পুণ্যের পথ, মুজাহাদাহ ও শুভকাজে প্রতিযোগিতা

পুণ্যের পথ, মুজাহাদাহ ও শুভকাজে প্রতিযোগিতা

পুণ্যের পথ, মুজাহাদাহ ও শুভকাজে প্রতিযোগিতা >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর কয়েকটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

পুণ্যের পথ, মুজাহাদাহ ও শুভকাজে প্রতিযোগিতা

পরিচ্ছেদ -১০ঃ শুভকাজে প্রতিযোগিতা ও শীঘ্র করা
পরিচ্ছেদ -১১ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান
পরিচ্ছেদ -১২ঃ শেষ বয়সে অধিক পরিমাণে পুণ্য করা
পরিচ্ছেদ -১৩ঃ পুণ্যের পথ অনেক।

পরিচ্ছদঃ ১০: শুভকাজে প্রতিযোগিতা ও শীঘ্র করা এবং পুণ্যকামীকে পুণ্যের প্রতি তৎপরতার সাথে নির্দ্বিধায় সম্পাদন করতে উৎসাহিত করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ فَٱسۡتَبِقُواْ ٱلۡخَيۡرَٰتِۚ ﴾ [البقرة: ١٤٨]

অর্থাৎ এতএব তোমরা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা কর। (সূরা বাক্বারাহ ১৪৮ আয়াত)

তিনি আরো বলেছেন,

﴿ ۞وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ﴾ [ال عمران: ١٣٣]

অর্থাৎ “তোমরা প্রতিযোগিতা (ত্বরা) কর, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে ক্ষমা এবং বেহেশ্তের জন্য, যার প্রস্থ আকাশ ও পৃথিবীর সমান, যা ধর্মভীরুদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।” <صلى الله عليه وسلمm>(সূরা আলে ইমরান ১৩৩ আয়াত)

এ বিষয়ে হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ-

৮৮. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন তোমরা অন্ধকার রাতের টুকরো সমূহের মত (যা একটার পর একটা আসতে থাকে এমন) ফিতনাসমূহ আসার পূর্বে নেকীর কাজ দ্রুত করে ফেল। মানুষ সে সময়ে সকালে মু’মিন থাকবে এবং সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে অথবা সন্ধ্যায় মু’মিন থাকবে এবং সকালে কাফের হয়ে যাবে। নিজের দ্বীনকে দুনিয়ার সম্পদের বিনিময়ে বিক্রয় করিবে।[১]

[১] মুসলিম ১১৮, তিরমিজী ২১৯৫, আহমাদ ৭৯৭০, ৮৬৩১, ৮৮২৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৮৯. আবু সিরওয়াআহ উক্ববাহ ইবনু হারেস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি নবী সাঃআঃ-এর পিছনে মদ্বীনায় আসরের নামায পড়লাম। অতঃপর সালাম ফিরে তিনি অতি শীঘ্র দাঁড়িয়ে পড়লেন। তারপর লোকদের গর্দান টপকে তাঁর কোন এক স্ত্রীর কামরায় চলে গেলেন। লোকেরা তাঁর শীঘ্রতা দেখে ঘাবড়ে গেল। অতঃপর তিনি বের হয়ে এলেন; দেখলেন লোকেরা তাঁর শীঘ্রতার কারণে আশ্চর্যান্বিত হয়েছে। তিনি বললেন, ‘‘(নামাযে) আমার মনে পড়ল যে, (বাড়ীতে সোনা অথবা চাঁদির) একটি টুকরা রয়ে গেছে। আমি চাইলাম না যে, তা আমাকে আল্লাহর স্মরণে বাধা দেবে। যার জন্য আমি (দ্রুত বাড়ীতে গিয়ে) তা বণ্টন করার আদেশ দিলাম।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমি বাড়ীতে সাদকার একটি স্বর্ণখণ্ড ছেড়ে এসেছিলাম। অতঃপর আমি তা রাতে নিজ গৃহে রাখা পছন্দ করলাম না।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৮৫১, ১২২১, ১৪৩০, ৬২৭৫, নাসাঈ ১৩৬৫, আহমাদ ১৫৭১৮, ১৮৯৩৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৯০. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

, উহুদ যুদ্ধের দিন এক সাহাবী নবী সাঃআঃ-কে বললেন, ‘আপনি বলুন! আমি যদি (কাফেরদের হাতে) মারা যাই, তাহলে আমি কোথায় যাব?’ তিনি বললেন, ‘‘জান্নাতে।’’ এ কথা শোনামাত্র তিনি তাঁর হাতের খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। তারপর (কাফেরদের সাথে) যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করলেন।[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪০৪৬, মুসলিম ১৮৯৯, নাসাঈ ৩১৫৪, আহমাদ ১৩৯০২, মুওয়াত্তা মালেক ১০১৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৯১. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, এক ব্যক্তি নবী সাঃআঃ-এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ সাদকাহ নেকীর দিক দিয়ে বড়?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার সে সময়ের সাদকাহ করা (বৃহত্তম নেকীর কাজ) যখন তুমি সুস্থ থাকবে, মালের লোভ অন্তরে থাকবে, তুমি দরিদ্রতার ভয় করিবে এবং ধন-দৌলতের আশা রাখবে। আর তুমি সাদকাহ করতে বিলম্ব করো না। পরিশেষে যখন তোমার প্রাণ কণ্ঠাগত হবে, তখন বলবে, ‘অমুকের জন্য এত, অমুকের জন্য এত। অথচ তা অমুকের (উত্তরাধিকারীর) হয়েই গেছে।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪১৯, ২৮৪৮, মুসলিম ১০৩২, নাসাঈ ২৫৪২, ৩৬১১ আবু দাঊদ ২৮৬৫, আহমাদ ৭১১৯, ৭৩৫৯, ৭১১৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৯২. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

উহুদের দিন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ একখানি তরবারি হাতে নিয়ে বললেন, ‘আমার কাছ থেকে এই তরবারি কে নেবে?’ সাহাবীগণ নিজ নিজ হাত বাড়িয়ে দিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রত্যেকেই বলতে লাগলেন, ‘আমি, আমি।’ তিনি বললেন, ‘‘কে এর হক আদায়ের জন্য নেবে?’’ (এ কথা শুনে) সবাই থমকে গেলেন। অতঃপর আবু দুজানা রাঃআঃ বললেন, ‘আমি এর হক আদায়ের জন্য নেব।’ তারপর তিনি তা নিয়ে নিলেন এবং তার দ্বারা মুশরিকদের শিরোচ্ছেদ করতে থাকলেন।[১]

[১] মুসলিম ২৪৭০, আহমাদ ১১৮২৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৯৩. যুবাইর ইবনু আদী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমরা আনাস ইবনু মালেক রাঃআঃ-এর নিকটে এলাম এবং তাঁর কাছে হাজ্জাজের অত্যাচারের অভিযোগ করলাম। তিনি বললেন, ‘তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। কারণ, এখন যে যুগ আসবে তার পরবর্তী যুগ ওর চেয়ে খারাপ হবে, শেষ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবে।’ (আনাস রাঃআঃ বলেন,) ‘এ কথা আমি তোমাদের নবী সাঃআঃ এর কাছে শুনেছি।’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৭০৬৮, তিরমিজী ২২০৬, আহমাদ ১১৯৩৮, ১২৪০৬, ১২৪২৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৯৪. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ সাতটি জিনিসের পূর্বেই তোমরা জলদি সব কর্ম করে ফেল। তোমরা কি অপেক্ষায় থাকবে যে, এমন দারিদ্র এসে যাক ইসলামের আদেশ পালন হইতে যা বিস্মৃত রাখে? অথবা এমন ধন-দৌলত হোক যা ইসলাম দ্রোহিতার দিকে ধাবিত করে? অথবা এমন ব্যাধি হোক যা শরীরকে দুর্বল করে দেয়? অথবা এমন বার্ধক্য আসুক যা জ্ঞান বিনষ্ট করে? অথবা হঠাৎ মরণ এসে যাক, অদৃশ্য দুই দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ঘটুক অথবা কিয়ামাত এসে যাক? আর কিয়ামাত তো নিতান্তই বিভীষিকাময় ও তিক্ত।[১]

হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস 

৯৫. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ খায়বারের দিন বললেন, ‘‘নিশ্চয় আমি, এই পতাকা এমন এক ব্যক্তিকে দেব যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। আল্লাহ তা‘আলা তার হাতে বিজয় দান করিবেন।’’ উমার রাঃআঃ বলেন, ‘আমি কখনো কর্তৃত্বভার গ্রহণের ইচ্ছা করিনি (কিন্তু সেদিনই আমার বাসনা হল)। সুতরাং আমি এই আশাতে উঠে উঁচু হয়ে দাঁড়াতে থাকলাম; যেন আমাকে এর জন্য ডাকা হয়।’ অবশেষে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আলী ইবনু আবী তালেব রাঃআঃ-কে ডাকলেন। তারপর তিনি তাঁর হাতে পতাকা তুলে দিয়ে বললেন, ‘‘তুমি চলতে শুরু কর এবং কোন দিকে তাকাবে না; যে পর্যন্ত না আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে বিজয় দান করিবেন।’’

অতঃপর আলী কিছু দূর গিয়ে থেমে গেলেন এবং কোন দিকে না তাকিয়ে উঁচু আওয়াজে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কিসের জন্য লোকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি সে পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, যে পর্যন্ত তারা এ কথার সাক্ষ্য না দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া (কেউ সত্য) উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর রাসূল। যখন তারা এ কাজ করিবে তখন নিঃসন্দেহে তাদের জান ও মালকে তোমার হাত হইতে বাঁচিয়ে নেবে। কিন্তু তার অধিকারের সাথে (অর্থাৎ সে যদি কোন মুসলিমকে হত্যা করে, তাহলে প্রতিশোধ স্বরূপ তাকে হত্যা করা বৈধ হবে এবং সে যদি কারোর মাল ছিনিয়ে নেয় অথবা যাকাত না দেয়, তাহলে সে মাল তার কাছ থেকে আদায় করা জরুরী।) আর তাদের হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে।’’[১]

[১] মুসলিম ২৪০৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ১১: মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٦٩ ﴾ [العنكبوت: ٦٩]

অর্থাৎ “যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথসমূহে পরিচালিত করব। আর আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গেই থাকেন।” (সূরা আনকাবূত ৬৯ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেন,

﴿ وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩ ﴾ [الحجر: ٩٩]

অর্থাৎ “আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর।” (সূরা হিজর ৯৯ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿ وَٱذۡكُرِ ٱسۡمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلۡ إِلَيۡهِ تَبۡتِيلٗا ٨ ﴾ [المزمل: ٨]

অর্থাৎ “সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর এবং একনিষ্ঠভাবে তাতে মগ্ন হও।” (সূরা মুয্যাম্মিল ৮ আয়াত)

তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,

﴿ فَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٍ خَيۡرٗا يَرَهُۥ ٧ ﴾ [الزلزلة: ٧]

অর্থাৎ “সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে সে তা দেখতে পাবে।” (সূরা যিলযাল ৭ আয়াত)

তিনি আরো বলেছেন,

﴿ وَمَا تُقَدِّمُواْ لِأَنفُسِكُم مِّنۡ خَيۡرٖ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ هُوَ خَيۡرٗا وَأَعۡظَمَ أَجۡرٗاۚ ﴾ [المزمل: ٢٠]

অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্য ভাল যা কিছু অগ্রিম প্রেরণ করিবে তোমরা তা আল্লাহর নিকট উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসাবে মহত্তর পাবে।” (সূরা মুযযাম্মিল ২০ আয়াত)

তিনি আরো বলেছেন,

﴿ وَمَا تُنفِقُواْ مِنۡ خَيۡرٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٌ ﴾ [البقرة: ٢٧٣]

অর্থাৎ “আর তোমরা যা কিছু ধন-সম্পদ দান কর, আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।” (সূরা বাক্বারাহ ২৭৩ আয়াত)

এ বিষয়ে সুবিদিত আয়াত অনেক রয়েছে। উক্ত মর্মের হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ

৯৬. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুর সাথে শত্রুতা করিবে, তার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধের ঘোষণা রইল। আমার বান্দা যে সমস্ত জিনিস দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম জিনিস হল তা—যা আমি তার উপর ফরয করেছি। (অর্থাৎ ফরয ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করা আমার নিকটে বেশী পছন্দনীয়।)

আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসতে লাগি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার ঐ কান হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শোনে, তার ঐ চোখ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে, তার ঐ হাত হয়ে যাই, যার দ্বারা সে ধরে এবং তার ঐ পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে! আর সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি তাকে দই এবং সে যদি আমার আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দিই।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৫০২.হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৯৭. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ তাঁর মহান প্রভু হইতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যখন বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যখন সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় তখন আমি তার দিকে দু’হাত অগ্রসর হই। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে তখন আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৭৫৩৬, ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫২৭, মুসলিম ২৬৭৫, তিরমিজী ২৩৮৮, ৩৬০৩, ইবনু মাজাহ ৩৮২২, আহমাদ ৭৩৭৪, ২৭৪০৯, ৮৪৩৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৯৮. ইবনু আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘এমন দুটি নিয়ামত আছে, বহু মানুষ সে দু’টির ব্যাপারে ধোঁকায় আছে। (তা হল) সুস্থতা ও অবসর।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪১২, তিরমিজী ২৩০৪, ইবনু মাজাহ ৪১৭০, আহমাদ ২৩৩৬, ৩১৯৭, দারেমী ২৭০৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৯৯. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ রাতে (এত দীর্ঘ) কিয়াম করতেন যে, তাঁর পা দুখানি (ফুলে) ফেটে (দাগ পড়ে) যেত। একদা আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এরূপ কাজ কেন করছেন? আল্লাহ তো আপনার আগের ও পিছের সমস্ত পাপ মোচন করে দিয়েছেন।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি কি তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হইতে পছন্দ করব না?’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৮৩৭, ১১১৮, ১১১৯, ১১৪৮, ১১৬১, ১১৬২, ১১৬৮, মুসলিম ৭৩১, ২৮২০, তিরমিজী ৪১৮, নাসাঈ ১৬৪৮, ১৬৪৯, ১৬৫০, আবু দাঊদ ১২৬২, ১২৬৩, ১৬৪৯, ১৬৫০, ইবনু মাজাহ ১২২৬, ১২২৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০০. মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ হইতে বর্ণিতঃ

বুখারী-মুসলিমে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (দেখুন হাদীস নম্বর – ৯৯)

হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০১. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ হইতে বর্ণিতঃ

‘যখন (রমযানের শেষ) দশক শুরু হত, তখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ রাত জাগতেন, নিজ পরিবারকে জাগাতেন, (ইবাদতে) খুবই চেষ্টা করতেন এবং (এর জন্য) তিনি কোমর বেঁধে নিতেন।’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২০২৪, মুসলিম ১১৭৪, তিরমিজী ৭৯৬, নাসাঈ ১৬৩৯, আবু দাঊদ ১৩৭৬, ইবনু মাজাহ ১৭৬৮, আহমাদ ২৩৬১১, ১২৩৮৫৬, ২৩৮৬৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০২. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

(দেহমনে) সবল মু’মিন আল্লাহর নিকট দুর্বল মু’মিন অপেক্ষা বেশী প্রিয়। আর প্রত্যেকের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। তুমি ঐ জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর ও উৎসাহহীন হয়ো না। যদি তোমার কিছু ক্ষতি হয়, তাহলে এ কথা বলো না যে, ‘যদি আমি এ রকম করতাম, তাহলে এ রকম হত।’ বরং বলো, ‘আল্লাহর (লিখিত) ভাগ্য এবং তিনি যা চেয়েছেন তাই করিয়াছেন।’ কারণ, ‘যদি’ (শব্দ) শয়তানের কাজের দুয়ার খুলে দেয়।[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৬৬৪, ইবনু মাজাহ ৭৯, ৪১৬৮, আহমাদ ৮৫৭৩, ৮৬১১. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৩. বু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘জাহান্নামকে মনোলোভা জিনিসসমূহ দ্বারা ঘিরে দেওয়া হয়েছে এবং জান্নাতকে ঘিরে দেওয়া হয়েছে কষ্টসাধ্য কর্মসমূহ দ্বারা।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪৮৭, তিরমিজী ২৫৬০, নাসাঈ ৩৭৬৩, আবু দাঊদ ৪৭৪৪, আহমাদ ৭৪৭৭, ২৭৫১২, ৮৬৪৪, ৮৭২১. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৪. আবু আব্দুল্লাহ হুযাইফা ইবনু ইয়ামান রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি এক রাতে নবী সাঃআঃ এর সঙ্গে নামায পড়লাম। তিনি সূরা বাক্বারাহ পড়তে আরম্ভ করলেন। অতঃপর আমি মনে মনে) বললাম যে, ‘তিনি একশো আয়াত পড়ে রুকুতে যাবেন।’ কিন্তু তিনি (তা না ক’রে) ক্বিরাআত করতে থাকলেন। তারপর আমি (মনে মনে) বললাম যে, ‘তিনি এই সূরা এক রাকাআতে সম্পন্ন করিবেন; এটি পড়ে রুকূ করিবেন।’ কিন্তু তিনি (সূরা) নিসা আরম্ভ করলেন। তিনি তা সম্পূর্ণ পড়লেন। তারপর তিনি (সূরা) আলে ইমরান শুরু করলেন। সেটিও সম্পূর্ণ পড়লেন। (এত দীর্ঘ ক্বিরাআত সত্ত্বেও) তিনি ধীর শান্তভাবে থেমে থেমে পড়ছিলেন।

যখন কোন এমন আয়াত এসে যেত, যাতে তাসবীহ (আল্লাহর পবিত্রতার বর্ণনা) আছে, তখন তিনি (ক্বিরাআত বন্ধ করে) তাসবীহ (অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ) পড়তেন। আর যখন প্রার্থনা সম্বলিত আয়াত এসে যেত, তখন প্রার্থনা করতেন। যখন আশ্রয় চাওয়ার আয়াত আসত, তখন আশ্রয় চাইতেন। অতঃপর তিনি রুকূ করলেন; তাতে তিনি বলতে লাগলেন, ‘সুবহানা রাব্বিয়াল ‘আযীম।’ সুতরাং তাঁর রুকুও তাঁর কিয়ামের (দাড়ানোর) মত দীর্ঘ হয়ে গেল! অতঃপর তিনি ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বললেন ও (রুকু হইতে উঠে) প্রায় রুকু সম দীর্ঘ কিয়াম করলেন। অতঃপর তিনি সাজদাহ করলেন এবং (সাজদায়) তিনি ‘সুবহানা রাবিবয়াল আ’লা’ (দীর্ঘ সময় ধরে) পড়লেন ফলে তাঁর সাজদাহ তাঁর কিয়ামের সমান হয়ে গেল![১]

[১] মুসলিম ৭৭২, তিরমিজী ২৬২, নাসাঈ ১০০৮, ১০০৯, ১০৪৬, ১০৬৯, ১১৩৩, ১১৪৫, আবু দাঊদ ৮৭১, ৮৭৪, ইবনু মাজাহ ৮৮৮, ৮৯৭, ১০৫১, আহমাদ ২২৭২৯, ২২৭৫০, ২২৭৮৯, দারেমী ১৩০৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৫. ইবনু মাসউদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

‘আমি এক রাতে নবী সাঃআঃ-এর সঙ্গে নামায পড়লাম। অতঃপর তিনি দীর্ঘ কিয়াম করলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমি খারাপ কাজের ইচ্ছা করলাম।’ তাঁকে প্রশ্ন করা হল যে, ‘আপনি কি ইচ্ছা করেছিলেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, আমি বসে যাই এবং (তাঁর অনুসরণ) ছেড়ে দই।’[1

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১১৩৫, মুসলিম ৭৭৩, ইবনু মাজাহ ১৪১৮, ১৩৩৮, ৩৭৫৭, ৩৯২৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৬. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির সঙ্গে যায়ঃ তার আত্মীয়-স্বজন, তার মাল ও তার আমল। অতঃপর দু’টি জিনিস ফিরে আসে এবং একটি জিনিস রয়ে যায়। তার আত্মীয়স্বজন ও তার মাল ফিরে আসে এবং তার আমল (তার সঙ্গে) রয়ে যায়।[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৫১৪, মুসলিম ২৯৬০, তিরমিজী ২৩৭৯, নাসাঈ ১৯৩৭, আহমাদ ১১৬৭০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৭. ইবনু মাসউদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘জান্নাত তোমাদের জুতোর ফিতার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী এবং জাহান্নামও তদ্রূপ।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪৮৮, আহমাদ ৩৫৮, ৩৯১৩, ৪২০৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৮. আবু ফিরাস রাবীআহ ইবনু কা‘ব আসলামী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সঙ্গে রাত কাটাতাম। আমি তাঁর কাছে ওযূর পানি এবং প্রয়োজনীয় বস্তু এনে দিতাম। (একদিন তিনি খুশী হয়ে) বললেন, ‘‘তুমি আমার কাছে কিছু চাও।’’ আমি বললাম, ‘আমি আপনার কাছে জান্নাতে আপনার সাহচর্য চাই।’ তিনি বললেন, ‘‘এ ছাড়া আর কিছু?’’ আমি বললাম, ‘বাস্ ওটাই।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তুমি, অধিকাধিক সিজদা করে (অর্থাৎ প্রচুর নফল নামায পড়ে) তোমার (এ আশা পূরণের) জন্য আমাকে সাহায্য কর।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৮৯, তিরমিজী ৩৪১৬, নাসাঈ ১১৩৮, ১৬১৮, আবু দাঊদ ১৩২০, ইবনু মাজাহ ৩৮৭৯, আহমাদ ১৬১৩৮. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৯. সাওবান রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘‘তুমি অধিকাধিক সাজদাহ করাকে অভ্যাস বানিয়ে নাও। কারণ, তুমি যে কোন সাজদাহ করিবে, আল্লাহ তা‘আলা তার দ্বারায় তোমাকে মর্যাদায় এক ধাপ উঁচু করে দেবেন এবং তোমা থেকে একটি গোনাহ মিটিয়ে দেবেন।’’[১]

[১] মুসলিম ৪৮৮, তিরমিজী ৩৮৮, নাসাঈ ১১৩৯, ইবনু মাজাহ ১৪২৩, আহমাদ ২১৮৬৫, ২১৯০৫, ২১৯৩৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১১০. আবু সাফওয়ান আব্দুল্লাহ ইবনু বুসর আসলামী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘সর্বোত্তম মানুষ সেই ব্যক্তি যার বয়স দীর্ঘ হয় এবং আমল সুন্দর হয়।’’[১]

[১] তিরমিজী ২৩২৯, আহমাদ ১৭২২৭, ১৭২৪৫, (তিরমিজী, হাসান) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

১১১. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আমার চাচা আনাস ইবনু নাদর বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। (যার জন্য তিনি খুবই দুঃখিত হয়েছিলেন।) অতঃপর তিনি একবার বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! প্রথম যে যুদ্ধ আপনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে করলেন তাতে আমি অনুপস্থিত থাকলাম। যদি (এরপর) আল্লাহ আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হাজির হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন, তাহলে আমি কী করব আল্লাহ তা অবশ্যই দেখাবেন (অথবা দেখবেন)।’ অতঃপর যখন উহুদের দিন এল, তখন মুসলিমরা (শুরুতে) ঘাঁটি ছেড়ে দেওয়ার কারণে পরাজিত হলেন। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! এরা অর্থাৎ সঙ্গীরা যা করল তার জন্য আমি তোমার নিকট ওযর পেশ করছি। আর ওরা অর্থাৎ মুশরিকরা যা করল, তা থেকে আমি তোমার কাছে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছি।’

অতঃপর তিনি আগে বাড়লেন এবং সামনে সা‘দ ইবনু মু‘আযকে পেলেন। তিনি বললেন, ‘হে সা‘দ ইবনু মু‘আয! জান্নাত! কা‘বার প্রভুর কসম! আমি উহুদ অপেক্ষা নিকটতর জায়গা হইতে তার সুগন্ধ পাচ্ছি।’ (এই বলে তিনি শত্রুদের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করলেন।) সা‘দ বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে যা করল, আমি তা পারলাম না।’ আনাস রাঃআঃ বলেন, ‘আমরা তাঁর দেহে আশীর চেয়ে বেশি তরবারি, বর্শা বা তীরের আঘাত চিহ্ন পেলাম। আর আমরা তাকে এই অবস্থায় পেলাম যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং মুশরিকরা তাঁর নাক-কান কেটে নিয়েছে। ফলে কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি। কেবল তাঁর বোন তাঁকে তাঁর আঙ্গুলের পাব দেখে চিনেছিল।’ আনাস রাঃআঃ বলেন যে, আমরা ধারণা করতাম যে, (সূরা আহযাবের ২৩নং) এই আয়াত তাঁর ও তাঁর মত লোকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।

‘‘মু’মিনদের মধ্যে কিছু আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূরণ করেছে, ওদের কেউ কেউ নিজ কর্তব্য পূর্ণরূপে সমাধা করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। ওরা তাদের লক্ষ্য পরিবর্তন করেনি।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮০৫, ২৭০৩, ৪০৪৮, ৪৪৯৯, ৪৫০০, ৪৬১১, ৪৭৮৩, ৬৮৯৪, মুসলিম ১৯০৩, নাসাঈ ৪৭৫৫, ৪৭৫৬, ৪৭৫৭, আবু দাঊদ ৪৫৯৫, ইবনু মাজাহ ২৬৪৯, আহমাদ ১১৮৯৩, ১২২৯৩, ১২৬০৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১১২. আবু মাসউদ উক্ববাহ ইবনু ‘আমর আনসারী বাদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

যখন সাদকার আয়াত অবতীর্ণ হল, তখন (সাদকা করার জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে) আমরা নিজের পিঠে বোঝা বহন করতাম (অর্থাৎ মুটে-মজুরের কাজ করতাম)। অতঃপর এক ব্যক্তি এল এবং প্রচুর জিনিস সাদকাহ করল। মুনাফিকরা বলল, ‘এই ব্যক্তি রিয়াকার (লোককে দেখানোর জন্য দান করছে।)’ আর এক ব্যক্তি এল এবং সে এক সা’ (আড়াই কিলো) জিনিস দান করল। তারা বলল, ‘এ (ক্ষুদ্র) এক সা’ দানের আল্লাহ মুখাপেক্ষী নন।’ অতঃপর এই আয়াত অবতীর্ণ হলঃ ‘‘বিশ্বাসীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যারা সাদকা দান করে এবং যারা নিজ পরিশ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে এবং উপহাস করে, আল্লাহ তাদেরকে উপহাস করেন এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪১৫, ১৪১৬, ২২৭৩, ৪৬৬৮, ৪৬৬৯, মুসলিম ১০১৮, নাসাঈ ২৫২৯, ২৫৩০, ইবনু মাজাহ ৪১৫৫, (সূরা তাওবাহ ৭৯, বুখারী-মুসলিম). হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১১৩. আবু যার্র জুন্দুব ইবনু জুনাদাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ তাঁর সুমহান প্রভু হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি (আল্লাহ) বলেন, ‘‘হে আমার বান্দারা! আমি অত্যাচারকে আমার নিজের জন্য হারাম করে দিয়েছি এবং আমি তা তোমাদের মাঝেও হারাম করলাম। সুতরাং তোমরাও একে অপরের প্রতি অত্যাচার করো না। হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট; কিন্তু সে নয় যাকে আমি সঠিক পথ দেখিয়েছি। অতএব তোমরা আমার নিকট সঠিক পথ চাও আমি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত; কিন্তু সে নয় যাকে আমি খাবার দিই। সুতরাং তোমরা আমার কাছে খাবার চাও, আমি তোমাদেরকে খাবার দেব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলেই বস্ত্রহীন; কিন্তু সে নয় যাকে আমি বস্ত্র দান করেছি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্রদান করব। হে আমার বান্দারা! তোমরা দিন-রাত পাপ করে থাক, আর আমি সমস্ত পাপ ক্ষমা করে থাকি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেব। হে আমার বান্দারা! তোমরা কখনো আমার অপকার করতে পারবে না এবং কখনো আমার উপকারও করতে পারবে না।

হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ মানুষ ও জ্বিন সকলেই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় একজন পরহেযগার ব্যক্তির হৃদয়ের মত হৃদয়বান হয়ে যায়, তাহলে এটা আমার রাজত্বের কোন কিছু বৃদ্ধি করতে পারবে না। হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ মানুষ ও জ্বিন সকলেই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় একজন পাপীর হৃদয়ের মত হৃদয়ের অধিকারী হয়ে যায়, তাহলে এটা আমার রাজত্বের কোন কিছুই কমাতে পারবে না। হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ তোমাদের মানুষ ও জ্বিন সকলেই একটি খোলা ময়দানে একত্রিত হয়ে আমার কাছে প্রার্থনা করে, আর আমি তাদের প্রত্যেককে তার প্রার্থিত জিনিস দান করি, তাহলে (এ দান) আমার কাছে যে ভান্ডার আছে, তা হইতে ততটাই কম করতে পারবে, যতটা সূঁচ কোন সমুদ্রে ডুবালে তার পানি কমিয়ে থাকে। হে আমার বান্দারা! আমি তোমাদের কর্মসমূহ তোমাদের জন্য গুণে রাখছি। অতঃপর আমি তোমাদেরকে তার পূর্ণ বিনিময় দেব। সুতরাং যে কল্যাণ পাবে, সে আল্লাহর প্রশংসা করুক। আর যে ব্যক্তি অন্য কিছু (অর্থাৎ অকল্যাণ) পাবে, সে যেন নিজেকেই তিরস্কার করে।’’

(হাদীসের একজন বর্ণনাকারী) সাঈদ বলেন, আবু ইদরীস (এই হাদীসের অন্য একজন বর্ণনাকারী) যখন এই হাদীস বর্ণনা করতেন, তখন হাঁটু গেড়ে বসে যেতেন।[১]

[১] মুসলিম ২৫৭৭, ২৪৯৫, ইবনু মাজাহ ৪২৫৭, আহমাদ ২০৮৬০, ২০৯১১, ২১০৩০, দারেমী ২৭৮৮. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ১২ -শেষ বয়সে অধিক পরিমাণে পুণ্য করার প্রতি উৎসাহ দান

আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন বলবেন,

﴿ أَوَ لَمۡ نُعَمِّرۡكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ ٱلنَّذِيرُۖ ﴾ [فاطر: ٣٧]

অর্থাৎ “আমি কি তোমাদেরকে এতো দীর্ঘ জীবন দান করিনি যে, তখন কেউ উপদেশ গ্রহণ করতে চাইলে উপদেশ গ্রহণ করতে পারত? তোমাদের নিকট তো সতর্ককারীও এসেছিল।” (সূরা ফাত্বির ৩৭ আয়াত)

ইবনু আব্বাস ও সত্যানুসন্ধানী আলেমগণ বলেন, আয়াতের অর্থ এই যে, আমরা কি তোমাদেরকে ৬০ বছর বয়স দিইনি? পরবর্তী হাদীসটি এই অর্থের কথা সমর্থন করে। কেউ বলেন যে, এর অর্থ ১৮ বছর। আর কিছু লোক ৪০ বছর বলেন। এটি হাসান (বাসরী) কালবী ও মাসরুকের মত। বরং এ কথা ইবনু আব্বাস থেকেও বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা বলেন যে, যখন কোনো মদ্বীনাবাসী চল্লিশ বছর বয়সে পদার্পণ করেন, তখন তিনি নিজেকে ইবাদতের জন্য মুক্ত করেন। কিছু লোক এর অর্থ পরিণত বয়স করিয়াছেন। আর আল্লাহর বাণীতে উক্ত ‘সতর্ককারী’ বলতে ইবনু আব্বাস রাঃআঃ ও বেশীরভাগ আলেমের মতে স্বয়ং নবী সাঃআঃ। কিছু লোকের নিকট সতর্ককারী হল বার্ধক্য। এটা ইকরিমাহ্, ইবনু ‘উয়াইনাহ ও অন্যান্যদের মত।

১১৪. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির জন্য কোন ওজর পেশ করার অবকাশ রাখেন না (অর্থাৎ ওজর গ্রহণ করিবেন না), যার মৃত্যুকে তিনি এত পিছিয়ে দিলেন যে, সে ৬০ বছর বয়সে পৌঁছল।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪১৯, আহমাদ ৭৬৫৬, ৮০৬৩, ৯১২৮। হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১১৫. ইবনু আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

উমার রাঃআঃ আমাকে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে (তাঁর সভায়) প্রবেশ করাতেন। তাঁদের মধ্যে কিছু লোক যেন মনে মনে ক্ষুণ্ণ হলেন। অতএব বললেন, ‘এ আমাদের সঙ্গে কেন প্রবেশ করছে? এর মত (সমবয়স্ক) ছেলে তো আমাদেরও আছে।’ (এ কথা শুনে) উমার রাঃআঃ বললেন, ‘এ কে, তা তোমরা জান।’ সুতরাং তিনি একদিন আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে তাঁদের সঙ্গে (সভায়) প্রবেশ করালেন। আমার ধারণা ছিল যে, এদিন আমাকে ডাকার উদ্দেশ্য হল, তাদেরকে আমার মর্যাদা দেখানো। তিনি (পরীক্ষাস্বরূপ সভার লোককে) বললেন, ‘তোমরা আল্লাহর এই কথা ‘‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় উপস্থিত হবে।’’ (সূরা নাসর: ১ আয়াত) এর ব্যাখ্যার ব্যাপারে কী বলছ?’ কিছু লোক বললেন, ‘আমাদেরকে এতে আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, যখন আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য ও বিজয় দান করিবেন, তখন যেন আমরা তাঁর প্রশংসা করি ও তাঁর কাছে ক্ষমা চাই।’ আর কিছু লোক নিরুত্তর থাকলেন; তাঁরা কিছুই বললেন না।

(ইবনু আব্বাস রাঃআঃ বলেন,) অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, ‘হে ইবনু আব্বাস! তুমিও কি এ কথাই বলছ?’ আমি বললাম, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি (এর ব্যাখ্যা) কী বলছ?’ আমি বললাম, ‘তা হল আল্লাহর রাসূল সাঃআঃ-এর মৃত্যু সংবাদ, যা আল্লাহ তাঁকে জানিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় সমাগত হবে।’’ আর সেটা হল তোমার মৃত্যুর পূর্বলক্ষণ। ‘‘তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা কর ও তাঁর কাছে সবীয় ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই তিনি তওবা গ্রহণকারী।’’ (সূরা নাসর: ৩ আয়াত) অতঃপর উমার রাঃআঃ বললেন, এর অর্থ আমি তাই জানি, যা তুমি বললে।[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৯৭০, ৩৬২৭, ৪২৯৪, ৪৪৩০, ৪৯৬৯, তিরমিজী ৩৩৬২, আহমাদ ৩১১৭, ৩৩৪৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১১৬. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ হইতে বর্ণিতঃ

‘ইযা জা-আ নাসরুল্লাহি অলফাত্হ’ অবতীর্ণ হওয়ার পর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ প্রত্যেক নামাযে অবশ্যই এই (দো‘আ) পড়তেন

‏ سبحانك ربنا وبحمدك، اللهم اغفر لي‏

‘সুবহানাকা রাব্বানা অবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলী’ (অর্থাৎ হে আমাদের প্রভু! আমরা তোমার প্রশংসায় তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা কর। (বুখারী ও মুসলিম)

সহীহায়নের তাঁর অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁর রুকু ও সাজদায় অধিকাধিক ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা রাববানা অবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলী’ পড়তেন। তিনি কুরআনের হুকুম তামিল করতেন। অর্থাৎ এই দো‘আ পড়ে তিনি কুরআনে বর্ণিত ‘‘(হে নবী) তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও।’’ আল্লাহর এই আদেশ পালন করতেন।

মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁর মৃত্যুর পূর্বে অধিক পরিমাণে (এই দো‘আ) পড়তেন, ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা অবিহামদিকা আস্তাগফিরুকা অআতূবু ইলায়ক।’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এই শব্দগুলো কী, যেগুলোকে আমি আপনাকে নতুন করে পড়তে দেখছি?’ তিনি বললেন, ‘‘আমার জন্য আমার উম্মতের মধ্যে একটি চিহ্ন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, যখন আমি তা দেখব তখন এটি পড়ব। (চিহ্নটি হল) ‘ইযা জা-আ নাসরুল্লাহি ওয়াল-ফাতহ—- শেষ সূরা পর্যন্ত।’’

মুসলিমের আর একটি বর্ণনায় আছে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ

سبحان الله وبحمده، أستغفر الله وأتوب إليه‏

‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, আস্তাগফিরুল্লাহা অআতূবু ইলাইহ’ (দো‘আটি) বেশী বেশী পড়তেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে বেশী বেশী ‘‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, আস্তাগফিরুল্লাহা অআতূবু ইলাইহ’’ (দো‘আটি) পড়তে দেখছি (কী ব্যাপার)?’ তিনি বললেন, ‘‘আমার প্রভু আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আমি শীঘ্রই আমার উম্মতের মধ্যে একটি চিহ্ন দেখব। সুতরাং আমি যখন তা দেখব, তখন ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, আস্তাগফিরুল্লাহা অআতূবু ইলাইহ’ (দো‘আটি) বেশী বেশী পড়ব।

এখন আমি তা দেখে নিয়েছি, ‘ইযা জা-আ নাসরুল্লাহি অলফাত্হ।’ যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়। অর্থাৎ মক্কাবিজয়। আর তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং তাঁর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তওবা গ্রহণকারী। [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৯৬৭, ৭৯৪, ৮১৭, ৪২৯৩, ৪৯৬৮, মুসলিম ৪৮৪, নাসাঈ ১০৪৭, ১১২২, ১১২৩, আবু দাঊদ ৮৭৭, ৮৮৯, আহমাদ ২৩৫৪৩, ২৩৬৪৩, ২৩৭০৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১১৭. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর মৃত্যুর পূর্বে (পূর্বাপেক্ষা) বেশী অহী নিরবচ্ছিন্নভাবে অবতীর্ণ করিয়াছেন।[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৯৮২, মুসলিম ৩০১৬, আহমাদ ১৩০৬৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১১৮. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, (কিয়ামতের দিন) প্রত্যেক ব্যক্তিকে ঐ অবস্থায় উঠানো হবে, যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে।[১]

[১] মুসলিম ২৮৭৮, আহমাদ ১৪১৩৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ১৩ – পুণ্যের পথ অনেক

১১৯. আবু যার্র জুনদুব ইবনু জুনাদা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল সাঃআঃ কোন্ আমল সর্বোত্তম?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ও তাঁর পথে জিহাদ করা।’’ আমি বললাম, ‘কোন্ গোলাম (কৃতদাস) স্বাধীন করা সর্বোত্তম?’ তিনি বললেন, ‘‘যে তার মালিকের দৃষ্টিতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও অধিক মূল্যবান।’’ আমি বললাম, ‘যদি আমি এ সব (কাজ) করতে না পারি।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কোন কারিগরের সহযোগিতা করিবে অথবা অকর্মন্যের কাজ করে দেবে।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন, যদি আমি (এর) কিছু কাজে অক্ষম হই (তাহলে কি করব)?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি মানুষের উপর থেকে তোমার মন্দকে নিবৃত্ত কর। তাহলে তা হবে তোমার পক্ষ থেকে তোমার নিজের জন্য সাদকাহস্বরূপ।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৫১৮, মুসলিম ৮৪, নাসাঈ ৩১২৯, ইবনু মাজাহ ২৫২৩, আহমাদ ২০৮২৪, ২০৯৩৮, ২০৯৮৯, দারেমী ২৭৩৮. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১২০. আবু যার্র রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের প্রত্যেক (হাড়ের) জোড়ের পক্ষ থেকে প্রাত্যহিক (প্রদেয়) সাদকাহ রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর (আল্লাহু আকবার বলা) সাদকাহ এবং ভাল কাজের আদেশ প্রদান ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ। এ সব কাজের পরিবর্তে চাশতের দু’রাক্আত নামায যথেষ্ট হবে।’’[১]

[১] মুসলিম ৭২০, আবু দাঊদ ১২৮৫ / ১২৮৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১২১. আবু যার্র রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘আমার উম্মতের ভালমন্দ কর্ম আমার কাছে পেশ করা হল। সুতরাং আমি তাদের ভাল কাজের মধ্যে ঐ কষ্টদায়ক জিনিসও পেলাম, যা রাস্তা থেকে সরানো হয়। আর তাদের মন্দ কর্মসমূহের তালিকায় মসজিদে ঐ কফও পেলাম, যার উপর মাটি চাপা দেওয়া হয়নি।’’[১]

[১] মুসলিম ৫৫৩, ইবনু মাজাহ ৩৬৮৩, আহমাদ ২১০৩৯, ২১০৫৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১২২. উক্ত বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

কিছু সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! ধনীরাই তো বেশী নেকীর অধিকারী হয়ে গেল। তারা নামায পড়ছে যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা রোযা রাখছে যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজ এই করছে যে,) নিজেদের প্রয়োজন-অতিরিক্ত মাল থেকে তারা সাদকাহ করছে।’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সাদকাহ করার মত জিনিস দান করেননি?

নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবীহ সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল সাদকাহ, ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া সাদকাহ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ এবং তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সাদকাহ।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন করে নিজের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে, তবে এতেও কি তার পুণ্য হবে?’ তিনি বললেন, ‘‘কি রায় তোমাদের, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ হবে? (নিশ্চয় হবে।) অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কামক্ষুধা নিবারণ করে, তাহলে তাতে তার পুণ্য হবে।’’[১]

[১] মুসলিম ১০০৬, আবু দাঊদ ১৫০৪, ইবনু মাজাহ ৯২৭, আহমাদ ২০৯১৭, ২০৯৫৮, ২১০৩৮. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১২৩. আবু যার্র রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, নবী সাঃআঃ আমাকে বললেন, ‘‘তুমি পুণ্যের কোনো কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তুমি তোমার (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে পার।’’ (অর্থাৎ হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও পুণ্যের কাজ)।[১]

[১] মুসলিম ২৬২৬, তিরমিজী ১৮৩৩, ইবনু মাজাহ ৩৩৬২, দারেমী ২০৭৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১২৪. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন যাতে সূর্য উদয় হয় (অর্থাৎ প্রত্যেক দিন) মানুষের প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় একটি করে সাদকাহ রয়েছে। (আর সাদকাহ শুধু মাল খরচ করাকেই বলে না; বরং) দু’জন মানুষের মধ্যে তোমার মীগোশতা করে দেওয়াটাও সাদকাহ, কোন মানুষকে নিজ সওয়ারীর উপর বসানো অথবা তার উপর তার সামান উঠিয়ে নিয়ে সাহায্য করাও সাদকাহ, ভাল কথা বলা সাদকাহ, নামাযের জন্য কৃত প্রত্যেক পদক্ষেপ সাদকাহ এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূরীভূত করাও সাদকাহ।’’

এটিকে ইমাম মুসলিম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকেও বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আদম সন্তানের মধ্যে প্রত্যেক মানুষকে ৩৬০ গ্রন্থির উপর সৃষ্টি করা হয়েছে। (আর প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় সাদকা রয়েছে।) সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ বলল, ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষ চলার রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা অথবা হাড় সরাল, কিম্বা ভাল কাজের আদেশ করল অথবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল, (এবং সব মিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যকর্ম করল), সে ঐদিন এমন অবস্থায় সন্ধ্যা করল যে, সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূর করে নিল।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৯৮৯, ২৭০৭, ২৮৯১, মুসলিম ৯০০৯ আহমাদ ২৭৪০০, ৮১৫৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১২৫. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সকাল অথবা সন্ধ্যায় মসজিদে যায়, তার জন্য আল্লাহ মেহমানীর উপকরণ প্রস্তুত করেন। সকাল বা সন্ধা যখনই সে সেখানে যায়, তখনই তার জন্য ঐ মেহমানীর উপকরণ প্রস্তুত করা হয়।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৬২, মুসলিম ৪৬৭, ৬৬৯, আহমাদ ১০২৩০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১২৬. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘হে মুসলিম নারীগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন প্রতিবেশিনীর (উপঢৌকনকে) অবশ্যই তুচ্ছ না ভাবে। যদিও তা ছাগলের খুর হয়।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০১৭, ২৫৬৬, মুসলিম ১০৩০, তিরমিজী ২১৩০, আহমাদ ৭৫৩৭, ৮০০৫, ৯২৯৭, ১০০২৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১২৭. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘ঈমানের সত্তর অথবা ষাটের বেশী শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম (শাখা) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা এবং সর্বনিম্ন (শাখা) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস (পাথর কাঁটা ইত্যাদি) দূরীভূত করা। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৯, মুসলিম ৩৫, তিরমিজী ২৬১৪, নাসাঈ ৫০০৪, ৫০০৫, ৫০০৬, আবু দাঊদ ৪৬৭৬, ইবনু মাজাহ ৫৭, আহমাদ ৯০৯৭, ৯৪১৭, ৯৪৫৫, ১০১৩৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১২৮. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘একদা এক ব্যক্তি পথ চলছিল। তাকে খুবই পিপাসা লাগল। অতঃপর সে একটি কূপ পেল। সুতরাং সে তাতে নেমে পানি পান করল। অতঃপর বের হয়ে দেখতে পেল যে, (ওখানেই) একটি কুকুর পিপাসার জ্বালায় জিভ বের করে হাঁপাচ্ছে ও কাদা চাটছে। লোকটি (মনে মনে) বলল, ‘পিপাসার তাড়নায় আমি যে পর্যায়ে পৌঁছেছিলাম, কুকুরটিও সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ অতএব সে কূপে নামল তারপর তার চামড়ার মোজায় পানি ভর্তি করল। অতঃপর সে তা মুখে ধরে উপরে উঠল এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তা‘আলা তার এই আমলকে কবুল করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’’

সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! চতুষ্পদ জন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শনেও কি আমাদের সওয়াব হবে?’ তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যেক জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শনে নেকী রয়েছে।’’

বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা তার এই আমলকে কবুল করলেন। অতঃপর তাকে ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করালেন।’’

বুখারী-মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘কোন এক সময় একটি কুকুর একটি কূপের চারিপাশে ঘোরা-ফিরা করছিল। পিপাসা তাকে মৃতপ্রায় করে তুলেছিল। (এই অবস্থায়) হঠাৎ বনী ঈস্রাঈলের বেশ্যাদের মধ্যে এক বেশ্যা তাকে দেখতে পেল। অতঃপর সে তার চামড়ার মোজা খুলে তা হইতে (কূপ থেকে) পানি উঠিয়ে তাকে পান করাল। সুতরাং এই আমলের কারণে তাকে ক্ষমা করা হল।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৩৬৩, ১৭৪, ২৪৬৬, ৬০০৯, মুসলিম ২২৪৪, আবু দাঊদ ২৫৫০, আহমাদ ৮৬৫৭, ১০৩২১, ১০৩৭৩, মুওয়াত্তা মালেক ১৭২৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১২৯. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতে ঘোরাফেরা করতে দেখলাম। যে (পৃথিবীতে) রাস্তার মধ্য হইতে একটি গাছ কেটে সরিয়ে দিয়েছিল, যেটি মুসলিমদেরকে কষ্ট দিচ্ছিল।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৫৪, ৭২১, ৬১৫, ২৪৭২, ২৬৮৯, ২৮২৯, ৫৭৩৩, মুসলিম ৪৩৭, ৪৩৯, ১৯১৪, তিরমিজী ২২৫, ১০৬৩, ১৯৫৮, নাসাঈ ৫৪০, ৬৭১, আবু দাঊদ ৫২৪৫, ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ৭১৮৫, ৭৬৮০, ৭৭৮২, ১৫১, ২৯৫ .হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩০. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযূ করল, অতঃপর জুমআহ পড়তে এল এবং মনোযোগ সহকারে নীরব থেকে খুতবাহ শুনল, সে ব্যক্তির এই জুমআহ ও (আগামী) জুমআর মধ্যেকার এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের (ছোট) পাপসমূহ মাফ করে দেওয়া হল। আর যে ব্যক্তি (খুৎবাহ্ চলাকালীন সময়ে) কাঁকর স্পর্শ করল, সে অনর্থক কর্ম করল।’’ (অর্থাৎ সে জুমআর সওয়াব বরবাদ করে দিল।)[১]

[১] মুসলিম ৫৮৭, তিরমিজী ৪৯৮, আবু দাঊদ ১০৫০,ইবনু মাজাহ ১০১০, আহমাদ ৯২০০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩১. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল সাঃআঃ বলেন, ‘‘মুসলিম বা মু’মিন বান্দা যখন ওযূর উদ্দেশ্যে তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন ওযূর পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে প্রত্যেক সেই গোনাহ বের হয়ে যায়, যা সে দুই চক্ষুর দৃষ্টির মাধ্যমে করে ফেলেছিল। অতঃপর যখন সে তার হাত দু’টিকে ধৌত করে, তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে প্রত্যেক সেই গোনাহ বের হয়ে যায়, যা সে উভয় হাত দ্বারা ধারণ করার মাধ্যমে করে ফেলেছিল। অতঃপর যখন সে তার পা দুটিকে ধৌত করে, তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে প্রত্যেক সেই গোনাহ বের হয়ে, যা সে তার দু’পায়ে চলার মাধ্যমে করে ফেলেছিল। শেষ অবধি সমস্ত গোনাহ থেকে সে পবিত্র হয়ে বের হয়ে আসে।’’[১]

[১] মুসলিম ২৪৪, তিরমিজী ২, আহমাদ ৭৯৬০,মুওয়াত্তা মালেক ৭১৮, দারেমী ৬৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩২. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমআহ থেকে আর এক জুমআহ এবং এক রমযান থেকে আর এক রমযান, এগুলো এর মধ্যকার (সংঘটিত সাগীরা) গোনাহ মুছে ফেলে; যদি কাবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায় তাহলে (নতুবা নয়)।’’[১]

[১] মুসলিম ২৩৩, তিরমিজী ২১৪, ইবনু মাজাহ ১০৮৬, আহমাদ ৭০৮৯, ৮৪৯৮, ৮৯৪৪.হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৩. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজ বলে দেব না, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা পাপসমূহকে নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং মর্যাদা বর্ধন করেন?’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘অবশ্যই বলুন, হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘কষ্টের সময় পূর্ণরূপে ওযূ করা, মসজিদের দিকে বেশী বেশী পদক্ষেপ করা (অর্থাৎ দূর থেকে আসা) এবং এক নামাযের পর দ্বিতীয় নামাযের অপেক্ষা করা। সুতরাং এই হল (নেকী ও সওয়াবে) সীমান্ত পাহারা দেওয়ার মত।’’[১]

[১] মুসলিম ২৫১, তিরমিজী ৫২, নাসাঈ ১৪৩, আহমাদ ৭১৬৮, ৭৬৭২, ৭৯৩৫, ৭৯৬১. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৪. আবু মূসা আশআরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দুই ঠান্ডা (অর্থাৎ ফজর ও আসরের) নামায পড়বে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৭৪, মুসলিম ৬৩৫, আহমাদ ১৬২৮৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৫. আবু মূসা আশআরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘যখন বান্দা অসুস্থ হয় অথবা সফরে থাকে, তখন তার জন্য ঐ আমলের মতই (সওয়াব) লেখা হয়, যা সে গৃহে থেকে সুস্থ শরীরে সম্পাদন করত।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৯৯৬, আবু দাঊদ ৩০৯১, আহমাদ ১৯১৮০, ১৯২৫৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৬. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘প্রত্যেক নেকীর কাজ সাদকাহস্বরূপ।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০২১, তিরমিজী ১১৭০, আহমাদ ১৪২৯৯, ১৪৪৬৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৭. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘যে কোন মুসলিম কোন গাছ লাগায়, অতঃপর তা থেকে যতটা খাওয়া হয়, তা তার জন্য সাদকাহ হয়, তা থেকে যতটুকু চুরি হয়, তা তার জন্য সাদকাহ হয় এবং যে কোনো ব্যক্তি তার থেকে কিছু গ্রহণ করে, সেটাও তার জন্য সাদকাহ হয়ে যায়।’’[১]

[১] মুসলিম ১৫৫২, আহমাদ ১৩৮৫৯, ১৪৭৭৯, দারেমী ২৬১০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৮. হইতে বর্ণিতঃ

বুখারী-মুসলিম উভয়েই আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যাতে يَرْزَؤُهُ শব্দ আছে, যার অর্থ ‘কোনো কিছু কমিয়ে ফেলে’।[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৩২০, ৬০১২, মুসলিম ১৫৫২, তিরমিজী ১৩৮২, আহমাদ ১২০৮৬, ১২৫৮৭, ১২৯৭৬, ১৩১৪১. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৩৯. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

যে, বনু সালেমাহ মসজিদের নিকটে স্থান পরিবর্তন করার ইচ্ছা করল। অতঃপর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে এই সংবাদ পৌঁছল। সুতরাং তিনি তাদেরকে বললেন, ‘‘আমি খবর পেয়েছি যে, তোমরা স্থান পরিবর্তন করে মসজিদের নিকট আসার ইচ্ছা করছ?’’ তারা বলল, ‘হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এর ইচ্ছা করেছি।’ তিনি বললেন, ‘‘হে বনূ সালেমাহ! তোমরা তোমাদের (বর্তমান) গৃহেই থাকো; তোমাদের পদচিহ্নসমূহ লেখা হবে। তোমরা আপন গৃহেই থাকো; তোমাদের পদচিহ্নসমূহ লেখা হবে।’’ (মুসলিম) অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি হবে।’’[১]

[১] মুসলিম ৬৬৫, আহমাদ ১৪১৫৬, ১৪৫৭৪, ১৪৭৭২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৪০. ইমাম বুখারী (রহঃ) হইতে বর্ণিতঃ

ঐ মর্মে আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৫৬ .হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৪১. আবুল মুনযির উবাই ইবনু কা‘ব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, একটি লোক ছিল। আমি জানি না যে, অন্য কারো বাড়ি তার বাড়ির চেয়ে দূরে ছিল। তা সত্ত্বেও তার কোনো নামায ছুটত না। অতঃপর তাকে বলা হল অথবা আমি (কা’ব) তাকে বললাম যে, ‘তুমি যদি একটি গাধা কিনে আঁধারে ও ভীষণ রোদে তার উপর সওয়ার হয়ে আসতে, (তাহলে তা তোমার পক্ষে ভাল হত?)’ সে বলল, ‘আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমার বাড়ি মসজিদ সংলগ্নে হোক। কারণ আমি তো এই চাই যে, (দূর থেকে) আমার পায়ে হেঁটে মসজিদ যাওয়া এবং ওখান থেকেই পুনরায় বাড়ী ফিরা, সবকিছু যেন আমার নেকীর খাতায় লেখা যায়।’ রসুলুল্লাহ সাঃআঃ (তার কথা শুনে) বললেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা এ সমস্ত তোমার জন্য একত্র করে দিয়েছেন।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘নিশ্চয় তোমার জন্য সেই সওয়াবই রয়েছে, যার তুমি আশা করেছ।’’[১]

[১] মুসলিম ৬৬৩, আবু দাঊদ ৫৫৭, ইবনু মাজাহ ৭৮৩, আহমাদ ২০৭০৯, দারেমী ১২৮৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৪২. আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনু ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘চল্লিশটি সৎকর্ম আছে তার মধ্যে উচ্চতম হল, দুধ পানের জন্য (কোন দরিদ্রকে) ছাগল সাময়িকভাবে দান করা। যে কোনো আমলকারী এর মধ্য হইতে যে কোন একটি সৎকর্মের উপর প্রতিদানের আশা করে ও তার প্রতিশ্রুত পুরস্কারকে সত্য জেনে আমল করিবে, তাকে আল্লাহ তার বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৬৩১, ইবনু মাজাহ ১৬৮৩, আহমাদ ৬৪৫২, ৬৭৯২, ৬৮১৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৪৩. আদী ইবনু হাতেম রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি নবী সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়!’’ (বুখারী-মুসলিম)

উক্ত আদী হইতে বুখারী-মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তার প্রতিপালক কথা বলবেন; তার ও তাঁর মাঝে কোনো আনুবাদক থাকবে না। (সেখানে) সে তার ডানদিকে তাকাবে, সুতরাং সেদিকে তা-ই দেখতে পাবে যা সে অগ্রিম পাঠিয়েছিল এবং বামদিকে তাকাবে, সুতরাং সেদিকেও নিজের কৃতকর্ম দেখতে পাবে। আর সামনে তাকাবে, সুতরাং তার চেহারার সামনে জাহান্নাম দেখতে পাবে। অতএব তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়। আর যে ব্যক্তি এরও সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ভাল কথা বলে বাঁচে।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০২৩, ১৪১৩, ৩৫১৫, ৬৫৩৯, ৬৫৬৩, ৭৪৪৩, ৭৫২২, মুসলিম ১০১৬, নাসাঈ ২৫৫২, ২৫৫৩, আহমাদ ১৭৭৮২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৪৪. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ঐ বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে খাবার খায়, অতঃপর তার উপর আল্লাহর প্রশংসা করে অথবা পানি পান করে, অতঃপর তার উপর আল্লাহর প্রশংসা করে।’’[১]

[১] মুসলিম ২৭৩৪, তিরমিজী ১৮১৬, আহমাদ ১১৫৬২, ১১৭৫৮. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১৪৫. আবু মূসা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘প্রত্যেক মুসলিমর উপর সাদকাহ করা জরুরী।’’ আবু মূসা রাঃআঃ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যদি সে সাদকাহ করার মত কিছু না পায় তাহলে?’ তিনি বললেন, ‘‘সে তার হাত দ্বারা কাজ করে (অর্থ উপার্জন করিবে) অতঃপর তা থেকে সে নিজে উপকৃত হবে এবং সাদকাও করিবে।’’ পুনরায় আবু মূসা রাঃআঃ বললেন, ‘যদি সে তাও না পারে?’ তিনি বললেন, ‘‘যে কোন অভাবী বিপন্ন মানুষের সাহায্য করিবে।’’ আবু মূসা রাঃআঃ বললেন, ‘যদি সে তাও না পারে?’ তিনি বললেন, ‘‘সে মানুষকে ভাল কাজের নির্দেশ দেবে।’’ আবু মূসা রাঃআঃ বললেন, ‘যদি সে এটাও না পারে?’ তিনি বললেন, ‘‘সে (অপরের) ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ, সেটাও হল সাদকাহস্বরূপ।’’[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪৪৫, ৬০২২, মুসলিম ১০০৮, নাসাঈ ২৫৩৮, আহমাদ ১৯০৩৭, ১৯১৮৭, দারেমী ২৭৪৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

Comments

Leave a Reply