নিকাহ অধ্যায়। মুতয়াহ শিগার সায়েবা মুনিব দাওয়াত এর বিধান
নিকাহ অধ্যায়। মুতয়াহ শিগার সায়েবা মুনিব দাওয়াত এর বিধান , এই পর্বের হাদীস =৩২ টি (৮৮৪-৯১৫) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্ব-১৬ঃ নিকাহ
১৬/২. মুতয়াহ নিকাহ এবং তার হুকুম বৈধ হওয়া, অতঃপর রহিত হওয়া আবার বৈধ হওয়া ও রহিত হওয়া এবং ক্বিয়ামাত পর্যন্ত তার নিষিদ্ধতা স্থায়ী হওয়া।
১৬/৩. কোন মহিলাকে তার ফুফু অথবা তার খালার সাথে একত্রে নিকাহ করা হারাম।
১৬/৪. ইহরামের অবস্থায় নিকাহ হারাম ও প্রস্তাব দেয়া মাকরুহ।
১৬/৫. কোন ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব দেয়া হারাম যতক্ষণ না সে অনুমতি দেয় অথবা পরিত্যাগ করে।
১৬/৬. শিগার নিকাহ হারাম ও তা বাতিল হওয়ার বর্ণনা।
১৬/৭. নিকাহ্র শর্তসমূহ পূর্ণ করা।
১৬/৮. নিকাহ্র ক্ষেত্রে সায়েবা [বিবাহিতা মহিলা]র সম্মতি হচ্ছে কথা বলা আর কুমারীর সম্মতি হচ্ছে চুপ থাকা।
১৬/৯. ছোট কুমারী মেয়ের পিতা কর্তৃক নিকাহ প্রদান।
১৬/১২. মাহর- ৫০০ দিরহাম নির্ধারণ করা মুস্তাহাব যে অন্যের ক্ষতি করিতে চায় না। এটা কুরআন শিক্ষা, লোহার আংটি ইত্যাদি অল্প মূল্যের ও বেশী মূল্যের হওয়া জায়িয।
১৬/১৩. দাসী মুক্ত করা এবং মুনিব কর্তৃক তাকে নিকাহ করার ফাযীলাত।
১৬/১৪. যায়নাব বিনতে জাহাশ [রাদি.] শাদী ও পর্দার আয়াত অবতীর্ণ এবং বিবাহের ওয়ালীমার প্রমাণ।
১৬/১৫. দাওয়াত দাতার দাওয়াত গ্রহণের আদেশ।
১৬/১৬. তিনবার ত্বলাক দেয়ার পর ত্বলাক দাতার জন্য ত্বলাকপ্রাপ্তা স্ত্রী বৈধ নয় যতক্ষণ না তাকে অন্য স্বামী নিকাহ করে, দৈহিক মিলনের পর তাকে ছেড়ে দেয় ও তার ইদ্দাত পূর্ণ হয়।
১৬/১৭. স্ত্রী মিলনের সময় কী বলা মুস্তাহাব।
১৬/১৮. স্ত্রীর যৌনাঙ্গের সামনের দিক দিয়ে ও পিছনের দিক দিয়ে মিলন করা বৈধ কিন্তু পায়ু পথ ব্যতীত ।
১৬/১৯. স্ত্রীর জন্য স্বামীর বিছানা হইতে বিচ্ছিন্ন থাকা হারাম।
১৬/২১. আযল এর বিধান ।
নিকাহ
৮৮৪. আলক্বামাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
যখন আমি আবদুল্লাহ্ [রাদি.]-এর সাথে ছিলাম, উসমান [রাদি.] তাহাঁর সাথে মিনাতে দেখা করে বলেন, হে আবদুর রহমান! আপনার কাছে আমার কিছু প্রয়োজন আছে। এরপর তারা উভয়েই এক পার্শ্বে গেলেন। অতঃপর উসমান [রাদি.] বলিলেন, হে আবু আবদুর রহমান! আমি আপনার সাথে এমন একটি কুমারী মেয়ের শাদী দিব, যে আপনাকে আপনার অতীত দিনকে স্মরণ করিয়ে দিবে? আবদুল্লাহ্ যখন দেখলেন, তার এ শাদীর প্রয়োজন নেই তখন তিনি আমাকে হে আলক্বামাহ বলে ডাক দিলেন। আমি তাহাঁর কাছে গিয়ে বলিতে শুনলাম, আপনি যখন আমাকে এ কথা বলছেন [তখন আমার স্মরণে এর চেয়ে বড় কথা আসছে আর তা হচ্ছে] রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদেরকে বলিলেন, হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যে শাদীর সামর্থ্য রাখে, সে যেন শাদী করে এবং যে শাদীর সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোযা পালন করে। কেননা, রোযা যৌন ক্ষমতাকে অবদমন করিবে।
[বোখারী পর্ব ৬৭/২ হাঃ ৫০৬৫, মুসলিম পর্ব ১৬ হাঃ ১৪০০] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৮৮৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নাবী [সাঃআঃ]-এর ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নাবী [সাঃআঃ]-এর বিবিগণের গৃহে আগমন করিল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হলো, তখন তারা ইবাদাতের পরিমাণ যেন কম মনে করিল এবং বলিল, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সমকক্ষ হইতে পারি না। কারণ, তাহাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাহাদের মধ্য থেকে একজন বলিল, আমি সারা জীবন রাতের সালাত আদায় করিতে থাকব। অপর একজন বলিল, আমি সারা বছর রোযা পালন করব এবং কখনও বিরতি দিব না। অপরজন বলিল, আমি নারী বিবর্জিত থাকব-কখনও বিয়ে করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাদের নিকট এলেন এবং বলিলেন, “তোমরা কি ঐ সকল ব্যক্তি যারা এরূপ কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহ্র কসম! আমি আল্লাহ্কে তোমাদের চেয়ে অধিক ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাহাঁর প্রতি আমি অধিক আনুগত্যশীল; অথচ আমি রোযা পালন করি, আবার রোযা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং ঘুমাই ও বিয়ে-শাদী করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ ভাব পোষণ করিবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়।
[বোখারী পর্ব ৬৭/১ হাঃ ৫০৬৩, মুসলিম পর্ব ১৬ হাঃ ১৪০১] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৮৮৬. সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] উসমান ইবনি মাজউনকে শাদী থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলে, আমরাও খাসি হয়ে যেতাম।
[বোখারী পর্ব ৬৭/৮ হাঃ ৫০৭৪, মুসলিম পর্ব ১৬ হাঃ ১৪০২]এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/২. মুতয়াহ নিকাহ এবং তার হুকুম বৈধ হওয়া, অতঃপর রহিত হওয়া আবার বৈধ হওয়া ও রহিত হওয়া এবং ক্বিয়ামাত পর্যন্ত তার নিষিদ্ধতা স্থায়ী হওয়া।
৮৮৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন যে, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে যুদ্ধে বের হতাম, তখন আমাদের সাথে স্ত্রীগণ থাকত না, তখন আমরা বলতাম আমরা কি খাসি হয়ে যাব না? তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করিলেন এবং কাপড়ের বিনিময়ে হলেও মহিলাদেরকে বিয়ে করার অর্থাৎ নিকাহে মুতআর অনুমতি দিলেন এবং পাঠ করলেনঃ [আরবী]।
[বোখারী পর্ব ৬৫/৫ হা ৪৬১৫, মুসলিম পর্ব ১৬/২, হাঃ ১৪০৪]এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৮৮৮. সালামাহ ইবনি আকওয়া [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আমরা কোন এক সেনাবাহিনীতে ছিলাম এবং রসূল [সাঃআঃ] এর প্রেরিত এক ব্যক্তি আমাদের নিকট এসে বলিলেন, তোমাদেরকে মুতাআহ বিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা মুতাআহ করিতে পার।*
[বোখারী পর্ব ৬৭/৩২ হাঃ ৫১১৭-৫১১৮, মুসলিম পর্ব ১৬/২ হাঃ ১৪০৫]এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৮৮৯. আলী ইবনি আবু ত্বলিব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] খাইবার যুদ্ধের দিন মহিলাদের মুতআহ [নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিয়ে] করা থেকে এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করিয়াছেন।*
[বোখারী পর্ব ৬৪/৩৮ হাঃ ৪২১৬, মুসলিম পর্ব ১৬/২, হাঃ ১৪০৭] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/৩. কোন মহিলাকে তার ফুফু অথবা তার খালার সাথে একত্রে নিকাহ করা হারাম।
৮৯০. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, কেউ যেন ফুফু ও তার ভাতিজীকে এবং খালা এবং তার বোনঝিকে একত্রে শাদী না করে।
[বোখারী পর্ব ৬৭/২৭ হাঃ ৫১০৯, মুসলিম পর্ব ১৬/৪ হাঃ ১৪০৮] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/৪. ইহরামের অবস্থায় নিকাহ হারাম ও প্রস্তাব দেয়া মাকরুহ।
৮৯১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] ইহরাম অবস্থায় মায়মূনা [রাদি.]-কে নিকাহ করিয়াছেন।
[বোখারী পর্ব ২৮/১২ হাঃ ১৮৩৭, মুসলিম পর্ব ১৬/৫, হাঃ ১৪১০]এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/৫. কোন ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব দেয়া হারাম যতক্ষণ না সে অনুমতি দেয় অথবা পরিত্যাগ করে।
৮৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] কাউকে এক ভাই কোন জিনিসের দাম করছে এমতাবস্থায় অন্যকে তার দরদাম করিতে নিষেধ করিয়াছেন এবং এক মুসলিম ভাইয়ের শাদী প্রস্তাবের ওপরে অন্য ভাইকে প্রস্তাব দিতে নিষেধ করিয়াছেন, যতক্ষণ না প্রথম প্রস্তাবকারী তার প্রস্তাব উঠিয়ে নেবে বা তাকে অনুমতি দেবে।
[বোখারী পর্ব ৬৭/৪৫ হাঃ ৫১৪২, মুসলিম পর্ব ১৬/৬ হাঃ ১৪১২]এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/৬. শিগার নিকাহ হারাম ও তা বাতিল হওয়ার বর্ণনা।
৮৯৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] আশ্শিগার নিষিদ্ধ করিয়াছেন। আশ্-শিগার হলোঃ কোন ব্যক্তি নিজের কন্যাকে অন্য এক ব্যক্তির পুত্রের সাথে নিকাহ দিবে এবং তার কন্যা নিজের পুত্রের জন্য আনবে এবং এক্ষেত্রে কোন কনেই মোহর পাবে না।
[বোখারী পর্ব ৬৭/২৭ হাঃ ৫১১২, মুসলিম ১৬/৬ হাঃ ১৪১৫] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/৭. নিকাহ্র শর্তসমূহ পূর্ণ করা।
৮৯৪. উকবাহ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, শর্তসমূহের মধ্যে যা পূর্ণ করার সর্বাধিক দাবী রাখে তা হল সেই শর্ত যার দ্বারা তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের হালাল করেছ।
[বোখারী পর্ব ৫৪/৬ হাঃ ২৭২১, মুসলিম পর্ব ১৬/৭ হাঃ ১৪১৮] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/৮. নিকাহ্র ক্ষেত্রে সায়েবা [বিবাহিতা মহিলা]র সম্মতি হচ্ছে কথা বলা আর কুমারীর সম্মতি হচ্ছে চুপ থাকা।
৮৯৫. আবু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত শাদী দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ব্যতীত শাদী দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহ্র রসূল ! কেমন করে তার অনুমতি নেব। তিনি বলিলেন, তার চুপ করে থাকাটাই তার অনুমতি।
[বোখারী পর্ব ৬৭/৪১ হাঃ ৫১৩৬, মুসলিম পর্ব ১৬/৯ হাঃ ১৪১৯] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৮৯৬. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসুল! মহিলাদের বিয়ে দিতে তাহাদের অনুমতি নিতে হইবে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, কুমারীর কাছে অনুমতি চাইলে তো লজ্জাবোধ করে; ফলে চুপ থাকে। তিনি বললেনঃ তার নীরবতাই তার অনুমতি।
[বোখারী পর্ব ৮৯/৩ হাঃ ৬৯৪৬, মুসলিম পর্ব ১৬/৯ হাঃ ১৪২০]এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/৯. ছোট কুমারী মেয়ের পিতা কর্তৃক নিকাহ প্রদান।
৮৯৭. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] যখন আমাকে নিকাহ করেন, তখন আমার বয়স ছিল ছয় বছর। তারপর আমরা মাদীনাহয় এলাম এবং বনু হারিস গোত্রে অবস্থান করলাম। সেখানে আমি জ্বরে আক্রান্ত হলাম। এতে আমার চুল পড়ে গেল। পরে যখন আমার মাথার সামনের চুল জমে উঠল। সে সময় আমি একদিন আমার বান্ধবীদের সাথে দোলনায় খেলা করছিলাম। তখন আমার মাতা উম্মে রূমান আমাকে উচ্চৈঃস্বরে ডাকলেন। আমি তাহাঁর কাছে এলাম। আমি বুঝতে পারিনি, তার উদ্দেশ্য কী? তিনি আমার হাত ধরে ঘরের দরজায় এসে আমাকে দাঁড় করালেন। আর আমি হাঁফাচ্ছিলাম। শেষে আমার শ্বাস-প্রশ্বাস কিছুটা প্রশমিত হল। এরপর তিনি কিছু পানি নিলেন এবং তা দিয়ে আমার মুখমণ্ডল ও মাথা মাসেহ করে দিলেন। তারপর আমাকে ঘরের ভিতর প্রবেশ করালেন। সেখানে কয়েকজন আনসারী মহিলা ছিলেন। তাঁরা বলিলেন, কল্যাণময়, বরকতময় এবং সৌভাগ্যমণ্ডিত হোক। আমাকে তাহাদের কাছে দিয়ে দিলেন। তাঁরা আমার অবস্থান ঠিক করে দিলেন, তখন ছিল দ্বিপ্রহরের পূর্ব মুহূর্ত। হঠাৎ রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে দেখে আমি হকচকিয়ে গেলাম। তাঁরা আমাকে তাহাঁর কাছে তুলে দিল। সে সময় আমি নয় বছরের বালিকা।
[বোখারী পর্ব ৬৩/৪৪ হাঃ ৩৮৯৪, মুসলিম পর্ব ১৬/১০, হাঃ নং ১৪২২] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/১২. মাহর- ৫০০ দিরহাম নির্ধারণ করা মুস্তাহাব যে অন্যের ক্ষতি করিতে চায় না। এটা কুরআন শিক্ষা, লোহার আংটি ইত্যাদি অল্প মূল্যের ও বেশী মূল্যের হওয়া জায়িয।
৮৯৮. সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল ! আমি আমার জীবনকে আপনার জন্য দান করিতে এসেছি। এরপর নাবী [সাঃআঃ] তার দিকে তাকিয়ে তার আপাদমস্তক অবলোকন করে মাথা নিচু করিলেন। মহিলাটি যখন দেখল যে নাবী [সাঃআঃ] কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না তখন সে বসে পড়ল। এমতাবস্থায় রসূল [সাঃআঃ]-এর সাহাবীদের একজন বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল ! যদি আপনার কোন প্রয়োজন না থাকে, তবে এ মহিলাটির সাথে আমার শাদী দিয়ে দিন। তিনি বলিলেন, তোমার কাছে কি কিছু আছে? সে বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল ! আল্লাহ্র কসম কিছুই নেই। তিনি বলিলেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনদের কাছে ফিরে যাও এবং দেখ কিছু পাও কি-না! এরপর লোকটি চলে গেল এবং ফিরে এসে বলিল, আল্লাহ্র কসম, হে আল্লাহ্র রসূল ! আমি কিছুই পেলাম না। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, দেখ একটি লোহার আংটি হলেও! অতঃপর সে চলে গেল এবং ফিরে এসে বলিল, আল্লাহ্র কসম, হে আল্লাহ্র রসূল ! একটি লোহার আংটিও পেলাম না; কিন্তু এই যে আমার তহবন্দ আছে। সাহ্ল [রাদি.] বলেন, তার কোন চাদর ছিল না। অথচ লোকটি বলিল, আমার তহবন্দের অর্ধেক দিতে পারি। এ কথা শুনে রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, এ তহবন্দ দিয়ে কি হইবে? যদি তুমি পরিধান কর, তাহলে মহিলাটির কোন আবরণ থাকিবে না। আর যদি সে পরিধান করে, তোমার কোন আবরণ থাকিবে না। লোকটি বসে পড়লো, অনেকক্ষণ সে বসে থাকল। এরপর উঠে দাঁড়াল। রসূল [সাঃআঃ] তাকে ফিরে যেতে দেখে তাকে ডেকে আনলেন। যখন সে ফিরে আসল, নাবী [সাঃআঃ] তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কুরআনের কতটুকু মুখস্থ আছে? সে উত্তরে বলিল, অমুক অমুক সূরাহ মুখস্থ আছে। সে এমনিভাবে একে একে উল্লেখ করিতে থাকল। তখন নাবী [সাঃআঃ] তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি এ সকল সূরাহ মুখস্থ তিলাওয়াত করিতে পার? সে উত্তর করিল, হাঁ! তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, যাও, তুমি যে পরিমাণ কুরআন মুখস্থ রেখেছ, তার বিনিময়ে এ মহিলাটির তোমার সঙ্গে শাদী দিলাম।
[বোখারী পর্ব ৬৬/২২ হাঃ ৫০৩০, মুসলিম পর্ব ১৬/১৩, হাঃ ১৪২৫] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৮৯৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.]-এর দেহে সুফ্রার চিহ্ন দেখিতে পেয়ে বলিলেন, এ কী? আবদুর রহমান [রাদি.] বলিলেন, আমি একজন মহিলাকে একটি খেজুরের আঁটি পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিয়ে করেছি। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহ্ তাআলা তোমার এ শাদীতে বরকত দান করুন। তুমি একটি ছাগলের দ্বারা হলেও ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর।
[বোখারী পর্ব ৬৭/৫৬ হাঃ ৫১৫৫, মুসলিম পর্ব ১৬/১৩ হাঃ ১৪২৭] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/১৩. দাসী মুক্ত করা এবং মুনিব কর্তৃক তাকে নিকাহ করার ফাযীলাত।
৯০০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] খায়বার অভিযানে বের হয়েছিলেন। সেখানে আমরা খুব ভোরে ফাজরের সালাত আদায় করলাম। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] সওয়ার হলেন। আবু তাল্হা [রাদি.]-ও সওয়ার হলেন, আর আমি আবু তাল্হার পিছনে উপবিষ্ট ছিলাম। নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর সওয়ারীকে খায়বারের পথে চালিত করিলেন। আমার হাঁটু নাবী [সাঃআঃ]-এর উরুতে লাগছিল। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ]-এর উরু হইতে ইযার সরে গেল। এমনকি নাবী [সাঃআঃ]-এর উরুর উজ্জ্বলতা যেন এখনো আমি দেখছি। তিনি যখন নগরে প্রবেশ করিলেন তখন বললেনঃ আল্লাহু আকবার। খায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন কওমের প্রাঙ্গণে অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃতদের ভোর হইবে কতই না মন্দ! এ কথা তিনি তিনবার উচ্চারণ করিলেন। আনাস [রাদি.] বলেনঃ খায়বারের অধিবাসীরা নিজেদের কাজে বেরিয়েছিল। তারা বলে উঠলঃ মুহাম্মদ [সাঃআঃ]! আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ আমাদের কোন কোন সাথী “পূর্ণ বাহিনীসহ” [ওয়াল খামীস] শব্দও যোগ করিয়াছেন। পরে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা খায়বার জয় করলাম। তখন যুদ্ধবন্দীদের সমবেত করা হলো। দিহ্য়া [রাদি.] এসে বললেনঃ হে আল্লাহ্র নাবী! বন্দীদের হইতে আমাকে একটি দাসী দিন। তিনি বলিলেন যাও, তুমি একটি দাসী নিয়ে যাও। তিনি সাফিয়্যা বিনত হুয়াই [রাদি.]-কে নিলেন। তখন এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললঃ ইয়া নাবীয়াল্লাহ! বনূ কুরাইযা ও বনূ নাযীরের অন্যতম নেত্রী সাফিয়্যা বিনত হুয়াইকে আপনি দিহ্য়াকে দিচ্ছেন? তিনি তো একমাত্র আপনারই যোগ্য। তিনি বললেনঃ দিহ্য়াকে সাফিয়্যাসহ ডেকে আন। তিনি সাফিয়্যাসহ উপস্থিত হলেন। যখন নাবী [সাঃআঃ] সাফিয়্যা [রাদি.]-কে দেখলেন তখন [দিহ্য়াকে] বললেনঃ তুমি বন্দীদের হইতে অন্য একটি দাসী দেখে নাও। রাবী বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ] সাফিয়্যাহ [রাদি.]-কে আযাদ করে দিলেন এবং তাঁকে বিয়ে করিলেন।
রাবী সাবিত [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবু হামযাহ [আনাস] [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে কি মাহর দিলেন? আনাস [রাদি.] জওয়াব দিলেনঃ তাঁকে আযাদ করাই তাহাঁর মাহর। এর বিনিময়ে তিনি তাঁকে বিয়ে করিয়াছেন। অতঃপর পথে উম্মু সুলায়মান [রাদি.] সাফিয়্যাহ [রাদি.]-কে সাজিয়ে রাতে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর খিদমতে পেশ করিলেন। নাবী [সাঃআঃ] বাসর রাত যাপন করে ভোরে উঠলেন। তিনি ঘোষণা দিলেনঃ যার নিকট খাবার কিছু আছে সে যেন তা নিয়ে আসে। এ বলে তিনি একটা চামড়ার দস্তরখান বিছালেন। কেউ খেজুর নিয়ে আসলো, কেউ ঘি আনলো। আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ আমার মনে হয় আনাস [রাদি.] ছাতুর কথাও উল্লেখ করিয়াছেন। অতঃপর তাঁরা এসব মিশিয়ে খাবার তৈরি করিলেন। এ-ই ছিল রসূল [সাঃআঃ]-এর ওয়ালীমাহ
[বোখারী পর্ব ৮/১২ হাঃ ৩৭১, মুসলিম পর্ব ১৫/৮৫ হাঃ ১৩৬৫] এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৯০১. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, কারো যদি একটি বাঁদী থাকে আর সে তাকে প্রতিপালন করে, তার সাথে ভাল আচরণ করে এবং তাকে মুক্তি দিয়ে বিয়ে করে, তাহলে সে দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করিবে।
[বোখারী পর্ব ৪৯: /১৪, হাঃ ২৫৪৪; মুসলিম, ১৬/১৪, হাঃ ১৫৪]।এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/১৪. যায়নাব বিনতে জাহাশ [রাদি.] শাদী ও পর্দার আয়াত অবতীর্ণ এবং বিবাহের ওয়ালীমার প্রমাণ।
৯০২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] যখন কোন শাদী করেন, তখন ওয়ালীমা করেন, কিন্তু যাইনাব [রাদি.]-এর শাদীর সময় যে পরিমাণ ওয়ালীমার ব্যবস্থা করেছিলেন, তা অন্য কারো বেলায় করেননি। সেই ওয়ালীমা ছিল একটি ছাগল দিয়ে।
[বোখারী পর্ব ৬৭: /৬৮, হাঃ ৫১৬৮; মুসলিম, ১৬/১৩, হাঃ ১৪২৭]। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৯০৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যয়নাব বিন্ত জাহশ্কে যখন রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বিয়ে করেন, তখন তিনি লোকদের দাওয়াত দিলেন। লোকেরা আহারের পর বসে কথাবার্তা বলিতে লাগল। তিনি উঠে যেতে উদ্যত হচ্ছিলেন, কিন্তু লোকেরা উঠছিল না। এ অবস্থা দেখে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তিনি উঠে যাওয়ার পর যারা উঠবার তারা উঠে গেল। কিন্তু তিন ব্যক্তি বসেই রইল। নাবী [সাঃআঃ] ঘরে প্রবেশের জন্য ফিরে এসে দেখেন, তারা তখনও বসে রয়েছে {তাই নাবী [সাঃআঃ] চলে গেলেন}। এরপর তারাও উঠে গেল। আমি গিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-কে তাহাদের চলে যাওয়ার সংবাদ দিলাম। অতঃপর তিনি এসে প্রবেশ করিলেন। এরপর আমি প্রবেশ করিতে চাইলে তিনি আমার ও তাহাঁর মাঝে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। তখন আল্লাহ্ তাআলা নাযিল করেনঃ
يأَيُّهَا الَّذِينَءَامَنُوا لاَ تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ
== “হে মুমিনগণ! তোমরা নাবীর গৃহে প্রবেশ করো না…..শেষ পর্যন্ত
[বোখারী পর্ব ৬৫ : /৮, হাঃ ৪৭৯১; মুসলিম, ১৬/১৪, হাঃ ১৪২৮]। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৯০৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি পর্দা [র আয়াত নাযিল হওয়া] সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত। এ ব্যাপারে উবাই ইবনি কাব [রাদি.] আমাকে জিজ্ঞেস করিতেন। যাইনাব বিনতে জাহশের সঙ্গে নববিবাহিত হিসেবে আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ]-এর ভোর হল। তিনি মাদীনায় তাঁকে নিকাহ করেছিলেন। বেলা ওঠার পর তিনি লোকজনকে খাওয়ার পরও কিছু লোক তাহাঁর সাথে বসে থাকল। অবশেষে আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] উঠে গেলেন, আমিও তাহাঁর সাথে সাথে গেলাম। তিনি আয়েশা [রাদি.]-এর হুজরার দরজায় পৌঁছলেন। অতঃপর ভাবলেন, লোকেরা হয়ত চলে গেছে। আমিও তাহাঁর সাথে ফিরে আসলাম। [এসে দেখলাম] তারা স্বস্থানে বসেই রয়েছে। তিনি পুনরায় ফিরে গেলেন। আমিও তাহাঁর সঙ্গে দ্বিতীয়বার ফিরে গেলাম। এমনকি তিনি আয়েশা [রাদি.]-এর গৃহের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে আবার ফিরে আসলেন। আমিও তাহাঁর সঙ্গে ফিরে আসলাম। এবার [দেখলাম] তারা উঠে গেছে। অতঃপর তিনি আমার ও তাহাঁর মাঝে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। তখন পর্দার আয়াত নাযিল হল।
[বোখারী পর্ব ৭০ : /৫৯ হাঃ ৫৪৬৬; মুসলিম, ১৬/১৪, হাঃ ১৪২৮]।এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৯০৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর যখন যাইনাব [রাদি.]-এর সাথে শাদী হয়, তখন উম্মু সুলায়ম আমাকে বলিলেন, চল, আমরা রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর জন্যে কিছু হাদীয়া পাঠাই। আমি তাকে বললাম, হ্যাঁ, এ ব্যবস্থা করুন। তখন তিনি খেজুর, মাখন ও পনির এক সাথে মিশিয়ে হালুয়া বানিয়ে একটি ডেকচিতে করে আমার মারফত রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে পাঠালেন। আমি সেসব নিয়ে তাহাঁর খিদমতে উপস্থিত হলে তিনি এগুলো রেখে দিতে বলেন এবং আমাকে কয়েকজন লোকের নাম উল্লেখ করে ডেকে আনার আদেশ করিলেন। আরো বলিলেন, যার সাথে দেখা হয় তাকেও দাওয়াত দিবে। তিনি যেভাবে আমাকে হুকুম করিলেন, আমি সেইভাবে কাজ করলাম। যখন আমি ফিরে এলাম, তখন ঘরে অনেক লোক দেখিতে পেলাম। নাবী [সাঃআঃ] তখন হালুয়া [হাইশা] পাত্রের মধ্যে হাত রাখা অবস্থায় ছিলেন এবং আল্লাহ্ তাআলার মর্জি মোতাবেক কিছু কথা বলিলেন। অতঃপর তিনি দশ দশ জন করে লোক খাবারের জন্য ডাকলেন এবং বলিলেন, তোমরা বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু কর এবং প্রত্যেকে পাত্রের নিজ নিজ দিক হইতে খাও। যখন তাহাদের খাওয়া-দাওয়া শেষ হল তাহাদের মধ্য থেকে অনেকেই চলে গেল এবং কিছু সংখ্যক লোক কথাবার্তা বলিতে থাকল। যা দেখে আমি বিরক্তি বোধ করলাম। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] সেখান থেকে বের হয়ে অন্য ঘরে গেলেন। আমিও সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি বললাম, তারাও চলে গেছে তখন তিনি নিজের কক্ষে ফিরে এলেন এবং পর্দা ফেলে দিলেন। তিনি তাহাঁর কক্ষে থাকলেন এবং এ আয়াত পাঠ করলেনঃ মুমিনগণ, তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া হলে তোমরা খাবার তৈরির অপেক্ষা না করে নাবীগৃহে খাবারের জন্য প্রবেশ করো না। তবে যদি তোমাদেরকে ডাকা হয় তাহলে প্রবেশ কর এবং খাওয়া শেষ করে চলে যাবে। তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ো না এবং তোমাদের এরূপ আচরণে নাবীর মনে কষ্ট হয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন, কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা সত্য বলিতে সংকোচ বোধ করেন না।
[বোখারী পর্ব ৬৭: /৬৪, হাঃ ৫১৬৩]। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/১৫. দাওয়াত দাতার দাওয়াত গ্রহণের আদেশ।
৯০৬. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের কাউকে ওয়ালীমাহর দাওয়াত করলে তা অবশ্যই গ্রহণ করিবে।
[বোখারী পর্ব ৬৭: /৭১, হাঃ ৫১৭৩; মুসলিম ১৬/১৬, হাঃ ১৪২৯]। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৯০৭. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যে ওয়ালীমায় শুধুমাত্র ধনীদেরকে দাওয়াত করা হয় এবং গরীবদেরকে দাওয়াত করা হয় না সেই ওয়ালীমা সবচেয়ে নিকৃষ্ট। যে ব্যক্তি দাওয়াত কবুল করে না, সে আল্লাহ্ ও তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে নাফরমানী করে।
[বোখারী পর্ব ৬৭: /৭২, হাঃ ৫১৭৭; মুসলিম ১৬/১৬, হাঃ ১৪৩২]। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/১৬. তিনবার ত্বলাক দেয়ার পর ত্বলাক দাতার জন্য ত্বলাকপ্রাপ্তা স্ত্রী বৈধ নয় যতক্ষণ না তাকে অন্য স্বামী নিকাহ করে, দৈহিক মিলনের পর তাকে ছেড়ে দেয় ও তার ইদ্দাত পূর্ণ হয়।
৯০৮. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রিফাআ কুরাযীর স্ত্রী নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলিল, আমি রিফাআর স্ত্রী ছিলাম। কিন্তু সে আমাকে বায়েন তালাক দিয়ে দিল। পরে আমি আবদুর রহমান ইবনি যুবাইরকে বিয়ে করলাম। কিন্তু তার সঙ্গে রয়েছে কাপড়ের আঁচলের মতো নরম কিছু [অর্থাৎ তার পুরুষত্ব নাই]। তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তবে কি তুমি রিফাআর নিকট ফিরে যেতে চাও? না, তা হয় না, যতক্ষণ না তুমি তার মধুর স্বাদ গ্রহণ করিবে আর সে তোমার মধুর স্বাদ গ্রহণ করিবে। আবু বকর [রাদি.] তখন তাহাঁর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। আর খালিদ ইবনি সাঈদ ইবনি আস [রাদি.] দ্বারপ্রান্তে প্রবেশের অনুমতির অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বলিলেন, হে আবু বাক্র! এই নারী নাবী [সাঃআঃ]-এর দরবারে উচ্চ আওয়াজে যা বলছে, তা কি আপনি শুনতে পাচ্ছেন না?
[বোখারী পর্ব ৫২: /৩, হাঃ ২৬৩৯; মুসলিম ১৬/১৭, হাঃ ১৪৩৩]। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৯০৯. মুহাম্মাদ ইবন বাশাশার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন ত্বলাক্ব দিলে সে [স্ত্রী] অন্যত্র নিকাহ করিল। পরে দ্বিতীয় স্বামীও তাকে ত্বলাক্ব দিল। নাবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করা হলঃ মহিলাটি কি প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ হইবে? তিনি বললেনঃ না। যতক্ষণ না সে [দ্বিতীয় স্বামী] তার স্বাদ গ্রহণ করিবে, যেমন করেছিল প্রথম স্বামী।
[বোখারী পর্ব ৬৮: /৪, হাঃ ৫২৬১; মুসলিম ১৬/১৭, হাঃ ১৪৩৩]। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/১৭. স্ত্রী মিলনের সময় কী বলা মুস্তাহাব।
৯১০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন স্ত্রী-যৌন সঙ্গম করে, তখন যেন সে বলে, বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনিশ শায়তানা ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা- আল্লাহ্র নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ্! আমাকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাকে তুমি যা দান করিবে তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। এরপরে যদি তাহাদের দুজনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করিতে পারবে না।
[বোখারী পর্ব ৬৭: /৬৬, হাঃ ৫১৬৫; মুসলিম ১৬/১৮, হাঃ ১৪৩৪]।এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/১৮. স্ত্রীর যৌনাঙ্গের সামনের দিক দিয়ে ও পিছনের দিক দিয়ে মিলন করা বৈধ কিন্তু পায়ু পথ ব্যতীত ।
৯১১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইয়াহূদীরা বলত যে, যদি কেউ স্ত্রীর পেছন দিক থেকে সহবাস করে তাহলে সন্তান টেরা চোখের হয়। তখন [এর প্রতিবাদে]
نِسَاؤكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ
…….. আয়াত অবতীর্ণ হয়।
[বোখারী পর্ব ২৫: /৩৯, হাঃ ৪৫২৮; মুসলিম ১৬/১৯, হাঃ ১৪৩৫]। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/১৯. স্ত্রীর জন্য স্বামীর বিছানা হইতে বিচ্ছিন্ন থাকা হারাম।
৯১২. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেন, যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীর শয্যা ছেড়ে অন্যত্র রাত্রি যাপন করে এবং যতক্ষণ না সে তার স্বামীর শয্যায় ফিরে আসে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার ওপর লানত বর্ষণ করিতে থাকে।
[বোখারী পর্ব ৬৭: /৮৫, হাঃ ৫১৯৪; মুসলিম ১৬/২০, হাঃ ১৪৩৬]। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬/২১. আযল এর বিধান ।
৯১৩. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে বানূ মুসতালিকের যুদ্ধে যোগদান করেছিলাম। এ যুদ্ধে আরবের বহু বন্দী আমাদের হস্তগত হয়। মহিলাদের প্রতি আমাদের মনে আসক্তি জাগে এবং নিকাহ-শাদী ব্যতীত এবং স্ত্রী-হীন অবস্থা আমাদের জন্য কষ্টকর অনুভূত হয়। তাই আমরা আযল করা পছন্দ করলাম এবং তা করিতে মনস্থ করলাম। তখন আমরা পরস্পর বলাবলি করলাম, আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] আমাদের মাঝে আছেন। এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস না করেই আমরা আযল করিতে যাচ্ছি। আমরা তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, ওটা না করলে তোমাদের কী ক্ষতি? ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যতগুলো প্রাণের আগমন ঘটবার আছে, ততগুলোর আগমন ঘটবেই।
[বোখারী পর্ব ৬৪: /৩২, হাঃ ৪১৩৮; মুসলিম ১৬/২১, হাঃ ১৪৩৮]। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৯১৪. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধকালীন সময়ে গনীমত হিসাবে কিছু দাসী পেয়েছিলাম। আমরা তাহাদের সাথে আযল করতাম। এরপর আমরা এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি উত্তরে বললেনঃ আরে! তোমরা কি এমন কাজও কর? একই প্রশ্ন তিনি তিনবার করিলেন এবং পরে বলিলেন, ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যে রূহ পয়দা হবার, তা অবশ্যই পয়দা হইবে।
[বোখারী পর্ব ৬৭: /৯৬ হাঃ ৫২১০; মুসলিম ১৬/২১, হাঃ ১৪৩৮]। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৯১৫. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আযল করতাম, তখন কুরআন নাযিল হত।
[বোখারী পর্ব ৬৭: /৯৬, হাঃ ৫২০৮; মুসলিম ১৬/২১, হাঃ ১৪৪০]। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply