পানি সেচ ,পানি পান ও জায়গীর দেওয়া সম্পর্কে

পানি সেচ ,পানি পান ও জায়গীর দেওয়া সম্পর্কে

পানি সেচ ,পানি পান ও জায়গীর দেওয়া সম্পর্কে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৪২, পানি সেচ, অধ্যায়ঃ (১-১৭)=১৭টি

৪২/১. অধ্যায়ঃ পানি পান সম্পর্কে।
৪২/০০. অধ্যায়ঃ পানি পান সম্পর্কে। ‎
৪২/২. অধ্যায়ঃ পানির মালিক পানি ব্যবহারের বেশী হকদার, তার জমি পরিসিঞ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ।
৪২/৩. অধ্যায়ঃ কেউ যদি নিজের জায়গায় কুয়া খনন করে (এবং তাতে যদি কেউ পড়ে মৃত্যু বরণ করে) তবে মালিক তার জন্য দোষী থাকবে না।
৪২/৪. অধ্যায়ঃ কুয়া নিয়ে ঝগড়া এবং এ ব্যাপারে মীমাংসা।
৪২/৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি মুসাফিরকে পানি দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তার গুনাহ ।
৪২/৬. অধ্যায়ঃ নদী-নালার পানি আটকানো।
৪২/৭ অধ্যায়ঃ নীচু ভুমির পূর্বে উঁচু ভূমিতে সেচ দেয়া।
৪২/৮. অধ্যায়ঃ উঁচু জমির মালিক পায়ের গিরা পর্যন্ত পানি নিয়ে নেবে।
৪২/৯. অধ্যায়ঃ পানি পান করানোর গুরুত্ব।
৪২/১০. অধ্যায়ঃ যাদের মতে চৌবাচ্চা ও মশ্‌কের মালিক পানির অধিক অধিকারী।
৪২/১১. অধ্যায়ঃ একমাত্র আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) ছাড়া অন্য কারো সংরক্ষিত চারণভূমি থাকতে পারেনা।
৪২/১২. অধ্যায়ঃ নহর (নদী-নালা খাল-বিল) হইতে মানুষ ও চতুষ্পদ জানোয়ারের পানি পান করা সম্পর্কে।
৪২/১৩. অধ্যায়ঃ শুকনো জ্বালানী কাঠ ও ঘাস বিক্রয় করা।
৪২/১৪. অধ্যায়ঃ জায়গীর দেওয়া।
৪২/১৫. অধ্যায়ঃ জায়গীর লিপিবদ্ধ করা।
৪২/১৬. অধ্যায়ঃ পানি পান করানোর স্থানে উট দোহন করা।
৪২/১৭. অধ্যায়ঃ খেজুরের বা অন্য কিছুর বাগানে কোন লোকের চলার রাস্তা কিংবা পানির কুয়া থাকা।

৪২/১. অধ্যায়ঃ পানি পান সম্পর্কে।

মহান আল্লাহর বাণীঃ “আর আমি প্রাণবান সবকিছু সৃষ্টি করলাম পানি হইতে, তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?” (আম্বিয়া ৩০)। আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করিয়াছেন, “তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে কি তোমরা চিন্তা করেছ? তোমরাই কি তা মেঘ হইতে নামিয়ে আন, না আমি তা বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছা করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?” (ওয়াক্বিয়াহ ৬৮-৭০)। কিছু লোকের মতে পানি খায়রাত করা ও ওসীয়াত করা জায়েয, তা বণ্টন করা হোক বা না হোক। ………….. লবণাক্ত ………….. মেঘ।

৪২/০০. অধ্যায়ঃ পানি পান সম্পর্কে। ‎

কতক লোক মত প্রকাশ করেন যে, পানি বণ্টিত হোক বা না হোক তা সদাকা, দান ও ওসীয়াত করা জায়িয। উসমান (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, রূমার কূপটি কে কিনবে? তারপর তাতে বালতি দ্বারা পানি তোলার অধিকার তার ততটুকু থাকবে, যতটুকু সাধারণ মুসলমানের থাকবে (অর্থাৎ কূপটি কিনে জনসাধারণের জন্য ওয়াক্‌ফ করে দিবে)। এ কথার পর উসমান (রাদি.) কূপটি কিনে নেন (এবং ওয়াক্‌ফ করে দেন)।

২৩৫১. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট একটি পেয়ালা আনা হল। তিনি তা হইতে পান করিলেন। তখন তাহাঁর ডান দিকে ছিল একজন বয়ঃকনিষ্ঠ বালক আর বয়স্ক লোকেরা ছিলেন তাহাঁর বাম দিকে। তিনি বলিলেন, হে বালক! তুমি কি আমাকে অবশিষ্ট (পানিটুকু) বয়স্কদেরকে দেয়ার অনুমতি দিবে? সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার নিকট থেকে ফযীলত পাওয়ার ব্যাপারে আমি আমার চেয়ে অন্য কাউকে প্রাধান্য দিব না। অতঃপর তিনি তা তাকে প্রদান করিলেন।

২৩৫২. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর জন্য একটি বকরীর দুধ দোহন করা হল। তখন তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-এর ঘরে অবস্থান করছিলেন এবং সেই দুধের সঙ্গে আনাস ইবনু মালিকের বাড়ীর কূয়ার পানি মেশানো হল। তারপর পাত্রটি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- কে দেয়া হল। তিনি তা হইতে পান করিলেন। পাত্রটি তাহাঁর মুখ হইতে আলাদা করার পর তিনি দেখলেন যে, তাহাঁর বাঁ দিকে আবু বক্‌র ও ডান দিকে একজন বেদুঈন রয়েছে। পাত্রটি তিনি হয়ত বেদুঈনকে দিয়ে দেবেন এ আশঙ্কায় উমার (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আবু বকর (রাদি.) আপনারই পাশে, তাঁকে পাত্রটি দিন। তিনি বেদুঈনকে পাত্রটি দিলেন, যে তাহাঁর ডান পাশে ছিল। অতঃপর তিনি বলিলেন, ডান দিকের লোক বেশী হক্বদার।

৪২/২. অধ্যায়ঃ পানির মালিক পানি ব্যবহারের বেশী হকদার, তার জমি পরিসিঞ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ।

কেননা, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করিতে যেন কাউকে নিষেধ করা না হয় ।

২৩৫৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, ঘাস উৎপাদন হইতে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি রুখে রাখা যাবে না।

২৩৫৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, অতিরিক্ত ঘাসে বাধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত পানি রুখে রাখবে না।

৪২/৩. অধ্যায়ঃ কেউ যদি নিজের জায়গায় কুয়া খনন করে (এবং তাতে যদি কেউ পড়ে মৃত্যু বরণ করে) তবে মালিক তার জন্য দোষী থাকবে না।

২৩৫৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, খনি ও কূপে কাজ করা অবস্থায় অথবা জন্তু-জানোয়ারের আঘাতে মারা গেলে ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে না এবং রিকায (খনিজ দ্রব্যে) পঞ্চমাংশ দিতে হইবে।

৪২/৪. অধ্যায়ঃ কুয়া নিয়ে ঝগড়া এবং এ ব্যাপারে মীমাংসা।

২৩৫৬. আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানদের অর্থ সম্পদ (যা তার জিম্মায় আছে) আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা কসম খায়, সে আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় মিলিত হইবে যে, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা নাযিল করেনঃ

‏إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً

“যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে —এর শেষ পর্যন্ত”- (আল ইমরানঃ ৭৭)। এরপর আশআস (রাদি.) এসে বলেন, আবু আবদুর রহমান (রাদি.) তোমার নিকট যে হাদীস বর্ণনা করছিলেন (সে হাদীসে বর্ণিত) এ আয়াতটি তো আমার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আমার চাচাতো ভাইয়ের জায়গায় আমার একটি কূপ ছিল। (এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে বিবাদ হওয়ায়) নাবী (সাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, তোমার সাক্ষী পেশ কর। আমি বললাম, আমার সাক্ষী নেই। তিনি বলিলেন, তাহলে তাকে কসম খেতে হইবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে তো কসম করিবে। এ সময় নাবী (সাঃআঃ) এ হাদীস বর্ণনা করেন এবং আল্লাহ তাআলা তাকে সত্যায়িত করে এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন।

(২৪১৬, ২৫১৫, ২৬৬৬, ২৬৬৯, ২৬৭৩, ২৬৭৬, ৪৫৪৯, ৬৬৫৯, ৬৬৭৬, ৭১৮৩, ৭৪৪৫, ২৩৫৩, ২৪১৭, ২৫১৬, ২৬৬৭, ২৬৭০, ২৬৭৭, ৪৫৫০, ৬৬৬০, ৬৬৭৭, ৭১৮৪, মুসলিম ১/৬১, হাদীস ১৩৮, আহমাদ ৩৫৭৬) (আ.প্র. ২১৮৫, ই.ফা. ২২০২)

২৩৫৭. আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানদের অর্থ সম্পদ (যা তার জিম্মায় আছে) আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা কসম খায়, সে আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় মিলিত হইবে যে, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা নাযিল করেনঃ

‏إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً

“যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে —এর শেষ পর্যন্ত”- (আল ইমরানঃ ৭৭)। এরপর আশআস (রাদি.) এসে বলেন, আবু আবদুর রহমান (রাদি.) তোমার নিকট যে হাদীস বর্ণনা করছিলেন (সে হাদীসে বর্ণিত) এ আয়াতটি তো আমার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আমার চাচাতো ভাইয়ের জায়গায় আমার একটি কূপ ছিল। (এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে বিবাদ হওয়ায়) নাবী (সাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, তোমার সাক্ষী পেশ কর। আমি বললাম, আমার সাক্ষী নেই। তিনি বলিলেন, তাহলে তাকে কসম খেতে হইবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে তো কসম করিবে। এ সময় নাবী (সাঃআঃ) এ হাদীস বর্ণনা করেন এবং আল্লাহ তাআলা তাকে সত্যায়িত করে এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন।

(২৪১৬, ২৫১৫, ২৬৬৬, ২৬৬৯, ২৬৭৩, ২৬৭৬, ৪৫৪৯, ৬৬৫৯, ৬৬৭৬, ৭১৮৩, ৭৪৪৫, ২৩৫৩, ২৪১৭, ২৫১৬, ২৬৬৭, ২৬৭০, ২৬৭৭, ৪৫৫০, ৬৬৬০, ৬৬৭৭, ৭১৮৪, মুসলিম ১/৬১, হাদীস ১৩৮, আহমাদ ৩৫৭৬) (আ.প্র. ২১৮৫, ই.ফা. ২২০২)

৪২/৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি মুসাফিরকে পানি দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তার গুনাহ ।

২৩৫৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি আল্লাহ তাআলা দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। এক ব্যক্তি- যার নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি আছে, অথচ সে মুসাফিরকে তা দিতে অস্বীকার করে। অন্য একজন সে ব্যক্তি, যে ইমামের হাতে একমাত্র দুনিয়ার স্বার্থে বায়আত হয়। যদি ইমাম তাকে কিছু দুনিয়াবী সুযোগ দেন, তাহলে সে খুশী হয়, আর যদি না দেন তবে সে অসন্তুষ্ট হয়। অন্য একজন সে ব্যক্তি, যে আসরের সালাত আদায়ের পর তার জিনিসপত্র (বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে) তুলে ধরে আর বলে যে, আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া অন্য কোন মাবূদ নেই, আমার এই দ্রব্যের মূল্য এত এত দিতে আগ্রহ করা হয়েছে। (কিন্তু আমি বিক্রি করিনি) এতে এক ব্যক্তি তাকে বিশ্বাস করে (তা ক্রয় করে নেয়)। এরপর নাবী (সাঃআঃ) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ

‏إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً

“যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে”-

(আল ইমরান ৭৭)।

৪২/৬. অধ্যায়ঃ নদী-নালার পানি আটকানো।

২৩৫৯. আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জনৈক আনসারী নাবী (সাঃআঃ)-এর সামনে যুবাইর (রাদি.)-এর সঙ্গে হাররার নালার পানির ব্যাপারে ঝগড়া করিল যে পানি দ্বারা খেজুর বাগান সিঞ্চন করত। আনসারী বলিল, নালার পানি ছেড়ে দিন, যাতে তা (প্রবাহিত থাকে) কিন্তু যুবাইর (রাদি.) তা দিতে অস্বীকার করেন। তারা দুজনে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকটে এ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুবাইর (রাদি.)- কে বলেন, হে যুবাইর! তোমার যমীনে (প্রথমে) সিঞ্চন করে নাও। এরপর তোমার প্রতিবেশীর দিকে পানি ছেড়ে দাও। এতে আনসারী অসন্তুষ্ট হয়ে বলিল, সে তো আপনার ফুফাতো ভাই। এতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর চেহারায় অসন্তুষ্টির লক্ষণ প্রকাশ পেল। এরপর তিনি বলিলেন, হে যুবাইর! তুমি নিজের জমি সিঞ্চন কর। এরপর পানি আটকিয়ে রাখ, যাতে তা বাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে। যুবাইর (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমার মনে হয়, এ আয়াতটি এ সম্পর্কে নাযিল হয়েছেঃ

