্বে হয়েছে তা গাছের সাথে রেহেন ধরা যাবে না। কিন্তু যদি রেহেনের সময় রেহেন রক্ষক শর্ত করে দিয়ে থাকে তবে জায়েয হইবে। আর যদি কোন ব্যক্তি একটি গর্ভবতী বাঁদী রেহেন রাখল অথবা রেহেন রাখার পর সে গর্ভবতী হয় তবে বাচ্চাও সাথে রেহেন ধরা যাবে। গাছের ফল আর সন্তানের মধ্যে এই ব্যবধান। কারণ রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন যে, যদি খেজুর গাছ এই অবস্থায় বিক্রয় করে যে, সেই খেজুর গাছকে তাবীর [পরাগয়ন] করেছিল তবে এই খেজুর বিক্রেতারই হইবে। কিন্তু যদি শর্ত করে থাকে তবে ভিন্ন কথা। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, আমাদের কাছে এটা একটি মতভেদহীন মাসআলা। তা হল যদি কেউ কোন ক্রীতদাসী অথবা জানোয়ার বিক্রয় করে এবং ঐ দাসী কিংবা জানোয়ার গর্ভবতী হয় তবে ঐ বাচ্চা খরিদ্দারের হইবে। খরিদ্দার শর্ত করুক চাই না করুক। সুতরাং জানা গেল যে, খেজুর গাছের হুকুম জানোয়ারের হুকুমের মতো নয় আর ফলের হুকুমও গর্ভাধারের বাচ্চার হুকুমের মতো নয়।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট কথা এই যে, মানুষ গাছ ছাড়াও খেজুরকে রেহেন রাখতে পারে। কিন্তু দাসী বা পশুর বাচ্চা যা মাতৃগর্ভে রয়েছে তাকে কোন মানুষ রেহেন রাখতে পারে না।
পরিচ্ছেদঃ ১২ -জন্তু রেহেন রাখার ফয়সালা
আমাদের নিকট এটা একটি মতবিরোধহীন মাসআলা। তা এই যদি রেহেন রাখা জিনিস এমন হয় যা ক্ষতি হলে বোঝা যায় যেমন জমি, ঘর ও জন্তু। অতঃপর উহা মুরতাহেন [যার নিকট রক্ষিত]-এর নিকট নষ্ট হয়ে যায়, তবে মুরতাহেনের প্রাপ্য হইতে কমবে না, বরং ইহা রাহিনের [রেহেন যে দিয়েছে] ক্ষতি হইবে। আর যদি তা এমন জিনিস হয় যা নষ্ট হলে শুধু মুরতাহেনের কথায়ই বোঝা যায় [যেমন কাপড়, স্বর্ণ, রূপা] তবে মুরতাহেনের ক্ষতি ধরা হইবে এবং উহার মূল্যের জন্য সেই দায়ী হইবে। আর যদি রাহেন ও মুরতাহেনের মধ্যে মূল্য সম্বন্ধে ঝগড়া হয় তবে মুরতাহেনকে বলা হইবে যে, কসম করে এ জিনিসের গুণ ও মূল্যের পরিমাণ বর্ণনা কর। যদি সে বর্ণনা করে তবে জ্ঞানী লোকগণ তা চিন্তা করে মুরতাহেনের বর্ণনা অনুযায়ী মূল্য ধার্য করিবেন। আর যদি মূল্য রাহেনের মূল্য হইতে অধিক হয় তবে রাহেন অধিক মূল্য গ্রহণ করিবে। আর যদি উহার মূল্য রাহেনের মূল্য হইতে যতদূর বেশি বলেছে তা তার দায়িত্ব হইতে নেমে যাবে। আর যদি রাহেন কসম না করে তবে ঐ পরিমাণ মূল্য মুরতাহেনকে আদায় করে দিবে। আর যদি মুরতাহেন বলে যে আমি এ জিনিসের মূল্য জানি না তবে রাহেনকে ঐ জিনিসের গুণাবলির উপর কসম দেয়া হইবে, যদি সে কসম করে তবে তার বর্ণনা অনুযায়ী ফয়সালা করা হইবে, যদি সে অসঙ্গত কিছু না বলে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, এটা ঐ সময় হইবে যখন জিনিসটি মুরতাহেন নিজ অধিকারে আনয়ন করেছে এবং সে অন্য কারো হাতে উহা রাখেনি।
পরিচ্ছেদঃ ১৩ -দুই ব্যক্তির নিকট রেহেন রাখার ফয়সালা
১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
যদি দুইজনের কাছে রেহেন থাকে তাদের মধ্যে একজন বলে যে, আমার রেহেন বিক্রয় করে নিয়ে যাব এবং দ্বিতীয়জন তাকে এক বৎসরের সময় দেয় তবে যদি ঐ জিনিস এমন হয় যে, অর্ধেক বিক্রয় করে ফেললে বাকী অর্ধেক যার নিকট আছে তার কোন ক্ষতি হইবে না, তবে অর্ধেক বিক্রয় করে তার কর্জ আদায় করে দিবে। আর যদি অর্ধেক বিক্রয় করলে বাকী অর্ধেকের ক্ষতি হয় তবে পূর্ণ জিনিসটিই বিক্রয় করে যে তাগাদা করিতেছিল তাকে দিয়ে দিবে। আর যে এক বৎসরের সময় দিয়েছিল সে যদি খুশিতে দিতে চায় তবে অর্ধেক পয়সা রাহেনকে দেবে। না হয় তাকে কসম দেয়া হইবে যে আমি তাকে এক বৎসরের সময় এইজন্য দিচ্ছিলাম যেন পূর্ণ রেহেন আমার নিকট থাকে। সে যদি কসম করে নেয় তবে ঐ সময়ই তার হক আদায় করে দেয়া হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যদি কোন গোলাম রেহেন রাখা হয় তবে গোলামের সাথে যা মাল থাকে তা রেহেন ধরা যাবে না। কিন্তু যদি রেহেন গ্রহীতা শর্ত করে নেয় তবে মালও রেহেন ধরা হইবে।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ১৪ -রেহেনের বিবিধ প্রকার
১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
যদি কোন বস্তু রেহেন রাখার পর তা রেহেন গ্রহীতার নিকট নষ্ট হয়ে যায় এবং রাহেন ও মুরতাহেন উভয়ই রেহেনের বস্তু ও পরিমাণ সম্পর্কে কোন দ্বিমত রাখে না, কিন্তু রেহেনের বস্তুর মূল্যে তাদের মতভেদ হয়, যেমন রাহেন বলে যে, তার মূল্য বিশ দীনার আর মুরতাহেন বলে যে, তার মূল্য দশ দীনার অথচ রেহেনকৃত বস্তুর মূল্য বিশ দীনারই ছিল। এই অবস্থায় রেহেন গ্রহীতাকে বলা হইবে যে, তুমি রেহেনের গুণ বর্ণনা কর। যদি সে বর্ণনা করে তবে তাকে এই ব্যাপারে কসমও দেয়া হইবে। অতঃপর এই ব্যাপারে ওয়াকিফহাল একজন লোক তার মূল্য নির্ণয় করিবে। যদি নির্ণয় করার মূল্য রেহেনের বস্তুর মূল্যের চাইতে অধিক হয় তবে মুরতাহেনকে বলা হইবে যে, অবশিষ্ট মূল্য রেহেনদাতাকে ফেরত দিয়ে দাও। আর যদি সেই নির্ধারিত মূল্য রেহেনের বস্তুর মূল্যের চাইতে কম হয় তবে অবশিষ্ট মূল্য রাহেনকে ফেরত দিতে বলা হইবে। আর যদি সমান হয় তবে আর কোন কথাই থাকিবে না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, দুইজনের মধ্যে যদি মতভেদ হয় রেহেনদাতা বলে যে, তোমার কাছে উহা আমি দশ দীনারে রেহেন রেখেছি, আর রেহেন গ্রহীতা বলে যে, আমি তোমার নিকট হইতে উহা বিশ দীনার প্রদান করার পরিবর্তে গ্রহণ করেছি। আর জিনিস গ্রহীতার নিকট আছে, এই অবস্থায় গ্রহীতাকে কসম দেয়া হইবে। অতঃপর যদি ঐ অর্থের অংশ রেহেনের বস্তুর মূল্যের সমান হয় তবে তো কোন কথাই নাই। আর যদি গ্রহীতার দাবি বিশ দীনার উহা হইতে মূল্য কম হয় তবে রেহেনদাতাকে কসম দেয়া হইবে। সে মুরতাহেনের হক আদায় করে তা [রেহেন বস্তু] গ্রহণ করিতেও পারে, নাও করিতে পারে। উহা দিয়ে মুরতাহেন তার হক গ্রহণ করিবে। মুরতাহেনকেই প্রথমে কসম দেয়া উত্তম, কারণ রেহেনের বস্তুটি তার কবজায় আছে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, যদি রেহেন বিশ দীনার হইতে কম হয় তবে রেহেন গ্রহীতাকে কসম দেয়া হইবে। অতঃপর রেহেনদাতাকে বলা হইবে যে, তোমার এখন ইচ্ছা বিশ দীনার আদায় করে নিজ বস্তু নিয়ে যাবে অথবা নিজেও কসম করিবে যে, এত অর্থে আমি উহা রেহেন রেখেছিলাম। যদি কসম করে নেয় তবে রেহেনগ্রহীতা রেহেনের বস্তুর চাইতে যতদূর কর্জের কথা অধিক বলেছিল তা তার জিম্মা হইতে উঠে যাবে। আর যদি কসম না করে তবে তাকে মুরতাহেনের দাবি যা তা দিতে হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি রেহেনের বস্তু নষ্ট হয়ে যায় এবং তাদের নিজ নিজ দাবির মধ্যে মতভেদ হয়ে যায় যেমন রেহেনগ্রহীতা বলে যে, রেহেনের অর্থ বিশ দীনার ছিল। আর রেহেনের মূল্য মাত্র দশ দীনার ছিল। পক্ষান্তরে রেহেনদাতা বলে যে, রেহেনের বস্তুর মূল্য বিশ দীনার এবং রেহেনের বাবদে প্রদত্ত অর্থ দশ দীনার ছিল, তবে এই অবস্থায় রেহেন গ্রহীতাকে বলা হইবে যে, তুমি রেহেনের বস্তুর বর্ণনা দাও। অতঃপর অভিজ্ঞ লোকগণ বর্ণনা অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করিবে। যদি মূল্য বিশ দীনারের চাইতে অধিক হয় তবে রেহেনগ্রহীতাকে হলফ করিয়ে যতদূর বেশি হয় দাতাকে দেয়া হইবে। আর যদি বিশ দীনার হইতে কম হয় তবে রেহেন গ্রহীতাকে কসম দেয়া হইবে। মূল্য যা আদায় হয়েছে তা তো গ্রহীতার, আর বাকির জন্য দাতার নিকট হইতে কসম নেয়া হইবে। যদি সে কসম করে তবে গ্রহীতা দাতার নিকট হইতে কিছুই নিতে পারবে না। আর কসম না করলে বিশ দীনার হইতে যত কম তত দীনার দাতার দিতে হইবে।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ১৫ -জন্তুর ভাড়া এবং তার উপর অত্যচার করার ফয়সালা
১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
যদি কেউ কোন জন্তু ভাড়া নেয় কোন স্থান পর্যন্ত, তার পর ঐ স্থানের আরো আগে চলে যায় তবে জন্তুর মালিকের ইখতিয়ার আছে, সে যতদূর অগ্রসর হয়েছে তার ভাড়া নিবে অথবা ঐ দিনের যা মূল্য হয় এবং ঐ স্থানের ভাড়াসহ ভাড়াটিয়ার নিকট হইতে নিতে পারবে। যদি শুধু যাওয়ার ভাড়া নির্ধারিত হয়, তবে এই হুকুম, আর যদি ফিরবার ভাড়ার কথাও থাকে তবে তা হইতে অর্ধেক নিবে কেননা অর্ধেক যাওয়ার ছিল, আর অর্ধেক ফিরবার ছিল। অতঃপর যখন ভাড়াটিয়া সীমালংঘন করিল তখন তার উপর অর্ধেক ভাড়া ওয়াজিব হয়েছিল। আর যদি আসা-যাওয়ার জন্য জন্তু ভাড়া করে থাকে এবং গন্তব্য স্থানে যাওয়ার পর জন্তু মরে যায় তবে ভাড়াটিয়ার উপরে কোন জরিমানা করা যাবে না এবং মালিক শুধু অর্ধেক ভাড়া পাবে। এমনিভাবে পুঁজিপতি কারবারীকে বলল যে, অমুক মাল খরিদ করিতে পারবে না যেমন বিশেষ জন্তু। অতঃপর কারবারী মনে করিল যে, খরিদ করলে আমিই দায়ী হব এবং যা লাভ হইবে সমস্তই আমি আত্মসাৎ করব। এই মনে করে এ নিষিদ্ধ মালই খরিদ করিল, তবে এখন পুঁজিপতির ইচ্ছা সে তার সাথে কারবারে শরীক থেকে লাভের অংশও গ্রহণ করিতে পারে অথবা নিজের আসল পুঁজি ফিরিয়ে নিতে পারে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, এইরূপে মাল খরিদ করার ব্যাপারে পুঁজিপতি যদি বলে যে, অমুক বস্তু খরিদ করো, আর সে অন্য মাল খরিদ করে, তা হলেও পুঁজিপতির ইচ্ছা, যা খরিদ করেছে তা গ্রহণও করিতে পারে, আবার মাল না নিয়ে আসল মূলধন ফেরতও নিতে পারে।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ১৬ -কোন স্ত্রীলোকের সাথে জবরদস্তি যিনা করলে তার ফয়সালা
১৪১০ ইব্নু যুহরী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল মালিক ইব্নু মারওয়ান জবরদস্তিভাবে যিনা করা হয়েছে এমন স্ত্রীলোকের ফয়সালা এই দিয়েছেন ব্যভিচার যে করেছে ঐ স্ত্রীলোকটিকে মোহর দান করিবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন আমাদের নিকট এই ফয়সালা যে, যদি কেউ কোন স্ত্রীলোকের উপর জবরদস্তি করে, চাই সে কুমারী হোক অথবা অকুমারী, যদি সে স্বাধীনা হয় তবে তাকে মাহরে মিসাল দেয়া আবশ্যক। আর যদি সে দাসী হয় তবে যিনার দ্বারা যে মূল্য কম হয়েছে তা আদায় করিতে হইবে এবং ব্যভিচারীর শাস্তিও সঙ্গে সঙ্গে হইবে এবং উক্ত স্ত্রীলোকের উপর কোন শাস্তি হইবে না। আর যদি ব্যভিচারী গোলাম হয় তবে মনিবের জরিমানা দিতে হইবে। কিন্তু যদি গোলামকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিয়ে দেয় তবে ভিন্ন কথা। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ১৭ -জন্তু অথবা খাদ্য নষ্টের ফয়সালা
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
যদি কেউ মালিকের অনুমতি ছাড়া কোন জন্তু নষ্ট করে ফেলে তবে ঐ দিন জন্তুর যা মূল্য হইবে তাই ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হইবে। এই ধরনের কোন জন্তু মালিককে দিবে তা জায়েয নেই। আর এমনিভাবে সব ক্ষেত্রেই জন্তুর মূল্য দিতে হইবে, ঐরূপ জন্তু দিলে চলবে না। অন্যান্য জিনিসপত্রেরও এই হুকুম। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, যদি কেউ কারো খাদ্য নষ্ট করে মালিকের হুকুম ছাড়া, তবে ঐ রকম ও ঐ পরিমাণ খাদ্য মালিককে দিতে হইবে, কেননা খাদ্যের উদাহরণ স্বর্ণ চাঁদির মতো। স্বর্ণের পরিবর্তে স্বর্ণ দেয়া যায়, রুপার পরিবর্তেও রুপা দেয়া যায়, আর জন্তু স্বর্ণের মতো নয়। কাজেই এই দুইয়ের মধ্যে এতদূর পার্থক্য বিদ্যমান।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, যদি কোন ব্যক্তি কারো নিকট কিছু আমানত রাখে এবং সে ঐ অর্থ বা সম্পদ দ্বারা জিনিসপত্র খরিদ করে লাভবান হয় তবে ঐ লভ্যাংশ আমানত গ্রহণকারীই পাবে, কেননা এই মালের জামিন সে-ই, যতক্ষণ না আমানতকারীর কাছে ফেরত দেয়।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ১৮ -ইসলাম ত্যাগ করলে তার হুকুম
১৪১১ যায়দ ইব্নু আসলাম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজ দ্বীন [ধর্ম]-কে পরিবর্তন করে তার গর্দান উড়িয়ে দাও। [সহীহ, ঈমাম বুখারি অন্য সনদে বর্ণনা করেন ৩০১৭, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমার কাছে রসূলুল্লাহ্- “এর কথা-যে দ্বীন পরিবর্তন করে ফেলে তার গর্দান উড়িয়ে দাও”-এর অর্থ এই যে, কোন মুসলমান ইসলাম ধর্ম ছেড়ে দেয় ও ধর্মত্যাগী [যিনদীক] বা এই ধরনের কিছু হয়ে যায় তবে তাদের উপর মুসলমানগণ বিজয়ী হলে তাদেরকে কতল করে দেয়ার হুকুম। তাদেরকে তাওবা করারও সময় দেয়া হইবে না কারণ তাদের তাওবার কোন মূল্য নেই। যেহেতু তাদের অন্তরে কুফরী অংকিত হয়ে গিয়েছে, ফলে তারা প্রকাশ্যে ইসলাম প্রকাশ করিবে এবং অন্তরে কুফরী করিতে থাকিবে। আর যে ব্যক্তি কোন কারণে ইসলাম হইতে বের হয়ে যায় তবে তাকে তাওবা করাবে। আর যদি তাওবা করিতে অস্বীকার করে তবে হত্যা করে দিবে। আর যদি কোন কাফের অন্য কোন কুফরী ধর্ম গ্রহণ করে যেমন ইহুদী হইতে নাসারা হয়ে গেল তবে সে তার দ্বীন পরিবর্তন করেছে বলে এই হাদীস বোঝা যায় না। এই হাদীস দ্বারা একমাত্র ইসলাম হইতে বহিষ্কার হওয়ার হুকুম প্রকাশ পায়।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪১২ মুহাম্মাদ ইব্নু আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] তার পিতা হইতে বর্ণিতঃ
