বদর যুদ্ধে ফেরেশতা দ্বারা সাহায্যে এবং গনীমাতের মাল বৈধ হওয়া
বদর যুদ্ধে ফেরেশতা দ্বারা সাহায্যে এবং গনীমাতের মাল বৈধ হওয়া >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
১৮. অধ্যায়ঃ বদর যুদ্ধে ফেরেশতা দ্বারা সাহায্যে এবং গনীমাতের মাল বৈধ হওয়া
৪৪৮০. উমর ইবনি খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বাদরের যুদ্ধের দিনে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম] মুশরিকদের দিকে তাকালেন, দেখলেন যে, তারা সংখ্যায় এক হাজার ছিল। আর তাহাঁর সাহাবী ছিলেন তিনশ তের জন। তখন নবী [সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম] কিবলামুখী হলেন, এরপর দুহাত উঁচু করে আওয়াজ করে আপন প্রভুর কাছে দুআ অরতে লাগলেন,
হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছ আমার জন্য তা পূরণ করো। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়াছ, তা দাও। হে আল্লাহ! যদি মুসলিমদের এ ক্ষুদ্র সেনাদল ধ্বংস করে দাও তবে পৃথিবীতে তোমার ইবাদাত করার মত আর কেউ থাকিবে না।
اللَّهُمَّ أَنْجِزْ لِي مَا وَعَدْتَنِي اللَّهُمَّ آتِ مَا وَعَدْتَنِي اللَّهُمَّ إِنْ تَهْلِكْ هَذِهِ الْعِصَابَةُ مِنْ أَهْلِ الإِسْلاَمِ لاَ تُعْبَدْ فِي الأَرْضِ
তিনি এমনিভাবে দুহাত উঁচু করে কিবলামুখী হয়ে প্রভুর কাছে উচ্চৈঃস্বরে দুআ করে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তাহাঁর কাঁধ থেকে চাদর পড়ে গেল। তখন আবু বাকর [রাদি.] তাহাঁর কাছে এসে চাদরটি তাহাঁর কাঁধে পুনরায় তুলে দিলেন। তারপর তাহাঁর পিছন দিক থেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! আপনার এতটুকু দুআই যথেষ্ট আপনার প্রভুর কাছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আপনার সঙ্গে যে ওয়াদা
করিয়াছেন, তা অচিরেই পূর্ণ করবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করিলেন-
إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ مُرْدِفِينَ
“ স্মরণ করো, যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে; তখন তিনি তা কবুল করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আমি তোমাদেরকে এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করব যারা একের পর এক আসবে।” [ সুরা আনফাল ৮ : ৯]
অতঃপর আল্লাহ তাআআ ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করিলেন। আবু যুমায়ল বর্ণনা করেন যে, আমার নিকট ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেছেন যে, সেদিন একজন মুসলিম সৈনিক তার সামনের একজন মুশরিকের পিছনে ধাওয়া করেছিলেন। এমন সময় তিনি তাহাঁর উপর দিক থেকে বেত্রাঘাতের শব্দ শুনতে পেলেন এবং তার উপর দিকে অশ্বারোহীর এরু ধ্বনি শুনতে পেলেন। তিনি বলিতেছিলেন, হে হায়যুম [ফেরেশতার ঘোড়ার নাম] সামনের দিকে অগ্রসর হও। তখন তিনি তার সামনের এক মুশরিক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। আরো দেখেন যে, তার নাক-ক্ষতযুক্ত এবং তার মুখমণ্ডল আঘাতপ্রাপ্ত। যেন কেউ তাকে বেত্রাঘাত করেছে। আহত স্হানগুলো সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে। [বেত্রের বিষাক্ততায়]। এরপর আনসারী ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে যাবতীয় ঘটনা বর্ণনা করিলেন। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। এ সাহায্য তৃতীয় আকাশ থেকে এসেছে। পরিশেষে সেদিন মুসলিমগণ সত্তর জন কাফিরকে হত্যা এবং সত্তর জনকে বন্দী করিলেন।
আবু যুমায়ল বলেন যে, ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণনা করিয়াছেন, যখন যুদ্ধ বন্দীদেরকে আটক করা হলো, তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ঐসব যুদ্ধবন্দী সম্পর্কে আবু বাকর [রাদি.] এবং উমর [রাদি.] এর সাথে কথা বলিলেন, “এ সকল যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে আপনারা কি মত দিচ্ছেন”। আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! তারা তো আমাদের চাচাতো ভাই এবং স্বগোত্রীয়। আমি উচিত মনে করি যে, তাদের নিকট থেকে আপনি মুক্তিপণ [আরবি] গ্রহন করুন। এতে কাফিরদের উপর আমাদের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ইসলামের হিদায়াত দিবেন। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে ইবনিল খাত্তাব! এ ব্যাপারে আপনি কী বলছেন? উমর [রাদি.] বলিলেন, তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসুল! আবু বাকর যা উচিত মনে করেন আমি তা উচিত মনে করি না। আমি উচিত মনে করি যে, আপনি তাদেরকে আমাদের হস্তগত করুন। আমরা তাদের গর্দান উড়িয়ে দেব। আর আকিল–কে আলী এর হস্তগত করুন। তিনি তার শিরোচ্ছেদ করবেন। আর আমার বংশের অমুককে আমার কাছে অর্পণ করুন, আমি তার শিরোচ্ছেদ করবো। কেননা তারা হল কাফিরদের মর্যাদাশালী নেতৃস্হানীয় ব্যক্তিবর্গ। অতএব আবু বাকর [রাদি.] যা বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেটাই পছন্দ করিলেন এবং আমি যা বললাম তা তিনি পছন্দ করিলেন না। পরের দিন যখন আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এলাম, তখন দেখি যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং আবু বাকর [রাদি.] উভয়য়েই বসে কাঁদছেন। আমি বললাম , হে আল্লাহর রসূল! আমাকে বলুন, আপনি এবং আপনার সাথি কেন কাঁদছেন? আমার কান্না আসলে আমিও কাঁদবো। আর যদি আমার কান্না না আসে তবে আপনাদের কাঁদার কারণে আমিও কান্নার ভান করবো [প্রচেষ্টা চালাবো]। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, মুক্তিপণ গ্রহনের কারণে তোমার সাথীদের উপর সমাগত বিপদের কথা স্মরণ করে আমি কাঁদছি। আমার নিকট তাদের শাস্তি পেশ করা হল—এ বৃক্ষ থেকেও নিকটে। বৃক্ষটি ছিল নবী [সাঃআঃ] এর নিকটবর্তী। [একটি বৃক্ষের দিকে লক্ষ করে বলিলেন, এ বৃক্ষের চাইতেও কাছে তোমাদের উপর সমাগত আযাব আমাকে দেখান হয়েছিল।] অতঃপর আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। [আর-বি.]
“ দেশে ব্যাপকভাবে শত্রুকে পরাস্ত না করা পর্যন্ত বন্দী কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয় —-যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করেছ তা বৈধ ও উত্তম বলে তোমরা ভোগ কর “ —[ সুরা আল-আনফাল ৮ ঃ ৬৭-৬০]। এর ফলে আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য মালে গনীমত হালাল করে দেন।
[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৪৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪৩৮]
Leave a Reply