‏فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ‏

“তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হইবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর পত্যার্পণ না করে”- (আন-নিসাঃ ৬৫)।

(২৩৬১, ২৩৬২, ২৭০৮, ৪৫৮৫) (আ.প্র. ২১৮৭, ই.ফা. ২২০৪)

২৩৬০. আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জনৈক আনসারী নাবী (সাঃআঃ)-এর সামনে যুবাইর (রাদি.)-এর সঙ্গে হাররার নালার পানির ব্যাপারে ঝগড়া করিল যে পানি দ্বারা খেজুর বাগান সিঞ্চন করত। আনসারী বলিল, নালার পানি ছেড়ে দিন, যাতে তা (প্রবাহিত থাকে) কিন্তু যুবাইর (রাদি.) তা দিতে অস্বীকার করেন। তারা দুজনে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকটে এ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুবাইর (রাদি.)- কে বলেন, হে যুবাইর! তোমার যমীনে (প্রথমে) সিঞ্চন করে নাও। এরপর তোমার প্রতিবেশীর দিকে পানি ছেড়ে দাও। এতে আনসারী অসন্তুষ্ট হয়ে বলিল, সে তো আপনার ফুফাতো ভাই। এতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর চেহারায় অসন্তুষ্টির লক্ষণ প্রকাশ পেল। এরপর তিনি বলিলেন, হে যুবাইর! তুমি নিজের জমি সিঞ্চন কর। এরপর পানি আটকিয়ে রাখ, যাতে তা বাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে। যুবাইর (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমার মনে হয়, এ আয়াতটি এ সম্পর্কে নাযিল হয়েছেঃ

‏فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ‏

“তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হইবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর পত্যার্পণ না করে”- (আন-নিসাঃ ৬৫)।

(২৩৬১, ২৩৬২, ২৭০৮, ৪৫৮৫) (আ.প্র. ২১৮৭, ই.ফা. ২২০৪)

৪২/৭ অধ্যায়ঃ নীচু ভুমির পূর্বে উঁচু ভূমিতে সেচ দেয়া।

২৩৬১. উরওয়াহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যুবাইর (রাদি.) এক আনসারীর সঙ্গে ঝগড়া করলে নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে যুবাইর! জমিতে পানি সেচের পর তা ছেড়ে দাও। এতে আনসারী বলিল, সে তো আপনার ফুফাতো ভাই। এ কথা শুনে তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, হে যুবাইর! পানি বাঁধে পৌঁছা পর্যন্ত সেচ দিতে থাক। তারপর বন্ধ করে দাও। যুবাইর (রাদি.) বলেন, আমার ধারণা এ আয়াতটি এ সম্পর্কে নাযিল হয়েছেঃ

‏َلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ‏

“তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হইবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার-ভার আপনার উপর অর্পণ না করে”-

(আন-নিসা ৬৫)।

৪২/৮. অধ্যায়ঃ উঁচু জমির মালিক পায়ের গিরা পর্যন্ত পানি নিয়ে নেবে।

২৩৬২. উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একজন আনসারী হার্‌রার নালার পানি নিয়ে যুবাইরের সাথে ঝগড়া করিল, যে পানি দিয়ে তিনি খেজুর বাগান সেচ দিতেন। এ বিষয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হে যুবাইর! সেচ দিতে থাক। তারপর নিয়ম-নীতি অনুযায়ী তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন, তারপর তা তোমার প্রতিবেশীর জন্য ছেড়ে দাও। এতে আনসারী বলিল, সে আপনার ফুফাতো ভাই তাই। এ কথায় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর চেহারা মুবারক বিবর্ণ হয়ে গেল। তখন তিনি বলিলেন, সেচ দাও। পানি ক্ষেতের বাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে গেলে বন্ধ করে দাও। যুবাইরকে তিনি তার পুরা হক দিলেন। যুবাইর (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম, এ আয়াত এ সম্পর্কে নাযিল হয়ঃ

اَ وَرَبِّكِ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ

“তোমার প্রতিপালকের কসম, তারা মুমিন হইবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার-ভার আপনার উপর অর্পণ না করে”। বর্ণনাকারী বলেন, ইবনু শিহাবের বর্ণনা হচ্ছে নাবী (সাঃআঃ)-এর এ কথা পানি নেয়ার পর বাঁধ অবধি পৌঁছার পর তা বন্ধ রাখ। আনসার এবং অন্যান্য লোকেরা এর পরিমাণ করে দেখেছেন যে, তা টাখনু পর্যন্ত পৌঁছে।

৪২/৯. অধ্যায়ঃ পানি পান করানোর গুরুত্ব।

২৩৬৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা লাগল। সে কূপে নেমে পানি পান করিল। এরপর সে বের হয়ে দেখিতে পেল যে, একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল, কুকুরটারও আমার মত পিপাসা লেগেছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তাআলা তার আমল কবূল করিলেন এবং আল্লাহ তার গোনাহ মাফ করে দেন। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলেও কি আমাদের সাওয়াব হইবে? তিনি বলিলেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেই পূণ্য রয়েছে।

২৩৬৪. আসমা বিনতু আবু বক্‌র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) সূর্য গ্রহণের সালাত আদায় করিলেন। তারপর বলিলেন, জাহান্নাম আমার নিকটবর্তী করা হলে আমি বললাম, হে রব! আমিও কি এই জাহান্নামীর সাথী হব? এমতাবস্থায় একজন মহিলা আমার নজরে পড়ল। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, তিনি বলেছেন, বিড়াল তাকে (মহিলা) খামছাচ্ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এ মহিলার কী হল? ফেরেশতারা জবাব দিলেন, সে একটি বিড়াল বেঁধে রেখেছিল, যার কারণে বিড়ালটি ক্ষুধায় মারা যায়।

২৩৬৫. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, একজন মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে আযাব দেয়া হয়। সে বিড়ালটি বেঁধে রেখেছিল, অবশেষে বিড়ালটি ক্ষুধায় মারা যায়। এ কারণে মহিলা জাহান্নামে প্রবেশ করিল। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি [রাসুল (সাঃআঃ)] বলেন, আল্লাহ ভালো জানেন, বাঁধা থাকাকালীন তুমি তাকে না খেতে দিয়েছিলে, না পান করিতে দিয়েছিলে এবং না তুমি তাকে ছেড়ে দিয়েছিলে, তা হলে সে জমিনের পোকা-কামড় খেয়ে বেঁচে থাকত।

৪২/১০. অধ্যায়ঃ যাদের মতে চৌবাচ্চা ও মশ্‌কের মালিক পানির অধিক অধিকারী।

২৩৬৬. সাহল ইবনু সাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট একটি পানির পেয়ালা আনা হল। তিনি তা হইতে পানি পান করিলেন। তাহাঁর ডানদিকে একজন বালক ছিল, সে ছিল লোকদের মধ্য সবচেয়ে কম বয়স্ক এবং বয়োজ্যেষ্ট লোকেরা তাহাঁর বাঁ দিকে ছিল। তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, হে বৎস! তুমি কি আমাকে জ্যেষ্ঠদের এটি দিতে অনুমতি দিবে? সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার উচ্ছিষ্টের ব্যাপারে নিজের উপর প্রাধান্য দিতে চাই না। এরপর তিনি তাকেই সেটি দিলেন।

২৩৬৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি নিশ্চয়ই (কিয়ামাতের দিন) আমার হাউজ (কাউসার) হইতে কিছু লোকদেরকে এমনভাবে তাড়াব, যেমন অপরিচিত উট হাউজ হইতে তাড়ানো হয়।

২৩৬৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, ইসমাঈল (আঃ)–এর মা হাজেরা (আ.)-এর উপর আল্লাহ রহম করুন। কেননা, যদি তিনি যমযমকে স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দিতেন অথবা তিনি বলেছেন, যদি তা হইতে অঞ্চলে পানি না নিতেন, তা হলে তা একটি প্রবাহিত ঝরনায় পরিণত হতো। জুরহাম গোত্র তাহাঁর নিকট এসে বলিল, আপনি কি আমাদেরকে আপনার নিকট অবস্থান করার অনুমতি দিবেন? তিনি (হাজেরা) বলিলেন, হ্যাঁ। তবে পানির উপর তোমাদের কোন অধিকার থাকবে না। তারা বলিল, ঠিক আছে।

২৩৬৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তিন শ্রেণীর লোকের সাথে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন কথা কথা বলবেন না এবং তাদের প্রতি তাকাবেনও না। (এক) যে ব্যক্তি কোন মাল সামানের ব্যাপারে মিথ্যা কসম খেয়ে বলে যে, এর দাম এর চেয়ে বেশি বলেছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও সে তা বিক্রি করেনি। (দুই) যে ব্যক্তি আসরের সালাতের পর একজন মুসলমানের মাল-সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা কসম করে। (তিন) যে ব্যক্তি তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি মানুষকে দেয় না। আল্লাহ তাআলা বলবেন (কিয়ামাতের দিন) আজ আমি আমার অনুগ্রহ হইতে তোমাকে বঞ্চিত রাখব যেরূপ তুমি তোমার প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি হইতে বঞ্চিত রেখেছিলে অথচ তা তোমার হাতের তৈরি নয়। আলী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আর সালিহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত যে, তিনি হাদীসের সনদটি নাবী (সাঃআঃ) পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন।

৪২/১১. অধ্যায়ঃ একমাত্র আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) ছাড়া অন্য কারো সংরক্ষিত চারণভূমি থাকতে পারেনা।

২৩৭০. সাব ইবনু জাস্‌সামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, চারণভূমি সংরক্ষিত করা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) ছাড়া আর কারো অধিকারে নেই। তিনি (রাবী) বলেন, আমাদের নিকট রিওয়ায়াত পৌঁছেছে যে, নাবী (সাঃআঃ) নাকীর চারণভূমি (নিজের জন্য) সংরক্ষিত করেছিলেন, আর উমার (রাদি.) সারাফ ও রাবাযার চারণভূমি সংরক্ষণ করেছিলেন।

৪২/১২. অধ্যায়ঃ নহর (নদী-নালা খাল-বিল) হইতে মানুষ ও চতুষ্পদ জানোয়ারের পানি পান করা সম্পর্কে।

২৩৭১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, ঘোড়া একজনের জন্য সাওয়াব, একজনের জন্য ঢাল এবং আরেকজনের জন্য পাপ। সাওয়াব হয় তার জন্য, যে আল্লাহর রাস্তায় তা জিহাদের উদ্দেশ্যে বেঁধে রাখে এবং সে ঘোড়ার রশি চারণভূমি বা বাগানে লম্বা করে দেয়। এমতাবস্থায় সে ঘোড়া চারণভূমি বা বাগানে তার রশির দৈর্ঘ্য পরিমাণ যতটুকু চরবে, সে ব্যক্তির জন্য সে পরিমাণ সাওয়াব হইবে। যদি তার রশি ছিঁড়ে যায়, এবং সে একটি কিংবা দুটি টিলা অতিক্রম করে, তাহলে তার প্রতিটি পদচিহ্ন ও তার গোবর মালিকের জন্য সাওয়াব হিসেবে গণ্য হইবে। আর যদি তা কোন নহরের পাশ দিয়ে যায় এবং মালিকের ইচ্ছা ব্যতিরেকে সে তা হইতে পান করে, তাহলে এ জন্য মালিক সাওয়াব পাবে। আর ঢাল স্বরূপ সে লোকের জন্য, যে পরমুখাপেক্ষিতা ও ভিক্ষাবৃত্তি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য তাকে বেঁধে রাখে। তারপর এর পিঠে ও গর্দানে আল্লাহর নির্ধারিত হক আদায় করিতে ভুল করে না। গুনাহর কারণ সে লোকের জন্য, যে তাকে অহংকার ও লোক দেখাবার কিংবা মুসলমানদের প্রতি শত্রুতার উদ্দেশ্যে বেঁধে রাখে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার প্রতি কোন আয়াত নাযিল হয়নি। তবে এ ব্যাপারে একটি পরিপূর্ণ ও অন্যান্য আয়াত রয়েছে। (তা হল আল্লাহ তাআলার বাণী)

مَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ * وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ

“কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে সে তা দেখিতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমান অসৎকর্ম করলে সে তাও দেখিতে পাবে”-

(সুরা যিলযাল: ৭-৮)।

২৩৭২. যায়দ ইবনু খালিদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর নিকট এসে পড়ে থাকা জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তিনি বলিলেন, থলেটি এবং তার মুখের বন্ধনটি চিনে রাখো। তারপর এক বছর পর্যন্ত তা ঘোষণা করিতে থাক। যদি আর মালিক এসে যায় তো ভাল। তা না হলে সে ব্যাপারে তুমি যা ভাল মনে কর তা করিবে। সে আবার জিজ্ঞেস করিল, হারানো বকরী হলে কি করবো? তিনি বলিলেন, সেটি হয় তোমার, না হয় তোমার ভাইয়ের, না হয় নেকড়ে বাঘের। সে আবার জিজ্ঞেস করলো, হারানো উট হলে কি করবো? তিনি বলিলেন, তাতে তোমার প্রয়োজন কি? তার সঙ্গে তার মশক ও খুর রয়েছে। সে জলাশয়ে উপস্থিত হইবে এবং গাছপালা খাবে, শেষ পর্যন্ত তার মালিক তাকে পেয়ে যাবে।

৪২/১৩. অধ্যায়ঃ শুকনো জ্বালানী কাঠ ও ঘাস বিক্রয় করা।

২৩৭৩. যুবাইর ইবনু আওয়াম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ রশি নিয়ে খড়ির আঁটি বেঁধে তা বিক্রি করে, এতে আল্লাহ তাআলা তার সম্মান রক্ষা করেন, এটা তার জন্য মানুষের কাছে ভিক্ষা চাওয়ার চেয়ে উত্তম! লোকজনের নিকট এমন চাওয়ার চেয়ে, যে চাওয়ায় কিছু পাওয়া যেতে পারে বা নাও পারে।

২৩৭৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, কারো নিকট সাওয়াল করা, যাতে সে তাকে কিছু দিতেও পারে ,আবার নাও দিতে পারে, এর চেয়ে পিঠে বোঝা বহন করা (তা বিক্রি করা) উত্তম।

২৩৭৫. আলী ইবনু আবু তালিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর সঙ্গে আমি গনীমতের মাল হিসেবে একটি উট লাভ করি। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে আরও একটি উট দেন। একদিন আমি উট দুটিকে একজন আনসারীর ঘরের দরজায় বসাই। আমার ইচ্ছা ছিল এদের উপর ইযখির (এক ধরনের ঘাস) চাপিয়ে তা বিক্রি করিতে নিয়ে যাব। আমার সাথে বনূ কায়নুকার একজন স্বর্ণকার ছিল। আমি এর (ইযখির বিক্রি লব্ধ টাকা) দ্বারা ফাতিমা (রাদি.)-এর ওয়ালীমা করিতে সমর্থ হব। সে ঘরে হামযা ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাদি.) শরাব পান করছিলেন। আর তাহাঁর সাথে একজন গায়িকাও ছিল। সে বলিল, হে হামযা! তৈরি হও, মোটা উটগুলোর উদ্দেশ্যে। এরপর হামযা (রাদি.) উট দুটোর দিকে তরবারি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তাদের কুজ দুটিও কেটে নিলেন এবং পেট ফেড়ে উভয়ের কলিজা বের করে নিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- কে জিজ্ঞেস করি, কুজ কি করা হল? তিনি বলেন, সেটি কেটে নিয়ে গেলেন। ইবনু শিহাব বলেন, আলী (রাদি.) বলেছেন, এই দৃশ্য দেখলাম আর তা আমাকে ঘাবড়িয়ে দিল। এরপর আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে আসলাম। তাহাঁর নিকট তখন যায়দ ইবনু হারিসাহ (রাদি.) উপস্থিত ছিলেন। আমি তাঁকে খবর বললাম। তিনি বের হলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন যায়দ (রাদি.)। আমিও তাহাঁর সঙ্গে গেলাম। তিনি হামযা (রাদি.)–এর নিকট উপস্থিত হলেন এবং তার প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করিলেন। হামযা দৃষ্টি উঁচু করে তাঁদের দিকে তাকালেন। আর বলিলেন, তোমরা আমার বাপ-দাদার দাস বটে। হামযা (রাদি.)–এর এই অবস্থা দেখে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) পিছনে সরে তাদের নিকট হইতে চলে আসলেন। ঘটনাটি শরাব হারাম হওয়ার পূর্বের।

৪২/১৪. অধ্যায়ঃ জায়গীর দেওয়া।

২৩৭৬. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আনসারদেরকে বাহরাইনে কিছু জায়গীর দিতে চাইলেন। তারা বলিল, আমাদের মুহাজির ভাইদেরও আমাদের মত জায়গীর না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের জন্য জায়গীর দিবেন না। তিনি বলেন, আমার পরে শীঘ্রই তোমরা দেখবে, তোমাদের উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তখন তোমরা সবর করিবে, যে পর্যন্ত না তোমরা আমার সঙ্গে মিলিত হও।

৪২/১৫. অধ্যায়ঃ জায়গীর লিপিবদ্ধ করা।

২৩৭৭. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) আনসারদেরকে বাহরাইনে জায়গীর দেওয়ার জন্য ডাকলেন। তারা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যদি তা করেন তাহলে আমাদের কুরাইশ ভাইদের জন্যও অনুরূপ জায়গীর লিখে দেন। কিন্তু নাবী (সাঃআঃ)–এর নিকট তখন তা ছিল না। তারপর তিনি বলেন, আমার পর শীঘ্রই দেখবে, তোমাদের উপর অন্যদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তখন তোমরা সবর করিবে, আমার সঙ্গে মিলিত হওয়া (মৃত্যু) পর্যন্ত।

৪২/১৬. অধ্যায়ঃ পানি পান করানোর স্থানে উট দোহন করা।

২৩৭৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, উটের হক্ব হচ্ছে, পানির কাছে তার দুধ দোহন করা।

৪২/১৭. অধ্যায়ঃ খেজুরের বা অন্য কিছুর বাগানে কোন লোকের চলার রাস্তা কিংবা পানির কুয়া থাকা।

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি খেজুর গাছের তাবীর ( স্ত্রী পুষ্পরেণু সংমিশ্রণ) করার পর তা বিক্রি করে, তাহলে তার ফল বিক্রেতার, চলার পথও পানির কূপ বিক্রেতার, যতক্ষণ ফল তুলে নেওয়া না হয়। আরিয়্যার মালিকেরও এই হুকুম ।

২৩৭৯. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি খেজুর গাছ তাবীর করার পর গাছ বিক্রয় করে, তার ফল বিক্রেতার। কিন্তু ক্রেতা শর্ত করলে তা তারই। আর যদি কেউ গোলাম বিক্রয় করে এবং তার সম্পদ থাকে তবে সে সম্পদ যে বিক্রি করিল তার। কিন্তু যদি ক্রেতা শর্ত করে তাহলে তা হইবে তার। মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) … উমার (রাদি.) হইতে গোলাম বিক্রয়ের ব্যাপারে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

২৩৮০. যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) অনুমান করে শুকনো খেজুরের বিনিময়ে আরায়্যা করার অনুমতি দিয়েছেন।

২৩৮১. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মুখাবারা, মুহাকালা ও শুকনো খেজুরের বিনিময়ে গাছের খেজুর বিক্রি করিতে ও ফল উপযুক্ত হওয়ার আগে তা বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন। গাছে থাকা অবস্থায় ফল দীনার এবং দিরহামের বিনিময়ে যেন বিক্রি করা না হয়। তবে আরায়্যার অনুমতি দিয়েছেন।

২৩৮২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) অনুমান করে শুকনো খেজুরের বিনিময়ে পাঁচ ওসাক কিংবা তার চেয়ে কম আরায়্যার বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন। বর্ণনাকারী দাউদ এ বিষয়ে সন্দেহ করিয়াছেন।

২৩৮৩. রাফী ইবনু খাদীজ ও সাহল ইবনু আবু হাসমা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা উভয়ে বর্ণনা করেন,আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মুযাবানা অর্থাৎ গাছে ফল থাকা অবস্থায় তা শুকনো ফলের বিনিময়ে বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন। কিন্তু যারা আরায়্যা করে, তাদের জন্য তিনি এর অনুমতি দিয়েছেন।

(২১৯১) (আ.প্র. ২২০৯, ই.ফা. ২২২৬)

ইবনু ইসহাক বলেন, বুশাইর আমার নিকট অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

২৩৮৪. রাফী ইবনু খাদীজ ও সাহল ইবনু আবু হাসমা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা উভয়ে বর্ণনা করেন,আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মুযাবানা অর্থাৎ গাছে ফল থাকা অবস্থায় তা শুকনো ফলের বিনিময়ে বিক্রি করিতে নিষেধ করিয়াছেন। কিন্তু যারা আরায়্যা করে, তাদের জন্য তিনি এর অনুমতি দিয়েছেন।

(২১৯১) (আ.প্র. ২২০৯, ই.ফা. ২২২৬)

ইবনু ইসহাক বলেন, বুশাইর আমার নিকট অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply