ফাযায়েলে আমল – ফাযায়েলে তাওহীদ অধ্যায়

ফাযায়েলে আমল – তাওহীদ অধ্যায়

ফাযায়েলে তাওহীদ >> সহীহ ফাযায়িলে আমল এর মুল সুচিপত্র দেখুন

তাওহীদ অধ্যায়

পরিচ্ছেদঃ শিরকে আসগার

ফাযায়েলে আমল – ১ঃ আবূ সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিব না, যে বিষয়টি আমার কাছে মাসীহ দাজ্জালের চাইতেও ভয়ঙ্কর? সাহাবীগণ বলিলেন : হ্যাঁ। তিনি বলিলেন : তা হচ্ছে গোপন শিরক। [এর উদাহরণ হলো] একজন মানুষ দাঁড়িয়ে শুধু এ জন্যই তার সালাতকে খুব সুন্দরভাবে আদায় করে যে, কোন মানুষ তার সালাত দেখছে।

[ইবনু মাযাহ হা/৪২০৪। শায়খ আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।] হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

ফাযায়েলে আমল – ২ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি কাউকে দেখাবার উদ্দেশ্যে সলাত পড়লো সে শির্‌ক করলো, যে ব্যক্তি কাউকে দেখাবার উদ্দেশ্যে সিয়াম পালন করলো সে শির্‌ক করলো, যে ব্যক্তি অপরকে দেখাবার উদ্দেশ্যে সদাক্বাহ করলো সে শির্‌ক করলো

[আহমাদ হা/১৭১৪০, ত্বাবারানী কাবীর হা/৬৯৯৩] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

ফাযায়েলে আমল – ৩ঃ ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু `উমার [রাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে কা`বা ঘরের শপথ করিতে শুনে বলিলেন, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর শপথ করিবে না। আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে বলিতে শুনিয়াছি। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করে সে কুফরী করলো বা শির্‌ক করলো।

[তিরমিজি হা/১৫৩৫, হাকিম, সহীহাহ হা/২০৪২। ইমাম তিরমিজি বলেন : এই হাদিসটি হাসান। ইমাম হাকিম ও শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

ফাযায়েলে আমল – ৪ঃ আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যে জিনিস তোমার উপকারে আসবে তার দিকে অগ্রসর হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও আর অক্ষমতা প্রকাশ করো না। যদি তোমার উপর কোন বিপদ এসে পড়ে তাহলে এ কথা বলো না : `যদি আমি এ রকম করতাম তাহলে অবশ্যই এমন হতো।` বরং তুমি এ কথা বলো : `আল্লাহ্ যা তাক্বদীরে রেখেছেন এবং ইচ্ছা করিয়াছেন তাই হয়েছে।` কেননা `যদি` কথাটি শয়তানের জন্য কুমন্ত্রণার পথ খুলে দেয়।

[সহিহ মুসলিম, আহমাদ] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

ফাযায়েলে আমল – ৫ঃ হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক মুসলিম ব্যক্তি স্বপ্নে এক ইয়াহুদী ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করলে ইয়াহুদী লোকটি তাকে বললো। তোমরা অত্যন্ত ভাল জাতি যদি না তোমরা শির্‌ক করিতে। তোমরা বলে থাকো- `আল্লাহ্ যা চান এবং মুহাম্মাদ [সাঃ] যা চান।` অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে এ স্বপ্নের কথা বলা হলে তিনি বলেন : “আল্লাহর শপথ আমি তোমাদের এ বিষয় সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত আছি তোমরা সেভাবে কথা না বলে এভাবে বলো : “আল্লাহ্ এককভাবে যা চান অতঃপর মুহাম্মাদ [সাঃ] যা চান।”

[ইবনু মাযাহ হা/২১১৮, সিলসিলাহ সহীহাহ হা/১৩৭ : শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

ফাযায়েলে আমল – ৬ঃ ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]-এর সাথে কোন বিষয়ে কথা বলার প্রসঙ্গে বললো : `আল্লাহ্ এবং আপনি যা চান। লোকটির এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলিলেন : `তুমি কি আমাকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে নিলে?।”

