বায়তুল্লাহর হজ্জ ফরজ। মহিলা, সফর ও উমরা বর্ণনা
মুশরিকরা বায়তুল্লাহর হজ্জ করিবে না, উলঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করিবে না >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
৭৩. অধ্যায়ঃ জীবনে একবার হাজ্জ পালন ফারয
৭৪. অধ্যায়ঃ মহিলাদের মাহরামের সঙ্গে হাজ্জ অথবা কোন প্রয়োজনীয় সফর করা
৭৫. অধ্যায়ঃ হাজ্জের সফরে বা অন্য কোন সফরের উদ্দেশে যানবাহনে আরোহণকালীন দুআ পড়া মুস্তাহাব এবং এর উক্ত দুআর বর্ণনা
৭৬. অধ্যায়ঃ হাজ্জের সফর ইত্যাদি থেকে প্রত্যাবর্তন করে যে দুআ পড়তে হয়
৭৭. অধ্যায়ঃ হাজ্জ, উমরাহ্ ইত্যাদি সমাপনান্তে প্রত্যাবর্তনের পথে যুল হুলায়ফার বাত্বহা নামক স্থানে অবতরণ ও নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব
৭৮. অধ্যায়ঃ মুশরিকরা বায়তুল্লাহর হাজ্জ করিবে না, উলঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর ঘর ত্বওয়াফ করিবে না এবং হাজ্জের বড় দিনের বর্ণনা
৭৯. অধ্যায়ঃ হাজ্জ, উমরাহ্ ও আরাফাহ্ দিবসের ফযিলত
৭৩. অধ্যায়ঃ জীবনে একবার হজ্জ পালন ফারয
৩১৪৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং বললেনঃ হে জনগণ! তোমাদের উপর হজ্জ ফারয করা হয়েছে। অতএব তোমরা হজ্জ কর। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রাসূল! তা কি প্রতি বছর? রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নীরব থাকলেন এবং সে তিনবার কথাটি বলিল। এরপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি হ্যাঁ বললে তা ওয়াজিব হয়ে যাবে [প্রতি বছরের জন্য] অথচ তোমরা তা পালন করিতে সক্ষম হইবে না। তিনি পুনরায় বলিলেন, তোমরা আমাকে ততটুকু কথার উপর থাকতে দাও যতটুকু আমি তোমাদের জন্য বলি। কারণ তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা তাদের অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাদের নবীদের বিরোধিতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি তোমাদের যখন কোন কিছু করার নির্দেশ দেই-তোমরা তা যথাসাধ্য পালন কর এবং যখন তোমাদের কোন কিছু করিতে নিষেধ করি তখন তা পরিত্যাগ কর।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১২৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩১২০]
৭৪. অধ্যায়ঃ মহিলাদের হজ্জ মাহরামের সঙ্গে অথবা কোন প্রয়োজনীয় সফর করা
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মহিলা যেন সাথে মাহ্রাম ব্যক্তি ছাড়া একাকী তিন দিনের [দূরত্বে] সফর না করে। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১২৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩১২১]
৩১৫০. উবায়দুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
আবু বাকর [রাদি.]-এর বর্ণনায় রয়েছে তিন দিনের অতিরিক্ত আর ইবনি নুমায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর পিতার সূত্রে বর্ণনায় রয়েছে- সালাসাহ্ [তিনরাত]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১২৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩১২২]
৩১৫১. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে স্ত্রীলোক আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান এনেছে- তার জন্য সাথে কোন মাহ্রাম ব্যক্তি ছাড়া তিন দিনের দূরত্বে পথের সফর করা বৈধ নয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১২৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩১২৩]
৩১৫২. ক্বাযাআহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ আল খুদ্রী [রাদি.]-এর নিকট থেকে একটি হাদীস শুনে আশ্চর্যান্বিত হলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম-আপনি কি তা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট শুনেছেন? তিনি বলিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট শুনিনি তা কেন তাহাঁর নামে বলব। ক্বাযাআহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আবু সাঈদ [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “তোমরা কেবল তিনটি মসজিদের দিকেই [সাওয়াবের উদ্দেশে] সফর কর: “আমার এ মসজিদ, মাসজিদুল হারাম এবং মাসজিদুল আক্বসা।” আমি তাঁকে আরও বলিতে শুনেছি: “কোন মহিলা যেন দুদিনের পথেও সফর না করে- তার সাথে তার কোন মাহরাম পুরুষ অথবা তার স্বামী ব্যতীত”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১২৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩১২৪]
৩১৫৩. আবু সাঈদ আল খুদ্রী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট চারটি কথা শুনেছি এবং তা আমার পছন্দ হয়েছে ও আমার কাছে ভাল লেগেছে। সাথে স্বামী অথবা কোন মাহরাম ব্যক্তি ব্যতীত কোন মহিলাকে দুদিনের পথও সফর করিতে তিনি নিষেধ করিয়াছেন। অতঃপর তিনি অবশিষ্ট হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১২৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩১২৫]
৩১৫৪. আবু সাঈদ আল খুদ্রী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন স্ত্রীলোক যেন সাথে কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত তিন দিনের দূরত্বের পথ সফর না করে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১২৯, ইসলামিক সেন্টার- ৩১২৬]
৩১৫৫. আবু সাঈদ আল খুদ্রী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেন, কোন স্ত্রীলোক যেন তিন দিনের দূরত্বের পথ একাকী সফর না করেন- তার সাথে একজন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৩০, ইসলামিক সেন্টার- ৩১২৭]
৩১৫৬. ক্বাতাদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সানাদ সূত্রে উপরোক্ত হাদীদের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। এ বর্ণনায় আছেঃ “তিন দিনের অতিরিক্ত দূরত্ব সাথে মাহরাম পুরুষ ব্যতীত”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৩১, ইসলামিক সেন্টার- ৩১২৮]
৩১৫৭. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলিম মহিলার জন্য তার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত এক রাতের পথও সফর করা বৈধ নয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৩২, ইসলামিক সেন্টার- ৩১২৯]
৩১৫৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে কোন মহিলা আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে- তার জন্য সাথে কোন মাহ্রাম পুরূষ ব্যতীত এক দিনের দূরত্বের পথ সফর করা হালাল নয়। {৩৫}
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৩৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৩০]
{৩৫} বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্ন দূরত্বের কথা উল্লেখ আছে । কেননা রসুল [সাঃআঃ] যখন যেভাবে যে দূরত্বের জন্য জিজ্ঞাসিত হয়েছেন সেভাবে তিনি জবাব দিয়েছেন । ফলে একেক সহাবা একেকভাবে শ্রবণ করে সেভাবে বর্ণনা করিয়াছেন । মূলত সকল হাদীসের উদ্দেশ্যই একই । তা হল যতটুকু দূরত্বের ভ্রমণকে সফর বলা যায় ততটুকু দূরত্বই উদ্দেশ্য । আর এতে স্বামী বা মাহরাম তথা যার সাথে বিবাহ চিরস্থায়ীভাবে হারাম এমন পুরুষের সঙ্গ ব্যতীত সফর বৈধ নয় । পুরুষের উপর যেমন হজ্জ ফারয তেমন সামর্থ্য হলে মহিলার উপরও ফরয । হ্যাঁ মহিলার হজ্জের জন্য মাহরাম শর্ত কিনা এ বিষয়ে মতপার্থক্য আছে । তবে সহীহ হাদীসের আলোকে সঠিক কথা হলো যে, স্বামী বা মাহরাম ছাড়া কোন মহিলার হাজ্জে গমন করা জায়িয । আর এটাই অধিকাংশ উলামার অভিমত ঈমাম আবু হানিফা যে, তিন মানযিল কম দূরত্বের সফরে মাহরাম ব্যতীত হাজ্জে যাওয়া তা সঠিক নয়, বরং ভ্রান্ত ।
৩১৫৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে কোন মহিলা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে- তার জন্য সঙ্গে কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত একাকী এক দিন ও এক রাতের দূরত্বের পথও সফর করা হালাল নয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৩৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৩১]
৩১৬০. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন স্ত্রীলোকের জন্য তার সাথে কোন মাহরাম ব্যক্তি ব্যতীত তিন দিনের দূরত্বের পথ সফর করা বৈধ নয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৩৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৩২]
৩১৬১. আবু সাঈদ আল খুদ্রী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে কোন মহিলা আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে- তার পিতা অথবা তার ছেলে অথবা তার স্বামী অথবা তার ভাই অথবা তার অপর কোন মাহরাম আত্মীয় তার সফর সঙ্গী না হলে তার জন্য তিনদিন বা তার অতিরিক্ত সময়ের পথ সফর করা হালাল নয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৩৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৩৪]
৩১৬২. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৩৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৩৫]
৩১৬৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-কে ভাষণ দিতে শুনেছিঃ সাথে মাহরাম পুরুষ না থাকা অবস্থায় কোন পুরুষ লোক যেন কোন মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ না করে। কোন স্ত্রীলোক যেন সাথে কোন মাহরাম পুরুষ ছাড়া একাকী সফর না করে। এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্ত্রী হজ্জের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে এবং আমাকে অমুক সৈন্য বাহিনীতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে- যা অমুক স্থানে যুদ্ধে যাবে। তিনি বলিলেন, তুমি চলে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ কর।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৩৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৩৬]
