ফাজায়েলে কুরআন

ফাজায়েলে কুরআন

ফাজায়েলে কুরআন >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৬, ফাজায়েলে কুরআন, অধ্যায়ঃ (১-৩৭)=৩৭টি

৬৬/১. অধ্যায়ঃ ওয়াহী কীভাবে অবতীর্ণ হয় এবং সর্বপ্রথম যা অবতীর্ণ হয়েছিল।
৬৬/২. অধ্যায়ঃ কুরআন কুরায়শ এবং আরবদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে।
৬৬/৩. অধ্যায়ঃ কুরআন সংকলনের অধ্যায়
৬৬/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃ)- এর কাতিব (ওয়াহী লিখক)
৬৬/৫. অধ্যায়ঃ কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে।
৬৬/৬. অধ্যায়ঃ কুরআন সংকলন
৬৬/৭. অধ্যায়ঃ জিবরীল (আঃ) নাবী (সাঃ)- এর সঙ্গে কুরআন মাজীদ শুনতেন ও শুনাতেন।
৬৬/৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃ)- এর যে সব সহাবী ক্বারী ছিলেন।
৬৬/৯. অধ্যায়ঃ সুরা ফাতিহার ফযীলত
৬৬/১০. অধ্যায়ঃ সুরা আল-বাকারাহর ফযীলত।
৬৬/১১. অধ্যায়ঃ সুরা কাহফের ফযীলত।
৬৬/১২. অধ্যায়ঃ সুরা আল্ ফাতহর ফযীলত।
৬৬/১৩. অধ্যায়ঃকুল্‌হু আল্লাহু আহাদ (সুরা ইখলাস)- এর ফযীলত।
৬৬/১৪. অধ্যায়ঃ মুআববিযাত (সুরা ফালাক ও সুরা নাস)- এর ফযীলত।
৬৬/১৫. অধ্যায়ঃ কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের সময় প্রশান্তি নেমে আসে ও মালায়িকাহ অবতীর্ণ হয়।
৬৬/১৬. অধ্যায়ঃ যারা বলে, দুই মলাটের মধ্যে (কুরআন) যা কিছু আছে তা বাদে নাবী (সাঃ) কিছু রেখে যাননি।
৬৬/১৭. অধ্যায়ঃ সব কালামের উপর কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব।
৬৬/১৮. অধ্যায়ঃ কিতাবুল্লাহর ওয়াসিয়্যাত
৬৬/১৯. অধ্যায়ঃ যার জন্য কুরআন যথেষ্ট নয়।
৬৬/২০. অধ্যায়ঃ কুরআন তিলাওয়াতকারী হবার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা।
৬৬/২১. অধ্যায়ঃ তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম, যে নিজে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়।
৬৬/২২. অধ্যায়ঃ মুখস্থ কুরআন পাঠ করা।
৬৬/২৩. অধ্যায়ঃ কুরআন মাজীদ বারবার তিলাওয়াত করা ও স্মরণ রাখা।
৬৬/২৪. অধ্যায়ঃ জন্তুর পিঠে বসে কুরআন পাঠ করা।
৬৬/২৫. অধ্যায়ঃ শিশুদের কুরআন শিক্ষাদান।
৬৬/২৬. অধ্যায়ঃ কোরআন মুখস্ত করে ভুলে যাওয়া এবং কেউ কি বলিতে পারে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি?
৬৬/২৭. অধ্যায়ঃ যারা সুরা বাকারাহ বা অমুক অমুক সুরা বলাতে দোষ মনে করেন না।
৬৬/২৮. অধ্যায়ঃ সুস্পষ্ট ও ধীরে কুরআন তিলাওয়াত করা।
৬৬/২৯. অধ্যায়ঃ মাদ সহকারে কিরাআত।
৬৬/৩০. অধ্যায়ঃ আততারজী (ছন্দময় সুমধুর সুরে পাঠ করা)
৬৬/৩১. অধ্যায়ঃ মধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করা।
৬৬/৩২. অধ্যায়ঃ যে অন্যের নিকট থেকে কুরআন পাঠ শুনতে ভালবাসে।
৬৬/৩৩. অধ্যায়ঃ তিলাওয়াতকারী তিলাওয়াত শোনার পর শ্রোতার মন্তব্য তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট।
৬৬/৩৪. অধ্যায়ঃ কতটুকু সময়ে কুরআন খতম করা যায়?
৬৬/৩৫. অধ্যায়ঃ কুরআন তিলাওয়াতকালে ক্রন্দন করা।
৬৬/৩৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি দেখানো বা দুনিয়ার লোভে অথবা গর্বের জন্য কুরআন পাঠ করে
৬৬/৩৭. অধ্যায়ঃ যতক্ষণ মন চায় কুরআন তিলাওয়াত করা।

৬৬/১. অধ্যায়ঃ ওয়াহী কীভাবে অবতীর্ণ হয় এবং সর্বপ্রথম যা অবতীর্ণ হয়েছিল।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, (আরবি) মানে- আমীন। কুরআন পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী গ্রন্থের জন্য আমীন স্বরূপ।

৪৯৭৮. আবু সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন,আয়েশা ও ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, নাবী (সাঃ) মক্কায় দশ বছর অবস্থান করেন।

এ সময় তাহাঁর প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং মাদীনাহতেও দশ বছর (তাহাঁর প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে)।(আঃপ্রঃ ৪৬০৯, ইঃফাঃ ৪৬১৪)

৪৯৭৯. আবু সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন,আয়েশা ও ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, নাবী (সাঃ) মক্কায় দশ বছর অবস্থান করেন। এ সময় তাহাঁর প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং মাদীনাহতেও দশ বছর (তাহাঁর প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে)।

(আঃপ্রঃ ৪৬০৯, ইঃফাঃ ৪৬১৪).

৪৯৮০

আবু উসমান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাকে অবগত করা হয়েছে যে, একদা জিবরীল (আঃ) নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে আগমন করিলেন। তখন উম্মু সালামাহ (রাদি.) তাহাঁর কাছে ছিলেন। জিবরীল (আঃ) তাহাঁর সাথে কথা বলিতে আরম্ভ করিলেন। নাবী (সাঃআঃ) উম্মু সালামাহ (রাদি.)- কে জিজ্ঞেস করিলেন, ইনি কে? অথবা তিনি এরকম কোন কথা জিজ্ঞেস করিলেন। উম্মু সালামাহ (রাদি.) বলিলেন, ইনি দাহইয়া (রাদি.)। তারপর জিবরীল (আঃ) উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম, নাবী (সাঃআঃ)– এর ভাষণে জিবরীল (আঃ)– এর খবর না শুনা পর্যন্ত আমি তাঁকে সে দাহইয়া (রাদি.)– ই মনে করেছি। অথবা তিনি (বর্ণনাকারী) সে রকম কোন কথা বর্ণনা করিয়াছেন। বর্ণনাকারী মুতামির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার পিতা (সুলাইমান) বলেছেন, আমি উসমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কার নিকট থেকে এ ঘটনা শুনেছেন? তিনি বলিলেন, উসামাহ ইবনু যায়দের নিকট হইতে।(আঃপ্রঃ ৪৬১০, ইঃফাঃ ৪৬১৫)

৪৯৮১

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, প্রত্যেক নাবীকে তাহাঁর যুগের প্রয়োজন মুতাবিক কিছু মুজিযা ‎দান করা হয়েছে, যা দেখে লোকেরা তাহাঁর প্রতি ঈমান এনেছে। আমাকে যে মুজিযা দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে, ওয়াহী- যা আল্লাহ আমার ‎প্রতি অবতীর্ণ করিয়াছেন। কাজেই আমি আশা করি, ক্বিয়ামাতের দিন তাদের অনুসারীদের অনুপাতে আমার অনুসারীদের সংখ্যা অনেক ‎অধিক হইবে।[৭২৭৪; মুসলিম ১/৭০, হাদীস ১৫২, আহমাদ ৮৪৯৯] (আঃপ্রঃ ৪৬১১, ইঃফাঃ ৪৬১৬)

৪৯৮২

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা নাবী (সাঃআঃ)– এর প্রতি ক্রমাগত ওয়াহী অবতীর্ণ করিতে থাকেন এবং তাহাঁর ইন্তিকালের নিকটবর্তী সময়ে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর প্রতি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ওয়াহী অবতীর্ণ করেন। এরপর তাহাঁর ওফাত হয়। [মুসলিম ৫৪/হাদীস ৩০১৬] (আঃপ্রঃ ৪৬১২, ইঃফাঃ ৪৬১৭)

৪৯৮৩

জুনদুব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অসুস্থ হলেন। ফলে এক কি দুরাত তিনি উঠতে পারেন নি। এক মহিলা তাহাঁর কাছে এসে বলিল, হে মুহাম্মাদ! আমার মনে হয়, তোমার শয়তান তোমাকে ত্যাগ করেছে। তখন আল্লাহ অবতীর্ণ করিলেন, “শপথ পূর্বাহ্ণের, শপথ রাতের, যখন তা হয় নিঝুম। তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হননি।”(আঃপ্রঃ ৪৬১৩, ইঃফাঃ ৪৬১৮)

৬৬/২. অধ্যায়ঃ কুরআন কুরায়শ এবং আরবদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে।

যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ “সরল ও সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি।” (সুরা শুআরা ২৬/১৯৫) (সুরা ত্বাহা ২০/১১৩)

৪৯৮৪

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উসমান (রাদি.) যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.), সাঈদ ইবনুল আস (রাদি.), আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) এবং আবদুর রহমান ইবনু হারিস ইবনু হিশাম (রাদি.)– কে পবিত্র কুরআন গ্রন্থাগারে লিপিবদ্ধ করার জন্য আদেশ দিলেন এবং তাদেরকে বলিলেন, আল কুরআনের কোন শব্দের আরাবী হওয়ার ব্যাপারে যায়দ ইবনু সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতভেদ দেখা দিলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষায় লিপিবদ্ধ করিবে। কারণ, কুরআন তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব তাঁরা তা-ই করিলেন।(আঃপ্রঃ ৪৬১৪, ইঃফাঃ ৪৬১৯)

৪৯৮৫

ইয়ালা ইবনু উমাইয়াহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলিতেন, হায়! রাসুলুল্লাহ (সাঃ)– এর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় যদি তাঁকে দেখিতে পারতাম। যখন নাবী (সাঃ) জিয়িররানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন এবং চাঁদোয়া দিয়ে তাহাঁর উপর ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন কতিপয় সাহাবী। এমন সময় সুগন্ধি মেখে এক ব্যক্তি এলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ঐ সম্পর্কে আপনার মত কী, যে সুগন্ধি মেখে জুব্বা পরে ইহরাম বেঁধেছে? কিছু সময়ের জন্য নাবী (সাঃ) অপেক্ষা করিলেন, এমনি সময় ওয়াহী এল। উমার (রাদি.) ইয়ালা (রাদি.)– কে ইশারা দিয়ে ডাকলেন। ইয়ালা (রাদি.) এলেন এবং তাহাঁর মাথা ঐ চাদরের ভেতর ঢোকালেন। দেখলেন, রাসুল (সাঃ) এর মুখমণ্ডল লাল রক্তিম বর্ণ এবং কিছু সময়ের জন্য বেশ জোরে জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করছেন। তারপর তাহাঁর থেকে এ অবস্থা সম্পূর্ণরূপে দূর হওয়ার পর তিনি বলিলেন, প্রশ্নকারী কোথায় যে কিছুক্ষণ পূর্বে আমাকে উমরাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল? লোকটিকে খুঁজে নাবী (সাঃ)– এর নিকট নিয়ে আসা হল। নাবী (সাঃ) বলিলেন, যে সুগন্ধি তুমি তোমার শরীরে মেখেছ, তা তিনবার ধুয়ে ফেলবে আর জুব্বাটি খুলে ফেলবে। তারপর তুমি তোমার উমরাহতে ঐ সমস্ত কাজ করিবে, যা তুমি হাজ্জের মধ্যে করে থাক।(আঃপ্রঃ ৪৬১৫, ইঃফাঃ ৪৬২০)

৬৬/৩. অধ্যায়ঃ কুরআন সংকলনের অধ্যায়

৪৯৮৬

যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইয়ামামাহর যুদ্ধে বহু লোক শহীদ হবার পর আবু বাক্‌র সিদ্দীক (রাদি.) আমাকে ডেকে পাঠালেন। এ সময় উমার (রাদি.)– ও তাহাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, উমার (রাদি.) আমার কাছে এসে বলিলেন, ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদদের মধ্যে কারীদের সংখ্যা অনেক। আমি আশংকা করছি, এমনিভাবে যদি কারীগণ শাহীদ হয়ে যান, তাহলে কুরআন মাজীদের বহু অংশ হারিয়ে যাবে। অতএব আমি মনে করি যে, আপনি কুরআন সংকলনের নির্দেশ দিন। উত্তরে আমি উমার (রাদি.)– কে বললাম, যে কাজ আল্লাহর রাসুল (সাঃ) করেননি, সে কাজ তুমি কীভাবে করিবে? উমার (রাদি.) জবাবে বলিলেন, আল্লাহর কসম! এটা একটি উত্তম কাজ। উমার (রাদি.) এ কথাটি আমার কাছে বার বার বলিতে থাকলে অবশেষে আল্লাহ তায়ালা এ কাজের জন্য আমার বক্ষকে উন্মোচন করে দিলেন এবং এ ব্যাপারে উমার যা ভাল মনে করিলেন আমিও তাই করলাম। যায়দ (রাদি.) বলেন, আবু বাক্‌র সিদ্দীক (রাদি.) আমাকে বলিলেন, তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক। তোমার ব্যাপারে আমার কোন সংশয় নেই। তদুপরি তুমি রাসুল (সাঃ)- এর ওয়াহীর লেখক ছিলে। সুতরাং তুমি কুরআন মাজীদের অংশগুলোকে তালাশ করে একত্রিত কর। আল্লাহর শপথ! তারা যদি আমাকে একটি পর্বত এক স্থান হইতে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিত, তাহলেও তা আমার কাছে কুরআন সংকলনের নির্দেশের চেয়ে কঠিন বলে মনে হত না। আমি বললাম, যে কাজ রাসুল (সাঃ) করেননি, আপনারা সে কাজ কীভাবে করবেন? তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম! এটা একটা কল্যাণকর কাজ। এ কথাটি আবু বাক্‌র সিদ্দীক (রাদি.) আমার কাছে বার বার বলিতে থাকেন, অবশেষে আল্লাহ আমার বক্ষকে উন্মোচন করে দিলেন সে কাজের জন্য, যে কাজের জন্য তিনি আবু বাকর এবং উমার (রাদি.)– এর বক্ষকে উন্মোচন করে দিয়েছিলেন। এরপর আমি কুরআন আনুসন্ধানের কাজে লেগে গেলাম এবং খেজুর পাতা, প্রস্তরখণ্ড ও মানুষের বক্ষ থেকে আমি তা সংগ্রহ করিতে থাকলাম। এমন কি আমি সুরা তওবার শেষাংশ আবু খুযায়মাহ আনসারী (রাদি.) থেকে সংগ্রহ করলাম। এ অংশটুকু তিনি বাদে আর কারো কাছে আমি পাইনি। আয়াতগুলো হচ্ছে এইঃ তোমাদের মধ্যে হইতে তোমাদের কাছে এক রাসুল এসেছে। তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তাহাঁর জন্য তা কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। এরপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলো, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আমি তাহাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহা আরশের অধিপতি। (১২৮-১২৯) তারপর সঙ্কলিত সহীফাসমূহ মৃত্যু পর্যন্ত আবু বকর (রাদি.)– এর কাছে রক্ষিত ছিল। তাহাঁর মৃত্যুর পর তা উমার (রাদি.)- এর কাছে সংরক্ষিত ছিল, যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন। অতঃপর তা উমার (রাদি.)- এর কন্যা হাফসাহ (রাদি.)- এর কাছে সংরক্ষিত ছিল।(আঃপ্রঃ ৪৬১৬, ইঃফাঃ ৪৬২১)

৪৯৮৭

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাদি.) একবার উসমান (রাদি.)- এর কাছে এলেন। এ সময় তিনি আরমিনিয়া ও আযারবাইজান বিজয়ের ব্যাপারে সিরীয় ও ইরাকী যোদ্ধাদের জন্য যুদ্ধ-প্রস্তুতির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কুরআন পাঠে তাঁদের মতবিরোধ হুযাইফাহকে ভীষণ চিন্তিত করিল। সুতরাং তিনি উসমান (রাদি.)- কে বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! কিতাব সম্পর্কে ইয়াহূদী ও নাসারাদের মত মতপার্থক্যে লিপ্ত হবার পূর্বে এই উম্মতকে রক্ষা করুন। তারপর উসমান (রাদি.) হাফসাহ (রাদি.)- এর কাছে এক ব্যক্তিকে এ বলে পাঠালেন যে, আপনার কাছে সংরক্ষিত কুরআনের সহীফাসমূহ আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা সেগুলোকে পরিপূর্ণ মাসহাফসমূহে লিপিবদ্ধ করিতে পারি। এরপর আমরা তা আপনার কাছে ফিরিয়ে দেব। হাফসাহ (রাদি.) তখন সেগুলো উসমান (রাদি.)- এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এরপর উসমান (রাদি.) যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.), সাঈদ ইবনু আস (রাদি.) এবং আবদুর রহমান ইবনু হারিস ইবনু হিশাম (রাদি.)- কে নির্দেশ দিলেন। তাঁরা মাসহাফে তা লিপিবদ্ধ করিলেন। এ সময় উসমান (রাদি.) তিনজন কুরাইশী ব্যাক্তিকে বলিলেন, কুরআনের কোন ব্যাপারে যদি যায়দ ইবনু সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতভেদ দেখা দেয়, তাহলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষায় লিপিবদ্ধ করিবে। কারণ, কুরআন তাদের ভাষায় নাযিল হয়েছে। সুতরাং তাঁরা তাই করিলেন। যখন মূল লিপিগুলো থেকে কয়েকটি পরিপূর্ণ গ্রন্থ লেখা হয়ে গেল, তখন উসমান (রাদি.) মূল লিপিগুলো হাফসাহ (রাদি.)- এর কাছে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর তিনি কুরআনের লিখিত মাসহাফ-সমূহের এক একখানা মাসহাফ এক এক প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন এবং এছাড়া আলাদা আলাদা বা একত্রিত কুরআনের যে কপিসমূহ রয়েছে তা জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।(আঃপ্রঃ ৪৬১৭, ইঃফাঃ ৪৬২২)

৪৯৮৮

ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, খারিজাহ ইবনু সাবিতের মাধ্যমে যায়দ ইবনু সাবিত থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমরা যখন গ্রন্থাকারে কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম তখন সুরা আহযাবের একটি আয়াত আমার থেকে হারিয়ে যায়; অথচ আমি তা রাসুল (সাঃ)- কে পাঠ করিতে শুনিয়াছি। তাই আমরা খোঁজ করিতে লাগলাম। শেষে আমরা তা খুযাইমাহ ইবনু সাবিত আনসারী (রাদি.)- এর কাছে পেলাম। আয়াতটি হচ্ছে এইঃ “মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি”- (সুরা আল-আহযাব ৩৩/২৩)। তারপর আমরা এ আয়াতটি সংশ্লিষ্ট সুরার সঙ্গে মাসহাফে লিপিবদ্ধ করলাম।(আঃপ্রঃ ৪৬১৭, ইঃফাঃ ৪৬২২)

৬৬/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃ)- এর কাতিব (ওয়াহী লিখক)

৪৯৮৯

যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু বকর (রাদি.) আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বলিলেন, তুমি রাসুল (সাঃ)- এর ওয়াহী লিখতে। সুতরাং তুমি কুরআনের আয়াতগুলো খোঁজ কর। এরপর আমি খোঁজ করলাম। অবশেষে সুরা তওবার শেষ দুটো আয়াত আমি আবু খুযায়মা আনসারী (রাদি.)- এর কাছে পেলাম। তিনি ছাড়া আর কারো কাছে আমি এর সন্ধান পাইনি। আয়াত দুটো হচ্ছে এইঃ “তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসুল। তার পক্ষে অতি দুঃসহ-দুর্বহ সেসব বিষয় যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে, তিনি তোমাদের অতিশয় হিতকামী, মুমিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, খুবই দয়ালু। এতদসত্ত্বেও তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলে দিন- আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। তাহাঁরই উপর আমি ভরসা করি এবং তিনি বিরাট আরশের অধিপতি”- (সুরা আত-তাওবাহ ৯/১২৮-১২৯)।(আঃপ্রঃ ৪৬১৮, ইঃফাঃ ৪৬২৩)

৪৯৯০

বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (আরবি) আয়াতটি অবতীর্ণ হলে নাবী (সাঃ) বলিলেন, যায়দকে আমার কাছে ডেকে আন এবং তাকে বল সে যেন কাষ্ঠখণ্ড, দোয়াত এবং কাঁধের হাড় (রাবী বলেন- অথবা তিনি বলছেন, কাঁধের হাড় এবং দোয়াত) নিয়ে আসে। এরপর তিনি বলিলেন, লিখ। এ সময় অন্ধ সহাবী আমর ইবনু উম্মু মাকতূম (রাদি.) নাবী (সাঃ)- এর পেছনে বসা ছিলেন। তিনি বলিলেন, আমি তো অন্ধ, আমার ব্যাপারে আপনার কী নির্দেশ? এ কথার প্রেক্ষিতে পূর্বোক্ত আয়াতের পরিবর্তে অবতীর্ণ হলঃ “সমান নয় সেসব মুমিন যারা বিনা ওজরে ঘরে বসে থাকে এবং ঐসব মুমিন যারা আল্লাহর পথে নিজেদের জানমাল দিয়ে জিহাদ করে” – (সুরা আন-নিসা ৪/৯৫)।(আঃপ্রঃ ৪৬১৯, ইঃফাঃ ৪৬২৪)

৬৬/৫. অধ্যায়ঃ কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে।

৪৯৯১

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, জিবরীল (আঃ) আমাকে একভাবে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাঁকে অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অনুরোধ করিতে লাগলাম এবং বার বার অন্যভাবে পাঠ করার জন্য ক্রমাগত অনুরোধ করিতে থাকলে তিনি আমার জন্য তিলাওয়াতের পদ্ধতি বাড়িয়ে যেতে লাগলেন। অবশেষে তিনি সাত আঞ্চলিক ভাষায় তিলাওয়াত করে সমাপ্ত করিলেন।(আঃপ্রঃ ৪৬২০, ইঃফাঃ ৪৬২৫)

৪৯৯২

 উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি হিশাম ইবনু হাকীম (রাদি.)- কে রাসুল (সাঃ)– এর জীবদ্দশায় সুরা ফুরকান তিলাওয়াত করিতে শুনিয়াছি এবং গভীর মনোযোগ দিয়ে আমি তাহাঁর কিরাআত শুনিয়াছি। তিনি বিভিন্নভাবে কিরায়াত পাঠ করিয়াছেন; অথচ রাসুল (সাঃ) আমাকে এভাবে শিক্ষা দেননি। এ কারণে সলাতের মাঝে আমি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য আমি উদ্যত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু বড় কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর সে সালাম ফিরালে আমি চাদর দিয়ে তার গলা পেঁচিয়ে ধরলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে এ সুরা যেভাবে পাঠ করিতে শুনলাম, এভাবে তোমাকে কে শিক্ষা দিয়েছে? সে বলিল, রাসুল (সাঃ)– ই আমাকে এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি বললাম, তুমি মিথ্যা বলছ। কারণ, তুমি যেভাবে পাঠ করেছ, এর থেকে ভিন্ন ভাবে রাসুল (সাঃ) আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাকে জোর করে টেনে রাসুল (সাঃ)– এর কাছে নিয়ে গেলাম এবং বললাম, আপনি আমাকে সুরা ফুরকান যেভাবে পাঠ করিতে শিখিয়েছেন এ লোককে আমি এর থেকে ভিন্নভাবে তা পাঠ করিতে শুনিয়াছি। এ কথা শুনে রাসুল (সাঃ) বলিলেন, তাকে ছেড়ে দাও। হিশাম, তুমি পাঠ করে শোনাও। তারপর সে সেভাবে পাঠ করে শোনাল, যেভাবে আমি তাঁকে পাঠ করিতে শুনিয়াছি। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলিলেন, এভাবেই অবতীর্ণ করা হয়েছে। এরপর বলিলেন, হে উমার! তুমিও পড়। সুতরাং আমাকে তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবেই আমি পাঠ করলাম। এবারও রাসুল (সাঃ) বলিলেন, এভাবেও কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ কুরআন সাত আঞ্চলিক ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের জন্য যা বেশি সহজ, সেভাবেই তোমরা পাঠ কর।(আঃপ্রঃ ৪৬২১, ইঃফাঃ ৪৬২৬)

৬৬/৬. অধ্যায়ঃ কুরআন সংকলন

৪৯৯৩

ইউসুফ ইবনু মাহিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশাহ (রাদি.)-এর কাছে ছিলাম। এমন সময় এক ইরাকী ব্যক্তি এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলঃ কোন্ ধরনের কাফন শ্রেষ্ঠ? তিনি বলিলেন, আফসোস তোমার প্রতি! এতে তোমার কী ক্ষতি? তারপর লোকটি বলিল, হে উম্মুল মুমিনীন! আমাকে আপনি আপনার কুরআনের কপি দেখান। তিনি বলিলেন, কেন? লোকটি বলিল, এ তারতীবে কুরআনকে বিন্যস্ত করার জন্য। কারণ লোকেরা তাকে অবিন্যস্তভাবে পাঠ করে। আয়েশাহ (রাদি.) বলিলেন, তোমরা এর যে অংশই আগে পাঠ কর না কেন, এতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। (الْمُفَصَّلِ) মুফাস্সাল সুরা সমূহের মাঝে প্রথমত ঐ সুরাগুলো অবতীর্ণ হয়েছে যার মধ্যে জান্নাত ও জাহান্নামের উল্লেখ রয়েছে। তারপর যখন লোকেরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিতে লাগল তখন হালাল-হারামের বিধান সম্বলিত সুরাগুলো অবতীর্ণ হয়েছে। যদি প্রথমেই এ আয়াত অবতীর্ণ হত যে, তোমরা মদ পান করো না, তাহলে লোকেরা বলত, আমরা কখনো মদপান ত্যাগ করব না। যদি শুরুতে অবতীর্ণ হতো তোমার ব্যভিচার করো না, তাহলে তারা বলত আমরা কখনো অবৈধ যৌনাচার ত্যাগ করব না। আমি যখন খেলাধূলার বয়সী একজন বালিকা তখন মক্কা্য় মুহাম্মাদ সাঃআঃ-এর প্রতি নিম্নলিখিত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়ঃ بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهٰى وَأَمَرُّ মানে, অধিকন্তু ক্বিয়ামাত তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং ক্বিয়ামাত হইবে কঠিনতর ও তিক্ততর। (বিধান সম্বলিত) সুরা বাকারাহ ও সুরা নিসা আমি রাসুল সাঃআঃ-এর সঙ্গে থাকাকালীন অবস্থায় অবতীর্ণ হয়। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আয়েশাহ (রাদি.) তাহাঁর কাছে সংরক্ষিত কুরআনের কপি বের করিলেন এবং সুরাসমূহ লেখালেন। [৪৮৭৬] (আঃপ্রঃ ৪৬২২, ইঃফাঃ ৪৬২৭)

৪৯৯৪

ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তিনি সুরা বানী ইসরাঈল, সুরা কাহফ, সুরা মারিয়াম, সুরা ত্বাহা এবং সুরা আম্বিয়া সম্পর্কে বলিতেন যে, এগুলো হচ্ছে আমার সর্বপ্রথম সম্পদ এবং এগুলো আমার পুরাতন সম্পত্তি।(আঃপ্রঃ ৪৬২৩, ইঃফাঃ ৪৬২৮)

৪৯৯৫

বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুল সাঃআঃ মদিনা্য় আসার পূর্বে আমি سَبِّحْ اسْمَ رَبِّكَ সুরাটি শিখেছি। (আঃপ্রঃ ৪৬২৪, ইঃফাঃ ৪৬২৯)

৪৯৯৬

 আব্দুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সমপর্যায়ের ঐ সুরাগুলো সম্পর্কে আমি খুব অবগত আছি, যা নাবী সাঃআঃ প্রতি রাকআতে জোড়া জোড়া পাঠ করিতেন। তারপর আবদুল্লাহ (রাদি.) দাঁড়ালেন এবং আলক্বামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাকে অনুসরণ করিলেন। যখন আলক্বামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলেন তখন আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, এগুলো হচ্ছে মোট বিশটি সুরা, ইবনু মাসঊদ (রাদি.)-এর সংকলন মুতাবিক মুফাস্সাল থেকে যার শুরু এবং যার শেষ হচ্ছে الْحَوَامِيْمُ অর্থাৎ হামীম আদ্দুখান এবং আম্মা ইয়াতাসা আলুন। [৭৭৫] (আঃপ্রঃ ৪৬২৫, ইঃফাঃ ৪৬৩০)

৬৬/৭. অধ্যায়ঃ জিবরীল (আঃ) নাবী (সাঃ)- এর সঙ্গে কুরআন মাজীদ শুনতেন ও শুনাতেন।

মাসরূক্ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আয়েশা (রাদি.)- এর মাধ্যমে ফাতিমাহ (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, নাবী (সাঃ) আমাকে গোপনে বলেছেন, প্রতি বছর জিবরীল (আঃ) আমার সঙ্গে একবার কুরআন শুনান ও শুনেন; কিন্তু এ বছর তিনি আমার সঙ্গে দুবার এ কাজ করেন। আমার মনে হচ্ছে আমার মৃত্যু আসন্ন।

৪৯৯৭

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) কল্যাণের কাজে ছিলেন সর্বাধিক দানশীল, বিশেষভাবে রমাযান মাসে। (তাহাঁর দানশীলতার কোন সীমা ছিল না) কেননা, রমাযান মাসের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাত্রে জিবরীল (আঃ) তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতেন এবং তিনি তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। যখন জিবরীল (আঃ) তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতেন তখন তিনি কল্যাণের জন্য প্রবাহমান বায়ুর চেয়েও বেশি দানশীল হইতেন।(আঃপ্রঃ ৪৬২৬, ইঃফাঃ ৪৬৩১)

৪৯৯৮

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, প্রতি বছর জিবরীল (আঃ) নাবী (সাঃ)- এর সঙ্গে একবার কুরআন মাজীদ শোনাতেন ও শুনতেন। কিন্তু যে বছর তাহাঁর ওফাত হয় সে বছর তিনি রাসুল (সাঃ)- কে দুবার শুনিয়েছেন। প্রতি বছর নাবী (সাঃ) রমাযানে দশ দিন ইতিকাফ করিতেন। কিন্তু যে বছর তাহাঁর ওফাত হয় সে বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন।(আঃপ্রঃ ৪৬২৭, ইঃফাঃ ৪৬৩২)

৬৬/৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃ)- এর যে সব সহাবী ক্বারী ছিলেন।

৪৯৯৯

মাসরুক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আমর আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদের কথা উল্লেখ পূর্বক বলেছেন, আমি তাঁকে ঐ সময় থেকে ভালবাসি, যখন নাবী (সাঃ) -কে আমি বলিতে শুনিয়াছি যে, তোমরা চার ব্যক্তি থেকে কুরআন শিক্ষা কর- আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.), সালিম (রাদি.), মুআয (রাদি.) এবং উবাই ইবনু কাব (রাদি.)। (আঃপ্রঃ ৪৬২৮, ইঃফাঃ ৪৬৩৩)

৫০০০

শাকীক ইবন সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহর শপথ! সত্তরেরও কিছু অধিক সুরা আমি রাসুল (সাঃ)- এর মুখ থেকে হাসিল করেছি। আল্লাহর কসম! নাবী (সাঃ)- এর সহাবীরা জানেন, আমি তাঁদের চেয়ে আল্লাহর কিতাব সম্বন্ধে অধিক জ্ঞাত; অথচ আমি তাঁদের মধ্যে সর্বোত্তম নই। শাকীক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সাহাবীগণ তাহাঁর কথা শুনে কী বলেন তা শোনার জন্য আমি মাজলিসে বসে থাকলাম, কিন্তু আমি কাউকে অন্যরকম কথা বলে আপত্তি করিতে শুনিনি।(আঃপ্রঃ ৪৬২৯, ইঃফাঃ ৪৬৩৪)

৫০০১

 আলক্বামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা হিমস শহরে ছিলাম। এ সময় ইবনু মাসউদ (রাদি.) সুরা ইউসুফ তিলাওয়াত করিলেন। তখন এক ব্যক্তি বলিলেন, এটা এভাবে অবতীর্ণ হয়নি। এ কথা শুনে ইবনু মাসউদ (রাদি.) বলিলেন, আমি রাসুল (সাঃ)- এর সামনে এ সুরা তিলাওয়াত করেছি। তিনি বলেছেন, তুমি সুন্দর পড়েছ। এ সময় তিনি ঐ লোকটির মুখ থেকে মদের গন্ধ পেলেন। তাই তিনি তাকে বলিলেন, তুমি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে মিথ্যা বলা এবং মদ পানের অপরাধ এক সঙ্গে করেছ? এরপর তিনি তার ওপর নির্ধারিত শাস্তি জারি করিলেন।(আঃপ্রঃ ৪৬৩০, ইঃফাঃ ৪৬৩৫)

৫০০২

মাসরুক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আল্লাহর কিতাবের অবতীর্ণ প্রতিটি সুরা সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোন্ ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি যদি জানতাম যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তাহলে সওয়ার হয়ে সেখানে পৌঁছে যেতাম।(আঃপ্রঃ ৪৬৩১, ইঃফাঃ ৪৬৩৬)

৫০০৩

ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)- কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃ)- এর সময় কোন্ কোন্ ব্যক্তি কুরআন সংগ্রহ করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, চারজন এবং তাঁরা চারজনই ছিলেন আনসার সহাবী। তাঁরা হলেনঃ উবাই ইবনু কাব (রাদি.), মুআয ইবনু জাবাল (রাদি.), যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) এবং আবু যায়দ (রাদি.)। (অন্য সানাদে) ফাদল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ….. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) থেকে এ রকমই বর্ণনা করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ ৪৬৩২, ইঃফাঃ ৪৬৩৭)

৫০০৪

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) ইন্তিকাল করিলেন। তখন চারজন ব্যতীত আর কেউ কুরআন সংগ্রহ করেননি। তাঁরা হলেন আবুদ্ দারদা (রাদি.), মুআয ইবনু জাবাল (রাদি.), যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) এবং আবু যায়দ (রাদি.)। আনাস (রাদি.) বলেন, আমরা আবু যায়দ (রাদি.)- এর উত্তরসুরী।(আঃপ্রঃ ৪৬৩৩, ইঃফাঃ ৪৬৩৮)

৫০০৫

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার (রাদি.) বলেছেন, আলী (রাদি.) আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম বিচারক এবং উবাই (রাদি.) আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম কারী। এতদসত্ত্বেও তিনি যা তিলাওয়াত করিয়াছেন, আমরা তার কিছু অংশ বাদ দিই, অথচ তিনি বলছেন, আমি তা আল্লাহর রাসূলের যবান থেকে শুনিয়াছি, কোন কিছুর বিনিময়ে আমি তা ত্যাগ করব না। আল্লাহ বলেছেন, “আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা ভুলিয়ে দিলে তা হইতে উত্তম কিংবা তার মত কোন আয়াত এনে দিই।” (আঃপ্রঃ ৪৬৩৪, ইঃফাঃ ৪৬৩৯)

৬৬/৯. অধ্যায়ঃ সুরা ফাতিহার ফযীলত

৫০০৬

আবু সাঈদ ইবনু মুআল্লা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি সলাত আদায়রত ছিলাম। নাবী (সাঃ) আমাকে ডাকলেন; কিন্তু আমি তাহাঁর ডাকে সাড়া দিলাম না। পরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি সলাত আদায়রত ছিলাম। তিনি বলিলেন, আল্লাহ তাআলা কি বলেননি, “হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও রাসুল যখন তোমাদেরকে আহবান করেন তখন আল্লাহ ও রসূলের আহবানে সাড়া দাও”। (সুরা আল-আনফাল ৮/২৪)

তারপর তিনি বলিলেন, তোমার মাসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে আমি কি তোমাকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সুরা শিক্ষা দেব না? তখন তিনি আমার হাত ধরলেন। যখন আমরা মাসজিদ থেকে বের হইতে ইচ্ছা করলাম তখন আমি বললাম, আপনি তো বলেছেন মাসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে আমাকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সুরার কথা বলবেন। তিনি বলিলেন, সেটা হলঃ “আল হামদুলিল্লাহ রাব্বিল আলামীন”। এটা পুনঃ পুনঃ পঠিত সাতটি আয়াত এবং কুরআন আজীম যা আমাকে দেয়া হয়েছে।(আঃপ্রঃ ৪৬৩৫, ইঃফাঃ ৪৮৪০)

৫০০৭

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমরা সফরে চলছিলাম। (পথিমধ্যে) অবতরণ করলাম। তখন একটি বালিকা এসে বলিল, এখানকার গোত্রের সরদারকে সাপে কেটেছে। আমাদের পুরুষগণ বাড়িতে নেই। অতএব, আপনাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি, যিনি ঝাড়-ফুঁক করিতে পারেন? তখন আমাদের মধ্য থেকে একজন ঐ বালিকাটির সঙ্গে গেলেন। যদিও আমরা ভাবিনি যে সে ঝাড়-ফুঁক জানে। এরপর সে ঝাড়-ফুঁক করিল এবং গোত্রের সরদার সুস্থ হয়ে উঠল। এতে সর্দার খুশী হয়ে তাকে ত্রিশটি বক্‌রী দান করিলেন এবং আমাদের সকলকে দুধ পান করালেন। ফিরে আসার পথে আমারা জিজ্ঞেস করলাম, তুমি ভালভাবে ঝাড়-ফুঁক করিতে জান (অথবা রাবীর সন্দেহ) তুমি কি ঝাড়-ফুঁক করিতে পার? সে উত্তর করিল, না, আমি তো কেবল উম্মুল কিতাব- সুরা ফাতিহা দিয়েই ঝাড়-ফুঁক করেছি। আমরা তখন বললাম, যতক্ষণ না আমরা নাবী (সাঃ)- এর কাছে পৌছে তাঁকে জিজ্ঞেস করি ততক্ষণ কেউ কিছু বলবে না। এরপর আমরা মদিনায় পৌছে নাবী (সাঃ)- এর কাছে ঘটনাটি বললাম। তিনি বলিলেন, সে কেমন করে জানল যে, তা (সুরা ফাতিহা) রোগ আরোগ্যের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে? তোমরা নিজেদের মধ্যে এগুলো বন্টন করে নাও এবং আমার জন্যও একটা ভাগ রেখো। আবু মামার ….. আবু সাঈদ থেকে এ রকমই বর্ণনা করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ ৪৬৩৬, ইঃফাঃ ৪৬৪১)

৬৬/১০. অধ্যায়ঃ সুরা আল-বাকারাহর ফযীলত।

৫০০৮

আবু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) হইতে বর্ণিত। তিন বলেন, যে দুটি আয়াত তিলাওয়াত করে …..। (আঃপ্রঃ ৪৬৩৭, ইঃফাঃ ৪৬৪২)

৫০০৯

আবু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন, কেউ যদি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট। (আঃপ্রঃ ৪৬৩৭, ইঃফাঃ ৪৬৪২)

৫০১০

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে রমাযানে যাকাতের মাল হিফাজতের দায়িত্ব দিলেন। এক সময় এক ব্যক্তি এসে খাদ্য-সামগ্রী উঠিয়ে নেয়ার উপক্রম করিল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর নাবী (সাঃ) – এর কাছে নিয়ে যাব। এরপর পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। তখন লোকটি বলিল, যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন। এর কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন পাহারাদার নিযুক্ত হইবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে আসতে পারবে না। নাবী (সাঃ) (ঘটনা শুনে) বলিলেন, (যে তোমার কাছে এসেছিল) সে সত্য কথা বলেছে, যদিও সে বড় মিথ্যাচারী শায়ত্বন।(আঃপ্রঃ ৪৬৩৮, ইঃফাঃ ৪৬৪২)

৬৬/১১. অধ্যায়ঃ সুরা কাহফের ফযীলত।

৫০১১

বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সুরা কাহফ তিলাওয়াত করছিলেন। তার ঘোড়াটি দুটি রশি দিয়ে তার পাশে বাঁধা ছিল। তখন এক টুকরো মেঘ এসে তার উপর ছায়া দান করিল। মেঘখণ্ড ক্রমেই নিচের দিকে নেমে আসতে লাগল। আর তার ঘোড়াটি ভয়ে লাফালাফী শুরু করে দিল। সকাল বেলা যখন লোকটি নাবী (সাঃ)- এর কাছে উক্ত ঘটনার কথা ব্যক্ত করেন, তখন তিনি বলিলেন, এ ছিল আস্‌সাকিনা (প্রশান্তি), যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল।(আঃপ্রঃ ৪৬৩৯, ইঃফাঃ ৪৬৪৩)

৬৬/১২. অধ্যায়ঃ সুরা আল্ ফাতহর ফযীলত।

৫০১২

আসলাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ কোন এক সফরে রাত্রিকালে চলছিলেন এবং উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদি.) তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন। তখন উমার (রাদি.) তাহাঁর কাছে কিছু জিজ্ঞেস করিলেন; কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তার কোন উত্তর দিলেন না। তারপর আবার জিজ্ঞেস করিলেন; কিন্তু তিনি কোন উত্তর দিলেন না। পুনরায় জিজ্ঞেস করিলেন, এবারও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। এমন সময় উমার (রাদি.) নিজেকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! তুমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে তিনবার প্রশ্ন করে কোন উত্তর পাওনি। উমার (রাদি.) বলিলেন, এরপর আমি আমার উটকে দ্রুত হাঁকিয়ে লোকেদের অগ্রভাগে চলে গেলাম এবং আমি শঙ্কিত হলাম, না জানি আমার সম্পর্কে কুরআন অবতীর্ণ হয় নাকি। কিছুক্ষণ পর কেউ আমাকে ডাকছে, এ রকম আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি মনে আশংকা করলাম যে, হয়তো আমার ব্যাপারে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তখন আমি নাবী সাঃআঃ-এর নিকটে গেলাম এবং তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বলিলেন আজ রাতে আমার উপর এমন একটি সুরা নাযিল হয়েছে, যা আমার কাছে সূর্যালোকিত সকল স্থান হইতে উত্তম। এরপর তিনি পাঠ করিলেন, إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِيْنً নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি। [৪১৭৭] (আঃপ্রঃ ৪৬৪০, ইঃফাঃ ৪৬৪৪)

৬৬/১৩. অধ্যায়ঃকুল্‌হু আল্লাহু আহাদ (সুরা ইখলাস)- এর ফযীলত।

তাতেঃ আয়েশা (রাদি.) নাবী (সাঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।

