বিচার -ফায়সালা অধ্যায়। মুজতাহিদগণের মতভেদ প্রসঙ্গে

বিচার -ফায়সালা অধ্যায়। মুজতাহিদগণের মতভেদ প্রসঙ্গে

বিচার -ফায়সালা অধ্যায়। মুজতাহিদগণের মতভেদ প্রসঙ্গে , এই পর্বের হাদীস =১০ টি (১১১৩-১১২২) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৩০ঃ বিচার-ফায়সালা

৩০/১. শপথ করার দায়িত্ব বাদীর।
৩০/৩. বাহ্যিক অবস্থার ভিত্তিতে ফায়সালা এবং যে ব্যক্তি তার যক্তি প্রদর্শনে বাকপটু।
৩০/৪. হিন্দার ফায়সালা।
৩০/৫. বিনা প্রয়োজনে অধিক প্রশ্ন করা, গরীব ও অন্যান্যদের অধিকার আদায় না করা এবং হক্বদার না হয়ে কোন কিছু চাওয়া নিষিদ্ধ।
৩০/৬. বিচারকের সওয়াব যখন সে সঠিক ফায়সালায় পৌঁছতে আপ্রাণ চেষ্টা করে- তার ফায়সালা ঠিক হোক বা ভুল হোক।
৩০/৭. রাগান্বিত অবস্থায় বিচারকের বিচার করা অপছন্দনীয়।
৩০/৮. বাতিল রায় ও নব-আবিষ্কৃত বিষয়াবলী প্রত্যাখ্যান করা।
৩০/১০. মুজতাহিদগণের মতভেদ প্রসঙ্গে।
৩০/১১. দুদলের ঝগড়া বিচারক কর্তৃক মীমাংসা করে দেয়া মুস্তাহাব।

৩০/১. শপথ করার দায়িত্ব বাদীর।

১১১৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

দুজন মহিলা একটি ঘর কিংবা একটি কক্ষে সেলাই করছিল। হাতের তালুতে সুই বিদ্ধ হয়ে তাহাদের একজন বেরিয়ে পড়ল এবং অপরজনের বিরুদ্ধে সুই ফুটিয়ে দেয়ার অভিযোগ করিল। এই ব্যাপারটি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি বলিলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, যদি শুধুমাত্র দাবীর উপর ভিত্তি করে মানুষের দাবী পূরণ করা হয়, তাহলে তাহাদের জান ও মালের নিরাপত্তা থাকিবে না। সুতরাং তোমরা বিবাদীদের আল্লাহ্‌র নামে শপথ করাও এবং এ আয়াত তার সম্মুখে পাঠ কর। এরপর তারা তাকে শপথ করাল এবং সে নিজ দোষ স্বীকার করিল। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিলেন যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, শপথ বিবাদীকে করিতে হইবে।

[বোখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৪৫৫২; মুসলিম ৩০/১, হাঃ ১৭১১] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০/৩. বাহ্যিক অবস্থার ভিত্তিতে ফায়সালা এবং যে ব্যক্তি তার যক্তি প্রদর্শনে বাকপটু।

১১১৪. সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, একদিন তিনি তাহাঁর ঘরের দরজার নিকটে ঝগড়ার শব্দ শুনতে পেয়ে তাহাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন। {তাহাঁর -এর কাছে বিচার চাওয়া হল} তিনি বলিলেন, আমি তো একজন মানুষ। আমার কাছে [কোন কোন সময়] ঝগড়াকারীরা আসে। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্যের চেয়ে অধিক বাকপটু। তখন আমি মনে করি যে, সে সত্য বলেছে। তাই আমি তার পক্ষে রায় দেই। বিচারে যদি আমি ভুলবশত অন্য কোন মুসলিমের হক তাকে দিয়ে থাকি, তবে তা দোযখের টুকরা। এখন সে তা গ্রহণ করুক বা ত্যাগ করুক

[বোখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ২৪৫৮; মুসলিম ৩০/৩, হাঃ ১৭১৩] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০/৪. হিন্দার ফায়সালা।

১১১৫. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

হিন্‌দা বিন্‌ত উত্‌বা [রাদি.] বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আবু সুফ্ইয়ান একজন কৃপণ লোক। আমাকে এত পরিমাণ খরচ দেন না, যা আমার ও আমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট হইতে পারে যতক্ষণ না আমি তার অজান্তে মাল থেকে কিছু নিই। তখন তিনি বললেনঃ তোমার ও তোমার সন্তানের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে যা যথেষ্ট হয় তা তুমি নিতে পার।

[বোখারী পর্ব ৬৯ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ৫৩৬৪, ২২১১; মুসলিম ৩০/৪, হাঃ-১৭১৪] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১১১৬. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

উতবাহ্‌র মেয়ে হিন্দ [রাদি.] এসে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! এক সময় আমার মনের অবস্থা পৃথিবীর বুকে কোন পরিবারকে লাঞ্ছিত হইতে দেখা আমার নিকট আপনার পরিবারকে অপমানিত দেখার চেয়ে অধিক কাঙিক্ষত ছিল না। কিন্তু এখন আমার অবস্থা এমন হয়েছে যে দুনিয়ার বুকে কোন পরিবারকে সম্মানিত হইতে দেখা আমার নিকট আপনার পরিবারকে সম্মানিত দেখার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। তিনি বলিলেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ। তারপর সে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল  [সাঃআঃ]! আবু সুফ্ইয়ান একজন কৃপণ ব্যক্তি। যদি তার মাল আমি ছেলে-মেয়েদের জন্য ব্যয় করি তবে তাতে কি আমার কিছু হইবে? তিনি বলিলেন, না, যদি যথাযথ ব্যয় করা হয়।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৮২৬; মুসলিম ৩০/৪, হাঃ নং ১৭১৪]এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০/৫. বিনা প্রয়োজনে অধিক প্রশ্ন করা, গরীব ও অন্যান্যদের অধিকার আদায় না করা এবং হক্বদার না হয়ে কোন কিছু চাওয়া নিষিদ্ধ।

১১১৭. মুগীরাহ ইবনি শুবাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হারাম করিয়াছেন মায়ের নাফরমানী, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া, কারো প্রাপ্য না দেয়া এবং অন্যায়ভাবে কিছু নেয়া আর অপছন্দ করিয়াছেন অনর্থক বাক্য ব্যয়, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, আর মাল বিনষ্ট করা।

[বোখারী পর্ব ৪৩ অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ২৪০৮; মুসলিম ৩০/৫, হাঃ ৫৯৩] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০/৬. বিচারকের সওয়াব যখন সে সঠিক ফায়সালায় পৌঁছতে আপ্রাণ চেষ্টা করে- তার ফায়সালা ঠিক হোক বা ভুল হোক।

১১১৮. আম্‌র ইবনি আস হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেছেন, কোন বিচারক ইজ্‌তিহাদে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে তার জন্য রয়েছে দুটি পুরস্কার। আর যদি কোন বিচারক ইজ্‌তিহাদে ভুল করেন তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার।

[বোখারী পর্ব ৯৬ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ৭৩৫২; মুসলিম ৩০/৬, হাঃ ১৭১৬] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০/৭. রাগান্বিত অবস্থায় বিচারকের বিচার করা অপছন্দনীয়।

১১১৯. আবু বাক্‌রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আবু বাক্‌রাহ [রাদি.] তাহাঁর ছেলেকে লিখে পাঠালেন- সে সময় তিনি সিজিস্তানে অবস্থানরত ছিলেন যে, তুমি রাগের অবস্থায় বিবদমান দুব্যক্তির মাঝে ফায়সালা করো না। কেননা, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, কোন বিচারক রাগের অবস্থায় দুজনের মধ্যে বিচার করিবে না।

[বোখারী পর্ব ৯৩ অধ্যায় ১৩ হাদীস নং ৭১৫৮; মুসলিম ৩০/৭, হাঃ ১৭১৭] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০/৮. বাতিল রায় ও নব-আবিষ্কৃত বিষয়াবলী প্রত্যাখ্যান করা।

১১২০. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, কেউ আমাদের এ শরীয়াতে নাই এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা বাতিল।

[বোখারী পর্ব ৫৩ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ২৬৯৭; মুসলিম ৩০/৮ হাঃ ১৭১৮] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০/১০. মুজতাহিদগণের মতভেদ প্রসঙ্গে।

১১২১. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেন, দুজন মহিলা ছিল। তাহাদের সাথে দুটি সন্তানও ছিল। হঠাৎ একটি বাঘ এসে তাহাদের একজনের ছেলে নিয়ে গেল। সঙ্গের একজন মহিলা বললো, “তোমার ছেলেটিই বাঘে নিয়ে গেছে।” অন্য মহিলাটি বললো, “না, বাঘে তোমার ছেলেটি নিয়ে গেছে।” অতঃপর উভয় মহিলাই দাউদ [আ.]-এর নিকট এ বিরোধ মীমাংসার জন্য বিচারপ্রার্থী হলো। তখন তিনি ছেলেটির বিষয়ে বয়স্কা মহিলাটির পক্ষে রায় দিলেন। অতঃপর তারা উভয়ে বেরিয়ে দাউদ [আ.]-এর পুত্র সুলায়মান [আ.]-এর নিকট দিয়ে যেতে লাগল এবং তারা দুজনে তাঁকে ব্যাপারটি জানালেন। তখন তিনি লোকদেরকে বলিলেন, তোমরা আমার নিকট একখানা ছোরা নিয়ে আস। আমি ছেলেটিকে দু টুক্‌রা করে তাহাদের দুজনের মধ্যে ভাগ করে দেই। এ কথা শুনে অল্প বয়স্কা মহিলাটি বলে উঠলো, তা করবেন না, আল্লাহ্ আপনার উপর রহম করুন। ছেলেটি তারই। তখন তিনি ছেলেটি সম্পর্কে অল্প বয়স্কা মহিলাটির অনুকূলে রায় দিলেন।

[বোখারী, পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪০ হাদীস নং ৩৪২৭; মুসলিম ৩০/১০ হাঃ ১৭২০] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৩০/১১. দুদলের ঝগড়া বিচারক কর্তৃক মীমাংসা করে দেয়া মুস্তাহাব।

১১২২. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেন, এক লোক অপর লোক হইতে একখণ্ড জমি ক্রয় করেছিল। ক্রেতা খরিদকৃত জমিতে একটা স্বর্ণ ভর্তি ঘড়া পেল। ক্রেতা বিক্রেতাকে তা ফেরত নিতে অনুরোধ করে বলিল, কারণ আমি জমি ক্রয় করেছি, স্বর্ণ ক্রয় করিনি। বিক্রেতা বলিল, আমি জমি এবং এতে যা কিছু আছে সবই বিক্রি করে দিয়েছি। অতঃপর তারা উভয়ই অপর এক লোকের কাছে এর মীমাংসা চাইল। তিনি বলিলেন, তোমাদের কি ছেলে-মেয়ে আছে? একজন বলিল, আমার একটি ছেলে আছে। অন্য লোকটি বলিল, আমার একটি মেয়ে আছে। মীমাংসাকারী বলিলেন, তোমার মেয়েকে তার ছেলের সঙ্গে বিবাহ দাও আর প্রাপ্ত স্বর্ণের মধ্যে কিছু তাহাদের বিবাহে ব্যয় কর এবং বাকী অংশ তাহাদেরকে দিয়ে দাও।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৫৪হাদীস নং ৩৪৭২; মুসলিম ৩০/১১ হাঃ ১৭২১] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

Comments

One response to “বিচার -ফায়সালা অধ্যায়। মুজতাহিদগণের মতভেদ প্রসঙ্গে”

Leave a Reply