পরিবার পরিজনের ভরণ পোষণ, আল্লাহর আনুগত্য ও প্রতিবেশীর হক

পরিবার পরিজনের ভরণ পোষণ, আল্লাহর আনুগত্য ও প্রতিবেশীর হক

পরিবার পরিজনের ভরণ পোষণ, আল্লাহর আনুগত্য ও প্রতিবেশীর হক  >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর কয়েকটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

পরিবার পরিজনের ভরণ পোষণ, আল্লাহর আনুগত্য ও প্রতিবেশীর হক

পরিচ্ছেদ -৩৩ঃ অনাথ- এতীম , কন্যা সন্তান প্রতি দয়া।
পরিচ্ছেদ -৩৪ঃ স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার করার অসিয়ত
পরিচ্ছেদ -৩৫ঃ স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার।
পরিচ্ছেদ -৩৬ঃ পরিবার পরিজনের ভরণ পোষণ
পরিচ্ছেদ -৩৭ঃ নিজের পছন্দনীয় ও প্রিয় জিনিস খরচ করার গুরুত্ব
পরিচ্ছেদ -৩৮ঃ সমস্ত অধীনস্থদেরকে আল্লাহর আনুগত্য এর আদেশ
পরিচ্ছেদ -৩৯ঃ প্রতিবেশীর অধিকার এবং তার সাথে সদ্ব্যবহার

পরিচ্ছদঃ ৩৩ -অনাথ-এতীম, কন্যা-সন্তান ও সমস্ত দুর্বল ও দরিদ্রের সঙ্গে নম্রতা, তাদের প্রতি দয়া ও তাদের সঙ্গে বিনম্র ব্যবহার করার গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ ﴾ [الشعراء: ٢١٥]

অর্থাৎ “মু’মিনদের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনমিত রাখ।” (সূরা হিজর ৮৮ আয়াত)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ ﴾ [الكهف: ٢٨]

অর্থাৎ “তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের রবকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক হইতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না।” (সূরা কাহফ ২৮ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿ فَأَمَّا ٱلۡيَتِيمَ فَلَا تَقۡهَرۡ ٩ وَأَمَّا ٱلسَّآئِلَ فَلَا تَنۡهَرۡ ١٠ ﴾ [الضحا: ٩، ١٠]

অর্থাৎ “অতএব তুমি পিতৃহীনের প্রতি কঠোর হয়ো না এবং ভিক্ষুককে ধমক দিয়ো না।” (সূরা যুহা ৯-১০ আয়াত)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ أَرَءَيۡتَ ٱلَّذِي يُكَذِّبُ بِٱلدِّينِ ١ فَذَٰلِكَ ٱلَّذِي يَدُعُّ ٱلۡيَتِيمَ ٢ وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلۡمِسۡكِينِ ٣ ﴾ [الماعون: ١، ٣]

অর্থাৎ “তুমি কি দেখেছ তাকে, যে (দ্বীন বা) কর্মফলকে মিথ্যা মনে করে থাকে? সে তো ঐ ব্যক্তি, যে পিতৃহীনকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়। এবং সে অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদানে উৎসাহ প্রদান করে না।” (সূরা মাউন ১-৩ আয়াত)

২৬৫. সা‘দ ইবনু আবী অক্কাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা ছ’জন লোক নবী সাঃআঃ-এর সঙ্গে ছিলাম। ইতোমধ্যে মুশরিকরা নবী সাঃআঃ-কে বলল, ‘এদেরকে (আপনার মজলিস থেকে) তাড়িয়ে দিন, যেন এরা আমাদের ব্যাপারে দুঃসাহসী হইতে না পারে।’ (সা‘দ বলেন,) আমি, ইবনু মাসউদ, হুযাইল গোত্রের এক ব্যক্তি, বিলাল এবং আরও দু’জন ছিলেন, যাদের নাম আমি করছি না। অতঃপর রাসূল সাঃআঃ-এর অন্তরে আল্লাহ যা ইচ্ছা করলেন তাই ঘটল। সুতরাং তিনি মনে মনে (তাঁদেরকে তাড়ানোর) কথা ভাবলেন। যার জন্য আল্লাহ এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন, ‘‘যারা তাদের প্রতিপালককে প্রাতে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ডাকে, তাদেরকে তুমি বিতাড়িত করো না।’’ সূরা আন‘আম ৫২ আয়াত, মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ২৪১৩, ইবনু মাজাহ ৪১২৮. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৬৬. আবু হুবাইরাহ ‘আইয ইবনু ‘আমর মুযানী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

(হুদাইবিয়ার সন্ধি ও বায়‘আতের পর) আবু সুফিয়ান (কাফের অবস্থায়) সালমান, সুহাইব ও বিলালের নিকট এল। সেখানে আরো কিছু সাহাবা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা (আবু সুফিয়ানের প্রতি ইঙ্গিত করে) বললেন, ‘আল্লাহর তরবারিগুলো আল্লাহর শত্রুর হক আদায় করেনি।’ (এ কথা শুনে) আবু বকর রাঃআঃ বললেন, ‘তোমরা এ কথা কুরাইশের বয়োবৃদ্ধ ও তাদের নেতার সম্পর্কে বলছ?’

অতঃপর আবু বকর রাঃআঃ নবী সাঃআঃ-এর নিকট এলেন এবং (এর) সংবাদ দিলেন। নবী সাঃআঃ বললেন, ‘‘হে আবু বকর! সম্ভবতঃ তুমি তাদেরকে (অর্থাৎ সালমান, সুহাইব ও বেলালকে) অসন্তুষ্ট করেছ। তুমি যদি তাদেরকে অসন্তুষ্ট করে থাক, তাহলে তুমি আসলে তোমার প্রতিপালককে অসন্তুষ্ট করেছ।’’ সুতরাং আবু বকর তাঁদের নিকট এসে বললেন, ‘ভাইয়েরা! আমি কি তোমাদেরকে অসন্তুষ্ট করেছি?’ তাঁরা বললেন, ‘না। আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুক প্রিয় ভাইজান!’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ২৫০৪, আহমাদ ২০১১৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৬৭. সাহ্‌ল ইবনু সা‘দ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আমি ও এতীমের তত্ত্বাবধানকারী জান্নাতে এভাবে (পাশাপাশি) থাকব।’’ এ কথা বলার সময় তিনি (তাঁর) তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল মিলিয়ে উভয়ের মাঝে একটু ফাঁক রেখে ইশারা করে দেখালেন। (বুখারী) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৩০৪, ৬০০৫, তিরমিজী ১৯১৮, আবু দাঊদ ৫১৫০, আহমাদ ২২৩১৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৬৮. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘নিজের অথবা অপরের অনাথ (এতীমের) তত্ত্বাবধায়ক; আমি এবং সে জান্নাতে এ দু’টির মত (পাশাপাশি) বাস করব।’’ বর্ণনাকারী আনাস ইবনু মালেক রাঃআঃ তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের দিকে ইঙ্গিত করলেন। (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ২৯৮৩, আহমাদ ৮৬৬৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৬৯. (আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মিসকীন সে নয়, যাকে একটি খেজুর এবং দু’টি খেজুর এবং এক গ্রাস বা’ দুগ্রাস (অন্ন) ফিরিয়ে দেয়। বরং মিসকীন তো ঐ ব্যক্তি, যে (অভাব থাকা সত্ত্বেও) চাওয়া থেকে দূরে থাকে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪৭৬, ১৪৭৯,৪৫৩৯, মুসলিম ১০৩৯, নাসাঈ ২৫৭১, ২৫৭২, ২৫৭৩, আবু দাঊদ ১৬৩১, আহমাদ ৭৪৮৬, ২৭৪০৪, ৮৮৬৭, ৮৮৯৫, ৯৪৫৪, মুওয়াত্তা মালেক -১৪৩৭, দারেমী ১৬১৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৭০. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘বিধবা ও মিসকীনদের অভাব দূর করায় চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।’’ (হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন,) আমি ধারণা করছি যে, তিনি এ কথাও বললেন, ‘‘সে ঐ নফল নামায আদায়কারীর মত যে ক্লান্ত হয় না এবং ঐ রোযা পালনকারীর মত যে রোযা ছাড়ে না।’’ (বুখারী) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৩৫৩, ৬০০৭, ৬০০৬, মুসলিম ২৯৮২, তিরমিজী ১৯৬৯, নাসাঈ ২৫৭৭, ইবনু মাজাহ ২১৪০, আহমাদ ৮৫১৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৭১. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট খাবার ঐ অলীমার খাবার, যাতে যে (স্বয়ং) আসে তাকে (অর্থাৎ মিসকীনকে) বাধা দেওয়া হয় এবং যাকে আহ্বান করা হয় সে (অর্থাৎ ধনী) আসতে অস্বীকার করে। আর যে ব্যক্তি দাওয়াত গ্রহণ করল না, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করল।’’ (মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫১৭৭, মুসলিম ১৪৩২, আবু দাঊদ ৩৭৪২, ইবনু মাজাহ ১৯১৩, আহমাদ ৭২৩৭, ৭৫৬৯, ৭০০৮, ১০০৪০, মুওয়াত্তা মালেক -১১৬০, দারেমী ২০৬৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৭২. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দু’টি কন্যার লালন-পালন তাদের সাবালিকা হওয়া অবধি করিবে, কিয়ামতের দিন আমি এবং সে এ দু’টি আঙ্গুলের মত পাশাপাশি আসব।’’ অতঃপর তিনি তাঁর আঙ্গুলগুলি মিলিত করে (দেখালেন)। (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ২৬৩১, তিরমিজী ১৯১৪, আহমাদ ১২০৮৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৭৩. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক মহিলা তার দু’টি মেয়ে সঙ্গে নিয়ে আমার নিকট ভিক্ষা চাইল। অতঃপর সে আমার নিকট একটি খুরমা ব্যতীত কিছুই পেল না। সুতরাং আমি তা তাকে দিয়ে দিলাম। মহিলাটি তার দু’মেয়েকে খুরমাটি ভাগ করে দিল এবং সে নিজে তা থেকে কিছুই খেল না, অতঃপর সে উঠে বের হয়ে গেল। ইতোমধ্যে নবী সাঃআঃ এলেন। আমি তাঁকে বিষয়টি জানালাম। তখন তিনি বললেন, ‘‘যাকে এই কন্যা সন্তান দিয়ে কোনো পরীক্ষায় ফেলা হয়, তারপর যদি সে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে, তাহলে এ কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে অন্তরাল হবে।’’ (বুখারী, মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪১৮, ৫৯৯৫, মুসলিম ২৬২৯, তিরমিজী ১৯১৫, আহমাদ ২৩৫৩৬, ২৪০৫১, ২৪০৯০, ২৪৮০৪, ২৫৫২৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৭৪. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক মিসকীন মহিলা তার দু’টি কন্যাকে (কোলে) বহন করে আমার কাছে এল। আমি তাকে তিনটি খুরমা দিলাম। অতঃপর সে তার কন্যা দু’টিকে একটি একটি করে খুরমা দিল এবং সে নিজে খাবার জন্য একটি খুরমা মুখ-পর্যন্ত তুলল। কিন্তু তার কন্যা দু’টি সেটিও খেতে চাইল। সুতরাং মহিলাটি যে খেজুরটি নিজে খেতে ইচ্ছা করেছিল, সেটিকে দু’ভাগে ভাগ করে তাদের মধ্যে বণ্টন করে দিল। সুতরাং তার (এ) অবস্থা আমাকে মুগ্ধ করল। তাই আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট মহিলাটির ঘটনা বর্ণনা করলাম। নবী সাঃআঃ বললেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য তার এ কাজের বিনিময়ে জান্নাত ওয়াজেব করে দিয়েছেন অথবা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন।’’ (মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪১৮, ৫৯৯৫, মুসলিম ২৬৩০, ২৯২৯, তিরমিজী ১৯১৫, ইবনু মাজাহ ৩৬৬৮, আহমাদ ২৩৫৩৫, ২৪০৫১, ২৪০৯০, ২৪৮০৪, ২৫৫২৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৭৫. আবু শুরাইহ্ খুওয়াইলিদ ইবনু ‘আমর খুযা‘য়ী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘হে আল্লাহ! আমি লোকদেরকে দুই শ্রেণীর দুর্বল মানুষের অধিকার সম্বন্ধে পাপাচারিতার ভীতিপ্রদর্শন করছি; এতীম ও নারী।’’ (নাসাঈ, উত্তম সূত্রে) [১]

[১] ইবনু মাজাহ ৩৬৭৮, আহমাদ ৯৩৭৪. হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

২৭৬. মুসআব ইবনু সা‘দ ইবনু আবী অক্কাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

(তাঁর পিতা) সা‘দ ধারণা করলেন যে, তার চেয়ে নিম্নশ্রেণীর লোকের উপর তাঁর মর্যাদা রয়েছে। নবী সাঃআঃ বললেন, ‘‘তোমাদেরকে দুর্বলদের কারণেই সাহায্য করা হয় এবং রুযী দেওয়া হয়।[1

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮৯৬, নাসাঈ ৩১৭৮, আহমাদ ১৪৯৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৭৭. আবু দারদা উআইমির রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমার জন্য তোমরা দুর্বলদেরকে খুঁজে আনো, কেননা তোমাদের দুর্বলদের কারণেই তোমাদেরকে সাহায্য করা হয় এবং রুযী দেওয়া হয়।’’ (আবু দাঊদ, উত্তম সূত্রে) [১]

[১] তিরমিজী ১৭০২, আবু দাঊদ ২৫৯৪. হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৩৪ -স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার করার অসিয়ত

২৭৮. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য মঙ্গলকামী হও। কারণ নারীকে পাঁজরের (বাঁকা) হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বেশী বাঁকা হল তার উপরের অংশ। যদি তুমি এটাকে সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলে তো বাঁকাই থাকবে। তাই তোমরা নারীদের জন্য মঙ্গলকামী হও।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৩৩১, ৫১৮৪, ৫১৮৬, ৬০১৮, ৬১৩৬, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮, তিরমিজী ১১৮৮. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৭৯.আব্দুল্লাহ ইবনু যামআহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ-কে খুৎবাহ দিতে শুনলেন। তিনি (খুৎবার মাধ্যমে) (সালেহ নবীর) উটনী এবং ঐ ব্যক্তির কথা আলোচনা করলেন, যে ঐ উঁটনীটিকে কেটে ফেলেছিল। অতঃপর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘যখন তাদের মধ্যকার সর্বাধিক হতভাগ্য ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠল। (সূরা শাম্‌স ১২ আয়াত) (অর্থাৎ) উঁটনীটিকে মেরে ফেলার জন্য নিজ বংশের মধ্যে এক দুরন্ত চরিত্রহীন প্রভাবশালী ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠেছিল।’’

অতঃপর নবী সাঃআঃ মহিলাদের কথা আলোচনা করলেন এবং তাদের ব্যাপারে উপদেশ প্রদান করলেন। তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ কেউ তার স্ত্রীকে দাসদের মত প্রহার করে। অতঃপর সম্ভবত দিনের শেষে তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। (এরূপ উচিত নয়।)’’ পুনরায় তিনি তাদেরকে বাতকর্মের (বায়ু নির্গত) ব্যাপারে হাসতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ এমন কাজে কেন হাসে, যে কাজ সে নিজেও করে?’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৩৭৭, ৪৯৪২,৫২০৪, ৬০৪২, মুসলিম ২৮৫৫, তিরমিজী ৩৩৪৩, ইবনু মাজাহ ১৯৮৩, আহমাদ ১৫৭৮৮, দারেমী ২২২০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৮০. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘কোন ঈমানদার পুরুষ যেন কোন ঈমানদার নারী (স্ত্রীকে) ঘৃণা না করে। যদি সে তার একটি আচরণে অসন্তুষ্ট হয়, তবে অন্য আচরণে সন্তুষ্ট হবে।’’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ১৪৬৯, আহমাদ ৮১৬৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৮১. ‘আমর ইবনু আহ্ওয়াস জুশামী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বিদায় হজ্জে নবী সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছেন, তিনি সর্বপ্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করলেন এবং উপদেশ দান ও নসীহত করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘শোনো! তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। কেননা, তারা তোমাদের নিকট কয়েদী। তোমরা তাদের নিকটে এ (শয্যা-সঙ্গিনী হওয়া, নিজের পবিত্রতা রক্ষা করা এবং তোমাদের মালের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি) ছাড়া অন্য কোনও জিনিসের অধিকার রাখ না। হ্যাঁ, সে যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতার কাজ করে (তাহলে তোমরা তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার রাখ)।

সুতরাং তারা যদি এমন কাজ করে, তবে তাদেরকে বিছানায় আলাদা ছেড়ে দাও এবং তাদেরকে মার। কিন্তু সে মার যেন যন্ত্রণাদায়ক না হয়। অতঃপর তারা যদি তোমাদের অনুগত হয়ে যায়, তবে তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। মনে রেখ, তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছে, অনুরূপ তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে। তোমাদের অধিকার হল, তারা যেন তোমাদের বিছানায় ঐ সব লোককে আসতে না দেয়, যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর এবং তারা যেন ঐ সব লোককে তোমাদের বাড়ীতে প্রবেশ করার অনুমতি না দেয়, যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর। আর শোনো! তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, তাদেরকে ভালোরূপে খেতে-পরতে দেবে।’’ (তিরমিজী, হাসান সূত্রে) [১]

[১] তিরমিজী ১১৬৩, ইবনু মাজাহ ১৮৫১. হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

২৮২. মুআবিয়াহ ইবনু হাইদাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো স্ত্রীর অধিকার স্বামীর উপর কতটুকু?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি খেলে তাকে খাওয়াবে এবং তুমি পরলে তাকে পরাবে। (তার) চেহারায় মারবে না, তাকে ‘কুৎসিত হ’ বলবে না এবং তার থেকে পৃথক থাকলে বাড়ীর ভিতরেই থাকবে।’’ (অর্থাৎ অবাধ্য স্ত্রীকে বাধ্য করার জন্য বিছানা পৃথক করতে পারা যাবে, কিন্তু রুম পৃথক করা যাবে না।) (আবু দাঊদ, হাসান সূত্রে) [১]

[১] আবু দাঊদ ২১৪২, ২১৪৩, ২১৪৪, ইবনু মাজাহ ১৮৫০. হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

২৮৩. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের মধ্যে সবার চেয়ে পূর্ণ মু’মিন ঐ ব্যক্তি যে চরিত্রে সবার চেয়ে সুন্দর, আর তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে নিজের স্ত্রীর জন্য সর্বোত্তম।’’ (তিরমিজী) [১]

[১] তিরমিজী ১১৬২, আহমাদ ৭৩৫৪, ৯৭৫৬, ১০৪৩৬, দারেমী ২৭৯২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৮৪. ইয়াস ইবনু আব্দুল্লাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে প্রহার করিবে না।’’ পরবর্তীতে উমার রাঃআঃ রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট এসে বললেন, ‘মহিলারা তাদের স্বামীদের উপর বড় দুঃসাহসিনী হয়ে গেছে।’ সুতরাং নবী সাঃআঃ প্রহার করার অনুমতি দিলেন। অতঃপর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর পরিবারের নিকট বহু মহিলা এসে নিজ নিজ স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আরম্ভ করল। সুতরাং রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘মুহাম্মাদের পরিবারের নিকট প্রচুর মহিলাদের সমাগম, যারা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। (জেনে রাখ, মারকুটে) ঐ (স্বামী)রা তোমাদের মধ্যে ভালো মানুষ নয়।’’ (আবু দাঊদ, বিশুদ্ধ সূত্রে) [১]

[১] আবু দাঊদ ২১৪৬, ইবনু মাজাহ ১৯৮৫, দারেমী ২২১৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৮৫. আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘পৃথিবী এক উপভোগ্য সামগ্রী এবং তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সামগ্রী হচ্ছে পুণ্যময়ী নারী।’’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ১৪৬৭, নাসাঈ ৩২৩২, ইবনু মাজাহ ১৮৫৫, আহমাদ ৬৫৩১. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৩৫-স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ ﴾ [النساء: ٣٤]

অর্থাৎ “পুরুষ নারীর কর্তা। কারণ, আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন এবং এ জন্য যে পুরুষ (তাদের জন্য) ধন ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যময়ী নারীরা অনুগতা এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে লোক-চক্ষুর অন্তরালে (স্বামীর ধন ও নিজেদের ইজ্জত) রক্ষাকারিণী; আল্লার হিফাযতে (আদেশ ও তওফীকে) তারা তা হিফাযত করে।” (সূরা নিসা ৩৪ আয়াত)

২৮৬.আমর ইবনু আহওয়াস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

এর (২৮১নং) হাদীসটি অন্যতম।

হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৮৭

আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যদি কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় ডাকে এবং সে না আসে, অতঃপর সে (স্বামী) তার প্রতি রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায়, তাহলে ফিরিশতাগণ তাকে সকাল অবধি অভিসম্পাত করতে থাকেন।’’ (বুখারী, মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৩২৩৭, ৫১৯৩, ৫১৯৪, মুসলিম ১৪৩৬, আবু দাঊদ ২১৪১, আহমাদ ৭৪২২, ৮৩৭৩, ৮৭৮৬, ৯৭০২, ৯৮৬৫, ১০৫৬৩. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৮৮. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া কোনো নারীর জন্য নফল রোযা রাখা বৈধ নয় এবং স্বামীর সম্মতি ব্যতিরেকে তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়াও তার জন্য বৈধ নয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম, শব্দগুলি বুখারীর) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫১৯৫, ২০৬৬, ৫১৯২, ৫৩৬০, মুসলিম ১০২৬, আবু দাঊদ ১৬৮৭, আহমাদ ২৭৪০৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৮৯. ইবনু উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকেই অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করিবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামী ও সন্তানের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। অতএব প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)[১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৫৫৮, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫২০০, ৭১৩৮, মুসলিম ১৮২৯, তিরমিজী ১৭০৫, আবু দাঊদ ২৯২৮, আহমাদ ৪৪৮১, ৫১৪৫, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭, ৫৯৯০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৯০. আবু আলী ত্বাল্‌ক ইবনু আলী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, ‘‘যখন কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার প্রয়োজনে আহ্বান করিবে, তখন সে যেন (তৎক্ষণাৎ) তার নিকট যায়। যদিও সে উনানের কাছে (রুটি ইত্যাদি পাকানোর কাজে ব্যস্ত) থাকে।’’ (তিরমিজী হাসান সূত্রে) [১]

[১] তিরমিজী ১১৬০. হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

২৯১. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘আমি যদি কাউকে কারো জন্য সিজদাহ করার আদেশ করতাম, তাহলে নারীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদাহ করে।’’ (তিরমিজী হাসান সূত্রে) [১]

[১] তিরমিজী ১১৫৯. হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

২৯২. উম্মু সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, স্ত্রীর প্রতি তার স্বামী সন্তুষ্ট ও খুশি থাকা অবস্থায় কোনো স্ত্রীলোক মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। হাদীসটি ইমাম তিরমিযি বর্ণনা করিয়াছেন এবং বলেছেন এটা হাসান হাদীস।[১]

[১] আমি (আলবানী) বলছিঃ এর সনদে দু’জন মাজহূল বর্ণনাকারী রয়েছেন। তাদের সম্পর্কে আমি ‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ গ্রন্থের (১৪২৬) নং হাদীসে আলোচনা করেছি। বর্ণনাকারী মুসাবির আলহিমইয়ারী ও তার মা তারা উভয়ে মাজহূল (অপরিচিত)। ইবনুল জাওযী ‘‘আলওয়াহিয়্যাত’’ গ্রন্থে (২/১৪১) উভয়কেই মাজহূল আখ্যা দিয়েছেন। আর ইবনু হাজার ছেলে মুসাবির মাজহূল হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করিয়াছেন। আর তার পূর্বে হাফিয যাহাবী ‘‘আলমীযান’’ গ্রন্থে ছেলে মুসাবির সম্পর্কে বলেনঃ তার ব্যাপারে অজ্ঞতা রয়েছে আর এ হাদীসটি মুনকার। আর তার মা সম্পর্কে বলেছেনঃ তার থেকে ছেলে মুসাবির এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। অতএব মাও মাজহূলাহ্। তা সত্ত্বেও হাফিয যাহাবী তার ‘‘আত্তালখীস’’ গ্রন্থে ভুল করে ভিন্ন কথা বলেছেন, যে গ্রন্থের মধ্যে বহু সন্দেহযুক্ত কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস

২৯৩. মু‘আয ইবনু জাবাল হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘যখনই কোনো মহিলা দুনিয়াতে নিজ স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখনই তার সুনয়না হূর (জান্নাতী) স্ত্রী (অদৃশ্যভাবে) ঐ মহিলার উদ্দেশ্যে বলে, ‘আল্লাহ তোকে ধ্বংস করুন। ওকে কষ্ট দিস্ না। ও তো তোর নিকট সাময়িক মেহমান মাত্র। অচিরেই সে তোকে ছেড়ে আমাদের কাছে এসে যাবে।’’ (তিরমিজী) [১]

[১] তিরমিজী ১১৭৪, ইবনু মাজাহ ২০১৪. হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

২৯৪. উসামাহ ইবনু যায়েদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘আমি আমার পর পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বেশী ক্ষতিকারক অন্য কোন ফিতনা ছাড়লাম না।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫০৯৬, মুসলিম ২৭৪০, ২৭৪১, তিরমিজী ২৭৮০, ইবনু মাজাহ ৩৯৯৮, আহমাদ ২১২৩৯, ২১৩২২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৩৬ -পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَعَلَى ٱلۡمَوۡلُودِ لَهُۥ رِزۡقُهُنَّ وَكِسۡوَتُهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ ﴾ [البقرة: ٢٣٣]

অর্থাৎ “জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণ-পোষণ করা।” (সূরা বাক্বারাহ ২৩৩ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿ لِيُنفِقۡ ذُو سَعَةٖ مِّن سَعَتِهِۦۖ وَمَن قُدِرَ عَلَيۡهِ رِزۡقُهُۥ فَلۡيُنفِقۡ مِمَّآ ءَاتَىٰهُ ٱللَّهُۚ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا مَآ ءَاتَىٰهَاۚ ﴾ [الطلاق: ٧]

অর্থাৎ “সামর্থ্যবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করিবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করিয়াছেন, তা হইতে ব্যয় করিবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তার চেয়ে গুরুতর বোঝা তিনি তার উপর চাপান না।” (সূরা ত্বালাক্ব ৭ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেন,

﴿وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ ﴾ [سبا: ٣٩]

অর্থাৎ “তোমরা যা কিছু ব্যয় করিবে, তিনি তার বিনিময় দেবেন।” (সূরা সাবা ৩৯ আয়াত)

২৯৫. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘এক দ্বীনার (স্বর্ণমুদ্রা) তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় কর, এক দ্বীনার ক্রীতদাস মুক্ত করার কাজে ব্যয় কর, এক দ্বীনার কোন মিসকীনকে সদকাহ কর এবং এক দ্বীনার তুমি পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় কর। এ সবের মধ্যে ঐ দ্বীনারের বেশী নেকী রয়েছে যেটি তুমি পরিবার-পরিজনের উপর ব্যয় করিবে।’’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ৯৯৫, আহমাদ ৯৭৬৯, ৯৮১৮. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৯৬. গোলাম আবু আব্দুল্লাহ মতান্তরে আবু আব্দুর রহমান সাওবান ইবনু বুজদুদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘(সওয়াবের দিক দিয়ে) সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীনার সেইটি, যে দ্বীনারটি মানুষ নিজ সন্তান-সন্ততির উপর ব্যয় করে, যে দ্বীনারটি আল্লাহর রাস্তায় তার সওয়ারীর উপর ব্যয় করে এবং সেই দ্বীনারটি যেটি আল্লাহর পথে তার সঙ্গীদের পিছনে খরচ করে।’’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ৯৯৪, তিরমিজী ১৯৬৬, ইবনু মাজাহ ২৭৬০, আহমাদ ২১৮৭৫, ২১৯০০, ২১৯৪৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৯৭.উম্মে সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ হইতে বর্ণিতঃ

একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি (আমার প্রথম স্বামী) আবু সালামাহর সন্তান-সন্ততির উপর ব্যয় করি, তাতে কি আমি নেকী পাব? আমি তো তাদেরকে এভাবে ছেড়ে দিতে পারছি না, তারা তো আমারই সন্তান।’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তাদের উপর ব্যয় করার দরুন নেকী পাবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪৬৭, ৫৩৬৯, মুসলিম ১০০১, আহমাদ ২৫৯৭০, ২৬১০২, ২৬১৩১. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৯৮. সা‘দ ইবনু আবী অক্কাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি তাঁর দীর্ঘ (বিগত ৬ নম্বর) হাদীসে বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃআঃ তাঁকে বলেছেন, ‘‘আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যা ব্যয় করিবে, তোমাকে তার বিনিময় দেওয়া হবে। এমনকি তুমি যে গ্রাস তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তারও বিনিময় তুমি পাবে!’’ (বুখারী, মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৬, ১২৯৬, ২৭৪২, ২৭৪৪, ৩৯৩৮, ৫৩৫৪, ৫৬৫৮, ৬৩৭৩, ৬৭৩৩, মুসলিম ১৬২৮, তিরমিজী ৯৭৫, ২১১৬, ৩০৭৯, ৩১৮৯, নাসাঈ ৩৬২৬, ৩৬২৭, ৩৬২৮, ৩৬৩০, আবু দাঊদ ২৭৪০, ২৮৬৪, ৩১০৪, ইবনু মাজাহ ২৭০৮, আহমাদ ১৪৪৩, ১৪৭৭, ১৪৮২, ১৪৯১, ১৫০৪, ১৫২৭, ১৫৪৯, ১৬০২, মুওয়াত্তা মালেক ১৪৯৫, দারেমী ৩১৯৫, ৩১৯৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

২৯৯. আবু মাসউদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘সওয়াবের আশায় কোন মুসলিম যখন তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে, তখন তা সাদকাহ হিসাবে গণ্য হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১].

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৫, ৪০০৬, ৫৩৫১, মুসলিম ১০০২, তিরমিজী ১৯৬৫, নাসাঈ ২৫৪৫, আহমাদ ১৬৬৩৪, ১৬৬৬১, ২১৮৪২, দারেমী ২৬৬৪. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩০০. আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু আস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘একটি মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এটা যথেষ্ট যে, সে তাদের (অধিকার) নষ্ট করিবে (অর্থাৎ তাদের ভরণ-পোষণে কার্পণ্য করিবে) যাদের জীবিকার জন্য সে দায়িত্বশীল।’’ (আবু দাঊদ প্রমুখ, সহীহ) [১]

[১] মুসলিম ৯৯৬, আবু দাঊদ ১৬৯২, আহমাদ ৬৪৫৯, ৬৭৮০, ৬৭৮৯, ৬৮০৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩০১. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন সকালে দু’জন ফিরিশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের বিনিময় দিন।’ আর অপরজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস দিন।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ৯৯৬, আবু দাঊদ ১৬৯২, আহমাদ ৬৪৫৯, ৬৭৮৯, ৬৮০৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৩৭ -নিজের পছন্দনীয় ও প্রিয় জিনিস খরচ করার গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ ﴾ [ال عمران: ٩٢]

অর্থাৎ “তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ।” (সূরা আলে ইমরান ৯২ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا كَسَبۡتُمۡ وَمِمَّآ أَخۡرَجۡنَا لَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِۖ وَلَا تَيَمَّمُواْ ٱلۡخَبِيثَ مِنۡهُ تُنفِقُونَ وَلَسۡتُم بِ‍َٔاخِذِيهِ إِلَّآ أَن تُغۡمِضُواْ فِيهِۚ ﴾ [البقرة: ٢٦٧]

অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি জমি হইতে তোমাদের জন্য যা উৎপাদন করে থাকি, তা থেকে যা উৎকৃষ্ট তা দান কর। এমন মন্দ জিনিস দান করার সংকল্প করো না, যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহণ কর না।” (সূরা বাক্বারাহ ২৬৭ আয়াত)

৩০২. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মদ্বীনার আনসারীগণের মধ্যে আবু তালহা রাঃআঃ সবচেয়ে অধিক খেজুর-বাগানের মালিক ছিলেন। মসজিদে নববীর নিকটবর্তী বায়রুহা নামক বাগানটি তাঁর কাছে অধিক প্রিয় ছিল। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁর বাগানে প্রবেশ করে সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস রাঃআঃ বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল; যার অর্থ, ‘‘তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ।’’ (আলে ইমরান ৯২আয়াত)

তখন আবু তালহা রাঃআঃ আল্লাহর রাসূল সাঃআঃ-এর নিকট গিয়ে বললেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! আল্লাহ আপনার উপর (আয়াত) অবতীর্ণ করে বলেছেন, ‘‘তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ।’’ আর বায়রুহা বাগানটি আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে সদকাহ করা হল। আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার জন্য জমা হয়ে থাকবে। কাজেই আপনি যাকে দান করা ভাল মনে করেন, তাকে দান করে দিন।’

তখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘আরে! এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ, তা শুনেছি। আমি মনে করি, তুমি তোমার আপন-জনদের মধ্যে তা বণ্টন করে দাও।’’ আবু তালহা রাঃআঃ বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তাই করব।’ তারপর তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশধরদের মধ্যে তা বণ্টন করে দিলেন। (বুখারী-মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪৬১, ২৩১৮, ২৭৫২, ২৭৬৯, ৪৫৫৫, ৪৬১১, মুসলিম ৯৯৮, তিরমিজী ২৯৯৭, নাসাঈ ৩৬০২, আবু দাঊদ ১৬৮৯, আহমাদ ১১৭৩৪, ১২০৩০, ১৩২৭৬, ১৩৩৫৬, ১৩৬২২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৩৮ -পরিবার-পরিজন, স্বীয় জ্ঞানসম্পন্ন সন্তান-সন্ততি ও আপন সমস্ত অধীনস্থদেরকে আল্লাহর আনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর অবাধ্যতা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা, তাদেরকে আদব শেখানো এবং শর‘য়ী নিষিদ্ধ জিনিস থেকে তাদেরকে বিরত রাখা ওয়াজিব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَأۡمُرۡ أَهۡلَكَ بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱصۡطَبِرۡ عَلَيۡهَاۖ ﴾ [طه: ١٣٢]

অর্থাৎ “তুমি তোমার পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ দাও এবং ওতে অবিচলিত থাক।” (সূরা ত্বাহা ১৩২আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦ ﴾ [التحريم: ٦]

অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি হইতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম-হৃদয়, কঠোর-সবভাব ফিশিতাগণ, যারা আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে।”

(সূরা তাহরীম ৬ আয়াত)

৩০৩. وفي رِوَايَةٍ: أنَّا لا تَحِلُّ لَنَا الصَّدَقَةُ

আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

হাসান ইবনু আলী রাঃআঃ সাদকার একটি খুরমা নিয়ে তাঁর মুখে রাখলেন। তা দেখে রসুলুল্লাহ রাঃআঃ বললেন, ‘‘ছিঃ ছিঃ! ফেলে দাও। তুমি কি জান না যে, আমরা সাদকাহ খাই না?’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪৯১, ১৪৮৫, ৩০৭২, মুসলিম ১০৬৯, আহমাদ ৭৭০০, ৯০১৪. ৯০৫৩, ৯৪৩৫, ২৭২৫৭, ৯৮১৭, দারেমী ১৬৪২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩০৪. আবু হাফ্‌স উমার ইবনু আবী সালামা আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল আসাদ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘একদা আমি ছোট হিসাবে নবী সাঃআঃ-এর কোলে ছিলাম। খাবার (সময়) বাসনে আমার হাত ঘুরছিল। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাকে বললেন, ‘‘ওহে কিশোর! ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ডান হাতে আহার কর এবং তোমার কাছ থেকে খাও।’’ তারপর থেকে আমি সব সময় এ পদ্ধতিতেই আহার করে আসছি।’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৩৭৬, ৫৩৭৭, ৫৩৭৮, মুসলিম ২০২২, আবু দাঊদ ৩৭৭৭, ইবনু মাজাহ ৩২৬৭, আহমাদ ১৫৮৯৫, ১৫৯০২, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৩৮, দারেমী ২০১৯, ২০৪৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩০৫. ইবনু উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ কে বলতে শুনেছি, ‘‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করিবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। গোলাম তার মনিবের সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। অতএব প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৫৫৮, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫২০০, ৭১৩৮, মুসলিম ১৮২৯, তিরমিজী ১৭০৫, আবু দাঊদ ২৯২৮, আহমাদ ৪৪৮১, ৫১৪৫, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭, ৫৯৯০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩০৬. আমর ইবনু শুআইব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নামাযের আদেশ দাও; যখন তারা সাত বছরের হবে। আর তারা যখন দশ বছরের সন্তান হবে, তখন তাদেরকে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’’ (আবু দাঊদ, হাসান সূত্রে)[১]

[১] আবু দাঊদ ৪৯৫, আহমাদ ১৬৬৫০, ৬৭১৭. হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

৩০৭. আবু সুরাইয়াহ সাবরাহ ইবনু মা‘বাদ জুহানী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমরা শিশুকে সাত বছর বয়সে নামায শিক্ষা দাও এবং দশ বছর বয়সে তার জন্য তাকে মার।’’ (আবু দাঊদ, তিরমিজী) [১]

[১] তিরমিজী ৪০৭, আবু দাঊদ ৪৯৪ দারেমী ১৪৩১. হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৩৯ -প্রতিবেশীর অধিকার এবং তার সাথে সদ্ব্যবহার করার গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗا وَبِذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡجَارِ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡجَارِ ٱلۡجُنُبِ وَٱلصَّاحِبِ بِٱلۡجَنۢبِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۗ﴾ [النساء: ٣٦]

অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর। (সূরা নিসা ৩৬ আয়াত)

৩০৮. ইবনু উমার ও আয়েশা (রাঃ আনহুমা)  হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘জিবরীল আমাকে সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসিয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হল যে, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারেস বানিয়ে দেবেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০১৪, মুসলিম ২৬২৪, তিরমিজী ১৯৪২, আবু দাঊদ ৫১৫১, ইবনু মাজাহ ৩৬৭৩, আহমাদ ২৩৭৩৯, ২৪০৭৯, ২৪৪২১, ২৫০১২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩০৯. আবু যার্র রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

একদা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘হে আবু যার্র! যখন তুমি ঝোল (ওয়ালা তরকারি) রান্না করিবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশী কর এবং তোমার প্রতিবেশীদের খেয়াল রাখ।’’ (মুসলিম) [১]

[১] মুসলিম ২৬২৫, ইবনু মাজাহ ৩৩৬২, আহমাদ ২০৮১৭, ২০৮৭৩, ২০৯১৮, ২০৯১০, দারেমী ২০৭৯. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩১০. আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।’’ জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন্ ব্যক্তি? হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০১৬, আহমাদ ১৫৯৩৫, ২৬৬২০. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩১১. আবু হুরায়রা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীর উপঢৌকনকে তুচ্ছ মনে না করে; যদিও তা ছাগলের পায়ের ক্ষুর হোক না কেন। (বুখারী, মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৫৬৬, ৬০৪৭, মুসলিম ১০৩০, তিরমিজী ২১৩০, আহমাদ ৭৫৩৭, ৮০০৫, ৯২৯৭, ১০০২৯, ১০১৯৭. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩১২. আবু হুরায়রা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, কোন প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে তার দেওয়ালে কাঠ (বাঁশ ইত্যাদি) গাড়তে নিষেধ না করে। অতঃপর আবু হুরাইরাহ রাঃআঃ বললেন, কী ব্যাপার আমি তোমাদেরকে রাসূল সাঃআঃ-এর সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরাতে দেখছি! আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি এ (সুন্নাহ)কে তোমাদের ঘাড়ে নিক্ষেপ করব (অর্থাৎ এ কথা বলতে থাকব)। (বুখারী ও মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ২৪৬৩, ৫৬২৭, ৫৬২৮, মুসলিম ১৬০৯, তিরমিজী ১৩৫৩, আবু দাঊদ ৩৬৩৪, ইবনু মাজাহ ২৩৩৫, আহমাদ ৭১১৩, ৭১১৪, ৭২৩৬, ৭৬৪৫, ৮১৩৫, ৮৯০০, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৬২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩১৩. আবু হুরায়রা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, নচেৎ চুপ থাকে।’’ (বুখারী-মুসলিম) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০১৮, ৩৩৩১, ৫১৮৪, ৫১৮৬, ৬১৩৬, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮, তিরমিজী ১১৮৮ আহমাদ ৭৫৭১, ৯২৪০, ৯৩১২, ৯৫০৩, ১০০৭১, ১০৪৭৫, দারেমী ২২২২. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩১৪. আবু শুরায়হ খুযা‘য়ী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা নীরব থাকে।’’ (মুসলিম, কিছু শব্দ বুখারীর) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০১৯, ৬১৩৫, ৬৪৭৬, মুসলিম ৪৮, তিরমিজী ১৯৬৭, ১৯৬৮, আবু দাঊদ ৩৭৪৮, ইবনু মাজাহ ৩৬৭২, আহমাদ ১৪৯৩৫,. ২৬৬১৮, ২৬৬২০, মুওয়াত্তা মালিক ১৭২৮, ২০৩৬. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩১৫. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার দু’জন প্রতিবেশী আছে। (যদি দু’জনকেই দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে) আমি তাদের মধ্যে কার নিকট হাদিয়া (উপঢৌকন) পাঠাব?’ তিনি বললেন, ‘‘যার দরজা তোমার বেশী নিকটবর্তী, তার কাছে (পাঠাও)।’’ (বুখারী) [১]

[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০২০, ২২৫৯, ২৫৯৫, আবু দাঊদ ৫১৫৫, আহমাদ ২৪৮৯৫, ২৫০০৯, ২৫০৮৭, ২৫৪৯৫. হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৩১৬. আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্বোত্তম, যে তার প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে সর্বাধিক উত্তম।’’(তিরমিজী-হাসান) [১]

[১] তিরমিজী ১৯৪৪, আহমাদ ৬৫৩০, দারেমী ২৪৩৭. হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

Comments

Leave a Reply