বন্দী মুক্তি ,মুক্তিপণ ও ইমাম কর্তৃক লোকদের নাম লিপিবদ্ধ করা
বন্দী মুক্তি ,মুক্তিপণ ও ইমাম কর্তৃক লোকদের নাম লিপিবদ্ধ করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৫৬, জিহাদ, অধ্যায়ঃ (১৭০-১৮৪)=১৫টি
৫৬/১৭০. অধ্যায: স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব গ্রহণ করিবে কি? এবং যে বন্দীত্ব গ্রহণ করেনি আর যে ব্যক্তি নিহত হবার সময় দু রাকআত সালাত আদায় করিল
৫৬/১৭১. অধ্যায়ঃ বন্দী মুক্তি প্রসঙ্গে।
৫৬/১৭২. অধ্যায়ঃ মুশরিকদের মুক্তিপণ।
৫৬/১৭৩. অধ্যায়ঃ দারুল হার্বের অধিবাসী নিরাপত্তাহীনভাবে দারুল ইসলামে প্রবেশ করিল।
৫৬/১৭৪. অধ্যায়ঃ জিম্মীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য যুদ্ধ করা হইবে এবং তাদেরকে গোলাম বানানো যাবে না।
৫৬/১৭৫. অধ্যায়ঃ প্রতিনিধি দলকে উপঢৌকন দেয়া।
৫৬/১৭৬. অধ্যায়ঃ জিম্মীদের জন্য সুপারিশ করা যাবে কি এবং তাদের সঙ্গে আচার-ব্যবহার।
৫৬/১৭৭. অধ্যায়ঃ প্রতিনিধি দলের আগমন উপলক্ষে সাজসজ্জা করা।
৫৬/১৭৮. অধ্যায়ঃ শিশুদের কাছে কেমনভাবে ইসলামকে তুলে ধরতে হইবে?
৫৬/১৭৯. অধ্যায়ঃ ইয়াহূদীদের উদ্দশ্যে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর বাণীঃ “ইসলাম গ্রহণ কর, নিরাপত্তা লাভ কর”।
৫৬/১৮০. অধ্যায়ঃ কোন সম্প্রদায় দারুল হারবে ইসলাম গ্রহণ করলে, তাদের ধন-সম্পত্তি ও ক্ষেত-খামার থাকলে তা তাদেরই থাকবে।
৫৬/১৮১. অধ্যায়ঃ ইমাম কর্তৃক লোকদের নাম লিপিবদ্ধ করা।
৫৬/১৮২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলা কখনও পাপিষ্ঠ লোকের দ্বারা দ্বীনের সাহায্য করেন।
৫৬/১৮৩. অধ্যায়ঃ শত্রুর আশংকায় সৈনাধ্যক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকেই নিজেই সেনা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করা।
৫৬/১৮৪. অধ্যায়ঃ সাহায্যকারী দল প্রেরণ প্রসঙ্গে।
৫৬/১৭০. অধ্যায: স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব গ্রহণ করিবে কি? এবং যে বন্দীত্ব গ্রহণ করেনি আর যে ব্যক্তি নিহত হবার সময় দু রাকআত সালাত আদায় করিল
৩০৪৫.আমর ইবনু আবু সুফিয়ান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দশ ব্যক্তিকে গোয়েন্দা হিসেবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য পাঠালেন এবং আসিম ইবনু সাবিত আনসারীকে তাঁদের দলপতি নিয়োগ করেন। যিনি আসিম ইবনু উমর ইবনু খাত্তাবের নানা ছিলেন। তাঁরা রওয়ানা করিলেন, যখন তাঁরা উসফান ও মক্কার মাঝে হাদআত নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন হুযায়েল গোত্রের একটি প্রশাখা যাদেরকে লেহইয়ান বলা হয় তাদের নিকট তাঁদের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। তারা প্রায় দুশত তীরন্দাজকে তাঁদের পিছু ধাওয়ার জন্য পাঠান। এরা তাঁদের চিহ্ন দেখে চলতে থাকে। সাহাবীগণ মদীনা হইতে সঙ্গে নিয়ে আসা খেজুর যেখানে বসে খেয়েছিলেন, অবশেষে এরা সে স্থানের সন্ধান পেয়ে গেল, তখন এরা বলিল, ইয়াসরিবের খেজুর। অতঃপর এরা তাঁদের পদচিহ্ন দেখে চলতে লাগল। যখন আসিম ও তাহাঁর সাথীগণ এদের দেখলেন, তখন তাঁরা একটি উঁচু স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। আর কাফিররা তাঁদের ঘিরে ফেলল এবং তাঁদেরকে বলিতে লাগল, তোমরা অবতরণ কর ও স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব বরণ কর। আমরা তোমাদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, তোমাদের মধ্য হইতে কাউকে আমরা হত্যা করব না। তখন গোয়েন্দা দলের নেতা আসিম ইবনু সাবিত (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি তো আজ কাফিরদের নিরাপত্তায় অবতরণ করবো না। হে আল্লাহ! আমাদের পক্ষ থেকে আপনার নাবীকে সংবাদ পৌছিয়ে দিন। অবশেষে কাফিররা তীর নিক্ষেপ করিতে শুরু করিল। আর তারা আসিম (রাদি.) সহ সাত জনকে শহীদ করলো। অতঃপর অবশিষ্ট তিনজন খুবাইব আনসারী, যায়দ ইবনু দাসিনা (রাদি.) ও অপর একজন তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর নির্ভর করে তাদের নিকট অবতরণ করিলেন। যখণ কাফিররা তাদেরকে আয়ত্বে নিয়ে নিল, তখন তারা তাদের ধনুকের রশি খুলে ফেলে তাঁদের বেঁধে ফেললো। তখন তৃতীয় জন বলে উঠলেন, গোড়াতেই বিশ্বাসঘাতকতা! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সঙ্গে যাবো না, যাঁরা শহীদ হয়েছেন আমি তাঁদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করব। কাফিররা তাঁকে শহীদ করে ফেলে এবং তারা খুবাইব ও ইবনু দাসিনাকে নিয়ে চলে যায়। অবশেষে তাঁদের উভয়কে মক্কায় বিক্রয় করে ফেলে। এটা বদর যুদ্ধের পরের কথা। তখন খুবাইবকে হারিস ইবনু আমিরের পুত্রগণ ক্রয় করে নেয়। আর বদর যুদ্ধের দিন খুবাইব (রাদি.) হারিস ইবনু আমিরকে হত্যা করেছিলেন। খুবাইব (রাদি.) কিছু দিন তাদের নিকট বন্দী থাকেন। ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমাকে উবায়দুল্লাহ ইবনু আয়ায্ অবহিত করিয়াছেন, তাঁকে হারিসের কন্যা জানিয়েছে যে, যখন হারিসের পুত্রগণ খুবাইব (রাদি.)-কে শহীদ করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিল, তখন তিনি তার কাছ থেকে ক্ষৌর কাজ সম্পন্ন করার উদ্দেশে একটা ক্ষুর ধার চাইলেন। তখন হারিসের কন্যা তাকে একখানা ক্ষুর ধার দিল। সে সময় ঘটনাক্রমে আমার এক ছেলে আমার অজ্ঞাতে খুবাইবের নিকট চলে যায় এবং আমি দেখলাম যে, আমার ছেলে খুবাইবের উরুর উপর বসে রয়েছে এবং খুবাইবের হাতে রয়েছে ক্ষুর। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। খুবাইব আমার চেহারা দেখে বুঝতে পারলেন যে, আমি ভয় পাচ্ছি। তখন তিনি বলিলেন, তুমি কি এ ভয় করো যে, আমি এ শিশুটিকে হত্যা করে ফেলব? কখনো আমি তা করব না। আল্লাহর কসম! আমি খুবাইবের মত উত্তম বন্দী কখনো দেখিনি। আল্লাহর শপথ! আমি একদা দেখলাম, তিনি লোহার শিকলে আবদ্ধ অবস্থায় ছড়া হইতে আঙ্গুর খাচ্ছেন, যা তাহাঁর হাতেই ছিল। অথচ এ সময় মক্কায় কোন ফলই পাওয়া যাচ্ছিল না। হারিসের কন্যা বলতো, এ তো ছিল আল্লাহ তাআলার পক্ষ হইতে প্রদত্ত জীবিকা, যা তিনি খুবইবকে দান করিয়াছেন। অতঃপর তারা খুবাইবকে শহীদ করার উদ্দেশে হারাম এর নিকট হইতে হিল্লের দিকে নিয়ে বের হয়ে পড়ল, তখন খুবাইব (রাদি.) তাদের বলিলেন, আমাকে দুরাকআত সালাত আদায় করিতে দাও। তারা তাঁকে সে অনুমতি দিল। তিনি দুরাকআত সালাত আদায় করে নিলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, তোমরা যদি ধারণা না করিতে যে, আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছি তবে আমি সালাতকে দীর্ঘ করতাম। হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে ধ্বংস করুন। (অতঃপর তিনি এ কবিতা দুটি আবৃত্তি করিলেন)
“যখন আমি মুসলিম হিসেবে শহীদ হচ্ছি তখন আমি কোন রূপ ভয় করি না।
আল্লাহর উদ্দেশ্যে আমাকে যেখানেই মাটিতে লুটিয়ে ফেলা হোক না কেন।
আমার এ মৃত্যু আল্লাহ তাআলার জন্যই হচ্ছে। তিনি যদি ইচ্ছা করেন,
তবে আমার দেহের প্রতিটি খন্ডিত জোড়াসমূহে বরকত সৃষ্টি করে দিবেন।”
অবশেষে হারিসের পুত্র তাঁকে শহীদ করে ফেলে। বস্তুত যে মুসলিম ব্যক্তিকে বন্দী অবস্থায় শহীদ করা হয় তার জন্য দুরাকআত সালাত আদায়ের এ রীতি খুবাইব (রাদি.)-ই প্রবর্তন করে গেছেন। সে দিন আসিম (রাদি.) শাহাদত বরণ করেছিলেন, সেদিন আল্লাহ তাআলা তাহাঁর দুআ কবুল করেছিলেন। সেদিনই আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর সাহাবীগণকে তাঁদের সংবাদ ও তাঁদের উপর যা যা আপতিত হয়েছিল সবই অবহিত করেছিলেন। আর যখন কুরাইশ কাফিরদেরকে এ সংবাদ পৌঁছানো হয় যে, আসিম(রাদি.)-কে শহীদ করা হয়েছে তখন তারা তাহাঁর কাছে এক লোককে পাঠায়, যাতে সে ব্যক্তি তাহাঁর লাশ হইতে কিছু অংশ কেটে নিয়ে আসে, যেন তারা তা দেখে চিনতে পারে। কারণ, বদর যুদ্ধের দিন আসিম (রাদি.) কুরাইশদের এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন। আসিমের লাশের (রক্ষার জন্য) মৌমাছির ঝাঁক প্রেরিত হল যারা তাহাঁর দেহ আবৃত করে রেখে তাদের ষড়যন্ত্র হইতে হিফাযত করিল। ফলে তারা তাহাঁর শরীর হইতে এক খণ্ড গোশ্তও কেটে নিতে পারেনি।
৫৬/১৭১. অধ্যায়ঃ বন্দী মুক্তি প্রসঙ্গে।
এ বিষয়ে আবু মূসা (রাদি.) কর্তৃক নাবী (সাঃআঃ) নিকট হইতে হাদীস বর্ণিত রয়েছে।
৩০৪৬. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমরা বন্দী আযাদ কর, ক্ষুধার্তকে আহার্য দাও এবং রুগীর সেবা-শুশ্রূষা কর।
৩০৪৭. আবু জুহাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আলী (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কুরআনে যা কিছু আছে তা ব্যতীত আপনাদের নিকট ওয়াহীর কোন কিছু আছে কি? তিনি বলিলেন, না, সে আল্লাহ তাআলার কসম! যিনি শস্যদানাকে বিদীর্ণ করেন এবং প্রাণী সৃষ্টি করেন। আল্লাহ কুরআন সম্পর্কে মানুষকে যে জ্ঞান দান করিয়াছেন এবং সহীফার মধ্যে যা রয়েছে, এ ছাড়া আমি আর কিছু জানি না। আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কী আছে? তিনি বলিলেন, দীয়াতের বিধান, বন্দী আযাদ করা এবং কোন মুসলিমকে যেন কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা না হয়।
৫৬/১৭২. অধ্যায়ঃ মুশরিকদের মুক্তিপণ।
৩০৪৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আনসারগণের কয়েকজন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট অনুমতি চেয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যদি আমাদের অনুমতি দান করেন, তবে আমরা আমাদের ভাগ্নে আব্বাসের মুক্তিপণ ছেড়ে দিতে পারি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, না, একটি দিরহামও ছাড় দিবে না।
৩০৪৯. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট বাহরাইন হইতে ধন-সম্পদ আনা হয়। তখন তাহাঁর নিকট আব্বাস (রাদি.) এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে কিছু দিন। আমি আমার নিজের মুক্তিপণ আদায় করেছি এবং আকীলেরও মুক্তিপণ আদায় করেছি। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, নিন এবং তাহাঁর কাপড়ে দিয়ে দিলেন।
৩০৫০. জুবাইর (ইবনু মুতয়িম) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আর তিনি বদর যুদ্ধে বন্দীদের মুক্ত করার জন্য এসেছিলেন। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে মাগরিবের সালাতে সুরায়ে তূর পড়তে শুনিয়াছি।
৫৬/১৭৩. অধ্যায়ঃ দারুল হার্বের অধিবাসী নিরাপত্তাহীনভাবে দারুল ইসলামে প্রবেশ করিল।
৩০৫১. সালামা ইবনু আক্ওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর কোন এক সফরে মুশরিকদের জনৈক গুপ্তচর তাহাঁর নিকট এল এবং তাহাঁর সাহাবীগণের সঙ্গে বসে কথাবার্তা বলিতে লাগল ও কিছুক্ষণ পরে চলে গেল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তাকে খুঁজে আন এবং হত্যা কর। নাবী (সাঃআঃ) তার মালপত্র হত্যাকারীকে প্রদান করিলেন।
৫৬/১৭৪. অধ্যায়ঃ জিম্মীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য যুদ্ধ করা হইবে এবং তাদেরকে গোলাম বানানো যাবে না।
৩০৫২. উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি এ অসীয়ত করেছি যে, আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-এর পক্ষ হইতে কাফিরদের সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার যেন যথাযথভাবে পূরণ করা হয়, তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে যুদ্ধ করা হয়, তাদের সামর্থের বাইরে তাদের উপর যেন জিযিয়া ধার্য করা না হয়।
৫৬/১৭৫. অধ্যায়ঃ প্রতিনিধি দলকে উপঢৌকন দেয়া।
৫৬/১৭৬. অধ্যায়ঃ জিম্মীদের জন্য সুপারিশ করা যাবে কি এবং তাদের সঙ্গে আচার-ব্যবহার।
৩০৫৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিলেন, বৃহস্পতিবার! হায় বৃহস্পতিবার! অতঃপর তিনি কাঁদতে শুরু করিলেন, এমনকি তাহাঁর অশ্রুতে কঙ্করগুলো সিক্ত হয়ে গেল। আর তিনি বলিতে লাগলেন, বৃহস্পতিবারে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর রোগ যাতনা বেড়ে যায়। তখন তিনি বলিলেন, তোমরা আমার জন্য লিখার কোন জিনিস নিয়ে এসো, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখিয়ে দিব। যাতে অতঃপর তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট না হও। এতে সাহাবীগণ পরস্পরে মতভেদ করেন। অথচ নাবীর সম্মুখে মতভেদ সমীচীন নয়। তাদের কেউ কেউ বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দুনিয়া ত্যাগ করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, আচ্ছা, আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দাও। তোমরা আমাকে যে অবস্থার দিকে আহ্বান করছো তার চেয়ে আমি যে অবস্থায় আছি তা উত্তম। অবশেষে তিনি ইন্তিকালের সময় তিনটি বিষয়ে ওসীয়ত করেন। (১) মুশরিকদের আরব উপদ্বীপ হইতে বিতাড়িত কর, (২) প্রতিনিধি দলকে আমি যেরূপ উপঢেৌকন দিয়েছি তোমরাও তেমন দিও (রাবী বলেন) তৃতীয় ওসীয়তটি আমি ভুলে গিয়েছি। আবু আব্দুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবনু মুহাম্মদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও ইয়াকূব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি মুগীরাহ ইবনু আবদুর রহমানকে জাযীরাতুল আরব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বলিলেন, তাহলো মক্কা, মদীনা ও ইয়ামান। ইয়াকূব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তিহামাহ আরম্ভ হল আরজ থেকে।
৫৬/১৭৭. অধ্যায়ঃ প্রতিনিধি দলের আগমন উপলক্ষে সাজসজ্জা করা।
৩০৫৪. (আবদুল্লাহ) ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমর (রাদি.) এক জোড়া রেশমী কাপড় বাজারে বিক্রি হইতে দেখিতে পেলেন। তিনি তা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট নিয়ে এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এ রেশমী কাপড় জোড়া আপনি ক্রয় করুন এবং ঈদ ও প্রতিনিধিদল আগমন উপলক্ষে এর দ্বারা আপনি সুসজ্জিত হইবেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, এ পোশাক তো তার (আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই। অথবা (বলেন) এরূপ পোশাক সে-ই পরিধান করে (আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই। এ অবস্থায় উমর (রাদি.) কিছুদিন অবস্থান করেন, যে পরিমাণ সময় আল্লাহ তাআলার ইচ্ছে ছিল। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) একটি রেশমী জুব্বা উমর (রাদি.)-এর নিকট পাঠিয়ে দেন। তিনি তা নিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে আরয করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! আপনি বলেছিলেন যে, এ তো তারই লেবাস (আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই, কিংবা (রাবীর সন্দেহ) এ পোশাক তো সে-ই পরিধান করে, যার (আখিরাতে) কোন অংশ নেই। এরপরও আপনি তা আমার জন্য পাঠালেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি তা বিক্রয় করে ফেলবে অথবা (রাবীর সন্দেহ) বলেছেন, তুমি তা তোমার কোন কাজে লাগাবে।
৫৬/১৭৮. অধ্যায়ঃ শিশুদের কাছে কেমনভাবে ইসলামকে তুলে ধরতে হইবে?
৩০৫৫. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমর (রাদি.) কয়েকজন সাহাবীসহ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ইবনু সাইয়াদের নিকট যান। তাঁরা তাকে বনী মাগালার টিলার উপর ছেলে-পেলেদের সঙ্গে খেলাধূলা করিতে দেখিতে পান। আর এ সময় ইবনু সাইয়াদ বালিগ হবার নিকটবর্তী হয়েছিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর (আগমন) সে কিছু টের না পেতেই নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর পিঠে হাত দিয়ে মৃদু আঘাত করিলেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসুল? তখন ইবনু সাইয়াদ তাহাঁর প্রতি তাকিয়ে বলিল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মী লোকদের রাসুল। ইবনু সাইয়াদ নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিল, আপনি কি এ সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসুল? নাবী (সাঃআঃ) তাকে বলিলেন, আমি আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর সকল রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। নাবী (সাঃআঃ) তাকে প্রশ্ন করিলেন, তুমি কী দেখ? ইবনু সাইয়াদ বলিল, আমার নিকট সত্য খবর ও মিথ্যা খবর সবই আসে। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আসল অবস্থা তোমার কাছে সত্য মিথ্যা মিশিয়ে আছে। নাবী (সাঃআঃ) আরো বলিলেন, আচ্ছা, আমি আমার অন্তরে তোমার জন্য কিছু কথা গোপন রেখেছি। ইবনু সাইয়াদ বলিল, তা হচ্ছে ধোঁয়া। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আরে থাম, তুমি তোমার সীমার বাইরে যেতে পার না। উমর (রাদি.) বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে হুকুম দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, যদি সে প্রকৃত দাজ্জাল হয়, তবে তুমি তাকে কাবু করিতে পারবে না, যদি সে দাজ্জাল না হয়, তবে তাকে হত্যা করে তোমার কোন লাভ নেই।
৩০৫৬. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল ও উবাই ইবনু কাব (রাদি.) উভয়ে সে খেজুর বৃক্ষের নিকট গমন করেন, যেখানে ইবনু সাইয়াদ অবস্থান করছিল। যখন নাবী (সাঃআঃ) সেখানে পৌঁছলেন, তখন তিনি খেজুর ডালের আড়ালে চলতে লাগলেন। তাহাঁর ইচ্ছা ছিল যে, ইবনু সাইয়াদের অজান্তে তিনি তার কিছু কথা শুনে নিবেন। ইবনু সাইয়াদ নিজ বিছানা পেতে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়েছিল এবং কী কী যেন গুনগুন করছিল। তার মা নাবী (সাঃআঃ)-কে দেখে ফেলেছিল যে, তিনি খেজুর বৃক্ষ শাখার আড়ালে আসছেন। তখন সে ইবনু সাইয়াদকে বলে উঠল, হে সাফ! আর এ ছিল তার নাম। সে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, নারীটি যদি তাকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিত, তবে তার ব্যাপারটা প্রকাশ পেয়ে যেত।
৩০৫৭. সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু উমর (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন যে, অতঃপর নাবী লোকদের মাঝে দাঁড়ালেন। প্রথমে তিনি আল্লাহ তাআলার যথাযথ প্রশংসা করিলেন। অতঃপর দাজ্জাল সম্পর্কে উল্লেখ করিলেন। আর বলিলেন, আমি তোমাদের দাজ্জাল হইতে সতর্ক করে দিচ্ছি। প্রত্যেক নাবীই তাহাঁর সম্প্রদায়কে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করিয়াছেন। নূহ (আঃ) তাহাঁর সম্প্রদায়কে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করিয়াছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে তার সম্পর্কে এমন একটি কথা জানিয়ে দিব, যা কোন নাবী তাহাঁর সম্প্রদায়কে জানাননি। তোমরা জেনে রাখ যে, সে হইবে এক চক্ষু বিশিষ্ট আর অবশ্যই আল্লাহ এক চক্ষু বিশিষ্ট নন।
৫৬/১৭৯. অধ্যায়ঃ ইয়াহূদীদের উদ্দশ্যে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর বাণীঃ “ইসলাম গ্রহণ কর, নিরাপত্তা লাভ কর”।
এ বাণী মাকবুরী আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।
৫৬/১৮০. অধ্যায়ঃ কোন সম্প্রদায় দারুল হারবে ইসলাম গ্রহণ করলে, তাদের ধন-সম্পত্তি ও ক্ষেত-খামার থাকলে তা তাদেরই থাকবে।
৩০৫৮. উসামা ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বিদায় হাজ্জে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আগামীকাল আপনি মক্কায় পৌঁছে কোথায় অবতরণ করবেন? তিনি বলিলেন, আকীল কি আমাদের জন্য কোন ঘর বাড়ি অবশিষ্ট রেখেছে? অতঃপর বলিলেন, আমরা আগামীকাল খায়ফে বনূ কানানার মুহাস্সাব নামক স্থানে অবতরণ করব। যেখানে কুরায়েশ লোকেরা কুফরীর উপর শপথ করেছিল। আর তা হচ্ছে এই যে, বনূ কানানা ও কুরায়শগণ একত্রে এ শপথ করেছিল যে, তারা বনূ হাশেমের সঙ্গে কেনা-বেচা করিবে না এবং তাদের নিজ বাড়িতে আশ্রয়ও দিবে না। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, খায়ফ হচ্ছে একটি উপত্যকা।
৩০৫৯. যায়দ ইবনু আসলাম (রাদি.) কর্তৃক তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
উমর (রাদি.) হুনাইয়াহ নামক তাহাঁর এক আযাদকৃত গোলামকে সরকারী চারণভূমির তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত করেন। আর তাকে আদেশ করেন, হে হুনাইয়াহ! মুসলিমদের সঙ্গে অত্যন্ত বিনয়ী থাকবে, মজলুমের বদ দুআ হইতে বেঁচে থাকবে। কারণ, মজলুমের দুআ কবূল হয়। আর অল্প সংখ্যক উট ও অল্প সংখ্যক বকরীর মালিককে এতে প্রবেশ করিতে দিবে। আর আবদুর রহমান ইবনু আউফ ও উসমান ইবনু আফফান (রাদি.)-এর পশুর ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। কেননা যদি তাদেঁর পশুগুলো ধ্বংস হয়ে যায়, তবে তাঁরা তাদেঁর কৃষি ক্ষেত ও খেজুর বাগানের প্রতি মনোযোগ দিবেন। কিন্তু অল্প সংখ্যক উট-বকরীর মালিকদের পশু ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে আমার নিকট উপস্থিত হইবে। আর বলবে, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার পিতা ধ্বংস হোক! তখন আমি কি তাদের বঞ্চিত করিতে পারব? সুতরাং পানি ও ঘাস দেয়া আমার পক্ষে সহজ, স্বর্ণ-রেৌপ্য দেয়ার চাইতে। আল্লাহর শপথ! এ সব লোকেরা মনে করিবে, আমি তাদের প্রতি জুলুম করেছি। এটা তাদেরই শহর, জাহিলী যুগে তারা এতে যুদ্ধ করেছে, ইসলামের যুগে তারা এতেই ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে মহান আল্লাহর শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যে সব ঘোড়ার উপর আমি যোদ্ধাগণকে আল্লাহর রাস্তায় আরোহণ করিয়ে থাকি যদি সেগুলো না হতো তবে আমি তাদের দেশের এক বিঘত পরিমাণ জমিও সংরক্ষণ করতাম না।
৫৬/১৮১. অধ্যায়ঃ ইমাম কর্তৃক লোকদের নাম লিপিবদ্ধ করা।
৩০৬০. হুযাইফাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, মানুষের মধ্যে যারা ইসলামের কালিমাহ উচ্চারণ করেছে, তাদের নাম লিখে আমাকে দাও। হুযাইফাহ (রাদি.) বলেন, তখন আমরা একহাজার পাঁচশ লোকের নাম লিখে তাহাঁর নিকট পেশ করি। [১] তখন আমরা বলিতে লাগলাম, আমরা এক হাজার পাঁচশত লোক, এক্ষণে আমাদের ভয় কিসের? (রাবী) হুযাইফাহ (রাদি.) বলেন, পরবর্তীকালে আমরা দেখেছি যে, আমরা এমনভাবে ফিতনায় পড়েছি যাতে লোকেরা ভীত-শংকিত অবস্থায় একা একা সালাত আদায় করছে।
(মুসলিম ১/৬৭ হাদীস ১৪৯, আহমাদ ২৩৩১৯) (আ.প্র. ২৮৩০, ই.ফা. ২৮৪০)
———————
৩০৬০/১. আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে এ রিওয়ায়াত বর্ণনা করিয়াছেন, তাতে উল্লেখ হয়েছে, আমরা তাদের পাঁচশ পেয়েছি। আবু মুআবিয়াহর বর্ণনায় উল্লেখিত হয়েছে, ছয়শ হইতে সাতশ এর মাঝামাঝি। (আ.প্র. নাই, ই.ফা. ২৮৪১)
[১] ঘটনাটি উহুদ যুদ্ধে যাবার পূর্বে অথবা খন্দক খননের সময়ের।
৩০৬১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! অমুক যুদ্ধে আমার নাম লেখা হয়েছে আর আমার স্ত্রী হজ্জ আদায়ের সংকল্প নিয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, ফিরে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর।
৫৬/১৮২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলা কখনও পাপিষ্ঠ লোকের দ্বারা দ্বীনের সাহায্য করেন।
৩০৬২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি ইসলামের দাবীদার এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বলিলেন, এ ব্যক্তি জাহান্নামী অথচ যখন যুদ্ধ শুরু হল, তখন সে লোকটি ভীষণ যুদ্ধ করিল এবং আহত হল। তখন বলা হল, হে আল্লাহর রাসুল! যে লোকটি সম্পর্কে আপনি বলেছিলেন সে লোকটি জাহান্নামী, আজ সে ভীষণ যুদ্ধ করেছে এবং মারা গেছে। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, সে জাহান্নামে গেছে। রাবী বলেন, এ কথার উপর কারো কারো অন্তরে এ বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির উপক্রম হয় এবং তাঁরা এ সম্পর্কিত কথাবার্তায় রয়েছেন, এ সময় খবর এল যে, লোকটি মরে যায়নি বরং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। যখন রাত্রি হল, সে আঘাতের কষ্টে ধৈর্যধারণ করিতে পারল না এবং আত্মহত্যা করিল। তখন নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছানো হল, তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহ আকবার! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি অবশ্যই আল্লাহ তাআলার বান্দা এবং তাহাঁর রাসুল। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বিলাল (রাদি.)-কে আদেশ করিলেন, তখন তিনি লোকদের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, মুসলিম ব্যতীত কেউ বেহেশ্তে প্রবেশ করিবে না। আর আল্লাহ তাআলা এই দ্বীনকে মন্দ লোকের দ্বারা সাহায্য করেন।
৫৬/১৮৩. অধ্যায়ঃ শত্রুর আশংকায় সৈনাধ্যক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকেই নিজেই সেনা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করা।
৩০৬৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) খুতবা দিতে গিয়ে বলিলেন, যায়িদ পতাকা ধারণ করিয়াছেন এবং শাহাদাত লাভ করিয়াছেন, অতঃপর জাফর (রাদি.) পতাকা ধারণ করিয়াছেন এবং শাহাদাত বরণ করিয়াছেন। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) পতাকা ধারণ করিয়াছেন এবং শাহাদাত লাভ করিয়াছেন। অতঃপর খালিদ ইবনু অলীদ (রাদি.) মনোনয়ন ব্যতীতই পতাকা ধারণ করিয়াছেন, আল্লাহ তাআলা তাহাঁর মাধ্যমে বিজয় দান করিয়াছেন আর বলিলেন, এ আমার নিকট পছন্দনীয় নয় অথবা রাবী বলেন, তাদের নিকট পছন্দনীয় নয় যে, তারা দুনিয়ায় আমার নিকট অবস্থান করতো। রাবী বলেন, আর তাহাঁর চক্ষুদ্বয় হইতে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল।
৫৬/১৮৪. অধ্যায়ঃ সাহায্যকারী দল প্রেরণ প্রসঙ্গে।
৩০৬৪. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট রি-ল, যাকওয়ান, উসইয়াহ ও বনূ লাহইয়ান গোত্রের কিছু লোক এসে বলিল, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি। এবং তারা তাহাঁর নিকট তাদের গোত্রের মুকাবেলায় সাহায্য প্রার্থনা করিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) সত্তর জন আনসার পাঠিয়ে তাদের সাহায্য করিলেন। আনাস (রাদি.) বলেন, আমরা তাঁদের ক্বারী নামে আখ্যায়িত করতাম। তাঁরা দিনের বেলায় লাকড়ি সংগ্রহ করিতেন, আর রাত্রিকালে সালাতে মগ্ন থাকতেন। তারা তাঁদের নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল। যখন তাঁরা বীরে মাউনাহ [১] নামক স্থানে পৌঁছল, তখন তারা বিশ্বাসঘাতকতা করিল এবং তাঁদের হত্যা করে ফেলল। এ সংবাদ শোনার পর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রিল, যাকওয়ান ও বনূ লাহইয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে দুআ করে এক মাস যাবৎ কুনূতে নাযিলা পাঠ করেন। ক্বাতাদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আনাস (রাদি.) আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, তাঁরা তাদের সম্পর্কে কিছুকাল যাবৎ কুরআনের এ আয়াতটি পড়তে থাকেনঃ “আমাদের সংবাদ আমাদের কাওমের নিকট পৌঁছিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের সাক্ষাত পেয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তিনি আমাদের সন্তুষ্ট করিয়াছেন।” অতঃপর এ আয়াত উঠিয়ে নেয়া হয়।
[১] উসফান ও হুজাইল এর মধ্যবর্তী স্থান।
Leave a Reply