বদর যুদ্ধ এর বিস্তারিত বর্ণনা। উশায়রাহ বা উসাইরাহর যুদ্ধ
বদর যুদ্ধ এর বিস্তারিত বর্ণনা। উশায়রাহ বা উসাইরাহর যুদ্ধ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
৬৪/১. অধ্যায়ঃ উশায়রাহ বা উসাইরাহর যুদ্ধ
৬৪/২. অধ্যায়ঃ বাদর যুদ্ধে নিহতদের ব্যাপারে নাবী (সাঃআঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী
৬৪/৩. অধ্যায়ঃ বদর যুদ্ধের ঘটনা ও মহান আল্লাহর বাণী
৬৪/৪. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৪/৫. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই
৬৪/৬. অধ্যায়ঃ বাদর যুদ্ধে যোগদানকারীর সংখ্যা
৬৪/৭. অধ্যায়ঃ কুরাইশ কাফির শায়বাহ, উতবাহ, ওয়ালীদ এবং আবু জাহল ইবনু হিশামের বিরুদ্ধে নাবী (সাঃআঃ)-এর দুআ এবং এদের ধ্বংস হওয়ার বিবরণ
৬৪/৮. অধ্যায়ঃ আবু জাহলের হত্যা
৬৪/৯. অধ্যায়ঃ বাদর যুদ্ধে যোগদানকারীগণের মর্যাদা
৬৪/১০. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই
৬৪/১১. অধ্যায়ঃ বাদর যুদ্ধে মালায়িকাহর যোগদান
৬৪/১২. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই
৬৪/১৩. অধ্যায়ঃ
৬৪/১৪. অধ্যায়ঃ দু ব্যক্তি রক্তপণের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য রাসুল (সাঃআঃ)-এর বানী নাযীর গোত্রের নিকট গমন এবং তাহাঁর সঙ্গে তাদের বিশ্বাসঘাতকতা বিষয়ক ঘটনা
৬৪/১৫. অধ্যায়ঃ কাব ইবনু আশরাফ [২০] –এর হত্যা
৬৪/১৬. অধ্যায়ঃ আবু রাফি আবদুল্লাহ ইবনু আবুল হুকায়কের হত্যা
৬৪/১. অধ্যায়ঃ উশায়রাহ বা উসাইরাহর যুদ্ধ
ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) প্রথম আবওয়া-র যুদ্ধ করেন, অতঃপর তিনি বুওয়াত্ব, অতঃপর উশায়রার যুদ্ধ করেন।
৩৯৪৯
আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি যায়দ ইবনু আরকামের পাশে ছিলাম। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, নাবী (সাঃআঃ) কয়টি যুদ্ধ করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, ঊনিশটি। আবার জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কয়টি যুদ্ধে তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন? তিনি বলিলেন, সতেরটিতে। বললাম, এসব যুদ্ধের কোনটি সর্বপ্রথম সংগঠিত হয়েছিল? তিনি বলিলেন, উশাইরাহ বা উশায়র। বিষয়টি আমি ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনিও বলিলেন, উশায়র।
[৪৪০৪, ৪৪৭১; মুসলিম ১৫/৩৫, হাদীস ১২৫৪] (আ.প্র. ৩৬৫৮, ই.ফা. ৩৬৬১)
৬৪/২. অধ্যায়ঃ বদর যুদ্ধে নিহতদের ব্যাপারে নাবী (সাঃআঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী
৩৯৫০
সাদ ইবনু মুআয (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, তাহাঁর ও উমাইয়াহ ইবনু খালফের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। উমাইয়াহ মদিনায় আসলে সাদ ইবনু মুআযের মেহমান হত এবং সাদ (রাদি.) মক্কায় গেলে উমাইয়াহর আতিথ্য গ্রহণ করিতেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মদিনায় হিজরাত করার পর একবার সাদ (রাদি.) উমরাহ করার উদ্দেশ্যে মাক্কাহ গেলেন এবং উমাইয়াহর বাড়িতে অবস্থান করিলেন। তিনি উমাইয়াহকে বলিলেন, আমাকে এমন একটি নিরিবিলি সময়ের কথা বল যখন আমি বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করিতে পারব। তাই দুপুরের কাছাকাছি সময়ে একদিন উমাইয়াহ তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বের হল, তখন তাদের সঙ্গে আবু জাহলের দেখা হল। তখন সে (উমাইয়াহকে লক্ষ্য করে) বলিল, হে আবু সফ্ওয়ান! তোমার সঙ্গে ইনি কে? সে বলিল, ইনি সাদ। তখন আবু জাহল তাকে (সাদ ইবনু মআযকে) বলিল, আমি তোমাকে নিরাপদে মক্কায় তাওয়াফ করিতে দেখছি অথচ তোমরা ধর্মত্যাগীদের আশ্রয় দিয়েছ এবং তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করে চলেছ। আল্লাহর কসম, তুমি আবু সফওয়ানের (উমাইয়াহ) সঙ্গে না থাকলে তোমার পরিজনদের কাছে নিরাপদে ফিরে যেতে পারতে না। সাদ (রাদি.) এর চেয়েও উচ্চঃস্বরে বলিলেন, আল্লাহর কসম, তুমি এতে যদি আমাকে বাধা দাও তাহলে আমিও এমন একটি বিষয়ে তোমাকে বাধা দেব যা তোমার জন্য এর চেয়েও কঠিন হইবে। মাদীনাহর পার্শ্ব দিয়ে তোমার যাতায়াতের রাস্তা (বন্ধ করে দেব)। তখন উমাইয়াহ তাকে বলিল, হে সাদ! এ উপত্যকার সর্দার আবুল হাকামের সঙ্গে এরূপ উচ্চঃস্বরে কথা বলো না। তখন সাদ (রাদি.) বলিলেন, হে উমাইয়াহ! তুমি চুপ কর। আল্লাহর কসম, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, তারা তোমরা হত্যাকারী। উমাইয়াহ জিজ্ঞেস করিল, মক্কার বুকে? সাদ (রাদি.) বলিলেন, তা জানি না। উমাইয়াহ এতে অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। এরপর উমাইয়াহ বাড়ী গিয়ে তার (স্ত্রীকে) বলিল, হে উম্মু সফওয়ান! সাদ আমার ব্যাপারে কি বলেছে জান? সে বলিল, সাদ তোমাকে কী বলেছে? উমাইয়াহ বলিল, সে বলেছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) তাদেরকে জানিছেন যে, তারা আমার হত্যাকারী। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তা কি মক্কায়? সে বলিল, তা জানি না। অতঃপর উমাইয়াহ বলিল, আল্লাহর কসম, আমি কখনো মাক্কাহ হইতে বের হব না। কিন্তু বদর যুদ্ধের দিন আগত হলে আবু জাহল সকল জনসাধারণকে সদলবলে বের হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলিল, তোমরা তোমাদের কাফেলা রক্ষা করার জন্য আগ্রসর হও। উমাইয়াহ বের হওয়াকে অপছন্দ করলে আবু জাহল এসে তাকে বলিল, হে আবু সফ্ওয়ান। তুমি এ উপত্যকার অধিবাসীদের নেতা, তাই লোকেরা যখন দেখবে তুমি পেছনে রয়ে গেছ তখন তারাও তোমার সঙ্গে পেছনেই থেকে যাবে। এ বলে আবু জাহল তার সঙ্গে পীড়াপীড়ি করিতে থাকলে সে বলিল, তুমি যেহেতু আমাকে বাধ্য করে ফেলছ তাই আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি এমন একটি উষ্ট্র ক্রয় করব যা মক্কার মধ্যে সবচেয়ে ভাল। এরপর উমাইয়াহ (স্ত্রীকে) বলিল, হে উম্মু সফ্ওয়ান! আমার সফরের ব্যবস্থা কর। স্ত্রী বলিল, হে আবু সফ্ওয়ান! তোমার মাদীনাহবাসী ভাই যা বলেছিলেন তা কি তুমি ভুলে গিয়েছ? সে বলিল, না। আমি তাদের সঙ্গে মাত্র কিছু দূর যেতে চাই। রওয়ানা হওয়ার পর রাস্তায় যে মানযিলেই উমাইয়াহ কিছুক্ষণ অবস্থান করেছে সেখানেই সে তার উট বেঁধে রেখেছে। সারা রাস্তায় সে এমন করিল, শেষে বদর প্রান্তরে মহান আল্লাহ তাকে হত্যা করিলেন। [৩৬৩২]
(আ.প্র. ৩৬৫৯, ই.ফা. ৩৬৬২)
৬৪/৩. অধ্যায়ঃ বদর যুদ্ধের ঘটনা ও মহান আল্লাহর বাণী
মহান আল্লাহর বাণীঃ “আর এ তো সুনিশ্চিত যে, আল্লাহ বাদর যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছিলেন, অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল, সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেন তোমরা শুকরগুজারী করিতে পার। স্মরণ কর, তুমি মুমিনদের বলেছিলেঃ তোমাদের জন্য একি যথেষ্ট নয় যে, আসমান হইতে অবতীর্ণ হওয়া তিন হাজার মালায়িকাহ দিয়ে তোমাদের রব তোমাদের সাহায্য করবেন? হ্যাঁ, অবশ্যই। যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাক্ওয়া অবলম্বন কর; তবে কাফির বাহিনী অতর্কিতে তোমাদের উপর আক্রমণ করলে আল্লাহ পাঁচ হাজার চিহ্নিত মালায়িকাহ দিয়ে তোমাদের সাহায্য করবেন। এটা তো আল্লাহ শুধু এজন্য করিয়াছেন যেন তোমাদের জন্য সুসংবাদ হয়, যাতে তোমাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। আর সাহায্য তো শুধুমাত্র পরাক্রমশালী মহাবিজ্ঞ আল্লাহর তরফ হইতে হয়ে থাকে। যাতে ধ্বংস করে দেন কাফিরদের কোন দলকে অথবা লাঞ্ছিত করে দেন তাদের, যেন তারা নিরাশ হয়ে ফিরে যায়।” (সুরা আলে ইমরান ৩/১২৩-১২৭)
ওয়াহশী (রাদি.) বলেন, বাদর যুদ্ধের দিন হামযাহ (রাদি.) তুআয়মা ইবনু আদী ইবনু খিয়ারকে হত্যা করেছিলেন। আল্লাহর বানীঃ “স্মরণ কর, আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে ওয়াদা করেছিলেন যে, দুটি দলের একটি তোমাদের করতলগত হইবে।” (সুরা আনফাল ৮/৭)
৩৯৫১
আবদুল্লাহ ইবনু কাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি কাব ইবনু মালিক (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যে সব যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করিয়াছেন তার মধ্যে তাবূকের যুদ্ধ ব্যতীত অন্য কোন যুদ্ধে আমি অনুপস্থিত ছিলাম না। তবে বদর যুদ্ধে আমি অনুপস্থিত ছিলাম। কিন্তু বদর যুদ্ধে যারা যোগদান করেননি তাদেরকে কোন প্রকার দোষারোপ করা হয়নি। আসলে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কুরাইশ কাফিলার উদ্দেশ্যেই যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা ব্যতীতই আল্লাহ তাআলা তাদের (মুসলিমদের) সঙ্গে তাদের দুশমনদের মুকাবালা করিয়ে দেন। [২৭৫৭]
(আ.প্র. ৩৬৬০, ই.ফা. ৩৬৬৩)
৬৪/৪. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
স্মরণ কর, তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করছিলে তোমাদের রবের কাছে, তিনি তোমাদের প্রার্থনার জবাবে বললেনঃ অবশ্যই আমি তোমাদের সাহায্য করব এক হাজার মালায়িকাহ দিয়ে, যারা ক্রমান্বয়ে এসে পৌঁছবে। আর আল্লাহ এ সাহায্য করিলেন শুধু সুসংবাদ দেয়ার জন্য এবং যেন তোমাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। আর সাহায্য তো কেবল আল্লাহর তরফ হইতেই হয়। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, হিকমাতওয়ালা। স্মরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করেন নিজের পক্ষ হইতে স্বস্তি প্রদানের জন্য এবং তোমাদের উপর আসমান হইতে পানি বর্ষণ করেন তা দিয়ে তোমাদেরকে পবিত্র করার জন্য এবং যাতে তোমাদের হইতে অপসারিত করে দেন শায়ত্বনের কুমন্ত্রণা, আর যাতে তোমাদের অন্তর সুদৃঢ় করেন এবং যার ফলে তোমাদের পা স্থির করে দিতে পারেন। স্মরণ কর, তোমার রব মালায়িকাহকে প্রত্যাদেশ করেন- নিশ্চয় আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, সুতরাং মুমিনদের দৃঢ়চিত্ত রাখ। অচিরেই আমি কাফিরদের অন্তরে আতংক সঞ্চার করে দেব, অতএব, আঘাত কর তাদের গর্দানের উপর এবং আঘাত কর তাদের আঙ্গুলির জোড়ায় জোড়ায়। (সুরা আনফাল ৮/৯-১৩)
৩৯৫২
ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি মিকদাদ ইবনু আসওয়াদের এমন একটি বিষয় দেখেছি যা আমি করলে তা দুনিয়ার সব কিছুর তুলনায় আমার নিকট প্রিয় হত। তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে আসলেন, তখন তিনি (সাঃআঃ) মুশরিকদের বিরুদ্ধে দুআ করছিলেন। এতে মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাদি.) বলিলেন, মূসা (আঃ) এর কাওম যেমন বলেছিল যে, “তুমি আর তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ কর”- (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/২৪)। আমরা তেমন বলব না, বরং আমরা আপনার ডানে, বামে, সামনে, পিছনে সর্বদিক থেকে যুদ্ধ করব। ইবনু মাসউদ (রাদি.) বলেন, আমি দেখলাম, নাবী (সাঃআঃ)-এর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল এবং তার কথা তাঁকে খুব আনন্দিত করিল।
[৪৬০৯] (আ.প্র. ৩৬৬১, ই.ফা. ৩৬৬৪)
৩৯৫৩
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বাদরের দিন নাবী (সাঃআঃ) বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার পূরণ করার জন্য প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনি যদি চান (কাফিররা জয়লাভ করুক) তাহলে আপনার ইবাদত আর হইবে না। আবু বকর (রাদি.) তাহাঁর হাত ধরে বলিলেন, যথেষ্ট হয়েছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ আয়াত পড়তে পড়তে বের হলেনঃ “শীঘ্রই দুশমনরা পরাজিত হইবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিবে”- (সুরা ক্বামার ৫৪/৪৫)।
[২৯১৫] (আ.প্র. ৩৬৬২, ই.ফা. ৩৬৬৫)
৬৪/৫. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই
৩৯৫৪
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, “মুমিনদের মধ্যে তারা সমান নয় যারা (বাদরে না গিয়ে) বসে ছিল”- (সুরা আন-নিসা ৪/৯৫)। এবং যারা বাদরে হাজির হয়েছিল মর্মে (আয়াতটি) বদর এবং তদুদ্দেশে ঘর ছেড়ে বের হওয়া সাহাবীদের ব্যাপারে (নাযিল হয়)।
[৪৫৯৫] (আ.প্র. ৩৬৬৩, ই.ফা. ৩৬৬৬)
৬৪/৬. অধ্যায়ঃ বদর যুদ্ধে যোগদানকারীর সংখ্যা
৩৯৫৫
বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বাদরের দিন আমাকে ও ইবনু উমারকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক গণ্য করা হয়েছিল। [১]
[৩৯৫৬] (আ.প্র. ৩৬৬৪, ই.ফা. নেই)
[১] অর্থাৎ বারা ইবনু আযির ও আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.)-কে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) অল্প বয়স্ক গণ্য করায় তারা বাদর যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি।
৩৯৫৬
বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বাদরের দিন আমাকে ও ইবনু উমারকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক গণ্য করা হয়েছিল, এ যুদ্ধে মুহাজিরদের সংখ্যা ছিল ষাটের বেশী এবং আনসারদের সংখ্যা ছিল দুশ চল্লিশেরও অধিক। [২]
[৩৯৫৫] (আ.প্র. ৩৬৬৫, ই.ফা. ৩৬৬৭)
[২] মুসলিম হবার কারণে যারা অমানসিক নির্যাতন ও নিপীড়ন সহ্য করে আশ্রয়ের জন্য মাদীনাহ গমন করেছিলেন তারা মুহাজির হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মাদিনাহবাসীদের মধ্য হইতে যারা মুহাজিরদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তারা আনসার নামে পরিচিত ছিলেন।
৩৯৫৭
বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর যে সব সাহাবী বাদরে উপস্থিত ছিলেন তারা আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তাদের সংখ্যা তালুতের যে সব সঙ্গী নদী পার হয়েছিলেন তাদের সমান ছিল। তাদের সংখ্যা ছিল তিনশ দশেরও কিছু বেশী। বারা (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম, ঈমানদার ব্যতীত আর কেউই তাহাঁর সঙ্গে নদী পার হইতে পারেনি।
[৩৯৫৮-৩৯৫৯] (আ.প্র. ৩৬৬৬, ই.ফা. ৩৬৬৮)
৩৯৫৮
বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর সাহাবীগণ পরস্পর আলোচনা করতাম যে, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের সংখ্যা তালুতের সঙ্গে যারা নদী পার হয়েছিলেন তাদের সমানই ছিল এবং তিনশ দশ জনের অধিক ঈমানদার ব্যতীত কেউ তাহাঁর সঙ্গে নদী পার হইতে পারেনি।
[৩৯৫৭] (আ.প্র. ৩৬৬৭, ই.ফা. ৩৬৬৯)
৩৯৫৯
বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা পরস্পর আলোচনা করতাম যে, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণের সংখ্যা তিনশ দশ জনেরও কিছু অধিক ছিল, তালুতের যে সংখ্যক সাথী তাহাঁর সঙ্গে নদী পার হয়েছিল; মুমিন ব্যতীত কেউ তার সঙ্গে নদী পার হইতে পারেনি।
[৩৯৫৭] (আ.প্র. ৩৬৬৮, ই.ফা. ৩৬৭০)
৬৪/৭. অধ্যায়ঃ কুরাইশ কাফির শায়বাহ, উতবাহ, ওয়ালীদ এবং আবু জাহল ইবনু হিশামের বিরুদ্ধে নাবী (সাঃআঃ)-এর দুআ এবং এদের ধ্বংস হওয়ার বিবরণ
৩৯৬০
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) কাবার দিকে মুখ করে কুরাইশ কতিপয় লোকের তথা- শায়বাহ ইবনু রাবীআ, উতবাহ ইবনু রাবীআ, ওয়ালীদ ইবনু উতবাহ এবং আবু জাহল ইবনু হিশামের বিরুদ্ধে দুআ করেন। আমি আল্লাহর নামে সাক্ষ্য দিচ্ছি, অবশ্যই আমি এ সমস্ত লোকদেরকে (বাদরের ময়দানে) নিহত হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখেছি। প্রচণ্ড রোদ তাদের দেহগুলোকে বিকৃত করে দিয়েছিল। দিনটি ছিল প্রচণ্ড গরম।
[২৪০] (আ.প্র. ৩৬৬৯, ই.ফা. ৩৬৭১)
৬৪/৮. অধ্যায়ঃ আবু জাহলের হত্যা
৩৯৬১
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, বদর যুদ্ধের দিন আবু জাহল যখন মৃত্যুর মুখোমুখী তখন তিনি (আবদুল্লাহ) তার কাছে গেলেন। তখন আবু জাহল বলিল, (আজ) তোমরা যাকে হত্যা করলে তার চেয়ে নির্ভরযোগ্য লোক আর আছে কি?
(আ.প্র. ৩৬৭০, ই.ফা. ৩৬৭২)
৩৯৬২
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (বাদরের দিন) নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আবু জাহলের কী অবস্থা হল কেউ তা দেখিতে পার কি? তখন ইবনু মাসঊদ (রাদি.) বের হলেন এবং দেখিতে পেলেন যে, আফ্রার দুই পুত্র তাকে এমনিভাবে মেরেছে যে, মুমূর্ষু অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) বলিলেন, তুমিই কি আবু জাহল? রাবী বলেনঃ আবু জাহল বললঃ সেই লোকটির চেয়ে উত্তম আর কেউ আছে কি যাকে তার গোত্রের লোকেরা হত্যা করিল অথবা বলিল তোমরা যাকে হত্যা করলে? আহমদ বিন ইউনুসের বর্ণনায় এসেছে, তুমি আবু জাহল।
[৩৯৬৩, ৪০২০] (আ.প্র. ৩৬৭১, ই.ফা. ৩৬৭৩)
৩৯৬৩
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, বাদরের দিন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আবু জাহল কী করিল, তোমাদের কে তা জেনে আসবে? তখন ইবনু মাসউদ (রাদি.) চলে গেলেন এবং তিনি দেখিতে পেলেন, আফরার দুই পুত্র তাকে এমনিভাবে পিটিয়েছে যে, সে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে। তখন তিনি তার দাড়ি ধরে বলিলেন, তুমি কি আবু জাহল? উত্তরে সে বলিল, সেই লোকটির চেয়ে উত্তম আর কেউ আছে কি যাকে তার গোত্রের লোকেরা হত্যা করিল অথবা বলিল তোমরা যাকে হত্যা করলে? [৩]
ইবনু মুসান্না (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) থেকে অনুরূপ একটি রিওয়ায়াত বর্ণিত আছে।
[৩৯৬২] (আ.প্র. ৩৬৭২, ই.ফা. ৩৬৭৪)
[৩] কুরায়শদের এতবড় একজন প্রভাবশালী সেনাপতি যে কিনা অল্প বয়স্ক দুজন সহোদর মুআয ও মুআওয়িয এর হাতে নিহত হলো। এটি আল্লাহ তাআলার বিশেষ নিদর্শন। কারণ এটা কাফিরদের জন্য ছিল একটি লজ্জাজনক ও বিরাট ক্ষতির ব্যাপার। দ্বিতীয়ত রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নেতৃত্বে সংঘটিত প্রথম যুদ্ধে কাফিররা এক হাজার থাকলেও মুসলিমদের সংখ্যা ছিল মাত্র তিনশত তেরজন। তথাপি আল্লাহর অশেষ রাহমাতে মুসলিমগণ এ যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং তাদের মনোবল অনেকগুণ বেড়ে যায়। হাদীসে আবু জাহালের মৃত্যুপূর্ব অবস্থা বর্ণিত হয়েছে।
৩৯৬৪
বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
ইব্রাহীমের দাদা থেকে বদর তথা আফ্রার দুই ছেলের সম্পর্কে এক রেওয়ায়ত বর্ণনা করিয়াছেন।
[৩১৪১] (আঃপ্রঃ নেই, ইঃফাঃ ৩৬৭৫)
৩৯৬৫
আলী ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমিই ক্বিয়ামাতের দিন দয়াময়ের সামনে বিবাদ মীমাংসার জন্য হাঁটু গেড়ে বসব। ক্বায়স ইবনু উবাদ (রাদি.) বলেন, এদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছেঃ “এরা দুটি বিবদমান পক্ষ তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে বিতর্ক করে”- (সুরা হাজ্জ ২২/১৯)। তিনি বলেন, (মুসলিম পক্ষের) তারা হলেন হামযা, আলী ও উবাইদাহ অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) আবু উবাইদাহ ইবনুল হারিস (রাদি.) (অপরপক্ষে) শায়বা বিন রাবীআহ, উতবাহ বিন রাবীআহ এবং ওয়ালীদ ইবনু উতবাহ যারা বদর যুদ্ধের দিন পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন [৪]।
[৩৯৬৭, ৪৭৪৪] (আ.প্র. ৩৬৭৩, ই.ফা. ৩৬৭৬)
[৪] বাদরের যুদ্ধের দিন মল্ল যুদ্ধের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। হামযাহ (রাদি.) শাইবাহ ইবনু রাবীআহকে, আলী (রাদি.) ওয়ালিদ ইবনু উতবাহকে মল্ল যুদ্ধে পরাজিত করে তাদেরকে হত্যা করেন। কিন্তু উবাইদাহ (রাদি.) উতবাহ ইবনু রাবীআহকে মারাত্মকভাবে আহত করলেও তিনিও মারাত্মক আহত হন এবং পরে শহীদ হন। হামযাহ (রাদি.) ও আলী (রাদি.) উতবাহ ইবনু রাবীআহকে হত্যার ব্যাপারে উবাইদাহকে সহযোগিতা করেছিলেন।
৩৯৬৬
আবু যার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ “এরা দুটি বিবদমান দল তারা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে”-(সুরা হাজ্জ ২২/১৯) আয়াতটি কুরাইশ গোত্রীয় ছয়জন লোক সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। তারা হলেন, (মুসলিম পক্ষ) আলী, হামযাহ, উবাইদাহ ইবনুল হারিস (রাদি.) ও (কাফির পক্ষে) শায়বা ইবনু রাবীআহ, উতবাহ ইবনু রাবীআহ এবং ওয়ালীদ ইবনু উতবাহ।
[৩৯৬৮, ৩৯৬৯, ৪৭৪৩] (আ.প্র. ৩৬৭৪, ই.ফা. ৩৬৭৭)
৩৯৬৭
কায়স ইবনু উবাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আলী (রাদি.) বলেছেনঃ “এরা দুটি বিবদমান পক্ষ, তারা তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে বিতর্ক করে”-(সুরা হাজ্জ ২২/১৯) আয়াতটি আমাদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছে।
[৩৯৬৫] (আ.প্র. ৩৬৭৫, ই.ফা. ৩৬৭৮)
৩৯৬৮
কায়স ইবনু উবাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
(তিনি বলেছেন) আমি আবু যার (রাদি.)-কে কসম করে বলিতে শুনিয়াছি যে, উপর্যুক্ত আয়াতগুলো উল্লিখিত বাদরের দিন ঐ ছয় ব্যক্তি সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছিল।
[৩৯৬৬] (আ.প্র. ৩৬৭৬, ই.ফা. ৩৬৭৯)
৩৯৬৯
ক্বায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমি আবু যার (রাদি.)-কে কসম করে বলিতে শুনিয়াছি যে, “এরা দুটি বিবদমান পক্ষ তারা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে” আয়াতটি বাদরের দিন পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হামযা, আলী, উবাইদাহ ইবনুল হারিস, রাবীআহর দুই পুত্র উতবাহ ও শায়বাহ এবং ওয়ালীদ ইবনু উতবাহর সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছে।
[৩৯৬৬] (আ.প্র. ৩৬৭৭, ই.ফা. ৩৬৮০)
৩৯৭০
আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আমি শুনলাম, এক ব্যক্তি বারা (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করিল, আলী (রাদি.) কি বাদরের যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন? তিনি বলিলেন, আলী ঐ যুদ্ধে মুকাবালা করেছিলেন এবং হাক্কে বিজয়ী করেছিলেন।
(আ.প্র. ৩৬৭৮, ই.ফা. ৩৬৮১)
৩৯৭১
আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি উমাইয়া ইবনু খালফে্র সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলাম। বদর যুদ্ধের দিন তিনি উমাইয়াহ ইবনু খালাফ ও তার পুত্রের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করলে বিলাল (রাদি.) বলিলেন, যদি উমাইয়াহ ইবনু খালাফ প্রাণে বেঁচে যেত তাহলে আমি সফল হতাম না। [৫]
[২৩০১] (আ.প্র. ৩৬৭৯, ই.ফা. ৩৬৮২)
[৫] বিলাল (রাদি.) উমাইয়া বিন খালাফের ক্রীতদাস ছিলেন। বিলাল (রাদি.) ইসলাম কবূল করলে এই ইসলামের ঘোর শত্রু তা মেনে নিতে পারলো না। ফলে তাকে অসহনীয় নির্যাতন স্বীকার করিতে হয় এমনকি দুপুর রোদের উত্তপ্ত বালুর উপর শুইয়ে বুকের উপর বিশাল আকৃতির পাথর চাপা দিয়ে তাকে ইসলাম ত্যাগ করিতে বাধ্য করিতে চেয়েছিল কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে ধৈর্য প্রদান করেছিলেন এবং তিনি ইসলাম ত্যাগ করেননি। অতঃপর আবু বাক্র (রাদি.) তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দিয়েছিলেন। বাদর যুদ্ধে উমাইয়াহ ও তার পুত্র নিহত হওয়ার কথা শুনে বিলাল (রাদি.) এভাবেই তার অভিব্যক্তি বর্ণনা করিয়াছেন।
৩৯৭২
আবদুল্লাহ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) সুরা নাজ্ম তিলাওয়াত করিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সাজ্দাহ করিলেন। এক বৃদ্ধ ব্যতীত নাবীজীর নিকট যারা উপস্থিত ছিলেন তারা সকলেই সাজ্দাহ করিলেন। সে বৃদ্ধ একমুষ্ঠি মাটি উঠিয়ে কপালে লাগিয়ে বলিল, আমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। আবদুল্লাহ (রাদি.) বলেন, কিছু দিন পর আমি তাকে কাফির অবস্থায় নিহত হইতে দেখেছি। [৬]
[১০৬৭] (আ.প্র. ৩৬৮০, ই.ফা. ৩৬৮৩ প্রথমাংশ)
[৬] বৃদ্ধটি ছিল ইসলামের ঘোরতর শত্রু উমাইয়া বিন খালাফ।
৩৯৭৩
হিশামের পিতা (উরওয়াহ) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (তার পিতা) যুবায়রের শরীরে তিনটি মারাত্মক জখমের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। এর একটি ছিল তার স্কন্ধে। উরওয়াহ বলেন, আমি আমার আঙ্গুলগুলো ঐ ক্ষতস্থানে ঢুকিয়ে দিতাম, বর্ণনাকারী উরওয়াহ বলেন, ঐ আঘাত তিনটির দুটি ছিল বদর যুদ্ধের এবং একটি ছিল ইয়ারমুক যুদ্ধের। উরওয়াহ বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র শহীদ হলেন তখন আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান আমাকে বলিলেন, হে উরওয়াহ, যুবায়রের তরবারি তুমি কি চিন? আমি বললাম হাঁ চিনি। আবদুল মালিক বলিলেন, এর কি কোন নিশানা আছে? আমি বললাম, এর ধারে এক জায়গায় ভাঙ্গা আছে যা বদর যুদ্ধের দিন ভেঙ্গে ছিল। তখন তিনি বলিলেন, হাঁ তুমি ঠিক বলেছ, (তারপর তিনি একটি কবিতাংশ আবৃত্তি করিলেন)
بِـهِـنَّ فُـلُوْلٌ مِـنْ قِـرَاعِ الْـكَـتَـائِـبِ
সে তরবারির ভাঙ্গন ছিল শত্রু সেনাদের আঘাত করার কারণে। এরপর আবদুল মালিক তরবারি খানা উরওয়ার নিকট ফিরিয়ে দিলেন। হিশাম বলেন, আমরা নিজেরা এর মূল্য স্থির করেছিলাম তিন হাজার দিরহাম। এরপর আমাদের এক ব্যক্তি সেটা নিল। আমার ইচ্ছে হয়েছিল যদি আমি তরবারিটি নিয়ে নিতাম।
[৩৭২১] (আঃপ্রঃ ৩৬৮১, ইঃফাঃ ৩৬৮৩ শেষাংশ)
৩৯৭৪
হিশামের পিতা (উরওয়াহ) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যুবায়র (রাদি.)-এর তরবারি রৌপ্যের কারুকার্য মণ্ডিত ছিল। হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর তরবারিটিও রৌপ্যের কারুকার্য মন্ডিত ছিল।
(আ.প্র. ৩৬৮২, ই.ফা. ৩৬৮৪)
৩৯৭৫
উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইয়ারমুকের দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সাহাবাগণ যুবায়র (রাদি.) কে বলেন যে, (মুশরিকদের প্রতি) আপনি কি আক্রমণ জোরদার করবেন না তাহলে আমরাও আপনার সঙ্গে আক্রমণ জোরদার করব। তখন তিনি বলেন, আমি যদি আক্রমণ জোরালো করি তখন তোমরা পিছে সরে পড়বে। তখন তারা বলিলেন, আমরা তা করব না। এরপর তিনি তাদের উপর আক্রমণ করিলেন। এমনকি শত্রুদের ব্যুহ ভেদ করে সামনে এগিয়ে গেলেন। তাদের সঙ্গে আর কেউই ছিল না। ফেরার সময় শত্রুর মুখে পড়লে তাহাঁর ঘোড়ার লাগাম ধরে ফেলে এবং তাহাঁর কাঁধের উপর দুটি আঘাত করে, যে আঘাত দুটির মাঝেই রয়েছে বদর দিনের আঘাতের চিহ্নটি। উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, বাল্যবস্থায় ঐ ক্ষত চিহ্নগুলোতে আমার সবগুলো আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে আমি খেলা করতাম। উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আরো বলেন, ঐদিন তার সঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.)-ও ছিলেন, তখন তার বয়স ছিল দশ বছর। যুবায়র (রাদি.), তাকে ঘোড়ার পিঠে উঠিয়ে নিলেন এবং এক ব্যক্তিকে তার দেখাশোনার দায়িত্ব দিলেন। [৩৭২১]
(আ.প্র. ৩৬৮৩, ই.ফা. ৩৬৮৫)
৩৯৭৬
আবু ত্বলহা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
বাদরের দিন আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ)-এর নির্দেশে চব্বিশজন কুরাইশ সর্দারের লাশ বদর প্রান্তরের একটি নোংরা আবর্জনাপূর্ণ কূপে নিক্ষেপ করা হল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কোন দলের বিরুদ্ধে জয় লাভ করলে সে স্থানের পার্শ্বে তিন দিন অবস্থান করিতেন। বদর প্রান্তরে অবস্থানের পর তৃতীয় দিনে তিনি তাহাঁর সাওয়ারী প্রস্তুত করার আদেশ দিলেন, সাওয়ারীর জিন শক্ত করে বাঁধা হল। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) পদব্রজে অগ্রসর হলে সাহাবীগণও তাহাঁর পেছনে পেছনে চললেন। তাঁরা বলেন, আমরা ভাবছিলাম, কোন প্রয়োজনে তিনি কোথাও যাচ্ছেন। অতঃপর তিনি ঐ কূপের কিনারে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং কূপে নিক্ষিপ্ত ঐ নিহত ব্যক্তিদের নাম ও তাদের পিতার নাম ধরে ডাকতে শুরু করিলেন, হে অমুকের পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা কি এখন অনুভব করিতে পারছ যে, আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের আনুগত্য তোমাদের জন্য পরম খুশীর বিষয় ছিল? আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন আমরা তো তা সত্য পেয়েছি, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তোমরাও তা সত্য পেয়েছ কি? বর্ণনাকারী বলেন, উমার (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! আপনি আত্মাহীন দেহগুলোর সঙ্গে কী কথা বলছেন? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, ঐ মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, আমি যা বলেছি তা তাদের চেয়ে তোমরা অধিক শুনতে পাচ্ছ না। ক্বাতাদাহ (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কথার মাধ্যমে তাদেরকে ধমক, লাঞ্ছনা, দুঃখ-কষ্ট, আফসোস এবং লজ্জা দেয়ার জন্য (সাময়িকভাবে) তাদের দেহে প্রাণসঞ্চার করেছিলেন।
[৩০৬৫; মুসলিম ৫১/১৭, হাদীস ২৮৭৫, আহমদ হাদীস ১২০২] (আ.প্র. ৩৬৮৪, ই.ফা. ৩৬৮৬)
৩৯৭৭
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি {اَلَّذِيْنَ بَدَّلُوْا نِعْمَةَ اللهِ كُفْرًا} অর্থাৎ যারা আল্লাহর অনুগ্রহের পরিবর্তে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সুরা ইবরাহীম-এর ২৮ আয়াতাংশ সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহর কসম, এরা হল কাফির কুরাইশ গোষ্ঠী। আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এরা হচ্ছে কুরাইশ গোষ্ঠী এবং মুহাম্মাদ সাঃআঃ হচ্ছেন আল্লাহর নিয়ামাত এবং {وَأَحَلُّوْا قَوْمَهُمْ دَارَ الْبَوَارِ} (নিজেদের জাতিকে তারা নামিয়ে আনে ধ্বংসের পর্যায়ে) সুরা ইবরাহীম-এর ২৮ আয়াতাংশের মাঝে বর্ণিত الْبَوَارِ এর অর্থ হচ্ছে النَّار জাহান্নাম। (অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন তারা তাদের জাতিকে জাহান্নামে পৌঁছিয়ে দিয়েছে।)
[৪৭০০] (আঃপ্রঃ ৩৬৮৫, ইঃফাঃ ৩৬৮৭)
৩৯৭৮
হিশামের পিতা (উরওয়াহ) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার পরিজনদের কান্নাকাটি করার ফলে কবরে শাস্তি দেয়া হয়। ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিত নাবী (সাঃআঃ)-এর কথাটি আয়েশাহ (রাদি.)-এর নিকট উল্লেখ করা হলে তিনি বলিলেন, রাসুল (সাঃআঃ) তো বলেছেন, মৃত ব্যক্তির অন্যায় ও পাপের কারণে তাকে কবরে শাস্তি দেয়া হয়। অথচ তখনও তার পরিবারের লোকেরা তার জন্য কান্নাকাটি করছে।
[১২৮৮] (আ.প্র. ৩৬৮৬, ই.ফা. ৩৬৮৮)
৩৯৭৯
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এ কথাটি ঐ কথাটিরই মত যা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ঐ কূপের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, যে কূপে বদর যুদ্ধে নিহত মুশরিকদের নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তিনি তাদেরকে যা বলার বলিলেন (এবং জানালেন) যে, আমি যা বলছি তারা তা সবই শুনতে পাচ্ছে। তিনি বলিলেন, এখন তারা ভালভাবে জানতে পারছে যে, আমি তাদেরকে যা বলছিলাম তা ছিল সঠিক। এরপর আয়েশাহ (রাদি.) {إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتٰى} অর্থাৎ তুমি তো মৃতকে শুনাতে পারবে না- (সুরা নামল ২৭/৮০) {وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَّنْ فِي الْقُبُوْرِ} অর্থাৎ এবং তুমি শুনাতে সমর্থ হইবে না তাদেরকে যারা কবরে রয়েছে- (সুরা ফাতির ৩৫/২২) আয়াতাংশ দুটো তিলাওয়াত করিলেন। উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এর মানে হচ্ছে জাহান্নামে যখন তারা তাদের আসন গ্রহণ করে নেবে।
[১৩৭১] (আঃপ্রঃ ৩৬৮৬, ইঃফাঃ ৩৬৮৮)
৩৯৮০
ইবন উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃ বাদরে অবস্থিত কূপের পাশে দাঁড়িয়ে বলিলেন, (হে মুশরিকগণ) তোমাদের রব তোমাদের কাছে যা ওয়াদা করেছিলেন তা তোমরা সত্য হিসেবে পেয়েছ কি? পরে তিনি বলিলেন, এ মুহূর্তে তাদেরকে আমি যা বলছি তারা তা সবই শুনতে পাচ্ছে। এ বিষয়টি আয়েশাহ (রাদি.) এর সামনে উল্লেখ করা হলে তিনি বলিলেন, নাবী সাঃআঃ যা বলেছেন তার অর্থ হল, তারা এখন জানতে পারছে যে, আমি তাদেরকে যা বলতাম তাই সঠিক ছিল। এরপর তিনি তিলাওয়াত করিলেন: {إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتٰى} তুমি তো মৃতকে শুনাতে পার না- (সুরা নামল ২৭/৮০) এভাবে পুরো আয়াতটি তিলাওয়াত করিলেন।
[১৩৭০-৩৭১] (আঃপ্রঃ ৩৬৮৭, ইঃফাঃ ৩৬৮৯)
৩৯৮১
ইবন উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃ বাদরে অবস্থিত কূপের পাশে দাঁড়িয়ে বলিলেন, (হে মুশরিকগণ) তোমাদের রব তোমাদের কাছে যা ওয়াদা করেছিলেন তা তোমরা সত্য হিসেবে পেয়েছ কি? পরে তিনি বলিলেন, এ মুহূর্তে তাদেরকে আমি যা বলছি তারা তা সবই শুনতে পাচ্ছে। এ বিষয়টি আয়েশাহ (রাদি.) এর সামনে উল্লেখ করা হলে তিনি বলিলেন, নাবী সাঃআঃ যা বলেছেন তার অর্থ হল, তারা এখন জানতে পারছে যে, আমি তাদেরকে যা বলতাম তাই সঠিক ছিল। এরপর তিনি তিলাওয়াত করিলেন: {إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتٰى} তুমি তো মৃতকে শুনাতে পার না- (সুরা নামল ২৭/৮০) এভাবে পুরো আয়াতটি তিলাওয়াত করিলেন।
[১৩৭০-৩৭১] (আঃপ্রঃ ৩৬৮৭, ইঃফাঃ ৩৬৮৯)
৬৪/৯. অধ্যায়ঃ বদর যুদ্ধে যোগদানকারীগণের মর্যাদা
৩৯৮২
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিতেন, হারিসাহ (রাদি.) একজন নও জওয়ান লোক ছিলেন। বদর যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করার পর তাহাঁর আম্মা নাবী (সাঃআঃ) নিকট এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! হারিসাহ আমার কত প্রিয় ছিল আপনি তা অবশ্যই জানেন। সে যদি জান্নাতী হয় তাহলে আমি সবর করব এবং আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা পোষণ করব। আর যদি ব্যাপার অন্য রকম হয় তাহলে আপনি তো দেখিতেই পাবেন, আমি যা করব। তখন তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমার কী হল, তুমি কি অজ্ঞান হয়ে গেলে? জান্নাত কি একটি? জান্নাত অনেকগুলি, সে তো জান্নাতুল ফিরদাউসে রয়েছে।
[২৮০৯] (আ.প্র. ৩৬৮৮, ই.ফা. ৩৬৯০)
৩৯৮৩
আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আবু মারসাদ, যুবায়র (রাদি.) ও আমাকে কোন স্থানে প্রেরণ করেছিলেন এবং আমরা সকলেই ছিলাম অশ্বারোহী। তিনি আমাদেরকে বলিলেন, তোমরা যাও। যেতে যেতে তোমরা রাওযা খাখ নামক জায়গায় পৌঁছে সেখানে একজন মুশরিকা নারী দেখিতে পাবে। তার কাছে মুশরিকদের প্রতি লিখিত হাতিব ইবনু আবু বালতার একটি চিঠি আছে। (সেটা নিয়ে আসবে।) আলী (রাদি.) বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নির্দেশিত জায়গায় গিয়ে তাকে ধরে ফেললাম। সে তখন তার একটি উটের উপর চড়ে পথ অতিক্রম করছিল। আমরা তাকে বললাম, পত্রখানা আমাদের নিকট দিয়ে দাও। সে বলিল, আমার নিকট কোন পত্র নেই। আমরা তখন তার উটটিকে বসিয়ে তার তল্লাশী করলাম। কিন্তু পত্রখানা বের করিতে পারলাম না। আমরা বললাম, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মিথ্যা বলেননি। তোমাকে চিঠি বের করিতেই হইবে। নতুবা আমরা তোমাকে উলঙ্গ করে ছাড়ব। যখন আমাদের শক্ত মনোভাব বুঝতে পারল তখন স্ত্রীলোকটি তার কোমরের পরিহিত বস্ত্রের গিঁটে কাপড়ের পুঁটুলির মধ্য থেকে চিঠিখানা বের করে দিল। আমরা তা নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। উমার (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! সে তো আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল এবং মুমিনদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দিই। তখন নাবী [হাতিব ইবনু আবু বালতা (রাদি.) কে ডেকে] বলিলেন, তোমাকে এ কাজ করিতে কিসে বাধ্য করিল? হাতিব (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের প্রতি আমি অবিশ্বাসী নই। বরং আমার মূল উদ্দেশ্য হল শত্রু দলের প্রতি কিছু অনুগ্রহ করা যাতে আল্লাহ এ উসিলায় আমার মাল এবং পরিবার ও পরিজনকে রক্ষা করেন। আর আপনার সাহাবীদের প্রত্যেকেরই কোন না কোন আত্মীয় সেখানে রয়েছে, যার দ্বারা আল্লাহ তার ধন-মাল ও পরিজনকে রক্ষা করছেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, সে ঠিক কথাই বলেছে। সুতরাং তোমরা তার সম্পর্কে ভাল ব্যতীত আর কিছু বলো না। তখন উমার (রাদি.) বলিলেন, সে তো আল্লাহ, তাহাঁর রাসুল ও মুমিনদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সুতরাং আপনি আমাকে ছেড়ে দিন, আমি তাহাঁর গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, সে কি বাদরী সাহাবী নয়? অবশ্যই বদর যুদ্ধে যোগদানকারীদেরকে বুঝে শুনেই আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমাদের যা ইচ্ছে কর” তোমাদের জন্য জান্নাত অবধারিত অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এতে উমার (রাদি.)-এর দুনয়ন অশ্রু সিক্ত হয়ে উঠল। তিনি বলিলেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই সবচেয়ে অধিক জ্ঞাত। [৭]
[৩০০৭] (আ.প্র. ৩৬৮৯, ই.ফা. ৩৬৯১)
[৭] হাতিব (রাদি.) ছিলেন বাদরী সাহাবী। তথাপি তিনি যেটি করেছিলেন তা গুপ্তচরবৃত্তি হিসেবে করেননি বরং তিনি মনে করছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) অকস্মাৎ মাক্কাহ আক্রমণ করলে তার পরিবার পরিজনকে তারা হত্যা করিতে পারে এবং তার সহায় সম্পদের ক্ষতি করিতে পারে। এমন অনেকেরই পরিবার সেখানে ছিল যাদের এরূপ ক্ষতি হইতে পারে যাদেরকে আশ্রয় দেয়ার মতো কোন একটি পরিবারও মাক্কাহতে ছিল না। হাদীসটি হইতে যা প্রমানিত হয়ঃ
(১) আল্লাহর নাবীর মুজিযাহ,
(২) তাহাঁর কথার উপর সাহাবীদের অগাধ বিশ্বাস,
(৩) প্রতিপক্ষকে জিজ্ঞেস না করে কোন বিষয় মন্তব্য না করা,
(৪) কাউকে মুরতাদ মনে করলেও দায়িত্বশীলের অনুমতি ছাড়া তাকে হত্যা না করা,
(৫) বাদরী সাহাবীর ফাযীলাত,
(৬) অন্যায়ের বিরুদ্ধে উমার (রাদি.)-এর কঠোরতা,
(৭) আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-এর ফায়সালাই চূড়ান্ত,
(৮) নিজের ভুল বুঝার পড়ে অনুতপ্ত হওয়া।
৬৪/১০. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই
৩৯৮৪
আবু উসায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন নাবী (সাঃআঃ) আমাদেরকে বলেছিলেন, দুশমনরা তোমাদের নিকটবর্তী হলে তোমরা তীর চালনা করিবে এবং তীর ব্যবহারে সংযম অবলম্বন করিবে।
[২৯০০] (আ.প্র. ৩৬৯০, ই.ফা. ৩৬৯২)
৩৯৮৫
আবু উসায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তারা তোমাদের নিকটবর্তী হলে তাদের প্রতি তীর চালনা করিবে এবং তীর ব্যবহারে সংযম অবলম্বন করিবে।
[২৯০০] (আ.প্র. ৩৬৯০, ই.ফা. ৩৬৯৩)
৩৯৮৬
বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উহূদ যুদ্ধের দিন নাবী (সাঃআঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রকে তীরন্দাজ বাহিনীর নেতা নিযুক্ত করেছিলেন। তারা (মুশরিকরা) আমাদের সত্তর জনকে শহীদ করে দেয়। বদর যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও তার সাহাবীগণ মুশরিকদের একশ চল্লিশ জনকে নিহত ও গ্রেফতার করে ফেলেছিলেন। যাদের সত্তর জন বন্দী হয়েছিল এবং সত্তর জন নিহত হয়েছিল। আবু সুফ্ইয়ান (রাদি.) [৮] বলিলেন, আজকের দিন বাদরের বদলা। যুদ্ধ কূপের বালতির মত যাতে হাত বদল হয়।
[৩০৩৯] (আ.প্র. ৩৬৯১, ই.ফা. ৩৬৯৪)
[৮] আবু সুফ্ইয়ান (রাদি.) উহূদ যুদ্ধের সময় কাফিরদের পক্ষাবলম্বন করে যুদ্ধ করেছিলেন কারণ তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন মাক্কাহ বিজয়ের সময়।
৩৯৮৭
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি স্বপ্নে [৯] যে কল্যাণ দেখেছিলাম সে তো ঐ কল্যাণ যা পরবর্তী সময়ে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দান করিয়াছেন। আর উত্তম প্রতিদান বিষয়ে যা দেখেছিলাম তা তো আল্লাহ আমাদেরকে দান করিয়াছেন বদর যুদ্ধের পর।
[৩৬২২] (আ.প্র. ৩৬৯২, ই.ফা. ৩৬৯৫)
[৯] একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) স্বপ্নে কতক গরু কুরবানী করিতে দেখেন এবং ইঙ্গিত লাভ করেন কতকগুলো কল্যাণকর বিষয়ের। তিনি গরু কুরবানী করাকে উহূদ যুদ্ধে মুসলিমদের শাহাদাত লাভ হিসেবে ব্যাখ্যা করিলেন এবং দ্বিতীয় বাদরের পর মুসলিমগণ যে ঈমানী শক্তি লাভ করেছিলেন সেটিকে তিনি স্বপ্নে দেখা কল্যাণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।
৩৯৮৮
আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, বাদরের দিন সৈনিক সারিতে দাঁড়িয়ে আমি এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলাম, আমার ডানে ও বামে কম বয়সের দুজন যুবক তাদের মত অল্প বয়স্ক দুজন যুবকের পাশে আমি নিজেকে নিরাপদ বোধ করছিলাম না। এমতাবস্থায় তাদের একজন তার সঙ্গী থেকে লুকিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করিল চাচাজী, আবু জাহল কোনটি আমাকে দেখিয়ে দিন? আমি বললাম, ভাতিজা, তা দিয়ে তুমি কী করিবে? সে বলিল, আমি আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকার করেছি, তাকে দেখলে তাকে হত্যা করব অন্যথায় নিজেই শহীদ হয়ে যাব। এরপর দ্বিতীয় যুবকটিও তাহাঁর সঙ্গী থেকে লুকিয়ে আমাকে এভাবেই জিজ্ঞেস করিল। আমি এত সন্তুষ্ট হলাম যে, দুজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মাঝে আমি ততটুকু সন্তুষ্ট হতাম না। এরঃপর আমি তাদের দুজনকে ইশারায় আবু জাহলকে দেখিয়ে দিলাম। তখন তারা বাজ পাখির তীব্রতায় তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাকে আঘাত করিল। এরা হল আফরার দুপুত্র।
[৩১৪১] (আ.প্র. ৩৬৯৩, ই.ফা. ৩৬৯৬)
৩৯৮৯
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ইবনু উমার ইবনু খাত্তাবের নাতি আসিম ইবনু সাবিত আনসারীর পরিচালনায় দশজন সাহাবীর একটি দল গোয়েন্দা কাজের জন্য পাঠালেন। তাঁরা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থান হান্দায় পৌঁছলে হুযাইল গোত্রের একটি শাখা বানু লিহয়ানকে তাদের আগমনের কারণ সম্পর্কে জানানো হয়। (এ সংবাদ শুনে) তারা প্রায় একশ জন তীরন্দাজ প্রস্তুত হয়ে মুসলিমদের বিপক্ষে যুদ্ধ করার জন্য রওয়ানা হয়ে তাদের পদচিহ্ন ধরে পথ চলতে আরম্ভ করে। যেতে যেতে তারা এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যেখানে অবস্থান করে সাহাবীগণ খেজুর খেয়েছিলেন। তা দেখে বানু লিহয়ানের লোকেরা ইয়াসরিবের খেজুর বলে তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে তাদেরকে খুঁজতে লাগল। আসিম ও তাহাঁর সঙ্গীগণ তাদের আগমন সম্পর্কে বুঝতে পেরে একটি স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেন। লিহয়ান কাওমের লোকেরা তাদেরকে ঘিরে ফেলে। তারপর তারা মুসলিমদেরকে নিচে নেমে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলিল, তোমাদেরকে ওয়াদা দিচ্ছি, আমরা তোমাদের কাউকে হত্যা করব না। তখন আসিম ইবনু সাবিত (রাদি.) বলিলেন, হে আমার সাথী ভ্রাতৃবৃন্দ! কাফিরের নিরাপত্তায় আশ্বস্ত হয়ে আমি কখনো নিচে নামবো না। তারপর তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! আমাদের খবর আপনার নাবীকে জানিয়ে দিন। এরপর তারা মুসলিমদের প্রতি তীর ছুঁড়তে শুরু করিল এবং আসিমকে (ছয়জন সহ) শহীদ করে ফেলল। বাকী তিনজন, খুবায়ব, যায়দ ইবনু দাসিনা এবং অপর একজন তাদের ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে তাদের নিকট নেমে আসলেন। শত্রুগণ তাঁদেরকে পরাস্ত করে নিজেদের ধনুকের রশি খুলে তা দিয়ে তাদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তৃতীয়জন বলিলেন, এটাই প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের সঙ্গে যাব না, আমার জন্য শহীদ সঙ্গীদের আদর্শই অনুসরণীয়। অর্থাৎ আমিও শহীদ হয়ে যাব। তারা তাকে বহু টানা হেচড়া করিল। কিন্তু তিনি তাদের সঙ্গে যেতে অস্বীকার করিলেন। (তারা তাঁকে শহীদ করে দিল) এরপর খুবায়ব এবং যায়িদ ইবনু দাসিনাকে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে বিক্রি করে দিল। এটা ছিল বদর যুদ্ধের পরের ঘটনা। বদর যুদ্ধে খুবায়ব যেহেতু হারিস ইবনু আমিরকে হত্যা করেছিলেন। তাই (বদলা নেয়ার জন্য) হারিস ইবনু আমির ইবনু নাওফিলের পুত্রগণ তাঁকে ক্রয় করে নিল। খুবায়ব তাদের নিকট বন্দী অবস্থায় কাটাতে লাগলেন। এরপর তারা সবাই তাকে হত্যা করার দৃঢ় সংকল্প করিল। তিনি হারিসের কোন এক কন্যার নিকট থেকে ক্ষৌরকর্মের জন্য একটি ক্ষুর চেয়ে নিলেন। হারিসের কন্যার অসতর্ক অবস্থায় তার একটি ছোট বাচ্চা খুবাইবের কাছে গিয়ে পৌঁছল। হারিসের কন্যা দেখিতে পেল খুবায়র তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে রানের উপর বসিয়ে ক্ষুরখানা হাতে ধরে আছেন। হারিসের কন্যা বর্ণনা করেছে, আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম, খুবায়ব তা বুঝতে পারলেন, তিনি বলিলেন, আমি শিশুটিকে মেরে ফেলব বলে তুমি কি ভয় পেয়েছ? আমি কখনো এমন কাজ করব না। সে আরো বলেছে, আল্লাহর কসম! আমি খুবায়বের মত উত্তম বন্দী আর কখনো দেখিনি। আল্লাহর কসম একদিন আমি তাকে আঙ্গুরের গুচ্ছ হাতে নিয়ে আঙ্গুর খেতে দেখেছি। অথচ সে লোহার শিকলে বাঁধা ছিল এবং সে সময় মক্কায় কোন ফলই ছিল না। হারিসের কন্যা বলত, ঐ আঙ্গুরগুলো আল্লাহ তাআলা খুবায়বকে রিয্কস্বরূপ দান করেছিলেন। অবশেষে একদিন তারা খুবায়বকে হত্যা করার জন্য যখন হারামের সীমানার বাইরে নিয়ে গেল তখন খুবায়ব (রাদি.) তাদেরকে বলিলেন, আমাকে দু রাকআত সালাত আদায় করার সুযোগ দাও, তারা সুযোগ দিলে তিনি দু রাকআত সালাত আদায় করে বলিলেন, আল্লাহর কসম। আমি মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছি, তোমরা এ কথা না ভাবলে আমি সালাত আরো দীর্ঘায়িত করতাম। এরপর তিনি এ বলে দুআ করিলেন, হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে গুণে রাখ, তাদেরকে বিক্ষিপ্তভাবে হত্যা কর এবং তাদের একজনকেও বাকী রেখ না। এরপর তিনি আবৃত্তি করলেনঃ
