ফিতনা থেকে বাঁচার দোয়া – সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ফিতনার ঢেউ হইবে
ফিতনা থেকে বাঁচার দোয়া – সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ফিতনার ঢেউ হইবে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৯২, ফিতনা, অধ্যায়ঃ (১-১৭)=১৮টি
৯২/১. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ সতর্ক থাক সেই ফিতনা হইতে যা বিশেষভাবে তোমাদের যালিম লোকেদের মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে না – (সুরা আনফাল ৮/২৫)।
৯২/২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ আমার পরে তোমরা এমন কিছু দেখিতে পাবে, যা তোমরা পছন্দ করিবে না। আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) বলেন, নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ধৈর্য ধারণ কর যতক্ষণ না হাউযের ধারে আমার সঙ্গে মিলিত হও।
৯২/৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ কতকগুলো বুদ্ধিহীন বালকের হাতে আমার উম্মাত ধ্বংস হইবে।
৯২/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ আরবরা অতি নিকটবর্তী এক দুর্যোগে হালাক হয়ে যাবে।
৯২/৫. অধ্যায়ঃ ফিতনার ব্যাপ্তি ।
৯২/৬. অধ্যায়ঃ প্রতিটি যুগের চেয়ে তার পরের যুগ আরও খারাপ হইবে।
৯২/৭. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণীঃ যে ব্যক্তি আমাদের উপর অস্ত্র উত্তোলন করিবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।
৯২/৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণীঃ আমার পরে তোমরা পরস্পরে হানাহানি করে কুফ্রীর দিকে ফিরে যেও না।
৯২/৯. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণীঃ ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে, তাতে দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উপবিষ্ট ব্যক্তি উত্তম হইবে।
৯২/১০. অধ্যায়ঃ তরবারী নিয়ে দুজন মুসলমান পরস্পর মারমুখী হলে ।
৯২/১১. অধ্যায়ঃ যখন জামআত (মুসলিমরা সংঘবদ্ধ) থাকবে না তখন কী করিতে হইবে।
৯২/১২. অধ্যায়ঃ যে ফিত্নাকারী ও জালিমদের দল ভারী করাকে অপছন্দ করে।
৯২/১৩. অধ্যায়ঃ যখন মানুষের আবর্জনা (নিকৃষ্ট মানুষেরা) অবশিষ্ট থাকবে ।
৯২/১৪. অধ্যায়ঃ ফিতনার সময় বেদুঈন সুলভ জীবন কাটানো বাঞ্ছনীয় ।
৯২/১৫. অধ্যায়ঃ ফিতনা হইতে আশ্রয় প্রার্থনা।
৯২/১৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণী ফিতনা পূর্ব দিক থেকে শুরু হইবে ।
৯২/১৭. অধ্যায়ঃ সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ফিতনার ঢেউ হইবে ।
৯২/১. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ সতর্ক থাক সেই ফিতনা হইতে যা বিশেষভাবে তোমাদের যালিম লোকেদের মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে না – (সুরা আনফাল ৮/২৫)।
এবং যা নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক করিতেন।
৭০৪৮
আসমা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আসমা (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আমার হাউজের কাছে আগমনকারী লোকদের অপেক্ষায় থাকব। তখন আমার সামনে থেকে কতক লোককে ধরে নিয়ে যাওয়া হইবে। আমি বলব, এরা তো আমার উম্মাত। তখন বলা হইবে, আপনি জানেন না, এরা (আপনার পথ থেকে) পিছনে চলে গিয়েছিল।
(বর্ণনাকারী) ইবনু আবু মুলাইকাহ বলেনঃ হে আল্লাহ! পিছনে ফিরে যাওয়া কিংবা ফিতনায় পড়া থেকে আমরা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি।(আঃপ্রঃ- ৬৫৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭২)
৭০৪৯
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি হাউজে কাউসারের নিকট তোমাদের আগেই হাজির থাকব। তোমাদের থেকে কিছু লোককে আমার নিকট পেশ করা হইবে। কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে উদ্যত হব, তখন তাদেরকে আমার নিকট হইতে ছিনিয়ে নেয়া হইবে। আমি বলব, হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার পর তারা নতুন কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না।(আঃপ্রঃ- ৬৫৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৩)
৭০৫০
সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমি হাউজের ধারে তোমাদের আগে হাজির থাকব। যে সেখানে হাজির হইবে, সে সেখান থেকে পান করার সুযোগ পাবে। আর যে একবার সে হাউজ থেকে পান করিবে সে কখনই পিপাসিত হইবে না। অবশ্যই এমন কিছু দল আমার কাছে হাজির হইবে যাদের আমি (আমার উম্মাত বলে) চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু এরপরই তাদের ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা দাড় করে দেয়া হইবে।
আবু হাযিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এমন সময় নুমান ইবনু আবু আয়াস আমার নিকট হইতে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি কি সাহল থেকে হাদীসটি এরূপ শুনেছেন। আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন সে বলিল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) – কে এ হাদীসে অতিরিক্ত বলিতে শুনিয়াছি যে, নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলবেনঃ এরা তো আমারই অনুসারী। তখন বলা হইবে, আপনি নিশ্চয় জানেন না যে, আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কি পরিবর্তন করেছে। এ শুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা দূর হোক, দূর হোক। (আঃপ্রঃ- ৬৫৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৪)
৭০৫১
সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমি হাউজের ধারে তোমাদের আগে হাজির থাকব। যে সেখানে হাজির হইবে, সে সেখান থেকে পান করার সুযোগ পাবে। আর যে একবার সে হাউজ থেকে পান করিবে সে কখনই পিপাসিত হইবে না। অবশ্যই এমন কিছু দল আমার কাছে হাজির হইবে যাদের আমি (আমার উম্মাত বলে) চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু এরপরই তাদের ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা দাড় করে দেয়া হইবে।
আবু হাযিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এমন সময় নুমান ইবনু আবু আয়াস আমার নিকট হইতে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি কি সাহল থেকে হাদীসটি এরূপ শুনেছেন। আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন সে বলিল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) – কে এ হাদীসে অতিরিক্ত বলিতে শুনিয়াছি যে, নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলবেনঃ এরা তো আমারই অনুসারী। তখন বলা হইবে, আপনি নিশ্চয় জানেন না যে, আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কি পরিবর্তন করেছে। এ শুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা দূর হোক, দূর হোক।(আঃপ্রঃ- ৬৫৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৪)
৯২/২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ আমার পরে তোমরা এমন কিছু দেখিতে পাবে, যা তোমরা পছন্দ করিবে না। আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) বলেন, নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ধৈর্য ধারণ কর যতক্ষণ না হাউযের ধারে আমার সঙ্গে মিলিত হও।
৭০৫২
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেছেনঃ আমার পরে তোমরা অবশ্যই ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করিবে। এবং এমন কিছু বিষয় দেখিতে পাবে, যা তোমরা পছন্দ করিবে না। তাঁরা জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তাহলে আমাদের জন্য কী হুকুম করছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ তাদের হক পূর্ণরূপে আদায় করিবে, আর তোমাদের হক আল্লাহর কাছে চাইবে।(আঃপ্রঃ- ৬৫৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৫)
৭০৫৩
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক যদি আমীরের কোন কিছু অপছন্দ করে, তাহলে সে যেন ধৈর্য ধারণ করে। কেননা, যে লোক সুলতানের আনুগত্য থেকে এক বিঘতও সরে যাবে, তার মৃত্যু হইবে জাহিলী যুগের মৃত্যুর মত। [১৫৪][৭০৫৪, ৭১৪৩; মুসলিম ৩৩/১৩, হাদীস ১৮৪৯, আহমাদ ২৪৮৭] (আঃপ্রঃ- ৬৫৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৬)
[১৫৪] মুসলিম শাসকের ভুল বা অন্যায় কার্যকলাপের জন্য প্রতিবাদ করা যাবে এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি যেন সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকেন, কিন্তু তার আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিদ্রোহ করা যাবে না, করলে অমুসলিমের মৃত্যু বরণ করিতে হইবে।
৭০৫৪
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক নিজ আমীরের কাছ থেকে অপছন্দনীয় কিছু দেখবে সে যেন তাতে ধৈর্য ধারণ করে। কেননা, যে লোক জামাআত থেকে এক বিঘতও বিচ্ছিন্ন হইবে তার মৃত্যু হইবে জাহিলী মৃত্যুর মত। [৭০৫৩; মুসলিম ৩৩/১৩, হাদীস ১৮৪৯, আহমাদ ২৪৮৭] (আঃপ্রঃ- ৬৫৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৭)
৭০৫৫
জুনাদাহ ইবনু আবু উমাইয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদি.)-এর নিকট ছিলাম। তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। আমরা বললাম, আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে দিন। আপনি আমাদের এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যদদ্বারা আল্লাহ আপনাকে উপকৃত করবেন এবং যা আপনি নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছেন। তিনি বলেন নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের আহবান করিলেন। আমরা তাহাঁর কাছে বাইআত করলাম। (আঃপ্রঃ- ৬৫৬৫ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৮)
৭০৫৬
জুনাদাহ ইবনু আবু উমাইয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
এরপর তিনি (উবাদাহ) বলিলেন, আমাদের থেকে যে ওয়াদা তিনি গ্রহণ করেছিলেন তাতে ছিল যে, আমরা আমাদের সুখে-দুঃখে, বেদনায় ও আনন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে আগ্রাধিকার দিলেও পূর্ণরূপে শোনা ও মানার উপর বাইআত করলাম। আরো (বাইআত করলাম) যে আমার ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঝগড়া করব না। কিন্তু যদি স্পষ্ট কুফ্রী দেখ, তোমাদের কাছে আল্লাহর তরফ থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তাহলে আলাদা কথা।[৭২০০; মুসলিম ২৯/৯, হাদীস ১৭০৯] (আঃপ্রঃ- ৬৫৬৫ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৮)
৭০৫৭
উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, এক লোক নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি অমুক লোককে হাকাম নিযুক্ত করিলেন, অথচ আমাকে নিযুক্ত করিলেন না। তখন নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমরা আমার পর নিজের অগ্রাধিকার পাওয়ার চেষ্টা করিবে। সে সময় তোমরা ধৈর্য ধরবে, যতক্ষণ না আমার সাথে মিলিত হও।(আঃপ্রঃ- ৬৫৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৯)
৯২/৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ কতকগুলো বুদ্ধিহীন বালকের হাতে আমার উম্মাত ধ্বংস হইবে।
৭০৫৮
আমর ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ইবনু আমর ইবনু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার দাদা আমাকে জানিয়েছেন যে, আমি আবু হুরায়রা্ (রাদি.)-এর সঙ্গে মদিনায় নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাসজিদে উপবিষ্ট ছিলাম। আমাদের সঙ্গে মারওয়ানও ছিল। এ সময় আবু হুরাইরা (রাদি.) বলিলেন, আমি আস্-সাদিকুল মাস্দুক (সত্যবাদী ও সত্যবাদী হিসাবে স্বীকৃত) – কে বলিতে শুনিয়াছি আমার উম্মাতের ধ্বংস কুরাইশের কতক বালকের হাতে হইবে। তখন মারওয়ান বলিল, এ সব বালকের প্রতি আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলিলেন, আমি যদি বলার ইচ্ছা করি যে তারা অমুক অমুক গোত্রের লোক তাহলে বলিতে সক্ষম। (আঃপ্রঃ- ৬৫৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮০)
আমর ইবনু ইয়াহইয়া বলেন, মারওয়ান যখন সিরিয়ায় ক্ষমতায় আসীন হল, তখন আমি আমার দাদার সাথে তাদের সেখানে গেলাম। তিনি যখন তাদের কম বয়সের বালক দেখিতে পেলেন, তখন তিনি আমাদের বলিলেন, সম্ভবত এরা ঐ দলেরই লোক। আমরা বললাম, এ ব্যাপারে আপনিই ভাল জানেন।
৯২/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ আরবরা অতি নিকটবর্তী এক দুর্যোগে হালাক হয়ে যাবে।
৭০৫৯
যাইনাব বিনত জাহাশ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) রক্তবর্ণ চেহারা নিয়ে ঘুম থেকে জাগলেন এবং বলিতে লাগলেন, লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ! আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। নিকটবর্তী এক দুর্যোগে আরব ধ্বংস হয়ে যাবে। ইয়াজূজ-মাজূজের (প্রতিরোধ) প্রাচীর আজ এতটুকু পরিমাণ খুলে গেছে। সুফ্ইয়ান নব্বই কিংবা একশর রেখায় আঙ্গুল রেখে গিঁট বানিয়ে দেখলেন। জিজ্ঞাসা করা হল, আমরা কি ধ্বংস হয়ে যাব অথচ আমাদের মাঝে নেককার লোকও থাকবে? নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, যখন পাপাচার বেড়ে যাবে। (আঃপ্রঃ- ৬৫৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮১)
৭০৬০
উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহর টিলাসমূহের একটির উপর উঠে বলিলেন, আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখিতে পাও? উত্তরে সাহাবা-ই-কিরাম বলিলেন, না। তখন নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অবশ্যই আমি দেখিতে পাচ্ছি, তোমাদের ঘরগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ফিতনা বৃষ্টির মতো পতিত হচ্ছে।(আঃপ্রঃ- ৬৫৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮২)
৯২/৫. অধ্যায়ঃ ফিতনার ব্যাপ্তি ।
৭০৬১
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সময় নিকটতর হইতে থাকবে, আর আমাল কমে যেতে থাকবে, কৃপণতা ছড়িয়ে দেয়া হইবে, ফিতনার বিকাশ ঘটবে এবং হারজ ব্যাপকতর হইবে। সাহাব-ই-কিরাম জিজ্ঞেস করিলেন, হারজ সেটা কী? নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলিলেন, হত্যা, হত্যা। [৮৫]
শুআয়ব, ইউনুস, লায়স এবং যুহরীর ভ্রাতুষ্পুত্র আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৬৫৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮৩)
৭০৬২
শাকিক হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ও আবু মূসা (রাদি.) -এর সঙ্গে ছিলাম। তাঁরা বলেন, নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই ক্বিয়ামাতের আগে এমন একটি সময় আসবে যখন সব জায়গায় মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং ইল্ম উঠিয়ে নেয়া হইবে। সে সময় হারজ্ বর্ধিত হইবে। আর হারজ্ হল (মানুষ) হত্যা।(আঃপ্রঃ- ৬৫৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮৪)
৭০৬৩
শাকিক হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ও আবু মূসা (রাদি.) -এর সঙ্গে ছিলাম। তাঁরা বলেন, নাবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই ক্বিয়ামাতের আগে এমন একটি সময় আসবে যখন সব জায়গায় মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং ইল্ম উঠিয়ে নেয়া হইবে। সে সময় হারজ্ বর্ধিত হইবে। আর হারজ্ হল (মানুষ) হত্যা।(আঃপ্রঃ- ৬৫৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮৪)
৭০৬৪
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের আগে এমন একটি সময় আসবে যখন ইল্ম উঠিয়ে নেয়া হইবে এবং সর্বত্র মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে, আর তখন হারজ বেড়ে যাবে।(আঃপ্রঃ- ৬৫৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮৫)
৭০৬৫
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) – কে পূর্বে উল্লেখিত হাদীসের মত একটি হাদীস বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি। আর হাবশী ভাষায় হারজ অর্থ (মানুষ) হত্যা। (আঃপ্রঃ- ৬৫৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮৫)
৭০৬৬
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তার সম্পর্কে আমার ধারণা, তিনি হাদীসটি নাবী (সাঃআঃ) থেকে মারফু হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, ক্বিয়ামাতের আগে হারজ অর্থাৎ হত্যার যুগ শুরু হইবে। তখন ইল্ম বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং মূর্খতা প্রকাশিত হয়ে পড়বে। আবু মূসা (রাদি.) বলেন, হাবশী ভাষায় হারজ অর্থ (মানুষ) হত্যা।(আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮৬)
৭০৬৭
আবু মূসা আশ্আরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু আওয়ানা তাহাঁর বর্ণনাসূত্রে আবু মূসা আশ্আরী (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেন যে, তিনি আবদুল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, নাবী (সাঃআঃ) যে যুগকে হারজ-এর যুগ বলেছেন সে যুগ সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন কি? এর উত্তরে তিনি আগে উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণনা করেন।
ইবনু মাসঊদ (রাদি.) বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) – কে বলিতে শুনিয়াছি যে, ক্বিয়ামাত যাদের জীবনকালে সংঘটিত হইবে তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক। [১৫৫] [মুসলিম ৫২/২৬, হাদীস ২৯৪৯] (আঃপ্রঃ- ৬৫৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮৭)
[১] কিয়ামত শুধুমাত্র মন্দ ও খারাপ লোকদের উপর সংঘটিত হইবে। কিন্তু لا تزال طائفة من أمتي على الحق حتى تقوم الساعة
হাদীস থেকে বুঝা যায় কিয়ামত মর্যাদাবান লোকদের উপরেও সংঘটিত হইবে। সুতরাং উভয়ের সমন্বয় হল, কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার প্রাক্কালে আল্লাহ তাআলা হালকা বাতাস প্রেরণ করবেন এবং যাদের অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান থাকবে ঐ বাতাস তাদের মৃত্যু ঘটাবে। ফলে কোন মুমিন মুসলমান আর অবশিষ্ট থাকবে না। অবশিষ্ট থাকবে শুধু মন্দ ও খারাপ লোক তথা কাফের ও মুশরিক। আর তখনই সংঘটিত হইবে মহাপ্রলয়-কিয়ামত। এ সম্পর্কে ইমাম মুসলিম আবু হুরাইরা হইতে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন, إن الله يبعث ريحا من اليمن الين من الحرير فلا تدع أحدا في قلبه مثقال ذرة من إيمان إلا قبضته
সহীহ মুসলিমেই দাজ্জাল, ঈসা (আঃ) ও ইয়াজুজ-মাজুজের ঘটনা সম্বলিত নাওয়াস ইবনু সাময়ানের দীর্ঘ হাদীসের শেষের দিকে এসেছে : إذ بعث الله ريحا طبية فتقبض روح كل مؤمن ومسلم ويبقى شرار الناس يتهارجون تهارج الحمر فعليهم تقوم الساعة এ ছাড়া সহীহ মুসলিম আরো বর্ণিত হয়েছে, لا تقوم الساعة على أحد يقول الله الله
এই হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে এসেছে অন্য শব্দে। যেমন : على أحد يقول لا إله إلا الله
উপরোক্ত হাদীসগুলোকে আরো শক্তিশালী করে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদের এই হাদীস لا تقوم الساعة إلا على شرار الناس সুতরাং لا হাদীসটি পবিত্র বাতাস অবতরণের সময় প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের মৃত্যু ঘটাবে। ফলে যখন খারাপ লোক ছাড়া কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। তখনই হঠাৎ শুরু হইবে কিয়ামত। (ফাতহুল বারী)
৯২/৬. অধ্যায়ঃ প্রতিটি যুগের চেয়ে তার পরের যুগ আরও খারাপ হইবে।
৭০৬৮
যুবায়র ইবনু আদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আনাস্ ইবনু মালিক (রাদি.)-এর নিকট গেলাম এবং হাজ্জাজের নিকট থেকে মানুষ যে জ্বালাতন ভোগ করছে সে সম্পর্কে অভিযোগ পেশ করলাম। তিনি বলিলেন, ধৈর্য ধর। কেননা, মহান প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবার পূর্ব পর্যন্ত (অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে) তোমাদের উপর এমন কোন যুগ অতীত হইবে না, যার পরের যুগ তার চেয়েও বেশী খারাপ নয়। তিনি বলেন, এ কথাটি আমি তোমাদের নাবী (সাঃআঃ) থেকে শুনিয়াছি। (আঃপ্রঃ- ৬৫৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮৮)
৭০৬৯
নাবী সহধর্মিণী উম্মু সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন এক রাতে নাবী (সাঃআঃ) ভীত অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে বলিতে লাগলেন, সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ তাআলা কতই না খাযানা অবতীর্ণ করিয়াছেন আর কতই না ফিতনা অবতীর্ণ হয়েছে। কে আছে যে হুজরাবাসিনীদেরকে জাগিয়ে দেবে, যেন তারা সলাত আদায় করে। এ বলে তিনি তাহাঁর স্ত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করেছিলেন। তিনি আরও বললেনঃ দুনিয়ার মধ্যে বহু বস্ত্র পরিহিতা পরকালে উলঙ্গ থাকবে।(আঃপ্রঃ- ৬৫৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮৯)
৯২/৭. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণীঃ যে ব্যক্তি আমাদের উপর অস্ত্র উত্তোলন করিবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।
৭০৭০
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে লোক আমাদের উপর অস্ত্র তুলবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।[৬৮৭৪; মুসলিম ১/৪২, হাদীস ৯৮] (আঃপ্রঃ- ৬৫৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৯০)
৭০৭১
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের উপর অস্ত্র উঠাবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (আঃপ্রঃ- ৬৫৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৯১)
৭০৭২
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন তার অন্য কোন ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উঠিয়ে ইশারা না করে। কারণ সে জানে না হয়ত শয়তান তার হাতে ধাক্কা দিয়ে বসবে, ফলে (এক মুসলিমকে হত্যার কারণে) সে জাহান্নামের গর্তে পতিত হইবে।[মুসলিম ৪৫/৩৫, হাদীস ২৬১৭] (আঃপ্রঃ- ৬৫৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৯২)
৭০৭৩সুফ্ইয়ান ইবনু উয়াইনাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমরকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবু মুহাম্মাদ! আপনি কি জাবির ইবনু আবদুল্লাহকে বলিতে শুনেছেন যে, এক লোক মাসজিদে কতকগুলো তীর নিয়ে যাচ্ছিল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে বললেনঃ তীরের লৌহ ফলাগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে রাখো। উত্তরে তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। (আঃপ্রঃ- ৬৫৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৯৩
৭০৭৪
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, এক লোক কতকগুলো তীর নিয়ে মাসজিদে এলো। সেগুলোর ফলা খোলা অবস্থায় ছিল। তখন তাকে নির্দেশ দেয়া হল, যেন সে তার তীরের ফলাগুলো ধরে রাখে, যাতে কোন মুসলিমের গায়ে আঘাত না লাগে। (আঃপ্রঃ- ৬৫৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৯৪)
৭০৭৫
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি তীর সাথে নিয়ে আমাদের মাসজিদে কিংবা বাজারে যায়, তাহলে সে যেন তীরের ফলাগুলো ধরে রাখে, কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ তাহলে সে যেন তা মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে, যাতে সে তীর কোন মুসলিমের গায়ে না লাগে। [৪৫২; মুসলিম ৪৫/৩৪, হাদীস ২৬১৫, আহমাদ ১৯৫৯৩] (আঃপ্রঃ- ৬৫৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৯৫)
৯২/৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণীঃ আমার পরে তোমরা পরস্পরে হানাহানি করে কুফ্রীর দিকে ফিরে যেও না।
৭০৭৬
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করেছেনঃ কোন মুসলিমকে গাল দেয়া ফাসিকী কাজ (জঘন্য পাপ) আর কোন মুসলিমকে হত্যা করা কুফ্রী। (আঃপ্রঃ- ৬৫৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৯৬)
৭০৭৭
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাঃআঃ) – কে বলিতে শুনেছেন যে, আমার পরে তোমরা পরস্পরে হানাহানি করে কুফরির দিকে ফিরে যেও না।(আঃপ্রঃ- ৬৫৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৯৭)
৭০৭৮
আবু বাকরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
(একবার) রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ জনতার উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি (নাবী সাঃ) বললেনঃ তোমরা কি জান না আজ কোন্ দিন? তারা বলিলেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই এ সম্পর্কে বেশি জানেন। (বর্ণনাকারী বলেন) এতে আমরা মনে করলাম হয়ত তিনি অন্য কোন নামে এ দিনটির নামকরণ করবেন। এরপর তিনি (নাবী সাঃ) বললেনঃ এটি কি ইয়াওমন নাহর (কুরবানীর দিন) নয়? আমরা বললাম হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। এরপর তিনি বললেনঃ এটি কোন্ নগর? এটি হারাম নগর (সম্মানিত নগর) নয়? আমরা বললাম হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বলিলেন নিঃসন্দেহ তোমাদের এ নগরে, এ মাসের এ দিনটি তোমাদের জন্য যেমন হারাম, তোমাদের (একের) রক্ত, সম্পদ, ইয্যত ও চামড়া অপরের জন্য তেমনি হারাম। শোন! আমি কি তোমাদের নিকট পৌঁছিয়েছি? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। (তারপর তিনি বলিলেন) উপস্থিত ব্যক্তি যেন (আমার বাণী) অনুপস্থিতের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়। কারণ অনেক প্রচারক এমন লোকের নিকট (আমার বাণী) পৌঁছাবে যারা তার চেয়ে বেশি সংরক্ষণকারী হইবে।[১] আসলে ব্যাপারটি তাই। এরপর নাবী সাঃআঃ বললেনঃ আমার পরে একে অন্যের গর্দান উড়িয়ে কুফ্রীর দিকে ফিরে যেয়ো না। (আঃপ্রঃ- ৬৫৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৯৮)
যে দিন জারিয়্যাহ ইবনু কুদামাহ কর্তৃক আলা ইবনু হাযরামীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, সেদিন জারিয়্যাহ তার বাহিনীকে বলেছিল, আবু বাকরাহর খবর নাও। তারা বলেছিল এই তো আবু বকরাহ (রাদি.) আপনাকে দেখছেন। আবদুর রহমান বলেন, আমার মা আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন আবু বকরাহ (রাদি.) বলেছেন, (সেদিন) যদি তারা আমার গৃহে প্রবেশ করত, তাহলে আমি তাদেরকে একটি বাঁশের লাঠি নিক্ষেপ (প্রতিহত) করতাম না। আবু আবদুল্লাহ বলেন, হাদীসের ব্যবহৃত بَهَشْتُ শব্দের অর্থ رميت অর্থাৎ আমি নিক্ষেপ করেছি।
[১৫৬] আল্লাহর রসূলের কথা কতই না সত্য। পরবর্তী লোকেরা রাসুল (সাঃআঃ) এর বাণী এতই সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করেছিল যে তাদের নিকট থেকেই মুয়াত্তা ইমাম মালিক, মুসনাদে আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ইত্যাদি গ্রন্থের মাধ্যমে উম্মাতে মুসলিমার কাছে আল্লাহর রসূলের বাণীগুলো পৌঁছে গেছে।
৭০৭৯
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার পরে তোমরা একে অন্যের গর্দান উড়িয়ে কুফরির দিকে ফিরে যেও না।(আঃপ্রঃ- ৬৫৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৯৯)
৭০৮০
জারীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, বিদায় হাজ্জে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে বললেনঃ লোকদেরকে চুপ থাকতে বল। তারপর তিনি বললেনঃ আমার পরে তোমরা একে অন্যের গর্দান উড়িয়ে কুফরির দিকে ফিরে যেও না। (আঃপ্রঃ- ৬৫৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬০০)
৯২/৯. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণীঃ ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে, তাতে দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উপবিষ্ট ব্যক্তি উত্তম হইবে।
৭০৮১
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ শীঘ্রই অনেক ফিতনা দেখা দেবে। তখন উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উত্তম। দাঁড়ানো ব্যক্তি চলমান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম। চলমান ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে তাকাবে ফিতনা তাকে ঘিরে ধরবে। তখন কেউ যদি কোন আশ্রয়ের জায়গা কিংবা নিরাপদ জায়গা পায়, তাহলে সে যেন আত্মরক্ষা করে।(আঃপ্রঃ- ৬৫৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬০১)
৭০৮২
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ শীঘ্রই ফিতনা দেখা দেবে। তখন উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে ভাল (ফিতনামুক্ত) থাকবে, দাঁড়ানো ব্যক্তি চলমান ব্যক্তির চেয়ে ভাল থাকবে, চলমান ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে ভাল থাকবে। যে ব্যক্তি সে ফিতনার দিকে তাকাবে, ফিতনা তাকে ঘিরে ধরবে। কাজেই তখন কেউ যদি কোথাও কোন নিরাপদ আশ্রয়স্থল কিংবা আত্মরক্ষার ঠিকানা পায়, তাহলে সে যেন সেখানে আশ্রয় নেয়। (আঃপ্রঃ- ৬৫৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬০২)
৯২/১০. অধ্যায়ঃ তরবারী নিয়ে দুজন মুসলমান পরস্পর মারমুখী হলে ।
৭০৮৩
হাসান বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ফিতনার রাতে (অর্থাৎ জঙ্গে জামাল কিংবা জঙ্গে সিফ্ফীনে) আমি হাতিয়ার নিয়ে বের হলাম। হঠাৎ আবু বকরাহ (রাদি.) আমার সামনে পড়লেন। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর চাচাতো ভাইয়ের সাহায্যার্থে যাচ্ছি। তখন তিনি বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যদি দুজন মুসলিম তলোয়ার নিয়ে পরস্পর সংঘর্ষের জন্য মুখোমুখী হয়, তাহলে উভয়েই জাহান্নামীদের মধ্যে গণ্য হইবে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, হত্যাকারী তো জাহান্নামী। কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বলিলেন, সেও তার বিপক্ষকে হত্যা করার সংকল্প করেছিল।
বর্ণনাকারী হাম্মাদ ইবনু যায়দ বলেন, আমি এ হাদীসটি আইউব ও ইউনুস ইবনু আবদুল্লাহ্র কাছে বললাম। আমি চাচ্ছিলাম তাঁরা এ হাদীসটি আমাকে বর্ণনা করবেন। তাঁরা বলিলেন, এ হাদীসটি হাসান বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আহ্নাফ ইবনু কায়সের মাধ্যমে আবু বকরাহ (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। (আ. প্র. ৬৫৯০, ই. ফা. ৬৬০৩)
আবু বকরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। এ ব্যতীত মামার আইউব থেকে এটি বর্ণনা করিয়াছেন।
বাক্কার ইবনু আবদুল আযীয নিজ পিতার মাধ্যমে আবু বকরাহ (রাদি.) থেকে এটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং গুন্দার ও আবু বকরা (রাদি.) – র বর্ণনায় নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে সুফ্ইয়ান সাওরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মানসূর থেকে (পূর্বে উল্লেখিত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করার সময়) মারফূ রূপে উল্লেখ করেননি।(আঃপ্রঃ- , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬০৪)
৯২/১১. অধ্যায়ঃ যখন জামআত (মুসলিমরা সংঘবদ্ধ) থাকবে না তখন কী করিতে হইবে।
৭০৮৪
হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, লোকেরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে কল্যাণের বিষয়াবলী জিজ্ঞেস করত। কিন্তু আমি তাঁকে অকল্যাণের বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম এ ভয়ে যে, অকল্যাণ আমাকে পেয়ে না বসে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তো জাহিলীয়্যাত ও অকল্যাণের মাঝে ছিলাম। এরপর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ কল্যাণের মধ্যে নিয়ে আসলেন। এ কল্যাণের পর আবারও কি অকল্যাণ আসবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তবে এর মধ্যে কিছুটা ধূম্রজাল থাকবে। আমি প্রশ্ন করলাম, এর ধূম্রজাল কিরূপ? তিনি বললেনঃ এক জামাআত আমার তরীকা ছেড়ে অন্য পথ ধরবে। তাদের থেকে ভাল কাজও দেখবে এবং মন্দ কাজও দেখবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী এক সম্প্রদায় হইবে। যে ব্যক্তি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের কিছু স্বভাবের কথা আমাদের বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ তারা আমাদের লোকই এবং আমাদের ভাষায়ই কথা বলবে। আমি বললাম, যদি এমন অবস্থা আমাকে পেয়ে বসে, তাহলে কী করিতে হুকুম দেন? তিনি বললেনঃ মুসলিমদের জামাআত ও ইমামকে আঁকড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তখন মুসলিমদের কোন (সংঘবদ্ধ) জামাআত ও ইমাম না থাকে? তিনি বললেনঃ তখন সকল দলমত ত্যাগ করে সম্ভব হলে কোন গাছের শিকড় কামড়িয়ে পড়ে থাকবে, যতক্ষণ না সে অবস্থায় তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয়।(আঃপ্রঃ- ৬৫৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬০৫)
৯২/১২. অধ্যায়ঃ যে ফিত্নাকারী ও জালিমদের দল ভারী করাকে অপছন্দ করে।
৭০৮৫
আবুল আসওয়াদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যে, তিনি বলেন, একবার মাদীনাহবাসীদের উপর একটি যোদ্ধাদল তৈরির সিদ্ধান্ত হল। আমার নামও সে দলের অন্তর্ভুক্ত করা হল। এরপর ইক্রামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সঙ্গে দেখা হলে আমি তাকে এ খবর দিলাম। তিনি আমাকে কঠোরভাবে নিষেধ করিলেন এবং বলিলেন, আমাকে ইবনু আব্বাস (রাদি.) জানিয়েছেন যে, মুসলিমদের কতক লোক মুশরিকদের সঙ্গে ছিল। এতে তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর মুকাবিলায় মুশরিকদের দল ভারী করছিল। তখন কোন তীর যা নিক্ষিপ্ত হত এবং তাদের কাউকে আঘাত করে এটি তাকে হত্যা করত। অথবা কেউ তাকে তলোয়ার দিয়ে আঘাতে হত্যা করত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ যারা নিজেদের আত্মার উপর যুল্ম করেছিল এমন লোকেদের প্রাণ হরণের সময় ফেরেশতারা তাদেরকে জিজ্ঞেস করে…… (সুরা আন্-নিসা ৪/৯৭)।(আঃপ্রঃ- ৬৫৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬০৬)
৯২/১৩. অধ্যায়ঃ যখন মানুষের আবর্জনা (নিকৃষ্ট মানুষেরা) অবশিষ্ট থাকবে ।
৭০৮৬
হুযাইফাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের দুটি হাদীস বর্ণনা করেছিলেন, যার একটি আমি দেখেছি (সত্যে পরিণত হয়েছে) আর অপরটির অপেক্ষায় আছি। তিনি আমাদের বলেনঃ আমানাত মানুষের অন্তর্মূলে প্রবিষ্ট হয়। এরপর তারা কুরআন শিখে, তারপর তারা সুন্নাহ্র জ্ঞান অর্জন করে। তিনি আমাদের আমানাত বিলুপ্তি সম্পর্কেও বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেনঃ মানুষ এক সময় ঘুমাবে। তার অন্তর থেকে আমানাত উঠিয়ে নেয়া হইবে। তখন একটি বিন্দুর মত চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। এরপর সে আবার ঘুমাবে। তারপর আবার তুলে নেয়া হইবে, তখন ফোসকার মত তার চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। যেমন একটা জ্বলন্ত অঙ্গারকে যদি তুমি পায়ের উপর রেখে দাও এতে পায়ে ফোস্কা পড়ে, তখন তুমি সেটাকে ফোলা দেখবে। অথচ তার মধ্যে কিছুই নেই। (এ সময়) মানুষ বেচাকেনা করিবে বটে কিন্তু কেউ আমানাত আদায় করিবে না। তখন বলা হইবে, অমুক গোত্রে একজন আমানাতদার ব্যক্তি আছেন। কোন কোন লোক সম্পর্কে বলা হইবে যে, লোকটি কতই না বুদ্ধিমান, কতই না বিচক্ষণ, কতই না বীর, অথচ তার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান নেই। [এরপর হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন] আমার উপর দিয়ে এমন একটি যুগ অতিবাহিত হয়েছে তখন আমি তোমাদের কার সঙ্গে লেনদেন করছি এ সম্পর্কে মোটেও চিন্তা-ভাবনা করতান না। কেননা, সে যদি মুসলিম হয় তাহলে তার দীনই (হক আদায়ের জন্য) তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনবে। আর যদি সে খ্রিস্টান হয়, তাহলে তার অভিভাবকরাই (হক আদায়ের জন্য) তাকে আমার কাছে ফিরে আসতে বাধ্য করিবে। কিন্তু বর্তমানে আমি অমুক অমুককে ব্যতীত কারো সঙ্গে বেচাকেনা করি না।(আঃপ্রঃ- ৬৫৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬০৭)
৯২/১৪. অধ্যায়ঃ ফিতনার সময় বেদুঈন সুলভ জীবন কাটানো বাঞ্ছনীয় ।
৭০৮৭
সালামাহ ইবনু আকওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, একবার হাজ্জাজ আমার কাছে এলেন। তখন সে তাঁকে বলিল, হে ইবনু আকওয়া! আপনি আগের অবস্থায় ফিরে গেলেন না কি যে বেদুঈনের মত জীবন কাটাতে শুরু করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, না। বরং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে বেদুঈন সুলভ জীবন যাপনের অনুমতি প্রদান করিয়াছেন।
ইয়াযীদ ইবনু আবু উবাইদুল্লাহ বর্ণনা করেন যে, যখন উসমান ইবনু আফ্ফান (রাদি.) নিহত হলেন, তখন সালামাহ ইবনু আকওয়া (রাদি.) রাবাযায় চলে যান এবং সেখানে তিনি এক মহিলাকে বিয়ে করেন। সে মহিলার ঘরে তাহাঁর কয়েকজন সন্তান জন্মে। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে তিনি মদিনায় আসেন। এর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই বসবাসরত ছিলেন। [মুসলিম ৩৩/১৯, হাদীস ১৮৬২] (আঃপ্রঃ- ৬৫৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬০৮)
৭০৮৮
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ শীঘ্রই এমন এক সময় আসবে যখন মুসলিমদের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সম্পদ হইবে ছাগল। ফিতনা থেকে দ্বীন রক্ষার্থে পলায়নের জন্য তারা এগুলো নিয়ে পর্বতের চূড়ায় এবং বৃষ্টিপাতের জায়গাগুলোতে আশ্রয় নেবে। [১৫৭](আঃপ্রঃ- ৬৫৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬০৯)
[১৫৭] মুসলমান সমাজে যখন হত্যা, হানাহানি, বিবাদ, বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে, তখন ঈমান নিয়ে বাঁচার জন্য নিভৃত অবস্থানই হইবে উওম পন্থা। শিরকও একটি অতি বড় ফিতনা যা বিভিন্ন পন্থায় আমাদের বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।
৯২/১৫. অধ্যায়ঃ ফিতনা হইতে আশ্রয় প্রার্থনা।
৭০৮৯
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, তিনি বলেছেন, লোকেরা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে প্রশ্ন করত। এমন কি প্রশ্ন করিতে করিতে তারা তাঁকে বিরক্ত করে তুলত। একদিন নাবী (সাঃআঃ) মিম্বারে আরোহণ করিলেন এবং বললেনঃ তোমরা (আজ) আমাকে যে প্রশ্নই করিবে, আমি তারই উওর দিব। আনাস (রাদি.) বলেন, আমি ডানে বামে তাকাচ্ছিলাম। দেখিতে পেলাম প্রত্যেকেই আপন বস্ত্রে মাথা গুঁজে কাঁদছে। তখন এমন এক লোক পারস্পরিক ঝগড়ার সময় যাকে অন্য এক লোকের (যে আসলে তার পিতা নয়) সন্তান বলে সম্বোধন করা হত উঠে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর নাবী! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ হুযাফা তোমার পিতা। এরপর উমর (রাদি.) সম্মুখে এলেন আর বলিলেন, আমরা রব হিসেবে আল্লাহকে, দ্বীন হিসেবে ইসলামকে এবং মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) – কে রাসুল হিসেবে মেনে পরিতুষ্ট। ফিতনার অনিষ্ট থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আজকের মত এত উওম বস্তু এবং এত খারাপ বস্তু আমি ইতিপূর্বে কখনো দেখেনি। আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নামের ছবি পেশ করা হয়েছিল। এমনকি আমি সে দুটোকে এ দেয়ালের পাশেই দেখিতে পাচ্ছিলাম। ক্বাতাদাহ বলেন, উপরে বর্ণিত হাদীসটি নিম্নোক্ত আয়াত প্রসঙ্গে বলে উল্লেখ করা হয়। ইরশাদ হলোঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দিবে” – (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/১০১)।(আঃপ্রঃ- ৬৫৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১০)
৭০৯০
নাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আনাস (রাদি.) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ সূত্রে আনাস (রাদি.) كُلُّ رَجُلٍ رَأْسَهُ فِي ثَوْبِه يَبْكِي এর স্থলে كُلُّ رَجُلٍ لاَفًّا رَأْسَهُ فِي ثَوْبِه يَبْكِي (প্রত্যেক ব্যক্তি তার মাথায় কাপড় দিয়ে অচ্ছাদিত করে কাঁদছিল) বলে উল্লেখ করিয়াছেন। এবং تَعَوَّذُ بِاللهِ مِنْ سُوءِ الْفِتَنِ এর স্থলে عَائِذًا بِاللهِ مِنْ سُوءِ الْفِتَنِ অথবা أَعُوذُ بِاللهِ مِنْ سَوْأَى الْفِتَن উল্লেখ করিয়াছেন। [৯৩] (আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১০)
৭০৯১
ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
খালীফা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….আনাস (রাদি.)-এর বর্ণনায় নাবী সাঃআঃ থেকে পূর্বোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। এ সূত্রে তিনি عَائِذًا بِاللهِ مِنْ شَرِّ الْفِتَنِ বলেছেন। [৯৩] (আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১০)
৯২/১৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণী ফিতনা পূর্ব দিক থেকে শুরু হইবে ।
৭০৯২
সালিমের পিতা আবদুল্লাহ ইবনু্ উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
সালিমের পিতা আবদুল্লাহ ইবনু্ উমার (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, একবার তিনি নাবী (সাঃআঃ) মিম্বারের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেনঃ ফিতনা এ দিকে, ফিতনা সে দিকে যেখান থেকে শয়তানের শিং উদিত হইবে। কিংবা বলেছিলেনঃ সূর্যের মাথা উদিত হয়। [৩১০৪; মুসলিম ৫২/১৬, হাদীস ২৯০৫, আহমাদ ৪৯৮০] (আঃপ্রঃ- ৬৫৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১১)
৭০৯৩
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে পূর্ব দিকে মুখ করে বলিতে শুনেছেন, সাবধান! ফিতনা সে দিকে যে দিক থেকে শয়তানের শিং উদিত হয়। [৩১০৪; মুসলিম ৫২/১৬, হাদীস ২৯০৫, আহমাদ ৫৪১০] (আঃপ্রঃ- ৬৫৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১২)
৭০৯৪
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) আলোচনা করছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের সিরিয়ায় বারকাত দাও। হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের ইয়ামানে বারকাত দাও। লোকেরা বলিল আমাদের নজদেও। তিনি বলিলেন হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের সিরিয়ায় বরকত দাও। হে আল্লাহ! আমাদের জন্য বরকত দাও আমাদের ইয়ামানে। লোকেরা বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের নজদেও। (বর্ণনাকারী বলেন) আমার মনে হয়, তৃতীয়বারে তিনি বললেনঃ সেখানে তো কেবল ভূমিকম্প আর ফিতনা। আর তথা হইতে শয়তানের শিং উদিত হইবে। [১৫৮](আঃপ্রঃ- ৬৫৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১৩)
[১৫৮] “পূর্ব প্রান্ত হইতে ফিতনা প্রকাশ পাবে” রাসুল (সাঃআঃ)-এর এই কথা বলার কারণ ছিল সেই সময় মাদীনার পূর্বাঞ্চলের অধিবাসীরা ছিল কাফির গোষ্ঠী। রাসুল (সাঃ)-এর এই কথা হুবহু বাস্তবায়িত হয়েছিল। কারণ প্রথম ফিতনা আরম্ভ হয়েছিল পূর্ব প্রান্ত হইতেই। আর ঐ ফিতনাই মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ছিল। তেমনি ভাবে ঐ প্রান্ত হইতেই বিদআত উৎপন্ন হয়ছিল। ইমাম খাওাবী বলেনঃ নাজ্দ হচ্ছে পূর্ব দিকে। মদীনাহয় অবস্থানকারী ব্যক্তির নিকট নাজদের অবস্থান হচ্ছে ইরাক ও তার আশপাশের মরু অঞ্চল। আর তা মদীনাবাসীর পূর্ব প্রান্ত। নাজদের মূল সংজ্ঞা হল, যমীন থেকে প্রত্যেক উঁচু জায়গাকে নাজ্দ বলে। অর্থাৎ উচ্চভূমি যা নিম্নভূমির বিপরীত। সম্পূর্ণ তিহামা অঞ্চল নিম্নভূমির অর্ন্তগত। আর মক্কা এই তিহামা অঞ্চলেই অবস্থিত। সুতরাং যারা বলে নাজদ ইরাকের দিকে তারা “নাজদ” নামক নিদ্দিষ্ট জায়গা ধারণা করিয়াছেন। যেমন, দাউদী। কিন্তু তা আদৌ ঠিক নয়। বরং আরবী ভাষায় প্রত্যেক উচ্চভূমি যা নিম্নভূমির বিপরীত তাকেই নাজদ নামে অভিহিত করা হয়। আর নিম্নভূমিকে গাওর নামে অভিহিত করা হয়। (ফাতহুল বারী)
৭০৯৫
সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন একবার আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) আমাদের নিকট আসলেন। আমরা আশা করেছিলাম যে, তিনি আমাদের একটি উওম হাদীস বর্ণনা করবেন। এক ব্যক্তি তাহাঁর দিকে আমাদের চেয়ে এগিয়ে বলিল, হে আবু আবদুর রহমান! ফিতনার সময় যুদ্ধ করা সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন। কেননা, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ “তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না ফিতনার অবসান ঘটে” – (সুরা আল-বাক্কারাহ ২/১৯৩)। তখন তিনি বলিলেন, তোমার মা তোমার জন্য বিলাপ করুক। ফিতনা কাকে বলে জান কি? মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) তো যুদ্ধ করিতেন মুশরিকদের বিরুদ্ধে। কেননা, তাদের শিরকের মধ্যে থাকাটাই আসলে ফিতনা। কিন্তু তা তোমাদের রাজ্য নিয়ে লড়াইয়ের মত ছিল না।(আঃপ্রঃ- ৬৬০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১৪)
৯২/১৭. অধ্যায়ঃ সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ফিতনার ঢেউ হইবে ।
ইবনু উয়াইনাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) খালফ্ ইবনু হাওশাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, পূর্ববর্তী লোকেরা নিম্নোক্ত কবিতার দ্বারা ফিতনার উপমা দিতে পছন্দ করিতেন।
যুদ্ধের প্রথম অবস্থা যুবতীর মত,
যে তার রুপ-রং নিয়ে অপরিণামদর্শীর উদ্দেশ্যে ছুটাছুটি করে।
কিন্তু যখন যুদ্ধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে
এবং তার ফুল্কিগুলো হয় পূর্ণ যৌবণা, তখন সে বৃদ্ধা বিধবার মত পালিয়ে যায়,
যার চুল বেশিরভাগই সাদা হয়ে গেছে, রঙ ফিকে হয়ে বদলে গেছে,
যার ঘ্রা্ণ নিতে ও চুমু খেতে ঘৃণা লাগে।
৭০৯৬
হুযাইফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমরা উমার (রাদি.)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। হঠাৎ তিনি বলিলেন, ফিতনা সম্পর্কে নাবী (সাঃআঃ)-এর বক্তব্য তোমাদের মধ্যে কে স্মরণ রেখেছে? হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন, (নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন) মানুষ নিজের পরিবার, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে যে ফিতনায় পতিত হয়, সালাত, সদাকাহ, সৎকাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ তার সে পাপকে মুছে ফেলে। তিনি বলেন, আমি তোমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিনি, এবং সে ফিতনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছি যা সাগর লহরীর মত ঢেউ খেলবে। হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! সে ফিতনায় আপনার কোন অসুবিধা হইবে না। কেননা, সে ফিতনা ও আপনার মাঝে একটি বন্ধ দরজা আছে। উমার (রাদি.) বলিলেন, দরজাটি কি ভেঙ্গে ফেলা হইবে, না খুলে দেওয়া হইবে? তিনি বলিলেন, না বরং ভেঙ্গে ফেলা হইবে। উমার (রাদি.) বলিলেন, তা হলে তো সেটা আর কখনো বন্ধ করা যাবে না। (হুযাইফাহ বলেন) আমি বললাম হ্যাঁ। (শাকীক বলেন) আমরা হুযাইফাহ (রাদি.) – কে জিজ্ঞেস করলাম, উমার (রাদি.) কি দরজাটি সম্পর্কে জানতেন? উওরে তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। যেমন আমি সুনিশ্চিতভাবে জানি যে আগামী দিনের পর রাত আসবে। কেননা আমি তাকে এমন হাদীস বর্ণনা করেছিলাম যা ত্রুটিমুক্ত। (শাকীক বলেন) দরজাটি কে সম্পর্কে আমরা হুযাইফাহ (রাদি.) – কে জিজ্ঞেস করিতে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম, তাই আমরা মাসরুককে জিজ্ঞেস করিতে বললাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, দরজাটি কে? উওরে তিনি বলিলেন, উমার (রাদি.) (নিজেই)। [১৫৯](আঃপ্রঃ- ৬৬০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১৫)
[১৫৯] উমার (রাদি.) এর শাহাদাতের পর ফিতনার সর্বগ্রাসী ঢেউ মুসলিম দুনিয়াকে গ্রাস করে নিয়েছে। এ ফিতনার ঢেউ কখনই আর বন্ধ হইবে না।
৭০৯৭
আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) প্রয়োজনবশত মাদীনার (দেয়াল ঘেরা) বাগানগুলোর একটি বাগানের উদ্দেশ্যে বের হলেন। আমি তাহাঁর পিছনে গেলাম। তিনি যখন বাগানে প্রবেশ করিলেন, আমি এর দরজায় বসে থাকলাম এবং মনে মনে বললাম, আজ আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রহরীর কাজ করব। অবশ্য তিনি আমাকে এর নির্দেশ দেননি। নাবী (সাঃআঃ) ভিতরে গেলেন এবং স্বীয় প্রয়োজন সেরে নিলেন। এরপর একটি কূপের পোস্তার উপর বসলেন এবং হাঁটুর নিচের অংশের কাপড় তুলে নিয়ে দুপা কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দিলেন। এমন সময় আবু বাকর (রাদি.) এসে তাহাঁর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। আমি বললাম, আপনি অপেক্ষা করুন, যতক্ষণ না আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসছি। তিনি অপেক্ষা করিলেন। আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট আসলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর নাবী! আবু বাকর (রাদি.) আপনার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেনঃ তাঁকে আসার অনুমতি দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আবু বাকর (রাদি.) প্রবেশ করিলেন এবং নাবী (সাঃআঃ)-এর ডান পার্শে গিয়ে বসলেন। এরপর তিনিও হাঁটুর নিচের অংশ অনাবৃত করে উভয় পা কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দিলেন। এরপর উমার (রাদি.) আসলেন। আমি বললাম, আপনি নিজ জায়গায় অপেক্ষা করুন। আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসি। (অনুমতি প্রার্থনা করলে) নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তাঁকে আসার অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তিনি এসে নাবী (সাঃআঃ)-এর বামদিকে বসলেন এবং হাঁটুর নিচের অংশ অনাবৃত করে দুপা কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দিলেন। এতে কূপের পোস্তা পূর্ণ হয়ে গেল এবং সেখানে বসার আর কোন স্থান অবশিষ্ট বাকী থাকল না। এরপর উসমান (রাদি.) আসলেন। আমি বললাম, আপনি নিজ জায়গায় অপেক্ষা করুন, যতক্ষণ আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে না আসি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তাঁকে আসার অনুমতি দাও এবং তাঁকে বিপদগ্রস্ত হওয়াসহ জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তিনি প্রবেশ করিলেন। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে বসার কোন জায়গা পেলেন না। কাজেই তিনি উল্টো দিকে এসে তাঁদের মুখোমুখী হয়ে কুয়ার পাড়ে বসে গেলেন এবং হাঁটুদ্বয়ের নিচের অংশ অনাবৃত করে উভয় পা কুয়ার ভিতরে ঝুলিয়ে দিলেন। আমি তখন আমার অন্য এক ভাই-এর (আগমন) কামনা করছিলাম এবং আল্লাহর নিকট দুআ করছিলাম যেন সে (এ মূহূর্তে) আগমন করে।
ইবনু মুসাইয়্যাব বলেন, আমি এ ঘটনার ভাবার্থ এভাবে গ্রহণ করেছি যে, তা হল তাঁদের তিনজনের কবর যা এখানে একসঙ্গে হয়েছে। আর উসমান (রাদি.)-এর অন্য স্থানে।(আঃপ্রঃ- ৬৬০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১৬)
৭০৯৮
আবু ওয়ায়িল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উসামাহ (রাদি.) – কে বলা হল আপনি কি এ সম্পর্কে কিছু বলবেন না? তিনি বলিলেন, আমি এ সম্পর্কে বলেছি, তবে এমন পথে নয় যে, আমি তোমার জন্য একটি দ্বার (ফিতনার) উম্মোচিত করব যাতে আমিই হব এর প্রথম উন্মোচনকারী এবং আমি এমন ব্যক্তি নই যে, কোন লোক দুই ব্যক্তির আমীর নিযুক্ত হবার পর তার ব্যাপারে বলব, আপনি উত্তম। কেননা, আমি নাবী (সাঃআঃ) – কে বলিতে শুনিয়াছি যে (কিয়ামতের দিন) এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হইবে এবং তাকে জাহান্নামে ফেলা হইবে। এরপর তাকে গাধা দিয়ে চাকা ঘুরিয়ে যেমন গম পিষা হয়, তেমনি পিষে ফেলা হইবে। জাহান্নামবাসীরা তার পাশে এসে জড় হইবে এবং বলবে, হে অমুক! তুমিই কি আমাদের ভাল কাজের হুকুম ও মন্দ কাজের থেকে নিষেধ করিতে না? তখন সে বলবে, হ্যাঁ, আমি ভালকাজের হুকুম দিতাম, তবে আমি নিজে তা করতাম না এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতাম, তবে আমি নিজেই তা করতাম। (আঃপ্রঃ- ৬৬০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১৭)
Leave a Reply