ফরয নামাযের ফযীলত ও মসজিদে যাওয়ার ফযীলত

ফরয নামাযের ফযীলত ও মসজিদে যাওয়ার ফযীলত

ফরয নামাযের ফযীলত ও মসজিদে যাওয়ার ফযীলত >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

ফরয নামাযের ফযীলত ও মসজিদে যাওয়ার ফযীলত

পরিচ্ছেদ – ১৮৭ঃ নামাযের ফযীলত
পরিচ্ছেদ – ১৮৮ঃ ফজর ও আসরের নামাযের ফযীলত
পরিচ্ছেদ – ১৮৯ঃ মসজিদে যাওয়ার ফযীলত
পরিচ্ছেদ – ১৯০ঃনামাযের প্রতীক্ষা করার ফযীলত
পরিচ্ছেদ – ১৯১ঃ জামাআত সহকারে নামাযের ফযীলত
পরিচ্ছেদ – ১৯২ঃ ফজর ও এশার জামাআতে হাযির হইতে উৎসাহদান
পরিচ্ছেদ – ১৯৩ঃ ফরয নামাযসমূহের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ এবং তা ত্যাগ করা সম্বন্ধে কঠোর নিষেধ ও চরম হুমকি
পরিচ্ছেদ – ১৯৪ঃ প্রথম কাতারের ফযীলত, প্রথম কাতারসমূহ পূরণ করা, কাতার সোজা করা এবং ঘন হয়ে কাতার বাঁধার গুরুত্ব

পরিচ্ছেদ – ১৮৭: নামাযের ফযীলত

১০৪৯. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন, “আচ্ছা তোমরা বল তো, যদি কারোর বাড়ির দরজার সামনে একটি নদী থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার ক’রে গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে কি ?” সাহাবীগণ বললেন, ‘(না,) কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না ।’ তিনি বললেন, “পাঁচ অক্তের নামাযের উদাহরণও সেইরূপ । এর দ্বারা আল্লাহ পাপরাশি নিশ্চিহ্ন করে দেন ।” (বুখারী)

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫২৬, ৪৬৮৭, মুসলিম ২৭৬৩, তিরমিজী ৩১১২, ৩১১৪, আবু দাঊদ ৪৪৬৮, ইবনু মাজাহ ১৩৯৮, ৪২৫৪, আহমাদ ৩৬৪৫, ২৩৮৪৪, ৪০৮৩, ৪২৩৮, ৪২৭৮, ৪৩১৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৫০. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “পাঁচ অক্তের নামাযের উদাহরণ ঠিক প্রবাহিত নদীর ন্যায়, যা তোমাদের কোনো ব্যক্তির দরজার পাশে থাকে; যাতে সে প্রত্যহ পাঁচবার ক’রে গোসল ক’রে থাকে ।” (মুসলিম)

(মুসলিম ২৩৩, তিরমিজী ২১৪, ইবনু মাজাহ ১০৮৬, আহমাদ ৭০৮৯, ৮৪৯৮, ৮৯৪৪, ৯০৯২, ১০১৯৮, ২৭২৯০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৫১. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুমা দিয়ে ফেলে । অতঃপর সে (অনুতপ্ত হয়ে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে ঘটনাটি বলে । তখন আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেন, যার

অর্থ: “তুমি নামায প্রতিষ্ঠা কর দিবসের দুই প্রান্তে এবং রাত্রির প্রথম ভাগে, নিশ্চয় পুণ্য কর্মাদি পাপ-রাশিকে বিদূরিত ক’রে থাকে ।” (সূরা হুদ ১১৪ আয়াত)

লোকটি বলল, ‘এ বিধান কি কেবল আমার জন্য ?’ তিনি বললেন, “আমার উম্মতের সকলের জন্য ।” (বুখারী মুসলিম)

(মুসলিম ২২৮, নাসাঈ ১৪৬, ১৪৭, ৮৫৬, আহমাদ ৪৮৫, ৫০৫, ৫১৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৫২. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “পাঁচ অক্তের নামায, এক জুমআহ থেকে পরবর্তী জুমআহ পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়ে যেসব পাপ সংঘটিত হয়, সে সবের মোচন-কারী হয় (এই শর্তে যে,) যদি মহাপাপে লিপ্ত না হয় ।” (মুসলিম)

(মুসলিম ২৩৩, তিরমিজী ২১৪, ইবনু মাজাহ ১০৮৬, আহমাদ ৭০৮৯, ৮৪৯৮, ৯৮৪৪, ৯০৯২, ২৭২৯০, ১০১৯৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৫৩. উসমান ইবনে আফ্‌ফান রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি ফরয নামাযের জন্য ওযূ করিবে এবং উত্তমরূপে ওযূ সম্পাদন করিবে । (অতঃপর) তাতে উত্তমরূপে ভক্তি-বিনয়-নম্রতা প্রদর্শন করিবে এবং উত্তমরূপে ‘রুকু’ সমাধা করিবে । তাহলে তার নামায পূর্বে সংঘটিত পাপরাশির জন্য কাফ্‌ফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হয়ে যাবে; যতক্ষণ মহাপাপে লিপ্ত না হবে । আর এ (রহমতে ইলাহির ধারা) সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য ।” (মুসলিম)

(মুসলিম ২২৮, নাসাঈ ১৪৬, ১৪৭, ৮৫৬, আহমাদ ৪৮৫, ৫০৫, ৫১৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ১৮৮: ফজর ও আসরের নামাযের ফযীলত

১০৫৪. আবু মূসা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডা নামায পড়ে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৭৪, মুসলিম ৬৩৫, আহমাদ ১৬২৮৯, দারেমী ১৪২৫) দুই ঠাণ্ডা নামায হচ্ছে: ফজর ও আসরের নামায । হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৫৫. আবু যুহাইর উমারাহ ইবনে রুআইবাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের ও আসরের নামায) আদায় করিবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করিবে না ।” (মুসলিম)

(মুসলিম ৬৩৪, নাসাঈ ৪৭১, ৪৮৭, আবু দাঊদ ৪২৭, আহমাদ ১৬৭৬৯, ১৭৮৩৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৫৬. জুন্দুব ইবনে সুফয়ান রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ল, সে আল্লাহর জামানত লাভ করল। অতএব হে আদম সন্তান! লক্ষ্য রাখ, আল্লাহ যেন অবশ্যই তোমাদের কাছে তার জামানতের কিছু দাবী না করেন ।” (মুসলিম)

(মুসলিম ৬৫৭, তিরমিজী ২২২, আহমাদ ১৮৩২৬, ১৮৩৩৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৫৭. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের নিকট দিবারাত্রি ফিরিশতাবর্গ পালাক্রমে যাতায়াত করতে থাকেন । আর ফজর ও আসরের নামাযে তাঁরা একত্রিত হন । অতঃপর যারা তোমাদের কাছে রাত কাটিয়েছেন, তাঁরা ঊর্ধ্বে (আকাশে) চলে যান । অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন—অথচ তিনি তাদের সম্পর্কে ভালভাবে পরিজ্ঞাত, ‘তোমরা আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছ ?’ তাঁরা বলেন, ‘আমরা যখন তাদেরকে ছেড়ে এসেছি, তখন তারা নামাযে প্রবৃত্ত ছিল । আর যখন আমরা তাদের নিকট গিয়েছিলাম, তখনও তারা নামাযে প্রবৃত্ত ছিল ।”(বুখারী ও মুসলিম)

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৫৫, ৩২২৩, ৭৪২৯, ৭৪৮৬, মুসলিম ৬৩২, নাসাঈ ৪৮৫, আহমাদ ৭৪৪০, ২৭৩৩৬, ৮৩৩৩, ৮৯০৬, ৯৯৩৬, মুওয়াত্তা মালিক ৪১৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৫৮. জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পূর্ণিমার রাতে বসে ছিলাম । তিনি চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “নিঃসন্দেহে তোমরা (পরকালে) তোমাদের প্রতিপালককে ঠিক এইভাবে দর্শন করিবে, যেভাবে তোমরা এই পূর্ণিমার চাঁদ দর্শন করছ । তাঁকে দেখতে তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না । সুতরাং যদি তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে (নিয়মিত) নামায পড়তে পরাহত না হইতে সক্ষম হও (অর্থাৎ এ নামায ছুটে না যায়), তাহলে অবশ্যই তা বাস্তবায়ন কর ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৫৪, ৫৭৩, ৪৮৫১, ৭৪৩৪, ৭৪৩৫, ৭৪৩৬, মুসলিম ৬৩৩, তিরমিজী ২৫৫১, আবু দাঊদ ৪৭৪৭২৯, ইবনু মাজাহ ১৭৭, আহমাদ ১৮৭০৮, ১৮৭২৩, ১৮৭৬৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৫৯. বুরাইদা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আসরের নামায ত্যাগ করল, নিঃসন্দেহে তার আমল নষ্ট হয়ে গেল ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৫৩, ৫৯৪, নাসাঈ ৪৭৪, ইবনু মাজাহ ৬৯৪, আহমাদ ২২৪৪৮, ২২৫১৭, ২২৫৩৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ১৮৯: মসজিদে যাওয়ার ফযীলত

১০৬০. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল অথবা সন্ধ্যায় মসজিদে গমন করে, আল্লাহ তার জন্য আপ্যায়ন সামগ্রী জান্নাতের মধ্যে প্রস্তুত করেন । সে যতবার সকাল অথবা সন্ধ্যায় গমনাগমন করে, আল্লাহও তার জন্য ততবার আতিথেয়তার সামগ্রী প্রস্তুত করেন ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৬২, মুসলিম ৪৬৭, ৬৬৯, আহমাদ ১০২৩০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৬১. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে ওযূ ক’রে আল্লাহর কোনো ঘরের দিকে এই উদ্দেশ্যে যাত্রা করে যে, আল্লাহর নির্ধারিত কোনো ফরয ইবাদত (নামায) আদায় করিবে, তাহলে তার কৃত প্রতিটি দুই পদক্ষেপের মধ্যে একটিতে একটি ক’রে গুনাহ মিটাবে এবং অপরটিতে একটি ক’রে মর্যাদা উন্নত করিবে ।”

(মুসলিম ৬৬৬, ইবনু মাজাহ ৭৭৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৬২. উবাই ইবনে কা‘ব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক আনসারী ছিল । মসজিদ থেকে তার চাইতে দূরে কোনো ব্যক্তি থাকত বলে আমার জানা নেই । তবুও সে কোনো নামায (মসজিদে জামাআতসহ) আদায় করতে ত্রুটি করত না । একদা তাকে বলা হল, ‘যদি একটা গাধা খরিদ করতে এবং রাতের অন্ধকারে ও উত্তপ্ত রাস্তায় তার উপর আরোহণ করতে, (তাহলে ভাল হত) ।’ সে বলল, ‘আমার বাসস্থান মসজিদের পার্শ্বে হলেও তা আমাকে আনন্দ দিতে পারত না । কারণ আমার মনস্কামনা এই যে, মসজিদে যাবার ও নিজ বাড়ি ফিরার সময় কৃত প্রতিটি পদক্ষেপ যেন লিপিবদ্ধ হয় ।’ রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (তার এহেন পুণ্যাগ্রহ দেখে) বললেন, “নিশ্চিতরূপে আল্লাহ তোমার (ভাগ্যে) তা সমস্তই জুটিয়েছেন ।”

(মুসলিম ৬৬৩, আবু দাঊদ ৫৫৭, ইবনু মাজাহ ৭৮৩, আহমাদ ২০৭০৯, দারেমী ১২৮৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৬৩.জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মসজিদে নববীর আশে-পাশে কিছু জায়গা খালি হল। (এ দেখে) সালেমা গোত্র মসজিদে (নববী)এর নিকট স্থানান্তরিত হবার ইচ্ছা প্রকাশ করল । এ খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতে পারলে তিনি তাদেরকে বললেন, “আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা মসজিদের কাছে চলে আসতে চাচ্ছ !” তারা বলল, ‘জী হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আমরা এ ইচ্ছা করেছি ।’ তিনি বললেন, “হে সালেমা গোত্র ! তোমরা নিজেদের (বর্তমান) বাড়িতেই থাক । তোমাদের (মসজিদের পথে) পদক্ষেপসমূহের চিহ্নগুলি লিপিবদ্ধ করা হবে । তোমরা নিজেদের (বর্তমান) বাড়িতেই থাক । তোমাদের (মসজিদের পথে) পদক্ষেপসমূহের চিহ্নগুলি লিপিবদ্ধ করা হবে ।” তারা বলল, ‘(মসজিদের নিকট) স্থানান্তরিত হওয়া আমাদেরকে আনন্দ দেবে না ।’

(মুসলিম, ইমাম বুখারী ও আনাস রাঃআঃ হইতে এ মর্মে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন) (সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৫৫, ৬৫৬, ১৮৮৭, মুসলিম ৬৬৫, ইবনু মাজাহ ৭৮৪, আহমাদ ১১৬২২, ১২৪৬৫, ১৩৩৫৯) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

১০৬৪. আবু মূসা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “(মসজিদে জামাআতসহ) নামায পড়ার ক্ষেত্রে, সেই ব্যক্তি সর্বাধিক বেশী নেকী পায়, যে ব্যক্তি সব চাইতে দূর-দূরান্ত থেকে আসে । আর যে ব্যক্তি (জামাতের সাথে) নামাযের অপেক্ষা না করেই একা নামায পড়ে শুয়ে যায়, তার চাইতে সেই বেশী নেকী পায়, যে নামাযের জন্য প্রতীক্ষা করে ও ইমামের সাথে জামাআত সহকারে নামায আদায় করে ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৫১, মুসলিম ৬৬২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৬৫. বুরাইদাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “রাত্রির অন্ধকারে মসজিদে যাতায়াতকারী লোকাদেরকে কিয়ামতের দিনে পরিপূর্ণ জ্যোতির শুভ সংবাদ জানিয়ে দাও।”

(আবু দাঊদ ৫৬১, তিরমিজী ২২৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৬৬. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (একদা সমবেত সহচরদের উদ্দেশ্যে) বললেন, “তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেব না কি, যার দ্বারা আল্লাহ গোনাহসমূহকে মোচন ক’রে দেবেন এবং (জান্নাতে) তার দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি করিবেন?” তাঁরা বললেন, ‘অবশ্যই, হে আল্লাহ রসূল!’ তিনি বললেন, “(তা হচ্ছে) কষ্টকর অবস্থায় পরিপূর্ণরূপে ওযূ করা, অধিক মাত্রায় মসজিদে গমন করা এবং এক অক্তের নামায আদায় ক’রে পরবর্তী অক্তের নামাযের জন্য প্রতীক্ষা করা । আর এ হল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত কাজ । এ হল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত কাজ ।”

(মুসলিম ২৫১, তিরমিজী ৫১, নাসাঈ ১৪৩, আহমাদ ৭১৬৮, ৭৬৭২, ৭৯৩৫, ৭৯৬১, ৯৩৬১, মুওয়াত্তা মালিক ৩৮৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৬৭. আবু সা‘ঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কোনো ব্যক্তিকে তোমরা যখন মসজিদে যাওয়া আসায় অভ্যস্ত দেখতে পাও তখন তার ঈমানদারীর সাক্ষী দাও । কারণ মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করে কেবল তারাই যারা আল্লাহর উপর এবং শেষ দিবসের (পরকালের) উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে… ।” (সূরা আত্-তাওবাহ্ঃ ১৮) (তিরমিজী এটিকে হাসান বলেছেন)

(আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি এরূপই বলেছেন । কিন্তু এর সনদটি দুর্বল যেমনটি আমি “আলমিশকাত” গ্রন্থে (নং ৭২৩) বর্ণনা করেছি। তবে এর ভাবার্থ সহীহ্ । এর সনদে দার্রাজ ইবনু আবিস সাম্হ্‌ নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন । তার সম্পর্কে হাফিয ইবনু হাজার “আত্‌তাক্বরীব” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি তার হাদীসের ব্যাপারে সত্যবাদী, তবে আবুল হাইশাম হইতে তার বর্ণনা করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে । এ কারণেই হাফিয যাহাবী ইমাম হাকিমের সমালোচনা করে বলেছেনঃ দার্রাজ বহু মুনকারের অধিকারী । তিরমিজী ৩০৯৩) হাদীসটির মানঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদ – ১৯০: নামাযের প্রতীক্ষা করার ফযীলত

১০৬৮. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “নামাযের প্রতীক্ষা যতক্ষণ (কাউকে) আবদ্ধ রাখে, ততক্ষণ সে আসলে নামাযের মধ্যেই থাকে । যখন নামায ছাড়া (তাকে) তার স্বীয় পরিবারের কাছে ফিরে যেতে অন্য কোন জিনিস বাধা না দেয় ।” (অর্থাৎ নামাযের উদ্দেশ্যে যতক্ষণ বসে থাকে, পুণ্যপ্রাপ্তির দিক দিয়ে সে পরোক্ষভাবে নামাযেই প্রবৃত্ত থাকে ।)

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৫৯, ১৭৬, ৪৪৫, ৪৭৭, ৬৪৭, ৬৪৯, ২১১৯, ৩২২৯, ৪৭১৭, মুসলিম ৬৪৯, তিরমিজী ২১৫, ২১৬, নাসাঈ ৭৩৩, ৭৩৮, আবু দাঊদ ৪৬৯, ৪৭০, ৪৭১, ৫৫৬, ইবনু মাজাহ ৭৮৭, আহমাদ ৭১৪৫, ৭৩৬৭, ৭৩৮২, ৭৪৯৮, ৭৫৩০, ৭৫৫৭, ৭৫৫৯, ৭৮৩২, মুওয়াত্তা মালিক ২৯১, ৩৮২, ৩৮৩, ৩৮৫, দারেমী ১২৭৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৬৯. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ফিরিশ্‌তাবর্গ তোমাদের প্রত্যেকের জন্য দুআ করে থাকেন, যতক্ষণ সে সেই স্থানে অবস্থান করে, যেখানে সে নামায পড়েছে; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার ওযূ নষ্ট হয়েছে; বলেন, ‘

اَللهم اغْفِرْ لَهُ، اَللهم ارْحَمْهُ

আল্লাহুম্মাগ ফিরহু আল্লাহুম্মার হামহু, হে আল্লাহ! ওকে ক্ষমা ক’রে দাও । হে আল্লাহ , ওর প্রতি সদয় হও ।”

(বুখারী ৪৪৫, ৪৭৭, ৬৪৭, ৬৪৯, ২১১৯, ৩২২৯, ৪৭১৭, মুসলিম ৬৪৯, তিরমিজী ২১৫, ২১৬, নাসাঈ ৭৩৩, ৭৩৮, আবু দাঊদ ৪৬৯, ৪৭০, ৪৭১, ৫৫৬, ইবনু মাজাহ ৭৮৭, আহমাদ ৭১৪৫, ৭৩৬৭, ৭৩৮২, ৭৪৯৮, ৭৫৩০, ৭৫৫৭, ৭৫৫৯, ৭৮৩২, মুওয়াত্তা মালিক ২৯১, ৩৮২, ৩৮৩, ৩৮৫, দারেমী ১২৭৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৭০. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক রাত্রে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এশার নামায অর্ধেক রাত পর্যন্ত পিছিয়ে দিলেন । অতঃপর নামায পড়ার পর আমাদের দিকে মুখ ক’রে বললেন, “লোকেরা নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর তোমরা নামাযেই ছিলে; যখন থেকে তার অপেক্ষায় ছিলে ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০০, ৫৭২, ৬৬১, ৮৪৮, ৫৮৬৯, মুসলিম ৬৪০, নাসাঈ ৫৩৯, ৫২০২, ৫২৮৫, ইবনু মাজাহ ৬৯২, আহমাদ ১২৪৬৯, ১২৫৫০, ১২৬৫৬, ১৩৪০৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ১৯১: জামাত সহকারে নামাযের ফযীলত

১০৭১. ইবনে উমার (রযিয়াল্লাহু আনহুমা) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “একাকীর নামায অপেক্ষা জামাআতের নামায সাতাশ গুণ উত্তম ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪৫, মুসলিম ৬৫০, তিরমিজী ২১৫, নাসাঈ ৮৩৭, ইবনু মাজাহ ৭৮৯, আহমাদ ৪৬৫৬, ৫৩১০, ৫৭৪৫, ৫৮৮৫, ৬৪১৯, মুওয়াত্তা মালিক ২৯০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৭২. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “জামাতের সাথে কারো নামায পড়া, তার ঘরে ও বাজারে একা নামায পড়ার চাইতে ২৫ গুণ বেশি শ্রেষ্ ঠ। তা এই জন্য যে, যখন কোনো ব্যক্তি ওযূ করে এবং উত্তমরূপে ওযূ সম্পাদন করে। অতঃপর মসজিদ অভিমুখে যাত্রা করে । আর একমাত্র নামাযই তাকে (ঘর থেকে) বের করে (অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকে না), তখন তার (পথে চলার সময়) প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গোনাহ মাফ করা হয় । তারপর সে নামাযান্তে নামায পড়ার জায়গায় যতক্ষণ ওযূ সহকারে অবস্থান করে, ফিরিশ্‌তাবর্গ তার জন্য দুআ করেন; তাঁরা বলেন, ‘হে আল্লাহ ! ওর প্রতি অনুগ্রহ কর । হে আল্লাহ ! তুমি ওকে রহম কর ।’ আর সে ব্যক্তি ততক্ষণ নামাযের মধ্যেই থাকে, যতক্ষণ সে নামাযের প্রতীক্ষা করে ।”

(বুখারী ও মুসলিম, এ শব্দগুলি বুখারীর)( সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪৭, ৬৫৯, ১৭৬, ৪৪৫, ৪৭৭, ৬৪৭, ৬৪৯, ২১১৯, ৩২২৯, ৪৭১৭, মুসলিম ৬৪৯, তিরমিজী ২১৫, ২১৬, নাসাঈ ৭৩৩, ৭৩৮, আবু দাঊদ ৪৬৯, ৪৭০, ৪৭১, ৫৫৬, ইবনু মাজাহ ৭৮৭, আহমাদ ৭১৪৫, ৭৩৬৭, ৭৩৮২, ৭৪৯৮, ৭৫৩০, ৭৫৫৭, ৭৫৫৯, ৭৮৩২, মুওয়াত্তা মালিক ২৯১, ৩৮২, ৩৮৩, ৩৮৫, দারেমী ১২৭৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৭৩. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

একটি অন্ধ লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল ! আমার কোন পরিচালক নেই, যে আমাকে মসজিদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে ।’ সুতরাং সে নিজ বাড়িতে নামায পড়ার জন্য আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট অনুমতি চাইল । তিনি তাকে অনুমতি দিলেন । কিন্তু যখন সে পিঠ ঘুরিয়ে রওনা দিল, তখন তিনি তাকে ডেকে বললেন, “তুমি কি আহ্বান (আযান) শুনতে পাও ?” সে বলল, ‘জী হ্যাঁ ।’ তিনি বললেন, “তাহলে তুমি সাড়া দাও ।” (অর্থাৎ মসজিদেই এসে নামায পড় ।)

(মুসলিম ৬৫৩, নাসাঈ ৮৫০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৭৪. আব্দুল্লাহ (মতান্তরে) আম্‌র ইবনে ক্বায়স ওরফে ইবনে উম্মে মাকতূম মুআযযিন রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

একদা তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল ! মদিনায় সরীসৃপ (সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি বিষাক্ত জন্তু) ও হিংস্র পশু অনেক আছে । (তাই আমাকে নিজ বাড়িতেই নামায পড়ার অনুমতি দিন) ।’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি ‘হাইয়্যা আলাস স্বালাহ ও হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ (আযান) শুনতে পাও ? (যদি শুনতে পাও), তাহলে মসজিদে এসো ।”

(আবু দাঊদ ৫৫৩, ৫৫২, নাসাঈ ৮৫১, ইবনু মাজাহ ৭৯২) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

১০৭৫. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ ! যার হাতে আমার জীবন আছে । আমার ইচ্ছা হচ্ছে যে, জ্বালানী কাঠ জমা করার আদেশ দিই । তারপর নামাযের জন্য আযান দেওয়ার আদেশ দিই । তারপর কোন লোককে লোকদের ইমামতি করতে আদেশ দিই । তারপর আমি স্বয়ং সেই সব (পুরুষ) লোকদের কাছে যাই (যারা মসজিদে নামায পড়তে আসেনি) এবং তাদেরকেসহ তাদের ঘর-বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিই ।” (বুখারী ও মুসলিম)

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম ৬৫১, তিরমিজী ২১৭, নাসাঈ ৮৪৮, আবু দাঊদ, ৭২৬০, ৭৮৫৬, ২৭৩৬৬, ২৭৪৭৫, মুওয়াত্তা মালিক ২৯৯, দারেমী ১২১২, ১২৭৪)

(এ দ্বারা প্রমাণ হয় যে, নামায জামাতসহ পড়া ওয়াজেব; যদি কোন শরয়ী ওযর না থাকে ।) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৭৬. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, “যাকে এ কথা আনন্দ দেয় যে, সে কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে মুসলিম হয়ে সাক্ষাৎ করিবে, তার উচিত, সে যেন এই নামাযসমূহ আদায়ের প্রতি যত্ন রাখে, যেখানে তার জন্য আযান দেওয়া হয় (অর্থাৎ, মসজিদে) । কেননা, মহান আল্লাহ তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিমিত্তে হিদায়েতের পন্থা নির্ধারণ করিয়াছেন । আর নিশ্চয় এই নামাযসমূহ হিদায়েতের অন্যতম পন্থা ও উপায় । যদি তোমরা (ফরয) নামায নিজেদের ঘরেই পড়, যেমন এই পিছিয়ে থাকা লোক নিজ ঘরে নামায পড়ে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর তরীকা পরিহার করিবে । আর (মনে রেখো,) যদি তোমরা তোমাদের নবীর তরীকা পরিহার কর, তাহলে নিঃসন্দেহে তোমরা পথহারা হয়ে যাবে । আমি আমাদের লোকদের এই পরিস্থিতি দেখেছি যে, নামায (জামাতসহ পড়া) থেকে কেবল সেই মুনাফিক (কপট মুসলিম) পিছিয়ে থাকে, যে প্রকাশ্য মুনাফিক । আর (দেখেছি যে, পীড়িত) ব্যক্তিকে দু’জনের উপর ভর দিয়ে নিয়ে এসে (নামাযের) সারিতে দাঁড় করানো হতো ।’

(মুসলিম ৬৫৪, আবু দাঊদ ৫৫০, ইবনু মাজাহ ৭৭৭, আহমাদ ৩৫৫৪, ৩৬১৬, ৩৯২৬, ৩৯৬৯, ৪২৩০, ৪৩৪২, দারেমী ১২৭৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৭৭. আবু দার্দা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, “যে কোন গ্রাম বা মরু-অঞ্চলে তিনজন লোক বাস করলে এবং সেখানে (জামাআতে) নামায কায়েম না করা হলে শয়তান তাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার ক’রে ফেলে । সুতরাং তোমরা জামাআতবদ্ধ হও । অন্যথা ছাগ পালের মধ্য হইতে নেকড়ে সেই ছাগলটিকে ধরে খায়, যে (পাল থেকে) দূরে দূরে থাকে ।”

(আবু দাঊদ ৫৪৭, নাসাঈ ৮৪৭, আহমাদ ২১২০৩, ২৬৯৬৭, ২৬৯৬৮) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

পরিচ্ছেদ – ১৯২: ফজর ও এশার জামাআতে হাযির হইতে উৎসাহদান

১০৭৮. উসমান ইবনে আফ্ফান রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে এশার নামায আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত কিয়াম (ইবাদত) করল । আর যে ফজরের নামায জামাতসহ আদায় করল, সে যেন সারা রাত নামায পড়ল ।”

(মুসলিম ৬৫৬, তিরমিজী ২২১, আবু দাঊদ ৫৫৫, আহমাদ ৪১০, ৪৯৩, মুওয়াত্তা মালিক ২৯৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৭৯. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যদি লোকে এশা ও ফজরের নামাযের ফযীলত জানতে পারত, তাহলে তাদেরকে হামাগুড়ি বা পাছা ছেঁচড়ে আসতে হলেও তারা অবশ্যই ঐ নামাযদ্বয়ে আসত ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬১৫, ৬৫৪, ৭২১, ২৪৭২, ২৬৮৯, ২৮২৯, ৫৭৩৩, মুসলিম ৪৩৭, ৪৩৯, ১৯১৪, তিরমিজী ২২৫, ১০৬৩, ১৯৫৮, নাসাঈ ৫৪০, ৬৭১, আবু দাঊদ ৫২৪৫, ইবনু মাজাহ ৭৯৭, আহমাদ ৭১৮৫, ৭৬৮০, ৭৭৮২, ৭৯৬২, ৮১০৬, ৮২৯৩, ৮৬৫৫, ৮৯৯৩, ৯২০২, ৯৭৫০, মুওয়াত্তা মালিক ১৫১, ২৯৫) এটি সবিস্তার ১০৪০ নম্বরে গত হয়েছে । হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৮০. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মুনাফিক (কপট)দের উপর ফজর ও এশার নামায অপেক্ষা অধিক ভারী নামায আর নেই । যদি তারা এর ফযীলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৫৭, ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম ৬৫১, তিরমিজী ২১৭, নাসাঈ ৮৪৮, দাঊদ, ৭২৬০, ৭৮৫৬, ২৭৩৬৬, ২৭৪৭৫, মুওয়াত্তা মালিক ২৯৯, দারেমী ১২১২, ১২৭৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদ – ১৯৩: ফরয নামাযসমূহের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ এবং তা ত্যাগ করা সম্বন্ধে কঠোর নিষেধ ও চরম হুমকি

১০৮১. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সর্বোত্তম আমল কি ?’ তিনি বললেন, “যথা সময়ে নামায আদায় করা ।” আমি বললাম, ‘তারপর কি ?’ তিনি বললেন, “মা-বাপের সাথে সদ্ব্যবহার করা ।” আমি বললাম, ‘তারপর কি ?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫২৭, ২৭৮২, ৫৯৭০, ৭৫৩৪, মুসলিম ৮৫, তিরমিজী ১৭৩, ১৮৯৮, নাসাঈ ৬১০, ৬১১, আহমাদ ৩৮৮০, ৩৯৬৩, ৩৯৮৮, ৪১৭৫, ৪২১১, ৪২৩১, ৪২৭৩, ৪৩০১, দারেমী ১২২৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৮২. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিত । (১) এই কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষ । (২) নামায প্রতিষ্ঠা করা । (৩) যাকাত প্রদান করা । (৪) কা‘বা গৃহের হজ্জ করা । (৫) রমযান মাসে রোযা পালন করা ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৮, মুসলিম ১৬, তিরমিজী ২৬০৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৮৩. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “লোকদের বিরুদ্ধে আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত (সশস্ত্র) সংগ্রাম চালাবার আদেশ দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা এই সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষ’ এবং নামায প্রতিষ্ঠা করিবে ও যাকাত আদায় করিবে । সুতরাং যখনই তারা সেসব বাস্তবায়ন করিবে, তখনই তারা ইসলামী হক ব্যতিরেকে নিজেদের জান-মাল আমার নিকট হইতে বাঁচিয়ে নিবে । আর তাদের (আভ্যন্তরীণ বিষয়ের) হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে থাকবে ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৫, মুসলিম ২২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৮৪. মুআয ইবনে জাবাল রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ইয়ামান পাঠালেন ও বললেন, “নিশ্চয় তুমি কিতাব ধারী সম্প্রদায়ের কাছে যাত্রা করছ । সুতরাং তুমি তাদেরকে এই কথার প্রতি আহ্বান জানাবে যে, তারা সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল । যদি তারা ঐ প্রস্তাব গ্রহণ ক’রে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি দিবারাত্রে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করিয়াছেন । যদি তারা এ কথাটিও মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে অবহিত করিবে যে, মহান আল্লাহ তাদের (ধনীদের) উপর যাকাত ফরয করিয়াছেন যা তাদের ধনী ব্যক্তিদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের গরীব মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে । যদি তারা এই আদেশটিও পালন করতে সম্মত হয়, তাহলে তুমি (যাকাত আদায়ের সময়) তাদের উৎকৃষ্ট মাল-ধন হইতে বিরত থাকবে এবং মজলূম (অত্যাচারিত) ব্যক্তির বদ্দুআ থেকে দূরে থাকবে । কেননা, তার ও আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না ।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ১৩৯৫, ১৪৫৮, ১৪৯৬, ২৪৪৮, ৪৩৪৭, ৭৩৭১, ৭৩৭২, মুসলিম ১৯, তিরমিজী ৩২৫, ২০১৪, নাসাঈ ২৪৩৫, আবু দাঊদ ১৫৮৪, ইবনু মাজাহ ১৭৮৩, আহমাদ ২০৭২, দারেমী ১৬১৪)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৮৫. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, “মানুষ ও কুফরির মধ্যে (পর্দা) হল, নামায ত্যাগ করা ।”

(মুসলিম ৮২, তিরমিজী ২৬১৮, ২৬২০, আবু দাঊদ ৪৬৭৮, ইবনু মাজাহ ১০৭৮, আহমাদ ১৪৫৬১, ১৪৭৬২, দারেমী ১২৩৩).হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৮৬. বুরাইদাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে চুক্তি আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মধ্যে বিদ্যমান, তা হচ্ছে নামায (পড়া) । অতএব যে নামায ত্যাগ করিবে, সে নিশ্চয় কাফের হয়ে যাবে ।”

(তিরমিজী ২৬২১, নাসাঈ ৪৬৩, ইবনু মাজাহ ১০৭৯, আহমাদ ২২৪২৮, ২২৭৯৮) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

১০৮৭. সর্বজন মহামান্য শাক্বীক ইবনে আব্দুল্লাহ তাবেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) হইতে বর্ণিতঃ

‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সহচরবৃন্দ নামায ছাড়া অন্য কোনো আমল ত্যাগ করাকে কুফরীমূলক কাজ বলে মনে করতেন না ।’

(তিরমিজী, কিতাবুল ঈমান, বিশুদ্ধ সানাদ) (তিরমিজী ২৬২২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৮৮. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “নিশ্চয় কিয়ামতের দিন বান্দার (হক্বুক্বুল্লাহর মধ্যে) যে কাজের হিসাব সর্বপ্রথম নেওয়া হবে তা হচ্ছে তার নামায । সুতরাং যদি তা সঠিক হয়, তাহলে সে পরিত্রাণ পাবে । আর যদি (নামায) পণ্ড ও খারাপ হয়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে । যদি তার ফরয (ইবাদতের) মধ্যে কিছু কম পড়ে যায়, তাহলে প্রভু বলবেন, ‘দেখ তো ! আমার বান্দার কিছু নফল (ইবাদত) আছে কি না, যা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূরণ করে দেওয়া হবে ?’ অতঃপর তার অবশিষ্ট সমস্ত আমলের হিসাব ঐভাবে গৃহীত হবে ।

(আবু দাঊদ ৮৬৪, তিরমিজী ৪১৩, ৪৬৫, ৪৬৬, ৪৬৭, ইবনু মাজাহ ১৪২৫, ১৪২৬, আহমাদ ৭৮৪২, ৯২১০, ১৬৫০১, দারেমী ১৩৫৫) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

পরিচ্ছেদ – ১৯৪: প্রথম কাতারের ফযীলত, প্রথম কাতারসমূহ পূরণ করা, কাতার সোজা করা এবং ঘন হয়ে কাতার বাঁধার গুরুত্ব

১০৮৯. জাবের ইবনে সামুরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নিকট এসে বললেন, “ফিরিশ্‌তামন্ডলী যেরূপ তাদের প্রভুর নিকট সারিবদ্ধ হন, তোমরা কি সেরূপ সারিবদ্ধ হবে না ।” আমরা নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল ! ফিরিশ্‌তামন্ডলী তাদের প্রভুর নিকট কিরূপ সারিবদ্ধ হন ?’ তিনি বললেন, “প্রথম সারিগুলো পূর্ণ করেন এবং সারিতে ঘন হয়ে দাঁড়ান ।” (মুসলিম)

(মুসলিম ৪৩০, নাসাঈ ৮১৬, ১১৮৪, ১১৮৫, আবু দাঊদ ৬৬১, ৯১২, ১০০০, ইবনু মাজাহ ৯৯২, আহমাদ ২০৩৬১, ২০৪৫০, ২০৪৬৪, ২০৫১৯, ২০৫২২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৯০. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “লোকেরা যদি জানত যে, আযান দেওয়া ও নামাযের প্রথম সারিতে দাঁড়াবার কি মাহাত্ম্য আছে, অতঃপর (তাতে অংশগ্রহণের জন্য) যদি লটারি ছাড়া অন্য কোন উপায় না পেত, তবে তারা অবশ্যই সে ক্ষেত্রে লটারির সাহায্য নিত।”

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬১৫, ৬৫৪, ৭২১, ২৪৭২, ২৬৮৯, ২৮২৯, ৫৭৩৩, মুসলিম ৪৩৭, ৪৩৯, ১৯১৪, তিরমিজী ২২৫, ১০৬৩, ১৯৫৮, নাসাঈ ৫৪০, ৬৭১, আহমাদ ৫২৪৫, ইবনু মাজাহ ৭৯৭, আহমাদ ৭১৮৫, ৭৬৮০, ৭৭৮২, ৭৯৬২, ৮১০৬, ৮২৯৩, ৮৬৫৫, ৮৯৯৩, ৯২০২, ৯৭৫০, মানে ১৫১, ২৯৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৯১. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “পুরুষদের কাতারের মধ্যে সর্বোত্তম কাতার হল প্রথম কাতার, আর নিকৃষ্টতম কাতার হল শেষ কাতার । আর মহিলাদের সর্বোত্তম কাতার হল পিছনের (শেষ) কাতার এবং নিকৃষ্টতম কাতার হল প্রথম কাতার ।”

(মুসলিম ৪৪০, তিরমিজী ২২৪, নাসাঈ ৮২০, আবু দাঊদ ৬৭৮, ইবনু মাজাহ ১০০০, আহমাদ ৭৩১৫, ৮২২৩, ৮২৮১, ৮৪৩০, ৮৫৮০, ৯৯১৭, দারেমী ১২৬৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৯২. আবু সাঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় সাহাবীদের মাঝে (প্রথম কাতার থেকে) পিছিয়ে যাওয়া লক্ষ্য করে তাঁদেরকে বললেন, “এগিয়ে এসো, অতঃপর আমার অনুসরণ কর । আর যারা তোমাদের পরে আছে, তারা তোমাদের অনুসরণ করুক । (মনে রাখবে) লোকে সর্বদা পিছিয়ে যেতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকে (তাঁর করুণাদানে) পিছনে করে দেন ।”

(মুসলিম ৪৩৮, নাসাঈ ৭৯৫, আবু দাঊদ ৬৮০, ইবনু মাজাহ ৯৭৮, আহমাদ ১০৮৯৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৯৩. আবু মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযে (কাতার বাঁধার সময়) আমাদের কাঁধে হাত বুলিয়ে বলতেন, “তোমরা সোজা হয়ে দাঁড়াও, তোমরা (কাতার বাঁধার সময়ে) পরস্পরের বিরোধিতা করো না; নচেৎ তোমাদের অন্তরের মধ্যে বিরোধিতা সৃষ্টি হবে । তোমাদের মধ্যে যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী তারা যেন আমার নিকটবর্তী থাকে । তারপর যারা (জ্ঞান ও যোগ্যতায়) তাদের কাছাকাছি হবে (তারা দাঁড়াবে) । তারপর যারা (জ্ঞান ও যোগ্যতায়) তাদের কাছাকাছি হবে (তারা দাঁড়াবে) ।”

(মুসলিম ৪৩২, নাসাঈ ৮০৭, ৮১২, আবু দাঊদ ৬৭৪, ইবনু মাজাহ ৯৭৬ আহমাদ ১৬৬৫৩, দারেমী ১২৬৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৯৪.আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (নামাযে দাঁড়িয়ে) বললেন, “তোমরা কাতার সোজা কর । কেননা, কাতার সোজা করা নামাযের পরিপূর্ণতার অংশ বিশেষ ।” (বুখারী ও মুসলিম)

(সহীহুল বুখারী শরীফ ৪১৯, ৭১৮, ৭১৯, ৭২৩, ৭২৪, ৭২৫, ৭৪২, ৭৪৯, ৬৪৬৮, ৬৬৪৪, মুসলিম ৪২৫, নাসাঈ ৮১৩, ৮১৫, ৮১৮, ৮৪৫, ১০৫৪, ১১১৭, আবু দাঊদ ৬৬৭, ৬৬৮, ৬৬৯, ৬৭১, ইবনু মাজাহ ৯৯৩, আহমাদ ১১৫৮৬, ১১৬৫৫, ১১৬৯৯, ১১৭৩৮, ১১৮৪৬, ১১৯১২, ১২১৫৯, ১২২৩৫, ১২৩২২, ১২৪০১, ১২৪২৯, ১২৪৪৮, দারেমী ১২৬৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৯৫. পূর্বোক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা নামাযের তাকবীর (ইকামত) দেওয়া হল, তখন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের দিকে মুখ ক’রে বললেন, “তোমরা কাতারসমূহ সোজা কর এবং মিলিতভাবে দাঁড়াও । কারণ, তোমাদেরকে আমার পিছন থেকেও দেখতে পাই ।” (এই শব্দে বুখারী এবং একই অর্থে মুসলিম বর্ণনা করিয়াছেন ।

(এই শব্দে বুখারী এবং একই অর্থে মুসলিম বর্ণনা করিয়াছেন । সহীহুল বুখারী শরীফ ৪১৯, ৭১৮, ৭১৯, ৭২৩, ৭২৪, ৭২৫, ৭৪২, ৭৪৯, ৬৪৬৮, ৬৬৪৪, মুসলিম ৪২৫, নাসাঈ ৮১৩, ৮১৫, ৮১৮, ৮৪৫, ১০৫৪, ১১১৭, আবু দাঊদ ৬৬৭, ৬৬৮, ৬৬৯, ৬৭১, ইবনু মাজাহ ৯৯৩, আহমাদ ১১৫৮৬, ১১৬৫৫, ১১৬৯৯, ১১৭৩৮, ১১৮৪৬, ১১৯১২, ১২১৫৯, ১২২৩৫, ১২৩২২, ১২৪০১, ১২৪২৯, ১২৪৪৮, দারেমী ১২৬৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

১০৯৬. নু‘মান ইবনে বাশীর রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “তোমরা নিজেদের কাতার জরুর সোজা ক’রে নাও; নচেৎ আল্লাহ তোমাদের মুখমণ্ডলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ক’রে দিব

১০৯৭. বারা’ ইবনে আযেব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাযে কাতারের ভিতরে ঢুকে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চলা ফেরা করতেন এবং আমাদের বুকে ও কাঁধে হাত দিতেন (অর্থাৎ হাত দিয়ে কাতার ঠিক করতেন) আর বলতেন, “তোমরা বিভেদ করো না (অর্থাৎ কাতার থেকে আগে পিছে হটো না ।) নচেৎ তোমাদের অন্তর রাজ্যেও বিভেদ সৃষ্টি হবে ।” তিনি আরও বলতেন, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ প্রথম কাতারগুলির উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফিরিশ্‌তাবর্গ তাদের জন্য রহমত প্রার্থনা করেন ।”

(আবু দাঊদ ৬৬৪, নাসায়ী ৮১১, ইবনু মাজাহ ৯৯৭, আহমাদ ১৮০৪৫, ১৮১৪২, ১৮১৪৭, ১৮১৬৬, ১৮১৭২, ১৮২২৯, দারেমী ১২৬৪) হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

১০৯৮. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেছেন, “তোমরা কাতারগুলি সোজা ক’রে নাও । পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নাও । (কাতারের) ফাঁক বন্ধ ক’রে নাও । তোমাদের ভাইদের জন্য হাতের বাজু নরম ক’রে দাও । আর শয়তানের জন্য ফাঁক ছেড়ো না । (মনে রাখবে,) যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহ তার সাথে মিল রাখবেন, আর যে ব্যক্তি কাতার ছিন্ন করবে (মানে কাতারে ফাঁক রাখবে), আল্লাহও তার সাথে (সম্পর্ক) ছিন্ন করবেন ।”

(আবু দাঊদ ৬৬৬, নাসায়ী ৮১৯) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১০৯৯. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, “ঘন ক’রে কাতার বাঁধ এবং কাতারগুলিকে পরস্পরের কাছাকাছি রাখ । ঘাড়সমূহ একে অপরের বরাবর কর । সেই মহান সত্তার শপথ ! যার হাতে আমার প্রাণ আছে, কাতারের মধ্যেকার ফাঁকে শয়তানকে আমি প্রবেশ করতে দেখতে পাই, যেন তা কালো ছাগলের ছানা ।” (এ হাদীসটি বিশুদ্ধ, আবু দাঊদ মুসলিমের শর্তানুযায়ী বর্ণনা করেছেন)

(সহীহুল বুখারী ৪১৯, ৭১৮, ৭১৯, ৭২৩, ৭২৪, ৭২৫, ৭৪২, ৭৪৯, ৬৪৬৮, ৬৬৪৪, মুসলিম ৪২৫, নাসায়ী ৮১৩, ৮১৫, ৮১৮, ৮৪৫, ১০৫৪, ১১১৭, আবু দাঊদ ৬৬৭, ৬৬৮, ৬৬৯, ৬৭১, ইবনু মাজাহ ৯৯৩, আহমাদ ১১৫৮, ৬, ১১৬৫৫, ১১৬৯৯, ১১৭৩৮, ১১৮৪৬, ১১৯১২, ১২১৫৯, ১২২৩৫, ১২৩২২, ১২৪০১, ১২৪২৯, ১২৪৪৮, দারেমী ১২৬৩) حذف এর অর্থ কালো ছোট জাতের ছাগল, যা ইয়ামানে পাওয়া যায় । হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১১০০. পূর্বোক্ত রাবী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) (নামাজ প্রাক্কালে) বলেন, “তোমরা আগের কাতারটি পূর্ণ ক’রে নাও । তারপর ওর সংলগ্ন (কাতার পূর্ণ কর) । তারপর যে অসম্পূর্ণতা থাকে, তা শেষ কাতারে থাকুক ।” (আবু দাঊদ, হাসান সূত্রে)

(সহীহুল বুখারী ৭১৮, ৭২৩, আবু দাঊদ ৬৭১, ৬৬৭, ৬৬৮, ৬৬৯, মুসলিম ৪৩৩, ৪৩৪, নাসায়ী ৮১৪, ৮১৫, ৮৪৫, ইবনু মাজাহ ৯৯৩, আহমাদ ১১৫৯৬, ১১৬৯৯, ১১৭১৩, ১১৪০১, ১২৪২৯, ১২৪৭৩, ১৩২৫২, ১৩৩৬৬, ১৩৪৮৩, ১৩৫৫৭, ১৩৬৮২, দারেমী ১২৬৩) হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

১১০১. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন: আল্লাহ অবশ্যই কাতারগুলোর ডানদিকের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং আল্লাহর ফেরেশতারা তাদের জন্য দুআ করতে থাকেন । (আবু দাঊদ)

(আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি (বর্ণনাকারী উসমা হচ্ছেন উসামা ইবনু যায়েদ লাইসী । সমালোচক মুহাক্কেক আলেমদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে এই যে, তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে ভালো যদি তার বিরোধিতা করা না হয় । এ কারণে তার এ হাদীসকে একদল হাফিয হাসান আখ্যা দিয়েছেন । কিন্তু হাদীসটি এ ভাষায় শায অথবা মুনকার । কারণ তিনি অন্য সব নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর বিরোধিতা করে এককভাবে এটিকে বর্ণনা করেছেন । আর বর্ণনাকারী মু‘য়াবিয়্যাহ্ ইবনু হিশামের মধ্যে তার হেফযের দিক দিয়ে দুর্বলতা রয়েছে । (তবুও বিরোধিতা না হয়ে থাকলে তার হাদীসও গ্রহণযোগ্য) । হাদীসটি নিরাপদ হচ্ছে (যেমনটি বাইহাক্বী বলেছেন) এ ভাষায়ঃ “আল্লাহ্ রহমাত নাযিল করেন আর ফেরেশতারা তাদের প্রতি রহমাত কামনা করে দু’আ করেন যারা কাতার সমূহকে (ফাঁক না রেখে) পূর্ণ করে দাঁড়ায়” । যেমনটি আমি “মিশকাত” গ্রন্থের (নং ১০৯৬) টীকায় উল্লেখ করেছি আর “য‘ঈফু আবী দাঊদ” (নং ১৫৩) এবং “সহীহ্ আবী দাঊদ” গ্রন্থে (৬৮০) বর্ণনা করেছি । আবু ৬৭৬, ইবনু মাজাহ ১০০৫ ।) হাদিসের মানঃ অন্যান্য

১১০২.বারা’ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসুল সাঃআঃ-এর পিছনে যখন নামাজ পড়তাম তখন তাঁর ডান দিকে (দাঁড়ানো) পছন্দ করতাম । যাতে তিনি স্বীয় মুখমণ্ডল আমাদের দিকে ফিরান । বস্তুত: আমি (একদিন) তাঁকে বলতে শুনেছি,

رَبِّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ – أَو تَجْمَعُ – عِبَادَكَ

‘রাব্বি ক্বিনী আযা-বাকা ইয়াওমা তাবআসু (অথবা তাজমাউ) ইবা-দাক ।’ হে আমার প্রভু ! তুমি আমাকে তোমার সেই দিনের আযাব থেকে বাঁচিয়ো, যেদিন তুমি স্বীয় বান্দাদেরকে কবর থেকে উঠাবে কিংবা হিসাবের জন্য জমা করবে ।

(মুসলিম ৭০৯, নাসায়ী ৮২২, আবু দাঊদ ৬১৫, ইবনু মাজাহ ১০০৬, আহমাদ ১৮০৮২, ১৮২৩৬) হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস

১১০৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, “তোমরা ইমামকে কাতারের ঠিক মাঝখানে কর । আর কাতারের ফাঁক বন্ধ করো ।”

(আবু দাঊদ, হাদিসের প্রথমাংশ সহীহ নয় ।) (আমি (আলবানী) বলছিঃ এর সনদে দু’জন মাজহূল (অপরিচিত) বর্ণনাকারী রয়েছেন । যেমনটি আমি “য‘ঈফু আবী দাঊদ” গ্রন্থে (নং ১০৫) বর্ণনা করেছি । তবে হাদীসটির দ্বিতীয় বাক্যের আব্দুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাযি) হতে কতিপয় শাহেদ বর্ণিত হয়েছে । অতএব দ্বিতীয় বাক্যটি সহীহ্ । এ সম্পর্কে (১০৯৮) নম্বরে সহীহ্ আখ্যা দেয়া হয়েছে । এর সনদে বর্ণনাকারী ইয়াহ্ইয়া ইবনু বাশীর ইবনে খাল্লাদ এবং তার মা তারা উভয়েই মাজহূল (অপরিচিত) । ইবনু কাত্তান বলেনঃ তাদের উভয়ের অবস্থা অজ্ঞাত । আব্দুল হক্ব ইশবীলী বলেনঃ এ সনদটি শক্তিশালী নয় । হাফিয যাহাবী বলেনঃ তার সনদটি দুর্বল । হাফিয ইবনু হাজার “আত্‌তাক্বরীব” গ্রন্থে আর শাওকানী তার অনুসরণ করে ((৩/১৫৩) বলেনঃ ইয়াহ্ইয়া ইবনু বাশীরের অবস্থা অপ্রকাশিত আর তার মা অপরিচিতা । বিস্তারিত দেখুন “য‘ঈফু আবী দাঊদ-আলউম্ম-” গ্রন্থে (নং ১০৬) । আবু দাঊদ ৬৮১) হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস


by

Comments

Leave a Reply