বায়িন তালাক প্রাপ্ত{৬১} স্ত্রীর জন্য খোরপোষ নেই

বায়িন তালাক প্রাপ্ত{৬১} স্ত্রীর জন্য খোরপোষ নেই

বায়িন তালাক প্রাপ্ত{৬১} স্ত্রীর জন্য খোরপোষ নেই >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৬. অধ্যায়ঃ বায়িন তালাক প্রাপ্ত{৬১} স্ত্রীর জন্য খোরপোষ নেই

{৬১} যে তালাক প্রদানের পর ইদ্দাত চলাকালীন সময়ে নতুন বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা যায়, এমন তালাক কে বায়িন তালাক বলে।

৩৫৮৯. ফাত্বিমাহ্‌ বিনতু ক্বায়স [রা:] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন আবু আম্‌র ইবনি হাফস্‌ [রাদি.] [তার স্বামী] অনুপস্থিতিতে তাকে বায়িন তালাক দেন। এরপর সামান্য যবসহ উকীল কে তার কাছে পাঠিয়ে দেন। এতে তিনি {ফাত্বিমাহ্‌ [রাদি.]} তাহাঁর উপর ভীষণভাবে অসন্তুষ্ট হন। সে [উকীল] বলিল, আল্লাহ্‌র কসম! তোমাকে [খোরপোষরূপে] কোন কিছু দেয়া আমাদের দায়িত্ব নয়। তখন তিনি {ফাত্বিমাহ্‌ বিনত ক্বায়স [রাযি:]} রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে উপস্থিত হয়ে তাহাঁর নিকট সব খুলে বলিলেন। [তার কথা শুনে] তিনি বলেন, তোমার জন্য তার {তোমার স্বামী আবু আম্‌র ইবনি হাফস্‌ [রাদি.]-এর} দায়িত্বে কোন খোরপোষ নেই। এরপর তিনি তাকে উম্মু শারীক-এর ঘরে গিয়ে ইদ্দাত পালনের নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তিনি এও বলিলেন, সে মহিলা [উম্মু শারীক] এমন একজন স্ত্রীলোক যার কাছে আমার সাহাবীগণ ভীড় করে থাকেন। তুমি বরং ইবনি উম্মু মাকতূম [রাদি.]-এর বাড়িতে গিয়ে ইদ্দাত পালন করিতে থাক। কেননা সে একজন অন্ধ মানুষ। সেখানে প্রয়োজনবোধে তুমি তোমার পরিধানের বস্তু খুলে রাখতে পারবে। ইদ্দাত পূর্ণ হলে তুমি আমাকে জানাবে। তিনি বলেন, যখন আমার ইদ্দাত পূর্ণ হল তখন আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জানালাম যে, মুআবিয়াহ্‌ ইবনি আবু সুফ্‌ইয়ান [রাদি.] ও আবু জাহ্‌ম [রাদি.] আমাকে বিবাহের পায়গাম পাঠিয়েছেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আবু জাহ্‌ম এমন একজন লোক যে, তার কাঁধ থেকে লাঠি নামিয়ে রাখে না। আর মুআবিয়াহ্‌ তো কপর্দকহীন গরীব মানুষ। তুমি উসামাহ্‌ ইবনি যায়দের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হও। কিন্তু আমি তাঁকে পছন্দ করলাম না। পরে তিনি আবার বলিলেন, তুমি উসামাহ্‌কে বিয়ে কর। তখন আমি তাহাঁর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। আল্লাহ এতে [তার ঘরে] আমাকে বিরাট কল্যাণ দান করিলেন। আর আমি ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হলাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৫৯, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৫৯]

৩৫৯০. ফাত্বিমাহ্‌ বিনতু ক্বায়স[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জীবদ্দশায় তার স্বামী তাকে তালাক দেন। এরপর তার স্বামী তার জন্য [ইদ্দতকালীন সময়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য] সামান্য পরিমাণ খোরপোষ দিয়েছিলেন। তিনি তা দেখে বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমি অবশ্যই এ বিষয়টি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর গোচরে আনব। যদি খোরপোষ আমার প্রাপ্য হয় তবে আমি তা এ পরিমাণে উসুল করব যাতে সুচারুভাবে আমার প্রয়োজন পূরণ হয়। আর খোরপোষ আমার প্রাপ্য না-ই হয় তাহলে আমি তার নিকট থেকে কিছুই গ্রহণ করব না। তিনি বলেন, এরপর আমি বিষয়টি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে উত্থাপন করলাম। তিনি আমাকে বলিলেন তোমার জন্য কোন খোরপোষ নেই, বাসস্থানও নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৬০, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৬০]

৩৫৯১. আবু সালামাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ফাত্বিমাহ্‌ বিনতু ক্বায়স [রাদি.]-কে [তার স্বামী কর্তৃক তালাক সম্পর্কে] জিজ্ঞেস করলাম। তিনি আমাকে জানালেন যে, তার মাখযূমী স্বামী তাকে তালাক দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তাকে খোরপোষ প্রদানে অনীহা প্রকাশ করিলেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমার জন্য কোন খোরপোষ নেই। তুমি সেখান থেকে সরে পড় এবং উম্মু মাকতূমের ঘরে গিয়ে অবস্থান কর। কারণ সে একজন অন্ধ মানুষ। সেখানে তুমি প্রয়োজনবোধে তোমার গাত্রবস্ত্র খুলে রাখতে পারবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৬১, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৬১]

৩৫৯২. যাহ্‌হাক ইবনি ক্বায়স-এর ভগ্নী ফাত্বিমাহ্‌ বিনতু ক্বায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তার স্বামী আবু হাফ্‌স ইবনি মুগীরাহ্‌ [রাদি.] তাকে একত্রে তিন তালাক প্রদান করেন। এরপর তিনি ইয়ামান চলে যান। তখন তার[ আবু আমর-এর] পরিবারের লোকজন তাকে [ফাত্বিমাকে] বলিল, তোমার জন্য আমাদের দায়িত্বে কোন খোরপোষ নেই। এরপর খালিদ ইবনি ওয়ালিদ [রাযি:] একদল লোকসহ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এলেন। তখন তিনি মায়মূনাহ্‌ [রাদি.] এর ঘরে অবস্থান করছিলেন। তারা বলিলেন, [ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]!] আবু হাফস্‌ তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছেন। এখন তার স্ত্রী কি খোরপোষ পাবে?! বললেনঃ না, তার জন্য কোন খোরপোষ নেই; তার উপর ইদ্দাত পালন করা ওয়াজিব। তিনি তাকে বলে পাঠালেন যে, তুমি আমাকে না জানিয়ে বিবাহের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে না। তিনি তাকে ইদ্দাত পালনের জন্য উম্মু শারীক–এর ঘরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি তাকে লোক মারফত জানিয়ে দিলেন যে, উম্মু শারীক এমন একজন মহিলা যার কাছে প্রাথমিক হিজরতকারী সাহাবীগণ যাওয়া আসা করে থাকেন। সুতরাং তুমি অন্ধ ইবনি উম্মু মাকতূম এর ঘরে চলে যাও। কারণ সেখানে তুমি প্রয়োজনবোধে তোমার দোপাট্টা [ওড়না] নামিয়ে রাখলে সে তোমাকে দেখিতে পাবে না। যখন তার ইদ্দাত পূর্ণ হল তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উসামাহ্‌ ইবনি হারিসাহ্‌ [রাদি.]-এর সঙ্গে তার বিয়ে দিয়ে দিলেন।

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৬২, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৬২]

৩৫৯৩. ফাত্বিমাহ্‌ বিনতু ক্বায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বানূ মাখযূম-এর এক ব্যক্তির স্ত্রী ছিলাম। তিনি আমাকে বায়িন তালাক দিলেন তখন আমি তার পরিবার পরিজনের কাছে লোক পাঠিয়ে খোরপোষের দাবী জানালাম। এরপর তারা[ বর্ণনাকারীত্রয়] আবু সালামার সূত্রে ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি কাসীরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করে গেলেন। তবে মুহাম্মাদ ইবনি আম্‌র বর্ণিত হাদীসে “আমাকে বাদ দিয়ে তুমি তোমার সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নিও না” বলে উল্লেখ রয়েছে।

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৬৩]

৩৫৯৪. ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি আবু আমর ইবনি হাফস্ ইবনি মুগীরাহ্ [রাদি.]-এর স্ত্রী ছিলেন। তিনি তাকে চূড়ান্ত তিন তালাক দিলেন। তখন তিনি {ফাত্বিমাহ্ বিনত ক্বায়স[রাদি.]} ভাবলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে যাবেন এবং তার স্বামীর ঘর থেকে অন্যত্র অবস্থানের ব্যাপারে তাহাঁর নিকট থেকে সিদ্ধান্ত জেনে নিবেন। তিনি [সাঃআঃ] নির্দেশ দিলেন যে, তুমি অন্ধ ইবনি উম্মু মাকতূমের ঘরে চলে যাও। মারওয়ান [উমাইয়্যা গভর্নর] তালাকপ্রাপ্তা মহিলার [স্বামীর] ঘর থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে তার [আবু সালামার] বর্ণনার সত্যতা অস্বীকার করেন। উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আয়িশা [রাদি.] ও ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স-এর বিষয়টি [স্বামীর ঘর ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করা] প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৬৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৬৪]

৩৫৯৫. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ

উরওয়ার উক্তিসহ বর্ণনা করিয়াছেন যে, আয়িশাহ্[ রাদি.] ফাত্বিমার উক্ত ঘটনা অস্বীকার করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৬৫]

৩৫৯৬. উবায়দুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উত্‌বাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আবু আম্‌র ইবনি হাফস্‌ ইবনি মুগীরাহ্‌ [রাদি.] আলী ইবনি আবু ত্বলিব [রাদি.]-এর সঙ্গে ইয়ামানে গমন করেন। এরপর তিনি তার স্ত্রী ফাত্বিমাহ্‌ বিনতু ক্বায়সকে অবশিষ্ট এক ত্বলাকের কথা বলে পাঠালেন[ দু তালাক আগেই দিয়েছিলেন]। তিনি হারিস ইবনি হিশাম ও আবু রাবীআকে নিজের পক্ষ থেকে তার [স্ত্রীকে] খোরপোষ হিসেবে কিছু দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। তখন তারা দুজন তাকে [ফাত্বিমাকে] বলিলেন, আল্লাহর কসম! তোমার জন্য কোন খোরপোষ নেই। তবে তুমি গর্ভবতী হলে ভিন্ন কথা। এরপর তিনি নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এলেন এবং তাদের দুজনের উক্তি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করিলেন। তখন তিনি বলিলেন, তোমার জন্য কোন খোরপোষ নেই। এরপর তিনি নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে স্বামীর ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। তখন তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি কোথায় যাব? তিনি বলিলেন, ইবনি উম্মু মাকতূমের কাছে চলে যাও। সে অন্ধ মানুষ। তুমি প্রয়োজনবোধে তার নিকট গাত্র বস্ত্র খুলতে পারবে এবং সে তোমাকে দেখিতে পাবে না। এরপর যখন তার ইদ্দাত পূর্ণ হল তখন নবী [সাঃআঃ] তাকে উসামাহ্‌ ইবনি যায়দের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিলেন। পরবর্তীকালে [উমাইয়্যাহ্‌ গভর্নর] মারওয়ান এ হাদীসের সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার উদ্দেশে ক্বাবীসাহ্‌ ইবনি যুআয়বকে তার কাছে পাঠান। তখন তিনি তার [ক্বাবীসার] কাছে এই হাদীস বর্ণনা করেন। এখবর শুনে মারওয়ান বলিলেন, একজন মহিলা ছাড়া অন্য কারো কাছে আমি এ হাদীস শুনিনি। আমরা এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ মত গ্রহণ করব যার উপর আমরা মুসলিম জনসাধারণকে পেয়েছি। ফ্বাতিমাহ্‌ বিনতু ক্বায়স [রাদি.]-এর নিকট মারওয়ানের মন্তব্য পৌছলে তিনি বলেন, আমার ও তোমাদের মধ্যে কুরআনই চূড়ান্ত মীমাংসাকারী। আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমরা তাদেরকে তাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ো না।” তিনি বলেন, এ আয়াত সে সব মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য যাদের জন্য রাজআতের অধিকার আছে। তাই তিন ত্বলাকের পর নতুন করে আর কী থাকতে পারে? এরপর তোমরা কী করে বলিতে পার যে, যে মহিলা গর্ভবতী নয় তার জন্য কোন খোরপোষ নেই? এরপরও তোমরা তাকে কিসের ভিত্তিতে তোমাদের ঘরে আটক করে রাখবে?

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৬৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৬৬]

৩৫৯৭. শাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি তার [ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স] কাছে গেলাম এবং তার ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সিদ্ধান্ত সর্ম্পকে তাকে জিজ্ঞেস করালাম। তিনি বলেন, তার স্বামী তাকে বায়িন তালাক দিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, এরপর আমি বাসস্থান ও খোরপোষের জন্য তার বিরুদ্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে বিচারপ্রার্থী হলাম। তিনি বলেন, তিনি আমার পক্ষে বাসস্থান ও খোরপোষের রায় দেননি। উপরন্তু তিনি আমাকে ইবনি উম্মু মাকতূমের ঘরে ইদ্দাত পালনের নির্দেশ দিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৬৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৬৭]

৩৫৯৮. শাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ফাতিমাহ বিনত ক্বায়স [রাদি.]-এর কাছে গেলাম। এরপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৬৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৬৮]

৩৫৯৯. শাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি আমাদেররকে ইবনি ত্বাব নামক টাটকা খেজুর দ্বারা আপ্যায়িত করিলেন এবং গম ও মূলত ছাতুর শরবত পান করালেন। এরপর আমি তাকে তিন ত্বালাক্বপ্রাপ্তা মহিলা সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করলাম যে, সে ইদ্দাত পালন করিবে কোথায়? তিনি বলেন, আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিয়েছিলেন। তখন নবী [সাঃআঃ] আমাকে আমার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ইদ্দাত পালনের অনুমতি দিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৬৯]

৩৬০০. ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স [রাদি.]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] থেকে তিন তালাকপ্রাপ্তা মহিলা সর্ম্পকে বর্ণিত। তিনি [সাঃআঃ] বলেন, তার জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ কোনটাই নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৭০, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৭০]

৩৬০১. ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিলেন। এতে আমি তার ঘর থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার ইচ্ছা করলাম। [এ পর্যায়ে] আমি নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে গেলাম। তিনি বলিলেন, তুমি তোমার চাচাত ভাই আম্‌র ইবনি উম্মু মাকতূমের বাড়িতে চলে যাও এবং তাহাঁর ঘরেই ইদ্দাত পালন করিতে থাক।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৭১, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৭১]

৩৬০২. আবু ইসহাক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আসওয়াদ ইবনি ইয়াযীদের সঙ্গে সেখানকার বড় মসজিদে বসা ছিলাম। শাবীও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স বর্ণিত হাদীস প্রসঙ্গে বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জন্য বাসস্থান ও খোরপোষের সিদ্ধান্ত দেননি। তখন আসওয়াদ তার হাতে এক মুঠো কংকর নিয়ে শাবীর দিকে নিক্ষেপ করিলেন। এরপর বলিলেন, সর্বনাশ! তুমি এমন ধরনের হাদীস বর্ণনা করছ? [অথচ] উমর [রাদি.] বলেছেন, আমরা আল্লাহর কিতাব এবং আমাদের নবী [সাঃআঃ]র সুন্নাত এমন একজন মহিলার উক্তির কারনে ছেড়ে দিতে পারি না। আমরা জানি না, সে স্মরণ রাখতে পেরেছে অথবা ভুলে যে তার জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ আছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

لاَ تُخْرِجُوهُنَّ مِنْ بُيُوتِهِنَّ وَلاَ يَخْرُجْنَ إِلاَّ أَنْ يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ

“তোমরা তাদেরকে তাদের বাসগৃহ থেকে বহিষ্কার করে দিয়ো না এবং তারাও যেন ঘর থেকে বের না হয়। তবে তারা স্পষ্ট কোন অশ্লীলতায় লিপ্ত হলে ভিন্ন কথা”-[সুরা আত্ তালাক ৬৫:১]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৭২, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৭২]

৩৬০৩. আবু ইসহাক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উক্ত সানাদে আবু আহ্‌মাদ আম্মার ইবনি রুযায়ক্ব সূত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৭৩]

৩৬০৪. আবু বাক্‌র ইবনি আবু জাহ্‌ম ইবনি সুখায়র আল আদাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়স[রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি যে, তার স্বামী তাকে তিন তালাক দিয়েছেন। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জন্য বাসস্থান ও খোরপোষের অধিকার দেননি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলেছেন, তোমার ইদ্দাত পূর্ণ হলে তুমি আমাকে জানাবে। এরপর আমি তাঁকে ইদ্দাত পূর্ণ হওয়ার কথা জানালাম। তখন মুআবিয়াহ্‌ [রাদি.], আবু জাহম [রাদি.] ও উসামাহ্‌ [রাদি.] তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব পাঠান। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, মুআবিয়াহ্‌ তো একজন গরীব মানুষ, তার কোন ধনসম্পদ নেই। আর আবু জাহম-সে তো স্ত্রীদের প্রহারকারী। তবে উসামাহ্‌- তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহন করিতে পার। তখন তিনি তার হাতের ইশারায় বলিলেন, উসামাহ্‌ তো এরূপ। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের আনুগত্য করাই তোমার জন্য কল্যাণকর। তিনি বলিলেন, তখন আমি তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। [আল্লাহ আমাকে প্রাচুর্য ও বিত্তবৈভবে পরিপূর্ণ করে দিলেন] ফলে আমি ঈর্ষার কেন্দ্রে পরিণত হলাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৭৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৭৪]

৩৬০৫. আবু বাক্‌র ইবনি আবু জাহ্‌ম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়সকে বলিতে শুনেছি যে, আমার স্বামী আবু আমর হাফস্‌ ইবনি মুগীরাহ্ [রাদি.] আইয়্যাশ ইবনি আবু রাবীআহ্‌-কে আমার নিকটে আমাকে তালাক দেয়ার সংবাদ দিয়ে পাঠান। তিনি তার সাথে আমার খোরপোষের জন্য পাঁচ সা [এক সা সাড়ে তিন কেজির সমান] খেজুর এবং পাঁচ সা যব পাঠিয়ে দেন। তখন আমি তাকে বললাম, আমার জন্য কি খোরপোষ এ পরিমাণ? আমি তোমাদের ঘরে ইদ্দাত করব না। তিনি [আইয়্যাশ] বলিলেন, না তা হইতে পারে না। তিনি [ফাত্বিমাহ্‌] বলিলেন, আমি তখন কাপড় চোপড় পরিধান করে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে গেলাম। তিনি আমাকে বলিলেন, সে তোমাকে কত তালাক দিয়েছে? আমি বললাম, তিন তালাক। তিনি বলিলেন, সে [আয়্যাশ] ঠিকই বলেছে। তোমার জন্য কোন খোরপোষ নেই। তুমি তোমার চাচাতো ভাই ইবনি উম্মু মাকতূমের ঘরে গিয়ে ইদ্দাত পালন কর। সে একজন অন্ধ মানুষ। তুমি প্রয়োজনবোধে তার কাছে কাপড় চোপড় খুলে রাখতে পারবে। এরপর তোমার ইদ্দাত পূর্ন হলে তুমি আমাকে জানাবে। তিনি {ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়স [রাদি.]} বলেন, আমার ইদ্দাতকাল অতিবাহিত হলে বেশ কয়েকজন লোক আমার কাছে বিয়ের পায়গাম পাঠালেন। তার মধ্যে মুআবিয়াহ্‌ ও আবু জাহ্‌মও ছিলেন। তখন নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, মুআবিয়াহ্‌ তো একজন গরীব মানুষ, নগণ্য সম্পদের অধিকারী আর আবু জাহম তো নারীদের প্রতি কঠোর [অথবা বলিলেন] সে স্ত্রীদের লাঠিপেটা করে অথবা এরূপ কিছু বলিলেন। তবে উসামাহ্‌ ইবনি যায়দকেই গ্রহন করা তোমার জন্য উচিত হইবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৭৫]

৩৬০৬. আবু বাকর ইবনি আবু জাহম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি এবং আবু সালামাহ্ ইবনি আবদুর রহমান ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স এর কাছে গেলাম। এরপর আমরা তাকে [তার তালাক সম্পর্কে] জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, আমি আবু আম্‌র হাফস্ ইবনি মুগীরার স্ত্রী ছিলাম। একবার তিনি নাজরানের যুদ্ধে রওনা হয়ে গেলেন। এরপর আবু বকর ইবনি আবু জাহ্ম [রাদি.] ইবনি মাহদী বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি তার বর্ণনায় এতটুকু বেশি উল্লেখ করিয়াছেন যে, “তিনি [ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স] বলেন, আর আমি তাকে বিয়ে করলাম। এরপর আল্লাহ ইবনি যায়দের দ্বারা আমাকে সম্মানিত করিলেন এবং আমাকে তার মাধ্যমে উচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৭৬]

৩৬০৭. আবু বাকর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি যুবায়র [রাদি.]-এর শাসনামলে আমি এবং আবু সালামাহ্‌ [রাদি.] ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স [রাদি.]-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি আমাদেরকে সুফ্‌ইয়ানের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করে বলিলেন যে, তার স্বামী তাকে বায়িন তালাক দিয়েছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৭৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৭৭]

৩৬০৮. ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিলেন। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার জন্য বাসস্থান এবং খোরপোষের ফায়সালা দেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৭৮]

৩৬০৯. হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে তাহাঁর পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ ইবনিল আস [রাদি.] আবদুর রহমান ইবনি হাকাম-এর কন্যাকে বিয়ে করেন। এরপর তিনি তাকে তিন তালাক দেন এবং তাকে তার থেকে বের করে দেন। উরওয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এতে তাদের ভর্ৎসনা করেন। তারা বলিলেন, ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স [রাদি.]ও তো ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। উরওয়াহ্ বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-এর কাছে এলাম এবং তাহাঁর কাছে এ ঘটনা উপস্থাপন করলাম। তিনি বলিলেন, ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স-এর জন্য কোন কল্যাণ নেই যে, সে এ হাদীস বর্ণনা করিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৭৯]

৩৬১০. ফাত্বিমাহ্ বিনতু ক্বায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিয়েছেন, আমার আশংকা হয় যে, তিনি আমার উপর চড়াও হইবেন। তখন তিনি তাকে অন্যত্র চলে যাবার নির্দেশ দিলেন এবং তিনি চলে গেলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৮০, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৮০]

৩৬১১. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ফাত্বিমাহ্‌ বিনতু ক্বায়স-এর জন্য এ কথা বলায় কোন কল্যাণ নেই যে, তিন তালাকপ্রাপ্তা মহিলার জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৮১, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৮১]

৩৬১২. আবদুর রহমান ইবনি ক্বাসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উরওয়াহ্ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আয়িশা [রাদি.]-কে বলিলেন, হাকামের অমুক মেয়েটির সম্পর্কে আপনি কি অবহিত নন যে, তার স্বামী তাকে বায়িন তালাক দিয়েছেন। এরপর সে ঘর থেকে বের হয়েছে। তিনি বলিলেন, আপনি কি ফাত্বিমার উক্তি শুনেননি? তখন তিনি [উরওয়াহ্] বলিলেন, তার উক্তি বর্ণনার মধ্যে তার জন্য কোন কল্যাণ নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৮২, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৮২]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply