পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাজের সময়

পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাজের সময়

পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাজের সময় >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৩১. অধ্যায়ঃ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাজের সময়
৩২. অধ্যায়ঃ জামাআতে রওনাকারীর জন্য পথিমধ্যে তীব্র গ্রীস্মের সময় তাপ ঠান্ডা হয়ে আসলে যুহর আদায় করা মুস্তাহাব
৩৩. অধ্যায়ঃ প্রচন্ড রোদ না হলে যুহরের নামাজ আও্ওয়াল ওয়াক্তে আদায় করা মুস্তাহাব
৩৪. অধ্যায়ঃ আসরের নামাজ আগে আগে আদায় করা মুস্তাহাব
৩৫. অধ্যায়ঃ আসরের নামাজ ছুটে যাওয়া সম্পর্কে
৩৬. অধ্যায়ঃ যারা বলে মধ্যবর্তী নামাজ হচ্ছে আসরের নামাজ-তার দলীল
৩৭. অধ্যায়ঃ ফজর ও আসর নামাজের ফযীলত এবং এ দুটির প্রতি যত্নবান হওয়া
৩৮. অধ্যায়ঃ সূর্যাস্তের পর মূহুর্তেই মাগরিবের প্রথম ওয়াক্ত
৩৯. অধ্যায়ঃ ইশার সময় ও তাতে বিলম্ব করা
৪০. অধ্যায়ঃ ফজরের নামাজ প্রত্যুষে প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা মুস্তাহাব যে সময়কে তাগলীস্ বলা হয় এবং তাতে কিরাআতের পরিমাণ

৩১. অধ্যায়ঃ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাজের সময়

১২৬৬. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমর ইবনি আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] একদিন আস্‌রের নামাজ আদায় করিতে দেরী করলে উরওয়াহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাকে বললেনঃ একদিন জিব্‌রীল [আঃ] এসে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর ঈমাম হয়ে নামাজ আদায় করিলেন। এ কথা শুনে উমর ইবনি আবদুল আযীয উরওয়াহ্‌কে বললেনঃ উরওয়াহ্‌! তুমি যা বলছ তা ভালমতো চিন্তা ভাবনা করে বলো। উরওয়াহ্‌ বললেনঃ আমি বাশীর ইবনি আবু মাসউদকে বলিতে শুনেছি। তিনি বলছেনঃ আমি আবু মাসউদকে বলিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন যে, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – কে বলিতে শুনেছি। একদিন জিব্‌রীল [আঃ] এসে আমার ঈমামতি করিলেন। আমি তার সাথে নামাজ আদায় করলাম। তারপর আমি তাহাঁর সাথে নামাজ আদায় করলাম। তারপর পুনরায় আমি তাহাঁর সাথে নামাজ আদায় করলাম। এরপর আমি আবার তাহাঁর সাথে নামাজ আদায় করলাম। তারপর আমি আরো একবার তাহাঁর সাথে নামাজ আদায় করলাম। এভাবে তিনি আঙ্গুল গুণে পাঁচ [ওয়াক্ত] নামাজের কথা বলিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৫৪, ইসলামিক সেন্টার- ১২৬৭]

১২৬৭. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেনঃ উমর ইবনি আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] একদিন নামাজ আদায় করিতে [বেশ দেরী করে ফেললেন] তাই উরওয়াহ্‌ ইবনি মাসঊদ তার কাছে গিয়ে বলিলেন, কুফায় [গভর্নর] থাকাকালীন একদিন মুগীরাহ্‌ ইবনি শুবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] [আস্‌রের] নামাজ আদায় করিতে করিতে দেরী করে ফেললেন। আবু মাসঊদ আল আনসারী [রাদি.] গিয়ে তাঁকে বলিলেন, মুগীরাহ্‌! একি করছ তুমি? তুমি কি জানো না যে, এক সময় জিব্‌রীল [আঃ] এসে নামাজ আদায় করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সাথে নামাজ আদায় করিলেন। তিনি {জিব্‌রীল [আঃ] } আবার [আরেক ওয়াক্তের] নামাজ আদায় করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সাথে আবার নামাজ আদায় করিলেন। তিনি জিব্‌রীল [আঃ] পুনরায় [আরেক ওয়াক্তের] নামাজ আদায় করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পুনরায় এ নামাজ তাহাঁর সাথে আদায় করিলেন। তিনি {জিব্‌রীল [আঃ] } আবারও [আরেক ওয়াক্তের] নামাজ আদায় করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ নামাজ তাহাঁর সাথে আদায় করিলেন। এরপর জিব্‌রীল [আঃ] বলিলেন, আপনি এভাবে নামাজ আদায় করিতে আদিষ্ট হয়েছেন। একথা শুনে উমর ইবনি আযীয উরওয়াহ্‌ ইবনি যুবায়রকে বললেনঃ উরওয়াহ্‌! তুমি কি বলছ তা কি চিন্তা করে দেখেছো? জিব্‌রীল [আঃ] নিজে কি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর জন্য নামাজের সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন? জবাবে উরওয়াহ্‌ বলেন, বাশীর ইবনি আবু মাসঊদ তাহাঁর পিতা আবু মাসঊদের নিকট থেকে তা এরূপই [সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া] বর্ণনা করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৫৫, ইসলামিক সেন্টার-১২৬৮]

১২৬৮. উরওয়াহ্‌ হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] -এর স্ত্রী আয়েশাহ [রাদি.] আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এমন সময় আসরের নামাজ আদায় করিতেন যখন সূর্য কিরণ তাহাঁর কামরার মধ্যে আদায় করত। তখনো তা দেয়ালের উপর উঠে যেত না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৫৫, ইসলামিক সেন্টার-১২৬৮]

১২৬৯. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] এমন সময় আসরের নামাজ আদায় করিতেন যে, তখনো সূর্য কিরণ আমাদের কামরার মধ্যে ঝলমল করত। বেশ কিছুক্ষণ পরও কামরার মধ্যে ছায়া পড়ত না। আবু বকর বলছেনঃ এরপরও বেশ কিছুক্ষণ উপরে উঠত না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৫৬, ইসলামিক সেন্টার-১২৬৯]

১২৭০. নবী [সাঃআঃ] – এর স্ত্রী আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যে সময় আসরের নামাজ আদায় করিতেন তখন সূর্যের কিরণ তাহাঁর কামরার মধ্যে থাকত এবং তা কামরার মধ্যে থেকে উপরের দিকে [দেয়ালে] উঠে যেত না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৫৭, ইসলামিক সেন্টার-১২৭০]

১২৭১. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যে সময় আসরের নামাজ আদায় করিতেন সূর্যের কিরণ তখন আমার কামরার মধ্যেই থাকত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৫৮, ইসলামিক সেন্টার-১২৭১]

১২৭২. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা যখন ফজরের নামাজ আদায় করিবে তখন জেনে রেখো ফজরের নামাজের সময় হলো সূর্যের প্রান্তভাগ বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত। তোমরা যখন যুহরের নামাজ আদায় করিবে তখন জেনে রেখো যে, এর সময় হলো- আসরের ওয়াক্ত শুরু না হওয়া পর্যন্ত। তোমরা যখন আসরের নামাজ আদায় করিবে তখন জেনে রেখো আসরের নামাজের সময় হলো সূর্য বিবর্ণ হয়ে হলুদ [সোনালি বা তাম্রবর্ণও বলা যেতে পারে] বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত। {১৭} তোমরা যখন মাগরিবেরে নামাজ আদায় করিবে তখন জেনে রেখো যে, মাগরিবের নামাজের সময় থেকে পশ্চিম দিগন্তের রক্তিম আভা বা লালিমা অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত। আর তোমরা যখন ঈশার নামাজ আদায় করিবে তখন জেনে রেখ ইশার নামাজের সময় থাকে অর্ধেক রাত পর্যন্ত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৫৯ ইসলামিক সেন্টার-১২৭২]

{১৭} এটা হল আসল ও উত্তম ওয়াক্ত, তারপর হইবে মাকরূহ ও উযরের ওয়াক্ত। [শারহে মুসলিম-১ম খন্ড ২২২ পৃষ্ঠা]

১২৭৩. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আসরের নামাজের ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত যুহরের নামাজের ওয়াক্ত থাকে। আর সূর্য বিবর্ণ হয়ে সোনালি বা তাম্রবর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত আসরের নামাজের ওয়াক্ত থাকে। সন্ধ্যাকালীন গোধূলি বা পশ্চিম দিগন্তের রক্তিম আভা অন্তর্হিত না হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত থাকে। ইশার নামাজের সময় থাকে অর্ধ-রাত্রি পর্যন্ত। আর ফজরের নামাজের সময় থাকে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৬০, ইসলামিক সেন্টার-১২৭৩]

১২৭৪. আবু বাকর ইবনি আবু শায়বাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ও ইয়াহ্ইয়া ইবনি বুকায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] উভয়ই শুবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে হাদীসটি শুবাহ মারফূ হাদীস হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে একের অধিকবার মারফূ হিসেবে বর্ণনা করেন নি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৬১, ইসলামিক সেন্টার-১২৭৪]

১২৭৫. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যুহরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় যখন সূর্য [মাথার উপর থেকে পশ্চিম দিকে] হেলে পড়ে এবং মানুষের ছায়া তাহাঁর দৈর্ঘ্যের সমান হয়। আর আসরের নামাজের সময় না হওয়া পর্যন্ত তা থাকে। আসরের নামাজের সময় থাকে সূর্য বিবর্ণ হয়ে সোনালি বা তাম্রবর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত। মাগরিবের নামাজের সময় থাকে সূর্যাস্তের পর সন্ধ্যা গোধূলি বা পশ্চিম দিগন্তে উদ্ভাসিত লালিমা অন্তর্হিত না হওয়া পর্যন্ত। ইশার নামাজের সময় থাকে অর্ধরাত্রি অর্থাৎ- মধ্যরাত পর্যন্ত। আর ফজরের নামাজের সময় শুরু হয় ফজর বা ঊষার উদয় থেকে শুরু করে সূর্যোদয় পর্যন্ত। অতএব সূর্যোদয়ের সময় নামাজ আদায় করা বন্ধ রাখবে। কারণ সূর্য শায়ত্বনের দু শিঙয়ের মধ্যখানে উদিত হয়। {১৮}

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৬২, ইসলামিক সেন্টার-১২৭৫]

{১৮} এর উৎকৃষ্ট ব্যাখ্যা হলঃ সূর্যের উদয়কালে শাইত্বন তার মাথা সূর্যের নিকটবর্তী করে দেয় যাতে সূর্য পূজারী কাফিরদের পূজা সেও পেতে পারে | এটাই শাইত্বনের দুশিংয়ের মাঝখানের মাথা থেকে সূর্য উঠা | [শারহে মুসলিম- ১ম খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা]

১২৭৬. আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনি আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – কে নামাজের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বললেনঃ সূর্যের উপর দিকের প্রান্তভাগ দেখা না যাওয়া পর্যন্ত ফজর নামাজের সময় থাকে। যুহরের নামাজের সময় থাকে আকাশের মধ্যভাগ থেকে সূর্য গড়িয়ে আসরের সময় না হওয়া পর্যন্ত। আসরের নামাজের সময় থাকে সূর্য বিবর্ণ হয়ে সোনালি বা তাম্রবর্ণ ধারণ করার পর উপরের প্রান্তভাগ অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত। মাগরিবের নামাজের সময় থাকে সূর্যাস্ত থেকে সান্ধ্যকালীন গোধূলি বা পশ্চিম দিগন্তের লালিমা অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত। আর ইশার নামাজের সময় থাকে অর্ধ-রাত্রি পর্যন্ত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৬৩, ইসলামিক সেন্টার-১২৭৬]

১২৭৭. আবদুল্লাহ ইবনি ইয়াহ্ইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলিতে শুনেছি যে, দৈহিক আরাম উপভোগের সাথে জ্ঞানার্জন কখনও সম্ভব নয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৬৪, ইসলামিক সেন্টার- ১২৭৭]

১২৭৮. বুরায়দাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] – কে নামাজের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিল। নবী [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন, তুমি আমাদের সাথে দুদিন নামাজ আদায় কর [লোকটি তাই করিল]। সূর্য যখন মাথার উপর থেকে হেলে পড়ল তখন নবী [সাঃআঃ] বিলালকে আযান দিতে আদেশ করিলেন। বিলাল আযান দিলেন। অতঃপর তিনি তাকে ইক্বামত দিতে বললে তিনি যুহরের নামাজের ইক্বামত দিলাম [অর্থাৎ- তখন নবী [সাঃআঃ] যুহরের নামাজ আদায় করিলেন]। এরপর [আসরের সময় হলে] তিনি তাকে আসরের নামাজের ইক্বামত দিতে বলিলেন। বিলাল ইক্বামত দিলেন। নবী [সাঃআঃ] তখন আসরের নামাজ আদায় করিলেন। সূর্য তখনও বেশ উপরে ছিল এবং পরিষ্কার ও আলো ঝলমল দেখাচ্ছিল। তারপর আদেশ দিলে বিলাল মাগরিবের আযান দিলেন এবং নবী [সাঃআঃ] মাগরিবের নামাজ আদায় করিলেন তখন সূর্য ডু্বে গেছে। এরপর তিনি বিলালকে ইশার নামাজের ইক্বামত দিতে বলিলেন বিলাল ইক্বামত দিলেন এবং সূর্যাস্তের পর পশ্চিম দিগন্তে যে সান্ধ্যকালীন লালিমা বা রক্তিম আভা দেখা যায় তা অন্তর্হিত হওয়ার পরপরই ইশার নামাজ আদায় করিলেন। পরে বিলালকে তিনি ফজরের নামাজের ইক্বামত দিতে বলিলেন এবং উষার অভ্যূদয়ের সাথে সাথেই ফজরের নামাজ আদায় করিলেন। দ্বিতীয় দিনে তিনি বিলালকে আদেশ করিলেন এবং বেশ দেরী করে যুহরের নামাজ আদায় করিলেন। [দ্বিতীয় দিনে] তিনি এমন সময় আসরের নামাজ আদায় করিলেন সূর্য তখনও বেশ উপরে ছিল। তবে আগের দিনের তুলনায় বেশ দেরী করে পড়লেন। তিনি সান্ধ্যকালীন গোধূলি বা লালিমা অন্তর্হিত হওয়ার পূর্বক্ষণে মাগরিবের নামাজ আদায় করিলেন। আর রাতের এক তৃতীয়াংশ অতি বাহিত হওয়ার পর ইশার নামাজ আদায় করিলেন এবং সর্বশেষ বেশ ফর্সা হয়ে গেলে ফজরের নামাজ আদায় করিলেন। এরপর জিজ্ঞেস করলেনঃ নামাজের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেসকারী ব্যক্তি কোথায়? লোকটি তখন বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি উপস্থিত আছি। তখন নবী [সাঃআঃ] লোকটিকে বললেনঃ দুদিন যে দুটি সময়ে আমি নামাজ আদায় করলাম এরই মধ্যবর্তী সময়টুকু হলো নামাজের ওয়াক্তসমূহ।

[ই.ফা.১২৬৫, ইসলামিক সেন্টার-১২৭৮]

১২৭৯. বুরায়দাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] – এর কাছে এসে নামাজের সময় সম্পর্কে এসে জিজ্ঞেস করলে নবী [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ তুমি আমাদের সাথে নামাজ আদায় করো [জানতে পারবে]। অতঃপর ফাজরের নামাজের জন্য বিলালকে আযান দিতে আদেশ করলে তিনি [বিলাল] বেশ কিছু অন্ধকার থাকতে আযান দিলেন। তখন নবী [সাঃআঃ] উষার আলো প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে ফাজরের নামাজ আদায় করিলেন। পরে সূর্য আকাশের মধ্যভাগ থেকে হেলে পড়লে তিনি বিলালকে যুহরের নামাজের আযান দিতে বলিলেন [এবং যুহরের নামাজ আদায় করিলেন]। অতঃপর সূর্য কিছু উপরে থাকতেই তিনি বিলালকে আসরের নামাজের আযান দিতে বলিলেন [এবং আসরের নামাজ আদায় করিলেন]। তারপর সান্ধ্যকালীন গোধূলি [বা সূর্যাস্তের পর পশ্চিম দিগন্তে দৃশ্যমান রক্তিম আভা] অন্তর্হিত হওয়ার সাথে সাথে বিলালকে ইশার আযান দিতে বলিলেন [এবং ইশার নামাজ আদায় করিলেন]। পরদিন প্রত্যুষে বেশ ফর্সা হয়ে গেলে তিনি বিলালকে ফাজ্বরের নামাজের আযান দিতে বলিলেন [এবং ফাজরের নামাজ আদায় করিলেন]। তারপর যুহরের নামাজের আযান দিতে বলিলেন এবং বেশ দেরী করে [সূর্যের উত্তাপ কমলে] যুহরের নামাজ আদায় করিলেন। এরপর সূর্য তাম্র বর্ণ ধারণ করার পূর্বেই এর আলো পরিষ্কার এবং ঝলমলে থাকতেই নবী [সাঃআঃ] তাকে আসরের নামাজের আযান দিতে বলিলেন [এবং আসরের নামাজ আদায় করিলেন] এরপর সন্ধ্যা-গোধূলি অদৃশ্য হওয়ার পূর্বক্ষণে মাগরিবের নামাজের আযান দিতে বলিলেন [এবং মাগরিবের নামাজ আদায় করিলেন]। অতঃপর রাতের এক তৃতীয়াংশ অথবা কিছু অংশ [বর্ণনাকারী হারামী ইবনি উমারাহ্ সন্দেহ করিয়াছেন] অতিবাহিত হওয়ার পর ইশার নামাজের আযান দিতে বলিলেন [এবং ইশার নামাজ আদায় করিলেন]। পরদিন সকালে তিনি জিজ্ঞেস করিলেন [নামাজের সময় সম্পর্কে] প্রশ্নকারী কোথায়? [দুদিন নামাজ আদায়ের] সময়ের মধ্যে তুমি যে ব্যবধান দেখলে তার মাঝখানেই হলো নামাজের সময়।

[ই.ফা.১২৬৬, ইসলামিক সেন্টার-১২৭৯]

১২৮০. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর কাছে এসে নামাজের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি [সাঃআঃ] তাকে জবাব দিলেন না {তিনি [সাঃআঃ] কাজের মাধ্যমে তাকে দেখিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন}। বর্ণনাকারী সাহাবী আবু মূসা বলেন, উষার আগমনের সাথে সাথেই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাজরের নামাজ আদায় করিলেন। তখনও অন্ধকার এতটা ছিল যে, লোকজন একে অপরকে দেখে চিনতে পারছিল না। এরপর তিনি [সাঃআঃ] আযান দিতে আদেশ করিলেন এবং লোকজন বলাবলি করছিল যে, দুপুর হয়েছে। অথচ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এ বিষয়ে তাদের চেয়ে বেশী অবহিত। তারপর তিনি [সাঃআঃ] আসরের আযান দিতে আদেশ করিলেন এবং এমন সময় আসরের নামাজ আদায় করিলেন যখন সূর্য আকাশের বেশ উপরের দিকে ছিল। অতঃপর তিনি মাগরিবের নামাজের আযান দিতে আদেশ করিলেন এবং এমন সময় নামাজ আদায় করিলেন যখন সবেমাত্র সূর্যাস্ত হয়েছে। এরপর তিনি [সাঃআঃ] ইশার নামাজের আযান দিতে আদেশ করিলেন এবং এমন সময় ইশার নামাজ আদায় করিলেন যখন সান্ধ্যকালীন দিগন্ত লালিমা সবেমাত্র অস্তমিত হয়েছে। এরপর দিন সকালে তিনি [সাঃআঃ] ফাজরের নামাজ দেরী করে আদায় করিলেন। এতটা দেরী করে আদায় করিলেন যে, যখন নামাজ শেষ করিলেন তখন লোকজন বলাবলি করছিল- সূর্যোদয় ঘটেছে বা সূর্যোদয়ের উপক্রম হয়েছে। এরপর যুহরের নামাজ এতটা দেরী করে আদায় করিলেন যে, গত দিনের আসরের নামাজ যে সময় আদায় করে ছিলেন প্রায় সে সময় এসে গেল। অতঃপর আসরের নামাজটাও এতটা দেরী করে আদায় করিলেন যে, নামাজ শেষ করলে লোকজন বলাবলি করিতে লাগল – সূর্য রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। তারপর মাগরিবের নামাজও দেরী করে আদায় করিলেন। এতটা দেরী করিলেন যে সান্ধ্যকালীন দিগন্ত লালিমা তখন অন্তর্হিত হয়ে যাচ্ছিল। এরপর ইশার নামাজও দেরী করে আদায় করিলেন। এতটা দেরী করে আদায় করিলেন যে রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হয়ে গেল এবং অতিক্রান্ত হওয়ার উপক্রম হলো। অতঃপর সকাল বেলা প্রশ্নকারীকে ডেকে বললেনঃ এ দুটি সময়ের মধ্যবর্তী সময়টুকুই নামাজসমূহের সময় [অর্থাৎ- দুদিনে আমি একই সময়ে নামাজ আদায় না করে একই নামাজের সময়ের মধ্যে কিছু তারতম্য করে আদায় করলাম। এ উভয় সময়ের মধ্যকার সময়টুকু প্রত্যেক ওয়াক্তের প্রকৃত সময়]।

[ই.ফা.১২৬৭, ইসলামিক সেন্টার-১২৮০]

১২৮১. আবু মূসা আল আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] – এর কাছে এসে তাকে নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিল – পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের মতো। তবে এ হাদীসের বর্ণনাকারী বলেছেন যে, দ্বিতীয় দিন নবী [সাঃআঃ] সান্ধ্যকালীন দিগন্ত লালিমা অন্তর্হিত হওয়ার পূর্বে মাগরিবের নামাজ আদায় করিলেন।

[ই.ফা.১২৬৮, ইসলামিক সেন্টার-১২৮১]

৩২. অধ্যায়ঃ জামাআতে রওনাকারীর জন্য পথিমধ্যে তীব্র গ্রীস্মের সময় তাপ ঠান্ডা হয়ে আসলে যুহর আদায় করা মুস্তাহাব

১২৮২. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ গরমের প্রচন্ডতা দেখা দিলে [যুহরের] নামাজ দেরী করে গরমের প্রচন্ডতা কমলে আদায় করো। গরমের তীব্রতা জাহান্নামের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়া থেকেই হয়ে থাকে।

[ই.ফা.১২৬৯, ইসলামিক সেন্টার-১২৮২]

১২৮৩. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন ……… পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের মতো।

[ই.ফা.১২৭০, ইসলামিক সেন্টার-১২৮৩]

১২৮৪. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ গরমের দিনে [যুহরের] নামাজ [গরমের প্রচন্ডতা হ্রাস পেয়ে ঠান্ডা হলে] আদায় করো। কারণ গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ ছড়ানো থেকেই হয়ে থাকে। আমর বলেছেনঃ আবু ইউনুস আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] – এর মাধ্যমে বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা উত্তাপ ঠান্ডা হলে যুহরের নামাজ আদায় কর, কেননা গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ ছড়ানো থেকেই হয়ে থাকে। ইবনি শিহাব, ইবনি মুসাইয়্যিব এবং আবু সালামাহ্ ও আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] – এর মাধ্যমে আমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ই.ফা.১২৭১, ইসলামিক সেন্টার-১২৮৪]

১২৮৫. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এ [প্রচন্ডতা] গরম জাহান্নামের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়া থেকেই উৎপন্ন হয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা [যুহরের] নামাজ দেরী করে [গরম কমে গেলে] আদায় কর।

[ই.ফা.১২৭২, ইসলামিক সেন্টার-১২৮৫]

১২৮৬. হাম্মাম ইবনি মুনাব্বিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] আমার কাছে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তার মধ্যে একটি হলো, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তীব্র গরমের সময় নামাজ আদায় না করে পরে [গরম কমলে] নামাজ আদায় কর। কেননা, প্রচন্ড গরম জাহান্নামের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার কারণেই সৃষ্টি হয়।

[ই.ফা.১২৭৩, ইসলামিক সেন্টার-১২৮৬]

১২৮৭. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, [একদিন] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর মুয়াযযিন যুহরের নামাজের আযান দিলে নবী [সাঃআঃ] তাকে বলেছেনঃ আরে একটু ঠান্ডা হইতে দাও না। অথবা [বর্ণনাকারীর সন্দেহ] বললেনঃ কিছু সময় অপেক্ষা কর। তিনি আরো বলিলেন যে, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার কারণে হয়ে থাকে। সুতরাং গরম প্রচন্ডতা ধারণ করলে নামাজ দেরী করে একটু ঠান্ডা হলে আদায় কর। আবু যার [হাদীস বর্ণনাকারীর সহাবী] বলেনঃ [প্রচন্ড গরমের সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এমন সময় নামাজ আদায় করিতেন যে সময়] আমরা টিলার ছায়া দেখিতে পেতাম।

[ই.ফা.১২৭৪, ইসলামিক সেন্টার-১২৮৭]

১২৮৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জাহান্নাম তার প্রভু আল্লাহর কাছে এ বলে ফরিয়াদ করিল যে, তার এক অংশ আরেক অংশকে খেয়ে ফেলছে। সুতরাং আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে দুবার শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুমতি দিলেন। একবার শীতকালে এবং আরেক বার গ্রীস্মকালে। তোমরা যে প্রচন্ড গরমের অনুভব করে থাকো তা এ কারণেই।

[ই.ফা.১২৭৫, ইসলামিক সেন্টার-১২৮৮]

১২৮৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ গরমের সময় যুহরের নামাজ দেরী করে [গরমের প্রচন্ডতা কমলে] আদায় কর। কেননা, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়াতেই হয়ে থাকে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ জাহান্নাম তার প্রভু আল্লাহর কাছে অভিযোগ করলে মহান আল্লাহ তাআলা তাকে প্রতি বছর দুবার শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুমতি দিলেন। শীতকালে একবার এবং গ্রীস্মকালে একবার।

[ই.ফা.১২৭৬, ইসলামিক সেন্টার-১২৮৯]

১২৯০. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জাহান্নাম অভিযোগ করে আল্লাহর কাছে বলিল, হে আমার প্রভু! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। সুতরাং আমাকে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের অনুমতি দিন। তাই আল্লাহ তাআলা তাকে দুবার শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুমতি দান করিলেন। একবার শীত মৌসুমে আরেকবার গ্রীষ্ম মৌসুমে। তোমরা শীতকালে যে ঠান্ডা অনুভব করে থাকো তা জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণ। আবার যে গরমে বা প্রচন্ড উত্তাপ অনুভব করে থাকো তাও জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে।

[ই.ফা.১২৭৭, ইসলামিক সেন্টার-১২৯০]

৩৩. অধ্যায়ঃ প্রচন্ড রোদ না হলে যুহরের নামাজ আও্ওয়াল ওয়াক্তে আদায় করা মুস্তাহাব

১২৯১. জাবির ইবনি সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সূর্য [মাথার উপর থেকে] হেলে পড়লেই নবী [সাঃআঃ] যুহরের নামাজ আদায় করিতেন।

[ই.ফা.১২৭৮, ইসলামিক সেন্টার-১২৯১]

১২৯২. খাব্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা গরমের সময় নামাজ আদায় করা সম্পর্কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর কাছে গিয়ে অভিযোগ করলে তিনি আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করিলেন।

[ই.ফা.১২৭৯, ইসলামিক সেন্টার-১২৯২]

১২৯৩. খাব্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর কাছে গিয়ে প্রচন্ড গরমের [নামাজ আদায়ের ব্যাপারে] অভিযোগ করলাম। কিন্তু তিনি [সাঃআঃ] আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করিলেন না। বর্ণনাকারী যুহায়র বলিলেন, আমি আবু ইসহাক্বকে জিজ্ঞেস করলামঃ তারা [খাব্বাব ও অন্য সাহাবীগণ] কি যুহরের নামাজ [প্রচন্ড গরমের মধ্যে] আদায় করা সম্পর্কে অভিযোগ করেছিলেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।আমি [যুহায়র] আবারও জিজ্ঞেস করলাম [যুহরের নামাজ] আগে ভাগে অর্থাৎ- ওয়াক্তের প্রথম দিকে আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন? তিনি এবারও বলিলেন, হ্যাঁ।

[ই.ফা.১২৮০, ইসলামিক সেন্টার-১২৯৩]

১২৯৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, প্রচন্ড গরমের সময়ও আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর সাথে [যুহরের] নামাজ আদায় করতাম। আমাদের কেউ যখন [গরমের প্রচন্ডতার কারণে সাজদার সময়] কপাল মাটিতে স্থাপন করিতে পারত না তখন সে কাপড় বিছিয়ে তার উপর সেজদা করত।

[ই.ফা.১২৮১, ইসলামিক সেন্টার-১২৯৪]

৩৪. অধ্যায়ঃ আসরের নামাজ আগে আগে আদায় করা মুস্তাহাব

১২৯৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যে সময় নামাজ আদায় করিতেন সূর্য তখনও আকাশের অনেক উপরে অবস্থান করত এবং তখনও তার তেজ বিদ্যমান থাকত। [অর্থাৎ-তেজ কমে বর্ণ পরিবর্তন হত না] নামাজ শেষে যার দরকার পড়ত সে মাদীনার আওয়ালী বা শহরতলীর দিকে চলে যেত এবং সেখানে পৌছার পরেও সূর্য আকাশের বেশ উপরে থাকত।{১}

তবে বর্ণনাকারী কুতায়বাহ্ তার বর্ণনায় “তারা আওয়ালী বা শহরতলীর দিকে চলে যেত” কথাটা উল্লেখ করেননি।

[ই.ফা.১২৮২, ইসলামিক সেন্টার-১২৯৫]

{১} আওয়ালী মাদীনাহ্ নগরীর চতুস্পার্শ্বস্থ গ্রামসমূহ যেগুলো মাদীনার ২/৩ মাইল থেকে ৮ মাইল পর্যন্ত সীমানায় অবস্থিত। [শারহে মুসলিম- ১ম খন্ড ২২৫ পৃষ্ঠা] }

১২৯৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আসরের নামাজ আদায় করিতেন যখন ছায়া প্রতিটি বস্তুর সমান হত।

[ই.ফা.১২৮৩, ইসলামিক সেন্টার-১২৯৫]

১২৯৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা এমন সময় আসরের নামাজ আদায় করতাম যে নামাজের পর আমাদের মধ্যে থেকে কেউ চাইলে [মাদীনার শহরতলীর] কুবা নামক স্থানে যেয়ে পৌছত। অথচ সূর্য তখনও অনেক উপরে অবস্থান করত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ১২৯৬]

১২৯৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর সাথে এমন সময় আসরের নামাজ আদায় করতাম যে তারপর লোকজন বানী আমর ইকনু আওফ গোত্রের এলাকায় গিয়ে দেখিতে পেত যে, তারা তখন মাত্র আসরের নামাজ আদায় করছে।

[ই.ফা.১২৮৫, ইসলামিক সেন্টার-১২৯৭]

১২৯৯. আলা ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, তিনি একদিন আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] – এর বসরাস্থ বাড়ীতে গেলেন। আর বাড়ীটি মসজিদের পাশেই অবস্থিত ছিল। তিনি [আলা ইবনি আবদুর রহমান] তখন সবেমাত্র যুহরের নামাজ আদায় করছেন। আলা ইবনি আবদুর রহমান বলেনঃ আমরা তাহাঁর [আনাস ইবনি মালিকের] কাছে গেলে তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি আসরের নামাজ আদায় করেছ? আমরা জবাবে তাঁকে বললাম, আমরা এইমাত্র যুহরের নামাজ আদায় করে আসলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ যাও আসরের নামাজ আদায় করে আসো। এরপর আমরা গিয়ে আসরের নামাজ আদায় করে তার কাছে ফিরে আসলে তিনি বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ ঐ নামাজ হলো মুনাফিকের নামাজ যে বসে বসে সূর্যের প্রতি তাকাতে থাকে আর যখন তা অস্তপ্রায় হয়ে যায় তখন উঠে গিয়ে চারবার ঠোকর মেরে আসে।এভাবে সে আল্লাহকে কমই স্মরণ করিতে পারে।

[ই.ফা.১২৮৬, ইসলামিক সেন্টার-১২৯৮]

১৩০০. আবু উসামাহ্ ইবনি সাহর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা একদিন উমর ইবনি আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -এর সাথে যুহরের নামাজ আদায় করলাম এবং সেখান থেকে আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] – এর কাছে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখিতে পেলাম তিনি আসরের নামাজ আদায় করছেন। নামাজ শেষে আমি জিজ্ঞেস করলামঃ চাচাজান, এখন আপনি কোন ওয়াক্তের নামাজ আদায় করিলেন? তিনি বললেনঃ আসর , আর এটিই হচ্ছে রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নামাজ যা আমরা তার সাথে আদায় করতাম।

[ই.ফা.১২৮৭, ইসলামিক সেন্টার-১৩৯৯]

১৩০১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের সাথে আসরের নামাজ আদায় করিলেন। নামাজ শেষে বানী সালামাহ্ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি তার কাছে এসে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ] ! আমরা আমাদের একটা উট যবেহ করিতে চাই। আমরা চাই আপনিও সেখানে উপস্থিত থাকুন। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আচ্ছা, ঠিক আছে। এরপর তিনি রওয়ানা হলে আমরাও তাহাঁর সাথে রওয়ানা হলাম। আমরা গিয়ে দেখলাম উটটি তখনও যবেহ করা হয়নি। উটটি যবেহ করিতে প্রস্তুত করা হলো এবং তার কিছু গোশত রান্না করা হলো। সূর্যাস্তের পূর্বেই আমরা তা খেলাম।

[ই.ফা.১২৮৮, ইসলামিক সেন্টার-১৩০০]

১৩০২. রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে এমন সময় আসরের নামাজ আদায় করতাম যে নামাজের পর উট যাবাহ করা হত। {১} তা দশ ভাগে বিভক্ত করা হত। এরপর তা রান্না করে সূর্যাস্তের পূর্বেই সু-সিদ্ধ গোশত খেতাম।

[ই.ফা.১২৮৯, ইসলামিক সেন্টার-১৩০১]

{১} উটকে যাবাহ করা হয় না বরং নাহর করা হয়। সামনের বাম দিকে বেঁধে দাঁড়ানো অবস্থায় কন্ঠনালীর প্রথমে দুদিকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে, তারপর রক্ত ঝরে নিজে নিজেই পড়ে যায়।

১৩০৩. আওযাঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তিনি বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর যুগে আমরা আসরের নামাজের পর উট যবেহ করতাম। কিন্তু তিনি বলেননি যে, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে [আসরের] নামাজ আদায় করতাম।

[ই.ফা.১২৯০, ইসলামিক সেন্টার-১৩০২]

৩৫. অধ্যায়ঃ আসরের নামাজ ছুটে যাওয়া সম্পর্কে

১৩০৪. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তির আসরের নামাজ ক্বাযা হয় তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল। {১}

[ই.ফা.১২৯১, ইসলামিক সেন্টার-১৩০৩]

{১} অর্থাৎ আসর ছুটে যাওয়ায় তার সওয়াবের অবস্থা এমনিভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় যাতে কেবল আফসোস ও অনুতাপ দেখা দেয়। [শারহে মুসলিম ১ম খন্ড ২২৬পৃষ্ঠা] }

১৩০৫. হাদীসটি ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তবে আমর শুধু বর্ণনাই করিয়াছেন। আর আবু বাকর ইবনি আবু শায়বাহ্ মারফূ হাদীস হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন।

[ই.ফা.১২৯২, ইসলামিক সেন্টার-১৩০৪]

১৩০৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তির আসরের নামাজ ক্বাযা হলো তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল।

[ই.ফা.১২৯৩, ইসলামিক সেন্টার-১৩০৫]

১৩০৭. আলী ইবনি আবু ত্বলিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছিলেনঃ আল্লাহ তাআলা তাদের কবর ও ঘর-বাড়ী যেন আগুন দিয়ে ভরে দেন। কারণ তারা আমাদেরকে যুদ্ধের কাজ-কর্মে ব্যস্ত রেখে সলাতুল উসত্বা [আসরের নামাজ] থেকে বিরত রেখেছে এবং এ অবস্থায়ই সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল।

[ই.ফা.১২৯৪, ইসলামিক সেন্টার-১৩০৬]

১৩০৮. হইতে বর্ণীতঃ

হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] – এর মাধ্যমে একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।

[ই.ফা.১২৯৫, ইসলামিক সেন্টার-১৩০৭]

৩৬. অধ্যায়ঃ যারা বলে মধ্যবর্তী নামাজ হচ্ছে আসরের নামাজ -তার দলীল

১৩০৯. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তারা [কাফিররা] আমাদের [যুদ্ধ তৎপরতায়] ব্যস্ত রাখার কারণে আমরা আসরের নামাজ আদায় করিতে পারিনি এবং এ অবস্থায়ই সূর্য অস্তমিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আল্লাহ তাআলা যেন তাদের কবর, বাড়ী-ঘর ও পেটসমূহ আগুন দ্বারা ভর্তি করে দেন। বর্ণনাকারী শুবাহ্ ঘর-বাড়ী ও পেটসমূহ কথাটি সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করিয়াছেন।

[ই.ফা.১২৯৬, ইসলামিক সেন্টার-১৩০৮]

১৩১০. কাতাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ হাদীসে বুয়ূতাহুম ও কুবূরাহুম তাদের ঘর-বাড়ী ও কবরসমূহ সম্পর্কে কোন সন্দেহ পোষণ করেননি।

[ই.ফা.১২৯৭, ইসলামিক সেন্টার-১৩০৯]

১৩১১. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আহযাব যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একদিন খন্দকের একটি খাঁজ বা সংকীর্ণ পথের উপর বসে বললেনঃ তারা [কাফিররা] আমাদেরকে যুদ্ধে ব্যস্ত রেখে “সলাতুল উসত্বা” [মধ্যবর্তী সময়ের নামাজ বা আসরের নামাজ] আদায় করা থেকে বিরত রেখেছে এবং এমনকি এ অবস্থায়ই সূর্য অস্তমিত হয়ে গিয়েছে। আল্লাহ তাআলা ওদের কবর ও বাড়ি-ঘর অথবা [বর্ণনাকারীর সন্দেহ] বললেনঃ কবরসমূহ অথবা পেট আগুন দ্বারা যেন ভর্তি করে দেন।

[ই.ফা.১২৯৮, ইসলামিক সেন্টার-১৩১০]

১৩১২. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তারা কাফিররা আমাদেরকে যুদ্ধে ব্যস্ত রেখে সলাতুল উসত্বা [মধ্যবর্তীকালীন নামাজ, অর্থাৎ- আসরের নামাজ] থেকে বিরত রেখেছে। আল্লাহ তাআলা ওদের ঘর-বাড়ী ও কবরসমূহ আগুন দিয়ে ভরে দিন। অতঃপর তিনি এ নামাজ মাগরিব এবং ইশার নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে আদায় করিলেন। {১}

[ই.ফা.১২৯৯, ইসলামিক সেন্টার-১৩১১]

{১} নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম] আসর নামাজ আদায় করার বিলম্ব হওয়া সলাতুল খাওফ বা ভীতিকালীন নামাজের বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বেছিল। কিংবা অতি ব্যস্ততার কারণে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম] ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে শত্রুর মুকাবিলা, যুদ্ধক্ষেত্রে এবং ভুলে না গেলে নামাজ বিলম্ব করা জায়িয নেই। [শারহে মুসলিম-১ম খন্ড ২২৭ পৃষ্ঠা] }

১৩১৩. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একদিন মুশরিকগণ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে যুদ্ধে ব্যস্ত রেখে নামাজ থেকে বিরত রাখল। এমনকি সূর্য লাল অথবা [বলেছেন] তাম্রবর্ণ ধারণ করিল। এ অবস্থায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তারা [মুশরিকরা] আমাকে যুদ্ধে ব্যস্ত রেখে সলাতুল উসত্বা [মধ্যবর্তীকালীন নামাজ, অর্থাৎ- আসরের নামাজ] থেকে বিরত রাখল। আল্লাহ যেন তাদের পেট ও কবরকে আগুন দিয়ে ভরে দেন অথবা তিনি বললেনঃ [আরবী] [এখানে শুধু শাব্দিক তারতম্য দেখানো হয়েছে। অর্থের কোন পার্থক্য নেই]।

[ই.ফা.১৩০০, ইসলামিক সেন্টার-১৩১২]

১৩১৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] – এর আযাদকৃত ক্রীতদাস আবু ইউনুস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক সময়ে আয়িশাহ্ আমাকে কুরআন মাজীদের এক কপি হাতে লিখে দিতে বললেনঃ লিখতে লিখতে যখন [আরবী] “তোমরা নামাজের প্রতি যত্নবান হইবে বিশেষতঃ মধ্যবর্তী নামাজের” এ আয়াত পর্যন্ত পৌছবে তখন আমাকে জানাবে। আবু ইউনুস বলেন, আমি এ আয়াতের কাছে পৌছলে তাঁকে জানালাম। তখন তিনি আমাকে আয়াতটি এভাবে লিখতে বলিলেন,

‏ حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلاَةِ الْوُسْطَى

“সব নামাজের রক্ষণাবেক্ষণ কর। আর সলাতুল উসত্বা [মধ্যবর্তী নামাজের] ও আসরের নামাজের রক্ষণাবেক্ষণ কর এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে অনুগত ও বিনীত হয়ে দাঁড়াও”।এভাবে লেখানোর পর আয়িশাহ্ বললেনঃ আমি আয়াতটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট থেকে শুনেছি।

[ই.ফা.১৩০১, ইসলামিক সেন্টার-১৩১৩]

১৩১৫. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এ আয়াতটি এভাবে অবতীর্ণ হয়েছিল- [আরবী]। যতদিন আল্লাহর ইচ্ছা ছিল ততদিন এভাবেই আমরা আয়াতটি তিলাওয়াত করতাম। অতঃপর মহান আল্লাহ আয়াতটি মানসূখ বা বাতিল ঘোষণা করে এভাবে অবতীর্ণ করিলেন, [আরবী] [পূর্বোক্ত আয়াতটির অর্থ দাঁড়ায় নামাজ সমূহের ও আসরের নামাজের রক্ষণাবেক্ষণ করো। পরবর্তীকালে নাযিলকৃত আয়াতটির অর্থ দাঁড়ায় নামাজসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ করো এবং [আরবী] বা মধ্যবর্তী কালীন নামাজের রক্ষণাবেক্ষণ করো। বর্ণনাকারী শ্বাক্বীক ইবনি উকবাহ্ এর কাছে জনৈক ব্যক্তি বসেছিল। এ কথা শুনে তিনি বারা ইবনি আযিবকে লক্ষ্য করে বললঃ তাহলে তো এ কথা দ্বারা আসরের নামাজই বুঝায়। বারা ইবনি আযিব তাকে বললেনঃ কী পরিস্থিতিতে কেমন করে পূর্বোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল এবং কী পরিস্থিতিতে কেমন করে তা মানসূখ বা বাতিল হয়েছিল, তা আমি তোমাকে বলে দিয়েছি। আর আল্লাহ তাআলাই এ সম্পর্কে সমধিক পরিজ্ঞাত।

[ইসলামিক সেন্টার-১৩১৪]

ঈমাম মুসলিম বলেছেনঃ আশজাঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] …… বারাইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীত। তিনি বলেন, বেশ কিছু দিন যাবৎ আমরা ও নবী [সাঃআঃ] এ আয়াতটি [পূর্বোক্তরূপে] পড়তাম। ফুযায়ল ইবনি মারযূক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।

[ই.ফা.১৩০২, ইসলামিক সেন্টার-১৩১৪ [ক] ]

১৩১৬. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, খন্দকে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একদিন উমর ইবনিল খাত্তাব কাফির কুরায়শদের ভর্ৎসনা ও গালমন্দ করিতে থাকলেন। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ] ! সূর্য এখন ডুবন্ত প্রায়। কিন্তু আজ আমি এখন পর্যন্ত আসরের নামাজ আদায় করিতে পারিনি। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আল্লাহর শপথ, আমিও আজ এখন পর্যন্ত আসরের নামাজ পড়িনি। এরপর আমরা একটি কংকরময় ভূমিতে গেলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেখানে ওযূ করিলেন, আমরাও ওযূ করলাম। এরপর তিনি [আমাদের সাথে নিয়ে] আসরের নামাজ আদায় করিলেন। তখন সূর্য ডু্বে গিয়েছিল। এর [আসরের নামাজ আদায়ের] পর তিনি মাগরিবের নামাজ আদায় করিলেন।

[ই.ফা.১৩০৩, ইসলামিক সেন্টার-১৩১৫]

১৩১৭. ইয়াহ্ইয়া ইবনি আবু কাসীর হইতে বর্ণীতঃ

উক্ত সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ই.ফা.১৩০৪, ইসলামিক সেন্টার-১৩১৬]

৩৭. অধ্যায়ঃ ফজর ও আসর নামাজের ফযীলত এবং এ দুটির প্রতি যত্নবান হওয়া

১৩১৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রাতের বেলা ও দিনের বেলা মালায়িকাহ্ [ফেরেশতাগণ] এক দলের পর আর এক দল তোমাদের কাছে এসে থাকে এবং তাদের উভয় দল ফজর ও আসর নামাজের সময় একত্রিত হয়। অতঃপর যারা তোমাদের সাথে রাত্রি যাপন করেছে তারা উঠে যায়। তখন তাদের প্রভু মহান আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কিরূপ অবস্থায় রেখে আসলে? যদিও তিনি তাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত। মালায়িকাহ্ তখন বলেন, আমরা যখন তাদেরকে ছেড়ে চলে আসলাম তখন তারা নামাজ আদায় করছিল। আবার তাদের কাছে আমরা যখন গিয়েছিলাম তখনও তারা নামাজ আদায় করছিল।

[ই.ফা.১৩০৫, ইসলামিক সেন্টার-১৩১৭]

১৩১৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মালায়িকাহ্ এক দলের পর আরেক দল তোমাদের কাছে এসে থাকে। এরপর আবুয্ যিনাদ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩০৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৩১৮]

১৩২০. জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে বসেছিলাম। এক সময় তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ অচিরেই [জান্নাতে] তো তোমরা তোমাদের প্রভু আল্লাহ তাআলাকে এমন স্পষ্টভাবে দেখিতে পারবে যেন এ চাঁদকে অবাধে দেখিতে পাচ্ছ। [সুতরাং যদি এরূপ চাও] তাহলে সাধ্যমত সূর্যোদয়ের পূর্বের নামাজ এবং সূর্যাস্তের পূর্বের নামাজ উত্তম সময়ে আদায়ের মাধ্যমে আয়ত্তে রাখ। এ কথা দ্বারা তিনি ফজর ও আসরের নামাজ বুঝালেন। অতঃপর জারীর ইবনি আবদুল্লাহ এ আয়াতটি পাঠ করিলেন,

 وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا‏

“তুমি তোমার প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা ও প্রশংসা কর সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে – [সূরাহ্ ত্ব-হা ২০:১৩০] ”।

[ই.ফা.১৩০৭, ইসলামিক সেন্টার-১৩১৯]

১৩২১. আবু বাকর ইবনি আবু শায়বাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, “আবদুল্লাহ ইবনি নুমায়র, আবু উসামাহ্ ও ওয়াকী হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি এতটুকু কথা অতিরিক্ত বলেছেনঃ তোমাদেরকে তোমাদের প্রভুর দরবারে পেশ করা হইবে। তখন তোমরা তাঁকে এমনভাবে স্পষ্ট দেখিতে পাবে যেমনভাবে এ চাঁদকে দেখিতে পাচ্ছ। তিনি আরো বলেছেনঃ অতঃপর তিনি [আয়াত] পাঠ করিলেন। তবে জারীর [পাঠ করিলেন] কথাটা উল্লেখ করেননি।

[ই.ফা.১৩০৮, ইসলামিক সেন্টার-১৩২০]

১৩২২. আবু বাকর ইবনি উমারাহ্ ইবনি রুআয়বাহ্ তার পিতা রুআয়বাহ্ হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – কে বলিতে শুনেছিঃ এমন কোন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্যোদয়ের পূর্বের এবং সূর্যাস্তের পূর্বের নামাজ অর্থাৎ- ফজর ও আসরের নামাজ আদায় করে। এ কথা শুনে বাসরার অধিবাসী একটি লোক তাকে জিজ্ঞেস করিল, তুমি কি নিজে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর নিকট থেকে এ কথা শুনেছ? সে বলিল, হ্যাঁ। তখন লোকটি বলে উঠল, আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি নিজে এ হাদীসটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট থেকে শুনেছি। আমার দুকান তা শুনেছে আর মন তা স্মরণ রেখেছে।

[ই.ফা.১৩০৯, ইসলামিক সেন্টার-১৩২১]

১৩২৩. উমর ইবনি রুআয়বাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে নামাজ আদায় করিবে সে জাহান্নামে যাবে না। এ সময় তার কাছে বাসরার অধিবাসী জনৈক ব্যক্তি বসেছিল। সে বলিল, তুমি কি  নবী [সাঃআঃ] – এর নিকট থেকে এ হাদীসটি শুনেছ? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি এ হাদীসটি নবী [সাঃআঃ] -এর নিকট থেকে শুনেছি। এ কথা শুনে বাসরার অধিবাসী লোকটি বলিল-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এ হাদীসটি আমিও নবী [সাঃআঃ] -এর নিকট থেকে যে স্থানে তুমি শুনেছ সে স্থানেই শুনেছি।

[ই.ফা.১৩১০, ইসলামিক সেন্টার-১৩২২]

১৩২৪. আবু বাকর তার পিতার হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুটি ঠান্ডা সময়ের [ফজর ও আসর] নামাজ ঠিকমত আদায় করে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

[ই.ফা.১৩১১, ইসলামিক সেন্টার-১৩২৩]

১৩২৫. হাম্মাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে উপরে বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে ইবনি খিরাশ ও বিশর ইবনিস্ সারী আবু বাকরকে আবু মূসার সাথে সম্পর্কিত করে আবু বাকর ইবনি আবু মূসা বলে উল্লেখ করিয়াছেন।

[ই.ফা.১৩১২, ইসলামিক সেন্টার-১৩২৪]

৩৮. অধ্যায়ঃ সূর্যাস্তের পর মূহুর্তেই মাগরিবের নামাজ এর প্রথম ওয়াক্ত

১৩২৬. সালামাহ্ ইবনিল আকওয়া [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সূর্য অস্তমিত হয়ে অদৃশ্য হলেই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাগরিবের নামাজ আদায় করিতেন।

[ই.ফা.১৩১৩, ইসলামিক সেন্টার-১৩২৫]

১৩২৭. রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে মাগরিবের নামাজ আদায় করতাম। অতঃপর আমাদের কেউ তীর ছুঁড়ে তা পতিত হওয়ার জায়গা পর্যন্ত দেখিতে পেত [অর্থাৎ-ওয়াক্তের প্রথমেই শীঘ্র শীঘ্র নামাজ আদায় করা হত]।

[ই.ফা.১৩১৪, ইসলামিক সেন্টার-১৩২৬]

১৩২৮. রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা মাগরিবের নামাজ আদায় করতাম [উপরে বর্ণিত হাদীসের] অনুরূপ।

[ই.ফা.১৩১৫, ইসলামিক সেন্টার-১৩২৭]

৩৯. অধ্যায়ঃ ইশার সময় ও তাতে বিলম্ব করা

১৩২৯. নবী [সাঃআঃ] –এ র স্ত্রী আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একরাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইশার নামাজ- যাকে আতামাহ্ বলা হত – আদায় করিতে অনেক দেরী করিলেন। অনেক রাত পর্যন্ত রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আসলেন না। এমন কি শেষ পর্যন্ত উমর ইবনিল খাত্তাব যেয়ে বলিলেন, মেয়ে ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আসলেন এবং এসে মসজিদের লোকদেরকে বললেনঃ এ নামাজের জন্য [এত রাতে] তোমরা ছাড়া এ পৃথিবীবাসীদের আর কেউ-ই অপেক্ষা করছে না। এ ঘটনাটি ছিল মানুষের মধ্যে ইসলাম বিস্তার লাভ করার পূর্বের। হারমালাহ্ তার বর্ণনায় এতটুকু উল্লেখ করিয়াছেন যে, ইবনি শিহাব বলেছেনঃ আমার কাছে বলা হয়েছে যে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসে বললেনঃ তোমাদের জন্য এটা ঠিক নয় যে, তোমরা আল্লাহর রসূলকে নামাজের জন্য তাকিদ করিবে। উমর ইবনিল খাত্তাব যখন উচ্চৈ স্বরে ডাকলেন তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ কথাটা বলিলেন।

[ই.ফা.১৩১৬, ইসলামিক সেন্টার-১৩২৮]

১৩৩০. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উক্ত সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ সানাদে বর্ণিত হাদীসে তিনি যুহরীর কথা [আরবী] থেকে শুরু করে পরবর্তী অংশটুকু উল্লেখ করেননি।

[ই.ফা.১৩১৭, ইসলামিক সেন্টার-১৩২৯]

১৩৩১. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক দিন নবী [সাঃআঃ] ইশার নামাজ আদায় করিতে অনেক রাত করিলেন। এমনকি রাতের বড় একটা অংশ অতিবাহিত হয়ে গেল এবং মসজিদের লোকজনও ঘুমিয়ে পড়ল। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আসলেন এবং নামাজ আদায় করে বললেনঃ এটাই ইশার নামাজের উত্তম সময়। তারপর তিনি বললেনঃ যদি আমি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম [তাহলে এ সময়কে ইশার নামাজের সময় হিসেবে নির্দিষ্ট করতাম]।

আবদুর রাযযাক্ব বর্ণিত হাদীসে কিছুটা বর্ণনার তারতম্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে না দাঁড়াত।

[ই.ফা.১৩১৮, ই.ফা.১৩৩০]

১৩৩২. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন রাতে ইশার নামাজে আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করলাম। রাতের একতৃতীয়াংশ অথবা তারও বেশী সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি আমাদের কাছে আসলেন। আমরা জানি না তিনি পারিবারিক কোন কাজে ব্যস্ত ছিলেন, না অন্য কোন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি এসে আমাদেরকে বললেনঃ তোমরা এমন এক নামাজের জন্য অপেক্ষা করছ যার জন্য তোমরা ছাড়া অন্য কোন দ্বীনের লোকেরা অপেক্ষা করছেনা। [তারপর তিনি বলিলেন] আমার উম্মাতের জন্য যদি ভাল না হত তাহলে আমি তাদের সাথে প্রতিদিন এসময়েই [ইশার] নামাজ আদায় করতাম। এরপর তিনি মুয়াযযিনকে আযান দিতে আদেশ করিলেন। এরপর মুয়াযযিন ইক্বামত দিলে তিনি নামাজ আদায় করিলেন।

[ই.ফা.১৩১৯, ইসলামিক সেন্টার-১৩৩১]

১৩৩৩. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে ইশার নামাজ আদায় করিতে খুব দেরী করে ফেললেন। এমনকি আমরা সবাই মসজিদেই ঘুমিয়ে পড়লাম। তারপর জেগে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। এরপর আবার জেগে উঠলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের কাছে এসে বললেনঃ আজকের এ রাতে তোমরা ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ-ই নামাজের জন্য অপেক্ষা করছে না।

[ই.ফা.১৩২০, ইসলামিক সেন্টার-১৩৩২]

১৩৩৪. সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, লোকেরা আনাসকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর আংটি [বা সিল-মোহর] সম্পর্কে জানার জন্য জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ এক রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইশার নামাজ আদায় করিতে দেরী করিলেন। এত দেরী করিলেন যে, রাতের অর্ধেক অতিবাহিত হয়ে গেল অথবা প্রায় অর্ধেক অতিবাহিত হওয়ার উপক্রম হল। তখন তিনি আসলেন এবং বললেনঃ অনেক লোক নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে। [কিন্তু তোমরা নামাজের জন্য অপেক্ষা করছ] যে সময় থেকে তোমরা নামাজের জন্য অপেক্ষা করছ সে সময় থেকে তোমরা নামাজরত আছ। আনাস বলেছেন, আমি যেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর রৌপ্য নির্মিত আংটির চাকচিক্য বা উজ্জ্বলতা এখনও দেখিতে পাচ্ছি। এ কথা বলে আনাস তার বাঁ হাতের কনিষ্ঠ অঙ্গুলি উঠিয়ে ইশারা করিলেন [অর্থাৎ- এর দ্বারা তিনি বুঝালেন যে, আংটিটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর ঐ আঙ্গুলেই পরিহিত ছিল]।

[ই.ফা.১৩২১, ইসলামিক সেন্টার-১৩৩৩]

১৩৩৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে [ইশার নামাজ আদায় করিতে] আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করলাম। এভাবে রাত প্রায় অর্ধেক হয়ে আসল। এরপর তিনি এসে নামাজ আদায় করিলেন এবং নামাজ শেষে আমাদের দিকে ঘুরে বসলেন। আমি যেন এ মূহুর্তেও হাতের আঙ্গুলে পরিহিত আংটির উজ্জ্বলতা দেখিতে পাচ্ছি।

[ই.ফা.১৩২২, ইসলামিক সেন্টার-১৩৩৪]

১৩৩৬. কুররাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উক্ত সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।তবে তাহাঁর বর্ণনাতে পরে তিনি আমাদের দিকে ঘুরালেন কথাটি উল্লেখ করেননি।

[ই.ফা.১৩২৩, ইসলামিক সেন্টার-১৩৩৫]

১৩৩৭. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি এবং আমার সাথে যে সব সঙ্গী-সাথী ও বন্ধু-বান্ধব জাহাজে চড়ে এসেছিল সবাই বাক্বী নামক একটি কঙ্করময় স্থানে অবস্থানরত ছিলাম। আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাদীনাতে অবস্থান করছিলেন। প্রতি দিন রাতে ইশার নামাজের সময় পালা করে তাদের [আমার সাথে জাহাজে আগত বন্ধু-বান্ধব] একদল রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে [তাহাঁর সাথে ইশার নামাজ আদায় করার জন্য] যেত। আবু মূসা বলেন, একদিন [পালাক্রমে] আমি ও আমার সঙ্গী-সাথীরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর কাছে গেলাম। তিনি সেদিন কোন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাই ইশার নামাজের জন্য আসতে দেরী করিলেন। নামাজ শেষ হলে উপস্থিত সবাইকে লক্ষ্য করে তিনি বলিলেন, কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। আমি তোমাদেরকে কিছু অবহিত করছি। তোমরা সু-সংবাদ গ্রহণ কর। কারণ এটা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিআমাত যে, এ মূহুর্তে তোমরা ছাড়া অন্য কোন মানুষই নামাজ আদায় করছে না। অথবা [আবু মূসা বলেন,] এ দুটি কথার মধ্যে কোন কথাটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছিলেন তা আমার মনে নেই।

আবু মূসা বর্ণনা করেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর কাছে যা শুনলাম তাতে অত্যন্ত খুশী হয়ে ফিরে আসলাম।

[ই.ফা.১৩২৪, ইসলামিক সেন্টার-১৩৩৬]

১৩৩৮. ইবনি জুরায়জ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আত্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, ইশার নামাজ যাকে লোকে আতামাহ্ বলে থাকে- পড়ার জন্য আপনার কাছে কোন সময়টা সবচেয়ে পছন্দনীয়? [তা জানতে পারলে] ঈমাম হয়ে বা একাকী থেকে আমিও সে সময় ইশার নামাজ আদায় করতাম। এ কথা শুনে আত্বা বলিলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাসকে বলিতে শুনেছি – নবী [সাঃআঃ] একদিন ইশার নামাজ আদায় করিতে বেশ দেরী করে ফেললেন। এমনকি লোকজন [মসজিদে] ঘুমিয়ে পড়ল। পরে জেগে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। এরপর তারা আবার জেগে উঠলে উমর ইবনিল খাত্তাব উঠে গিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – কে বলিলেন, নামাজের সময় হয়েছে। আত্বা বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস বলেছেন – অতঃপর নবী [সাঃআঃ] আসলেন। আমি যেন এ মূহুর্তেও দেখছি নবী [সাঃআঃ] -এর চুল থেকে পানি টপকে পড়ছে। আর তিনি মাথার একপাশে হাত দিয়ে আছেন। তিনি বললেনঃ যদি আমি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হইবে বলে মনে না করতাম তাহলে আমি তাদেরকে এ রকম সময়েই [ইশার] নামাজ আদায় করার আদেশ করতাম। ইবনি জুরায়জ বলেন- নবী [সাঃআঃ] -এর মাথার উপর কীভাবে হাত রাখার কথা আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস তাকে বলেছেন আমি তা আত্বাকে দেখাতে বললাম। তখন আত্বা তার আঙ্গুলগুলো কিছুটা ছড়ালেন এবং আঙ্গুলের পার্শ্বদেশ মাথার পার্শ্বভাগে রাখলেন। অতঃপর আঙ্গুলগুলো মাথার উপর দিয়ে টেনে নীচের দিকে নিয়ে আসলেন। এরূপ এমনভাবে করিলেন যে, বৃদ্ধাঙ্গুলি মুখমন্ডলের দিকে কানের পার্শ্ব স্পর্শ করিল। অতঃপর কপালের পার্শ্বদেশ ও দাড়ির প্রান্তভাগ পর্যন্ত টেনে নিলেন। এ সময় খুব জোরে চাপ দিচ্ছিলেন না আবার আঙ্গুলগুলো খুব শিথিলও করছিলেন না, শুধু আলতোভাবে টেনে নিচ্ছিলেন। ইবনি জুরায়জ বলেন, আমি আত্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, নবী [সাঃআঃ] সে রাতে ইশার নামাজ কত দেরী করেছিলেন বলে আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস আপনার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ আমি জানি না। আত্বা বলিলেন, ইশার নামাজ আমি ঈমাম হিসেবে কিংবা একা আদায় করি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঐ রাতে যেভাবে দেরী করে আদায় করিয়াছেন সেভাবে দেরী করে আদায় করাই আমার কাছে সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয়। তবে লোকের সাথে জামাআতের ঈমাম হয়ে নামাজ আদায়কালে কিংবা একাকী আদায়কালে এ সময়টা যদি তোমার জন্য কষ্টকর হয় তাহলে মাঝামাঝি সময়ে আদায় করো। বেশী আগেও আদায় করোনা কিংবা বেশী বিলম্বেও আদায় করোনা।

[ই.ফা.১৩২৫, ইসলামিক সেন্টার-১৩৩৭]

১৩৩৯. জাবির ইবনি সামুরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইশার নামাজ দেরী করে আদায় করিতেন।

[ই.ফা.১৩২৬, ইসলামিক সেন্টার-১৩৩৮]

১৩৪০. জাবির ইবনি সামুরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমাদের মতো করেই নামাজ আদায় করিতেন। তবে তিনি ইশার নামাজ তোমাদের চেয়ে একটু দেরী করে আদায় করিতেন। আর তিনি নামাজ হালকা করে আদায় করিতেন।

আবু কামিল বর্ণিত হাদীসে [আরবী] শব্দটির স্থানে [আরবী] শব্দ উল্লেখ আছে। তবে উভয় শব্দের অর্থ একই।

[ই.ফা.১৩২৭, ইসলামিক সেন্টার-১৩৩৯]

১৩৪১. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – কে বলিতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ গেঁয়ো বেদুঈন লোকেরা যেন তোমাদের নামাজের নামকরণের ব্যাপারে প্রভাব বিস্তার না করে বসে। জেনে রাখো নামাজের নাম হলো ইশা। আর তারা উট দোহন করিতে দেরী করে তাই এ নামাজকেও তারা আতামাহ্ {১} বলে।

[ই.ফা.১৩২৮, ইসলামিক সেন্টার-১৩৪০]

{১} অধিকাংশ গ্রাম্য আরববাসীরা ইশার নামাজকে আতামাহ্ বলে অভিহিত করে থাকে। অথচ কুরআন মাজীদে রাতের নামাজের নাম ইশা বলে উল্লিখিত হয়েছে। কারণ তারা উট দোহন করিতে অনেক সময় দেরী করে। রাতের অন্ধকার গভীর ও গাঢ়তর হলে তারা উট দোহন করে। তাই বলা হয়েছে- তোমরা এ নামাজকে ইশার নামাজ বলবে।

১৩৪২. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ গেঁয়ো বেদুঈন লোকেরা যেন তোমাদেরকে ইশার নামাজের নামকরণের ব্যাপারে প্রভাবান্বিত না করে বসে। কেননা, আল্লাহর কিতাবে এ নামাজের নাম ইশা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃত ব্যাপার হলো তারা [গ্রাম্য লোকেরা] উট দোহনে অনেক বিলম্ব করে থাকে।

[ই.ফা.১৩২৯, ইসলামিক সেন্টার-১৩৪১]

৪০. অধ্যায়ঃ ফজরের নামাজ প্রত্যুষে প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা মুস্তাহাব যে সময়কে তাগলীস্ বলা হয় এবং তাতে কিরাআতের পরিমাণ

১৩৪৩. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মুমিন মহিলারা নবী [সাঃআঃ] -এর সাথে ফজরের নামাজ আদায় করিতেন এবং তা সর্বাঙ্গে কাপড় জড়িয়ে ঘরে ফিরতেন। [তখনও এরূপ অন্ধকার থাকত যে,] তাদেরকে কেউ চিনতে পারত না।

[ই.ফা.১৩৩০, ইসলামিক সেন্টার-১৩৪২]

১৩৪৪. নবী [সাঃআঃ] – এর স্ত্রী আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ঈমানদার স্ত্রী লোকেরা সর্বাঙ্গে চাদর জড়িয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর সাথে ফজরের নামাজ আদায় করত। কিন্তু যেহেতু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অন্ধকার থাকতেই ফজরের নামাজ আদায় করিতেন তাই নামাজ শেষে যখন তারা ঘরে ফিরত তখনও তাদেরকে চেনা যেত না।

[ই.ফা.১৩৩১, ইসলামিক সেন্টার-১৩৪৩]

১৩৪৫. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এমন সময় ফজরের নামাজ আাদয় করিতেন যে, নামাজ শেষে মেয়েরা শরীরে চাদর জড়িয়ে ঘরে ফিরত। কিন্তু তখনও এরূপ অন্ধকার থাকত যে, তাদের কাউকে চেনা যেত না।

আনসারী তার বর্ণিত হাদীসে [আরবী] শব্দের স্থানে [আরবী] উল্লেখ করিয়াছেন।

[ই.ফা.১৩৩২,ইসলামিক সেন্টার-১৩৪৪]

১৩৪৬. মুহাম্মদ ইবনি আমর ইবনি হাসান ইবনি আলী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হাজ্জাজ মাদীনাতে আসলে আমরা জাবির ইবনি আবদুল্লাহকে নামাজের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুহরের নামাজ বেলা গড়িয়ে যাওয়ার পর প্রচন্ড গরম থাকতে, আসরের নামাজ সূর্যের আলো উজ্জ্বল থাকতে, মাগরিবের নামাজ সূর্য অস্তমিত হইতে এবং ইশার নামাজ কখনো দেরী করে এবং কখনো আগে ভাগেই আদায় করিতেন। কিন্তু লোকজনের আসতে দেরী দেখলে তিনিও দেরী করে আদায় করিতেন। আর ফাজরের নামাজ বেশ অন্ধকার থাকতেই আদায় করিতেন।

[ই.ফা.১৩৩৩, ইসলামিক সেন্টার-১৩৪৫]

১৩৪৭. মুহাম্মদ ইবনি আমর ইবনিল হাসান ইবনি আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হাজ্জাজ [ইবনি ইউসুফ] নামাজ দেরী করে আদায় করিতেন। তাই আমরা জাবির ইবনি আবদুল্লাহকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

[ই.ফা.১৩৩৪, ইসলামিক সেন্টার-১৩৪৬]

১৩৪৮. সাইয়্যার ইবনি সালামাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি শুনেছি আমার পিতা সালামাহ্ আবু বারযাহ্-কে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি নিজে কি জিজ্ঞেস করিতে শুনেছ? এ কথা শুনে সাইয়্যার বললেনঃ হ্যাঁ। আমার মনে হচ্ছে যেন আমি এখনই জিজ্ঞেস করিতে শুনছি। সাইয়্যার ইবনি সালামাহ্ বললেনঃ আমি শুনলাম আমার পিতা তাকে [আবু বারযাহ্] রসূল [সাঃআঃ] -এর নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। জবাবে আবু বারযাহ্ বলিলেন- ইশার নামাজ আদায় করিতে রাত দ্বি-প্রহর পর্যন্ত দেরী করিতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মোটেই দ্বিধা করিতেন না। তবে ইশার নামাজ আদায় না করে ঘুমানো এবং ইশার নামাজের পরে কথাবার্তা বলা তিনি পছন্দ করিতেন না। শুবাহ্ বলেন, পরে এক সময়ে আবার আমি সাইয়্যার ইবনি সালামাহ্ এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমে ঢলে পড়লেই যুহরের নামাজ আদায় করিতেন। আর আসরের নামাজ এমন সময় আদায় করিতেন যে, নামাজ শেষ করে মাদীনার শহরতলীর দূরবর্তীস্থানে গিয়ে পৌছার পরও সূর্যের তেজ থাকত। এরপর সাইয়্যার ইবনি সালামাহ্ বললেনঃ মাগরিবের নামাজ কোন সময় তিনি আদায় করার কথা তিনি বলে ছিলেন তা আমি মনে করিতে পারছি না। সালামাহ্ বলেছেনঃ পরে আবার এক সময় আবু বারযার সাথে সাক্ষাৎ করে আমি তাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নামাজের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, তিনি ফাজরের নামাজ এমন সময় আদায় করিতেন যে, নামাজ শেষে লোকজন তার পাশের পরিচিত লোকের দিকে তাকিয়ে তাকে চিনতে পারত না। আবু বারযাহ্ আরো বলেছেন, ফাজরের নামাজে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ষাট থেকে একশ পর্যন্ত আয়াত তিলাওয়াত করিতেন।

[ই.ফা.১৩৩৫, ইসলামিক সেন্টার-১৩৪৭]

১৩৪৯. আবু বারযাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইশার নামাজ দেরী করে মধ্যরাতে আদায় করিতে কোন দ্বিধা বা ভ্রূক্ষেপ করিতেন না। হাদীসের বর্ণনাকারী শুবাহ্ বলেছেন, পরবর্তী সময়ে আমি আবার আবু বারযার সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি আগের কথার সাথে এ কথাটুকু যোগ করে বলেলনঃ অথবা রাতের এক তৃ্তীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করে ইশার নামাজ আদায় করিতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ভ্রূক্ষেপ করিতেন না।

[ই.ফা.১৩৩৬, ইসলামিক সেন্টার-১৩৪৮]

১৩৫০. আবু বারযাহ্ আল আসলামী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইশার নামাজ রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করে আদায় করিতেন। তিনি ইশার নামাজের পূর্বে ঘুমানো এবং কথাবার্তা বলা অপছন্দ করিতেন। আর ফাজরের নামাজে ষাট থেকে একশ আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করিতেন এবং এমন সময় নামাজ শেষ করিতেন যখন আমরা পরস্পরকে মুখ দেখে চিনতে পারতাম না।

[ই.ফা.১৩৩৭, ইসলামিক সেন্টার-১৩৪৯]


Posted

in

by

Comments

One response to “পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাজের সময়”

Leave a Reply