নির্যাতীতের দোয়া , নম্রতা প্রদর্শন, আল্লাহর কাছে বান্দার রিযিক প্রার্থনা
নির্যাতীতের দোয়া , নম্রতা প্রদর্শন, আল্লাহর কাছে বান্দার রিযিক প্রার্থনা << আদাবুল মুফরাদ হাদীস কিতাবের মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ৬, দান্যতা, কৃপণতা ও দোষ
২১৭. অনুচ্ছেদঃ নম্রতা প্রদর্শন।
২১৮. অনুচ্ছেদঃ সরল জীবনযাত্রা।
২১৯. অনুচ্ছেদঃ নম্রতা অবলম্বন করলে বান্দাকে যা দেয়া হয়।
২২০. অনুচ্ছেদঃ সান্ত্বনা প্রদান।
২২১. অনুচ্ছেদঃ কঠোরতা প্রদর্শন।
২২৩. অনুচ্ছেদঃ উৎপাদনমুখী খাতে সম্পদ বিনিয়োগ।
২২৪. অনুচ্ছেদঃ নির্যাতীতের দোয়া।
২২৫. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর কাছে বান্দার রিযিক প্রার্থনা। কেননা মহামহিম আল্লাহর বাণীঃ “আপনি আমাদের রিফিক দান করুন এবং আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা” [৫ : ১১৪]।
২২৬. অনুচ্ছেদঃ যুলুম হলো অন্ধকার।
২১৭. অনুচ্ছেদঃ নম্রতা প্রদর্শন।
৪৬৪. মহানাবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
কয়েকজন ইহুদীর একটি দল রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট প্রবেশ করে বললো, আসসামু আলাইকুম [তোমাদের মৃত্যু হোক]। আয়েশা [রাঃআঃ] বলেন, কথাটা আমি বুঝতে পারলাম এবং বললাম, ওয়া আলাইকুমুস সামু ওয়াল-লানাতু [তোমাদের মৃত্যু হোক এবং অভিসম্পাতও]। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ থামো হে আয়েশা! আল্লাহ সব ব্যাপারে নম্রতা পছন্দ করেন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! তারা কি বলেছে তা আপনি শুনেননি? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমিও তো ওয়া আলাইকুম বলেছি -[বোখারী, মুসলিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৬৫. জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নম্রতার গুণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৬৬
আবু দারদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যাকে নম্রতার মতো গুণ দান করা হয়েছে তাকে কল্যাণ দান করা হয়েছে। আর যাকে নম্রতার গুণ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে, সে
কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিয়ামতের দিন মুমিন বান্দার নেকীর পাল্লায় সবচেয়ে ভারী বস্তু হইবে উত্তম চরিত্র। নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীলভাষী ও বাচাল লোককে পছন্দ করেন না -[তিরমিজী, আবু দাউদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৬৭
আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ত্রুটি-বিচ্যুতিকে তুচ্ছ জ্ঞান করো। [আবু দাউদ, নাসায়ী]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৬৮
আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ কর্কশ স্বভাব যে কোন বস্তুকেই দোষযুক্ত করে। নিশ্চয় আল্লাহ নম্র এবং তিনিও নম্রতা পছন্দ করেন। [তিরমিযি, ইবনি মাজাহ]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৬৯
আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ছিলেন পর্দানশীন কুমারী মেয়েদের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল। কোন কিছু তাহাঁর অপছন্দ হলে আমরা তাহাঁর চেহারা দর্শনেই তা বুঝতে পারতাম -[বোখারী, মুসলিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৭০
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ উত্তম চালচলন, সদাচার এবং মিতাচার হচ্ছে নবুয়াতের সত্তর ভাগের একভাগ [আবু দাউদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৭১
আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি একটি উটের পিঠে সওয়ার ছিলাম। তা ছিল বেশ কষ্টদায়ক। [আমি তাকে প্রহার করলে] নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তুমি অবশ্যই নম্রতা অবলম্বন করিবে। কোন বস্তুর মধ্যে তা বিদ্যমান থাকলে তা সেই বস্তুকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। আর কোন বস্তু থেকে তা অপসারিত করা হলে তা দোষদুষ্ট হয়ে যায় [মুসলিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৭২
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সাবধান! কৃপণতা পরিহার করিবে। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে এই কৃপণতাই ধ্বংস করেছে। ফলে তারা পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছে এবং আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। যুলুম কিয়ামতের দিন ঘনীভূত অন্ধকাররূপে আবির্ভূত হইবে [মুসলিম, আহমাদ, ইবনি হিব্বান]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২১৮. অনুচ্ছেদঃ সরল জীবনযাত্রা।
৪৭৩
কাসীর ইবনি উবায়দুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাঃআঃ]-এর নিকট গেলাম। তিনি বলেন, একটু অপেক্ষা করো। আমি আমার মুখাভরণটি একটু সেলাই করে নেই। আমি অপেক্ষা করলাম। আমি বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আমি যদি বাইরে গিয়ে লোকজনকে অবহিত করি তবে তারা এটাকে আপনার কৃপণতা বলবে। তিনি বলেন, তুমি নিজের অবস্থার দিকে তাকাও। যে ব্যক্তি পুরাতন কাপড় পরিধান করে না তার জন্য নতুন কাপড় নয় [তাবাকাত ইবনি সাদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২১৯. অনুচ্ছেদঃ নম্রতা অবলম্বন করলে বান্দাকে যা দেয়া হয়।
৪৭৪
আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফফাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা নম্র, তিনি নম্রতা পছন্দ করেন। তিনি নম্রতার উসীলায় [বান্দাকে] এমন কিছু দান করেন যা কঠোরতার বেলায় দান করেন না [মুসলিম, আবু দাউদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২২০. অনুচ্ছেদঃ সান্ত্বনা প্রদান।
৪৭৫
আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সহজ করো, কঠিন করো নাসায়ী, সান্ত্বনা দাও, ঘৃণা বা বিরক্তি উৎপাদন করো না -[বোখারী, মুসলিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৭৬
আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
বনী ইসরাঈলে জনৈক মেহমান আসলো। তাহাদের ঘরের দরজায় ছিল তাহাদের একটি মাদী কুকুর। লোকজন বললো, হে কুকুরী! আমাদের মেহমানের আগমনে ঘেউ ঘেউ করো না। [কুকুরী তো নীরব থাকলো কিন্তু] তার পেটের দানাগুলো ঘেউ ঘেউ করিতে লাগলো। তারা [বিষয়টি] তাহাদের নাবীর কাছে উল্লেখ করলো। তিনি বলেনঃ এর অনুরূপ তোমাদের পরবর্তী উম্মাতের মধ্যে ঘটবে। তাহাদের নির্বোধেরা তাহাদের আলেমদের পরাভূত করিবে [আবু দাউদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
২২১. অনুচ্ছেদঃ কঠোরতা প্রদর্শন।
৪৭৭
আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি একটি উটের পিঠে সওয়ার ছিলাম। তা ছিল বেশ কষ্টদায়ক। আমি তাকে প্রহার করলে নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তুমি অবশ্যই নম্রতা অবলম্বন করিবে। কোন বস্তুর মধ্যে তা থাকলে তা সেই বস্তুকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। আর কোন বস্তু থেকে তা অপসারিত করা হলে তা দোষদুষ্ট হয়ে যায়। [বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়া
২২২.
৪৭৮
আবু নাদরা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমাদের মধ্যকার জাবির বা জুয়াইবির নামক এক ব্যক্তি বলেন, উমার [রাঃআঃ]-এর খেলাফতকালে তার কাছে আমার একটি বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলো। আমি রাতে মদীনায় পৌছলাম। ভোর হলে আমি উমার [রাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমাকে জ্ঞান-বুদ্ধি ও বাকপটুতা উভয়ই দান করা হয়েছে। আমি পার্থিব জীবন সম্পর্কে কথা তুললাম এবং একে একেবারেই তুচ্ছ প্রতিপন্ন করলাম। তার পাশে উপস্থিত ছিলেন সাদা পোশাক পরিহিত শুভ্রকেশী এক ব্যক্তি। আমি কথা শেষ করলে তিনি আমাকে বলেন, তোমার সব কথাই ঠিক। কিন্তু দুনিয়াই তোমার বর্তমান ঠিকানা। তুমি কি জানো, দুনিয়া কি? দুনিয়া হলো আমাদের লক্ষ্যে পৌছার ক্ষেত্র বা আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহের স্থান। এখানে আমরা যে আমল করবো তার প্রতিদান আমরা আখেরাতে লাভ করবো। আগন্তুক বলেন, দুনিয়া প্রসঙ্গে এমন এক ব্যক্তি কথা বলিলেন, যিনি এ ব্যাপারে আমার চেয়ে অধিক অভিজ্ঞ। আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার পাশে উপবিষ্ট ইনি কে? তিনি বলেন, ইনি হলেন মুসলমানদের নেতা উবাই ইবনি কাব [রাঃআঃ]।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৭৯
বারাআ ইবনি আযেব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দাম্ভিকতা হলো সর্বনাশের মূল।[আবু দাউদ]
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২২৩. অনুচ্ছেদঃ উৎপাদনমুখী খাতে সম্পদ বিনিয়োগ।
৪৮০
হানাশ ইবনুল হারিস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কারো ঘোটকীর বাচ্চা হলে সে তা যবেহ করে ফেলতো আর বলতো, তা বাহনের উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত কি আমি বেঁচে থাকবো। অতএব আমাদের নিকট উমার [রাঃআঃ]-র একখানা চিঠি আসলোঃ আল্লাহ তোমাদেরকে যে জীবিকা দান করিয়াছেন তার রক্ষণাবেক্ষণ করো। কেননা তোমাদের ঐ আচরণ অত্যন্ত স্বার্থপরতা প্রসূত।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৮১
আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যদি কিয়ামত এসে যায় এবং তখন তোমাদের কারো হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তবে কিয়ামত হওয়ার আগেই তার পক্ষে সম্ভব হলে যেন চারাটি রোপন করে [আহমাদ হা/১২৯৩৩ ও ১৩০১২]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৮২
দাউদ ইবনি আবু দাউদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, তুমি যদি শুনতে পাও যে, দাজ্জালের আবির্ভাব হয়েছে, আর তুমি খেজুরের চারা রোপণে লিপ্ত আছো, তবে তার রোপনকাজ সারতে তাড়াহুড়া করো না। কেননা তারপরও লোকবসতি অব্যাহত থাকিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২২৪. অনুচ্ছেদঃ নির্যাতীতের দোয়া।
৪৮৩
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেন তিনটি দেয়া অবশ্যই কবুল হয়। [১] উৎপীড়িতের দোয়া, [২] মুসাফিরের দোয়া এবং [৩] সন্তানের জন্য পিতার দোয়া [ইবনি মাজাহ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২২৫. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর কাছে বান্দার রিযিক প্রার্থনা। কেননা মহামহিম আল্লাহর বাণীঃ “আপনি আমাদের রিফিক দান করুন এবং আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা” [৫ : ১১৪]।
৪৮৪
জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে মিম্বারে উপবিষ্ট অবস্থায় ইয়ামনের দিকে তাকিয়ে বলিতে শুনেছেনঃ হে আল্লাহ! এদের অন্তরকে ফিরিয়ে দিন। অতঃপর তিনি ইরাকের দিকে মুখ ফিরিয়ে অনুরূপ বলেন। এভাবে তিনি প্রত্যেক দিকে ফিরে অনুরূপ বলেন। তিনি আরো
বলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি পৃথিবীর উৎপন্নজাত দ্রব্যাদি থেকে আমাদেরকে রিফিক দান করুন এবং আমাদের মুদ্দ ও সা-এ বরকত দান করুন। [আহমাদ, তিরমিজী]
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২২৬. অনুচ্ছেদঃ যুলুম হলো অন্ধকার।
৪৮৫
জাবের ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকো। কেননা অত্যাচার কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকাররূপে আসবে। তোমরা কৃপণতা থেকে বিরত থাকো। কেননা এই কৃপণতা তোমাদের পূর্ববতীদের ধ্বংস করেছে এবং তাহাদেরকে পরস্পরের রক্তপাত করিতে এবং তাহাদের প্রতি হারামসমূহকে হালালরূপে গ্রহণ করিতে উদ্যত করেছে [মুসলিম, আবু দাউদ] ।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৮৬
জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের শেষ যমানায় পাপকর্মের
[শাস্তিস্বরূপ] চেহারা বিকৃতিরমিজী,আসমানী বিপদ ও ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটবে। এই বিপদ প্রথমে যালেমের উপর পতিত হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৮৭
ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকাররূপে আবির্ভূত হইবে। -[বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, আবু দাউদ]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৮৮
আবু সাঈদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মুমিন ব্যক্তিগণের দোযখ থেকে মুক্তি লাভের পর বেহেশত ও দোযখের মধ্যখানে স্থাপিত এক পুলের উপর তাহাদের গতিরোধ করা হইবে। তারা দুনিয়াতে পরস্পরের প্রতি যে অবিচার করেছিল তার প্রতিশোধ নেয়া হইবে। অতঃপর শেষে যখন তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে তখন তাহাদেরকে বেহেশতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হইবে। সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! প্রত্যেকেই জান্নাতে তার স্থান তার দুনিয়ার অবস্থান স্থলের চেয়েও উত্তমরূপে চিনতে পারবে। -[বোখারী, তিরমিজী, আহমাদ]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৮৯
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা অবশ্যই যুলুম করা থেকে বিরত থাকিবে। কেননা যুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকার রূপ ধারণ করিবে। তোমরা অবশ্যই অশ্লীলতা বর্জন করিবে। কেননা আল্লাহ তাআলা অশ্লীলভাষী ও অশ্লীলতার প্রসারকারীকে পছন্দ করেন না। তোমরা অবশ্যই কৃপণতা পরিহার করিবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে পারস্পরিক আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করিতে এবং হারামসমূহকে হালালরূপে গ্রহণ করিতে উদ্যত করেছে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৯০
জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকো। কেননা অত্যাচার কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকাররূপে আসবে। তোমারা কৃপণতা পরিহার করো।
কেননা এই কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে এবং তাহাদেরকে পরস্পরের রক্তপাত করিতে এবং তাহাদের প্রতি হারামসমূহকে হালালরূপে গ্রহণ করিতে উদ্যত করেছে। [মুসলিম,আহমাদ]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৯১
আবুদ দোহা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
মাসরূক ও শুতাইর ইবনি শাকল [রাহিমাহুল্লাহ] মসজিদে একত্র হলেন। মসজিদে উপস্থিত লোকজন তাহাদেরকে ঘিরে ধরলো। মাসরূক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, লোকজন আমাদের নিকট উপদেশ শোনার জন্যই আমাদের ঘিরে ধরেছে। হয় আপনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-এর সূত্রে [হাদিস] বর্ণনা করুন এবং আমি তা সমর্থন করবো অথবা আমি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-এর সূত্রে হাদিস বর্ণনা করি এবং আপনি তা সমর্থন করুন। অপরজন বলেন, হে আবু আয়েশা! আপনি বর্ণনা করুন। তখন তিনি বলেন, আপনি কি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ চক্ষুদ্বয় যেন করে, হস্তদ্বয় যেনা করে, পদদ্বয় যেনা করে এবং লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে? অপরজন বলেন, হাঁ, আমিও তা শুনিয়াছি। পুনরায় তিনি বলেন, আপনি কি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন, নিম্নোক্ত আয়াতের মতো কুরআন মাজীদের আর কোন আয়াতে একই সাথে হালাল-হারাম ও আদেশ-নিষেধ সন্নিবেশিত হয়নিঃ “নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়-ইনসাফ, দয়া-অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়ের প্রাপ্য প্রদানের নির্দেশ দিচ্ছেন” [১৬ : ৯০]? তিনি বলেনঃ হাঁ, আমি তাকে একথা বলিতে শুনিয়াছি। তিনি পুনরায় বলেন, আপনি কি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন, কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের চেয়ে দ্রুত অভাব মোচনকারী ও বিপদমুক্তির অন্য কোন আয়াত নেইঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য মুক্তির একটি ব্যবস্থা করে দেন? [৬৫ : ২] তিনি বলিলেন, হাঁ। মাসরূক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আপনি কি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন, কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের চেয়ে অধিক আবেদনময়ী বা সুবিধা দানকারী অন্য কোন আয়াত নাইঃ “হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছো তোমরা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না? [৩৯ : ৫৩] শুতাইর [রাঃআঃ] বলেন, হাঁ, আমি তার নিকট একথা শুনিয়াছি।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৪৯২
আবু যার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ বরকতময় মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দাগণ! আমি আমার নিজের উপর যুলুম হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের প্রতি তোমাদের যুলুম করাও হারাম করেছি। অতএব তোমরা পরস্পরের প্রতি যুলুম করো না। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা তো রাত-দিন গুনাহ করো, আর আমি গুনাহ মাফ করি । তাতে আমার কোন পরওয়া নাই। অতএব তোমরা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের ক্ষমা করবো। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত, অবশ্য আমি যাকে আহার করাই সে ব্যতীত। অতএব তোমরা আমার কাছে আহার চাও, আমি তোমাদের আহার্য দান করবো। তোমরা সকলেই বস্ত্রহীন, তবে আমি যাকে বস্ত্র দান করি সে ব্যতীত। অতএব তোমরা আমার নিকট বস্ত্র চাও, আমি তোমাদের বস্ত্র দান করবো। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের মধ্যকার প্রথম ব্যক্তি থেকে শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত সকলে অর্থাৎ তোমাদের জিন ও মানব সকলে যদি তোমাদের মধ্যকার সর্বাধিক আল্লাহভীরু ব্যক্তির অন্তরসম হয়ে যায়, তবে তাতে আমার রাজত্বের বিন্দুমাত্র শ্ৰীবৃদ্ধি ঘটবে না। আর যদি সকলে সর্বাধিক পাপিষ্ঠ ব্যক্তিসম হয়ে যায়, তবে তাতেও আমার রাজত্ব বিন্দুমাত্র শ্রীহীন হইবে না। তোমাদের সকলে যদি এক বিশাল প্রান্তরে সমবেত হয়ে আমার নিকট প্রার্থনা করে এবং আমি তাহাদের প্রত্যেককে তার চাহিদামত দান করি, তবে তাতে আমার রাজত্বের এতটুকুই ঘাটতি হইবে, যতটুকু হয় কেউ সমুদ্রে একটি সুই একবার মাত্র ডুবালে। হে আমার বান্দাগণ! আমি তোমাদের আমলসমূহই তোমাদের জন্য সঞ্চয় করে রাখি। সুতরাং তোমাদের কেউ কল্যাণ লাভ করলে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর কেউ তার বিপরীত [অমঙ্গল] কিছু লাভ করলে সে যেন নিজেকেই তিরস্কার করে। আবু ইদরীস আল-খাওলানী [রাহিমাহুল্লাহ] এই হাদিস যখনই বর্ণনা করিতেন তখনই নিজের হাটুদ্বয় একত্র করে পরম বিনয় প্রকাশ করিতেন [বোখারী, মুসলিম, ইবনি মাজাহ, আহমাদ, ইবনি হিব্বান, হাকিম]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply