ফল ও ফসলের যাকাত দেওয়ার মাসআলা

ফল ও ফসলের যাকাত দেওয়ার মাসআলা

ফল ও ফসলের যাকাত দেওয়ার মাসআলা >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কিতাবঃ আল হিদায়া, পঞ্চম অনুচ্ছেদ: ফসল ও ফলের জাকাত

ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) বলেছেন, অল্প হোক কিংবা বেশী, ভূমি থেকে উত্পাদনের উপর উশর ওয়াজিব হবে-প্রবাহিত পানি দ্বারা সিঞ্চিত হোক, কিংবা বৃষ্টির পানি দ্বারা। কিন্তু বাশ, জ্বালানী কাষ্ঠ ও ঘাসের উপর উশর নেই।

সাহেবাইন বলেন, যে সকল ফল দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকে সেগুলো পাচ ওয়াসাক পরিমাণ হলে তাতে শুধু উশর ওয়াজিব হবে।

এক ওয়াসাক হলো নাবী করীম (সাঃআঃ) এর যুগে প্রচলিত সাআ-এর পরিমাণে ষাট সাআ। মোটকথা, দুক্ষেত্রে মতানৈক্য রয়েছেঃ প্রথমতঃ নিসাবের শর্ত আরোপে, দ্বিতীয়তঃ দীর্ঘস্থায়িত্বের শর্তারোপে।

প্রথম বিষয়ে সাহেবাইনের দলিল হল রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর হাদিস- পাচ ওয়াসাকের কমের মধ্যে জাকাত ওয়াজিব নয়। তাছাড়া যেহেতু এ-ও জাকাত, সুতরাং স্বচ্ছলতা সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এ ক্ষেত্রেও ‘নিসাব-এর শর্ত আরোপ করা হবে।

ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর দলিল হলো, রাসূলুল্লাহ্‌(সাঃআঃ) এর বাণী- ভূমি যা উত্পন্ন করে, তাতে উশর ওয়াজিব হবে। এতে কোন পার্থক্য করা হয়নি।

সাহেবাইনের বর্ণীত হাদিসের ব্যাখ্যা এই যে, তাতে বাণিজ্য দ্রব্যের যাকাতের কথা বলা হয়েছে। কেননা, তাহারা ওয়াসাকের মাপে বেচা-কেনা করতো, আর এক ওয়াসাকের মূল্য সাধারণতঃ চল্লিশ দিরহাম হতো।

আর উশরের ক্ষেত্রে তো ভূমির মালিক হওয়ারই শর্ত নেই। সুতরাং মালিকের অবস্থা তথা সচ্ছলতার শর্ত আরোপের তো প্রশ্নই আসে না।

এ কারণেই বর্ষপূর্তির শর্ত আরোপ করা হয় না। কেননা এ শর্তের উদ্দেশ্য হলো বৃদ্ধির সুযোগ। অথচ এটা তো সম্পূর্ণই বর্ধিত সম্পদ।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সাহেবাইনের দলিল হলো রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) এর হাদিস- সবজী জাতীয় দ্রব্যের উপরে সাদকা নেই। এখানে সর্বসম্মতিক্রমেই সাদাকা দ্বারা জাকাত নিষেধ করা উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং উশরই উদ্দেশ্য হবে।

ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর দলিল হলো ইতোপূর্বে আমাদের বর্ণীত হাদিস।

সাহেবাইনের বর্ণীত হাদিসের ব্যাখ্যা হলো ঐ সাদাকা, যা শুল্ক আদায়কারী গ্রহণ করে থাকে। সেক্ষেত্রে, ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) ও এ হাদিসের উপর আমল করে থাকেন।

তাছাড়া যৌক্তিক প্রমাণ এই যে, ভূমি এমন ফসলও উত্পন্ন করে, যা দীর্ঘসময় সংরক্ষিত থাকে না। আর উশর ওয়াজিব হওয়ার কারণ ভূমির ফলনশীলতা। এ কারণেই তো এ ধরনের ভূমিতে খারাজ ওয়াজিব হয়ে থাকে।

পক্ষান্তরে বাশ, জ্বালানী কাষ্ঠ ও ঘাস সাধারণতঃ বাগানে উত্পন্ন করা হয় না, বরং এগুলো থেকে বাগানকে পরিষ্কার রাখা হয়। এমন কি যদি কেউ বাশঝাড় কিংবা জ্বালানী বৃক্ষ কিংবা ঘাসের ক্ষেত লাগায়, তাহলে তাতে উশর ওয়াজিব হবে।

উল্লেখিত বাশ দ্বারা সাধারণ বাশ উদ্দেশ্য; তবে ইক্ষু কিংবা জোয়ারের উশর ওয়াজিব হবে। কেননা এগুলোর জন্য ভূমিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করা হয়।

খেজুর শাখা ও খড়ের হুকুম এর বিপরীত। কেননা এ গুলোর ক্ষেত্রে শস্য ও ফলই হলো উদ্দেশ্য, বৃক্ষ বা খড় উদ্দেশ্য নয়।

ইমাম কুদূরী বলেন, বালতি দ্বারা (কুয়া থেকে) এবং পানি তোলার চর্কি দ্বারা কিংবা উটনীর পিঠে বয়ে আনা পানি দ্বারা যে ক্ষেতে সেচ দেয়া হয়েছে, তাতে উভয় মত অনুসারে অর্ধেক উশর ওয়াজিব হবে। কেননা এ ক্ষেত্রে ব্যয় অধিক হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে বৃষ্টির পানি কিংবা নালের পানি দ্বারা সেচ দেয়া জমিতে ব্যয় কম হয়ে থাকে।

যদি খালের পানি ও চর্কির পানি উভয় পানি দ্বারা সেচ দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে বছরের অধিকাংশ সময়ের বিবেচনা করা হবে। যেমন ‘সামিয়া পশুর ক্ষেত্রে।

যে সকল জিনিস ওয়াসাক দ্বারা মাপা হয় না, যেমন জাফরান ও তুলা, এগুলো সম্পর্কে ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) বলেন, যখন এ গুলোর মূল্য ওয়াসাক দ্বারা পরিমাপকৃত সর্বনিম্ন মূল্যের জিনিসের পাচ ওয়াসাক পরিমাণ হয়ে যাবে, তখন তাতে উশর ওয়াজিব হবে। যেমন আমাদের যুগে জোয়ার রহিয়াছে।

কেননা শরীআত নির্ধারিত পরিমাপ এখানে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়, সুতরাং তার মূল্য বিবেচনা করা হবে। যেমন ‘সামিয়া পশুর ক্ষেত্রে।

ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, উত্পন্ন দ্রব্য যখন ঐ জাতীয় বস্তু পরিমাপ করার সর্বোচ্চ পরিমাণের পাচগুণ হয়ে যাবে, তখন তাতে উশর ওয়াজিব হবে। সুতরাং তুলার ক্ষেত্রে পরিমাণ ধরা হবে পাচ গাট, প্রতি গাট হবে তিনশত তদ্রুপ জাফরানের ক্ষেত্রে হবে পাচ (প্রায় পাচ সের) কেননা ওয়াসাক দ্বারা পরিমাপ নির্ধারণের কারণ এই ছিলো যে, তা ছিলো ঐ জাতীয় দ্রব্য মাপের সর্বোচ্চ পরিমাণ।

মধু যদি উশরী যমীন থেকে আহরণ করা হয়, তাহলে তাতে উশর ওয়াজিব হবে।

ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, উশর ওয়াজিব হবে না। কেননা তা প্রাণী থেকে উত্পন্ন। সুতরাং তা হল রেশমের সমতুল্য।

আমাদের দলিল হলো রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর হাদিস- মধুতে উশর ওয়াজিব। তাছাড়া এ কা্রণে যে, মৌমাছি বিভিন্ন ফল ও ফুল থেকে আহরণ করে, আর সেগুলোতে যেহেতু উশর আছে, সেহেতু তা থেকে উত্পন্ন পদার্থের উশর হবে। রেশম কীটের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা সে পাতা ভক্ষণ করে আর তাতে উশর নেই।

ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে মধু অল্প হোক বা বেশী, তাতে উশর ওয়াজিব হবে। কেননা, তিনি এতে কোন নিসাব ধার্য করেন না।

ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, মধুর ক্ষেত্রে তার নীতি অনুযায়ী তিনি পাচ ওয়াসাকের মূল্য গণ্য করেন।

তার পক্ষ থেকে এমন মতও বর্নিত হয়েছে যে, মোশক পরিমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাতে কিছু ওয়াজিব হবে না। কেননা বনূ শাবাবা গোত্র সম্পর্কিত হাদিসে বর্ণীত আছে যে, তাহারা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নিকট এই অনুপাতেই উশর আদায় করতো।

তার পক্ষ থেকে পাচ এর কথাও বর্ণীত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) থেকে পাচ ‘ফারাক এর রিওয়ায়াত বর্ণীত হয়েছে। প্রতি ফারাক হলো ৩৬ রতল। কেননা এটা হলো মধু মাপার সর্বোচ্চ পরিমাণ।

তদ্রুপ ইক্ষ সম্পর্কেও (ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মাঝে মতপার্থক্য রহিয়াছে)।

পাহাড়ে যে সকল মধু বা ফলফলাদি পাওয়া যায়, তাতেও উশর ওয়াজিব।

আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত একটি মতে তাতে উশর ওয়াজিব হবে না। কেননা, তাতে উশর ওয়াজিব হওয়ার কারণ বিদ্যমান নেই। আর তা হলো ফলনশীল ভূমি।

জাহিরী রিওয়ায়াতের দলিল এই যে, ফলনশীল ভূমির যা উদ্দেশ্য অর্থাত্ ফললাভ করা, তাতো অর্জিত হয়েছে।

ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, ভূমির উত্পন্ন যে সকল ফসলে উশর ওয়াজিব হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক এবং হাল-বলদের খরচ হিসাব করা হবে না। কেননা নাবী (সাঃআঃ) ব্যয় ভারের তারতম্যের কারণে ওয়াজিব পরিমাণে তারতম্যের হুকুম দিয়েছেন। সুতরাং ব্যয়ভার বাদ দেয়ার কোন অর্থ নেই।

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, কোন তাগলাবী যিম্মীর উশরী জমীন থাকলে তার উপর দ্বিগুণ উশর ধার্য করা হবে।

সাহাবায়ে কিরামের ইজমার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ( ফসলের যাকাত দেওয়ার মাসআলা )

ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, তাগলাবী যিম্মী মুসলমানের নিকট হতে কোন জমি খরিদ করিলে তাতে এক উশরই ওয়াজিব হবে। কেননা তার মতে মালিকের পরিবর্তনের কারণে জমির আর্থিক দায় পরিমাণে পরিবর্তিত হয় না।

অতঃপর কোন যিম্মী যদি তাগলাবীর নিকট থেকে উক্ত জমি খরিদ করে, তবে সকলের মতেই জমির আর্থিক দায় একই অবস্থায় থাকবে। কেননা কোন অবস্থায় যিম্মীর উপর দ্বিগুণ ধার্য করা যায়। যেমন, উশর উশুলকারীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার সময় মুসলমানের নিকট থেকে যা নেয়া যায়, তার নিকট থেকে তার দ্বিগুণ নেয়া হয়।

তদ্রুপ একই হুকুম বহাল থাকবে যদি ঐ জমি কোন মুসলমান তার নিকট থেকে খরিদ করে কিংবা তাগলাবী নিজেই যদি ইসলাম গ্রহণ করে।

এ হল ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মত, চাই হুকুমের এই দ্বিগুণতা পূর্ব থেকে চলে আসুক, কিংবা নতুনভাবে আরোপিত হোক। কেননা দ্বিগুণতাই উক্ত জমির আর্থিত দায় রূপে সাব্যস্ত হয়ে গেছে, সুতরাং উক্ত জমি তার নিজস্ব আর্থিক দায় সহই মুসলমানের মালিকানা স্থানান্তরিত হবে, যেমন খারাজের ক্ষেত্রে।

ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) বলেন, পুনরায় এক উশরের দিকে ফিরে আসবে। কেননা দ্বিগুণ করণের কারণ দূরীভূত হয়ে গেছে।

মাবসূত গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, বিশূদ্ধ বর্ণনা অনুযায়ী এটাই মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর অভিমত।

হিদায়া গ্রন্থকার বলেন, ইমাম মুহাম্মাদ (র .) এর মত বর্ণনার ক্ষেত্রে অনুলিপির বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। তবে বিশুদ্ধতম মত এই যে, দ্বিগুণ তা বহাল রাখার ক্ষেত্রে তিনি ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর সংগে একমত। তবে পূর্ব থেকে চলে আসার দ্বিগুণতার ক্ষেত্রেই শুধু তার মত প্রযুক্ত হতে পারে। কেননা তার মাযহাব অনুযায়ী নতুন ভাবে আরোপিত দ্বিগুণতা সাব্যস্ত হতে পারে না। কারণ, এতে আর্থিক দায় পরিবর্তিত হয় না।

কোন মুসলমান যদি তার (উশরী) যমীন কোন খৃষ্টানের নিকট বিক্রি করে,

অর্থাত্ তাগলিবী ছাড়া অন্য কোন যিম্মীর নিকট, আর উক্ত খৃষ্টান বিক্রিত জমির দখল গ্রহণ করে, তাহলে তার উপর খারাজ ওয়াজিব হবে। ( ফসলের যাকাত দেওয়ার মাসআলা )

এ হল ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মত। কেননা, খারাজই কাফিরের অবস্থার উপযুক্ত।

ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে তার উপর দ্বিগুণ উশর ওয়াজিব হবে। তবে খারাজের ব্যয় ক্ষেত্রে তা ব্যয় করা হবে। এ সিদ্ধান্ত তিনি দিয়েছেন তাগলিবীর উপর কিয়াস করে।

কেননা, আমূল পরিবর্তনের চেয়ে এটিই হল সহজ ব্যবস্থা।

ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে এটি পূর্ব অবস্থার উপর উশরী থাকবে। কেননা, এটি জমির দায় রূপে সাব্যস্ত হয়ে গেছে, সুতরাং তা পরিবর্তিত হবে না, যেমন খারাজ পরিবর্তিত হয় না।

অবশ্য এক বর্ণনা মতে গৃহীত অর্থ জাকাত-সাদকা খাতে ব্যয় হবে। আর অন্য বর্ণনা মতে খারাজের খাতে ব্যয় হবে। উক্ত নাসরানীর নিকট হতে কোন মুসলমান যদি শোফআ বলে সে জমি লাভ করে কিংবা বিক্রি ফাসিদ হওয়ার কারণে তা বিক্রেতাকে ফেরত দেওয়া হয়, তবে তা পূর্বের মতো উশরী হয়ে যাবে।

প্রথম সুরতে কা্রণ এই যে, বিক্রয়ের ব্যাপারটি শুফার দাবীদারের দিকে পরিবর্তিত হয়ে যায়। সুতরাং সে যেন মুসলমানের নিকট থেকেই ক্রয় করেছে।

দ্বিতীয় সুরতে কারণ এই যে, ত্রুটির কারণে বিক্রয় প্রত্যাহার করা এবং বিক্রিত বস্তু ফেরত দানের মাধ্যমে ধরে নেয়া হবে যেন ‘বিক্রয় সংঘটিতই হয়নি।

তাছাড়া আরেকটি কারণ এই যে, যেহেতু (ত্রুটিপূর্ণ বিক্রয়ের কারণে) বিক্রিত বস্তুটি ফেরত দান করা কর্তব্য, সেহেতু এই ক্রয়ের কারণে মুসলিম বিক্রেতার হক তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি।

ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, যদি কোন মুসলমানের শাসক কর্তৃক বরাদ্দকৃত বাড়ী থাকে আর সে সেটিকে বাগানে পরিণত করে ফেলে, তাহলে তার উপর উশর ওয়াজিব হবে।

অর্থাত্ যদি উশরী পানি দ্বারা বাগান সেচ দিয়ে থাকে। পক্ষান্তরে যদি খারাজী পানি দ্বারা বাগানে সেচ দিয়ে থাকে তাহলে তার উপর খারাজ ধার্য হবে। কেননা এ ধরনের ক্ষেত্রে পানি সেচের সাথে আর্থিক দায় সম্পৃক্ত।

নিজস্ব বাস ভবনের জন্য মাজুসীর (অগ্নিপূজকের) উপর কোন কর নেই। কেননা উমর (রাঃআঃ) বাসভবন সমূহকে করমুক্ত রেখেছেন।

যদি সে তার বাড়ী বাগানে পরিণত করে, তবে তাতে খারাজ ধার্য হবে।

এমন কি উশরী পানি দ্বারা সেচ দান করিলেও। কেননা উশরের মাঝে ইবাদতের দিক বিদ্যমান থাকার কারণে তার উপর উশর ওয়াজিব করা সম্ভব নয়। তাই খারাজই নির্ধারিত হবে। আর খারাজ এক প্রকার শাস্তি, যা তার উপর অবস্থার উপযোগী।

সাহেবাইনের নীতির উপর কিয়াসের চাহিদা হল উশরী পানির সেচের ক্ষেত্রে উশরই ওয়াজিব হবে।

তবে ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে একটি উশর ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে দুটি উশর ওয়াজিব হবে। পূর্বে এর কারণ বর্ণীত হয়েছে।

উশরী পানি অর্থ বৃষ্টির পানি, কুয়া, ঝনার ও ঐ সকল নদনদীর পানি, যা কারো নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। আর খারাজী পানি অর্থ যে সকল খাল আজমীয়া খনন করেছে জায়হূন, সাযহূন, দজলা ও ফুরাতের পানি ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে উশরী। কেননা এগুলো কারো রক্ষণাবেক্ষণে নেই। যেমন, সমুদ্রের পানি।

ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে এগুলো খারাজী পানি। কেননা এর উপর নৌকা ইত্যাদি দ্বারা পুল তৈরী করা হয়, যা তার উপর নিয়ন্ত্রণের প্রমাণ।

তাগলিবী পুরুষের জমিতে যা ধার্য হয়, তাগলিবী শিশু ও স্ত্রীলোকের জমিতেও তা ধার্য হবে। অর্থাত্ উশরী জমিতে দ্বিগুণ উশর এবং খারাজী জমিতে একটি খারাজ। কেননা তাহাদের সংগে (এই মর্মে) সমঝোতা হয়েছিল যে, সাদাকা দ্বিগুণ করা হবে। নিছক আর্থিক দায় দ্বিগুণ করা হবে না।

সুতরাং যেহেতু মুসলিম শিশু ও নারীর উপর উশর ওয়াজিব হয়ে থাকে, তাই তাগলিবী শিশু ও নারীর উপরও তা দ্বিগুণ রূপে ধার্য হবে।

উশরী জমিতে প্রাপ্ত আলকাতরা বা তেলের কূপে কিছু ধার্য করা হবে না। এটা তখনই হবে, যখন আলকাতরা ও তৈল কূপের চারপার্শ্ব চাষোপযোগী হয়। কেননা, খারাজের সম্পর্ক জমির চাষোপযোগিতার সংগে। ( ফসলের যাকাত দেওয়ার মাসআলা )


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply