ফেরেশতাদের বর্ণনা – কেউ যখন আমীন বলে আর আকশের ফেরেশতাগণও আমীন বলে
ফেরেশতাদের বর্ণনা – কেউ যখন আমীন বলে আর আকশের ফেরেশতাগণও আমীন বলে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৫৯, সৃষ্টির সূচনা, অধ্যায়ঃ (৬-৭)=২টি
৫৯/৬. অধ্যায়ঃ ফেরেশতাদের বর্ণনা
৫৯/৭. অধ্যায়ঃ তোমাদের কেউ যখন আমীন বলে আর আকশের ফেরেশতাগণও আমীন বলে। অতঃপর একের আমীন অন্যের আমীনের সঙ্গে মিলিতভাবে উচ্চারিত হয় তখন পুর্বের পাপরাশি মুছে দেয়া হয়।
৫৯/৬. অধ্যায়ঃ ফেরেশতাদের বর্ণনা
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে বলিলেন, ফেরেশতাদের মধ্যে জিবরাঈল (আঃ) ইয়াহূদীদের শত্রু। [১] আর ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, – অর্থ আমরা তো (ফেরেশতাকুল) সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান- (সাফফাতঃ ১৬৫)। (আ.প্র. ২৯৬৬)
[১] এ সময় আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাদি.) ইয়াহূদী ছিলেন। আর ইয়াহূদীদের উপর সকল আযাবের সংবাদ জিবরাঈল (আঃ)-ই নিয়ে এসেছেন। তাই তারা তাহাঁর সম্বন্ধে এরকম ধারণা পোষণ করত।
৩২০৭. মালিক ইবনু সাসাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি কাবা ঘরের নিকট নিদ্রা ও জাগরণ- এ দুঅবস্থার মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। অতঃপর তিনি দুব্যক্তির মাঝে অপর এক ব্যক্তি অর্থাৎ নিজের অবস্থা উল্লেখ করে বলিলেন, আমার নিকট সোনার একটি পেয়ালা নিয়ে আসা হল- যা হিক্মত ও ঈমানে ভরা ছিল। অতঃপর আমার বুক হইতে পেটের নিচ পর্যন্ত চিরে ফেলা হল। অতঃপর আমার পেট যমযমের পানি দিয়ে ধোয়া হল। অতঃপর তা হিক্মত ও ঈমানে পূর্ণ করা হল এবং আমার নিকট সাদা রঙের চতুষ্পদ জন্তু আনা হল, যা খচ্চর হইতে ছোট আর গাধা হইতে বড় অর্থাৎ বোরাক। অতঃপর তাতে চড়ে আমি জিবরাঈল (আঃ) সহ চলতে চলতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে গিয়ে পৌঁছলাম। জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, জিবরাঈল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? উত্তর দেয়া হল, মুহাম্মদ (সাঃআঃ)। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে মারহাবা, তাহাঁর আগমন কতই না উত্তম। অতঃপর আমি আদম (আঃ)-এর নিকট গেলাম। তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বলিলেন, পুত্র ও নাবী! তোমার প্রতি মারহাবা। অতঃপর আমরা দ্বিতীয় আসমানে গেলাম। জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? তিনি বলিলেন, আমি জিবরাঈল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)। প্রশ্ন করা হল, তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে মারহাবা আর তাহাঁর আগমন কতই না উত্তম। অতঃপর আমি ঈসা ও ইয়াহইয়া (আঃ)-এর নিকট আসলাম। তাঁরা উভয়ে বলিলেন, ভাই ও নাবী! আপনার প্রতি মারহাবা। অতঃপর আমরা তৃতীয় আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ (সাঃআঃ)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে মারহাবা আর তাহাঁর আগমন কতই না উত্তম। অতঃপর আমি ইউসুফ (আঃ)-এর নিকট গেলাম। তাঁকে আমি সালাম করলাম। তিনি বলিলেন, ভাই ও নাবী! আপনাকে মারহাবা। অতঃপর আমরা চতুর্থ আসমানে পৌঁছলাম। প্রশ্ন করা হল, এ কে? তিনি বলিলেন, আমি জিবরাঈল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ (সাঃআঃ)। প্রশ্ন করা হল, তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? জবাবে বলা হল, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে মারহাবা আর তাহাঁর আগমন কতই না উত্তম। অতঃপর আমি ইদরীস (আঃ)-এর নিকট গেলাম। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বলিলেন, ভাই ও নাবী! আপনাকে মারহাবা। এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? বলা হয় আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন হল, আপনার সঙ্গে আর কে? বলা হল, মুহাম্মদ (সাঃআঃ)। প্রশ্ন করা হল, তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? বলা হল হ্যাঁ। বলিলেন, তাঁকে মারহাবা আর তাহাঁর আগমন কতই না উত্তম। অতঃপর আমরা হারুন (আঃ)-এর নিকট গেলাম। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বলিলেন, ভাই ও নাবী! আপনাকে মারহাবা। অতঃপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? বলা হল, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ (সাঃআঃ)। বলা হল, তাঁকে আনার জন্য পাঠানো হয়েছে? তাঁকে মারহাবা আর তাহাঁর আগমন কতই না উত্তম। অতঃপর আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট গেলাম। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বলিলেন, ভাই ও নাবী আপনাকে মারহাবা। অতঃপর আমি যখন তাহাঁর কাছ দিয়ে গেলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বলিলেন, হে রব! এ ব্যক্তি যে আমার পরে প্রেরিত, তাহাঁর উম্মত আমার উম্মাতের চেয়ে অধিক পরিমাণে বেহেশতে যাবে। অতঃপর আমরা সপ্তম আকাশে পৌঁছলাম। প্রশ্ন করা হল, এ কে? বলা হল, আমি জিবরাঈল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ (সাঃআঃ)। বলা হল, তাঁকে আনার জন্য পাঠানো হয়েছে? তাঁকে মারহাবা। তাহাঁর আগমন কতই না উত্তম। অতঃপর আমি ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট গেলাম। তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বলিলেন, হে পুত্র ও নাবী! আপনাকে মারহাবা। অতঃপর বায়তুল মামূরকে আমার সামনে প্রকাশ করা হল। আমি জিবরাঈল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, এটি বায়তুল মামূর। প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফেরেশতা সালাত আদায় করেন। এরা এখান হইতে একবার বাহির হলে দ্বিতীয় বার ফিরে আসেন না। এটাই তাদের শেষ প্রবেশ। অতঃপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা দেখানো হল। দেখলাম, এর ফল যেন হাজারা নামক জায়গার মটকার মত। আর তার পাতা যেন হাতীর কান। তার উৎসমূলে চারটি ঝরণা প্রবাহিত। দুটি ভিতরে আর দুটি বাইরে। এ সম্পর্কে আমি জিবরাঈলকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, ভিতরের দুটি জান্নাতে অবস্থিত। আর বাইরের দুটির একটি হল- ফুরাত আর অপরটি হল (মিশরের) নীল নদ। অতঃপর আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়। আমি তা গ্রহণ করে মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে এলাম। তিনি বলিলেন, কি করে এলেন? আমি বললাম, আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। তিনি বলিলেন, আমি আপনার চেয়ে মানুষ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত আছি। আমি বাণী ইসরাঈলের রোগ সরানোর যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। আপনার উম্মত এত আদায়ে সমর্থ হইবে, না। অতএব আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং তা কমানোর আবেদন করুন। আমি ফিরে গেলাম এবং তাহাঁর নিকট আবেদন করলাম। তিনি সালাত চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আবার তেমন ঘটল। সালাত ত্রিশ ওয়াক্ত করে দেয়া হল। আবার তেমন ঘটলে তিনি সালাত বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আবার তেমন ঘটল। তিনি সালাতকে দশ ওয়াক্ত করে দিলেন। অতঃপর আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম। তিনি আগের মত বলিলেন, এবার আল্লাহ সালাতকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিলেন। আমি মূসার নিকট আসলাম। তিনি বলিলেন, কী করে আসলেন? আমি বললাম, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিয়েছেন। এবারও তিনি আগের মত বলিলেন, আমি বললাম, আমি তা মেনে নিয়েছি। তখন আওয়াজ এল, আমি আমার ফরয জারি করে দিয়েছি। আর আমার বান্দাদের হইতে হালকা করেও দিয়েছি। আমি প্রতিটি নেকির বদলে দশগুণ সওয়াব দিব। আর বায়তুল মামূর সম্পর্কে হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) …… আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন।
৩২০৮. যায়দ ইবনু ওয়াহব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ (রাদি.) বলেন, সত্যবাদী হিসেবে গৃহীত আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান নিজ নিজ মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে, অতঃপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। ঐভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে। অতঃপর তা মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়ে (আগের মত চল্লিশ দিন) থাকে। অতঃপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আর তাঁকে চারটি বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়। তাঁকে লিপিবদ্ধ করিতে বলা হয়, তার আমল, তার রিয্ক, তার আয়ু এবং সে কি পাপী হইবে না নেককার হইবে। অতঃপর তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেয়া হয়। কাজেই তোমাদের কোন ব্যক্তি আমল করিতে করিতে এমন পর্যায়ে পৌছে যে, তার এবং জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত পার্থক্য থাকে। এমন সময় তার আমলনামা তার উপর জয়ী হয়। তখন সে জাহান্নামবাসীর মত আমল করে। আর একজন আমল করিতে করিতে এমন স্তরে পৌছে যে, তার এবং জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত তফাৎ থাকে, এমন সময় তার আমলনামা তার উপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতবাসীর মত আমল করে।
৩২০৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন তিনি জিবরাঈল (আঃ)-কে ডেকে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুক বান্দাহকে ভালবাসেন, কাজেই তুমিও তাকে ভালবাস। তখন জিবরাঈল (আঃ)-ও তাকে ভালবাসেন এবং জিবরাঈল (আঃ) আকাশের অধিবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাহকে ভালবাসেন। কাজেই তোমরা তাকে ভালবাস। তখন আকাশের অধিবাসী তাকে ভালবাসতে থাকে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে সম্মানিত করার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
৩২১০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন যে, ফেরেশতামণ্ডলী মেঘমালার আড়ালে অবতরণ করেন এবং আকাশের ফায়সালাসমূহ আলোচনা করেন। তখন শয়তানেরা তা চুরি করে শোনার চেষ্টা করে এবং তার কিছু শোনেও ফেলে। অতঃপর তারা সেটা গণকের নিকট পৌছে দেয় এবং তারা তার সেই শোনা কথার সঙ্গে নিজেদের আরো শত মিথ্যা মিলিয়ে বলে থাকে।
৩২১১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, জুমুআর দিন মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরেশতা এসে দাঁড়িয়ে যায় এবং যে ব্যক্তি প্রথম মসজিদে প্রবেশ করে, তার নাম লিখে নেয়। অতঃপর ক্রমান্বয়ে পরবর্তীদের নামও লিখে নেয়। ইমাম যখন বসে পড়েন তখন তারা এসব লেখা পুস্তিকা বন্ধ করে দেন এবং তাঁরা মসজিদে এসে যিক্র শুনতে থাকেন।
৩২১২. সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা উমর (রাদি.) মসজিদে নববীতে আগমন করেন, তখন হাস্সান ইবনু সাবিত (রাদি.) কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। তখন তিনি বলিলেন, এখানে আপনার চেয়ে উত্তম ব্যক্তির উপস্থিতিতেও আমি কবিতা আবৃত্তি করতাম। অতঃপর তিনি আবু হুরাইরা (রাদি.)-এর দিকে তাকালেন এবং বলিলেন, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি; আপনি কি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন যে, “তুমি আমার পক্ষ হইতে জবাব দাও। হে আল্লাহ! আপনি তাকে রুহুল কুদুস [জিবরাঈল (আঃ)] দ্বারা সাহায্য করুন।” তিনি উত্তরে বলিলেন, হ্যাঁ।
[১] মসজিদে কবিতা আবৃত্তি করিতে হাস্সান ইবন সাবিত (রা.)-এর প্রতি উমর (রা.) আপত্তি করাতে তিনি আবু হুরাইরা (রা.)-কে সাক্ষী হিসাবে পেশ করিলেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপস্থিতিতে মসজিদে কবিতা আবৃত্তি করিয়াছেন ।
৩২১৩. বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) হাস্সান (রাদি.)-কে বলেছেন, তুমি তাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা কর অথবা তাদের কুৎসার জবাব দাও। তোমার সঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আছেন।
৩২১৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি যেন বনূ গানমের গলিতে উপরে উঠা ধূলা স্বয়ং দেখিতে পাচ্ছি। মূসা এতটুকু বাড়িয়ে বলেছেন, জিবরীল বাহন নিয়ে পদচারণা করেন। [১]
[১] কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে হাস্সান ইবনু সাবিত (রাদি.) কাফিরদের প্রতিবাদ করিতেন। জিবরীল (আঃ) তাহাঁর দলবল নিয়ে তাঁকে সাহায্য করিতেন। তখন তাঁদের পদচালনার কারণে যে ধূলি উর্ধ্বে উঠত আমি যেন তা বনূ গানমের গলিতে স্বয়ং প্রত্যক্ষ করেছি।
৩২১৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
হারিস ইবনু হিশাম (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনার নিকট ওয়াহী কিভাবে আসে? তিনি বলিলেন, সব ধরনের ওয়াহী নিয়ে ফেরেশতা আসেন। কখনো কখনো ঘন্টার আওয়াজের মত শব্দ করে। যখন আমার নিকট ওয়াহী আসা শেষ হয়ে যায়, তখন তিনি যা বলেছেন আমি তা মুখস্থ করে ফেলি। আর এভাবে শব্দ করে ওয়াহী আসাটা আমার নিকট কঠিন মনে হয়। আর কখনও কখনও ফেরেশতা আমার নিকট মানুষের আকারে আসেন এবং আমার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই।
৩২১৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন কিছু জোড়ায় জোড়ায় দান করিবে, তাকে জান্নাতের পর্যবেক্ষকগণ আহবান করিতে থাকবে, হে অমুক ব্যক্তি! এ দিকে আস! তখন আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, এমন ব্যক্তি তো সেই যার কোন ধ্বংস নেই। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি আশা করি, তুমি তাদের মধ্যে একজন হইবে।
৩২১৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একদা নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে বলিলেন, হে আয়েশা! এই যে জিবরীল (আঃ) তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। তখন তিনি বলিলেন, তাহাঁর প্রতি সালাম, আল্লাহর রহমত এবং তাহাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আপনি এমন কিছু দেখেন যা আমি দেখিতে পাই না। এর দ্বারা তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে বুঝিয়েছেন।
৩২১৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জিবরাঈল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি আমার কাছে যতবার আসেন তার চেয়ে অধিক আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন না কেন? রাবী বলেন, তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ “(জিবরাঈল বললঃ) আমি আপনার রবের আদেশ ব্যতিরেকে আসতে পারি না। তাহাঁরই আয়ত্বে রয়েছে যা কিছু আমাদের সামনে আছে, যা আমাদের পশ্চাতে আছে এবং যা কিছু এর মধ্যস্থলে আছে”-(মারইয়াম ৬৪)।
৩২১৯. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, জিবরীল (আঃ) আমাকে এক আঞ্চলিক ভাষায় কুরআন পাঠ করে শুনিয়েছেন। কিন্তু আমি সব সময় তাহাঁর নিকট বেশি ভাষায় পাঠ শুনতে চাইতাম। শেষতক তা সাতটি আঞ্চলিক ভাষায় শেষ হয়। [১]
[১] সাতটি আঞ্চলিক ভাষাতে কুরাআন অবতীর্ণ হলেও কুরআন লিপিবদ্ধ করার সময় কুরাইশ ভাষাকেই নির্ধারণ করা হয়। (লামহাত ফী উলুমিল কুরআন, ডঃ মুহাম্মাদ বিন লুতফী সাব্বাক, পৃষ্ঠা ১৭২)
৩২২০. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) লোকদের মধ্যে সবচেয়ে দানশীল ছিলেন আর রমাযান মাসে যখন জিবরীল (আঃ) তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতেন তখন তিনি আরো অধিক দানশীল হয়ে যেতেন। জিবরীল (আঃ) রমযানের প্রতি রাতে তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে কুরআন পাঠ করে শুনাতেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর সঙ্গে যখন জিবরাঈল (আঃ) দেখা করিতেন, তখন তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য পাঠানো বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল হয়ে হইতেন। আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত। মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ সনদে একই রকম হাদীসের বর্ণনা করিয়াছেন আর আবু হুরাইরা (রাদি.) এবং ফাতেমাহ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) নিকট হইতে ———–এর স্থলে ———– বর্ণনা করিয়াছেন। অর্থাৎ জিবরীল তাহাঁর উপর কুরআন পেশ করিতেন।
৩২২১. ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
একবার উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আসরের সালাত কিছুটা দেরিতে আদায় করিলেন। তখন তাঁকে উরওয়াহ (রাদি.) বলিলেন, একবার জিবরীল (আঃ) আসলেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর ইমাম হয়ে সালাত আদায় করিলেন। তা শুনে উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, হে উরওয়াহ! কি বলছ, চিন্তা কর। উত্তরে তিনি বলিলেন, আমি বশীর ইবনু মাসঊদকে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিতে শুনিয়াছি, একবার জিবরীল (আঃ) আসলেন, অতঃপর তিনি আমার ইমামতি করিলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি তাহাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি তাহাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি তাহাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। এ সময় তিনি তাহাঁর আঙ্গুলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত গুণছিলেন।
৩২২২. আবু যার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, একবার জিবরাঈল (আঃ) আমাকে বলিলেন, আপনার উম্মত হইতে যদি এমন এক ব্যক্তি মারা যায় যা আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুই শরীক করেনি, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে কিংবা তিনি বলেছেন, সে জাহান্নামে প্রবেশ করিবে না। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, যদিও সে যিনা ও চুরি করে। জিবরীল (আঃ) বলিলেন, যদিও (সে যিনা ও চুরি করে তবুও)। [১]
[১] অপরাধের শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে যাবে।
৩২২৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, ফেরেশতামন্ডলী একদলের পেছনে আর একদল আগমন করেন। একদল ফেরেশতা রাতে আসেন আর একদল ফেরেশতা দিনে আসেন। তাঁরা ফাজ্র ও আসর সালাতে একত্রিত হয়ে থাকেন। অতঃপর যারা তোমাদের নিকট রাত্রি কাটিয়েছিলেন তারা আল্লাহর নিকট উর্ধ্বে চলে যান। তখন তাদেরকে মানুষের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। অথচ তিনি তাদের চেয়ে এ ব্যাপারে অধিক জ্ঞাত আছেন। তিনি বলেন, তোমরা আমার বান্দাহদেরকে কী হালতে ছেড়ে এসেছে? উত্তরে তাঁরা বলেন, আমরা তাদেরকে সালাতরত অবস্থাতেই পৌঁছেছিলাম।
৫৯/৭. অধ্যায়ঃ তোমাদের কেউ যখন আমীন বলে আর আকশের ফেরেশতাগণও আমীন বলে। অতঃপর একের আমীন অন্যের আমীনের সঙ্গে মিলিতভাবে উচ্চারিত হয় তখন পুর্বের পাপরাশি মুছে দেয়া হয়।
৩২২৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর জন্য প্রানীর ছবিওয়ালা একটি বালিশ তৈরি করেছিলাম। যেন তা একটি ছোট গদী। অতঃপর তিনি আমার ঘরে এসে দুদরজার মধ্যে দাঁড়ালেন আর তাহাঁর চেহারা মলিন হয়ে গেল। তখন আমি বললাম, এ বালিশটি আপনি এর উপর ঠেস দিয়ে বসতে পারেন সে জন্য তৈরি করছি। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি কি জান না যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। আর যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আকেঁ তাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হইবে? (আল্লাহ) বলবেন, বানিয়েছ, তাঁকে জীবিত কর।
৩২২৫. আবু ত্বালহা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে বাড়িতে কুকুর থাকে আর প্রাণীর ছবি থাকে সেথায় ফেরেশতা প্রবেশ করে না।
৩২২৬. আবু ত্বলহা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে বাড়িতে প্রাণীর ছবি থাকে সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। বুস্র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, অতপর যায়িদ ইবনু খালিদ (রাদি.) রোগাক্রান্ত হন। আমরা তাহাঁর সেবার জন্য গেলাম। তখন আমরা তাহাঁর ঘরে একটি পর্দায় কিছু ছবি দেখিতে পেলাম। তখন আমি (বুস্র) উবাইদুল্লাহ খাওলানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কি আমাদের কাছে ছবি সম্পর্কীয় হাদীস বর্ণনা করেননি? তখন তিনি বলেছেন, প্রাণীর; তবে কাপড়ের মধ্যে কিছু অংকন করা নিষিদ্ধ নয়, তুমি কি তা শুননি? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তিনি তা বর্ণনা করিয়াছেন।
৩২২৭. সালিম (রাদি.) তাহাঁর পিতার নিকট হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জিবরাঈল (আঃ) নাবী (সাঃআঃ)-কে ওয়াদা দিয়েছিলেন। আমরা ঐ ঘরে প্রবেশ করি না, যে ঘরে ছবি ও কুকুর থাকে।
৩২২৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, (সালাতে) ইমাম যখন ————— বলবে, তখন তোমরা বলবে——————— (হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক। আপনার জন্য সকল প্রশংসা) কেননা যার এ উক্তি ফেরেশতাগণের উক্তির সঙ্গে মিলে যাবে, তার আগের গুনাহ মাফ করে দেয়া হইবে।
৩২২৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতে রত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ এ বলে দুআ করিতে থাকে, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন এবং হে আল্লাহ! তার প্রতি রহম করুন যতক্ষণ পর্যন্ত লোকটি সালাত ছেড়ে না দাঁড়ায় কিংবা তার উযু ভঙ্গ না হয়।
৩২৩০. সাফওয়ান ইবনু ইয়ালা (রাদি.) তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে মিম্বারে উঠে এ আয়াত তিলাওয়াত করিতে শুনিয়াছি;—————–(আর তারা ডাকল, হে মালিক!) সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.)-এর ক্বিরাআতে ———– স্থলে ———— রয়েছে।
৩২৩১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করিলেন, উহুদের দিনের চেয়ে কঠিন কোনদিন কি আপনার উপর এসেছিল? তিনি বলিলেন, আমি তোমার ক্বওম হইতে যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, তাতো হয়েছি। তাদের হইতে অধিক কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, আকাবার দিন যখন আমি নিজেকে ইবনু আবদে ইয়ালীল ইবনে আবদে কলালের নিকট পেশ করেছিলাম। আমি যা চেয়েছিলাম, সে তার জবাব দেয়নি। তখন আমি এমন ভাবে বিষণ্ণ চেহারা নিয়ে ফিরে এলাম যে, কারনুস সাআলিবে পৌছা পর্যন্ত আমার চিন্তা দূর হয়নি। তখন আমি মাথা উপরে উঠালাম। হঠাৎ দেখিতে পেলাম এক টুকরো মেঘ আমাকে ছায়া দিচ্ছে। আমি সেদিকে তাকালাম। তারমধ্যে ছিলেন জিবরাঈল (আঃ)। তিনি আমাকে ডেকে বলিলেন, আপনার ক্বওম আপনাকে যা বলেছে এবং তারা উত্তরে যা বলেছে তা সবই আল্লাহ শুনেছেন। তিনি আপনার নিকট পাহাড়ের ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। এদের সম্পর্কে আপনার যা ইচ্ছে আপনি তাঁকে হুকুম দিতে পারেন। তখন পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। অতঃপর বলিলেন, হে মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)! এসব ব্যাপার আপনার ইচ্ছাধীন। আপনি যদি চান, তাহলে আমি তাদের উপর আখশাবাইন [১] কে চাপিয়ে দিব। উত্তরে নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, বরং আশা করি মহান আল্লাহ তাদের বংশ থেকে এমন সন্তান জন্ম দেবেন যারা এক আল্লাহর ইবাদত করিবে আর তাহাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করিবেনা।
[১] আখশাবাইনঃ দুটি কঠিন শিলার পাহাড়।
৩২৩২. আবু ইসহাক শায়বানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি যির ইবনু হুবাইশ (রাদি.)–কে মহান আল্লাহর এ বাণীঃ অবশেষে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের দূরত্ব রইল অথবা আরও কম। তখন আল্লাহ স্বীয় বান্দার প্রতি যা ওয়াহী করার ছিল, তা ওয়াহী করিলেন- (আন্-নাজম ৯-১০)। এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, ইবনু মাসউদ (রাদি.) আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) জিবরাঈল (আঃ)-কে দেখেছেন। তাহাঁর ছয়শটি ডানাছিল।
৩২৩৩. আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি এ আয়াতঃ তিনি তো স্বীয় রবের মহান নিদর্শনসমূহ দর্শন করিয়াছেন। (আন্-নাজম ১৮)–এর মর্মার্থে বলেন, তিনি (নাবী (সাঃআঃ)) সবুজবর্ণের রফরফ [২] দেখেছেন, যা আকাশের দিগন্তকে আবৃত করে রেখেছিল।
[২] রফরফ অর্থ সবুজ কাপড়ের বিছানা।
৩২৩৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মনে করিবে যে, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) তাহাঁর রবকে দেখেছেন, সে ব্যক্তি মহা ভুল করিবে। বরং তিনি জিবরাঈল (আঃ)–কে তাহাঁর আসল আকার ও চেহারায় দেখেছেন। তিনি আকাশের দিকচক্রবাল জুড়ে অবস্থান করছিলেন।
৩২৩৫. মাসরূক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাদি.)-কে আল্লাহর বাণীঃ তারপর সে তার নিকটবর্তী হল এবং আতি নিকটবর্তী হল, অবশেষে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের দূরত্ব রইল আথবা আরও কম (আন্-নাজম ৮,৯) – এর অর্থ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, তিনি জিবরাঈল (আঃ) ছিলেন। তিনি সাধারণত মানুষের আকার নিয়ে তাহাঁর নিকট আসতেন। কিন্তু এবার তিনি নিকটে এসেছিলেন তাহাঁর আসল চেহারা নিয়ে। তখন তিনি আকাশের সম্পূর্ণ দিকচক্রবাল আবৃত করে ফেলেছিলেন।
৩২৩৬. সামূরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আজ রাতে আমি দেখেছি, দুব্যক্তি আমার নিকট আসেছে। তারা বলিল, যে অগ্নি প্রজ্বলিত করছিল সে হলো দোযখের তত্ত্বাবধায়ক মালিক আর আমি জিবরাঈল এবং ইনি মীকাঈল।
৩২৩৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, কোন লোক যদি নিজ স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসতে ডাকে আর সে অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর উপর দুঃখ নিয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফেরেশতাগণ এমন স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত লানত দিতে থাকে। শুবা, আবু হামযাহ, ইবনু দাউদ ও আবু মুআবিয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস বর্ণনায় আবু আওয়ানাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।
৩২৩৮. জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) – কে বলিতে শুনিয়াছি। আমার নিকট হইতে কিছুদিনের জন্য ওয়াহী বন্ধ হয়ে গেল। আমি পথ চলতেছিলাম। এরই মধ্যে আকাশ হইতে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন আমি আকাশের দিকে দৃষ্টি তুললাম। হঠাৎ দেখিতে পেলাম, হেরা পাহাড়ের গুহায় আমার নিকট যে ফেরেশতা এসেছিলেন, তিনি আকাশ ও যমীনের মাঝখানে একটি কুরসীর উপর বসে আছেন। আমি তাতে ভীত হয়ে গেলাম, এমন কি মাটিতে পড়ে যাবার উপক্রম হলাম। অতঃপর আমি আমার পরিজনের নিকট এলাম এবং বললাম, আমাকে কম্বল দিয়ে আবৃত কর, আমাকে কম্বল দিয়ে আবৃত কর। তখন মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ ————- হে বস্ত্রাবৃত। উঠ, সতর্কবাণী প্রচার কর…..অপবিত্রতা হইতে দূরে থাক।
(আল-মুদ্দাসসিরঃ ১-৫) আবু সালামা (রাদি.) বলেন, অত্র আয়াতে —— হল প্রতিমা।
৩২৩৯. নাবী (সাঃআঃ)- এর চাচা ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, মিরাজের রাত্রে আমি মূসা (আঃ)- কে দেখেছি। তিনি গোধুম বর্ণের পুরুষ ছিলেন; দেহের গঠন ছিল লম্বা। মাথার চুল ছিল কোঁকড়ানো। যেন তিনি শানুআ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি। আমি ঈসা (আঃ)- কে দেখিতে পাই। তিনি ছিলেন মধ্যম গঠনের লোক। তাহাঁর দেহবর্ণ ছিল সাদা লালে মিশ্রিত। তিনি ছিলেন মধ্যম দেহবিশিষ্ঠ। মাথার চুল ছিল অকুঞ্চিত। জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক মালিক এবং দাজ্জালকেও আমি দেখেছি। আল্লাহ তাআলা নাবী (সাঃআঃ)–কে বিশেষ করে যে সকল নিদর্শনসমূহ দেখিয়েছেন তার মধ্যে এগুলোও ছিল সুতরাং তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে তুমি সন্দেহ পোষণ করিবেনা। আনাস এবং আবু বাকরাহ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, ফেরেশতা মণ্ডলী মদীনাকে দাজ্জাল হইতে পাহারা দিয়ে রাখবেন।
Leave a Reply