নামাজ শিক্ষা তাকবীর হাত বাঁধা দোয়া দুই পায়ের মাঝে ফাঁক রাখা
নামাজ শিক্ষা । ইমাম নাসাঈ এর সুনান হাদীস থেকে সংকলিত >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ১১, নামাজ আরম্ভ করা, হাদীস (৮৭৬-৯০১)
১.নামাজ শিক্ষা – নামাজ আরম্ভ করা
২.পরিচ্ছেদঃ নামাজের প্রারম্ভিক কাজ
৩.পরিচ্ছেদঃ তাকবীর বলার পূর্বে উভয় হাত উঠানো
৪.পরিচ্ছেদঃ উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত তোলা
৫.পরিচ্ছেদঃ কান পর্যন্ত উভয় হাত উঠানো
৬.পরিচ্ছেদঃ হাত তোলার সময় বৃদ্ধাঙ্গুলীর অবস্থান
৭.পরিচ্ছেদঃ লম্বা করে উভয় হাত তোলা
৮.পরিচ্ছেদঃ প্রথম তাকবীর ফরয
৯.পরিচ্ছেদঃ যে বাক্য দ্বারা নামাজ আরম্ভ করা হয়
১০.পরিচ্ছেদঃ নামাজে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা
১১.পরিচ্ছেদঃ ঈমাম কাউকে ডান হাতের উপর বাম হাত রাখতে দেখলে
১২.পরিচ্ছেদঃ নামাজে বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখার স্থান
১৩.পরিচ্ছেদঃ নামাজে কোমরে হাত রাখা নিষেধ
১৪.পরিচ্ছেদঃ নামাজে দুপায়ের মধ্যে ফাঁক না রেখে দাঁড়ানো
১৫.পরিচ্ছেদঃ নামাজ আরম্ভ করার পর ইমামের চুপ থাকা
১৬.পরিচ্ছেদঃ তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যবর্তী দোয়া
১৭.পরিচ্ছেদঃ কিরাআত ও তাকবীরের মধ্যে অন্য দোয়া
১৮.পরিচ্ছেদঃ তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যে দোয়া ও যিকির
১৯.পরিচ্ছেদঃ নামাজ আরম্ভ ও কিরাআতের মাঝখানে অন্য দোয়া
২০.পরিচ্ছেদঃ তাকবীরের পর অন্য প্রকার দোয়া
১.পরিচ্ছেদঃ নামাজের প্রারম্ভিক কাজ
৮৭৬. ইবন উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখেছি, তিনি যখন নামাজে তাকবীর আরম্ভ করিতেন তখন তাকবীরের সময় তাহাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং হাত দু’খানাকে উভয় কাঁধ বরাবর করিতেন। আর যখন রুকূ করার জন্য তাকবীর বলিতেন তখনও এরূপ করিতেন। এরপর যখন
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ্’
বলিতেন তখনও এরূপ করিতেন এবং বলিতেনঃ
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’
আর যখন তিনি সিজদা করিতেন তখন এবং যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন এরূপ করিতেন না।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২.পরিচ্ছেদঃ তাকবীর বলার পূর্বে উভয় হাত উঠানো
৮৭৭. ইবন উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে দেখেছি, যখন তিনি নামাজের জন্য দাঁড়াতেন উভয় হাত উঠাতেন। এমনকি তাহাঁর হাত দু’খানা দু’ কাঁধের বরাবর হয়ে যেত। এরপর তিনি তাকবীর বলিতেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি এরুপ করিতেন যখন তিনি রুকুর জন্য তাকবীর বলিতেন। আর যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ করিতেন আর বলিতেনঃ
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ্।
আর তিনি সিজদায় এরূপ করিতেন না।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩.পরিচ্ছেদঃ উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত তোলা
৮৭৮. আবদুল্লাহ ইবন উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাজ আরম্ভ করিতেন তখন দু’কাঁধ পর্যন্ত তাহাঁর উভয় হাত তুলতেন। আর যখন রুকূ করিতেন এবং রুকূ থেকে মাথা তুলতেন তখনও দু’হাত এভাবে তুলতেন এবং বলিতেনঃ
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ্ রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ।
আর তিনি সিজদার সময় এরূপ করিতেন না।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪.পরিচ্ছেদঃ কান পর্যন্ত উভয় হাত উঠানো
৮৭৯. ওয়ায়িল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পেছনে নামাজ আদায় করেছি। যখন তিনি নামাজ আরম্ভ করিতেন তখন তাকবীর বলিতেন এবং তাহাঁর উভয় হাত দু’কান পর্যন্ত তুলতেন। এরপর সূরা ফাতিহা পাঠ করা আরম্ভ করিতেন। আর তা শেষ করে ”আমীন” বলিতেন এবং তা বলার সময় তাহাঁর স্বর উচ্চ করিতেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৮৮০. মালিক ইবন হুয়ায়রিছ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অন্যতম সাহাবী থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাজ আদায় করিতেন তখন তাহাঁর উভয় হাত কান পর্যন্ত তুলতেন। আর যখন তিনি রুকূ করার ইচ্ছা করিতেন, আর যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন [তখনও এরূপ করিতেন]।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৮৮১. মালিক ইবন হুয়ায়রিছ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখেছি যে, যখন তিনি নামাজ আরম্ভ করিতেন তখন তাহাঁর হাতদ্বয় উঠাতেন। আর যখন রুকূ করিতেন, এবং রুকূ থেকে তাহাঁর মাথা তুলতেন তখন হাতদ্বয় উভয় কানের নিম্নভাগ [লতি] বরাবর হয়ে যেতো।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫.পরিচ্ছেদঃ হাত তোলার সময় বৃদ্ধাঙ্গুলীর অবস্থান
৮৮২. ওয়াইল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখেছেন, যখন তিনি নামাজ আরম্ভ করিতেন তখন তিনি তাহাঁর উভয় হাত উঠাতেন। তখন তাহাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় তাহাঁর দু’কানের নিম্নভাগ ছোঁয় ছোঁয় অবস্থা হতো।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৬.পরিচ্ছেদঃ লম্বা করে উভয় হাত তোলা
৮৮৩. সাঈদ ইবন সামআন [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] বনী যুরায়কের মসজিদে আগমন করে বলিলেন, তিনটি কাজ এমন যা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] করিয়াছেন। কিন্তু লোকেরা তা ছেড়ে দিয়েছে। তিনি নামাজে হাত উঠাতেন লম্বা করে, আর তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন আর তিনি যখন সিজদা করিতেন এবং সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন তাকবীর বলিতেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭.পরিচ্ছেদঃ প্রথম তাকবীর ফরয
৮৮৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মসজিদে প্রবেশ করলে পরে এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করিল এবং নামাজ আদায় করলো। তারপর এসে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- কে সালাম করিল। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার সালামের উত্তর দিয়ে বলিলেন, ফিরে যাও, আবার নামাজ আদায় কর [কেননা, তুমি নামাজ আদায় করনি] সে ব্যক্তি প্রত্যাবর্তন করে পূর্বে যেরূপ নামাজ আদায় করেছিল সেরূপ নামাজ আদায় করিল। তারপর এসে নাবী [সাঃআঃ]-কে সালাম করিল, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন, ওয়া আলাইকাস সালাম। ফিরে যাও, নামাজ আদায় কর। কেননা, তুমি নামাজ আদায় করনি। তিনি এরূপ তিনবার করিলেন। তারপর সে ব্যক্তি বলিল, ঐ সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন। আমি এর চেয়ে অধিক ভাল নামাজ আদায় করিতে জানি না। অতএব, আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বলিলেন- যখন নামাজে দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে, তারপর কুরআন থেকে যা তোমার পক্ষে সহজ হয় তা পড়বে। তারপর রুকূ করিবে ধীর-স্থিরভাবে। তারপর মাথা উঠাবে এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। এরপর সিজদা করিবে ধীর-স্থিরভাবে। তারপর মাথে উঠিয়ে ধীর-স্থিরভাবে বসে পড়বে। অতঃপর এভাবে তোমার নামাজ পূর্ণ করিবে।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৮.পরিচ্ছেদঃ যে বাক্য দ্বারা নামাজ আরম্ভ করা হয়
৮৮৫. আব্দুল্লাহ ইবন উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর পেছনে বলিলঃ[আরবী] তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, কে এ কলেমা বলেছে? ঐ ব্যক্তি বলিল- আমি, ইয়া নাবী আল্লাহ! তখন তিনি বলিলেন- বারজন ফিরিশতা এ কলেমা তাড়াতাড়ি করে তুলে নিলেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৮৮৬. ইবন উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে নামাজ আদায় করছিলাম। উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে এক ব্যক্তি বলে উঠল [আরবী] তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, এমন এমন শব্দগুলো কে বলেছে? তখন ঐ ব্যক্তি বললো, আমি ইয়া রসূলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ আমি এ ব্যপারে আশ্চর্যবোধ করলাম। অতঃপর তিনি যা বলিলেন, এর অর্থ হল, এর কারণে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়েছে। ইবন উমর [রাঃআঃ] বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শোনার পর থেকে আমি কখনও তা পড়া বাদ দেই নি।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৯.পরিচ্ছেদঃ নামাজে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা
৮৮৭. ওয়ায়িল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাজে দাঁড়াতেন তখন আমি তাঁকে ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরে রাখতে দেখেছি।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১০.পরিচ্ছেদঃ ঈমাম কাউকে ডান হাতের উপর বাম হাত রাখতে দেখলে
৮৮৮. ইবন মাসউদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দেখলেন, আমি নামাজে ডান হাতের উপর বাম হাত রেখেছি। তিনি আমার ডান হাত ধরে তা বাম হাতের উপর রাখলেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১১.পরিচ্ছেদঃ নামাজে বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখার স্থান
৮৮৯. ওয়ায়িল ইবন হুজর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি বললামঃ আমি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করব রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নামাজের প্রতি, তিনি কিরূপে নামাজ আদায় করেন। আমি তাহাঁর দিকে তাকালাম। তিনি দাঁড়িয়ে তাকবীর বলিলেন এবং তাহাঁর হস্তদ্বয় উত্তোলন করিলেন। আর হস্তদ্বয় কর্ণদ্বয়ের বরাবর হল। তারপর তিনি তাহাঁর ডান হাত রাখলেন বাম হাতের উপর অর্থাৎ এক কব্জি অন্য কব্জির ওপর কিংবা এক হাত অন্য হাতের ওপর রাখলেন। যখন তিনি রুকূ করার ইচ্ছা করিলেন হস্তদ্বয় পূর্বের মত উঠালেন। রাবী বলেন, তিনি হস্তদ্বয় স্থাপন করিলেন তাহাঁর দু’হাঁটুর উপর। এরপর যখন তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠালেন তখন তদ্রুপ হাত উঠালেন। এরপর তিনি সিজদা করিলেন, তিনি তাহাঁর হাতের তালুদ্বয় স্থাপন করিলেন তাহাঁর উভয় কান বরাবর। তারপর তিনি বসলেন, তিনি বিছিয়ে দিলেন তাহাঁর বাম পা। আর তাহাঁর বাম হাতের তালু রাখলেন তাহাঁর বাম হাঁটু ও রানের উপর। আর ডান কনুইর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ডান রানের উপর রাখলেন। পরে তাহাঁর দু’টি অঙ্গুলী [বৃদ্ধ ও মধ্যমা] টেনে তা দিয়ে বৃত্তাকার বানালেন এবং তারপর একটি অঙ্গুলী [তর্জনী] উঠালেন। আমি দেখলাম, তিনি তা নাড়ছেন [ইশারার জন্য] এবং তা দ্বারা দোয়া করছেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১২.পরিচ্ছেদঃ নামাজে কোমরে হাত রাখা নিষেধ
৮৯০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] কোমরে হাত রেখে কোন ব্যক্তিকে নামাজ আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৮৯১. যিয়াদ ইবন সুবায়হ [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি ইবন উমরের পাশে নামাজ আদায় করেছি, তখন আমি আমার কোমরে হাত রাখলাম। তিনি আমাকে তাহাঁর হাত মেরে বলিলেন, এভাবে যখন আমি নামাজ শেষ করলাম, এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলাম, কে এ ব্যক্তি? সে বললো, আবদুল্লাহ ইবন উমর। আমি বললাম, হে আবু আবদুর রহমান। আমার কোন্ কাজে আপনার খটকা হলো? তিনি বললেনঃ এটা শূলের ন্যায় হয়েছে। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা থেকে আমাদের নিষেধ করিয়াছেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩.পরিচ্ছেদঃ নামাজে দুপায়ের মধ্যে ফাঁক না রেখে দাঁড়ানো
৮৯২. আবু উবায়দা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ [রাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে উভয় পা মিলিয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করিতে দেখলেন। তিনি বলিলেন, এ ব্যক্তি সুন্নতের বিরোধিতা করিল। যদি এ ব্যক্তি পদদ্বয়ের মাঝখানে ব্যবধান বা ফাঁক রেখে দাঁড়াতো তাহলে তা উত্তম হতো।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৮৯৩. আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে নামাজ আদায় করছে দু’ পা মিলিয়ে। তিনি বলিলেন, এ ব্যক্তি সুন্নতের খেলাফ করছে। যদি সে দু’ পায়ের মধ্যে ফাঁক রেখে দাঁড়াত তা হলে তা আমার কাছে অধিক পছন্দনীয় হতো।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৪.পরিচ্ছেদঃ নামাজ আরম্ভ করার পর ইমামের চুপ থাকা
৮৯৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] যখন নামাজ আরম্ভ করিতেন তখন কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। এ সময় দোয়া পড়তেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৫.পরিচ্ছেদঃ তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যবর্তী দোয়া
৮৯৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাজ আরম্ভ করিতেন তখন কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। আমি বললামঃইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার মাতা-পিতা আপনার প্রতি কুরবান হোক, আপনি তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যস্থলে চুপ থেকে কি বলেন? তিনি বলিলেন আমি বলি,
اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْنِي مِنْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ
আল্ল-হুম্মা বা-‘ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খত্বা-ইয়া-ইয়া কামা- বা’আদতা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিব, আল্ল-হুম্মা নাকিনী মিনাল খত্বা-ইয়া- কামা- ইউনাক্কস্ সাওবুল আবইয়াযু মিনাদ দানাস, আল্ল-হুম্মাগসিল খত্বা-ইয়া-ইয়া বিলমা-য়ি ওয়াস্ সালজি ওয়াল বারদ, অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার ও আমার পাপরাশির মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও যেমন পূর্ব পশ্চিমের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ! আমাকে আমার পাপরাশি থেকে পবিত্র করে দাও যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। হে আল্লাহ! আমাকে পানি, বরফ, শিলা বৃষ্টির সাহায্যে ধৌত কর।
মহানাবী [সাঃআঃ] আপন উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এরূপ দোয়া করেছিলেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬.পরিচ্ছেদঃ কিরাআত ও তাকবীরের মধ্যে অন্য দোয়া
৮৯৬. জাবির ইবন আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] যখন নামাজ আরম্ভ করিতেন তখন তাকবীর বলিতেন। তারপর বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ اهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَعْمَالِ وَأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ، وَقِنِي سَيِّئَ الْأَعْمَالِ وَسَيِّئَ الْأَخْلَاقِ لَا يَقِي سَيِّئَهَا إِلَّا أَنْتَ
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৭.পরিচ্ছেদঃ তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যে দোয়া ও যিকির
৮৯৭. আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাজ আরম্ভ করিতেন তাকবীর বলিতেন। তারপর বলিতেনঃ
وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ اللَّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِي وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيعًا لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ وَاهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّي سَيِّئَهَا إِلَّا أَنْتَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি হানীফাওঁ ওয়ামা- আনা- মিনাল মুশরিকীনা ইন্না সালা-তী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়ামামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীনা লা-শারীকা লাহু ওয়াবিযা-লিকা উমিরতু ওয়াআনা- মিনাল মুসলিমীনা, আল্ল-হুম্মা আনতাল মালিকু লা- ইলা-হা ইল্লা আনতা আনা- ‘আবদুকা যলামতু নাফসী ওয়া তারফতু বিযামবী ফাগফিরলী যুনূবী জামী’আন লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-কি লা- ইয়াহদী লিআহসানিহা- ইন্না-আনতা ওয়াসরিফ আন্নী সাইয়িআহা- লা- ইয়াসরিফু ‘আন্নী সাইয়িআহা- ইল্লা আনতা লাব্বাইকা ওয়া সা’ দায়কা ওয়াল খয়রু কুল্লহু ফী ইয়াদায়কা ওয়াশ শাররু লায়সা ইলায়কা আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা তাবারকতা ওয়া তা’ আলা-লায়তা আসতাগফিরুকা ওয়াআতূবু ইলায়কা
অর্থঃআমি একনিষ্ঠভাবে তাহাঁর দিকে মুখ ফিরিয়েছি যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভক্ত নই। নিশ্চয় আমার নামাজ আমার ইবাদত [কুরবানী ও হজ্জ] আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তাহাঁর কোন শরীক নেই। আর এরই জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্গত। আল্লাহ, তুমিই বাদশাহ, তুমি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। তুমি আমার প্রভু আর আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর জুলুম করেছি এবং আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি- সুতরাং তুমি আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয় তুমি ব্যতীত আর কেউ অপরাধসমূহ ক্ষমা করিতে পারে না এবং চালিত কর আমাকে উত্তম চরিত্রের পথে তুমি ব্যতীত অপর কেউ চালিত করিতে পারে না উত্তম চরিত্রের পথে এবং দূরে রাখ আমা থেকে মন্দ আচরণকে- তুমি ব্যতীত আমা থেকে তা অপর কেউ দূরে রাখতে পারে না। আল্লাহ! হাজির আছি আমি তোমার দরবারে আর প্রস্তুত আছি তোমার আদেশ পালনে, কল্যাণ সমস্তই তোমার হাতে এবং কোনও অকল্যাণই তোমার প্রতি বর্তায় না। আমি তোমার সাহায্যেই প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। তুমি মঙ্গলময়, তুমি সুমহান। আমি তোমার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করছি এবং তোমার দিকে ফিরছি।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৮৯৮. মুহাম্মদ ইবন মাসলামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নফল নামাজ আদায় করিতে দাঁড়াতেন তখন বলিতেনঃ
اللَّهِ أَكْبَرُ وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ، إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ، اللَّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ
তারপর তিনি কুরআন পাঠ করিতেন।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৮.পরিচ্ছেদঃ নামাজ আরম্ভ ও কিরাআতের মাঝখানে অন্য দোয়া
৮৯৯. আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] যখন নামাজ আরম্ভ করিতেন তখন বলিতেনঃ
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ
সুবহা-নাকা আল্ল-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা তাবারকাসমুকা ওয়াতা ‘আ-লা- জাদ্দুকা ওয়ালা- ইলা-হা গয়রুক, অর্থঃতোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে। তোমার নাম মঙ্গলময়, উচ্চ তোমার মহিমা এবং তুমি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৯০০. আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাজ আরম্ভ করিতেন তখন বলিতেনঃ
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ
সুবহা-নাকা আল্ল-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়া তাবারকাসমুকা ওয়াতা ‘আ-লা- জাদ্দুকা ওয়ালা- ইলা-হা গয়রুক
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৯.পরিচ্ছেদঃ তাকবীরের পর অন্য প্রকার দোয়া
৯০১. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃরসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। হঠাৎ এক ব্যক্তি এসে মসজিদে প্রবেশ করিল, নামাজের জন্য দৌড়ে আসার কারণে তার তার শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছিল। সে বলিল
اللَّهُ أَكْبَرُ، الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ
আল্ল-হু আকবার আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান ত্বইয়িবাম মুবা-রকান ফীহি, (সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্যে ও তার জন্যে উত্তম ও প্রচুর প্রশংসা, তার প্রশংসার মধ্যে বরকত আছে)
الْحَمْدُ | أَكْبَرُ | اللَّهُ |
সমস্ত প্রশংসা | মহান | আল্লাহর |
كَثِيرًا | حَمْدًا | لِلَّهِ |
প্রচুর | প্রশংসা | আল্লাহর |
فِيهِ | مُبَارَكًا | طَيِّبًا |
মধ্যে | বরকত |
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ শেষ করে বলিলেন- তোমাদের মধ্যে কে এ বাক্যগুলো উচ্চারণ করিল? এতে উপস্থিত সকলে নির্বাক হয়ে গেল। তিনি বলিলেন, সে কোন ক্ষতিকর কথা বলেনি। সে ব্যক্তি বলিল- ইয়া রসূলুল্লাহ! আমি বলেছি। আমি এসে পড়লাম আর আমার তখন শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তখন আমি তা বলেছি। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি বারজন ফেরেশতাকে দেখলাম, তারা প্রতিযোগিতা করছে, কে তা তুলে নেবে।
নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply