মুশরিকদের উপর দুয়া ও বদ দুআ কবুলের সময়
মুশরিকদের উপর দুয়া ও বদ দুআ কবুলের সময় >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
মুশরিকদের উপর দুয়া ও বদ দুআ কবুলের সময়
৮০/৫৮. অধ্যায়ঃ মুশরিকদের উপর বদ দুআ করা।
৮০/৫৯. অধ্যায় : মুশরিকদের জন্য দুআ।
৮০/৬০. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ) -এর দুআঃ হে আল্লাহ! আমার আগের ও পরের গুনাহ মাফ করে দিন।
৮০/৬১. অধ্যায় : জুমআহর দিনে দুআ কবুলের সময় দুআ করা।
৮০/৬২ অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ) -এর বাণীঃ ইয়াহুদীদের সম্পর্কে আমাদের বদ দুআ কবূল হইবে। কিন্তু আমাদের সম্পর্কে তাদের বদ দুআ কবূল হইবে না।
৮০/৬৩. অধ্যায় : আমীন বলা
৮০/৫৮. অধ্যায়ঃ মুশরিকদের উপর বদ দুআ করা।
ইবনু মাসঊদ (রাদি.) বর্ণনা করেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাদের মুকাবিলায় সাহায্য করুন যেমন দুর্ভিক্ষের সাত বছর দিয়ে ইউসুফ (আঃ)(আরবী) –কে সাহায্য করিয়াছেন। হে আল্লাহ! আপনি আবু জাহলকে শাস্তি দিন। ইবনু উমার (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সালাতে বদ দুআ করিলেন। হে আল্লাহ! অমুককে লানত করুন ও অমুককে লানাত করুন। তখনই ওহী অবতীর্ণ হলোঃ তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইবেন অথবা তাদের শাস্তি দিবেন এ বিষয়ে আপনার করণীয় কিছুই নেই। (সুরা আলে ইমরান ৩/১২৮)
৬৩৯২. ইবনু আবু আওফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) (খন্দকের যুদ্ধে) শ্ত্রু বাহিনীর উপর বদ দুআ করেছেনঃ
اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ، سَرِيعَ الْحِسَابِ، اهْزِمِ الأَحْزَابَ، اهْزِمْهُمْ وَزَلْزِلْهُمْ
হে আল্লাহ! হে কিতাব নাযিলকারী! হে ত্বরিৎ হিসাব গ্রহণকারী! আপনি শ্ত্রু বাহিনীকে পরাস্ত করুন। তাদের পরাস্ত করুন এবং তাদের প্রকম্পিত করে দিন।
(আঃপ্রঃ- ৫৯৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৩৭)
৬৩৯৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) এশার শেষ রাকআতে যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ বলিতেন তখন কুনূতে (নাযিলা) পড়তেনঃ
اللَّهُمَّ أَنْجِ عَيَّاشَ بْنَ أَبِي رَبِيعَةَ، اللَّهُمَّ أَنْجِ الْوَلِيدَ بْنَ الْوَلِيدِ، اللَّهُمَّ أَنْجِ سَلَمَةَ بْنَ هِشَامٍ، اللَّهُمَّ أَنْجِ الْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ، اللَّهُمَّ اشْدُدْ وَطْأَتَكَ عَلَى مُضَرَ، اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا سِنِينَ كَسِنِي يُوسُفَ
হে আল্লাহ! আইয়্যাশ ইবনু আবু রাবীআহকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ! সালামাহ ইবনু হিশামকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ! আপনি দুর্বল মুমিনদের মুক্ত করুন। হে আল্লাহ! আপনি মুযার গোত্রকে ভয়াবহ শাস্তি দিন। হে আল্লাহ! আপনি তাদের উপর ইউসুফ (আঃ) -এর সময়ের দুর্ভিক্ষের বছরের মত দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিন।
(আঃপ্রঃ- ৫৯৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৩৮)
৬৩৯৪. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) একটা সারীয়্যা (ক্ষুদ্র বাহিনী) প্রেরণ করিলেন। তাদের কুর্রা বলা হতো। তাদের হত্যা করা হলো। আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে এদের ব্যাপারে যেরূপ রাগান্বিত দেখেছি অন্য কারণে তেমন রাগান্বিত দেখিনি। এজন্য তিনি ফজরের সালাতে এক মাস ধরে কুনূত পড়লেন। তিনি বলিতেনঃ উসায়্যা গোত্র আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছে।
[১০০১; মুসলিম ৫/৫৪, হাদীস ৬৭৭, আহমাদ ১২১৫৩] আঃপ্রঃ- ৫৯৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৩৯)
৬৩৯৫. আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের লোকেরা নাবী (সাঃআঃ) -কে সালাম করার সময় বলতো
السَّامُ عَلَيْكَ
আস্সামু আলাইকা (ধ্বংস তোমার প্রতি)। আয়েশাহ (রাদি.) তাদের এ কথার খারাপ উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে বললেনঃ
عَلَيْكُمُ السَّامُ وَاللَّعْنَةُ
আলাইকুমুস্সাম ওয়াল্লানত (ধ্বংস তোমাদের প্রতি ও লানত)। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আয়েশাহ থামো! আল্লাহ তাআলা সকল বিষয়েই নম্রতা পছন্দ করেন। আয়েশাহ (রাদি.) বললেনঃ তারা কি বলেছে আপনি কি তা শুনেননি? তিনি বলিলেন, আমি তাদের কথার জওয়াবে ওয়াআলাইকুম বলেছি- তা তুমি শুননি? আমি বলেছি, তোমাদের উপরও।
(আঃপ্রঃ- ৫৯৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৪০)
৬৩৯৬। আলী ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আলী ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.) বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! তাদের গৃহ এবং ক্ববরকে আগুন দিয়ে ভর্তি করে দিন। কারণ তারা আমাদেরকে সলাতুল উস্তা থেকে বারিত করে রেখেছে। এমনকি সূর্য ডুবে গেল। আর সলাতুল উস্তা হলো আসর সলাত।
(আঃপ্রঃ- ৫৯৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৪১)
৮০/৫৯. অধ্যায় : মুশরিকদের জন্য দুআ।
৬৩৯৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তুফাইল ইবনু আমর (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) –এর কাছে এসে বললেনঃ দাওস গোত্র বিরুদ্ধাচরণ করেছে ও অবাধ্য হয়েছে এবং ইসলাম গ্রহণ করিতে অস্বীকার করেছে। সুতরাং আপনি তাদের উপর বদদুআ করুন। সাহাবীগণ ভাবলেন যে, তিনি তাদের উপর বদ দুআই করবেন। কিন্তু তিনি (তাদের জন্য) দুআ করলেনঃ
اللَّهُمَّ اهْدِ دَوْسًا وَأْتِ بِهِمْ
হে আল্লাহ! আপনি দাওস গোত্রকে হিদায়াত দান করুন। আর তাদের মুসলিম করে নিয়ে আসুন।
(আঃপ্রঃ- ৫৯৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৪২)
৮০/৬০. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ) -এর দুআঃ হে আল্লাহ! আমার আগের ও পরের গুনাহ মাফ করে দিন।
৬৩৯৮. আবু মূসা (রাদি.) তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) এরুপ দুআ করিতেনঃ
رَبِّ اغْفِرْ لِي خَطِيئَتِي وَجَهْلِي وَإِسْرَافِي فِي أَمْرِي كُلِّهِ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي خَطَايَاىَ وَعَمْدِي وَجَهْلِي وَهَزْلِي، وَكُلُّ ذَلِكَ عِنْدِي، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ، وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
রব্বিগ ফিরলি খতিইয়াতি ওয়া জাহলি ওয়া ইসরাফি ফি আমরি কুল্লিহি, ওয়া মা আন্তা আ,লামু বিহি মিন্নি, আল্লাহুম্মাগ ফিরলি খতিইয়াইয়া ওয়া আমদি ওয়া জাহলি ওয়া হজলি ওয়া কুল্লু জালিকা ইনদিয়, আল্লাহুম্মাগ ফিরলি মা কদ্দামতু ওয়া মা আক্ষারতু ওয়া মা আসরারতু, ওয়া মা আ,লানতু, আন্তাল মুকাদ্দিমু ওয়া আন্তাল মুয়াক্ষেরু, ওয়া আন্তা আলা কুল্লি সাইইন কদির
হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করে দিন আমার অনিচ্ছাকৃত গুনাহ, আমার অজ্ঞতা, আমার কাজের সকল বাড়াবাড়ি এবং আমার যেসব গুনাহ আপনি আমার চেয়ে অধিক জানেন। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করে দিন আমার ভুল-ত্রুটি, আমার ইচ্ছাকৃত গুনাহ ও আমার অজ্ঞতা এবং আমার উপহাসমূলক গুনাহ আর এ রকম গুনাহ যা আমার মধ্যে আছে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন যেসব গুনাহ আমি আগে করেছি। আপনিই অগ্রবর্তী করেন, আপনিই পশ্চাদবর্তী করেন এবং আপনিই সব বিষয়োপরি সর্বশক্তিমান।
[৬৩৯৯; মুসলিম ৪৮/১৮, হাদীস ২৭১৯, আহমাদ ১৯৭৫৯] আঃপ্রঃ- ৫৯৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৪৩)
৬৩৯৯. আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) দুআ করিতেনঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي خَطِيئَتِي وَجَهْلِي وَإِسْرَافِي فِي أَمْرِي، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي هَزْلِي وَجِدِّي وَخَطَاىَ وَعَمْدِي، وَكُلُّ ذَلِكَ عِنْدِي
আল্লাহুম্মাগ ফিরলি খতিইয়াতি ওয়া জাহলি ওয়া ইসরাফি ফি আমরি, ওয়া মা আন্তা আ,লামু বিহি মিন্নি, আল্লাহুম্মাগ ফিরলি হজলি ওয়া জিদ্দি ওয়া খতাইয়া, ওয়া আমদি, ওয়া কুল্লু জালিকা ইনদিয়
হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করে দিন আমার ভুল-ত্রুটিজনিত গুনাহ, আমার অজ্ঞতা, আমার বাড়াবাড়ি এবং আর যা আপনি আমার চেয়ে বেশি জানেন। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করে দিন আমার হাসি-ঠাট্টামূলক গুনাহ, আমার প্রকৃত গুনাহ, আমার অনিচ্ছাকৃত গুনাহ এবং ইচ্ছাকৃত গুনাহ, এসব গুনাহ যা আমার মধ্যে আছে।
[৬৩৯৮; মুসলিম ৪৮/১৮, হাদীস ২৭১৯, আহমাদ ১৯৭৫৯] আঃপ্রঃ- ৫৯৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৪৪)
৮০/৬১. অধ্যায় : জুমআহর দিনে দুআ কবুলের সময় দুআ করা।
৬৪০০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবুল কাসিম (সাঃআঃ) বলেন, জুমআহর দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যদি সে মুহূর্তটিতে কোন মুসলিম দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করে, আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণের জন্য দুআ করলে তা আল্লাহ তাকে দান করবেন। তিনি এ হাদীস বর্ণনার সময় আপন হাত দিয়ে ইঙ্গিত করলে আমরা বললাম (বুঝলাম) যে, মুহূর্তটির সময় খুবই স্বল্প।
(আঃপ্রঃ- ৫৯৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৪৫)
৮০/৬২ অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ) -এর বাণীঃ ইয়াহুদীদের সম্পর্কে আমাদের বদ দুআ কবূল হইবে। কিন্তু আমাদের সম্পর্কে তাদের বদ দুআ কবূল হইবে না।
৬৪০১. আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার একদল ইয়াহূদী নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে সালাম দিতে গিয়ে বললোঃ
السَّامُ عَلَيْكَ
আস্সামু আলাইকা। তিনি বললেনঃ
وَعَلَيْكُمْ
ওয়াআলাইকুম। কিন্তু আয়েশাহ (রাদি.) বললেনঃ
السَّامُ عَلَيْكُمْ، وَلَعَنَكُمُ اللَّهُ وَغَضِبَ عَلَيْكُمْ
আস্সামু আলাইকুম ওয়া লায়ানাকুমুল্লাহ ওয়া গাযিবা আলাইকুম (তোমরা ধ্বংস হও, আল্লাহ তোমাদের উপর লানাত করুন, আর তোমাদের উপর গযব অবতীর্ণ করুন)। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ হে আয়েশাহ তুমি থামো! তুমি নম্রতা অবলম্বন করো, আর তুমি কঠোরতা বর্জন করো। আয়েশাহ (রাদি.) বললেনঃ তারা কী বলেছে আপনি কি শুনেননি? তিনি বললেনঃ আমি যা বলেছি, তা কি তুমি শুননি? আমি তো তাদের কথাটা তাদের উপরই ফিরিয়ে দিলাম। কাজেই তাদের উপর আমার বদ দুআ কবূল হয়ে যাবে। কিন্তু আমার ব্যাপারে তাদের বদ দুআ কবূল হইবে না।
(আঃপ্রঃ- ৫৯৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৪৬)
৮০/৬৩. অধ্যায় : আমীন বলা।
৬৪০২. আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী বলেছেন, যখন ক্বারী أَمَّنَ আমীন বলবে তখন তোমরাও أَمَّنَ আমীন বলবে। কারণ এ সময় ফেরেশতা أَمَّنَ আমীন বলে থাকেন। সুতরাং যার أَمَّنَ আমীন বলা ফেরেশতার أَمَّنَ আমীন বলার সঙ্গে মিলে যাবে, তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হইবে।
(আঃপ্রঃ- ৫৯৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৪৭)
Leave a Reply