মুসলমান আত্মীয় ইয়াতীম সন্তান পিতা মাতা সম্পর্কে হাদিস

মুসলমান আত্মীয় ইয়াতীম সন্তান পিতা মাতা সম্পর্কে হাদিস

মুসলমান আত্মীয় ইয়াতীম সন্তান পিতা মাতা সম্পর্কে হাদিস >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ২৫, অনুচ্ছেদঃ (১-২২)=২২টি

১. অনুচ্ছেদঃ বাবা-মায়ের সাথে উত্তম আচরণ
২. অনুচ্ছেদঃ [ সবচাইতে উত্তম কাজ ]
৩. অনুচ্ছেদঃ বাবা-মায়ের সন্তুষ্টির ফযীলত
৪. অনুচ্ছেদঃ বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া কাবীরা গুনাহ
৫. অনুচ্ছেদঃ বাবার বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি সম্মান দেখানো
৬. অনুচ্ছেদঃ খালার সাথে উত্তম আচরণ করা
৭. অনুচ্ছেদঃ [সন্তানের প্রতি] বাবা-মায়ের দুআ
৮. অনুচ্ছেদঃ বাবা-মায়ের অধিকার
৯. অনুচ্ছেদঃ রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা
১০. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখা
১১. অনুচ্ছেদঃ সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা
১২. অনুচ্ছেদঃ সন্তানদের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ করা
১৩. অনুচ্ছেদঃ মেয়ে সন্তান ও বোনদের উদ্দেশ্যে খরচ করা
১৪. অনুচ্ছেদঃ ইয়াতীমের প্রতি দয়া প্রদর্শন এবং তার লালন-পালন
১৫. অনুচ্ছেদঃ শিশুদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করা।
১৬. অনুচ্ছেদঃ মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ করা
১৭. অনুচ্ছেদঃ উপদেশ দেয়া বা কল্যাণ কামনা
১৮. অনুচ্ছেদঃ মুসলমানের পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা পোষণ
১৯. অনুচ্ছেদঃ মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা
২০. অনুচ্ছেদঃ কোন মুসলমানের মানসম্মানের উপর আসন্ন আক্রমণ প্রতিহত করা
২১. অনুচ্ছেদঃ মুসলিম ভাইয়ের সাথে কথা-বার্তা ও মেলামেশা পরিত্যাগ করা নিষেধ
২২. অনুচ্ছেদঃ ভাইয়ের প্রতি সহানুভূতি দেখানো

১. অনুচ্ছেদঃ বাবা-মায়ের সাথে উত্তম আচরণ

১৮৯৭. বাহ্‌য ইবনি হাকীমের দাদা {মুআবিয়া ইবনি হাইদা [রাদি.]} হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ] ! কোন্‌ ব্যক্তির সাথে আমি উত্তম আচরণ করব? তিনি বললেনঃ তোমার মায়ের সাথে। আমি প্রশ্ন করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেনঃ তোমার মায়ের সাথে। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেনঃ তোমার মায়ের সাথে। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেনঃ তারপর তোমার বাবার সাথে, তারপর নিকটাত্মীয়তার ক্রমানুসারে উত্তম আচরণ করিবে।

হাসান, মিশকাত [৪৯২৯]। আবু হুরাইরা, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আইশা ও আবুদ দারদা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, বাহয ইবনি হাকীমের অপর নাম আবু মুআবিয়া ইবনি হাইদা। এ হাদীসটি হাসান। শুবা [রঃ] বাহ্‌য ইবনি হাকীমের সমালোচনা করিয়াছেন। কিন্তু হাদীস পারদর্শীদের মতে তিনি একজন সিকাহ বর্ণনাকারী। তার নিকট হইতে মামার, সুফিয়ান সাওরী, হাম্মাদ ইবনি সালামা প্রমুখ হাদীসের ঈমামগণ হাদীস বর্ননা করিয়াছেন। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২. অনুচ্ছেদঃ [ সবচাইতে উত্তম কাজ ]

১৮৯৮. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ] ! কোন্‌ কাজ সবচাইতে উত্তম? তিনি বললেনঃ নামাজ তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করা। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ] ! এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ বাবা-মায়ের সাথে উত্তম আচরণ করা। আমি আবারো প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ] ! তারপর কোন্‌টি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তাআলার পথে জিহাদ করা। এরপর আমাকে কিছু বলা হইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নীরব থাকেন। আমি তাঁকে আরো প্রশ্ন করলে নিশ্চয়ই আমাকে তিনি আরো জানাতেন।

সহীহ, সহীহা [১৪৮৯] , বুখারী, মুসলিম। আবু আমরের নাম সাদ ইবনি ইয়াস। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। এ হাদীসটি আল-ওয়ালীদ ইবনিল আইযার হইতে আশ-শাইবানী ও শুবা-সহ একাধিক বর্ণনাকারী বর্ণনা করিয়াছেন। আবু আমর আশ-শাইবানী-ইবনি মাউঊদ [রাদি.] হইতে একাধিকসূত্রে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩. অনুচ্ছেদঃ বাবা-মায়ের সন্তুষ্টির ফযীলত

১৮৯৯. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বাবার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি এবং বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ্ তাআলার অসন্তুষ্টি রয়েছে।

সহীহ, সহীহা [৫১৫]। উপরোক্ত হাদীসের মতো হাদীস মুহাম্মদ ইবনি বাশশার-মুহাম্মাদ ইবনি জাফর হইতে, তিনি শুবা হইতে, তিনি ইয়ালা ইবনি আতা হইতে, তিনি তার পিতা-আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে এই সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। এটাকে তিনি মারফু হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেননি এবং এটাই অনেক বেশি সহীহ। আবু ঈসা বলেন, এটিকে শুবার সঙ্গীগণ একইভাবে মাওকূফ হিসেবে শুবা হইতে, তিনি ইয়ালা ইবনি আতা হইতে, তিনি তার পিতা-আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। এটা শুবার সূত্রে মারফূ [রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী] হিসাবে শুধু খালিদ ইবনিল হারিস [রাদি.] বর্ণনা করিয়াছেন। খালিদ ইবনিল হারিস একজন সিকাহ ও বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী। মুহাম্মাদ ইবনিল মুসান্না বলেন, আমি বসরায় খালিদের সমতুল্য এবং কূফায় আবদুল্লাহ ইবনি ইদরীসের মতো যোগ্য কোন ব্যক্তিকে দেখিনি। আব্দুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীসটি বর্ণিত আছে। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯০০. আবুদ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, তার কাছে একজন লোক এসে বলিল, আমার এক স্ত্রী আছে। আমার মা আমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন তাকে তালাক দেয়ার জন্য। আবুদ দারদা [রাদি.] বলিলেন, রাসূলল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ জান্নাতের সর্বোত্তম দরজা হচ্ছে বাবা। তুমি ইচ্ছা করলে এটা ভেঙ্গে ফেলতে পার অথবা এর রক্ষণাবেক্ষণও করিতে পার।

সহিহ, সহীহা [৯১০] , মিশকাত, তাহকীক ছানী [৪৯২৮]। ইবনি আবী উমার বলেনঃ সুফিয়ান কখনো মায়ের কথা বলেছেন আবার কখনো বাবার কথা বলেছেন। এ হাদীসটি সহীহ। আবু আবদুর রাহমান আস-সুলামীর নাম আবদুল্লাহ ইবনি হাবীব। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪. অনুচ্ছেদঃ বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া কাবীরা গুনাহ

১৯০১. আবদুর রাহমান ইবনি আবী বাকরা [রাদি.] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [আবু বাকরা] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে সর্বাধিক কাবীরা গুনাহের ব্যাপারে জানিয়ে দিবো না? সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ] ! অবশ্যই জানিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ আল্লা্হ্‌ তাআলার সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করা এবং বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি সোজা হয়ে বসেন এবং বলেনঃ এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া ও মিথ্যা বলা। একথাটি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] অবিরতভাবে বলিতে থাকেন। আমরা [মনে মনে] বলিতে লাগলাম, আহা! তিনি যদি থামতেন, চুপ করিতেন!

সহিহ, গাইয়াতুল মারাম [২৭৭] , বুখারী, মুসলিম। আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু বাকরার নাম নুফাই, পিতা আল-হারিস। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯০২. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার বাবা-মাকে গালিগালাজ করা কাবীরা গুনাহ্। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ] ! কেউ কি তার মা-বাবাকে গালিগালাজ করিতে পারে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। কোন লোক অন্য কারো বাবাকে গালি দেয়। এর উত্তরে সেও তার বাবাকে গালি দেয়। সে অন্য কারো মাকে গালি দেয়। এর উত্তরে ঐ ব্যক্তিও তার মাকে গালি দেয়।

সহিহ, তালীকুর রাগীব [৩/২২১]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫. অনুচ্ছেদঃ বাবার বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি সম্মান দেখানো

১৯০৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ সর্বাধিক সাওয়াবের কাজ হচ্ছে বাবার বন্ধু-বান্ধবদের সাথেও সম্পর্ক বজায় রাখা।

সহিহ, যঈফা [২০৮৯] , মুসলিম। আবু উসাইদ [রাদি.] হইতেও অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসের সনদ সহিহ। এ হাদীসটি ইবনি উমার [রাদি.] হইতে অন্যান্য সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬. অনুচ্ছেদঃ খালার সাথে উত্তম আচরণ করা

১৯০৪. বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ খালা হলো মাতৃস্থানীয়।

সহিহ, ইরওয়া [২১৯০] , বুখারী, মুসলিম। এ হাদীসের সাথে একটি দীর্ঘ ঘটনা রয়েছে। এ হাদীসটি সহিহ। ইবনে উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট একজন লোক এসে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ] ! আমি একটি কাবীরা গুনাহ্ করে ফেলেছি। আমার তাওবাহ করার সুযোগ আছে কি? তিনি প্রশ্ন করেনঃ তোমার মা কি বেঁচে আছেন? সে বলিল, না। তিনি আবার প্রশ্ন করেনঃ তোমার খালা কি বেঁচে আছেন? সে বলিল, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তার সাথে উত্তম আচরণ কর। সহিহ, তালীকুর রাগীব [৩/২১৮]। আলী এবং বারাআ ইবনি আ-যিব [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস ইবনি আবী উমার-সুফিয়ান ইবনি উয়াইনা হইতে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনি সূকা হইতে, তিনি আবু বাক্‌র ইবনি হাফস হইতে এই সূত্রেও বর্ণিত আছে। এ সূত্রে ইবনি উমার [রাদি.]-এর কথা উল্লেখ নেই। এই সূত্রটি পূর্বোল্লেখিত মুআবিয়ার সুত্রের চাইতে অনেক বেশি সহিহ। আবু বাকর ইবনি হাফস হলেন ইবনি উমার ইবনি সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭. অনুচ্ছেদঃ [সন্তানের প্রতি] বাবা-মায়ের দুআ

১৯০৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিন প্রকারের দুআ অবশ্যই মঞ্জুর করা হয়, তাতে কোন রকম সন্দেহ নেই। নির্যাতিত ব্যক্তির দুআ, মুসাফিরের দুআ এবং সন্তানের প্র্রতি বাবার বদ-দুআ।

হাসান, ইবনি মা-জাহ [৩৮৬২]। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি ইয়াহ্ইয়া ইবনি আবী কাসীরের সূত্রে হাজ্জাজ আস-সাওয়াফ হিশামের রিওয়ায়াতের মতোই বর্ণনা করিয়াছেন। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে যে আবু জাফার হাদীসটি বর্ণনা করেন তিনি হলেন আবু জাফার আল-মআযযিন। তার নাম সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ। ইয়াহইয়া ইবনি আবী কাসীরও তার সূত্রে একাধিক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৮. অনুচ্ছেদঃ বাবা-মায়ের অধিকার

১৯০৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লা্ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ সন্তান কোন অবস্থাতেই তার বাবার সম্পূর্ণ অধিকার আদায়ে সক্ষম নয়। কিন্তু সে তার বাবাকে গোলাম অবস্থায় পেলে এবং তাকে কিনে মুক্ত করে দিলে তবে সামান্য অধিকার আদায় হয়।

সহিহ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩৬৫৯] , মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। আমরা এ হাদীস বিষয়ে শুধুমাত্র সুহাইল ইবনি আবু সালিহ-এর সূত্রেই জানতে পেরেছি। এ হাদীসটি সুহাইল ইবনি সালিহ-এর সূত্রে সুফিয়ান সাওরী ও একাধিক বর্ণনাকারী বর্ণনা করিয়াছেন। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯. অনুচ্ছেদঃ রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা

১৯০৭. আবু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবুর রাদ্দাদ [রাদি.] একবার অসুস্থ হলে তাঁকে আবদুর রাহমান ইবনি আওফ [রাদি.] দেখিতে আসেন। আবুর রাদ্দাদ [রাদি.] বলেন, আমার জানামতে সবচেয়ে উত্তম ও সর্বাধিক আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রক্ষাকারী ব্যক্তি হলেন আবু মুহাম্মাদ [আবদুর রাহমান]। আবদুর রাহমান [রাদি.] বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ পরিপূর্ণ কল্যাণ ও প্রাচুর্যের অধিকারী আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ আমিই আল্লাহ্‌ এবং আমিই রাহমান। আত্মীয়তার সম্পর্ককে আমিই সৃষ্টি করেছি এবং আমার নাম হইতে নির্গত করে এই নাম [রাহমান হইতে রেহেম] রেখেছি। যে ব্যক্তি এই সম্পর্ক বহাল রাখবে আমিও তার সাথে [রাহমাতের] সম্পর্ক বহাল রাখব। আর এই সম্পর্ক যে ব্যক্তি ছিন্ন করিবে আমিও তার হইতে [রাহমাতের] সম্পর্ক ছিন্ন করব”।

সহীহ, সহীহাহ্‌ [৫২০]।আবু সাঈদ, ইবনি আবী আওফা, আমির ইবনি রাবীআ, আবু হুরাইরা ও জুবাইর ইবনি মুতঈম [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, যুহরীর সূত্রে আবু সুফিয়ান কতৃক বর্ণিত হাদীসটি সহীহ। মামার এই হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন যুহ্‌রী হইতে, তিনি আবু সালামা হইতে, তিনি রাদ্দাদ আল লাইসী হইতে, তিনি আবদুর রাহমান ইবনি আওফ [রাদি.]-এর সূত্রে। মুহাম্মাদ বলেন, মামার বর্ণিত রিওয়ায়াতটিতে ভুল আছে। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখা

১৯০৮. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সমানুরুপ ব্যবহারের মনোভাব নিয়ে সম্পর্ক রক্ষাকারী আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী নয়, বরং কেউ কোন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক নষ্ট করলেও সে যদি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে তবে সে-ই হচ্ছে প্রকৃত সম্পর্ক স্থাপনকারী।

সহীহ, গাইয়াতুল মারাম [৪০৪] , সহীহ আবু দাঊদ [১৪৮৯] , বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সালমান, আইশা ও আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯০৯. মুহাম্মাদ ইবনি জুবাইর [রঃ] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [জুবাইর] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কর্তনকারী [আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী] জান্নাতে যেতে পারবে না।

সহীহ, গাইয়াতুল মারাম [৪০৮] , সহীহ আবু দাঊদ [১৪৮৮] , বুখারী, মুসলিম। ইবনি আবী উমার বলেন, সুফিয়ান বলেছেন, অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১. অনুচ্ছেদঃ সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা

১৯১০. উমার ইবনি আবদুল আযীয [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

খাওলা বিনতি হাকীম [রাদি.] একজন সৎকর্মশীলা মহিলা। তিনি বলেছেন, একদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর কন্যা ফাতিমা [রাদি.]–এর দুই ছেলের একজনকে কোলে করে বাহিরে এলেন। তখন তিনি বলেনঃ [সন্তানের মুহাব্বতে] তোমারাই কৃপণতা, কাপুরুষতা ও অজ্ঞতার কারণ হও। তোমরা হলে আল্লাহ্‌ তাআলার বাগানের সুগন্ধি ফুল।

যঈফ, যঈফা [৩২১৪]। এ অনুচ্ছেদে ইবনি উমার ও আশআস ইবনি কাইস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন , শুধু উল্লেখিত সনদসূত্রেই আমরা এ হাদীসটি জেনেছি। খাওলা বিনতি হাকীম [রাদি.] হইতে উমার ইবনি আবদুল আযীয [রঃ]  শুনেছেন বলে আমাদের জানা নেই। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১২. অনুচ্ছেদঃ সন্তানদের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ করা

১৯১১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আল-আকরা ইবনি হাবিস [রাদি.] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখলেন যে, তিনি হাসানকে চুমু খাচ্ছেন। ইবনি আবী উমার তার বর্ণনায় উল্লেখ করিয়াছেন যে, তিনি হাসান অথবা হুসাইনকে চুমু খেয়েছেন। আল-আকরা [রাদি.] বলেন, আমার দশটি সন্তান আছে কিন্তু আমি তাহাদের কাউকে কখনো চুমু দেইনি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি দয়া-অনুগ্রহ করে না সে দয়া-অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয় না।

সহীহ, তাখরীজ “মুশকিলাতুল ফাক্‌র” [১০৮] , বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, আনাস ও আইশা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু সালামার নাম আবদুল্লাহ, পিতা আবদুর রাহমান। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩. অনুচ্ছেদঃ মেয়ে সন্তান ও বোনদের উদ্দেশ্যে খরচ করা

১৯১২. আবু সাঈদ আল–খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যারই তিনটি মেয়ে অথবা তিনটি বোন আছে, সে তাহাদের সাথে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করলে জান্নাতে যাবে।

যঈফ, দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে আইশা, উকবা ইবনি আমীর আনাস, জাবির, ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু সাঈদ আল–খুদরী–এর নাম সাদ ইবনি মালিক ইবনি সিনান। সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.]–এর পিতা মালিক ইবনি উহাইব। কোন কোন রাবী এ সনদে একজন রাবীকে যোগ করিয়াছেন। [তিনি হলেন সাঈদ ইবনি আবদুর রহমান ও আবু সাঈদ [রাদি.]–এর মাঝখানে আইউব ইবনি বাশীর]। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৯১৩. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার মেয়ে সন্তানদের জন্য কোনরকম পরীক্ষার সম্মুখীন হয় [বিপদগ্রস্ত হয়] , সে তাহাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধরলে তার জন্য তারা জাহান্নাম হইতে আবরণ [প্রতিবন্ধক] হইবে।

সহীহ, বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯১৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক দুটি মেয়ে সন্তানকে লালান-পালন করিবে, আমি এবং সে এভাবে একসাথে পাশাপাশি জান্নাতে যাব। এই বলে তিনি নিজের হাতের দুটি আঙ্গুল একত্র করে ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন।

সহীহ, সহীহাহ্‌ [২৯৭] , মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই সূত্রে হাদীসটি হাসান গারীব। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯১৫. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একজন মহিলা তার দুই মেয়েসহ আমার নিকটে এল এবং আমার কাছে কিছু চাইল। কিন্তু একটি খেজুর ব্যতীত আমার নিকটে আর কিছুই ছিল না। আমি সেটিই তাকে দিলাম। সে খেজুরটিকে ভাগ করে তার দুই মেয়ের হাতে দিল এবং নিজে মোটেও খেল না। তারপর সে উঠে চলে গেল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘরে আসার পর আমি বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে লোক মেয়ে সন্তানদের নিয়ে এ ধরনের পরীক্ষার [বিপদের] সম্মুখীন হয়, তারা তার জন্য জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।

সহীহ, তালীকুর রাগীব [৩/৮৩] , মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এই সনদ সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনি উবাইদ মুহাম্মাদ ইবনি আব্দুল আযীয হইতে একাধিক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি তার বর্ণনায় বর্ণনাকারীর নাম আবু বাকর ইবনি উবাইদুল্লাহ ইবনি আনাস উল্লেখ করিয়াছেন। সঠিক হল উবাইদুল্লাহ ইবনি আবী বাকর ইবনি আনাস। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯১৬. আবু সাঈদ আল–খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যার তিনটি মেয়ে অথবা তিনটি বোন আছে, অথবা দুটি মেয়ে অথবা দুটি বোন আছে, সে তাহাদের প্রতি ভাল ব্যবহার করলে এবং তাহাদের [অধিকার] সম্পর্কে আল্লাহ্‌ তাআলাকে ভয় করলে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত আছে।

বর্ণিত শব্দে হাদীসটি যঈফ, সাহীহা [২৯৪]। আবু ঈসা বলেছেন হাদীসটি গারীব। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৪. অনুচ্ছেদঃ ইয়াতীমের প্রতি দয়া প্রদর্শন এবং তার লালন-পালন

১৯১৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি মুসলমানদের কোন ইয়াতীমকে এনে নিজের পানাহারে শরীক করলে আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন , যদি সে ক্ষমার অযোগ্য কোন গুনাহ না করে।

যঈফ, তালিকুর রাগীব [৩/২৩০], যঈফা [৫৩৪৫]। এ অনুচ্ছেদে মুররা আল-ফিহ্‌রী, আবু হুরাইরা, আবু উমামা, সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ হানাশের নাম হুসাইন ইবনি কাইস, উপনাম আবু আলী আর-রাহবী। সুলাইমান আত-তাইমী বলেছেন, হাদীস বিশারদদের মতে হানাশ হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৯১৮. সাহ্‌ল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি ও ইয়াতীমের তত্ত্বাবধানকারী এই দুই আঙ্গুলের অনুরুপ একসাথে জান্নাতে বসবাস করব। এই কথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দেখান।

সহিহ, সহীহাহ্ [৮০০] , বুখারী। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫. অনুচ্ছেদঃ শিশুদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করা।

১৯১৯. যারবী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ একজন বয়স্ক লোক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে আসে। লোকেরা তার জন্য পথ ছাড়তে বিলম্ব করে। [তা দেখে] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে লোক আমাদের শিশুদের আদর করে না এবং আমাদের বড়দের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

সহীহ, সহীহাহ্ [২১৯৬], আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আবু হুরাইরা, ইবনি আব্বাস ও আবু উমামা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আনাস [রাদি.] এবং অন্যান্য সাহাবী হইতেও যারবীর বেশ কিছু মুনকার হাদীস রয়েছে। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯২০. আমর ইবনি শুআইব [রঃ] হইতে পযার্য়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [দাদা] বলেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক আমাদের শিশুদের আদর করে না এবং আমাদের বড়দের সন্মানের প্রতি খেয়াল রাখে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

সহীহ, তালীকুর রাগীব [১/১৬] এ হাদীসটি হান্নাদ আবদাহ্ হইতে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাক হইতে এই সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে এবং তাতে রয়েছেঃ “বড়দের অধিকার জ্ঞান রাখে না”। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯২১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না বড়দের সম্মান করে না, সৎকাজের নির্দেশ দেয় না এবং অসৎ কাজে বাধা দেয় না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

যঈফ, মিশকাত [৪৯৭০], তালিকুর রাগীব [৩/১৭৩]। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমর ইবনি শুয়াইবের সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাকের হাদীসটি সাহীহ। আব্দুল্লাহ ইবনি আমর হইতেও হাদীসটি অন্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। একদল বিশেষজ্ঞ আলিম রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর বাণী লাইসা মিন্না-এর অর্থ বলেছেন, “আমাদের নিয়ম-নীতি ও শিষ্টাচারের অনুসারী নয়”। সুফিয়ান সাওরী লাইসা মিন্না–এর অর্থ লাইসা মিসলানা [আমাদের মত নয়] করা অস্বীকার করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, এর অর্থ হল- আমাদের দলভুক্ত নয়। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৬. অনুচ্ছেদঃ মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ করা

১৯২২. জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন করে না তাকে আল্লাহ্‌ তাআলাও দয়া করেন না।

সহীহ-তাখরীজু মুশকিলাতিল ফাকর [১০৮] , বুখারী, মুসলিম, আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। আবদুর রাহমান ইবনি আওফ, আবু সাঈদ, ইবনি উমার, আবু হুরাইরা ও আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯২৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবুল কাসিম রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ শুধুমাত্র হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর ও দুর্ভাগা মানুষের কাছ থেকেই রাহমাত ছিনিয়ে নেয়া হয়।

হাসান, মিশকাত তাহকীক ছানী [৪৯৬৮]। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে হাদীস বর্ণনাকারী আবু উসমানের নাম অজ্ঞাত। বর্ণিত আছে যে, তিনি মূসা ইবনি আবু উসমানের বাবা, যার নিকট হইতে আবুয যিনাদ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবুয যিনাদ [রঃ] মূসা ইবনি আবী উসমান হইতে, তিনি তার পিতা হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রে একাধিক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১৯২৪. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা দয়ালুদের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা যমীনে বসবাস করছে তাহাদের প্রতি তোমরা দয়া কর, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রাহমান হইতে উদগত। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ্‌ তাআলাও তার সাথে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ্‌ তাআলাও তার সাথে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

সহীহ, সহীহাহ্ [৯২২]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭. অনুচ্ছেদঃ উপদেশ দেয়া বা কল্যাণ কামনা

১৯২৫. জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে নামাজ বাস্তবায়ন, যাকাত আদায় এবং প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনার শপথ [বাইআত] করেছি।

সহীহ, বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯২৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ধর্ম হচ্ছে কল্যাণ কামনার নাম। একথাটি তিনি তিনবার বলিলেন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ] ! কার কল্যাণ কামনা করা? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌, তাহাঁর গ্রন্থের, মুসলমানদের নেতৃবর্গের এবং মুসলমান সবর্সাধারণের।

সহীহ, ইরওয়া [৯২৬] , গাইয়াতুল মারাম [৩৩২] , মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ইবনি উমার, তামীম আদ-দারী, জারীর, হাকীম ইবনি আবী ইয়াযীদ তার পিতার সূত্রে এবং সাওবান [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮. অনুচ্ছেদঃ মুসলমানের পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা পোষণ

১৯২৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। সে তার সাথে কোনরকম বিশ্বাসঘাতকতা করিবে না, তার প্রসঙ্গে মিথ্যা বলবে না, তাকে অপমান করিবে না। প্রত্যেক মুসলমানের মান-সম্মান, ধন-সম্পদ ও রক্তের [জীবনের] উপর হস্তক্ষেপ করা অপর মুসলমানের উপর হারাম। তাক্বওয়া এখানে [অন্তরে]। কেউ মন্দ বলে প্রমাণিত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার অপর মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে।

সহীহ, ইরওয়া [৮/৯৯-১০০], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব । আলী ও আবু আইইয়্যূব [রঃ] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে । সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯২৮. আবু মূসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ একজন মুমিন ব্যক্তি অন্য মুমিনের জন্য একটি সুদৃঢ় প্রাসাদস্বরূপ, যার একটি অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে।

সহীহ, মিশকাত [১০৪] , আল-ঈমান ইবনি আবী শাইবা [৯০] , বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯২৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ মুসলিম ভাইয়ের আয়নাস্বরূপ। অতএব সে যদি তার মধ্যে কোন দাগ [ত্রুটি] লক্ষ্য করে, তবে তা যেন দূর করে দেয়।

খুবই দুর্বল, যঈফা [১৮৮৯]। আবু ঈসা বলেনঃ শুবা [রঃ] ইয়াহইয়া ইবনি উবাইদুল্লাহকে হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল বলেছেন। এ অনুচ্ছেদে আনাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

১৯. অনুচ্ছেদঃ মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা

১৯৩০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক কোন মুসলমান লোকের দুনিয়াবী বিপদাপদের মধ্যে একটি বিপদও দূর করে দেয়, আল্লাহ্‌ তাআলা তার পরকালের বিপদাপদের কোন একটি বিপদ দূর করে নিবেন। যে লোক দুনিয়াতে অন্য কারো অভাব দূর করে দেয়, তার দুনিয়া ও আখিরাতের অসুবিধাগুলোকে আল্লাহ্‌ তাআলা সহজ করে দিবেন। যে লোক দুনিয়ায় কোন মুসলমানের দোষ-ক্রটিকে গোপন রাখে, আল্লাহ্‌ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ক্রটি গোপন রাখবেন। যে পর্যন্ত বান্দাহ তার ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকে, সে পর্যন্ত আল্লাহ্‌ তাআলাও তাহাঁর সাহায্য-সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [১২২৫] , মুসলিম। ইবনি উমার ও উকবা আমির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীসটি বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এ হাদীসের মতো হাদীস আবু আওয়ানা এবং বর্ণনাকারী আমাশ হইতে, তিনি আবু সালিহ হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তারা এই সনদে “হুদ্দিসতু আন আবী সালিহ” কথাটুকু উল্লেখ করেননি। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২০. অনুচ্ছেদঃ কোন মুসলমানের মানসম্মানের উপর আসন্ন আক্রমণ প্রতিহত করা

১৯৩১. আবুদ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক তার কোন ভাইয়ের মান-সম্মানের উপর আঘাত প্রতিরোধ করে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তাআলা তার মুখমন্ডল হইতে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন।

সহীহ, গাইয়াতুল মারাম [৪৩১]। আসমা বিনতু ইয়াযীদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীসটি বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২১. অনুচ্ছেদঃ মুসলিম ভাইয়ের সাথে কথা-বার্তা ও মেলামেশা পরিত্যাগ করা নিষেধ

১৯৩২. আবু আইয়্যূব আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তির জন্য তিনদিনের বেশি সময় ধরে তার ভাইয়ের সাথে কথা-বার্তা ও মেলামেশা ত্যাগ করা জায়িয নয়। তাহাদের দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, অথচ একজন এদিকে এবং অন্যজন আরেক দিকে মুখ সরিয়ে নেয়। তাহাদের দুজনের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম দেয় সে-ই উত্তম।

সহীহ, ইরওয়া [২০২৯] , বুখারী, মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ, আনাস, আবু হুরাইরা, হিশাম ইবনি আমির ও আবু হিন্‌দ আদ-দারী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২. অনুচ্ছেদঃ ভাইয়ের প্রতি সহানুভূতি দেখানো

১৯৩৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনি আওফ [রাদি.] মাদীনায় পৌছানোর পর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার এবং সাদ ইবনির রাবী [রাদি.]-এর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দেন। সাদ [রাদি.] তাকে বলিলেন, আসুন আমার সম্পদ উভয়ে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিই। আমার দুজন স্ত্রী আছে। আমি তাহাদের একজনকে তালাক দেই এবং সে তার ইদ্দাত পূর্ণ করলে আপনি তাকে বিয়ে করে ফেলুন। আবদুর রাহমান [রাদি.] বলিলেন, আপনাকে আপনার ধন-দৌলতে ও পরিবার-পরিজনে আল্লাহ্‌ তাআলা বারকাত দান করুন। আপনারা আমাকে বাজারের পথটি দেখিয়ে দিন। তারা তাকে বাজারের পথটি দেখিয়ে দিলেন। সেদিন বাজার হইতে তিনি লাভস্বরূপ কিছু পনির ও ঘি নিয়ে ফিরে আসেন। এরপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদিন তাহাঁর শরীরে হলুদ রং-এর চিহ্ন দেখে বলিলেন, কি ব্যাপার? তিনি বলিলেন, আমি একজন আনসার মহিলাকে বিয়ে করেছি। তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ মোহরানা হিসেবে কি দিয়েছ? তিনি বলিলেন, খেজুর বীচি [পরিমাণ স্বর্ণ]। হুমাইদ বলেনঃ অথবা তিনি বলিলেন, এক খেজুর বীচি পরিমাণ স্বর্ণ। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ বিবাহ ভোজের ব্যবস্থা কর তা একটি ছাগল দিয়ে হলেও।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [১৯০৭] , বুখারী, মুসলীম। তবে তাতে সাদ ও আব্দুর রাহমানের ঘটনার উল্লেখ নেই। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ঈমাম আহ্‌মাদ [রাহ] বলেন, একটি খেজুর বীচির সমপরিমাণ স্বর্ণের ওজন হচ্ছে সোয়া তিন দিরহাম। ঈমাম ইসহাক [রঃ] বলেন, একটি খেজুর বীচির সমপরিমাণ স্বর্ণের ওজন হচ্ছে পাঁচ দিরহাম। আমি এই তথ্যটি পেয়েছি ঈমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাক [রঃ] হইতে ইসহাক ইবনি মানসূরের মধ্যস্থতায়। সদ্ব্যবহার করা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply