ফেতনা এবং তার অশুভ আলামতসমূহ

ফেতনা এবং তার অশুভ আলামতসমূহ

ফেতনা এবং তার অশুভ আলামতসমূহ , এই পর্বের হাদীস =৩৬ টি (১৮২৯-১৮৬৪) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্ব-৫২ঃ ফেতনা এবং তার অশুভ আলামতসমূহ

৫২/১. ফেতনা নিকটবর্তী হওয়া এবং ইয়াজুজ মাজুজের [দেয়াল] খুলে যাওয়া।
৫২/২. কাবা আক্রমণকারী সৈন্যদলের যমীনে দেবে যাওয়া।
৫২/৩. অজস্র বৃষ্টি ফোঁটার ন্যায় ফেতনা অবতরণ।
৫২/৪. দুজন মুসলিম যখন তরবারি নিয়ে পরস্পরের সম্মুখীন হয়।
৫২/৬. শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যে সকল ঘটনা ঘটবে সে সম্পর্কে নাবী [সাঃআঃ]-এর সংবাদ প্রদান।
৫২/৭. সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় ফেতনা ছড়িয়ে পড়বে।
৫২/৮. ফোরাত নদী সোনার পাহাড় উন্মুক্ত না করা পর্যন্ত ক্বিয়ামাত সংঘটিত হইবে না।
৫২/১৬. ফেতনা পূর্ব দিক থেকে যেখান থেকে শাইত্বনের শিং বেরিয়ে আসে।
৫২/১৭. দাউস গোত্র যালখালাসার ইবাদাত না করা পর্যন্ত ক্বিয়ামাত সংঘটিত হইবে না।
৫২/১৮. ক্বিয়ামাত সংঘটিত হইবে না যে পর্যন্ত না ক্ববরের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রমকারী ব্যক্তি বলবে, মৃতের জায়গায় যদি আমি থাকতাম [বালা মুসিবতের কারণে]।
৫২/১৯. ইবনি সাইয়্যাদের বর্ণনা।
৫২/২০. দাজ্জাল, তার ও তার সঙ্গে যারা থাকিবে তাহাদের বর্ণনা।
৫২/২১. দাজ্জালের বিবরণ, মদিনায় প্রবেশ তার জন্য নিষিদ্ধ করা হইবে, তার দ্বারা একজন মুমিনকে হত্যা এবং সে মুমিনকে আবার জীবিতকরণ।
৫২/২২. দাজ্জাল- আল্লাহ্‌র নিকট তার মর্যাদা খুবই নিন্মে।
৫২/২৩. দাজ্জালের আবির্ভাব এবং পৃথিবীতে তার অবস্থান।
৫২/২৬. ক্বিয়ামাতের নিকটবর্তী হওয়া।
৫২/২৭. [পুনরুত্থান দিবসে] সিঙ্গায় দুবার ফুঁক দেয়ার মাঝে সময়ের ব্যবধান।

৫২/১. ফেতনা নিকটবর্তী হওয়া এবং ইয়াজুজ মাজুজের [দেয়াল] খুলে যাওয়া।

১৮২৯. যায়নাব বিনতে জাহাশ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

একবার নাবী [সাঃআঃ] ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাহাঁর নিকট আসলেন এবং বলিতে লাগলেন,

لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ

লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আরবের লোকেদের জন্য সেই অনিষ্টের কারণে ধ্বংস অনিবার্য বা নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ খুলে গেছে। এ কথার বলার সময় তিনি তাহাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলির অগ্রভাগকে তার সঙ্গের শাহাদাত আঙ্গুলির অগ্রভাগের সঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার করে ছিদ্রের পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহশ [রাদি.] বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমাদের মধ্যে পুণ্যবান লোকজন থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? তিনি বলিলেন, হাঁ যখন পাপকাজ অতি মাত্রায় বেড়ে যাবে।

[মুসলিম [বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৩৩৪৬; মুসলিম ৫২ হাঃ ২৮৮০] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৩০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীরে আল্লাহ এ পরিমাণ ছিদ্র করে দিয়েছেন। এই বলে, তিনি তাহাঁর হাতে নব্বই সংখ্যার আকৃতির মত করে দেখালেন।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৩৩৪৭; মুসলিম ৫২/১ হাঃ ২৮৮১]এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/২. কাবা আক্রমণকারী সৈন্যদলের যমীনে দেবে যাওয়া।

১৮৩১. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেন, [পরবর্তী যামানায়] একদল সৈন্য কাবা [ধ্বংসের উদ্দেশে] অভিযান চালাবে। যখন তারা বায়দা নামক স্থানে পৌঁছবে তখন তাহাদের আগের পিছের সকলকে জমিনে ধ্বসিয়ে দেয়া হইবে। আয়েশা [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! তাহাদের অগ্রবাহিনী ও পশ্চাৎবাহিনী সকলকে কিভাবে ধ্বসিয়ে দেয়া হইবে, অথচ সে সেনাবাহিনীতে তাহাদের বাজারের [পণ্য-সামগ্রী বহনকারী] লোকও থাকিবে এবং এমন লোকও থাকিবে যারা তাহাদের দলভুক্ত নয়, তিনি বলিলেন, তাহাদের আগের পিছের সকলকে ধ্বসিয়ে দেয়া হইবে। তারপরে [কিয়ামতের দিবসে] তাহাদের নিজেদের নিয়্যাত অনুযায়ী উত্থিত করা হইবে।

[বোখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ৪৯ হাদীস নং ২১১৮; মুসলিম ৫২/২, হাঃ ২৮৮৩] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/৩. অজস্র বৃষ্টি ফোঁটার ন্যায় ফেতনা অবতরণ।

১৮৩২. উসামা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] মাদীনাহর কোন একটি পাথর নির্মিত গৃহের উপর আরোহণ করে বললেনঃ আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখিতে পাচ্ছ? [তিনি বলিলেন] বৃষ্টি বিন্দু পতিত হওয়ার স্থানসমূহের মত আমি তোমাদের গৃহসমূহের মাঝে ফেতনার স্থানসমূহ দেখিতে পাচ্ছি।

[বোখারী পর্ব ২৯ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ১৮৭৮; মুসলিম ৫২/৩, হাঃ ২৮৮৫] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৩৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, শীঘ্রই ফেতনা রাশি আসতে থাকিবে। ঐ সময় উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উত্তম [নিরাপদ], দাঁড়ানো ব্যক্তি ভ্রাম্যমান ব্যক্তি হইতে অধিক রক্ষিত আর ভ্রাম্যমান ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে অধিক বিপদমুক্ত। যে ব্যক্তি ফেতনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে ফেতনা তাকে গ্রাস করিবে। তখন যদি কোন ব্যক্তি তার দ্বীন রক্ষার জন্য কোন ঠিকানা অথবা নিরাপদ আশ্রয় পায়, তবে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করাই উচিত হইবে।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৬০১; মুসলিম ২৮৮৬ এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/৪. দুজন মুসলিম যখন তরবারি নিয়ে পরস্পরের সম্মুখীন হয়।

১৮৩৪. আহনাফ ইবনি কায়স [রা.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি [সিফফীনের যুদ্ধে] এ ব্যক্তিকে {আলী [রাদি.]-কে} সাহায্য করিতে যাচ্ছিলাম। আবু বাকরা [রাদি.]-এর সঙ্গে আমার দেখা হলে তিনি বললেনঃতুমি কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, আমি এ ব্যক্তিকে সাহায্য করিতে যাচ্ছি। তিনি বললেনঃফিরে যাও। কারণ আমি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, দুজন মুসলমান তাহাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল্! এ হত্যাকারী [তো অপরাধী], কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বলিলেন, [নিশ্চয়ই] সেও তার সাথীকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিল।

[বোখারী পর্ব ২ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ৩১; মুসলিম ৫২/৪ হাঃ ২৮৮৮] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৩৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] বলেছেন, কিয়ামত হইবে না যে পর্যন্ত এমন দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ না হইবে যাদের দাবী হইবে এক।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৬০৮; মুসলিম ১৫৭ এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/৬. শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যে সকল ঘটনা ঘটবে সে সম্পর্কে নাবী [সাঃআঃ]-এর সংবাদ প্রদান।

১৮৩৬. হুযাইসলামিক ফাউন্ডেশনহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] [একদা] আমাদের মাঝে এমন একটি ভাষণ প্রদান করিলেন যাতে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যা সংঘটিত হইবে এমন কোন কথাই বাদ দেননি। এগুলি স্মরণ রাখা যার সৌভাগ্য হয়েছে সে স্মরণ রেখেছে আর যে ভুলে যাবার সে ভুলে গেছে। আমি ভুলে যাওয়া কোন কিছু যখন দেখিতে পাই তখন তা চিনে নিতে পারি এভাবে যেমন, কোন ব্যক্তি কাউকে হারিয়ে ফেললে আবার যখন তাকে দেখিতে পায় তখন চিনতে পারে।

[বোখারী পর্ব ৮২ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৬৬০৪; মুসলিম ৫২/৬, হাঃ ২৮৯১] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/৭. সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় ফেতনা ছড়িয়ে পড়বে।

১৮৩৭, হুযাইসলামিক ফাউন্ডেশনহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা উমার [রাদি.]-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি বলিলেন, ফেতনা-ফাসাদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বক্তব্য তোমাদের মধ্যে কে মনে রেখেছো? হুযাইসলামিক ফাউন্ডেশনহ [রাদি.] বলিলেন, যেমনভাবে তিনি বলেছিলেন হুবহু তেমনিই আমি মনে রেখেছি। উমার [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] -এর বাণী মনে রাখার ব্যাপারে তুমি খুব দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছো। আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ্[সাঃআঃ] বলেছিলেন মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাপারে যে ফেতনায় পতিত হয়, সলাত, সিয়াম, সাদকাহ, [ন্যায়ের] আদেশ ও [অন্যায়ের] নিষেধ তা দূরীভূত করে দেয়। উমার [রাদি.] বলিলেন, তা আমার উদ্দেশ্য নয়। বরং আমি সেই ফেতনার কথা বলছি, যা সমুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ভয়াল হইবে। হুযাইসলামিক ফাউন্ডেশন [রাদি.] বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! সে ব্যাপারে আপনার ভয়ের কোনো কারণ নেই। কেননা, আপনার ও সে ফিত্নার মাঝখানে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। উমার [রাদি.] জিজ্ঞেস করিলেন, সে দরজাটি ভেঙ্গে ফেলা হইবে, না খুলে দেয়া হইবে? হুযাইসলামিক ফাউন্ডেশনহ [রা.] বলিলেন, ভেঙ্গে ফেলা হইবে। উমার [রাদি.] বলিলেন, তাহলে তো আর কোনো দিন তা বন্ধ করা যাবে না। {হুযাইসলামিক ফাউন্ডেশনহ [রাদি.]}-এর ছাত্র শাকীক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন}, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, উমার [রাদি.] কি সে দরজাটি সম্বন্ধে জানতেন? হুযাইসলামিক ফাউন্ডেশনহ [রাদি.] বলিলেন, হাঁ, দিনের পূর্বে রাতের আগমন যেমন সুনিশ্চিত, তেমনি নিশ্চিতভাবে তিনি জানতেন। কেননা, আমি তাহাঁর কাছে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করেছি, যা মোটেও ক্রুটিযুক্ত নয়। [দরজাটি কী] এ বিষয়ে হুযাইসলামিক ফাউন্ডেশনহ [রাদি.]-এর নিকট জানতে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম। তাই আমরা মাসরূক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বললাম এবং তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি বলিলেন, দরজাটি উমার [রাদি.] নিজেই।

[বোখারী পর্ব ৯ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৫২৫; মুসলিম ১৪৪ এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/৮. ফোরাত নদী সোনার পাহাড় উন্মুক্ত না করা পর্যন্ত ক্বিয়ামাত সংঘটিত হইবে না।

১৮৩৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অদূর ভবিষ্যতে ফোরাত নদী তার গর্ভস্থ স্বর্ণের খনি বের করে দেবে। সে সময় যারা উপস্থিত থাকিবে তারা যেন তা থেকে কিছুই গ্রহণ না করে।

[বোখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ২৪ হাদীস নং ৭১১৯; মুসলিম ৫২/৮, হাঃ ২৮৯৪] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/১৪. হিজাজ থেকে আগুন বের না হওয়া পর্যন্ত ক্বিয়ামাত সংঘটিত হইবে না।

১৮৩৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত কায়িম হইবে না যতক্ষণ না হিজাযের যমীন থেকে এমন আগুন বের হইবে, যা বুসরার উটগুলোর গর্দান আলোকিত করে দেবে।

[বোখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ২৪ হাদীস নং ৭১১৮; মুসলিম ৩৩/৪১, হাঃ ১৯০২] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/১৬. ফেতনা পূর্ব দিক থেকে যেখান থেকে শাইত্বনের শিং বেরিয়ে আসে।

১৮৪০. ইবনি উমার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে পূর্ব দিকে মুখ করে বলিতে শুনেছেন, সাবধান! ফেতনা সে দিকে যে দিক থেকে শয়তানের শিং উদিত হয়।

{৩১০৪; মুসলিম [বোখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৭০৯৩; মুসলিম ৫২/১৬, হাঃ ২৯০৫] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/১৭. দাউস গোত্র যালখালাসার ইবাদাত না করা পর্যন্ত ক্বিয়ামাত সংঘটিত হইবে না।

১৮৪১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, ক্বিয়ামাত কায়িম হইবে না, যতক্ষণ যুলখালাসাহর পাশে দাওস গোত্রীয় রমণীদের নিতম্ব দোলায়িত না হইবে।

যুলখালাসাহ হলো দাওস গোত্রের একটি মূর্তি। জাহিলী যুগে তারা এর উপাসনা করত।

[বোখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৭১১৬; মুসলিম ৫২/১৭, হাঃ ২৯০৬] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/১৮. ক্বিয়ামাত সংঘটিত হইবে না যে পর্যন্ত না ক্ববরের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রমকারী ব্যক্তি বলবে, মৃতের জায়গায় যদি আমি থাকতাম [বালা মুসিবতের কারণে]।

১৮৪২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত কায়িম হইবে না, যতক্ষণ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় না বলবে হায়! যদি আমি তার স্থলে হতাম।

[বোখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ৭১১৫; মুসলিম ১৫৭ ,এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৪৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, হাবাশার অধিবাসী পায়ের সরু নলা বিশিষ্ট লোকেরা কাবাগৃহ ধ্বংস করিবে।

[বোখারী পর্ব ২৫ অধ্যায় ৪৭ হাদীস নং ১৫৯১; মুসলিম ৫২/১৮, হাঃ ২৯০৯] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৪৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হইবে না যে পর্যন্ত কাহ্তান গোত্র হইতে এমন এক ব্যক্তির আগমন না হইবে যে মানুষ জাতিকে তার লাঠির সাহায্যে পরিচালিত করিবে। [বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৩৫১৭; মুসলিম ২৯১০, এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৪৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, ততদিন কিয়ামত সংঘটিত হইবে না, যতদিন না তোমরা এমন এক জাতির বিপক্ষে যুদ্ধ করিবে, যাদের জুতা হইবে পশমের। আর ততদিন কিয়ামত সংঘটিত হইবে না,যতদিন না তোমরা এমন জাতির বিপক্ষে যুদ্ধ করিবে, মুখমণ্ডল পেটানো চামড়ার ঢালের মত।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৯৬ হাদীস নং ২৯২৯; মুসলিম ৫২/১৮ হাঃ ২৯১২] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৪৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, কুরাইশ গোত্রের এ লোকগুলি [যুবকগণ] মানুষের ধ্বংস ডেকে আনবে। সহাবাগণ বলিলেন, তখন আমাদেরকে আপনি কী করিতে বলেন? তিনি বলিলেন, মানুষেরা যদি এদের সংসর্গ ত্যাগ করত তবে ভালই হত।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৬০৪; মুসলিম, এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৪৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কিসরা ধ্বংস হইবে, অতঃপর আর কিসরা হইবে না। আর কায়সার অবশ্যই ধ্বংস হইবে, অতঃপর আর কায়সার হইবে না এবং এটা নিশ্চিত যে, তাহাদের ধনভাণ্ডার আল্লাহ্‌র পথে বণ্টিত হইবে।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৫৭ হাদীস নং ৩০২৭; মুসলিম ৫২/১৮ হাঃ ২৯১৮] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৪৮. জাবির ইবনি সামূরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ @ বলেছেন, যখন কিসরা ধ্বংস হয়ে যাবে অতঃপর আর কোন কিসরা হইবে না। আর যখন কায়সার ধ্বংস হয়ে যাবে, তারপরে আর কোন কায়সার হইবে না। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাহাঁর কসম, অবশ্যই উভয় সাম্রাজ্যের ধনভাণ্ডার আল্লাহ্‌র পথে ব্যয়িত হইবে।

[বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩১২১; মুসলিম ৫২/১৮ হাঃ ২৯১৯] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৪৯. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, ইয়াহূদীরা তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হইবে। তখন জয়লাভ করিবে তোমরাই। স্বয়ং পাথরই বলবে, হে মুসলিম, এই ত ইয়াহূদী; আমার পিছনে, একে হত্যা কর।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৫৯৩; মুসলিম. এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৫০. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ.

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, কিয়ামত কায়িম হইবে না যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাচারী দাজ্জালের আবির্ভাব না হইবে। এরা সবাই নিজেকে আল্লাহ্‌র রসূল  বলে দাবী করিবে।

[বোখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৬০৯; মুসলিম। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/১৯. ইবনি সাইয়্যাদের বর্ণনা।

১৮৫১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার [রাদি.] কয়েকজন সহাবীসহ আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ইবনি সাইয়্যাদের নিকট যান। তাঁরা তাকে বনী মাগালার টিলার উপর ছেলে-পেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা করিতে দেখিতে পান। আর এ সময় ইবনি সাইয়্যাদ বালিগ হওয়ার নিকটবর্তী হয়েছিল। আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ]-এর [আগমন] সে কিছু টের না পেতেই নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর পিঠে হাত দিয়ে মৃদু আঘাত করিলেন। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহ্‌র প্রেরিত রসূল ? তখন ইবনি সাইয়্যাদ তাহাঁর প্রতি তাকিয়ে বলিল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মী লোকদের রসূল  । ইবনি সাইয়াদ নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিল, আপনি কি এ সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহ্‌র রসূল ? নাবী [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন, আমি আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর সকল রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। নাবী [সাঃআঃ] তাকে প্রশ্ন করিলেন, তুমি কী দেখ? ইবনি সাইয়্যাদ বলিল, আমার নিকট সত্য খবর ও মিথ্যা খবর সবই আসে। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আসল অবস্থা তোমার জন্য কিছু কথা গোপন রেখেছি ইবনি সাইয়্যাদ বলিল, তা হচ্ছে ধোঁয়া। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আরে থাম, তুমি তোমার সীমার বাইরে যেতে পার না। উমার [রাদি.] বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমাকে হুকুম দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, যদি সে প্রকৃত দাজ্জাল হয়, তবে তুমি তাকে কাবু করিতে পারবে না, যদি সে দাজ্জাল না হয়, তবে তাকে হত্যা করে তোমার কোন লাভ নেই।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৭৮ হাদীস নং ৩০৫৫; মুসলিম ২৯৩১, এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৫২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] ও উবাই ইবনি কাব [রাদি.] উভয়ে সে খেজুর বৃক্ষের নিকট গমন করেন, যেখানে ইবনি সাইয়্যাদ অবস্থান করছিল। যখন নাবী [সাঃআঃ] সেখানে পৌঁছলেন, তখন তিনি খেজুর ডালের আড়ালে চলতে লাগলেন। তাহাঁর ইচ্ছে ছিল যে, ইবনি সাইয়্যাদের অজান্তে তিনি তার কিছু কথা শুনে নিবেন। ইবনি সাইয়্যাদ নিজ বিছানা পেতে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে গুণগুণ ছিল এবং কী কী যেন গুণগুণ করিতেছিল। তার মা নাবী [সাঃআঃ]-কে দেখে ফেলেছিল যে, তিনি খেজুর বৃক্ষ শাখার আড়ালে আসছেন। তখন সে ইবনি সাইয়্যাদকে বলে উঠল, হে সাফ! আর এ ছিল তার নাম। সে জলদি উঠে দাঁড়াল। তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, নারীটি যদি তাকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিত, তবে তার ব্যাপারটা প্রকাশ পেয়ে যেত।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৭৮ হাদীস নং ৩০৫৬; মুসলিম] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৫৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] লোকদের মাঝে দাঁড়ালেন। প্রথমে তিনি আল্লাহ তাআলার যথাযথ প্রশংসা করিলেন। অতঃপর দাজ্জাল সম্পর্কে উল্লেখ করিলেন। আর বলিলেন, আমি তোমাদের দাজ্জাল হইতে সতর্ক করে দিচ্ছি। প্রত্যেক নাবীই তাহাঁর সম্প্রদায়কে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করিয়াছেন। নূহ [আ.] তাহাঁর সম্প্রদায়কেও দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করিয়াছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে তার সম্পর্কে এমন একটি কথা জানিয়ে দিব, যা কোন নাবী তাহাঁর সম্প্রদায়কে জানান নি। তোমরা জেনে রেখ যে, সে হইবে এক চক্ষু বিশিষ্ট আর অবশ্যই আল্লাহ এক চক্ষু বিশিষ্ট নন।

[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৭৮ হাদীস নং ৩০৫৭; মুসলিম] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/২০. দাজ্জাল, তার ও তার সঙ্গে যারা থাকিবে তাহাদের বর্ণনা।

১৮৫৪.আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা নাবী [সাঃআঃ] লোকজনের সামনে মাসীহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করিলেন। তিনি বলিলেন, আল্লাহ্ ট্যাড়া নন। সাবধান! মাসীহ দাজ্জালের ডান চক্ষু ট্যাড়া। তার চক্ষু যেন ফুলে যাওয়া আঙ্গুরের মত।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪৮ হাদীস নং ৩৪৩৯; মুসলিম ২৯৩১] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৫৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এমন কোন নাবী [সাঃআঃ] প্রেরিত হন নি যিনি তার উম্মাতকে এই কানা মিথ্যুক সম্পর্কে সতর্ক করেননি। জেনে রেখো, সে কিন্তু কানা, আর তোমাদের রব কানা নন। আর তার দু চোখের মাঝখানে কাফির كَافِرٌশব্দটি লিপিবদ্ধ থাকিবে।

[বোখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ২৬ হাদীস নং ৭১৩১; মুসলিম ৫২/২০, হাঃ ২৯৩৩] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৫৬. উকবাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আপনি আল্লাহর রসূল  [সাঃআঃ] হইতে যা শুনেছেন, তা কি আমাদের নিকট বর্ণনা করবেন না? তিনি জবাব দিলেন, আমি তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি, যখন দাজ্জাল বের হইবে তখন তার সঙ্গে পানি ও আগুন থাকিবে। অতঃপর মানুষ যাকে আগুনের মত দেখবে তা হইবে মূলত ঠাণ্ডা পানি। আর যাকে মানুষ ঠাণ্ডা পানির মত দেখবে, তা হইবে আসলে দহনকারী অগ্নি। তখন তোমাদের মধ্যে যে তার দেখা পাবে, সে যেন অবশ্যই তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, যাকে সে আগুনের মত দেখিতে পাবে। কেননা, আসলে তা সুস্বাদু শীতল পানি।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৫০ হাদীস নং ৩৪৫০; মুসলিম ২৯৩৪] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৫৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে এমন একটি কথা বলে দেব না, যা কোন নাবীই তাহাঁর সম্প্রদায়কে বলেননি? তা হলো, নিশ্চয়ই সে হইবে এক চোখওয়ালা, সে সঙ্গে করে জান্নাত এবং জাহান্নামের দুটি জাল ছবি নিয়ে আসবে। অতএব যাকে সে বলবে যে, এটি জান্নাত, প্রকৃতপক্ষে সেটি হইবে জাহান্নাম। আর আমি তার সম্পর্কে তোমাদের নিকট তেমনি সাবধান করছি, যেমনি নূহ [আ.] তার সম্প্রদায়কে সে সম্পর্কে সাবধান করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৩৩৩৮; মুসলিম ৫২/২০ হাঃ ২৯৩৬] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/২১. দাজ্জালের বিবরণ, মদিনায় প্রবেশ তার জন্য নিষিদ্ধ করা হইবে, তার দ্বারা একজন মুমিনকে হত্যা এবং সে মুমিনকে আবার জীবিতকরণ।

১৮৫৮. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আমাদের সামনে দাজ্জাল সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। বর্ণিত কথাসমূহের মাঝে তিনি এ কথাও বলেছিলেন যে, মাদীনাহর প্রবেশ পথে অনুপ্রবেশ করা দাজ্জালের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। তাই সে মাদীনার উদ্দেশে যাত্রা করে মাদীনাহর নিকটবর্তী কোন একটি বালুকাময় জমিতে অবতরণ করিবে। তখন তার নিকট এক ব্যক্তি যাবে যে উত্তম ব্যক্তি হইবে বা উত্তম মানুষের একজন হইবে এবং সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই হলে সে দাজ্জাল যার সম্পর্কে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আমাদেরকে অবহিত করিয়াছেন। দাজ্জাল বলবে, আমি যদি একে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করিতে পারি তাহলেও কি তোমরা আমার ব্যাপারে সন্দেহ করিবে? তারা বলবে, না। এরপর দাজ্জাল লোকটিকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করিবে। জীবিত হয়েই লোকটি বলবে, আল্লাহর শপথ! আজকের চেয়ে অধিক প্রত্যয় আমার আর কখনো ছিল না। অতঃপর দাজ্জাল বলবে, আমি তাকে হত্যা করে ফেলব। কিন্তু সে লোকটিকে হত্যা করিতে আর সক্ষম হইবে না।

[বোখারী পর্ব ২৯ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ১৮৮২; মুসলিম ৫২/২১, হাঃ ২৯৩৮] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/২২. দাজ্জাল- আল্লাহ্‌র নিকট তার মর্যাদা খুবই নিন্মে।

১৮৫৯. মুগীরাহ ইবনি শুবাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে দাজ্জাল সম্পর্কে যত বেশি প্রশ্ন করতাম সেরূপ আর কেউ করেনি। তিনি আমাকে বললেনঃ তা থেকে তোমার কি ক্ষতি হইবে? আমি বললাম, লোকেরা বলে যে, তার সঙ্গে রুটির পর্বত ও পানির নহর থাকিবে। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র কাছে অতি সহজ।

[বোখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ২৬ হাদীস নং ৭১২২; মুসলিম ৫২/২২, হাঃ ২৯৩৯] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/২৩. দাজ্জালের আবির্ভাব এবং পৃথিবীতে তার অবস্থান।

১৮৬০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মাক্কাহ ও মাদীনাহ ব্যতীত এমন কোন শহর নেই যেখানে দাজ্জাল পদচারণা করিবে না। মাক্কাহ এবং মাদীনাহর প্রত্যেকটি প্রবেশ পথেই ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে পাহারায় নিয়োজিত থাকিবে। এরপর মাদীনাহ তার অধিবাসীদেরকে নিয়ে তিনবার কেঁপে উঠবে এবং আল্লাহ তাআলা সমস্ত কাফির এবং মুনাফিকদেরকে বের করে দিবেন।

[বোখারী পর্ব ২৯ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ১৮৮১; মুসলিম ৫২/২৪, হাঃ ২৯৪৩] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/২৬. ক্বিয়ামাতের নিকটবর্তী হওয়া।

১৮৬১. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, ক্বিয়ামাত যাদের জীবদ্দশায় কায়িম হইবে তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক।

[বোখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৭০৬৭; মুসলিম ৫২/২৬, হাঃ ২৯৪৯] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৬২. সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি দেখেছি, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাঁর মধ্যমা ও বুড়ো আঙ্গুলের নিকটবর্তী অঙ্গুলিদ্বয় এভাবে একত্র করে বলিলেন, ক্বিয়ামাত ও আমাকে এমনিভাবে পাঠানো হয়েছে।

{বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [৭৯] আন্-নাযিআত অধ্যায় হাদীস নং ৪৯৩৬; মুসলিম ৫২/২৬, হাঃ ২৯৫০} এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

১৮৬৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে ক্বিয়ামাতের সঙ্গে এ রকম।

[বোখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৬৫০৪; মুসলিম ৫২/২৬, হাঃ ২৯৫১] ফেতনা এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২/২৭. [পুনরুত্থান দিবসে] সিঙ্গায় দুবার ফুঁক দেয়ার মাঝে সময়ের ব্যবধান।

১৮৬৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, প্রথম ও দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফূৎকারের মধ্যে চল্লিশের ব্যবধান হইবে। {আবু হুরাইরাহ [রাদি.]}-এর এক ছাত্র বলিলেন, চল্লিশ বলে চল্লিশ দিন বোঝানো হয়েছে কি? তিনি বলেন, আমি অস্বীকার করলাম। তারপর পুনরায় তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, চল্লিশ বলে চল্লিশ মাস বোঝানো হয়েছে কি? তিনি বলেন, এবারও অস্বীকার করলাম। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, চল্লিশ বছর বোঝানো হয়েছে কি? তিনি বলেন, এবারও আমি অস্বীকার করলাম। এরপর আল্লাহ্ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করবেন। এতে মৃতরা জীবিত হয়ে উঠবে, যেমন বৃষ্টির পানিতে উদ্ভিদরাজি উৎপন্ন হয়ে থাকে। তখন শিরদাঁড়ার হাড় ছাড়া মানুষের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পচে গলে শেষ হয়ে যাবে। ক্বিয়ামাতের দিন ঐ হাড়খণ্ড থেকেই আবার মানুষকে সৃষ্টি করা হইবে।

{বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [৭৮] আন্-নাবা অধ্যায় হাদীস নং ৪৯৩৫; মুসলিম ২৯৫৫] ফেতনা এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

Comments

One response to “ফেতনা এবং তার অশুভ আলামতসমূহ”

Leave a Reply