পানির বিবরন সম্পর্কে বর্ণনা

পানির বিবরন সম্পর্কে বর্ণনা

পানির বিবরন সম্পর্কে বর্ণনা >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ৩, অধ্যায়ঃ ৭

  • অধ্যায়ঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অধ্যায়ঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ

৪৭৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন [বহমান নয় এমন] বদ্ধ পানিতে প্রসাব না করে। অতঃপর এতে গোসল করে। {১}

মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে নাপাক অবস্থায় গোসল না করে। লোকেরা জিজ্ঞেস করিল, সে কিভাবে করিবে, হে আবু হুরাইরাহ? তিনি বললেন, সে তা থেকে পানি উঠিয়ে নিয়ে গোসল করিবে। {2]

{১} সহীহ : বোখারী ২৩৯, মুসলিম ২৮২। {2] সহীহ : মুসলিম ২৮৩। পানির বিবরন -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৪৭৫. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বদ্ধ পানিতে প্রসাব করিতে নিষেধ করিয়াছেন। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ২৮১। পানির বিবরন -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৪৭৬. সায়িব ইবনি ইয়াযীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার খালা আমাকে নবী [সাঃআঃ] এর কাছে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আমার এ বোনপুত্র অসুস্থ। তিনি [সাঃআঃ] আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার জন্য বারাকাতের দুআ করিলেন। তারপর তিনি [সাঃআঃ] উযু করিলেন। আমি তাহাঁর উযুর পানি [কিছু] পান করলাম। অতঃপর আমি তাহাঁর [সাঃআঃ] এর পিছনে দাড়িয়ে তাহাঁর দুই কাঁধের মধ্যে মশারীর বা পর্দার ঘণ্টির মতো মুহুরে নবুওয়াত দেখিতে লাগলাম। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ১৯০, মুসলিম ২৩৪৫। পানির বিবরন -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪৭৭. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূল [সাঃআঃ] -কে মাঠে-ময়দানের [জমে থাকা] পানি সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হল। সেখানে বিভিন্ন জাতের জীব – জন্তু ও হিংস্র প্রানী এসে পানি পান করে থাকে [এসব পানি কি পাক-পবিত্র?] তিনি [সাঃআঃ] বললেন, দুই কুল্লা পরিমান পানি হলে তা নাপাক হয় না। {১}

আবু দাউদ -এর এর এক বর্ণনার শব্দ হল, এ পানি নাপাক হয় না।

{১} সহীহ : আহমাদ ৪৯৪১, আবু দাউদ ৬৩, ৬৫, তিরমিজি ৬৭, নাসায়ী ৫২, ইবনি মাজাহ ৫১৭, ইরওয়া ২৩। পানির বিবরন -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৪৭৮. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, [রসূল [সাঃআঃ] -কে একদিন] জিজ্ঞেস করা হলঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! আমরা কি বুযা – আহ্ কূপের পানি দিয়ে উযূ করিতে পারি? কেননা এ কূপটিতে হায়যের নেকড়া, মরা কুকুর ও বিভিন্ন ধরনের দুর্গন্ধময় আবর্জনা ফেলা হয়। উত্তরে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, পানি পবিত্র। কোন জিনিসই সেটাকে নাপাক করিতে পারে না। {১}

{১} সহীহ : আহমাদ ২১০১, আবু দাউদ ৬৬, তিরমিজি ৬৬, নাসায়ী ৩২৬, ইরওয়া ১৪। পানির বিবরন -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৪৭৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]! আমরা সমুদ্র ভ্রমণে যাই এবং সাথে কিছু মিঠা পানি নিয়ে যাই। তাই এই পানি দিয়ে ওযু করলে খাবার পানির অভাবে আমরা তৃষ্ণার্ত হয়ে পরি। এ অবস্থায় আমরা কি সমুদ্রের [লবানাক্ত] পানী দিয়ে ওজু করিতে পারি? তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উত্তর দিলেন সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং এর মৃত জীবও হালাল। {১}

{১} সহীহ : মালিক ৪৩, আবু দাউদ ৮৩, তিরমিজি ৬৯, নাসায়ী ৫৯, ইবনি মাজাহ ৩৮৬, দারিমী ৭২৮, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৪৮০। পানির বিবরন -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৪৮০. আবু যায়দ [রাহিমাহুল্লাহ] আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] জিনের রাতে তাকে জিঞ্জেস করিলেন, তোমার মশকে কি আছে? আমি বললাম, নবীয। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, খেজুর পাক পানিও পবিত্রকারী। আহমাদ ও তিরমিজি শেষের দিকে বৃদ্ধি করে বলেছেন, এরপর তিনি [সাঃআঃ] তা দিয়ে উযু করিলেন। {১} তিরমিজি বলেন, আবু যায়দ একজন মাজহুল [অপরিচিত] লোক।

{১} জইফ : আবু দাউদ ৮৪, তিরমিজি ৮৮, ইবনি মাজাহ ৩৮৪। কারণ এর সানাদে আবু যায়দ নামে একজন মাজহূল বা অপরিচিত রাবী রয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৪৮১. সাহীহ সুত্রে ইব্‌নু মা্‌উদ [রাদি.]–এর অপর ছাত্র আলকামাহ্‌ হইতে বর্ণীতঃ

আবদুল্লাহ ইব্‌নু মাস্‌উদ [রাদি.] বর্ণনা করেন, আমি জিনের রাতে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর সাথে ছিলাম না। {৫০৩] {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৪৫০। পানির বিবরন -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৪৮২. কাবশাহ্ বিনতু কাব ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি ছিলেন আবু ক্বাতাদাহ্‌ [রাদি.] এর পুত্রবধূ। আবু ক্বাতাদাহ্‌ [রাদি.] তার নিকট ছিলেন। তিনি তাহাঁর জন্য উযুর পানি ঢাললেন। একটি বিড়াল এলো এবং উযূর পাত্র হইতে পানি পান করিতে লাগল। আর তিনি পাত্রটি তার জন্য কাত করে ধরলেন যে পর্যন্ত পান করা শেষ না হল। কাবশাহ বলেন, তিনি আমার দিকে তাকিয়ে দেখলেন, আমি তাহাঁর দিকে চেয়ে আছি। তিনি আমাকে বললেন, আমার ভাতিজী! তোমার কাছে আশ্চর্য লাগছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, বিড়াল নাপাক নয়। এটা তোমাদের আশে পাশে ঘন ঘন বিচরণকারী বা বিচরণকারিণী। {১}

{১} সহীহ : মালিক ৪৪, আহমাদ ২২০৭৪, আবু দাউদ ৭৫, তিরমিজি ৯২, নাসায়ী ৬৮, ইবনি মাজাহ ৩৬৭, দারিমী ৭৩৬, ইরওয়া ১৭৩। পানির বিবরন -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৪৮৩. তাবিঈ দাউদ ইব্‌নু সা-লিহ ইব্‌নু দীনার [রহ:] হইতে বর্ণীতঃ

তার [মায়ের] মুক্তিদানকারিণী মুনীব একবার তার মাকে কিছু হারিসাহ্‌ নিয়ে আয়িশাহ্‌ [রাদি.]-এর নিকট পাঠালেন। তার মা বলেন, আমি গিয়ে তাকে সালাতরত পেলাম। তিনি তখন আমাকে [হাত নিয়ে] ইশারা করিলেন, তা রেখে দাও। তখন একটি বিড়াল এলো এবং তা হইতে কিছু খেল। এরপর আয়িশাহ্‌ [রাদি.] সালাত শেষ করে বিড়ালের খাওয়া স্থান থেকেই খেলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বিড়াল নাপাক নয়। ওটা তোমাদের আশেপাশে ঘন ঘন বিচরণকারী জীব। তিনি {আয়িশাহ্‌ [রাদি.]] আরো বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–কে বিড়ালের উচ্ছিষ্ট [পানি] দিয়ে উযু করিতে দেখেছি। {১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ৭৬। যদিও এর সানাদে উম্মু দাউদ ইবনি সালিহ অপরিচিত রাবী রয়েছে কিন্তু তার শাহিদ রিওয়ায়াত থাকায় তা সহীহ স্তরে পৌঁছেছে। পানির বিবরন -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৪৮৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–কে জিঞ্জেস করা হল, আমরা কি গাধার উচ্ছিষ্ট পানি দিয়ে উযূ করিতে পারি? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, হ্যাঁ, বরং সকল হিংস্র জানোয়ারের উচ্ছিষ্ট পানি দিয়েও। {১}

{১} জইফ : শারহুস্ সুন্নাহ্, মুসনাদে শাফিঈ ৮ পৃঃ, তামামুল সিন্নাহ্ ৪৭ পৃঃ, দারাকুত্বনী ২৩ পৃঃ, বায়হাক্বী ১/২৪৯। কারণ দাউদ ও তার পিতা হাসীন দুজনই দুর্বল। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৪৮৫. উম্মু হানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও উম্মুল মুমিনীন মায়মূনাহ্‌ [রাদি.] একটি গামলার পানি দিয়ে গোসল করিয়াছেন, যাতে আটার খামীরের অবশিষ্ট ছিল। {১}

{১} সহীহ : নাসায়ী ২৪০, ইবনি মাজাহ ৩৭৮। পানির বিবরন -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৮৬. ইয়াহ্ইয়া ইবনি আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব [রাদি.] এক কাফিলার সাথে বের হলেন। এদের মধ্যে আমর ইবনুল আস [রাদি.]–ও ছিলেন। পথ চলতে চলতে তাঁরা একটি হাওযের কাছে পৌঁছলেন। তখন আমর ইবনুল আস [রাদি.] বললেন, হে হাওযের মালিক! তোমার হাওযে হিংস্র জন্তরা ও কি পানি পান করিতে আসে? উমার ইবনুল খাত্তাব [রাদি.] বলেন, হে হাওযের মালিক! আমাদেরকে এ সংবাদ দিও না। এ পানির ঘাটে কখনো আমরা আসি আর কখনো আসে জন্তু জানোয়ার। [তাতে অসুবিধা কী?] {১}

{১} জইফ : মুয়াত্ত্বা মালিক ৪৫। কারণ ইয়াহ্ইয়া ইবনি আবদুর রহমান উমার [রাদি.]-এর সাক্ষাৎ লাভ করেননি। বরং তিনি আলী [রাদি.] ও উসমান [রাদি.]-এর সাক্ষাৎ লাভ করিয়াছেন। ইবনি মাঈন বলেনঃ কেউ কেউ বলেছেন যে সে [ইয়াহ্ইয়া] উমার [রাদি.]-এর কাছ থেকে শুনেছে কিন্তু এটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে তার পিতা আবদুর রহমান উমার [রাদি.]-এর কাছ থেকে শুনেছেন সে নয়।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৪৮৭. ঈমাম রযীন [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

এ হাদিসটিকে আরো বৃদ্ধি করে বর্ণনা করে বলেছেনঃ কোন কোন বর্ণনাকারী উমারের কথার মধ্যে এ কথাও উল্লেখ করিয়াছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলিতে শুনেছিঃ তা থেকে জন্তু জানোয়ার পেটে যা নিয়েছে তা তাদের জন্য, আর যা অবশিষ্ট আছে তা আমাদের জন্য পাক-পবিত্র ও পানীয়।

এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়

৪৮৮. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-কে মক্কা ও মাদীনার মধ্যে অবস্থিত কূপগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, এসব কূপে জন্তু-জানোয়ার, কুকুর ও গাধা পানি পান করিতে আসে। এগুলোর পানি কি পবিত্র? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, জন্তু-জানোয়াররা পেটে যা গ্রহণ করেছে তা তাদের জন্য, আর যা অবশিষ্ট আছে তা আমাদের জন্য পবিত্র। [ইবনি মাজাহ]{১}

{১} খুবই দুর্বল : ইবনি মাজাহ ৫১৯, যঈফুল জামি ৪৭৮৯। কারণ এর সানাদে আবদুর রহমান ইবনি যায়দ ইবনি আসলাম রয়েছে যার সম্পর্কে ঈমাম হাকিম [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন যে, তার পিতা থেকে অনেক বানোয়াট হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন ইবনুল ক্বইয়্যিম জাওযী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেনঃ মুহাদ্দিসগণ সকলেই তার দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে একমত। এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল

৪৮৯.উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রোদে গরম করা পানি দিয়ে গোসল করো না। কারণ এ পানি শ্বেত ও কুষ্ঠ রোগ সৃষ্টি করে। নী]{১}

{১} জইফ : দারাকুত্বনী ১/৩৯, বায়হাক্বী ১/৬, তালখীসুল হাবীর ৬, ৭ নং পৃঃ। কারণ এর সানাদে হায়সাম ইবনি আযহার আস্ সালাফী নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে যাকে ইবনি হিব্বান ছাড়া কেউ বিশ্বস্ত বলেননি। আর তার তাওসীক করণকে অনেকেই সঠিক বলেননি। কারণ তিনি মাজহূল [অপরিচিত] রাবীদেরও বিশ্বস্ত বলে থাকেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply