তালাকের নিয়্যাত না করলে তালাক হইবে না
তালাকের নিয়্যাত না করলে তালাক হইবে না >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
৪. অধ্যায়ঃ ইখ্তিয়ার প্রদান করলে তালাকের নিয়্যাত না করলে তালাক হইবে না
৩৫৭৩. আবু সালামাহ্ ইবনি আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
আয়িশা [রাদি.] বলেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর স্ত্রীদের ইখ্তিয়ার প্রদানে আদিষ্ট হলে বিষয়টি আমাকে দিয়ে সুচনা করিলেন। তিনি বলিলেন, “আমি তোমার কাছে একটি বিষয় উপস্হাপন করছি, তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ না করা পর্যন্ত তুমি তাতে তাড়াহুড়া না করলে তোমার কোন লোকসান হইবে না।” আয়িশা [রাদি.] বলেন, নবী [সাঃআঃ] নিশ্চিত অবগত ছিলেন যে, আমার মা-বাপ আমাকে তাহাঁর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটাবার পরামর্শ দিতে প্রস্তুত হইবেন না। আয়িশা [রাদি.] বলেন, অতঃপর নবী [সাঃআঃ] [ইখতিয়ারের বিষয়ের বিবরণ প্রদানে] বলিলেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لأَزْوَاجِكَ إِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا فَتَعَالَيْنَ أُمَتِّعْكُنَّ وَأُسَرِّحْكُنَّ سَرَاحًا جَمِيلاً * وَإِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالدَّارَ الآخِرَةَ فَإِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْمُحْسِنَاتِ مِنْكُنَّ أَجْرًا عَظِيمًا
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলে দিন! তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার ভূষণ কামনা কর, তবে এসো আমি তোমাদের ভোগ-সামগ্রীর ব্যবস্হা করে দেই এবং সৌজন্যের সঙ্গে তোমাদের বিদায় দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাহাঁর রসূল ও আখিরাত কামনা কর তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন”- [সূরাহ্ আল আহ্যাব ৩৩ : ২৮-২৯]। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমি বললামঃ এ ব্যাপারে আবার আমার মা-বাপের সঙ্গে পরামর্শ করব? আমি তো আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূল ও আখিরাতকেই ইখ্তিয়ার করছি”। তিনি বলেন, পরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অন্যান্য স্ত্রীগণ তেমনই করেন যেমন আমি করেছিলাম।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৪৪, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৪৪]
৩৫৭৪. মূআযাহ্ আল আদাবিয়্যাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন,
تُرْجِي مَنْ تَشَاءُ مِنْهُنَّ وَتُؤْوِي إِلَيْكَ مَنْ تَشَاءُ
“আপনি তাদের [স্ত্রীদের] মধ্যে যাকে ইচ্ছা দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট স্হান দিতে পারেন”- [সুরা আল আহযাব ৩৩ : ৫১] আয়াত নাযিল হবার পরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর কোন এক স্ত্রীর পালার দিনে [অন্যদের জন্য] আমাদের নিকট হইতে অনুমতি চাইতেন। তখন মুআযাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাকে বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আপনার নিকট অনুমতি চাইলে আপনি তাঁকে কী বলিতেন? তিনি বলিলেন, আমি বলতাম : এ বিষয়টি আমার অধিকারে থাকলে তো কাউকে আমি আমার উপর অগ্রাধিকার দিতাম না। [অর্থাৎ অনুমতি প্রার্থনার বিষয়টি অধিকারমূলক ছিল না। বরং তা ছিল নৈতিক ও রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সৌজন্যমূলক আচরণ মাত্র। সুতরাং সেখানে অনুমতি না দেওয়ার অবকাশ ছিল না। অন্যথায় আমি অনুমতি প্রদানে রাযী হতাম না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৪৫, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৪৫]
৩৫৭৫. সিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
পূর্বোক্ত সানাদে অনুরূপ রিওয়ায়াত করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৪৬, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৪৬]
৩৫৭৬. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে ইখ্তিয়ার দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তা তালাক মনে করিনি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৪৭, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৪৭]
৩৫৭৭. মাসরূক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার স্ত্রীকে ইখ্তিয়ার প্রদানে আমার কোন পরোয়া নেই- একবার শতবার কিংবা হাজারবার যদি সে আমাকে পছন্দ করে থাকে। আর আমি আয়িশা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে ইখ্তিয়ার প্রদান করেছিলেন। এতে কি তালাক হয়ে গিয়েছে? [না এতে তালাক হয় নি]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৪৮, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৪৮]
৩৫৭৮. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সহধর্মিনীগণকে ইখ্তিয়ার প্রদান করেছিলেন। কিন্তু তা [ইখ্তিয়ার প্রদান করা] তালাক বলে গণ্য হয় নি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৪৯, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৪৯]
৩৫৭৯. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদিগকে ইখ্তিয়ার প্রদান করেছিলেন। এরপর আমরা তাঁকে গ্রহণ করলাম। এটা আমাদের উপর তালাক বলে গন্য হয় নি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৫০, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৫০]
৩৫৮০. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে ইখ্তিয়ার প্রদান করেছিলেন। এরপর আমরা তাকে গ্রহণ করলাম। এটা আমাদের উপর তালাক বলে গণ্য হয় নি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৫১, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৫১]
৩৫৮১. আয়িশাহ্ [রাদি.] থেকে আসওয়াদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
মাসরূক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত আছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৫২, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৫২]
৩৫৮২. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু বকর [রাদি.] এসে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে উপস্হিত হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করিলেন। তিনি তাহাঁর দরজায় অনেক লোককে উপবিষ্ট দেখিতে পেলেন। তবে তাদের কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনি [বর্ণনাকারী] বলেন, এরপর তিনি আবু বকর [রাদি.]-কে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করলে তিনি প্রবেশ করিলেন। এরপর উমর [রাদি.] এলেন এবং তিনি অনুমতি প্রার্থনা করিলেন। তখন তাঁকেও প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হল। তিনি নবী [সাঃআঃ]-কে চিন্তাযুক্ত ও নীরব বসে থাকতে দেখলেন আর তখন তাহাঁর চতুষ্পার্শ্বে তাহাঁর সহধর্মিনীগণ উপবিষ্টা ছিলেন। তিনি {বর্ণানাকারী জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]} বলেন, উমর [রাদি.] বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি নবী [সাঃআঃ]-এর নিকটে এমন কথা বলব যা তাঁকে হাসাবে। এরপর তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি যদি খারিজাহ্-এর কন্যাকে {উমর [রাদি.]-এর স্ত্রী} আমার কাছে খোরপোষ তলব করিতে দেখিতেন তাহলে [তৎক্ষণাৎ] আপনি তাহাঁর দিকে অগ্রসর হয়ে তার স্কন্ধে আঘাত করিতেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হেসে উঠলেন এবং বলিলেন, আমার চতূপার্শে তোমরা যাদের দেখিতে পাচ্ছ তারা আমার কাছে খোরপোষ দাবী করছে। অমনি আবু বকর [রাদি.] আয়িশা [রাদি.]-এর দিকে ছুটলেন এবং তাহাঁর গর্দানে আঘাত করিলেন। উমর [রাদি.] ও দাঁড়িয়ে গেলেন এবং হাফ্সাহ্ [রাদি.]-এর দিকে অগ্রসর হয়ে তাহাঁর ঘাড়ে আঘাত করিলেন। তাঁরা উভয়ে বলিলেন, তোমরা নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এমন জিনিস দাবী করছে যা তাহাঁর কাছে নেই। তখন তাঁরা [নবী [সাঃআঃ]-এর সহধর্মিনীগণ] বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমরা আর কখনো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এমন জিনিস চাইব না যা তাহাঁর কাছে নেই। এরপর তিনি তাঁদের [তাহাঁর সহধর্মিনীগণের] থেকে একমাস কিংবা ঊনত্রিশ দিন পৃথক রইলেন। এরপর তাহাঁর প্রতি এই আয়াত নাযিল হল- [অর্থ]
“হে নবী! আপনি আপনার সহধর্মিনীদের বলে দিন, তোমরা যদি পার্থিব জীবনের ভোগ ও এর বিলাসিতা কামনা কর, তাহলে এসো আমি তোমাদের ভোগ-বিলাসের ব্যবস্হা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদায় করে দিই। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাহাঁর রসূল ও পরকালকে কামনা কর তাহলে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণা আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন।” [সূরাহ্ আহযাবঃ ৩৩ : ২৮-২৯]। তিনি {জাবির [রা]} বলেন, তিনি [সাঃআঃ] আয়িশা [রাদি.]-কে দিয়ে [আয়াতের নির্দেশ তামীল করিতে] শুরু করিলেন। তখন তিনি বলিলেন, হে আয়েশাহ! আমি তোমার কাছে একটি [শুরত্বপূর্ণ] বিষয়ে আলাপ করিতে চাই। তবে সে বিষয়ে তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে তোমার ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করাই আমি পছন্দ করি। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার ব্যাপারে আমি কি আমার পিতা-মাতার কাছে পরামর্শ নিতে যাব? [এর কোন প্রয়োজন নেই]। না, বরং আমি আল্লাহ, তাহাঁর রসূল ও আখিরাতকেই বেছে নিয়েছি। তবে আপনার সকাশে আমার একান্ত নিবেদন, আমি যা বলেছি সে সম্পর্কে আপনি আপনার অন্যান্য সহধর্মিনীগণের কারো কাছে ব্যক্ত করবেন না। তিনি বলিলেন, তাঁদের যে কেউ সে বিষয় আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি অবশ্যই তাঁকে তা বলে দিব। কারণ আল্লাহ আমাকে কঠোরতা আরোপকারী ও অত্যাচারীরূপে নয় বরং সহজ পন্হায় [শিক্ষাদানকারী] হিসেবে প্রেরণ করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৩৫৫৩, ইসলামিক সেন্টার- ৩৫৫৩]
Leave a Reply