[তাফসীর ইবনু কাসীর, আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম আলবানী সহিহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ১৩৯] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

ফাযায়েলে আমল – ৭ঃ `আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : কোন কিছুকে অশুভ মনে করা শির্‌ক।

[আহমাদ হা/৩৬৮৭, শায়খ আলবানী ও ইবনু হিব্বাস একে সহিহ বলেছেন] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

ফাযায়েলে আমল – ৮ঃ ইবনু মাসঊদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী পণ্ডিত রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]-এর কাছে এসে বললো; `হে মুহাম্মাদ! আমরা তাওরাত কিতাবে দেখেছি যে, আল্লাহ্ তা`আলা সাত আসমানকে এক আঙ্গুলে এবং যমীনসমূহকে এক আঙ্গুলে, বৃক্ষরাজিকে এক আঙ্গুলে, পানি এক অঙ্গুলের, ভুতলের সমস্ত জিনিসকে এক আঙ্গুলে এবং সমস্ত সৃষ্টি জগতকে এক আঙ্গুলে রেখে বলবেন : আমিই সম্রাট।` এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] ইয়াহুদী পণ্ডিতের কথার সমর্থনে এমনভাবে হেসে দিলেন যে, তাহাঁর দাঁত মোবারক দেখা যাচিছল। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন :

“তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা নিরূপণ করিতে পারেনি। ক্বিয়ামাতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাহাঁর হাতের মুঠোতে থাকিবে।” [সূরাহ আয-যুমার : ৬৮]

[২] আল্লাহ্ পাহাড়-পর্বত এবং বৃক্ষরাজি এক আঙ্গুলে রাখবেন। অতঃপর এগুলোকে ঝাকুনি দিয়ে বলবেন : আমিই রাজাধিরাজ, আমিই আল্লাহ। [সহিহ মুসলিম]

[৩] আল্লাহ্ সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে এক আঙ্গুলে রাখবেন। পানি এবং ভুতলে যা কিছু আছে তা এক আঙ্গুলে রাখবেন। [সহীহুল বুখারি]

[৪] ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেন : ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা`আলা সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করবেন। অতঃপর সেগুলোকে ডান হাতে নিয়ে বলবেন : আমিই বাদশাহ। অত্যাচারী ও যালিমরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়? অতঃপর সমস্ত পৃথিবীগুলোকে ভাঁজ করবেন। অতঃপর সেগুলোকে বাম হাতে নিয়ে বলবেন : আমিই মহারাজ। অত্যাচারী ও যালিমরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়?। [সহিহ মুসলিম]

[৫] ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : সাত আসমান এবং সাত যমীন আল্লাহ্ তা`আলার হাতের তালুতে ঠিক যেন তোমাদের কারো হাতে একটি সরিষার দানার মত। [তাফসীর ইবনু জারীর আত-তাবারী]

[৬] `আবদুল্লাহ্ বিন যায়িদ [রাঃআঃ] হইতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : কুরসীর মধ্যে সাত আকাশের অবস্থান যেন একটি ঢালের মধ্যে নিক্ষিপ্ত সাতটি দিরহামের ন্যায়। আর `আরশের মধ্যে কুরসীর অবস্থান ঠিক তেমন, যেমন খোলা ময়দানে পড়ে থাকা একটি আংটি। [তাফসীর ইবনু কাসীর]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

ফাযায়েলে আমল – ৯ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেন : “ঈমানের প্রকৃত স্বাদ সেই ব্যক্তি পাবে যার কাছে আল্লাহ্ এবং তাহাঁর রাসূল সর্বাধিক প্রিয়।”

[সহীহুল বুখারি ও সহিহ মুসলিম] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

ফাযায়েলে আমল – ১০ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] আরো বলেন : “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হইতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সকল মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় হই।”

[সহীহুল বুখারি ও সহিহ মুসলিম] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

ফাযায়েলে আমল – ১১ঃ `উমার ইবনুল খাত্তাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

একদা `উমার ইবনুল খাত্তাব [রাঃআঃ] বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে আমার নিজের আত্মা ব্যতীত সব চাইতে ভালবাসি। তখন নবী [সাঃ] বলিলেন : ঐ সত্ত্বার কসম করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমার নিকট তোমার আত্মার চাইতে প্রিয় না হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত মু`মিন নও। তখন `উমার [রাঃআঃ] বলিলেন: এখন আপনি আমার আত্মার চেয়েও অধিক প্রিয়। [সহীহুল বুখারি]

ক্বিয়ামাতের দিন মহান আল্লাহ্ বান্দাকে বলবেন : অন্যায় কাজ দেখার পর কোন জিনিস তোমাকে তা পরিবর্তন করিতে বাধা দিল? তখন বান্দা বলবে, হে প্রতিপালক! মানুষের ভয়ে তা করিনি। আল্লাহ্ বলবেন : মানুষের চেয়ে আমিই তো ভয়ের অধিকতর হক্বদার ছিলাম।

[ইবনু মাজাহ্] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

ফাযায়েলে আমল – ১২ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃ] বলেছেন : “তোমরা আমার মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করো না যেমন প্রশংসা করেছিল নাসারারা ঈসা ইবনু মারইয়ামের ব্যাপারে। আমি তো আল্লাহ্ বান্দা মাত্র। তাই তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রাসূল বলবে।” [সহীহুল বুখারি]

এর অর্থ হল, তোমরা আমার মিথ্যা প্রশংসা করো না, আর আমার প্রশংসা জ্ঞাপনে সীমা অতিক্রম করো না। যেমন নাসারারা ঈসা [আঃ]- এর সীমালঙ্ঘন করেছিল, অতঃপর তারা তাহাঁর উলুহিয়্যাতের দাবী করেছিল। আর তোমরা আমার সেই গুণ বর্ণনা করো যে গুণে আমার প্রতিপালক আমাকে গুণান্বিত করিয়াছেন। সুতরাং তোমরা বল : আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রাসূল।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

ফাযায়েলে আমল – ১৩ঃ আনাস ইবনু মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

একদা কিছু লোক রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃ]-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলিতে শুরু করলো : হে আল্লাহর রাসূল! হে আমাদের সরদার, হে আমাদের সরদার তনয়! এসব শুনে নবী [সাঃ] বলিলেন : “হে লোকেরা! তোমরা আজ পর্যন্ত আমাকে যেভাবে ডাকতে সেভাবে ডাক। শয়তান যেন তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলতে না পারে। আমি তো মুহাম্মাদ। আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রাসূল। আল্লাহ্ আমাকে যে স্থান ও মর্যাদা দিয়েছেন, তোমরা আমাকে তার চাইতে উঁচু স্থানে উঠাতে চেও না-এটা আমি পছন্দ করি না।”

{ নবী [সাঃ] সার্বিকভাবে তাহাদের মধ্যে উত্তম এবং সৃষ্টির সেরা হওয়া সত্ত্বেও তাহাঁর ব্যাপারে এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা অপছন্দ করিতেন। কিন্তু তিনি আল্লাহর একত্ববাদ রক্ষার্থে এবং তাহাঁর অধিকারের ব্যাপারে সীমালঙ্খন ও বাড়াবাড়ি থেকে তাহাদেরকে দূরে রাখার জন্য এরূপ বলিতে নিষেধ করেন। তিনি তাহাদেরকে এমন দুটি গুণের দ্বারা তাহাঁর প্রশংসা করিতে বলেন, যা বান্দার জন্য সবচেয়ে বেশি সম্মানিত। যাতে কোন বাড়াবাড়ি নেই এবং আক্বীদাহ্ বিশ্বাসের প্রতি ক্ষতিকর আশংকা নেই। তা হলো : `আবদুল্লাহ্ ওয়া রাসূলূহু অর্থাৎ আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রাসূল – লেখক }

নাসায়ী `সুনানুল কুবরা` হা/১০০৭৮, আহমাদ হা/১৩৫৯৬, ১৩৫৩০, শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন. হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply