ফেতনার হাদিস – মুরজিয়া, জাহমিয়্যাহ, খারিজী, তাক্বদীর, মীযান
ফেতনার হাদিস – মুরজিয়া, জাহমিয়্যাহ, খারিজী, তাক্বদীর, মীযান >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ৪২, অনুচ্ছেদঃ ১৩-৩২=২০টি
অনুচ্ছেদ-১৩ঃ ফিত্বনাহ্ চলাকালে বাকসংযমী হওয়া
অনুচ্ছেদ-১৪ঃ নাবীগণের [আঃ] মধ্যে মর্যাদার পার্থক্য করা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৫ঃ মুরজিয়া সম্প্রদায় প্রত্যাখ্যাত
অনুচ্ছেদ-১৬ঃ ঈমান বৃদ্ধি ও হ্রাসের দলীল
অনুচ্ছেদ-১৭ঃ তাক্বদীর সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৮ঃ মুশরিকদের শিশু সন্তান সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৯ঃ জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায় সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২০ঃ আল্লাহ্র দর্শন লাভ
অনুচ্ছেদ-২১ঃ জাহ্মিয়্যাহ মতবাদ প্রত্যাখ্যাত
অনুচ্ছেদ-২২ঃ আল-কুরআন সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২৩ঃ শাফাআত সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২৪ঃ পুনরুত্থান ও শিঙ্গায় ফুৎকারের বর্ণনা
অনুচ্ছেদ-২৫ঃ জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২৬ঃ হাওযে কাওসার সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২৭ঃ কবরের জিজ্ঞাসাবাদ এবং শাস্তি প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-২৮ঃ মীযান প্রসঙ্গ
অনুচ্ছেদ-২৯ঃ দাজ্জালের বর্ণনা
অনুচ্ছেদ-৩০ঃ খারিজীদের সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৩১ঃ খারিজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা
অনুচ্ছেদ-৩২ঃ চোরের মোকাবিলা করা
অনুচ্ছেদ-১৩ঃ ফিত্বনাহ্ চলাকালে বাকসংযমী হওয়া
৪৬৬২.আবু বাক্রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাসান ইবনি আলী [রাদি.] সম্পর্কে বলিলেন, আমার এ ছেলে [নাতি] নেতা হইবে। আর আমি কামনা করি, আল্লাহ তার মাধ্যমে আমার উম্মাতের দুটি দলের মধ্যে সমঝোতা করাবেন। হাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রয়েছেঃ তিনি বলেন, আশা করি আল্লাহ তার মাধ্যমে মুসলিমদের বৃহৎ দুটি দলের মধ্য সমঝোতা করাবেন।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৬৩. মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, হুযাইফাহ [রাদি.] বলিয়াছেন, মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ [রাদি.] ছাড়া অন্য সবার ব্যাপারেই হাঙ্গামার শিকার হওয়ার আশঙ্কা করেছি। কেননা আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি, হাঙ্গামা তোমার [মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ্র] কোন ক্ষতি করিতে পারবে না।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৬৪. সালাবাহ ইবনি দুবাইআহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা হুযাইফাহ্র [রাদি.] নিকট গেলে তিনি বলিলেন, আমি এমন একজনকে চিনি, সংঘাত যার কোন ক্ষতি করিতে পারবে না। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর আমরা রওয়ানা হয়ে একটি তাঁবু খাটানো দেখিতে পেয়ে তাতে ঢুকে মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ্র সাক্ষাত পেলাম। আমরা তাহাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি চাই না যে, দাঙ্গা-হাঙ্গামার আবসান না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের কোন এক শহর আমাকে ঘিরে ধরুক [আমি বসবাস করি]।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৬৫. দুবাইআহ ইবনি হুসাইন আস-সালাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
পূর্বোক্ত হাদিসের অর্থানুরূপ বর্ণিত। {৪৬৬৪}আমি এটি সহিহ এবং যঈফে পাইনি। {৪৬৬৪} এর পূর্বের হাদিস দেখুন। এই হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৪৬৬৬. ক্বাইস ইবনি উবাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আলী [রাদি.] -কে বলিলাম, আপনার এ সফলতা কি আপনার প্রতি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নির্দেশ মোতাবেক, নাকি আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত? তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার প্রতি এরকম কোন নির্দেশ দেননি, বরং এটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৬৭. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ মুসলিমদের মধ্যে গোলযোগ চলাকালে একটি দল আত্মপ্রকাশ করিবে। যারা সত্যের নিকটবর্তী তারা ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৪ঃ নাবীগণের [আঃ] মধ্যে মর্যাদার পার্থক্য করা সম্পর্কে
৪৬৬৮. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা নাবীগণের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্য করো না।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৬৯. আবু হুরাইরাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা এক ইয়াহুদী বললো, সেই মহান সত্ত্বার কসম! যিনি মূসা [আঃ]-কে মনোনীত করেছেন। তখন এক মুসলিম ইয়াহুদী লোকটির চেহারায় থাপ্পড় মারলো। ইয়াহুদী রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট গিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তোমরা আমাকে মূসা [আঃ]-এর উপর অধিক মর্যাদা দিও না। কেননা [ক্বিয়ামাতের দিন] সব মানুষ মূর্ছা যাবে। সর্বপ্রথম আমিই হুঁশ ফিরে পাবো। আর তখন মূসা [আঃ] আরশের একপাশ ধরে থাকিবেন। আমি অবহিত নই যে, মূসা [আঃ] মূর্ছা গিয়ে আমার আগে হুশ ফিরে পাবে, না তিনি মূর্ছা যাবেন না অর্থাৎ যাদেরকে আল্লাহ ব্যতিক্রম করবেন তিনি তাহাদের একজন কিনা।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৭০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমি আদম সন্তানের নেতা এবং আমাকেই সর্বপ্রথম কবর হইতে উঠানো হইবে এবং আমিই সর্বপ্রথম সুপারিশকারী হবো এবং সর্বপ্রথম আমার সুপারিশ গ্রহণ করা হইবে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৭১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কারো একথা বলা উচিৎ নয় যে, আমি ইউনুস ইবনি মাত্তার [আঃ] চেয়ে উত্তম।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৭২. আবদুল্লাহ ইবনি জাফার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিতেনঃ কোন নাবীর একথা বলা উচিৎ নয় যে, আমি ইউনুস ইবনি মাত্তার [আঃ] চেয়ে উত্তম।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৭৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–কে বললো, ওহে সৃষ্টিকূলের সর্বোত্তম ব্যক্তি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তিনি তো ইবরাহীম [আঃ]।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৭৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমি অবহিত নই যে, তুব্বা অভিশপ্ত কিনা এবং আমার জানা নেই যে, উযাইর নাবী কি না।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৭৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি আত্মীয়তায় মারইয়াম [আঃ]-এর পুত্র ঈসা [আঃ]-এর নিকটতর। নাবীগণ পরস্পর বৈমাত্রেয় ভাই। আমার ও তাহাঁর মাঝখানে কোন নাবী নেই।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৫ঃ মুরজিয়া সম্প্রদায় প্রত্যাখ্যাত
৪৬৭৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ ঈমানের সত্তরটিরও বেশী শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বত্তোম হলো এ সাক্ষ্য দেয়া যে, “আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই”। আর সর্বনিম্ন হলো রাস্তা থেকে হাড় অপসারণ করা এবং লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি শাখা।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৭৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আবদুল ক্বাইস গোত্রের প্রতিনিধি দল রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এলে তিনি তাহাদেরকে আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দেন। তিনি বলিলেন, তোমরা কি জানো এক আল্লাহ্র উপর ঈমান আনা কী? তারা বলিলেন, আল্লাহ্ ও তাহাঁর রাসূলই বেশী জানেন। তিনি বলিলেন, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল-এর সাক্ষ্য দেয়া, সলাত ক্বায়িম করা, যাকাত দেয়া এবং রমযান মাসের সিয়াম পালন করা। এছাড়া তোমরা গণীমাতের এক-পঞ্চমাংশ জমা দিবে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৭৮. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ বান্দা ও কুফর এর মধ্যে পার্থক্য হলো সলাত ছেড়ে দেয়া।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৬ঃ ঈমান বৃদ্ধি ও হ্রাসের দলীল
৪৬৭৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] কাবার দিকে নিবিষ্ট হলে সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! যারা বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে সলাত পড়া অবস্থায় মারা গেছে তাহাদের কি হইবে? তখন মহান আল্লাহ্ অবতীর্ন করিলেন, “আল্লাহ্ তোমাদের ঈমান [সলাত] বিনষ্ট করবেন না” [সূরাহ বাকারা ঃ ১৪৩]।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৮০. আবু উমামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, যে ব্যক্তির ভালোবাসা ও শত্রুতা, দান করা ও না করা একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের জন্য হয়ে থাকে সে ব্যক্তিই পূর্ণ ঈমানদার।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৮১. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ বুদ্ধি ও দ্বীনদারীতে অপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বুদ্ধিমান পুরুষকে হতভম্ব করে দেয়ার ক্ষেত্রে তোমাদের [মহিলাদের] কোন একজনের চেয়ে অধিক পারদর্শী আর কাউকে আমি দেখিনি। এক মহিলা বলিলেন, বুদ্ধি ও দ্বীনের ক্ষেত্রে অপূর্ণতা কি? তিনি বলিলেন, বুদ্ধির অপূর্ণতা হলো, দুজন মহিলার সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান। আর দ্বীনের অপূর্ণতা হলো, তোমাদের কেউ কেউ রমযানের সওম ভঙ্গ করে থাকে আর একাধারে কিছুদিন সলাত পড়া হইতে বিরত থাকে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৮২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, ঐ মুমিন ঈমানে পরিপূর্ণ যার চরিত্র সর্বোকৃষ্ট।
এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
৪৬৮৩.আমির ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] কিছু মালামাল বণ্টন করছিলেন। আমি তাহাঁর নিকট অনুরোধ করলাম যে, অমুক ব্যক্তিকে দিন, কেননা সে মুমিন। তিনি বলিলেন, অথবা মুসলিম। আমি ঐ ব্যক্তিকে কোন অনুদান দেয়ার চেয়ে সেই সব লোকদেরকে দেয়া পছন্দ করি যাদেরকে না দিলে [মুরতাদ হয়ে যাবে] পরিণামে তাহাদের মুখের উপর হেঁচড়িয়ে টেনে নেয়া হইবে [জাহান্নামে যাবে]।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৮৪. আমির ইবনি সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা নাবী [সাঃআঃ] কিছু সংখ্যক লোককে দিলেন এবং কিছু সংখ্যক লোককে কিছুই দিলেন না। সাদ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি অমুক অমুককে দিলেন অথচ অমুক অমুককে মুমীন হওয়া সত্ত্বেও দিলেন না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ অথবা মুসলিম। এভাবে সাদ [রাদি.] তিনবার বলিলেন। আর নাবী [সাঃআঃ]-ও বলিতে থাকলেন ঃ অথবা মুসলিম। অতঃপর তিনি বলেনঃ আমি এমন সব লোককে দিয়ে থাকি এবং তাহাদের চেয়ে আমার নিকট অধিক প্রিয় লোকদেরকে বঞ্চিত করে থাকি এ ভয়ে যে, যদি না দেয়া হয় তাহলে তাহাদেরকে [দ্বীন ত্যাগের কারণে] অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৮৫. মামার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যুহরী [রাদি.] বলিয়াছেন, আল্লাহ্র বাণী ঃ “[হে নাবী!] আপনি বলুন, তোমরা ঈমান আনোনি, বরং তোমরা বলো, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি” [সূরাহ হুজুরাত ঃ ১৪]। এর তাৎপর্য আমরা বুঝেছি ইসলাম হলো কালেমা শাহাদাত আর ঈমান হলো আমল করা।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু
৪৬৮৬. ওয়াক্বিদ ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি ইবনি উমার [রাদি.]-কে নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিতে শুনেছেন, তিনি বলিয়াছেনঃ আমার পরে তোমরা মারামারিতে লিপ্ত হয়ে পুনরায় কাফির হয়ে যেও না।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৮৭. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে মুসলিম ব্যক্তি অন্য মুসলিমকে কাফির বলে, সে যদি কাফির না হয় তাহলে সে-ই কাফির।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৮৮. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে খাঁটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে এ চারটি স্বভাবের কোনটি পাওয়া যায়, বর্জন করা পর্যন্ত তার ভেতরে মুনাফিকের একটি স্বভাব রয়েছে। তা হলো, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, প্রতিজ্ঞা করলে প্রতারণা করে এবং ঝগড়ার সময় অশ্লীল কথা বলে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৮৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ ব্যভিচারী ব্যভিচারে লিপ্ত অবস্থায় ঈমানদার থাকে না। চোর চুরি করা কালে ঈমানদার থাকে না। মদ্যপায়ী তা পানরত অবস্থায় ঈমানদার থাকতে পারে না। এরপরও তাওবাহ্র ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৯০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যখন কেউ ব্যভিচার করিতে থাকে তখন তার থেকে ঈমান বের হয়ে তার [মাথার] উপর ছায়ার ন্যায় অবস্থান করিতে থাকে। অতঃপর যখন সে অবসর হয় তখন ঈমান তার নিকট ফিরে আসে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৭ঃ তাক্বদীর সম্পর্কে
৪৬৯১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কাদরিয়াগণ হচ্ছে এ উম্মাতের অগ্নিপূজক। সুতরাং তারা রোগাক্রান্ত হলে তোমরা তাহাদেরকে দেখিতে যাবে না এবং তারা মারা গেলে তাহাদের জানাযায় উপস্থিত হইবে না।
এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৪৬৯২. হুযাইফাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ প্রত্যেক উম্মাতে অগ্নিপূজক রয়েছে। এ উম্মাতের অগ্নিপূজক হলো যারা বলে, তাক্বদীর বলিতে কিছু নেই। তাহাদের মধ্যকার কেউ মারা গেলে তোমরা তার জানাযায় উপস্থিত হইবে না এবং তাহাদের কেউ অসুস্থ হলে তোমরা তাহাদেরকে দেখিতে যাবে না। তারা হচ্ছে দাজ্জালের অনুসারী এবং আল্লাহ অবশ্যই তাহাদেরকে দাজ্জালের সঙ্গে মিলিত করবেন। {৪৬৯১}
দুর্বলঃ যঈফাহ হা/৫৭১৪। {৪৬৯১} আহমাদ, ত্বাবরানী। সানাদে নাম উল্লেখহীন জনৈক ব্যক্তি রয়েছে। এছাড়া সানাদে আমর মাওলা গুফরা দুর্বল। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৬৯৩. আবু মূসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আদম [আঃ]-কে একমুঠো মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যা তিনি সমগ্র পৃথিবী থেকে নিয়েছিলেন। তাই আদম সন্তান মাটির বিভিন্ন বর্ণ ও প্রকৃতি অনুসারে হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ লোহিত, কেউবা সাদা, কেউ কালো এবং কেউবা এসবের মধ্যবর্তী বর্ণের হয়েছে। এরূপে কেউ কোমল, কেউ কঠোর এবং কেউ অসৎ এবং কেউ সৎ হয়েছে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৯৪. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা বাকী আল-গারকাদে এক জানাযায় ছিলাম। সেখানে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-ও উপস্থিত ছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসে বসলেন এবং তাহাঁর সঙ্গের লাঠি দিয়ে মাটির উপর আঁচড় দিতে লাগলেন। অতঃপর তিনি মাথা তুলে বলিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, এমন কোন নিঃশ্বাসধারী নেই যার জাহান্নামে বা জান্নাতে নেককার ও বদকার হিসেবে ঠিকানা লিখে রাখা হয়নি। আলী [রাদি.] বলেন, উপস্থিত জনতার মধ্য হইতে একজন উঠে বললো, হে আল্লাহর নাবী! তাহলে আমরা কি আমাদের ঐ লেখার উপর নির্ভর করে আমল ছেড়ে দিবো না? তারপর যার নাম সৌভাগ্যবান হিসেবে লেখা আছে সে ভালো কাজেই অগ্রসর হইবে, আর আমাদের মধ্যে যার নাম হতভাগা ও পাপিষ্ঠ হিসেবে লেখা আছে সে পাপ কাজেই অগ্রসর হইবে। নাবী [সাঃআঃ] বলেন, তোমরা আমল করিতে থাকো। কেননা প্রত্যেকের জন্য সেটাই সহজ করা হয়েছে যার জন্য তাহাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যে ভাগ্যবান সৎকর্ম তার জন্য সহজ হয়, আর যে পাপিষ্ঠ তার জন্য পাপ কাজ সহজ হয়। অতঃপর আল্লাহর নাবী [সাঃআঃ] কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “সুতরাং দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দিবো সহজ পথ। আর কেউ কৃপণতা করলে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, আর যা উত্তম তা বর্জন করলে আমি তার জন্য সুগম করে দিবো কঠোর পরিণতির পথ” [সূরাহ আল-লাইলঃ ৫-১০]।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৯৫. ইয়াহ্ইয়া ইবনি ইয়ামার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বাসরাহ্তে সর্বপ্রথম তাক্বদীর সম্বন্ধে বিতর্ক সৃষ্টি করে মাবাদ আল্-জুহানী। আমি ও হুমাইদ ইবনি আবদুর রহমান আল্-হিমাইয়ারী হাজ্জ অথবা উমরাহ করিতে গেলাম। আমরা বলিলাম, যদি আমারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কোন সাহাবীর সাক্ষাৎ পাই তাহলে আমরা এসব লোক ত্বাকদীর সম্পর্কে যা বলে সে সম্পর্কে তাহাকে প্রশ্ন করবো। অতঃপর আল্লাহ্ আমাদেরকে আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] -এর সাক্ষাৎ লাভে সাহায্য করিলেন, যিনি মাসজিদে প্রবেশ করেছিলেন। আমি ও আমার সাথী তাহাকে ঘিরে বসলাম। আমি চিন্তা করলাম যে, আমার সাথী কথা বলার দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করবেন। আমি বলিলাম, হে আবদুর রহমানের পিতা! আমাদের এখানে কিছু সংখ্যক লোকের আত্নপ্রকাশ ঘটেছে যারা কুরআন পড়ে, জ্ঞানচর্চা ও বিতর্কও করে এবং মত পোষণ করে যে, তাক্বদীর বলিতে কিছু নেই এবং প্রতিটি বিষয় পূর্ব সিদ্ধান্ত ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটছে। তিনি বলিলেন, তুমি ঐসব লোকের সাক্ষাত পেলে তাহাদেরকে সংবাদ দিবে যে, আমি তাহাদের সাথে সম্পর্কহীন আর তারাও আমার হইতে বিচ্ছিন্ন। বিশেষ করে আবদুল্লাহ কসম করে বলেন, “তাহাদের কারো যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকে এবং তা দান করে দেয়, তবুও তাক্বদীরের উপর ঈমান আনার পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহ তাহাদের এ দান কবুল করবেন না।”
অতঃপর তিনি বলেন, উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, তখন ধবধবে সাদা কাপড় পরিহিত ও মিশমিশে কালো চুলধারী এক ব্যক্তি আমাদের নিকট আসলেন। তার মধ্যে ভ্রমণের কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছিলো না, আবার আমাদের মধ্যকার কেউ তাহাকে চিনতেও পারছে না। তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বসলেন। অতঃপর তাহাঁর [নাবী [সাঃআঃ]] দুই হাঁটুর সঙ্গে নিজের দুই হাঁটু মিশিয়ে এবং নিজের দুহাত তাহাঁর উরুর উপর রেখে বলিলেন, হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সম্বন্ধে বলুন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, ইসলাম হলো এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর রাসূল, সলাত ক্বায়িম করিবে, যাকাত দিবে, রমযানের সিয়াম পালন করিবে এবং বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ করিবে যদি সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য থাকে। তিনি বলিলেন, ঠিক বলিয়াছেন। তিনি [উমার] বলেন, তার আচরণ আমরা বিস্মিত হলাম কারণ, তিনি প্রশ্ন করছেন আবার নিজেই তার সমর্থন করছেন। পুনরায় তিনি বলেন, আমাকে বলুন ঈমান কি? তিনি বলিলেন, আপনি আল্লাহর উপর, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহে, তাহাঁর রাসূলগণ, পরকাল ও তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস করবেন। তিনি বলিলেন, হাঁ, ঠিক বলিয়াছেন। এবার আমাকে বলুন ইহসান কি? তিনি বলিলেন, “আল্লাহর ইবাদত এরূপ নিষ্ঠার সঙ্গে করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন। আর যদি আপনি তাঁকে দেখিতে নাও পান তবুও মনে করবেন যে, তিনি আপনাকে দেখছেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, ক্বিয়ামাত কবে হইবে তা আমাকে বলুন। তিনি বলিলেনঃ এ বিষয়ে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি প্রশ্নকারীর চেয়ে অধিক জানেন না। তিনি এবার বলিলেন, তাহলে ক্বিয়ামাতের নিদর্শনসমূহ বলুন। তিনি বলিলেন, দাসী আপন মনিবকে জন্ম দিবে এবং নাঙ্গা পা ওয়ালা বস্ত্রহীন দেহ গরীব মেষ চালকদেরকে দালানকোঠা নিয়ে গর্ব করিতে দেখবে। তিনি [উমার] বলেন, অতঃপর লোকটি চলে গেলেন এবং এরপর আমি তিন দিন কাটালাম। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, হে উমার! তুমি কি জানো, প্রশ্নকারী কে? আমি বলিলাম, আল্লাহ্ ও তাহাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বলেন, তিনি হচ্ছেন জিবরীল [আঃ], তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিখানোর জন্য তোমাদের নিকট এসেছিলেন।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৯৬. ইয়াহ্ইয়া ইবনি ইয়ামুর ও হুমাইদ ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তারা উভয়ে বলেন, একদা আমরা আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাহাকে তাক্বদীর ও এ বিষয়ে সমালোচনাকারীদের বক্তব্যও তুলে ধরি। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ। এতে আরো রয়েছেঃ তিনি বলেন, মুযাইনাহ বা জুহাইনাহ গোত্রের এক ব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যা করি তা কি পূর্ব নির্ধারিত অনুযায়ী করি, না স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে থাকে? তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, আমাদের আমল পূর্ব-নির্ধারিত। তখন লোকটি বা উপস্থিত লোকদের কেউ বললো, তাহলে আমাদের আমলের মূল্য কি? তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ জান্নাতীদের জন্য জান্নাতের উপযোগী আমল করা সহজ করে দেয়া হয় এবং জাহান্নামীদের জন্য জাহান্নামের উপযোগী আমল করা সহজ করে দেয়া হয়।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৯৭. ইবনি ইয়ামুর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি ইয়ামুর [রাদি.] সূত্রে এ হাদিস কম-বেশি বক্তব্যসহ বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলিলেন, ইসলাম কি? তিনি [রাদি.] বলিলেন, সলাত কায়িম করা, যাকাত দেয়া, বায়তুল্লাহর হাজ্জ করা, রমযান মাসের সওম রাখা এবং জানাবাতের গোসল করা। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আলক্বামাহ ইবনি মারসাদ হলেন মুরজিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৯৮. আবু যার ও আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তারা উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসে সাধারণত সাহাবীদের মধ্যেই বসতেন। ফলে কোন অপরিচিত ব্যক্তি আসলে প্রশ্ন না করা পর্যন্ত বলিতে পারতেন না যে, কোন ব্যক্তিটি নাবী [সাঃআঃ]। অতএব আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আবেদন করলাম যে, আমরা তাহাঁর জন্য একটা বিশেষ স্থান নির্দিষ্ট করবো যেন আগন্তুকরা দেখেই তাঁকে চিনতে পারে। বর্ণনাকারী বলেন, সুতরাং আমরা তাহাঁর জন্য মাটি দিয়ে একটি বসার স্থান বানালাম এবং তিনি তার উপর বসলেন আর আমরা তাহাঁর নিকটে বসলাম। অতঃপর বর্ণনাকারী অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি এসে উপস্থিত হলো। বর্ণনাকারী তার দৈহিক গঠনেরও বর্ণনা দিলেন। সে উপস্থিত জনতার এক প্রান্ত হইতে সালাম দিলো। সে বললো, হে মুহাম্মাদ! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। বর্ণনাকারী বলেন, নাবী [সাঃআঃ] তার সালামের জবাব দিলেন।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৬৯৯. আবু আবদুল্লাহ ইবনিল দায়লামী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি উবাই ইবনি কাব [রাদি.] -এর নিকট এসে তাহাকে বলিলাম, তাক্বদীর সম্পর্কে আমার মনে একটা দ্বিধার উদ্রেক হয়েছে। তাই আপনি আমাকে এমন কিছু বলুন যার বিনিময়ে আশা করি মহান আল্লাহ আমার মনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর করবেন। তিনি বলিলেন, মহান আল্লাহ তাহাঁর আসমান ও পৃথিবীবাসী সকলকে শাস্তি দিতে পারেন। তারপরও তিনি তাহাদের প্রতি অন্যায়কারী সাব্যস্ত হইবেন না। পক্ষান্তরে, তিনি যদি তাহাদের সকলকে দয়া করেন তাহলে তাহাঁর এ দয়া তাহাদের জন্য তাহাদের নেক আমল হইতে উত্তম হইবে। সুতরাং যদি তুমি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর পথে দান করো আর তাক্বদীরে বিশ্বাস না রাখো, তবে তা গ্রহণ করা হইবে না যতক্ষণ না তুমি পুনরায় তাক্বদীরে বিশ্বাস করিবে এবং উপলব্ধি করিবে যে, যা তোমার ঘটেছে তা ভুলেও তোমাকে এড়িয়ে যাওয়ার ছিল না। পক্ষান্তরে, যা এগিয়ে গেছে তা কখনো ভুলেও তোমার বেলায় ঘটবার ছিল না। আর এ বিশ্বাস ছাড়া তুমি মারা গেলে জাহান্নামে যাবে। ইবনিদ দায়লামী বলেন, অতঃপর আমি আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] -এর নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর উদ্বৃতি দিয়ে একই কথা বলেন।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭০০. আবু হাফসাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা উবাদাহ ইবনিস সামিত [রাদি.] তার ছেলেকে বলিলেন, হে আমার প্রিয় পুত্র! তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানের স্বাদ পাবে না যতক্ষণ না তুমি জানতে পারবে “যা তোমার উপর ঘটেছে তা ভুলেও এড়িয়ে যাওয়ার ছিল না। পক্ষান্তরে, যা এড়িয়ে গেছে তা তোমার উপর ভুলেও ঘটবার ছিল না। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হচ্ছে কলম। অতঃপর তিনি তাহাকে বলিলেন, লিখো! কলম বললো, হে রব! কি লিখবো? তিনি বলিলেন, ক্বিয়ামাত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক বস্তুর তাক্বদীর লিখো। হে আমার প্রিয় পুত্র! আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এরূপ বিশ্বাস ছাড়া মারা যায় সে আমার [উম্মাতের] নয়।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭০১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেন, আদম [আঃ] ও মূসা [আঃ] পরস্পর বিতর্কে প্রবৃত্ত হলেন। মূসা [আঃ] বলিলেন, হে আদম! আপনি আমাদের পিতা, আপনি আমাদেরকে জান্নাত হইতে বঞ্চিত ও বিতাড়িত করেছেন। আদম [আঃ] বলিলেন, তুমি তো সেই মূসা, আল্লাহ তোমাকে তাহাঁর কালামের জন্য মনোনীত করেছেন এবং নিজ হাতে তোমার জন্য তাওরাত লিখে দিয়েছেন। তুমি আমাকে এমন একটি কাজের জন্য তিরস্কার করছো যা আমি করবো বলে আমার সৃষ্টির চল্লিশ বছর পূর্বে তিনি সিদ্ধান্ত করে রেখেছেন। অতএব, এ বিতর্কে আদম [আঃ] মূসা [আঃ]-এর উপর বিজয়ী হলেন।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭০২. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ মূসা [আঃ] বলিলেন, হে রব! যে আদম [আঃ] আমাদেরকে ও তাহাঁর নিজেকে জান্নাত হইতে বিতাড়িত করেছেন, তাঁকে আমি দেখিতে চাই। অতঃপর মহান আল্লাহ তাঁকে আদম [আঃ]-কে দেখালেন। তিনি বলিলেন, আপনিই আমাদের পিতা আদম [আঃ]? আদম [আঃ] তাঁকে বলিলেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি বলিলেন, আপনি সেই মহান ব্যক্তি যাঁর মধ্যে মহান আল্লাহ তাহাঁর পক্ষ হইতে রূহ সঞ্চার করেছেন এবং আপনাকে সকল কিছুর নাম শিখিয়েছেন, আর ফেরেশতাহাদেরকে হুকুম দিলে তারা আপনাকে সাজদাহ্ করেছেন। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি পুনরায় বলিলেন, আমাদেরকে ও আপনার নিজেকে জান্নাত হইতে বহিষ্কার করার জন্য আপনাকে কোন বস্তু উদ্বুদ্ধ করেছিল? এবার আদম [আঃ] বলিলেন, তুমি কে? তিনি বলিলেন, আমি মূসা [আঃ]। তিনি বলিলেন, তুমি বনী ইসরাঈলের এমন একজন নাবী যাঁর সাথে আল্লাহ পর্দার অন্তরাল হইতে কথা বলিয়াছেন এবং তোমার ও তাহাঁর মাঝে সৃষ্টি জগতের কাউকে বার্তাবাহক হিসেবে গ্রহণ করেননি। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তুমি কি আল্লাহর কিতাবে দেখিতে পাওনি যে, সেটি নির্ধারিত ছিল আমাকে সৃষ্টি করার পূর্বেই? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, যে বিষয়ে মহান আল্লাহর সিদ্ধান্ত আমার পূর্ব হইতেই লিপিবদ্ধ সে ব্যাপারে আমাকে কেন অভিযুক্ত করছো? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সুতরাং এ বিতর্কে আদম [আঃ] মূসা [আঃ]-এর উপর জয়ী হলেন।
এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৪৭০৩. মুসলিম ইবনি ইয়াসার আল্-জুহানী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একদা উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] -কে এ আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলোঃ “যখন তোমার রব আদম সন্তানের পিঠ হইতে তাহাদের সমস্ত সন্তানদেরকে বের করিলেন…” [সূরাহ আল-আরাফঃ ১৭২]। বর্ণনাকারী বলেন, আল্-কানাবী এ আয়াত পড়েছিলেন। উমার [রাদি.] বলেন, আমি এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট প্রশ্ন করিতে শুনিয়াছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ মহান আল্লাহ আদম [আঃ]-কে সৃষ্টি করার পর স্বীয় ডান হাতে তাহাঁর পিঠ বুলিয়ে তা থেকে তাহাঁর একদল সন্তান বের করে বলিলেন, আমি এদেরকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং এরা জান্নাতবাসীর উপযোগী কাজই করিবে। অতঃপর আবার তাহাঁর পিঠে হাত বুলিয়ে একদল সন্তান বের করিয়ে বলিলেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং এরা জাহান্নামীদের উপযোগী কাজই করিবে। একথা শুনে এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমলের কি মূল্য রইলো? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, মহান আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন তখন তার দ্বারা জান্নাতীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষে সে জান্নাতীদের কাজ করেই মারা যায়। আর আল্লাহ এর বিনিময়ে তাহাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যখন তিনি কোন বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজ করিয়ে নেন। অবশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করে মারা যায়। অতঃপর এজন্য তিনি তাহাকে জাহান্নামে প্রবেশ করান।
সহিহ, পিঠ বুলানো কথাটি বাদে। ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭০৪. নুআইম ইবনি রবীআহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ.
তিনি বলেন, একদা আমি উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। অতঃপর অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। তবে ঈমাম মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণিত হাদিস অধিক পূর্ণাঙ্গ। {৪৭০৩}
আমি এটি সহিহ এবং যঈফে পাইনি। {৪৭০৩} তিরমিজি। এই হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৪৭০৫. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ছেলেটিকে খাদির [খিযির] হত্যা করেছিলেন, তাহাকে কাফির হিসেবেই সীলমোহর করা হয়েছিল। সে বেঁচে থাকলে তার পিতা-মাতাহাকে সীমালঙ্ঘন ও কুফরীর দ্বারা বিব্রত করতো।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭০৬. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আল্লাহর এ বাণী সম্পর্কে বলিতে শুনেছিঃ “আর কিশোরটি, যার মাতা-পিতা ছিল মুমিন” [সূরাহ কাহ্ফঃ ৮০], যেদিন মোহর মারা হয়েছিল সেদিন তাহাকে কাফির হিসেবেই সীলমোহর মারা হয়েছিল।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭০৭. উবাই ইবনি কাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ খালিদ [খিযির] একটি কিশোরকে বালকদের সঙ্গে খেলাধূলারত দেখিতে পেলেন। অতঃপর তিনি তার মাথা ধরে কাবু করে তাহাকে হত্যা করিলেন। তখন মূসা [আঃ] বলিলেনঃ আপনি এক নিষ্পাপ জীবন হত্যা করিলেন…” [সূরা কাহ্ফঃ ৭৪]।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭০৮. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নিকট বর্ণনা করেনঃ তিনি তো ছিলেন সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে স্বীকৃত। তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি চল্লিশ দিন তার মায়ের গর্ভে শুক্ররূপে থাকে, অতঃপর চল্লিশ দিন রক্তপিন্ডরূপে বিরাজ করে; তারপর চল্লিশ দিনে মাংসপিন্ডরূপ ধারণ করে। অতঃপর মহান আল্লাহ তার নিকট একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন এবং তাহাকে চারটি বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়। তখন সে তার রিযিক, মৃত্যু, আমল এবং সে নেককার নাকি বদকার তাও লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর তার মধ্যে রূহ প্রবেশ করানো হয়। বস্তুত, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ জান্নাতের উপযোগী কাজ করিতে থাকে। এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত বা এক হাত পরিমাণ দূরত্ব থাকে, এমন সময় তার সামনে তার তাক্বদীরের লেখা অগ্রবর্তী হয়, তখন সে জাহান্নামীদের কাজ করে, ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবার তোমাদের কেউ জাহান্নামীদের কাজ করিতে থাকে, এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে মাত্র এক হাত বা এক হাত পরিমাণ দূরত্ব থাকে। এমন সময় তার সামনে সে লেখা অগ্রবর্তী হয় এবং সে জান্নাতীদের আমল করে, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭০৯. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহর রাসূল! কে জান্নাতবাসী আর কে জাহান্নামবাসী তা কি জানা গেছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। প্রশ্নকারী বললো, তাহলে কিসের জন্য আমলকারীরা আমল করিবে? তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, প্রত্যেকের জন্য তাই সহজতর যার জন্য তাহাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭১০. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যারা তাক্বদীরে বিশ্বাস করে না তোমরা তাহাদের সঙ্গে ওঠা-বসা করো না এবং তোমাদেরকে সম্বোধন করার আগে তাহাদেরকে সম্বোধন করো না। {৪৭০৯}
দুর্বলঃ মিশকাত হা/১০৮। {৪৭০৯} আহমাদ, হাকিম। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৮ঃ মুশরিকদের শিশু সন্তান সম্পর্কে
৪৭১১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা নাবী [সাঃআঃ]-কে মুশরিকদের [নাবালেগ] শিশু সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ আল্লাহই অধিক জ্ঞাত, তারা [বেঁচে থাকলে] কিরূপ আমল করতো।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭১২. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! মুমিনদের শিশু সন্তানদের কি হইবে? তিনি বলিলেন, তারা তাহাদের পিতাহাদের অন্তর্ভূক্ত হইবে। অতঃপর বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! কোন নেক আমল ছাড়াই? তিনি বলিলেন, আল্লাহই অধিক জ্ঞাত, তারা কি আমল করতো। আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! মুশরিকদের সন্তানদের কি হইবে? তিনি বলিলেন, তারাও তাহাদের পিতাহাদের অন্তর্গত হইবে। আমি বলিলাম, কোন আমল ছাড়াই? তিনি বলিলেন, আল্লাহই অধিক জ্ঞাত, তারা [বেঁচে থাকলে] কিরূপ আমল করতো।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭১৩. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট জানাযার সালাতের জন্য এক আনসারী বালকের লাশ আনা হলো। আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, তখন আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এর কি সৌভাগ্য সে কোন গুনাহ করেনি এবং তার বয়সও পায়নি। তিনি বলিলেন, হে আয়িশাহ! এর বিপরীত কি হইতে পারে না? মহান আল্লাহ জান্নাত ও তার অধিবাসীদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা যখন তাহাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তখন তারা তাহাদের পিতাহাদের মেরুদন্ডে ছিল। আবার তিনি জাহান্নাম ও তার জন্য একদল ভুক্তভোগী সৃষ্টি করেছেন এবং তা তাহাদের জন্য যখন তিনি সৃষ্টি করেছেন তখন তারা তাহাদের পিতাহাদের মেরুদন্ডে ছিল।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭১৪ . আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ প্রতিটি সন্তানই ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাহাদেরকে ইয়াহুদী বা খৃস্টান বানায়। যেভাবে উট পূর্ণাঙ্গ পশুই জন্ম দেয়, তাতে তোমরা কোন কান কাটা দেখো কি? সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! অপ্রাপ্ত বয়সে মারা যায় এমন শিশু সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বলেন, আল্লাহই ভালো জানেন, তারা কিরূপ আমল করতো।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭১৫. ইবনি ওয়াহ্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আমি ঈমাম মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -এর নিকট বলিতে শুনিয়াছি প্রবৃত্তির পূজারীরা আমাদের বিরুদ্ধে উপরোক্ত হাদিস দলীল হিসেবে পেশ করে থাকে। তারা বলে যে, নাবালেগ অবস্থায় মারা গেছে এমন সন্তান সম্পর্কে আপনার মতামত কি? তিনি বলেনঃ তারা কিরূপ আমল করতো তা আল্লাহ্ই ভালো জানেন।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু
৪৭১৬. হাজ্জাজ ইবনিল মিনহাল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আমি হাম্মাদ ইবনি সালাম [রাদি.] -কে “প্রত্যেক সন্তান ফিতরাতের [সত্য ধর্মের] উপর জন্মগ্রহণ করে”-এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলিতে শুনেছিঃ এটা আমাদের নিকট সেই ওয়াদা যা পিতার মেরুদন্ডে অবস্থানকালে আল্লাহ তাহাদের কাছ থেকে ওয়াদা গ্রহণকালে বলেছিলেনঃ আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলেছিল, হ্যাঁ।
এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু
৪৭১৭. আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ ] বলিয়াছেনঃ যে মহিলা তার কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবরস্হ করেছে এবং যে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করা হয়েছে তারা উভয়ে জাহান্নামী।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭১৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা এক ব্যাক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কোথায়? তিনি বলিলেনঃ তোমার পিতা জাহান্নামে। অতঃপর যখন সে পিঠ ফিরিয়ে চলে যেতে লাগলো তখন তিনি বলিলেন, তোমার পিতা ও আমার পিতা জাহান্নামে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭১৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ শয়তান আদম সন্তানের শিরা-উপশিরায় রক্তের ন্যায় প্রবাহিত হয়।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭২০.উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যারা তাক্বদীরে বিশ্বাস করে না তোমরা তাহাদের সঙ্গে ওঠা-বসা করিবে না এবং তোমাদেরকে সন্মোধন করার আগে তাহাদেরকে সম্বোধন করিবে না। {৪৭১৯}
দুর্বল।{৪৭১৯} এটি গত হয়েছে হা/৪৭১০। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৯ঃ জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায় সম্পর্কে
৪৭২১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ মানুষ পরস্পর প্রশ্ন করিতে থাকে, এমনকি শেষ পর্যন্ত বলে ফেলে যে, আল্লাহ তো সব কিছু সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? যখনই কেউ এরূপ কিছু অনুভব করিবে তখন সে যেন বলে, আমি আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭২২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি। অতঃপর উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ। তিনি বলেন, যখন তারা এরূপ কথা বলবে তখন তোমরা বলো, আল্লাহ একক, আল্লাহ অভাবমুক্ত, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তিনি কারো সন্তান নন। আর কেউই তাহাঁর সঙ্গে তুলনাযোগ্য নয়। অতঃপর যেন বামদিকে তিনবার থুথু ফেলে এবং শয়তানের [কুমন্ত্রণা] থেকে আশ্রয় চায়।
এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৪৭২৩. আবদুল মুত্তালিবে পুত্র আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একদল লোকের সঙ্গে আল্-বাতহা উপত্যকায় ছিলাম, সেখানে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও ছিলেন। তাহাদের মাথার উপর দিয়ে একখন্ড মেঘ উড়ে গেলো। তিনি [সাঃআঃ] সেটির দিকে তাকিয়ে বলিলেন, তোমরা একে কি বলো? সাহাবীগণ বলিলেন, মেঘ [সাহাব]। তিনি বলিলেন, আল্-মুয্ন? তারা বলিলেন, এবং মুয্নও [সাদা মেঘ]। তিনি বলিলেন, আল আল্-আনান? তারা বলিলেন, আল্-আনানও। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আনান শব্দটি আমি ভালোভাবে মুখস্ত করিতে পারিনি। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা কি জানো, আসমান ও যমীনের মাঝে কতটুকু দূরত্ব? তারা বলিলেন, না। তিনি বলিলেন, উভয়ের মধ্যকার দূরত্বের পরিমাণ হলো একাত্তর বা বায়াত্তর বা তিয়াত্তর বছরের সমান। তারপর এর মতই দুরত্বে প্রথম আসমান, এভাবে পরপর সাতটি আসমানের দূরত্ব নির্দেশ করিলেন। অতঃপর সপ্তম আসমানের উপরে একটি সমুদ্র রয়েছে যার উপর ও নীচের মধ্যকার গভীরতা আসমান ও যমীনের মধ্যকার দূরত্বের সমান। এর উপরে আটটি পাহাড়িঁ ছাগল রয়েছে যার ক্ষুর ও হাঁটুর মধ্যকার দূরত্ব আসমান ও যমীনের মধ্যকার দুরত্বের সমান। তারপর এদের পিঠের উপরে রয়েছে মহান আরশ যার উপর ও নীচের মধ্যকার দূরত্বও আসমান ও যমীনের মধ্যকার দুরত্বের সমান। অতঃপর আর উপর রয়েছেন বরকতময় মহান আল্লাহ। {৪৭২২}
দুর্বল। {৪৭২২} ইবনি মাজাহ, আহমাদ। আহমাদ শাকির বলেনঃ এর সনদ খুবই দুর্বল। সানাদে রয়েছে ইয়াহইয়া ইবনিল আলা। হাফিয বলেনঃ তার ওপর হাদিস জাল করার আরোপ আছে। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৭২৪. সিমাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অর্থানুরূপ বর্ণিত।
এই হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৪৭২৫. সিমাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
এ সানাদে উপর্রোক্ত দীর্ঘ হাদিসের অর্থানুরূপ বর্ণিত।
এই হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
৪৭২৬. জুবাইর ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি জুবাইর ইবনি মুত্বঈম তার পিতা হইতে তার দাদা সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক বেদুঈন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! লোকজন খুবই কষ্ট করছে, পরিবার-পরিজন, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, ধন-সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে এবং জীবজন্তু মরে যাচ্ছে। সুতরাং, আপনি আমাদের জন্য মহান আল্লাহ্র নিকট বৃষ্টি প্রার্থনা করুন। কেননা, আমরা আপনার সুপারিশ নিয়ে আল্লাহ্র নিকট যাই এবং আল্লাহ্র সুপারিশ নিয়ে আপনার নিকট আসি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তোমার জন্য দুঃখ হয়! তুমি কি জানো! তুমি কি বলছো? অতঃপর তিনি তাসবীহ পড়তে থাকলেন, এমনকি তাহাঁর সাহাবীদের মধ্যেও এর [অসন্তুষ্টির] চিহ্ন পরিলক্ষিত হলো। তিনি আবার বলিলেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়! আল্লাহ্র সুপারিশ নিয়ে তাহাঁর কোনো সৃষ্টির নিকট যাওয়া যায় না। আল্লাহ্র মর্যাদা এর চেয়ে অনেক উর্ধে, অনেক মহান। তোমার জন্য দুঃখ হয়! তুমি কি জানো আল্লাহ কে? তাহাঁর আরশ আসমানের উপর এভাবে আছে। তিনি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলিলেন, তাহাঁর উপর রয়েছে গম্বুজ সদৃশ ছাদ। তা সত্ত্বেও তা [আরশ] তাঁকে নিয়ে গোঙ্গানীর মত শব্দ করে, যেমনটি করে আরোহীর কারণে জিনপোষ। ইবনি বাশ্শার তার হাদিসে বলেন, মহান আল্লাহ তাহাঁর আরশের উপরে এবং তার আরশ আসমানসমূহের উপরে। অতঃপর হাদিসটি এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। {৪৭২৫}
দূর্বলঃ মিশকাত হা/৫৭২৭। {৪৭২৫} ইবনি আবু আসিম আস-সুন্নাহ এবং ইবনি খুযাইমাহ আত-তাওহীদ। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৭২৭. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ্র যে সকল ফেরেশতা আরশ বহন করেন তাহাদের একজনের সঙ্গে আলাপ করার জন্য আমাকে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তার কানের লতি হইতে কাঁধ পর্যন্ত স্থানের দূরত্ব হলো সাতশো বছরের দূরত্বের সমান।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭২৮. আবু হুরায়রা [রাদি.]-এর মুক্তদাস আবু ইউনুস সুলাইম ইবনি জুবাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা [রাদি.] -কে এ আয়াতটি পড়তে শুনেছিঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আমানতসমূহ তার প্রাপকের নিকট পৌঁছিয়ে দিতে আদেশ করছেন,… আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা” [সূরাহ আন-নিসাঃ ৫৮] পর্যন্ত। আবু হুরায়রা বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর বৃদ্ধা আঙ্গুলকে কানে এবং তর্জনীকে দুই চোখের উপর রাখতে দেখেছি। আবু হুরায়রা [রাদি.] বলেন, আমি রসূলুল্লাহকে [সাঃআঃ] [আয়াতটি] পড়তে দেখেছি এবং তাহাঁর আঙ্গুল দুটি রাখতে দেখেছি। ইবনি ইউনুস বলেন, আল-মুকরী বলিয়াছেন, অর্থাৎ “আল্লাহ নিশ্চয়ই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা” -এর অর্থ হলো আল্লাহ্র শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তি আছে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এতে জাহমিয়াদের মতবাদ বাতিল হয়ে যায়।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২০ঃ আল্লাহ্র দর্শন লাভ
৪৭২৯. জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি চৌদ্দ তারিখের রাতে পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলিলেন, অচিরেই তোমরা তোমাদের রবকে দেখিতে পাবে যেমন তোমরা এ চাঁদকে দেখছো, আর একে দেখিতে তোমাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে না। যদি তোমরা সূর্যোদয়ের ও সূর্যাস্তের পূর্বে সলাত আদায়ে পরাভূত না হও তাহলে তা আদায় করে নাও। অতঃপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করো”।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৩০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহকে দেখিতে পাবো? তিনি বলিলেন, মেঘহীন দুপুরে তোমাদের কি সূর্য দেখিতে কষ্ট হয়? সাহাবীগন বলিলেন, না। তিনি আবার প্রশ্ন করিলেন, মেঘহীন নির্মল আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দেখিতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বলিলেন, না। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, সেই, মহান সত্ত্বার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! তোমরা এর একটি [চাঁদ বা সূর্য] যেভাবে নির্বিঘ্নে দেখিতে পাও সেভাবে তাঁকেও তোমরা দেখবে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৩১. আবু রাযীন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি বলিলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের প্রত্যেকেই কি ক্বিয়ামাতের দিন তার রবকে দেখিতে পাবে? তাহাঁর সৃষ্টির মাঝে এর কোন নিদর্শন আছে কি? তিনি বলিলেন, হে আবু রাযীন! তোমাদের প্রত্যেকে কি পূর্ণিমা রাতের চাঁদ দেখে না [অর্থাৎ চৌদ্দ তারিখে নির্মল আকাশে]? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তাহলে আল্লাহ তো মহান। ইবনি মুআস বলেন, তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, তা [চাঁদ] তো আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যকার একটি সৃষ্টি। আর আল্লাহ তো মহিমান্বিত ও সুমহান।
এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-২১ঃ জাহ্মিয়্যাহ মতবাদ প্রত্যাখ্যাত
৪৭৩২. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন আসমানসমূহকে গুটিয়ে তাহাঁর ডান হাতে নিয়ে বলবেন, আমিই সর্বময়কর্তা ও মালিক, স্বৈরাচারীরা ও অহংকারীরা কোথায়? অতঃপর পৃথিবীসমূহকে গুটিয়ে অপর হাতে নিয়ে বলবেন, আমিই মালিক স্বৈরাচারীরা ও অহংকারীরা কোথায়?
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৩৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ রাতের এক-তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আমাদের মহান রব দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে এসে বলিতে থাকেনঃ ওহে কে আছো আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিবো, কে আছো আমার নিকট কিছু চাইবে, আমি তাহাকে তা দিবো, কে আছো আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিবে, আমি তাহাকে ক্ষমা করে দিবো।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২২ঃ আল-কুরআন সম্পর্কে
৪৭৩৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মানুষ একত্রিত হওয়ার স্থানে [আরাফাহ ময়দানে] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লোকদের সামনে নিজেকে পেশ করে বলিতেনঃ এমন কোন ব্যক্তি আছে কি যে আমাকে তার গোত্রের কাছে নিয়ে যাবে? কেননা কুরাইশ গোত্রের লোকেরা আমাকে আমার রবের বাণী পৌঁছিয়ে দিতে বাধার সৃষ্টি করছে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৩৫. আমির ইবনি শাহর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নাজ্জাশীর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তার এক ছেলে ইনজীলের একটি আয়াত পড়লে আমি হাসলাম। তিনি বলিলেন, তুমি কি মহান আল্লাহর বাণী শুনে হাসছো!
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৩৬. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আমাকে উরওয়াহ ইবনিয যুবাইর, সাঈদ ইবনিল মুসাইয়াব, আলক্বামাহ ইবনি ওয়াক্কাস ও উবাইদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আয়িশাহ [রাদি.]-এর হাদিস সম্পর্কে জানিয়েছে যে, তিনি বলিয়াছেন, আমি নিজেকে এই পর্যায়ের মনে করতাম না যে, মহান আল্লাহ আমার সম্পর্কে এমন কথা বলবেন যা তিলাওয়াত করা হইবে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৩৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] হাসান ও হুসাইন [রাদি.]-এর জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করিতেন এভাবে ঃ “আমি তোমাদের দুজনের জন্য আল্লাহ্র পূর্ণাঙ্গ কালেমাসমূহের মাধ্যমে প্রত্যেক শয়তান ও বিষাক্ত প্রাণী হইতে এবং সকল প্রকার বদনজর হইতে মুক্তি চাইছি”। অতঃপর তিনি বলিতেন, তোমাদের পিতা [ইবরাহীম আঃ]-ও ইসমাঈল এবং ইসহাক্ব [আঃ] উভয়ের জন্য এ দুআ পড়ে আশ্রয় চাইতেন। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এতে প্রমাণিত হয় যে, আল-কুরআন মাখলুক নয়।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৩৮. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যখন মহান আল্লাহ্ ওয়াহী প্রেরণের কথা বলেন, তখন এক আকাশের অধিবাসীগণ অন্য আকাশ হইতে সাফা পর্বতের উপর দিয়ে শিকল টানার শব্দের মতই শব্দ শুনতে পায়। আর আওয়াজ শুনে তারা বেহুঁশ হয়ে যায় এবং জিবরীল [আঃ] তাহাদের নিকট উপস্থিত হলে তাহাদের অন্তর হইতে ভয় বিদূরিত হয়ে তারা হুঁশ ফিরে পায়। অতঃপর তারা বলে, হে জিবরীল! আপনার রব কী বলিয়াছেন? তিনি বলেন, যা সত্য তাই বলিয়াছেন। তখন তারা বলে, সত্যই বলিয়াছেন, সত্যই বলিয়াছেন।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২৩ঃ শাফাআত সম্পর্কে
৪৭৩৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেন, আমার উম্মাতের কবীরাহ গুনাহগারদের জন্য আমার শাফাআত।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৪০. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমার উম্মাতের একটি গোত্র আমার শাফাআত পেয়ে জাহান্নাম হইতে মুক্তি লাভ করে বেরিয়ে আসবে, অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে, আর তাহাদেরকে জাহান্নামের অধিবাসী নামেই আখ্যায়িত করা হইবে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৪১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ জান্নাতের অধিবাসীরা সেখানে পানাহার করিবে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২৪ঃ পুনরুত্থান ও শিঙ্গায় ফুৎকারের বর্ণনা
৪৭৪২. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেন, সূর একটি শিং-এর ন্যায়, তাতে ফুঁ দেয়া হইবে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৪৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ প্রতিটি আদম সন্তানকে মাটি খেয়ে ফেলবে, শুধু মেরুদন্ডের নীচের হাড়টুকু বাকী থাকিবে। এ হইতেই তাহাকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এ হইতেই তাহাকে পুনর্গঠন করা হইবে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২৫ঃ জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি সম্পর্কে
৪৭৪৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ মহান আল্লাহ্ জান্নাত তৈরি করে জিবরীল [আঃ]-কে আদেশ দিলেন, তুমি গিয়ে তা দেখে এসো। অতএব তিনি সেখানে গিয়ে তা দেখে এসে বলিলেন, হে রব! আপনার ইজ্জতের কসম! এটি সম্পর্কে যে-ই শুনবে সে তাতে প্রবেশ না করে ছাড়বে না। তারপর তিনি [আল্লাহ্] তাহাকে কষ্টসাধ্য বিষয়সমূহ দ্বারা বেষ্টিত করে পুনরায় বলিলেন, হে জিবরীল! এবার আবার গিয়ে তা দেখে আসো। অতএব তিনি আবার গিয়ে দেখে এসে বলিলেন, হে রব, আপনার মর্যাদার কসম! আমার অত্যন্ত ভয় হচ্ছে যে, কেউই তাতে প্রবেশ করিতে পারবে না। তিনি [রাদি.] বলিলেন, অতঃপর মহান আল্লাহ্ জাহান্নাম তৈরি করে বলিলেন, হে জিবরীল! তুমি গিয়ে তা দেখে এসো। অতএব তিনি তা দেখে এসে বলিলেন, হে আমার রব! আপনার ইজ্জতের কসম! কেউই তাতে প্রবেশ করিতে চাইবে না। তারপর আল্লাহ্ একে লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা ইত্যাদি আকর্ষণে আচ্ছাদিত করে পুনরায় জিবরীল [আঃ]-কে বলিলেন, যাও তা দেখে এসো! তিনি সেখানে গিয়ে তা দেখে এসে বলিলেন, হে রব! আপনার মর্যাদার কসম! আমার ভয় হচ্ছে যে, কেউই অবশিষ্ট থাকিবে না, সকলেই তাতে প্রবেশ করিবে।
এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ-২৬ঃ হাওযে কাওসার সম্পর্কে
৪৭৪৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ নিশ্চয়ই তোমাদের সামনে যে হাওয্ রয়েছে তার বিস্তৃতি জারবাহ ও আয্রুহ-এর মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্বের সমান।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৪৬. যায়িদ ইবনি আরক্বাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সফরকালে এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলে তিনি বলেনঃ হাওযে কাওসারে যেসব লোক আমার নিকট উপস্থিত হইবে, তাহাদের তুলনায় তোমরা তাহাদের এক লাখ ভাগের এক ভাগ মাত্র। তিনি [বর্ণনাকারী আবু হামযাহ] বলিলেন, আমি [যায়িদ ইবনি আরক্বামকে] বলিলাম, আপনারা সেখানে তখন কতজন ছিলেন? তিনি বলিলেন, সাতশো অথবা আটশো।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৪৭. আল-মুখতার ইবনি ফুলফুল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] -কে বলিতে শুনিয়াছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেন। অতঃপর মুচকি হেসে মাথা তুলে তিনি তাহাদেরকে অথবা তাঁকে তারা বলিলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি কেন হাসলেন? তিনি বলিলেন, এইমাত্র আমার উপর একটি সূরাহ্ নাযিল হয়েছে। অতঃপর তিনি পড়লেন, পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহ্র নামে। “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে আল-কাওসার দান করেছি”। এভাবে তিনি সূরাটি পাঠ শেষ করে বলিলেন, তোমরা কি জানো কাওসার কী? তারা বলিলেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেন, তা এমন একটি পানির ঝর্ণা যা আমার রব জান্নাতে সৃষ্টি করে রেখেছেন। তাতে অসংখ্য কল্যাণ বিদ্যমান। তাতে হাওযে কাওসারও রয়েছে। আমার উম্মাতগণ ক্বিয়ামাতের দিন সেখানে উপস্থিত হইবে। এর পানপাত্রের সংখ্যা হইবে [আকাশের] তারকার সমপরিমাণ।
এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৪৭৪৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মিরাজের রাতে নাবী [সাঃআঃ]-কে জান্নাতে পরিভ্রমণ করানো হয়। এ সময় তাহাঁর সামনে একটি নহর উপস্থিত করা হয় যার উভয় তীর খাঁটি নীলকান্ত মণি দ্বারা সুশোভিত ছিল। যে ফেরেশতা তাহাঁর সাথে ছিলেন, তার হাতে আঘাত করলে কস্তুরী বেরিয়ে আসে। অতঃপর মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর সফরসঙ্গী ফেরেশতাহাকে প্রশ্ন করিলেন, এটা কি? তিনি বলিলেন, এ হলো সেই কাওসার যা মহামহিমান্বিত আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৪৯. আবদুস সালাম ইবনি আবু হাযিম আবু তালূত [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আমি আবু বারযাহ [রাদি.] -কে দেখেছি, তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনি যিয়াদের সঙ্গে সাক্ষাত করিলেন। সেখানে লোকজনের সাথে উপস্থিত মুসলিম নামীয় এক ব্যক্তি আমার নিকট হাদিস বর্ণনা করে বলেন, উবাইদুল্লাহ তাঁকে দেখে বললো, তোমাদের এই বেঁটে ও মাংসল মুহাম্মাদী। শায়খ [আবু বারযাহ] কথাটি বুঝতে পারলেন। তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর সাহচর্য লাভকারী আমার মতো ব্যক্তি এসব লোকের মাঝে অবস্থান করা উচিৎ নয় যারা আমাকে [তাহাঁর সাহাবী হওয়ায়] দোষারোপ করে। উবাইদুল্লাহ তাহাকে বললো, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর সাহচর্য লাভ তো আপনার জন্য গৌরবের বিষয়, দোষের বিষয় নয়। পুনরায় সে বললো, আমি আপনার নিকট হাওযে কাওসার সম্পর্কে প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছি। আপনি কি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ বিষয়ে কিছু বলিতে শুনেছেন? আবু বারযাহ [রাদি.] বলেন, হ্যাঁ, একবার নয়, দুবার নয়, তিনবার নয়, চারবার নয়, পাঁচবার নয় [অনেকবার শুনিয়াছি]। যে ব্যক্তি তা মিথ্যা জানবে তাহাকে আল্লাহ তা হইতে পান করাবেন না। অতঃপর তিনি রাগান্বিত অবস্থায় চলে গেলেন।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২৭ঃ কবরের জিজ্ঞাসাবাদ এবং শাস্তি প্রসঙ্গে
৪৭৫০. আল-বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ নিশ্চয়ই মুসলিম ব্যক্তিকে যখন কবরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তখন সে এ সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আল্লাহর রাসূল। এ হচ্ছে আল্লাহ্র এ কালামের অর্থঃ “যারা শাশ্বত বাণীর উপর ঈমান এনেছে আল্লাহ তাহাদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন……” [সূরাহ ইবরাহীমঃ ২৭]।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৫১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বনী নাজ্জার গোত্রের একটি খেজুর বাগানে প্রবেশ করে একটা শব্দ শুনে শঙ্কিত হয়ে প্রশ্ন করিলেন, এ কবরগুলো কাদের? তারা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এরা সেসব লোক যারা জাহিলী যুগে মারা গেছে। তিনি বলিলেন, তোমরা আল্লাহর নিকট জাহান্নামের আযাব হইতে ও দাজ্জাল সৃষ্ট বিপর্যয় হইতে আশ্রয় চাও। তারা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তা কেন? তিনি বলিলেন, যখন কোন মুমিন ব্যক্তিকে তার কবরে রাখা হয় তখন তার নিকট একজন ফেরেশতা এসে তাহাকে বলে, তুমি কার ইবাদত করিতে? যদি আল্লাহ তাহাকে পথ দেখান তাহলে সে বলে, আমি আল্লাহর ইবাদত করতাম। অতঃপর তাহাকে প্রশ্ন করা হয়, তুমি এ ব্যক্তি [[মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]] সম্বন্ধে কি বলিতে? সে বলে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রাসূল! এরপর তাহাকে অন্য প্রশ্ন না করে তাহাকে নিয়ে এমন একটি ঘরে যাওয়া হয় যা তার জন্য জাহান্নামে [তৈরি করা] ছিল। অতঃপর তাহাকে বলা হয়, এটা তোমার ঘর যা জাহান্নামে তোমার জন্য ছিল। কিন্তু আল্লাহ তোমাকে এ হইতে রক্ষা করেছেন এবং দয়া করে এর পরিবর্তে তোমার জন্য জান্নাতে একটি ঘরের ব্যবস্থা করেছেন। তখন সে বলে, আমাকে একটু ছেড়ে দিন, আমি আমার পরিবার-পরিজনকে এ সুসংবাদটি দিয়ে আসি। তাহাকে বলা হইবে, তুমি এখানেই বসবাস করো। পক্ষান্তরে, যখন কোন কাফির ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয় তখন তার নিকট একজন ফেরেশতা এসে তাহাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, তুমি কার ইবাদত করিতে? সে বলে, আমি জানি না। অতঃপর তাহাকে বলা হয়, তুমি জানতে চাওনি এবং অনুসরণও করোনি। অতঃপর প্রশ্ন করা হয়, এ ব্যক্তি [[মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]] সম্বন্ধে তুমি কি বলিতে? সে বলবে, অন্যান্য লোক যা বলতো আমিও তাই বলতাম। তখন তার দুই কানের মধ্যস্থলে লোহার হাতুড়ী দিয়ে সজোরে আঘাত করা হয়। এতে সে এমন জোরে চিৎকার করে যে, মানুষ ও জিন জাতি ছাড়া অন্য সকল সৃষ্টিজীব তা শুনতে পায়।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৫২. আবদুল ওয়াহ্হাব [রাদি.] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। তিনি [সাঃআঃ] বলেন, যখন কোন লোককে কবরে রেখে তার সঙ্গীরা এতটুকু দূরে চলে যায় যেখান হইতে সে তাহাদের জুতার শব্দ শুনতে পায় তখন তার নিকট দুজন ফেরেশতা এসে বলে… অতঃপর প্রথমোক্ত হাদিসের অনুরূপ। তবে এতে কাফিরের সঙ্গে মুনাফিকের কথাও রয়েছে এবং বলা হয়েছেঃ আর কাফির ও মুনাফিককে প্রশ্ন করা হইবে। তিনি বলেন, মানুষ ও জিন ছাড়া যারা কবরের নিকট থাকে সকলেই চিৎকার শুনতে পায়।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৫৩. আল-বারাআ ইবনি আবিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আনসার গোত্রের এক ব্যক্তির জানাজায় শরীক হওয়ার জন্য রওয়ানা হয়ে কবরের নিকট গেলাম। কিন্তু তখনও কবর খনন শেষ হয়নি। তাই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বসলেন এবং আমরাও তাহাঁর চারিদিকে নীরবে তাঁকে ঘিরে বসে পড়লাম, যেন আমাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে। তখন তাহাঁর হাতে ছিল একখানা লাঠি, তা দিয়ে তিনি মাটিতে আঁচড় কাটছিলেন। অতঃপর তিনি মাথা তুলে দুই বা তিনবার বলিলেন, তোমরা আল্লাহর নিকট কবরের আযাব হইতে আশ্রয় চাও। বর্ণনাকারী জারীর তার আরো উল্লেখ করেন, তিনি [সাঃআঃ] বলেন, মৃত ব্যক্তি তাহাদের জুতার শব্দ শুনতে পায় যখন তারা ফিরে যেতে থাকে, আর তখনই তাহাকে বলা হয়, হে অমুক! তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কি এবং তোমার নাবী [সাঃআঃ] কে? হান্নাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, তিনি [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, অতঃপর তার নিকট দুজন ফেরেশতা এসে তাহাকে বসিয়ে উভয়ে প্রশ্ন করে, তোমার রব কে? তখন সে বলে, আমার রব আল্লাহ। তাঁরা উভয়ে তাহাকে প্রশ্ন করে, তোমার দ্বীন কি? সে বলে, আমার দ্বীন হলো ইসলাম। তারা প্রশ্ন করে, এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে? তিনি বলেন, সে বলে, তিনি আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]। তারপর তারা উভয়ে আবার বলে, তুমি কি করে জানতে পারলে? সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং সত্য বলে স্বীকার করেছি। জারীর বর্ণিত হাদিসে রয়েছেঃ এটাই হলো আল্লাহর এ বাণীর অর্থঃ “যারা এ শাশ্বত বাণীতে ঈমান এনেছে তাহাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন” [সূরাহ ইবরাহীমঃ ২৭]। এরপর বর্ণনাকারী জারীর ও হান্নাদ উভয়ে একইরূপ বর্ণনা করেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ অতঃপর আকাশ হইতে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, আমার বান্দা যথাযথ বলেছে। সুতরাং, তার জন্য জান্নাতের একটি বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাহাকে জান্নাতের পোষাক পরিয়ে দাও। এছাড়া তার জন্য জান্নাতের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। তিনি [সাঃআঃ] বলেন, সুতরাং, তার দিকে জান্নাতের স্নিগ্ধকর হাওয়া ও তার সুগন্ধি বইতে থাকে। তিনি আরো বলেন, ঐ দরজা তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করা হয়।
অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] কাফিরদের মৃত্যু প্রসঙ্গে বলেন, তার রূহকে তার শরীরে ফিরিয়ে আনা হয় এবং দুজন ফেরেশতা এসে তাহাকে বসিয়ে প্রশ্ন করে, তোমার রব কে? সে উত্তর দেয়, হায়! আমি কিছুই জানি না। তারপর তারা প্রশ্ন করেন, তোমার দ্বীন কি? সে বলে, হায়! আমি কিছুই জানি না। তারা প্রশ্ন করে, এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন তিনি কে? সে বলে, হায়! আমি তো জানি না। তখন আকাশের দিক হইতে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন, সে মিথ্যা বলেছে। সুতরাং, তার জন্য জাহান্নামের একটি বিছানা এনে বিছিয়ে দাও এবং তাহাকে জাহান্নামের পোষাক পরিয়ে দাও, আর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। তিনি বলেন, অতঃপর তার দিকে জাহান্নামের উত্তপ্ত বাতাস আসতে থাকে। এছাড়া তার জন্য তার কবরকে সংকীর্ণ করে দেয়া হয়, ফলে তার এক দিকের পাঁজর অপর দিকের পাঁজরের মধ্যে ঢুকে যায়। বর্ণনাকারী জারীর বর্ণিত হাদিসে রয়েছেঃ তিনি [সাঃআঃ] বলেন, অতঃপর তার জন্য এক অন্ধ ও বধির ফেরেশতাহাকে নিযুক্ত করা হয়, যার সঙ্গে একটি লোহার হাতুড়ী থাকিবে, যদি এ দ্বারা পাহাড়কে আঘাত করা হয় তাহলে তা ধূলায় পরিণত হয়ে যাবে। নাবী [সাঃআঃ] বলেন, তারপর সে তাহাকে হাতুড়ী দিয়ে সজোরে আঘাত করিতে থাকে, এতে সে বিকট শব্দে চিৎকার করিতে থাকে যা মানুষ ও জিন ছাড়া পূর্ব হইতে পশ্চিম পর্যন্ত সকল সৃষ্টি জীবই শুনতে পায়। আঘাতের ফলে সে মাটিতে মিশে যায়। তিনি বলেন, অতঃপর [শাস্তি অব্যাহত রাখার জন্য] পুনরায় তাতে রুহ ফেরত দেয়া হয়।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৫৪. আল-বারাআ [রাদি.] হইতে নাবী [সাঃআঃ]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরপ বর্ণিত। {৪৭৫৩}
আমি এটি সহিহ এবং যঈফে পাইনি। {৪৭৫৩} এর পূর্বেরটি দেখুন। ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২৮ঃ মীযান প্রসঙ্গ
৪৭৫৫. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা তিনি জাহান্নামের কথা স্মরণ করে কাঁদলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তুমি কাঁদছো কেন? তিনি বলিলেন, জাহান্নামের কথা স্মরণ হওয়ায় কাঁদছি। আপনি কি ক্বিয়ামাতের দিন আপনার পরিবারের কথা মনে রাখবেন? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ অবশ্য তিনটি স্থান যেখানে কেউ কারো কথা স্মরণ রাখবে না। মীযানের নিকট, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জানতে পারবে তার আমলের পরিমাণ কম হইবে নাকি বেশী; আমলনামা প্রাপ্তির স্থান, যখন বলা হইবে, “তোমার আমলনামা পাঠ করো” [সূরাহ আল-হাক্কাহঃ ১৯]; কেননা তখন সবাই পেরেশান থাকিবে যে, তার আমলনামা ডান হাতে পাচ্ছে নাকি বাম হাতে পাচ্ছে নাকি পিছন দিক হইতে পাচ্ছে; আর পুলসিরাতের নিকট, যখন তা জাহান্নামের উপর প্রতিষ্ঠিত করা হইবে। {৪৭৫৪}
দুর্বলঃ মিশকাত হা/৫৫৬০। {৪৭৫৪} আহমাদ। বর্ণনাকারী হাসান হাদিসটি আয়িশাহ হইতে শুনেননি। কাজেই তা মুরসাল। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-২৯ঃ দাজ্জালের বর্ণনা
৪৭৫৬. আবু উবাইদাহ ইবনিল জাররাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, নূহ [আঃ]-এর পর যারাই নাবী হিসেবে এসেছেন তাহাদের প্রত্যেকেই তাহাঁর কওমকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। আর আমিও তোমাদেরকে তার ব্যাপারে সাবধান করছি। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার বর্ণনা দিয়ে বলিলেন, যে ব্যক্তি আমাকে দেখেছে এবং আমার কথা শুনেছে হয়তো সেও তার সাক্ষাত পেতে পারে। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! বর্তমানে আমাদের যেরকম মানসিকতা আছে তখনও কি এরকম থাকিবে? তিনি বলিলেন, হয়ত আরো ভাল থাকিবে। {৪৭৫৫}
দুর্বল।
{৪৭৫৫} তিরমিজি, আহমাদ। সনদ মুনকাতি। আবদুল্লাহ বিন সুরাকবাহ হাদিসটি উবাইদাহ ইবনিল জাররাহ হইতে শুনেননি। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৭৫৭. সালিম [রাদি.] হইতে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জনসম্মুখে মহান আল্লাহর যথাযথ প্রশংসার পরে দাজ্জালের বর্নণা প্রসঙ্গে বলেনঃ প্রত্যেক নাবীই স্বীয় সম্প্রদায়কে দাজ্জাল সম্বন্ধে সতর্ক করেছেন। নূহ [আঃ]-ও তাহাঁর কওমকে এ সম্পর্কে সাবধান করেছেন। কিন্তু আমি দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদেরকে এমন কথা বলবো যা অন্য কোন নাবী তাহাঁর কওমকে বলেননি। তা হলো, সে হইবে কানা; আর নিশ্চয়ই আল্লাহ কানা নন।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩০ঃ খারিজীদের সম্পর্কে
৪৭৫৮. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি [মুসলিম] জামাআত থেকে বিচ্ছিস্ন হয়ে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেলো, সে ইসলামের রজ্জু তাহাঁর গর্দান হইতে খুলে ফেললো।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৫৯. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমার পরে শাসকগণ এসব ফাই নিজেদের জন্য আত্মসাৎ করলে তাহাদের ব্যাপারে তোমাদের করণীয় কি হইবে? আমি বলিলাম, সেই মহান আল্লাহর কসম, যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন! আমি আমার তরবারি আমার কাঁধে রাখবো এবং তা দিয়ে আপনার সঙ্গে সাক্ষাত করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাবো। তিনি [সাঃআঃ] বলেনঃ আমি কি তোমাকে এর চেয়ে ভাল পথ বলে দিবো না? তা হচ্ছে, আমার সঙ্গে সাক্ষাতের পূর্ব পর্যন্ত তুমি ধৈর্য ধরবে। {৪৭৫৮}
দুর্বলঃ মিশকাত হা/৩৭১০। ৪৭৫৮} আহমাদ। সানাদে খালিদ ইবনি ওহার সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ মাজহুল। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৭৬০. নাবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ অচিরেই তোমাদের জন্য এমন নতুন নেতা নিযুক্ত হইবে যাদের কিছু কার্যকলাপ তোমাদের পছন্দ হইবে এবং কিছু কার্যকলাপ অপছন্দ হইবে। তখন যে ব্যক্তি তার মুখ দিয়ে অস্বীকার করিবে সে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তার অন্তর দিয়ে ঘৃণা করিবে সে মুক্ত থাকিবে। কিন্তু যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট মনে তা অনুকরণ করিবে সে তার দ্বীনকে ধবংস করিবে। অতঃপর বলা হলো, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমরা কি তাহাদের হত্যা করবো না? ইবনি দাউদ বলেন, আমরা কি তাহাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবো না? তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ না, যতক্ষণ তারা সলাত আদায় করিবে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৬১. উম্মু সালামাহ [রাদি.] হইতে নাবী [সাঃআঃ] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
পূর্বোক্ত হাদিসের অর্থানুরূপ বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি তা ঘৃণা করলো সে দায়িত্বমুক্ত হলো। যে ব্যক্তি তা অপছন্দ করলো সে মুক্ত হলো। ক্বাতাদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অর্থাৎ যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে ঘৃণা করলো এবং যে ব্যক্তি তার অন্তর দিয়ে অপছন্দ করলো।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৬২. আরফাজাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ অচিরেই আমার উম্মাতের মধ্যে বিচিত্রমুখী দুর্নীতি ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হইবে। মুসলিমগণ ঐক্যবদ্ধ থাকা অবস্থায় যে ব্যক্তি তাহাদের কাজে বাধা দিবে সে যে-ই হোক, তোমরা তাহাকে তরবারি দিয়ে হত্যা করো।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩১ঃ খারিজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা
৪৭৬৩. উবাইদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা আলী [রাদি.] নাহরাওয়ানের অধিবাসীদের সম্পর্কে বলেন, তাহাদের মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ বা খাটো হাতবিশিষ্ট এক ব্যক্তি রয়েছে, যদি তোমরা আনন্দে আত্মহারা না হও তাহলে আমি তোমাদেরকে মহান আল্লাহর সেই অঙ্গীকার সম্বন্ধে জানাবো যা মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর মুখ নিঃসৃত ভাষায় তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারীদের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উবাইদাহ [রাদি.] বলেন, আমি বলিলাম, আপনি কি একথা তাহাঁর কাছে শুনেছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, কাবার রবের কসম!
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৬৪. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আলী [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট কিছু অপরিশোধিত স্বর্ণ পাঠালে তিনি তার চারজন ব্যক্তি, যথা আকরা ইবনি হাবিস আল-হানযলী আল-মুজাশিঈ, উয়াইনাহ ইবনি বাদর আল-ফাযারী, যায়িদ আল-খাইল আত-তাঈ, অতঃপর নাবহান গোত্রের এক ব্যক্তি, এছাড়া আলক্বামাহ ইবনি উলাসাহ আল-আমিরী এবং বনী কিলাবের এক ব্যক্তির মধ্যে ভাগ করে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এতে কুরাইশ ও আনসারগণ অসন্তুষ্ট হয়ে বলিলেন, নাজদের অধিবাসীদের নেতৃস্থানীয় লোকদেরকে দেয়া হয়েছে এবং আমাদেরকে দেয়া হলো না। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি তাহাদেরকে [ইসলামের] অনুরাগী করার জন্য দিয়েছি। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর কোটরাগত চোখ, উদ্যত চিবুক, ঘন দাড়ি ও নেড়া মাথাবিশিষ্ট এক ব্যক্তি এসে বললো, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ্কে ভয় করো। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, আমিই যদি অবাধ্য হই তাহলে কে আর আল্লাহর আনুগত্য করিবে? আল্লাহ আমাকে পৃথিবীবাসীর জন্য বিশ্বস্ত লোক হিসেবে নিয়োগ করেছেন; আর তোমরা আমাকে বিশ্বাস করছো না! আবু সাঈস আল-খুদরী [রাদি.] বলেন, অতঃপর এক ব্যক্তি তাহাকে হত্যা করার অনুমতি চাইলেন, আমার মতে, তিনি খালিদ ইবনি ওয়ালীদ [রাদি.]। তিনি বলেন, তিনি [সাঃআঃ] তাহাকে বারণ করিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি চলে গেলে তিনি [সাঃআঃ] বলেন, তার বংশধর হইতে এমন এক গোত্রের আবির্ভাব হইবে, যারা কুরআন পাঠ করিবে কিন্তু তাহাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করিবে না। তীর যে গতিতে শিকারের দিকে ছুটে যায় তারাও ঠিক সেইভাবে ইসলাম হইতে বেরিয়ে যাবে, তারা ইসলামের অনুসারীদেরকে হত্যা করিবে এবং পৌত্তলিকদেরকে নিরাপদ রাখবে। যদি আমি তাহাদের সময় পর্যন্ত জীবিত থাকি তাহলে তাহাদেরকে হত্যা করবো যেভাবে হত্যা করা হয়েছে আদ জাতিকে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৬৫. আবু সাঈদ আল-খুদরী ও আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ অচিরেই আমার উম্মাতের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হইবে। তারা উত্তম কথা বলবে, আর নিকৃষ্ট কাজ করিবে। তারা কুরআন পাঠ করিবে কিন্তু তা তাহাদের গলার হাড় অতিক্রম করিবে না। তারা দ্বীন হইতে এমনভাবে খারিজ হইবে যেমন তীর ধনুক হইতে ছুটে যায়, তারা আর ফিরে আসবে না। তারা সৃষ্টি জগতে নিকৃষ্টতম। ঐ ব্যক্তি ভাগ্যবান যে তাহাদেরকে হত্যা করলো এবং তারা তাহাকে হত্যা করলো। তারা আল্লাহর কিতাবের দিকে ডাকে কিন্তু নিজেরা তার অনুসরণ করে না। যে ব্যক্তি তাহাদেরকে হত্যা করিবে সে-ই হইবে আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহাদের আলামত কি? তিনি বলিলেন, ন্যাড়া মাথাওয়ালা গোষ্ঠী।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৬৬. আনাস [রাদি.] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। তিনি বলেন, তাহাদের আলামত হচ্ছে, তারা মাথা মুড়ানো ও টাকপড়া হইবে। অতঃপর তোমরা তাহাদেরকে দেখলে হত্যা করিবে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আত-তাসবীদ অর্থ হলো চুল উপড়ে ফেলা।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৬৭. সুওয়াইদ ইবনি গাফালা্হ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আলী [রাদি.] বলেন, যখন আমি তোমাদের নিকট রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রে হাদিস বর্ণনা করি, তখন তাহাঁর উপর মিথ্যা আরোপ করার চেয়ে আমার আকাশ থেকে পড়ে যাওয়া অধিক পছন্দনীয়। আর যখন আমি আমার ও তোমাদের মধ্যকার বিষয়ে আলাপ করি তখন “যুদ্ধ হলো কৌশল”। আমি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে বলিতে শুনেছিঃ শেষ যুগে এমন লোকদের আত্নপ্রকাশ ঘটবে যারা হইবে বয়সে নাবীন এবং প্রতিজ্ঞাহীন বোকা। তারা সমগ্র সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বোত্তম কথা বলবে, তীর যেভাবে ধনুক হইতে বেরিয়ে যায় তারাও সেভাবে দ্বীন হইতে বেরিয়ে যাবে। তাহাদের ঈমান কন্ঠনালী অতিক্রম করিবে না। তোমরা যেখানেই এই ধরনের লোকের দেখা পাবে সেখানেই তাহাদেরকে হত্যা করিবে। কারণ, যারা এদেরকে হত্যা করিবে ক্বিয়ামতের দিন তারা সওয়াব লাভ করিবে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৬৮. সালামাহ ইবনি কুহাইল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যায়িদ ইবনি ওয়াহ্ব আল্-জুহানী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] জানিয়েছেন যে, তিনি আলী [রাদি.] -এর সঙ্গে সেই সৈন্যদলের সঙ্গে ছিলেন যারা খারিজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে গিয়েছিলেন। আলী [রাদি.] বলেন, হে জনতা! আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আমার উম্মাতের মধ্য হইতে এমন একটি গোত্রের আত্নপ্রকাশ ঘটবে যাদের কুরআন পাঠের সামনে তোমাদের তিলওয়াত কিছুই নয়, তোমাদের সলাত তাহাদের সলাতের তুলনায় কিছুই নয় এবং তোমাদের সিয়াম তাহাদের সিয়ামের তুলনায় কিছুই নয়। তারা কুরআন পড়বে নেকী লাভের আশায়, কিন্তু পরিণতি হইবে তার বিপরীত। তাহাদের সলাত তাহাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করিবে না। তীর যেভাবে ধনুক হইতে বেরিয়ে যায়, তারাও ঠিক সেভাবে ইসলাম হইতে দূরে সরে যাবে। যেসব সৈন্য তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবে তারা যদি সেই সওয়াবের কথা জানতে পারে যা তাহাদের নাবী [সাঃআঃ] নিজ মুখে তাহাদের জন্য বলিয়াছেন, তাহলে তারা অন্যান্য আমল করা ছেড়ে দিবে এবং এরই উপর নির্ভর করে বসে থাকিবে। এই দলের নিদর্শন হলো, তাহাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি থাকিবে যার বাহু থাকিবে কিন্তু হাত থাকিবে না এবং তার বাহুর উপর স্তনের বোঁটার ন্যায় একটি বোঁটা থাকিবে এবং তার উপর সাদা লোম থাকিবে। তোমরা কি তোমাদের ছেলেমেয়ে ও ধন-সম্পদ এদের আয়ত্তে রেখে মুআরিযাহ ও সিরিয়াবাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে যেতে চাও? আল্লাহর কসম! আমার ধারণা যে, এরাই সেই গোত্রের। কেননা, এরা হারামভাবে রক্ত প্রবাহিত করছে এবং চারণভূমি হইতে মানুষের পশু লুট করছে। অতএব, তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে বের হও।
সালামাহ ইবনি কুহাইল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমার কাছে যায়িদ ইবনি ওয়াহ্ব খারিজীদের নিকট গমনের ঘটনা পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করে বলেন, অবশেষে আমরা একটি পুল অতিক্রম করে যখন দুই দল মুখোমুখি হলাম, আর খারিজীদের সেনাপ্রধান ছিলো আবদুল্লাহ ইবনি ওয়াহ্ব আর-রাসিবী। সে তাহাদেরকে বললো, তোমরা বল্লম ছুঁড়ো এবং খাপ থেকে তরবারি বের করো। এমন যেনো না হয় যে, তারা তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়ে বলবে যেমন হারুরার দিবসে তারা ওয়াদা দিয়েছিলো। তিনি বলেন, অতঃপর তারা বল্লম নিক্ষেপ করিতে লাগলো ও খাপ থেকে তরবারি বের করলো এবং মুসলিমরা বল্লম ছুঁড়ে তাহাদেরকে প্রতিরোধ করলো এবং একের পর এক তারা নিহত হইতে থাকলো। তিনি বলেন, ঐদিন আলী [রাদি.]-এর পক্ষের দুই ব্যক্তি শহীদ হলো। আলী [রাদি.] বলেন, তোমরা নিহতদের মধ্যে ছোট হাতবিশিষ্ট ব্যক্তিকে খোজঁ করো ; কিন্তু তারা তাহাকে পেলো না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আলী [রাদি.] নিজে উঠে পরস্পরের উপর পরে থাকা লাশের নিকট এসে বলিলেন, এদেরকে বের করো। তারা তাহাকে ভুলুন্ঠিত অবস্হায় পেয়ে গেলে তিনি আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করে বলিলেন, আল্লাহ সত্য বলিয়াছেন এবং তাহাঁর রাসূলও। এরপর উবাইদাহ আস্-সালমানী তার নিকট দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! সেই আল্লাহর কসম যিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই! আপনি কি একথা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট শুনেছেন? তিনি বলিলেন, হাঁ, সেই আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। উবাইদাহ তিনবার কসম করে তার নিকট প্রশ্ন করলে তিনিও তিনবার কসম করে একই জবাব দেন।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৬৯. আবুল ওয়াদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আলী [রাদি.] বলিলেন, তোমরা মুখদাজকে [ছোট হাতবিশিষ্ট ব্যক্তিকে] খুঁজে বের করো। অতঃপর পূর্বের হাদিসের অনুরূপ। এরপর তারা তাহাকে ভূলুন্ঠিত লাশগুলোর নীচ হইতে খুজে বের করলো। আবুল ওয়াদী আরো বলেন, তাহাকে দেখে আমার মনে হলো সে যেন হাবসী লোক, তার পরিধানে জুব্বা ছিলো। আর এক হাতের উপর মেয়েলোকের স্তনের বোঁটার মত একটি বোঁটা ছিলো এবং তাতে ইয়ারবুর লেজের লোমের ন্যায় লোম ছিলো।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৭০. আবু মারইয়াম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ঐ [মুখদাজ] খোঁড়া হাতবিশিষ্ট সে সময় আমাদের সঙ্গে মাসজিদে দিনরাত উঠা-বসা করতো। এবং সে ছিলো ফকির। আমি তাহাকে লোকদের সঙ্গে আলী [রাদি.] -এর আহারে অংশগ্রহণ করিতে দেখেছি। আমি তাহাকে আমার একটি আলখাল্লা দান করেছিলাম। আবু মারইয়াম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মুখদাজকে নাফি বোঁটাধারী নামে ডাকা হতো। আর তার হাতে নারীর স্তনের বোঁটার মত একটি বোঁটা ছিলো এবং বিড়ালের লোমের ন্যায় লোম ছিলো। {৪৭৬৯}
সনদ দূর্বল। {৪৭৬৯} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সানাদে আবু মারইয়াম হাফিয বলেনঃ মাজহুল। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩২ঃ চোরের মোকাবিলা করা
৪৭৭১. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উপক্রম হলে এবং সে তা প্রতিরোধ করিতে গিয়ে হত্যা হলে সে শহীদ বলে গণ্য হইবে।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭৭২. সাঈদ ইবনি যায়িদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কোন ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করিতে গিয়ে নিহত হলে সে শহীদ। একইভাবে কেউ তার পরিবার-পরিজন ও জীবন অথবা ধর্ম রক্ষা করিতে গিয়ে নিহত হলে সেও শহীদ।
ফেতনার হাদিস – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply