নাম সম্পর্কে হাদিস -আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও ঘৃণিত নাম
নাম সম্পর্কে হাদিস -আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও ঘৃণিত নাম >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
৭৮/৯৯. অধ্যায়ঃ ক্বিয়ামাতের দিন মানুষকে তাদের পিতার নামে ডাকা হইবে।
৭৮/১০০. অধ্যায়ঃ কেউ যেন না বলে, আমার আত্মা খবীস হয়ে গেছে।
৭৮/১০১. অধ্যায়ঃ যামানাকে গালি দেবে না।
৭৮/১০২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর বাণীঃ প্রকৃত কারম হলো মুমিনের ক্বলব।
৭৮/১০৩. অধ্যায়ঃ কোন লোকের এ রকম কথা বলা আমার মা-বাপ আপনার প্রতি কুরবান।
৭৮/১০৪. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তির এ কথা বলা যে, আল্লাহ আমাকে তোমার প্রতি কুরবান করুন।
৭৮/১০৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় নাম সম্পর্কিত।
৭৮/১০৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর বাণীঃ আমার নামে নাম রাখতে পার, তবে আমার কুন্ইয়াত দিয়ে কারো কুন্ইয়াত (ডাক নাম) রেখো না।
৭৮/১০৭. অধ্যায়ঃ হায্ন নাম।
৭৮/১০৮. অধ্যায়ঃ নাম পাল্টে আগের নামের চেয়ে উত্তম নাম রাখা।
৭৮/১০৯. অধ্যায়ঃ নাবীদের (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামে যারা নাম রাখেন।
৭৮/১১০ অধ্যায়ঃ ওয়ালীদ নাম রাখা প্রসঙ্গে।
৭৮/১১১. অধ্যায়ঃ কারো সঙ্গীকে তার নামের কিছু অক্ষর কমিয়ে ডাকা ।
৭৮/১১২. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তির সন্তান জন্মানোর পূর্বেই সে শিশুর নাম দিয়ে তার ডাকনাম রাখা।
৭৮/১১৩. অধ্যায়ঃ কারো অন্য কুন্ইয়াত থাকা সত্ত্বেও তার কুন্ইয়াত আবু তুরাব রাখা।
৭৮/১১৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত নাম।
৭৮/১১৫. অধ্যায়ঃ মুশরিকের কুনইয়াত।
৭৮/১১৬. অধ্যায়ঃ পরোক্ষ কথা বলে মিথ্যা এড়ানো যায়।
৭৮/১১৭. অধ্যায়ঃ কোন কিছু সম্পর্কে, তা অবাস্তব মনে করে বলা যে, এটা কোন কিছুই না।
৭৮/১১৮. অধ্যায়ঃ আস্মানের দিকে চোখ তোলা। মহান আল্লাহর বাণীঃ “(ক্বিয়ামাত হইবে একথা যারা অমান্য করে) তারা কি উটের প্রতি লক্ষ্য করে না, (সৃষ্টি কুশলতায় ভরপুর করে) কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আসমানের দিকে, কীভাবে তা ঊর্ধ্বে উঠানো হয়েছে?” (সুরা আল-গাশিয়াহ ৮৮/১৭-১৮)
৭৮/১১৯. অধ্যায়ঃ (কোন কিছু তালাশ করার উদ্দেশে) পানি ও কাদার মধ্যে লাঠি দিয়ে খোঁচা দেয়া।
৭৮/১২০. অধ্যায়ঃ কারো হাতের কোন কিছু দিয়ে যমীনে মৃদু আঘাত করা।
৭৮/৯৯. অধ্যায়ঃ ক্বিয়ামাতের দিন মানুষকে তাদের পিতার নামে ডাকা হইবে।
৬১৭৭
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ (ক্বিয়ামাতের দিন) শপথ ভঙ্গকারীর জন্য একটি পতাকা তোলা হইবে এবং বলা হইবে যে, এ হলো অমুকের পুত্র অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার নিদর্শন।আঃপ্রঃ- ৫৭৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩১)
৬১৭৮
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ শপথ ভঙ্গকারীর জন্য ক্বিয়ামাতের দিন একটা পতাকা দাঁড় করানো হইবে। আর বলা হইবে যে, এটা অমুকের পুত্র অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার নিদর্শন।(আঃপ্রঃ- ৫৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩২)
৭৮/১০০. অধ্যায়ঃ কেউ যেন না বলে, আমার আত্মা খবীস হয়ে গেছে।
৬১৭৯
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সাবধান! তোমাদের কেউ যেন এমন না বলে যে, আমার হৃদয় খবীস হয়ে গেছে। তবে এ কথা বলিতে পারে যে, আমার হৃদয় কলুষিত হয়ে গেছে।[মুসলিম ৪০/৪০, হাদীস ২২৫০, আহমাদ ২৪২৯৮] আঃপ্রঃ- ৫৭৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৩)
৬১৮০
সাহল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সাবধান! তোমাদের কেউ যেন এ কথা না বলে, আমার অন্তর খবীস হয়ে গেছে। বরং সে বলবেঃ আমার অন্তর কলুষিত হয়েছে। [মুসলিম ৪০/৪, হাদীস ২২৫১] আঃপ্রঃ- ৫৭৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৪)
৭৮/১০১. অধ্যায়ঃ যামানাকে গালি দেবে না।
৬১৮১
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, মানুষ কালকে গালি দেয়, অথচ আমিই কাল, (এর নিয়ন্ত্রণের মালিক)। একমাত্র আমারই হাতে রাত ও দিনের পরিবর্তন ঘটে।[৪৮২৬; মুসলিম ৪০/১, হাদীস ২২৪৬] আঃপ্রঃ- ৫৭৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৫)
৬১৮২
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা আঙ্গুরকে কারম বলো না। আর বলবে না বঞ্চিত যুগ। কারণ আল্লাহই যুগ বা কাল।[৬১৮৩; মুসলিম ৪০/১, হাদীস ২২৪৭, আহমাদ ১০৩৭১] আঃপ্রঃ- ৫৭৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৬)
৭৮/১০২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর বাণীঃ প্রকৃত কারম হলো মুমিনের ক্বলব।
তিনি বলেছেনঃ প্রকৃত সম্বলহীন হলো সে, যে লোক ক্বিয়ামাতের দিন সম্বলহীন। যেমন (অন্যত্র) তাহাঁরই বাণীঃ প্রকৃত বাহাদুর হলো সে লোক, যে রাগের সময় নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারে। আরও যেমন তাহাঁরই বাণীঃ আল্লাহ একমাত্র বাদশাহ। আবার তিনিই এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলাই সার্বভৌমত্বের মালিক। এরপর বাদশাহদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আল্লাহর বাণীঃ “বাদশাহরা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে, তখন তারা তা ধংস করে দেয়”- (সুরা আন-নামল ২৭/৩৪)
৬১৮৩
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ লোকেরা (আঙ্গুরকে) কারম বলে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কারম হলো মুমিনের অন্তর।(আঃপ্রঃ- ৫৭৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৭)
৭৮/১০৩. অধ্যায়ঃ কোন লোকের এ রকম কথা বলা আমার মা-বাপ আপনার প্রতি কুরবান।
এ সম্পর্কে নাবী (সাঃআঃ) থেকে যুবায়র (রাদি.) -এর একটি বর্ণনা আছে।
৬১৮৪
আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আলী (রাদি.) বলেন, আমি সাদ (রাদি.) ছাড়া আর কারো ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে এ কথা বলিতে শুনিনি যে, আমার মাতা-পিতা তোমার প্রতি কুরবান। আমি তাঁকে বলিতে শুনেছিঃ হে সাদ! তুমি তীর চালাও। আমার মাতা-পিতা তোমার প্রতি কুরবান। আমার ধারণা হচ্ছে যে, এ কথা তিনি উহুদের যুদ্ধে বলেছেন।(আঃপ্রঃ- ৫৭৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৮)
৭৮/১০৪. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তির এ কথা বলা যে, আল্লাহ আমাকে তোমার প্রতি কুরবান করুন।
আবু বাক্র (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) -কে বললেনঃ আমরা আমাদের পিতা ও মাতাদের আপনার প্রতি কুরবান করলাম।
৬১৮৫
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে তিনি ও আবু ত্বলহা (রাদি.) (মদিনায়) আসছিলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে সফিয়্যাহ (রাদি.) তাহাঁর উটের পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন। পথে এক জায়গায় উটের পা পিছলে যায় এবং নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর স্ত্রী পড়ে যান। তখন আবু ত্বলহা (রাদি.) ও তাহাঁর উট থেকে লাফ দিয়ে নামলেন এবং নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর নাবী! আপনার কি কোন চোট লেগেছে? আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি কুরবান করুন। তিনি বললেনঃ না। তবে মহিলাটির খোঁজ নাও। তখন আবু ত্বলহা (রাদি.) তাহাঁর কাপড় দিয়ে চেহারা ঢেকে তাহাঁর দিকে অগ্রসর হলেন এবং তাহাঁর উপরও একখানা বস্ত্র ফেলে দিলেন। তখন মহিলাটি উঠে দাঁড়ালেন। এরপর আবু ত্বলহা (রাদি.) তাঁদের হাওদাটি উটের উপর শক্ত করে বেঁধে দিলেন। তাঁরা উভয়ে সাওয়ার হলেন এবং সবাই আবার রওয়ানা হলেন। অবশেষে যখন তাঁরা মাদীনাহর নিকটে পৌছলেন, তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিতে লাগলেনঃ “আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাহকারী, ইবাদাতকারী এবং একমাত্র স্বীয় রবের প্রশংসাকারী”। তিনি মদিনায় প্রবেশ করা অবধি এ কথাগুলো বলছিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫৭৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৯)
৭৮/১০৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় নাম সম্পর্কিত।
৬১৮৬
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের একজনের একটি ছেলে জন্ম নিল। সে তার নাম রাখলো কাসিম। আমরা বললামঃ আমরা তোমাকে আবুল কাসিম ডাকবো না আর সে সম্মানও দেবো না। তিনি এ কথা নাবী (সাঃআঃ) -কে জানালে তিনি বললেনঃ তোমার ছেলের নাম রাখ আবদুর রহমান। [৩১১৪; মুসলিম ৩৮/১, হাদীস ২১৩৩, আহমাদ ১৪৩০০] আঃপ্রঃ- ৫৭৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪০)
৭৮/১০৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর বাণীঃ আমার নামে নাম রাখতে পার, তবে আমার কুন্ইয়াত দিয়ে কারো কুন্ইয়াত (ডাক নাম) রেখো না।
আনাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
৬১৮৭
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
জাবির (রাদি.) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমাদের এক লোকের একটি ছেলে জন্মাল। সে তার নাম রাখলো কাসিম। তখন লোকেরা বললঃ আমরা নাবী (সাঃআঃ) -কে জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত তাকে এ কুন্ইয়াতে ডাকবো না। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রেখো, কিন্তু আমার কুন্ইয়াতে কারো কুন্ইয়াত রেখো না।(আঃপ্রঃ- ৫৭৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪১)
৬১৮৮
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবুল কাসিম (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রেখো, কিন্তু আমার কুন্ইয়াতে কুন্ইয়াত রেখো না।(আঃপ্রঃ- ৫৭৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪২)
৬১৮৯
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমাদের মধ্যেকার এক লোকের একটি ছেলে হলে সে তার নাম রাখলো কাসিম। আমরা বললামঃ আমরা তোমাকে আবুল কাসিম কুন্ইয়াতে ডাকবো না। আর এর মাধ্যমে তোমার চোখও ঠাণ্ডা করবো না। তখন লোকটি নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে এ কথা জানাল। তিনি বললেনঃ তোমার ছেলের নাম রাখ আবদুর রহমান।(আঃপ্রঃ- ৫৭৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৩)
৭৮/১০৭. অধ্যায়ঃ হায্ন নাম।
৬১৯০
ইবনু মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
বর্ণিত যে, তাহাঁর দাদা নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট আসলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার নাম কী? তিনি বললেনঃ হায্ন। [১৭] নাবী (সাঃআঃ)-বললেনঃ বরং তোমার নাম সাহল। তিনি বললেনঃ আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন, তা অন্য কোন নাম দিয়ে আমি বদলাবো না। ইবনু মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ এরপর থেকে আমাদের বংশের মধ্যে দুঃখকষ্টই চলে এসেছে।(আঃপ্রঃ- ৫৭৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৪)
[১৭] হাযন কথাটির অর্থ দুঃখ-কষ্ট।
৭৮/১০৮. অধ্যায়ঃ নাম পাল্টে আগের নামের চেয়ে উত্তম নাম রাখা।
৬১৯১
সাহল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যে, যখন মুনযির ইবনু আবু উসায়দ জন্মলাভ করিলেন, তখন তাকে নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট নিয়ে আসা হলো। তিনি তাকে নিজের উরুর উপর রাখলেন। আবু উসায়দ (রাদি.) পাশেই উপবিষ্ট ছিলেন। এ সময় নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সামনেই কোন জরুরী কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ইত্যবসরে আবু উসায়দ (রাদি.) কারো মাধ্যমে তাহাঁর উরু থেকে তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। পরে নাবী (সাঃআঃ) সে কাজ থেকে মুক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ শিশুটি কোথায়? আবু উসায়দ বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমি তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তার নাম কী? তিনি বললেনঃ অমুক। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ বরং তাহাঁর নাম মুনযির। সে দিন হইতে তার নাম রাখলেন মুনযির।[মুসলিম ৩৮/৫, হাদীস ২১৪৯] আঃপ্রঃ- ৫৭৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৫)
৬১৯২
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, যাইনাব (রাদি.) -এর নাম ছিল বাররাহ (নেককার)। তখন বলা হল যে, এর দ্বারা তিনি নিজের পবিত্রতা প্রকাশ করছেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর নাম রাখলেনঃ যাইনাব। [মুসলিম ৩৮/৩, হাদীস ২১৪১] আঃপ্রঃ- ৫৭৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৬)
৬১৯৩
সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার তাহাঁর দাদা নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে আসলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার নাম কী? তিনি উত্তর দিলেনঃ আমার নাম হায্ন। তিনি বললেনঃ না বরং তোমার নাম সাহল। তিনি বললেনঃ আমার পিতা আমার যে নাম রেখে গিয়েছেন, তা আমি পাল্টাতে চাই না। ইবনু মুসাইয়্যাব বলেন, ফলে এরপর থেকে আমাদের বংশে দুঃখকষ্টই লেগে আছে।(আঃপ্রঃ- ৫৭৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৭)
৭৮/১০৯. অধ্যায়ঃ নাবীদের (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামে যারা নাম রাখেন।
আনাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইব্রাহীম (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে চুমু দিয়াছেন অর্থাৎ তাহাঁর পুত্রকে।
৬১৯৪
ইসমাঈল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইসমাঈল (রাদি.) বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আবু আওফা (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি নাবী (সাঃআঃ) -এর পুত্র ইবরাহীম (রাদি.) -কে দেখেছেন? তিনি বললেনঃ তিনি তো বাল্যাবস্থায় মারা গিয়েছেন। যদি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) -এর পরে অন্য কেউ নাবী হবার বিধান থাকত তবে তাহাঁর পুত্র জীবিত থাকতেন। কিন্তু তাহাঁর পরে কোন নাবী নাই।(আঃপ্রঃ- ৫৭৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৮)
৬১৯৫
আদী ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমি বারাআ (রাদি.) -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, যখন ইবরাহীম (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মারা যান তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তার জন্য জান্নাতে দুগ্ধদায়িনী থাকবে।(আঃপ্রঃ- ৫৭৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৪৯)
৬১৯৬
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা আমার নাম রাখ। কিন্তু আমার কুন্ইয়াতে কারো কুন্ইয়াত রেখ না। কেননা আমিই কাসিম। আমি তোমাদের মধ্যে (আল্লাহর নিয়ামাত) বণ্টন করি।(আঃপ্রঃ- ৫৭৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫০)
৬১৯৭
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রাখ। কিন্তু আমার কুন্ইয়াতে কারো কুন্ইয়াত রেখো না। আর যে ব্যক্তি স্বপ্নে আমাকে দেখেছে, সে অবশ্যই আমাকে দেখেছে। শয়তান আমার সুরত গ্রহণ করিতে পারে না। আর যে লোক ইচ্ছাপূর্বক আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, সে যেন জাহান্নামেই তার বাসস্থান করে নেয়।(আঃপ্রঃ- ৫৭৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫১)
৬১৯৮
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার একটি ছেলে জন্মালে আমি তাকে নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে আসলাম। তিনি তার নাম রেখে দিলেন ইবরাহীম। তারপর তিনি একটা খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিয়ে তার জন্য বারাকাতের দুআ করিলেন এবং তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। রাবী বলেন, সে ছিল আবু মূসা (রাদি.) -এর বড় ছেলে।(আঃপ্রঃ- ৫৭৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫২)
৬১৯৯
যিয়াদ ইবনু ইলাকাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি মুগী্রাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.) -কে বলিতে শুনেছিঃ যে দিন ইবরাহীম (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মারা যান, সে দিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। এটি আবু বাকারাহ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৫৭৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৩)
৭৮/১১০ অধ্যায়ঃ ওয়ালীদ নাম রাখা প্রসঙ্গে।
৬২০০
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সলাতের রুকু থেকে মাথা তুলে দুআ করলেনঃ হে আল্লাহ! তুমি ওয়ালীদ, সালামাহ ইবনু হিশাম, আইয়্যাশ ইবনু আবী রাবীয়া এবং মক্কাহর দুর্বল মুসলিমদের শত্রুর জ্বালাতন থেকে মুক্তি দাও। আর হে আল্লাহ! মুযার গোত্রকে শক্তভাবে পাকড়াও করো। হে আল্লাহ! তুমি তাদের উপর এমন দুর্ভিক্ষ দাও, যেমন দুর্ভিক্ষ ইউসুফ (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে দিয়েছিলে।(আঃপ্রঃ- ৫৭৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৪)
৭৮/১১১. অধ্যায়ঃ কারো সঙ্গীকে তার নামের কিছু অক্ষর কমিয়ে ডাকা ।
আবু হাযিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে ইয়া আবা হিররিন বলে ডাক দেন।
৬২০১
নাবী (সাঃআঃ) -এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ হে আয়েশা! এই যে জিবরীল (আ) তোমাকে সালাম বলেছেন। তিনি বললেনঃ তাহাঁর উপরও আল্লাহর শান্তি ও রহমত নাযিল হোক। এরপর তিনি বললেনঃ নাবী (সাঃআঃ) দেখেন, যা আমি দেখি না।(আঃপ্রঃ- ৫৭৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৫)
৬২০২
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার উম্মু সালীম (রাদি.) সফরের সামগ্রীবাহী উটে সাওয়ার ছিলেন। আর নাবী (সাঃআঃ) -এর গোলাম আন্জাশ উটগুলোকে জলদি হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাকে বললেনঃ ওহে আন্জাশ! তুমি কাঁচের পাত্র বহনকারী উটগুলো আস্তে আস্তে হাঁকাও।(আঃপ্রঃ- ৫৭৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৬)
৭৮/১১২. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তির সন্তান জন্মানোর পূর্বেই সে শিশুর নাম দিয়ে তার ডাকনাম রাখা।
৬২০৩
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) সবচেয়ে অধিক সদাচারী ছিলেন। আমার এক ভাই ছিল; তাকে আবু উমায়র বলে ডাকা হতো। আমার ধারনা যে, সে তখন মায়ের দুধ খেতো না। যখনই সে তাহাঁর নিকট আসতো, তিনি বলিতেনঃ হে আবু উমায়র! কী করছে তোমার নুগায়র? সে নুগায়র পাখিটা নিয়ে খেলতো। আর প্রায়ই যখন সলাতের সময় হতো, আর তিনি আমাদের ঘরে থাকতেন, তখন তাহাঁর নীচে যে বিছানা থাকতো, একটু পানি ছিটিয়ে ঝেড়ে দেয়ার জন্য আমাদের আদেশ করিতেন। তারপর তিনি সলাতের জন্য দাঁড়াতেন এবং আমরাও তাহাঁর পেছনে দাঁড়াতাম। আর তিনি আমাদের নিয়ে সলাত আদায় করিতেন।[৬১২৯; মুসলিম ৩৮/৫, হাদীস ২১৫০] আঃপ্রঃ- ৫৭৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৭)
৭৮/১১৩. অধ্যায়ঃ কারো অন্য কুন্ইয়াত থাকা সত্ত্বেও তার কুন্ইয়াত আবু তুরাব রাখা।
৬২০৪
সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আলী (রাদি.) -এর নিকট তাহাঁর নামগুলোর মধ্যে আবু তুরাব কুন্ইয়াত ছিল সবচেয়ে অধিক প্রিয় এবং এ নামে ডাকলে তিনি খুব খুশী হইতেন। নাবী (সাঃআঃ) -ই তাকে আবু তুরাব কুন্ইয়াতে ডেকেছিলেন। একদিন তিনি ফাতেমাহ (রাদি.) -এর সঙ্গে রাগ করে বেরিয়ে এসে মাসজিদের দেয়ালের পাশে ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে তালাশ করছিলেন। এক ব্যক্তি বললঃ তিনি তো ওখানে দেয়ালের পাশে শুয়ে আছেন। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে এমন হালতে পেলেন যে, তাহাঁর পিঠে ধূলাবালি লেগে আছে। তিনি তাহাঁর পিঠ থেকে ধূলা ঝাড়তে লাগলেন আর বলিতে লাগলেনঃ হে আবু তুরাব! উঠে বসো।(আঃপ্রঃ- ৫৭৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৮)
৭৮/১১৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত নাম।
৬২০৫
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার কাছে ক্বিয়ামাতের দিনে ঐ লোকের নাম সবচেয়ে ঘৃণিত, যে তার নাম রেখেছে রাজাদের রাজা। [৬২০৬; মুসলিম ৩৮/৪, হাদীস ২১৪৩, আহমাদ ৭৩৩৩] আঃপ্রঃ- ৫৭৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৫৯)
৬২০৬
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে খারাপ নামধারী অথবা বলেছেন, সব নামের মধ্যে ঘৃণিত নাম হলো সে ব্যক্তির, যে রাজাদের রাজা নাম গ্রহণ করেছে।
সুফ্ইয়ান বলেন যে, অন্যেরা এর ব্যাখ্যা করিয়াছেন, শাহান শাহ। [৬২০৫; মুসলিম ৩৮/৪, হাদীস ২১৪৩, আহমাদ ৭৩৩৩] আঃপ্রঃ- ৫৭৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬০)
৭৮/১১৫. অধ্যায়ঃ মুশরিকের কুনইয়াত।
মিসওয়ার (রাদি.) বলেন যে, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি, কিন্তু যদি ইবনু আবু ত্বলিব চায়।
৬২০৭
উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একটি গাধার উপর সাওয়ার ছিলেন। তখন তাহাঁর গায়ে একখানা ফাদাকী চাদর ছিল এবং তাহাঁর পেছনে উসামাহ (রাদি.) বসা ছিলেন। তিনি বদরের যুদ্ধের পূর্বে সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) -এর শুশ্রূষা করার উদ্দেশে হারিস ইবনু খাযরাজ গোত্র অভিমুখে রওয়ানা হচ্ছিলেন। তাঁরা চলতে চলতে এক মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। সেখানে আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল ছিল। এটা ছিল আবদুল্লাহ ইবনু উবাইর এর (প্রকাশ্যে) ইসলাম গ্রহণের আগের ঘটনা। মজলিসটি ছিল মিশ্রিত। এতে ছিলেন মুসলিম, মুশরিক, মূর্তিপূজক ও ইয়াহূদী। মুসলিমদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) ও ছিলেন। সাওয়ারীর চলার কারণে যখন উড়ন্ত ধূলাবালি মজলিসকে ঢেকে ফেলেছিল, তখন ইবনু উবাই তার চাদর দিয়ে তার নাক ঢেকে নিয়ে বললঃ তোমরা আমাদের উপর ধূলি উড়িও না। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের সালাম করিলেন এবং সাওয়ারী থামিয়ে নামলেন। তারপর তিনি তাদের আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিয়ে কুরআন পড়ে শোনালেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল তাঁকে বললঃ হে ব্যক্তি! আপনি যা বলেছেন যদি তা ঠিক হয়ে থাকে তবে তার চেয়ে উত্তম কথা আর কিছুই নেই। তবে আপনি আমাদের মজলিসসমূহে এসে আমাদের কষ্ট দিবেন না। যে আপনার কাছে যাবে, তাকেই আপনি নাসীহাত করবেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) বললেনঃ না, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাদের মজলিসসমূহে আসবেন। আমরা আপনার এ বক্তব্য পছন্দ করি। তখন মজলিসের মুসলিম, মুশরিক ও ইয়াহূদীরা পরস্পর গালমন্দ করিতে লাগল। এমনকি তাদের মধ্যে হাঙ্গামা হবার জোগাড় হল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের নিবৃত্ত করিতে লাগলেন, অবশেষে তারা চুপ করিল। তারপর নাবী (সাঃআঃ) নিজ সওয়ারীর উপর সওয়ার হয়ে রওয়ানা হয়ে গেলেন এবং সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) -এর নিকট পৌঁছলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ হে সাদ! আবু হুবাব অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু উবাই আমাকে যা বলেছে, তা কি তুমি শোননি? সে এমন এমন কথা বলেছে। তখন সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা আপনার প্রতি কুরবান, আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন এবং তার কথা ছেড়ে দিন। সেই সত্তার কসম! যিনি আপনার উপর কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে আপনার প্রতি হক এমন সময় অবতীর্ণ হয়েছে, যখন এই শহরের অধিবাসীরা পরস্পর পরামর্শ করে স্থির করেছিল যে, তারা তাকে রাজ মুকুট পরাবে এবং (রাজকীয়) পাগড়ী তার মাথায় বাঁধবে। কিন্তু যখন আল্লাহ আপনাকে যে সত্য দিয়েছেন তা দিয়ে সেই সিদ্ধান্তকে বানচাল করে দিলেন, তখন সে এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এজন্যই সে আপনার সাথে এ ধরনের আচরণ করেছে যা আপনি দেখছেন। তারপর তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। আর আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাহাবীগণ তো এমনিই মুশরিক ও কিতাবীদের ক্ষমা করে দিতেন এবং তাদের নির্যাতনে ধৈর্য ধারণ করিতেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণীঃ “তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের আগের কিতাবধারীদের ও মুশরিকদের নিকট হইতে দুঃখজনক অনেক কথা শুনবে…।” (সুরা আল ইমরান ৩:১৮৬) শেষ পর্যন্ত। আল্লাহ আরো বলেছেন, “কিতাবীরা অনেকেই কামনা করে…।” (সুরা আল-বাকারাহ ২:১০৯) তাই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাদের ক্ষমা করিতে থাকেন। অবশেষে তাঁকে তাদের সাথে জিহাদ করার অনুমতি দেয়া হয়। তারপর যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বদরের অভিযান চালালেন, তখন এর মাধ্যমে আল্লাহ কাফির বীর পুরুষদের এবং কুরাইশ সরদারদের মধ্যে যারা নিহত হবার তাদের হত্যা করেন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাহাবীগণ বিজয় বেশে গনীমত নিয়ে ফিরলেন। তাঁদের সাথে কাফিরদের অনেক বাহাদুর ও কুরাইশদের অনেক নেতাও বন্দী হয়ে আসে। সে সময় ইবনু উবাই ইবনু সালূল ও তাহাঁর সাথী মূর্তিপূজক মুশরিকরা বললঃ এ ব্যাপার (অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম) তো প্রবল হয়ে পড়ছে। সুতরাং এখন তোমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর হাতে ইসলামের বায়আত গ্রহণ কর। তারপর তারা সবাই ইসলাম গ্রহণ করিল।(আঃপ্রঃ- ৫৭৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬১)
৬২০৮
আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! আপনি কি আবু ত্বলিবের কোন উপকার করিতে পেরেছেন? তিনি তো সব সময় আপনার হিফাযত করিতেন এবং আপনার জন্য অন্যের উপর রাগ করিতেন। তিনি বলিলেন, হাঁ। তিনি এখন জাহান্নামের হালকা স্তরে আছেন। যদি আমি না হতাম, তাহলে তিনি জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকতেন।(আঃপ্রঃ- ৫৭৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬২)
৭৮/১১৬. অধ্যায়ঃ পরোক্ষ কথা বলে মিথ্যা এড়ানো যায়।
ইসহাক বর্ণনা করিয়াছেন, আমি আনাস (রাদি.) থেকে শুনিয়াছি। আবু ত্বলহার একটি শিশুপুত্র মারা যায়। তিনি এসে (তার স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করলেনঃ ছেলেটি কেমন আছে? উম্মু সুলায়ম (রাদি.) বললেনঃ সে শান্ত। আমি আশা করছি, সে আরামেই আছে। তিনি মনে করিলেন যে, অবশ্য তিনি সত্য বলেছেন।
৬২০৯
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার নাবী (সাঃআঃ) (মহিলাদের সহ) এক সফরে ছিলেন। হুদী গায়ক হুদী [১৮] গান গেয়ে চলেছিল। তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন, আফসোস তোমার প্রতি ওহে আন্জাশা! তুমি কাঁচপাত্র তুল্য সাওয়ারীদের সাথে সদয় হও।(আঃপ্রঃ- ৫৭৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৩)
[১৮] উট হাঁকানোর তালে যে গান গাওয়া হয় তাকে হুদী বলে।
৬২১০
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) এক সফরে ছিলেন। তাহাঁর আন্জাশা নামে এক গোলাম ছিল। সে হুদী গান গেয়ে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তাকে বললেনঃ হে আন্জাশা! তুমি ধীরে উট হাঁকাও, যেহেতু তুমি কাঁচপাত্র তুল্যদের (আরোহী) উট হাঁকিয়ে যাচ্ছ। আবু কিলাবাহ বর্ণনা করেন, কাঁচপাত্র সদৃশ শব্দ দ্বারা নাবী (সাঃআঃ) স্ত্রীলোকদেরকে বুঝিয়েছেন।(আঃপ্রঃ- ৫৭৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৪)
৬২১১
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) -এর একটি হুদীগায়ক গোলাম ছিল। তাকে আন্জাশা বলে ডাকা হতো। তার সুর ছিল মধুর। নাবী (সাঃআঃ) তাকে বললেনঃ হে আন্জাশা! তুমি ধীরে হাঁকাও, যেন কাঁচের পাত্রগুলো ভেঙ্গে না ফেল। ক্বাতাদাহ (রাদি.) বলেন, তিনি কাঁচপাত্রগুলো শব্দ দ্বারা স্ত্রীলোকদেরকে বুঝিয়েছেন।(আঃপ্রঃ- ৫৭৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৫)
৬২১২
মুসাদ্দাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, একবার মাদীনাহ্তে (ভয়ংকর শব্দ হলে) ভীতি দেখা দিল। নাবী (সাঃআঃ) আবু ত্বলহা (রাদি.) -এর একটা অশ্বে সওয়ার হয়ে এগিয়ে গেলেন এবং (ফিরে এসে) বললেনঃ আমি তো কিছুই দেখিতে পেলাম না। আমি এ ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মতই পেয়েছি।(আঃপ্রঃ- ৫৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৬)
৭৮/১১৭. অধ্যায়ঃ কোন কিছু সম্পর্কে, তা অবাস্তব মনে করে বলা যে, এটা কোন কিছুই না।
৬২১৩
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আয়েশা (রাদি.) বলেন, কয়েকজন লোক নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট গণকদের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করিল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ ওরা কিছুই না। তারা আবার বললে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের বললেনঃ ওরা কিছুই না। তারা আবার বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! তারা তো কোন সময় এমন কথা বলে দেয়, যা বাস্তবে ঘটে যায়। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ কথাটি জিন থেকে পাওয়া। জিনেরা তা (আসমানের ফেরেশতাদের থেকে) ছোঁ মেরে নিয়ে এসে তাদের বন্ধু গণকদের কানে তুলে দেয়, যেভাবে মুরগী তার বাচ্চাদের মুখে দানা তুলে দেয়। তারপর এ গণকরা এর সঙ্গে আরও শতাধিক মিথ্যা কথা মিলিয়ে দেয়। [৩২১০; মুসলিম ৩৯/৩৫, হাদীস ২২২৮, আহমাদ ২৪৬২৪] আঃপ্রঃ- ৫৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৭)
৭৮/১১৮. অধ্যায়ঃ আস্মানের দিকে চোখ তোলা। মহান আল্লাহর বাণীঃ “(ক্বিয়ামাত হইবে একথা যারা অমান্য করে) তারা কি উটের প্রতি লক্ষ্য করে না, (সৃষ্টি কুশলতায় ভরপুর করে) কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আসমানের দিকে, কীভাবে তা ঊর্ধ্বে উঠানো হয়েছে?” (সুরা আল-গাশিয়াহ ৮৮/১৭-১৮)
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিত, একদিন নাবী (সাঃআঃ) আসমানের দিকে মস্তক উত্তোলন করেন।
৬২১৪
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনেছেনঃ এরপর আমার প্রতি ওয়াহী আগমন বন্ধ হয়ে গেল। এ সময় আমি হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন আমি আসমানের দিক থেকে একটি আওয়াজ শুনে আকাশের পানে চোখ তুললাম। তখন হঠাৎ ঐ ফেরেশতাকে আসমান ও যমীনের মাঝে একটি কুরসীর উপর উপবিষ্ট দেখলাম, যিনি হেরায় আমার নিকট এসেছিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫৭৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৮)
৬২১৫
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি এক রাতে মাইমূনাহ (রাদি.) -এর ঘরে অবস্থান করছিলাম। নাবী (সাঃআঃ)ও তাহাঁর গৃহে ছিলেন। যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অথবা কিয়দংশ বাকী ছিল তখন তিনি উঠে বসলেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে পাঠ করলেনঃ “নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য বহু নিদর্শন আছে।” (সুরা আল ইমরান ৩/১৯০)।(আঃপ্রঃ- ৫৭৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৬৯)
৭৮/১১৯. অধ্যায়ঃ (কোন কিছু তালাশ করার উদ্দেশে) পানি ও কাদার মধ্যে লাঠি দিয়ে খোঁচা দেয়া।
৬২১৬
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার তিনি মদীনার এক বাগানে নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে ছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) -এর হাতে একটা লাঠি ছিল। তিনি তা দিয়ে পানি ও কাদার মাঝে খোঁচা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তার জন্য খুলে দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তখন আমি গিয়ে দেখলাম যে, তিনি আবু বকর (রাদি.)। আমি তাহাঁর জন্য দরজা খুললাম এবং জান্নাতের শুভ সংবাদ দিলাম। তারপর আরেক লোক দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। তিনি বলিলেন, খুলে দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাও। তখন দেখলাম; তিনি উমার (রাদি.)। আমি তাহাঁর জন্য দরজা খুললাম এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিলাম। আবার আরেক লোক দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। তখন তিনি হেলান দিয়েছিলেন। তিনি সোজা হয়ে বসে বললেনঃ খুলে দাও এবং তাঁকে একটি কঠিন বিপদে পড়ার পর জান্নাতবাসী হবার সুসংবাদ দাও। আমি গিয়ে দেখি, তিনি উসমান (রাদি.)। আমি তাহাঁর জন্যও দরজা খুলে দিলাম এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিলাম। আর নাবী (সাঃআঃ) যা ভবিষ্যদ্বাণী করেন, আমি তাও বিবৃত করলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলাই আমার সাহায্যকারী।(আঃপ্রঃ- ৫৭৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৭০)
৭৮/১২০. অধ্যায়ঃ কারো হাতের কোন কিছু দিয়ে যমীনে মৃদু আঘাত করা।
৬২১৭
আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, আমরা এক জানাযায় নাবী (সাঃআঃ) –এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি (সাঃআঃ) একটা লাক্ড়ি দিতে যমীনে মৃদু আঘাত দিয়ে বললেনঃ তোমাদের কোন লোক এমন নয় যার বাসস্থান জান্নাতে অথবা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়ে যায়নি। লোকের জিজ্ঞেস করলঃ তা হলে কি আমরা তার উপর নির্ভর করব না। তিনি (সাঃআঃ) বললেনঃ আমাল করে যাও। কারণ যাকে যে জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য তা সহজ করে দেয়া হইবে। (এরপর তিলাওয়াত করিলেন) “যে ব্যাক্তি দান খয়রাত করিবে, তাক্ওয়া অর্জন করিবে………………… শেষ পর্যন্ত”- (সুরা আল-লায়ল ৯২/৫)।(আঃপ্রঃ- ৫৭৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৭১)
Leave a Reply