৫০১৩

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে কুল হুআল্লাহু আহাদ পড়তে শুনলেন। সে বার বার তা মুখে উচ্চারণ করছিল। পরদিন সকালে তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- এর কাছে এসে এ ব্যাপারে বলিলেন। যেন ঐ ব্যক্তি তাকে কম মনে করিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলিলেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন। এ সুরা হচ্ছে সমগ্র কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।(আঃপ্রঃ ৪৬৪১, ইঃফাঃ ৪৬৪৫)

৫০১৪

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আমার ভাই ক্বাতাদাহ ইবনু নুমান আমাকে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) – এর জীবদ্দশায় এক ব্যক্তি শেষ রাতে সলাতে “কুল হুআল্লাহু আহাদ” ব্যতীত আর কোন সুরাই তিলাওয়াত করেননি। পরদিন সকালে লোকটি নাবী (সাঃ)- এর কাছে আসলেন। বাকী অংশ আগের হাদীসের মত। (আঃপ্রঃ ৪৬৪১, ইঃফাঃ ৪৬৪৫)

৫০১৫

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) তাহাঁর সহাবীদেরকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এক রাতে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করা সাধ্যাতীত মনে কর? এ প্রশ্ন তাদের জন্য কঠিন ছিল। এরপর তারা বলিল, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! আমাদের মধ্যে কার সাধ্য আছে যে এটা পারবে? তখন তিনি বলিলেন, “কুল হুআল্লাহু আহাদ” অর্থাৎ সুরা ইখলাস কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ।(আঃপ্রঃ ৪৬৪২, ইঃফাঃ ৪৬৪৬)

৬৬/১৪. অধ্যায়ঃ মুআববিযাত (সুরা ফালাক ও সুরা নাস)- এর ফযীলত।

৫০১৬

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যখনই নাবী (সাঃ) অসুস্থ হইতেন তখনই তিনি সুরায়ে মুআব্বিযাত পড়ে নিজের উপর ফুঁক দিতেন। যখন রোগ কঠিন হয়ে গেল, তখন বাকাত অর্জনের জন্য আমি এই সুরা পাঠ করে তাহাঁর হাত দিয়ে শরীর মাসহ করিয়ে দিতাম।(আঃপ্রঃ ৪৬৪৩, ইঃফাঃ ৪৬৪৭)

৫০১৭

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

প্রতি রাতে নাবী (সাঃ) বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সুরা ইখ্‌লাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে দুহাত একত্র করে হাতে ফুঁক দিয়ে যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তাহাঁর দেহের সম্মুখ ভাগের উপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার এরূপ করিতেন।(আঃপ্রঃ ৪৬৪৪, ইঃফাঃ ৪৬৪৮)

৬৬/১৫. অধ্যায়ঃ কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের সময় প্রশান্তি নেমে আসে ও মালায়িকাহ অবতীর্ণ হয়।

৫০১৮

লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উসাইদ ইবনু হুযায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একদা রাত্রে তিনি সুরা বাকারা পাঠ করছিলেন। তখন তাহাঁর ঘোড়াটি তারই পাশে বাঁধা ছিল। হঠাৎ ঘোড়াটি ভীত হয়ে লাফ দিয়ে উঠল এবং ছুটাছুটি শুরু করিল। যখন পাঠ বন্ধ করিলেন তখনই ঘোড়াটি শান্ত হল। আবার পাঠ শুরু করিলেন। ঘোড়াটি আগের মত করিল। যখন পাঠ বন্ধ করিলেন ঘোড়াটি শান্ত হল। আবার পাঠ আরম্ভ করলে ঘোড়াটি আগের মত করিতে লাগল। এ সময় তাহাঁর পুত্র ইয়াহইয়া ঘোড়াটির নিকট ছিল। তার ভয় হচ্ছিল যে, ঘোড়াটি তার পুত্রকে পদদলিত করিবে। তখন তিনি পুত্রকে টেনে আনলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখিতে পেলেন। পরদিন সকালে তিনি রসুলুল্লাহ (সাঃ)- এর কাছে উক্ত ঘটনা বলিলেন। ঘটনা শুনে নাবী (সাঃ) বললেনঃ হে ইবনু হুদায়র (রাদি.)! তুমি যদি পাঠ করিতে, হে ইবনু হুদায়র (রাদি.)! তুমি যদি পাঠ করিতে! ইবনু হুদায়র আরয করিলেন, আমার ছেলেটি ঘোড়ার নিকট থাকায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম হয়ত বা ঘোড়াটি তাকে পদদলিত করিবে, সুতরাং আমি আমার মাথা উপরে উঠাতেই মেঘের মত কিছু দেখলাম, যা আলোর মত ছিল। আমি যখন বাইরে এলাম তখন আর কিছু দেখ্‌লাম না। তখন নাবী (সাঃ) বলিলেন, তুমি কি জান, ওটা কি ছিল? বলিলেন না। তখন নাবী (সাঃ) বলিলেন, তারা ছিল মালায়িকাহ। তোমার তিলাওয়াত শুনে তোমার কাছে এসেছিল। তুমি যদি সকাল পর্যন্ত তিলাওয়াত করিতে তারাও ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে অবস্থান করত এবং লোকেরা তাদেরকে দেখিতে পেত। এরপর হাদিসের অন্য একটি সনদ বর্ণিত হয়েছে।[মুসলিম ৬/৩৬, হাদীস ৭৯৬, আহমাদ ১১৭৬৬] (আঃপ্রঃ অনুচ্ছেদ, ইঃফাঃ অনুচ্ছেদ)

৬৬/১৬. অধ্যায়ঃ যারা বলে, দুই মলাটের মধ্যে (কুরআন) যা কিছু আছে তা বাদে নাবী (সাঃ) কিছু রেখে যাননি।

৫০১৯

 আবদুল আযীয ইবনু রুফাই (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এবং শাদ্দাদ ইবনু মাকিল ইবনু আব্বাস (রাদি.)- এর নিকট উপস্থিত হলাম। শাদ্দাদ ইবনু মাকিল তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, নাবী (সাঃ) কুরআন বাদে অন্য কিছু রেখে যাননি? ইবনু আব্বাস (রাদি.) উত্তর দিলেন, নাবী (সাঃ) দুই মলাটের মাঝে যা কিছু আছে অর্থাৎ কুরআন ছাড়া অন্য কিছু রেখে যাননি। আবদুল আযীয বলিলেন, আমরা মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়ার নিকট গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনিই বলিলেন যে, দুই মলাটের মাঝে (যা আছে তা) ব্যতীত আর কিছু রেখে যাননি।(আঃপ্রঃ ৪৬৪৫, ইঃফাঃ ৪৬৪৯)

৬৬/১৭. অধ্যায়ঃ সব কালামের উপর কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব।

৫০২০

আবু মূসা আশআরী (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে এ লেবুর মত যা সুস্বাদু এবং সুগন্ধযুক্ত। আর যে ব্যক্তি (মুমিন) কুরআন পাঠ করে না, তাহাঁর দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন খেজুরের মত, যা সুগন্ধহীন, কিন্তু খেতে সুস্বাদু। আর ফাসিক-ফাজির ব্যক্তি যে কুরআন পাঠ করে, তাহাঁর দৃষ্টান্ত হচ্ছে রায়হান জাতীয় লতার মত, যার সুগন্ধ আছে, কিন্তু খেতে বিস্বাদ। আর ঐ ফাসিক যে কুরআন একেবারেই পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মাকাল ফলের মত, যা খেতেও বিস্বাদ এবং যার কোন সুগন্ধও নেই। (আঃপ্রঃ ৪৬৪৬, ইঃফাঃ ৪৬৫০)

৫০২১

ইবনু উমার (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, অতীতের জাতিসমুহের সঙ্গে তোমাদের জীবনকালের তুলনা হচ্ছে আসর ও মাগরিবের সলাতের মধ্যবর্তী সময়কালের মত। তোমাদের এবং ইয়াহূদী-নাসারাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে শ্রমিকদের কাজে নিযুক্ত করে তাদেরকে বলিল, “তোমাদের মধ্যে কে এক কীরাতের বিনিময়ে দ্বি-প্রহর পর্যন্ত কাজ করিবে?” ইয়াহূদীরা কাজ করিল। তারপর সেই ব্যক্তি আবার বলিল, তোমাদের মধ্যে কে এক কীরাতের বিনিময়ে দুপুর থেকে আসর পর্যন্ত কাজ করিবে? নাসারারা কাজ করিল। এরপর তোমরা (মুসলিমরা) আসরের সালাতের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত প্রত্যেকে দু কীরাতের বিনিময় কাজ করেছ। তারা বলিল, আমরা কম মজুরী নিয়েছি এবং অধিক কাজ করেছি। তিনি (আল্লাহ) বলিলেন, আমি কি তোমাদের অধিকারের ব্যপারে যুল্‌ম করেছি? তারা উত্তরে বলবে, না। এরপর আল্লাহ বলবেন, এটা আমার দয়া, আমি যাকে ইচ্ছে দিয়ে থাকি।(আঃপ্রঃ ৪৬৪৭, ইঃফাঃ ৪৬৫১)

৬৬/১৮. অধ্যায়ঃ কিতাবুল্লাহর ওয়াসিয়্যাত

৫০২২

ত্বলহা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রাদি.)– কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃ) কি কোন ওয়াসিয়্যাত করে গেছেন? তিনি বলিলেন, না। তখন আমি বললাম, যখন নাবী (সাঃ) নিজে কোন ওয়াসিয়্যাত করে যাননি, তখন কী করে মানুষের জন্য ওয়াসিয়্যাত করাকে (কুরাআন মাজীদে) বাধ্যতামূলক করা হল এবং তাদেরকে এজন্য নির্দেশ দেয়া হল। জবাবে তিনি বলিলেন, তিনি (নাবী (সাঃ)] আল্লাহর কিতাব (অনুসরণ)– এর ওয়াসিয়্যাত করে গেছেন।(আঃপ্রঃ ৪৬৪৮, ইঃফাঃ ৪৬৫২)

৬৬/১৯. অধ্যায়ঃ যার জন্য কুরআন যথেষ্ট নয়।

“তাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার নিকট কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যা তাদের নিকট পাঠ করা হয়।” (সুরা আনকাবূত ২৯/৫১)

৫০২৩

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কোন বিষয়ের প্রতি ঐরূপ কান লাগিয়ে শুনেন না যেরূপ তিনি নাবীর সুমধুর তিলাওয়াত শুনেন। রাবী বলেন, এর অর্থ সুস্পষ্ট করে আওয়াজের সঙ্গে কুরআন পাঠ করা। [৫০২৩, ৫০২৪, ৭৪৮২, ৭৫৪৪; মুসলিম ৬/৩৪, হাদীস ৭৯২, আহমাদ ৭৬৭৪] (আঃপ্রঃ ৪৬৪৯, ইঃফাঃ ৪৬৫৩)

৫০২৪

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুল (সাঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা কোন বিষয়ের প্রতি এরূপ কান লাগিয়ে শুনেন না যেরূপ তিনি নাবীর সুমধুর তিলাওয়াত শুনেন। সুফ্‌ইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কুরআনই তার জন্য যথেষ্ট।(আঃপ্রঃ ৪৬৫০, ইঃফাঃ ৪৬৫৪)

৬৬/২০. অধ্যায়ঃ কুরআন তিলাওয়াতকারী হবার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা।

৫০২৫

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, দুটি বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে ঈর্ষা করা যায় না। প্রথম, যাকে আল্লাহ তাআলা কিতাবের জ্ঞান দান করিয়াছেন এবং তিনি তা থেকে গভীর রাতে তিলাওয়াত করেন। দ্বিতীয়ত, যাকে আল্লাহ তাআলা সম্পদ দান করিয়াছেন এবং তিনি সেই সম্পদ দিন-রাত দান করিতে থাকেন।(আঃপ্রঃ ৪৬৬১, ইঃফাঃ ৪৬৫৫)

৫০২৬

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, দুব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারও সাথে ঈর্ষা করা যায় না। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তাআলা কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিন-রাত তিলাওয়াত করে। আর তা শুনে তার প্রতিবেশীরা তাকে বলে, হায়! আমাদেরকে যদি এমন জ্ঞান দেওয়া হত, যেমন অমুককে দেওয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মত আমাল করতাম। অন্য আর এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করিয়াছেন এবং সে সম্পদ সত্য ও ন্যায়ের পথে খরচ করে। এ অবস্থা দেখে অন্য এক ব্যক্তি বলেঃ হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যক্তির মত সম্পদ দেয়া হত, তাহলে সে যেমন ব্যয় করছে, আমিও তেমন ব্যয় করতাম।(আঃপ্রঃ ৪৬৫২, ই.ফা . ৪৬৫৬)

৬৬/২১. অধ্যায়ঃ তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম, যে নিজে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়।

৫০২৭

 উসমান (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম যে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়।(আঃপ্রঃ ৪৬৫৩, ইঃফাঃ ৪৬৫৭)

৫০২৮

 উসমান ইবনু আফ্‌ফান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম তারা, যারা নিজেরা কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।(আঃপ্রঃ ৪৬৫৪, ইঃফাঃ ৪৬৫৮)

৫০২৯

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা এক মহিলা নাবী (সাঃ)- এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে বলিল, সে নিজেকে আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের জন্য নিবেদন করার ইচ্ছা করেছে। এ কথা শুনে নাবী (সাঃ) বলিলেন, আমার কোন মহিলার নিষ্প্রায়োজন। জনৈক ব্যক্তি তাঁকে বলিল, একে আমার সঙ্গে বিবাহ করিয়ে দিন। নাবী (সাঃ) তাকে বললেল, তাকে একখানা কাপড় দাও। ঐ ব্যক্তি তার অপারগতার কথা জানাল, তখন নাবী (সাঃ) তাকে বলিলেন, তাকে একখানা লোহার আংটি হলেও দাও। এবারেও লোকটি আগের মত অপারগতা জানাল। তারপর নাবী (সাঃ) তাকে প্রশ্ন করিলেন, তোমার কি কুরআনের কিছু অংশ মুখস্থ আছে? লোকটি উত্তর করিল, হাঁ। আমার অমুক অমুক সুরা মুখস্থ আছে। তখন নাবী (সাঃ) বলিলেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে, তার বিনিময়ে তোমার নিকট এ মহিলাটিকে বিবাহ দিলাম। (আঃপ্রঃ ৪৬৫৫, ইঃফাঃ ৪৬৫৯)

৬৬/২২. অধ্যায়ঃ মুখস্থ কুরআন পাঠ করা।

৫০৩০

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একদা এক মহিলা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার জীবনকে আপনার জন্য দান করিতে এসেছি। এরপর নাবী (সাঃ) তার দিকে তাকিয়ে তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করে মাথা নিচু করিলেন। মহিলাটি যখন দেখল যে নাবী (সাঃ) কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না তখন সে বসে পড়ল। এমন সময় রাসুল (সাঃ)- এর সহাবীদের একজন বলিল, যদি আপনার কোন প্রয়োজন না থাকে, তবে ঐ মহিলাটির সঙ্গে আমার শাদী দিয়ে দিন। তিনি বলিলেন, তোমার কাছে কি কিছু আছে? সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম কিছুই নেই। তিনি বলিলেন, তুমি তোমার পরিজনের কাছে ফিরে যাও এবং দেখ কিছু পাও কি-না! এরপর লোকটি চলে গেল এবং ফিরে এসে বলিল, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কিছুই পেলাম না। নাবী (সাঃ) বলিলেন, দেখ একটি লোহার আংটি হলেও! তারপর সে চলে গেল এবং ফিরে এসে বলিল, আল্লাহর কসম, একটি লোহার আংটিও পেলাম না; কিন্তু এই যে আমার তহবন্দ আছে। সাহল (রাদি.) বলেন, তার কোন চাদর ছিল না। অথচ লোকটি বলিল, আমার তহবন্দের অর্ধেক দিতে পারি। এ কথা শুনে রাসুল (সাঃ) বলিলেন, এ তহবন্দ দিয়ে কী হইবে? যদি তুমি পরিধান কর, তাহলে মহিলাটির কোন আবরণ থাকবে না। আর যদি সে পরিধান করে, তোমার কোন আবরন থাকবে না। লোকটি বসে পড়লো, অনেকক্ষণ সে বসে থাকল। এরপর সে উঠে দাঁড়াল। রাসুল (সাঃ) তাকে ফিরে যেতে দেখে তাকে ডেকে আনলেন। যখন সে ফিরে আসল, নাবী (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কুরআনের কতটুকু মুখস্থ আছে? সে উত্তরে বলিল, অমুক অমুক সুরা মুখস্থ আছে। সে এমনিভাবে একে একে উল্লেখ করিতে থাকল। তখন নাবী (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি এ সকল সুরা মুখস্থ তিলাওয়াত করিতে পার? সে উত্তর করিল, হাঁ! তখন নাবী (সাঃ) বলিলেন, যাও তুমি যে পরিমাণ কুরআন মুখস্ত রেখেছ, তার বিনিময়ে এ মহিলাটির তোমার সঙ্গে বিবাহ দিলাম।

[২৩১০; মুসলিম ১৬/১২, হাদীস ১৪২৫, আহমাদ ২২৯১৩] (আঃপ্রঃ ৪৬৫৬, ইঃফাঃ ৪৬৬০)

৬৬/২৩. অধ্যায়ঃ কুরআন মাজীদ বারবার তিলাওয়াত করা ও স্মরণ রাখা।

৫০৩১

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্তরে কুরআন গেঁথে (মুখস্ত) রাখে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে, তবে সে উট তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু সে বাঁধন খুলে দেয়, তবে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।[মুসলিম ৬/৩৩, হাদীস ৭৮৯, আহমাদ ৪৬৬৫] (আঃপ্রঃ ৪৬৫৭, ইঃফাঃ ৪৬৬১)

৫০৩২

 আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, নাবী (সাঃ) বলেছেন, এটা খুবই খারাপ কথা যে, তোমাদের মধ্যে কেউ বলবে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করিতে থাক কেননা, তা মানুষের অন্তর থেকে উটের চেয়েও দ্রুত গতিতে চলে যায়। [৫০৩৯; মুসলিম ৬/৩৩, হাদীস ৭৯০, আহমাদ ৩৬২০] (আঃপ্রঃ ৪৬৫৮, ইঃফাঃ ৪৬৬২)

৫০৩৩

আবু মুসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা কুরআনের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। আল্লাহর কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন! কুরআন বাঁধন ছাড়া উটের চেয়েও দ্রুত গতিতে দৌড়ে যায়।[মুসলিম ৬/৩৩, হাদীস ৭৯১, আহমাদ ১৯৫৬৩] (আঃপ্রঃ ৪৬৫৯, ইঃফাঃ ৪৬৬৩)

৬৬/২৪. অধ্যায়ঃ জন্তুর পিঠে বসে কুরআন পাঠ করা।

৫০৩৪

 আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মাক্কাহ বিজয়ের দিন আমি রাসুল (সাঃ)- কে (উটের পিঠে) আরোহন অবস্থায় সুরা আল্‌ ফাতহ তিলাওয়াত করিতে দেখেছি। (আঃপ্রঃ ৪৬৬০, ইঃফাঃ ৪৬৬৪)

৬৬/২৫. অধ্যায়ঃ শিশুদের কুরআন শিক্ষাদান।

৫০৩৫

সাঈদ ইবনু যুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে সকল সুরাকে তোমরা মুফাস্‌সাল [১৬০] বলো, তা হচ্ছে মুহকাম।[১৬১] রাবী বলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ইন্তিকাল করেন, তখন আমার বয়স দশ বছর এবং আমি ঐ বয়সেই মুহকাম আয়াতসমূহ শিখে নিয়েছিলাম।(আঃপ্রঃ ৪৬৬১, ইঃফাঃ ৪৬৬৫)

[১৬০] সুরা হুজুরাত থেকে সুরা নাস পর্যন্ত সুরাসমূহকে মুফাস্সাল বলা হয়।

[১৬১] যে সকল আয়াতের ভাষা প্রাঞ্জল এবং অর্থ নির্ধারণের ব্যপারে কোন অসুবিধা হয় না ও সন্দেহের অবকাশ নেই তাকে মুহ্কাম আয়াত বলে।

৫০৩৬

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মুহকাম সুরাসমূহ আল্লাহর রাসুল (সাঃ)– এর জীবদ্দশায় মুখস্থ করেছিলাম। রাবী সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম, মুহকাম অর্থ কী? তিনি বলিলেন, মুফাস্‌সাল।(আঃপ্রঃ ৪৬৬২, ইঃফাঃ ৪৬৬৬)

৬৬/২৬. অধ্যায়ঃ কোরআন মুখস্ত করে ভুলে যাওয়া এবং কেউ কি বলিতে পারে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি?

৫০৩৭

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) এক ব্যক্তিকে মাসজিদে নাববীতে কুরআন পড়তে শুনলেন। তিনি বলিলেন, তার প্রতি আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক, সে আমাকে অমুক সুরার অমুক আয়াত মনে করিয়ে দিয়েছে। (আ.প্র. ৪৬৬৩, ই.ফা. ৪৬৬৭)

হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত পূর্বের হাদীসের অতিরিক্ত রয়েছে, “যা ভুলে গেছি অমুক অমুক সুরা থেকে।” আলী এবং আবদাহ হিশাম থেকে তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। (আ.প্র. ৪৬৬৪, ই.ফা. ৪৬৬৮)

৫০৩৮

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) এক ব্যক্তিকে রাতে কুরআন পড়তে শুনে বলিলেন, আল্লাহ তাকে রহমাত করুন। কেননা, সে আমাকে অমুক অমুক সুরার অমুক অমুক আয়াত মনে করিয়ে দিয়েছে, যা আমি ভুলতে বসেছিলাম।(আঃপ্রঃ ৪৬৬৫, ইঃফাঃ ৪৬৬৯)

৫০৩৯

 আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন, কোন লোক এ কথা কেন বলে যে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং (আল্লাহর পক্ষ থেকে) তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে।(আঃপ্রঃ ৪৬৬৬, ইঃফাঃ ৪৬৭০)

৬৬/২৭. অধ্যায়ঃ যারা সুরা বাকারাহ বা অমুক অমুক সুরা বলাতে দোষ মনে করেন না।

৫০৪০

আবু মাসউদ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি সুরা বাক্বারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, তবে এটাই তার জন্য যথেষ্ট।(আঃপ্রঃ ৪৬৬৭, ইঃফাঃ ৪৬৭১)

৫০৪১

 উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি হিশাম ইবনু হাকীম ইবনু হিযামকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- এর জীবদ্দশায় সুরা ফুরকান তিলাওয়াত করিতে শুনলাম। আমি লক্ষ্য করলাম যে, সে বিভিন্ন কিরাআতে তা পাঠ করছে, যা আল্লাহর রাসুল আমাকে শিখাননি। যার ফলে তাকে সলাতের মধ্যেই ধরতে উদ্যত হলাম। অবশ্য আমি তার সলাত শেষে সালাম ফিরানো পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। সলাত শেষ হইতেই তার গলায় রুমাল পেঁচিয়ে ধরলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, এইমাত্র আমি তোমাকে যা পাঠ করিতে শুনলাম, তা তোমাকে কে শিখিয়েছে? সে উত্তর করিল, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে এরূপ শিখিয়েছেন। আমি বললাম, তুমি মিথ্যা বলছো! আল্লাহর কসম, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে ভিন্ন ভাবে তিলাওয়াত করা শিখিয়েছেন, যা তোমাকে তিলাওয়াত করিতে শুনিয়াছি। এরপর আমি তাকে টেনে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- এর কাছে উপস্থিত হলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এই ব্যক্তিকে ভিন্ন ভাবে সুরা ফুরকান পাঠ করিতে শুনিয়াছি, যে পদ্ধতি আপনি আমাকে তিলাওয়াত করিতে শিখাননি। অথচ আপনি আমাকে সুরা ফুরকান তিলাওয়াত শিখিয়েছেন। এরপর তিনি বলিলেন, হে হিশাম! পাঠ করো! সুতরাং আমি যেভাবে পাঠ করিতে শুনিয়াছি, সে সেই ভাবেই পাঠ করিল। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলিলেন, এভাবে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এরপর রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলিলেন, হে উমার। তুমি পাঠ করো, সুতরাং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে যেভাবে শিখিয়েছিলেন, সেভাবে আমি পাঠ করলাম। এরপর তিনি বলিলেন, কুরআন এভাবেই অবতীর্ণ হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলিলেন, সাত কিরাআত বা পদ্ধতিতে পাঠ করার জন্য কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং এর মধ্যে যে পদ্ধতি তোমার জন্য সহজ, সে পদ্ধতিতে পড়।(আঃপ্রঃ ৪৬৬৮, ইঃফাঃ ৪৬৭২)

৫০৪২

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক কারীকে রাতে মাসজিদে কুরআন মাজীদ পড়তে শুনলেন। এরপর তিনি বলিলেন, আল্লাহ তার প্রতি করুণা করুন। সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত মনে করিয়ে দিয়েছে, যা অমুক অমুক সুরা থেকে ভুলতে বসেছিলাম। (আঃপ্রঃ ৪৬৬৯, ইঃফাঃ ৪৬৭৩)

৬৬/২৮. অধ্যায়ঃ সুস্পষ্ট ও ধীরে কুরআন তিলাওয়াত করা।

এ সম্পর্কে আল্লাহর বাণীঃ কুরআন তিলাওয়াত কর ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি তা মানুষের নিকট পাঠ করিতে পার ক্রমে ক্রমে। কবিতা পাঠের মতো দ্রুতগতিতে কুরআন পাঠ করা অপছন্দনীয়। আল্লাহর বাণী (আরবী) তাতে পৃথক করা হয় এর অর্থ স্পষ্ট করা হয়। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, আল্লাহর বাণী (আরবী) আমরা পৃথক করেছি এর অর্থ আমরা স্পষ্ট করেছি।

৫০৪৩

আবু ওয়ায়িল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু ওয়ায়িল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমরা একদিন সকালে আবদুল্লাহ (রাদি.)- এর কাছে গেলাম। একজন লোক বলিল, গতকাল রাতে আমি মুফাস্‌সাল সুরাসমূহ পাঠ করেছি। এ কথা শুনে আবদুল্লাহ (রাদি.) বলিলেন, এত শীঘ্র পাঠ করা যেন কবিতা পাঠের মতো; অথচ আমরা নাবী (সাঃ)- এর পাঠ শুনিয়াছি এবং তা আমার ভালভাবে মনে আছে। নাবী (সাঃ) থেকে যে সমস্ত সুরা পাঠ করিতে আমি শুনিয়াছি, তার সংখ্যা মুফাস্‌সাল হইতে আঠারটি এবং আলিফ-লাম হামিম হইতে দুটি। (আঃপ্রঃ ৪৬৭০, ইঃফাঃ ৪৬৭৪)

৫০৪৪

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর বাণীঃ “হে নাবী! আপনার জিহবাকে তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার জন্য নাড়াবেন না।” আল্লাহর এই কালাম সম্পর্কে তিনি বলেন, যখনই জিবরীল (আঃ) ওয়াহী নিয়ে নাবী (সাঃ)- এর নিকট আসতেন, তখন নাবী (সাঃ) খুব তাড়াতাড়ি জিহবা এবং ঠোঁট নাড়াতেন এবং এটা তার জন্য খুব কঠিন হত। আর এ অবস্থা সহজেই অন্যজনে আঁচ করিতে পারত। এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তাআলা সুরা ক্বিয়ামাহ এর এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “হে নাবী! তাড়াতাড়ি ওয়াহী মুখস্থ করার জন্য আপনি আপনার জিহবা নাড়াবেন না। এ মুখস্থ করিয়ে দেয়া ও পাঠ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই। যখন আমি তা পাঠ করিতে থাকি, তখন আপনি সে পাঠকে মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকুন। পরে এর অর্থ বুঝিয়ে দেয়াও আমার দায়িত্ব।” সুতরাং যখন জিবরীল (আঃ) পাঠ করেন আপনি তার অনুসরণ করুন। এরপর থেকে জিবরীল (আঃ) বলে যেতেন তখন নাবী (সাঃ) চুপ থাকতেন। যখন তিনি চলে যেতেন, আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী তিনি তা পাঠ করিতেন। (আঃপ্রঃ ৪৬৭১, ইঃফাঃ ৪৭৭৫)

৬৬/২৯. অধ্যায়ঃ মাদ সহকারে কিরাআত।

৫০৪৫

ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)- কে নাবী (সাঃ) এর কিরাআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃ) (কোন কোন ক্ষেত্রে শব্দকে) দীর্ঘায়িত করে পাঠ করিতেন।(আঃপ্রঃ ৪৬৭২, ইঃফাঃ ৪৬৭৬)

৫০৪৬

ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আনাস (রাদি.)- কে নাবী (সাঃ)– এর কিরাআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, নাবী (সাঃ)- এর কিরাআত কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বলিলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে নাবী (সাঃ) দীর্ঘ করিতেন। এরপর তিনি বিস্‌মিল্লা-হির রহমা-নির রহীম তিলাওয়াত করে শোনালেন এবং তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃ) বিসমিল্লাহ আর রহমান, আর রহীম পড়ার সময় দীর্ঘায়িত করিতেন। (আঃপ্রঃ ৪৬৭৩, ইঃফাঃ ৪৬৭৭)

৬৬/৩০. অধ্যায়ঃ আততারজী (ছন্দময় সুমধুর সুরে পাঠ করা)

৫০৪৭

 আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্‌ফাল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) উষ্ট্রির পিঠে অথবা উটের পিঠে আরোহিত অবস্থায় যখন উষ্ট্রটি চলছিল, তখন আমি তিলাওয়াত করিতে দেখেছি। তিনি সুরা ফাতহ বা সুরা ফাতহর অংশ বিশেষ অত্যন্ত নরম এবং মধুর ছন্দোময় সুরে পাঠ করছিলেন। (আঃপ্রঃ ৪৬৭৪, ইঃফাঃ ৪৬৭৮)

৬৬/৩১. অধ্যায়ঃ মধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করা।

৫০৪৮

আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) তাকে লক্ষ্য করে বলিলেন, হে আবু মূসা! তোমাকে দাঊদ (আঃ)- এর সুমধুর কণ্ঠ দান করা হয়েছে।[মুসলিম ৬/৩৪, হাদীস ৭৯৩, আহমাদ ২৩০৩০] (আঃপ্রঃ ৪৬৭৫, ইঃফাঃ ৪৬৭৯)

৬৬/৩২. অধ্যায়ঃ যে অন্যের নিকট থেকে কুরআন পাঠ শুনতে ভালবাসে।

৫০৪৯

 আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) আমাকে বলিলেন, “আমার কাছে কুরআন পাঠ কর।” আবদুল্লাহ বলিলেন, আমি আপনার কাছে কুরআন পাঠ করব; অথচ আপনার ওপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলিলেন, আমি অন্যের নিকট থেকে তা শুনতে ভালবাসি। (আঃপ্রঃ ৪৬৭৬, ইঃফাঃ ৪৬৮০)

৬৬/৩৩. অধ্যায়ঃ তিলাওয়াতকারী তিলাওয়াত শোনার পর শ্রোতার মন্তব্য তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট।

৫০৫০

 আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন নাবী (সাঃ) আমাকে বলিলেন, তুমি কুরআন পাঠ কর। আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার কাছে কুরআন পাঠ করব? অথচ তা তো আপনার ওপরই অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। এরপর আমি সুরা নিসা পাঠ করলাম। যখন আমি এই আয়াত পর্যন্ত আসলাম চিন্তা করো আমি যখন প্রত্যেক উম্মাতের মধ্য থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব এবং সকলের ওপরে তোমাকে সাক্ষী হিসাবে হাযির করব তখন তারা কী করিবে। নাবী (সাঃ) বলিলেন, আপাততঃ যথেষ্ট হয়েছে। আমি তাহাঁর চেহারার দিকে তাকালাম, দেখলাম, তাহাঁর চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে।

(আঃপ্রঃ ৪৬৭৭, ইঃফাঃ ৪৬৮১)

৬৬/৩৪. অধ্যায়ঃ কতটুকু সময়ে কুরআন খতম করা যায়?

এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার কালামঃ “যতটা কুরআন তোমার সহজসাধ্য হয়, ততটাই পড়।”

৫০৫১

সুফ্‌ইয়ান ইবনু উয়াইনাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমাকে ইবনু সুবরুমা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, আমি দেখিতে চাইলাম, সলাতে কী পরিমাণ আয়াত পাঠ করা যথেষ্ট এবং আমি তিন আয়াত বিশিষ্ট সুরার চেয়ে ছোট কোন সুরা পেলাম না। সুতরাং আমি বললাম, কারো জন্য তিন আয়াতের কম সলাতে পড়া উচিত নয়। আবু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃ)- এর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম, তখন তিনি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। তখন নাবী (সাঃ) বলিলেন, যদি কেউ সুরা বাকারার শেষ দুআয়াত রাতে পাঠ করে, তাহলে তা তার জন্য যথেষ্ট। (আঃপ্রঃ ৪৬৭৮, ইঃফাঃ ৪৬৮২)

৫০৫২

 আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে এক সম্ভ্রান্ত বংশীয় মহিলার সঙ্গে শাদী দেন এবং প্রায়ই তিনি আমার সম্পর্কে আমার স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করিতেন। আমার স্ত্রী বলত, সে কতইনা ভাল মানুষ যে, সে কখনও আমার বিছানায় আসেনি এবং শাদীর পর থেকে আমার সম্পর্কে খোঁজ খবরও নেয়নি। এ অবস্থা যখন দীর্ঘদিন পর্যন্ত চলতে থাকল তখন আমার পিতা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- কে আমার সম্পর্কে জানালেন। তখন নাবী (সাঃ) আমার পিতাকে বলিলেন, তাকে আমার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করুন। এরপর আমি নাবী (সাঃ)- এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কেমন সওম পালন কর? আমি উত্তর দিলাম, প্রতিদিন সওম পালন করি। তিনি আবার জিজ্ঞেস করিলেন, এ অবস্থায় পূর্ণ কুরআন মাজীদ খতম করিতে তোমার কত সময় লাগে? আমি উত্তর দিলাম, প্রত্যেক রাতেই এক খতম করি। তিনি বলিলেন, প্রত্যেক মাসে তিনদিন সওম পালন করিবে এবং কুরআন এক মাসে এক খতম দেবে।” আমি বললাম, আমি এর চেয়ে অধিক করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বলিলেন, তাহলে প্রতি সপ্তাহে তিনদিন সওম পালন করিবে। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে অধিক করার শক্তি রাখি। তিনি বলিলেন, দুদিন পর একদিন সওম পালন কর। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে অধিক সামর্থ্য রাখি। তিনি বলিলেন, তাহলে সব চেয়ে উত্তম পদ্ধতির সওম পালন কর। তা হল, দাঊদ (আঃ)- এর সওম। তিনি এক দিন অন্তর একদিন সওম পালন করিতেন এবং প্রতি সাত দিনে একবার আল্লাহর কিতাব খতম করিতেন। হায়! আমি যদি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- এর দেয়া সুবিধা গ্রহণ করতাম! এখন আমি দুর্বল বৃদ্ধ হয়ে গেছি। আবদুল্লাহ (রাদি.) প্রত্যেক দিন তার পরিবারের একজন সদস্যের সামনে কুরআনের সপ্তমাংশ পাঠ করে শোনাতেন। দিবা ভাগে পাঠ করে দেখিতেন, তার স্মরণশক্তি সঠিক আছে কিনা? যা তিনি রাতে পাঠ করবেন তা যেন সহজ হয় এবং যখনই তিনি শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির ইচ্ছা করিতেন তখন কয়েকদিন সওম পালন বন্ধ রাখতেন এবং পরবর্তীতে ঐ কদিনের হিসাব করে সওম পালন করিতেন। কেননা, তিনি রাসুল (সাঃ)- এর জীবদ্দশায় যে নিয়ম পালন করিতেন পরে সে নিয়ম ত্যাগ করা অপছন্দ মনে করিতেন। আবু আবদুল্লাহ বলেন কেউ তিন দিনে, কেউ পাঁচ দিনে এবং অধিকাংশ লোক সাত দিনে কুরআন খতম করিতেন। (আঃপ্রঃ ৪৬৭৯, ইঃফাঃ ৪৬৮৩)

৫০৫৩

 আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, কত দিনে তুমি কুরআন খতম কর? (আঃপ্রঃ ৪৬৮০, ইঃফাঃ ৪৬৮৪)

৫০৫৪

 আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) আমাকে বলিলেন, “এক মাসে কুরআন পাঠ সমাপ্ত কর।” আমি বললাম, “আমি এর চেয়ে অধিক করার শক্তি রাখি।” তখন নাবী (সাঃ) বলিলেন, “তাহলে সাত দিনে তার পাঠ শেষ করো এবং এর চেয়ে কম সময়ে পাঠ করা শেষ করো না।”(আঃপ্রঃ ৪৬৮১, ইঃফাঃ ৪৬৮৫)

৬৬/৩৫. অধ্যায়ঃ কুরআন তিলাওয়াতকালে ক্রন্দন করা।

৫০৫৫

 আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বলিলেন, তুমি আমার কাছে কুরআন পাঠ কর। আমি উত্তরে বললাম, আমি আপনার কাছে কুরআন পাঠ করবো, অথচ আপনারই ওপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলিলেন, আমি অন্যের নিকট হইতে কুরআন পাঠ শোনা পছন্দ করি। আমি তখন সুরা নিসা পাঠ করলাম যখন আমি এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলামঃ “তারপর চিন্তা করো, আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে একজন করে সাক্ষী হাযির করব এবং এ সকলের ওপরে তোমাকে সাক্ষী হিসেবে হাযির করব তখন তারা কী করিবে।” তখন তিনি আমাকে বলিলেন, “থাম!” আমি লক্ষ্য করলাম, তাহাঁর [নাবী (সাঃ) -এর] দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে।[৪৫৮২; মুসলিম ৬/৩৯, হাদীস ৮০০, আহমাদ ৩৫৫০] (আঃপ্রঃ ৪৬৮২, ইঃফাঃ ৪৬৮৬)

৫০৫৬

 আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) আমাকে বলিলেন, আমার কাছে কুরআন পাঠ করো। আমি বললাম, আমি আপনার নিকট কুরআন পাঠ করব, অথচ আপনারই ওপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলিলেন, আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি।(আঃপ্রঃ ৪৬৮৩, ইঃফাঃ ৪৬৮৭)

৬৬/৩৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি দেখানো বা দুনিয়ার লোভে অথবা গর্বের জন্য কুরআন পাঠ করে

৫০৫৭

 আলী (রা) হইতে বর্ণিতঃ

বলেনঃ আমি নাবী (সাঃ)- কে বলিতে শুনিয়াছি যে, শেষ যামানায় এমন একদল মানুষের আবির্ভাব হইবে, যারা হইবে কমবয়স্ক এবং যাদের বুদ্ধি হইবে স্বল্প। ভাল ভাল কথা বলবে, কিন্তু তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান গলার নীচে পৌঁছবে না। সুতরাং তোমরা তাদেরকে যেখানে পাও, হত্যা কর। এদের হত্যাকারীর জন্য ক্বিয়ামাতে পুরস্কার রয়েছে। (আঃপ্রঃ ৪৬৮৪, ইঃফাঃ ৪৬৮৮)

৫০৫৮

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- কে বলিতে শুনেছিঃ ভবিষ্যতে এমন সব লোকের আগমন ঘটবে, যাদের সলাতের তুলনায় তোমাদের সলাতকে, তাদের সওমের তুলনায় তোমাদের সওমকে এবং তাদের আমালের তুলনায় তোমাদের আমালকে তুচ্ছ মনে করিবে। তারা কুরআন পাঠ করিবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালীর নিচে (অর্থাৎ অন্তরে) প্রবেশ করিবে না। এরা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবে নিক্ষিপ্ত তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। আর শিকারী সেই তীরের আগা পরীক্ষা করে দেখিতে পায়, তাতে কোন চিহ্ন নেই। সে তীরের ফলার পার্শ্বদেশে নযর করে; অথচ সেখানে কিছু দেখিতে পায় না। শেষে ঐ ব্যক্তি কোন কিছু পাওয়ার জন্য তীরের নিম্নভাগে সন্দেহ পোষণ করে। (আঃপ্রঃ ৪৬৮৫, ইঃফাঃ ৪৬৮৯)

৫০৫৯

আবু মূসা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ঐ মুমিন যে কুরআন পাঠ করে এবং সে অনুযায়ী আমাল করে, তাহাঁর দৃষ্টান্ত ঐ লেবুর মত যা খেতে সুস্বাদু এবং গন্ধে চমৎকার। আর ঐ মুমিন যে কুরআন পাঠ করে না; কিন্তু এর অনুসারে আমাল করে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ খেজুরের মত যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু সুগন্ধ নেই। আর মুনাফিক যে কুরআন পাঠ করে; তার উদাহরণ হচ্ছে, ঐ রায়হানের মত, যার মত মাতানো খুশবু আছে, অথচ খেতে একেবারে বিস্বাদ। আর ঐ মুনাফিক যে কুরআন পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মাকাল ফলের মত, যা খেতে বিস্বাদ এবং গন্ধে দুর্গন্ধময়।(আঃপ্রঃ ৪৬৮৬, ইঃফাঃ ৪৬৯০)

৬৬/৩৭. অধ্যায়ঃ যতক্ষণ মন চায় কুরআন তিলাওয়াত করা।

৫০৬০

জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ইবাদাত মনের চাহিদার অনুকূল হয় তিলাওয়াত করিতে থাক এবং (তাতে) মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটলে পড়া ত্যাগ কর। [৫০৬১, ৭৩৬৪, ৭৩৬৫; মুসলিম ৪৭/১, হাদীস ২৬৬৭, আহমাদ ১৮৮৩৮] (আঃপ্রঃ ৪৬৮৭, ইঃফাঃ ৪৬৯১)

৫০৬১

জুনদুব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ইবাদাত মনের চাহিদার অনুকূল হয় তিলাওয়াত করিতে থাক এবং তাতে মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটলে পড়া ত্যাগ কর। হারিস ইবনু উবায়দ ও সাঈদ ইবনু যায়দ আবু ইমরান এর মাধ্যমে জুনদাবের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু হাম্মাদ ইবনু সালামাহ ও আবান এটিকে মারফু হিসেবে বর্ণনা করেননি। ….. তবে জুনদাবের বর্ণনাটি অধিক বিশুদ্ধ ও অধিক বর্ণিত।

৫০৬২

 আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তিনি এক ব্যক্তিকে আয়াত পড়তে শুনলেন। নাবী (সাঃ)- কে যেভাবে পড়তে শুনতেন, তার থেকে সে অন্য রকম করে পড়ছিল। তখন ঐ ব্যক্তিকে তিনি নাবী (সাঃ)- এর নিকট নিয়ে গেলেন। তখন নাবী (সাঃ) বলিলেন, তোমরা উভয়ই সঠিকভাবে পাঠ করেছ। সুতরাং এভাবে কুরআন পাঠ করিতে থাক। নাবী (সাঃ) আরও বলিলেন, তোমাদের পূর্বেকার জাতিগুলো তাদের পারস্পরিক বিভেদের জন্যই ধ্বংস হয়ে গেছে। (আঃপ্রঃ ৪৬৮৯, ইঃফাঃ ৪৬৯২)


by

Comments

Leave a Reply