ফলের বাগান এ শরীকানায় উৎপাদন বিষয়ক অধ্যায়
ফলের বাগান এ শরীকানায় উৎপাদন বিষয়ক অধ্যায়, এই অধ্যায়ে হাদীস =৩ টি ( ১৪০৩-১৪০৫ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ৩৩ঃ শরীকানায় ফলের বাগানে উৎপাদন বিষয়ক
পরিচ্ছেদঃ ১ -ফলের বাগানে শরীকানার বর্ণনা {১}
পরিচ্ছেদঃ ২ -মুসাকাতে দাসদের খেদমতের শর্ত করা
পরিচ্ছেদঃ ১;ফলের বাগানে শরীকানার বর্ণনা {১}
________________________________________
{১} যদি কোন ব্যক্তি স্বীয় বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব কারো প্রতি সোপর্দ করে দেয় এবং বিনিময়ে ফলের একাংশ তাকে দিয়ে দেয় একে মুসাকাত বলা হয়। প্রায় সকল ঈমামই একে জায়েয বলেন। কিন্তু ঈমাম আবু হানীফা [রাহিমাহুল্লাহ] একে নাজায়েয [অবৈধ] বলেন।
১৩৮৫ সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
খায়বরের ইহুদীদের নিকট হইতে যেদিন খায়বর বিজিত হল, সেদিন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, আল্লাহ্ তাআলা যতদিন তোমাদেরকে বহাল রাখেন ততদিনই আমি তোমাদেরকে উহাতে বহাল রাখব এই শর্তে যে, তাতে যে ফল উৎপন্ন হইবে তা তোমাদের ও আমাদের উভয়ের মধ্যে বণ্টিত হইবে। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আবদুল্লাহ্ ইব্নু রাওয়াহা [রাদি.]-কে বাগানে কি পরিমাণ ফল হয়েছে উহা নিরূপন করার জন্য পাঠাতেন। তিনি তা নিরুপণ করে ইহুদীদেরকে বলিতেন, [আমার মনে হয় পাঁচশত মণ ফল হইবে] তোমরা ইচ্ছা করলে তোমাদের নিকট রাখতে পার [অর্ধেক আমাদেরকে দিয়ে দাও] অথবা এটা আমাদের নিকট থাকতে দাও [পাকলে আমরা তোমাদেরকে অর্ধেক দিয়ে দিব]। ইহুদীরা নিজেরাই ফল রেখে দিত
{১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]{১} আর ফল পাকলে মুসলমানদেরকে অর্ধেক দিয়ে দিত। ইহা দ্বারা মুসাকাত প্রথার বৈধতা বোঝা যায়। কেননা খায়বর বিজিত হওয়ায় উহা মুসলমানদের অধিকার এসে গিয়েছিল। তাঁরা নিজেদের পক্ষ হইতে ইহুদীদেরকে ঠিক করিল যে, তারা দেখাশোনা করিবে, আরও পানি দেবে এবং অর্ধেক ফল নিজেরা নিবে আর অর্ধেক তাঁদেরকে দেবে।ফলের বাগান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৩৮৬ সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ আবদুল্লাহ ইব্নু রাওয়াহাকে খায়বরে প্রেরণ করিতেন। তিনি তথাকার বাগানের ফলের পরিমাণ নির্দিষ্ট করিতেন। একবার ইহুদীরা তাদের স্ত্রীদের অলংকার একত্রিত করে আবদুল্লাহকে দিতে চাইল আর ইহুদীরা বলল, আপনি এই অলঙ্কার গ্রহণ করুন আর পরিমাণে কিছু হ্রাস করুন। আবদুল্লাহ্ বলিলেন, হে ইহুদী সম্প্রদায়! আমি আল্লাহ্র সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে তোমাদেরকে নিকৃষ্ট মনে করে থাকি, তা সত্ত্বেও আমি তোমাদের উপর জুলুম করিতে চাই না। তোমরা আমাকে যে উৎকোচ দিচ্ছ এটা হারাম, ইহা আমরা খাই না। ইহুদীরা বলিতে লাগল, এইজন্যই এখনও পৃথিবী ও জমি স্থির রয়েছে। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যদি কেউ সেচ ব্যবস্থা আঞ্জাম করিবে এই শর্তে কোন খেজুর বাগান নেয় এবং ঐ বাগানের খালি জমিতে কিছু বপন করে, তবে উহা তারই হইবে। যদি বাগানের মালিক এই শর্ত লাগায় যে, আমি উহাতে চাষ করব তবে উহা বৈধ হইবে না। কেননা সেচের ব্যবস্থাপক ব্যক্তি খেজুর গাছে পানি দেবে যাতে তার জমিও সেচের আওতায় এসে যাবে আর তার চাষ করা অবৈধ। হ্যাঁ, যদি ঐ চাষ উভয়ের মধ্যে শরীকী হয়, তবে বৈধ হইবে যখন শ্রম, বীজ, রক্ষণাবেক্ষণ সেচ শ্রমিকের উপর থাকিবে। মালিকের শুধু জমি থাকিবে। যদি শ্রমিক জমির মালিকের উপর এই শর্ত আরোপ করে যে, আপনি বীজ দিবেন এটা বৈধ নয়, কেননা সেচ ব্যবস্থা শুধু ঐ অবস্থায় বৈধ হইবে যখন সমস্ত কিছুই শ্রমিকের যিম্মায় থাকিবে। মালিকের শুধু জমি থাকিবে। এটাই মুসাকাতের প্রচলিত ও বৈধ পন্থা।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন একটি কূপের দুই ব্যক্তি সমান সমান মালিক। কূপটিতে পানি রইল না। একজন উহা ঠিক করিতে চাইলে অন্য ব্যক্তি মানল না, আমার নিকট টাকা নাই, আমি খরচ দিতে পারব না। এমতাবস্থায় যে উহা ঠিক করিতে চেয়েছে তাকে উহা ঠিক করিতে দেয়া হইবে। সমস্ত পানি তারই হইবে, আর সেই পানি ব্যবহারের পূর্ণ অধিকার তারই হইবে। অপর ব্যক্তি খরচের অর্ধেক শোধ করলে সে তাতে অংশগ্রহণ করিবে। প্রথম ব্যক্তিকে পূর্ণ পানি এইজন্য দেয়া হইবে যে, সে সব খরচ বহন করেছে। যদি পানি না হত তবে অপর ব্যক্তি খরচের কিছুই দিত না; প্রথম ব্যক্তির অর্থ ব্যয় বৃথা যেত।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যদি বাগানের মালিকের উপর সকল প্রকার ব্যয়ের দায়িত্ব থাকে, শ্রমিকের উপর ব্যয়ের কোন দায়িত্ব না থাকে, তার যিম্মায় থাকে কেবল শ্রম। আর তাকে শ্রমের পরিবর্তে কিছু ফল দেয়া হয় তবে এটা অবৈধ, কেননা শ্রম অনির্দিষ্ট, বাগানের মালিক তার পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট করে না দিলে সে অবগত নয় যে তার পারিশ্রমিক কতটুকু। ফলের উৎপাদন বেশিও হইতে পারে, কমও হইতে পারে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে ব্যক্তি শরীকী কারবারে ধন দেয় বা সেচের বিনিময়ে বাগান শরীকানায় দেয় তার জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে নিজের জন্য অর্থ বা কতিপয় নির্দিষ্ট করে এবং বলে যে এই পরিমাণ অর্থ যেমন দশ দীনার বা অমুক গাছের ফল আমারই জন্য থাকিবে, উহাতে শরীকানা নাই, বৈধ নয়। আমাদের নিকট মাসআলা অনুরূপই।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন আমাদের মধ্যে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী বাগানের মালিক সেচ শ্রমিকের উপর নিম্নলিখিত শর্ত আরোপ করিতে পারে ; ১। বাগানের প্রাচীর ঠিক করিতে হইবে; ২। পানির কূপ পরিষ্কার করিতে হইবে; ৩। বাগানের সেচের নহরগুলো পরিষ্কার রাখবে; ৪। গাছে নর-মাদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করিবে; ৫। ছিলা চাঁছার কাজ করিবে; ৬। গাছের খেজুর পেড়ে আনবে ইত্যাদি কাজ, যদি মালিক শ্রমিক উভয়ে সম্মত হয়। গাছের মালিকের ইচ্ছাধীন থাকিবে সে শ্রমিকের জন্য অর্ধেক ফল বা কম ও বেশি যেভাবে কথা থাকে যদি উভয়ে উহাতে সম্মত থাকে নির্ধারিত করিতে পারে। গাছের মালিকের এই অধিকার থাকিবে না যে, সে শ্রমিকের প্রতি নতুন কিছু বানাতে শর্ত করিবে যেমন কূপের চতুষ্পার্শ্বে উঁচু বেঁধে কূপ খনন করা না নতুন গাছ লাগানো বা খাল খনন করা বা এজন্য পানির হাউজ বানানো, যাতে বাগানের আয় বেড়ে যায়।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন উহার উদাহরণ এই যে, বাগানের মালিক কাউকেও বলল, আমার জন্য ঘর তৈরী কর বা কূপ খনন কর কিংবা জলাশয় পরিষ্কার কর কিংবা অনুরূপ কোন কাজ কর যার পরিবর্তে আমি বাগানের অর্ধেক ফল দিয়ে দেব অথচ ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়নি, না এখনও উহার পাকার সময় হয়েছে ইহা বৈধ নয়। কেননা এটা ফল উপযুক্ত হওয়ার পূর্বে বিক্রি করার মতো রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ এটা হইতে নিষেধ করিয়াছেন।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যদি ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয় এবং উহার বিক্রয় বৈধ হয়, সে সময় কোন ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে বলল, তুমি আমার অমুক অমুক কাজ কর। সে কাজ নির্দিষ্ট করে বলল, তোমার কাজের বিনিময়ে আমি তোমাকে আমার এই বাগানের অর্ধেক ফল প্রদান করব, এটা বৈধ। কারণ এই লোকটিকে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের উপর মজুর হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে; সে উহা দেখে তাতে সম্মতি প্রদান করেছে। কিন্তু মুসাকাত বৈধ হয় যদিও বাগানের ফল উৎপন্ন না হয়, অথবা স্বল্প উৎপাদন হয় অথবা নষ্ট হয়ে যায়। মুসাকী বা সেচের ব্যবস্থাকারীর জন্য এটাই প্রাপ্য হইবে। পক্ষান্তরে কাউকেও শ্রমে নিযুক্ত করা হলে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের উপর নিযুক্ত করিতে হয়, এটা ছাড়া শ্রমে খাটানো বৈধ নয়। কারণ ইজারা এক প্রকার ক্রয়-বিক্রয়ের মতো। তাতে শ্রমিকের শ্রম ক্রয় করা হয়। তাতে ধোঁকার প্রবেশ ঘটলে এটা বৈধ হয় না। কেননা রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ ধোঁকার ক্রয়-বিক্রয় হইতে নিষেধ করিয়াছেন।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন আমাদের মতে প্রত্যেক প্রকার ফলের গাছের ব্যাপারে মুসাকাত জায়েয আছে। যেমন আঙ্গুর, খেজুর, যায়তুন, তীন, আনার বা শাফ্তাল ইত্যাদি বৃক্ষ; এই শর্তে যে, বাগানের মালিক অর্ধেক, এক-তৃতীয়াংশ, এক-চতুর্থাংশ বা বেশি-কম ফল নিয়ে নিবে, অবশিষ্ট ফল শ্রমিকের থাকিবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন শস্যক্ষেত্রেও মুসাকাত বৈধ। শস্য মাটি ভেদ করে বাহির ও স্থির হলে এবং মালিক তার যতœ ও তত্ত্বাবধানে অক্ষম হলে সেই অবস্থায় মুসাকাত বৈধ হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন ফল পরিপক্ক হলে এবং বিক্রয়ের উপযুক্ত হলে যেসব বৃক্ষে মুসাকাত জায়েয ছিল এই ক্ষেত্রে উহা আর বৈধ হইবে না। তবে আগামী বৎসরের জন্য মুসাকাত করা যাবে। কারণ বিক্রয়ের উপযুক্ত ফলের মুসাকাত ইজারা বলে গণ্য হইবে, এটা যেন ফল বিক্রয়ের উপযুক্ত হওয়ার পর বৃক্ষের মালিক শ্রমিকের সাথে চুক্তি করিল উহা কেটে দেয়ার জন্য, যেমন শ্রমিককে দিরহাম বা দীনার প্রদান করা হল যার বিনিময়ে সে গাছের ফল কেটে দেবে। এটা মুসাকাত নয়। মুসাকাত হচ্ছে বিগত বৎসর হইতে আগামী বৎসর ফল পরিপক্ক হওয়া ও বিক্রয়ের উপযুক্ত হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের জন্য যা হয় তা।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যে গাছের খেজুরের উপর মুসাকাত করেছে সেই গাছের ফল পরিপক্ক হওয়া এবং বিক্রয়ের উপযুক্ত হওয়ার পূর্বে এই মুসাকাত বৈধ হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন খালি জমিতে মুসাকাত বৈধ নয়। হ্যাঁ, দিরহাম দীনারের বিনিময়ে ভাড়ার উপর দেয়া যাবে পারে যদি কোন ব্যক্তি খালি জমি চাষের জন্য উহা হইতে উৎপাদিত {২} এক -তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ ফসলের উপর কাউকেও দেয় তবে বৈধ হইবে না, কেননা তাতে ধোঁকা রয়েছে। ক্ষেতে ফসল হয় কিনা তা জানা নাই, ফসল হলেও কত ফসল হইবে, অধিক না অল্প তাও জানা নাই।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন এর দৃষ্টান্ত এইরূপ, যেমন কোন ব্যক্তি কাউকেও নির্দিষ্ট কিছুর বিনিময়ের সফরে তাঁর সঙ্গে থাকবার জন্য নিযুক্ত করিল। পরে তাকে বলিতে লাগল, আমি এই ভ্রমণে যে লাভ করব উহার এক-দশমাংশ তোমাকে দেব, এটাই তোমার পারিশ্রমিক। তবে এটা বৈধ হইবে না এবং এইরূপ করা অনুচিত।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন কারো জন্য নিজকে বা যমীন বা নৌকা ইত্যাদি জাতীয় কোন বস্তু যা তার নিজস্ব কিছু নির্ধারণ করা ব্যতীত কাউকেও ভাড়ায় দেয়া বৈধ নয়, নির্দিষ্ট করে ভাড়ায় দেয়া হলে তা বৈধ।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] খেজুর গাছ ও খালি জমি শরীকানা ব্যবস্থায় দেয়া সম্পর্কে বলেন এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য হল এই যে, খেজুর গাছের মালিক খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার পূর্বে বিক্রয় করিতে পারে না, আর জমির মালিক জমি এই অবস্থায় দিচ্ছে যে উহা খালি, তাতে কিছুই নেই।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন খেজুর বা এ জাতীয় গাছে দুই, তিন বা চার বৎসর অথবা বেশি বা কম বৎসরের জন্য সেচ ব্যবস্থার উপর দেয়া বৈধ। খেজুর গাছের মতো অন্যান্য বৃক্ষেও এটা বৈধ হইবে, এইরূপ আহলে ইলম-এর নিকট আমি শুনিয়াছি। {৩}
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন মুসাকাতকারী বা বাগানের মালিক হইতে শ্রমিক নিজের জন্য অতিরিক্ত কিছু খাস করে নিতে পারবে না- তা স্বর্ণ রৌপ্য হোক বা খাদ্যদ্রব্য বা অন্য কিছু হোক, এটা জায়েয নয়। অনুরূপ শ্রমিকের পক্ষেও বাগানের মালিক হইতে নিজের জন্য অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করা বৈধ নয়। তা স্বর্ণ-রৌপ্য হোক বা খাদ্যদ্রব্য হোক- অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করা উভয়ের জন্য বৈধ নয়।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন মুকারাযা বা মুসাকাতে শর্তের অধিক কিছু চাইলে উহা ইজারা বলে গণ্য হইবে। ইজারার শর্তাবলি এতে প্রযোজ্য হইবে। ধোঁকার আশংকা রয়েছে এমন কিছুতে ইজারা অবৈধ। জানা নাই ফসল আদৌ হইবে কিনা বা কম হইবে, না বেশি হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যদি কেউ এইরূপ জমি মুসাকাত ব্যবস্থার উপর দেয় যাতে খেজুর, আঙ্গুর বা এ জাতীয় গাছ থাকে আবার খালি জমিও থাকে। যদি জমিতে গাছ থাকে বেশি এবং খালি জমি ১/৩ অংশ থাকে বা তার হইতে কম হয় তবে সেচের উপর দেয়া বৈধ হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন যদি খালি জমি যাতে খেজুর বা আঙ্গুরের বৃক্ষ রযেছে ২/৩ [দু-তৃতীয়াংশ] বা ততোধিক হয় তবে এইরূপ জমি ভাড়া লওয়া বৈধ হইবে, সেচের উপর দেয়া বৈধ হইবে না। কেননা লোকের মধ্যে এই নিয়ম রয়েছে যে জমিতে সেচের উপর দেয়া হয় তাতে খালি জায়গাও থাকে। অথবা যে তলোয়ারে চাঁদি লাগান থাকে তাতে চাঁদির পরিবর্তে বিক্রি করে দেয় কিংবা যে হার বা আংটিতে স্বর্ণ রয়েছে, উহাকে স্বর্ণের পরিবর্তে বিক্রি করে দেয় বরাবরই মানুষ এই ধরনের কারবার করে থাকে। আর এর কোন সীমা নির্দিষ্ট নাই যে, এই পরিমাণ হলে বৈধ হইবে, এর অতিরিক্ত বৈধ হইবে না, হারাম হইবে। আমাদের মতে এই বিধান রয়েছে যে, যখন তলোয়ার ইত্যাদিতে বা আংটিতে স্বর্ণ ইত্যাদি ১/৩ অংশের মূল্যের সমান হয় বা উহা হইতে কম হয় তবে উহা চাঁদি বা স্বর্ণের পরিবর্তে বৈধ হইবে, অন্যথায় বৈধ হইবে না।
{১} তারা সৃষ্টির নিকটতম এজন্য যে, তারা আল্লাহর অনেক নবীকে হত্যা করেছে। আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে। ইহুদীরা এই কথাকে খারাপ মনে করার পরিবর্তে মুসলমানদের নেক নিয়্যত ও তাকওয়া দেখে বুঝল, তাদের ওসীলায় পৃথিবী স্থির রয়েছে, না হয় আল্লাহর আযাব এসে পড়ত, কিয়ামত হয়ে যেত। আফসোস ও পরিতাপের বিষয়, আজ এ ঘৃণিত বস্তু অনেক মুসলিম সমাজে অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। সুতরাং আল্লাহর আযাবে গ্রেফতার হলে বা ধ্বংস হয়ে গেলে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই।{২} একে মুযারাআ বলা হয়। অনেক আলিমের মতে এটা বৈধ। ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] এবং আবু হানীফা [রাহিমাহুল্লাহ]-এর নিকট এটা বৈধ নয়। কেননা রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ মুখাবারা অর্থাৎ মুযারাআ করিতে নিষেধ করিয়াছেন।{৩} কোন কোন আলিমের মতে মুসাকাত ব্যবস্থার সময় নির্ধারিত হওয়া উচিত। আবু সাউর [রাহিমাহুল্লাহ]-এর মতে যদি কোন সময় নির্ধারিত না হয়ে থাকে, তবে উহা এক বৎসরের জন্য ধার্য করা হইবে। আহলে জাহির-এর মতে অনির্দিষ্ট কালের জন্যও মুসাকাত জায়েয আছে। কেননা রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ খায়বর অধিবাসীদের সাথে মুসাকাত করিয়াছেন আর কোন সময় নির্দিষ্ট করেননি। এই অবস্থায় জমির মালিক যখনই ইচ্ছা করিবে মুসাকাত ভঙ্গ করে দিতে পারবে।ফলের বাগান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদঃ ২ -মুসাকাতে দাসদের খেদমতের শর্ত করা
১৩৮৭ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
মুসাকাতে দাসের শ্রমের বিষয়ে আমি উত্তম যা শুনিয়াছি তা এই-মুসাকাতে যদি শ্রমিক বাগানের মালিকের নিকট এই শর্ত করে যে, কাজকর্মের জন্য যে দাস পূর্ব হইতে যুক্ত ছিল উহা এখনও শ্রমে নিযুক্ত থাকিবে। তাতে কোন ক্ষতি নেই। কারণ তারা এই বাগানে পূর্ব হইতে শ্রমে নিযুক্ত রয়েছে এতে শ্রমিকের কোন লাভ নেই। শুধু এইটুকু যে, দাসীদের দ্বারা মুসাকাতের শ্রমিকের শ্রমের কিছুটা লাঘব হইবে। উহাদের অবর্তমানে তার শ্রম বাড়বে। এর দৃষ্টান্ত এইরূপ, যেমন এক সেচের কার্য ঐ বাগানে হয় যেখানে পানির কূপ রয়েছে আর এক প্রকার ঐ বাগানে হয়, যেখানে পানি ইত্যাদি উটের সাহায্যে বহন করে আনতে হয়। এই উভয় প্রকার এক সমান নয়। ফলে উভয় প্রকার বাগানে একই রকম বিনিময়ে মুসাকাত করিতে কেউ রাজী হইবে না। কেননা প্রথম প্রকারে পরিশ্রম কম হইবে, দ্বিতীয়টিতে অধিক হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন ওয়াসিতা হচ্ছে এমন কূপ যার পানি সব সময় থাকে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন শরীকানা বাগানে শ্রমের দায়িত্ব যার তার জন্য ইহাও বৈধ হইবে না যে, ঐ গোলামদের দ্বারা সে কোন অন্য কাজ নেয় বা মালিকের নিকট অন্য কাজের শর্ত করে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন বাগানের মালিকের পক্ষে ঐ সমস্ত গোলামের যে গোলাম পূর্ব হইতে বাগানের কাজে নিযুক্ত ছিল তাদের সংখ্যা কমাতে শর্ত করা বৈধ হইবে না। মুসাকাতের সময় যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় সবকিছু থাকতে দিতে হইবে। যদি কোন গোলামকে ছাঁটাই করিতে চায় তবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন মুসাকাতের পূর্বেই ছাঁটাই করিতে হইবে। এইরূপ যদি বাড়াতে চায় তবে মুসাকাতের পূর্বেই বাড়াতে হইবে। তৎপর মুসাকাত করিতে যদি ইচ্ছা করে, বাগানের গোলামদের মধ্যে যদি কেউ মারা যায় বা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, তবে বাগানের মালিককে অন্য গোলাম দিতে হইবে।
ফলের বাগান -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
Leave a Reply