প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার । প্রতিবেশী সম্পর্কে নসীহত।

প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার

প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার , এই অধ্যায়ে মোট = ২৯ টি হাদীস (১০০ – ১২৮) << আদাবুল মুফরাদ হাদীস কিতাবের মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ৪ প্রতিবেশীর সাথে সাদাচার

৫৫. অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশী সম্পর্কে নসীহত।
৫৬. অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর অধিকার।
৫৭. অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশী থেকে [সদাচার] শুরু করিবে।
৫৮. অনুচ্ছেদঃ নিকটতর প্রতিবেশী থেকে উপহারাদি দান শুরু করিবে।
৫৯. অনুচ্ছেদঃ নিকটতর অতঃপর পরবর্তী নিকটতর প্রতিবেশী।
৬০. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি প্রতিবেশীর জন্য নিজের দ্বার রুদ্ধ করে দেয়।
৬১. অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশীকে বাদ রেখে তৃপ্তি সহকারে আহার করা নিষেধ।
৬২. অনুচ্ছেদঃ তরকারীতে বেশী ঝোল রাখবে এবং তা প্রতিবেশীদেরও দিবে।
৬৩. অনুচ্ছেদঃ উত্তম প্রতিবেশী
৬৪. অনুচ্ছেদঃ সৎ প্রতিবেশী।
৬৫. অনুচ্ছেদঃ নিকৃষ্ট প্রতিবেশী।
৬৬. অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।
৬৭. অনুচ্ছেদঃ এক প্রতিবেশিনী অপর প্রতিবেশিনীকে এমনকি বকরীর ক্ষুর উপটৌকন দেওয়াকেও যেন তুচ্ছ মনে না করে।
৬৮. অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর অভিযোগ ।
৬৯. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দিতে দিতে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলো।
৭০. অনুচ্ছেদঃ ইহুদী প্রতিবেশী।
৭১. অনুচ্ছেদঃ মান-মৰ্যাদা।

৫৫. অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশী সম্পর্কে নসীহত।

১০০. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ জিবরাঈল [আঃ] আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এতো অধিক নসীহত করিতে থাকেন যে, আমি মনে মনে ভাবলাম, তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানাবেন

[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ, হিব্বান]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০১. আবু শুরায়হ আল-খুযাঈ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীর প্রতি দয়াপরবশ হয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে সেন তার মেহমানের সমাদর করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অন্যথায় নীরব থাকে

[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ, তাহাবী]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫৬. অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর অধিকার।

১০২. মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সাহাবীগণকে যেনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলেন। তারা বলেন, হারাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূল তা হারাম করিয়াছেন। তিনি বলেনঃ কোন ব্যক্তির দশটি নারীর সাথে যেনায় লিপ্ত হওয়া তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তার যেনা করার চেয়ে হালকা [পাপ]। পুনরায় তিনি তাহাদেরকে চুরি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। তারা বলেন, হারাম, মহামহিম আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূল তা হারাম করিয়াছেন। তিনি বলেনঃ কোন ব্যক্তির দশ পরিবারে চুরি করা তার প্রতিবেশীর ঘরে চুরি করার চেয়ে হালকা

[অপরাধ] [আবু দাউদ]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫৭. অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশী থেকে [সদাচার] শুরু করিবে।

১০৩. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জিবরাঈল [আবু দাউদ] আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এতো অধিক নসীহত করিতে থাকেন যে, আমি মনে মনে ভাবলাম, তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানাবেন

[বোখারী, মুসলিম]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০৪. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তার জন্য একটি ছাগল যবেহ করা হলে তিনি তার গোলামকে বলিতে লাগলেন, তুমি কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে তা দিয়েছো? তুমি কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে তা দিয়েছো? আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ জিবরাঈল [আবু দাউদ] আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অবিরত নসীহত করিতে থাকেন। আমি মনে মনে ভাবলাম যে, তিনি তাকে হয়তো ওয়ারিস বানাবেন

[আবু দাউদ, তিরমিজী]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০৫. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ জিবরাঈল [আবু দাউদ] আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এতো অধিক নসীহত করিতে থাকেন যে, আমি মনে মনে ভাবলাম যে, তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানাবেন

[১০০ নং দ্র.]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫৮. অনুচ্ছেদঃ নিকটতর প্রতিবেশী থেকে উপহারাদি দান শুরু করিবে।

১০৬. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার দুইজন প্রতিবেশী আছে। তাহাদের মধ্যে কোন প্রতিবেশীকে আমি উপহারাদি দিবো? তিনি বলেনঃ যার [ঘরের] দরজা তোমার অধিকতর নিকটবর্তী তাকে

[বোখারী, আবু দাউদ, তাহাবী]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০৭. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার দুইজন প্রতিবেশী আছে। তাহাদের মধ্যে কোন প্রতিবেশীকে আমি উপহারাদি দিবো? তিনি বলেনঃ যার দরজা তোমার অধিকতর নিকটবর্তী তাকে

[বোখারী, আবু দাউদ]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫৯. অনুচ্ছেদঃ নিকটতর অতঃপর পরবর্তী নিকটতর প্রতিবেশী।

১০৮. হাসান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

তাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, নিজের ঘর থেকে সামনের চল্লিশ ঘর, পেছনের চল্লিশ ঘর, ডানের চল্লিশ ঘর এবং বামের চল্লিশ ঘর তোমাদের প্রতিবেশী।

প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১০৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নিকটবর্তী প্রতিবেশীকে বাদ দিয়ে দূরতর প্রতিবেশী থেকে [উপঢৌকনাদি প্রেরণ] শুরু করা যাবে নাসায়ী, বরং দূরবর্তী জনের পূর্বে নিকটবর্তী জন থেকে তা শুরু করিতে হইবে।

প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৬০. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি প্রতিবেশীর জন্য নিজের দ্বার রুদ্ধ করে দেয়।

১১০. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

এমন একটি কাল আমরা অতিবাহিত করেছি যখন কারো নিকট তার মুসলমান ভাইয়ের চেয়ে তার দীনার ও দিরহামের উপযুক্ত প্রাপক আর কেউ ছিলো না। আর এখন এমন যুগ এসেছে যখন দীনার ও দিরহামই আমাদের কারো নিকট তার মুসলমান ভাইয়ের চেয়ে অধিক প্রিয়। আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ অনেক প্রতিবেশী কিয়ামতের দিন তার প্রতিবেশীকে অভিযুক্ত করিবে এবং বলবে, এই ব্যক্তি আমার জন্য তার দ্বার রুদ্ধ করে রেখেছিল এবং আমাকে তার সদাচার থেকে বঞ্চিত করেছে।

প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ হাসান লিগাইরিহি

৬১. অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশীকে বাদ রেখে তৃপ্তি সহকারে আহার করা নিষেধ।

১১১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ]-কে অবহিত করে বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তি সহকারে আহার করে সে মুমিন নয়

[বাযযার, হাকিম, তাহাবী]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬২. অনুচ্ছেদঃ তরকারীতে বেশী ঝোল রাখবে এবং তা প্রতিবেশীদেরও দিবে।

১১২. আবু যার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু [সাঃআঃ] আমাকে তিনটি উপদেশ দিয়েছেনঃ [১] নেতা নাক-কান কাটা গোলাম হলেও আমি তার নির্দেশ শুনবো এবং আনুগত্য করবো। [২] তুমি তরকারী রান্না করলে তাতে বেশী ঝোল রাখবে, অতঃপর তোমার প্রতিবেশীদের দিকে লক্ষ্য করিবে এবং সদিচ্ছা সহকারে তাহাদের তা পৌঁছাবে। [৩] নামায তার নির্ধারিত ওয়াক্তে আদায় করিবে। যদি দেখো যে, ঈমাম নামায পড়েছেন এবং তোমার নামাযও তুমি পড়েছো, তাহলে তোমার নামায তো হয়েছে নতুবা ইমামের সাথে তোমার নামায নফল হিসেবে গণ্য হইবে

[মুসলিম, তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, আবু দাউদ, হিব্বান]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১১৩.আবু যার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ হে আবু যার ! তুমি তরকারী রান্না করলে তাতে পানি [ঝোল] বেশী রাখো এবং তা তোমার প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলাও [মুসলিম, আবু দাউদ, দারিমি, হিব্বান]।

প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬৩. অনুচ্ছেদঃ উত্তম প্রতিবেশী

১১৪. আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনুল আস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহর নিকট সেই সঙ্গী উত্তম যে নিজ সঙ্গীদের নিকট উত্তম। আল্লয়হর নিকট সেই প্রতিবেশী উত্তম যে নিজ প্রতিবেশীদের নিকট উত্তম

[তিরমিজী, আবু দাউদ, হাকিম, দারিমি]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬৪. অনুচ্ছেদঃ সৎ প্রতিবেশী।

১১৫. নাফে ইবনুল হারিস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ একজন মুসলমানের জন্য প্রশস্ত বাসভবন, সৎ প্রতিবেশী ও আরামদায়ক বাহন সৌভাগ্যের নিদর্শন

[আবু দাউদ, হাকিম]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

৬৫. অনুচ্ছেদঃ নিকৃষ্ট প্রতিবেশী।

১১৬. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ]-এর একটি দোয়া হলোঃ “হে আল্লাহ! আমি [আমার ] আবাসস্থলে তোমার নিকট দুষ্ট প্রতিবেশী থেকে আশ্রয় চাই। কেননা দুনিয়ার প্রতিবেশী তো বদল হইতে থাকে”

[নাসায়ী, হাকিম, ইবনি হিব্বান]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১১৭. আবু মূসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশী, তার ভাই এবং তার পিতাকে হত্যা না করা পর্যন্ত কিয়ামত হইবে না।

প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৬৬. অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।

১১৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

বাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলা হলো ইয়া রসূলাল্লাহ! অমুক নারী সারা রাত নামায পড়ে, সারা দিন রোযা রাখে, ভালো কাজ করে, দান-খয়রাত করে এবং নিজ প্রতিবেশীদেরকে মুখের কথায় কষ্ট দেয়। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, সে জাহান্নামী। পুনরায় সাহাবীগণ বলেন, অমুক নারী ফরয নামায পড়ে, বস্ত্র দান করে এবং কাউকে কষ্ট দেয় না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সে জান্নাতী

[আবু দাউদ, আহমাদ, হাকিম, ইবনি হিব্বান, বাযযার]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১১৯. উমারা ইবনি গুরাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

তার ফুফু তাকে বলেছেন যে, তিনি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, আমাদের কাউকে তার স্বামী কামনা করলে সে নিজেকে অভিমান অথবা অনিচ্ছা বশত স্বামীর নিকট সমর্পণ করে না। এতে কি আমাদের কোন দোষ হইবে? তিনি বলেন, হাঁ। তোমার উপর তার অধিকার এই যে, সে তোমাকে কামনা করলে তুমি তার নিকট নিজেকে সমর্পণ করিবে। তুমি তখন উটের পিঠে থাকলেও তাকে বাধা দিতে পারবে না। রাবী বলেন, আমি তাকে বললাম, আমাদের কেউ ঋতুবতী হয়, অথচ তার ও তার স্বামীর একটি মাত্র লেপ বা বিছানাসায়ী, তখন সে কি করিবে? তিনি বলেন, সে তার নিম্নাঙ্গে উত্তমরূপে বস্ত্র কষে বাঁধবে, অতঃপর তার সাথেই ঘুমাবে। এর উপর দিয়ে সে যা করিতে চায় করিবে। সাথে সাথে নাবী [সাঃআঃ] কি করিতেন তাও আমি তোমাকে অবহিত করছি। আমার পালার রাতে আমি কিছু যব পিষলাম এবং তাহাঁর জন্য পিঠা তৈরি করলাম। তিনি ঘরে এসে পুনরায় মসজিদে চলে গেলেন। তিনি ঘুমাতে উদ্যত হলে ঘরের দরজা বন্ধ করিতেন, কলসের মুখ বন্ধ করিতেন, পাত্রসমূহ উপুড় করে রাখতেন এবং বাতি নিভিয়ে দিতেন। আমি অপেক্ষায় থাকলাম যে, তিনি ফিরে আসবেন এবং আমি তাহাঁকে পিঠা খাওয়াবো। কিন্তু তিনি ফিরে আসেননি। শেষে ঘুম আমাকে পরাভূত করলো এবং শীত তাহাঁকে পীড়া দিলো। তিনি আমার নিকট এসে আমাকে তুললেন, তারপর বললেনঃ আমাকে উত্তাপ দাও, আমাকে উত্তাপ দাও। আমি তাহাঁকে বললাম, আমি তো ঋতুবতী। তিনি বলেনঃ তথাপি তোমার উরুদ্বয় একটু উন্মুক্ত করো। আমি আমার উরুদ্বয় উন্মুক্ত করলাম। তিনি তার গাল ও মাথা আমার উরুদ্বয়ের উপর রাখলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি উত্তপ্ত হলেন। আমাদের প্রতিবেশীর একটি পোষা বকরী এসে পিঠা খেতে উদ্যত হলো। সে একটি পিঠা মুখে তুলে নিলো। আয়েশা [রাঃআঃ] বলেন, আমি নড়াচড়া করায় নাবী [সাঃআঃ]-এর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি তাড়াতাড়ি বকরীটিকে দরজা দিয়ে তাড়িয়ে দিলাম। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তুমি যে পিঠাটি উঠিয়েছো তা রেখে দাও এবং তোমার প্রতিবেশীকে তার বকরীর কারণে কষ্ট দিও না।

প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১২০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়, সে বেহেশতে প্রবেশ করিতে পারবে না

[বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, আবু দাউদ]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬৭. অনুচ্ছেদঃ এক প্রতিবেশিনী অপর প্রতিবেশিনীকে এমনকি বকরীর ক্ষুর উপটৌকন দেওয়াকেও যেন তুচ্ছ মনে না করে।

১২১. আমর ইবনি মুআয আল-আশহালী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলেছেনঃ হে মুমিন নারীগণ! তোমাদের মধ্যকার কোন নারী যেন তার প্রতিবেশীকে যৎসামান্য দান করাকেও তুচ্ছ মনে না করে, যদিও তা রান্না করা বকরীর বাহুর সামান্য গোশতও হয়

[বোখারী, মুসলিম, হাকিম]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১২২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ হে মুসলিম নারীগণ, হে মুসলিম নারীগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীকে বকরীর [রান্না করা] ক্ষুরও [উপঢৌকন] দেওয়াকে তুচ্ছ মনে না করে

[বোখারী, মুসলিম]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬৮. অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর অভিযোগ ।

১২৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার এক প্রতিবেশী আছে, সে আমাকে পীড়া দেয়। তিনি বলেনঃ তুমি ফিরে গিয়ে তোমার ঘরের আসবাবপত্র রাস্তায় ফেলে দাও। অতএব সে ফিরে এসে তার ঘরের আসবাবপত্র বাইরে ফেলে দিলো। এতে তার ঘরের সামনে লোকজন জড়ো হলো। তারা জিজ্ঞেস করলো, তোমার কি হয়েছে? সে বললো, আমার এক প্রতিবেশী আছে, সে আমাকে কষ্ট দেয়। আমি তা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট বললে তিনি বলেনঃ যাও, ঘরে গিয়ে তোমার আসবাবপত্র রাস্তায় ফেলে দাও। তখন তারা বলিতে লাগলো, “হে আল্লাহ! তার উপর তোমার অভিসম্পাত, হে আল্লাহ ! তাকে লাঞ্ছিত করো”। বিষয়টি প্রতিবেশী জানতে পেরে সেখানে এসে বললো, তুমি তোমার ঘরে ফিরে যাও। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে আর কষ্ট দিবো না

[আবু দাউদ, হাকিম, ইবনি হিব্বান]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১২৪. আবু জুহাইফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

এক ব্যক্তি তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট অভিযোগ করলো। তিনি বলেনঃ তুমি তোমার মালপত্র তুলে রাস্তায় রেখে দাও। যে লোকই সেই পথ দিয়ে যাবে সে-ই তাকে অভিশাপ দিবে। অতএব যে লোকই সেই পথে গেলো সে-ই তাকে অভিশাপ দিলো। তখন সেই ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলে তিনি বলেনঃ লোকদের নিকট থেকে তুমি কি পেলে ? তিনি আরো বলেনঃ লোকজনের অভিসম্পাতের সাথে রহিয়াছে আল্লাহর অভিশাপ। অতঃপর তিনি অভিযোগকারীকে বলেনঃ তোমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে

[তাবারানি, হাকিম]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১২৫. জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করিতে আসলো। সে ‘রুকন’ ও ‘মাকাম’-এর মধ্যবর্তী স্থানে বসা অবস্থায় নাবী [সাঃআঃ] এসে পৌছলেন। সে দেখলো যে, তিনি মাকামের নিকট একজন সাদা বস্ত্র পরিহিত লোকের সামনে দাঁড়ানো, যেখানে জানাযার নামায পড়া হয়। সে নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক। আপনার সামনে সাদা বস্ত্র পরিহিত যে লোকটিকে আমি দেখলাম তিনি কে? তিনি বলেনঃ তুমি কি তাকে দেখিতে পেয়েছো? সে বললো, হাঁ। তিনি বলেনঃ তুমি প্রভূত কল্যাণ প্রত্যক্ষ করছো। তিনি আমার প্রভুর বার্তাবাহক জিবরাঈল [আবু দাউদ]। তিনি আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এতো নসীহত করিতে থাকেন যে, আমি মনে মনে ভাবলাম, তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে তার [অপর প্রতিবেশীর] ওয়ারিস বানাবেন।

প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৬৯. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দিতে দিতে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলো।

১২৬. আবু আমের আল-হিমসী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

সাওবান [রাঃআঃ] বলিতেন, দুই ব্যক্তি তিন দিনের অধিক কাল সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকলে তাহাদের একজনের সর্বনাশ হইবেই। আর সম্পর্কচ্ছেদরত অবস্থায় তারা মারা গেলে উভয়ে সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে প্রতিবেশী তার অপর প্রতিবেশীকে নির্যাতন করে বা তার সাথে হীন আচরণ করে, ফলে তাতে সে নিজ বাড়ি ত্যাগ করিতে বাধ্য হয়, সে ধ্বংস হলো।

প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭০. অনুচ্ছেদঃ ইহুদী প্রতিবেশী।

১২৭. মুজাহিদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ]-এর নিকট ছিলাম। তখন তার গোলাম ছাগলের চামড়া ছাড়াচ্ছিলো। তিনি বলেন, হে বালক! অবসর হয়েই তুমি প্রথমে আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে গোশত দিবে। এক ব্যক্তি বললো, ইহুদী! আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করুন। তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে প্রতিবেশী সম্পর্কে উপদেশ দিতে শুনিয়াছি। এমনকি আমাদের আশংকা হলো বা আমাদের নিকট প্রতিভাত হলো যে, তিনি অচিরেই প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানাবেন

[দারিমি, তিরমিজী]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭১. অনুচ্ছেদঃ মান-মৰ্যাদা।

১২৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন ব্যক্তি সর্বাধিক সম্মানিত? তিনি বলেনঃ তাহাদের মধ্যকার সবাধিক আল্লাহভীরু ব্যক্তি সর্বাধিক মর্যাদাবান। তারা বলেন, আমরা এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিনি। তিনি বলেনঃ তাহলে মানুষের মধ্যে সবাধিক সম্মানিত হলেন আল্লাহর নাবী ইউসুফ [আবু দাউদ], যিনি আল্লাহর নাবী ইয়াকুব [আবু দাউদ]-এর পুত্র এবং আল্লাহর অন্তরঙ্গ বন্ধু ইবরাহীম [আবু দাউদ]-এর প্রপৌত্র। তারা বলেন, আমরা আপনাকে এ সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বলেনঃ তাহলে তোমরা কি আরবের খনি [খান্দান] সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করছো। তারা বলেন, হাঁ। তিনি বলেনঃ জাহিলী যুগে তোমাদের মধ্যে যারা উত্তম বিবেচিত হতো ইসলামী যুগেও তারাই উত্তম বিবেচিত হইবে, যখন তারা ধর্মের জ্ঞানে ব্যুৎপত্তি অর্জন করিবে

[বোখারী, মুসলিম]। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

Comments

One response to “প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার । প্রতিবেশী সম্পর্কে নসীহত।”

Leave a Reply