আবু মূসা আশআরী [রাদি.]-এর নিকট হইতে এক ব্যক্তি উমার [রাদি.]-এর নিকট এল। উমার [রাদি.] তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সেখানের লোকের কি অবস্থা? সে সেখানের অবস্থা বর্ণনা করিল। অতঃপর উমার [রাদি.] বলিলেন, সেখানের কোন অভিনব সংবাদ আছে কি? লোকটি বলল, হ্যাঁ, আছে এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর আবার কাফের হয়ে গেছে। উমার [রাদি.] বলিলেন, তোমরা তাকে কি করেছ? সে বলল, তাকে বন্দী করে শিরোশ্চেদ করেছি। উমার [রাদি.] বলিলেন, তোমরা যদি তাকে তিন দিন পর্যন্ত বন্দী করে রাখতে আর শুধু ১টি রুটি খেতে দিতে এবং তাওবা করাতে তবে হয়ত সে তাওবা করত এবং আল্লাহর দ্বীনের দিকে এসে যেত। অতঃপর উমার [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্, আমি ঐ কাজে শামিল ছিলাম না, মারার হুকুমও দেইনি, কিংবা তার খবর শুনেও খুশী হইনি। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ১৯ -কেউ যদি নিজ স্ত্রীর সাথে অপর পুরুষকে দেখে তবে তার ফয়সালা
১৪১৩ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
সাদ ইব্নু উবাদা [রাদি.] রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, আমি যদি আমার স্ত্রীর সাথে অপর লোককে দেখি তবে কি তাকে সময় দিব যতক্ষণ চারজন সাক্ষী যোগাড় না করিতে পারি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, হ্যাঁ। [সহীহ, মুসলিম ১৪৯৮]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪১৪ সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব হইতে বর্ণিতঃ
একজন সিরিয়াবাসী তার স্ত্রীর সাথে অপর একজনকে [লিপ্ত] দেখিতে পেয়ে তাকে অথবা দুইজনকেই মেরে ফেলল। মুআবিয়া [রাদি.] আবু মূসা আশআরী [রাদি.]-এর নিকট লিখে পাঠালেন যে, আলী [রাদি.]-এর নিকট জিজ্ঞেস করে আমাকে জানাও তার কি সমাধান? অতঃপর আবু মূসা [রাদি.] তাহাকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বলেন, এই ঘটনা আমার দেশের বলে মনে হয় না। সত্য করে বল কোন দেশের ঘটনা, [আমার মনে হয় তুমি আমাকে পরীক্ষা করিতেছ]। আবু মূসা [রাদি.] বলিলেন, আমার নিকট আবু সুফিয়ানের পুত্র মুআবিয়া চিঠি লিখেছেন এ বিষয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করার জন্য। আলী [রাদি.] বলিলেন আমি হলাম আবুল হাসান [হাসানের পিতা] যদি চার জন সাক্ষী না আনতে পারে তবে যেন তাকে [হত্যাকারীকে] উত্তমরূপে বন্দী করা হয়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২০ -ফেলে দেয়া শিশুর ফয়সালা
১৪১৫ বর্ণণাকারী হইতে বর্ণিতঃ
সুনাইন ইব্নু আবী জমিলা [রাহিমাহুল্লাহ] বনী সুলায়মান বংশোদ্ভূত, তিনি উমার [রাদি.]-এর জামানায় ফেলে দেয়া একটি শিশু পেয়েছিলেন। তিনি বলেন যে, তাকে আমি উঠিয়ে উমার [রাদি.]-এর দরবারে হাযির হলাম। উমার [রাদি.] বলিলেন, তুমি তাকে কেন উঠিয়েছ? তিনি বলিলেন, আমি তাকে উঠিয়ে না আনলে সে ধ্বংস হয়ে যেত। এমন সময় পরিচিত এক ব্যক্তি বলল, হে আমিরুল মুমিনীন, আমি এই ব্যক্তিকে চিনি, সে খুব নেককার লোক। উমার [রাদি.] বলিলেন, সত্যই কি সে নেককার? সে বলল, হ্যাঁ। অতঃপর উমার [রাদি.] বলিলেন, তুমি চলে যাও, এই সন্তান আযাদ [মুক্ত], তুমি তার অভিভাবকত্ব পাবে। আর আমরা তার খরচাদি বহন করব। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন আমাদের নিকট হারানো প্রাপ্ত সন্তান আযাদ। তার অভিভাবকত্ব মুসলমানদের জন্য, তারাই তার উত্তরাধিকারী এবং তারাই তার পক্ষ হইতে দীয়্যত [ক্ষতিপূরণ] দেবে।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২১ -সন্তানকে তার পিতার সাথে সম্পৃক্ত করা
১৪১৬ নবী করীম রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর সহধর্মিণী আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, উতবা ইব্নু আবী ওয়াক্কাস [রাদি.] মৃত্যুর সময় তার ভাই সাদ ইব্নু আবী ওয়াক্কাসকে বলে গিয়েছিলেন যে, যামআ-এর দাসীর সন্তান আমার, তুমি তাকে নিয়ে এস। আয়িশা [রাদি.] বলেন যে, মক্কা বিজয়ের দিন সাদ ঐ সন্তানকে আনলেন ও গ্রহণ করলেন এবং তিনি বলিলেন, সে আমার ভাই-এর সন্তান। তিনি আমাকে মৃত্যুর সময় অঙ্গীকার করিয়ে ছিলেন। এইদিকে আবদ ইব্নু যামআ [রাদি.] বলিলেন, সে আমার ভাই এবং আমার পিতার দাসীর ছেলে ও আমার পিতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে। অবশেষে দুইজন বিতর্ক করে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর নিকট এলেন। সাদ বলিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! সে আমার ভাইয়ের সন্তান, মৃত্যুকালে আমার ভাই আমাকে অঙ্গীকার করিয়ে গিয়েছিল। অতঃপর আবদ ইব্নু যামআ বলিলেন, সে আমার ভাই আমার পিতার দাসীর গর্ভে ও আমার পিতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে। তার পর সব শুনে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, হে আবদ ইব্নু যামআ, সে তোমারই ভাই, সে তোমারই কাছে থাকিবে, অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, সন্তান তার মাতার স্বামীর অথবা মনিবেরই হয়ে থাকে আর ব্যভিচারীর জন্য প্রস্তরই নির্ধারিত। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ সাওদা বিনত যামআকে বলেন, হে সাওদা! এ সন্তান হইতে পর্দা করো, কেননা তার আকৃতি উৎবার সদৃশ। অতঃপর সে আর সাওদাকে তার মৃত্যু পর্যন্ত দেখেনি। [বুখারি ২০৫৩, মুসলিম ১৪৫৭]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪১৭ আবদুল্লাহ ইব্নু আবী উমাইয়া [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
এক স্ত্রীলোকের স্বামীর ইন্তেকাল হয়। অতঃপর চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করার পর অন্য একজনের নিকট তার বিবাহ হয়। বিবাহের পর সেই স্বামীর নিকট সাড়ে চার মাস অতিবাহিত করার পর তার একটি পূর্ণাঙ্গ সন্তান ভূমিষ্ঠ হল। অতঃপর তার স্বামী উমার [রাদি.]-এর নিকট এসে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করিল। উমার [রাদি.] অন্ধকার যুগের কয়েকজন বৃদ্ধা স্ত্রীলোককে ডাকালেন এবং তাদেরকে এই সম্বন্ধে প্রশ্ন করলেন। তখন তাদের একজন বলল, আমি আপনাকে তার বৃত্তান্ত বলিতেছি। এই স্ত্রীলোকটি তার মৃত স্বামী হইতে গর্ভবতী হয়েছিল। সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় তার রক্তস্রাব হল, এতে সন্তান শুকিয়ে যায়। অতঃপর দ্বিতীয় বিবাহের পর স্বামী তার সাথে সংগত হওয়ায় সন্তানের উপর পুরুষের বীর্য পতিত হয়। এতে সন্তান নড়াচড়া করে এবং বড় হইতে থাকে। অতঃপর উমার [রাদি.] তাদের কথা সত্য বলে মানলেন এবং বিবাহ ভঙ্গ করে দিলেন এবং বলিলেন যে, তোমাদের সম্বন্ধে কোন খারাপ কথা আমি শুনিনি। অতঃপর সন্তানটি প্রথম স্বামীর ঔরসজাত বলে সিদ্ধান্ত দিলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪১৮ সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাদি.] অন্ধকার যুগের সন্তানকে যদি কেউ ইসলামের যুগে দাবি করত তবে তার সাথে মিলিয়ে দিতেন। একবার দুইজন লোক একটি সন্তানকে নিজের বলে দাবি করে। অতঃপর উমার [রাদি.] কেয়াফাবিদকে [লক্ষণ দেখে পরিচয় নির্ণয়কারী] ডেকে পাঠালেন। কেয়াফাবিশারদ সন্তানকে দেখে বলল, সন্তান দুইজনেরই। অতঃপর উমার [রাদি.] তাকে দোররা দ্বারা আঘাত করলেন। তার পর সন্তানের মাতাকে ডেকে বলিলেন তোমার বৃত্তান্ত খুলে বল। সে একজনের দিকে ঈঙ্গিত করে বলল যে, সে আমার নিকট আসা-যাওয়া করত এবং আমি আমার বাড়ির উটের ঘরের কাছে থাকতাম। ঐ সময়ে সে আমার সথে সঙ্গম করত। অতঃপর সে যখন ধারণা করিতে পারল যে, আমি গর্ভবতী হয়েছি তখন সে আর কাছে আসত না, আর আমার রক্তস্রাব দেখা যেত। তারপর এই দ্বিতীয়জন তার পর আমার নিকট এল। সেও আমার সাথে সঙ্গম করিল। এখন আমি জানি না, এই সন্তান দুইজনের মধ্য হইতে কার। ইহা শুনে কেয়াফাবিদ খুশিতে আল্লাহু আকবর [আল্লাহ্ মহান] বলে উঠল। অতঃপর উমার [রাদি.] সন্তানকে বলিলেন, যার সাথে খুশি তুমি যেতে পার। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪১৯ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাদি.] অথবা উসমান [রাদি.] এই দুইজনের মধ্যে একজন এক স্ত্রীলোকের ফয়সালা করেছিলেন। সেই স্ত্রীলোকটি ধোঁকা দিয়ে একজনকে বলল, আমি আযাদ এবং তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হল। অতঃপর তাদের সন্তান হয়েছিল। ফয়সালা দেয়া হয়েছিল, স্বামী তার সন্তানের মতো বালক-বালিকা স্ত্রীলোকটির মনিবকে দিবে এবং নিজের সন্তান মুক্ত করে নিবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এই স্থানে মূল্য দান করিয়া দেয়াই উত্তম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২২ -যে সন্তানকে পিতার সাথে মিলানো হয়েছে তার মীরাসের ফয়সালা
আমাদের কাছে এটা একটি সর্বসম্মত মাসআলা। কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার সময় কয়েকটি সন্তান রেখে গেল। তাদের মধ্য হইতে কেউ বলল, আমার পিতা বলে গিয়েছেন অমুক ব্যক্তি আমার ছেলে। এই অবস্থায় একজনের সাক্ষ্যে পুত্রের সম্পর্ক প্রমাণিত হইবে না এবং সম্পত্তিও সে পাবে না। তবে যে ছেলে স্বীকার করেছে তার অংশ হইতে সে অংশ পাবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, এক ব্যক্তি দুই ছেলে রেখে মারা গেল এবং ছয়শত দীনার রেখে গেল। দুই ছেলে এখান হইতে তিনশত করে পেল। তার পর এক ছেলে বলল আমাদের মৃত পিতা বলেছিলেন যে, ঐ ব্যক্তি তার ছেলে। তখন যে স্বীকার করিল তার তিনশত দীনার হইতে একশত দীনার সেই ব্যক্তি পাবে, কেননা, সে মৃত ব্যক্তির ছেলে হিসেবে এই অর্ধেক অংশ পাবে। অর্থাৎ সে ছেলে প্রমাণিত হলে দুইশত দীনার পেত, এখন একশত দীনার পেয়েছে। আর যদি দ্বিতীয় ছেলেও স্বীকার করে তবে তার নিকট হইতেও একশত পাবে এবং তার হক পূর্ণ হইবে এবং তার বংশও মৃত ব্যক্তি হইতে প্রমাণিত হল। তার আর একটি উদাহরণ এই কোন স্ত্রীলোক তার পিতা অথবা স্বামীর ঋণের কথা স্বীকার করে আর অন্যান্য অংশীদার অস্বীকার করে, এ অবস্থায় সে নিজ অংশ অনুপাতে নিজ হইতে কর্জ আদায় করিবে। স্ত্রীলোকটি যদি এক-অষ্টমাংশ পায় তবে ঋণেরও এক-অষ্টমাংশ আদায় করিবে, আর যদি পিতার সম্পত্তি অর্ধেক পায় তবে ঋণেরও অর্ধাংশ আদায় করিবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যদি কোন পুরুষ ঋণের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় যেমন স্ত্রীলোকটি স্বীকার করেছে, যথা এই মৃতের নিকট তার এই পরিমাণ পাওনা আছে তবে ঋণদাতার নিকট হইতে কসম গ্রহণ করা হইবে এবং ঋণদাতার পূর্ণ কর্জ শোধ করা হইবে। কেননা এই ব্যাপার স্ত্রীলোকটির ব্যাপারের মতো নয়, কেননা পুরুষের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। আর যদি কর্জদার কসম না করে, তবে যে স্বীকার করেছে শুধু তার অংশ হইতে কর্জদারকে দেয়া হইবে তার হিস্যা [অংশ] অনুযায়ী।
১৪২০ ইব্নু উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাদি.] বলেন যে, লোকদের হল কি, তারা দাসীদের সাথে সহবাস করে এবং আযল {১} করে। ভবিষ্যতে যদি কোন দাসী আমার নিকট আসে এবং তার মনিব তার সাথে সঙ্গম করার স্বীকারোক্তি করে তবে আমি ঐ সন্তানকে মনিবের সাথে মিলিত করে দিব, এখন তোমরা চাই আযল কর, চাই আযল না কর। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} সঙ্গম করার কালে সন্তান না জন্মাবার উদ্দেশ্যে বীর্যপাত ভিতরে না করে বাহিরে করাকে আযল বলে।বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪২১ সফিয়া বিন্ত আবী উবায়দ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাদি.] বলেন, মানুষের হল কি? তারা দাসীদের সাথে সহবাস করে। অতঃপর তাকে ছেড়ে দেয়। এখন হইতে যদি এমন কোন দাসী আমার নিকট আসে যার মনিব তার সাথে সঙ্গম করার স্বীকারোক্তি করে তবে সন্তানের বংশ তার সাথে জুড়ে দিব। এখন তোমরা তাকে ছেড়ে দাও, চাই রেখে দাও। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন এই ব্যাপারে আমার মত এই যে, যদি কোন দাসী ক্ষতিকর কার্য করে তবে তার ক্ষতিপূরণ তার মনিব আদায় করিবে। দাসীকে ক্ষতির পরিবর্তে দেয়া যাবে না। কিন্তু যদি জরিমানা তার মূল্যের চাইতে বেশি হয় তবে তা ভিন্ন কথা।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২৪ -পতিত জমিকে আবাদ করার ফয়সালা
১৪২২ উরওয়া ইব্নু যুবায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, যদি কেউ কোন পতিত জমি আবাদ করে তবে উহা তারই হইবে। উহাতে কোন জালিমের অধিকার নেই। [সহীহ, আবু দাঊদ ৩০৭৩, তিরমিজি ১৩৭৮, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন {সহীহ আল জামে} ৫৯৭৬, ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, জালিমের দখল বলিতে বোঝায় যে, জবরদস্তি কোন জমিতে গর্ত খনন, কিংবা গাছ লাগান, অথবা অন্য উপায়ে কব্জা করা। অথচ তাতে তার কোন হক [অধিকার] নেই।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪২৩ আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাদি.] বলেছেন, যদি কেউ অনাবাদী জমি আবাদ করে তা তারই হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন আমাদের নিকটও এই হুকুম।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২৫ -পানির ফয়সালা
১৪২৪ আবদুল্লাহ্ ইবনি আবী বাকর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ, মাহযুর ও মুযায়ানব নামক দুইটি খাল সম্বন্ধে বলেছেন যে, যার ক্ষেত খাল সংলগ্ন সে যেন টাখনু [পায়ের গোড়ালি] পর্যন্ত পানি রেখে নিম্ন এলাকার ক্ষেতসমূহের জন্য পানি ছেড়ে দেয়।
[সহীহ, আবু দাঊদ ৩৬৩৯, ইবনি মাজাহ ২৪৮১, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন, {সহীহ ও যয়ীফ মুনানে ইবনি মাজাহ} তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদটিতে তথা বিচ্ছন্নতা রয়েছে।]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪২৫ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, দরকারের চেয়ে অধিক পানি প্রদানে বিরত থাকা উচিত নয়, উক্ত এলাকায় জন্মানো ঘাস হইতে [লোকজনকে] বিরত রাখার উদ্দেশ্যে।
[সহীহ, বুখারি ২৩৫৩, মুসলিম ১৫৬৬]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪২৬ আমরাহ বিনত আবদির রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন যে, কূপের অবশিষ্ট পানি হইতে মানুষকে নিষেধ করা উচিত নয়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২৬ -উপকার সাধন-এর লক্ষ্যে ফয়সালা
১৪২৭ ইয়াহ্ইয়া মাযেনী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন যে, নিজের স্বার্থে অন্যের ক্ষতি করিবে না, তদ্রুপ পরস্পর কারো ক্ষতি করিবে না।
[সহীহ, ঈমাম ইবনি মাজাহ ২৩৪০, তিনি উবাদাহ বিন সামেত [রাদি.] থেকে বর্ণনা করেন। আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। {সিলসিলাহ আস সহীহা} ২৫০, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪২৮ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, কোন মুসলমানের পক্ষে তার প্রতিবেশীকে স্বীয় ঘরের দেয়ালে কোন কাঠ গাড়তে নিষেধ করা উচিত হইবে না। অতঃপর আবু হুরায়রা [রাদি.] বলেন যে, ব্যাপার কি, এই হাদীস শোনার পর তাদেরকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে দেখি কেন? আল্লাহর কসম, আমি এই হাদীস তোমাদের স্কন্ধের উপর ফেলব অর্থাৎ খুব প্রচার করব।
[বুখারি, ২৪৬৩, মুসলিম ১৬০৯]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪২৯ ইয়াহ্ইয়া মাযেনী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
যাহহাক ইব্নু খলীফা, উরাইয নামক স্থান হইতে একটি ছোট খাল কেটে আনলেন এবং মুহাম্মাদ ইব্নু মাসলামা [রাদি.]-এর জমির উপর দিয়ে নিয়ে যাবেন বলে মনস্থ করলেন। কিন্তু তিনি তাতে অসম্মতি জানালেন। যাহহাক [রাদি.] বলিলেন, আপনি নিষেধ করিতেছেন কেন? তাতে আপনার জমিরও উপকার সাধিত হইবে, আপনি প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত জমিতে পানি সেচ করিতে পারবেন। আপনার কোন ক্ষতিও হইবে না। কিন্তু ইব্নু মাসলামা [রাদি.] কিছুতেই সম্মত হচ্ছেন না দেখে যাহহাক [রাদি.] উমার [রাদি.]-এর সাথে আলাপ করলেন। উমার [রাদি.] ইব্নু মাসলামাকে ডেকে বলিলেন, তুমি খালটি তোমার জমির উপর দিয়ে নিয়ে যেতে দাও। ইব্নু মাসলামা [রাদি.] বলিলেন, এইরূপ হইবে না। উমার [রাহিমাহুল্লাহ] বলিলেন, তুমি কেন নিষেধ করছ? এর দ্বারা তোমার ভাইয়ের ও তোমার উপকার হইবে। তুমিও তোমার জমিতে পানি সেচ করিতে পারবে অথচ তোমার কোন ক্ষতিই হইবে না। মুহাম্মাদ ইব্নু মাসলামা [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহর কসম, তা হইবে না। উমার [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহর কসম, খাল প্রবাহিত করা হইবে যদিও তোমাদের পেটের উপর দিয়েও হয়। অতঃপর উমার [রাদি.] ইব্নু মাসলামার জমির উপর দিয়ে খাল খননের নির্দেশ দিলেন। যাহহাক [রাদি.] তাই করলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪৩০ ইয়াহ্ইয়া ইব্নু মাযেনী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুর রহমান ইব্নু আওফা [রাদি.]-এর একটি ছোট খাল আমার দাদার জমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আবদুর রহমান [রাদি.] চাইলেন যেন খালটি অন্যত্র দিয়ে প্রবাহিত হয়, যেন তার জমির নিকটবর্তী হয়। অতঃপর আমার দাদা নিষেধ করলেন। আবদুর রহমান [রাদি.] উমার [রাদি.]-এর নিকট এই বিষয়ে আলাপ করলেন। উমার [রাদি.] পরে তাহাকে অনুমতি দান করলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২৭ -সম্পদ বণ্টনের ফয়সালা
১৪৩১ সাওর ইব্নু যায়দ দীলী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, যেকোন ঘর অথবা জমি অন্ধকার যুগে বন্টন করা হয়েছে তা সে অনুযায়ীই থাকিবে। আর যেকোন ঘর অথবা জমি আজ পর্যন্ত বন্টন হয়নি তা ইসলামী বিধান অনুযায়ী বন্টিত হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪৩২ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
যদি কেউ মারা যায় এবং তার উঁচু-নীচু অনেক জমি থাকে, তবে যে জমিতে বৃষ্টির পানি দ্বারা ফসল হয় তা কূপের পানি দ্বারা যে জমিতে ফসল হয় তার সাথে সমভাবে বন্টন হইবে না। অবশ্য সকল অংশীদার রাযী হলে তবে জায়েয হইবে। আর বৃষ্টির পানি দ্বারা ফসল হয় এমন জমির ঝর্ণার পানি দ্বারা ফসল হয় এমন জমির সাথে বন্টন হইতে পারে যদি তা সমতুল্য হয়। এইরূপে যদি তার আরো সম্পদ থাকে এবং তা একই এলাকায় থাকে তবে প্রত্যেকের মূল্য নির্ধারিত করে এক সাথেই বন্টন করিবে। ঘর ও বাড়ির একই হুকুম।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২৮ -নিজে নিজে বিচরণকারী জন্তু ও রাখালের তত্ত্বাবধানে থাকা জন্তুর ফয়সালা
১৪৩৩ হারাম ইব্নু সাআদ ইব্নু মুহায়্যিসা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
বারা ইব্নু আযিব [রাদি.]-এর উষ্ট্রী কারো বাগানে ঢুকে ফসলের খুব ক্ষতি করে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, দিনের বেলায় বাগান হেফাজত করার জিম্মাদার বাগানের মালিক, আর রাত্রিকালে যদি জন্তু বাগানে ঢুকে ও ক্ষতি করে তবে জন্তুর মালিক তার ক্ষতি পূরণের জিম্মাদার হইবে।
[সহীহ, আবু দাঊদ ৩৫৭০, মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন {আস সিলসিলাহ আস সহীহাহ} ২৩৮, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃকবর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪৩৪ ইয়াহ্ইয়া ইব্নু আবদির রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
একদা হাতিব [রাদি.]-এর এক ক্রীতদাস মুযাইনাহ্ গোত্রের এক ব্যক্তির উট চুরি করে যবেহ করে ফেলে। এর মামলা উমার [রাদি.]-এর দরবারে গেলে তিনি কাসীর ইব্নু সলত [রাদি.]-কে নির্দেশ দিলেন যে, ঐ ক্রীতদাসের হাত কেটে ফেল। অতঃপর তিনি হাতিব [রাদি.]-এর দিকে তাকিয়ে বলিলেন, আমার মনে হয় যে, তুমি ক্রীতদাসদেরকে অনাহারে রাখ, আল্লাহর কসম, আমি এর জন্য তোমার এমন জরিমানা করব যা তোমার জন্য খুব ভারী হইবে। তার পর উটের মালিককে উটের মূল্য সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, আল্লাহর কসম, আমি তা চারশত দিরহামেও বিক্রি করতাম না। উমার [রাদি.] হাতিবকে আটশত দিরহাম জরিমানা দিতে বলিলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন এদের উপর আমাদের আমল নাই কিন্তু আমাদের আমল এই কথার উপর যে, যেদিন উট খরিদ করা হয়েছে সে দিনের মূল্য দিতে হইবে।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২৯ -জন্তুকে নির্যাতনের ফয়সালা
যদি কেউ কোন জন্তুকে নির্যাতন করে তবে যদি ঐ জন্তুর মূল্যের ক্ষতি হয় তবে জরিমানাস্বরূপ নির্যাতনকারীকে তাই দিতে হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কোন উট কারো উপর আক্রমণ করে এবং সে জান বাঁচানোর জন্য উটকে মেরে ফেলে অথবা জখম করে এবং এই হামলার কোন সাক্ষীও তার নিকট থাকে তবে তার উপর জরিমানা হইবে না। আর যদি সাক্ষী না থাকে উটের জরিমানা তাকে দিতে হইবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩০ -কর্মচারীদেরকে মজুরী দানের ফয়সালা
যদি কেউ কোন কাপড় রঞ্জককে রাঙ্গানোর জন্য দেয় এবং রঙও লাগায়, আর কাপড়ওয়ালা বলে যে, আমি এমন রঙ দিতে বলিনি। কিন্তু রঞ্জক বলে যে, আমাকে এই রঙ দিতেই বলেছিলেন, তবে এই ব্যাপারে আমাদের নিকট রঞ্জকের কথা সত্য বলে ধরা হইবে। আর এই ধরনের ব্যাপারে দর্জি ও স্বর্ণকারের কথাও সত্য বলে ধরা হইবে। কিন্তু সকলকে হলফ [কসম] করিতে হইবে। হ্যাঁ, যদি তারা এমন কথা বলে সাধারণত যার প্রমাণ নাই, কিংবা এমন রঙ ব্যবহার করেছে যা নিয়ম অনুযায়ী করা হয় না, তবে তাদের কথা গ্রহণযোগ্য হইবে না। এই ক্ষেত্রে কাপড়ের মালিককে কসম করানো হইবে। অতঃপর সে যদি কসম করিতে অস্বীকার করে, তবে কারিগরদের নিকট হইতে কসম নেয়া হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কেউ কোন কাপড় রঞ্জককে দেয়। ভুল বশতঃ রঞ্জক কাপড়টি অন্য একজনকে দিয়ে দেয় এবং সে তা পরিধান করে- তবে রঞ্জক কাপড়ের জরিমানা দিবে।
পরিধানকারীর জরিমানা হইবে না। ইহা তখন হইবে যখন পরিধান কারী জানে না যে, এটা অন্যের কাপড়। আর যদি অন্যের কাপড় জেনেই পরিধান করে থাকে তবে তারই জরিমানা হইবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩১ -হাওয়ালা ও জিম্মাদারী
যদি কেউ নিজ কর্জকে [ঋণ] কারো জিম্মায় ঋণদাতার সম্মতিতে চাপিয়ে দেয়, অতঃপর জিম্মাদার দরিদ্র হয়ে যায় অথবা সম্পদহীন হয়ে মারা যায়, তবে পাওনাদার যে জিম্মা দান করেছে তার নিকট অর্থাৎ খাতকের নিকট পাওনা চাইতে পারবে না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের নিকট কোন মতভেদ নেই। তবে যদি কেউ স্বেচ্ছায় অন্যের জিম্মাদার হয় আর সে সম্পদহীন অবস্থায় মারা যায় কিংবা গরীব হয়ে যায় তবে পাওনাদারগণ কর্জ গ্রহীতার কাছে তাদের পাওনা চাইতে পারবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩২ -কাপড় খরিদের পরে দোষ দেখা গেলে
যখন কোন ব্যক্তি কাপড় খরিদ করার পর দোষ দেখে যেমন ফাটা বা অন্য কিছু এবং খরিদ্দার বিক্রেতাকে এই ব্যাপারে অবগত করায়, অতঃপর সেই ব্যাপারে সাক্ষী উপস্থিত করে ক্রেতা অথবা বিক্রেতা স্বীকার করে, তৎপর ক্রেতা যদি কাপড়ের মধ্যে কোন পরিবর্তন করে থাকে যেমন কাপড় কেটে ফেলে, যার ফলে কাপড়ের মূল্য কমে যায় এবং সেই অবস্থায় বিক্রেতাকে কাপড়ের দোষ সম্বন্ধে অবহিত করা হয় তবে তা বিক্রেতা ফেরত নেবে এবং খরিদ্দারের উপর কাপড় কাটার জন্য কোন জরিমানা হইবে না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, যদি কেউ কাপড় খরিদ করে পরে দোষ দেখিতে পায় যেমন কাপড়ে ফাটা অথবা কাটা এবং বিক্রেতা বলে যে, কাপড়ের দোষ সম্বন্ধে আমার জানা ছিল না। কিন্তু এদিকে খরিদ্দার কাপড় কেটে ফেলেছে অথবা রঙাইয়া ফেলেছে তবে খরিদ্দারের ইখতিয়ার আছে, সে কাপড় রেখে দোষের সমপরিমাণ মূল্য বিক্রেতার নিকট হইতে ফেরত নেবে অথবা কাপড় ফেরত দিয়ে বিক্রেতাকে ঐ পরিমাণ মূল্য ফেরত দেবে, কাপড় কাটার দরুন যতদূর মূল্য কমেছে অথবা রঙানোর জন্য যতদূর মূল্য কমেছে। আর যদি খরিদ্দার কাপড়ে এমন রঙ দিয়ে থাকে যার দ্বারা কাপড়ের মূল্য অধিক হয়ে গিয়েছে তা হলেও খরিদ্দারের ইখতিয়ার সে ইচ্ছা করলে দোষের মূল্য বিক্রেতার নিকট হইতে নিয়ে কাপড় রেখে দেবে অথবা বিক্রেতার শরীক হইবে। এখন দেখিতে হইবে যে, দোষের দরুন কাপড়ের মূল্য কতদূর হয়, যেমন কাপড় “দশ দিরহাম”-এর ছিল এবং রঙানোর কারণে “পাঁচ দিরহাম” মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে, এখন দুইজনেই কাপড়ে শরীক হইবে নিজ অংশ হিসাবে। যখন কাপড় বিক্রয় হইবে তখন যার যার অংশানুপাতে মূল্য ভাগ করে নিয়ে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩৩ -যে হেবা [দান] নাজায়েয
১৪৩৫ নুমান ইব্নু বশীর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তার পিতা বশীর [রাদি.] তাকে একবার রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে নিয়ে গেলেন এবং বলিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! আমি আমার এই ছেলেকে আমার একটি গোলাম হেবা করেছি। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, তুমি কি তোমার প্রত্যেকটি ছেলেকেই এইরূপ হেবা করেছ? তিনি বলিলেন, না। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, তা হলে হেবা [দান] ফিরিয়ে নাও।
[বুখারি ২৫৮৬, মুসলিম ১৬২৩]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৩৬ নবী করীম সাঃআঃ-এর সহধর্মিণী আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আবু বাকর [রাদি.] গাবা নামক স্থানে বাগানের কিছু খেজুর গাছ আমাকে দান করলেন। যার মধ্যে বিশ ওসক খেজুর উৎপন্ন হত। অতঃপর ইন্তিকালের সময় বলিতে লাগলেন, হে কন্যা! আল্লাহর কসম, আমার পরে তোমার চাইতে অধিক সচ্ছল কেউ থাকুক আমি তা পছন্দ করি না, আর তুমি দরিদ্র থাক তাও আমার সবচাইতে বেশি অপছন্দ। আমি তোমাকে এমন খেজুর গাছ দিয়েছিলাম যার মধ্যে বিশ ওসক খেজুর জন্মে। তুমি যদি তা দখলে রাখতে এবং ফল সংগ্রহ করিতে থাকতে তবে তা তোমার সম্পদ হয়ে যেত। এখন তো তা ওয়ারিসদের সম্পত্তি। ওয়ারিস তোমার দুই ভাই ও দুই বোন, সুতরাং উহাকে আল্লাহর কিতাব অনুসারে বন্টন করো। আয়িশা [রাদি.] বলিলেন, হে আব্বাজান! যত বড় সম্পদই হোক না কেন, আমি তা ছেড়ে দিতাম, কিন্তু আমার তো বোন শুধু একজন আসমা [রাদি.], অন্য জন কে? তিনি উত্তরে বলিলেন, [আমার স্ত্রী] বিন্ত খারেজা গর্ভবতী, তার গর্ভে যে সন্তান আছে আমার ধারণা তা মেয়েই হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪৩৭ আবদুর রহমান ইব্নু আবদুল কারী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাদি.] বলেছেন, মানুষের হল কি? তারা নিজ পুত্র-সন্তানদের জন্য হেবা [দান] করে। অতঃপর তা নিজেই নিজ দখলে রাখতে চায়, যদি ছেলে মারা যায় তবে বলে যে, আমার সম্পদ আমারই দখলে আছে, আমি কাউকেও দান করিনি, আর যদি নিজে মারা যায় তবে বলে যায় যে, ইহা আমার ছেলেরই, আমি তাকে দান করেছি। যদি কোন হেবা করার পরে তা চালু না করে এবং ছেলে ওয়ারিসসূত্রে মালিক হয় তবে ঐ হেবা বাতিল হয়ে যায়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৩৪ -কেমন দান জায়েয নয়
যদি কেউ কাউকেও কোন জিনিস উপঢৌকন দেয় এবং তার বিনিময়ে আশা না করে এবং তার উপর সাক্ষীও রাখে তবে তা প্রচলিত হইবে। কিন্তু যদি দানকারী মারা যায় উক্ত জিনিস যাকে দিয়েছে সে তা হস্তগত করার পূর্বে, তবে তা প্রমাণিত হইবে না। আর যদি দানকারী দান করার পর নিজে রাখতে চায় তবে এটা না-জায়েয। যাকে দিয়েছে সে ইহা জবরদস্তি গ্রহণ করিতে পারবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কেউ কাউকেও কোন জিনিস দান করে, অতঃপর তা অস্বীকার করে আর যাকে দেয়া হয়েছে সে একজন সাক্ষীও আনে, যে এটা দান করবার সময় সাক্ষী ছিল। চাই তা জিনিসপত্র, স্বর্ণ, রৌপ্য অথবা জানোয়ারই হোক। তবে একজন সাক্ষীর সাথে তার কসমও করিতে হইবে। যদি সে কসম করিতে অস্বীকার করে তবে দাতাকে কসম করানো হইবে। যদি সেও অস্বীকার করে তবে ঐ জিনিস তাকে দিতে হইবে যখন তার কাছে একজন সাক্ষী থাকিবে। আর যদি একজন সাক্ষীও না থাকে তবে দাবিদারের দাবি গ্রহণযোগ্য হইবে না এবং সে কোন জিনিসই পাবে না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কেউ কোন জিনিস সওয়াবের নিয়্যতে না দেয়, পরে যাকে দিয়েছে সে হস্তগত করার পূর্বেই মারা যায় তবে তার ওয়ারিসগণ তার স্থলাভিষিক্ত হইবে। আর যদি হস্তগত করার পূর্বে দাতা মারা যায় তবে তার কিছু মিলবে না। কেননা হস্তগত না হওয়ার কারণে তা বাতিল হয়ে গেছে। আর যদি দাতা দানের পরে নিজের দখলে রাখে এবং হেবা করার সপক্ষে সাক্ষীও থাকে তবে যাকে দান করা হয়েছে সে তা দখল করিতে পারবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫ -হেবার ফয়সালা
১৪৩৮ আবু গাতফান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাদি.] বলেছেন, যে ব্যক্তি আত্মীয়তা রক্ষার জন্য অথবা সাদকাহ্ স্বরূপ হেবা করে সে ঐ হেবা আর ফিরিয়ে আনতে পারবে না। আর যদি কোন বিনিময়ের আশায় হেবা করে তবে তা ফিরাতে পরবে যখন তাদের সাথে মনোমালিন্য হয়। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
গ্রহীতার নিকট মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন এটা আমাদের নিকট সর্বসম্মত বিষয় যে, যদি কেউ কোন জিনিস বিনিময়ের আশায় হেবা করে আর ঐ জিনিসের কোন ক্ষতি হয় তবে যাকে দিয়েছে তার গ্রহণ করার দিন যে দাম ছিল তা তাকে আদায় করিতে হইবে।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৩৬ -দান করে ফিরিয়ে নেয়া
এটা আমাদের নিকট সর্বসম্মত বিষয় যে, যদি পিতা ছেলেকে কিছু সাদকাহ্ করে এবং ছেলে তা হস্তগত করে অথবা ছেলে এখনও বালক, পিতার আশ্রয়ে আছে। আর পিতা এই সাদাকাহর উপর সাক্ষীও রেখেছে তবে পিতা এই দান আর ফিরিয়ে নিতে পারবে না, কেননা সাদাকাহ্ ফেরত নেয়া জায়েয নাই।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে, এটা আমাদের সর্বসম্মত বিষয় যে, যদি কোন ব্যক্তি তার সন্তানকে কিছু দেয়, কিন্তু তা দান হিসেবে নয়। তবে তা ফিরিয়ে নিতে পারে। অবশ্য যদি ছেলে এই সাদাকার উপর ভরসা করে ঋণ গ্রহণ করে এবং এই সাদাকার উপর নির্ভর করে মানুষের সাথে কায়-কারবার করিতে থাকে তবে সে সময়ে উহা ফেরত নিতে পারবে না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যদি কেউ তার মেয়েকে কিছু দান করে কিংবা ছেলেকে দান করে এবং কোন লোক তার কন্যা ঐ ছেলের সাথে বিবাহ দেয় যে, সে খুব ধনী হয়েছে অথবা কোন মানুষ তার ছেলেকে এ মেয়ের সাথে বিবাহ দেয় এজন্য যে, সে ঐ দানের কারণে ধনী হয়েছে এবং ধনী হওয়ার কারণে তার মহরানাও বাড়িয়ে দেয় তবে পিতা এই দান ফেরত নিতে পারবে না। হ্যাঁ, যদি উপরিউক্ত ভরসা না করে তবে জায়েয আছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩৭ -মৃত্যু পর্যন্ত দানের ফয়সালা
১৪৩৯ জাবির ইব্নু আবদিল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি কারো জন্য অথবা তার ওয়ারিসগণের জন্য কোন জিনিস মৃত্যু পর্যন্ত দান করে তবে উহা যাদেরকে দান করেছে তাদের জন্য হইবে। দানকারীর নিকট তা ফিরে আসতে পারে না। ইহা ওয়ারিসীর যোগ্য দান।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪৪০ আবদুর রহমান ইব্নু কাসিম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি মাকহুল দামেশকীকে কাসিম ইব্নু মুহাম্মাদের নিকট মৃত্যু পর্যন্ত দান সম্বন্ধে প্রশ্ন করিতে শুনেছেন অর্থাৎ এই ব্যাপারে মানুষের কি মতামত তা জানতে চেয়েছেন। তখন কাসিম ইব্নু মুহাম্মাদ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি তো মানুষদেরকে নিজ সম্পদের মধ্যেও নিজ দানের ব্যাপারে নিজ নিজ শর্ত পূর্ণ করিতে দেখেছি। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত এই যে, মৃত্যু পর্যন্ত দানকৃত বস্তু দানকারীর নিকট ফিরে আসবে। তবে সে যদি বলে, উহা তোমার ও তোমার পরবর্তীদের তবে তা ফিরে আসবে না।
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪৪১ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
ইব্নু উমার [রাদি.] হাফসা বিনত উমারের একটি গৃহের ওয়ারিস হলেন। তিনি ঐ গৃহ যায়দ ইব্নু খাত্তাবের কন্যাকে আজীবন থাকার জন্য দিয়েছিলেন। অতঃপর যখন যায়দের কন্যার মৃত্যু হল তখন ইব্নু উমার [রাদি.] উহা দখল করলেন এবং তিনি উহাকে নিজস্ব মনে করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৩৮ -লুকতা অর্থাৎ কোথাও পাওয়া জিনিসের ফয়সালা
১৪৪২ যায়দ ইব্নু খালেদ জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর নিকট এসে কোথাও পাওয়া জিনিস সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, তার পাত্রটি চিনে রাখ এবং তার বন্ধনও চিনে রাখ, অতঃপর এক বৎসর পর্যন্ত মানুষের কাছে ঘোষণা করিতে থাক। যদি মালিক পাওয়া যায় তবে ফেরত দিয়ে দাও; অন্যথায় তুমি নিজে ব্যবহার করিতে পার। সে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাঃআঃ হারানো ছাগলের বিধান কি? তিনি বলিলেন, তা তোমার অথবা তোমার ভাইয়ের কিংবা বাঘের হইবে। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করিল, যদি হারানো উট পাওয়া যায় তবে কি করব? রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, সে উটের সাথে তোমার কি সম্পর্ক। তার সাথে পান করার মতো পানি আছে এবং তার পা আছে যেখানে খুশী পানি পান করে নিবে। গাছের পাতা খাবে। শেষ পর্যন্ত তার মালিক তা পেয়ে ফেলবে।
[বুখারি ২৩৭২, মুসলিম ১৭২২]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৪৩ মুয়াবিয়া ইব্নু আবদুল্লাহ জুহানী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তার পিতা বলেছেন, তিনি সিরিয়ার পথে এক মঞ্জিলে অবতরণ করলেন তথায় তিনি একটি তোড়া পেলেন। তাতে আশিটি দীনার ছিল। তিনি তা উমার [রাদি.]-এর নিকট বর্ণনা করলেন। উমার [রাদি.] বলিলেন, একে মসজিদসমূহের দরজায় ঘোষণা কর। আর যারা সিরিয়া হইতে আসে তাদেরকে এক বৎসর পর্যন্ত অবহিত কর। যদি এক বৎসর অতিবাহিত হয় তা হলে তখন তোমার ইচ্ছা। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪৪৪ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি রাস্তায় কিছু পেল। সে তা নিয়ে ইব্নু উমার [রাদি.]-এর কাছে এসে বলল, আমি একটি জিনিস পেয়েছি, এই ব্যাপারে আপনার মত কি? আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] তাকে বলিলেন, তা প্রচার কর। সে বলিল, আমি তা করেছি। ইব্নু উমার [রাদি.] বলিলেন, পুনরায় ঘোষণা কর। সে বলল, তাও করেছি। ইব্নু উমার [রাদি.] বলিলেন, আমি তোমাকে ব্যবহার করিতে বলব না। তুমি তা নাও তুলতে পারতে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৩৯ -গোলাম যদি কোন জিনিস পাওয়ার পর খরচ করে ফেলে তবে তার ফয়সালা
আমাদের কাছে এই হুকুম যে, যদি কোন গোলাম কোন জিনিস পায় এবং এক বৎসর প্রচার করার পূর্বেই তা খরচ করে ফেলে তবে তা তার গর্দানেই থাকিবে, যদি তার মালিক আসে তবে তা মনিবকে আদায় করিতে হইবে। অথবা গোলামকে মালিকের হাওয়ালা করিবে। আর যদি ক্রীতদাস উহাকে সময় অতিবাহিত হওয়ার পর খরচ করে তবে তা তার দায়িত্বে কর্জ থাকিবে। সে যখন আযাদ হইবে তখন মালিক তা নিয়ে নিবে, এখন কিছুই ক্রীতদাস হইতে নিতে পারবে না, মনিবের নিকট হইতেও নিতে পারবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৪০ -হারানো জন্তুর ফয়সালা
১৪৪৫ সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
সাবিত ইব্নু যাহহাক আনসারী [রাদি.] হাররা নামক স্থানে একটি উট পেয়ে রশি দ্বারা বেঁধে দিলেন। তার পর উমার [রাদি.]-কে বলিলেন। উমার [রাদি.] বলিলেন, তুমি তিনবার উহা প্রচার কর। সাবিত [রাদি.] বলিলেন, আমি তার ঝামেলায় পড়ে আমার শস্য উৎপাদনকারী ভূমির খবর নিতে পারিনি। উমার [রাদি.] বলিলেন, তা হলে যেখানে উটটি পেয়েছিলে সেখানে ছেড়ে দিয়ে আস। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪৪৬ সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার [রাদি.] কাবা শরীফের দেয়ালে পৃষ্ঠদেশ লাগিয়ে বসেছিলেন। এই অবস্থায় বলিলেন, যে ব্যক্তি হারানো বস্তু নিয়ে নেয় সে পথভ্রষ্ট।
[সহীহ মারফু, ঈমাম মুসলিম যায়েদ বিন খালিদ [রাদি.] থেকে মারফু সনদে বর্ণনা করেন ১৭২৫]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ মারফু
১৪৪৭ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
ইবনি যুহরী [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনেছেন উমার [রাদি.]-এর যুগে যে হারানো উট পাওয়া যেত উহাকে ঐভাবেই ছেড়ে দেয়া হত। তার বাচ্চা জন্ম হলেও কেউই স্পর্শ করত না। অতঃপর উসমান [রাদি.]-এর যুগ এল। তিনি ঐরূপ উটকে প্রচার করার পর বিক্রয় করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর যখন মালিক আসবে তখন উপহার মূল্য মালিককে দিয়ে দেয়া হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ৪১ -মৃতের পক্ষে জীবিতের দান
১৪৪৮ সাঈদ ইব্নু আমর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
সাআদ ইব্নু উবাদা [রাদি.] কোন এক যুদ্ধে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর সাথে রওয়ানা হলেন। এদিকে মদীনায় তাঁর মাতার মৃত্যুর সময় উপস্থিত। মানুষ তাঁর মাতাকে ওসীয়্যত করিতে বললে উত্তর দিলেন যে, কি ওসীয়্যত করব? সমস্ত সম্পত্তি তো সাআদেরই। অবশেষে সাআদ [রাদি.] বাড়িতে ফেরার পূর্বেই তিনি মারা গেলেন। সাআদ [রাদি.] বাড়িতে এলে এ ঘটনা বর্ণনা করা হল। অতঃপর সাআদ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল সাঃআঃ! আমি সাদাকাহ্ করলে আমার মায়ের কোন উপকার হইবে কি? রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, হ্যাঁ। অতঃপর সাআদ [রাদি.] বাগানের নাম উল্লেখ করে বলিলেন, “এই এই বাগান আমার মায়ের পক্ষ হইতে দান করছি।”
[সহীহ, নাসাঈ ৩৬৫০, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন {সহীহ ও যয়ীফ সুনানে নাসাঈ}]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৪৪৯ নবী করীম সাঃআঃ-এর সহধর্মিণী আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে বলল, আমার মা হঠাৎ ইন্তিকাল করেন। আমার মনে হয় যদি তিনি কথা বলার সুযোগ পেতেন তবে কিছু দান-খয়রাত করিতেন। এখন আমি তাঁর পক্ষ হইতে দান করিতে পারি কি? রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, “হ্যাঁ, পারবে।”
[বুখারি ২৭৬০, মুসলিম ১০০৪]বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৫০ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
এক আনসার ব্যক্তি নিজ পিতা-মাতাকে কিছু দান করিল, অতঃপর মাতা-পিতার ইন্তিকালের পরে সে-ই তাদের ওয়ারিস হল। আর তা ছিল খেজুরের বাগান। সে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে এ বিষয় জিজ্ঞেস করলে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, তোমার সাদাকাহর সওয়াব তুমি পেয়েছ, এখন ওয়ারিস হিসেবে আবার তা গ্রহণ কর। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
বিচার সম্পর্কে হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
Leave a Reply