বরকতময় স্থান, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও গরীবকে কষ্ট দেওয়া

বরকতময় স্থান, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও গরীবকে কষ্ট দেওয়া

বরকতময় স্থান, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও গরীবকে কষ্ট দেওয়া  >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর কয়েকটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

বরকতময় স্থান, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও গরীবকে কষ্ট দেওয়া

পরিচ্ছেদ -৪৫ঃ বরকতময় স্থান সমূহের দর্শন
পরিচ্ছেদ -৪৬ঃ আল্লাহর সন্তুষ্টি এর জন্য কারো সাথে ভালবাসা
পরিচ্ছেদ -৪৭ঃ বান্দাকে আল্লাহর ভালবাসা নিদর্শনাবলী
পরিচ্ছেদ -৪৮ঃ নেক লোক, দুর্বল ও গরীব মানুষদেরকে কষ্ট দেওয়া
পরিচ্ছেদ -৪৯ঃ কার্যকলাপের ভিত্তিতে বিধান প্রয়োগ করা হবে

পরিচ্ছদঃ ৪৫: ভাল লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করা, তাঁদের সাহচর্য গ্রহণ করা, তাঁদেরকে ভালবাসা, তাঁদেরকে বাড়িতে দাওয়াত দেওয়া, তাঁদের কাছে দো‘আ চাওয়া এবং বরকতময় স্থানসমূহের দর্শন

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَإِذۡ قَالَ مُوسَىٰ لِفَتَىٰهُ لَآ أَبۡرَحُ حَتَّىٰٓ أَبۡلُغَ مَجۡمَعَ ٱلۡبَحۡرَيۡنِ أَوۡ أَمۡضِيَ حُقُبٗا ٦٠ ﴾ [الكهف: ٦٠] إِلَى قوله تَعَالَى : ﴿ قَالَ لَهُۥ مُوسَىٰ هَلۡ أَتَّبِعُكَ عَلَىٰٓ أَن تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمۡتَ رُشۡدٗا ٦٦ ﴾ [الكهف: ٦٦]

অর্থাৎ “(স্মরণ কর,) যখন মূসা তার সঙ্গীকে বলেছিল, দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে না পৌঁছে আমি থামব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব।” -এখান থেকে আল্লাহর বাণী:- “মূসা তাকে বলল, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা হইতে আমাকে শিক্ষা দেবেন এই শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি?” (সূরা কাহফ ৬০-৬৬ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿ وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ﴾ [الكهف: ٢٨]

অর্থাৎ “তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে।” (সূরা কাহফ ২৮ আয়াত

৩৬৪. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রাসূল সাঃআঃ-এর জীবনাবসানের পর আবু বকর সিদ্দীক রাঃআঃ উমার রাঃআঃ-কে বললেন, ‘চলুন, আমরা উম্মে আইমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাই, যেমন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতেন।’ সুতরাং যখন তাঁরা উম্মে আইমানের কাছে পৌঁছলেন, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। অতঃপর তাঁরা তাঁকে বললেন, ‘তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কি জানো না যে, আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর জন্য (দুনিয়া থেকে) অধিক উত্তম?

তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি এ জন্য কান্না করছি না যে, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর জন্য আল্লাহর নিকট যা রয়েছে, তা অধিকতর উত্তম সে কথা আমি জানি না। কিন্তু আমি এজন্য কাঁদছি যে, আসমান হইতে ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেল।’ উম্মে আইমান (তাঁর এ দুঃখজনক কথা দ্বারা) ঐ দু’জনকে কাঁদতে বাধ্য করলেন। ফলে তাঁরাও তাঁর সাথে কাঁদতে লাগলেন। (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ২৪৫৪, ইবনু মাজাহ ১৬৩৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৬৫. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘এক ব্যক্তি অন্য কোন গ্রামে তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বের হল। আল্লাহ তা‘আলা তার রাস্তায় এক ফেরেশতাকে বসিয়ে দিলেন, তিনি তার অপেক্ষা করতে থাকলেন। যখন সে তাঁর কাছে পৌঁছল, তখন তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ সে বলল, ‘এ লোকালয়ে আমার এক ভাই আছে, আমি তার কাছে যাচ্ছি।’

ফিরিশতা জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার প্রতি কি তার কোন অনুগ্রহ রয়েছে, যার বিনিময় দেওয়ার জন্য তুমি যাচ্ছ?’ সে বলল, ‘না, আমি তার নিকট কেবলমাত্র এই জন্য যাচ্ছি যে, আমি তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি।’ ফেরেশতা বললেন, ‘(তাহলে শোনো) আমি তোমার নিকট আল্লাহর দূত হিসাবে (এ কথা জানাবার জন্য) এসেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ভালবাসেন; যেমন তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালবাস।’’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ২৫৬৭, আহমাদ ৯০৩৬, ৯৬৪২, ৯৮৮৭, ১০২২২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৬৬. আবু হুরায়রা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোনো রোগীকে সাক্ষাৎ করে খোঁজখবর নেয় অথবা তার কোনো আল্লাহর ওয়াস্তে কৃত ভাই এর সাথে সাক্ষাৎ করে, সে ব্যক্তিকে এক (গায়বী) আহ্বানকারী আহ্বান করে বলে, ‘সুখী হও তুমি, সুখকর হোক তোমার ঐ যাত্রা (সাক্ষাতের জন্য যাওয়া)। আর তোমার স্থান হোক জান্নাতের প্রাসাদে।’’ (তিরমিজী, হাসান বা গরীব সূত্রে)[১]

[১] তিরমিজী ২০০৮, ইবনু মাজাহ ১৪৪৩.হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

৩৬৭. আবু মূসা আশআরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হল, কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) ও হাপরে ফুৎকারকারী (কামারের) ন্যায়। কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) হয়তো তোমাকে কিছু দান করিবে অথবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করিবে অথবা তার কাছ থেকে সুবাস লাভ করিবে। আর হাপরে ফুৎকারকারী (কামার) হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২১০১, ৫৫৩৪, মুসলিম ২৬২৮, আহমাদ ১৯১২৭, ১৯১৬৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৬৮. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘চারটি গুণ দেখে মহিলাকে বিবাহ করা হয়; তার ধন-সম্পদ, তার বংশ মর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য এবং তার দ্বীন-ধর্ম দেখে। তুমি দ্বীনদার পাত্রী লাভ করে সফলকাম হও। (অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।)’’ (বুখারী)

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসাঈ ৩২৩০, আবু দাঊদ ২০৪৭, ইবনু মাজাহ ১৮৫৮, আহমাদ ৯২৩৭, দারেমী ২১৭০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৬৯. ইবনু আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

একদা নবী সাঃআঃ জিব্রাঈলকে বললেন, ‘আপনি যতটা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার চেয়ে বেশী সাক্ষাৎ করতে আপনার বাধা কিসের?’ ফলে এ আয়াত অবতীর্ণ হল, ‘‘(জিবরীল বললেন,) আমরা তোমার প্রতিপালকের আদেশ ব্যাতিরেকে অবতরণ করি না। যা আমাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে এবং উভয়ের মধ্যস্থলে রয়েছে সে সকলই তাঁর মালিকানাধীন।’’ (সূরা মারয়্যাম ৬৪ আয়াত, বুখারী) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৭৩১, ৩২১৮, ৭৪৫৫, তিরমিজী ৩১৫৮, আহমাদ ২০৪৪, ২০৭৯, ৩৩৫৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৭০. আবু সাঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘মু’মিন মানুষ ছাড়া অন্য কারো সঙ্গী হয়ো না এবং তোমার খাবার যেন পরহেযগার ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ না খায়।’’ (আবু দাঊদ, তিরমিজী) [১]

[১] তিরমিজী ২৩৯৫, আবু দাঊদ ৪৮৩২, আহমাদ ১০৯৪৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৭১.আবু হুরাইরাহ্ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের উপর হয়। অতএব তোমাদের প্রত্যেককে দেখা উচিত যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে।’’ (আবু দাঊদ, তিরিমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে) [১]

[১] তিরমিজী ২৩৭৮, আবু দাঊদ ৪৮৩৩, আহমাদ ৭৯৬৮, ৮২১২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৭২. আবু মূসা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মানুষ (দুনিয়াতে) যাকে ভালবাসে (কিয়ামতে) সে তারই সাথী হবে।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, নবী সাঃআঃ-কে জিজ্ঞেস করা হল, ‘‘কোনো ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়কে ভালবাসে, কিন্তু (আমলে) তাদের সমকক্ষ হইতে পারেনি। তিনি বললেন, মানুষ যাকে ভালবাসে, সে তারই সাথী হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬১৭০, মুসলিম ২৬৪১, আহমাদ ১৯০০২, ১৯০৩২, ১৯১৩১. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৭৩. আনাস ইবনু মালেক রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামত কবে ঘটবে?’ তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তুমি এর জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছ?’’ সে বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসা।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যাকে ভালবাস, তারই সাথী হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম শব্দগুলি মুসলিমের) [১]

উভয়ের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমি বেশি নামায-রোযা ও সাদকাহর মাধ্যমে প্রস্তুতি নিতে পরিনি। কিন্তু আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসি। (তিনি বললেন, তুমি যাকে ভালবাস, তারই সাথী হবে।)’’

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৬৮৮, ৬১৬৭, ৬১৭১, ৭১৫৩, মুসলিম ২৬৩৯, তিরমিজী ২৩৮৫, ২৩৮৬, নাসাঈ ৫১২৭, আহমাদ ১১৬০২, ১১৬৬৫, ১২২১৪, ১২২৮১, ১২২৯২, ১২৩০৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৭৪. ইবনু মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি এসে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কোনো ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়কে ভালবাসে, কিন্তু (আমলে) তাদের সমকক্ষ হইতে পারেনি।’ রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘মানুষ যাকে ভালবাসে, সে তারই সাথী হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬১৬৯, ৬১৬৮, মুসলিম ২৬৪১, আহমাদ ৩৮১০, ১৯১৩১. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৭৫. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘সোনা-রূপার খনিরাজির মত মানব জাতিও নানা গোত্রের খনিরাজি। যারা জাহেলী যুগে উত্তম ছিল, তারা ইসলামী যুগেও উত্তম; যখন তারা দ্বীনের গভীর জ্ঞান লাভ করে। আর আত্মাসমূহ সমবেত সৈন্যদলের মত। সুতরাং আপোসে যে আত্মাদল পরিচিত ও অভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে মিলন ও বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়ে থাকে এবং যে আত্মাদল আপোসে অপরিচিত ও ভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য প্রকট হয়ে ওঠে।’’ (মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৩৫৩, ৩৩৭৪, ৩৩৮৩, ৩৪৯০, ৩৪৯৪, ৪৬৮৯, ৬০৫৮, ৭১৭৯, মুসলিম ২৬৩৮, ২৩৭৮, ২৫২৬, তিরমিজী ২০২৫, আবু দাঊদ ৪৮৩৪, ৪৮৭২, আহমাদ ৭৪৪৪, ৭৪৮৮, ৭৮৩০, ৮০০৮, ৮২৩৩, ৮৫৬৩, ৮৮৩৬, ৮৯২০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৭৬. বুখারী হইতে বর্ণিতঃ

‘‘আত্মাসমূহ সমবেত সৈন্যদলের মত। সুতরাং আপোসে যে আত্মাদল পরিচিত ও অভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে মিলন ও বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়ে থাকে এবং যে আত্মাদল আপোসে অপরিচিত ও ভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য প্রকট হয়ে ওঠে।’’ এ অংশটুকু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।

হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৭৭. উসাইর ইবনু ‘আমর মতান্তরে ইবনু জাবের হইতে বর্ণিতঃ

উমার রাঃআঃ-এর নিকট যখনই ইয়ামান থেকে সহযোগী যোদ্ধারা আসতেন, তখনই তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘তোমাদের মধ্যে কি উয়াইস ইবনু ‘আমের আছে?’ শেষ পর্যন্ত (এক দলের সঙ্গে) উয়াইস (ক্বারনী) রাঃআঃ (মদ্বীনা) এলেন। অতঃপর উমার রাঃআঃ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি উয়াইস ইবনু আমের?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’

উমার রাঃআঃ বললেন, ‘মুরাদ (পরিবারের) এবং ক্বার্ন্ (গোত্রের)?’ উয়াইস বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি (পুনরায়) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার শরীরে শ্বেত রোগ ছিল, তা এক দিরহাম সম জায়গা ব্যতীত (সবই) দূর হয়ে গেছে?’ উয়াইস বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা আছে?’ উয়াইস বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছি, ‘‘মুরাদ (পরিবারের) এবং ক্বার্ন্ (গোত্রের) উয়াইস ইবনু আমের ইয়ামানের সহযোগী ফৌজের সঙ্গে তোমাদের কাছে আসবে। তার দেহে ধবল দাগ আছে, যা এক দিরহাম সম স্থান ছাড়া সবই ভাল হয়ে গেছে।

সে তার মায়ের সাথে সদাচারী হবে। সে যদি আল্লাহর প্রতি কসম খায়, তবে আল্লাহ তা পূরণ করে দেবেন। সুতরাং (হে উমার!) তুমি যদি নিজের জন্য তাকে দিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনার দো‘আ করাতে পার, তাহলে অবশ্যই করিবে।’’ সুতরাং তুমি আমার জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা কর।’

শোনামাত্র উয়াইস উমারের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। অতঃপর উমার তাঁকে বললেন, ‘তুমি কোথায় যাবে?’ উয়াইস বললেন, ‘কূফা।’ তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমার জন্য সেখানকার গর্ভনরকে পত্র লিখে দেব না?’ উয়াইস বললেন, ‘আমি সাধারণ গরীব-মিসকীনদের সাথে থাকতে ভালবাসি।’

অতঃপর যখন আগামী বছর এল তখন কূফার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হজ্জে এল। সে উমার রাঃআঃ-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাকে উয়াইস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, ‘আমি তাঁকে এই অবস্থায় ছেড়ে এসেছি যে, তিনি একটি ভগ্ন কুটির ও স্বল্প সামগ্রীর মালিক ছিলেন।’ উমার রাঃআঃ বললেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছি, ‘‘মুরাদ (পরিবারের) এবং ক্বার্ন্ (গোত্রের) উয়াইস ইবনু আমের ইয়ামানের সহযোগী ফৌজের সঙ্গে তোমাদের নিকট আসবে। তার দেহে ধবল রোগ আছে, যা এক দিরহামসম স্থান ছাড়া সবই ভালো হয়ে গেছে। সে তার মায়ের সাথে সদাচারী (মা-ভক্ত) হবে। সে যদি আল্লাহর উপর কসম খায়, তাহলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেবেন। যদি তুমি তোমার জন্য তার দ্বারা ক্ষমাপ্রার্থনার দো‘আ করাতে পার, তাহলে অবশ্যই করিবে।’’

অতঃপর সে (কূফার লোকটি হজ্জ সম্পাদনের পর) উয়াইস (ক্বারনীর) নিকট এল এবং বলল, ‘আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ উয়াইস বললেন, ‘তুমি এক শুভযাত্রা থেকে নব আগমন করেছ। অতএব তুমি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘তুমি উমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছ?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ।’ সুতরাং উয়াইস তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। (এসব শুনে) লোকেরা (উয়াইসের) মর্যাদা জেনে নিল। সুতরাং তিনি তার সামনের দিকে (অন্যত্র) চলে গেলেন। (মুসলিম)

মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় উসাইর ইবনু জাবের রাঃআঃ থেকেই বর্ণিত, কুফার কিছু লোক উমার রাঃআঃ-এর নিকট এল। তাদের মধ্যে একটি লোক ছিল, সে উয়াইসের সাথে উপহাস করত। উমার রাঃআঃ জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখানে ক্বার্ন গোত্রের কেউ আছে কি?’

অতঃপর ঐ ব্যক্তি এল। উমার রাঃআঃ বললেন, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের নিকট ইয়ামান থেকে উয়াইস নামক একটি লোক আসবে। সে ইয়ামানে কেবলমাত্র তার মা-কে রেখে আসবে। তার দেহে ধবল রোগ ছিল। সে আল্লাহর কাছে দো‘আ করলে আল্লাহ তা এক দ্বীনার অথবা এক দিরহাম সম স্থান ব্যতীত সবই দূর করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমাদের কারো যদি তার সাথে সাক্ষাৎ হয়, তাহলে সে যেন তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, উমার রাঃআঃ বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাঃআঃ-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ তাবেঈন হল এক ব্যক্তি, যাকে উয়াইস বলা হয়। তার মা আছে। তার ধবল রোগ ছিল। তোমরা তাকে আদেশ করো, সে যেন তোমাদের জন্য (আল্লাহর নিকট) ক্ষমাপ্রার্থনা করে।’’ [১]

[১] মুসলিম ২৫৪২, আহমাদ ২৬৮, দারেমী ৪৩৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৭৮. উমার ইবনুল খাত্তাব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি উমরাহ করার জন্য রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিয়ে বললেন, “প্রিয় ভাই আমার, তোমার দু’আর সময় আমাদেরকে যেন ভুলো না।” (উমার বলেন) এমন বাক্য তিনি উচ্চারণ করলেন, যার বিনিময়ে গোটা পৃথিবীটা আমার হয়ে গেলেও তা আমার কাছে আনন্দদায়ক (বিবেচিত) নয়।

অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, “ভাইয়া! তোমার দু‘আয় তুমি আমাদেরকেও শরীক রেখো।” (আবু দাঊদ ও তিরমিযি) যঈফ। [১]

[১] এটিকে আবু দাঊদ ও তিরমিজী বর্ণনা করিয়াছেন আর তিরমিজী বলেছেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ্। এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন ‘‘মিশকাত’’ নং (২২৪৮) ও ‘‘য‘ঈফ আবী দাঊদ’’ নং (২৬৪)। হাদীসটি দুর্বল হওয়ার কারণ এই যে, বর্ণনাকারী আসেম ইবনু ওবাইদুল্লাহ্ দুর্বল। তাকে ইবনু আদী, ইবনু হাজার আসকালানী প্রমুখ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস

৩৭৯. ইবনু উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

‘নবী সাঃআঃ সওয়ার হয়ে ও পায়ে হেঁটে (মসজিদে) কুবার যিয়ারত করতেন। অতঃপর তাতে দু’ রাকআত নামায পড়তেন।’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১১৯২, ১১৯৪, ৭৩১৬, মুসলিম ১৩৯৯, নাসাঈ ৫৬৪, ৬৯৮, ৫৬৩, আবু দাঊদ ২০৪০, আহমাদ ৪৪৭১, ৪৫৯৮, ৪৬৮০, ৪৭৫৭, ৪৮৩১, মুওয়াত্তা মালিক ৪০২, ৫১৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৪৬ -আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কারো সাথে ভালবাসা রাখার মাহাত্ম্য এবং তার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও যে ব্যক্তি অন্য কাউকে ভালবাসে তাকে সে ব্যাপারে অবহিত করা ও কী বলে অবহিত করিবে তার বিবরণ

৩৮০. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকে, সে ঈমানের মিষ্টতা লাভ করে থাকে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে অধিক প্রিয় হবে; কাউকে ভালোবাসলে কেবল আল্লাহ’র জন্যই ভালবাসবে। আর কুফরী থেকে তাকে আল্লাহর বাঁচানোর পর পুনরায় তাতে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করিবে, যেমন সে নিজেকে আগুনে নিক্ষিপ্ত করাকে অপছন্দ করে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৬, ২১, ৬০৪১, ৬৯৪১, মুসলিম ৪৩, তিরমিজী ২৬২৪, নাসাঈ ৪৯৮৭, ৪৯৮৮, ৪৯৮৯, ইবনু মাজাহ ৪০৩৩, আহমাদ ১১৫৯১, ১১৭১২, ১২৩৫৪, ১২৩৭২, ১২৩৯০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৮১. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ

আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ রাসূল সাঃআঃ! আপনি আমাকে (কোন স্থানের সরকারী) কর্মচারী কেন নিযুক্ত করছেন না?’ তিনি নিজ হাত আমার কাঁধের উপর মেরে বললেন, ‘‘হে আবু যার্র! তুমি দুর্বল এবং (এ পদ) আমানত ও এটা কিয়ামতের দিন অপমান ও অনুতাপের কারণ হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তা হকের সাথে (যোগ্যতার ভিত্তিতে) গ্রহণ করল এবং নিজ দায়িত্ব (যথাযথভাবে) পালন করল (তার জন্য এ পদ লজ্জা ও অনুতাপের কারণ নয়)।’’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ১৮২৫, ১৮২৬, আহমাদ ২১০০২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৮২. উক্ত সাহাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন বলবেন, ‘আমার মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পরস্পরকে যারা ভালবেসেছিল তারা কোথায়? আজকের দিন আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় আশ্রয় দেব, যেদিন আমার (আরশের) ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া নেই।’’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ২৫৬৬, আহমাদ ৭১৯০, ৮২৫০, ৮৬১৪, ১০৪০১, ১০৫২৭, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৬, দারেমী ২৭৫৭ . হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৮৩. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করিবে না; যতক্ষণ না তোমরা মু’মিন হবে। এবং তোমরা মু’মিন হইতে পারবে না; যে পর্যন্ত না তোমরা পরস্পরে ভালবাসা রাখবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজ বলে দেব না, যখন তোমরা তা করিবে, তখন তোমরা একে অপরকে ভালবাসতে লাগবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালাম প্রচার কর।’’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ৫৪, তিরমিজী ২৬৮৮, আবু দাঊদ ৫১৯৩, ইবনু মাজাহ ৬৮, ৩৬৯২, আহমাদ ৮৮৪১, ৯৪১৬, ৯৮২১, ২৭৩১৪, ১০২৭২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৮৪. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘এক ব্যক্তি অন্য কোন গ্রামে তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বের হল। আল্লাহ তা‘আলা তার রাস্তায় এক ফেরেশতাকে বসিয়ে দিলেন, তিনি তার অপেক্ষা করতে থাকলেন।’’ অতঃপর বাকী হাদীস উল্লেখ করে বললেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ভালবাসেন যেমন তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালবাস।’’ (মুসলিম) (৩৬৫ নং হাদীস দ্রষ্টব্য) [১]

[১] মুসলিম ২৫৬৭, ৯০৩৬, ৯৬৪২, ৯৮৮৭, ১০২২২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৮৫. বারা’ ইবনু আযিব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ আনসার সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘তাদেরকে কেবলমাত্র মু’মিনই ভালোবাসে এবং তাদের প্রতি কেবলমাত্র মুনাফিকই বিদ্বেষ রাখে। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালবাসবে, আল্লাহও তাকে ভালবাসবেন। আর যে ব্যক্তি তাদের প্রতি বিদ্বেষ রাখবে, আল্লাহও তার প্রতি বিদ্বেষ রাখবেন।’’(বুখারী-মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৭৮৩, মুসলিম ৭৫, তিরমিজী ৩৯০০, ইবনু মাজাহ ১৬৩, আহমাদ ১৮০৩০, ১৮১০৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৮৬. মু‘আয রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আমার মর্যাদার ওয়াস্তে যারা আপোসে ভালবাসা স্থাপন করিবে, তাদের (বসার) জন্য হবে নূরের মিম্বর; যা দেখে নবী ও শহীদগণ ঈর্ষা করিবেন।’’(তিরমিজী, হাসান সূত্রে) [১]

[১] তিরমিজী ২৩৯০, আহমাদ ২১৫২৫, ২১৫৫৯, ২১৫৭৫, ২২২৭৬. হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

৩৮৭. আবু ইদ্রীস খাওলানী রাহিমাহুল্লাহ হইতে বর্ণিতঃ

আমি দিমাশকের মসজিদে প্রবেশ করে এক যুবককে দেখতে পেলাম, তাঁর সামনের দাঁতগুলি খুবই চকচকে এবং তাঁর সঙ্গে কিছু লোকও (বসে) রয়েছে। যখন তারা কোনো বিষয়ে মতভেদ করছে, তখন (সিদ্ধান্তের জন্য) তাঁর দিকে রুজু করছে এবং তাঁর মত গ্রহণ করছে। সুতরাং আমি তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম (যে, ইনি কে)? (আমাকে) বলা হল যে, ‘ইনি মু‘আয ইবনু জাবাল।’ অতঃপর আগামী কাল আমি আগেভাগেই মসজিদে গেলাম। কিন্তু দেখলাম সেই (যুবকটি) আমার আগেই পৌঁছে গেছেন এবং তাঁকে নামাযরত অবস্থায় পেলাম। সুতরাং তাঁর নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করলাম।

অতঃপর আমি তাঁর সামনে এসে তাঁকে সালাম দিলাম। তারপর বললাম, ‘আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহর কসম।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহর কসম।’ অতঃপর তিনি আমার চাদরের আঁচল ধরে আমাকে তাঁর দিকে টানলেন, তারপর বললেন, ‘সুসংবাদ নাও।’

কারণ, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য যারা পরস্পরের মধ্যে মহব্বত রাখে, একে অপরের সঙ্গে বসে, একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ এবং একে অপরের জন্য খরচ করে, তাদের জন্য আমার মহব্বত ও ভালবাসা ওয়াজেব হয়ে যায়।’’(মুওয়াত্তা বিশুদ্ধ সূত্রে) [১]

[১] আহমাদ ২১৫২৫, ২১৬২৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৮৮. আবু কারীমা মিকদাদ ইবনু মা‘দীকারিব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যখন কোন মানুষ তার ভাইকে ভালবাসে, তখন সে যেন তাকে জানিয়ে দেয় যে, সে তাকে ভালবাসে।’’ (তিরমিজী, হাসান সূত্রে) [১]

[১] আবু দাঊদ ৫১২৪, আহমাদ ১৬৭১৯. হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

৩৮৯. মু‘আয রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তার হাত ধরে বললেন, ‘‘হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! নিঃসন্দেহে আমি তোমাকে ভালবাসি। অতঃপর আমি তোমাকে অসিয়ত করছি, হে মু‘আয! তুমি প্রত্যেক নামাযের পশ্চাতে এ শব্দগুলো বলা ছাড়বে না, ‘আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী আলা যিকরিকা ওয়াশুকরিকা অহুসনি ইবা-দাতিক।’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার যিকর করার, তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার এবং উত্তমরূপে তোমার ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য কর।) (আবু দাঊদ, নাসাঈ বিশুদ্ধ সূত্রে) [১]

[১] নাসাঈ ১৩০৩, আবু দাঊদ ১৫২২, আহমাদ ২১৬২১. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৯০. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাঃআঃ-এর নিকট (বসে) ছিল। অতঃপর এক ব্যক্তি তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করল। (যে বসেছিল) সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! নিঃসন্দেহে আমি একে ভালবাসি।’ (এ কথা শুনে) নবী সাঃআঃ তাকে বললেন, ‘‘তুমি কি (এ কথা) তাকে জানিয়েছ?’’ সে বলল, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘‘তাকে জানিয়ে দাও।’’ সুতরাং সে (দ্রুত) তার পিছনে গিয়ে (তাকে) বলল, ‘আমি আল্লাহর ওয়াস্তে তোমাকে ভালবাসি।’ সে বলল, ‘যাঁর ওয়াস্তে তুমি আমাকে ভালবাস, তিনি তোমাকে ভালবাসুন।’ (আবু দাঊদ, বিশুদ্ধ সূত্রে) [১]

[১] আবু দাঊদ ৫১২৫, আহমাদ ১২০২২, ১২১০৫, ১৩১২৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৪৭ -বান্দাকে আল্লাহর ভালবাসার নিদর্শনাবলী, এমন নিদর্শন অবলম্বন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা এবং তা অর্জন করার জন্য প্রয়াসী হওয়ার বিবরণ

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ال عمران: ٣١]

অর্থাৎ “বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করিবেন। বস্তুত আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَن يَرۡتَدَّ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَسَوۡفَ يَأۡتِي ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ يُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوۡمَةَ لَآئِمٖۚ ذَٰلِكَ فَضۡلُ ٱللَّهِ يُؤۡتِيهِ مَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ٥٤ ﴾ [المائ‍دة: ٥٤]

অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ তার দ্বীন থেকে ফিরে গেলে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনয়ন করিবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন ও যারা তাঁকে ভালবাসবে, তারা হবে মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করিবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দায় ভয় করিবে না, এ আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন। বস্তুত আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা মায়েদাহ ৫৪ আয়াত)

৩৯১.আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার কোনো বন্ধুর সাথে শত্রুতা করিবে, তার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধের ঘোষণা রইল। আমার বান্দা যে সমস্ত জিনিস দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম জিনিস হল তা, যা আমি তার উপর ফরয করেছি। (অর্থাৎ ফরযের দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করা আমার নিকটে বেশী পছন্দনীয়।) আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসতে শুরু করি।

অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার ঐ কান হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শোনে, তার ঐ চোখ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে, তার ঐ হাত হয়ে যাই, যার দ্বারা সে ধরে এবং তার ঐ পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে। আর সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি তাকে দেই এবং সে যদি আমার আশ্রয় চায়, তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেই।’’(বুখারী) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৫০২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৯২. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিবরীলকে ডেকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুককে ভালবাসেন, অতএব তুমিও তাকে ভালবাস।’ সুতরাং জিবরীলও তাকে ভালবাসতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি আকাশবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, ‘আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন। কাজেই তোমরাও তাকে ভালবাসো।’ তখন আকাশবাসীরা তাকে ভালবাসতে শুরু করে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে গ্রহণযোগ্য করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৩২০৯, ৬০৪০, ৭৪৮৫, মুসলিম ২৬৩৭, তিরমিজী ৩১৬১, আহমাদ ৭৫৭০, ৮২৯৫, ৯০৮৮, ১০২৩৭, ১০২৯৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৮. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৯৩. আয়েশা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এক সাহাবীকে একটি মুজাহিদ দলের আমীর করে জিহাদে পাঠালেন। তিনি যখন নামাযে ইমামতি করতেন, তখনই (প্রত্যেক রাকআতে সূরা পড়ার পর) ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ (সূরা ইখলাস) দিয়ে (ক্বিরাআত) শেষ করতেন। মুজাহিদগণ সেই অভিযান থেকে প্রত্যাবর্তন করে নবী সাঃআঃ এর খিদমতে বিষয়টি আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, ‘‘তাঁকে জিজ্ঞাসা কর, কেন সে এ কাজটি করেছে?’’ সুতরাং তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বললেন, ‘এই সূরাটিতে পরম করুণাময় (আল্লাহ)র গুণাবলী রয়েছে। এই জন্য সূরাটি তেলাওয়াত করতে আমি ভালবাসি।’ তখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তা‘আলাও তাকে ভালবাসেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৭৩৭৫, মুসলিম ৮১৩, নাসাঈ ৯৯৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৪৮ -নেক লোক, দুর্বল ও গরীব মানুষদেরকে কষ্ট দেওয়া থেকে ভীতিপ্রদর্শন

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ بِغَيۡرِ مَا ٱكۡتَسَبُواْ فَقَدِ ٱحۡتَمَلُواْ بُهۡتَٰنٗا وَإِثۡمٗا مُّبِينٗا ٥٨ ﴾ [الاحزاب: ٥٨]

অর্থাৎ “যারা বিনা অপরাধে বিশবাসী পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।” সূরা আহযাব ৫৮ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿ فَأَمَّا ٱلۡيَتِيمَ فَلَا تَقۡهَرۡ ٩ وَأَمَّا ٱلسَّآئِلَ فَلَا تَنۡهَرۡ ١٠ ﴾ [الضحا: ٩، ١٠]

অর্থাৎ “অতএব তুমি পিতৃহীনের প্রতি কঠোর হয়ো না। এবং ভিক্ষুককে ধমক দিও না।” (সূরা যুহা ৯-১০ আয়াত)

৩৯৪. জুন্দুব ইবনু আব্দুল্লাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের নামায (জামাআতে) পড়ল, সে আল্লাহর জামানতে চলে এল। সুতরাং আল্লাহ যেন অবশ্যই তোমাদের কাছে তার জামানতের কিছু দাবী না করেন। কারণ, যার কাছেই তিনি তাঁর জামানতের কিছু দাবী করিবেন, তাকে পাকড়াও করিবেন। অতঃপর তিনি তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করিবেন।’’ (মুসলিম)[১]

[১] মুসলিম ৬৫৭, তিরমিজী ২২২, আহমাদ ১৮৩২৬, ১৮৩৩৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৪৯ -লোকের বাহ্যিক অবস্থা ও কার্যকলাপের ভিত্তিতে বিধান প্রয়োগ করা হবে এবং তাদের আভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহকে সঁপে দেওয়া হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥ ﴾ [التوبة: ٥]

অর্থাৎ “কিন্তু যদি তারা তওবা করে, যথাযথ নামায পড়ে ও যাকাত প্রদান করে, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও।” (সূরা তওবাহ ৫ আয়াত)

৩৯৫. ইবনু উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘আমাকে লোকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে; যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর তারা নামায প্রতিষ্ঠা করিবে ও যাকাত প্রদান করিবে। যখন তারা এ কাজগুলো সম্পাদন করিবে, তখন তারা আমার নিকট থেকে তাদের রক্ত (জান) এবং মাল বাঁচিয়ে নেবে; কিন্তু ইসলামের হক ব্যতীত (অর্থাৎ সে যদি কাউকে হত্যা করে, তবে তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাকে হত্যা করা হবে।) আর তাদের হিসাব আল্লাহর উপর ন্যস্ত হবে।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৫, মুসলিম ২২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৯৬. আবু আব্দুল্লাহ ত্বারেক ইবনু আশয়্যাম রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্যকে অস্বীকার করল, তার মাল ও রক্ত হারাম হয়ে গেল ও তার (অন্তরের) হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে।’’(মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ২৩, আহমাদ ১৫৪৪৮, ২৬২৭০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৯৭. আবু মা‘বাদ মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বললাম, ‘‘আপনি বলুন, যদি আমি কোন কাফেরের সম্মুখীন হই এবং পরস্পরের মধ্যে লড়ি, অতঃপর সে তরবারি দিয়ে আমার হাত কেটে দেয়, তারপর আমার (পাল্টা) আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সে একটি গাছের আশ্রয় নিয়ে বলে, ‘আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ইসলাম গ্রহণ করলাম।’ তার এ কথা বলার পর হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি তাকে হত্যা করব?’’

তিনি বললেন, ‘‘তাকে হত্যা করো না।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে আমার একটি হাত কেটে ফেলবে। কাটার পর সে ঐ কথা বলবে তাও?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তাকে হত্যা করো না। যদি তুমি তাকে হত্যা কর, তাহলে (মনে রাখ) সে তোমার সেই মর্যাদা পেয়ে যাবে, যাতে তুমি তাকে হত্যা করার পূর্বে ছিলে। আর তুমি তার ঐ কথা বলার পূর্বের অবস্থায় উপনীত হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪০১৯, ৬৮৬৫, মুসলিম ৯৫, আবু দাঊদ ২৬৪৪, আহমাদ ২৩২৯৯, ২৩৩০৫, ২৩৩১৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৯৮. উসামা ইবনু যায়দ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদেরকে জুহাইনা গোত্রের এক শাখা হুরাকার দিকে পাঠালেন। অতঃপর আমরা সকাল সকাল পানির ঝর্নার নিকট তাদের উপর আক্রমণ করলাম। (যুদ্ধ চলাকালীন) আমি ও একজন আনসারী তাদের এক ব্যক্তির পিছনে ধাওয়া করলাম। যখন আমরা তাকে ঘিরে ফেললাম, তখন সে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল। আনসারী থেমে গেলেন, কিন্তু আমি তাকে আমার বল্লম দিয়ে গেঁথে দিলাম। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করে ফেললাম। অতঃপর যখন আমরা মদ্বীনা পৌঁছলাম, তখন নবী সাঃআঃ এর নিকট এ খবর পৌঁছল।

তিনি বললেন, ‘‘হে উসামা! তার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরেও কি তুমি তাকে হত্যা করেছ?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে প্রাণ বাঁচানোর জন্য এরূপ করেছে।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরও তুমি তাকে খুন করেছ?’’ তিনি আমার সামনে এ কথা বারবার বলতে থাকলেন। এমনকি আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, যদি আজকের পূর্বে আমি ইসলাম গ্রহণ না করতাম (অর্থাৎ এখন আমি মুসলিম হতাম)। (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪২৬৯, ৬৮৭২, মুসলিম ৯৬, আবু দাঊদ ২৬৪৩, আহমাদ ২১২৩৮, ২১২৯৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩৯৯. জুনদুব ইবনু আব্দুল্লাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ মুসলিম মুজাহিদ্বীনের একটি দল এক মুশরিক সম্প্রদায়ের দিকে পাঠালেন। তাদের পরস্পরের মধ্যে মুকাবেলা হল। মুশরিকদের মধ্যে একটি লোক ছিল সে যখন কোনো মুসলিমকে হত্যা করার ইচ্ছা করত, তখন সুযোগ পেয়ে তাঁকে হত্যা করে দিত। (এ অবস্থা দেখে) একজন মুসলিম (তাকে খুন করার জন্য) তার অমনোযোগিতার সুযোগ গ্রহণ করলেন। আমরা পরস্পরের মধ্যে বলাবলি করছিলাম যে, উনি হলেন উসামা ইবনু যায়দ। (অতঃপর যখন সুযোগ পেয়ে) উসামা তরবারি উত্তোলন করলেন, তখন সে বলল,

لا إله إلا الله

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। কিন্তু তিনি তাকে হত্যা করে দিলেন। অতঃপর (মুসলিমদের যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সংবাদ নিয়ে) সুসংবাদবাহী রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট এল। তিনি তাকে (যুদ্ধের ব্যাপারে) জিজ্ঞাসা করলেন। সে তাঁকে (সমস্ত) সংবাদ দিল।

এমনকি শেষ পর্যন্ত সে ঐ ব্যক্তিরও খবর অবহিত করল। তিনি উসামাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে বললেন, ‘‘তুমি কেন তাকে হত্যা করেছ?’’ উসামা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে মুসলিমদেরকে খুবই কষ্ট দিয়েছে এবং অমুক অমুককে হত্যাও করেছে।’ উসামা কিছু লোকের নামও নিলেন। ‘(এ দেখে) আমি তার উপর হামলা করলাম। অতঃপর সে যখন তরবারি দেখল, তখন বলল, ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’’ রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘তুমি তাকে হত্যা করে দিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘কিয়ামতের দিন যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আসবে, তখন তুমি কী করিবে?’’ উসামা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ তিনি বললেন, ‘‘কিয়ামতের দিন যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আসবে, তখন তুমি কী করিবে?’’ (তিনি বারংবার একথা বলতে থাকলেন এবং) এর চেয়ে বেশী কিছু বললেন না, ‘‘কিয়ামতের দিন যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আসবে, তখন তুমি কী করিবে?’’(মুসলিম)[১]

[১] মুসলিম ৯৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৪০০. আব্দুল্লাহ ইবনু উত্‌বাহ্‌ ইবনু মাসঊদ হইতে বর্ণিতঃ

আমি উমার ইবনু খাত্তাবকে বলতে শুনেছি, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর যুগে কিছু লোককে অহী দ্বারা পাকড়াও করা হত। কিন্তু অহী এখন বন্ধ হয়ে গেছে। (সুতরাং) এখন আমরা তোমাদের বাহ্যিক কার্যকলাপ দেখে তোমাদেরকে পাকড়াও করব। অতঃপর যে ব্যক্তি আমাদের জন্য ভাল কাজ প্রকাশ করিবে, তাকে আমরা নিরাপত্তা দেব এবং তাকে আমরা নিকটে করব। আর তাদের অন্তরের অবস্থার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহই তার অন্তরের হিসাব নেবেন। আর যে ব্যক্তি আমাদের জন্য মন্দ কাজ প্রকাশ করিবে, তাকে আমরা নিরাপত্তা দেব না এবং তাকে সত্যবাদীও মনে করব না; যদিও সে বলে আমার ভিতর (নিয়ত) ভাল।’ (বুখারী) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৬৪১, নাসাঈ ৪৭৭৭, আবু দাঊদ ৪৫৩৭, আহমাদ ২৮৮. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

Comments

Leave a Reply