বদনজর এর দোয়া , ঝাড়ফুঁক, তাবীয, অশুভ লক্ষণ

বদনজর এর দোয়া , ঝাড়ফুঁক, তাবীয, অশুভ লক্ষণ

বদনজর এর দোয়া , ঝাড়ফুঁক, তাবীয, অশুভ লক্ষণ >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ৫১ঃ বদনজর সংক্রান্ত অধ্যায়

পরিচ্ছেদঃ ১ – বদ নজরের প্রভাব হইতে মুক্তির জন্য ওযূ করা প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদঃ ২ – বদ নজরের জন্য ঝাড়ফুঁক করা প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদঃ ৩ – রুগ্ন ব্যক্তির সওয়াবের আশা করা প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদঃ ৪ – রোগমুক্তির জন্য তাবীয বা ঝাড়ফুঁক করা প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদঃ ৫ – রোগীর চিকিৎসা সম্বন্ধে
পরিচ্ছেদঃ ৬ – জ্বরে গোসল করা প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদঃ ৭ – রোগী দেখিতে যাওয়া ও অশুভ লক্ষণ প্রসঙ্গ

পরিচ্ছেদঃ ১ – বদ নজরের প্রভাব হইতে মুক্তির জন্য ওযূ করা প্রসঙ্গে

১৬৮৮. আবু উমামা ইবনি সহল ইব্নু হুনাইফ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

[জুহফার নিকটবর্তী] খাব্বার নামক স্থানে আমার পিতা আবু সহল [ইব্নু হানীফ] গোসল করার মনস্থ করে জুব্বা খুলে ফেললেন। আমির ইব্নু রবীয়া দেখিতেছিলেন। আমার পিতা সহল সুন্দর ও সুদর্শন লোক ছিলেন। আমির বলিলেন, আজকের মতো আর কোনদিন আমি এত সুন্দর মানুষ দেখিনি, এমন কি এত সুন্দর দেহবিশিষ্ট কোন যুবতীও দেখিনি। [আমিরের এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই] তৎক্ষণাৎ সহলের গায়ে জ্বর এল এবং জ্বরের বেগ ভীষণ হল। অতঃপর এক ব্যক্তি এসে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে বলল, সহলের জ্বর এসেছে এবং সে আপনার সাথে যেতে পারবে না। তখন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ সহলের কাছে এলেন, সহল আমিরের সেই কথা নকল করে শোনালেন। এটা শুনে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, কোন মুসলমান নিজের ভাইকে কেন হত্যা করে ? অতঃপর আমিরকে বলিলেন, তুমি [বারাকাল্লাহ] বললে না কেন? বদ নজর [কুদৃষ্টি] সত্য। সহলের জন্য ওযূ কর, তাকেও ওযুর পানি দাও। আমির সহলের জন্য ওযূ করলেন এবং ওযুর পানি তাকে দিলেন। অতঃপর সহল ভাল হয়ে গেলেন এবং রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর সঙ্গে গেলেন, আর তাঁর কোন অসুবিধা তখন ছিল না।

[বুখারি ৫৭৪০, মুসলিম ২১৮৭] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৮৯. আবু উমামা ইবনি সহল [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমির ইব্নু রবীআ সহল ইব্নু হানীফকে গোসল করিতে দেখে বলিলেন, আজ আমি যেই সুন্দর মানুষ দেখলাম, এই রকম কাউকেও দেখিনি, এমন কি সুন্দরী যুবতীও এত সুন্দর দেহবিশিষ্ট দেখিনি। [আমিরের] এই কথা বলার সাথে সাথে সহল সেখানে লুটাইয়া পড়ল। এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর খেদমতে হাযির হয়ে আরয করিল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি সহল ইব্নু হুনাইপ [বা হানীফ]-এর কিছু খবর রাখেন কি ? আল্লাহর কসম! সে মস্তক উত্তোলন করিতে পারছে না। তখন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, তুমি কি মনে করছ যে, তাকে কেউ বদনজর দিয়েছে ? লোকটি বলল, হ্যাঁ আমর ইব্নু রবীআ [বদনজর দিয়েছে]। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ আমির ইব্নু রবীআকে ডেকে ক্রোধান্বিত হয়ে তাহাকে বলিলেন, তোমাদের কেউ নিজের মুসলমান ভাইকে কেন হত্যা করছ ? তুমি بارك الله কেন বললে না ? এইবার তুমি তার জন্য গোসল কর। অতএব আমির হাত মুখ, হাতের কনুই, হাঁটু, পায়ের আশেপাশের স্থান এবং লুঙ্গির নিচের আবৃত দেহাংশ ধৌত করে ঐ পানি একটি পাত্রে জমা করিল। সেই পানি সহলের দেহে ঢেলে দেয়া হল। অতঃপর সহল সুস্থ হয়ে গেল এবং সকলের সাথে রওয়ানা হল।

[সহীহ, ইবনি মাজাহ ৩৫০৯, আহমাদ ১৬০২৩, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন {মিশকাত- ৪৫৬২}] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদঃ ২ – বদ নজরের জন্য ঝাড়ফুঁক করা প্রসঙ্গে

১৬৯০. হুমাইদ ইবনি কাইস মক্কী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

জাফর ইব্নু আবী তালিব [রাদি.]-এর দুইটি ছেলেকে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে নিয়ে আসা হল। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ তাদের আয়া [মহিলা খাদেম]-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, এই ছেলেরা এত জীর্ণশীর্ণ [দুর্বল] কেন ? আয়া উত্তর দিল, ইয়া রসূলাল্লাহ! তাদের উপর খুব তাড়াতাড়ি [খুব সহজেই] বদ নজর লেগে যায়। আর তাদেরকে কোন রকম ঝাড়ফুঁক করাইনি। কারণ হয়ত বা আপনি উহা পছন্দ করেন না। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, এদের জন্য ঝাড়ফুঁকের ব্যবস্থা কর। কেননা যদি কোন বস্তু তকদীরের [কপালের লেখার] অগ্রে কোন কর্ম সম্পন্ন করিতে পারত, তবে উহা বদনজর।

{১} [সহীহ, তিরমিজি ২০৫৯, ইবনি মাজাহ ৩৫১০, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন {সিলসিলা সহীহা ১২৫২} এবং ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল] {১} তকদীরে যা লেখা আছে তাই হয়। বদ নজরও তাকদীরের অন্তর্ভূক্ত। তাবীয-দুআ ও ঝাড়ফুঁক ইত্যাদিতে যদি শরীআত-বিরুদ্ধ কোন শব্দ বা বাক্য না থাকে, তবে ঐসব তাবীয-দুআ ঝড়ফুঁক করানোতে ক্ষতির কিছু নেই। এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৬৯১. উরওয়া ইবনি যুবাইর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী-পত্নী উম্মে সালমা [রাদি.]-এর ঘরে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ প্রবেশ করলেন। তখন ঘরে একটি বাচ্চা ক্রন্দন করিতেছিল। লোকেরা আরয করিল, বাচ্চাটির উপর বদনজর লেগেছে। তখন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, বদনজরের জন্য ঝাড়ফুঁক করাচ্ছো না কেন ?

[বুখারি ৫৭৪৯, মুসলিম ২১৯৭, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল] এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৩ – রুগ্ন ব্যক্তির সওয়াবের আশা করা প্রসঙ্গে

১৬৯২. আতা ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, যখন কোন [আল্লাহর] বান্দা রোগাক্রান্ত হয় তখন আল্লাহ্ তাআলা তার কাছে দুইজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন এবং বলেন, রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে যারা তাকে দেখিতে আসে, সেই সমস্ত লোককে রোগী কি বলে, দেখ। যদি সে আগন্তুকদের কাছে আল্লাহর প্রশংসা করে, তখন উক্ত দুইজন ফেরেশতা সেই প্রশংসা নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়। [অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা সেই ফেরেশতাদ্বয়ের কাছে জিজ্ঞেস করেন, সে কি বলেছে] অথচ তিনি উহা সবচাইতে বেশি অবগত আছেন। অতঃপর [ফেরেশতা যখন সেই প্রশংসার কথা বলেন তখন] আল্লাহ্ বলেন, যদি আমি আমার সেই [রুগ্ন] বান্দাকে [এই রোগের মাধ্যমে] ওফাত দান করি, তবে আমি তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাব। আর যদি সুস্থ করে দেই, তবে আগের চাইতে অধিক গোশত ও রক্ত দান করব [অর্থাৎ ভাল স্বাস্থ্য দান করব] এবং তার গুনাহ মাফ করে দিব। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} সুতরাং যার উপর কোন মুসিবত আসে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি প্রকৃত ঈমানদার হয়, তবে বুঝতে হইবে যে, এই মুসিবত তার জন্য মঙ্গলময় হইবে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৬৯৩. নবী-পত্নী আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ ফরমাইয়াছেন, মুমিন যদি কোন মুসিবতে পতিত হয়, এমন কি যদি [সামান্য] একটি কাঁটাও বিঁধে, তবে তার গুনাহ মাফ করা হয়।

[সহীহ, মুসলিম ২৫৭২] এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৬৯৪. আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা যার মঙ্গল চাহেন তার উপর মুসিবত ঢেলে দেন।

[সহীহ, বুখারি ৫৬৪৫] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৯৫. ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর যুগে এক ব্যক্তি মারা গেল, তখন অপর এক ব্যক্তি বলল, বাহ্! কী চমৎকার মৃত্যুবরণ করিল! কোন রকম রোগে আক্রান্তও হল না! রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, হতভাগা তুমি ইহা কি বলিতেছ ? তুমি কি জান, আল্লাহ্ তাআলা যদি তাকে কোন রোগে আক্রান্ত করিতেন, তবে তার গুনাহ মাফ হয়ে যেত ?

[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন] এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৪ – রোগমুক্তির জন্য তাবীয বা ঝাড়ফুঁক করা প্রসঙ্গে

১৬৯৬. উসমান ইবনি আবিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে গিয়েছিলাম, আর [তখন] আমার এমন ব্যথা হচ্ছিল যে, আমি যেন মারা যাব! অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, তোমার [হৃদযন্ত্রের উপর] ডান হাত রেখে সাতবার এই দুআ পড়ে মালিশ কর

أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ

আউযু বি-ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহী মিন শাররি মা আজিদু

আমি যা অকল্যাণ অনুভব করছি, উহার ক্ষতি হইতে আল্লাহর ই্জ্জত ও কুদরতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

[উসমান বলেন] আমি তাই করলাম। আল্লাহ্ তাআলা আমার ব্যাথা দূর করে দিলেন। অতঃপর আমি সর্বদা পরিবারের সকলকে এবং অপরাপর মানুষকে সেইরূপ করার নির্দেশ দিতাম। {১} [সহীহ, মুসলিম ২২০২]

{১} উসমান ইবনি আবিল আস-এর হৃদযন্ত্রে ব্যথা ছিল বিধায় উহার উপর হাত রেখে মালিশ করার নির্দেশ দান করা হয়েছে। তাই বোঝা গেল যে, শরীরের যেই স্থানে ব্যথা হয় সেই স্থানে ডান হাত দ্বারা উক্ত আমল করলে নিশ্চয়ই ব্যথার উপশম হইবে ইন্শাআল্লাহ্। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৯৭. আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ যখনই অসুস্থ হইতেন, তখন সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে [নিজের উপর] ঝাড়ফুঁক করিতেন। আয়িশা [রাদি.] বলেন, [মৃত্যুর পূর্বে] যখন রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর ব্যথা অধিক হত, তখন আমি নিজে সেই সূরাদ্বয় পড়ে বরকতের জন্য তাঁর [প্রিয় নবীর] ডান হাত দিয়ে মালিশ করে দিতাম।

[বুখারি ৫০১৬, মুসলিম ২১৯২] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬৯৮. আমরাহ্ বিনতে আবদুর রহমান [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আবু বাকর সিদ্দীক [রাদি.] আয়িশা [রাদি.]-এর কাছে গেলেন। তখন তিনি [আয়িশা] অসুস্থ ছিলেন এবং জনৈক ইহুদী মহিলা [কিছু] পাঠ করে তাঁর উপর দম করিতেছিলেন। আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন, কালামুল্লাহ্ [তাওরাত বা কুরআন] পড়ে দম কর।

[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন] এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৫ – রোগীর চিকিৎসা সম্বন্ধে

১৬৯৯. যায়দ ইবনি আসলাম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর যুগে এক ব্যক্তির [শরীর] যখম হয়েছিল। সেই যখমে রক্ত জমে গিয়েছিল। অতঃপর লোকটি বনী আনমার গোত্রের দুই ব্যক্তিকে [উহার চিকিৎসার জন্য] ডেকে আনল। তারা এসে [যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে] দেখল। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের উভয়ের মধ্যে কে চিকিৎসায় অধিক অভিজ্ঞ ? তারা বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ্! চিকিৎসায় বিজ্ঞানে কোন উপকার আছে কি ? রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, ঔষধ তো তিনিই নাযিল করিয়াছেন, যিনি রোগ নাযিল করিয়াছেন।

[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন] এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৭০০. ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আমার কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর যুগে সাদ ইব্নু যুরারা [রাদি.] গলার ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা হিসাবে লোহা পুড়িয়ে লাগিয়ে ছিলেন। কিন্তু তিনি মারা যান।

[হাসান, ইবনি মাজাহ ৩৪৯২. আলবানী হাদীসটি হাসান বলেছেন {সহীহ ও যয়ীফ সুনানে ইবনি মাজাহ} আর ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল] এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৭০১. নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] লকওয়া-এর জন্য লোহা পুড়িয়ে দাগ লাগিয়েছিলেন এবং বিচ্ছুর [দংশনের] জন্য ঝাড়ফুঁক করেছিলেন।

[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন] লকওয়া এক ধরনের জটিল রোগ, যা সাধারণত মুখমণ্ডল আক্রমণ করে। ফলে মুখমণ্ডল বাঁকা হয়ে যায়। সাধারণত ইহা প্যারালাইসিস রোগের মতো হয়, বরং প্যারালাইসিসের সঙ্গে এই রোগও আক্রমণ করে। তখন রোগ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৬ – জ্বরে গোসল করা প্রসঙ্গে

১৭০২. ফাতিমা বিনত মুনযির হইতে বর্ণিতঃ

আসমা বিনতে আবু বাকর [রাদি.]-এর কাছে যখনই কোন জ্বরাক্রান্ত স্ত্রীলোককে নিয়ে আসা হত, তিনি পানি এনে তার বুকের উপর ঢেলে দিতেন এবং বলিতেন, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ জ্বরকে পানি দ্বারা ঠাণ্ডা করবার নির্দেশ দিতেন।

[বুখারি ৫৭২৪, মুসলিম ২২১১] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭০৩. উরওয়া ইবনি যুবাইর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, জ্বর হল জাহান্নামের উদ্গিরণ। অতএব উহাকে পানি দ্বারা ঠাণ্ডা কর।

[বুখারি ৩২৬৩, ঈমাম মুসলিম ২২১০, আয়িশা [রাদি.] থেকে বর্ণনা করেন, আর ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]

নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে ইব্নু উমার [রাদি.] সূত্রে বর্ণিত; রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, জ্বর হল জাহান্নামের উদগিরণ। অতএব উহাকে পানি দ্বারা ঠাণ্ডা কর।

[বুখারি ৫৭২৩, মুসলিম ২২০৯] এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদঃ ৭ – রোগী দেখিতে যাওয়া ও অশুভ লক্ষণ প্রসঙ্গ

১৭০৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ রোগী দেখিতে যায়, তখন সে আল্লাহর রহমতের মধ্যে ঢুকে পড়ে। অতঃপর যখন সে সেখানে বসে, তখন সেই রহমত তার ভিতরে অবস্থান করে কিংবা এই রকমই কিছু তিনি বলেছেন।

[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন] এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৭০৫. ইব্নু আতিয়া [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, রোগের ছোঁয়াচ বা সংক্রমণ বলে কিছুই নেই। পেঁচা অশুভ পাখি এবং সফর মাসে অমঙ্গলজনক কিছুই নেই। তবে রোগা উটকে সুস্থ উটের সাথে রেখ না [বা বাঁধিও না]। অবশ্য সুস্থ উটকে যেখানে ইচ্ছা রাখতে পার। অতঃপর সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! এই রকম কেন? রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, রোগ একটি কষ্ট বিশেষ। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} আরবে, বিশেষত অন্ধকার যুগে সাধারণ মানুষ বিশেষ বস্তু দেখলে উহাকে অশুভ বলে বিশ্বাস করত। যেমন পেঁচা দেখে তারা ধারণা করত যে, আজ অমঙ্গলজনক কিছু ঘটবে। পেঁচা ঘরের ছাঁদে বসলে মনে করত যে, এই ঘর বিরান হয়ে যাবে অথবা এই ঘরে অচিরেই কেউ মারা যাবে। এইগুলোকে এতদ্ব্যতীত অন্ধকার যুগের আরবরা সফর চাঁদকেও অমঙ্গলজনক বলে ধারণা পোষণ করত, অথচ শরীয়তে এই সবের কোনই স্থান নেই। আরবের কাফিরদের বিশ্বাস ছিল, রোগের মধ্যে এমন ক্ষমতা আছে যে, সে ইচ্ছা করলে যে কোন মানুষের দেহে প্রবেশ করে তাকে মেরে ফেলতে পারে। অথচ এটাও ভুল। আমাদের দেশেও এই জাতীয় অনেক রকমের কুধারণা সাধারণ মানুষের অন্তরে বিরাজ করছে। শরীয়তে এই সমস্তের কোনই অস্তিত্ব নেই, বরং এইগুলোকে খারাপ আকীদা বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে। অবশ্য এই হাদীসে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ রোগা উটকে সুস্থ উটের সাথে বাঁধতে এইজন্য নিষেধ করিয়াছেন যে, একটির রোগ অপরটির জন্য কষ্টের কারণ হয় কিংবা দেখিতে বিশ্রী দেখায় বলে ঘৃণার উদ্রেক হয়। যেমন যখমে পচন ধরলে দুর্গন্ধ বের হয়। ফলে সুস্থ উটের জন্য ইহা কষ্টের কারণ হয়। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ এই উদ্দেশ্যে বলেননি যে, একটির রোগ আর একটির মধ্যে প্রবেশ করিবে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

Comments

Leave a Reply