৩১৬৪. আমর ইবনি দীনার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৩৯, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৩৭]
৩১৬৫. ইবনি জুরায়জ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিম্নোক্ত কথার উল্লেখ নেই: “কোন পুরুষ লোক যেন কোন মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ না করে, কিন্তু তার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ থাকলে স্বতন্ত্র কথা”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৪০, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৩৮]
৭৫. অধ্যায়ঃ হজ্জের সফরে বা অন্য কোন সফরের উদ্দেশে যানবাহনে আরোহণকালীন দুআ পড়া মুস্তাহাব এবং এর উক্ত দুআর বর্ণনা
৩১৬৬. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোথাও সফরের উদ্দেশে তাহাঁর উটে আরোহণের সময় তিনবার “আল্ল-হু আকবার” [আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ] বলিতেন, এরপর যে দুআ পাঠ করিতেন তার অর্থ এই :
سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَى وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ وَالْخَلِيفَةُ فِي الأَهْلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوءِ الْمُنْقَلَبِ فِي الْمَالِ وَالأَهْلِ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাযী সাখ্খর লানা- হাযা ওয়ামা কুন্না- লাহু মুকরিনীন, ওয়াইন্না- ইলা রব্বিনা- লামুনকলিবূন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফী সাফারিনা- হাযাল বিররা ওয়াত তাকওয়া, ওয়ামিনাল ‘আমালি মা-তারয-, আল্লাহুম্মা হাওউইন আলাইনা- সাফারনা-হাযা ওয়াতউয়ি আন্না বু’দাহ। আল্লাহুম্মা আ্নতাস সহিবু ফিস সাফারি, ওয়াল খলীফাতু ফিল আহলি। আল্লাহুম্মা ইন্নী আয়ু’যু বিকা মিন ওয়াছা-ইসসাফারি ওয়া কিতাবাতিল মানযরি ওয়াসূইলমুনকলাবি ফিলমা-লি ওয়াল আহলি ওয়াল ওয়ালাদি।
“পবিত্র মহান সে সত্তা- যিনি একে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা একে বশীভূত করিতে সক্ষম ছিলাম না। আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরে যেতে হইবে। হে আল্লাহ! আমাদের এ সফরে আমরা তোমার নিকট কল্যাণ, তাক্বওয়া এবং তোমার সন্তুষ্টি বিধানকারী কাজের তাওফীক চাই। হে আল্লাহ! আমাদের এ সফর আমাদের জন্য সহজ করে দাও এবং এর দূরত্ব কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমিই [আমাদের] সফরসঙ্গী এবং পরিবারের তত্ত্বাবধানকারী। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি সফরের কষ্ট, দুঃখজনক দৃশ্য এবং ফিরে এসে সম্পদ ও পরিবারের ক্ষতিকর পরিবর্তন থেকে”।
এরপর তিনি যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন তখনও উপরোক্ত দুআ পড়তেন এবং এর সাথে যোগ করিতেন: [অর্থ] “আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাহ্কারী, আমাদের প্রতিপালকের ইবাদাতকারী ও প্রশংসাকারী”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৪১, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৩৯]
৩১৬৭. আবদুল্লাহ ইবনি সারজিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন সফর করিতেন তখন আশ্রয় প্রার্থনা করিতেন সফরের কষ্ট থেকে, দুঃখজনক প্রত্যাবর্তন থেকে, সুখময় অবস্থার পর দুঃখময় অবস্থায় পতিত হওয়া থেকে, মাযলূমের বদদুআ থেকে এবং সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের ক্ষতিকর দৃশ্য অবলোকন থেকে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৪২, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৪০]
৩১৬৮. আসিম আল- আহওয়াল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সানাদে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য আবদুল ওয়াহিদের বর্ণনায় ফীল মাল ওয়াল আহ্ল এবং মুহাম্মাদ ইবনি হাযম-এর বর্ণনায় প্রত্যাবর্তনকালে প্রথমে আহ্ল শব্দ রয়েছে। উভয়ের বর্ণনায় রয়েছেঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ওয়া,সায়িস সাফরি
“আয় আল্লাহ! আমি সফরের কষ্ট ক্লান্তি হইতে তোমার কাছে পানাহ চাই।“
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৪৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৪১]
৭৬. অধ্যায়ঃ হজ্জের সফর ইত্যাদি থেকে প্রত্যাবর্তন করে যে দুআ পড়তে হয়
৩১৬৯. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিহাদ, অভিযান, হজ্জ অথবা উমরাহ্ করে ফিরে আসার সময় যখন কোন উঁচু টিলা বা কংকরময় উচ্চভূমিতে আরোহণ করিতেন তখন তিনবার “আল্ল-হু আকবার” [আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ] ধ্বনি দিতেন, এরপর এ দুআ পড়তেন।
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ آيِبُونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ سَاجِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ صَدَقَ اللَّهُ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ
[অর্থ] “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাহাঁর কোন শারীক নেই। তাহাঁরই রাজত্ব [বা সার্বভৌমত্ব], তাহাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা এবং তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। [আমরা] প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাহ্কারী, ইবাদাতকারী, আমাদের প্রতিপালককে সাজদাহ্কারী ও প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাহাঁর ওয়াদা পূর্ণ করিয়াছেন, তাহাঁর বান্দাকে সাহায্য করিয়াছেন এবং একাই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করিয়াছেন”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৪৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৪২]
৩১৭০. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এ সূত্রে নবী [সাঃআঃ]-এর উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। শুধুমাত্র আইয়ূবের বর্ণনায় দুবার তাকবীরের কথা উল্লেখ আছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৪৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৪৩]
৩১৭১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি ও আবু ত্বল্হাহ্ [রাদি.] নবী [সাঃআঃ]-এর সাথে প্রত্যাবর্তন করলাম এবং সফিয়্যাহ্ [রাদি.] তাহাঁর উষ্ট্রীর পিঠে পেছনে সওয়ার ছিলেন। আমরা যখন মাদীনাহ্ শহরতলীতে পৌঁছলাম তখন নবী [সাঃআঃ] এ দুআ পড়লেন :
آيِبُونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ
[অর্থ] “আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাহ্কারী, আমাদের প্রভুর ইবাদাতকারী, প্রশংসাকারী”। আমরা মাদীনায় প্রবেশ করা পর্যন্ত তিনি অবিরত এ দুআ পড়তে থাকতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৪৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৪৪]
৩১৭২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এ সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৪৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৪৪]
৭৭. অধ্যায়ঃ হজ্জ উমরাহ্ ইত্যাদি সমাপনান্তে প্রত্যাবর্তনের পথে যুল হুলায়ফার বাত্বহা নামক স্থানে অবতরণ ও নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব
৩১৭৩. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুল হুলায়ফার কংকরময় ভূমি [বাত্বহা]-তে তাহাঁর উট বসালেন এবং সেখানে নামাজ আদায় করিলেন। নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] ও তাই করিতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৪৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৪৫]
৩১৭৪. নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ইবনি উমর [রাদি.] যুল হুলায়ফার বাত্বহা প্রান্তরে তাহাঁর উট বসাতেন যেখানে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর উট বসাতেন এবং নামাজ আদায় করিতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৪৯, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৪৬]
৩১৭৫. মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাক্ব আল মুসাইয়্যাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ইবনি উমর [রাদি.] হজ্জ অথবা উমরাহ সমাপনান্তে ফেরার পথে যুল হুলায়ফার কংকরময় ভূমিতে নিজের উট বসাতেন যেখানে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর উট বসাতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৫০, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৪৭]
৩১৭৬. সালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
যুল হুলায়ফায় রাতের শেষ ভাগে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট [কোন আগন্তুক মালাক] আবির্ভূত হয়। তাঁকে বলা হল, আপনি বারাকাতপূর্ণ পাথরময় স্থানে [অবস্থান করছেন]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৫১, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৪৮]
৩১৭৭. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে তাহাঁর পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুল হুলায়ফার উপত্যকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থানকালে রাতের বিশেষ প্রহরে তাহাঁর নিকট [কোন মালাক] আবির্ভূত হয় এবং বলা হয়ঃ আপনি বারাকাতপূর্ণ কংকরময় স্থানে [অবস্থান করছেন]।
মূসা উক্ববাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আমাদের সাথে সফরকালে মসজিদের নিকট তাহাঁর উট বসাতেন যেখানে আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] নিজের উট বসাতেন এবং এ স্থানকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অবতরণ [অবস্থান] স্থল মনে করিতেন। স্থানটি উপত্যকার কেন্দ্রস্থলে নির্মিত মসজিদের নিম্নদেশের সমতলে মসজিদ ও ক্বিব্লার মাঝখানে অবস্থিত।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৫২, ই..সে. ৩১৪৯]
৭৮. অধ্যায়ঃ মুশরিকরা বায়তুল্লাহর হজ্জ করিবে না, উলঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করিবে না এবং হজ্জের বড় দিনের বর্ণনা
৩১৭৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের পূর্ববর্তী [বছরের] যে হাজ্জে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আবু বকর সিদ্দীক্ব [রাদি.]-কে আমীর নিয়োগ করেছিলেন, সে হজ্জের সময় তিনি [আবু বকর] আমাকে সহ একদল লোকদের কুরবানীর দিন জনগণের মধ্যে নিম্নোক্ত ঘোষণা দেয়ার জন্য পাঠালেনঃ “এ বছরের পর মুশরিকরা আর হজ্জ করিতে পারবে না এবং উলঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করিবে না”।
ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.]-এর এ হাদীস অনুযায়ী হুমায়দ ইবনি আবদুর রহমান বলিতেন- “মহান হজ্জের দিন হচ্ছে এ কুরবানীর দিন”। {৩৬}
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৫৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৫০]
{৩৬} কুরআন হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, কুরবানীর দিনই হল [আরবী] [ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবার] সাধারণ লোকের মধ্যে প্রসিদ্ধ যে, আরাফার দিন জুমুআহ হল সেটাই হজ্জ আকবার, এটা শয়তান তাদেরকে বাতলে দিয়েছে। এর পক্ষে কুরআন-হাদীসের কোন দলীল নেই। এ ব্যাপারে ঈমামদের মাঝে মতভেদ আছে, ঈমাম মালিক, শাফিঈ ও জমহুর [অধিকাংশ] আলিমের মতে এটা কুরবানীর দিনে। আর কতকের মতে হাজ্জে আসগার হল উমরাহ্ এবং হাজ্জে আকবার হল হজ্জ করা।
৭৯. অধ্যায়ঃ হজ্জ, ওমরা ও আরাফাহ দিবসের ফযিলত
৩১৭৯. সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আয়িশা [রাদি.] বলেছেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আরাফাহ দিবসের তুলনায় এমন কোন দিন নেই- যেদিন আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক লোককে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন। আল্লাহ তাআলা নিকটবর্তী হন, অতঃপর বান্দাদের সম্পর্কে মালায়িকার সামনে গৌরব করেন এবং বলেনঃ তারা কী উদ্দেশে সমবেত হয়েছে [বা তারা কী চায়]?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৫৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৫১]
৩১৮০. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ একটি ওমরা পরবর্তী ওমরা পর্যন্ত মাঝখানের গুনাহসমূহের কাফ্ফারাহ্ স্বরূপ এবং ত্রুটিমুক্ত [অথবা আল্লাহর নিকট গৃহীত] হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া এর কিছু নয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৫৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৫২]
৩১৮১. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এ সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৫৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৫৩]
৩১৮২. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এ [কাবা] ঘরে [হজ্জের উদ্দেশে] আসে, অতঃপর অশ্লীল আচরণও করে না এবং দুষ্কর্মও করে না সে এমন [নিষ্পাপ] ভাবে প্রত্যাবর্তন করে যে তার জননী তাকে [নিষ্পাপ অবস্থায়] প্রসব করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৫৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৫৪]
৩১৮৩. মানসূর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সানাদের পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে হাদীসটি এভাবে শুরু হয়েছে “যে ব্যক্তি হজ্জ করে এবং [এ সময়] কোনরূপ অশ্লীল আচরণও করে না, দুষ্কর্মও করে না”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৫৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৫৫]
৩১৮৪. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এ সানাদে নবী [সাঃআঃ]-এর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩১৫৯, ইসলামিক সেন্টার- ৩১৫৬]
Leave a Reply