“আমি যখন মুসলিম হয়ে মৃত্যুর সৌভাগ্য লাভ করেছি, তাই আমার কোনই ভয় নেই।
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে কোন অবস্থাতেই আমার মৃত্যু হোক।
তা যেহেতু একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই,
তাই তিনি ইচ্ছে করলে আমার প্রতিটি কর্তিত অঙ্গে বারাকাত প্রদান করিতে পারেন।”
এরপর হারিসের পুত্র আবু সারুআ উকবাহ তাহাঁর দিকে দাঁড়াল এবং তাঁকে শহীদ করে দিল। এভাবেই খুবায়ব (রাদি.) সে সব মুসলিমের জন্য দু রাকআত সলাতের সুন্নত চালু করে গেলেন যারা ধৈর্যের সঙ্গে শাহাদাত বরণ করেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঐদিনই সাহাবীদেরকে জানিয়েছিলেন যে দিন তাঁরা শত্রু বেষ্টিত হয়ে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। কুরাইশদের নিকট আসিম (রাদি.)-এর নিহত হওয়ার খবর পৌছলে তারা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আসিমের শরীরের কোন অঙ্গ কেটে আনার জন্য কতক কুরাইশ কাফিরকে প্রেরণ করিল। যেহেতু (বাদরের দিন) আসিম ইবনু সাবিত তাদের একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। এদিকে আল্লাহ আসিমের লাশকে হিফাযাত করার জন্য মেঘের মত এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন। মৌমাছিগুলো আসিম (রাদি.)-এর লাশকে শত্রু সেনাদের হাত থেকে রক্ষা করিল। ফলে তারা তাহাঁর দেহের কোন অঙ্গ কেটে নিতে পারল না। কাব ইবনু মালিক (রাদি.) বলেন, মুরারাহ ইবনু রাবী আল উমারী এবং হিলাল ইবনু উমাইয়াহ আল ওয়াকিফী [১০] সম্পর্কে লোকেরা বলেছেন যে, তাঁরা দুজনই আল্লাহর নেক বান্দা ছিলেন এবং দুজনই বদর যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন।
[৩০৪৫] (আ.প্র. ৩৬৯৪, ই.ফা. ৩৬৯৭)
[১০] এ দুজন বাদরী সাহাবী ছিলেন। তহাপিও তারা বিনা ওযরে তাবূক যুদ্ধে অংশ নেয়া হইতে বিরত ছিলেন। ফলে আল্লাহর নির্দেশে তাদেরকে কিছুদিনের জন্য বয়কট করা হয়। অতঃপর তারা খালিসভাবে আল্লাহর নিকট তওবা করলে আল্লাহ তাআলা তা কবূল করেন এবং তারা পুনরায় মুসলিমদের সাথে স্বাভাবিক জীবন শুরু করেন।
৩৯৯০
নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
সাঈদ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল (রাদি.) ছিলেন বদর যুদ্ধে যোগদানকারী একজন সাহাবী। তিনি জুমুআহর দিন অসুস্থ হয়ে পড়লে ইবনু উমারের নিকট জুমুআহর দিন এ খবর পৌঁছলে তিনি সাওয়ারীর পিঠে আরোহণ করে তাঁকে দেখিতে গেলেন। তখন বেলা হয়ে গেছে এবং জুমুআহর সলাতের সময়ও ঘনিয়ে আসছে দেখে তিনি জুমুআহর সালাত ছেড়ে দিলেন।
(আ.প্র. ৩৬৯৫, ই.ফা. ৩৬৯৮)
৩৯৯১
উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবাহ হইতে বর্ণিতঃ
তার পিতা উমার ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আরকাম আয যুহরী সুবাইআহ বিনত হারিস আসলামিয়্যা (রাদি.) এর কাছে গিয়ে তার ঘটনা ও (গর্ভবতী মহিলার ইদ্দত সম্পর্কে) তার প্রশ্নের উত্তরে রাসুল (সাঃআঃ) তাকে যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে পত্র মারফত জিজ্ঞেস করে জানতে আদেশ করিলেন। এরপর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আরকাম (রাদি.) আবদুল্লাহ ইবনু উতবাহকে লিখে জানালেন যে, সুবাইআহ বিনতুল হাসির তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি বানু আমির ইবনু লুয়াই গোত্রের সাদ ইবনু খাওলার স্ত্রী ছিলেন, সাদ (রাদি.) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিলেন। তিনি বিদায় হাজ্জের বছর মারা যান। তখন তার স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। তার ইন্তিকালের কিছুদিন পরেই তিনি সন্তান প্রসব করিলেন। এরপর নিফাস থেকে পবিত্র হয়েই তিনি বিবাহের পয়গাম দাতাদের উদ্দেশ্যে সাজসজ্জা আরম্ভ করিলেন। এ সময় আবদুদ্দার গোত্রের আবুস সানাবিল ইবনু বাকাক নামক এক ব্যক্তি তাকে গিয়ে বলিলেন, কী ব্যাপার, আমি তোমাকে দেখছি যে, তুমি বিবাহের আশায় পয়গাম দাতাদের উদ্দেশ্যে সাজসজ্জা আরম্ভ করে দিয়েছ? আল্লাহর কসম! চার মাস দশদিন অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে তুমি বিবাহ করিতে পারবে না। সুবাইআহ (রাদি.) বলেন, (আবুস সানাবিল আমাকে) এ কথা বলার পর আমি ঠিকঠাক মত কাপড় চোপড় পরিধান করে বিকেল বেলা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট গেলাম এবং এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বলিলেন, যখন আমি সন্তান প্রসব করেছি তখন থেকেই আমি হালাল হয়ে গেছি। এরপর তিনি আমাকে বিয়ে করার নির্দেশ দিলেন যদি আমার ইচ্ছে হয়। ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আসবাগ…. ইউনুসের সূত্রে লায়সের মতই হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, ইউনুস আমার নিকট ইবনু শিহাব থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, বানু আমির ইবনু লুয়াই গোত্রের আযাদকৃত গোলাম মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু সাওবান আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, বদর যুদ্ধে যোগদানকারী মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াস ইবনু বুকায়র-এর পিতা তাকে জানিছেন। [৫৩১৯; মুসলিম ১৮/৮, হাদীস ১৪৮৪] (আ.প্র. ৩৬৯৫, ই.ফা. ৩৬৯৮)
৬৪/১১. অধ্যায়ঃ বদর যুদ্ধে মালায়িকাহর যোগদান
৩৯৯২
মুআয বিন রিফাআ ইবনু রাফি যুরাকী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
তার পিতা বদর যুদ্ধে যোগদানকারীদের একজন। তিনি বলেন, একদা জিবরীল (আঃ) নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিলেন, আপনারা বদর যুদ্ধে যোগদানকারী মুসলিমদরকে কিরুপ গণ্য করেন? তিনি বলিলেন, তারা সর্বোত্তম মুসলিম অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) এরূপ কোন শব্দ তিনি বলেছিলেন। জিবরীল (আঃ) বলিলেন, মালায়িকাদের মধ্যে বদর যুদ্ধে যোগদানকারীগনও তেমনি মর্যাদার অধিকারী।
[৩৯৯৪] (আ.প্র. ৩৬৯৬, ই.ফা. ৩৬৯৯)
৩৯৯৩
মুআয ইবনু রিফাআ ইবনু রাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
রিফাআ (রাদি.) ছিলেন বদর যুদ্ধে যোগদানকারী একজন সাহাবী আর রাফি (রাদি.) ছিলেন বায়আতে আকাবায় উপস্থিত একজন সাহাবী। রাফি (রাদি.) তার পুত্র (রিফাআ)-কে বলিতেন, বায়আতে আকাবায় শরীক থাকার চেয়ে বদর যুদ্ধে হাজির থাকা আমার কাছে অধিক আনন্দের বিষয় বলে মনে হয় না। কেননা জিবরীল (আঃ) এ বিষয়ে নাবী (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন।
(আ.প্র. ৩৬৯৭, ই.ফা. ৩৭০০)
৩৯৯৪
দুঃখিত! আরবী অংশ এখনো সংযুক্ত করা হয়নি।
মুআয ইবনু রিফাআ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
একজন মালাইকা নাবী (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। (ভিন্ন সনদে) ইয়াহইয়া হইতে বর্ণিত যে, ইয়াযীদ ইবনুল হাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাকে জানিয়েছেন যে, যেদিন মুআয (রাদি.) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছিলেন সেদিন আমি তার কাছেই ছিলাম। ইয়াযীদ বলেছেন, মুআয (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন যে, প্রশ্নকারী ফেরেশ্তা হলেন জিবরীল (আঃ)।
[৩৯৯২] (আ.প্র. ৩৬৯৮, ই.ফা. ৩৭০১)
৩৯৯৫
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
বাদরের দিন নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, এই তো জিবরীল (আঃ) সমর সাজে সজ্জিত হয়ে অশ্বের মস্তক হস্তে ধারণ করে আছে।
[৪০৪১] (আ.প্র. ৩৬৯৯, ই.ফা. ৩৭০২)
৬৪/১২. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই
৩৯৯৬
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আবু যায়দ (রাদি.) মারা যান। তিনি কোন সন্তানাদি ছেড়ে যাননি। তিনি ছিলেন বাদরী সাহাবী।
[৩৮১০] (আ.প্র. হাদীস নেই, ই.ফা. ৩৭০৩)
৩৯৯৭
ইবনু খব্বাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আবু সাঈদ ইবনু মালিক খুদরী (রাদি.) সফর থেকে গৃহে প্রত্যাবর্তনের পর তার পরিবারের লোকেরা তাঁকে কুরবানীর গোশ্ত থেকে কিছু গোশ্ত খেতে দিলেন। তিনি বলিলেন, আমি জিজ্ঞেস না করে এ গোশ্ত খেতে পারি না। তারপর তিনি তার মায়ের গর্ভজাত ভ্রাতা কাতাদাহ ইবনু নুমানের কাছে গিয়ে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি ছিলেন একজন বাদরী সাহাবী। তখন তিনি তাকে বলিলেন, তিন দিন পর কুরবানীর গোশ্ত খাওয়ার ক্ষেত্রে তোমাদের প্রতি যে নিষেধাজ্ঞা ছিল পরে তা পুরোপুরিভাবে রহিত করে দেয়া হয়েছে।
[৫৫৬৮] (আ.প্র. ৩৭০০, ই.ফা. ৩৭০৪)
৩৯৯৮
উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যুবায়র (রাদি.) বলেছেন, বাদরের দিন আমি উবাইদাহ ইবনু সাঈদ ইবনু আস (রাদি.) কে এমনভাবে বস্ত্রাবৃত দেখলাম যে, তার দুচোখ ব্যতীত আর কোন কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তাকে আবু যাতুল কারিশ বলে ডাকা হত। সে বলিল, আমি আবু যাতুল কারিশ। (তা শুনে) বর্শা দিয়ে আমি তার উপর হামলা চালালাম এবং তার চোখ ফুঁড়ে দিলাম। সে তক্ষুণি মারা গেল। হিশাম বলেন, আমাকে জানানো হয়েছে যে, যুবায়র (রাদি.) বলেছেন, উবাইদাহ ইবনু সাঈদ ইবনু আসের লাশের উপর পা রেখে বেশ শক্তি খাটিয়ে আমি বর্শাটি টেনে বের করলাম। এতে বর্শার দু প্রান্তভাগ বাঁকা হয়ে যায়। উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যুবায়র নিকট বর্শাটি চাইলে তিনি তা তাঁকে দিয়ে দেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর মৃত্যুর পর তিনি তা নিয়ে যান এবং পরে আবু বকর (রাদি.) তা চাইলে তিনি তাকে বর্শাটি দিয়ে দেন। আবু বাক্রের মৃত্যুর পর উমার (রাদি.) তা চাইলেন। তিনি তাকে বর্শাটি দিয়ে দিলেন। কিন্তু উমারের মৃত্যুর পর যুবায়র (রাদি.) পুনরায় বর্শাটি নিয়ে যান। এরপর উসমান (রাদি.) তার নিকট বর্শাখানা চাইলে তিনি উসমানকে তা দিয়ে দেন। তবে উসমানের শাহাদাতের পর তা আলীর লোকজনের হাতে যাওয়ার পর আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) তা চেয়ে নিয়ে যান। অতঃপর শহীদ হওয়া পর্যন্ত বর্শাটি তাহাঁর নিকটই বিদ্যমান ছিল।
(আ.প্র. ৩৭০১, ই.ফা. ৩৭০৫)
৩৯৯৯
আবু ইদরীস আয়িযুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদি.)- যিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন- বর্ণনা করেন, রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আমার হাতে বায়আত গ্রহণ কর।
[১৮] (আ.প্র. ৩৭০২, ই.ফা. ৩৭০৬)
৪০০০
নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলূল্লাহ সাঃআঃ-এর সঙ্গে বদর যুদ্ধে যোগদানকারী সহাবী আবু হুযাইফাহ (রাদি.) এক আনসারী মহিলার আযাদকৃত গোলাম সালিমকে পালকপুত্র গ্রহণ করেন, যেমন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যায়দকে পালকপুত্র গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি তাকে তার ভ্রাতুস্পুত্রী হিন্দা বিন্তে ওয়ালীদ ইবনু উতবার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন। জাহিলীয়্যাতের যুগে কেউ পালকপুত্র গ্রহণ করলে লোকেরা তাকে পালনকারীর প্রতিই সম্বোধন করত এবং সে তার ছেড়ে যাওয়া সম্পদের উত্তরাধিকারী হত। অবশেষে আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করিলেন, {ادْعُوْهُمْ لِآبَآئِهِمْ} অর্থাৎ তোমরা তাদেরকে ডাক তাদের পিতার পরিচয়ে। এরপর (আবু হুযাইফাহর স্ত্রী সাহলাহ নাবী সাঃআঃ-এর নিকট এসে হাদীসে বর্ণিত ঘটনা বর্ণনা করিলেন।
[৫০৮৮] (আঃপ্রঃ ৩৭০৩, ইঃফাঃ ৩৭০৭)
৪০০১
রুবায়ই বিনতু মুআওয়িয (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমার বাসর রাতের পরদিন সকালে নাবী (সাঃআঃ) আমার নিকট এলেন এবং তুমি (খালিদ ইবনু যাকওয়ান) যেমন আমার কাছে বসে আছ ঠিক সেভাবে আমার পাশে আমার বিছানায় এসে বসলেন। তখন কয়েকজন ছোট বালিকা দুফ্ [১১] বাজিয়ে বাদরে নিহত শহীদ পিতাদের প্রশংসা গীতি আবৃত্তি করছিল। শেষে একটি বালিকা বলে উঠল, আমাদের মাঝে এমন একজন নাবী আছেন, যিনি জানেন, আগামীকাল কী হইবে। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এমন কথা বলবে না, বরং আগে যা বলেছিলে তাই বল।
[৫১৪৭] (আ.প্র. ৩৭০৪, ইফা. ৩৭০৮)
[১১] একমুখ খোলা অপর প্রান্তে চামড়া লাগানো তবলাকে দুফ্ বলা হয়, বিবাহ ও ঈদের দিন আনন্দ প্রকাশের জন্য তা বাজিয়ে নাবালিকা মেয়েদের আপত্তিকর কথা বিবর্জিত গীত গাওয়া নিঃসন্দেহে বৈধ।
৪০০২
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বাদরে যোগদানকারী সাহাবী আবু ত্বল্হা (রাদি.) আমাকে জানিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ঘরে কুকুর কিংবা ছবি [১২] থাকে সে ঘরে (রাহমাতের) মালাক প্রবেশ করেন না। ইবনু আব্বাসের মতে ছবির অর্থ প্রাণীর ছবি।
[৩২২৫] (আ.প্র. ৩৭০৫, ই.ফা. ৩৭০৯)
[১২] অত্র হাদীস দ্বারা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, যে বাড়ীতে কুকুর পালা হয় কিংবা যে ঘরে কোন প্রাণীর ছবি থাকে সেখানে রহমাতের মালাক প্রবেশ করে না। শুধুমাত্র শিকারী কুকুর পোষা জায়িয তবে তাকে বাড়ির বাইরে রাখার ব্যবস্থা করিতে হইবে যেন সে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ না করে। ঘরের মধ্যে বিভিন্ন প্রাণীর ছবি তা মূর্তি বা পুতুল হোক কিংবা ঘরের বাথরুমের দেয়ালে অংকণ করা হোক তা রাখা হচ্ছে অবৈধ কাজ। ছবি বা মূর্তির ব্যবসা সন্দেহাতীতভাবে হারাম, তা মসুলিমদের কাছে বিক্রির জন্য হোক আর কাফিরদের নিকট বিক্রির জন্য হোক। যারা কাফিরদের অনুসরণ করে নিজেদেরকে আধুনিক হিসেবে জাহির করার জন্য এহেন জঘন্য ও নোংরা কাজ করে তারা মূলত আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল এবং তাদের নির্দেশের প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে।
৪০০৩
আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বদর দিনের গানীমাতের মাল থেকে আমার ভাগে আমি একটি উট পেয়েছিলাম। ফায় থেকে প্রাপ্ত এক পঞ্চমাংশ থেকেও সেদিন নাবী (সাঃআঃ) আমাকে একটি উট দান করেন। আমি যখন নাবী (সাঃআঃ)-এর কন্যা ফাতিমার সঙ্গে বাসর রাত যাপন করার ইচ্ছে করলাম এবং বানু কায়নুকা গোত্রের একজন ইয়াহূদী স্বর্ণকারকে ঠিক করলাম যেন সে আমার সঙ্গে যায়। আমরা ইয্খির ঘাস সংগ্রহ করে নিয়ে আসব। অতঃপর সেই ঘাস স্বর্ণকারদের নিকট বিক্রি করে তা আমি আমার বিয়ের ওয়ালিমায় খরচ করার ইচ্ছে করেছিলাম। আমি আমার উট দুটোর জন্য গদি, বস্তা এবং দড়ির ব্যবস্থা করছিলাম আর উট দুটো এক আনসারীর ঘরের পাশে বসানো ছিল। আমার যা কিছু জোগাড় করার তা জোগাড় করে এনে দেখলাম উট দুটির চূড়া কেটে দেয়া হয়েছে এবং সে দুটির বুক ফেড়ে কলিজা বের করে নেয়া হয়েছে। এ দৃশ্য দেখে আমি আমার অশ্রু সংবরণ করিতে পারলাম না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ কাজ কে করেছে? তারা বলিলেন, আবদুল মুত্তালিবের পুত্র হামযা এ কাজ করিয়াছেন। এখন তিনি এ ঘরে আনসারদের কিছু মদ্যপায়ীদের সঙ্গে মদপান করছেন। সেখানে আছে একদল গায়িকা ও কতিপয় সঙ্গী সাথী। গায়িকা ও তার সঙ্গীগণ গানের মধ্যে বলেছিল, “হে হামযা! মোটা উট দুটির প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়।
একথা শুনে হামযায় দৌড়িয়ে গিয়ে তলোয়ার হাতে নিল এবং উট দুটির চূড়া দুটো কেটে নিল আর তাদের পেট ফেড়ে কলিজা বের করে নিয়ে আসল। আলী (রাদি.) বলেন, তখন আমি পথ চলতে চলতে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট চলে গেলাম। তখন তাহাঁর নিকট যায়দ ইবনু হারিসাহ (রাদি.) উপস্থিত ছিলেন। আমি যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছি নাবী (সাঃআঃ) তা বুঝে ফেলেছেন। তিনি বলিলেন, তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আজকের মত কষ্টদায়ক ঘটনা আমি কখনো দেখিনি। হামযা আমার উট দুটোর উপর খুব যুলুম করিয়াছেন, তিনি উট দুটোর চূড়া কেটে ফেলেছেন এবং বুক ফেড়ে দিয়েছেন। এখন তিনি একটি ঘরে একদল মদ পানকারীর সঙ্গে আছেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর চাদরখানা চেয়ে নিলেন এবং তা গায়ে দিয়ে হেঁটে চললেন। (আলী বলেন) এরপর আমি এবং যায়দ ইবনু হারিসাহ (রাদি.) তাহাঁর পেছনে চললাম। (হাঁটতে হাঁটতে) তিনি যে ঘরে হামযা অবস্থান করছিলেন সে ঘরের কাছে পৌছে তার নিকট অনুমতি চাইলেন। তাঁকে অনুমতি দেয়া হলে রাসুল (সাঃআঃ) হামযাকে তার কর্মের জন্য ভর্ৎসনা করিতে শুরু করিলেন। হামযাহ তখন নেশাগ্রস্ত। [১৩] চোখ দুটো তার লাল। তিনি নাবী (সাঃআঃ) এর দিকে তাকালেন এবং দৃষ্টি উপর উঠিয়ে তারপর তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর হাঁটুর দিকে তাকালেন। এরপর দৃষ্টি আরো একটু উপর দিকে উঠিয়ে তিনি তাহাঁর চেহারার প্রতি তাকালেন। এরপর হামযা বলিলেন, তোমরা তো আমার পিতার দাস। (শুনে) নাবী (সাঃআঃ) বুঝলেন যে, তিনি এখন নেশাগ্রস্ত। তাই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) পিছনের দিকে হটে বেরিয়ে পড়লেন, আমরাও তাহাঁর সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম।
[২০৮৯] (আ.প্র. ৩৭০৬, ই.ফা. ৩৭১১)
[১৩] মদ হারাম হবার পূর্বে এ ঘটনা ঘটেছিল। মদ হারাম হয়ে যাবার পর কোন সাহাবী কখনো মদ পান করেননি বরং পরিপূর্ণভাবে বর্জন করিয়াছেন।
৪০০৪
ইবনু মাকিল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
(তিনি বলেছেন) আলী (রাদি.) সাহল ইবনু হুনায়ফের (জানাযার সলাতে) তাকবীর উচ্চারণ করিলেন এবং বলিলেন, তিনি (সাহল ইবনু হুনায়ফ) বদর যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন।
(আ.প্র. ৩৭০৭, ই.ফা. ৩৭১২)
৪০০৫
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনু খাত্তাবের কন্যা হাফসাহর স্বামী খুনায়স ইবনু হুযাইফাহ সাহমী (রাদি.) যিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সাহাবী ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, মদিনায় ইন্তিকাল করলে হাফসাহ (রাদি.) বিধবা হয়ে পড়লেন। উমার (রাদি.) বলেন, তখন আমি উসমান ইবনু আফফানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাহাঁর নিকট হাফসাহর কথা উল্লেখ করে তাঁকে বললাম, আপনি ইচ্ছা করলে আমি আপনার সঙ্গে উমারের মেয়ে হাফসাহর বিয়ে দিয়ে দেব। উসমান (রাদি.) বলিলেন, ব্যাপারটি আমি একটু চিন্তা করে দেখি। উমার (রাদি.) বলেন, আমি কয়েকদিন অপেক্ষা করলাম। পরে উসমান (রাদি.) বলিলেন, আমার স্পষ্ট মতামত যে, এ সময় আমি বিয়ে করব না। উমার (রাদি.) বলেন, এরপর আমি আবু বাক্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁকে বললাম, আপনি ইচ্ছা করলে উমারের কন্যা হাফসাকে আমি আপনার নিকট বিয়ে দিয়ে দেব। আবু বকর (রাদি.) চুপ করে রইলেন, কোন জবাব দিলেন না। এতে আমি উসমানের চেয়েও অধিক দুঃখ পেলাম। এরপর আমি কয়েকদিন চুপ করে থাকলাম, এই অবস্থায় হাফসার জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিজেই প্রস্তাব দিলেন। আমি তাঁকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিলাম। এরপর আবু বকর (রাদি.) আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলিলেন, আমার সঙ্গে হাফসার বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর আমি আপনাকে কোন উত্তর না দেয়ার কারণে সম্ভবত আপনি মনোকষ্ট পেয়েছেন। আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, আপনার প্রস্তাবের জবাব দিতে একটি জিনিসই আমাকে বাধা দিয়েছিল আর তা হল এই যে, আমি জানতাম, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিজেই হাফসাহ (রাদি.)-এর সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন, তাই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর গোপনীয় বিষয়টি প্রকাশ করার আমার ইচ্ছে ছিল না। যদি তিনি (সাঃআঃ) তাঁকে গ্রহণ না করিতেন, তাঁকে অবশ্যই আমি গ্রহণ করতাম। [৫১২২, ৫১২৯, ৫১৪৫] (আ.প্র. ৩৭০৮, ই.ফা. ৩৭১২)
৪০০৬
আবু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ বদরী সহাবী আবু মাসউদ (রাদি.)-কে নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিতে শুনেছেন, তিনি বলেন, স্বীয় আহলের (পরিবার পরিজনের) জন্য ব্যয় করাও সদাক্বাহ। [৫৫]
(আঃপ্রঃ ৩৭০৯, ইঃফাঃ ৩৭১৩)
৪০০৭
উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর খিলাফাত কালের বর্ণনা করিয়াছেন যে, মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.) কুফার আমীর থাকা কালে একদা আসরের সলাত আদায় করিতে দেরি করে ফেললে যায়দ ইবনু হাসানের দাদা বাদরী সাহাবী আবু মাসউদ উকবাহ ইবনু আমির আনসারী (রাদি.) তার নিকট গিয়ে বলিলেন, আপনি তো জানেন যে, জিবরীল (আঃ) এসে সালাত আদায় করিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করিলেন এবং বলিলেন, আমি এভাবেই সালাত আদায় করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। বাশীর ইবন আবু মাসউদ তার পিতার নিকট হইতে হাদীসটি এভাবেই বর্ণনা করিতেন।
[৫২১] (আ.প্র. ৩৭১০, ই.ফা. ৩৭১৪)
৪০০৮
বাদরী সাহাবী আবু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, সুরা বাকারার শেষে এমন দুটি আয়াত রয়েছে যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দুটি তিলাওয়াত করিবে তার জন্য এ আয়াত দুটোই যথেষ্ট। অর্থাৎ রাত্রে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করার যে হাক রয়েছে, কমপক্ষে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত তেলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট। আবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, পরে আমি আবু মাসউদের সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিলেন। এ হাদীসটির ব্যাপারে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সেটা আমার নিকট বর্ণনা করিলেন।
[৫০০৮, ৫০০৯, ৫০৪০, ৫০৪১; মুসলিম ৬/৪৩, হাদীস ৮০৭] (আ.প্র. ৩৭১১, ই.ফা. ৩৭১৫)
৪০০৯
ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যে মাহমূদ ইবনু রাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে জানিয়েছেন যে, ইতবান ইবনু মালিক (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর আনসারী সাহাবী ছিলেন এবং তিনি বদর যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। তিনি (একদা) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে এসেছিলেন।
[৪২৪] (আ.প্র. ৩৭১২, ই.ফা. ৩৭১৬)
৪০১০
ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমি বানী সালিম গোত্রের হুসাইন ইবনু মুহাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে ইতবান ইবনু মালিক থেকে মাহমুদ ইবনু রাবী এর বর্ণিত হাদীসের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি তার সত্যায়ন করিলেন।
[৪২৪] (আ.প্র. ৩৭১৩, ই.ফা. ৩৭১৭)
৪০১১
আবদুল্লাহ ইবনু আমির ইবনু রাবীআ হইতে বর্ণিতঃ
উমার (রাদি.) কুদামাহ ইবনু মাযউনকে (রাদি.) বাহরাইনের শাসনকর্তা নিয়োগ করেছিলেন। তিনি বদর যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন এবং তিনি ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) এবং হাফসাহ (রাদি.)-এর মামা।
(আ.প্র. ৩৭১৪, ই.ফা. ৩৭১৮)
৪০১২
রাফি ইবনু খাদীজ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনু উমারকে বলেছেন যে, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তার দু চাচা তাকে জানিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আবাদযোগ্য ভূমি ভাড়া দিতে নিষেধ করিয়াছেন। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি সালিমকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তো এমন জমি ভাড়া দিয়ে থাকেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। রাফি তো নিজের প্রতি বাড়াবাড়ি করিয়াছেন।
[২৩৩৯, ২৩৪৭] (আ.প্র. ৩৭১৫, ই.ফা. ৩৭১৯)
৪০১৩
রাফি ইবনু খাদীজ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনু উমারকে বলেছেন যে, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তার দু চাচা তাকে জানিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আবাদযোগ্য ভূমি ভাড়া দিতে নিষেধ করিয়াছেন। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি সালিমকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তো এমন জমি ভাড়া দিয়ে থাকেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। রাফি তো নিজের প্রতি বাড়াবাড়ি করিয়াছেন।
[২৩৩৯, ২৩৪৭] (আ.প্র. ৩৭১৫, ই.ফা. ৩৭১৯)
৪০১৪
আবদুল্লাহ ইবনু শাদ্দাদ ইবনু হাদ লায়সী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রিফাআ ইবনু রাফি আনসারী (রাদি.)-কে দেখেছি, তিনি বদর যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন।
(আ.প্র. ৩৭১৬, ই.ফা. ৩৭২০)
৪০১৫
আমর ইবনু আওফ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বদর যুদ্ধে যোগদানকারী সহাবী, বানী আমির ইবনু লুওয়াই গোত্রের বন্ধু আমর ইবনু আওফ (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আবু উবাইদাহ ইবনুল জার্রাহকে জিযিয়া আনার জন্য বাহরাইনে প্রেরণ করেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বাহরাইনবাসীদের সঙ্গে সন্ধি করে আলা ইবনু হাযরামী (রাদি.)-কে তাদের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। আবু উবাইদাহ (রাদি.) বাহরাইন থেকে মাল নিয়ে এসে পৌছলে আনসারগণ তাহাঁর আগমনের খবর পেয়ে সকলেই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ফাজ্রের সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে হাজির হলেন। সালাত শেষে পর ফিরে বসলে তাঁরা সকলেই তাহাঁর সামনে আসলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদেরকে দেখে মুচকি হেসে বলিলেন, আমার মনে হয়, আবু উবাইদাহ কিছু মাল নিয়ে এসেছে বলে তোমরা শুনতে পেয়েছ। তারা সকলেই বলিলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল তিনি বলিলেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং তোমাদের আনন্দদায়ক বিষয়ের আশায় থাক, আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের জন্য দরিদ্রতার আশংকা করি না। বরং আমি আশংকা করি যে, তোমাদের কাছে দুনিয়ার প্রাচুর্য আসবে যেমন তোমাদের পূর্বেকার লোকেদের কাছে এসেছিল, তখন তোমরা সেটা পাওয়ার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করিবে যেমনভাবে তারা করেছিল। আর তা তাদেরকে যেমনিভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরকেও তেমনিভাবে ধ্বংস করে দেবে।
[৩১৫৮] (আ.প্র. ৩৭১৭, ই.ফা. ৩৭২১)
৪০১৬
নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু উমার (রাদি.) সব ধরনের সাপকে হত্যা করিতেন।
[৩২৯৭] (আ.প্র. ৩৭১৮, ই.ফা. ৩৭২২)
৪০১৭
বাদরী সাহাবী আবু লুবাবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাঁকে (ইবনু উমার (রাদি.)কে) বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) ঘরে বসবাসকারী (শ্বেতবর্ণের) ছোট সাপ মারতে নিষেধ করিয়াছেন। এতে তিনি তা মারা থেকে নিবৃত্ত থাকেন।
[৩২৯৮] (আ.প্র. ৩৭১৮, ই.ফা. ৩৭২২)
৪০১৮
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
কতিপয় আনসারী সাহাবী রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করিলেন। তারা বলিলেন, আমাদেরকে আমাদের ভাগিনা আব্বাসের [১৪] ফিদয়া ক্ষমা করে দেয়ার অনুমতি দিন। তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম! তোমরা তাহাঁর একটি দিরহামও ক্ষমা করিবে না।
[২৫৩৭] (আ.প্র. ৩৭১৯, ই.ফা. ৩৭২৩)
[১৪] বাদর যুদ্ধের সময় চাচা আব্বাস কাফির অবস্থায় মুসলিমদের হাতে বন্দী হন। তাদের শক্ত করে সারারাত বেঁধে রাখা হয়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তার প্রতি কোনরূপ সহমর্মিতা দেখাতে না পারলেও রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) চাচার প্রতি মমত্ববোধের কারণে সারারাত নিদ্রাহীনভাবে কাটিয়ে দেন। সাহাবীগণ তা বুঝতে পেরে তার বন্ধন হালকা করে দেন এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট তার মুক্তিপণ ক্ষমা করে দেয়ার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু তিনি স্বজনপ্রীতি না করে অন্যান্য বন্দীদের সমপরিমাণ মুক্তিপণের বিনিময়েই মুক্তি দেয়া হইবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন।
আব্বাসের দাদা কুরাইশ নেতা হাশেম বনী নাজ্জার গোত্রের আমর ইবনু উহায়হার মেয়ে সালামাকে বিবাহ করেছিলেন। আব্বাসের দাদা হাশিম শাম দেশে বাণিজ্য করিতে যাবার সময় মদীনাহতে খাযরাজ গোত্রের বানী নাজ্জার গোত্রের আমর ইবনে উহায়হার বাড়িতে অবস্থান করিতেন। হাশিমের আমর ইবনে উহায়হার মেয়ে সালামাকে দেখে পছন্দ হলে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমর ইবনু উহায়হা এই শর্তে বিবাহে রাযী হন যে, বিবাহের পরও সালামাহ পিতৃগৃহেই অবস্থান করিবে। হাশিম প্রস্তাব মেনে নিলে কুরাইশ নেতা হাশিমের সালামাহ বিনতু আমর এর সঙ্গে বিবাহ হয়। এবং এই সালামার গর্ভে থেকেই আব্বাসের পিতা ও আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিবের জন্ম হয়।
৪০১৯
সাহাবী মিকদাদ ইবনু আমর কিনদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! আমাকে বলুন, কোন কাফিরের সঙ্গে আমার যদি (যুদ্ধক্ষেত্রে) সাক্ষাৎ হয় এবং আমি যদি তার সঙ্গে লড়াই করি আর সে যদি তলোয়ারের আঘাতে আমার একখানা হাত কেটে ফেলে এবং তারপর আমার থেকে বাঁচার জন্য গাছের আড়ালে গিয়ে বলে “আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইসলাম গ্রহণ করলাম” এ কথা বলার পরেও কি আমি তাকে হত্যা করব? তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তাকে হত্যা করিবে না। এরপর তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে তো আমার একখানা হাত কাটার পর এ কথা বলেছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) পুনরায় বলিলেন, না, তুমি তাকে হত্যা করিবে না। কেননা, তুমি তাকে হত্যা করলে হত্যা করার পূর্বে তোমার যে মর্যাদা ছিল সে সেই মর্যাদা লাভ করিবে, আর ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার আগে তার যে স্তর ছিল তুমি সেই স্তরে পৌঁছে যাবে।
[৬৮৬৫] (আ.প্র. ৩৭২০, ই.ফা. ৩৭২৪)
৪০২০
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বাদরের দিন বলিলেন, আবু জাহলের কী অবস্থা কেউ দেখে আসতে পার কি? তখন আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) তার খোঁজে বের হলেন। এবং আফরার দুই ছেলে তাকে আঘাত করে মৃতপ্রায় অবস্থায় ফেলে রেখেছে দেখিতে পেলেন। তখন তিনি তাকে বলিলেন, তুমি কি আবু জাহল? (আবু জাহল বলিল), একজন লোককে হত্যা ব্যতীত তোমরা তো অধিক কিছু করনি? সুলায়মান বলেন, অথবা সে (আবু জাহল) বলেছিল, একজন লোককে তার কাওমের লোকেরা হত্যা করেছে? আবু মিজলায (রাদি.) বলেন, আবু জাহল বলেছিল, চাষী ব্যতীত অন্য কেউ যদি আমাকে হত্যা করত! [১৫]
[৩৯৬২] (আ.প্র. ৩৭২১, ই.ফা. ৩৭২৫)
[১৫] মাদীনাহবাসীগণ অধিকাংশ কৃষিজীবী ছিলেন। এই কৃষিজীবী আনসারের হাতেই আবু জাহাল মারা গেলে সে অপমানিত বোধ করে এ উক্তি করেছিলো। অর্থাৎ কৃষিজীবী ব্যতীত অন্য কারো হাতে তার মৃত্যু হলে এতটা অপমান বোধ করতো না।
৪০২১
উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ)-এর যখন ওফাত হল তখন আমি আবু বাক্রকে বললাম, আমাদেরকে আনসার ভাইদের নিকট নিয়ে চলুন। পথে আমরা আনসারদের দুজন সৎ ব্যক্তির সাক্ষাৎ পেলাম যারা বদর যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, উরওয়াহ ইবনু যুবায়রের নিকট এ হাদীসটি বর্ণনা করলে তিনি বলেন, তাঁরা হলেন উরওয়াহ ইবনু সাঈদাহ এবং মান ইবনু আদী (রাদি.)।
[২৪৬২] (আ.প্র. ৩৭২২, ই.ফা. ৩৭২৬)
৪০২২
কায়স (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
বাদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের ভাতা পাঁচ হাজার পাঁচ হাজার করে নির্ধারিত ছিল। উমার (রাদি.) বলেছেন, অবশ্যই আমি বদর যুদ্ধে শরীক সাহাবীদেরকে পরবর্তী লোকদের হইতে অধিক মর্যাদা দেব।
(আ.প্র. ৩৭২৩, ই.ফা. ৩৭২৭)
৪০২৩
যুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে মাগরিবের সলাতে সুরা তূর পড়তে শুনিয়াছি। এ ঘটনা থেকেই সর্বপ্রথম ঈমান আমার অন্তরে স্থান করে নেয়।
[৭৬৫] (আ.প্র. ৩৭২৪, ই.ফা. ৩৭২৮)
৪০২৪
যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মুহাম্মাদ ইবনু যুবায়র ইবনু মুতঈমের মাধ্যমে তার পিতা যুবায়র ইবনু মুতঈম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বাদরের যুদ্ধবন্দীর ব্যাপারে বলেছেন, আজ মুতঈম ইবনু আদী [১৬] যদি বেঁচে থাকতেন আর এসব অপবিত্র লোকদের সম্পর্কে যদি আমার নিকট সুপারিশ করিতেন, তাহলে তার সম্মানে এদেরকে আমি (মুক্তিপণ ব্যতীতই) ছেড়ে দিতাম।
লায়স ইয়াহইয়ার সূত্রে সাঈদ ইবনু মুসায়্যিব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেন যে, প্রথম ফিতনা অর্থাৎ উসমানের হত্যাকাণ্ড [১৭] সংঘটিত হবার পর বদরে যোগদানকারী সাহাবীদের আর কেউ বেঁচে ছিলেন না। দ্বিতীয় ফিতনা তথা হাররার ঘটনা সংঘটিত হবার পর হুদাইবিয়াহর সন্ধিকালীন সময়ের কোন সাহাবীই আর জীবিত ছিলেন না। এরপর তৃতীয় ফিতনা সংঘটিত হওয়ার পর তা কখনো শেষ হয়নি, যতদিন মানুষের মধ্যে আক্ল ও সদ গুণাবলী বহাল ছিল।
[৩১৩৯] (আ.প্র. ৩৭২৪, ই.ফা. ৩৭২৮)
[১৬] মুতঈম ইবনু আদী রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)–কে বিভিন্ন সময় কাফিরদের হাত থেকে নিরাপত্তা দিয়ে সহানুভূতি দেখিয়েছেন। তাই তিনি নিজের মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেছিলেন, আজ যদি সে জীবিত থাকতো আর অনুরোধ করতো তাহলে তিনি তাদেরকে ছেড়ে দিতেন।
[১৭] মিসরবাসী কতক বিদ্রোহী লোকের দ্বারা উনপঞ্চাশ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর তিনি তাদেরই হাতে শহীদ হন।
৪০২৫
যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি উরওয়াহ ইবনু যুবায়র, সাঈদ ইবনু মুসায়্যিব, আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস ও উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে নাবী (সাঃআঃ)-এর স্ত্রী আয়েশাহর প্রতি অপবাদের ঘটনা শুনিয়াছি। তারা সকলেই হাদীসটির একটি অংশ আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন, আয়েশা (রাদি.) বলেছেন, আমি এবং উম্মু মিসতাহ (প্রাকৃতিক প্রয়োজনে) বের হলাম। তখন উম্মু মিসতাহ তার চাদর পেঁচিয়ে পড়ে গেল। এতে সে বলিল, মিসতাহ এর জন্য ধংস। [আয়েশাহ (রাদি.) বলেন] তখন আমি বললাম, আপনি বড় খারাপ কথা বলিলেন। আপনি বদরে শরীক ব্যক্তিকে মন্দ বলেছেন! অতঃপর অপবাদ-এর ঘটনা উল্লেখ করিলেন।
[২৫৯৩] (আ.প্র. ৩৭২৫, ই.ফা. ৩৭২৯)
৪০২৬
ইবনু শিহাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
[তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর জিহাদসমূহের বর্ণনা দেয়ার পর] বলেছেন, এগুলোই ছিল রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সামরিক অভিযান। এরপর তিনি ঘটনা বর্ণনা করিলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কুরাইশ কাফিরদের লাশ কূপে নিক্ষেপ করার সময় বলিলেন, তোমাদের রব তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তা পেয়েছ তো? মূসা নাফির মাধ্যমে আবদুল্লাহ (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, এ সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সাহাবীদের থেকে কেউ কেউ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি মৃতলোকদের আহ্বান জানাচ্ছেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, আমার কথাগুলো তোমরা তাদের থেকে অধিক শুনতে পাচ্ছ না।
আবু আবদুল্লাহ (রাদি.) বলেন, গনীমাত লাভ করেছিলেন, এমন কুরাইশী সাহাবী বদরে শরীক ছিলেন তাদের সংখ্যা হল একাশি। [১৮] উরওয়াহ ইবন যুবায়র বলিলেন যে, যুবায়র (রাদি.) বলেছেন (বাদরী) কুরাইশী সাহাবীদের অংশগুলো বণ্টন করা হয়েছিল। তাদের সংখ্যা ছিল সর্বমোট একশ (আল্লাহই ভাল জানেন)।
[১৩৭০] (আ.প্র. ৩৭২৬, ইফা. ৩৭৩০)
[১৮] এখানে সম্ভবত অশ্বারোহীদের বাদ দিয়ে গণনা করা হয়েছে। কারণ পরেই একশত জনের কথা উল্লেখ আছে। আল্লাহই ভাল জানেন।
৪০২৭
যুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, বাদরের দিন মুহাজিরদেরকে গানীমাতের একশ অংশ দেয়া হয়েছিল।
(আ.প্র. ৩৭২৭, ই.ফা. ৩৭৩১)
৬৪/১৩. অধ্যায়ঃ
বাদর যুদ্ধ অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের নামের তালিকা যা আল-জামে গ্রন্থে (সহীহ বুখারীতে) উল্লেখ রয়েছে
১. নাবী মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ হাশিমী (সাঃআঃ) ২. ইয়াস ইবনু বুকায়র, ৩. আবু বাক্র কুরাইশীর আযাদকৃত গোলাম বিলাল ইবনু রাবাহ, ৪. হামযা ইবনু আবদুল মুত্তালিব আল-হাশিমী, ৫. কুরাইশদের বন্ধু হাতিব ইবনু আবু বালতাআ, ৬. আবু হুযাইফা ইবনু উতবাহ ইবনু রাবীআহ কুরাইশী, ৭. হারিসা ইবনু রাবী আনসারী, যিনি বাদর যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন; তাঁকে হারিসা ইবনু সুরাকা বলা হয়, তিনি দেখার জন্য গিয়েছিলেন। ৮. খুবায়র ইবনু আদী আনসারী, ৯. খুনায়স ইবনু হাযাফা সাহমী, ১০. রিফাআ ইবনু রাফি আনসারী, ১১. রিফাআ ইবনু আবদুল মুনযির, ১২. আবু লুবাবা আনসারী, ১৩. যুবায়র ইবনুল আওয়াম কুরাইশী, ১৪. যায়দ ইবনু সাহল, ১৫. আবু ত্বলহা আনসারী, ১৬. আবু যায়দ আনসারী, ১৭. সাদ ইবনু মালিক যুহরী, ১৮. সাদ ইবনু খাওলা কুরাইশী, ১৯. সাঈদ ইবনু যায়দ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল কুরাইশী, ২০. সাহল ইবনু হুনাইফ আনসারী, ২১. যুহায়র ইবনু রাফি আনসারী, ২২. এবং তাহাঁর ভাই (মুযহির ইবনু রাফি আনসারী), ২৩. আবদুল্লাহ ইবনু উসমান, ২৪. আবু বাক্র সিদ্দীক কুরাইশী, ২৫. আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ হুযালী, ২৬. উতবাহ ইবনু মাসউদ হুযালী, ২৭. আবদুর রাহমান ইবনু আওফ যুহরী, ২৮. উবাইদাহ ইবনুল হারিস কুরাইশী, ২৯. উবাদাহ ইবনু সামিত আনসারী, ৩০. উমার ইবনু খাত্তাব আদাবী, ৩১. উসমান ইবনু আফ্ফান কুরাইশী, নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে তার অসুস্থ কন্যার দেখাশোনার জন্য (মদীনায়) রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু গানীমাতের মালের অংশ তাঁকে দিয়েছিলেন। ৩২. আলী ইবনু আবী ত্বলিব হাশিমী, ৩৩. আমির ইবনু লুওয়াই গোত্রের মিত্র আমর ইবনু আউফ, ৩৪. উকবাহ ইবনু আমর আনসারী, ৩৫. আমির ইবনু রাবীআ আনাযী, ৩৬. আসিম ইবনু সাবিত আনসারী, ৩৭. উওয়াম ইবনু সাইদা আনসারী, ৩৮. ইতবান ইবনু মালিক আনসারী, ৩৯. কুদামাহ ইবনু মাযউন, ৪০. ক্বাতাদাহ ইবনু নুমান আনসারী, ৪১. মুআয ইবনু আমর ইবনু জামূহ, ৪২. মুআববিয ইবনু আফরা, ৪৩. এবং তাহাঁর ভাই (মুআয), ৪৪. মালিক ইবনু রাবীআ, ৪৫. আবু উসাইদ আনসারী, ৪৬. মুরারা ইবনু রাবী আনসারী, ৪৭. মান ইবনু আদী আনসারী, ৪৮. মিসতাহ ইবনু উসাসা ইবনু আব্বাদ ইবনু মুত্তালিব ইবনু আবদে মানাফ, ৪৯. যুহরা গোত্রের মিত্র মিকদাদ ইবনু আমর কিনদী, ৫০. হিলাল ইবনু উমাইয়া আনসারী (রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহুম আজমাঈন)।
৬৪/১৪. অধ্যায়ঃ দু ব্যক্তি রক্তপণের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য রাসুল (সাঃআঃ)-এর বানী নাযীর গোত্রের নিকট গমন এবং তাহাঁর সঙ্গে তাদের বিশ্বাসঘাতকতা বিষয়ক ঘটনা
যুহরি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, বানু নাযীর যুদ্ধ ওহুদ যুদ্ধের আগের এবং বাদর যুদ্ধের পড়ে ষষ্ঠ মাসের প্রারম্ভে সংঘটিত হয়েছিল। মহান আল্লাহর বাণীঃ “তিনিই কিতাবওয়ালাদের মধ্যে যারা কাফির তাদেরকে প্রথম সমবেতভাবে তাদের নিবাস থেকে বিতাড়িত করেছিলেন”- (সুরা হাশর ৫৯:২)। বানু নাযীর যুদ্ধের এ ঘটনাকে ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বিরে মাউনার ঘটনা এবং উহূদ পরবর্তী ঘটনা বলে উল্লেখ করিয়াছেন।
৪০২৮
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, বনু নাযীর ও বনু কুরাইযাহ গোত্রের ইয়াহূদী সম্প্রদায় (মুসলিমদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধ শুরু করলে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বনু নাযীর গোত্রকে দেশত্যাগে বাধ্য করেন এবং বনু কুরাইযাহ গোত্রের প্রতি দয়া করে তাদেরকে থাকতে দেন। কিন্তু পড়ে বনূ কুরাইযাহ গোত্র (মুসলিমদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধ শুরু করলে কতক লোক যারা নাবী (সাঃআঃ)-এর দলভুক্ত হবার পর তিনি তাদেরকে নিরাপত্তা দান করেছিলেন তারা মুসলিম হয়ে গিয়েছিল তারা ব্যতীত অন্য সব পুরুষ লোককে হত্যা করা হয় এবং মহিলা সন্তান-সন্তদি ও মালামাল মুসলিমদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। নাবী (সাঃআঃ) মদীনার সব ইয়াহূদীকে দেশান্তর করিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু সালামের গোত্র বনু কায়নুকা ও বনু হারিসাসহ অন্যান্য ইয়াহূদী গোষ্ঠীকেও তিনি দেশান্তর করেন।
[মুসলিম ২৩/২০, হাদীস ১৭৬৬] (আ.প্র. ৩৭২৮, ই.ফা. ৩৭৩২)
৪০২৯
সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাসের নিকট সুরা হাশরকে সুরা হাশর নামে উল্লেখ করায়, তিনি বলেন, বরং তুমি বলবে সুরা নাযীর। [১৯] আবু বিশ্র থেকে হুশাইমও এ বর্ণনায় তার (আবু আওয়ানাহ্র) অনুসরণ করিয়াছেন। [৪৬৪৫, ৪৮৮২, ৪৮৮৩] (আ.প্র. ৩৭২৯, ই.ফা. ৩৭৩৩)
[১৯] অত্র সুরাতে বনু নযীর গোত্রের লাঞ্ছনার বর্ণনা রয়েছে তাই আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস সুরা হাশরকে সুরা নযীর উল্লেখ করিতে বলেছেন।
৪০৩০
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আনসারগণ কিছু কিছু খেজুর গাছ নাবী (সাঃআঃ)-এর জন্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। অবশেষে বনু কুরায়বা ও বনু নাযীর জয় করা হলে তিনি ঐ খেজুর গাছগুলো তাদেরকে ফেরত দিয়ে দেন।
[২৬৩০] (আ.প্র. ৩৭৩০, ই.ফা. ৩৭৩৪)
৪০৩১
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বুওয়াইরাই নামক জায়গায় বনু নাযীর গোত্রের যে খেজুর গাছ ছিল তার কিছু জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন এবং কিছু কেটে ফেলেছিলেন। এ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়ঃ
{مَا قَطَعْتُمْ مِنْ لِيْنَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوْهَا قَائِمَةً عَلَى أُصُوْلِهَا فَبِإِذْنِ اللهِ}
তোমরা যে খেজুর গাছগুলি কেটে ফেলেছ অথবা যেগুলো কান্ডের উপর ঠিক রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে- (সুরা হাশর ৫৯/৫)। [২৩২৬; মুসলিম ৩২/১০, হাদীস ১৭৪৬]
(আঃপ্রঃ ৩৭৩১, ইঃফাঃ ৩৭৩৫)
৪০৩২
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বনূ নাযীর গোত্রের খেজুর গাছগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। ইবনু উমার (রাদি.) বলেন, এ সম্বন্ধেই হাস্সান ইবনু সাবিত (রাদি.) বলেছেনঃ
“বনূ লুওয়াই গোত্রের নেতাদের (কুরাইশদের) জন্য সহজ হয়ে গিয়েছে
বুওয়াইরাহ নামক স্থানের সর্বত্রই অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত হওয়া।”
বর্ণনাকারী ইবনু উমার (রাদি.) বলেন, এর উত্তরে আবু সুফ্ইয়ান ইবনু হারিস বলেছিলঃ
“আল্লাহ এ কাজকে স্থায়ী করুন
এবং জ্বালিয়ে রাখুন মদীনার আশে পাশে লেলিহান অগ্নিশিখা,
শীঘ্রই জানবে আমাদের মাঝে কারা নিরাপত্তায় থাকবে
এবং জানবে দুই নগরীর কোনটি ক্ষতিগ্রস্ত হইবে”।
[২৩২৬] (আ.প্র. ৩৭৩২, ই.ফা. ৩৭৩৬)
৪০৩৩
মালিক ইবনু আওস ইবনু হাদসান নাসিরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
(একদা) উমার ইবনু খাত্তাব তাকে ডাকলেন। এ সময় তার দ্বাররক্ষী ইয়ারফা এসে বলিল, উসমান, আবদুর রাহমান, যুবায়র এবং সাদ (রাদি.) আপনার নিকট আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলিলেন, হাঁ তাঁদেরকে আসতে বল। কিছুক্ষণ পড়ে এসে বলিল, আব্বাস এবং আলী (রাদি.) আপনার নিকট অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলিলেন, হাঁ। তাঁরা উভয়েই ভিতরে প্রবেশ করিলেন। আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, হে, আমীরুল মুমিনীন! আমার এবং তাহাঁর মাঝে (বিবাদের) মীমাংসা করে দিন। বনূ নাযীরের সম্পদ থেকে আল্লাহ তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-কে ফাই (বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ) হিসেবে যা দিয়েছিলেন তা নিয়ে তাদের উভয়ের মাঝে বিবাদ চলছিল। এ নিয়ে তারা তর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন, (এ দেখে আগত) দলের সকলেই বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! তাদের মাঝে একটি মীমাংসা করে তাদের এ বিবাদ থেকে মুক্তি দিন। তখন উমার (রাদি.) বলিলেন, তাড়াহুড়া করবেন না। আমি আপনাদেরকে আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি, যাঁর আদেশে আসমান ও যমীন প্রতিষ্ঠিত আছে। আপনারা কি জানেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিজের সম্বন্ধে বলেছেন, আমরা (নাবীগণ) কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না। যা রেখে যাই তা সদাকাহ হিসেবেই গণ্য হয়। এর দ্বারা তিনি নিজের কথাই বলিলেন। উপস্থিত সকলেই বলিলেন, হাঁ, তিনি এ কথা বলেছেন। উমার (রাদি.) আলী এবং আব্বাসের দিকে লক্ষ্য করে বলিলেন, আমি আপনাদের উভয়কে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যে এ কথা বলেছেন, আপনারা তা জানেন কি? তারা উভয়েই বলিলেন, হাঁ, এরপর তিনি বলিলেন, এখন আমি আপনাদেরকে এ বিষয়ে আসল অবস্থা খুলে বলছি। ফাই এর কিছু অংশ আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রসূলের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যা তিনি অন্য কাউকে দেননি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “আল্লাহ ইয়াহূদীদের নিকট হইতে তাহাঁর রাসুলকে যে ফাই দিয়েছেন, তার জন্য তোমরা অশ্ব কিংবা উষ্ট্র চালিয়ে যুদ্ধ করনি; আল্লাহ তো তাহাঁর রাসুলকে যার উপর ইচ্ছা তার উপর কর্তৃত্ব দান করেন; আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান”- (সুরা আনআম ৬:৫৯)। অতএব এ ফাই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর জন্যই খাস ছিল। আল্লাহর কসম! এরপর তিনি তোমাদেরকে বাদ দিয়ে নিজের জন্য এ সম্পদকে সংরক্ষিতও রাখেননি এবং নিজের জন্য নির্ধারিতও করে যাননি। বরং এ অর্থকে তিনি তোমাদের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন। অবশেষে এ মাল উদ্বৃত্ত আছে। এ মাল থেকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর পরিবার পরিজনের এক বছরের খোরপোশ দিতেন। এর থেকে যা অবশিষ্ট থাকত তা তিনি আল্লাহর পথে খরচ করিতে দিতেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর জীবদ্দশায় এরূপই করিয়াছেন। নাবী (সাঃআঃ)-এর ওফাতের পর আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, এখন থেকে আমিই হলাম রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ওলী (প্রতিনিধি)। এরপর আবু বকর (রাদি.) স্বীয় তত্ত্বাবধানে নিয়ে এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যে নীতি অনুসরণ করেছিলেন তিনিও সে নীতিই অনুসরণ করে চললেন। তিনি আলী ও আব্বাসের প্রতি লক্ষ্য করে বলিলেন, আজ আপনারা যা বলছেন এ বিষয়ে আপনারা আবু বকরের সঙ্গেও এ ধরনেরই আলোচনা করেছিলেন। আল্লাহর কসম! তিনিই জানেন, এ বিষয়ে আবু বকর (রাদি.) ছিলেন সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ এবং হাকের অনুসারী এক মহা ব্যক্তিত্ব। এরপর আবু বকরের ইন্তিকাল হলে আমি বললাম, (আজ থেকে) আমিই হলাম, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এবং আবু বকরের ওলী (প্রতিনিধি)। এরপর এ সম্পদকে আমি আমার খিলাফাতের দুই বছরকাল আমার তত্ত্বাবধানে রাখি এবং এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও আবু বকরের অনুসৃত নীতিই অনুসরণ করে চলছি। আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন, এ বিষয়ে নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ এবং হাকের একনিষ্ঠ অনুসারী। তা সত্ত্বেও পুনরায় আপনারা দুজনই আমার নিকট এসেছেন। আমি আপনাদের উভয়কেই বলেছিলাম, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আমরা (নাবীগণ) কাউকে উত্তরাধিকারী করি না, আমরা যা রেখে যাই তা সদকা হিসেবেই গণ্য হয়। এরপর এ সম্পদটি আপনাদের উভয়ের তত্ত্বাবধানে দেয়ার বিষয়টি যখন আমার নিকট স্পষ্ট হল তখন আমি বলেছিলাম, যদি আপনারা চান তাহলে একটি শর্তে তা আমি আপনাদের নিকট অর্পণ করব। শর্তটি হচ্ছে আপনারা আল্লাহর নির্দেশ ও তাহাঁর দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী এমনভাবে কাজ করবেন যেভাবে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও আবু বাক্র করিয়াছেন এবং আমার তত্ত্বাবধানে আসার পর আমি করেছি। অন্যথায় এ বিষয়ে আপনারা আমার সঙ্গে আর কোন আলোচনা করবেন না। তখন আপনারা বলেছিলেন, এ শর্তেই আপনি তা আমাদের নিকট অর্পণ করুন। আমি তা আপনাদের হাতে অর্পণ করেছি। এখন আপনারা আমার নিকট অন্য কোন ফায়সালা কামনা করেন কি? আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যাঁর আদেশে আসমান যমীনটিকে ক্বিয়ামাত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত আমি এর বাইরে অন্য কোন ফয়সালা দিতে পারব না। আপনারা যদি এর দায়িত্ব পালনের অক্ষম হয়ে থাকেন তাহলে আমার নিকট ফিরিয়ে দিন। আপনাদের এ দায়িত্ব পালনে আমিই যথেষ্ট।
[২৯০৪] (আ.প্র. ৩৭৩৩, ই.ফা. ৩৭৩৭)
৪০৩৪
বর্ণনাকারী (যুহরী) হইতে বর্ণিতঃ
আমি হাদীসটি উরওয়াহ ইবনু যুবায়রের নিকট বর্ণনা করার পর তিনি (আমাকে) বলিলেন, মালিক ইবনু আওস (রাদি.) ঠিকই বর্ণনা করিয়াছেন। আমি নাবী (সাঃআঃ)–এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) কে বলিতে শুনিয়াছি, (বানী নাযীর গোত্রের সম্পদ থেকে) ফায় হিসেবে আল্লাহ তাহাঁর রাসুলকে যে সম্পদ দিয়েছেন তার অষ্টমাংশ আনার জন্য নাবী (সাঃআঃ) সহধর্মিণীগণ উসমানকে আবু বকরের নিকট পাঠাতে চাইলে এই বলে আমি তাদেরকে বারণ করেছিলাম যে, আপনারা কি আল্লাহ্কে ভয় করেন না? আপনারা কি জানেন না যে নাবী (সাঃআঃ) বলিতেন আমরা (নাবী-রাসুলগণ) কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না, আমরা যা রেখে যাই তা সদাকাহ হিসেবেই থেকে যায়। এ দ্বারা তিনি নিজেকে মালিক করিয়াছেন। এ সম্পদ থেকে মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)–বংশধরগণ খেতে পারবেন। (তারা এ সম্পদের মালিক হইতে পারবেন না।) আমার এ কথা শুনে নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণীগণ বিরত হলেন। বর্ণনাকারী বলেন, অবশেষে সদাকাহর এ মাল আলীর তত্ত্বাবধানে ছিল। তিনি আব্বাসকে তা দিতে অস্বীকার করেন এবং পরিশেষে তিনি আব্বাসের উপরে জয়ী হন। এরপর তা যথাক্রমে হাসান ইবনু আলী এবং হুসাইন ইবনু আলীর হাতে ছিল। পুনরায় তা আলী ইবনু হুসাইন এবং হাসান ইবনু হাসানের হস্তগত হয়। তাঁরা উভয়ই পর্যায়ক্রমে তার দেখাশোনা করিতেন। এরপর তার যায়দ ইবনু হাসানের তত্ত্বাবধানে যায়। তা অবশ্যই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)–এর সদাকাহ।
[৬৭২৭, ৬৭৩০; মুসলিম ৩২/১৫, হাদীস ১৭৫৭, আহমাদ ৩৩৩] (আ.প্র. ৩৭৩৩, ই.ফা. ৩৭৩৭)
৪০৩৫
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ফাতিমাহ এবং আব্বাস (রাদি.) আবু বকরের কাছে এসে ফাদাক এবং খাইবারের (ভূমির) অংশ দাবী করেন।
[৩০৯২] (আ.প্র. ৩৭৩৪, ই.ফা. ৩৭৩৮)
৪০৩৬
আবু বাক্র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমরা (নাবী-রাসুলগণ আমাদের সম্পদের) কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না। আমরা যা রেখে যাই সদাকাহ হিসেবেই রেখে যাই। এ মাল থেকে মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনে ভোগ করিবে। আল্লাহর কসম! আমার আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে আত্মীয়তা দৃঢ় করার চেয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর আত্মীয়তাই আমার নিকট প্রিয়তর।
[৩০৯৩] (আ.প্র. ৩৭৩৪, ই.ফা. ৩৭৩৮)
৬৪/১৫. অধ্যায়ঃ কাব ইবনু আশরাফ [২০] –এর হত্যা
[২০] কাব ইবনু আশরাফ বনী কুরায়যা গোত্রের একজন কবি ও নেতা ছিল যে বিভিন্ন সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নামে বিদ্রুপাত্মক কথা প্রচার করতো। এমনকি সম্ভ্রান্ত মুসলিমদের স্ত্রী কন্যাদের সম্পর্কেও কুৎসিত অশালীন উদ্ভট কথা রচনা করতো। এসকল কর্মকাণ্ডে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে অবশেষে তৃতীয় হিজরী সনের রবীউল আওয়াল মাসে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহকে নির্দেশ দেন তাকে যেন হত্যা করা হয়। এবং সে আদেশ মতে তাকে হত্যা করা হয়।
৪০৩৭
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, কাব ইবনু আশরাফের হত্যা করার জন্য কে প্রস্তুত আছ? কেননা সে আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলকে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) দাঁড়ালেন, এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বলিলেন, হাঁ। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) বলিলেন, তাহলে আমাকে কিছু প্রতারণাময় কথা বলার অনুমতি দিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, হাঁ বল। এরপর মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) কাব ইবনু আশরাফের নিকট গিয়ে বলিলেন, এ লোকটি [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)] সদাকাহ চায় এবং সে আমাদেরকে বহু কষ্টে ফেলেছে। তাই আমি আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্যে এসেছি। কাব ইবনু আশরাফ বলিল, আল্লাহর কসম পরে সে তোমাদেরকে আরো বিরক্ত করিবে এবং আরো অতিষ্ঠ করে তুলবে। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) বলিলেন, আমরা তাহাঁর অনুসরণ করছি। পরিণাম কী দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই তাহাঁর সঙ্গ ত্যাগ করা ভাল মনে করছি না। এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক বা দুই ওসাক খাদ্য ধার চাই। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান বলেন, আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমার নিকট হাদীসটি কয়েকবার বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তিনি এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথা উল্লেখ করেননি। আমি তাকে বললাম, এ হাদীসে তো এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে, তিনি বলিলেন, মনে হয় হাদীসে এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে। কাব ইবনু আশরাফ বলিল, ধার তো পাবে তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) বলিলেন, কী জিনিস আপনি বন্ধক চান। সে বলিল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) বলিলেন, আপনি আরবের একজন সুশ্রী ব্যক্তি, আপনার নিকট কীভাবে, আমাদের স্ত্রীদের বন্ধক রাখব? তখন সে বলিল, তাহলে তোমাদের ছেলে সন্তানদেরকে বন্ধক রাখ। তিনি বলিলেন, আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে আপনার নিকট কী করে বন্ধক রাখি? তাদেরকে এ বলে সমালোচনা করা হইবে যে, মাত্র এক ওসাক বা দুই ওসাকের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। এটা তো আমাদের জন্য খুব লজ্জাজনক বিষয়। তবে আমরা আপনার নিকট অস্ত্রশস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। রাবী সুফ্ইয়ান বলেন, লামা শব্দের মানে হচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র। শেষে তিনি (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ) তার কাছে আবার যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন। এরপর তিনি কাব ইবনু আশরাফের দুধ ভাই আবু নাইলাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকট গেলেন। কাব তাদেরকে দূর্গের মধ্যে ডেকে নীল এবং সে নিজে উপর তলা থেকে নিচে নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হল। তখন তার স্ত্রী বলিল, এ সময় তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলিল, এই তো মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ এবং আমার ভাই আবু নাইলা এসেছে। আমর ব্যতীত বর্ণনাকারীগণ বলেন যে, কাবের স্ত্রী বলিল, আমি তো এমনই একটি ডাক শুনতে পাচ্ছি যার থেকে রক্তের ফোঁটা ঝরছে বলে আমার মনে হচ্ছে। কাব ইবনু আশরাফ বলিল, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ এবং দুধ ভাই আবু নাইলা, (অপরিচিত কোন লোক তো নয়) ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলে তার যাওয়া উচিত। (বর্ণনাকারী বলেন) মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) সঙ্গে আরো দুই ব্যক্তিকে নিয়ে সেখানে গেলেন। সুফ্ইয়ানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, আমর কি তাদের দুজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন? উত্তরে সুফ্ইয়ান বলিলেন, একজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। আমর বর্ণনা করেন যে, তিনি আরো দুজন মানুষ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, যখন সে (কাব ইবনু আশরাফ) আসবে। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামার সাথীদের সম্পর্কে) বলেছেন যে (তারা হলেন) আবু আবস্ ইবনু জাব্র ইবনু আওস এবং আব্বাদ ইবনু বিশর। আমর বলেছেন, তিনি অপর দুই লোককে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন এবং তাদেরকে বলেছিলেন, যখন সে আসবে তখন আমি তার মাথার চুল ধরে শুঁকতে থাকব। যখন তোমরা আমাকে দেখবে যে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা আঁকড়িয়ে ধরেছি, তখন তোমরা তরবারি দ্বারা তাকে আঘাত করিবে। তিনি (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ) একবার বলেছিলেন যে, আমি তোমাদেরকেও শুঁকাব। সে (কাব) চাদর নিয়ে নিচে নেমে আসলে তার শরীর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) বলিলেন, আজকের মত এতো উত্তম সুগন্ধি আমি আর কখনো দেখিনি। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ বর্ণনা করিয়াছেন যে, কাব বলিল, আমার নিকট আরবের সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সুগন্ধী ব্যাবহারকারী মহিলা আছে। আমর বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) বলিলেন, আমাকে আপনার মাথা শুঁকতে অনুমতি দেবেন কি? সে বলিল, হাঁ। এরপর তিনি তার মাথা শুঁকলেন এবং এরপর তার সাথীদেরকে শুঁকালেন। তারপর তিনি আবার বলিলেন, আমাকে আবার শুঁকবার অনুমতি দেবেন কি? সে বলিল, হাঁ। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বলিলেন, তোমরা তাকে হত্যা কর। তাঁরা তাকে হত্যা করিলেন। এরপর নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকটে এসে এ খবর দিলেন।
[২৫১০; মুসলিম ৩২/৪৩, হাদীস ১৮০১] (আ.প্র. ৩৭৩৫, ই.ফা. ৩৭৩৯)
৬৪/১৬. অধ্যায়ঃ আবু রাফি আবদুল্লাহ ইবনু আবুল হুকায়কের হত্যা
তাকে সাললাম ইবনু আবুল হুকায়কও বলা হত। সে খায়বারের অধিবাসী ছিল। কেউ কেউ বলেছেন, হিজায ভুমিতে তার একটি দূর্গ ছিল।
যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করিয়াছেন যে, তার হত্যার ঘটনা কাব ইবনু আশরাফের হত্যার পর ঘটেছিল।
৪০৩৮
বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দশ জনের কম একটি দলকে আবু রাফির উদ্দেশ্যে পাঠালেন (তাদের একজন) আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাদি.) রাতের বেলা তার ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে খুন করেন।
[৩০২২] (আ.প্র. ৩৭৩৬, ই.ফা. ৩৭৪০)
৪০৩৯
বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আতীককে আমীর বানিয়ে তার নেতৃত্বে আনসারদের কয়েকজন সাহাবীকে ইয়াহূদী আবু রাফির (হত্যার) উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। আবু রাফি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে কষ্ট দিত এবং এ ব্যাপারে লোকদের সাহায্য করত। হিজায ভূমিতে তার একটি দূর্গ ছিল (যেখানে সে বাস করত)। তারা যখন তার দূর্গের কাছে গিয়ে পৌছলেন তখন সূর্য ডুবে গেছে এবং লোকজন নিজেদের পশু পাল নিয়ে রওয়ানা হয়েছে (নিজ নিজ গৃহে) আবদুল্লাহ (ইবনু আতীক) তার সাথীদেরকে বলিলেন, তোমরা তোমাদের স্থানে বসে থাক। আমি চললাম, ভিতরে প্রবেশ করার জন্য দ্বার রক্ষীর সঙ্গে আমি কৌশল দেখাই। এরপর তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজার কাছে পৌছলেন এবং কাপড় দ্বারা নিজেকে এমনভাবে ঢাকলেন যেন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রত আছেন। তখন সবাই ভিতরে প্রবেশ করলে দারোয়ান তাকে ডেকে বলিল, ওহে আবদুল্লাহ! ভিতরে ঢুকতে চাইলে ঢুকে পড়। আমি এখনই দরজা বন্ধ করে দেব। আমি তখন ভিতরে প্রবেশ করলাম এবং আত্মগোপন করে থাকলাম। সকলে ভিতরে প্রবেশ করার পর সে দরজা বন্ধ করে দিল এবং একটি পেরেকের সঙ্গে চাবিটা লটকিয়ে রাখল। [আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাদি.) বলেন] এরপর আমি চাবিটার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং চাবিটা নিয়ে দরজাটি খুললাম। আবু রাফির নিকট রাতের বেলা গল্পের আসর বসত, এ সময় সে তার উপর তলার কামরায় অবস্থান করছিল। গল্পের আসরে আগত লোকজন চলে গেলে, আমি সিঁড়ি বেয়ে তার কাছে গিয়ে পৌছলাম। এ সময় আমি একটি করে দরজা খুলছিলাম এবং ভিতর দিক থেকে তা আবার বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাতে লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে পারলেও হত্যা না করা পর্যন্ত আমার নিকট পৌছতে না পারে। আমি তার কাছে গিয়ে পৌছলাম। এ সময় সে একটি অন্ধকার কক্ষে ছেলেমেয়েদের মাঝে শুয়েছিল। কক্ষের কোন অংশে সে শুয়ে আছে আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। তাই আবু রাফি বলে ডাক দিলাম। সে বলিল, কে আমাকে ডাকছ? আমি তখন আওয়াজটি লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে তরবারি দ্বারা প্রচণ্ড জোরে আঘাত করলাম। আমি তখন কাঁপছিলাম। এ আঘাতে আমি তার কোন কিছুই করিতে পারলাম না। সে চিৎকার করে উঠলে আমি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে চলে আসলাম। এরপর পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে (কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করতঃ তার আপন লোকের ন্যায়) জিজ্ঞেস করলাম, আবু রাফি এ আওয়াজ হল কিসের? সে বলিল, তোমার মায়ের সর্বনাশ হোক! একটু আগে ঘরের ভিতর কে যেন আমাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেছে। আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাদি.) বলেন, তখন আমি আবার তাকে ভীষণ আঘাত করলাম এবং মারাত্মকভাবে ক্ষত বিক্ষত করে ফেললাম। কিন্তু তাকে হত্যা করিতে পারিনি। তাই তরবারির ধারাল দিকটি তার পেটের উপর চেপে ধরলাম এবং পিঠ পাড় করে দিলাম। এবার আমি নিশ্চিতরূপে বুঝলাম যে, এখন আমি তাকে হত্যা করিতে পেরেছি। এরপর আমি এক এক করে দরজা খুলে নিচে নামতে শুরু করলাম। নামতে নামতে সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসে পৌছলাম। পূর্ণিমার রাত্র ছিল। (চাঁদের আলোতে তাড়াহুড়ার মধ্যে সঠিকভাবে অনুধাবন করিতে না পেরে) আমি মনে করলাম, (সিঁড়ির সকল ধাপ অতিক্রম করে) আমি মাটির নিকটে এসে পড়েছি। (কিন্তু তখনও একটি ধাপ অবশিষ্ট ছিল) তাই নিচে পা রাখতেই আমি পড়ে গেলাম। অমনিই আমার পায়ের গোছার হাড় ভেঙ্গে গেল। আমি আমার মাথা পাগড়ি দিয়ে পা খানা বেঁধে নিলাম এবং একটু হেঁটে গিয়ে দরজার সামনে বসে রইলাম। মনে মনে স্থির করলাম, তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে আজ রাতে আমি এখান থেকে যাব না। ভোর রাতে মোরগের ডাক আরম্ভ হলে মৃত্যু ঘোষণাকারী প্রাচীরের উপরে উঠে ঘোষণা করিল, হিজায অধিবাসীদের অন্যতম ব্যবসায়ী আবু রাফির মৃত্যুর সংবাদ শুন। তখন আমি আমার সাথীদের নিকট গিয়ে বললাম, তাড়াতাড়ি চল, আল্লাহ আবু রাফিকে হত্যা করিয়াছেন। এরপর নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট গেলাম এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তিনি বলিলেন, তোমার পা লম্বা করে দাও। আমি আমার পা লম্বা করে দিলে তিনি তাতে স্বীয় হাত বুলিয়ে দিলেন। (তাতে এমন সুস্থ হলাম) যেন আমি কোন আঘাতই পায়নি।
[৩০২২] (আ.প্র. ৩৭৩৭, ই.ফা. ৩৭৪১)
৪০৪০
বারাআ বিন আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আবু রাফির হত্যার উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ইবনু আতীক ও আবদুল্লাহ ইবনু উতবাহকে একদল লোকসহ প্রেরণ করেন। যেতে যেতে তারা দূর্গের কাছে গিয়ে পৌছলে আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাদি.) তাদেরকে বলিলেন, তোমরা অপেক্ষা কর। আমি যাই, দেখি কীভাবে সুযোগ করা যায়। আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাদি.) বলেন, দূর্গের ভিতরে প্রবেশ করার জন্য আমি কৌশল করলাম। ইতোমধ্যে তারা একটি গাধা হারিয়ে ফেলল এবং একটি আলো নিয়ে এর খোঁজে বের হল। তিনি বলিলেন, আমাকে চিনে ফেলবে এ আশংকা করছিলাম। তাই আমি আমার মাথা ও পা ঢেকে ফেললাম এবং এমনভাবে বসে রইলাম যেন আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে মলমূত্র ত্যাগ করার জন্য বসেছি। এরপর দারোয়ান ডাক দিয়ে বলিল, কেউ ভিতরে প্রবেশ করিতে চাইলে দরজা বন্ধ করার আগে ভিতরে ঢুকে পড়ুন। আমি প্রবেশ করলাম এবং দূর্গের দরজার পার্শ্বে গাধা বাঁধার জায়গায় আত্মগোপন করে থাকলাম। আবু রাফির নিকট সবাই বসে রাতের খানা খেয়ে গল্প গুজব করিল। এভাবে রাতের কিছু অংশ কেটে যাওয়ার পর সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেল। যখন হৈ চৈ থেমে গেল এবং কোন নড়াচড়া শুনতে পাচ্ছিলাম না তখন আমি বের হলাম। আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাদি.) বলেন, দূর্গের চাবি যে ছিদ্রপথে রাখা হয়েছিল তা আমু পূর্বেই দেখেছিলাম। তাই রক্ষিত স্থান থেকে চাবিটি নিয়ে আমি দূর্গের দরজা খুললাম। তিনি বলেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, কাওমের লোকেরা যদি আমাকে দেখে নেয় তাহলে সহজেই আমি পালিয়ে যেতে পারব। এরপর দূর্গের ভিতরে তাদের যত ঘর ছিল সবগুলোর দরজা আমি বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলাম। এরপর সিঁড়ি বেয়ে আবু রাফির কক্ষে উঠলাম। বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে ঘরটি ছিল খুবই অন্ধকার। লোকটি কোথায়, কিছুতেই আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। সুতরাং আমি তাকে ডাকলাম, হে আবু রাফি। সে বলিল, কে ডাকছ? তিনি বলিলেন, আওয়াজটি লক্ষ্য করে আমি একটু এগিয়ে গেলাম এবং তাকে আঘাত করলাম। সে চিৎকার করে উঠল। এ আঘতে কোন কাজই হয়নি। অরঃপর আবার আমি তার কাছে গেলাম, যেন আমি তাকে সাহায্য করব। আমি এবার স্বর বদল করে বললাম, হে আবু রাফি! তোমার কি হয়েছে? সে বলিল, কী আশ্চর্য ব্যাপার, তার মায়ের সর্বনাশ হোক, এই তো এক ব্যক্তি আমার ঘরে ঢুকে আমাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেছে। আবদুল্লাহ ইবনু আতীক বলেন, তাকে লক্ষ্য করে আবার আমি আঘাত করলাম এবারও কোন কাজ হল না। সে চিৎকার করলে তার পরিবারের সবাই জেগে উঠল। তারপর আবার আমি সাহায্যকারীর ভান করে আওয়াজ বদল করে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। এ সময় সে পিঠের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে ছিল। আমি তরবারির অগ্রভাগ তার পেটের উপর রেখে এমন জোরে চাপ দিলাম যে, আমি তার হাড়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। এরপর আমি কাঁপতে কাঁপতে সিঁড়ির নিকট এসে পৌছলাম। ইচ্ছে ছিল নেমে যাব। কিন্তু আছাড় খেয়ে পড়ে গেলাম এবং এতে আমার পা খানা ভেঙ্গে গেল। সঙ্গে সঙ্গে (পাগড়ি দিয়ে) আমি তা বেঁধে ফেললাম এবং আস্তে আস্তে হেঁটে সাথীদের নিকট চলে এলাম। এরপর বললাম, তোমরা যাও এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে সুসংবাদ দাও। আমি তার মৃত্যুর সংবাদ না শুনে আসব না। প্রত্যুষে মৃত্যু ঘোষণাকারী প্রাচীরে উঠে বলিল, আমি আবু রাফির মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করছি। আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাদি.) বলেন, এরপর আমি উঠে চলতে লাগলাম, এ সময় আমার কোন ব্যথাই ছিল না। আমার সাথীরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট পৌছার আগেই আমি তাদেরকে পেয়ে গেলাম এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর তার মৃত্যুর সুসংবাদ দিতাম।
[২১] [৩০২২] (আ.প্র. ৩৭৩৮, ই.ফা. ৩৭৪২)
[২১] দেশের মুসলিম শাসকের অনুমতি ছাড়া এরূপ গেরিলা হত্যা বৈধ নয়- এটাই হাদীসটি হইতে প্রমাণিত হলো।
Leave a Reply