ফরয নামায সমূহের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ

ফরয নামায সমূহের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ

ফরয নামায সমূহের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ  >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

পরিচ্ছেদ – ১৯৩: ফরয নামায সমূহের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ এবং তা ত্যাগ করা সম্বন্ধে কঠোর নিষেধ ও চরম হুমকি

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 ﴿ حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ ٢٣٨ ﴾ [البقرة: ٢٣٨]

অর্থাৎ তোমরা নামাযসমূহের প্রতি যত্নবান হও; বিশেষ করে মধ্যবর্তী [আসরের] নামাযের প্রতি। [সূরা বাকারাহ ২৩৮ আয়াত]

﴿ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ ﴾ [التوبة: ٥] 

অর্থাৎ যদি তারা তওবা করে, যথাযথ নামায পড়ে ও যাকাত প্রদান করে, তাহলে তাহাদের পথ ছেড়ে দাও। [সূরা তাওবাহ ৫ আয়াত]

1/1081 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه قَالَ: سَأَلتُ رَسُولَ اللهِ أَيُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا» قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: «بِرُّ الوَالِدَيْنِ» قُلْتُ: ثُمَّ أيٌّ؟ قَالَ: «الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ». متفقٌ عَلَيهِ «»

১/১০৮১। আব্দুল্লাহ ইবনি মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ  সাঃআঃ-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সর্বোত্তম আমল কি?’ তিনি বলিলেন, “যথা সময়ে নামায আদায় করা।” আমি বললাম, ‘তারপর কি?’ তিনি বলিলেন, “মা-বাপের সাথে সদ্ব্যবহার করা।” আমি বললাম, ‘তারপর কি?’ তিনি বলিলেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা।” [বুখারী ও মুসলিম] [1]

2/1082 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ البَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ». متفقٌ عَلَيهِ

২/১০৮২। আব্দুল্লাহ ইবনি উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ  সাঃআঃ বলেছেন, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিত। [১] এই কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাঃআঃ আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষ। [২] নামায প্রতিষ্ঠা করা। [৩] যাকাত প্রদান করা। [৪] কা‘বা গৃহের হজ্জ করা। [৫] রমযান মাসে রোযা পালন করা।” [বুখারী ও মুসলিম][2]

3/1083 وَعَنْه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللهِ، وَيُقِيمُوا الصَّلاَةَ، وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ، فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ، عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ، إلاَّ بِحَقِّ الإِسْلاَمِ، وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللهِ». متفقٌ عَلَيهِ

৩/১০৮৩। উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ  সাঃআঃ বলেছেন, “লোকদের বিরুদ্ধে আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত [সশস্ত্র] সংগ্রাম চালাবার আদেশ দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা এই সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাঃআঃ আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষ’ এবং নামায প্রতিষ্ঠা করিবে ও যাকাত আদায় করিবে। সুতরাং যখনই তারা সেসব বাস্তবায়ন করিবে, তখনই তারা ইসলামী হক ব্যতিরেকে নিজেদের জান-মাল আমার নিকট হইতে বাঁচিয়ে নিবে। আর তাহাদের [আভ্যন্তরীণ বিষয়ের] হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে থাকিবে।” [বুখারী ও মুসলিম][3] 

4/1084 وَعَنْ  مُعَاذٍ رضي الله عنه، قَالَ: بَعَثَنِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى اليَمَنِ، فَقَالَ: «إنَّكَ تَأْتِي قَوْماً مِنْ أَهْلِ الكِتَابِ، فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَأنِّي رَسُولُ اللهِ، فَإنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذلِكَ، فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللهَ تَعَالَى افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَومٍ وَلَيلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ، فَأَعْلِمْهُمْ أنَّ اللهَ تَعَالَى افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإِنْ هُمْ أطَاعُوا لِذلِكَ، فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالهِمْ، وَاتَّقِ دَعْوَةَ المَظْلُومِ، فَإِنَّهُ لَيْسَ بَينَهَا وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ». متفقٌ عَلَيهِ

৪/১০৮৪। মু‘আয ইবনি জাবাল রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ  সাঃআঃ আমাকে ইয়ামেন পাঠালেন ও বলিলেন, “নিশ্চয় তুমি কিতাব ধারী সম্প্রদায়ের কাছে যাত্রা করছ। সুতরাং তুমি তাহাদেরকে এই কথার প্রতি আহ্বান জানাবে যে, তারা সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ব্যতীত  কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল। যদি তারা ঐ প্রস্তাব গ্রহণ করে নেয়, তাহলে তাহাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাহাদের প্রতি দিবারাত্রে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করিয়াছেন। যদি তারা এ কথাটিও মেনে নেয়, তাহলে তাহাদেরকে অবহিত করিবে যে, মহান আল্লাহ তাহাদের [ধনীদের] উপর যাকাত ফরয করিয়াছেন যা তাহাদের ধনী ব্যক্তিদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হইবে এবং তাহাদের গরীব মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হইবে। যদি তারা এই আদেশটিও পালন করিতে সম্মত হয়, তাহলে তুমি [যাকাত আদায়ের সময়] তাহাদের উৎকৃষ্ট মাল-ধন হইতে বিরত থাকিবে এবং মজলুম [অত্যাচারিত] ব্যক্তির বদ্দুআ থেকে দূরে থাকিবে। কেননা, তার ও  আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না।” [বুখারী ও মুসলিম][4]

5/1085 وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالكُفرِ، تَرْكَ الصَّلاَةِ». رواه مُسلِم

৫/১০৮৫। জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ  সাঃআঃ-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, “মানুষ ও কুফরির মধ্যে [পর্দা] হল, নামায ত্যাগ করা।” [মুসলিম][5]

6/1086 وَعَنْ بُرَيْدَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «اَلعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلاَةُ، فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ». رواه التِّرمِذِيُّ، وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ صحيح

৬/১০৮৬। বুরাইদাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, নবী সাঃআঃ বলেছেন, “যে চুক্তি আমাদের ও তাহাদের [কাফের/মুনাফিকদের] মধ্যে বিদ্যমান, তা হচ্ছে নামায [পড়া]। অতএব যে নামায ত্যাগ করিবে, সে নিশ্চয় কাফের হয়ে যাবে।” [তিরমিযী হাসান][6]

7/1087 وَعَنْ شقِيق بن عبدِ الله التَّابِعيِّ المتَّفَقِ عَلَى جَلاَلَتِهِ رَحِمهُ اللهُ، قَالَ: كَانَ أصْحَابُ محَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم لاَ يَرَوْنَ شَيْئاً مِنَ الأعْمَالِ تَرْكُهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلاَةِ . رَوَاهُ التِّرمِذِيُّ في كِتابِ الإيمان بإسنادٍ صحيحٍ

৭/১০৮৭। সর্বজন মান্য শাক্বীক ইবনি আব্দুল্লাহ তাবে‘ঈ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ‘মুহাম্মদ সাঃআঃ-এর সহচরবৃন্দ নামায ছাড়া অন্য কোনো আমল ত্যাগ করাকে কুফরীমূলক কাজ বলে মনে করিতেন না।’ [তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান, বিশুদ্ধ সানাদ][7]

8/1088 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ العَبْدُ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهِ صَلاَتُهُ، فَإنْ صَلَحَتْ، فَقَدْ أَفْلَحَ وَأَنْجَحَ، وَإنْ فَسَدَتْ، فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ، فَإِنِ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيضَتِهِ شَيْءٌ، قَالَ الرَّبُّ – عَزَّ وَجَلَّ: اُنْظُرُوا هَلْ لِعَبدِي مِن تَطَوُّعٍ، فَيُكَمَّلُ مِنْهَا مَا انْتَقَصَ مِنَ الفَرِيضَةِ ؟ ثُمَّ تَكُونُ سَائِرُ أَعْمَالِهِ عَلَى هَذَا». رواه التِّرمِذِيُّ، وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ ৮/১০৮৮। আবূ হুরায়রা রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন রসুলুল্লাহ  সাঃআঃ বলেছেন, “নিশ্চয় কিয়ামতের দিন বান্দার [হক্বুক্বুল্লাহর মধ্যে] যে কাজের হিসাব সর্বপ্রথম নেওয়া হইবে তা হচ্ছে তার নামায। সুতরাং যদি তা সঠিক হয়, তাহলে সে পরিত্রাণ পাবে। আর যদি [নামায] পণ্ড ও খারাপ হয়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। যদি তার ফরয [ইবাদতের] মধ্যে কিছু কম পড়ে যায়, তাহলে প্রভু বলবেন, ‘দেখ তো! আমার বান্দার কিছু নফল [ইবাদত] আছে কি না, যা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূরণ করে দেওয়া হইবে?’ অতঃপর তার অবশিষ্ট সমস্ত আমলের হিসাব ঐভাবে গৃহীত হইবে। [তিরমিযী হাসান][8]


[1] সহীহুল বুখারী ৫২৭, ২৭৮২, ৫৯৭০, ৭৫৩৪, মুসলিম ৮৫, তিরমিযী ১৭৩, ১৮৯৮, নাসায়ী ৬১০, ৬১১, আহমাদ ৩৮৮০, ৩৯৬৩, ৩৯৮৮, ৪১৭৫, ৪২১১, ৪২৩১, ৪২৭৩, ৪৩০১, দারেমী ১২২৫

[2] সহীহুল বুখারী ৮, মুসলিম ১৬, তিরমিযী ২৬০৯

[3] সহীহুল বুখারী ২৫, মুসলিম ২২

[4] সহীহুল বুখারী ১৩৯৫, ১৪৫৮, ১৪৯৬, ২৪৪৮, ৪৩৪৭, ৭৩৭১, ৭৩৭২, মুসলিম ১৯, তিরমিযী ৩২৫, ২০১৪, নাসায়ী ২৪৩৫, আবূ দাউদ ১৫৮৪, ইবনু মাজাহ ১৭৮৩, আহমাদ ২০৭২, দারেমী ১৬১৪

[5] মুসলিম ৮২, তিরমিযী ২৬১৮, ২৬২০, আবূ দাউদ ৪৬৭৮, ইবনু মাজাহ ১০৭৮, আহমাদ ১৪৫৬১, ১৪৭৬২, দারেমী ১২৩৩

[6] তিরমিযী ২৬২১, নাসায়ী ৪৬৩, ইবনু মাজাহ ১০৭৯, আহমাদ ২২৪২৮, ২২৭৯৮

[7] তিরমিযী ২৬২২

[8] আবূ দাউদ ৮৬৪, তিরমিযী ৪১৩, ৪৬৫, ৪৬৬, ৪৬৭, ইবনু মাজাহ ১৪২৫, ১৪২৬, আহমাদ ৭৮৪২, ৯২১০, ১৬৫০১, দারেমী ১৩৫৫


Posted

in

by

Comments

One response to “ফরয নামায সমূহের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ”

Leave a Reply