ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস । বিচারক কিভাবে ফায়সালা করিবে

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস । বিচারক কিভাবে ফায়সালা করিবে

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস । বিচারক কিভাবে ফায়সালা করিবে , এই অধ্যায়ে মোট ৬৪ টি হাদীস (১৩২২-১৩৮৫) >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়-১৩ঃ বিচার কার্য, অনুচ্ছেদঃ (১-৪২)=৪২টি

১. অনুচ্ছেদঃ কাযী [বিচারক] প্রসঙ্গে
২. অনুচ্ছেদঃ বিচারকের নির্ভুল অথবা ভুল সিদ্ধান্তে পৌছার সম্ভাবনা আছে
৩. অনুচ্ছেদঃ বিচারক কিভাবে ফায়সালা করিবে
৪. অনুচ্ছেদঃ ন্যায়নিষ্ঠ ঈমাম [শাসক]
৫. অনুচ্ছেদঃ বিচারক বাদী ও বিবাদীর জবানবন্দী না শুনে রায় প্রদান করিবে না
৬. অনুচ্ছেদঃ জনগণের নেতা
৭. অনুচ্ছেদঃ বিচারক কখনো উত্তেজিত হয়ে বিচারকার্য করবেন না
৮. অনুচ্ছেদঃ সরকারী কর্মচারীদের উপটৌকন গ্রহণ
৯. অনুচ্ছেদঃ বিচারকার্যে ঘুষখোর ও ঘুষদাতা
১০. অনুচ্ছেদঃ উপহার নেওয়া ও দাওয়াতে যোগদান করা
১১. অনুচ্ছেদঃ কোন লোককে যদি বিচারের রায়ে [ভুলক্রমে] এমন জিনিস প্রদান করা হয় যা [প্রকৃতপক্ষে] নেওয়া তার উচিত নয়, সেই প্রসঙ্গে সতর্কবাণী
১২. অনুচ্ছেদঃ বাদীর দায়িত্ব হচ্ছে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাযির করা এবং বিবাদীর দায়িত্ব হচ্ছে শপথ করা
১৩. অনুচ্ছেদঃ সাক্ষীর সাথে সাথে শপথও করানো
১৪. অনুচ্ছেদঃ একটি গোলামের দুইজন অংশীদারের মধ্যে একজন তার নিজের অংশ মুক্ত করে দিলে
১৫. অনুচ্ছেদঃ উমরা [জীবনস্বত্ব] প্রদান
১৬. অনুচ্ছেদঃ রুকবার বর্ণনা
১৭. অনুচ্ছেদঃ লোকদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা বা সন্ধি স্থাপন প্রসঙ্গে
১৮. অনুচ্ছেদঃ যে লোক তার প্রতিবেশীর দেয়ালের সাথে [নিজ ঘরের] কড়িকাঠ স্থাপন করে
১৯. অনুচ্ছেদঃ শপথ হইতে হইবে প্রতিপক্ষের মনে প্রত্যয় সৃষ্টিকর
২০. অনুচ্ছেদঃ রাস্তা বানানোর ক্ষেত্রে [এর প্রশস্ততার পরিমাণ নিয়ে মতের অমিল হলে]
২১. অনুচ্ছেদঃ বাবা-মার মধ্যে [বিবাহ] বিচ্ছেদ হলে সন্তানকে তাহাদের যে কোন একজনকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা প্রদান
২২. অনুচ্ছেদঃ বাবা তার সন্তানের সম্পদ হইতে নিতে পারে
২৩. অনুচ্ছেদঃ কোন লোক অন্যের জিনিস ভেঙ্গে ফেললে তার ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিত বিধান
২৪. অনুচ্ছেদঃ ছেলে-মেয়েদের বালেগ হওয়ার বয়স
২৫. অনুচ্ছেদঃ সৎমাকে বিয়ে করলে [তার শাস্তি]
২৬. অনুচ্ছেদঃ দুই ব্যক্তি প্রসঙ্গে, যাদের একজনের ভূমি পানি প্রবাহের নিম্নদিকে অবস্থিত
২৭. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তির গোলাম ব্যতীত আর কোন সম্পদ নেই সে মারা যাবার সময় তাহাদেরকে মুক্ত করে দিলে
২৮. অনুচ্ছেদঃ মাহ্‌রাম আত্মীয়ের [ক্রীতদাস সূত্রে] মালিক হলে
২৯. অনুচ্ছেদঃ অনুমতি না নেওয়া অবস্থায় কোন সম্প্রদায়ের জমি চাষাবাদ করলে
৩০. অনুচ্ছেদঃ দান বা উপহার এবং সন্তানদের মাঝে সমতা বজায় রাখা
৩১. অনুচ্ছেদঃ শুফআ [অগ্র-ক্রয়াধিকার]
৩২. অনুচ্ছেদঃ অনুপস্থিত লোকেরও শুফআর অধিকার আছে
৩২. অনুচ্ছেদঃ অনুপস্থিত লোকেরও শুফআর অধিকার আছে
৩৪. অনুচ্ছেদঃ অংশীদার শুফআর অধিকারী
৩৫. অনুচ্ছেদঃ লুকতা [হারানো বস্তু] এবং হারানো উট ও ছাগল ইত্যাদি প্রসঙ্গে
৩৬. অনুচ্ছেদঃ ওয়াক্‌ফ প্রসঙ্গে
৩৭. অনুচ্ছেদঃ চতুষ্পদ জন্তু কোন লোককে আহত করলে এর কোন ক্ষতিপূরণ নেই
৩৮. অনুচ্ছেদঃ পড়ে থাকা জমিকে চাষাবাদযোগ্য করা
৩৯. অনুচ্ছেদঃ জায়গীর [দান বা পুরুস্কার স্বরূপ] মঞ্জুরী প্রসঙ্গে
৪০. অনুচ্ছেদঃ গাছ লাগানোর ফাযিলাত
৪১. অনুচ্ছেদঃ ভাগচাষ বা বর্গা প্রথা প্রসঙ্গে
৪২. অনুচ্ছেদঃ [জমি ভাগচাষে দেওয়া অথবা নগদ মূল্যে বিক্রয় জায়িয কিন্তু নিঃস্বার্থভাবে চাষ করিতে দেওয়া উত্তম]

১. অনুচ্ছেদঃ কাযী [বিচারক] প্রসঙ্গে

১৩২২. আবদুল্লাহ ইবনি মাওহাব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

১৩২২/১. উসমান [রাদি.] ইবনি উমার [রাদি.]-কে বলেন, যাও! লোকদের মাঝে বিচার-ফায়সালা কর। তিনি বলিলেন, হে মুমিনদের নেতা! আমাকে কি মাফ করবেন? তিনি বলিলেন, এ পদটি তুমি কেন অপছন্দ করছ, অথচ তোমার পিতা বিচার-ফায়সালা করিতেন? তিনি উত্তরে বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি কাযী [বিচারক] নিযুক্ত হয়ে ইনসাফের উপর বিচার-ফায়সালা করলেও সে বরাবর আমল নিয়ে প্রত্যাবর্তন করিবে [না তার কোন গুনাহ আছে আর না তার কোন সাওয়াব আছে। এরপর আমি আর কি আশা করিতে পারি?

যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৩৭৪৩]। তালীকুর রাগীব [২/১৩২] তালীক আলা আহাদীস মুখতারাহ [৩৪৮,৩৪৯] এ হাদীসের সাথে একটি ঘটনা আছে। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, ইবনি উমার [রাদি.]-এর হাদীসটি গারীব। আমার মতে এ হাদীসের সনদ পরস্পর সংযুক্ত নয়। কেননা যে আবদুল মালিক হইতে মুতামির রিওয়াত করিয়াছেন তিনি হলেন আবদুল মালিক ইবনি আবু জামীলা। ১৩২২/২. বুরাইদা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কাযীগণ তিন প্রকারের হয়ে থাকে। দুই প্রকারের কাযী [বিচারক] হচ্ছে জাহান্নামী এবং এক প্রকার কাযী হচ্ছে জান্নাতী। জেনেশুনে যে লোক [বিচারক] অন্যায় রায় প্রদান করে সে হচ্ছে জাহান্নামী। সত্যকে সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি না করেই যে লোক [বিচারক] মানুষের অধিকারসমূহ নস্যাৎ করে সে লোকও জাহান্নামী। আর যে লোক ন্যায়সঙ্গতভাবে ফায়সালা প্রদান করে [বিচারক] সে জান্নাতের অধিবাসী। সহীহ্‌, ইরওয়া- [২৬১৪], মিশকাত- [৩৭৩৫] ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

১৩২৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কাযীর পদ চেয়ে নেয় তার দায়দায়িত্ব তার উপরই চাপিয়ে দেয়া হয়। আর যাকে এই পদ গ্রহণ করিতে বাধ্য করা হয় আল্লাহ তাআলা তার নিকট একজন ফেরেশতা পাঠিয়ে দেন যিনি তাকে ইনসাফের পথে থাকতে সহযোগীতা করেন।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৩০৯] ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৩২৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, যে ব্যক্তি বিচারকের পদ চায় এবং অন্যদের দিয়ে তার জন্য সুপারিশ করায়, তাকে তার নিজের উপর ছেড়ে দেয়া হয় [এবং আল্লাহ্ তাআলার সাহায্য হইতে বঞ্চিত করা হয়]। আর যাকে জোর করে এ পদে বসানো হয়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য একজন ফেরেশতা পাঠিয়ে দেন, যিনি তাকে ইনসাফের পথে অনুপ্রাণিত করেন।

যঈফ, প্রাগুক্ত, আবু ঈসা বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। পূর্ববর্তী ইসরাঈলের হাদীসের তুলনায় এটি অনেক বেশী সহীহ। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৩২৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিচারের দায়িত্ব গ্রহণ করিল অথবা জনগণের বিচারক হিসেবে যে লোককে নিয়োগ করা হল তাকে যেন ছুরি ছাড়াই যবেহ করা হল।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩০৮] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা উল্লেখিত সনদসূত্রে হাসান গারীব বলেছেন। এ হাদীসটি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে আরো একটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২. অনুচ্ছেদঃ বিচারকের নির্ভুল অথবা ভুল সিদ্ধান্তে পৌছার সম্ভাবনা আছে

১৩২৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বিচারক যখন ফায়সালা করে এবং ইজতিহাদ করে [চিন্তা ভাবনা করে সত্যে পৌছার চেষ্টা করে], তারপর সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছে যায়, তার জন্য দুইটি পুরস্কার রহিয়াছে। আর ফায়সালা করিতে গিয়ে সে যদি ভুল করে ফেলে তবুও তার জন্য একটি পুরস্কার আছে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩১৪], নাসা-ঈ, আমর ইবনিল আস ও উকবা ইবনি আমির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা উল্লেখিত সনদ সূত্রে হাসান গারীব বলেছেন। এ হাদীস প্রসঙ্গে আমরা আবদুর রাযযাক-মামার হইতে, তিনি সুফিয়ান সাওরী হইতে, এই সূত্র ছাড়া সুফিয়ান সাওরীর বরাতে ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদের বর্ণনা হিসাবে কিছু জানিনা। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩. অনুচ্ছেদঃ বিচারক কিভাবে ফায়সালা করিবে

১৩২৭. মুআয [রাদি.]-এর সঙ্গীগণ হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মুআয [রাদি.]-কে ইয়ামানে পাঠান। তিনি প্রশ্ন করেনঃ তুমি কিভাবে বিচার করিবে? তিনি বলিলেন, আমি আল্লাহ তাআলার কিতাব অনুসারে বিচার করব। তিনি বললেনঃ যদি আল্লাহ্‌ তাআলার কিতাবে পাওয়া না যায়? তিনি বলিলেন, তাহলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সুন্নাত [হাদীস] অনুসারে বিচার করব। তিনি বললেনঃ যদি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সুন্নাতেও না পাও? তিনি বলিলেন, আমার জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে ইজতিহাদ করব। তিনি বললেনঃ সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ্ তাআলার জন্য যিনি আল্লাহর রাসূলের প্রতিনিধিকে এইরূপ যোগ্যতা দান করিয়াছেন।

যঈফ, যঈফা [৮৮১] ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৩২৮. মুআয [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মুহাম্মাদ ইবনি বাশ্‌শার স্বীয় সনদে মুআয [রাদি.] হইতে হান্নাদের হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন।

-দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেছেন, শুধু উল্লেখিত সূত্রেই আমরা হাদীসটি প্রসঙ্গে জেনেছি। আমার মতে এ হাদীসের সনদ পরস্পর সংযুক্ত নয়। আবু আওন আস-সাকাফীর নাম মুহাম্মাদ, পিতা উবাইদুল্লাহ। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৪. অনুচ্ছেদঃ ন্যায়নিষ্ঠ ঈমাম [শাসক]

১৩২৯. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন লোকদের মাঝে ন্যায়নিষ্ঠ শাসকই আল্লাহ তাআলার সবচাইতে প্রিয় ও নিকটে উপবেশনকারী হইবে। তাহাদের মাঝে যালিম শাসকই আল্লাহ তাআলার সবচাইতে ঘৃণিত এবং তার নিকট হইতে সবচেয়ে দূরে অবস্থানকারী হইবে।

যঈফ, রাওয [২/৩৫৬-৩৫৭], যঈফা [১১৫৬] মিশকাত, তাহকীক ছানী [৩৭০৪] এ অনুচ্ছেদে ইবনি আবু আওফা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আবু সাঈদ [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি হাসান গারীব। শুধু উপরোক্ত সূত্রেই হাদীসটি আমরা জেনেছি। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৩৩০. ইবনি আবী আওফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে পর্যন্ত বিচারক কোন প্রকার যুলুম না করে সে পর্যন্ত আল্লাহ্ তাআলা তার সহায়তা করেন। সে যে মুহুর্তে কোন প্রকার যুলুম করে ফেলে তখন তিনি তাকে পরিত্যাগ করেন এবং শাইতান তাকে জড়িয়ে ধরে।

হাসান, ইবনি মা-জাহ- [২৩১২] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। এটি আমরা শুধুমাত্র ইমরান আল-কাত্তানের সূত্রেই জেনেছি। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৫. অনুচ্ছেদঃ বিচারক বাদী ও বিবাদীর জবানবন্দী না শুনে রায় প্রদান করিবে না

১৩৩১. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমার নিকট যখন দুইজন লোক বিচারের জন্য আবেদন করে তখন দ্বিতীয় পক্ষের বক্তব্য তুমি সম্পূর্ণভাবে না শুনেই প্রথম পক্ষের কথার উপর নির্ভর করে রায় প্রদান করো না। তুমি খুব শীঘ্রই জানতে পারবে, তুমি কিভাবে ফায়সালা করছ। আলী [রাদি.] বলেন, তারপর আমি বিচারক হিসাবেই রয়ে গেছি।

হাসান, ইরওয়া [২৬০০] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৬. অনুচ্ছেদঃ জনগণের নেতা

১৩৩২. আমর ইবনি মুররা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মুআবিয়া [রাদি.]-কে আমর ইবনি মুররা [রাদি.] বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]কে আমি বলিতে শুনেছিঃ গরীব-মিসকীন ও নিজ প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে আগমনকারী লোকের জন্য যে নেতা নিজের দরজাকে বন্ধ করে রাখে, এ ধরণের লোকের দারিদ্র্য, অভাব ও প্রয়োজনের সময় আল্লাহ তাআলাও আকাশের দরজা বন্ধ করে রাখবেন। মুআবিয়া [রাদি.] একথা শুনার পর থেকে এক লোককে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে নিযুক্ত করেন।

সহীহ্‌, মিশকাত তাহকীক ছানী- [৩৭২৮], সহীহ্‌- [৬২৯], সহীহ্‌ আবু দাউদ- [২৬১৪] ইবনি উমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আমর ইবনি মুররা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা গারীব বলেছেন। অন্য একটি সূত্রেও এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। আবু মারইয়াম হচ্ছে আমর ইবনি মুররার উপনাম। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৩৩. আলী ইবনি হুজর ইয়াহইয়া ইবনি হামযা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি ইয়াযিদ ইবনি আবী মারইয়াম হইতে, তিনি আলকাসিম ইবনি মুখাইমিরাহ তিনি রাসূলের সাহাবী আবু মারইয়াম হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত হাদীসের মতই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। ইয়াযীদ ইবনি আবু মারইয়াম ছিলেন সিরিয়ার অধিবাসী এবং বুরাইদ ইবনি আবু মারইয়াম ছিলেন কূফার অধিবাসী। আবু মারইয়ামের নাম আমর ইবনি মুররা আলজুহানী।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৭. অনুচ্ছেদঃ বিচারক কখনো উত্তেজিত হয়ে বিচারকার্য করবেন না

১৩৩৪. আবদুর রাহমান ইবনি আবু বাকরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উবাইদুল্লাহ ইবনি আবু বাক্‌রা একজন বিচারক ছিলেন। আমার আব্বা তাকে লিখে পাঠালেন, তুমি উত্তেজিত অবস্থায় কখনো দুই পক্ষের মধ্যে বিচারকার্য সমাধা করিবে না। কেননা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে আমি বলিতে শুনেছিঃ বিচারক রাগের অবস্থায় যেন দুই পক্ষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা না করে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩১৬], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। আবু বাকরা [রাদি.]-এর নাম নুফাই। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮. অনুচ্ছেদঃ সরকারী কর্মচারীদের উপটৌকন গ্রহণ

১৩৩৫. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে ইয়ামানে পাঠান। আমি রাওনা হলে তিনি আমার পিছনে এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে আমাকে ফিরিয়ে আনলেন। তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি কি বুঝেছো আমি তোমাকে ডাকার জন্য কেন লোক পাঠালাম? তিনি বলিলেন, আমার অনুমতি ব্যতীত তুমি [লোকদের নিকট হইতে উপহার হিসেবে] কিছু নিবে না। কেননা এটা আত্মসাৎ। যে ব্যক্তি আত্মসাৎ করিবে সে কিয়ামাতের দিন আত্মসাতের মালসহ হাযির হইবে। আমি তোমাকে এটা জানাবার উদ্দেশ্যে ডেকেছি। এখন নিজের কাজে রাওনা হয়ে যাও।

সনদ দুর্বল। এ অনুচ্ছেদে আদী ইবনি আমীরাহ বুরাইদা, মুসতাওরিদ ইবনি শাদ্দাদ, আবু হুমাইদ ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, মুয়ায় [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি গারীব। আবু উসামা হইতে দাঊদ আল-আওদীর সূত্রেই শুধু আমরা এ হাদীস জেনেছি। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৯. অনুচ্ছেদঃ বিচারকার্যে ঘুষখোর ও ঘুষদাতা

১৩৩৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে ঘুষখোর ও ঘুষ প্রদানকারীকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] অভিসম্পাত করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩১৩] আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আয়শা, ইব নি হাদীদা ও উন্মু সালামা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। আবু সালমার সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণিত আছে। আবু সালামা-তার আব্বা আবদুর রাহমানের সূত্রেও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে, কিন্তু তা সহীহ্‌ নয়। আমি আবদুল্লাহ ইবনি আবদুর রাহমানকে বলিতে শুনেছিঃ এই অনুচ্ছেদের আওতাভুক্ত হাদীসসমূহের মধ্যে আবু সালামা কর্তৃক আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত হাদীসটি সর্বোত্তম ও সর্বাধিক সহিহ। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৩৭. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ঘুষ গ্রহণকারী ও ঘুষ প্রদানকারী দুজনকেই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] অভিসম্পাত করিয়াছেন।

সহীহ্‌, প্রাগুক্ত, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০. অনুচ্ছেদঃ উপহার নেওয়া ও দাওয়াতে যোগদান করা

১৩৩৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বকরীর পায়ের একটি খুরও যদি আমাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়, আমি সেটা অবশ্যই গ্রহণ করব। আমাকে যদি তা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয় তবে আমি তাতে সাড়া দিব।

সহীহ্‌, সহীহুল জা-মি মুখতাসার শামা-ইলুল মুহাম্মাদিয়া [২৯০], বুখারী, আলী, আয়শা, মুগীরা ইবনি শুবা, সালমান, মুআবিয়া ইবনি হাইদা ও আবদুর রাহমান ইবনি আলকামা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১. অনুচ্ছেদঃ কোন লোককে যদি বিচারের রায়ে [ভুলক্রমে] এমন জিনিস প্রদান করা হয় যা [প্রকৃতপক্ষে] নেওয়া তার উচিত নয়, সেই প্রসঙ্গে সতর্কবাণী

১৩৩৯. উন্মু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা আমার নিকট ঝগড়া বিবাদ সমাধানের উদ্দেশ্যে এসে থাক। আমিও একজন মানুষ। হয়ত তোমাদের কোন লোক অন্য কারো তুলনায় [নিজের যুক্তি-প্রমাণ পেশে] অত্যন্ত বাকপটু হয়ে থাকিবে। সুতরাং আমি তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তির অনুকূলে তার ভাইয়ের প্রাপ্য কোন অংশ দিয়ে দিতে পারি। এরকম পরিস্থিতিতে আমি যেন তার জন্য জাহান্নামের একটি টুকরাই তাকে দিয়ে দিচ্ছি। অতএব সে যেন [আসল বিষয় জানা থাকলে] এর কোন কিছুই গ্রহন না করে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩১৭], মুসলিম, আবু হুরাইরা ও আয়শা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। উম্মু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২. অনুচ্ছেদঃ বাদীর দায়িত্ব হচ্ছে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাযির করা এবং বিবাদীর দায়িত্ব হচ্ছে শপথ করা

১৩৪০. আলকামা ইবনি ওয়াইল [রাদি.] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হাযরামাওত এলাকার একজন লোক এবং কিন্‌দার একজন লোক এসে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ ]-এর নিকট হাযির হল। হাযরামী বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার অল্পকিছু জমি জোরপূর্বক এই লোক দখল করে নিয়েছে। কিন্‌দী বলিল, সেটা আমার জমি, আমার দখলেই আছে, সেটাতে তার কোন মালিকানা নেই। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাযরামীকে বললেনঃ তোমার কাছে কোন প্রকারের সাক্ষী-প্রমাণ আছে কি? সে বলিল, না। তিনি বললেনঃ তাহলে তোমাকে তার শপথের উপর নির্ভর করিতে হইবে। সে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! এ লোকটি তো বদমাইশ, যে কোন ব্যাপারে শপথ করিতে তার কোন দ্বিধা নেই, কোন কিছুতেই তার ভীতি-বিহবলতা নেই। তিনি বললেনঃ এটা ব্যতীত তোমার আর কোন উপায় নেই। বর্ণনাকারী বলেন, কিন্‌দী শপথের উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যদি অন্যায়ভাবে তার সম্পদ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সে মিথ্যা শপথ করে তবে সে এমনভাবে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হইবে যে, আল্লাহ্ তাআলা তার হইতে [অসন্তোষে] মুখ সরিয়ে নিবেন।

সহিহ, ইরওয়া [২৬৩২], মুসলিম, উমার, ইবনি আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও আশআস ইবনি কাইস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ওয়াইল ইবনি হুজর [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৪১. আমর ইবনি শুআইব [রঃ] হইতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার এক ভাষণে বলেছেনঃ বাদীর দায়িত্ব হচ্ছে সাক্ষী-প্রমাণ হাজির করা এবং বিবাদীর দায়িত্ব হচ্ছে শপথ করা।

সহীহ্‌, ইরওয়া- [৮/২৬৫-২৬৭] এ হাদীসের সনদকে আবু ঈসা সমালোচিত বলেছেন। বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনি উবাইদুল্লাহ আরযামীর স্মরণ-শক্তি দুর্বল। তাকে ইবনিল মুবারাক ও অন্যান্যরা দুর্বল বর্ণনাকারী বলে আখ্যায়িত করিয়াছেন। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৪২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরকম রায় প্রদান করিয়াছেন যে, বিবাদীকে শপথ করিতে হইবে।

সহীহ্‌, ইরওয়া- [২৬৪১], নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ ও অন্যান্যরা আমল করার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন। তাহাদের মতে বাদীকে সাক্ষী-প্রমাণ উপস্থিত করিতে হইবে এবং বিবাদীকে শপথ করিতে হইবে। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩. অনুচ্ছেদঃ সাক্ষীর সাথে সাথে শপথও করানো

১৩৪৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একজন সাক্ষী ও শপথের উপর নির্ভর করে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রায় প্রদান করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইরওয়া- [৮/৩০০-৩০৫], তানকীল- [২/১৫৬], রাওজুননাজীর- [৯৮৬], মুসলিম, [অধঃস্তন বর্ণনাকারী] রাবীআ বলেন, সাদ ইবনি উবাদার এক ছেলে আমাকে জানিয়েছেন এবং বলেছেন, সাদের কিতাবে আমরা লিখিত অবস্থায় পেয়েছি যে, একজন সাক্ষী ও শপথের উপর নির্ভর করে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রায় প্রদান করিয়াছেন। সহীহ্‌ দেখুন পূর্বের হাদীস, আলী, জাবির, ইবনি আব্বাস ও সুররাক [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৪৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একজন সাক্ষী ও শপথের উপর নির্ভর করে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মোকদ্দমার সমাধান করিয়াছেন।

সহীহ্‌, দেখুন পূর্বের হাদীস, ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৪৫. জাফর ইবনি মুহাম্মাদ [রঃ] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একজন সাক্ষীর সাথে [তাকে] শপথের উপর নির্ভর করে মোকদ্দমার সমাধান করিয়াছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তোমাদের মাঝে আলী [রাদি.]-ও এরকমভাবেই মোকদ্দমার সমাধান করিয়াছেন।

সহীহ্‌, দেখুন পূর্বের হাদীস, এ সূত্রটিকে আবু ঈসা অনেক বেশি সহীহ্‌ বলেছেন। একইভাবে এ হাদীসটিকে সুফিয়ান সাওরী-জাফর ইবনি মুহাম্মাদ হইতে, তিনি তার বাবার সূত্রে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। আবদুল আযীয ইবনি আবু সালামা ও ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সুলাইম এই হাদীস জাফরের সূত্রে, তার পিতা হইতে, আলী [রাদি.]-এর বরাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর একদল সাহাবী ও অন্যান্যদের মতে এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিতে হইবে। তাহাদের মতে অধিকার ও মাল সম্পর্কিত মোকদ্দমায় একজন সাক্ষী এবং শপথের উপর ভিত্তি করে ফায়সালা দেয়া জায়িয। এই মত দিয়েছেন ঈমাম মালিক, শাফিঈ, আহ্‌মাদ ও ইসহাক। তারা বলেছেন, শুধু অধিকার ও মাল সম্পর্কিত ব্যাপারেই একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের সাথে শপথের উপর ভিত্তি করে রায় দেয়া যাবে। শুধু একজন সাক্ষী ও শপথের উপর নির্ভর করে কোন মোকদ্দমার রায় প্রদান করাটা কিছু কূফাবাসী [হানাফী] ও অন্যদের মতে জায়িয নয়। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৪. অনুচ্ছেদঃ একটি গোলামের দুইজন অংশীদারের মধ্যে একজন তার নিজের অংশ মুক্ত করে দিলে

১৩৪৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শরীকানা গোলামের মালিকদের কোন মালিক যদি নিজের প্রাপ্য অংশকে মুক্ত করে দেয় এবং তার নিকট গোলামের ন্যায়সংগত মূল্যের সমপরিমাণ সম্পদ থাকে সে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়ে যাবে, অন্যথায় সে যেটুকু পরিমাণ মুক্ত করেছে সেটুকু পরিমাণই স্বাধীন হইবে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৫২৮], নাসা-ঈ, আইয়ুব বলেন, নাফি কখনো বলেছেনঃ “অন্যথায় সে যেটুকু পরিমাণ মুক্ত করেছে সেটুকু পরিমাণ মুক্ত হইবে”। ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর এ হাদীসটি সালিমও তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৪৭. সালিম [রঃ] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শরীকানা গোলামের ক্ষেত্রে কোন লোক তার নিজের অংশকে মুক্ত করে দিলে এবং তার নিকট গোলামটির মূল্যের সমপরিমাণ মাল থাকলে সে তার [মুক্তকারী মালিকের] মালের সাহায্যে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে যাবে।

সহীহ্‌ প্রাগুক্ত, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৪৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন শরীকানা গোলামের ক্ষেত্রে কোন লোক তার নিজের অংশকে মুক্ত করলে তাকে তার বাকি অংশটুকুও মুক্ত করে দিতে হইবে- তার যদি সেরকম আর্থিক সামর্থ থাকে। তার আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে তবে ইনসাফের ভিত্তিতে তার ন্যায্য মূল্য ঠিক করিতে হইবে। তারপর সে যতটুকু পরিমাণে মুক্ত হইতে পারেনি সেটুকু পরিমাণ মূল্য [কায়িক শ্রমের মাধ্যমে] পরিশোধের চেষ্টা করিতে হইবে। কিন্তু তাকে দিয়ে সামর্থ্যের বেশি কষ্টদায়ক কাজ করানো যাবে না।

সহীহ্‌, প্রাগুক্ত ইবনি মা-জাহ- [২৫২৭], নাসা-ঈ, আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সাঈদ ইবনি আবু আরুবা হইতেও এরকম বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। আবান ইবনি ইযায়ীদ কাতাদা হইতে সাঈদ ইবনি আরুবার বর্ণনার মতই বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসটিকে শুবা কাতাদার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন কিন্তু এতে পরিশ্রম করানোর কথা উল্লেখ নেই। আলিমদের মধ্যে এ ধরণের গোলাম দিয়ে পরিশ্রম করানোর ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে। একদল আলিমের মতে, মুক্ত করার উদ্দেশ্যে তাকে দিয়ে পরিশ্রম করানো বৈধ। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী ও কুফাবাসী আলিমগণ। ইসহাকও এই মতের সমর্থক। অপর একটি দল বলেছেন, একজন ক্রীতদাসের যদি দুজন মালিক থাকে এবং একজন মালিক তার প্রাপ্য অংশকে মুক্ত করে দিলে তার [মুক্তকারীর] যদি আর্থিক সামর্থ্য থাকে, তবে সে অন্য মালিককে ক্ষতিপূরণ প্রদান করিবে এবং নিজের মালের পরিবর্তে তাকে মুক্ত করিবে। তার যদি এরকম আর্থিক সামর্থ্য না থাকে তবে উক্ত গোলামের যেটুকু পরিমাণ মুক্ত করা হয়েছে সেটুকু পরিমাণ মুক্ত বলে গণ্য হইবে। কিন্তু তাকে কাজে খাটিয়ে তার মজুরি অন্য মালিককে দেওয়ার মাধ্যমে তাকে মুক্ত করার এ পদ্ধতিটি সঠিক নয়। আলিমগণের এই দল ইবনি উমার [রাদি.]-এর হাদীসের সমর্থক। মাদীনার আলিমদেরও এই অভিমত। ঈমাম মালিক, শাফিঈ, আহ্‌মাদ ও ইসহাক [রঃ] এই মতের সমর্থক। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫. অনুচ্ছেদঃ উমরা [জীবনস্বত্ব] প্রদান

১৩৪৯. সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম] বলেছেনঃ জীবন-স্বত্ব প্রদান করা [আজীবনের জন্য কিছু দান করা] জায়িয, যে লোককে এটা প্রদান করা হইবে তার জন্য অথবা [তিনি বলেন] তা তার উত্তরাধিকারগণের জন্য উত্তরাধিকার স্বত্ব হিসাবে গণ্য।

সহীহ্‌, মুসলিম- [৫/৬৯,৭০], জাবির ও আবু হুরাইরা হইতে। যাইদ ইবনি সাবিত, জাবির, আবু হুরাইরা, আয়শা, আবদুল্লাহ ইবনি যুবাইর ও মুআবিয়া [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৫০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোককে জীবন-স্বত্ব প্রদান করা হলে সেটা তার এবং তার উত্তরাধিকারীদের জন্য। যে লোককে তা প্রদান করা হয়েছে উহা তার জন্যই, তা দাতার দিকে ফিরে আসবে না। কেননা সে এমন দান করেছে যার উপর দান গ্রহীতার উত্তরাধিকার স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩৮০], মুসলিম, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। হাদীসটি মামার এবং আরও অনেকে যুহরী হইতে মালিকের বর্ণনার মতই বর্ণনা করিয়াছেন। কেহ কেহ যুহরী হইতে বর্ণনা করিয়াছেন তবে “ওয়ালিআকিবিহি” [তার উত্তরাধিকারীদের জন্য] শব্দের উল্লেখ নেই। জাবির [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেছেন, “জীবন স্বত্ব জায়িয যে লোককে প্রদান করা হয়েছে তার জন্য। এই বর্ণনায় “লিআকিবিহী” শব্দের উল্লেখ নেই। এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করেন। তারা বলেন, কোন লোক যখন বলে, এটা তোমার জন্য তোমার সারা জীবনের জন্য এবং তোমার পরবর্তীদের জন্য, তখন তা গ্রহীতার মালিকানায় এসে যায়। জীবন-স্বত্ব প্রদানকারীর মালিকানায় তা আর ফিরে যায় না। যদি সে একথা না বলেঃ এটা তোমার পরবর্তীদের জন্যও, তবে এক্ষেত্রে গ্রহীতার মারা যাবার পর তা দাতার মালিকানায় এসে পরবে। এই মত দিয়েছেন ঈমাম মালিক ও শাফিঈ। কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “জীবন-স্বত্ব জায়িয-এটা যে লোককে প্রদান করা হয়েছে তার” । এ বর্ণনায় “লিআকিবিহি” শব্দের উল্লেখ নেই। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করিয়াছেন। তারা বলেছেন, যে লোককে জীবন-স্বত্ব প্রদান করা হয়েছে তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীগণ এর মালিক হইবে, জীবন-স্বত্ব প্রদানকারী- এটা তোমার পরবর্তীদের জন্যও -এ কথা না বলে থাকলেও। সুফিয়ান সাওরী, আহমাদ ও ইসহাকেরও এই অভিমত। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬. অনুচ্ছেদঃ রুকবার বর্ণনা

১৩৫১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে জীবন-স্বত্ব দেওয়া হয়েছে সেটা তার জন্য হালাল। যে ব্যক্তিকে রুকবা দেওয়া হয়েছে সেটা তার জন্য হালাল।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩৮৩], মুসলিম, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। এটা জাবির [রাদি.] হইতে অন্য একটি সূত্রে মাওকুফভাবেও বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর একদল সাহাবী ও তৎপরবর্তী একদল আলিম আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে জীবন-স্বত্বের মতো রুকবাও জায়িয। এই মত দিয়েছেন ঈমাম আহমাদ ও ইসহাকও। জীবন-স্বত্ব ও রুকবার মধ্যে কূফার একদল আলিম পার্থক্য সৃষ্টি করিয়াছেন। জীবন-স্বত্ব তারা জায়িয ভাবলেও রুকবা জায়িয হিসেবে মনে করেন না। আবু ঈসা বলেন রুকবার ব্যাখ্যা এই যেঃ দাতা [গ্রহণকারীকে] বলিল, তোমার জীবিত থাকাকাল পর্যন্ত এটা তোমার। আমার পূর্বেই তুমি মৃত্যু বরণ করলে তবে পুনরায় আমি এর মালিক হয়ে যাব [আর তোমার পূর্বে আমি মৃত্যুবরণ করলে তা তোমার অধিনেই রয়ে যাবে]। ঈমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাক বলেনঃ রুকবা হচ্ছে জীবন-স্বত্বের মতই। যে লোককে এটা প্রদান করা হয় শুধুমাত্র সে-ই এর মালিক। গ্রহীতার মৃত্যুর পর তা দাতার নিকট ফিরে আসবে না। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭. অনুচ্ছেদঃ লোকদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা বা সন্ধি স্থাপন প্রসঙ্গে

১৩৫২. কাসীর ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনি আওফ [রাদি.] হইতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুসলমানদের একে অপরের সাথে সন্ধি স্থাপন করা জায়িয। কিন্তু বৈধকে অবৈধ অথবা অবৈধকে বৈধ করার মত সন্ধি চুক্তি জায়িয নেই। মুসলমানগণ তাহাদের একে অপরের মধ্যে স্থিরকৃত শর্তাবলী মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু হালালকে হারাম অথবা হারামকে হালাল করার মত শর্ত বৈধ নয় [তা বাতিল বলে গণ্য হইবে]।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩৫৩] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮. অনুচ্ছেদঃ যে লোক তার প্রতিবেশীর দেয়ালের সাথে [নিজ ঘরের] কড়িকাঠ স্থাপন করে

১৩৫৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কোন লোকের নিকট যদি তার প্রতিবেশী তার [ঘরের] দেয়ালের সাথে কড়িকাঠ স্থাপনের সম্মতি চায় তবে সে যেন তাকে বারণ না করে। এ হাদীসটি আবু হুরাইরা [রাদি.] বর্ণনা করলে লোকেরা তাহাদের মাথা অবনমিত করে। তিনি তখন বলিলেন, কি ব্যাপার! আমি তোমাদেরকে এ হইতে বিমুখ হইতে দেখছি কেন? আল্লাহর শপথ! আমি তা তোমাদের কাঁধের উপর ছুঁড়ে মারবো।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩৩৫], নাসা-ঈ, ইবনি আব্বাস ও মুজাম্মি ইবনি জারিয়া [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করেন। ঈমাম শাফিও এমন কথা বলেছেন। অন্য একদল আলিম বলেছেন, কোন লোকের দেয়ালে তার প্রতিবেশী কড়িকাঠ স্থাপনের ইচ্ছা করলে সেটাতে তার বাঁধা প্রদানের অধিকার আছে। ঈমাম মালিকেরও এই অভিমত। কিন্তু প্রথমোক্ত মতই অনেক বেশি সহিহ। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯. অনুচ্ছেদঃ শপথ হইতে হইবে প্রতিপক্ষের মনে প্রত্যয় সৃষ্টিকর

১৩৫৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এরকমভাবে শপথ করিতে হইবে যাতে করে তোমার সাথী [প্রতিপক্ষ] তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করিতে পারে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২১২১], মুসলিম, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। আমরা এটিকে শুধু উপরোক্ত [হুশাইম-আবদুল্লাহ] সূত্রেই জেনেছি। আব্দুল্লাহ ইবনি আবী সালিহ, সুহাইল ইবনি আবী সালিহের ভাই। এ হাদীস অনুযায়ী একদল বিশেষজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। একই কথা বলেছেন ঈমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাকও। ইবরাহীম নাখঈ বলেন, যে লোক শপথ করিতে বাধ্য করে সে যদি অত্যাচারী হয় তাহলে এক্ষেত্রে শপথকারীর নিয়্যাতই নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত হইবে। অপরদিকে যে লোক শপথ করায় সে লোক যদি অত্যাচারিত হয় তবে তার নিয়্যাতই গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হইবে। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২০. অনুচ্ছেদঃ রাস্তা বানানোর ক্ষেত্রে [এর প্রশস্ততার পরিমাণ নিয়ে মতের অমিল হলে]

১৩৫৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সাত হাত প্রশস্ত করে রাস্তা তৈরী কর।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩৩৮] ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৫৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রাস্তার ব্যাপারে তোমাদের মতভেদ হলে তা সাত হাত পরিমাণ [প্রশস্ত] কর।

সহীহ্‌- [২৪৭৩], বুখারী, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা ওয়াকীর হাদীসের চেয়ে অনেক বেশি সহীহ্‌ বলেছেন। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বুশাইর ইবনি কাব আল-আদাবী [রঃ] কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। উক্ত হাদীসটি অন্য একটি সূত্রেও কেউ কেউ কাতাদা হইতে, তিনি বাশীর ইবনি নাহীক হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু এর সনদ সুরক্ষিত নয়। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২১. অনুচ্ছেদঃ বাবা-মার মধ্যে [বিবাহ] বিচ্ছেদ হলে সন্তানকে তাহাদের যে কোন একজনকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা প্রদান

১৩৫৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] একটি ছেলেকে তার আব্বা ও আম্মা উভয়ের যে কোন একজনকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা প্রদান করেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৩৫১] আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও আবদুল হামীদ ইবনি জাফরের দাদা হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। আবু মাইমুনার নাম সুলাইম। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তৎপরবর্তী একদল আলিম আমল করিয়াছেন। তারা বলেছেন, আব্বা-আম্মার মধ্যে যদি সন্তানকে কেন্দ্র করে ঝগড়ার সৃষ্টি হয় তবে সন্তানকে স্বাধীনতা প্রদান করিতে হইবে। সে যাকে পছন্দ করিবে তার সাথে থাকিবে। ঈমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাকেরও এই মত। তারা উভয়ে বলেছেন, সন্তান ছোট হলে তার লালন-পালনের জন্যে মাই বেশি হাকদার। সে যখন সাত বছরে পৌছাবে তখন তাকে স্বাধীনতা দিতে হইবে [সে যার সাথে থাকার ইচ্ছা করিবে তার সাথে থাকিবে]। হিলাল ইবনি আবু মাইমূনার আব্বা আলী এবং দাদা উসামা। তিনি মাদীনার অধিবাসী। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি আবু কাসীর, মালিক ইবনি আনাস ও ফুলাইহ্‌ ইবনি সুলাইমান তার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২. অনুচ্ছেদঃ বাবা তার সন্তানের সম্পদ হইতে নিতে পারে

১৩৫৮.আয়শা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের নিজেদের উপার্জনই সর্বোত্তম জীবিকা। তোমাদের সন্তানগণও তোমাদের নিজস্ব উপার্জন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২১৩৭] জাবির ও আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীসটি কোন কোন বর্ণনাকারী উমারা ইবনি উমাইর-তার মাতার সূত্ৰে-আয়শা [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তাহাদের বেশিরভাগই মাতার পরিবর্তে ফুফু বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একদল সাহাবী ও অপরাপর আলিম আমল করিয়াছেন। তারা বলেছেন, পিতার হাত সন্তানের সম্পদের উপর সম্প্রসারিত। সে যতটুকু ইচ্ছা তা হইতে নিতে পারে। তাহাদের অন্য এক দল বলেছেন, পিতা যেন শুধু প্রয়োজনের সময়ই সন্তানের সম্পদ হইতে নেয়। প্রয়োজন ব্যতীত সে তার মালে হস্তক্ষেপ করিতে পারবে না। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩. অনুচ্ছেদঃ কোন লোক অন্যের জিনিস ভেঙ্গে ফেললে তার ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিত বিধান

১৩৫৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর একজন স্ত্রী তাকে একটি বাটিতে কিছু খাবার পাঠান। আয়শা [রাদি.] নিজের হাত দিয়ে বাটিতে আঘাত করে খাবারগুলো ফেলে দেন এবং বাটিও ভেঙ্গে যায়। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ খাদ্যের জন্য খাবার এবং বাটির জন্য একটি বাটি প্রদান করিতে হইবে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩৩৪] এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৬০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি বাটি ধার করে এনেছিলেন। তারপর সেটা ভেঙ্গে গেল [অথবা হারিয়ে গেল]। তিনি বাটির মালিককে ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন।

সনদ খুবই দুর্বল. আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সুরক্ষিত নয়। আমার ধারণামতে সুআইদ পূর্বোক্ত সাওরী বর্ণিত হাদীসটিই বর্ণনা করিতে চেয়েছিলেন [কিন্তু সেটা সম্পূর্ণভাবে তার মনে ছিল না তাই তিনি এই হাদীসটি মিলিয়ে ঝুলিয়ে বর্ণনা করিয়াছেন]। এ ক্ষেত্রে সুফিয়ান সাওরীর হাদীসটিই অনেক বেশী সহীহ। আবু দাউদের নাম উমার, পিতার নাম সাদ। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

২৪. অনুচ্ছেদঃ ছেলে-মেয়েদের বালেগ হওয়ার বয়স

১৩৬১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাকে কোন এক সামরিক অভিযানে যাওয়ার সময় রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর সামনে হাযির করা হয়। তখন আমার বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। তিনি আমাকে [সৈনিক হিসাবে] গ্রহণ করেননি। এর পরের বছর এক সামরিক অভিযানে যাওয়ার সময় আমাকে আবার তার সামনে হাযির করা হয়। তখন আমার বয়স ছিল পনের বছর। এবার তিনি আমাকে সেনাবাহিনীতে নিয়ে নিলেন। নাফি [রঃ] বলেন, আমি এ হাদীসটি উমার ইবনি আবদুল আযীয [রঃ]-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেনঃ এটাই হল নাবালেগ ও বালেগের মধ্যকার বয়সসীমা। তারপর তিনি লিখিত নির্দেশ প্রদান করিলেন- যে পনের বছর বয়সে পৌঁছেছে তার ভাতা নির্ধারণের জন্য।

সহীহ্‌ বুখারী- [২৬৬৪, ৬/৩০] ইবনি আবী উমার সুফিয়ান ইবনি উয়াইনা হইতে, তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনি উমার হইতে, তিনি নাফি হইতে এই সূত্রেও ইবনি উমার [রাদি.] হইতে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর উপরের হাদীসের মত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এ কথাটুকু এই সূত্রে উল্লেখ নেইঃ উমার ইবনি আবদুল আযীয [রঃ] লিখে পাঠালেন, এটাই বালেগ ও নাবালেগের মধ্যকার বয়সসীমা। একথাই ইবনি উআইনা তার হাদীসের মধ্যে উল্লেখ করেছেনঃ আমি এ হাদীসটিকে উমার ইবনি আবদুল আযীযের সামনে বর্ণনা করলে তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে নাবালেগ ও সৈনিকের মধ্যে বয়সসীমা। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। এরকম মতই সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহ্‌মাদ ও ইসহাক [রঃ]-এর। তাহাদের মতে, নাবালেগ সন্তান পনের বছরে পৌছার সাথে সাথে বালেগদের মধ্যে গণ্য হইবে। পনের বছরের পূর্বেই যদি স্বপ্নদোষ হয় তবে সে বলেগ বলে গণ্য হইবে। আহ্‌মাদ ও ইসহাক বলেছেন, বালেগ হওয়ার জন্য তিনটি বিকল্প নিদর্শন রহিয়াছে, পনের বছর বয়স হওয়া; ইহ্‌তিলাম [বীর্যপাত] হওয়া; যদি এরকম হয় যে, বয়সও অনুমান করা যাচ্ছে না আবার ইহ্‌তিলামও হয় না এক্ষেত্রে লজ্জাস্থানে লোম গজানোকে ধরে নিতে হইবে। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫. অনুচ্ছেদঃ সৎমাকে বিয়ে করলে [তার শাস্তি]

১৩৬২. বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার মামা আবু বুরদা [রাদি.] আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার হাতে একটি পতাকা ছিল। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, কোথায় যাচ্ছেন। তিনি বলিলেন, এক লোক তার বাবার স্ত্রীকে [সৎমাকে] বিয়ে করেছে। আমাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পাঠিয়েছেন তার মাথা কেটে তার নিকট আনার জন্য।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৬০৭] কুররা আল-মুযানী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। বারাআ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাক আদী ইবনি সাবিত হইতে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি ইয়াযীদ হইতে তিনি বারাআ হইতে, হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীসটি আশআস হইতে, তিনি আদী হইতে, তিনি ইয়াযীদ ইবনি বারাআ হইতে, তিনি তার পিতা হইতে এই সূত্রেও বর্ণিত আছে। ইয়াযীদ ইবনি বারাআ তার মামা হইতে তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রেও বর্ণিত আছে। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬. অনুচ্ছেদঃ দুই ব্যক্তি প্রসঙ্গে, যাদের একজনের ভূমি পানি প্রবাহের নিম্নদিকে অবস্থিত

১৩৬৩. উরওয়া [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.] তাকে বলেছেন, হাররা হইতে বয়ে আসা নালার পানির বন্টনকে কেন্দ্র করে যুবাইর [রাদি.]-এর বিরুদ্ধে একজন আনসার [রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট অভিযোগ উত্থাপন করে। এ নালার পানি তারা খেজুর বাগানেও সিঞ্চন করিতেন। আনসারী দাবি করিল, পানি প্রবাহিত হইতে দাও। কিন্তু যুবাইর [রাদি.] তা অস্বীকার করেন। তারা এই বিবাদকে [রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর সামনে উপস্থাপন করিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুবাইর [রাদি.]-কে বললেনঃ হে যুবাইর! তোমার ক্ষেতে পানি প্রবাহিত কর, তারপর তোমার প্রতিবেশীর ক্ষেতের দিকে তা প্রবাহিত হইতে দাও। আনসারী এতে ক্রোধাৰিত হয়ে বলিল, আপনার ফুফাত ভাই তো ! এ কথায় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখমণ্ডল রক্তিমবর্ণ ধারণ করিল। তিনি বললেনঃ হে যুবাইর! তোমার ক্ষেতে পানি প্রবাহিত কর, তারপর তা আটক করে রাখ-যাতে তা আইল পর্যন্ত উঠতে পারে। যুবাইর [রাদি.] বলেন, আল্লাহর শপথ! আমার মনে হয় এপ্রসঙ্গেই নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়েছেঃ “না, হে মুহাম্মাদ! তোমার প্রতিপালকের শপথ! এরা কোন অবস্থাতেই ঈমানদার হইতে পারে না, যে পর্যন্ত না তাহাদের পারস্পরিক মতভেদের ব্যাপারসমূহে তোমাকে বিচারকরূপে মেনে না নিবে। তারপর তুমি যে ফায়সালাই করিবে তার প্রসঙ্গে তারা নিজেদের মনে কিছুমাত্র কুষ্ঠাবোধ করিবে না; বরং নিজেদেরকে এর সামনে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করিবে” [সূরাদি. নিসা-৬৫]।

সহীহ্‌ নাসা-ঈ, এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এই হাদীসটি শুআইব ইবনি আবু হামযা-যুহ্‌রী হইতে, তিনি উরওয়া হইতে, তিনি যুবাইর [রাদি.] হইতে এ সনদেও বর্ণিত আছে। তাতে আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.]-এর উল্লেখ নেই। পূর্বোক্ত হাদীসের মত আবদুল্লাহ ইবনি ওয়াহ্‌ব-লাইস হইতে ও ইউনুস-যুহরী হইতে, তিনি উরওয়া হইতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনি যুবাইর [রাদি.] হইতে এ সূত্রেও বর্ণিত আছে। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৭. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তির গোলাম ব্যতীত আর কোন সম্পদ নেই সে মারা যাবার সময় তাহাদেরকে মুক্ত করে দিলে

১৩৬৪. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আনসার বংশের একজন লোক মারা যাওয়ার সময় তার ছয়টি গোলামই মুক্ত করে দিল। তার নিকটে এরা ব্যতীত আর কোন সম্পদ ছিল না। এ খবর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট পৌছানোর পর তিনি তার প্রসঙ্গে কঠোর মন্তব্য করেন। তিনি তারপর গোলামদের ডেকে পাঠালেন এবং তাহাদেরকে [তিন] ভাগ করে তাহাদের মধ্যে লটারী করিলেন। তিনি সে মোতাবিক দুইজনকে মুক্ত করে দিলেন এবং বাকি চারজনকে গোলাম হিসারে রেখে দিলেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩৪৫], মুসলিম, আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীসটি ইমরান [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীস অনুযায়ী একদল বিশেষজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। এ প্রসঙ্গে বা অন্য কোন ব্যাপারে লটারী করে ঠিক করে নিতে হইবে বলে মালিক, শাফিঈ, আহ্‌মাদ ও ইসহাক মত প্রকাশ করিয়াছেন। কিন্তু লটারীর পক্ষে রায় প্রদান করেননি কূফাবাসী কিছু আলিম। তাহাদের মতে, এক্ষেত্রে প্রতিটি গোলামের তিন ভাগের এক অংশ মুক্ত হইবে। অবশিষ্ট দুই ভাগের মুক্তির জন্য তাহাদের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিতে হইবে। আবুল মুহাল্লাবের নাম আবদুর রাহ্‌মান ইবনি আমর আলজারমী তিনি আবু কিলাবা নহেন। মতান্তরে মুআবিয়া, পিতা আমর। আবু কিলাবা আলজারমীর নাম আব্দুল্লাহ ইবনি যাইদ। ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮. অনুচ্ছেদঃ মাহ্‌রাম আত্মীয়ের [ক্রীতদাস সূত্রে] মালিক হলে

১৩৬৫

সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক যদি তার কোন মাহ্‌রাম আত্মীয়ের মালিক হয় তাহলে সে [দাসত্ব হইতে] স্বয়ং স্বাধীন হয়ে যাবে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৫২৪]

আবু ঈসা বলেন, আমরা শুধুমাত্র হাম্মাদ ইবনি সালামার বর্ণনা হইতেই এ হাদীস মুসনাদ হিসেবে জেনেছি। এ হাদীসটি কাতাদা হইতে হাসানের বরাতে উমর [রাদি.]-এর সূত্রে কিছু বর্ণনাকারী বর্ণনা করিয়াছেন।

অন্য আরেকটি সনদেও সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক যদি তার কোন মাহ্‌রাম আত্মীয়ের [দাসত্ব সূত্রে] মালিক হয় তাহলে সে [দাসত্ব হইতে] নিজেই মুক্ত হয়ে যাবে।

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি আসিম আল-আহ্‌ওয়াল হইতে হাম্মাদ ইবনি সালামার সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনি বাক্‌র ছাড়া আর কেউ বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করিয়াছেন। ইবনি উমার [রাদি.] বর্ণনা করিয়াছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক যদি তার কোন মাহ্‌রাম আত্মীয়ের মালিক হয় তাহলে সে নিজেই মুক্ত হয়ে যাবে। উপরোক্ত হাদীসটি যামরা ইবনি রাবীআ-সাওরী হইতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনি দীনার হইতে, তিনি ইবনি উমার [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এইসূত্রে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু এক্ষেত্রে যামরার কোন অনুসারী নেই। তাই হাদীস বিশারদগণ মনে করেন এ হাদীসের সনদে ক্রটি আছে।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৯. অনুচ্ছেদঃ অনুমতি না নেওয়া অবস্থায় কোন সম্প্রদায়ের জমি চাষাবাদ করলে

১৩৬৬

রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন সম্প্রদায়ের জমিতে যদি কোন লোক তাহাদের বিনা অনুমতিতে কৃষিকাজ করে তাহলে সে ফসলের কোন অংশ পাবে না, শুধুমাত্র চাষাবাদের খরচ পাবে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৪৬৬]

এ হাদীসটিকে আবু ঈসা উল্লেখিত সনদসূত্রে হাসান গারীব বলেছেন। আমরা আবু ইসহাকের এই হাদীস প্রসঙ্গে শুধুমাত্র শারীক ইবনি আবদুল্লাহ্‌র সনদেই জেনেছি। এ হাদীস অনুযায়ী একদল বিশেষজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। একই কথা বলেছেন আহ্‌মাদ ও ইসহাকও। আবু ঈসা বলেন, আমি এ হাদীস প্রসঙ্গে মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈলকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা হাসান হাদীস। আমরা আবু ইসহাকের এ হাদীস প্রসঙ্গে শুধুমাত্র শারীকের সূত্রে জানতে পেরেছি। তিনি আরো বলেন, এটি মাকিল ইবনি মালিক আল-বাসরী-উকবা হইতে, তিনি আতা হইতে, তিনি রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০. অনুচ্ছেদঃ দান বা উপহার এবং সন্তানদের মাঝে সমতা বজায় রাখা

১৩৬৭

নুমান ইবনি বাশীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তার আব্বা তার এক ছেলেকে একটি গোলাম প্রদান করেন। তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]কে এর সাক্ষী করার উদ্দেশ্যে তার নিকট আসেন। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার এই সন্তানকে যা দিয়েছ, তোমার অন্য সন্তানদেরকেও কি তা দিয়েছ তিনি বলিলেন, না। তিনি [রাসূল [সাঃআঃ]] বললেনঃ এই দান ফিরিয়ে নাও।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩৭৫, ২৩৭৬], নাসা-ঈ

এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীসটি আরো কয়েকটি সূত্রে নুমান ইবনি বাশীরের নিকট হইতে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীস অনুযায়ী একদল বিশেষজ্ঞ আলিম আমল করিয়াছেন। তারা সন্তানদের মধ্যে সমতা বজায় রাখাকে খুবই পছন্দনীয় বলেছেন। কেউ কেউ এ পর্যণ্ডও বলেছেন যে, তাহাদের মধ্যে চুম্বন দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমতা বজায় রাখতে হইবে। আর একদল বিশেষজ্ঞ আলিম বলেছেন, সন্তানদের মধ্যে উপহার-উপটৌকন প্রদানের ক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখতে হইবে। এক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করা যাবে না। সুফিয়ান সাওরী এই মত দিয়েছেন। আহ্‌মাদ ও ইসহাক [রঃ] বলেছেন, মীরাস বন্টনের নীতি মোতাবেক উপহার-উপটৌকনের ক্ষেত্রেও ছেলে সন্তান মেয়ে সন্তানের দ্বিগুণ পাবে।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩১. অনুচ্ছেদঃ শুফআ [অগ্র-ক্রয়াধিকার]

১৩৬৮

সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বাড়ীর প্রতিবেশী উক্ত বাড়ীর [ক্রয় করার ক্ষেত্রে] প্রাধান্য পাবে।

সহীহ্‌, ইরওয়া- [১৫৩৯]

শারীদ, আবু রাফি ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। ঈসা ইবনি ইউনুস সাঈদ ইবনি আবী আরুবা হইতে, তিনি কাতাদা হইতে, তিনি আনাস [রাদি.] হইতে তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সাঈদ কাতাদা হইতে, তিনি হাসান হইতে, তিনি সামুরা [রাদি.] হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রেও হাদীসটি বর্ণিত আছে। হাদীস বিশারদদের মতে সামুরা হইতে হাসানের বর্ণনাটিই সঠিক। আনাস হইতে কাতাদার বর্ণনাটি শুধুমাত্র ঈসা ইবনি ইউনুসের সূত্রেই জানা যায়। আব্দুল্লাহ ইবনি আব্দুর রহমান আমর ইবনি শারদ হইতে, তিনি তার বাবা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতেও হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। ইবরাহীম ইবনি মাইমারা আমর ইবনি শারীদ হইতে, তিনি আবু রাফি হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এইসূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। উভয় হাদীসকেই ঈমাম বুখারী সহীহ্‌ বলে মনে করেন।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২. অনুচ্ছেদঃ অনুপস্থিত লোকেরও শুফআর অধিকার আছে

১৩৬৯

জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিবেশী তার শুফআর ক্ষেত্রে বেশি হকদার। সে অনুপস্থিত থাকলে তার জন্য অপেক্ষা করিতে হইবে-যদি উভয়ের যাতায়াতের একই রাস্তা হয়।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৪৯৪]

এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। এ হাদীসটিকে আবদুল মালিক ইবনি আবু সুলাইমান-আতা হইতে, তিনি জাবির [রাদি.]-এর সূত্র ছাড়া আর কেউ বর্ণনা করিয়াছেন এমনটি আমাদের জানা নেই। শুবা [রঃ] এ হাদীসকে কেন্দ্র করে আবদুল মালিক ইবনি আবু সুলাইমানের সমালোচনা করিয়াছেন। হাদীস বিশারদদের মতে আবদুল মালিক একজন

বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। শুবা ব্যতীত আর কেউ উল্লেখিত হাদীসকে কেন্দ্র করে তার সমালোচনা করিয়াছেন কি-না সে সম্বন্ধে আমাদের কোনকিছু জানা নেই। এ হাদীসটি ওয়াকী [রঃ] শুবার সূত্রে, তিনি আবদুল মালিকের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনিল মুবারাক হইতে বর্ণিত আছে, সুফিয়ান সাওরী বলেছেন, আবদুল মালিক ইবনি আবী সুলাইমান হাদীসের জ্ঞানের ক্ষেত্রে মানদণ্ডস্বরূপ। এ হাদীস মোতাবিক অভিজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তারা মনে করেন, শুফআর ক্ষেত্রে প্রতিবেশীই অন্যান্যদের চাইতে বেশি হকদার, সে লোক হাযির না থাকা অবস্থায়ও। সে যখন ফিরবে তখন শুফআর জন্য দাবি করিতে পারবে, যদিও অনুপস্থিতির সময় অনেক দীর্ঘ হয়

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩. অনুচ্ছেদঃ জমির সীমানা নির্ধারিত এবং বন্টিত হওয়ার পর শুফআর অধিকার থাকে না

১৩৭০

জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন সীমানা নির্ধারিত হয়ে যায় এবং রাস্তা আলাদা হয়ে যায় তখন শুফআর আর কোন অধিকার থাকে না।

সহীহ্‌ ইবনি মা-জাহ- [৩৪৯৯], বুখারী

এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীসটিকে কয়েকজন বর্ণনাকারী আবু সালামার বরাতে নাবী [সাঃআঃ] হইতে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীস মোতাবিক উমার, উসমান [রাদি.] প্রমুখ সাহাবীগণ আমল করিয়াছেন। এরকমই বলেছেন উমার ইবনি আবদুল আযীয [রঃ] এবং আরো কয়েকজন তাবিঈ ও ফিকহ্‌বিদ। এই মত দিয়েছেন মাদীনার আলিমগণ তথা ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সাইদ আল-আনসারী, রাবীআ ইবনি আবু আবদুর রাহমান ও মালিক ইবনি আনাসও। শাফিঈ, আহ্‌মাদ ও ইসহাকও একই রকম কথা বলেছেন। তারা সবাই মনে করেন শুফআ শুধুমাত্র শরীকানা সম্পত্তিতেই দাবি করা যায়। প্রতিবেশী অংশীদার না হলে সে শুফআর দাবি তুলতে পারে না। অন্য একদল সাহাবী ও অপরাপর আলিমের মতে, শুফআর জন্য প্রতিবেশী দাবি তুলতে পারে। এই মারফু হাদীসকে তারা দলীল হিসেবে নিয়েছেনঃ [১] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “প্রতিবেশী [অপর প্রতিবেশীর] ঘর কেনার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।” [২] “তার নিকট অবস্থানের জন্যই প্রতিবেশী [শুফআর] বেশি হকদার”। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক ও কূফাবাসীগণ।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৪. অনুচ্ছেদঃ অংশীদার শুফআর অধিকারী

১৩৭১

ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শারীক শুফআর অধিকারী। প্রতিটা জিনিসেই শুফআ আছে।

-মুনকার, যঈফা [১০০৯, ১০১০]

আবু ঈসা বলেন, আমরা শুধু আবু হামযা আস-সুককারীর সূত্রেই এ হাদীস প্রসঙ্গে জেনেছি। একাধিক রাবী আবদুল আযীয ইবনি রুআইফির সূত্রে-ইবনি আবু মুলাইকার বরাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে উক্ত হাদীস মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন এবং এটাই সহীহ। হান্নাদ-আবু বাক্‌র ইবনি আইয়্যাশ হইতে তিনি আবদুল আযীয ইবনি রুয়াইফি হইতে তিনি ইবনি আবু মুলাইকা হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে উক্ত মর্মে এরকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাতে “ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে” সূত্রের উল্লেখ নেই। একইভাবে একাধিক রাবী-আবদুল আযীয ইবনি রুআইফি হইতে উক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাতেও “ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে” সূত্রের উল্লেখ নেই। এই হাদীসটি আবু হামযার সূত্রে বর্ণিত হাদীসের তুলনায় বেশী সহীহ মনে হয়। নির্ভরযোগ্য [সিকাহ] রাবী আবু হামযা ব্যতীত অন্য কারো এই ভুলটি হয়েছে। হান্নাদ-আবুল আহ্ওয়াস হইতে তিনি আবদুল আযীয ইবনি রুয়াইফি হইতে তিনি ইবনি আবু মুলাইকা হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে আবু বাক্‌র ইবনি আইয়্যাশের হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ আলিমের মতে, শুধুমাত্র ঘর-বাড়ি ও স্থাবর সম্পত্তিতেই শুফআ দাবি করা যাবে। তাহাদের মতে যে কোন জিনিসেই শুফআ দাবি করা যাবে না। অপর একদল বিশেষজ্ঞ আলিমের মতে যে কোন জিনিসেই শুফআ দাবি করা যায়। কিন্তু প্রথম মতই অনেক বেশী সহীহ।

** [শুফআ এর অর্থ হচ্ছে অগ্রাধিকার, অর্থাৎ কোন বস্তু ক্রয় বিক্রয়ের ব্যাপারে অংশীদার ব্যক্তির হক অগ্রাধিকার পাবে] অনুবাদক।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ মুনকার

৩৫. অনুচ্ছেদঃ লুকতা [হারানো বস্তু] এবং হারানো উট ও ছাগল ইত্যাদি প্রসঙ্গে

১৩৭২

যাইদ ইবনি খালিদ আল-জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক লোক হারিয়ে যাওয়া জিনিস কুড়িয়ে পাওয়া প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেনঃ এর ঘোষণা প্রদান করিতে থাক এক বছর না হওয়া পর্যন্ত। তারপর তুমি এর ফিতা, থলে ও চামড়ার বাক্স এবং এর সংখ্যা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে রাখ। তারপর তুমি তা খরচ কর। এর মালিক যদি পরবর্তী কালে চলে আসে তাহলে এটা তাকে ফিরত দিয়ে দিও। লোকটি আবার বলিল, হে আল্লাহর রাসূল। হারিয়ে যাওয়া মেষের ক্ষেত্রে কি বিধান রহিয়াছে? তিনি বললেনঃ এটা ধরে রাখবে। কারণ এটা তোমার অথবা তোমার ভাইয়ের অথবা নেকড়ে বাঘের। সে আবার বলিল, হে আল্লাহর রাসূল। হারানো উটের ক্ষেত্রে কি বিধান রহিয়াছে। বর্ণনাকারী বলেন, এবার রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] উত্তেজিত হলেন, এমনকি তার দুই গাল বা মুখমণ্ডল রক্তিমবর্ণ ধারণ করিল। তিনি বললেনঃ এতে তোমার মাথা ঘামানোর কি প্রয়োজন। এর সাথে এর খুর এবং পানীয় আছে, অবশেষে এটা [ঘুরতে ঘুরতে] তার মালিকের সাথে গিয়ে মিলিত হইবে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৫০৪], নাসা-ঈ

যাইদ ইবনি খালিদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস যাইদ [রাদি.] হইতে আরো কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত আছে। যাইদ ইবনি খালিদের বরাতে ইয়াযীদ বর্ণিত হাদীসটিও হাসান সহিহ। এটিও কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৭৩

যাইদ ইবনি খালিদ আল-জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কোন হারানো জিনিস প্রাপ্তি প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেনঃ এক বছর না হওয়া পর্যন্ত এর ঘোষণা দিতে থাক। যদি সনাক্তকারী কোন লোক পাওয়া যায় তাহলে তাকে তা ফিরত দাও। এর ব্যতিক্রম হলে তুমি এর থলে ও থলের বন্ধনী সঠিকভাবে চিনে রাখ এবং এর মধ্যকার জিনিস গণনা করার পর কাজে ব্যবহার কর। তারপর মালিক এসে গেলে এটা তাকে ফিরিয়ে দিও।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৫০৭], নাসা-ঈ

আবু ঈসা বলেন, উবাই ইবনি কাব, আবদুল্লাহ ইবনি উমার, জারূদ ইবনিল মুআল্লা, ইয়ায ইবনি হিমার ও জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। যাইদ ইবনি খালিদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখিত সনদসূত্রে হাসান, সহীহ্‌ এবং গারীব। আহমাদ ইবনি হাম্বল [রঃ] এ অনুচ্ছেদে এ হাদীসটিকেই অনেক বেশি সহীহ্‌ বলেছেন। হাদীসটি যাইদ [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।

এ হাদীস মোতাবিক নাৰী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর একদল সাহাবী ও তৎপরবর্তী আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তারা মনে করেন রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত ঘোষণার পরও মালিকের সন্ধান পাওয়া না গেলে তা নিজের কাজে প্রয়োগ করা যায়। এই মত প্রকাশ করিয়াছেন ঈমাম শাফি, আহ্‌মাদ ও ইসহাক। অন্য একদল সাহাবী ও তৎপরবর্তী আলিমগণ বলেছেন, কুড়িয়ে পাওয়া বস্তুর জন্য এক বছর পর্যন্ত ঘোষণা প্রদান করিতে হইবে। এর মধ্যে মালিক এসে গেলে তাকে তা ফিরত দিতে হইবে অন্যথায় সাদকা [দান] করে দিতে হইবে। এই মত প্রদান করিয়াছেন সুফিয়ান সাওরী, আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক ও কুফাবাসী আলিমগণও। তারা মনে করেন, যে লোক হারিয়ে যাওয়া জিনিস কুড়িয়ে পেয়েছে সে যদি সম্পদশালী হয় তবে এটাকে তার কাজে লাগানো বৈধ হইবে না। ঈমাম শাফি মনে করেন, কুড়িয়ে পাওয়া লোকটি সম্পদশালী হলেও এটা তার কাজে লাগানো বৈধ। কেননা রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর জীবদ্দশায় উবাই ইবনি কাব [রাদি.] এক শত দীনারের একটি থলে পেয়েছিলেন। তিনি তাকে নির্দিষ্ট মেয়াদকাল ধরে ঘোষণা দেওয়ার পরে এটা কাজে লাগানোর অনুমতি প্রদান করেন। অথচ তিনি একজন সম্পদশালী লোক ছিলেন। আলী [রাদি.]-ও একইভাবে একটি দীনার পেয়েছিলেন। এক বছর পর্যন্ত তিনি এর ঘোষণা করিতে থাকেন, কিন্তু কোন লোকই এটার খোঁজ করিল না। এটা কাজে ব্যবহারের জন্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে সম্মতি দেন। রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস শুধুমাত্র সাদকা ভোগকারী ব্যতীত অন্য কারো জন্য হালাল না হলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আলী [রাদি.]-কে এটা কাজে ব্যবহারের জন্য সম্মতি প্রদান করিতেন না। কেননা আলী [রাদি.]-এর জন্য সাদকার মাল ভোগ করা হারাম ছিল। কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস সামান্য হলে তবে ঘোষণা ব্যতীতই তা ভোগ করাকে একদল আলিম জায়িয বলেছেন। আর অন্য একদল আলিম বলেছেন, এক দীনারের কম পরিমাণ সম্পদ কুড়িয়ে পেলে তবে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ঘোষণা করিতে হইবে। এই মতামতটি প্রদান করিয়াছেন ইসহাক ইবনি ইবরাহীমও।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৭৪

সুয়াইদ ইবনি গাফালাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি কোন এক সময়ে যাইদ ইবনি সূহান ও সালমান ইবনি রাবীআর সাথে যাত্রা করলাম। আমি রাস্তার মধ্যে একটি চামড়ার থলে পেলাম। ইবনি নুমাইরের বর্ণনায় আছেঃ রাস্তাতে পড়ে থাকা একটি চামড়ার থলে তুলে নিলাম। তারা উভয়ে বলিলেন, এটা রেখে দাও। আমি বললাম, হিংস্র জন্তুর খাবারের উদ্দেশ্যে আমি এটাকে হাতছাড়া করব না। অবশ্যই আমি এটাকে সাথে নিব এবং নিজের কাজে প্রয়োগ করব। তারপর আমি উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-এর নিকট গেলাম। আমি এ প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করলাম এবং ঘটনাটি খুলে বললাম। তিনি বলিলেন, তুমি ভালই করেছ। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর আমলে একশত দীনারের একটি থলে পেয়েছিলাম। আমি সেটা সাথে নিয়ে তার কাছে এলে তিনি আমাকে বলেনঃ এটার পরিচয় সহকারে এক বছর পর্যন্ত ঘোষণা করিতে থাক। আমি এক বছর পর্যন্ত এর জন্য ঘোষণা দিলাম, কিন্তু এর কোন সনাক্তকারী খুঁজে পাইনি। আমি তার নিকট আবার থলেটিকে আনলে তিনি বললেনঃ আরো এক বছর পর্যন্ত ঘোষণা করিতে থাক। আমি আরো এক বছর পর্যন্ত ঘোষণা প্রদান করলাম। তারপর আমি তার নিকট আসলে তিনি বললেনঃ আরো এক বছর পর্যন্ত ঘোষণা করিতে থাক। [ঘোষণার সময় পেরিয়ে গেলে] তিনি বললেনঃ মুদ্রার সংখ্যা, থলে এবং এর মুখের বাঁধন সঠিকভাবে চিনে রাখ। যখন এর খোঁজকারী এসে তোমাকে দীনারের সংখ্যা এবং এর থলে ও মুখের বন্ধন সম্বন্ধে পরিচয় দিবে তখন এটা তাকে ফিরিয়ে দিবে। এরপরও যদি মালিক না পাওয়া যায় তাহলে তবে তুমি এটা নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগিয়ে দাও।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৫০৬], নাসা-ঈ

এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬. অনুচ্ছেদঃ ওয়াক্‌ফ প্রসঙ্গে

১৩৭৫

ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমার [রাদি.] খাইবারের [গানীমাত হইতে] এক খণ্ড জমি পেয়েছিলেন। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ্ রাসূল! আমি খাইবার এলাকাতে এমন এক খণ্ড জমি পেয়েছি যার তুলনায় উত্তম সম্পদ আমি আর কখনো লাভ করিনি। [এ প্রসঙ্গে] আমাকে আপনি কি আদেশ করেন। তিনি বললেনঃ তুমি চাইলে মূল অংশ ঠিক রেখে লাভের অংশ দান-খাইরাত করিতে পার। সুতরাং উমার [রাদি.] জমিটা এভাবে ওয়াক্‌ফ করিলেন ঃ মূল জমিখণ্ড বিক্রয় করা যাবে না, হেবাও করা যাবে না এবং উত্তরাধিকারদের মধ্যেও ভাগ-বাটোয়ারা হইবে না। সেটার আয় হইতে ফকীর-মিসকীন, আত্মীয়-স্বজন, ক্রীতদাস মুক্তকরণ, আল্লাহর রাস্তায় [জিহাদে], পথিক-মুসাফির এবং মেহমানদের খরচের জন্য ব্যয় করা হইবে। যে লোক এর মুতাওয়াল্লী হইবে সে ন্যায্যভাবে এর আয় হইতে ভোগ করিতে পারবে এবং বন্ধু-বান্ধবদেরকেও খাওয়াতে পারবে, কিন্তু জমা করে রাখতে পারবে না।

[অধঃস্তন] বর্ণনাকারী বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনি সীরীনের নিকট এ হাদীসটি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, মুতাওয়াল্লী সম্পদশালী হওয়ার লক্ষ্যে এই ওয়াক্‌ফ মালের আয় জমা করে রাখতে পারবে না।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ- [২৩৯৬], নাসা-ঈ

ইবনি আওন বলেন, অন্য এক লোক আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি এই ওয়াক্‌ফনামা লাল রঙ-এর চামড়ায় লিখিত আকারে পড়েছেন। তাতে এও লিখা ছিলঃ এ সম্পত্তিকে সম্পদশালী হওয়ার মাধ্যম বানানো যাবে না। ইসমাঈল বলেন, আমি ইবনি উবাইদুল্লাহ ইবনি উমারের নিকট উক্ত ওয়াক্‌ফনামা পড়লাম। তাতেও লিখা ছিল, সম্পদশালী হওয়ার লক্ষ্যে তা হইতে জমা করা যাবে না। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক সাহাবাই কিরাম এবং অপরাপর আলিমগণ আমল করিয়াছেন। জমিজমা বা অন্য কোন সম্পদ ওয়াক্‌ফ করা জায়িয। এ ব্যাপারে পূর্ববর্তী আলিমদের মধ্যে কোন রকম দ্বিমত আছে বলে আমাদের জানা নেই।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৭৬

আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে তার কাজ [কাজের সকল ক্ষমতা] ছিন্ন [বাতিল] হয়ে যায়, কিন্তু তিনটি কাজের [সাওয়াব লাভ] বাতিল হয় নাঃ সাদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন সন্তান যে তার জন্য দুআ করে।

সহীহ্‌, আহকামুল জানায়িজ- [১৭৬], ইরওয়া- [১৯৮০], মুসলিম

এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৭. অনুচ্ছেদঃ চতুষ্পদ জন্তু কোন লোককে আহত করলে এর কোন ক্ষতিপূরণ নেই

১৩৭৭

আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জন্তুর আঘাতে দণ্ড নেই, কূপে পড়াতে দণ্ড নেই, খনিতে দণ্ড নেই এবং রিকাযে এক-পঞ্চমাংশ [যাকাত] ধার্য হইবে।

সহীহ্‌ ইবনি মা-জাহ- [২৫০৯, ২৬৭৩], নাসা-ঈ

কুতাইবা-লাইস হইতে, তিনি ইবনি শিহাব হইতে, তিনি সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যিব আবু সালামা হইতে, তিনিও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর সূত্রে [উপরের হাদীসের] অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। জাবির, আমর ইবনি আওফ ও উবাদা ইবনি সামিত [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন।

ঈমাম মালিক ইবনি আনাস [রঃ] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর বাণীঃ জন্তুর আঘাতে দণ্ড নেই, এ কথার মর্মার্থ এটাই যে, জন্তু-জানোয়ার কোন লোককে আহত করলে তার কোন কিসাস নেই এবং তার জন্য কোনরকম দিয়াত [রক্তপণ] প্রদান করিতে হইবে না। একদল আলিম আল-আজমা শব্দের ব্যাখ্যায় বলেছেন, যে পশু মালিকের হাত হইতে ছুটে পালায় এবং দৌড়ে যাওয়ার সময় কোন লোককে আহত করে তাকে আজমা বলে। এজন্য মালিককে কোনরকম জরিমানা প্রদান করিতে হইবে না। খনিতে দণ্ড নেই কথার তাৎপর্য হল, খনিজ সম্পদ উত্তোলনের উদ্দেশ্যে কোন লোক গর্ত খুঁড়লে এবং তাতে শ্রমিক বা অন্য কোন লোক পড়ে গিয়ে আহত হলে বা মারা গেলে মালিকের কোনরকম জরিমানা ধার্য হইবে না। একইভাবে পথচারীদের জন্য কোন লোক কূপ খনন করলে এবং তাতে পড়ে গিয়ে যদি কোন লোক আহত হয় বা নিহত হয় তবে সেক্ষেত্রেও কোনরকম জরিমানা ধার্য হইবে না। জাহিলী যুগে মাটির নীচে পুঁতে রাখা সম্পদকে রিকায বলা হয়। কোন লোক যদি এই সম্পদ পায় তবে এর এক-পঞ্চমাংশ সরকারী তহবিলে জমা করিতে হইবে এবং সে লোক বাকি অংশের মালিক হইবে।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮. অনুচ্ছেদঃ পড়ে থাকা জমিকে চাষাবাদযোগ্য করা

১৩৭৮

সাঈদ ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পড়ে থাকা জমিকে [মালিকানাহীন জমিকে] যদি কোন লোক চাষাবাদযোগ্য করে তুলে তাহলে সে তার মালিক হইবে। জবরদখলকারীর পরিশ্রমের কোন মূল্য নেই।

সহীহ্‌, ইরওয়া- [১৫২০]

এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। এ হাদীসটিকে কয়েকজন বর্ণনাকারী হিশামের বরাতে উরওয়ার নিকট হইতে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীস মোতাবিক রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর একদল সাহাবী ও তৎপরবর্তী আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তারা বলেছেন, যে লোক [মালিকানাহীন] পতিত জমি আবাদযোগ্য করে তুলে সে সরকারের বিনা অনুমতিতেই এর মালিক হয়ে যাবে। একথা বলেছেন ঈমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাকও। তাহাদের মধ্যে অন্য একদল বলেছেন, কোন লোকের জন্য সরকারের বিনা অনুমতিতে পড়ে থাকা জমি আবাদ করা বৈধ নয়। প্রথম মতই অনেক বেশি সহিহ। জাবির, আমর ইবনি আওফ আল-মুযানী ও সামুরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৭৯

জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পড়ে থাকা [মালিকানাহীন] জমিকে যদি কোন লোক আবাদ করে তাহলে সে তার মালিক হইবে।

সহীহ্‌ ইরওয়া- [১৫৫০]

এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। আবু মূসা মুহাম্মাদ ইবনিল মুসান্না [রঃ] বলেন, “জবরদখলকারীর পরিশ্রমের কোন মূল্য নেই” কথার তাৎপর্য প্রসঙ্গে আমি আবুল ওয়ালীদ আত-তাইয়ালিসী [রঃ]-এর কাছে প্রশ্ন করি। তিনি বলেন, জবরদখলকারী হচ্ছে অবৈধভাবে আত্মসাৎকারী। আমি বললাম, অন্যের জমিতে যে লোক গাছ রোপন করে সেইকি জবরদখলকারী। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, এ লোকই।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৯. অনুচ্ছেদঃ জায়গীর [দান বা পুরুস্কার স্বরূপ] মঞ্জুরী প্রসঙ্গে

১৩৮০

আব্‌ইয়ায ইবনি হাম্মাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নিজ বংশের প্রতিনিধি হয়ে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে]-এর নিকট এসে তাহাদেরকে লবণ খনি প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন। তিনি তাকে সেটা দান করেন। তিনি চলে যাওয়ার সময় মজলিসের এক লোক বলেন, আপনি লক্ষ্য করিয়াছেন কি, তাকে কি জায়গীর দিয়েছেন? আপনি প্রস্রবণের অফুরন্ত পানি [প্রচুর লবণ] তাকে প্রদান করিয়াছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি এটাকে তার নিকট হইতে ফিরিয়ে নিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি [আব্‌ইয়ায] আরাক গাছের কোন জমি রক্ষিত করা যায় কি, এবিষয়েও তার নিকট জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেনঃ উটের ক্ষুর যার নাগাল পায় না [অর্থাৎ পশু চারণভূমি ও বসতি এলাকা হইতে দূরের জায়গা]।

হাসান, ইবনি মা-জাহ- [২৪৭৫]

আবু ঈসা বলেন, কুতাইবাকে এই হাদীসটি পড়ে শুনালে তিনি তা সমর্থন করেন এবং বলেন, আমার নিকট মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি কাইস আল-মারিবী এরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। মারিব ইয়ামান এলাকার কোন জায়গার নাম। ওয়াইল ও আসমা বিনতু আবু বাক্‌র [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবইয়ায [রঃ] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা গারীব বলেছেন। এ হাদীস মোতাবেক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর একদল সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তারা মনে করেন সরকার যে কোন লোককে জায়গীর দেওয়ার ক্ষেত্রে অধিকার রাখে।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১৩৮১

আলকামা ইবনি ওয়াইল [রঃ] হইতে তার বাবা হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে জায়গীর হিসাবে হাযরামাওতের এক খণ্ড জমি দান করেন। মাহমূদ বলেন, আমাদেরকে নাযর শুবার সূত্রে এ হাদীসটি শুনিয়েছেন। তিনি [শুবা] তার বর্ণনায় আরো উল্লেখ করেছেনঃ জমি নির্দিষ্ট করে দেওয়ার জন্য তিনি তার সাথে মুআবিয়া [রাদি.]-কে প্রেরণ করেন।

সহীহ্‌ , তালীক আলা রাওযাতিন নাদীয়াহ [২/১৩৭]

আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহিহ।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪০. অনুচ্ছেদঃ গাছ লাগানোর ফাযিলাত

১৩৮২

আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলিম লোক বৃক্ষ রোপণ করলে অথবা কৃষিকাজ করলে এবং তা হইতে মানুষ অথবা পশু-পাখি খেয়ে নিলে সেটা তার জন্য দান-খয়রাত হিসেবে বিবেচিত হইবে।

সহীহ্‌, সহীহাহ- [৭], নাসা-ঈ

আবু আইয়ুব, জাবির, উম্মু মুবাশশির ও যাইদ ইবনি খালিদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪১. অনুচ্ছেদঃ ভাগচাষ বা বর্গা প্রথা প্রসঙ্গে

১৩৮৩

ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] উৎপাদিত ফল অথবা শস্যের অর্ধেক প্রদানের চুক্তিতে খাইবারের জনগণকে কৃষিকাজে নিয়োগ করেছিলেন।

সহীহ্‌ ইবনি মা-জাহ- [২৪৬৭], নাসা-ঈ

আনাস, ইবনি আব্বাস, যাইদ ইবনি সাবিত ও জাবির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস মোতাবিক রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একদল সাহাবী ও কিছু আলিম অভিমত দিয়েছেন। অর্ধেক, তিন ভাগের এক অংশ বা চার ভাগের এক অংশ ফসলের বিনিময়ে ভাগচাষ করানোকে তারা দূষণীয় বলে মনে করেন না। কিছু আলিম বলেছেন, জমির মালিককে বীজ সরবরাহ করিতে হইবে। এই মত দিয়েছেন ঈমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাকও। কিছু আলিম এক-তৃতীয়াংশ বা এক চতুর্থাংশের বিনিময়ে ভাগচাষ করানো মাকরুহ বলেছেন। কিন্তু তারা এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ ফলের বিনিময়ে খেজুর বাগান ইত্যাদি বর্গা দেয়াকে মাকরূহ বলে মনে করেন না। ঈমাম মালিক ও শাফিঈ [রঃ] এই মতামত দিয়েছেন। অপর একদল আলিমের মতে, যে কোন প্রকারের ভাগচাষই নাজায়িয। স্বর্ণ অথবা রূপার বিনিময়ে [নগদ অর্থে] ভাড়ায় তা চাষ করিতে হইবে।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪২. অনুচ্ছেদঃ [জমি ভাগচাষে দেওয়া অথবা নগদ মূল্যে বিক্রয় জায়িয কিন্তু নিঃস্বার্থভাবে চাষ করিতে দেওয়া উত্তম]

১৩৮৪

রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে এমন একটি কাজ হইতে বিরত থাকতে বলেন, যা ছিল আমাদের জন্য খুবই লাভজনক। তা হলঃ আমাদের কারো জমি থাকলে তা উৎপাদিত ফসলের একটি অংশ দেওয়ার বিনিময়ে অথবা নগদ মূল্যে [কাউকে] চাষ করিতে দেওয়া। তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কারো উদ্ধৃত্ত জমি থাকলে সে যেন তার ভাইকে তা ধার দেয় অথবা নিজে চাষ করে।

সহীহ্‌, “নগদ মূল্যে” অংশটুকু শাজ। ইরওয়া- [৫/২৯৮-৩০০], গাইয়াতুল মারাম- [৩৫৫]

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩৮৫

ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

বর্গাচাষ প্রথাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হারাম করেননি। বরং তিনি পরস্পরকে পরস্পরের প্রতি দয়া ও সহানুভূতি দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

সহীহ্‌ মুসলিম [৫/২৫]

আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। রাফি [রাদি.] বর্ণিত এ হাদীসের সনদে গরমিল আছে। এ হাদীস রাফি [রাদি.] তার চাচাদের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। হাদীসটি যুহাইর ইবনি রাফি হইতেও বর্ণিত আছে। তিনিও তার চাচাদের একজন। বিভিন্ন বর্ণনাকারী রাফি [রাদি.]-এর নিকট হইতে এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। যাইদ ইবনি সাবিত এবং জারির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে [যা আবু দাঊদ, নাসাঈ ও ইবনি মাজায় বিদ্যমান রহিয়াছে]।

ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

Comments

One response to “ন্যায় বিচার সম্পর্কিত হাদিস । বিচারক কিভাবে ফায়সালা করিবে”

Leave a Reply