নামাজ শুরু করার নিয়ম ছানা বিসমিল্লাহ ও সুরা ফাতিহা
নামাজ শুরু করার নিয়ম ছানা বিসমিল্লাহ ও সুরা ফাতিহা >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ (৬৪-৭৫)=১২টি
৬৪. অনুচ্ছেদঃ নামাজ শুরু এবং শেষ করার বাক্য
৬৫. অনুচ্ছেদঃ তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করা এবং ছাড়িয়ে দেয়া
৬৬. অনুচ্ছেদঃ তাকবীরে উলার ফাযীলাত
৬৭. অনুচ্ছেদঃ নামাজ শুরু করে যা পাঠ করিতে হয়
৬৮. অনুচ্ছেদঃ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” সশব্দে পাঠ না করা প্রসঙ্গে
৬৯. অনুচ্ছেদঃ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” সশব্দে পাঠ করা
৭০. অনুচ্ছেদঃ সূরা ফাতিহার মাধ্যমে নামাযের কিরাআত শুরু করা
৭১. অনুচ্ছেদঃ ফাতিহাতুল কিতাব ছাড়া নামাজ হয় না
৭২. অনুচ্ছেদঃ আমীন বলা সম্পর্কে
৭৩. অনুচ্ছেদঃ আমীন বলার ফাযীলাত
৭৪. অনুচ্ছেদঃ দুই বিরতি স্থান
৭৫. অনুচ্ছেদঃ নামাযের মধ্যে ডান হাত বাঁ হাতের উপর রাখা
৬৪. অনুচ্ছেদঃ নামাজ শুরু এবং শেষ করার বাক্য
২৩৮. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নামাযের চাবি হল পবিত্রতা; তার তাহরীম হল শুরুতে আল্লাহু আকবার বলা; তার তাহলীল হল [শেষে] সালাম বলা। যে ব্যক্তি আলহামদু লিল্লাহ [সূরা ফাতিহা] ও অন্য সূরা পাঠ করেনি তার নামাজ হয়নি, চাই তা ফরয নামাজ হোক বা সুন্নাত নামাজ।
সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৭৫-২৭৬]। আবু ঈসা বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান। এ অনুচ্ছেদ আলী ও আয়েশা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। সনদের বিচারে আলী [রাদি.]-এর হাদীস আবু সাঈদের হাদীসের তুলনায় বেশি শক্তিশালী ও সহীহ যা তাহারাত অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করেছি। নাবী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবা ও তাবিঈগণ এ হাদীসের ভিত্তিতে বলেছেন, আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করিতে হইবে। সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক এই মত ব্যক্ত করিয়াছেন যে আল্লাহু আকবার বলা ছাড়া কেউ নামাযের মধ্যে প্রবেশ করিতে পারে না। আবদুর রহমান ইবনি মাহদী বলেছেন, কোন লোক যদি আল্লাহ তাআলার নিরানব্বই নামের যে কোন সত্তরটি নাম নিয়ে নামাজ শুরু করে কিন্তু আল্লাহু আকবার না বলে, তাহলে তার নামাজ হইবে না। আর সালাম ফিরানোর আগ মুহূর্তে যদি কারো ওযূ ছুটে যায়, তাহলে আমি তাকে হুকুম করব, সে যেন আবার ওযূ করে নিজ স্থানে এসে সালাম ফিরায়। এ হাদীসের জাহিরী আপাতদৃষ্ট অর্থই গ্রহণযোগ্য হইবে। আবু নাদরাহর নাম আল-মুনযির ইবনি মালিক ইবনি কুতায়াহ্। নামাজ শুরু করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৫. অনুচ্ছেদঃ তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করা এবং ছাড়িয়ে দেয়া
২৩৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাযের জন্য তাকবীর তাহরীমা বলিতেন তখন হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে ছড়িয়ে দিতেন।
যঈফ, তালীক আলা ইবনি খুযাইমাহ [৪৫৮]। আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুরাইরার হাদীসটি হাসান। এ হাদীসটি বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এক বর্ণনায় শব্দগুলো নিম্নরূপ- “আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাযে প্রবেশ করিতেন, তখন উভয় হাত খাড়া করে [আঙ্গুল ফাঁক করে] উত্তোলন করিতেন।” [তিরমিযী বলেন,] শেষোক্ত বর্ণনাটি ইয়াহইয়া ইবনি ইয়ামানের বর্ণনার চেয়ে বেশি সহীহ। ইবনিল ইয়ামান এ হাদীসের রিওয়ায়াতে ভুল করিয়াছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
২৪০. সাঈদ ইবনি সামআন [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আবু হুরাইরা [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছিঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাযে দাঁড়াতেন, তখন নিজের উভয় হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে উপরে তুলতেন।
সহিহ। সিফাতুস্ নামাজ-[৬৭], তালীক আলা ইবনি খুযাইমাহ হাদিস নং-[৪৫৯], সহিহ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৭৩৫]। আবু ঈসা বলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনি আব্দুর রহমান বলেছেন, এই হাদীসটি ইয়াহ্ইয়া ইবনিল ইয়ামানের হাদীস হইতে অধিক সহিহ। নামাজ শুরু করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৬. অনুচ্ছেদঃ তাকবীরে উলার ফাযীলাত
২৪১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তোষ অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার [প্রথম তাকবীর] সাথে জামাআতে নামাজ আদায় করিতে পারলে তাকে দুটি নাজাতের ছাড়পত্র দেওয়া হয়ঃ জাহান্নাম হইতে নাজাত এবং মুনাফিকী হইতে মুক্তি।
হাসান। তালীকুর রাগীব-[১/১৫১], সহীহাহ্- [২৬৫২]। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি আনসের নিকট হইতে একাধিক সূত্রে মাওকূফ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে [রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমের কথা নয়, আনাসের কথা হিসাবে]। হাবীব ইবনি আবী সাবিত ব্যাতীত অন্য কোন সূত্রে হাদীসটি মারফূরূপে বর্ণিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বরং হাদীসটি হাবীব ইবনি আবী হাবীব আল-বাজালীর সূত্রে আনাস হইতে মাওকূফ রূপে বর্ণিত হয়েছে। অপর একটি সূত্রে দেখা যায়, আনাস [রাদি.] উমার [রাদি.]-এর মাধ্যমে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমের নিকট হইতে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু এ বর্ণনাটি অসংরক্ষিত এবং মুরসাল। মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল বলেন, হাবীব ইবনি আবী হবীবের উপনাম আবু কাশূসা বা আবু উমাইরাহ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৬৭. অনুচ্ছেদঃ নামাজ শুরু করে যা পাঠ করিতে হয়
২৪২. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাতে নামাজ আদায় করিতে উঠে প্রথমে তাকবীর
اللَّهُ أَكْبَرُ
[আল্লাহু আকবার] অর্থঃ আল্লাহ মহান
বলিতেন, অতঃপর এই দুআ পাঠ করিতেনঃ
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা” অর্থাৎ “হে আল্লাহ! তুমি মহাপবিত্র, তোমার জন্যই প্রশংসা, তোমার নাম বারকাতপূর্ণ, তোমার মর্যাদা সর্বোচ্চ এবং তুমি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই।
” অতঃপর তিনি বলিতেনঃ
اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا
আল্লাহু আকবার কাবীরা, মহান আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ
كَبِيرًا | أَكْبَرُ | اللَّهُ |
সর্বশ্রেষ্ঠ | মহান | আল্লাহ |
অতঃপর বলিতেনঃ
أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ
আউযু বিল্লাহিস সামইয়িল আলিম মিনাস সাইতানির রাজিম মিন হামজিহি ওয়া নাফাসিহি। অর্থাৎ “অভিশপ্ত শাইত্বান এবং তার কুমন্ত্রণা, ঝাড়ফুঁক ও যাদুমন্ত্র হইতে আমি সর্বশ্রোতা ও সর্বময় জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহ তাআলার নিকটে আশ্রয় চাই”।
السَّمِيعِ | بِاللَّهِ | أَعُوذُ |
সর্বশ্রোতা | আল্লাহ তাআলার | আশ্রয় চাই |
الشَّيْطَانِ | مِنَ | الْعَلِيمِ |
শাইত্বান | নিকটে | সর্বময় জ্ঞানের |
هَمْزِهِ | مِنْ | الرَّجِيمِ |
নিকটে | অভিশপ্ত | |
وَنَفْثِهِ | وَنَفْخِهِ | |
সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮০৪]। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে আলী, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ, আয়েশা, জাবির, জুবাইর ইবনি মুতইম ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু সাঈদের হাদীসটি অধিক মাশহুর। একদল বিদ্বান এ হাদীস অনুযায়ী আমল করেন। কিন্তু বেশিরভাগ বিদ্বান বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সুবহানাকা……..ইলাহা গাইরুকা পর্যন্ত পড়তেন। উমার ইবনিল খাত্তাব ও ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে এরূপই বর্ণিত আছে। বেশিরভাগ তাবিঈ ও অন্যান্যরা এই হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। [তিরমিযী বলেন,] আবু সাঈদের হাদীসটি সমালোচিত হয়েছে। ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ এ হাদীসের এক রাবী আলী ইবনি আলীর সমালোচনা করিয়াছেন [দুর্বল বলেছেন]। ঈমাম আহমাদ বলেছেন, এ হাদীসটি সহীহ নয়। নামাজ শুরু করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৩. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাজ শুরু করিতেন তখন বলিতেনঃ
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ
“সুবহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা”।
সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮০৬]। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি আমরা উল্লেখিত সনদ পরম্পরায়ই জেনেছি। এ হাদীসের এক রাবী হারিসা ইবনি আবু রিজালের স্মরণক্তির সমালোচনা করা হয়েছে। আবু রিজালের নাম মুহাম্মাদ ইবনি আব্দুর রহমান আল-মাদীনী। নামাজ শুরু করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৮. অনুচ্ছেদঃ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” সশব্দে পাঠ না করা প্রসঙ্গে
২৪৪. ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফফাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার পিতা [আবদুল্লাহ] আমাকে নামাযের মধ্যে শব্দ করে
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পাঠ করিতে শুনলেন। তিনি বলিলেন, হে বৎস! এটা তো বিদআত; বিদআত হইতে সাবধান হও। তারপর তিনি বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবাদের চেয়ে অন্য কাউকে ইসলামে বিদআতের প্রচলন করার প্রতি এত বেশী ঘৃণা ও শত্রুতা পোষণ করিতে দেখিনি। তিনি আরও বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ], আবু বাকার [রাদি.], উমার [রাদি.] ও উসমান [রাদি.]-এর সাথে নামাজ আদায় করেছি। কিন্তু তাহাদের কাউকে বিসমিল্লাহ সশব্দে পাঠ করিতে শুনিনি। অতএব তুমিও সশব্দে পাঠ কর না। যখন তুমি নামাজ আদায় করিবে তখন আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন-এর মাধ্যমে কিরাআত শুরু করিবে।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮১৫]। আবু ঈসা বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনি মুগাফফালের হাদীসটি হাসান। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবা [রাদি.] এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন [তাসমিয়া চুপে-চুপে পাঠ করিয়াছেন]। আবু বাকার [রাদি.], উমার [রাদি.], উসমান [রাদি.] ও আলী [রাদি.] তাঁদের অন্যতম। বেশিরভাগ তাবিঈ এই মতের অনুসারী। সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, আহমাদ ও ইসহাক এ মত গ্রহণ করিয়াছেন। তাঁরা বলেছেন, তাসমিয়া জোরে পাঠ করিবে না, বরং আস্তে পাঠ করিবে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৬৯. অনুচ্ছেদঃ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” সশব্দে পাঠ করা
২৪৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম দিয়ে নামাজ শুরু করিতেন।
সনদ দুর্বল । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসের সনদ খুব একটা শক্তিশালী নয়। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবা এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আবু হুরাইরা, ইবনি উমার, ইবনি আব্বাস ও ইবনি যুবাইর [রাদি.]। তাবিঈদের একদল এই মত গ্রহণ করিয়াছেন এবং বলেছেন, সূরা ফাতিহা ও অন্যান্য সূরার মত বিসমিল্লাহও সশব্দে পাঠ করিতে হইবে। ঈমাম শাফি এই মত সমর্থন করিয়াছেন। ইসমাঈল ইবনি হাম্মাদ তিনি ইবনি আবু সুলাইমান এবং আবু খালিদের নাম হুরমুয তিনি কুফী। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৭০. অনুচ্ছেদঃ সূরা ফাতিহার মাধ্যমে নামাযের কিরাআত শুরু করা
২৪৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ], আবু বাকার, উমার ও উসমান [রাদি.]
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন দিয়ে নামাযের কিরাআত শুরু করিতেন।
সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮১৩], মুসলিম। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। নাবী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবা, তাবিঈন ও তাবা তাবিঈন এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাঁরা আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন [অর্থাৎ সূরা ফাতিহা] দিয়েই নামাযের কিরাআত শুরু করিয়াছেন। ঈমাম শাফি বলেন, এ হাদীসের তাৎপর্য হল, নাবী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ], আবু বাকার, উমার ও উসমান [রাদি.] অন্য সূরা পাঠের পূর্বে সূরা ফাতিহা পাঠ করিতেন। এর অর্থ এই নয় যে, তাঁরা বিসমিল্লাহ পাঠ করিতেন না। ঈমাম শাফির মত হল বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম দিয়েই কিরাআত শুরু করিতে হইবে এবং যখন সূরা ফাতিহা উচ্চস্বরে পাঠ করা হইবে তখন “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” ও উচ্চস্বরে পাঠ করিতে হইবে। নামাজ শুরু করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭১. অনুচ্ছেদঃ ফাতিহাতুল কিতাব ছাড়া নামাজ হয় না
২৪৭. উবাদা ইবনি সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করেনি তার নামাজ হয়নি।
সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৩৭], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা, আয়েশা, আনাস, আবু কাতাদা ও আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, উবাদার হাদীসটি হাসান সহীহ। নাবী [সাঃআঃ]-এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাহাবী এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। উমার ইবনিল খাত্তাব, আলী ইবনি আবী তালিব, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ, ইমরান ইবনি হুসাইন ও অপরাপর সাহাবী [রাদি.] বলেছেন, সূরা ফাতিহা পাঠ করা না হলে নামাজ হইবে না। আলী ইবনি আবী তালিব [রাদি.] বলেনঃ “যে নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করা হয়নি ঐ নামাজ অসম্পূর্ণ” ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক এ মত গ্রহণ করিয়াছেন। নামাজ শুরু করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭২. অনুচ্ছেদঃ আমীন বলা সম্পর্কে
২৪৮. ওয়াইল ইবনি হুজর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে
غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
“গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম অলায্-যাল্লীন” পাঠ করিতে এবং
آمِينَ
আমীন বলিতে শুনিয়াছি। আমীন বলিতে গিয়ে তিনি নিজের কণ্ঠস্বর দীর্ঘ ও উচ্চ করিলেন।
সহীহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৫৫]। এ অনুচ্ছেদে আলী ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ ওয়াইল ইবনি হুজরের হাদীসটি হাসান। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৯. আবু ঈসা হইতে বর্ণীতঃ
আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনি আবান, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি নুমাইর হইতে, তিনি আলা ইবনি সালিহ আল-আসাদী হইতে তিনি সালামাহ ইবনি কুহাইল হইতে তিনি হুজর ইবনি আনবাস হইতে, তিনি ওয়াইল ইবনি হুজর হইতে তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে সালামা ইবনি কুহাইলের সূত্রে সুফিয়ানের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
সহিহ। দেখুন পূর্বের-[২৪৮ নং] হাদীস। নামাজ শুরু করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৩. অনুচ্ছেদঃ আমীন বলার ফাযীলাত
২৫০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ ঈমাম যখন آمِينَ আমীন বলবে তোমরাও তখন آمِينَ আমীন বলবে। কেননা যার آمِينَ আমীন বলা ফেরেশতাহাদের آمِينَ আমীন বলার সাথে সাথে হইবে তার পূর্বেকার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হইবে।
সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৫১], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুরাইরার হাদীসটি হাসান সহীহ। নামাজ শুরু করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৪. অনুচ্ছেদঃ দুই বিরতি স্থান
২৫১. সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে দুটি বিরতিস্থান মুখস্থ করে নিয়েছি। ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] এতে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, আমি একটি মাত্র বিরতিস্থান মুখস্থ করেছি। [সামুরা বলেন, এর মীমাংসার জন্য] আমরা মাদীনায় উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-এর কাছে পত্র লেখলাম। তিনি উত্তরে লেখে জানালেন, সামুরাই সঠিকভাবে মুখস্থ রেখেছে। সাঈদ বলেন, আমরা কাতাদাকে প্রশ্ন করলাম, বিরতি দুটো কোন কোন জায়গায়? তিনি বলেন, যখন তিনি [রসুলুল্লাহ সাঃআঃ] নামাযে প্রবেশ করিতেন [তাকবীরে তাহরীমা বাঁধার পর] এবং যখন কিরাআত শেষ করিতেন। পরে তিনি [কাতাদা] বলিলেন, যখন তিনি [রসুলুল্লাহ সাঃআঃ]
وَلاَ الضَّالِّينَ
অলায-যআল্লীন পাঠ করিতেন। রাবী বলেন, কিরাআত পাঠের পর তিনি ভালভাবে নিঃশ্বাস নেয়া পর্যন্ত বিরতি দেওয়া খুবই পছন্দ করিতেন।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৪৪, ৮৪৫] এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, সামুরার হাদীসটি হাসান। কিছু বিশেষজ্ঞ আলিম নামাজ শুরু করার পর এবং কিরাআত শেষ করার পর ইমামের জন্য বিরতি দেওয়াকে মুস্তাহাব বলেছেন। ঈমাম আহমাদ, ইসহাক ও আমাদের [তিরমিযীর] সঙ্গীরা এ মতের সমর্থক। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৭৫. অনুচ্ছেদঃ নামাযের মধ্যে ডান হাত বাঁ হাতের উপর রাখা
২৫২. কাবীসা ইবনি হুলব [রাদি.] হইতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [হুলব] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের ঈমামতি করিতেন এবং [দাঁড়ানো অবস্থায়] নিজের ডান হাত দিয়ে বাঁ হাত ধরতেন।
হাসান, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮০৯]। এ অনুচ্ছেদে ওয়াইল ইবনি হুজর, গুতাইফ ইবনি হারিস, ইবনি আব্বাস, ইবনি মাসউদ ও সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ হুলব এর হাদীসটি হাসান। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
Leave a Reply