পেশাব পায়খানার সুন্নত দোয়া, সতর, সালাম, গর্ত, ইস্তিনজার বর্ণনা
পেশাব পায়খানার সুন্নত দোয়া, সতর, সালাম, গর্ত, ইস্তিনজার বর্ণনা >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ১, অনুচ্ছেদঃ ১-২৪ =২৪টি
অনুচ্ছেদ-১: পেশাব-পায়খানার জন্য নির্জন স্থানে যাওয়া
অনুচ্ছেদ-২ঃ পেশাবের জন্য কোন ব্যক্তির জায়গা তালাশ করা
অনুচ্ছেদ-৩ঃ কেউ পায়খানায় প্রবেশকালে যা বলবে
অনুচ্ছেদ-৪ঃ ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব পায়খানা করা মাকরূহ
অনুচ্ছেদ-৫ঃ এ সম্পর্কে অনুমতি প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-৬ঃ পায়খানার সময় কিভাবে সতর খুলবে
অনুচ্ছেদ-৭ঃ পেশাব-পায়খানার সময় কথা বলা মাকরূহ
অনুচ্ছেদ-৮ঃ পেশাবরত অবস্থায় সালামের জবাব দেয়া
অনুচ্ছেদ-৯ঃ যে ব্যক্তি অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর যিকির করে
অনুচ্ছেদ-১০ঃ আল্লাহর নাম খচিত আংটি নিয়ে পায়খানায় প্রবেশ করা।
অনুচ্ছেদ-১২ঃ দাঁড়িয়ে পেশাব করা
অনুচ্ছেদ-১৩ঃ কোন ব্যক্তি রাতে পাত্রে পেশাব করে তা নিকটে রেখে দেয়া
অনুচ্ছেদ-১৪ঃ নবি [সাঃআ:] যেসব জায়গায় পেশাব করিতে নিষেধ করিয়াছেন
অনুচ্ছেদ-১৫ঃ গোসলখানায় পেশাব করা
অনুচ্ছেদ-১৬ঃ গর্তে পেশাব করা নিষেধ
অনুচ্ছেদ-১৭ঃ কোন ব্যক্তি পায়খানা থেকে বের হয়ে যা বলবে
অনুচ্ছেদ-১৮ঃ ইস্তিন্জা করার সময় ডান হাতে পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করা মাকরূহ
অনুচ্ছেদ-১৯ঃ পেশাব-পায়খানার সময় পর্দা করা
অনুচ্ছেদ-২০ঃ যে সমস্ত জিনিস দ্বারা ইস্তিনজা করা নিষেধ
অনুচ্ছেদ-২১ঃ পাথর দ্বারা ইস্তিন্জা করা
অনুচ্ছেদ-২২ঃ পেশাব- পায়খানার পর উযু করা
অনুচ্ছেদ-২৩ঃ পানি দিয়ে ইস্তিন্জা করা
অনুচ্ছেদ-২৪ঃ যে ব্যক্তি ইস্তিন্জার পর মাটিতে হাত ঘষে
অনুচ্ছেদ-১: পেশাব-পায়খানার জন্য নির্জন স্থানে যাওয়া
১. মুগীরাহ ইবনি শুবাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] পায়খানার উদ্দেশ্যে দূরে চলে যেতেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
২. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] পায়খানার উদ্দেশে দূরে চলে যেতেন, যেন তাঁকে কেউ দেখিতে না পায়।
পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২ঃ পেশাবের জন্য কোন ব্যক্তির জায়গা তালাশ করা
৩. আবুত্ তাইয়্যাহ্ হইতে বর্ণিতঃ
জনৈক শায়খ আমাকে বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] যখন বাসরাহ্য় পদার্পণ করিলেন, তখন তাহাঁর নিকট আবু মূসা [রাঃআ:]- এর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করা হয়। আবদুল্লাহ [রাঃআ:] কয়েকটি বিষয় জানতে চেয়ে আবু মূসার [রাঃআ:] নিকট চিঠি লিখলেন। উত্তরে আবু মুসা [রাঃআ:] তাঁকে লিখলেন, একদিন আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি পেশাব করার ইচ্ছা করিলেন। অতঃপর তিনি একটি দেয়ালের গোড়ার নরম মাটিতে গিয়ে পেশাব করিলেন। এরপর তিনি বলিলেন, তোমাদের কেউ পেশাব করিতে চাইলে যেন নীচু নরম জায়গা অনুসন্ধান করে নেয়। {৩}
{৩} দুর্বলঃ জঈফ আল-জামিউস সাগীর ৩১৯, মিশকাত ৩৪৫। {৩} আহমদ মুসনাদ [৪/৩৯৬,৪৪৪], বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ পেশাবের জায়গা খোঁজ করা, ১/৯৩, ৯৪] আবুত তাইয়্যাহ সূত্রে জনৈক ব্যক্তি হতে। এ সনদটি আবুত্ তাইয়্যাহর শায়খের জাহালাতের কারণে দুর্বল। মিশকাতের তাহক্বীক্বে রয়েছেঃ এর সানাদ দুর্বল। সানাদে নাম উল্লেখহীন জনৈক শায়খ আছেন। একদল মুহাদ্দিস এটিকে দুর্বল বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩ঃ কেউ পায়খানায় প্রবেশকালে যা বলবে
৪. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] যখন পায়খানায় প্রবেশ করিতেন, হাম্মাদের বর্ণনা মতে, তখন তিনি বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ
আল্লাহহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” আর আবদুল ওয়ারিসের বর্ণনা মতে, তিনি বলিতেনঃ
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
আউজুবিল্লাহি মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবায়িসি
“আমি আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাইছি শয়তানদের থেকে ও যাবতীয় অপবিত্রতা থেকে।”
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫. আবদুল আযীয ইবনি সুহাইব হইতে বর্ণিতঃ
আনাস [রাঃআ:] সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ
আল্লাহহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি কথাটি রয়েছে। শুবাহ আবদুল আযীয সূত্রে বলেন, তিনি একবার
أَعُوذُ بِاللَّهِ
আউযুবিল্লাহ
বলেছেন। আর আবদুল আযীয সূত্রে উহাইব বর্ণনা করিয়াছেন যে, তাতে সে যেন আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে কথাটি রয়েছে।
হাদিসের তাহকিকঃ শায
৬. যায়িদ ইবনি আরক্বাম [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, সাধারণতঃ পায়খানার স্থানে শয়তান এসে থাকে। সুতরাং তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশকালে যেন বলেঃ
أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
আউজুবিল্লাহি মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবায়িসি
আমি আল্লাহ্র কাছে শাইত্বন ও যাবতীয় অপবিত্রতা হতে আশ্রয় চাইছি।
পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪ঃ ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব পায়খানা করা মাকরূহ
৭. সালমান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
বর্ণনাকারী আবদুর রহমান বলেন, সালমান [রাঃআ:] কে বলা হলো, তোমাদের নবি [সাঃআ:] তোমাদেরকে সবকিছুই শিক্ষা দিয়েছেন, এমন কি পায়খানা করার নিয়মও। সালমান [রাঃআ:] বলিলেন, হ্যাঁ। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদেরকে নিষেধ করিয়াছেন ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব-পায়খানা করিতে, ডান হাতে শৌচ করিতে, শৌচকার্যে আমাদের কারো তিনটি ঢিলার কম ব্যবহার করিতে এবং গোবর অথবা হাড় দ্বারা শৌচ করিতে।
সহীহঃ মুসলিম। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব-পায়খানা করা জায়িয নয়। পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ আমি তোমাদের জন্য পিতৃতুল্য, তোমাদেরকে আমি দ্বীন শিক্ষা দিয়ে থাকি। তোমাদের কেউ পায়খানায় গেলে ক্বিবলাহমুখী হয়ে বসবে না এবং ক্বিবলাহর দিকে পিঠ দিয়েও বসবে না, আর ডান হাতে শৌচ করিবে না। তিনি [সাঃআ:] তিনটি ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন এবং গোবর ও হাড় দ্বারা শৌচ করিতে নিষেধ করিতেন।
হাসানঃ এর অংশ বিশেষ মুসলিমে আছে। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৯. আবু আইউব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি [সাঃআ:] বলেন, তোমরা পায়খানায় গিয়ে ক্বিবলাহমুখী হয়ে পায়খানা-পেশাব করিবে না, বরং পূর্ব অথবা পশ্চিমমুখী হয়ে বসবে। আবু আইউব [রাঃআ:] বলেন, আমরা সিরিয়ায় গিয়ে দেখিতে পেলাম, সেখানকার শৌচাগারগুলো ক্বিবলাহমুখী করে বানানো। সেজন্য উক্ত স্থানে আমরা একটু বেঁকে বসতাম এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতাম।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০. মাক্বিল ইবনি আবু মাক্বিল আল-আসাদী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] দু ক্বিবলাহর [কাবা ও বাইতুল মুক্বাদ্দিসের] দিকে মুখ করে পেশাব-পায়খানা করিতে নিষেধ করিয়াছেন। {১০}
মুনকারঃ জঈফ আল-জামিউস সাগীর ৬০০১। {১০} আহমদ [৪/২১০], ইবনি মাজাহ [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ পেশাব-পায়খানার সময় ক্বিবলাহমুখী হওয়া নিষেধ, হাঃ৩১৯], এবং বলা হয়েছে যে, সানাদের আবু যায়িদ এর অবস্থা অজ্ঞাত [মাজহুলুল হাল]। অতএব হাদীসটি তার কারণে দুর্বল। ইবনি হাজার আত-তাহযীব গ্রন্থে তার জীবনীতে বলেছেনঃ বলা হয়, তার নাম ওয়ালিদ। তিনি মাক্বাল ইবনি আবু মাক্বাল আল আসাদী সূত্রে দুক্বিবলাহর দিকে মুখ করে পেশাব-পায়খানা নিষেধ হওয়া সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, এবং তার সূত্রে আমর ইবনি ইয়াহইয়া ইবনি উমরাহ। ইবনিল মাদীনী বলেন, তিনি পরিচিত নন। হাদিসের তাহকিকঃ মুনকার
১১. মারওয়ান আল-আস্ফার হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি দেখলাম, ইবনি উমার [রাঃআ:] তার উটকে ক্বিবলাহর দিকে বসালেন। অতঃপর ঐ উটের দিকে মুখ করে বসে পেশাব করিলেন। আমি বললাম, হে আবু আবদুর রহমান! এ থেকে [ অর্থাৎ ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব করিতে] নিষেধ করা হয়নি কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তবে এ নিষেধ উন্মুক্ত ময়দানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তোমরা এবং ক্বিবলাহর মাঝখানে কোন কিছুর আড়াল থাকলে তা দূষনীয় নয়।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫ঃ এ সম্পর্কে অনুমতি প্রসঙ্গে
১২. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ঘরের ছাদে উঠে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে দুটি ইটের উপর বসে বাইতুল মাক্বদিসের দিকে মুখ করে পেশাব-পায়খানা করিতে দেখেছি।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ প্রাচীর ঘেরা স্থানে ক্বিবলাহকে পেছনে রেখে পেশাব-পায়খানা করা জায়িয। পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৩. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর নবি [সাঃআ:] ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব করিতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি বলেন, আমি নবি [সাঃআ:] কে তাহাঁর ইন্তিকালের এক বছর পূর্বে ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব-পায়খানা করিতে দেখেছি।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬ঃ পায়খানার সময় কিভাবে সতর খুলবে
১৪. ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] যখন পেশাব-পায়খানার ইচ্ছা করিতেন, তিনি যমীনের নিকটবর্তী না হওয়া পর্যন্ত কাপড় উঠাতেন না।
পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৭ঃ পেশাব-পায়খানার সময় কথা বলা মাকরূহ
১৫. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে বলিতে শুনেছিঃ দু ব্যক্তি একই সঙ্গে পেশাব-পায়খানার জন্য বের হইবে না এবং আপন লজ্জাস্থান উন্মুক্ত করে কথাবার্তা বলবে না। কারণ এরূপ কাজে মহাসম্মানিত আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা ওয়াজিব। ২। পেশাব-পায়খানার সময় পরস্পর কথোপকথনে আল্লাহর ক্রোধান্বিত হওয়া প্রমাণিত করে যে, এ সময় কথাবার্তা বলা হারাম। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৮ঃ পেশাবরত অবস্থায় সালামের জবাব দেয়া
১৬. ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] পেশাব করছিলেন, এমতাবস্থায় তাহাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রমকারী এক ব্যক্তি তাঁকে সালাম দিল। তিনি তাহাঁর জবাব দিলেন না। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি উমার ও অন্যান্য সূত্রে বর্ণিতঃ নবি [সাঃআ:] তায়াম্মুম করিলেন, তারপর লোকটির সালামের জবাব দিলেন।
হাসানঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৭. আল-মুহাজির ইবনি কুনফু [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
একদা তিনি নবি [সাঃআ:] এর নিকট গিয়ে তাঁকে সালাম দিলেন। তখন নবি [সাঃআ:] পেশাব করছিলেন। সেজন্য অযূ না করা পর্যন্ত তিনি তার জবাব দিলেন না। অতঃপর [পেশাব শেষে অযূ করে] তিনি তার নিকট ওযর পেশ করে বলিলেন, পবিত্রতা ছাড়া আল্লাহর নাম স্মরণ করা আমি অপছন্দ করি।
এ অনুচ্ছেদের হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। হাদীসটি প্রমাণ করে পেশাব পায়খানার সময়ে আল্লাহর যিকর করা অপছন্দনীয়।২। উচিত হলো, কেউ পেশাব-পায়খানার সময় সালাম দিলে উযূ বা তায়াম্মুম করার পর তার উত্তর দেয়া। ৩। নবি [সাঃআ:] মুকীম অবস্থায় অসুস্থতা ও ওজর ব্যতিরেকেই তায়াম্মুম করিয়াছেন। আর ইমাম আওযায়ীর অভিমতও এটাই যে, জুনুবী ব্যক্তি যদি এ আশঙ্কা করেন যে, গোসল করিতে গেলে সূর্যোদয় হয়ে যাবে তখন তিনি ওয়াক্ত ছুটে যাওয়ার পূর্বেই তায়াম্মুম করে সলাত আদায় করে নিবেন। ইমাম ইবনি তাইমিয়্যাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সহ বহু মনীষী এ অভিমত পোষণ করিয়াছেন। পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৯ঃ যে ব্যক্তি অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর যিকির করে
১৮. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলূল্লাহ [সাঃআ:] সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর করিতেন।
সহীহঃ মুসলিম। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ হাদীসটি প্রমান করে নবি [সাঃআ:] পবিত্র, উযুবিহীন, জুনুবী, বসে দাড়িয়ে,হেলান দিয়ে , হাটা ও আরোহী সকল অবস্থায়ই আল্লাহর যিকর করিতেন। এখানে যিকর কথাটি ব্যাপক অর্থবোধক [আম-, যা তাসবীহ, তাহলীল, তাকবীর, তাহমীদ, ইস্তিগফার, দরূদ সকল প্রকার যিকর শামিল করে। মুসলিমগণের ঐক্যমতে এরূপ করা শারীআত সম্মত। তবে পেশাব-পায়খানায় এবং সহবাসের অবস্থায় বাদে। কেননা এ দুঅবস্থায় যিকর করা অপছন্দনীয়। পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১০ঃ আল্লাহর নাম খচিত আংটি নিয়ে পায়খানায় প্রবেশ করা।
১৯. আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] পায়খানায় যাওয়ার সময় আংটি খুলে রাখতেন।
মুনকারঃ জঈফ আল-জামিউস সাগীর ৪৩৯০, মিশকাত ৩৪৩, ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ হাদীসটি মুনকার। হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে ইবনি জুরাইজ হতে, তিনি যিয়াদ ইবনি সাদ হতে, তিনি যুহরী হতে আনাস সুত্রে মারফুভাবে এভাবেঃ নবি [সাঃআ:] একটি রুপার আংটি বানান, অতঃপর তা ফেলে দেন। হাদীসটি বর্ণনায় হাম্মামের সন্দেহ রয়েছে। আর হাম্মাম ছাড়া কেউ এটি বর্ণনা করেননি। হাদিসের তাহকিকঃ মুনকার
অনুচ্ছেদ-১১ঃ পেশাব থেকে সতর্ক থাকা
২০. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] দুটি ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে বলিলেন, এ দুজনকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্ত কোন বড় গুনাহের কারণে শাস্তি দেয়া হচেছ না। তিনি [একটি ক্ববরের দিকে ইশারা করে] বলিলেন, এ ব্যক্তি পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না। আর [অপর ক্ববরের দিকে ইশারা] করে বলিলেন, এ ব্যক্তি চোগলখোরী করে বেড়াত। অতঃপর তিনি খেজুরের একটি তাজা ডাল আনিয়ে সেটি দু টুকরা করে একটি এ ক্ববরে এবং অপরটি ঐ ক্ববরে গাড়লেন এবং বললেনঃ আশা করা যায়, ডাল দুটি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তাহাদের শাস্তি কিছুটা হাল্কা করা হইবে। হান্নাদ “ইয়াস্তান্যিহু” শব্দের স্থলে “ইয়াস্তাতিরু” শব্দ উল্লেখ করিয়াছেন।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। ক্ববরের আযাব সত্য। এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব। ২। চোগলখুরী হারাম এবং তা ক্ববরের আযাব হওয়ার অন্যতম বড় কারণ। ৩। প্রস্রাব অপবিত্র। পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২১. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] এর উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, “সে তার পেশাব হতে আত্মগোপন করত না।” আর আবু মুআবিয়াহ বলেছেন, “পেশাব থেকে সতর্ক থাকত না।”
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম, এর পূর্বের হাদীস দেখুন। পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২. আবদুর রহমান ইবনি হাসানাহ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ও আমর ইবনিল আস নবি [সাঃআ:] এর নিকট গেলাম। তিনি সাথে একটি ঢাল নিয়ে বের হলেন এবং সেটিকে আড়াল বানিয়ে পেশাব করিলেন। আমরা বললামঃ দেখ, তিনি মহিলাদের ন্যায় [লুকিয়ে লুকিয়ে] পেশাব করছেন। তিনি একথা শুনে বলিলেন, তোমরা কি জান না বানী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির কী অবস্থা হয়েছিল? তাহাদের কারো যদি [কোথাও] পেশাব লেগে যেত, তাহলে তারা ঐ স্থানকে কেটে ফেলত। অতঃপর ঐ ব্যক্তি তাহাদেরকে এরূপ করিতে নিষেধ করেছিল বিধায় তাকে ক্ববরের শাস্তি দেয়া হয়।
সহিহ মাওকুফঃ বোখারী ও মুসলিম এটি মুত্তাসিল সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু এ শব্দেঃ —– ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মানসুর আবু ওয়াইল থেকে আবু মুসা সুত্রে এ হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেনঃ [যদি পেশাব লাগত] তাহলে নিজের চামড়া কেটে ফেলত। সহিহ। আর আসিম আবু ওয়াইল, আবু মূসা [রাঃআ:] থেকে নবি [সাঃআ:] এর সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ নিজের শরীর কেটে ফেলত। মুনকার। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
অনুচ্ছেদ-১২ঃ দাঁড়িয়ে পেশাব করা
২৩. হুযায়ফাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ [সাঃআ:] এক সম্প্রদায়ের ময়লার স্তুপের নিকট গিয়ে দাঁড়িয়ে পেশাব করিলেন। অতঃপর পানি আনালেন এবং মোজা মাসাহ্ করিলেন। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মুসাদ্দাদ আরো বর্ণনা করেছেনঃ হুযায়ফাহ্ [রাঃআ:] বলেন, {নবি [সাঃআ:] পেশাব করবেন বুঝতে পেরে} আমি পেছনের দিকে সরে যেতে থাকলাম। তিনি আমাকে ডাকলেন। এমনকি আমি তাহাঁর পায়ের গোড়ালির নিকট ছিলাম বা তার পিছনে এসে দাঁড়ালাম।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। কারণ বশতঃ দাড়িয়ে পেশাব করা জায়িয। ২। মুকীম অবস্থায় মোজাদ্বয়ের উপর মাসাহ্ করা শারীআত সম্মত। পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৩ঃ কোন ব্যক্তি রাতে পাত্রে পেশাব করে তা নিকটে রেখে দেয়া
২৪. হুকাইমাহ বিনতু উমাইমাহ বিনতু রুক্বাইক্বাহ তাহাঁর মা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, নবি [সাঃআ:] এর একটি কাঠের পাত্র ছিল। সেটি তাহাঁর খাটের নিচে থাকত। রাতের বেলায় তিনি তাতে পেশাব করিতেন।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। রাতে পেশাব করার উদ্দেশে ঘরে পেশাবের পাত্র রাখা জায়িয।২। প্রয়োজনে নিজ পরিবারের সদস্যের [উপস্থিতিতে ] তার নিকটবর্তী স্থানে বসে পেশাব করা বৈধ। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ-১৪ঃ নবি [সাঃআ:] যেসব জায়গায় পেশাব করিতে নিষেধ করিয়াছেন
২৫. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেন, তোমরা দুটি অভিশপ্ত কাজ থেকে দূরে থাকিবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, অভিশপ্ত কাজ দুটি কী হে আল্লাহর রাসূল? নবি [সাঃআ:] বলেন, মানুষের যাতায়াতের পথে অথবা [বিশ্রাম নেয়ার] ছায়া বিশিষ্ট জায়গায় পেশাব পায়খানা করা।
সহীহঃ মুসলিম। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ যেসব স্থানে পেশাব-পায়খানা করলে মানুষের কষ্ট হয় সেসব স্থানে পেশাব পায়খানা করা নিষেধ। তম্মধ্যে হাদীসে লোক চলাচলের পথ ও মানুষের বিশ্রামের ছায়াদার স্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ এতে মানুষের কষ্ট ও পরিবেশের সৌন্দর্য বিনষ্ট হয় এবং অন্যের গায়ে বা কাপড়ে অপবিত্রতা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৬. মুআয ইবনি জাবাল [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ.
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ তোমরা তিনটি অভিশপ্ত কাজ থেকে বিরত থাকিবে। সেগুলো হচেছঃ মানুষের অবতরণ স্থল, চলাচলের পথ ও ছায়াবিশিষ্ট জায়গায় পায়খানা করা।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৫ঃ গোসলখানায় পেশাব করা
২৭. আব্দুল্লাহ ইবনি মুগাফ্ফাল [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন গোসলখানায় পেশাব না করে। অথচ সেখানেই সে গোসল করে থাকে।
সহিহ। আহমাদের বর্ণনায় রয়েছে, অথচ সেখানেই সে উযু করে থাকে। কারণ মনের অধিকাংশ খটকা এ থেকেই সৃষ্টি হয়। দুর্বল। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
২৮. হুমাইদ ইবনি আবদুর রহমান আল-হিম্য়ারী হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমার সাথে এমন এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ হয়, যিনি আবু হুরাইরা [রাঃআ:] এর মতই নবি [সাঃআ:] এর সাহচর্যে ছিলেন। তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] প্রতিদিন চুল আঁচড়াতে অথবা গোসলখানায় পেশাব করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
সহীহঃ মুসলিম।এ অনুচ্ছেদের হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। পবিত্রতা অর্জনের স্থানে পেশাব করা নিষেধ। কারো মতে, এ নিষেধাজ্ঞা মাকরূহ পর্যায়ের, হারাম নয়। ২। হাদীসে গর্ব ও অহংকারের উদ্দেশ্যে প্রত্যহ চুল আঁচড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৬ঃ গর্তে পেশাব করা নিষেধ
২৯. আবদুল্লাহ ইবনি সারজিস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] গর্তে পেশাব করিতে নিষেধ করিয়াছেন। লোকজন ক্বাতাদাহকে জিজ্ঞেস করিল, গর্তে পেশাব করা কেন অপছন্দনীয়? তিনি বললেনঃ বলা হয়, এতে জিনেরা বসবাস করে। {২৯}
দুর্বলঃ জঈফ আল-জামিউস সাগীর ৬৩২৪, ৬০০৩, ইরওয়াউল গালীল ৫৫। {২৯} নাসায়ী [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ গর্তে পেশাব করা অপছন্দনীয়, হাঃ ৩৪], আহমদ [৫/৮২], হাকিম [১/১৮৬], বায়হাক্বী [১/৯৯]। হাদীসটির সানাদ দুর্বল। ইরওয়াউল গালীল গ্রন্থে রয়েছেঃ সানাদে ক্বাতাদাহ একজন মুদাল্লিস, তিনি তাদলীসকারী হিসেবে প্রসিদ্ধ। হাদীসটি তিনি আবদুল্লাহ ইবনি সারজিস হতে শুনেননি। স্বয়ং ইমাম হাকিম আল-মারিফাতু উলূমিল হাদীস গ্রন্থে বলেনঃ ক্বাতাদাহ হাদীসটি আনাস ব্যতীত অন্য কোন সহাবী হতে শুনেননি। অতএব সানাদটি মুনকাতি। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। গর্তে পেশাব করা নিষেধ। গর্তে সাপ, বিচ্ছু, বিষাক্ত প্রাণী থাকলে তা পেশাবকারীর ক্ষতি করিতে পারে। ২। গর্তে পেশাব করলে কোন দুর্বল প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ৩। জ্বীনদের বসবাসের জায়গায় পেশাব করা নিষেধ। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৭ঃ কোন ব্যক্তি পায়খানা থেকে বের হয়ে যা বলবে
৩০. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] যখন পায়খানা থেকে বের হতেন, তখন বলিতেনঃ
غُفْرَانَكَ
গুফরানাকা
[অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাই]।
পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৮ঃ ইস্তিন্জা করার সময় ডান হাতে পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করা মাকরূহ
৩১. আবু ক্বাতাদাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন পেশাব করার সময় ডান হাতে তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে। যখন পায়খানায় যাবে, ডান হাতে যেন [ঢিলা ব্যবহার] শৌচ না করে। আর পানি পান করার সময় যেন এক নিঃশ্বাসে পান না করে।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩২. হারিসাহ ইবনি ওয়াহ্ব আল-খুযাঈ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
`তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] এর স্ত্রী হাফসাহ [রাঃআ:] আমাকে বলেছেনঃ নবি [সাঃআ:] খাদ্য গ্রহণ, পানীয় পান ও পোশাক পরিধানের কাজ ডান হাতে করিতেন। এছাড়া অন্যান্য কাজ বাম হাতে করিতেন।`
পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩৩. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর ডান হাত ছিল পবিত্রতা অর্জন ও খাদ্য গ্রহণের জন্য। আর তাহাঁর বাম হাত ছিল শৌচ ও অন্যান্য নিকৃষ্ট বা কষ্টদায়ক কাজের জন্য।
পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩৪. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] সূত্রে পুর্বোক্ত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত আছে।
এ অনুচ্ছেদের হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। এক নিঃশ্বাসে পানি পান করা ও পানির পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলা নিষেধ। এ নিষেধাজ্ঞা আদবমূলক। কেননা এভাবে পানি পানে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। যেমনঃ দম আটকিয়ে যাওয়া, পাকস্থলি ভারী হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। ২। ডান হাতে লজ্জাস্থানসহ পেশাব-পায়খানার মত ঘৃনার বস্তু স্পর্শ করা অপছন্দনীয়। এসব কাজ বাম হাতে করাই উত্তম। ৩। যাবতীয় ভাল কাজ ডান হাতে করা উত্তম। যেমনঃ পানাহার, বস্ত্র পরিধান ইত্যাদি। হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
অনুচ্ছেদ-১৯ঃ পেশাব-পায়খানার সময় পর্দা করা
৩৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেন, কেউ সুরমা লাগালে বেজোড় সংখ্যায় লাগাবে। এরূপ করলে ভাল, না করলে কোন ক্ষতি নেই। ঢিলা ব্যবহার করলে বেজোড় সংখ্যায় করিবে। এরূপ করলে ভাল, না করলে কোন সমস্যা নেই। খাওয়ার পর খিলাল করলে যদি কিছু বের হয় তা ফেলে দিবে, আর জিহবার সাথে কিছু লেগে থাকলে তা গিলে ফেলবে। এরূপ করলে ভাল, না করলে কোন অসুবিধা নেই। পায়খানায় গেলে আড়ালে চলে যাবে। এরূপ জায়গা না পাওয়া গেলে অন্তত বালুর স্তুপ তৈরী করে তার আড়ালে বসবে। কারণ শয়তান মানুষের লজ্জাস্থান নিয়ে খেলা করে। এরূপ করলে ভাল, না করলে কোন গুনাহ নেই। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবু সাঈদ আল খায়র নবি [সাঃআ:] এর অন্যতম সহাবী।
দূর্বলঃ জঈফ আল-জামিউস সাগীর ৫৪৬৮, মিশকাত ৩৫২। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-২০ঃ যে সমস্ত জিনিস দ্বারা ইস্তিনজা করা নিষেধ
৩৬. শায়বান আল-ক্বিতবানী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ2
তিনি বলেন, মাসলামাহ্ ইবনি মুখাল্লাদ রুওয়াইফি ইবনি সাবিতকে নিম্নভূমিতে কর্মচারী করেছিলেন। শায়বান বলেন, আমরা তাহাঁর সাথে কুমি শারীক থেকে আলক্বামা পর্যন্ত অথবা আলক্বামা থেকে কুমি শারীক [মিসরের কয়েকটি স্থান] পর্যন্ত সফর করেছি। আলক্বামা ছিল তাহাঁর গন্তব্যস্থল। রুওয়াইফি বলেন, রসুলূল্লাহ [সাঃআ:] এর যুগে আমাদের মধ্যকার একজন অপরজনের নিকট হতে এই শর্তে উট গ্রহণ করত যে, জিহাদে যা গনিমত লাভ হইবে তার অর্ধেক তোমার, আর অর্ধেক আমার। এতে করে একজনের ভাগে যদি তরবারীর খাপ ও তীরের পালক পড়ত, তখন আরেকজনের ভাগে পড়ত পালকবিহীন তীর। রুওয়াইফি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাকে বলেছেনঃ হে রুওয়াইফি! সম্ভবতঃ আমার পরেও তুমি দীর্ঘদিন জীবিত থাকিবে। তুমি লোকদের জানিয়ে দিওঃ যে ব্যক্তি দাড়িতে গিরা দিবে, ঘোড়ার গলায় মালা পরাবে অথবা প্রাণীর বিষ্ঠা বা হাড় দিয়ে ইস্তিনজা করিবে, মুহাম্মদ [সাঃআ:] তার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত।
পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩৭. আইয়াশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] শুয়াইম ইবনি বাইতামের মাধ্যমে আবু সালিম আল-জায়শানী সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
উক্ত হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি [সালিম] আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআ:]- কে এ হাদীস বর্ণনা করিতে শুনেছেন, যখন তিনি আলইউন দুর্গ অবরোধ করেছিলেন। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আলইউন দুর্গ [মিসরের] ফুসত্বাত্বে একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত।
পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩৮. আবুয যুবাইর হইতে বর্ণিতঃ
জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাদেরকে হাড্ডি অথবা [প্রাণীর] বিষ্ঠা দ্বারা ইস্তিন্জা করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
সহীহঃ মুসলিম। পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩৯. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জিনদের একটি প্রতিনিধি দল নবি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট এসে বলিল, হে মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]! আপনার উম্মাতকে হাড়, গোবর অথবা কয়লা দ্বারা ইস্তিন্জা করিতে নিষেধ করে দিন। কারণ মহান আল্লাহ ওগুলোর মধ্যে আমাদের রিযিক নিহিত রেখেছেন। অতঃপর নবি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ওগুলো দিয়ে ইস্তিন্জা করিতে নিষেধ করেন।
পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২১ঃ পাথর দ্বারা ইস্তিন্জা করা
৪০. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, তোমাদের কেউ পায়খানায় গেলে যেন তিনটি পাথর সাথে নিয়ে যায় এবং ওগুলো দ্বারা ইস্তিন্জা করে। কারণ তার জন্য তাই যথেষ্ঠ।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৪১. খুযায়মাহ ইবনি সাবিত [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে ইস্তিন্জা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তিনটি পাথর দ্বারা ইস্তিন্জা করিবে, যাতে গোবর থাকিবে না।
পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২২ঃ পেশাব- পায়খানার পর উযু করা
৪২. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] পেশাব করিলেন। সে সময় উমার [রাঃআ:] পানি ভর্তি একটি লোটা নিয়ে তাহাঁর পিছনে দাঁড়ালেন। তিনি বলিলেন, হে উমার! এ লোটা কেন? উমার [রাঃআ:] বলেন, আপনার উযুর পানি। তিনি বলিলেন, পেশাব করলেই উযু করিতে হইবে, আমাকে এরূপ নির্দেশ দেয়া হয়নি। আমি এরূপ করলে তা অবশ্যই [অবশ্য পালনীয়] সুন্নাত হয়ে যাবে। {৪২}
দুর্বলঃ মিশকাত ৩৬৮। {৪২} ইবনি মাজাহ [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ পেশাব করার পর উযু না করা, হাঃ৩২৭], আহমদ [৬/৯৫] আল্লামা হাইসামী এটিকে মাজমাউয যাওয়ায়িদ [১/২৪১] গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেনঃ “হাদীসটি আহমদ বর্ণনা করিয়াছেন। যা ইবনি আবু মুলায়কাহ কর্তৃক তার মাতার সূত্রের বর্ণনা; আমি তার জীবনী বর্ণনা করিতে কাউকে দেখিনি।” এছাড়া হাদীসটি আবু ইয়ালা বর্ণনা করিয়াছেন ইবনি আবু মুলায়কাহ হতে তার পিতা থেকে আয়িশাহ সূত্রে। এর সানাদে আবদুল্লাহ ইবনি ইয়াহইয়া আত-তাওয়ামকে হাফিয আত- তাকরীব গ্রন্থে দুর্বল বলেছেন। তাছাড়া আইয়ূব সাখতায়ানী এর বিপরীত সানাদ বর্ণনা করিয়াছেন। তার সানাদটি বোখারীর শর্তে সহিহ। আর সেটিও আবু দাউদ বর্ণনা করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-২৩ঃ পানি দিয়ে ইস্তিন্জা করা
৪৩. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] একটি বাগিচায় প্রবেশ করিলেন। তখন তাহাঁর সঙ্গে ছিল একটি বালক। বালকটির নিকট পানির বদনা ছিল এবং সেই ছিল আমাদের মধ্যকার সবচেয়ে কম বয়সী। সে বদনাটি গাছের নিকট রাখল। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] স্বীয় প্রয়োজন পূরণার্থে ঐ পানি দ্বারা ইস্তিন্জা করে আমাদের নিকট ফিরে আসলেন।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম, পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, এ আয়াত কুবাবাসীদের শানে নুযূল হয়েছিলঃ
فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا
“সেখানে এমন সব লোক রয়েছে যারা পাক-পবিত্র থাকতে ভালবাসে”- [সূরাহ তাওবাহ্ ১০৮]। কুবাবাসীরা পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করত। তাই তাহাদের শানে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল।
পেশাব পায়খানার সুন্নত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২৪ঃ যে ব্যক্তি ইস্তিন্জার পর মাটিতে হাত ঘষে
৪৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন পায়খানায় যেতেন আমি তখন লোটা কিংবা মশকে করে পানি নিয়ে আসতাম। তিনি ইস্তিন্জার পর মাটিতে হাত ঘষতেন। অতঃপর আমি অন্য একটি পাত্রে পানি নিয়ে আসতাম, যদ্দ্বারা তিনি উযু করিতেন।
হাসান। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আসওয়াদ ইবনি আমরের হাদীসটি অধিকতর পূর্ণাঙ্গ। নাসায়ী [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা,হাঃ৫০/৫১], আহমদ [২/৩১১]। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
Leave a Reply